উত্তম হচ্ছে ইমামের সাথে সম্পূর্ণ নামায আদায় করা যতক্ষণ না ইমাম নামায শেষ করেন

download (4)
প্রশ্ন: অগ্রগণ্য মতানুযায়ী তারাবী নামায যদি ১১ রাকাত হয়; কিন্তু আমি এক মসজিদে নামায পড়েছি সেখানে ২১ রাকাত তারাবী পড়া হয়। এমতাবস্থায়, আমি কি ১০ রাকাত পড়ে মসজিদ ত্যাগ করতে পারি; নাকি আমার জন্য তাদের সাথে ২১ রাকাত নামায পড়াই উত্তম?

উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ।

উত্তম হচ্ছে ইমামের সাথে সম্পূর্ণ নামায আদায় করা, যতক্ষণ না ইমাম নামায শেষ করেন; এমনকি ইমাম যদি ২১ রাকাতের বেশি পড়েন সেক্ষেত্রেও। কেননা বেশি পড়া জায়েয আছে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীতে ব্যাপকতা রয়েছে। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামায) আদায় করে যতক্ষণ না ইমাম নামায শেষ করেন; আল্লাহ্‌ তার জন্য গোটা রাত নামায আদায় করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন।”[সুনানে নাসাঈ, ও অন্যান্য: নাসাঈর ‘রমযানের কিয়াম অধ্যায়’] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীতে আরও এসেছে, “রাতের নামায দুই রাকাত, দুই রাকাত। যদি তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা কর তাহলে এক রাকাত বিতির নামায (বেজোড় নামায) পড়ে নাও।”[সাতজন গ্রন্থাকার হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; আর এটি নাসাঈর ভাষ্য]

নিঃসন্দেহে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত সুন্নাহ্‌ ধরে রাখাই উত্তম, অধিক সওয়াবের সম্ভাবনাময়; নামায দীর্ঘ করা ও সুন্দর করার মাধ্যমে। কিন্তু, যদি ব্যাপারটি এমন হয় যে, রাকাত সংখ্যার কারণে হয়তো ইমামকে রেখে চলে যেতে হবে কিংবা বাড়তি সংখ্যায় ইমামের সাথে থাকতে হবে; সেক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে পূর্বোক্ত হাদিসগুলোর কারণে ইমামের সাথে থাকা। তবে ইমামকে সুন্নাহ্‌ অনুসরণের তাগিদ দিতে হবে।

লাইলাতুল কদর কিভাবে পালন করা উচিত?

Image result for লাইলাতুল কদর

প্রশ্ন: লাইলাতুল কদর কিভাবে পালন করা উচিত? সেটা কি নামায, কুরআন তেলাওয়াত, সিরাত আলোচনা, ওয়াজ নসিহত, দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য এবং এর জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে উদযাপন করতে হবে?

উত্তর

সমস্তপ্রশংসাআল্লাহরজন্য।

এক: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজানের শেষ দশ কে নামায, কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার মধ্যে এত বেশী সময় দিতেন যা অন্য সময়ে দিতেন না।আয়েশা (রাঃ) থেকে ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে,রমজানের শেষ দশ রাত্রি শুরু হলে নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)রাত জেগে ইবাদত করতেন তাঁর পরিবার বর্গ কে জাগিয়ে তুলতেন এবংস্ত্রী-সহবাস থেকে বিরত থাকতেন।ইমাম আহমাদও মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে:

“তিনি রমজানের শেষ দশকে এত বেশী ইবাদত করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না।”

দুই:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমানের সাথে ও সওয়াব পাওয়ার আশায় রাত জেগে নামায আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথেও সওয়াবের নিয়তে ভাগ্য রজনী তে জেগে নামায আদায় করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।”[সহীহবুখারীওসহীহ মুসলিম]এই হাদীস প্রমাণ করে যে, ভাগ্য রজনীতে জেগে নামায আদায় করা ইসলামি বিধান।

তিন:

ভাগ্য রজনীতেপঠিতব্য সবচেয়ে ভালো দোয়া হচ্ছে-যানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা(রাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। যেটি তিরমিযি আয়েশা (রাঃ) থেকে সংকলন করেছে এবং সহীহ আখ্যায়িত করেছে: তিনি বলেন:আমি বললাম,“হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি জানতে পারি কোন রাতটি ভাগ্য রজনী তবে সে রাতে আমি কী পড়ব? তিনি বললেন,তুমি বলবে:

(اللهمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي. )

“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা‘আফুউউন তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা ‘ফুউ ‘আন্নী (অর্থ: হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে আপনি ভালবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।)

চার:

রমজানের বিশেষ কোন একটি রাত্রিকে ভাগ্য রজনী হিসেবে সুনির্দিষ্ট করতে হলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দলীলের প্রয়োজন।কিন্তু শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে ভাগ্য রজনী হওয়া অন্য রাত গুলোতে ভাগ্য রজনী হওয়ার চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় এবং রমজানের সাতাশতম রাতভাগ্য রজনী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসগুলো আমরা যা উল্লেখ করেছি সেটাই প্রমাণকরে।

পঞ্চমত:

কস্মিন কালেও বিদ‘আত (দ্বীনের মধ্যে নতুন প্রবর্তিত বিষয়) করা জায়েয নেই। রমজানের মধ্যেও না, রমজানের বাইরেও না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন:“যে ব্যক্তি আমাদের এই শরিয়তে এমন কিছু প্রবর্তন করল যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।”অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যা আমাদের শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”

রমজানের নির্দিষ্ট কিছু রাতে অনুষ্ঠান উদযাপনের কোন ভিত্তি আমাদের জানা নেই। উত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে- বিদআত (নতুন প্রবর্তিত বিষয় সমূহ)।

আল্লাহই তাওফিক দাতা।

ফাতাওয়াল্‌ লাজনাহ আদ্‌ দায়িমা (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র) (১০/৪১৩)

উচ্চস্বরে আমীন বলার দলিল

maxresdefault.png

উচ্চস্বরে আমীন বলার দলিল

রাসুলুল্লাহ(সাঃ) উচ্চস্বরে আমীন বলতেন রাসুলুল্লাহ(সাঃ) উচ্চস্বরে আমীন বলতেন সাথেসাথে পিছনের লোকেরাও উচ্চস্বরে আমীন বলতেন।

জেহরী ছালাতে ইমামের সূরায়ে ফাতিহাপাঠ শেষে ইমাম-মুক্তাদী সকলে সরবে‘আমীন’ বলবে। ইমামের আগে নয় বরং ইমামের‘আমীন’ বলার সাথে সাথে মুক্তাদীর ‘আমীন’বলা ভাল। তাতে ইমামের পিছে পিছে মুক্তাদীরসূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা সম্ভব হয় এবং ইমাম, মুক্তাদী ওফেরেশতাদের ‘আমীন’ সম্মিলিতভাবে হয়।যেমন এরশাদ হয়েছে, ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲْ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻣَّﻦَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﻓَﺄَﻣِّﻨُﻮْﺍ …ﻭَﻓِﻲ ﺭِﻭَﺍﻳَﺔٍ : ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﻭَﻻَ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴْﻦَ ﻓَﻘُﻮْﻟُﻮْﺍ ﺁﻣِﻴْﻦَ،ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔَ ﺗَﻘُﻮْﻝُ ﺁﻣِﻴْﻦَ ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡَ ﻳَﻘُﻮْﻝُ ﺁﻣِﻴْﻦَ، ﻓَﻤَﻦْﻭَﺍﻓَﻖَ ﺗَﺄْﻣِﻴْﻨُﻪُ ﺗَﺄْﻣِﻴْﻦَ ﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔِ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔُ ﻭﺃﺣﻤﺪُ- ﻭَﻓِﻲْ ﺭِﻭَﺍﻳَﺔٍ ﻋﻨﻪ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺁﻣِﻴْﻦَ ﻭَﻗَﺎﻟَﺖِﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺁﻣِﻴْﻦَ، ﻓَﻮَﺍﻓَﻘَﺖْ ﺇِﺣْﺪَﺍﻫُﻤَﺎ ﺍﻟْﺄُﺧْﺮَﻯ،ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺸﻴﺨﺎﻥُ ﻭﻣﺎﻟﻚُ- ﻭﻋﻦﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺮَﺃَ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮْﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻻَ ﺍﻟﻀَّﺂﻟِّﻴْﻦَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺁﻣِﻴْﻦَ،ﻭَﻣَﺪَّ ﺑِﻬَﺎ ﺻَﻮْﺗَﻪُ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮﺩﺍﺅﺩَ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯُّ ﻭﺍﺑﻦُ ﻣﺎﺟﻪ -কুতুবে সিত্তাহ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিতউপরোক্ত হাদীছগুলির সারকথা হ’ল এই যে,রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, যখন ইমাম ‘আমীন’বলে কিংবা ‘ওয়ালায্ যা-ল্লীন’ পাঠ শেষ করে, তখনতোমরা সকলে ‘আমীন’ বল।

কেননা যার‘আমীন’ আসমানে ফেরেশতাদের ‘আমীন’-এরসাথে মিলে যাবে, তার পূর্বেকার সকল গুনাহ মাফকরা হবে’। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮২৫,‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; মুওয়াত্ত্বা (মুলতান,পাকিস্তান ১৪০৭/১৯৮৬) হা/৪৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়, পৃঃ ৫২।]

ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ‘গায়রিল মাগযূবে ‘আলাইহিম ওয়ালায্ যা-ল্লীন’বলার পরে তাঁকে উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলতেশুনলাম’। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণনাএসেছে। [দারাকুৎনী হা/১২৫৩-৫৫, ৫৭, ৫৯;আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাতহা/৮৪৫।]

‘আমীন’ অর্থ : ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺳْﺘَﺠِﺐْ ‘হে আল্লাহ!তুমি কবুল কর’। ‘আমীন’ ( ﺁﻣِﻴْﻦ)-এর আলিফ -এরউপরে ‘মাদ্দ’ বা ‘খাড়া যবর’ দুটিই পড়া জায়েযআছে।[মুনযেরী, ছহীহ আত-তারগীব হা/৫১১, হাশিয়াআলবানী, ১/২৭৮ পৃঃ ।]

নাফে‘ বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ)কখনো ‘আমীন’ বলা ছাড়তেন না এবং তিনিএব্যাপারে সবাইকে উৎসাহ দিতেন’। আত্বা বলেন,আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) সরবে ‘আমীন’বলতেন। তাঁর সাথে মুক্তাদীদের ‘আমীন’-এরআওয়াযে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত’ ( ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﻥَّﻟِﻠْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻟَﻠَﺠَّﺔً )।[বুখারী তা‘লীক্ব ১/১০৭ পৃঃ, হা/৭৮০;ফাৎহুল বারী হা/৭৮০-৮১ ‘সশব্দে আমীন বলা’অনুচ্ছেদ-১১১।]

এক্ষণে যদি কোন ইমাম ‘আমীন’না বলেন, কিংবা নীরবে বলেন, তবুও মুক্তাদীসরবে ‘আমীন’ বলবেন।[ছহীহ ইবনু খুযায়মাহা/৫৭৫, অনুচ্ছেদ-১৩৯।]

অনুরূপভাবে যদি কেউ জেহরী ছালাতে ‘আমীন’ বলার সময়জামা‘আতেযোগদান করেন, তবে তিনি প্রথমেসরবে ‘আমীন’ বলে নিবেন ও পরে নীরবেসূরায়ে ফাতিহা পড়বেন। ইমাম ঐ সময় পরবর্তীক্বিরাআত শুরু করা থেকে কিছু সময় বিরতি দিবেন।যাতে সূরা ফাতিহা ও পরবর্তী আমীন ওক্বিরাআতের মধ্যে পার্থক্য বুঝা যায়। উল্লেখ্যযে, এ সময় মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করা এবং সেইসময় পরিমাণ ইমামের চুপ থাকার কোন দলীল নেই।[তিরমিযী, আবুদাঊদ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৮১৮ -এরটীকা-আলবানী, ‘তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’অনুচ্ছেদ-১১; দ্রঃ মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী ৭মবর্ষ ১০ম সংখ্যা, জুলাই ২০০৪, প্রশ্নোত্তর:৪০/৪০০, পৃঃ ৫৫-৫৬ ।]

‘আমীন’ শুনে কারু গোস্বাহওয়া উচিত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَﻗَﺎﻝَ : ﻣَﺎ ﺣَﺴَﺪَﺗْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮْﺩُ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣَﺎ ﺣَﺴَﺪَﺗْﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰﺍﻟﺴَّﻼَﻡِ ﻭَﺍﻟﺘَّﺄْﻣِﻴْﻦِ، ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺇﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻭﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ-ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻋﻨﻬﺎ ﺑﻠﻔﻆ : ﻣَﺎ ﺣَﺴَﺪَﺗْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮْﺩُ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﻲْﺀٍﻣَﺎ ﺣَﺴَﺪَﺗْﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻝِ ﺁﻣِﻴْﻦَ -‘ইহুদীরা তোমাদেরসবচেয়ে বেশী হিংসা করে তোমাদের ‘সালাম’ ও‘আমীন’ -এর কারণে’। [আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬;ছহীহ আত-তারগীব হা/৫১২।]

কারণ এই সাথেফেরেশতারাও ‘আমীন’ বলেন। ফলে তা আল্লাহরনিকট কবুল হয়ে যায়।উল্লেখ্য যে, ‘আমীন’ বলারপক্ষে ১৭টি হাদীছ এসেছে।[আর-রাওযাতুননাদিইয়াহ ১/২৭১।]

যার মধ্যে ‘আমীন’ আস্তে বলারপক্ষে শো‘বা থেকে একটি রেওয়ায়াত আহমাদ ওদারাকুৎনীতে এসেছে ﺃﻭ ﺃَﺧْﻔَﻲ ﺑِﻬَﺎ ﺻَﻮْﺗَﻪُ ﺧَﻔَﺾَবলে। যার অর্থ ‘আমীন’ বলার সময় রাসূল (ছাঃ)-এরআওয়ায নিম্নস্বরে হ’ত’। একই রেওয়ায়াত সুফিয়ানছাওরী থেকে এসেছে ﺭَﻓَﻊَ ﺑِﻬَﺎ ﺻَﻮْﺗَﻪُ বলে।যার অর্থ- ‘তাঁর আওয়ায উচ্চৈঃস্বরে হ’ত’। হাদীছবিশারদ পন্ডিতগণের নিকটে শো‘বা থেকে বর্ণিতনিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলার হাদীছটি‘মুযত্বারিব’ ( ﻣﻀﻄﺮﺏ )। অর্থাৎ যার সনদ ও মতনে নামও শব্দগত ভুল থাকার কারণে ‘যঈফ’। পক্ষান্তরেসুফিয়ান ছওরী (রাঃ) বর্ণিত সরবে আমীন বলারহাদীছটি এসব ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে‘ছহীহ’।[দারাকুৎনী হা/১২৫৬-এর ভাষ্য, আর-রাওযাতুননাদিইয়াহ ১/২৭২; নায়লুল আওত্বার ৩/৭৫।]

অতএব বুখারী ও মুসলিম সহ বিভিন্ন ছহীহ হাদীছে বর্ণিতজেহরী ছালাতে সশব্দে ‘আমীন’ বলার বিশুদ্ধসুন্নাতের উপরে আমল করাই নিরপেক্ষমুমিনেরকর্তব্য। তাছাড়া ইমামের সশব্দে সূরায়েফাতিহা পাঠ শেষে‘ছিরাতুল মুস্তাক্বীম’-এর হেদায়াতপ্রার্থনার সাথে মুক্তাদীগণের নীরবে সমর্থনদান কিছুটা বিসদৃশ বৈ-কি!

০১। আতা (রঃ) বলেন, আমীন হল দু’আ। তিনি আরো বলেন, আবদুল্লাহ ইবনুযুবায়ের (রাঃ) ও তার পিছনের মুসল্লীগণ এমনভাবেআমীন বলতেন যে মসজিদে গুমগুম আওয়াজহতো। আবু হুরায়রা (রাঃ) ইমামকে ডেকে বলতেন,আমাকে আমীন বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিতকরবেন না। নাফি(রঃ)বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) কখনই আমীন বলা ছাড়তেন না এবং তিনি তাদের (আমীনবলার জন্য)উৎসাহিত করতেন। আমি তাঁর কাছ থেকেএ সম্পর্কে হাদিস শ্তনেছি । সহীহ বুখারী,২য়খন্ড,অনুচ্ছেদ-৫০২, পৃষ্ঠা নং ১২০ও১২১, প্রকাশনী-ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

০২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রঃ)—-আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেনঃ ইমাম যখন আমীন বলেন, তখনতোমরাও আমীন বলো। কেননা, যার আমীন(বলা) ফিরিশতাদের আমীন (বলা) এক হয়, তারপূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রঃ)বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ও আমীন বলতেন। সহীহবুখারী,২য় খন্ড, হাদিছ নং ৭৪৪, পৃষ্ঠা নং ১২১প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

০৩। আবদুল্লাহ ইবনুইউসুফ (রঃ)—-আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ(সালাতে) আমীন বলে, আর আসমানের ফিরিশ্তাগণআমীন বলেন এবং উভয়ের আমীন একই সময়েহলে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।সহীহ বুখারী,২য় খন্ড, হাদিছ নং ৭৪৫,পৃষ্ঠা নং ১২১প্রকাশনী- ইসঃফাউঃ বাংলাদেশ। এ সংক্রান্তআরোদেখুন ৭৪৬ নং হাদিস।

০৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া(রঃ) —আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলছেন, যখন ইমাম আমীন বলবেন,তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা, যে,ব্যক্তি ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে একই সময়আমীন বলবে। তার পূর্ববর্তী সমস্ত পাপমোচনহয়ে যাবে। ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ওআমীন বলতেন। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,হাদিস নং৭৯৮, পৃষ্ঠা নং ১৬০ও ১৬১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃবাংলাদেশ।

০৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রঃ) —- আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলছেন, ইমাম যখন গাইরিল মাগ—-ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন বলবেন, তার পিছনের ব্যক্তিমুক্তাদি আমীন বলবে এবং তার বাক্য আকাশবাসীর(ফিরিশতা) বাক্যের অনুরূপ একই সময়ে উচ্চারিতহবে,তখন তার পূর্ববর্তী সমূদয় পাপ মোচন হয়েযাবে। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৮০৩, পৃষ্ঠা নং১৬২, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ। এ সংক্রান্তআরো দেখুন ৭৯৯-৮০২ নং হাদিস।

০৬। আবু হুরায়রা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,ইমাম যখনআমীন বলে, তোমরাও তখন আমীন বলো।কেননা, যার আমীন বলা ফিরিশতাদের আমীন বলারসাতে মিলেযাবে,তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করেদেয়া হবে। ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ওআমীন বলতেন। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,হাদিস নং৮১০, পৃষ্ঠা নং ১৭৮, প্রকাশনী- ইসলামিক সেন্টারবাংলাদেশ। এ সংক্রান্ত আরো দেখুন ৮১১-৮১৫ নংহাদিস।

০৭। মুহাম্মদ ইবনু কাছীর (রঃ) —ওয়াইল ইবনুহুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহসাল্লালাহুআলাইহে ওয়াসাল্লাম ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন পাঠ করারপর জোরে ‘আমীন বলতেন’। আবু দাউদ,২য়খণ্ড,হাদিস নং ৯৩২, পৃষ্ঠা নং ৩৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃবাংলাদেশ।

০৮। মাখলাদ ইবনু খালিদ (রঃ)ওয়াইল ইবনু হুজর(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি রাসুলুল্লাহসাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায়করা কালে তিনি উচ্চস্বরে আমীন বলেন এবং(সালাত শেষে) ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরান এভাবেযে, – আমি তাঁর গন্ডদেষের সাদা অংশপরিষ্কারভাবে দেখি। আবু দাউদ,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯৩৩,পৃষ্ঠা নং ৩৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

০৯। নাসরইবনু আলী (রঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) এর চাচাত ভাই আবুআবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম “গায়রিল মাগদুবিআলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন” পাঠের পরে এমনজোরে আমীন বলতেন যে প্রথম কাতারে তাঁরনিকটবর্তীলোকেরা তা শুনতে পেত। আবুদাউদ,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯৩৪, পৃষ্ঠা নং ৩৭, প্রকাশনী-ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

১০। আল কানাবী (রঃ) — আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যখন ইমামআমীন বলবে , তখন তোমরাও আমীন বলবে।কেননা যে ব্যক্তির আমীন শব্দ ফিরিশতাদেরআমীন শব্দের সাথে মিলবে ,তার পূর্বজীবনের সমস্ত গুনাহ মার্জিত হবে। ইবনু শিহাব (রঃ)বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ও আমীন বলতেন। আবুদাউদ,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯৩৬, পৃষ্ঠা নং ৩৮, প্রকাশনী-ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

১১। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকেবর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলছেন,যখন ইমাম আমীনবলেন, তখন তোমরাও আমীন বল। কেননা যারআমীন ফিরিশতাদের আমীন এর সাথেএকত্রেউচ্চারিত হয় তার পূর্বের গুনাহমাফ করা হয়।মুয়াত্তা মালিক ১ম খণ্ড,পরিচ্ছেদ নং ১১, পৃষ্ঠা নং ১৪০,প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

১২। আবু হুরায়রা (রাঃ)হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন, যখন ইমাম‘গায়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’ বলবেতখন তোমরা আমীন বল। যাহার বাক্য ফিরিশতাদের(আমীন)বাক্যের সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেরগুনাহ মাফ করা হবে। মুয়াত্তা মালিক ১ম খণ্ড,পরিচ্ছেদনং১১, রেওয়াত নং৪৫,পৃষ্ঠা নং১৪০, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃবাংলাদেশ।

১৩। আমর ইবনু উসমান (রঃ)—আবু হুরায়রা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেনঃ যখন তিলাওয়াতকারী আমীন বলে ,তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা,ফিরিশতাগনও আমীন বলে থাকেন। অতএব, যারআমীন বলা ফিরিশতার আমীন বলার মতহবে,আল্লাহপাক তার পূর্বের পাপ মার্জনা করবেন।সুনানু ইবনু নাসাই,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯২৮, পৃষ্ঠা নং ৫৬,প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

১৪। মুহাম্মদ ইবনু মানসুর(রঃ)—আবু হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাঃ) থেকেবর্ণিত। তিনি বলেন,যখন তিলাওয়াতকারী (ইমাম)আমীন বলে, তখন তোমরাও আমীন বলবে।কেননা, ফিরিশতাগনও আমীন বলে থাকেন। অতএব,যার আমীন বলা ফিরিশতার আমীন বলার মতহবে,আল্লাহপাক তার পূর্বের পাপ মার্জনা করবেন।সুনানু ইবনু নাসাই,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯২৯, পৃষ্ঠা নং ৫৬,প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

১৫। ইসমাইল ইবনু মাসুদ(রঃ) — আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন, যখন ইমাম ‘গায়রিল মাগদুবিআলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’ বলবে তখন তোমরাআমীন বল। কেননা, ফিরিশতাগণ আমীন বলেথাকেন। ইমামও আমীন বলে থাকেন, যার আমীনবলা ফিরিশতার আমীন বলার মত হবে, আল্লাহপাক তারপূর্বের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। সুনানু ইবনুনাসাই,২য় খণ্ড,হাদিস নং ৯৩০, পৃষ্ঠা নং ৫৬, প্রকাশনী-ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

১৬। আবু বকর ইবনু আবু শায়বা ওহিসাম ইবনু আম্মার (রঃ) — আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন, যখন ক্বারী (ইমাম) আমীনবলে, তখন তোমরা আমীন বলবে। কেননা,ফিরিশতাগণ আমীন বলে থাকেন। আর যার আমীনবলা, ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তারপূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়াহয়। সুনানু ইবনুমাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ৮৫১, পৃষ্ঠা নং ৩২৬, প্রকাশনী-ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

১৭। বকর ইবনু খালফ ও জামীলইবনু হাসান ও আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারাহ মিসরী ওহাশিম ইবনু কাশিম হাররানী —আবু হুরায়রা (রাঃ) হতেবর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলছেনঃ যখন ইমাম আমীনবলে, তখন তোমরা আমীন বলবে। কেননা, যারআমীন ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথেমিলে যায়,তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। সুনানু ইবনুমাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ৮৫২, পৃষ্ঠা নং ৩২৬, প্রকাশনী-ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

১৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রঃ)আবুহুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, লোকেরাআমীন বলা ছেড়ে দিয়েছে। অথচ, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) যখন গাইরিল—ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন বলতেন;তখন তিনি বলতেন আমীন। এমনকি প্রথম সারিরলোকেরা তা শুনতে পেত এবং এতে মসজিদগুঞ্জরিত হত। সুনানু ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ৮৫৩,পৃষ্ঠা নং ৩২৬, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।

১৯।ইসহাক ইবনু মানসুর (রঃ) —আয়েশা (রাঃ) এর সূত্রেনাবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। ইয়াহুদীরাতোমাদের কোন ব্যাপারে এত ঈর্ষান্বিত হয়না,যতটা না তারা তোমাদের সালাত ওআমীনের উপরঈর্ষান্বিত হয়। সুনানু ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস নং ৮৫৬,পৃষ্ঠা নং ৩২৭, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ। এসংক্রান্ত আরো দেখুন ৮৫৪,৮৫৫ ও ৮৫৭ নং হাদিস।

আমীন উচ্চঃস্বরে বলার আরও দলিল দেখুন (মুসলিম১ম খন্ড ১৭৬ পৃঃ; নাসাঈ ১ম খন্ড ১৪৭ পৃঃ; মুয়াত্তা মালিক৩০ পৃঃ; দারা কুতনী ১২৭ পৃঃ; বায়হাকী ২য় খন্ড ৫৯ পৃঃ;ফাতহুল বারী ২য় খন্ড ২১৭ পৃঃ; নাইলুল আওতার ২য়খন্ড ২৪৪ পৃঃ; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ১ম খন্ড২৩৬ পৃঃ; সুবুলুস সালাম ১ম খন্ড ২৪৩ পৃঃ; তুহফাতুলআহওয়াযী ১ম খন্ড ১০৮ পৃঃ; তালখিসুল হাবীব ১মখন্ড ৯০ পৃঃ; আকামুল আহ্কামুল ১ম খন্ড ২০৭পৃঃ);

আমীন উচ্চ স্বরে বলার আরও দলিল দেখুন (মিশকাত-মাওলানা নুর মোহাম্মাদ আযমী ২য় খন্ড হাঃ৭৬৮, ৭৮৭; মিশকাত মাদ্রাসার পাঠ্য ২য় খন্ড হাঃ ৭৬৮,৭৮৭; বাংলা অনুবাদ বুখারি মাওলানা আজীজুল হক ১মখন্ড হাঃ ৪৫২; সহিহ আল বুখারি আঃ প্রঃ ১ম খন্ড হাঃ ৭৩৬,৭৩৮; সহিহুল বুখারী তাঃ পাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৭৮০, ৭৮২;বুখারী শরীফ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৭৪১, ৭৪৩;মুসলিমশরীফ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ৭৯৭, ৭৯৮, ৭৯৯, ৮০০; আবুদাউদ ইঃ ফাঃ ২য় খন্ড হাঃ ৯৩২; তিরমিযী শরীফ ইঃ ফাঃ ১মখন্ড হাঃ ২৪৮; ইবনে মাযাহ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৮৩৭, ৮৩৮;জামে তিরমিযী মাওলানা আব্দুন নুর সালাফী ১ম খন্ডহাঃ ২৪১)

আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত (এবং ইবনু আব্বাসহতেও) তিনি বলেন যে, রাসুল (সঃ) বলেছেন,ইহুদীরা তোমাদের প্রতি এতটা হিংসা অন্য কোনবিষয়ে করে না যতটা হিংসা সালাম দেয়াতে এবংজোরে আমীন বলাতে করে; অতএব তোমরাবেশী করে জোরে আমীন বল (ইবনু মাযাহ৬২ পৃঃ);

জোরে আমীন শুনে চটা ইহুদিদের সম্পর্কে আরও দলিল দেখুন (রাফউল উজাজাহ ১মখন্ড ৩০০ পৃঃ; ইবনু কাসীর ১ম খন্ড ৫৮ পৃঃ;আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ১ম খন্ড ১৫০ পৃঃ; জামিউলফাওয়ায়েদ ১ম খন্ড ৭৬ পৃঃ; নাইলুল আওতার ২য় খন্ড২৪৬ পৃঃ; কানযুল উম্মাল ৩য় খন্ড ১৮৬ পৃঃ);

পরিশেষে;

মুসলমান ভাই-বোনদের জন্য ছোট একটি উপমাপেশ করতে চাই- যেমন ধরুন আপনি কোন বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিলেন, কর্তৃপক্ষেরদেয়া কাগজ আপনি লিখে শেষ করেফেলেছেন, কিন্তু আপনি আপনার লেখা শেষকরতে পারেননি কারন, আপনার লেখার ভাব-বিশ্লেষণ ব্যাপক, সুন্দর হস্তাক্ষর ইত্যাদি, এই জন্যআপনাকে আরো অতিরিক্ত কাগজ নিতে হবেসুন্দরভাবে প্রশ্নোওর সম্পাদন করতে, এবং আপনিযদি তা সঠিকভাবে লেখেন বা সম্পাদনকরেনঅবশ্যই আপনি অন্যান্য ছাত্রদের তুলনায়বেশী নম্বর পাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।

সুন্নাত তদ্রুপ আপনি যত বেশী বেশী সুন্নাত পালন করবেন ততবেশী রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ অবলম্বনকারী হবেন এবং বেশীবেশী নেকী অর্জন করতে পারবেন।উল্লেখিত হাদিসগুলোর আলোকে সকলেইএকমত হবেন যে,নাবী কারীম (সাঃ) উচ্চস্বরে(ইমাম) আমীন বলতেন সাথে সাথে পিছনেরলোকেরাও উচ্চস্বরে আমীন বলতেন। আল্লাহসুবাহানাহু তায়ালা আমাদেরকে সঠিক এবং সহীহাদীসের আলোকে আমল করার তাওফিক দানকরুন। আমীন। ।

আমাদের করণীয়ঃ

সকল মুসলমানের উচিত সহীহ হাদীস মোতাবেক জীবনেরপ্রত্যকটি আমল করা।।

নারীদের পর্দা হীনতার পরিণতি

পর্দাহীনতার পরিণতি চমৎকার
একটি লেখা
পর্দাহীনতার পরিণতি
ভূমিকা ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ َّﻥِﺇ ِﻪﻠﻟ ُﻩُﺪَﻤْﺤَﻧ ،
ُﻪُﻨْﻴِﻌَﺘْﺴَﻧَﻭ ُﻩُﺮِﻔْﻐَﺘْﺴَﻧَﻭ ُﺫْﻮـُﻌَﻧَﻭ ، ِﻪﻠﻟﺎِﺑ
ْﻦِﻣ ِﺭْﻭُﺮُﺷ ﺎَﻨِﺴُﻔْﻧَﺃ ، ْﻦِﻣَﻭ ِﺕﺎَﺌِّﻴَﺳ
ﺎَﻨِﻟﺎَﻤْﻋَﺃ ، ْﻦَﻣ ِﻩِﺪْﻬَّﻳ ُﻪﻠﻟﺍ َﻼَﻓ َّﻞِﻀُﻣ ُﻪَﻟ ،
ْﻦَﻣَﻭ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻞِﻠْﻀُّﻳ َﻱِﺩﺎَﻫ َﻼَﻓ ُﻪَﻟ ، ُﺪَﻬْﺷَﺃَﻭ
ْﻥَﺃ َّﻻ َﻪَﻟِﺇ َّﻻِﺇ ُﻪﻠﻟﺍ ُﻩَﺪْﺣَﻭ َﻻ َﻚْﻳِﺮَﺷ ُﻪَﻟ ،
ُﺪَﻬْﺷَﺃَﻭ ﺍًﺪَّﻤَﺤُﻣ َّﻥَﺃ ُﻩُﺪْﺒَﻋ ُﻪُﻟْﻮُﺳَﺭَﻭ যাবতীয়
প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তারই
প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য চাই, তার
নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট
আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের
কর্মসমূহের খারাপ পরিণতি থেকে আশ্রয়
কামনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে
গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ
করেন তাকে হেদায়েত দেয়ারও কেউ নেই। আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার
ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক
নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর
বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক
তার উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার
সাহাবীদের উপর এবং যারা কিয়ামত অবধি
এহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের
উপর। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয়
বান্দাদের প্রতি অধিক দয়ালু ও ক্ষমাশীল।
তিনি তার বান্দাদের যে কোনো উপায়ে ক্ষমা
করতে ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন
করতে পছন্দ করেন। আমরা সরল পথে চলতে
চাই, হক জানতে চাই। অথচ সুপথ পেতে হলে রব
হিসেবে আল্লাহকে মানতে হবে, তাগূতকে বর্জন
করতে হবে; জীবনাদর্শ হিসেবে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর অনুসরণ
করতে হবে এবং তাকে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে
মানতে হবে। রাসূলের জীবনেই আমাদের জন্য
উত্তম আদর্শ রয়েছে। জীবনের সকল ক্ষেত্র
থেকে বাতিল আদর্শ পরিত্যাগ করতে হবে।
নারী জাতীর জন্য পর্দা একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিধান। আল্লাহ তা‘আলা নারীদের ইজ্জত,
সম্ভ্রম ও সম্মানকে রক্ষা করার জন্য পর্দার
বিধানকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। পর্দা
নারীর সৌন্দর্য, নারীর ইজ্জত এবং সুরক্ষা।
পর্দাহীন নারী বাকলহীন কলার মত- যার উপর
মশা-মাছি বসার কারণে কেউ তা গ্রহণ করতে
চায় না। বাজারে তার কোনো দাম নেই। অনুরূপ
নারীও যখন ঘরের বাইরে পর্দাহীন অবস্থায়
বের হয়, তখন সমাজে তার কোনো দাম থাকে না।
এ বইটি আমরা পর্দার গুরুত্ব, পর্দাহীনতার
পরিণতি, পর্দার বিধান ইত্যাদি কুরআন ও
হাদিসের আলোকে আলোচনা করছি। আল্লাহর
নিকট তাওফিক কামনা আল্লাহ যেন আমার এ
প্রচেষ্টাকে কবুল করেন। আমিন। সংকলক:
জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের পর্দা আল্লাহ
তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে
সমগ্র মাখলুকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষ
হিসেবে মানবজাতির শ্রেণী বিন্যাস করেছেন।
মানুষকে একই আত্মা থেকে সৃষ্টি করলেও তিনি
মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও
নারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ
ْﺍﻮُﻘَّﺗﭐ ُﺱﺎَّﻨﻟﭐ ُﻢُﻜَّﺑَﺭ ﻢُﻜَﻘَﻠَﺧ ﻱِﺬَّﻟﭐ ﻦِّﻣ
ٖﺓَﺪِﺣَٰﻭ ٖﺲۡﻔَّﻧ َﻖَﻠَﺧَﻭ ﺎَﻬۡﻨِﻣ ﺎَﻬَﺟۡﻭَﺯ َّﺚَﺑَﻭ
ﺎَﻤُﻬۡﻨِﻣ ﺎٗﻟﺎَﺟِﺭ ۚٗﺀﺂَﺴِﻧَﻭ ﺍٗﺮﻴِﺜَﻛ ْﺍﻮُﻘَّﺗﭐَﻭ
َﻪَّﻠﻟﭐ َﻥﻮُﻟَﺀﺂَﺴَﺗ ﻱِﺬَّﻟﭐ ۦِﻪِﺑ َۚﻡﺎَﺣۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ
َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻥﺎَﻛ ﺎٗﺒﻴِﻗَﺭ ۡﻢُﻜۡﻴَﻠَﻋ ١
﴾ ‏[ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ : ١ ] “হে মানুষ, তোমরা তোমাদের
রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি
করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি
করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে
দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা
আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে
অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-
সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয়
আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক”।[1]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব সৃষ্টি করার পর
নারী ও পুরুষ উভয়কে কিছু বৈশিষ্ট্য দান
করেছেন। নারী যেমন কিছু স্বতন্ত্র
বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অনুরূপভাবে পুরুষেরও
রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। নারী ও
পুরুষের বৈশিষ্টগত পার্থক্যটা অনেকটাই
সৃষ্টিগত; যা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি
না। আর কিছু পার্থক্য আছে দায়িত্ব পালনের
ক্ষেত্রে। নারীদের দায়িত্ব ও পুরুষের দায়িত্ব
কখনো এক নয়। একজন পুরুষ যে দায়িত্ব পালন
করতে পারে নারীরা তা পারে না। আবার একজন
নারী যে কাজ করতে পারে একজন পরুষ তা করতে
পারে না। নারীর জন্য সন্তান লালন-পালন,
স্বামীর খেদমত, বাড়ীর ঘরের রান্না- বান্না
ইত্যাদি কর্মই হল শোভনীয়। আর পুরুষের
জন্য খেত-খামার, চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য
ইত্যাদি শোভনীয়। নারী ও পুরুষের কর্ম
ক্ষেত্র ও দায়িত্ব ভিন্ন হলেও আল্লাহ
তা‘আলার নিকট মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনা
হলো তাকওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহকে যত বেশি
ভয় করবে, চাই সে নারী হোক বা পুরুষ হোক
আল্লাহর নিকট তার মূল্যায়নটা তত বেশি
হবে। আল্লাহ তা‘আলা কোনো নারী বা পুরুষকে
তার নেক আমলের প্রতিদান দেয়ার ক্ষেত্রে
কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করেন না। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ﴿ ُﺱﺎَّﻨﻟﭐ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ ﺎَّﻧِﺇ
ﻢُﻜَٰﻨۡﻘَﻠَﺧ ﻦِّﻣ ٖﺮَﻛَﺫ ۡﻢُﻜَٰﻨۡﻠَﻌَﺟَﻭ ٰﻰَﺜﻧُﺃَﻭ ﺎٗﺑﻮُﻌُﺷ
َﻞِﺋﺂَﺒَﻗَﻭ ْۚﺍٓﻮُﻓَﺭﺎَﻌَﺘِﻟ َّﻥِﺇ ۡﻢُﻜَﻣَﺮۡﻛَﺃ َﺪﻨِﻋ
ِﻪَّﻠﻟﭐ ۚۡﻢُﻜٰﻯَﻘۡﺗَﺃ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﭐ ٞﺮﻴِﺒَﺧ ٌﻢﻴِﻠَﻋ ١٣
﴾ ‏[: ﺕﺍﺮﺠﺤﻟﺍ ١٣ ] “হে মানুষ, আমি
তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি
করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও
গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর
পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর
কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের
মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ
সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।”[2] যদি কোনো নারী
বা পুরুষ মুমিন থাকা অবস্থায় নেক আমল করে
আল্লাহ তা‘আলা তাদের উভয়কে জান্নাত দান
করবেন তাদের প্রতি কোনো প্রকার জুলুম করা
হবে না এবং বৈষম্য করা হবে না। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ﴿ ۡﻞَﻤۡﻌَﻳ ﻦَﻣَﻭ ِﺖَٰﺤِﻠَّٰﺼﻟﭐ َﻦِﻣ ﻦِﻣ
ٍﺮَﻛَﺫ ٰﻰَﺜﻧُﺃ ۡﻭَﺃ َﻮُﻫَﻭ ٞﻦِﻣۡﺆُﻣ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺄَﻓ
َﻥﻮُﻠُﺧۡﺪَﻳ َﺔَّﻨَﺠۡﻟﭐ َﻥﻮُﻤَﻠۡﻈُﻳ ﺎَﻟَﻭ ﺍٗﺮﻴِﻘَﻧ ١٢٤
﴾ ‏[ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ : ١٢٤ ] “আর পুরুষ কিংবা নারীর
মধ্য থেকে যে নেক কাজ করবে এমতাবস্থায় যে,
সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে
এবং তাদের প্রতি খেজুর- বীচির আবরণ
পরিমাণ জুলুমও করা হবে না”।[3] অপর আয়াতে
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿ ۡﻦَﻣ َﻞِﻤَﻋ ﺎٗﺤِﻠَٰﺻ
ﻦِّﻣ ٍﺮَﻛَﺫ ۡﻭَﺃ ٰﻰَﺜﻧُﺃ ٞﻦِﻣۡﺆُﻣ َﻮُﻫَﻭ ۥُﻪَّﻨَﻴِﻴۡﺤُﻨَﻠَﻓ
ٗﺓٰﻮَﻴَﺣ ۖٗﺔَﺒِّﻴَﻃ ۡﻢُﻬَّﻨَﻳِﺰۡﺠَﻨَﻟَﻭ ﻢُﻫَﺮۡﺟَﺃ ِﻦَﺴۡﺣَﺄِﺑ
ْﺍﻮُﻧﺎَﻛ ﺎَﻣ َﻥﻮُﻠَﻤۡﻌَﻳ ٩٧ ﴾ ‏[ : ﻞﺤﻨﻟﺍ ٩٧ ]
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক
বা নারী হোক, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান
করব এবং যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি
তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব”।[4] আল্লাহ
তা‘আলা আরও বলেন, ﴿ ۡﻦَﻣ َﻞِﻤَﻋ ٗﺔَﺌِّﻴَﺳ ﺎَﻠَﻓ
ٰٓﻯَﺰۡﺠُﻳ ﺎَّﻟِﺇ ۖﺎَﻬَﻠۡﺜِﻣ ۡﻦَﻣَﻭ ﺎٗﺤِﻠَٰﺻ َﻞِﻤَﻋ ﻦِّﻣ
ٍﺮَﻛَﺫ ٰﻰَﺜﻧُﺃ ۡﻭَﺃ َﻮُﻫَﻭ ٞﻦِﻣۡﺆُﻣ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺄَﻓ
َﻥﻮُﻠُﺧۡﺪَﻳ َﻥﻮُﻗَﺯۡﺮُﻳ َﺔَّﻨَﺠۡﻟﭐ ﺎَﻬﻴِﻓ ِﺮۡﻴَﻐِﺑ
ٖﺏﺎَﺴِﺣ ٤٠ ﴾ ‏[ : ﺮﻓﺎﻏ ٤٠ ] কেউ পাপ কাজ
করলে তাকে শুধু পাপের সমান প্রতিদান দেওয়া
হবে, আর যে পুরুষ অথবা নারী মুমিন হয়ে
সৎকাজ করবে, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে,
সেখানে তাদেরকে অগণিত রিজিক দেওয়া হবে।
[5] আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষের মাঝে
পর্দার বিধান রেখেছেন। নারীদের উপর পর
পুরুষ থেকে পর্দা করা ফরয করেছেন। পর্দার
বিধান নারীর কল্যাণের জন্যই রাখা হয়েছে।
যদি পর্দার বিধান না রাখা হতো তাহলে নারী
ও পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার কারণে সমাজে
অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটত। যেমনটি বর্তমানে যে
দেশ বা সমাজে পর্দা নাই সে সমাজের অবস্থার
দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই। সেখানে
প্রতিনিয়তই নারীরা জলুম নির্যাতন ও
বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী ও পুরুষের
অবাধ মেলা- মেশা মানব সমাজকে কলুষিত করে
এবং সমাজে ফেতনা-ফ্যাসাদ বৃদ্ধি করে। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺎَﻣ
ُﺖْﻛَﺮَﺗ ﻱِﺪْﻌَﺑ ﻲِﻓ ِﺱﺎَّﻨﻟﺍ ًﺔَﻨْﺘِﻓ َّﺮَﺿَﺃ ﻰَﻠَﻋ
ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ َﻦِﻣ‏» : ‏« ﺍَﺬَﻫ ٌﺚﻳِﺪَﺣ ٌﻦَﺴَﺣ
ٌﺢﻴِﺤَﺻ » “আমার পর আমি পুরুষের জন্য নারীর
ফেতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকারক কোনো
ফিতনা রেখে যাইনি”[6]। নারীর ফেতনাই হল
বড় ফেতনা। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে নারীদের
বিষয়ে অধিক সতর্ক করেছেন। যাতে এ ফিতনা
থেকে বেঁচে থাকা যায় এবং পর্দার বিধান
রেখেছেন। মাহরাম অর্থাৎ যাদের সাথে
চিরতরে বিবাহ অবৈধ, তারা ব্যতীত বেগানা
অর্থাৎ, যাদের সাথে বিবাহ হারাম নয়, এমন
লোকদের সাথে পর্দা করতে হয়। কোন নারী
কোনো পুরুষের সাথে একান্তে থাকবে না: নারী-
পুরুষের কোনো নির্জন স্থানে একাকী বাস,
কিছুক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে,
ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান
শরীয়তে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও
ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের
ভূমিকা অবতারণায় সহায়িকা হয়। আল্লাহর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
َﻻ َّﻥَﻮُﻠْﺨَﻳ ٍﺓَﺃَﺮْﻣﺎِﺑ ٌﻞُﺟَﺭ َّﻻِﺇ َﻥﺎَﻛ ﺎَﻤُﻬَﺜِﻟﺎَﺛ
ُﻥﺎَﻄْﻴَّﺸﻟﺍ ، “কোন পুরুষ যেন কোনো নারীর
সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ,
শয়তান উভয়ের কুটনি হয়”।[7] এ ব্যাপারে
সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয় দেওর-
ভাবী ও শালী- বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের
মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ ‘পর
চোরকে পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই।’ তাই
তো আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মহিলাদের পক্ষে তাদের দেওরকে
মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।” উকবা ইব্ন আমের
রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, َﻝﻮُﺧُّﺪﻟﺍَﻭ ْﻢُﻛﺎَّﻳِﺇ ﻰَﻠَﻋ
،ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ َﻝﺎَﻘَﻓ ٌﻞُﺟَﺭ َﻦِﻣ : ِﺭﺎَﺼْﻧَﻷﺍ ﺎَﻳ
َﺖْﻳَﺃَﺮَﻓَﺃ ،ِﻪﻠﻟﺍ َﻝﻮُﺳَﺭ ،َﻮْﻤَﺤﻟﺍ َﻝﺎَﻗ :
ُﻮْﻤَﺤﻟﺍ ُﺕْﻮَﻤْﻟﺍ . “তোমরা নারীদের কাছে
প্রবেশ করা হতে বিরত থাক। এ কথা বলার পর
একজন আনসারী ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল দেবরের বিষয়ে আপনি কি বলেন,
আল্লাহর রাসূল বলেন, দেবর হল মৃত্যু
সমতুল্য”।[8] অতএব দেওরের সাথে মায়ের
বাড়ি, ডাক্তারখানা, অনুরূপ বুনাই-এর সাথে
বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা কোনো বিলাস-
বিহারে যাওয়া-আসা এক মারাত্মক বিস্ফোরক
প্রথা বা ফ্যাশন। তদনুরূপ তাদের সাথে কোনো
কামরা বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির
দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা
তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে নিভৃত বাস, বাগদত্তা
বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর
একত্রে নির্জন বাস, লিফটে কোনো বেগানা
যুবক- যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও
নার্সের একান্তে চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও
ছাত্রীর একান্তে নির্জন-বাস ও পড়াশোনা,
স্বামীর অবর্তমানে কোনো বেগানা আত্মীয় বা
বন্ধুর সাথে নির্জন-বাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের
সাথে বা রিক্সায় রিকশাচালকের সাথে নির্জনে
গমন, তথাকথিত পীর ও তথাকথিত মহিলা
মুরিদের একান্তে বয়াত ও তা‘লীম[9] প্রভৃতি
একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুটনি
সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোনো
পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে। বারুদের নিকট
আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে।
যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দ প্রবণ এবং
দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও
বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে
মনোরম কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং চপলতা।
আর শয়তান তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে
দিয়ে আনন্দ বোধ করে থাকে। অনুরূপ কোনো
বেগানা মহিলার সাথে নির্জনে নামায পড়াও
বৈধ নয়। তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীর নিকট
নিজের সন্তান দেখতে গিয়ে বা কোনো কাজে
গিয়ে তার সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে
আর স্ত্রী নেই। আর এমন মহিলার সাথে
বিপদের আশঙ্কা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের
পূর্বের স্মৃতিচারণ করে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধার একান্তে বা তাদের সাথে যুবতী-
যুবকের নির্জন বাস, কোনো হিজরে বা খাসি
করা নারী- পুরুষের আপসে বা তাদের সাথে যুবক-
যুবতীর, একাধিক মহিলার সাথে কোনো একটি
যুবক অথবা একাধিক পুরুষের সাথে এক মহিলার,
কোনো সুশ্রী কিশোরের সাথে যুবকের নির্জন
বাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে এবং মহিলার
মাহরাম না পাওয়া গেলে কোনো মহিলার
জামাতে একজন পুরুষ থেকে সফর করায় অনেকের
নিকট অনুমতি রয়েছে। প্রকাশ যে, মহিলার
সাথে কোনো নাবালক শিশু থাকলে নির্জনতা
কাটে না। ব্যভিচার থেকে সমাজকে দূরে রাখার
জন্যই ইসলামে নারী-পুরুষে অবাধ মেলা- মেশা,
নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই অফিসে, মেসে,
ক্লাসরুমে, বিয়ে ও মরা বাড়িতে, হাসপাতালে,
বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির একত্রে
অবাধ মেলা- মেশা করা অবৈধ। মুসলিম নারীর
শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, তাকে বড় ডিগ্রী,
সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী পেতে হবে। তার
শিক্ষা জাতি গঠনের জন্য, সমাজ গড়ার জন্য,
মুসলিম দেশ ও পরিবেশ গড়ার জন্য যতটুকু
দরকার ততটুকু শিখতে পারলেই যথেষ্ট; যদিও
তা ঘরে বসেই হয়। তাছাড়া পৃথক গার্লস স্কুল-
কলেজ না থাকলে মিশ্র শিক্ষাঙ্গনে মুসলিম
নারীর শিক্ষায় ‘জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে
যাওয়ার ঘটনাই অধিক ঘটে থাকে; যে সব
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হওয়া যায়
ঠিকই, কিন্তু আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না।
নারীর স্বনির্ভরশীলা হয়ে জীবন-যাপন
করায় গর্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সুখ নেই।
প্রকৃতির সাথে লড়ে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা
করে নানান বিপত্তি ও বাধাকে উল্লঙ্ঘন করে
অর্থ কামিয়ে স্বাধীনতা আনা যায় ঠিকই;
কিন্তু শান্তি আনা যায় না। শান্তি আছে
স্বামীর সোহাগে, স্বামীর প্রেম, ভালোবাসা ও
আনুগত্যে। পরিত্যক্তা বা নিপীড়িতা হলে এবং
দেখার কেউ না থাকলে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে
তার কালাতিপাত করার যথেষ্ট সহজ উপায়
আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা বিরল।
অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে
পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে উঠবে।
যারা পরকালের চিরসুখে বিশ্বাসী তারা
জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের জন্য দ্বীন
ও ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন? নারীরা কখনোই
একাকী ঘরের বাইরে যাবে না: ব্যভিচারের
প্রতি নিকটবর্তী হওয়ার আর এক পদক্ষেপ
মহিলাদের একাকিনী কোথাও বাইরে যাওয়া-
আসা। তাই ‘সুন্দরী চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে
দোষ কি তাতে?’ বলে বহু লম্পট তাদের পাল্লায়
পড়ে থাকে, ধর্ষণের হাত হতে অনেকেই রক্ষা
পায় না, পারে না নিজেকে ‘রিমার্ক’ ও ‘টিস্’
এর শিলাবৃষ্টি হতে বাঁচাতে। এর জন্যই তো
সমাজ- বিজ্ঞানী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « َﻻ ِﺮِﻓﺎَﺴُﺗ
ُﺓَﺃْﺮَﻤﻟﺍ ﺎَّﻟِﺇ َﻊَﻣ ،ٍﻡَﺮْﺤَﻣ ﻱِﺫ َﻻَﻭ ُﻞُﺧْﺪَﻳ
ﺎَﻬْﻴَﻠَﻋ ٌﻞُﺟَﺭ ﺎَﻬَﻌَﻣَﻭ ﺎَّﻟِﺇ ٌﻡَﺮْﺤَﻣ ‏» ، َﻝﺎَﻘَﻓ
ٌﻞُﺟَﺭ : ﺎَﻳ َﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ُﺪﻳِﺭُﺃ ﻲِّﻧِﺇ ْﻥَﺃ
َﺝُﺮْﺧَﺃ ﻲِﻓ ِﺶْﻴَﺟ ﺍَﺬَﻛ ،ﺍَﺬَﻛَﻭ ﻲِﺗَﺃَﺮْﻣﺍَﻭ
ُﺪﻳِﺮُﺗ ،َّﺞَﺤﻟﺍ َﻝﺎَﻘَﻓ : ‏« ْﺝُﺮْﺧﺍ ﺎَﻬَﻌَﻣ » “কোন
মহিলা যেন এগানা পুরুষ ছাড়া একাকিনী সফর
না করে, তার নিকট যেন এগানা ছাড়া কোনো
বেগানা পরুষ প্রবেশ না করে, এ কথা শোনে এক
জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূলুল্লাহ আমি অমুক
অমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য সৈন্য দলে
নাম লিখিয়েছি অথচ আমার স্ত্রী হজের
উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন এখন আমি কি
করব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে উত্তর দিলেন তুমি তার সাথে বের হও”।
[10] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেন, « ُﺓَﺃْﺮَﻤﻟﺍ ،ٌﺓَﺭْﻮَﻋ ﺍَﺫِﺈَﻓ ْﺖَﺟَﺮَﺧ
ﺎَﻬَﻓَﺮْﺸَﺘْﺳﺍ ُﻥﺎَﻄْﻴَّﺸﻟﺍ »: “নারী গুপ্ত
জিনিস; সুতরাং যখন সে (বাড়ি হতে) বের হয়,
তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে রমণীয়
করে দেখায়”।[11] যার স্বামী বিদেশ তার
নিকট গমন নিষিদ্ধ ব্যভিচারের কাছে
যাওয়ার আর এক পদক্ষেপ কোনো এমন মহিলার
নিকট কোনো গম্য আত্মীয় বা অন্য পুরুষের
গমন যার স্বামী বর্তমানে বাড়িতে নেই,
বিদেশে আছে। কারণ এমন স্ত্রীর মনে
সাধারণত: যৌন ক্ষুধা একটু তুঙ্গে থাকে, তাই
বিপদ ঘটাই স্বাভাবিক। স্ত্রী বা ঐ পুরুষ
যতই পরহেজগার হোক, তবুও না। এ বিষয়ে
নীতি- বিজ্ঞানী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺍﻮُﺠِﻠَﺗ ﺎَﻟ ﻰَﻠَﻋ
،ِﺕﺎَﺒﻴِﻐُﻤﻟﺍ َّﻥِﺈَﻓ ﻱِﺮْﺠَﻳ َﻥﺎَﻄْﻴَّﺸﻟﺍ ْﻦِﻣ
ْﻢُﻛِﺪَﺣَﺃ ﻯَﺮْﺠَﻣ ِﻡَّﺪﻟﺍ ‏» ، ﺎَﻨْﻠُﻗ : ؟َﻚْﻨِﻣَﻭ
َﻝﺎَﻗ : ‏« َّﻦِﻜَﻟَﻭ ،ﻲِّﻨِﻣَﻭ َﻪَّﻠﻟﺍ ﻲِﻨَﻧﺎَﻋَﺃ
ِﻪْﻴَﻠَﻋ ُﻢَﻠْﺳَﺄَﻓ » “তোমরা সেই মহিলাদের
নিকট গমন করো না যাদের স্বামীরা বিদেশে
আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের রক্ত শিরায়
প্রবাহিত হয়”।[12] সাহাবী (রা:) বলেন, «
َﻝﻮُﺳَﺭ َّﻥِﺇ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪَّﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ
ﺎَﻧﺎَﻬَﻧ َﻞُﺧْﺪَﻧ ْﻥَﺃ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ِﺮْﻴَﻐِﺑ ِﻥْﺫِﺇ
َّﻦِﻬِﺟﺍَﻭْﺯَﺃ » “আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ
করেছেন যে, আমরা যেন মহিলাদের নিকট তাদের
স্বামীদের বিনা অনুমতিতে গমন না
করি।”[13] সুগন্ধি ব্যবহার করে নারীদের
ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ অনুরূপ কোনো
প্রকার সেন্ট বা পারফিউমড্ ক্রিম অথবা
পাউডার ব্যবহার করে বাইরে পুরুষদের সম্মুখে
(পর্দার সাথে হলেও) যাওয়া ব্যভিচারের
নিকটবর্তী হওয়ার এক ভূমিকা। যেহেতু
যুবকের প্রবৃত্তি এই যে, মহিলার নিকট হতে
সুগন্ধ পেলে তার যৌন-চেতনা উত্তেজনায়
পরিণত হয়। যার জন্যই সংস্কারক নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ُّﻞُﻛ
ٍﻦْﻴَﻋ ُﺓَﺃْﺮَﻤﻟﺍَﻭ ،ٌﺔَﻴِﻧﺍَﺯ ﺍَﺫِﺇ ْﺕَﺮَﻄْﻌَﺘْﺳﺍ
ْﺕَّﺮَﻤَﻓ ِﺲِﻠْﺠَﻤﻟﺎِﺑ َﻲِﻬَﻓ ﺍَﺬَﻛَﻭ ﺍَﺬَﻛ ‏» ﻲِﻨْﻌَﻳ
ًﺔَﻴِﻧﺍَﺯ “প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর
নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো
(পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায়
তাহলে সে এক বেশ্যা।” এমন কি এই অবস্থায়
নামাযের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ। প্রিয় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে
মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যায়, সেই
মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোনো নামায
কবুল হবে না”।[14] কোন পুরুষের সাথে
মোহনীয় কন্ঠে কথা বলবে না: কোন গম্য
পুরুষের সাথে মহিলার প্রগলভতার সাথে কিংবা
মোহনীয় কণ্ঠে সংলাপ ও কথোপকথন করাও
ব্যভিচারের নিকটবর্তীকারী পথসমূহের
অন্যতম ছিদ্রপথ। এ বিপজ্জনক বিষয়ে
সাবধান করে আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদের
উদ্দেশ্যে বলেন, ﴿ ِّﻲِﺒَّﻨﻟﭐ َﺀﺂَﺴِﻨَٰﻳ َّﻦُﺘۡﺴَﻟ
ٖﺪَﺣَﺄَﻛ ِﺀﺂَﺴِّﻨﻟﭐ َﻦِّﻣ ِﻥِﺇ َّۚﻦُﺘۡﻴَﻘَّﺗﭐ ﺎَﻠَﻓ
ِﻝۡﻮَﻘۡﻟﭑِﺑ َﻦۡﻌَﻀۡﺨَﺗ َﻊَﻤۡﻄَﻴَﻓ ﻱِﺬَّﻟﭐ ﻲِﻓ ۦِﻪِﺒۡﻠَﻗ
ﺽَﺮَﻣ ٣٢ ﴾ ‏[ : ﺏﺍﺰﺣﻻﺍ ٣٢ ] “হে নবী
স্ত্রীগণ তোমরা অন্যান্য নারীদের মত নয়,
যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষদের
সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে
ব্যাধিগ্রস্ত অন্তরের মানুষ প্রলুব্ধ
হয়।” [সূরা আল-আহযাব: ৩২] এই জন্যই ইমাম
ভুল করলে পুরুষ মুক্তাদীরা তসবিহ বলে স্মরণ
করাবে, আর মহিলারা হাত তালির শব্দে,
তসবীহ বলেও নয়! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, « ،ِﻝﺎَﺟِّﺮﻠِﻟ ُﺢﻴِﺒْﺴَّﺘﻟﺍ
ُﻖﻴِﻔْﺼَّﺘﻟﺍَﻭ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻠِﻟ » পুরুষদের জন্য
তাসবীহ এবং নারীদের জন্য তালি।[15] যাতে
নারীর কণ্ঠের শব্দে কতক পুরুষের মনে
যৌনানুভূতি জাগ্রত না হয়ে উঠে। সুতরাং,
নারী-কণ্ঠের গান তথা অশ্লীল গান যে কি, তা
রুচিশীল মানুষদের নিকট সহজে অনুমেয়। এমন
বহু হতভাগী মহিলা আছে যারা স্বামীর সাথে
কর্কশ কণ্ঠ স্বরে কথা বলে কিন্তু কোনো
উপহাসের পাত্রের (?) সাথে মোহন-সূরে সংলাপ
ও উপহাস করে। এরা নিশ্চয়ই পরকালেও
হতভাগী। নারী হাত স্পর্শ করা হারাম তদ্রূপ
বেগানা নারীর সাথে মুসাফাহা বৈধ নয়। হাতে
মোজা, দস্তানা বা কাপড়ের কভার রেখেও নয়।
কাম মনে হলে তা হবে হাতের ব্যভিচার। আয়েশা
রা. বলেন, ﺎَﻣ ْﺖَّﺴَﻣ ُﺪَﻳ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻝﻮُﺳَﺭ ﻰَّﻠَﺻ
ُﻪَّﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ َﺪَﻳ ٍﺓَﺃَﺮْﻣﺍ َّﻻِﺇ ًﺓَﺃَﺮْﻣﺍ
ﺎَﻬُﻜِﻠْﻤَﻳ . ﺍَﺬَﻫ ٌﺚﻳِﺪَﺣ ٌﻦَﺴَﺣ ٌﺢﻴِﺤَﺻ . রাসূল
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো
স্ত্রী ছাড়া আর কোনো মহিলার হাত স্পর্শ
করেননি। করতল চেপে ধরা এবং সুড়সুড়ি
দেওয়াও হল তার ইঙ্গিত! কোনো গম্য নারীর
দেহ স্পর্শ, বাসে-ট্রেনে, হাটে- বাজারে, স্কুলে-
কলেজে প্রভৃতি ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে চলা
বা বসা, নারী-পুরুষের ম্যাচ খেলা ও দেখা
প্রভৃতি ইসলামে হারাম। কারণ, এ সবগুলিও
অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। এগুলো মানুষের
হাত পা ও চোখের ব্যভিচার। সমাজ সংস্কারক
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, « َﺐِﺘُﻛ ﻰَﻠَﻋ ِﻦْﺑﺍ َﻡَﺩﺁ ُﻪُﺒﻴِﺼَﻧ َﻦِﻣ
،ﺎَﻧِّﺰﻟﺍ ٌﻙِﺭْﺪُﻣ َﻚِﻟَﺫ ،َﺔَﻟﺎَﺤَﻣ ﺎَﻟ
ﺎَﻤُﻫﺎَﻧِﺯ ِﻥﺎَﻨْﻴَﻌْﻟﺎَﻓ ،ُﺮَﻈَّﻨﻟﺍ ِﻥﺎَﻧُﺫُﺄْﻟﺍَﻭ
ﺎَﻤُﻫﺎَﻧِﺯ ُﻥﺎَﺴِّﻠﻟﺍَﻭ ،ُﻉﺎَﻤِﺘْﺳﺎِﻟﺍ ُﻩﺎَﻧِﺯ
ُﺪَﻴْﻟﺍَﻭ ،ُﻡﺎَﻠَﻜْﻟﺍ ،ُﺶْﻄَﺒْﻟﺍ ﺎَﻫﺎَﻧِﺯ
ُﻞْﺟِّﺮﻟﺍَﻭ ،ﺎَﻄُﺨْﻟﺍ ﺎَﻫﺎَﻧِﺯ ُﺐْﻠَﻘْﻟﺍَﻭ ﻯَﻮْﻬَﻳ
،ﻰَّﻨَﻤَﺘَﻳَﻭ ُﻕِّﺪَﺼُﻳَﻭ ُﺝْﺮَﻔْﻟﺍ َﻚِﻟَﺫ ُﻪُﺑِّﺬَﻜُﻳَﻭ »
“আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের কিছু অংশ
লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত
হবে। দুই চোখের ব্যভিচার হল, দৃষ্টি, দুই
কানের ব্যভিচার হল শ্রবণ, মুখের ব্যাভিচার
হল, কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হল, স্পর্শ করা
এবং পায়ের ব্যভিচার হল, অগ্রসর হওয়া। আর
অন্তর আশা ও আকাঙ্ক্ষা করতে থাকে। লজ্জা
স্থান তাকে বাস্তবায়ন করে অথবা মিথ্যায়
পরিণত করে”।[16] “ ﻥﻷ ﻦﻌﻄﻳ ﻲﻓ ﺱﺃﺭ ﻞﺟﺭ
ﻂﻴﺨﻤﺑ ﻦﻣ ﺪﻳﺪﺣ ﺮﻴﺧ ﻦﻣ ﻥﺃ ﺲﻤﻳ ﺓﺃﺮﻣﺍ
ﻻ ﻞﺤﺗ ﻪﻟ “ “কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ
দ্বারা খোঁচা যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার
জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়”।[17]
রাস্তায় বের হয়ে নিজেদের সৌন্দর্য্য পর
পুরুষকে প্রদর্শন করা: বাইরে বের হয়ে নারীর
রমণীয়, মোহনীয় ও সৌন্দর্য-গর্বজনক চপল
মধুর চলনও ব্যভিচার ও যৌন উত্তেজনার
সহায়ক কর্ম। এরা সেই নারী যাদের প্রসঙ্গে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, « ِﻥﺎَﻔْﻨِﺻ ْﻦِﻣ ِﺭﺎَّﻨﻟﺍ ِﻞْﻫَﺃ ْﻢَﻟ
،ﺎَﻤُﻫَﺭَﺃ ْﻢُﻬَﻌَﻣ ٌﻡْﻮَﻗ ٌﻁﺎَﻴِﺳ ِﺏﺎَﻧْﺫَﺄَﻛ
َﻥﻮُﺑِﺮْﻀَﻳ ِﺮَﻘَﺒْﻟﺍ ﺎَﻬِﺑ ،َﺱﺎَّﻨﻟﺍ ٌﺀﺎَﺴِﻧَﻭ
ٌﺕﺎَﻴِﺳﺎَﻛ ،ٌﺕﺎَﻠِﺋﺎَﻣ ٌﺕﺎَﻠﻴِﻤُﻣ ٌﺕﺎَﻳِﺭﺎَﻋ
ِﺔَﻤِﻨْﺳَﺄَﻛ َّﻦُﻬُﺳﻭُﺀُﺭ ،ِﺔَﻠِﺋﺎَﻤْﻟﺍ ِﺖْﺨُﺒْﻟﺍ ﺎَﻟ
َﻦْﻠُﺧْﺪَﻳ ،َﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﺎَﻟَﻭ ،ﺎَﻬَﺤﻳِﺭ َﻥْﺪِﺠَﻳ َّﻥِﺇَﻭ
ﺎَﻬَﺤﻳِﺭ ُﺪَﺟﻮُﻴَﻟ ْﻦِﻣ ِﺓَﺮﻴِﺴَﻣ ﺍَﺬَﻛ ﺍَﺬَﻛَﻭ »
“দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী
যাদেরকে আমি দেখিনি, তারা ভবিষ্যতে আসবে
প্রথম শ্রেণী অত্যাচারীর দল যাদের সঙ্গে
থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক যদ্ধারা তারা
লোকদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী
হল সে নারীর দল যারা কাপড়তো পরিধান
করবে কিন্তু তারা উলঙ্গ, নিজেরা অন্যদের
প্রতি আকৃষ্ট এবং অন্যদেরকেও তাদের প্রতি
আকৃষ্ট করবে, যাদের মস্তক [খোপা বাধার
কারণে] উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা
জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তার গন্ধও পাবে
না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী
স্থান থেকেও পাওয়া যাবে”।[18] অনুরূপ খটখট
শব্দবিশিষ্ট জুতো নিয়ে চটপটে চলন, দেহের
অলঙ্কার যেমন চুড়ি, খুঁটকাটি, নূপুর, তোরা
প্রভৃতির বাজনা বাজিয়ে লাস্যময় চলনও
যুবকের মনে যৌন-আন্দোলন আনে। সুতরাং, এ
কর্ম যে হারাম তা বলাই বাহুল্য। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ﴿ ﺎَﻟَﻭ ۖ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ َﻦﻳِﺪۡﺒُﻳ ﺎَﻟَﻭ
َّﻦِﻬِﻠُﺟۡﺭَﺄِﺑ َﻦۡﺑِﺮۡﻀَﻳ َﻢَﻠۡﻌُﻴِﻟ َﻦﻴِﻔۡﺨُﻳ ﺎَﻣ ﻦِﻣ
﴾َّۚﻦِﻬِﺘَﻨﻳِﺯ ‏[ : ﺭﻮﻨﻟﺍ ٣١ ] “তারা তাদের
সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না, তারা যেন তাদের
গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে
পদক্ষেপ না করে—-।[19]” নারীরা রাস্তায়
চলার সময় কখনোই রাস্তার মাঝখান দিয়ে
চলবে না। তারা রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলবে।
রাসূল সা. বলেন, ﺲﻴﻟ ﺀﺎﺴﻨﻠﻟ ﻖﻳﺮﻄﻟﺍ ﻂﺳﻭ
যেমন পথে চলার সময় পথের মাঝে চলা নারীর
জন্য বৈধ নয়[20]। ﺪﻴﺳﺃ ﻲﺑﺃ ﻱﺭﺎﺼﻧﻷﺍ
ﻦﻋ ﻪﻴﺑﺃ ﻪﻧﺃ ﻊﻤﺳ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻ
ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ ﻢﻠﺳﻭ ﻝﻮﻘﻳ ﺝﺭﺎﺧ ﻮﻫﻭ ﻦﻣ
ﻝﺎﺟﺮﻟﺍ ﻂﻠﺘﺧﺎﻓ،ﺪﺠﺴﻤﻟﺍ ﻊﻣ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ
ﻖﻳﺮﻄﻟﺍ ﻲﻓ ﻝﺎﻘﻓ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ
ﻪﻴﻠﻋ ﺀﺎﺴﻨﻠﻟ ﻢﻠﺳﻭ : ” ،ﻥﺮﺧﺄﺘﺳﺍ ﻪﻧﺈﻓ
ﺲﻴﻟ ﻦﻜﻟ ﻦﻘﻘﺤﺗ ﻥﺃ ،ﻖﻳﺮﻄﻟﺍ ﻦﻜﻴﻠﻋ
ﻖﻳﺮﻄﻟﺍ ﺕﺎﻓﺎﺤﺑ ﺖﻧﺎﻜﻓ“. ﺓﺃﺮﻤﻟﺍ
ﺭﺍﺪﺠﻟﺎﺑ ﻖﺼﺘﻠﺗ ﻰﺘﺣ ﺎﻬﺑﻮﺛ ﻥﺇ ﻖﻠﻌﺘﻴﻟ
ﺭﺍﺪﺠﻟﺎﺑ ﺎﻬﻗﻮﺼﻟ ﻦﻣ ﻪﺑ . ﻪﺟﺮﺧﺃ ﻮﺑﺃ
ﺩﻭﺍﺩ ‏( 5272 ) আবু উসাই আল আনছারী তার
পিতা থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি রাসূল
সা. কে বলতে শুনেছেন, তিনি মসজিদের বাহিরে
দেখতে পান যে, নারীরা রাস্তায় পুরুষের সাথে
মিশে গেছেন। তখন আল্লাহর রাসূল নারীদের
বলেন, তোমরা অপেক্ষা কর, কারণ, তোমাদের
জন্য রাস্তার মাঝে হাটা উচিত নয়, তোমাদের
জন্য হল রাস্তার পাশ। এ কথা শোনে নারী
দেয়াল ঘেসে হাটা শুরু করে তখন দেখা গেল তাদের
অনেকের কাপড় দেয়ালের সাথে মিশে যেত।[21]
মহিলাদের জন্য স্বগৃহে গোসলখানা (বাথরুম)
করা ওয়াজেব (সিমেন্টের হওয়া জরুরী নয়) এবং
ফাঁকা পুকুরে, নদীতে, ঝর্ণায়, সমুদ্রতীরে বা
সাধারণ গোসলখানায় গোসল করা তাদের জন্য
হারাম। যেহেতু সমাজ- বিজ্ঞানী নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «
ﺎَﻣ ْﻦِﻣ ٍﺓَﺃَﺮْﻣﺍ ﺎَﻬَﺑﺎَﻴِﺛ ُﻊَﻀَﺗ ﻲِﻓ ِﺮْﻴَﻏ ِﺖْﻴَﺑ
ﺎَﻬِﺟْﻭَﺯ ﺎَّﻟِﺇ َﺮْﺘِّﺴﻟﺍ ِﺖَﻜَﺘَﻫ ﺎَﻬَﻨْﻴَﺑ َﻦْﻴَﺑَﻭ
ﺎَﻬِّﺑَﺭ ‏» : ‏« ﺍَﺬَﻫ ٌﺚﻳِﺪَﺣ ٌﻦَﺴَﺣ » “যে নারী
স্বগৃহ, স্বামীগৃহ বা মায়ের বাড়ি ছাড়া অন্য
স্থানে নিজের পর্দা রাখে (কাপড় খোলে) সে তার
ও তার রবের মধ্যকার পর্দা ও লজ্জাশীলতাকে
বিদীর্ণ করে দেয় [22]। রাসূল সা. বলেন, « ْﻦَﻣ
َﻥﺎَﻛ ُﻦِﻣْﺆُﻳ ِﻡْﻮَﻴْﻟﺍَﻭ ِﻪَّﻠﻟﺎِﺑ ِﺮِﺧﺂْﻟﺍ ﺎَﻠَﻓ
ُﻪَﺘَﻠﻴِﻠَﺣ ْﻞِﺧْﺪُﻳ َﻡﺎَّﻤَﺤْﻟﺍ ، » “যে ব্যক্তি
আল্লাহতে ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার
স্ত্রীকে সাধারণ গোসলখানায় যেতে না দেয়
[23]।” স্বগৃহ ছেড়ে পরকীয় গৃহে বাস, বান্ধবী
বা বান্ধবীর স্বামীর বাড়িতে রাত্রিবাস
ইত্যাদিও বিপজ্জনক ব্যভিচারের ছিদ্রপথ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “যে মহিলা নিজের স্বামীগৃহ ছাড়া
অন্য গৃহে নিজের কাপড় খোলে সে আল্লাহ
তা‘আলা ও তার নিজের মাঝে পর্দা বিদীর্ণ করে
ফেলে।” একই কারণে অপরের লজ্জা স্থান (নাভি
হতে হাঁটু পর্যন্ত স্থান) দেখা এবং একই কাপড়ে
পুরুষে- পুরুষে বা মহিলায়-মহিলায় শয়ন করাও
নিষিদ্ধ। মহিলার দিক তাকানো থেকে বিরত
থাকা: পর পুরুষের দৃষ্টিতে মহিলার সর্বশরীর
লজ্জাস্থান। বিশেষ করে চক্ষু এমন এক অঙ্গ
যার দ্বারা বিপত্তির সূচনা হয়। চোখাচোখি
থেকে শুরু হয়, কিন্তু শেষ হয় গলাগলিতে। এই
ছোট্ট অঙ্গার টুকরা থেকেই সূত্রপাত হয়
সর্বগ্রাসী বড় অগ্নিকান্ডের মহা বিপদ।
দৃষ্টির কথায় কবি বলেন, “আঁখি ও তো আঁখি
নহে, বাঁকা ছুরি গো কে জানে সে কার মন করে
চুরি গো!” সুতরাং এ দৃষ্টি বড় সাংঘাতিক
বিপত্তি। যার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿
ﻞُﻗ َﻦﻴِﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻠِّﻟ ْﺍﻮُّﻀُﻐَﻳ ۡﻦِﻣ ۡﻢِﻫِﺮَٰﺼۡﺑَﺃ
ْﺍﻮُﻈَﻔۡﺤَﻳَﻭ ۚۡﻢُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ ٰﻰَﻛۡﺯَﺃ َﻚِﻟَٰﺫ ۚۡﻢُﻬَﻟ َّﻥِﺇ
َﻪَّﻠﻟﭐ ُۢﺮﻴِﺒَﺧ َﻥﻮُﻌَﻨۡﺼَﻳ ﺎَﻤِﺑ ٣٠ ﻞُﻗَﻭ
ِﺖَٰﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻠِّﻟ َﻦۡﻀُﻀۡﻐَﻳ َّﻦِﻫِﺮَٰﺼۡﺑَﺃ ۡﻦِﻣ َﻦۡﻈَﻔۡﺤَﻳَﻭ
َّﻦُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ ٣١ ﴾ ‏[ ﺭﻮﻨﻟﺍ : ،٣٠ ٣١ ] “মুমিন
পুরুষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত
রাখে (নজর ঝুকিয়ে চলে) এবং তাদের যৌনাঙ্গকে
হেফাযতে রাখে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। ওরা
যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। আর মুমিন
নারীদেরকে বল, তারাও যেন নিজেদের দৃষ্টিকে
সংযত রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষন করে—।”
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, ﺎَﻟ ِﻊِﺒْﺘُﺗ ،َﺮَﻈَّﻨﻟﺍ َﺮَﻈَّﻨﻟﺍ َّﻥِﺈَﻓ
ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ َﻚَﻟ ْﺖَﺴْﻴَﻟَﻭ َﻚَﻟ ُﺓَﺮِﺧﺂْﻟﺍ ” “(কোন
নারীর উপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি)
বারবার দৃকপাত করো না। বরং নজর সত্বর
ফিরিয়ে নিও, কারণ, তোমার জন্য প্রথমবার
ক্ষমা, দ্বিতীয়বার নয়”।[24] যেহেতু “চক্ষুও
ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার হল (কাম)
দৃষ্টি।” সুতরাং, এ দৃষ্টিকে ছবি থেকেও সংযত
করতে হবে এবং পরপুরুষ থেকে আড়ালে রাখতে
হবে। যাতে একহাতে তালি নিশ্চয়ই বাজবে না।
আর এই বড় বিপদ সৃষ্টিকারী অঙ্গ চোখটি
থাকে চেহারায়। চোখাচোখি যাতে না হয় তাই
তো নারীর জন্য জরুরী তার চেহারাকেও গোপন
করা। অত্যন্ত সখীত্বের খাতিরে হলেও বিনা
পর্দায় সখীতে-সখীতে দৃঢ় আলিঙ্গন ও একে
অপরকে নিজ নিজ সৌন্দর্য প্রদর্শন করা বৈধ
নয়। কারণ এতে সাধারণত: প্রত্যেক সখী তার
সখীর দেহ-সৌষ্ঠব নিজের স্বামীর নিকট
বর্ণনা করলে স্বামী মনের পর্দায় তার স্ত্রীর
ঐ সখীর বিলক্ষণ রূপ-দৃশ্য নিয়ে মনোতৃপ্তি
লাভ করে থাকে। হয়তো বা মনের অলক্ষ্যেই এই
পুরুষ তার হৃদয়ের কোনো কোণে ঐ মহিলার জন্য
আসন পেতে দেয়। আর পরবর্তীতে তাকে দেখার ও
কাছে পাওয়ার মত বাসনাও জাগ্রত করে তোলে।
নোংরা পত্র-পত্রিকা পাঠ, অশ্লীল ছায়াছবি
ও থিয়েটার-যাত্রা দর্শনও একই পর্যায়ের;
যাতে ধ্বংস হয় তরুণ- তরুণীর চরিত্র, নোংরা
হয়ে উঠে পরিবেশ। স্বামী-স্ত্রীর মিলন-
রহস্য প্রভৃতি জানার জন্য সঠিক সময় হল
বিবাহের পর অথবা বিবাহের পাকা দিন হওয়ার
পর। নচেৎ এর পূর্বে রতি বা কামশাস্ত্র পাঠ
করে বিবাহে দেরী হলে মিলন তৃষ্ণা যে পর্যায়ে
পৌঁছায় তাতে বিপত্তি যে কোনো সময়ে ঘটতে
পারে। কারো রূপ, দ্বীনদারী প্রভৃতির প্রশংসা
শুনে তাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলা দোষণীয়
নয়। তাকে পেতে বৈধ উপায় প্রয়োগ করা এবং
বিবাহ- বন্ধনে আবদ্ধ করে সুখের সংসার গড়া
উত্তম। কিন্তু অবৈধভাবে তাকে দেখা, পাওয়া,
তার কথা শোনা ও তার সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা
করা অবশ্যই সীমালঙ্ঘন। অবৈধ বন্ধুত্ব ও
প্রণয়ে পড়ে টেলিফোনে সংলাপ ও সাক্ষাৎ
প্রভৃতি ইসলামে হারাম। যুবক-যুবতীর ঐ গুপ্ত
ভালোবাসা তো কেবল কিছু দৈহিক সুখ লুটার
জন্য। যার শুরুতেও চক্ষে অশ্রু ঝরে এবং
শেষেও। তবে শুরুতে ঝরে আনন্দাশ্রু, আর শেষে
উপেক্ষা ও লাঞ্ছনার। কারণ, ‘কপট প্রেম
লুকোচুরি, মুখে মধু, হৃদে ছুরিই অধিকাংশ হয়।
এতে তরুণী বুঝতে পারে না যে, প্রেমিক তার
নিকট থেকে যৌন তৃপ্তি লাভ করে তাকে বিনষ্ট
করে চুইংগামের মত মিষ্টতা চুষে নিয়ে শেষে
আঠাল পদার্থটিকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। “বন্ধু গো
যেও ভুলে- প্রভাতে যে হবে বাসি, সন্ধ্যায় রেখো
না সে ফুল তুলে। উপবনে তব ফোটে যে গোলাপ
প্রভাতেই তুমি জাগি, জানি, তার কাছে যাও শুধু
তার গন্ধ- সুষমা লাগি।” সুতরাং, এ বিষয়ে
সতর্ক হওয়া উচিত মুসলিম তরুণীকে এবং তার
অভিভাবককেও। কারণ, ‘বালির বাঁধ, শঠের
প্রীতি, এ দুয়ের একই রীতি।’ ব্যভিচারের
ছিদ্রপথ বন্ধ করার আর এক উপায় হল পর্দা।
নারীর দেহ-সৌষ্ঠব প্রকৃতিগত ভাবেই
রমণীয়। কামিনীর রূপ লাবণ্য এবং তদুপরি
তার অঙ্গরাজ বড় কমনীয়; যা পুরুষের কামানল
প্রজ্বলিত করে। তাই পুরুষের দৃষ্টির
অন্তরালে থেকে নিজের মান ও মর্যাদা রক্ষা
করতে নারী জাতির প্রতি সৃষ্টিকর্তা
আল্লাহর এই বিধান এলো। এই জন্যই কোনো
গম্য (যার সাথে নারীর কোনও সময়ে বিবাহ
বৈধ হতে পারে এমন) পুরুষের দৃষ্টিতে তার
সৌন্দর্য ও লাবণ্য প্রকাশ করতে পারে না।
পক্ষান্তরে যার সাথে নারীর কোনও কালে
বিবাহ বৈধ নয় এমন পুরুষের সাথে দেখা-
সাক্ষাৎ করতে পারে। কারণ এদের দৃষ্টিতে কাম
থাকে না। আর যাদের থাকে তারা মানুষ নয়, পশু।
(কাদের সাথে কোনও কালে বিবাহ বৈধ নয়
তাদের কথা পরে আলোচিত হবে।) অনুরূপ নারীর
রূপ বিষয়ে অজ্ঞ বালক, যৌনকামনাহীন পুরুষের
সাথে মহিলা দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে। পর্দার
ব্যাপারে আল্লাহর সাধারণ নির্দেশঃ- ﴿ َﻥۡﺮَﻗَﻭ
َّﻦُﻜِﺗﻮُﻴُﺑ ﻲِﻓ ﺎَﻟَﻭ َﺝُّﺮَﺒَﺗ َﻦۡﺟَّﺮَﺒَﺗ ِﺔَّﻴِﻠِﻬَٰﺠۡﻟﭐ
ٰۖﻰَﻟﻭُﺄۡﻟﭐ ٣٣ ﴾ ‏[ : ﺏﺍﺰﺣﻻﺍ ٣٣ ] “(হে নারী
জাতি!) তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর এবং প্রাক-
ইসলামী (জাহেলিয়াতী) যুগের মত নিজেদেরকে
প্রদর্শন করে বেড়িও না।” ﴿ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﭐ
َﻚِﺟَٰﻭۡﺯَﺄِّﻟ ﻞُﻗ ِﺀﺂَﺴِﻧَﻭ َﻚِﺗﺎَﻨَﺑَﻭ َﻦﻴِﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐ
َّﻦِﻬۡﻴَﻠَﻋ َﻦﻴِﻧۡﺪُﻳ َّۚﻦِﻬِﺒﻴِﺒَٰﻠَﺟ ﻦِﻣ َﻚِﻟَٰﺫ ٰٓﻰَﻧۡﺩَﺃ
َﻦۡﻓَﺮۡﻌُﻳ ﻥَﺃ ﺎَﻠَﻓ َۗﻦۡﻳَﺫۡﺆُﻳ ﴾ ‏[ : ﺏﺍﺰﺣﻻﺍ ٥٩ ]
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা ও মুসলিম
রমণীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের
কিয়দংশ নিজেদের (মুখমণ্ডলের) উপর টেনে
নেয়। এতে (ক্রীতদাসী থেকে) তাদেরকে চেনা
সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে
না। (লম্পটরা তাদেরকে উত্যক্ত করবে না।)” ﴿
ِﺖَٰﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻠِّﻟ ﻞُﻗَﻭ َﻦۡﻀُﻀۡﻐَﻳ ۡﻦِﻣ َّﻦِﻫِﺮَٰﺼۡﺑَﺃ
َﻦۡﻈَﻔۡﺤَﻳَﻭ َّﻦُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ َﻦﻳِﺪۡﺒُﻳ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ
ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻣ َﺮَﻬَﻇ َﻦۡﺑِﺮۡﻀَﻴۡﻟَﻭ ۖﺎَﻬۡﻨِﻣ َّﻦِﻫِﺮُﻤُﺨِﺑ
ٰﻰَﻠَﻋ َّۖﻦِﻬِﺑﻮُﻴُﺟ ٣١ ﴾ ‏[ : ﺭﻮﻨﻟﺍ ٣١ ] “মুমিন
নারীদেরকে বল, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি
সংযত করে ও লজ্জাস্থান হিফাজত করে এবং যা
প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের (অন্যান্য) আভরণ
প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন
মাথার কাপড় (উড়না অথবা চাদর) দ্বারা আবৃত
করে”।[25] ﴿ ﺍَﺫِﺇَﻭ َّﻦُﻫﻮُﻤُﺘۡﻟَﺄَﺳ ﺎٗﻌَٰﺘَﻣ
َّﻦُﻫﻮُﻠَٔۡﺴَﻓ ﻦِﻣ ِﺀﺁَﺭَﻭ ٖۚﺏﺎَﺠِﺣ ۡﻢُﻜِﻟَٰﺫ ُﺮَﻬۡﻃَﺃ
َّۚﻦِﻬِﺑﻮُﻠُﻗَﻭ ۡﻢُﻜِﺑﻮُﻠُﻘِﻟ ٥٣ ﴾ ‏[ : ﺏﺍﺰﺣﻻﺍ ٥٣ ]
“(হে পুরুষগণ!) তোমরা তাদের (নারীদের)
নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে
চাইবে। এ বিধান তোমাদের এবং তাদের হৃদয়ের
জন্য অধিকতর পবিত্র”।[26] সুতরাং, মুসলিম
নারীর নিকট পর্দা:- আল্লাহ ও তদীয় রসূলের
আনুগত্য। পর্দা, চরিত্রের পবিত্রতা,
অনাবিলতা ও নিষ্কলঙ্কতা। পর্দা, নারীর
নারীত্ব, সম্ভ্রম ও মর্যাদা। পর্দা,
লজ্জাশীলতা, অন্তর্মাধুর্য ও সদাচারীতা।
পর্দা, মানবরূপী শয়তানের দৃষ্টি থেকে রক্ষার
মাধ্যম। পর্দা, ইজ্জত হিফাজত করে, অবৈধ
প্রণয়, ধর্ষণ, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার দূর করে,
নারীর মান ও মূল্য রক্ষা করে। জিনিস দামী
ও মূল্যবান হলেই তাকে গোপনে লুকিয়ে রাখা
হয়। যত্রতত্রে কাঁচ পাওয়া যায় বলেই তার
কোনো কদর নেই। কিন্তু কাঞ্চন পাওয়া যায় না
বলেই তার বড় কদর। পর্দানশীন নারী কাঁচ
নয়; বরং কাঞ্চন, সুরক্ষিত মুক্তা। পর্দা,
নারীকে কাফের ও ক্রীতদাসী থেকে বাছাই করে
সম্ভ্রান্ত মুসলিম নারী রূপে চিহ্নিত করে।
পর্দা, আল্লাহর গযব ও জাহান্নামের আগুন থেকে
বাঁচার মাধ্যম। নারীদের প্রধান শত্রু তার
সৌন্দর্য ও যৌবন। আর পর্দা তার লাল কেল্লা।
ইসলামের সুসভ্য দৃষ্টিতে নারীর পর্দা ও সভ্য
লেবাসের কয়েকটি শর্ত: ১- মুসলিম মহিলা যে
পোশাক ব্যবহার করবে তাতে যেন পর্দা পাওয়া
যায়; অর্থাৎ সেই পোশাক যেন তার সারা দেহকে
আবৃত করে। সুতরাং, যে লেবাসে নারীর কেশদাম,
গ্রীবা, বক্ষদেশ, উদর ও পৃষ্ঠদেশ (যেমন, শাড়ি
ও খাটো ব্লাউজে) এবং হাঁটু ও জাং (যেমন,
স্ক্যাট, ঘাগরা, ফ্রক ইত্যাদিতে) প্রকাশিত
থাকে তা (গম্য পুরুষদের সামনে) পরিধান করা
হারাম। ২- এই লেবাস যেন সৌন্দর্যময় ও
দৃষ্টি-আকর্ষণকারী না হয়। সুতরাং, কামদার
(এমব্রয়ডারি করা) চকচকে রঙিন বোরকাও
পরা বৈধ নয়। ৩- এমন পাতলা যেন না হয় যাতে
ভিতরের চামড়ার রঙ নজরে আসে। অতএব পাতলা
শাড়ি, উড়না প্রভৃতি মুসলিম মহিলার ড্রেস
নয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, « ِﻥﺎَﻔْﻨِﺻ ْﻦِﻣ ِﺭﺎَّﻨﻟﺍ ِﻞْﻫَﺃ
،ﺎَﻤُﻫَﺭَﺃ ْﻢَﻟ ْﻢُﻬَﻌَﻣ ٌﻡْﻮَﻗ ٌﻁﺎَﻴِﺳ ِﺏﺎَﻧْﺫَﺄَﻛ
َﻥﻮُﺑِﺮْﻀَﻳ ِﺮَﻘَﺒْﻟﺍ ﺎَﻬِﺑ ،َﺱﺎَّﻨﻟﺍ ٌﺀﺎَﺴِﻧَﻭ
ٌﺕﺎَﻴِﺳﺎَﻛ ،ٌﺕﺎَﻠِﺋﺎَﻣ ٌﺕﺎَﻠﻴِﻤُﻣ ٌﺕﺎَﻳِﺭﺎَﻋ
ِﺔَﻤِﻨْﺳَﺄَﻛ َّﻦُﻬُﺳﻭُﺀُﺭ ،ِﺔَﻠِﺋﺎَﻤْﻟﺍ ِﺖْﺨُﺒْﻟﺍ ﺎَﻟ
َﻦْﻠُﺧْﺪَﻳ ،َﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﺎَﻟَﻭ ،ﺎَﻬَﺤﻳِﺭ َﻥْﺪِﺠَﻳ َّﻥِﺇَﻭ
ﺎَﻬَﺤﻳِﺭ ُﺪَﺟﻮُﻴَﻟ ْﻦِﻣ ِﺓَﺮﻴِﺴَﻣ ﺍَﺬَﻛ ﺍَﺬَﻛَﻭ »
“দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী;
যাদেরকে আমি দেখিনি। (তারা ভবিষ্যতে
আসবে।) প্রথম শ্রেণী (অত্যাচারীর দল)
যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক,
যদ্দারা তারা লোককে প্রহার করবে। আর
দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই নারীদল; যারা কাপড়
তো পরিধান করবে, কিন্তু তারা বস্তুত: উলঙ্গ
থাকবে, যারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং
নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, যাদের
মস্তক (খোপা বাঁধার কারণে) উটের হিলে যাওয়া
কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না,
তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ
এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।”
৪- এমন টাইটফিট বা আঁট-সাঁট যেন না হয়;
যাতে দেহাঙ্গের উচ্চতা ও নীচতা এবং আকার ও
আকৃতি কাপড়ের উপরেও বুঝা যায়। তাই এমন
চুস্ত ও ফ্যাশনের লেবাস মুসলিম নারী
পরিধান করতে পারে না, যাতে তার সুডৌল স্তন-
যুগল, সুউচ্চ নিতম্ব সরু কোমর প্রভৃতির
আকার প্রকাশ পায়। টাইটফিট ইত্যাদি লেবাস
যে বড় ফিতনাসৃষ্টিকারী ও হারাম তা
বিভিন্ন লেডিস অন্তর্বাস কোম্পানীর নামই
সাক্ষ্য দেয়। ৫- এই লেবাস যেন পুরুষদের
পোষাকের অনুরূপ না হয়। সুতরাং প্যান্ট, শার্ট
প্রভৃতি পুরুষদের মত পোশাক কোনো মুসলিম
মহিলা ব্যবহার করতে পারে না। যেহেতু
পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর
অভিশাপ থাকে, তাই কোনো পুরুষের জন্য
পুরুষের বেশ ধারণ করা উচিত নয়। রাসূল সা.
বলেন, « َﻦَﻌَﻟ َﻦﻴِﻬِّﺒَﺸَﺘُﻤْﻟﺍ ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ َﻦِﻣ
،ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺎِﺑ َﻦَﻌَﻟَﻭ ِﺕﺎَﻬِّﺒَﺸَﺘُﻤْﻟﺍ َﻦِﻣ
ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺎِﺑ » “নারীদের বেশ ধারি
পুরুষের উপর অভিশাপ এবং পুরুষদের বেশ
ধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ”।
[27] ৬- তদ্রূপ তা যেন কাফের মহিলাদের
অনুরূপ না হয়। অবশ্য ঢিলে ম্যাক্সি ও
শেলোয়ার কামীস এবং তার উপর চাদর বা
উড়না; যা মাথার কেশ, বক্ষস্থল ইত্যাদি
আচ্ছাদিত করে তা মুসলিম নারীর লেবাস।
কেবলমাত্র শেলোয়ার কামীস বা ম্যাক্সি অথবা
তার উপর বক্ষে ও গ্রীবায় থাক বা ভাঁজ করা
উড়নার লেবাস কাফের মহিলাদের। অনুরূপ শাড়ি
যদি সর্বশরীরকে ঢেকে নেয় তবে মুসলিমদের;
নচেৎ থাক করে বুকে চাপানো থাকলে তথা কেশদাম
ও পেট-পিঠ প্রকাশ করে রাখলে তা অমুসলিম
মহিলাদের লেবাস। আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ْﻦَﻣَﻭ َﻪَّﺒَﺸَﺗ
ٍﻡْﻮَﻘِﺑ َﻮُﻬَﻓ ْﻢُﻬْﻨِﻣ » “যে ব্যক্তি যে জাতির
অনুকরণ করবে, সে সেই জাতির দলভুক্ত”।[28]
৭- এই পোশাক যেন জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ
তথা প্রসিদ্ধি জনক না হয়। ৮- লেবাস যেন
সুগন্ধিত বা সুরভিত না হয়। পূর্বেই বলা
হয়েছে যে, যে নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে লোকালয়ে
যায়, সে বেশ্যা নারী। প্রকাশ যে, নারীদেহে
যৌবনের চিহ্ন দেখা দেওয়া মাত্রই এই শর্তের
পোশাক পরা ওয়াজেব। কোন কোনো অঙ্গ
দেখানো চলবে? স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোনো
পর্দা নেই উভয়েই এক অপরের পোশাক। উভয়েই
উভয়ের সর্বাঙ্গ দেখতে পারে। তবে সর্বদা নগ্ন
পোশাকে থাকা উচিত নয়। মা-বেটার মাঝে পর্দা
ও গোপনীয় কেবল নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত।
অন্যান্য নিকটাত্মীয়; যাদের সাথে চিরকালের
জন্য বিবাহ হারাম তাদের সামনে পর্দা ও
গোপনীয় অঙ্গ হল গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।
অবশ্য কোনো চরিত্রহীন এগানা পুরুষের কথায়
বা ভাবভঙ্গিতে অশ্লীলতা ও কামভাব বুঝলে,
মহিলা তার নিকটেও যথা সম্ভব অন্যান্য
অঙ্গও পর্দা করবে। মহিলার সামনে মহিলার
পর্দা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। মহিলা কাফের
হলে তার সামনে হাত ও চেহারা ছাড়া অন্যান্য
অঙ্গ খোলা বৈধ নয়। যেমন, কোনো নোংরা
ব্যভিচারিণী মেয়ের সামনেও নিজের
সৌন্দর্য প্রকাশ করা উচিত নয়। অনুরূপ এমন
কোনো মহিলার সামনেও দেহসৌষ্ঠব খোলা
নিষিদ্ধ; যে তার কোনো বন্ধু বা স্বামীর
নিকট অন্য মহিলার রূপচর্চা করে বলে জানা
যায় বা আশঙ্কা হয়। এমন মহিলার সাথে
মুসলিম মহিলার সখীত্ব বা বন্ধুত্বও বৈধ
নয়। মা-বাপের চাচা ও মামা, মেয়ের চাচা ও
মামা মাহরাম। সুতরাং চাচাতো দাদো বা নানার
সামনে পর্দা গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত। তালাকের
পর ইদ্দত পার হয়ে গেলে ঐ স্বামী এই স্ত্রীর
জন্য বেগানা হয়ে যায়। সুতরাং তার নিকটে
পর্দা ওয়াজেব। পালিত পুত্র থেকে পালয়িত্রী
মায়ের এবং পালয়িতা বাপ থেকে পালিতা কন্যার
পর্দা ওয়াজেব। প্রকাশ যে, ইসলামে এ ধরনের
প্রথার কোনো অনুমতি নেই। অনুরূপ পাতানো
ভাই বোন, মা- বেটা, বাপ-বেটির মাঝে, পীর
ভাই- বোন (?)[29] বিয়াই-বিয়ান ও বন্ধুর
স্বামী বা স্ত্রীর মাঝে পর্দা ওয়াজেব। যদিও
তাদের চরিত্র ফিরিশতার মত হয় তবুও দেখা
দেওয়া হারাম। পর্দা হবে আল্লাহর ভয়ে তাঁর
আনুগত্যের উদ্দেশ্যে। মানুষের ভয়ে বা লোক
প্রদর্শনের জন্য নয়। এতে মানুষের চরিত্র ও
সম্মান বিচার্য নয়। সুতরাং লম্পট, নারীবাজ,
পরহেজগার, মৌলবি সাহেব প্রভৃতি পর্দায়
সকলেই সমান। আল্লাহর ফরয মানতে কোনো
প্রকারের লৌকিকতা ও সামাজিকতার খেয়াল
অথবা কারো মনোরঞ্জনের খেয়াল নিশ্চয় বৈধ
নয়। দৃষ্টিহীন অন্ধ পুরুষের সামনে পর্দা
নেই। অবশ্য মহিলাকে ঐ পুরুষ থেকে দৃষ্টি
সংযত করতে হবে। পৃথক মহিলা শিক্ষা-
প্রতিষ্ঠান না থাকলে বেপর্দায় ছেলেদের সাথে
একই সাথে পাশাপাশি বসে শিক্ষা গ্রহণ বৈধ
নয়। স্বামী-সংসার উদ্দেশ্য হলে বাড়িতে বসে
বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ বই-পুস্তক পড়া এবং দ্বীন-
সংসার শিখার শিক্ষাই যথেষ্ট। অন্যান্য
শিক্ষার প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে
শিখতে হবে। পর্দার চেষ্টা না করে গড্ডালিকা
প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলে অবশ্যই মেয়ে-
অভিভাবক সকলেই পাপী হবে। চিকিৎসার
প্রয়োজনে মহিলার জন্য ডাক্তার খোঁজা
ওয়াজেব। লেডী ডাক্তার না পেলে অথবা
যথাবিহিত চিকিৎসা তার নিকট না হলে
বাধ্য হয়ে পুরুষ ডাক্তারের নিকট যেতে পারে।
তবে শর্ত হল মহিলার সাথে তার স্বামী অথবা
কোনো মাহরাম থাকবে। একাকিনী ডাক্তার-
রুমে যাবে না। পরন্তু ডাক্তারকে কেবল সেই অঙ্গ
দেখাবে, যে অঙ্গ দেখানো প্রয়োজন। লজ্জা
স্থান দেখলেও অন্যান্য অঙ্গ দেখানো
অপ্রয়োজনে বৈধ হবে না। মহান আল্লাহ
বলেন, ﴿ ْﺍﻮُﻘَّﺗﭑَﻓ َﻪَّﻠﻟﭐ ۡﻢُﺘۡﻌَﻄَﺘۡﺳﭐ ﺎَﻣ ١٦
﴾ ‏[ : ﻦﺑﺎﻐﺘﻟﺍ ١٦ ] “তোমরা আল্লাহকে
যথাসম্ভব ভয় কর”।[30] (সাধ্যমত ভয় করার
চেষ্টা কর।) একাকিনী হলেও নামাযে আদবের
লেবাস জরুরী। এই সময় কেবল চেহারা ও হাত
খুলে রাখা যাবে। শাড়ি পরে বাহু-পেট-পিঠ-চুল
বের হয়ে গেলে নামায হয় না। যেমন, সম্মখে
বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢাকতে হবে।
সেলোয়ার-কামিস বা ম্যাক্সিতে নামায পড়লে
চাদর জরুরী। কুরআন শরীফ পড়তে গিয়ে মাথা
খুলে গেলে ক্ষতি নেই। এতে ওযুও নষ্ট হয় না।
আল্লাহ বলেন, ﴿ ُﺪِﻋَٰﻮَﻘۡﻟﭐَﻭ َﻦِﻣ ِﺀﺂَﺴِّﻨﻟﭐ
ﻲِﺘَّٰﻟﭐ ﺎَﻟ ﺎٗﺣﺎَﻜِﻧ َﻥﻮُﺟۡﺮَﻳ َﺲۡﻴَﻠَﻓ َّﻦِﻬۡﻴَﻠَﻋ
ٌﺡﺎَﻨُﺟ ﻥَﺃ َّﻦُﻬَﺑﺎَﻴِﺛ َﻦۡﻌَﻀَﻳ َﺮۡﻴَﻏ ِۢﺖَٰﺟِّﺮَﺒَﺘُﻣ
ٖۖﺔَﻨﻳِﺰِﺑ َﻦۡﻔِﻔۡﻌَﺘۡﺴَﻳ ﻥَﺃَﻭ ٞﺮۡﻴَﺧ َّۗﻦُﻬَّﻟ ٦٠
﴾ ‏[ : ﺭﻮﻨﻟﺍ ٦٠ ] “বৃদ্ধা নারী; যারা বিবাহের
আশা রাখে না, তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন
না করে যদি বহির্বাস খুলে রাখে তাহলে তা
দোষের নয়। তবে পর্দায় থাকাটাই তাদের জন্য
উত্তম”।[31] যেহেতু কানা বেগুনের ডগলা
খদ্দেরও বর্তমান। পর্দায় থাকলে বাড়ির লোক
ঠাট্টা করলে এবং কোনো প্রকার অথবা
সর্বপ্রকার সহায়তা না করলে মহিলার উচিত
যথাসম্ভব নিজে নিজে পর্দা করা। এ ক্ষেত্রে
হাল ছেড়ে বসা বৈধ নয়। কল-পায়খানা নেই বলে
ওজর গ্রহণযোগ্য নয়। স্বামী পর্দায় থাকতে
না দিলে চেষ্টার পরও যদি একান্ত নিরুপায়
হয়ে বেপর্দা হতে হয় তবুও যথাসাধ্য নিজেকে
সংযত ও আবৃত করবে। আল্লাহ এ চেষ্টার অন্তর
দেখবেন। যারা সহায়তা করে না বা বাধা দেয়
তাদের পাপ তাদের উপর। পক্ষান্তরে বেগানা
পুরুষ দেখে ঘর ঢুকলে বা মুখ ঢাকলে যারা
হাসাহাসি করে, ব্যঙ্গ- বিদ্রূপ করে, কটাক্ষ
হানে অথবা অসমীচীন মন্তব্য করে বা টিস্
মারে, শরয়ী পর্দা নিয়ে যারা উপহাস করে
তারা কাফের। এই পর্দানশীন মহিলারা কাল
কিয়ামতে ঐ উপহাসকারীদেরকে দেখে হাসবে।
সুতরাং মুমিন নারীর দুঃখ করা উচিত নয়,
একাকিনী হলেও মন ছোট করা সমীচীন নয়।
সত্যের জয় অবধারিত, আজ অথবা কাল। মরতে
সকলকেই হবে, প্রতিফল সকলেই পাবে। ‘মরে না
মরে না কভু সত্য যাহা, শত শতাব্দীর
বিস্মৃতির তলে নাহি মরে উপেক্ষায়, অপমানে
হয় না চঞ্চল, আঘাতে না টলে।’ পর্দায় থাকার
জন্য দেওর-ভরা সংসার থেকে পৃথক হয়ে আলাদা
ঘর বাড়ি করার জন্য স্ত্রী যদি তার স্বামীকে
তাকীদ করে তবে তা স্বামীর মানা উচিত; বরং
নিজে থেকেই হওয়া উচিত। বিশেষ করে তার
ভাইরা যদি অসৎ প্রকৃতির হয়। ইসলামে এটা
জরুরী নয় যে, চিরদিন ভাই-ভাই মিলে একই
সংসারে থাকতে হবে। যা জরুরী তা হল, আল্লাহর
দ্বীন নিজেদের জীবন ও পরিবেশে কায়েম করা,
আপোষে ভ্রাতৃত্ব-বোধ ও সহায়তা- সহানুভূতি
রাখা। সকলে মিলে পিতা- মাতার যথাসাধ্য
সেবা করা। কিন্তু হায়রে! আল্লাহতে প্রেম ও
বিদ্বেষ করতে গিয়ে মানুষের মাঝে মানুষকে
দুশমন হতে হয়। হারাতে হয় একান্ত আপনকে।
যেহেতু, আল্লাহর চেয়ে অধিক আপন আর কে?
পর্দা নিজের কাছে নয়। কোনো ইঁদুর নিজের
চোখ বন্ধ করে যদি মনে করে যে, সে সমস্ত
বিড়াল থেকে নিরাপদ তবে এ তার বোকামী নয়
কি? নারীর সৌন্দর্য দেখে বদখেয়াল ও
কুচিন্তা আসাও মানুষের জন্য স্বাভাবিক।
অতএব পর্দা না করে কি কাম লোলুপতা ও
ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ করা সম্ভব? নারীর
মোহনীয়তা, কমনীয়তা ও মনোহারিত্ব লুকিয়ে
থাকে তার লজ্জাশীলতায়। নারীর লজ্জাশীলতা
তার রূপ-লাবণ্য অপেক্ষা বেশী আকর্ষণীয়।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, « ﺎَﻣ َﻥﺎَﻛ ُﺶْﺤُﻔْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﺀْﻲَﺷ ُّﻂَﻗ ﺎَّﻟِﺇ
،ُﻪَﻧﺎَﺷ ﺎَﻟَﻭ ُﺀﺎَﻴَﺤْﻟﺍ َﻥﺎَﻛ ﻲِﻓ ٍﺀْﻲَﺷ ُّﻂَﻗ
ﺎَّﻟِﺇ ُﻪَﻧﺍَﺯ » “অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতা যে
বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যহীন করে
ফেলে; পক্ষান্তরে লজ্জাশীলতা যে বিষয়ে থাকে,
সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যময় ও মনোহর করে
তোলে”।[32] সভ্য লেবাসের পর্দা থেকে বের
হওয়া নারী-স্বাধীনতার যুগে পর্দা বড় বিরল।
এর মূল কারণ হল লজ্জাহীনতা। কেননা,
লজ্জাশীলতা নারীর ভূষণ। ভূষণ হারিয়ে
নারী তার বসনও হারিয়েছে। দ্বীনী সংযম
নেই নারী ও তার অভিভাবকের মনে। পরন্তু
সংযমের বন্ধন একবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে
উদ্দাম-উচ্ছৃঙ্খলতা বন্যার মত প্রবাহিত হয়।
তাতে সংস্কার, শিক্ষা, চরিত্র, সবই অনায়াসে
ভেসে যায়। শেষে লজ্জাও আর থাকে না। বরং এই
লজ্জাহীনতাই এক নতুন ‘ফ্যাশন’ রূপে ‘সভ্য’ ও
‘আলোক প্রাপ্ত’ নামে সুপরিচিতই লাভ করে।
সত্যই তো, বগল-কাটা ব্লাউজ ও ছাঁটা চুল না
হলে কি সভ্য নারী হওয়া যায়? আধা বক্ষ-স্থল,
ভুঁড়ির ভাঁজ ও জাং প্রভৃতি গোপন অঙ্গে দিনের
আলো না পেলে কি ‘আলোক প্রাপ্ত’ হওয়া যায়?!
[নাউযুবিল্লাহ] বলাই বাহুল্য যে, মুসলিম
নারী- শিক্ষার ‘সুবেহ সাদেক’ চায়, নারী-
দেহের নয়। মুসলিম নারী- বিদ্বেষী নয়,
নারী-শিক্ষার দুশমনও নয়। মুসলিম বেপর্দা
তথা অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের দুশমন। শিক্ষা,
প্রগতি, নৈতিকতা তথা পর্দা সবই মুসলিমের
কাম্য। আর পর্দা প্রগতির পথ অবরোধ করতে
চায় না; চায় বেলেল্লাপনা ও নগ্নতার পথ রুদ্ধ
করতে। পক্ষান্তরে পর্দাহীনতা; আল্লাহ ও তাঁর
রসূলের অবাধ্যতা। পর্দাহীনতা; নগ্নতা,
অসভ্যতা, অশ্লীলতা, লজ্জাহীনতা,
ঈর্ষাহীনতা ও ধৃষ্টতা। পর্দাহীনতা;
সাংসারিক অশান্তি, ধর্ষণ, অপহরণ,
ব্যভিচার প্রভৃতির ছিদ্রপথ। পর্দাহীনতা;
যৌন উত্তেজনার সহায়ক। মানবরূপী
শয়তানদের চক্ষুশীতলকারী। পর্দাহীনতা;
দুষ্কৃতীদের নয়নাভিরাম। পর্দাহীনতা; কেবল
ধর্মীয় শৃঙ্খল থেকে নারী-স্বাধীনতা নয়, বরং
সভ্য পরিচ্ছদের ঘেরাটোপ থেকে নারীর
সৌন্দর্য প্রকাশ ও দেহ মুক্তির নামান্তর।
পর্দাহীনতা; কিয়ামতের কালিমা ও অন্ধকার।
পর্দাহীনতা; বিজাতীয় ইবলীসী ও
জাহেলিয়াতি প্রথা। বরং সভ্য যুগের এই
নগ্নতা দেখে জাহেলিয়াতের পর্দাহীনারাও
লজ্জা পাবে। বেপর্দার জন্য জাহান্নামের আগুন
থেকে কোনো পর্দা নেই। প্রসাধন ও অঙ্গসজ্জা
নারীর রূপমাধুরী ও সৌন্দর্য লাবণ্য নারীর
গর্ব। তার এ রূপ-যৌবন সৃষ্টি হয়েছে একমাত্র
কেবল তার স্বামীর জন্য। স্বামীকে সে রূপ
উপহার না দিতে পারলে কোনো মূল্যই থাকে না
নারীর। এই রূপ-যৌবন স্বামীকে উপহার দিয়ে
কত যে আনন্দ, সে তো নারীরাই জানে। সুন্দর
অঙ্গের উপর অঙ্গরাজ দিয়ে আরও মনোহারী ও
লোভনীয় করে স্বামীকে উপহার দিয়ে উভয়েই
পরমানন্দ ও প্রকৃত দাম্পত্য-সুখ লুটতে পারে
পার্থিব সংসারে। সুতরাং অঙ্গ যার জন্য
নিবেদিত অঙ্গরাজও তার জন্যই নির্দিষ্ট।
স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য অঙ্গসজ্জা
করা ও তা প্রদর্শন করা বৈধ নয়। যুগের তালে
তালে নারীদের অঙ্গরাজ, মেকআপ ও প্রসাধন-
সামগ্রী অতিশয় বেড়ে উঠেছে। যার হালাল ও
হারাম হওয়ার কষ্টিপাথর হলো এই যে, ঐ
প্রসাধনদ্রব্য ব্যবহারে যেন অঙ্গের বা ত্বকের
কোনো ক্ষতি না হয়। ঐ দ্রব্যে যেন কোনো
প্রকার অবৈধ বা অপবিত্র বস্তু মিশ্রিত না
থাকে, তা যেন বিজাতীয় মহিলাদের বৈশিষ্ট্য
না হয়। (যেমন সিন্দূর, টিপ প্রভৃতি) এবং তা
যেন বেগানার সামনে প্রকাশ না পায়। সুতরাং
শরীয়তের সীমার মাঝে থেকে নারী যে কোনো
প্রসাধন কেবল স্বামীর মন আকর্ষণের জন্য
ব্যবহার করতে পারে। পরিধান করতে পারে যে
কোনো পোশাক তার সামনে, কেবল তাকেই ভালো
লাগানোর জন্য। এই সাজ- সজ্জাতেও লুকিয়ে
থাকে ভালোবাসার রহস্য। পক্ষান্তরে স্ত্রী
যদি স্বামীর জন্য অঙ্গসজ্জা না করে; পরন্তু
বাইরে গেলে বা আর কারো জন্য প্রসাধন করে,
তবে নিশ্চয়ই সে নারী প্রেম-প্রকৃতির
বিরোধী। নচেৎ সে স্বামীর প্রেম ও দৃষ্টি
আকর্ষণকে জরুরী ভাবে না। এমন নারী
হতভাগী বৈ কি? সে জানে না যে, তার নিজের
দোষে স্বামী অন্যাসক্ত হয়ে পড়বে। টাইটফিট
চুস্ত পোশাক কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের
উদ্দেশ্যে বাড়ির ভিতর পরিধান বৈধ। অবশ্য
কোনো এগানা ও মহিলার সামনে, এমন কি
পিতা- মাতা বা ছেলে-মেয়েদের সামনেও ব্যবহার
উচিত নয়। কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের
জন্য, বা নিজের কমনীয়তা রক্ষার জন্য ব্রা
ব্যবহার বৈধ। অন্যের জন্য ধোঁকার উদ্দেশ্যে
তা অবৈধ। যে পোশাকে অথবা অলঙ্কারে কোনো
প্রকারের মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত
থাকে তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু ইসলাম
ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী। যে লেবাস বা
অলঙ্কারে ক্রুশ, শঙ্খ, সর্প বা অন্যান্য কোনো
বিজাতীয় ধর্মীয় প্রতীক চিত্রিত থাকে
মুসলিমের জন্য তাও ব্যবহার করা বৈধ নয়।
নিউ মডেল বা ফ্যাশনের পরিচ্ছদ ব্যবহার
তখনই বৈধ, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে
কোনো হিরো- হিরোইন বা কাফেরদের অনুকরণ
হবে না। স্ক্যার্ট-ব্লাউজ বা স্ক্যার্ট- গেঞ্জি
মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। বাড়িতে এগানার
সামনে সেই ড্রেস পরা উচিত যাতে গলা থেকে
পায়ের গাঁট পর্যন্ত পর্দায় থাকে। আর (বিনা
বোরকায়) বেগানার সামনে ও বাইরে গেলে তো
নিঃসন্দেহে তা পরা হারাম। প্যান্ট-শার্ট
মুসলিমদের ড্রেস নয়। কিছু শর্তের সাথে পরা
বৈধ হলেও মহিলারা তা ব্যবহার করতে পারে
না; যদিও তা ঢিলেঢালা হয় এবং টাইট ফিট না
হয়। এই জন্য যে, তা হল পুরুষদের ড্রেস। আর
পুরুষের বেশ ধারিণী নারী অভিশপ্ত।
কেশবিন্যাসে মহিলার সিঁথি হবে মাথার
মাঝে। এই অভ্যাসের বিরোধিতা করে সে মাথার
এক পাশে সিঁথি করতে পারে না। সাধারণত: এ
ফ্যাশন দ্বীনদার মহিলাদের নয়। বেণী বা
চুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধাই উত্তম। খোঁপা বা লোটন
মাথার উপরে বাঁধা অবৈধ। পিছন দিকে ঘাড়ের
উপর যদি কাপড়ের উপর তার উচ্চতা ও আকার
নজরে আসে তবে তাও বৈধ নয়। মহিলার চুল
বেশী বা লম্বা আছে – একথা যেন পরপুরুষে
আন্দাজ না করতে পারে। যেহেতু নারীর সুকেশ
এক সৌন্দর্য; যা কোনো প্রকারে বেগানার
সামনে প্রকাশ করা হারাম। প্রিয় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ُﻥﻮُﻜَﻴَﺳ ﻲِﻓ ﻲِﺘَّﻣُﺃ ِﺮِﺧﺁ ٌﻝﺎَﺟِﺭ َﻥﻮُﺒَﻛْﺮَﻳ ﻰَﻠَﻋ
،ٍﺝﻭُﺮُﺳ ،ِﻝﺎَﺣِّﺮﻟﺍ ِﻩﺎَﺒْﺷَﺄَﻛ َﻥﻮُﻟِﺰْﻨَﻳ ﻰَﻠَﻋ
ِﺏﺍَﻮْﺑَﺃ ْﻢُﻫُﺅﺎَﺴِﻧ ،ِﺪِﺠْﺴَﻤْﻟﺍ ٌﺕﺎَﻴِﺳﺎَﻛ
،ٌﺕﺎَﻳِﺭﺎَﻋ ﻰَﻠَﻋ ِﺔَﻤِﻨْﺳَﺄَﻛ ْﻢِﻬِﺳﻭُﺀُﺭ ِﺖْﺨُﺒْﻟﺍ
،ِﻑﺎَﺠِﻌْﻟﺍ َّﻦُﻬَّﻧِﺈَﻓ ،َّﻦُﻫﻮُﻨَﻌْﻟﺍ ٌﺕﺎَﻧﻮُﻌْﻠَﻣ ،
“ “আমার শেষ জামানার উম্মতের মধ্যে কিছু
এমন লোক হবে যারা ঘরের মত জিন (মোটর
গাড়ি)তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় দরজায়
নামবে। (গাড়ি করে নামায পড়তে আসবে।) আর
তাদের মহিলারা হবে অর্ধ নগ্না; যাদের মাথা
কৃশ উঁটের কুঁজের মত (খোঁপা) হবে। তোমরা
তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা
অভিশপ্ত”।[33] এ ভবিষ্যৎবাণী যে কত সত্য
তা বলার অপেক্ষা রাখে না! মাথার ঝরে-পরা-কেশ
মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম। যেহেতু বিশেষ করে
মহিলার চুল উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ হলে তা
যুবকদের মন কাড়ে। পরন্তু ঐ চুল নিয়ে জাদুও
করা যায়। তাই যেখানে-সেখানে না ফেলাই
উচিত। মহিলার চুল ও কেশদাম অমূল্য সম্পদ,
তা বিক্রয় করা বৈধ নয়। মহিলারা চুলে খেজাব
বা কলপ ব্যবহার করতে পারে। তবে কালো রঙের
কলপ ব্যবহার হারাম। বাদামী, সোনালী,
লালচে প্রভৃতি কলপ দিয়ে রঙাতে পারে। তবে
তাতে যেন কোনো হিরোইন বা কাফের নারীর
অনুকরণ বা বেশধারণ উদ্দেশ্য না হয়।
সৌন্দর্যের জন্য সামনের কিছু চুল ছাঁটা অবৈধ
নয়। তবে কোনো হিরোইন বা কাফের মহিলাদের
অনুকরণ করে তাদের মত অথবা পুরুষদের মত করে
ছেঁটে ‘সাধনা-কাট’, বা ‘হিপ্পি-কাট’ ইত্যাদি
হারাম। তাছাড়া সুদীর্ঘ কেশদাম সুকেশিনীর
এক মনোলোভা সৌন্দর্য, যা ছেঁটে নষ্ট না
করাই উত্তম। স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের
উদ্দেশ্যে – অর্থের অপচয় না হলে- মেশিন
দ্বারা চুল কুঁচকানো বা থ্যাকথ্যাক করা বৈধ।
তবে তা কোনো পুরুষ সেলুনে অবশ্যই নয়।
মহিলা সেলুনে মহিলার নিকট এসব বৈধ। তবে
গুপ্তাঙ্গের লোম আদি (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে)
পরিষ্কার করতে কোনো মহিলার কাছেও লজ্জা
স্থান খোলা বৈধ নয়। কৃত্রিম চুল বা পরচুলা
(ট্যাসেল) আদি কেশ বেশী দেখাবার উদ্দেশ্যে
ব্যবহার হারাম, স্বামী চাইলেও তা মাথায়
লাগানো যাবে না। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে নারী তার
মাথায় এমন চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার
নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে”।
[34] যে মেয়েরা মাথায় পরচুলা লাগিয়ে বড়
খোঁপা প্রদর্শন করে আল্লাহ রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর অভিসম্পাত
করেছেন। অবশ্য কোনো মহিলার মাথায় যদি
আদৌ চুল না থাকে তবে ঐ ত্রুটি ঢাকার জন্য
তার পক্ষে পরচুলা ব্যবহার বৈধ। ভ্রু চেঁছে সরু
চাঁদের মত করে সৌন্দর্য আনয়ন বৈধ নয়।
স্বামী চাইলেও নয়। যেহেতু ভ্রু ছেঁড়া বা
চাঁছাতে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়;
যাতে তাঁর অনুমতি নেই। তাছাড়া নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন
মেয়েদেরকেও অভিশাপ করেছেন। অনুরূপ কপাল
চেঁছেও সৌন্দর্য আনা অবৈধ। মহিলার গালে বা
ওষ্ঠের উপরে পুরুষের দাড়ি-মোচের মত দু-
একটা বা ততোধিক লোম থাকলে তা তুলে ফেলায়
দোষ নেই। কারণ, বিকৃত অঙ্গে স্বাভাবিক
আকৃতি ও শ্রী ফিরিয়ে আনতে শরীয়তের
অনুমতি আছে। নাক ফুড়িয়ে তাতে কোনো
অলঙ্কার ব্যবহার করার ব্যাপারে কোনো দলীল
নেই। তবে কেউ কেউ তা বৈধ বলেছেন। কিন্তু তা
সুন্নাত নয় বিধায় কাজটি না করাই শ্রেয়।
দেগে মুখে-হাতে নক্সা করা বৈধ নয়। এরূপ দেগে
নক্সা যে বানিয়ে দেয় এবং যার জন্য বানানো
হয় উভয়কেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। স্বামীর
দৃষ্টি ও মন আকর্ষণের জন্য ঠোঁট-পালিশ,
গাল-পালিশ প্রভৃতি অঙ্গরাজ ব্যবহার বৈধ;
যদি তাতে কোনো প্রকার হারাম বা ক্ষতিকর
পদার্থ মিশ্রিত না থাকে। দাঁত ঘষে ফাঁক-ফাঁক
করে চিরনদাঁতির রূপ আনা বৈধ নয়। এমন
নারীও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর মুখে অভিশপ্ত। অবশ্য কোনো দাঁত
অস্বাভাবিক ও অশোভনীয় রূপে বাঁকা বা
অতিরিক্ত (কুকুরদাঁত) থাকলে তা সিধা করা বা
তুলে ফেলা বৈধ। নখ কেটে ফেলা মানুষের এক
প্রকৃতিগত রীতি। প্রতি সপ্তাহে একবার না
পারলেও ৪০ দিনের ভিতর কেটে ফেলতে হয়।
কিন্তু এই প্রকৃতির বিপরীত করে কতক
মহিলা নখ লম্বা করায় সৌন্দর্য আছে মনে
করে। নিছক পাশ্চাত্যের মহিলাদের অনুকরণে
অসভ্য লম্বা ধারালো নখে নখ-পালিশ লাগিয়ে
বন্য সুন্দরী সাজে। কিন্তু মনের রাখতে হবে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, « ْﻦَﻣَﻭ َﻪَّﺒَﺸَﺗ ٍﻡْﻮَﻘِﺑ َﻮُﻬَﻓ ْﻢُﻬْﻨِﻣ »
“যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করে সে সেই
জাতির দলভুক্ত”।[35] নখে নখ-পালিশ
ব্যবহার অবৈধ নয়, তবে ওযুর পূর্বে তুলে ফেলতে
হবে। নচেৎ ওযু হবে না। অবশ্য এর জন্য উত্তম
সময় হল মাসিকের কয়েক দিন। তবে গোসলের
পূর্বে অবশ্যই তুলে ফেলতে হবে। মহিলাদের
চুলে, হাতে ও পায়ে মেহেন্দি ব্যবহার
মাসিকাবস্থাতেও বৈধ। বরং মহিলাদের নখ
সর্বদা মেহেন্দী দ্বারা রঙ্গিয়ে রাখাই
উত্তম। এতে এবং অনুরূপ আলতাতে পানি প্রবেশে
বাধা হয় না। সুতরাং না তুলে ওযু-গোসল হয়ে
যাবে। রঙ ব্যবহার পুরুষদের জন্য বৈধ নয়।
অবশ্য চুল-দাঁড়িতে কলপ লাগাতে পারে; তবে
কালো রং নয়। পায়ে নূপুর পরা বৈধ; যদি তাতে
বাজনা না থাকে। বাজনা থাকলে বাইরে যাওয়া
অথবা বেগানার সামনে শব্দ করে চলা হারাম।
কেবল স্বামী বা এগানার সামনে বাজনাদার নূপুর
বা তোড়া আদি ব্যবহার দোষের নয়। অতিরিক্ত
উঁচু সরু হিল- তোলা জুতা ব্যবহার বৈধ নয়।
কারণ এতে নারীর চলনে এমন ভঙ্গি সৃষ্টি হয়
যা দৃষ্টি-আকর্ষণ করে; যাতে পুরুষ প্রলুব্ধ
হয়। তাছাড়া এতে আছাড় খেয়ে বিপদগ্রস্ত বা
লাঞ্ছিতা হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। স্বামীর
জন্য নিজেকে সর্বদা সুরভিতা করে রাখায়
নারীত্বের এক আনন্দ আছে। ভালোবাসায় যাতে
ঘুণ না ধরে; বরং তা যাতে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়
সে চেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর উভয়কেই রাখা
উচিত। তবে মহিলা কোনো সেন্ট বা
সেন্টজাতীয় প্রসাধন ব্যবহার ক’রে বাইরে
বেগানার সামনে যেতে পারে না। কারণ, তার
নিকট থেকে সেন্ট যেমন স্বামীর মন ও ধ্যান
আকর্ষণ করে সুপ্ত যৌন বাসনা জাগ্রত করে,
কামানল প্রজ্বলিত করে, ঠিক তেমনিই
পরপুরুষের মন, ধ্যান, যৌবন প্রভৃতি আকৃষ্ট
হয়। তাই তো যারা সেন্ট ব্যবহার করে বাইরে
বেগানা পুরুষের সামনে যায় তাদেরকে শরীয়তে
‘বেশ্যা’ বলা হয়েছে। এখানে খেয়াল রাখার
বিষয় যে, সেন্টে যেন কোহল বা স্পিরিট
মিশ্রিত না থাকে; থাকলে তা ব্যবহার (অনেকের
নিকট) বৈধ নয়। কোনো বিকৃত অঙ্গে সৌন্দর্য
আনয়নের জন্য অপারেশন বৈধ। কিন্তু
ত্রুটিহীন অঙ্গে অধিক সৌন্দর্য আনয়নের
উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার করা বৈধ নয়।
পক্ষান্তরে অতিরিক্ত আঙ্গুল বা মাংস হাতে বা
দেহের কোনো অঙ্গে লটকে থাকলে তা কেটে ফেলা
বৈধ। কোনো আঙ্গিক ত্রুটি ঢাকার জন্য
কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার দূষণীয় নয়। যেমন,
সোনার বাঁধানো নাক, দাঁত ইত্যাদি ব্যবহার করা
যায়। সতর্কতার বিষয় যে, অলঙ্কার ও পোশাক-
পরিচ্ছদ নিয়ে মহিলা মহলে মহিলাদের আপসে
গর্ব করা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ক্ষণে
ক্ষণে ‘ড্রেস চেঞ্জ’ করা বা অলঙ্কার বদলে পরা
বা ডবল সায়া ইত্যাদি পরা ভালো মেয়ের লক্ষণ
নয়। গর্ব এমন এক কর্ম যাতে মানুষ লোকচক্ষে
খর্ব হয়ে যায়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « ﺍﻮُﻠُﻛ
،ﺍﻮُﻗَّﺪَﺼَﺗَﻭ ﺍﻮُﺴَﺒﻟﺍَﻭ ﺍﻮُﺑَﺮْﺷﺍَﻭ ﻲِﻓ ِﺮْﻴَﻏ
ٍﻑﺍَﺮْﺳِﺇ َﻻَﻭ ٍﺔَﻠﻴِﺨَﻣ‏» َﻝﺎَﻗَﻭ ُﻦْﺑﺍ : ٍﺱﺎَّﺒَﻋ ”
ْﻞُﻛ ﺎَﻣ ،َﺖْﺌِﺷ ْﺲَﺒﻟﺍَﻭ ﺎَﻣ َﺖْﺌِﺷ ، ﺎَﻣ
َﻚْﺗَﺄَﻄْﺧَﺃ ِﻥﺎَﺘَﻨْﺛﺍ : ،ٌﻑَﺮَﺳ ْﻭَﺃ ٌﺔَﻠﻴِﺨَﻣ “ “যা
ইচ্ছা খাও,পান কর ও পর, তবে যেন দু’টি
জিনিস না থাকে; অপচয় ও গর্ব, আব্দুল্লাহ
ইবন আব্বাস রা. বলেন, তুমি যা চাও খাও এবং যা
পার পরিধান কর তবে তোমার থেকে দুটি
জিনিস যেন না প্রকাশ পায় -অপচয় ও
অহংকার”।[36] আল্লাহ তা‘আলা সুন্দর। তিনি
সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। কিন্তু
এতে সময় ও অর্থের অপচয় করা বৈধ নয়।
কারণ, তিনি অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না।
পরন্তু অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই-বোন।
পক্ষান্তরে, ফুলের সৌরভ ও রূপের গৌরব থাকেও
না বেশী দিন। ‘সৌন্দর্য-গর্বিতা ওগো রানী!
তোমার এ কমনীয় রম্য দেহখানি, এই তব
যৌবনের আনন্দ বাহার জান কি গো, নহে তা
তোমার?’ এক বৃদ্ধার মুখমণ্ডলে ঔজ্জ্বল্য দেখে
একজন মহিলা তাকে প্রশ্ন করল, তোমার
চেহারায় এ বৃদ্ধ বয়সেও লাবণ্য ফুটছে, রূপ যেন
এখনো যুবতীর মতই আছে। তুমি কোনো ক্রিম
ব্যবহার কর গো? বৃদ্ধা সহাস্যে বলল, দুই ঠোঁটে
ব্যবহার করি সত্যবাদিতার লিপস্টিক, চোখে
ব্যবহার করি (হারাম থেকে) অবনত দৃষ্টির
কাজল, মুখমণ্ডলে ব্যবহার করি পর্দার ক্রিম
ও গোপনীয়তার পাউডার, হাতে ব্যবহার করি
পরোপকারিতার ভেজ-লীন, দেহে ব্যবহার করি
ইবাদতের তেল, অন্তরে ব্যবহার করি আল্লাহর
ভালোবাসা, মস্তিষ্কে ব্যবহার করি প্রজ্ঞা,
আত্মায় ব্যবহার করি আনুগত্য এবং প্রবৃত্তির
জন্য ব্যবহার করি ঈমান। সত্যই কি অমূল্য
ক্রিমই না ব্যবহার করে বৃদ্ধা। তাই তো তার
চেহারায় ঈমানী লাবণ্য ও জ্যোতি। আল্লাহ
আমাদের মা-বোন- স্ত্রীদেরকে পর্দার উপর
প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আমীন। [1] সূরা নিসা,
আয়াত: ১ [2] সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩ [3] সূরা
নিসা, আয়াত: ১২৪ [4] সূরা নাহল, আয়াত: ৯৭
[5] সূরা গাফের, আয়াত: ৪০ [6] বুখারী, ৫০৯৬ ;
মুসলিম, ২৭৪০। [7] তিরমিযি, হাদিস:
১১৭১ [8] বুখারি, ৫২৩২, মুসলিম, হাদিস:
২১৭২ তিরমিযি, হাদিস ১১৭১ [9] যদিও
পীর-মুরিদী প্রথা হারাম। এখানে শুধু
উদাহরণের জন্য আনা হয়েছে। [সম্পাদক] [10]
বুখারি, হাদিস: ১৮৬২ [11] তিরমিযি,
হাদিস: ১১৩৭ আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে
সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। [12] তিরমিযি,
হাদিস: ১১৭২ [13] তিরমিযি, ২৭৭৯ [14]
সহীহ আল-জামে আস-সগীর আযযিয়াদাতুহ:
২৭০ [15] বুখারি, হাদিস: ১২০৩ [16]
মুসলিম, হাদিস: ২৬৫৭ [17] আস-সিলসিলাতুস
সহীহাহ, আলবানী: ২২৬ [18] মুসলিম: ২১২৮
[19] সূরা নূর, আয়াত: ৩১ [20] সহীহ ইবন
হিব্বান, ৫৬০১। [21] আবু দাউদ, হাদিস:
৫২৭২ [22] তিরমিযি, ২৮০৩। [23]
মুস্তাদরাক লিল হাকেম, ৭৭৭৯ [24] আহমদ:
১৩৬৯ [25] সূরা নূর, আয়াত: ৩১ [26] সূরা
আহযাব, আয়াত: ৫৩ [27] ইবনু মাজাহ, হাদিস:
১৯০৪ [28] আহমদ, হাদিস: ৫১১৪ [29] সমাজে
প্রচলিত থাকার কারণেই বলা হলো, নতুবা পীর
প্রথার অনুমোদন ইসলামে নেই। [সম্পাদক]
[30] সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬ [31] সূরা নূর, ৬০
[32] ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৪১৮৫; তিরমিযি,
হাদিস: ১৯৭৪ [33] ৭০৮৩ [34] সহীহ আল-
জামিউস সাগীর: ২৭০৫ [35] আহমদ, হাদিস:
৫১১৪ [36] বুখারী, ৭/১৪০। তা‘লীক হিসেবে
তিনি নিয়ে এসেছেন। আবু আবদুর রাহমান
আহমাদ ইবন শু‘আইব আন-নাসাঈ তার গ্রন্থে তা
সনদসহ বর্ণনা করেছেন। যার সনদ হাসান।
[সম্পাদক]
_____________________________________________
____________________________________
সংকলন: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের সম্পাদনা: ড.
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সূত্র: ইসলাম
প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরবm

রাসূল সাঃ এর কিছু মহামূল্যবান বাণী

জেনে নিন মহানবী ( সাঃ ) এর ২১৩
টি মহা মূল্যবান বাণী
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সর্বশেষ নবী। দুনিয়াতে
যারা তাঁর দেখানো পথে চলবে, পরকালে তারাই
জান্নাতে যাবে। তারাই জাহান্নাম থেকে মুক্তি
পাবে।
আমরা তাঁর উম্মত বা অনুসারী দল। আমরা তাঁর
দেখানো পথে চলি। সঠিক পথ পাবার জন্যে
তিনি আমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে
গেছেন। একটি হলো আল্লাহর কুরআন। আর
অপরটি হলো তাঁর সুন্নত বা সুন্নাহ।
নবীর সুন্নাহ সম্পর্কে জানা যায় হাদীস
থেকে।হাদীসের অনেকগুলো বড় বড় গ্রন্থ আছে ।
নবীর বাণীকে হাদীস বলে।
নবীর কাজ কর্ম এবং চরিত্রের বর্ণনাকে ও
হাদীস বলে।
নবীর সমর্থন এবং আদেশ নিষেধের বর্ণনাকেও
হাদীস বলে।
ইসলামের সত্য ও সঠিক পথকে জানাবার জন্যে
আমাদেরকে আল্লাহর বাণী কুরআন মজীদকে বুঝতে
হবে এবং মানতে হবে।
ঠিক তেমনি আমাদেরকে মহানবী হযরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
বাণী হাদীস পড়তে হবে এবং সে অনুযায়ী চলতে
হবে।
তবেই মহান আল্লাহ খুশী হবেন আমাদের প্রতি
।আমরা হতে পারবো সত্যিকার মুসলিম।
সে জন্যেই আমরা এখানে সংকলন করেছি প্রিয়
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
অনেকগুলো হাদীস। এসো আমরা সবাই প্রিয়
নবীর এই বাণীগুলো পড়ি এবং মেনে চলি।
আল্লাহ
১.জান্নাতের চাবি হলো – ‘ আল্লাহ ছাড়া
কোনো ইলাহ নাই ’ এ সাক্ষ্য দেয়া । ( আহমদ )
শব্দার্থ : ‘ ইলাহ’ মানে হুকুমকর্তা , আইনদাতা ,
আশ্রয়দাতা, ত্রাণকর্তা, উপাস্য, প্রার্থনা
শ্রবণকারী।
২.আল্লাহ সুন্দর ! তিনি সৌন্দর্যকেই পছন্দ
করেন। [ সহীহ মুসলিম ]
৩. শ্রেষ্ঠ কথা চারটি :
ক. সুবহানাল্লাহ – আল্লাহ পবিত্র ,
খ. আল হামদুলিল্লাহ – সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহর ,
গ. লা – ইলাহা ইল্লাল্লাহ – আল্লাহ ছাড়া কোন
ইলাহ নাই,
ঘ. আল্লাহু আকবর – আল্লাহ মহান। [ সহীহ
মুসলিম ]
আল্লাহর অধিকার
৪. বান্দাহর উপর আল্লাহর অধিকার হলো ,
তারা কেবল তাঁরই আনুগত্য ও দাসত্ব করবে এবং
তাঁর সাথে কোনো অংশীদার বানাবেনা । [ সহীহ
বুখারী ]
ঈমান
৫.বলো : ‘ আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি ;
অতপর এ কথার উপর অটল থাকো । [ সহীহ
মুসলিম ]
৬. ঈমান না এনে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবেনা। [ তারগীব ]
৭. যে কেউ এই ঘোষণা দেবে : ‘ আল্লাহ ছাড়া
কোনো ইলাহ নাই আর মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর
রসূল ’ – আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্যে
নিষিদ্ধ করে দেবেন।[ সহীহ বুখারী ]
ঈমান থাকার লক্ষণ
৮. তুমি মুমিন হবে তখন , যখন তোমার ভালো
কাজ তোমাকে আনন্দ দেবে , আর মন্দ কাজ দেবে
মনোকষ্ট। [ আহমদ ]
ইসলাম
৯. সব কাজের আসল কাজ হলো ‘ ইসলাম’ ।
[ আহমদ ]
১০. কোনো বান্দাহ ততোক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম
হয়না , যতোক্ষণ তার মন ও যবান মুসলিম না
হয়। [ তাগরীব ]
পবিত্রতা
১১. পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। [ সহীহ
মুসলিম ]
১২ . যে পূত পবিত্র থাকতে চায় , আল্লাহ তাকে
পূত পবিত্র রাখেন। [ সহীহ বুখারী ]
সালাত
১৩. সালাত জান্নাতের চাবি। [ আহমদ ]
শব্দার্থ : সালাত – নামায । জান্নাত –
বেহেশত।
১৪ . সালাত হলো ‘ নূর’ । [ সহীহ মুসলিম ]
১৫. সালাত আমার চক্ষু শীতলকারী ।
[ নাসায়ী ]
১৬. পবিত্রতা সালাতের চাবি । [ আহমদ ]
১৭. সালাত মুমিনদের মি’রাজ । [ মিশকাত ]
শব্দার্থ : মি’রাজ মানে – উর্ধ্বে গমন করা বা
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।
১৮. যে পরিশুদ্ধ হয়না , তার সালাত হয়না।
[ মিশকাত ]
১৯. সাত বছর বয়স হলেই তোমাদের সন্তানদের
সালাত আদায় কতে আদেশ করো । [ আবু দাউদ ]
২০. কিয়ামতের দিন পয়লা হিসাব নেয়া হবে
সালাতের । [ তাবরানি ]
২১ . আল্লাহর অনুগত দাস আর কুফরীর মাঝে
মিলন সেতু হলো সালাত ত্যাগ করা । [ সহীহ
মুসলিম ]
২২ . যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্যে সালাত
পড়লো , সে শিরক করলো । [ আহমদ ]
সাওম
২৩ . সাওম একটি ঢাল। [ মিশকাত ]
শব্দার্থ : সাওম – রোজা।
২৪. সাওম এবং কুরআন বান্দার জন্যে সুপারিশ
করবে । [ বায়হাকী ]
২৫. যখন রমযান শুরু হয় , তখন রহমতের দুয়ার
খুলে দেয়া হয়। [ সহীহ বুখারী ]
২৬. তোমাদের মাঝে বরকতময় রমযান মাস
এসেছে। আল্লাহ তোমাদের উপর এ মাসের
সিয়াম সাধনা ফরয করে দিয়েছেন। [ নাসায়ী ]
হজ্জ ও উমরা
২৭. হজ্জ ও উমরা পালনকারীরা আল্লার
মেহমান। [ মিশকাত ]
আল্লাহর পথে জিহাদ
২৮ . আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি
সন্ধ্যা ব্যয় করা গোটা পৃথিবী এবং পৃথিবীর
সমস্ত সম্পদের চেয়ে উত্তম। [ সহীহ বুখারী ]
২৯. যে লড়ে যায় আল্লাহর বাণীকে বিজয়ী
করার জন্যে সেই আল্লাহর পথে ( জিহাদ করে )
। [ সহীহ বুখারী ]
৩০. অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা
সবচেয়ে বড় জিহাদ। [ তিরমিযী ]
জ্ঞানার্জন
৩১. রাত্রে ঘন্টাখানেক জ্ঞান চর্চা করা সারা
রাত জেগে ( ইবাদতে নিরত ) থাকার চেয়ে উত্তম
। [ দারমী ]
৩২. যে জ্ঞানের সন্ধানে বের হয় , সে আল্লাহর
পথে বের হয়। [ তিরমিযী ]
৩৩. আমার পরে সবচেয়ে বড় দানশীল সে , যে
কোনো বিষয়ে জ্ঞান লাভ করলো , অতপর তা
ছড়িয়ে দিলো । [ বায়হাকী ]
আল কুরআন
৩৪. সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব ।
[ সহীহ মুসলিম ]
৩৫. কুরআনকে আঁকড়ে ধরো , তাহলে কখনো
বিপথগামী হবেনা। [ মিশকাত ]
৩৬. কুরআন পরিবারের লোকেরা আল্লাহর
পরিবার এবং তাঁর বিশেষ লোক। [ নাসায়ী ]
৩৭. তোমরা আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধরো।
এর হালালকে হালাল বলে গ্রহণ করো এবং এর
হারামকে হারাম বলে বর্জন করো । [ হাকিম ]
৩৮. যে আল্লাহর কিতাবের পথ ধরে সে
দুনিয়াতে বিপথগামী হয়না এবং পরকালে হয়না
দুর্ভাগা । [ মিশকাত ]
৩৯. আমার উম্মতের সম্মানিত লোক হলো
কুরআনের বাহক আর রাতের সাথীরা [ বায়হাকী ]
রসূল ও সুন্নাহ
৪০. সর্বোত্তম জীবন পদ্ধতি হচ্ছে মুহাম্মদ
সাঃ প্রদর্শিত পদ্ধতি। [ সহীহ মুসলিম ]
৪১. যে আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহর
আনুগত্য করলো। [ সহীহ বুখারী ]
৪২. যে আমাকে অমান্য করলো সে আল্লাহকে
অমান্য করলো । [ সহীহ বুখারী ]
৪৩. যে আমার সুন্নতকে ভালোবাসলো সে আমাকে
ভালোবাসলো । [ সহীহ মুসলিম ]
৪৪. যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হলো , সে
আমার লোক নয়। [ সহীহ মুসলিম ]
৪৫ . আমি আল্লাহর কাছে শেষ নবী হিসেবে
লিখিত আছি। [ শরহে সুন্নাহ ]
নিয়্যত
৪৬. কাজ নির্ভর করে নিয়্যতের উপর।
[ সহীহ বুখারী ]
নোট : নিয়্যত মানে -উদ্দেশ্য,সংকল্প,ইচ্ছা
,কোনো নির্দিষ্ট কাজ করার সিদ্ধান্ত
নেয়া।‘কাজ নির্ভর করে নিয়্যতের উপর ’ মানে
কাজের পেছনে মানুষের যে উদ্দেশ্য, সংকল্প বা
সিদ্ধান্ত থাকে, তার ভিত্তিতেই সে ফল ও
পুরস্কার লাভ করবে।
৪৭. প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের সেই ফলই
পাবে,যা সে নিয়্যত করেছে।[সহীহ বুখারী ]
৪৮.আল্লাহ তোমাদের চেহারা সুরত ও ধনসম্পদ
দেখবেননা,তিনি দেখবেন তোমাদের অন্তর ও
কাজ [সহীহ মুসলিম ]
নোট :এখানে অন্তর মানে -উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বা
নিয়্যত।
এই তিনটি হাদীস থেকে আমরা মানব জীবনে
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বা নিয়্যতের গুরুত্ব জানতে
পারলাম।সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের
উদ্দেশ্যেই যাবতীয় কাজ করা উচিত।
নৈতিক চরিত্র
৪৯.মহত চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্যে আমার
আগমন। [মুআত্তায়ে মালিক ]
শব্দার্থ :‘আখলাকুন’ও‘খুলুকুন’ মানে -নৈতিক
চরিত্র,ব্যবহার,আচার আচরণ।
৫০.উত্তম চরিত্রের চাইতে বড় মর্যাদা আর
নেই।[ইবনে হিব্বান ]
৫১.ঈমানের পূর্ণতা লাভকারী মুমিন
তারা,যাদের নৈতিক চরিত্র সর্বোত্তম।
[মিশকাত ]
৫২.তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ
তারা,যাদের আচার ব্যবহার সবচেয়ে ভালো।
[সহীহ বুখারী ]
৫৩.আল্লাহর নবীর চরিত্র ছিলো ঠিক
কুরআনের মতো।[আয়েশা রাঃ সহীহ মুসলিম ]
দীন
৫৪.দীন খুব সহজ [সহীহ বুখারী ]
ব্যাখ্যা :দীন মানে – জীবন যাপন পদ্ধতি।
এখানো দীন মানে দীন ইসলাম । অর্থাৎ
ইসলামের জীবন যাপন পদ্ধতি খুব সহজ।
৫৫ . দীন হলো – কল্যাণ কামনা । [ সহীহ
মুসলিম ]
নোট : দীন ইসলামের মূল কথা হলো , নিজের
এবং সকল মানুষের দুনিয়াবী ও পরকালীন
কল্যাণ চাওয়া ।
৫৬ . আল্লাহ যার ভালো চান, তাকে দীনের
সঠিক জ্ঞান দান করেন। [ সহীহ বুখারী ]
আল্লাহর ভয়
৫৭. জ্ঞানের মাথা হলো আল্লাহকে ভয় করা।
[ মিশকাত ]
ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করে সে – ই
সবচেয়ে বড় জ্ঞানী ।
৫৮. আল্লাহকে ভয় করো , তাতেই সবচেয়ে বড়
ইবাদতকারী হতে পারবে।[ মিশকাত ]
৫৯. একজনের উপর আরেকজনের কোনো মর্যাদা
নেই। তবে আছে আল্লাহ ভীতি ভিত্তির ।
[ তিবরানী ]
৬০. সে ব্যক্তি দোযখে প্রবেশ করবেনা , যে
আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। [ তিরমিযী ]
শ্রেষ্ঠ আমল
৬১. শ্রেষ্ঠ আমল হলো , আল্লাহর জন্যে
ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যে ঘৃণা করা । [ আবু
দাউদ ]
বিশ্বস্ততা
৬২. যার মধ্যে আমানত নেই তার ঈমান নেই ।
[ মিশকাত ]
শব্দার্থ : আমানত মানে – বিশ্বস্ততা ,
বিশ্বাসযোগ্যতা।
৬৩. যে অংগীকার রক্ষা করেনা , তার ধর্ম
নেই। [ মিশকাত ]
দুনিয়ার জীবন
৬৪. দুনিয়া মুমিনের জন্যে কারাগার আর
কাফিরের বেহেশত। [ সহীহ মুসলিম ]
৬৫. দুনিয়াতে এমন ভাবে জীবন যাপন করো
যেনো তুমি একজন গরীব কিংবা পথিক।
[ সহীহ বুখারী ]
৬৬. অনাড়ম্বর জীবন যাপন ঈমানের অংশ ।
[ আবু দাউদ ]
মসজিদ
৬৭. পৃথিবীতে মসজিদগুলোই আল্লাহর
সবচাইতে প্রিয় জায়গা। [ সহীহ মুসলিম ]
৬৮. আমার জন্যে গোটা পৃথিবীকেই সিজদার
জায়গা এবং পবিত্র করে দেয়া হয়েছে। [ সহীহ
বুখারী ]
৬৯. যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ
বানায় , আল্লাহ জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর
বানায়। [ সহীহ বুখারী ]
মুয়াজ্জিন
৭০. কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের ঘাড় সবচেয়ে
লম্বা উঁচু হবে। [ সহীহ মুসলিম ]
নিজের জন্যে পরের জন্যে
৭১. নিজের জন্যে যা পছন্দ করো , অন্যদের
জন্যেও তাই পছন্দ করবে , তবেই হতে পারবে
মুমিন। [ সহীহ মুসলিম ]
৭২. তোমাদের কেউ মুমিন হবেনা , যতোক্ষণ সে
নিজের জন্যে যা পছন্দ করে , তার ভাইয়ের
জন্যেও তাই পছন্দ না করবে । [ সহীহ বুখারী ]
আল্লাহই যথেষ্ট
৭৩ . যে আল্লাহর উপর ভরসা করে , তার জন্যে
আল্লাহই যথেষ্ট। [ ইবনে মাজাহ ]
জ্ঞানী
৭৪ . জ্ঞানীরা নবীদের উত্তরাধিকারী ।
[ তিরমিযী ]
৭৫. জ্ঞানবান আর দুনিয়াদার সমান নয়।
[ দারেমী ]
৭৬. সবচেয়ে মন্দ লোক জ্ঞানীদের মধ্যে যারা
মন্দ তারা, আর সবচেয়ে ভালো লোক জ্ঞানীদের
মধ্যে যারা ভালো তারা। (দারমী)
৭৭. প্রতিটি জ্ঞান তার বাহকের জন্যে
বিপদের কারণ, তবে যে সে অনুযায়ী আমল (কাজ)
করে তার জন্যে নয়। (তাবরানী)
শিক্ষক
৭৮ . আমি প্রেরিত হয়েছি শিক্ষক হিসেবে।
[ মিশকাত ]
৭৯. শিক্ষাদান করো এবং সহজ করে শিখাও ।
[ আদাবুল মুফরাদ ]
সুধারণা কুধারণা
৮০. সুধারণা করা একটি ইবাদত। [ আহমদ ]
৮১. অনুমান ও কুধারণা করা থেকে বিরত থাকো ,
কেননা অনুমান হলো বড় মিথ্যা কথা। [ সহীহ
বুখারী ]
যুলম
৮২. যুলম করা থেকে বিরত থাকা । কেননা ,
কিয়ামতের দিন যুলম অন্ধকারের রূপ নেবে।
[ সহীহ মুসলিম ]
৮৩. মযলুমের ফরিয়াদ থেকে আত্মরক্ষা করো।
[ সহীহ বুখারী ]
ভ্রাতৃত্ব
৮৪. মুমিন মুনিনের ভাই । [ মিশকাত ]
৮৫. মুসলমান মুসলমানের ভাই । [ সহীহ
বুখারী ]
নোট : এ দুটি হাদীসে ঈমান এবং ইসলামকে
ভ্রাতৃত্বের ভিত্তি বলা হয়েছে।
ভ্রাতৃত্বের দায়িত্ব
৮৬. মুমিন মুমিনের আয়না । [ মিশকাত ]
শিক্ষা : আয়না যেমন ময়লা দূর করতে এবং সাজ
সৌন্দর্য গ্রহণ করতে সাহায্য করে , তেমনি
একজন মুমিনের কর্তব্য তার মুমিন ভাইয়ের
দোষ ত্রুটি দূর ও সুন্দর গুণাবলী অর্জন করার
কাজে সাহায্য করা।
৮৭. মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ভাইয়ের
প্রতি যুলম করেনা এবং তাকে অপমানিতও
করেনা। [ সহীহ মুসলিম ]
৮৮. মুমিন মুমিনের সাথে প্রাচীরের গাঁথুনির
মতে মজবুত সম্পর্ক রাখে। [ সহীহ বুখারী ]
৮৯ . মুমিন ছাড়া অন্যকে সাথী বন্ধু বানাবেনা।
[ মিশকাত ]
সুকৃতি দুস্কৃতি
৯০. যে ভালো কাজের আদেশ করেনা এবং মন্দ কাজ
থেকে নিষেধ করেনা , সে আমার লোক নয়।
[ তিরমিযী ]
বিনয়
৯১ . যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ী হয় ,
আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। [ মিশকাত ]
বিশ্বাস ভংগ করা
৯২.যে তোমার সাথে বিশ্বাস ভংগ করেছে , তুমি
তার সাথে বিশ্বাস ভংগ করোনা । [তিরমিযী ]
আনুগত্য ও নেতৃত্ব
৯৩. যে নেতার আনুগত্য করলো, সে আমারই
আনুগত্য করলো। [ সহীহ বুখারী ]
৯৪. যে নেতার অবাধ্য হলো সে আমার অবাধ্য
হলো। [ সহীহ বুখারী ]
৯৫. যে আল্লাহর অবাধ্য হয় , তার আনুগত্য করা
যাবেনা। [ কানযুল উম্মাল ]
৯৬. কারো এমন হুকুম মানা যাবেনা , যাতে
আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে হয়। [ সহীহ
মুসলিম ]
৯৭. যে নেতা হয় , তাকে সবার চেয়ে দীর্ঘ
হিসাব চেয়ে দীর্ঘ হিসাব দিতে হবে।
[ কানযুল উম্মাল ]
দান
৯৮.দান হচ্ছে একটি প্রমাণ। [ সহীহ
মুসলিম ]
৯৯. যে আল্লাহর পথে একটি দান করে , আল্লাহ
তার জন্যে সাতশ ; গুণ লিখে দেন।
[ তিরমিযী ]
১০০. দান সম্পদ কমায়না। [ তিবরানী ]
ভালো ব্যবহার
১০১ . যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান
রাখে , সে যেনো উত্তম কথা বলে। [ সহীহ
বুখারী ]
১০২ . তোমার ভাইয়ের দিকে হাসি মুখে
তাকানো একটি দান ।[ তিরমিযী ]
১০৩. যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা , সে
আল্লাহরও কৃতজ্ঞ হয়না। [ আবু দাউদ ]
অর্থ ও আল্লাহ ভীতি
১০৪. যে আল্লাহকে ভয় করে , তার ধনী হওয়াতে
দোষ নেই। [ মিশকাত ]
১০৫. যে আল্লাহকে ভয় করে , তার জন্যে অর্থের
প্রাচুর্যের চেয়ে শারীরিক সুস্থতা উত্তম।
[ মিশকাত ]
সত্য মিথ্যা
১০৬. সত্য দেয় মনের শান্তি আর মিথ্যা দেয়
সংশয়। [ তিরমিযী ]
প্রফুল্লতা
১০৭. মনের প্রফুল্লতা আল্লাহর একটি
অনুগ্রহ । [ মিশকাত ]
ক্ষতিগ্রস্থ লোক
১০৮. যার দুটি দিন সমান গেলো , সে
ক্ষতিগ্রস্ত হলো। [ দায়লমী ]
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটির মর্ম হলো , যে ব্যক্তি
প্রতিদিন নিজেকে আগের দিনের চেয়ে এক ধাপ
উন্নত কতে পারেনা , কিছুটা এগিয়ে নিতে
পারেনা , সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পিছিয়ে
পড়ে।
ভালো মানুষ
১০৯ তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ তারা , যাদের
দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। [ ইবনে
মাজাহ ]
খাবার আদব
১১০. ডান হাতে খাও এবং যা নিকটে তা থেকে
খাও। [ সহীহ বুখারী ]
মেহমানদারি
১১১. যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান
রাখে , সে যেনো নিজের মেহমানকে সম্মান –
যত্ন করে । [ সহীহ বুখারী ]
ভালো কাজ
১১২. প্রতিটি ভালো কাজ একটি দান।
[ সহীহ বুখারী ]
১১৩. উত্তম লোক সে , যার বয়স হয় দীর্ঘ আর
কর্ম হয় সুন্দর । [ তিরমিযী ]
মুসলমানের অধিকার
১১৪. মুসলমান সে , যে নিজের অনিষ্টকর ভাষা
ও কর্ম থেকে মুসলমানদের নিরাপদ রাখে।
[ সহীহ বুখারী ]
১১৫. মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী আর হত্য
করা কুফরী। [ সহীহ বুখারী ]
১১৬. প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অপর
মুসলমানদের রক্ত , সম্পদ ও ইজ্জত
সম্মানযোগ্য। [ সহীহ মুসলিম ]
ব্যাখ্যা : হাদীসটির অর্থ এভাবেও বলা যায় :
মুসলমানের জন্যে মুসলমানের রক্তপাত করা এবং
সম্পদ ও ইজ্জত নষ্ট করা হারাম।
মুহাজির
১১৭. মুহাজির সে ,যে আল্লাহর নিষেধ করা
কাজ ত্যাগ করে। [ সহীহ বুখারী ]
শোকর ও সবর
যে খেয়ে শোক আদায় করে , সে ধৈর্যশীল
রোযাদারের সমতূল্য। [ তিরমিযী ]
১১৯. সবর হলো আলো। [ সহীহ মুসলিম ]
ধোকা হিংসা বিদ্বেষ
১২০. যে কাউকেও প্রতারণা করলো সে আমার
লোক নয়। [ সহীহ মুসলিম ]
১২১ . সাবধান! তোমরা হিংসা করা থেকে
আত্মরক্ষা করো। [ আবু দাউদ ]
১২২. তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা
করোনা , ঘৃণা বিদ্বেষ কারো না এবং পরস্পর
থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়োনা । [ সহীহ
মুসলিম ]
শিশু
১২৩. শিশুরা আল্লাহর ফুল।[ তিরমিযী ]
পরিজনের কাছে উত্তম
১২৪. তোমাদের মাঝে উত্তম লোক সে , যে তার
পরিবার পরিজনের কাছে উত্তম। [ ইবনে
মাজাহ ]
জনসেবা
১২৫. রোগীর সেবা করো এবং ক্ষুধার্তকে খেতে
দাও। [ সহীহ বুখারী ]
১২৬. আল্লাহ সকল কিছুর প্রতি দয়া ও
সহানুভূতি দেখাবার নির্দেশ দিয়েছেন।
[ সহীহ মুসলিম ]
১২৭. আল্লাহ ততোক্ষণ বান্দাহর সাহায্য
করেন , যতোক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য
করে। [ সহীহ মুসলিম ]
১২৮. যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে ,
আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন। [ সহীহ
বুখারী ]
১২৯. তোমার ভাইয়ের বিপদে আনন্দ প্রকাশ
করোনা। [ তিরমিযী ]
ব্যক্তিত্ব গঠন
১৩০. মুসলমান ব্যক্তির ইসলামনের
সৌন্দর্যগুলোর একটি হলো , নিরর্থক কথা ও
কাজ ত্যাগ করা। [ তিরমিযী ]
১৩১ . লজ্জা ঈমানের অংশ। [ মিশকাত ]
১৩২ . যখন সাহায্য চাইবে , আল্লাহর কাছে
চেয়ো। [ মিশকাত ]
আল্লাহকে স্মরণ করা
১৩৩. যে তার প্রভুকে স্মরণ করে , আর যে
করেনা , তাদের উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃতের
মতো। [ সহীহ মুসলিম ]
সত্য কথা
১৩৪. সত্য কথা বলো , যদিও তা তিক্ত ।
[ ইবনে হিব্বান ]
কর্মকৌশল
১৩৫. প্রচেষ্টার চেয়ে বড় কোনো যুক্তি নাই।
[ ইবনে হিব্বান ]
নিন্দুক
১৩৬. কোনো নিন্দুক জান্নাতে প্রবেশ
করবেনা। [ বুখারী ]
রাগ
১৩৭. রাগে উত্তেজিত হলে চুপ করে থাকো।
[ আদাবুল মুফরাদ ]
১৩৮.তোমাদের কেউ যখন উত্তেজিত হবে , সে
যেনো অযু করে আসে। [ আবু দাউদ ]
অহংকার
১৩৯. যার মনে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে ,
সে জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। [ সহীহ
মুসলিম ]
সালাম
১৪০. তোমাদের মাঝে সালাম আদান প্রদানের
ব্যাপক প্রচলন করো। [ সহীহ মুসলিম ]
১৪১. সবচেয়ে কৃপণ লোক সে , যে সালাম আদান
প্রদানে কৃপণতা করে । [ তিবরানী ]
দয়া ও ভালোবাসা
১৪২. যারা পৃথিবীতে আছে তাদের দয়া করো ,
তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাকে দয়া
করবেন। [ মিশকাত ]
১৪৩. যে মানুষের প্রতি দয়া করেনা , আল্লাহ
তার প্রতি দয়া করেননা। [ সহীহ বুখারী ]
১৪৪. তোমরা মুমিন হবেনা যতোক্ষণ একে
অপরকে ভালোবাসবেনা ।
শরীরের অধিকার
১৪৫. তোমরা উপর তোমার শরীরের অধিকার
রয়েছে। [ সহীহ বুকারী ]
ব্যাখ্যা : শরীরের অধিকার হলো , শরীর সুস্থ
রাখা ও বিশ্রাম নেয়া।
প্রতিবেশীর অধিকার
১৪৬. প্রতিবেশীর প্রতি সুন্দর সহানুভূতির
আচরণ করো , তবেই মুমিন হবে। [ মিশকাত ]
১৪৭. সে মুমিন নয় , যে নিজে পেট পূরে খায়
আর পাশেই তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।
[ বায়হাকী ]
প্রাচুর্য
১৪৮. মনের প্রাচুর্যই আসল প্রাচুর্য ।
[ সহীহ বুখারী ]
১৪৯. আল্লাহ তোমার ভাগে যা রেখেছেন , তাতে
সন্তুষ্ট থাকো , তবেই হবে সবচেয়ে
প্রাচুর্যশালী। [ মিশকাত ]
১৫০. যার উদ্দেশ্য হয় পরকাল লাভ করা ,
আল্লাহ তার অন্তরে প্রাচুর্য দান করেন।
[ তিরমিযী ]
জান্নাত ও জাহান্নাম
১৫১. জান্নাত এতই আকর্ষণীয় যে, তার
আকাংখীর চোখে ঘুম আসেনা। [ তিবরানী ]
১৫২. দোযখ এতোই ভয়াবহ যে , তার থকে
পলায়নকারীর চেখে ঘুম আসেনা। [ তিবরানী ]
মনের মরিচিকা
১৫৩. মনের মধ্যে লোহার মতোই মরিচিকা
পড়ে।। আর তা দূর করার উপায় হলো ক্ষমা
প্রর্থনা করা । [ বায়হাকী ]
অধীনস্থ
১৫৪. অধীনস্থদের সাথে নিকৃষ্ট আচরণকরী
জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। [ আহমদ]
মৃতদের গালি না দেয়া
১৫৫. মৃতদের গালি দিয়োনা।
উড়ো কথা প্রচার না করা
১৫৬. প্রতিটি শোনা কথা বলে বেড়ানোটাই
মিথ্যাবাদী হবার জন্যে যথেষ্ট। [ সহীহ
মুসলিম ]
মর্যাদা দান
১৫৭. মর্যাদা অনুযায়ী মানুষকে সমাদর করো।
[ আবু দাউদ ]
সতর্কতা
১৫৮. মুমিন এক পাথরে দুইবার হোঁচট খায়না।
[ সহীহ বুখারী ]
অট্টহাসি
১৫৯ অধিক হাসাহাসি অন্তরকে মেরে ফেলে ।
[ তিবরানী ]
সন্তান
১৬০. তোমাদের সন্তানদের মর্যাদা দান করো
এবং তাদের সুন্দর আচার ব্যবহার শিখাও।
[ ইবনে হিব্বান ]
শক্তিমান কে ?
১৬১. শক্তিশালী সে , যে রাগের সময় নিজেকে
নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। [ সহীহ মুসলিম ]
অধঃপতন
১৬২. যার কর্ম তাকে ডুবায় , তার বংশ তাকে
উঠাতে পারেনা। [ সহীহ মুসলিম ]
শাসক হবে তেমন
১৬৩. তোমরা হবে যেমন , তোমাদের শাসকও হবে
তেমন। [ মিশকাত ]
অপরের দোষ
১৬৪. যে ব্যক্তি একজন মুসলমানের দোষ
গোপন করবে , আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার
দোষ গোপন করবেন। [ সহীহ মুসলিম ]
আল্লাহর বিধান পালন
১৬৫. হারাম থেকে বেঁচে থাকো , আল্লাহ তোমাকে
হিফাযত করবেন। [ তিরমিযী ]
সৌভাগ্য
১৬৭. আল্লাহর সিদ্ধান্ত সন্তুষ্ট থাকতে পারা
আদম সন্তানের একটি সৌভাগ্য ।
[ তিরমিযী ]
কি নিয়ে উঠবে ?
১৬৮. প্রতিটি বান্দা কিয়ামতে তাই নিয়ে
উঠবে , যা নিয়ে সে মরেছে । [ সহীহ মুসলিম ]
নেতা
১৬৯. নেতা হবে মানুষের সেবক। [ দায়লমী ]
১৭০. তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং
প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে
জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
১৭১. মানুষের অবস্থা উটের মতো , একশটি
উটের মধ্যে ও একটি ভালো সোয়ারী পাওয়া
যায়না। [ সহীহ মুসলিম ]
জামাতবদ্ধতা
১৭২. জামাদের প্রতি আল্লাহর রহমত থাকে ।
যে জামাত ত্যাগ করে , সে জাহান্নামে
নিক্ষিপ্ত হয়। [ তিরমিযী ]
মতভেদ
১৭৩. মতভেদ কারোনা। তোমাদের পূর্বে যারা
মতভেদ করেছিল , তারা ধ্বংস হয়েছে। [ সহীহ
বুখারী ]
আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি
১৭৪. গোটা সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। যে
ব্যক্তি আল্লাহর পরিবারের জন্যে বেশী
উপকারী , সে তাঁর কাছে বেশী প্রিয়। [ সহীহ
মুসলিম ]
রসূলুল্লাহ সাঃ
১৭৫. আমি রসূলুল্লাহ (সা) চাইতে অধিক
সুন্দর কোনো কিছু দেখিনি। [ আবু হুরাইরা রা.
তিরমিযী ]
১৭৬. আমি কাউকেও রসূলুল্লাহর (সা) চাইতে
দ্রুত চলতে দেখিনি। [ আবু হুরাইরা রাঃ
তিরমিযী ]
১৭৭. রসূলুল্লাহ (সাঃ) কাছে কিছু চাওয়া
হয়েছে আর তিনি ‘ না’ বলেছেন , এমন কখনো
হয়নি। [ জাবির : সহীহ বুখারী ]
১৭৮. রসূলুল্লাহ (সাঃ) রোগীর সেবা করতেন
এবং কফিনের সাথে যেতেন। [ আনাস রাঃ ইবনে
মাজাহ ]
১৭৯. রসূলুল্লাহ (সা) দীর্ঘ সময় চুপ থাকতেন
। [ জাবির বিন সামু রাঃ শরহে সুন্নাহ ]
১৮০. রসূলুল্লাহ (সা) যখন কথা বলতেন , তখন
কেউ ইচ্ছে করলে তাঁর বক্তব্যের শব্দ সংখ্যা
গুণে নিতে পারতো । [ আয়েশা রাঃ সহীহ
বুখারী ]
১৮১. রসূলুল্লাহ (সা) কথা বলতেন থেমে থেমে
স্পষ্ট করে । [ জাবির রাঃ আবু দাউদ ]
১৮২. রসূলুল্লাহ (সা) সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার
করলে বিনিময়ে তিনি খারাপ ব্যবহার করতেন
না , বরং ক্ষমা করে দিতেন এবং উপেক্ষা
করতেন। [ আয়েশা রাঃ তিরমিযী ]
১৮৩. আমি প্রেরিত হয়েছি রহমত হিসেবে।
[ সহীহ মুসলিম ]
১৮৪. সুখবর তার জন্যে , যে আমাকে দেখেছে।
সাতবার সুখবর ঐ ব্যক্তির জন্যে যে আমাকে
দেখেনি , অথচ আমার প্রতি ঈমান এনেছে।
[ আহমদ ]
সাহাবায়ে কিরাম
১৮৫ . আমার উম্মতের উত্তম লোক হলো আমার
সময়ের লোকেরা । [ সহীহ বুখারী ]
১৮৬. আমার সাহাবীদের সম্মান দান করো ,
কারণ তারা তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।
[ মিশকাত ]
১৮৭. আমার সাহাবীদের গালি দিওনা। [ সহীহ
বুখারী ]
আবু বকর রাঃ
১৮৮. আমি যদি আমার প্রভুকে ছাড়া আর
কাউকেও বন্ধু বানাতাম , তবে অবশ্যি আবু বকরকে
বন্ধু বানাতাম । [ সহীহ বুখারী ]
১৮৯. হে আবু বকর! (পর্বত) গুহায় তুমি আমার
সাথী ছিলে , হাউজে কাউসারেও তুমি আমার
সাথী থাকবে। [ তিরমিযী ]
১৯০ . নিজের সাথীত্ব ও অর্থ দিয়ে আমাকে
সকলের চেয়ে অধিক সহযোগিতা করেছে আবু
বকর। [ সহীহ বুখারী ]
১৯১. হে আবু বকর ! আমার উম্মতের মধ্যে তুমিই
সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। [ আবু দাউদ ]
উমর রাঃ
১৯২. আল্লাহ উমরের যবান ও অন্তরে সত্য
সন্নিবেশ করে দিয়েছেন ।[ তিরমিযী ]
১৯৩. আমার পরে যদি কেউ নবী হতো , তবে
অবশ্যি উপর বিন খাত্তাব হতো।
[ তিরমিযী ]
শ্রেষ্ঠ নারী
১৯৪.পৃথিবীর সর্বোত্তম নারী ইমরানের
কন্যা মরিয়ম আর খুয়াইলিদের কন্যা খাদীজা।
[ সহীহ বুখারী ] নোট : মরিয়ম ছিলেন হযরত
ঈসা আলাইহিস সালামের মা , আর খাদীজা
ছিলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের স্ত্রী ।
দু’ আর নিয়ম ও গুরুত্ব
১৯৫.যখন কিছু প্রার্থনা করবে , আল্লাহর
কাছে করবে । [ মিশকাত ]
১০৬.দু’আ ইবাদত । [ তিরমিযী ]
১৯৭. দু’আ ইবাদতের মস্তিস্ক। [ তিরমিযী ]
১৯৮. আল্লাহর কাছে তাঁর অনগ্রহ চাও। তাঁর
কাছে প্রার্থনা করাকে আল্লাহ খুবই পছন্দ
করেন। [তিরমিযী ]
১৯৯. যে আল্লাহর কাছে চায়না , আল্লাহ তার
উপর রাগান্বিত হন। [ তিরমিযী ]
২০০. আমি আল্লাহর কাছে দিন একশ ’ বার
ক্ষমা প্রার্থনা করি। [ সহীহ মুসলিম ]
তাওবা
২০১. বান্দাহ যখন অপরাধ স্বীকার করে এবং
তাওবা করে , তখন আল্লাহ তার তাওবা কবুল
করেন। [ সহীহ বুখারী ]
ব্যাখ্যা : তাওবা মানে ফিরে আসা। তাওবা করার
অর্থ – অন্যায় , অপরাধ ও ভুল হয়ে গেলে তা
স্বীকার করে সে জন্যে অনুশোচনা করা ও তা
থেকে, ফিরে আসা এবং এমন কাজ আর কখনো না
করার সিদ্ধান্ত নেয়া।
২০২. সব আদম সন্তানই ভুল করে । তবে এদের
মধ্যে উত্তম হলো তারা যারা ভুলের জন্যে
তাওবা করে। [ তিরমিযী ]
রসূলুল্লাহর কতিপয় দু’আ
২০৩. হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে পানাহ
চাই দুশ্চিন্তা থেকে , মনোকষ্ট থেকে , বার্ধক্য
থেকে , আলস্য ও কাপুরুষতা থেকে এবং কৃপণতা ও
ঋণের বোঝা থেকে । [ সহীহ বুখারী ]
২০৪.হে আল্লাহ ! আমার অন্তরে আল্লাহভীতি
দাও এবং তাকে পরিশুদ্ধ করো। তুমিই তো তার
উত্তম পরিশুদ্ধকারী । [ সহীহ মুসলিম ]
২০৫. ওগো আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে এমন
জ্ঞান থেকে পানাহ চাই যাতে কোনো কল্যাণ নেই
। আর এমন হৃদয় থেকেও আশ্রয় চাই যাতে
তোমার ভয় নেই। [ আহমদ ]
২০৬. আয় আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে পানাহ
চাই সংশয় থেকে , কপটতা থেকে আর অসৎ
চরিত্র থেকে। [ নাসায়ী ]
২০৭. হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে চাই
হিদায়াত , আল্লাহভীতি , পবিত্র জীবন এবং
প্রাচুর্য । [ সহীহ মুসলিম ]
২০৮. ওগো আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা করে দাও ,
আমার প্রতি দয়া করো , আমাকে সঠিক পথ
দেখাও , আমাকে স্বস্তি দান করো এবং আমাকে
জীবিকা দাও। [ সহীহ মুসলিম ]
২০৯. আমার আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে
কল্যাণময় জ্ঞান , গ্রহণযোগ্য আমল আর
পবিত্র জীবিকা । [ আহমদ]
২১০. ওগো আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে
প্রার্থনা করছি সুস্থতা , স্বস্তি , বিশ্বস্ততা
, উত্তম চরিত্র আর তাকদীরের প্রতি
সন্তুষ্টি। [ বায়হাকী ]
২১১. আমার আল্লাহ ! আমি তোমার ভালোবাসা
চাই , আর যে তোমাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা
চাই। [ তিরমিযী ]
জীবন পথের আলো
২১২. আবু যর (রা) বলেন : আমি নিবেদন
করলাম,ওগো আল্লাহ রসূল আমাকে উপদেশ দিন।
তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি
আল্লাহকে ভয় করবার। কারণ এটাই তোমার
সমস্ত কাজকে সৌন্দর্য দান করবে।
আমি বললাম , আমাকে আরো উপদেশ দিন।
তিনি বললেন : কুরআন পাঠ এবং আল্লাহর
স্মরণ ও তাঁর বিষয়ে আলোচনাকে নিজের
কর্তব্য কাজ বানিয়ে নাও। এতে আকাশে তোমায়
নিয়ে আলোচনা হবে আর এটা পৃথিবীতে তোমার
পথের আলো হবে।
আমি বললাম , আমাকে আরো উপদেশ দিন।
তিনি বললেন : বেশী সময় নীরব থাকবে , কম
কথা বলবে। এটা শয়তানকে তাড়াবার হাতিয়ার
হবে এবং তোমার দীনের কাজের সহায়ক হবে।
আমি আরয করলাম , আমাকে আরো আদেশ দিন।
তিনি বললেন তিক্ত হলেও সত্য কথা বলবে।
আমি নিবেদন করলাম , আমাকে আরো উপদেশ
দিন।
তিনি বললেন : ইসলামী আন্দোলন ( জিহাদ )
করাকে নিজের কর্তব্য বানিয়ে নাও। কারণ
এটাই মুসলমানদের বৈরাগ্য।
আমি বললাম , আমাকে আরো কিছু বলুন ।
তিনি বললেন : দরিদ্র লোকদের ভালোবাসবে
এবং তাদের সাথে উঠাবসা করবে।
আমি বললাম , আমাকে আরো উপদেশ দিন।
তিনি বললেন : তোমার নিজের মধ্যে যেসব
দোষ ত্রুটি আছে , সেগুলোর দিকে তাকাও ।
অন্যের মধ্যে যে দোষ ত্রুটি আছে তা খুজে
বেড়ানো এবং বলে বেড়ানো থেকে বিরত থাকো।
অতপর তিনি আমার বুকে হাত মেরে বললেন , আবু
যর ! কর্মকৌশল ও কর্মপ্রচেষ্টার চাইতে বড়
বুদ্ধিমত্তা আর নেই। হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ
থেকে বিরত থাকার চেয়ে বড় বীরত্ব কিছু নেই।
আর সুন্দর ব্যবহারের চাইতে বড় কোনো ভদ্রতা
নেই। [ ইবনে হিব্বান ]
সঠিক পথে চলো
২১৩. আমার প্রভু আমাকে নয়টি নির্দেশ
দিয়েছেন। সেগুলো হলো :
১. গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করতে ,
২. সন্তুষ্টি এবং অসন্তুষ্টি উভয় অবস্থাতে
ন্যায় কথা বলতে ,
৩. দারিদ্র ও প্রাচুর্য উভয় অবস্থাতে
মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে ,
৪. যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে , তার
সাথে সম্পর্ক জুড়তে,
৫. যে আমাকে বঞ্চিত করে , তাকে দান করতে ,
৬. যে আমার প্রতি অবিচার করে , তাকে ক্ষমা
করে দিতে ,
৭. আমার নীরবতা যেনো চিন্তা গবেষণায় কাটে
,
৮. আমার কথাবার্তা যেনো হয় উপদেশমূলক ,
৯. আমার প্রতিটি দৃষ্টি যেনো হয় শিক্ষা
গ্রহণকারী ।
এ ছাড়া ও আমার প্রভু আমাকে আরো দুটি
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো হলো :
১. আমি যেনো ভালো কাজের আদেশ করি এবং
২. মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করি। ( সহীহ
বুখারী )

হাদিস/ সুন্নাহ অস্বীকারকারী কাফের হওয়া প্রসঙ্গে

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সুন্নাহর উপর আমলের আবশ্যকতা আর তার
অস্বীকারকারীর কাফের হওয়া
ﻢﺴﺑ ﻦﻤﺣﺮﻟﺍ ﻪﻠﻟﺍ ﻢﻴﺣﺮﻟﺍ
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের মহান রব আল্লাহর
জন্য। উত্তম পরিণতি কেবল মুত্তাকীদের
জন্য। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার বান্দা
ও রাসূল আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর; যাকে সকল
সৃষ্টির জন্য রহমত ও সমস্ত বান্দাদের জন্য
দলীল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। আরও
নাযিল হোক তার পরিবার-পরিজন ও সাথী-
সঙ্গীদের উপর; যারা অত্যন্ত আমানতদারিতা
ও দৃঢ়তার সাথে তাদের পবিত্র মহান প্রভুর
কিতাব ও তাদের নবীর সুন্নাহ্কে বহন করেছে
এবং শব্দ ও অর্থ পরিপূর্ণ সংরক্ষণ করে তাদের
পরবর্তীদের নিকট পৌঁছিয়েছে। আল্লাহ
তাদের প্রতি সন্তুষ্ট ও তাদের খুশি করুন এবং
আমাদেরকে তাদের সুন্দর অনুসারী হিসেবে কবুল
করুন।
পূর্বের ও পরবর্তী যুগের সমস্ত আলেম এ
বিষয়ে একমত যে, কোনো বিধান প্রমাণ করা ও
কোনো বস্তুকে হারাম ও হালাল সাব্যস্ত করার
ক্ষেত্রে প্রথম গ্রহণযোগ্য মূল উৎস হচ্ছে,
আল্লাহর কিতাব, যার সামনে বা পিছন
কোনোদিক থেকেই তাতে বাতিল অনুপ্রবেশ করতে
পারে না, তারপর আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ্,
যিনি ওহী ছাড়া নিজের থেকে কোনো কথা
বলেন না, এ দুটি হচ্ছে মূল উৎস। তারপর
গ্রহণযোগ্য মূল উৎস হচ্ছে, উম্মতের
‘আলেমদের ‘ইজমা‘। এ তিনটি ব্যতীত
অন্যান্য উৎসের বিষয়ে আলেমগণের মধ্যে
মতভেদ রয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে
কিয়াস; তবে অধিকাংশ আলেমের মতে এটিও
হুজ্জত বা দলীল হিসেবে গণ্য হবে; যদি তার
মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার শর্তগুলো পাওয়া যায়।
এ মূল উৎসগুলোর সাব্যস্ত করণে দলীল-
প্রমাণাদি অগণিত ও অসংখ্য; যা এত প্রসিদ্ধ
যে উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না।
[আহকাম তথা বিধি-বিধান সাব্যস্ত করার
গ্রহণযোগ্য মূল উৎসসমূহ]
প্রথম মূল উৎস: আল্লাহর কিতাব
প্রথম মূল উৎস হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব,
আল্লাহর কিতাবের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা
আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করা, আল্লাহর
কিতাবকে আঁকড়ে ধরা এবং আল্লাহ প্রদত্ত
সীমানার সামনে অবস্থান করা ফরয হওয়া
প্রমাণিত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ْﺍﻮُﻌِﺒَّﺗﭐ ﴿ ٓﺎَﻣ َﻝِﺰﻧُﺃ ﻢُﻜۡﻴَﻟِﺇ ﻦِّﻣ ۡﻢُﻜِّﺑَّﺭ
ﺎَﻟَﻭ ْﺍﻮُﻌِﺒَّﺘَﺗ ٓۦِﻪِﻧﻭُﺩ ﻦِﻣ ﺎٗﻠﻴِﻠَﻗ َۗﺀٓﺎَﻴِﻟۡﻭَﺃ
ﺎَّﻣ َﻥﻭُﺮَّﻛَﺬَﺗ ٣ ﴾ ‏[ :ﻑﺍﺮﻋﻻﺍ ٣‏]
“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা
নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে
ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না।
তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর”।[1]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
ﺍَﺬَٰﻫَﻭ﴿ ٌﺐَٰﺘِﻛ ُﻩﻮُﻌِﺒَّﺗﭑَﻓ ٞﻙَﺭﺎَﺒُﻣ ُﻪَٰﻨۡﻟَﺰﻧَﺃ
ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ْﺍﻮُﻘَّﺗﭐَﻭ َﻥﻮُﻤَﺣۡﺮُﺗ ١٥٥
﴾ ‏[ :ﻡﺎﻌﻧﻻﺍ ١٥٥ ‏]
“আর এটি কিতাব- যা আমি নাযিল করেছি-
বরকতময়। সুতরাং, তোমরা তার অনুসরণ কর
এবং তাকওয়া অবলম্বন কর; যাতে তোমরা
রহমতপ্রাপ্ত হও”।[2]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ ﻢُﻛَﺀٓﺎَﺟ ۡﺪَﻗ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﻦِّﻣ ٞﺭﻮُﻧ ٞﺐَٰﺘِﻛَﻭ ٞﻦﻴِﺒُّﻣ
١٥ ﻱِﺪۡﻬَﻳ ِﻪِﺑ ُﻪَّﻠﻟﭐ ِﻦَﻣ َﻊَﺒَّﺗﭐ ۥُﻪَﻧَٰﻮۡﺿِﺭ
َﻞُﺒُﺳ ﻢُﻬُﺟِﺮۡﺨُﻳَﻭ ِﻢَٰﻠَّﺴﻟﭐ َﻦِّﻣ ِﺖَٰﻤُﻠُّﻈﻟﭐ ﻰَﻟِﺇ
ۡﻢِﻬﻳِﺪۡﻬَﻳَﻭ ۦِﻪِﻧۡﺫِﺈِﺑ ِﺭﻮُّﻨﻟﭐ ٰﻰَﻟِﺇ ٖﻁَٰﺮِﺻ
ٖﻢﻴِﻘَﺘۡﺴُّﻣ ١٦ ﴾ ‏[ :ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ،١٥ ١٦ ‏]
“অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে
আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর মাধ্যমে
আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তার
সন্তুষ্টি অনুসরণ করে এবং তার অনুমতিতে
তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের
করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হিদায়াত
দেন”।[3]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ َّﻥِﺇ﴿ ِﺮۡﻛِّﺬﻟﭑِﺑ ْﺍﻭُﺮَﻔَﻛ ﺎَّﻤَﻟ ۖۡﻢُﻫَﺀٓﺎَﺟ
ۥُﻪَّﻧِﺇَﻭ ٞﺰﻳِﺰَﻋ ٌﺐَٰﺘِﻜَﻟ ٤١ ِﻪﻴِﺗۡﺄَﻳ ﺎَّﻟ ُﻞِﻄَٰﺒۡﻟﭐ
ۢﻦِﻣ ِﻦۡﻴَﺑ ِﻪۡﻳَﺪَﻳ ﺎَﻟَﻭ ۡﻦِﻣ ۖۦِﻪِﻔۡﻠَﺧ ٞﻞﻳِﺰﻨَﺗ ۡﻦِّﻣ
ٍﻢﻴِﻜَﺣ ٖﺪﻴِﻤَﺣ ﴾٤٢ ‏[ :ﺖﻠﺼﻓ ،٤١ ٤٢ ‏]
“নিশ্চয় যারা উপদেশ [কুরআন] আসার পরও তা
অস্বীকার করে, [তাদেরকে অবশ্যই এর পরিণাম
ভোগ করতে হবে] আর নিশ্চয় এক সম্মানিত
গ্রন্থ। বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না,
না সামনে থেকে না পিছন থেকে। এটি
প্রজ্ঞাময়, স-প্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিল
কৃত”।[4]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
َﻲِﺣﻭُﺃَﻭ﴿ َّﻲَﻟِﺇ ﻢُﻛَﺭِﺬﻧُﺄِﻟ ُﻥﺍَﺀۡﺮُﻘۡﻟﭐ ﺍَﺬَٰﻫ
ۦِﻪِﺑ ۢﻦَﻣَﻭ ﴾١٩َۚﻎَﻠَﺑ ‏[ :ﻡﺎﻌﻧﻻﺍ ١٩ ‏]
“আর এ কুরআন আমার কাছে ওহী করে পাঠানো
হয়েছে যেন তোমাদেরকে ও যার কাছে এটা
পৌছবে তাদেরকে এর মাধ্যমে আমি সতর্ক
করি”।[5]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ ﺍَﺬَٰﻫ ِﺱﺎَّﻨﻠِّﻟ ٞﻎَٰﻠَﺑ ْﺍﻭُﺭَﺬﻨُﻴِﻟَﻭ ٥٢ۦِﻪِﺑ
﴾ ‏[ :ﻢﻴﻫﺍﺮﺑﺍ ٥٢ ‏]
“এটা মানুষের জন্য পয়গাম। আর যা দ্বারা
তাদেরকে সতর্ক করা হয়”।[6]
উল্লেখিত আয়াত ছাড়াও এ বিষয়ে আরও অনেক
আয়াতই বিদ্যমান আছে।
আর এ বিষয়ে বহু বিশুদ্ধ হাদিসও অনেক রয়েছে,
যাতে আল্লাহর কিতাবকে মজবুত করে ধরার এবং
অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে; যাতে
প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবকে
মজবুত করে আঁকড়ে ধরবে, সে হিদায়াতের উপর
থাকবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবকে
বর্জন করবে, সে গোমরাহ হবে।
তন্মধ্য থেকে কিছু হাদিস:
·      রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিদায় হজের ভাষণে সমবেত সাহাবীদের
সম্বোধন করে বলেন,
‏« ﻲِّﻧِﺇ ْﻢُﻜﻴﻓ ٌﻙﺭﺎﺗ ﺎَﻣ ﺍﻮﻠﻀﺗ ْﻦَﻟ ﻥِﺇ
ْﻢُﺘْﻤَﺼَﺘْﻋﺍ َﺏﺎَﺘِﻛ ِﻪِﺑ ِﻪﻠﻟﺍ ‏» ، ﻩﺍﻭﺭ ﻢﻠﺴﻣ
ﻲﻓ ﻪﺤﻴﺤﺻ
“আমি তোমাদের নিকট এমন একটি বস্তু রেখে
যাচ্ছি, যদি তোমরা তাকে মজবুত করে পাকড়াও
কর, তবে তোমরা কখনোই গোমরাহ হবে না। তা
হল আল্লাহর কিতাব”।[7]
·      সহীহ মুসলিমে যায়েদ ইবন আরকাম
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে আরও বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻙﺭﺎﺗ ﻲِّﻧِﺇ ْﻢُﻜﻴِﻓ ﺎﻤُﻬﻟَّﻭَﺃ ﻦﻴَﻠْﻘِﺛ ُﺏﺎﺘِﻛ
ﻪﻠﻟﺍ ِﻪﻴﻓ ﺭﻮُّﻨﻟﺍﻭ ﻯَﺪُﻬﻟﺍ ِﺏﺎَﺘﻜِﺑ ﺍﻭﺬُﺨَﻓ
ﺍﻮُﻜّﺴَﻤَﺗَﻭ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻪِﺑ ‏»
“আমি তোমাদের মধ্যে দুটি বিষয় রেখে যাব,
তার একটি হল, আল্লাহর কিতাব, তাতে রয়েছে
হিদায়াত ও নূর। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে
আঁকড়ে ধর এবং তার প্রতি অবিচল থাক”।[8]
হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের প্রতি উৎসাহ
প্রদান করেন এবং আকৃষ্ট করেন। তারপর তিনি
বলেন,
‏«ُﻞْﻫَﺃَﻭ ﻲﺘْﻴَﺑ ﻪﻠﻟﺍ ُﻢُﻛﺮِّﻛَﺫﺃ ﻲﻓ ﻞﻫﺃ
ﻢﻛﺮﻛﺫﺃ ﻲﺘﻴﺑ ﻪﻠﻟﺍ ﻲﻓ ﻞﻫﺃ ﻲﺘﻴﺑ ‏»
“এবং আমার আহলে বাইত। আমার পরিবার
পরিজন সম্পর্কে আমি তোমাদের আল্লাহকে
স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমার পরিবার
পরিজন সম্পর্কে আমি তোমাদের আল্লাহকে
স্মরণ করিয়ে দিতে চাই”।[9]
·      অপর শব্দে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন সম্পর্কে বলেন,
‏« ﻮﻫ ﻞﺒﺣ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﻣ ﻚﺴﻤﺗ ﻪﺑ ﻥﺎﻛ ﻰﻠﻋ
ﻯﺪﻬﻟﺍ ﻦﻣﻭ ﻪﻛﺮﺗ ﻥﺎﻛ ﻝﻼﻀﻟﺍ ﻰﻠﻋ ‏».
“এটি আল্লাহর রশি, যে তাকে মজবুত করে
ধরবে, সে হিদায়াতের উপর থাকবে আর যে
ব্যক্তি তাকে ছেড়ে দেবে-মজবুত করে ধরবে না-
সে অবশ্যই গোমরাহির উপর থাকবে”।[10] এ
বিষয়ে আরও অনেক হাদিস বিদ্যমান। আল্লাহর
কিতাবকে মজবুত করে ধরা, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্সহ আল্লাহর
কিতাব অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা ফরয
হওয়ার বিষয়ে সাহাবী ও তাদের পরবর্তী
জ্ঞানী ও ঈমানদারগণের ঐকমত্য দ্বারা
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা এর উপর দলীল-
প্রমাণাদি পেশ করে আলোচনার পরিমণ্ডল
দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজনীয়তা লোপ করে
দেয়।
দ্বিতীয় মূল উৎস: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।
[এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবী ও তাদের পরবর্তী
আলেম ও ঈমানদার থেকে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে আসা
বর্ণনাসমূহ]
শরী‘আতের যে তিনটি গ্রহণযোগ্য মূল
উৎসের ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কোনো
মতানৈক্য নেই তার দ্বিতীয়টি হচ্ছে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আসা
বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ। সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের
পরবর্তী জ্ঞানী ও ঈমানদারগণ এ মহান মূল
উৎসটিতে বিশ্বাসী ছিলেন; তাঁরা এর দ্বারা
ইসলামী বিধানের উপর দলীল পেশ করেছেন
এবং উম্মতদের তা শিখিয়েছেন। এ বিষয়ে
তারা অসংখ্য লেখনি লিখে গেছেন এবং উসূলে
ফিকহ (ফিকহের নীতি) ও উসূলে হাদীস
(হাদীসের নীতি) এর কিতাবসমূহে তারা
বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন। এটি (অর্থাৎ
রাসূলের হাদীস) বিধি-বিধানের জন্য মূল
উৎস হওয়ার বিষয়ে প্রমাণাদি অসংখ্য
অগণিত। যেমন,
· মহান আল্লাহর কিতাবে আল্লাহ তা‘আলা
কর্তৃক এ উম্মতকে রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ
করার বহু নির্দেশ প্রদান। কারণ,
–  এ নির্দেশগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে সর্বকালের সকল
দুনিয়াবাসীর উপর প্রযোজ্য। কেননা, তিনি
কোনো বিশেষ সময় বা বিশেষ গোষ্ঠীর নবী
নন, তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর প্রতি নবী-
কেয়ামত অবধি যত মানুষ দুনিয়াতে আগমন করবে
তাদের সবার নবী। এ কারণেই কিয়ামত
পর্যন্ত সকলকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ও আনুগত্য করার
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
–  তাছাড়া তিনিই আল্লাহর কিতাবের ব্যাখ্যা
দানকারী, আল্লাহর কিতাবের অস্পষ্ট
বিষয়গুলির বর্ণনাকারীও তিনি। তিনি তার
কথা, কর্ম ও স্বীকৃতি দ্বারা আল্লাহর কুরআনের
বিধানগুলোর বর্ণনা দেন। যেমন, যদি হাদিস
তথা -রাসূলের সুন্নাত- না থাকত তাহলে
সালাতের রাকাত, সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও
সালাতের ওয়াজিবসহ বিভিন্ন বিধান জানার
কোনো উপায় থাকত না। অনুরূপভাবে রোজা, হজ
ও যাকাতের বিধানসমূহ বিস্তারিত জানার
কোনো উপায় থাকত না। ভালো কাজের আদেশ ও
অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার বিষয়টিও
মানুষের নিকট অজ্ঞাত থেকে যেত। মু‘আমালাত,
মু‘আশারাত, লেন-দেন, বেচা-কেনা, মানুষের সাথে
কথা-বার্তা বলা, চলা-ফেরা, উঠা-বসা করা,
হারাম হালাল সম্পর্কে জানা, ও শাস্তি ও হদ
কায়েম করা ইত্যাদির বিধান সম্পর্কে মানুষ
কখনোই জানতে পারত না।
এ বিষয়টির উপর কুরআন থেকে প্রমাণ:
·      এ বিষয়ে যে সব আয়াত এসেছে তন্মধ্যে
সূরা- আলে ইমরানের আয়াতটি অন্যতম, যাতে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
َﻪَّﻠﻟﭐ ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﻭ﴿ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐَﻭ
َﻥﻮُﻤَﺣۡﺮُﺗ ﴾١٣٢ ‏[ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ﻝﺍ ١٣٢‏]
“আর তোমরা আনুগত্য কর, আল্লাহ ও রাসূলের,
যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়”।[11]
·      অনুরূপ সূরা আন-নিসাতে আল্লাহর বাণী,
ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ﴿ ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃ ْﺍٓﻮُﻨَﻣﺍَﺀ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ َﻪَّﻠﻟﭐ
ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﻭ ﻲِﻟْﻭُﺃَﻭ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ِﺮۡﻣَﺄۡﻟﭐ ۖۡﻢُﻜﻨِﻣ
ﻥِﺈَﻓ ۡﻢُﺘۡﻋَﺰَٰﻨَﺗ ﻲِﻓ ُﻩﻭُّﺩُﺮَﻓ ٖﺀۡﻲَﺷ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﭐ
ِﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐَﻭ ۡﻢُﺘﻨُﻛ ﻥِﺇ ِﻪَّﻠﻟﭑِﺑ َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﺗ
ِۚﺮِﺧٓﺄۡﻟﭐ ِﻡۡﻮَﻴۡﻟﭐَﻭ َﻚِﻟَٰﺫ ٞﺮۡﻴَﺧ ﺎًﻠﻳِﻭۡﺄَﺗ ُﻦَﺴۡﺣَﺃَﻭ
٥٩ ﴾ ‏[ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ : ٥٩‏]
হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর
আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে
কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোনো
বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা
আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও –
যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি
ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে
উৎকৃষ্টতর।[12]
·      সূরা আন-নিসাতে আল্লাহ তা‘আলা আরও
বলেন,
ﻦَّﻣ﴿ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ِﻊِﻄُﻳ ۡﺪَﻘَﻓ َﻉﺎَﻃَﺃ َۖﻪَّﻠﻟﭐ ﻦَﻣَﻭ
ٰﻰَّﻟَﻮَﺗ َﻚَٰﻨۡﻠَﺳۡﺭَﺃ ٓﺎَﻤَﻓ ۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ ﺎٗﻈﻴِﻔَﺣ
﴾٨٠ ‏[ : ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ٨٠‏]
“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই
আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি
তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ
করিনি”।[13]
কিভাবে তার আনুগত্য করা ও বিবদমান বিষয়
আল্লাহ ও রাসূলের সুন্নতের দিকে প্রত্যাবর্তন
করা সম্ভব হবে যদি সুন্নাতকে প্রমাণ হিসেবে
স্বীকৃতি দেয়া না হয় অথবা দাবী করা হয় যে
সুন্নাহ্ সংরক্ষিত নয়? সুন্নাহ্ যদি সংরক্ষিত
না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহ তার বান্দাদের
এমন বস্তুর দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন যা কোনো
অস্তিত্ব নেই। যা সম্পূর্ণ বাতিল, আল্লাহর
প্রতি খারাপ ধারণা করা এবং আল্লাহর সাথে
কুফরি করার নামান্তর।
·      আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নাহলে বলেন,
َﻚۡﻴَﻟِﺇ ٓﺎَﻨۡﻟَﺰﻧَﺃَﻭ﴿ َﺮۡﻛِّﺬﻟﭐ ِﺱﺎَّﻨﻠِﻟ َﻦِّﻴَﺒُﺘِﻟ
ﺎَﻣ َﻝِّﺰُﻧ ۡﻢُﻬَّﻠَﻌَﻟَﻭ ۡﻢِﻬۡﻴَﻟِﺇ َﻥﻭُﺮَّﻜَﻔَﺘَﻳ ٤٤
﴾ ‏[ :ﻞﺤﻨﻟﺍ ٤٤‏]
“আর আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি
কুরআন; যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে
দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে।
আর যাতে তারা চিন্তা করে।”[14]
·      একই সূরাতে পরবর্তী অপর একটি আয়াতে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ٓﺎَﻣَﻭ﴿ ﺎَﻨۡﻟَﺰﻧَﺃ َﺐَٰﺘِﻜۡﻟﭐ َﻚۡﻴَﻠَﻋ ﺎَّﻟِﺇ َﻦِّﻴَﺒُﺘِﻟ
ُﻢُﻬَﻟ ْﺍﻮُﻔَﻠَﺘۡﺧﭐ ﻱِﺬَّﻟﭐ ِﻪﻴِﻓ ﻯٗﺪُﻫَﻭ ٗﺔَﻤۡﺣَﺭَﻭ
َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻳ ٖﻡۡﻮَﻘِّﻟ ٦٤ ﴾ ‏[ :ﻞﺤﻨﻟﺍ ٦٤ ‏]
“আর আমরা তোমার উপর কিতাব নাযিল
করেছি, শুধু এ জন্য যে, যে বিষয়ে তারা মতভেদ
করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দেবে
এবং এটি হিদায়াত ও রহমত সেই কওমের জন্য
যারা ঈমান আনে।”[15]
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর তাদের জন্য
নাযিলকৃত কুরআনের বর্ণনা করার দায়িত্ব
কীভাবে দেন যদি রাসূলের সুন্নার কোনো
অস্তিত্ব না থাকে? অথবা যদি রাসূলের
সুন্নাহকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা না হয়?
·      অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরে
বলেন,
ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃ ۡﻞُﻗ﴿ َۖﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﻭ َﻪَّﻠﻟﭐ
ﻥِﺈَﻓ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ ْﺍۡﻮَّﻟَﻮَﺗ ِﻪۡﻴَﻠَﻋ ﺎَﻣ َﻞِّﻤُﺣ
ﻢُﻜۡﻴَﻠَﻋَﻭ ۖۡﻢُﺘۡﻠِّﻤُﺣ ﺎَّﻣ ﻥِﺇَﻭ ْۚﺍﻭُﺪَﺘۡﻬَﺗ ُﻩﻮُﻌﻴِﻄُﺗ
ﺎَﻣَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ُﻎَٰﻠَﺒۡﻟﭐ ﺎَّﻟِﺇ ُﻦﻴِﺒُﻤۡﻟﭐ
﴾٥٤ ‏[ :ﺭﻮﻨﻟﺍ ٥٤‏]
বল, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের
আনুগত্য কর। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে
নাও, তবে সে শুধু তার উপর অর্পিত দায়িত্বের
জন্য দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত
দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী। আর যদি
তোমরা তার আনুগত্য কর, তবে তোমরা হিদায়াত
প্রাপ্ত হবে। আর রাসূলের দায়িত্ব শুধু
স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।[16]
·      আল্লাহ তা‘আলা সূরা নূরে আরও বলেন,
ْﺍﻮُﺗﺍَﺀَﻭ َﺓٰﻮَﻠَّﺼﻟﭐ ْﺍﻮُﻤﻴِﻗَﺃَﻭ﴿ َﺓٰﻮَﻛَّﺰﻟﭐ
ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﻭ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ
﴾٥٦َﻥﻮُﻤَﺣۡﺮُﺗ ‏[ :ﺭﻮﻨﻟﺍ ٥٦‏]
“আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং
রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা
রহমতপ্রাপ্ত হতে পার।”[17]
·      আল্লাহ সূরা আ‘রাফে বলেন,
﴿ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ ۡﻞُﻗ ُﺱﺎَّﻨﻟﭐ ﻲِّﻧِﺇ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﭐ
ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ ۡﻢُﻜۡﻴَﻟِﺇ ﻱِﺬَّﻟﭐ ۥُﻪَﻟ ُﻚۡﻠُﻣ ِﺕَٰﻮَٰﻤَّﺴﻟﭐ
ِۖﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ ٓﺎَﻟ َﻪَٰﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ َﻮُﻫ ُۖﺖﻴِﻤُﻳَﻭ ۦِﻲۡﺤُﻳ
ِﻪَّﻠﻟﭑِﺑ ْﺍﻮُﻨِﻣﺎََٔﻓ ِّﻲِﺒَّﻨﻟﭐ ِﻪِﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ِّﻲِّﻣُﺄۡﻟﭐ
ﻱِﺬَّﻟﭐ ِﻪَّﻠﻟﭑِﺑ ُﻦِﻣۡﺆُﻳ ُﻩﻮُﻌِﺒَّﺗﭐَﻭ ۦِﻪِﺘَٰﻤِﻠَﻛَﻭ
َﻥﻭُﺪَﺘۡﻬَﺗ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ١٥٨ ﴾ ‏[ :ﻑﺍﺮﻋﻻﺍ ١٥٧ ‏]
“বল, হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি
আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও
জমিনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোনো সত্য
ইলাহ নাই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু
দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন
ও তার প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে
আল্লাহ ও তার বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে।
আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়,
তোমরা হিদায়াত লাভ করবে।”[18]
উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে
প্রমাণিত হয় যে, হিদায়াত ও রহমত একমাত্র
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
আনুগত্য করার মধ্যেই নিহিত। সুতরাং, তার
সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ ও তদনুযায়ী আমল
করা ছাড়া হিদায়াত লাভ কিভাবে সম্ভব? অথবা
এ কথা বলা যে, তার সুন্নতের কোনো বিশুদ্ধতা
নাই অথবা তার সুন্নতের উপর ভরসা করা যাবে
না, তার হিদায়াত কিভাবে অর্জিত হবে?
·      আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরে বলেন,
َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ِﺭَﺬۡﺤَﻴۡﻠَﻓ﴿ َﻥﻮُﻔِﻟﺎَﺨُﻳ ٓۦِﻩِﺮۡﻣَﺃ ۡﻦَﻋ
ﻥَﺃ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﺗ ٌﺔَﻨۡﺘِﻓ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﻳ ۡﻭَﺃ ٌﺏﺍَﺬَﻋ
ٌﻢﻴِﻟَﺃ ٦٣ ﴾ ‏[ ﺭﻮﻨﻟﺍ : ٦٣‏]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে,
তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা
যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে।”[19]
·      সূরা আল-হাশরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ٓﺎَﻣَﻭ﴿ ُﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ُﻢُﻜٰﻯَﺗﺍَﺀ ُﻩﻭُﺬُﺨَﻓ ﺎَﻣَﻭ
ۡﻢُﻜٰﻯَﻬَﻧ ْﺍﻮُﻘَّﺗﭐَﻭ ْۚﺍﻮُﻬَﺘﻧﭑَﻓ ُﻪۡﻨَﻋ َۖﻪَّﻠﻟﭐ َّﻥِﺇ
َﻪَّﻠﻟﭐ ِﺏﺎَﻘِﻌۡﻟﭐ ُﺪﻳِﺪَﺷ ٧ ﴾ ‏[ :ﺮﺸﺤﻟﺍ ٧ ‏]
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা
থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে, তা থেকে বিরত
হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ
শাস্তি প্রদানে কঠোর।[20]
এ বিষয়ে আরও অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলো
প্রমাণ করে যে আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা
ও তিনি যা নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেছেন
তার আনুগত্য করাও ফরয; যেমনটি এর পূর্বে
উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহর কিতাবের
অনুসরণ-অনুকরণ করা, আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে
ধরা, আল্লাহর কিতাবের আদেশ নিষেধ পালন
করা ফরয। এ দুটি-কুরআন ও সূন্নাহ-একটি
অপরটির সম্পূরক ও অবিচ্ছেদ্য মূল উৎস।
দুটির কোনোটিকেই অস্বীকার করা যাবে না।
যদি কোনো ব্যক্তি একটিকে অস্বীকার করে,
সে অপরটিকেও অস্বীকার করল এবং
মিথ্যারোপ করল। আর এ জাতীয় কাজ সকল
উম্মতে মুসলিমাহ্র ঈমানদার ও জ্ঞানীদের
ঐকমত্যে কুফরি, ভ্রষ্টতা ও ইসলামের গণ্ডি
থেকে বের হয়ে যাওয়া।
এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে প্রমাণ:
o     যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের যুগে ছিলেন এবং যারা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে
ছিলেন না কিয়ামত পূর্ব দুনিয়াতে আগমন করবে
এমন সবার জন্য আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা
ও তার আনিত দ্বীনের অনুসরণ করা ফরয হওয়া
এবং তার নাফরমানি করা নিষিদ্ধ হওয়া
বিষয়ে বর্ণিত হাদিসসমূহ মুতাওয়াতির – তথা
নিরবিচ্ছিন্নভাবে অগণিত অসংখ্য লোকের
বর্ণনার কারণে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হওয়ার
-পর্যায়ভুক্ত।
·      তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বুখারি ও
মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন-
‏« ﻲِﻨَﻋﺎَﻃَﺃ ْﻦَﻣ ﺪﻘَﻓ َﻉﺎَﻃَﺃ ﻪﻠﻟﺍ ﻦَﻣﻭ
ﻲِﻧﺎَﺼَﻋ ﺪﻘﻓ ﻰَﺼَﻋ ﻪﻠﻟﺍ‏»
“যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর
আনুগত্য করল আর যে আমার বিরুদ্ধাচরণ করল,
সে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করল।”[21]
·      অনুরূপভাবে সহীহ বুখারীতে আবু হুরাইরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‏« ّﻞﻛ َﻥﻮﻠُﺧﺪَﻳ ﻲﺘَّﻣﺃ َﺔﻨﺠﻟﺍ ﻻِﺇ ﻦَﻣ ﻰَﺑَﺃ
َﻞﻴِﻗ ﺎﻳ َﻝﻮﺳﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ﻦَﻣﻭ ﻰَﺑﺄَﻳ َﻝﺎَﻗ ﻦَﻣ
ﻲﻨَﻋﺎَﻃَﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ َﻞَﺧَﺩ ﻦَﻣﻭ ﻲﻧﺎَﺼَﻋ ﺪﻘَﻓ
ﻰَﺑَﺃ ‏»
“যে ব্যক্তি অস্বীকার করে, সে ব্যক্তি ব্যতীত
আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে;
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর
রাসূল! কোন ব্যক্তি অস্বীকার করে? তখন
তিনি বললেন: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে,
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে ব্যক্তি আমার
অবাধ্য, সে ব্যক্তিই অস্বীকার করে।”[22]
·      ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও হাকিম বিশুদ্ধ
সনদে মিকদাম ইবনে মা‘দি কারাব রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
‏« ﻻﺃ ُﺖﻴﺗﻭﺃ ﻲﻧﺇ ﺍﺬﻫ ،ﺏﺎﺘﻜﻟﺍ ُﻪَﻠﺜﻣﻭ
،ُﻪﻌﻣ ُﻚِﺷﻮُﻳ ﻻﺃ ٌﻞُﺟَﺭ ﻥﺎﻌْﺒَﺷ ﻰﻠﻋ
،ﻪﺘﻜﻳﺭﺃ :ُﻝﻮﻘﻳ ﻢﻜﻴﻠﻋ ،ﻥﺁﺮُﻘﻟﺍ ﺍَﺬﻬِﺑ
ﺎﻤﻴﻓ ﻢُﺗْﺪﺟَﻭ ﻪﻴﻓ ﻦﻣ ،ُﻩﻮُّﻠِﺣﺄﻓ ٍﻝﻼﺣ ﺎﻣﻭ
ﻢُﺗْﺪﺟﻭ ﻪﻴﻓ ﻦﻣ ُﻩﻮﻣِّﺮَﺤَﻓ ﻡﺍﺮﺣ ‏».
“জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমাকে এই কিতাব দেয়া
হয়েছে এবং তার সাথে তার অনুরূপ বস্তুও
(সুন্নাহ) দেওয়া হয়েছে। সাবধান! অচিরেই
কোনো কোনো ব্যক্তি এমন পাওয়া যাবে যে তার
খাটের উপর বসে বসে বলবে: তোমাদের উপর
আবশ্যক হল এই কুরআনকে গ্রহণ করা; সুতরাং
তোমরা তাতে যা হালাল হিসেবে পাবে, তাকে
হালাল বলে মেনে নেবে, আর তাতে যা হারাম
হিসেবে পাবে, তাকে হারাম বলে ঘোষণা করবে
[23]।”
·      আবু দাউদ ও ইবন মাজাহ বিশুদ্ধ সনদে ইবনে
আবু রাফে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন-
‏« ﻻ ﻢُﻛَﺪَﺣَﺃ َّﻦﻴَﻔْﻟَﺃ ﺎًﺌِﻜّﺘُﻣ ِﻪِﺘﻜﻳﺭَﺃ ﻰﻠَﻋ
ِﻪﻴِﺗﺄَﻳ ُﺮْﻣﻷﺍ ﻦِﻣ ﻱﺮْﻣَﺃ ُﺕْﺮَﻣَﺃ ﺎّﻤَﻣ ِﻪِﺑ ﻭﺃ
ُﺖْﻴَﻬَﻧ ُﻪْﻨَﻋ ُﻝﻮﻘﻴَﻓ ﻻ ،ﻱﺭْﺪﻧ ﺎﻣ ﺎﻧْﺪَﺟَﻭ
ﻲﻓ ِﺏﺎﺘِﻛ ﻩﺎَﻨْﻌَﺒَّﺗﺍ ِﻪﻠﻟﺍ ‏».
“আমি যেন তোমাদের কাউকে এমন দেখতে না পাই
যে সে তার খাটের উপর হেলান দিয়ে বসে থাকবে
[24], তার নিকট আমার নির্দেশিত অথবা আমার
নিষেধকৃত কোনো বিষয় পৌঁছবে, তখন সে বলবে,
আমি জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পাব
তা-ই কেবল অনুসরণ করব।[25]
·      হাসান ইবনে জাবের হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি মিকদাম ইবন মা‘দি কারাব
রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি
বলেন,
‏« ُﻝﻮﺳَﺭ َﻡّﺮَﺣ ﻪﻠﻟﺍ r َﻡﻮﻳ ﺮَﺒْﻴَﺧ َﺀﺎﻴْﺷَﺃ ﻢﺛ
َﻝﺎَﻗ ُﻚِﺷﻮُﻳ ﻢُﻛُﺪَﺣَﺃ ﻲﻨَﺑِّﺬﻜُﻳ ﻥَﺃ ﻮﻫَﻭ ﺊِﻜّﺘُﻣ
ﻲﺜﻳِﺪﺤﺑ ﺙّﺪًﺤُﻳ ُﻝﻮﻘﻴَﻓ ﻢُﻜﻨْﻴَﺑَﻭ ﺎﻨَﻨْﻴَﺑ
ُﺏﺎﺘِﻛ ِﻪﻠﻟﺍ ﺎَﻧْﺪَﺟَﻭ ﺎﻤﻓ ِﻪﻴِﻓ ﻦﻣ ٍﻝﻼَﺣ
ُﻩﺎَﻨْﻠَﻠْﺤَﺘْﺳﺍ ﺎَﻣَﻭ ﺎﻧْﺪَﺟَﻭ ﻪﻴﻓ ﻦﻣ ﻡﺍﺮَﺣ
ُﻩﺎَﻨْﻣّﺮَﺣ ﻻَﺃ َّﻥِﺇ ﺎَﻣ َﻡّﺮَﺣ ُﻝﻮُﺳﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ُﻞْﺜِﻣ
ﺎَﻣ َﻡّﺮَﺣ ﻪﻠﻟﺍ ‏» ﻪﺟﺮﺧﺃ ﻢﻛﺎﺤﻟﺍ
ﻦﺑﺍﻭ ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍﻭ ﻪﺟﺎﻣ .ﺢﻴﺤﺻ ﺩﺎﻨﺳِﺈﺑ
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
খাইবারের দিন কিছু জিনিসকে হারাম করেন।
তারপর তিনি বলেন, অচিরেই তোমাদের কেউ
কেউ আমাকে অমান্য করার মাধ্যমে মিথ্যারোপ
করবে, সে হেলান দেয়া অবস্থায় থাকবে, তার কাছে
আমার হাদিস বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে,
আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে ফায়সালা
কারী আল্লাহর কিতাব। তাতে যে সব জিনিস
হালাল পাব তাকে আমরা হালাল মনে করব, আর
তাতে যে সব জিনিস হারাম পাব, তাকে আমরা
হারাম মনে করব। সাবধান, মনে রাখবে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব
বস্তুকে হারাম বলবে, তা আল্লাহ যে সব বস্তুকে
হারাম বলবে তারই মত।[26]
o     তদ্রূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে অসংখ্য সনদে বর্ণিত যে,
তিনি তার সাহাবীদের থেকে যারা উপস্থিত
ছিল, তাদের ওসিয়ত করেন, তারা যেন
অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত
পৌছিয়ে দেন এবং তিনি তাদের বলতেন, হতে
পারে যার নিকট পৌঁছানো হল, সে শ্রোতার
চেয়ে অধিক সংরক্ষণকারী বা সমঝদার হবে।
যেমন,
·      বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, আরাফার দিন
বিদায় হজের ভাষণে ও কুরবানির দিনে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত
সাহাবীদের সম্বোধন করে বলেন,
‏«ﻎﻠﺒﻴﻠﻓ ﺐﺋﺎﻐﻟﺍ ﺪﻫﺎﺸﻟﺍ ﺏﺮﻓ ﻦﻣ
ﻪﻐﻠﺒﻳ ﻰﻋﻭﺃ ﻪﻟ ﻦﻤﻣ ﻪﻌﻤﺳ ‏»
“উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিকে
পৌঁছিয়ে দেবে। হতে পারে যার কাছে পৌঁছানো
হল, সে যার থেকে শুনেছে তার থেকে অধিক
সংরক্ষণকারী হবে।”[27]
যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সুন্নাত যে শুনবে এবং যার কাছে তা পৌঁছবে তার
উপর প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হবে,
অনুরূপভাবে যদি রাসূলের সুন্নাত কিয়ামত
পর্যন্ত স্থায়ী না হবে, তাহলে তিনি
সুন্নাতকে মানুষের নিকট পৌঁছানোর জন্য
নির্দেশ দিতেন না। রাসূলের নির্দেশ দেওয়া
দ্বারা জানা গেল যে, সুন্নাহ্ দ্বারা প্রমাণ
গ্রহণ করা যারা রাসূলের মুখ থেকে সরাসরি
শোনে তাদের ক্ষেত্রে যেমন জরুরী অনুরূপভাবে
যাদের নিকট বিশুদ্ধ সনদে সুন্নতটি পৌঁছল
তাদের জন্যও জরুরী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাহাবীগণ রাসূলের মুখের থেকে উচ্চারিত কথা
ও কর্মগুলিকে যথাযথ সংরক্ষণ করেন এবং
তারা তাদের পরবর্তী লোক তাবে‘ঈগণের নিকট
তা পৌঁছান, তারপর তাবে‘ঈগণ তাদের পরবর্তী
লোকদের নিকট পৌঁছান। এভাবে নির্ভরযোগ্য
আলেমগণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এবং যুগের পর
যুগ রাসূলের সুন্নাহকে মানুষের নিকট
পৌঁছানোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। তারা
লেখনির মাধ্যমে তাদের কিতাবসমূহের মধ্যে
সূন্নাহকে সংরক্ষণ করেন। কোনোটি সহীহ বা
বিশুদ্ধ আর কোনোটি সহীহ নয় তাও তারা
স্পষ্ট করেন। বিশুদ্ধ হাদীস ও দুর্বল হাদীস
চেনার জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের কায়দা
কানুন তারা নির্ধারণ করেন, যাতে কোনোটি
সহীহ আর কোনোটি দুর্বল তা জানা যায়। আর
আহলে ইলম তথা জ্ঞানীগণ হাদিসের কিতাব
বুখারি মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবগুলোকে
গ্রহণ করেছেন এবং পরিপূর্ণভাবে হেফয ও
সংরক্ষণ করেছেন যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা
স্বীয় কিতাবকে বিকৃতকারী নাস্তিক ও
বাতিলপন্থীদের হাত থেকে পরিপূর্ণভাবে
সংরক্ষণ করেছেন, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ﺎَّﻧِﺇ﴿ ُﻦۡﺤَﻧ ﺎَﻨۡﻟَّﺰَﻧ ﺎَّﻧِﺇَﻭ َﺮۡﻛِّﺬﻟﭐ ۥُﻪَﻟ
َﻥﻮُﻈِﻔَٰﺤَﻟ ٩ ﴾ ‏[ :ﺮﺠﺤﻟﺍ ٩‏]
“নিশ্চয় আমরা কুরআন নাযিল করছি, আর
আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষণকারী”। [সূরা আল-
হিজর: ৯]
o     এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতও
অবতীর্ণ ওহী। আল্লাহ তা‘আলা যেমনিভাবে
স্বীয় কিতাব কুরআনকে হেফাজত ও সংরক্ষণ
করেছেন, অনুরূপভাবে সুন্নতকেও হেফাজত ও
সংরক্ষণ করেছেন। সুন্নতের হেফাজতের জন্য
যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা বিজ্ঞ আলেমগণের
সুব্যবস্থা করেছেন; এ সব আলেম বাতিলপন্থীরা
হাদিস ও সুন্নতের মধ্যে যে সব বিকৃতি ও
পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তা
প্রতিহত করেন, জাহেল অজ্ঞ লোকদের
অপব্যাখ্যাকে রোধ করেন।  মিথ্যুক, অজ্ঞ,
নাস্তিকরা হাদিস ও সুন্নাহ্ সম্পর্কে যে সব
অপবাদ দেন, তা দূর করেন। কারণ, আল্লাহ
তা‘আলা হাদিসকে কুরআনে করীমের ব্যাখ্যা
হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, কুরআনের যে সব
বিধান সংক্ষেপে বর্ণিত তার ব্যাখ্যা ও
বিস্তারিত আলোচনা হাদিসই তুলে ধরেছে এবং
কুরআনে যে সব আহকাম বর্ণিত হয় নি সেগুলো
হাদিসেই আলোচনা করা হয়। যেমন, কোনো
মহিলার দুধ পান সংক্রান্ত বিধি-বিধান,
মিরাসের অনেক বিধান, স্ত্রীর সাথে তার ফুফু
অথবা খালাকে একত্রে বিবাহ করা নিষিদ্ধ
হওয়া সহ বিভিন্ন বিধানগুলোর আলোচনা শুধু
হাদিসেই এসেছে। কুরআনে এ সব বিধান নিয়ে
কোনো আলোচনা করা হয়নি।
সুন্নতের যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা
ওয়াজিব হওয়া বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম,
তাবে‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের বর্ণনা:
o     রাসূলের সুন্নাত (তথা তাঁর কথা, কাজ,
অনুমোদন, শারীরিক ও গুণগত বৈশিষ্ট্য) এর
যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা ফরয
হওয়ার বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈন ও
তাদের পরবর্তীদের কিছু কথা এখানে তুলে ধরা
হচ্ছে।
·      যেমন, বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরাইরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
মৃত্যুর পর আরবের কিছু লোক মুরতাদ হল। আবু
বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহসিকতার
সাথে বললেন, আল্লাহর কসম যে ব্যক্তি সালাত
ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে, আমি তার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তার কথা শোনে ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনি তাদের
বিরুদ্ধে কীভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন, অথচ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ُﺕْﺮِﻣﺃ َﻞِﺗﺎَﻗﺃ ْﻥَﺃ َﺱﺎَّﻨﻟﺍ ﺍﻮُﻟﻮُﻘَﻳ ﻰﺘَﺣ ﻻ
َﻪﻟِﺇ ﻻِﺇ ﻪﻠﻟﺍ ﺎﻫﻮﻟﺎَﻗ ﺍﺫِﺈَﻓ ﺍﻮُﻤَﺼَﻋ ﻲﻨِﻣ
ﻢُﻫَﺀﺎَﻣِﺩ ﻢُﻬَﻟﺍَﻮﻣَﺃَﻭ ﻻِﺇ ﺎﻬَّﻘﺤﺑ ‏»
“আমাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহ
ব্যতীত কোনো হক ইলাহ নেই’ একথার ঘোষণা
না দেওয়া পর্যন্ত মানুষের সাথে যুদ্ধ করার
নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যখন সে তা বলবে, তখন
তার জান মাল নিরাপদ হয়ে যাবে, তবে এ
কালেমার হক বা দাবী অনুযায়ী হলে সেটা
ভিন্ন কথা”।
তার কথা শোনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু
বললেন, ‘যাকাত কি আল্লাহর হক নয়? আল্লাহর
কসম যদি একটি রশিও যা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যাকাত হিসেবে
তারা প্রদান করত তা দিতে যদি কেউ অস্বীকার
করে, আমি তা দিতে অস্বীকার করার কারণে তার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।’ তারপর ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি বুঝতে পারলাম,
আল্লাহ তা‘আলা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর
অন্তরকে যুদ্ধের জন্য খুলে দিয়েছেন এবং
এটিই হক। সাহাবীগণ তাঁর আহ্বানে সাড়া
দিলেন, তারা মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
করেন এবং তাদের পুনরায় ইসলামের দিকে
ফিরিয়ে আনেন। আর যারা মুরতাদ হওয়ার পর
সেটার উপর অবিচল থেকেছিল তাদের তারা
হত্যা করেছিলেন। এ ঘটনার মধ্যে সুন্নতের
যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা জরুরি
হওয়ার সু-স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
·      একজন দাদী আবু বকরের নিকট এসে সে তার
উত্তরাধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, আবু
বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,
তোমার জন্য আল্লাহর কিতাবে কোনো অংশ
বর্ণিত হয় নি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার জন্য কোনো অংশ
বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে আমি
মানুষকে জিজ্ঞাসা করব, তারপর তিনি
সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, তখন একজন
সাহাবী সাক্ষ্য দিলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাদিকে ‘সুদুস’ তথা ছয়
ভাগের একভাগ দিয়েছেন। তারপর তিনি
দাদির জন্য ‘সুদুস’ বা ছয় ভাগের একভাগের
ফায়সালা প্রদান করেন।
·      অনুরূপভাবে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার
আমেল তথা কর্মকর্তাদের মানুষের মাঝে বিচার
ফায়সালার ক্ষেত্রে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে
তারা যেন প্রথমে আল্লাহর কিতাব থেকে
ফয়সালা গ্রহণ করে, যদি আল্লাহর কিতাবে
ফায়সালা খুঁজে না পায়, তারা যেন আল্লাহর
রাসূলের সূন্নাহ্ দ্বারা ফায়সালা করে।
·      তদ্রূপ যখন গর্ভের সন্তানকে নষ্ট তথা
কারো আঘাতজনিত কারণে গর্ভপাত হয়ে মৃত
অবস্থায় প্রসব হয়ে গেলে সে সন্তানের
রক্তপণের বিধান সম্পর্কে ‘উমার
রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট কোনো সমাধান না
থাকাতে তিনি সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করেন।
তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু ও মুগীরা ইবনে শু‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু
দাড়িয়ে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে একটি দাস বা দাসী
স্বাধীন করে দেওয়ার ফায়সালা করেছিলেন।
এটা শোনার উপর ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু
সেটা অনুসারে ফয়সালা দিয়েছিলেন।
·      স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর ঘরে মহিলার
ইদ্দত পালন করার বিষয় ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু
আনহু এর অজানা থাকাতে ফায়সালা দেয়া তার
নিকট কঠিন মনে হল, তখন ফুরাই‘আহ্ বিনতে
মালেক ইবন সিনান রাদিয়াল্লাহু আনহা, যিনি
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বোন
ছিলেন, তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বামীর মৃত্যুর পর
তাকে স্বামীর ঘরে ইদ্দত পালন করার নির্দেশ
দেন। তারপর ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু
মহিলার কথা অনুযায়ী বিষয়টির ফায়সালা
করেন।
·      অনুরূপভাবে ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু
তার কর্মকর্তা ওলিদ ইবন ‘উকবার উপর মদ
পান করার অপরাধের হদ কায়েম করার ফায়সালা
সুন্নাহ্ দ্বারাই করেছিলেন।
·      আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাদিয়াল্লাহু
আনহু এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌঁছল যে,
‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হজ্জে তামাত্তু
করতে নিষেধ করেন তখন আলী রাদিয়াল্লাহু
আনহু হজ ও ওমরা উভয়েরই এহরাম বাঁধেন এবং
বলেন, ‘আল্লাহর রাসূলের সূন্নাহকে আমি কারো
কথায় ছাড়বো না।’
·      এক লোক আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহুর কথা দ্বারা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাসের
নিকট তামাত্তু হজের উপর ইফরাদ হজের
বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার দলীল পেশ করলে
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘আমি
আশংকা করছি তোমাদের উপর আসমান থেকে
পাথরের বৃষ্টির মত বিপর্যয় নেমে আসার।
আমি তোমাদেরকে বলি আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আর
তোমরা বল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন।’ যদি সুন্নতের
বিপরীতে আবু বকর ও ওমরের কথা দিয়ে দলীল
পেশ করলে, তার উপর শাস্তির আশংকা করা হয়,
তাহলে যারা আবু বকর ও ওমর থেকে নীচের লোক
তাদের কথায় অথবা নিজের মতামত ও
ইজতিহাদের ভিত্তিতে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূন্নাহকে
যারা ছেড়ে দেন তাদের পরিণতি কি হতে পারে?!
·      যখন কিছু লোক আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের
নিকট সুন্নাহ্ বিষয়ে বিতর্ক করল, তখন
আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বললেন,
আমরা কী ওমরের আনুগত্য করার জন্য
নির্দেশিত নাকি রাসূলের সুন্নার আনুগত্য
করার প্রতি নির্দেশিত?
·      ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা
যখন হাদিস আলোচনা করছিলেন, তখন এক
ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি আমাদেরকে আল্লাহর
কিতাব থেকে বর্ণনা করুন। এ কথা শোনে তিনি
খুব ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বলেন, সুন্নাহ্ আল্লাহর
কিতাবেরই ব্যাখ্যা। যদি সুন্নাহ না হত,
তাহলে আমরা জোহরের সালাত চার রাকাত,
মাগরিবের সালাত তিন রাকাত, ফজরের সালাত
দুই রাকাত জানতে পারতাম না। যাকাতের বিধান
বিস্তারিত জানতে পারতাম না এবং শরিয়তের
অন্যান্য বিষয়গুলো জানার সুযোগ হত না।
বস্তুত রাসূলের সুন্নাহর যথাযথ সম্মান, তার
উপর আমল ফরয হওয়া ও তার বিরোধিতা করার
পরিণতি বিষয়ে সাহাবীগণ থেকে অনেক বর্ণনা
ও ভাষ্য এসেছে। যেমন,
·      আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু
যখন এ হাদিস বর্ণনা করেন,
‏« ﺍﻮُﻌَﻨْﻤَﺗ ﻻ َﺀﺎَﻣِﺇ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻪﻠﻟﺍ َﺪِﺟﺎَﺴَﻣ ‏»
“তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে (মহিলাদেরকে)
মসজিদে গমনে বাধা দিও না”[28] তখন তার
কোনো এক ছেলে বলে বসল, ‘আল্লাহর কসম,
আমরা তাদের মসজিদে গমনে বাধা দিব।’ তার
কথা শোনে আব্দুল্লাহ খুব ক্ষুব্ধ হলেন এবং তাকে
কঠিন বকা দিলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে
বলছি আল্লাহর রাসূল বলেছেন আর তুমি বলছ,
‘আমরা অবশ্যই তাদের বাধা দেব।’ (তোমার এ
কথা বলা কখনই ঠিক হয়নি।)
·      রাসূলের সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফফাল
রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কোনো এক আত্মীয়কে
দেখলেন যে সে পাথরকুচি নিক্ষেপ করছে তিনি
তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, নিশ্চয়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
‏« ﻑﺬﺨﻟﺍ ﻰﻬﻧ ﻝﺎﻗﻭ ﻪﻧٍﺇ ﻻ ﺪﻴﺼﻳ ﺍًﺪﻴﺻ ﻻﻭ
ﺄﻜﻨﻳ ﻪﻨﻜﻟﻭ ﺍﻭﺪﻋ ﺮﺴﻜﻳ ﻦﺴﻟﺍ ﺄﻘﻔﻳﻭ
ﻦﻴﻌﻟﺍ ‏»
“পাথরকুচি নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন
এবং তিনি বলেছেন, ‘এর দ্বারা কোনো শিকারী
শিকার করা যায় না এবং কোনো দুশমনকে আঘাত
করা যায় না বরং এতে মানুষের দাত ভাঙ্গা হয়
এবং চোখ নষ্ট করা হয়”[29] তারপর তিনি
দেখতে পেলেন যে তার সে আত্মীয় আবারও
পাথরকুচি নিক্ষেপ করছে, তখন তিনি বললেন,
‘আমি তোমার সাথে কখনোই কথা বলব না। আমি
তোমাকে খবর দিলাম আল্লাহর রাসূল পাথর
নিক্ষেপ করেছেন তারপরও তুমি পাথর
নিক্ষেপ করলে?
·      ইমাম বাইহাকী রহ. আইয়ুব সাখতিয়ানি
রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন
তুমি কোনো ব্যক্তিকে সুন্নাহ্ থেকে কোনো
হাদীস শোনাও, তখন যদি সে বলে, তুমি এটা
রেখে আমাকে কুরআন থেকে শোনাও, তাহলে মনে
রাখবে যে নিঃসন্দেহ লোকটি গোমরাহ তথা
পথভ্রষ্ট।
·      ইমাম আওযা‘ঈ রহ. বলেন, সুন্নাহ্ হলো
আল্লাহর কিতাবের বিচারক অথবা সুন্নাহ্
আল্লাহর কিতাবের শর্তমুক্তভাবে বর্ণিত
বিধানসমূহের জন্য শর্ত আরোপকারী অথবা
সুন্নাহ এমন সব বিধান নিয়ে এসেছে যা
আল্লাহর কিতাবে নেই। যেমন, আল্লাহর বাণী-
َﻚۡﻴَﻟِﺇ ٓﺎَﻨۡﻟَﺰﻧَﺃَﻭ﴿ َﺮۡﻛِّﺬﻟﭐ ِﺱﺎَّﻨﻠِﻟ َﻦِّﻴَﺒُﺘِﻟ
ﺎَﻣ َﻝِّﺰُﻧ ۡﻢُﻬَّﻠَﻌَﻟَﻭ ۡﻢِﻬۡﻴَﻟِﺇ َﻥﻭُﺮَّﻜَﻔَﺘَﻳ
﴾٤٤ ‏[ :ﻞﺤﻨﻟﺍ ٤٤‏]
“আর আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি
কুরআন; যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে
দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে।
আর যাতে তারা চিন্তা করে।” [সূরা আন-নাহল:
৪৪]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী-
‏« ﻻَﺃ ُﺖﻴِﺗﻭﺃ ﻲﻧِﺇ ﻪَﻠﺜﻣﻭ َﺏﺎﺘِﻜﻟﺍ ُﻪَﻌَﻣ ‏»
মনে রাখবে, আমাকে কিতাব দেয়া হয়েছে, এবং
তার সাথে তার মত আরও দেয়া হয়েছে।[30] তা
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।
·      ইমাম বাইহাকী রহ. আমের আশ-শা‘বী থেকে
বর্ণনা করেন, তিনি কতক লোককে বলেন,ﺎﻤﻧِﺇ
ﻢﺘﻜﻠﻫ ﻲﻓ ﻦﻴﺣ ﻢﺘﻛﺮﺗ ﺭﺎﺛﻵﺍ ‘তোমরা
তো তখনই ধ্বংস হয়েছ যখন তোমরা ভাষ্য বা
নির্দেশনা ছেড়ে দিয়েছ’ এ কথা দ্বারা তাঁর
উদ্দেশ্য হচ্ছে যখন তোমরা সহীহ হাদিসসমূহ
ছেড়ে দিয়েছ তখনই তোমরা ধ্বংস হয়ে গেলে।
·      ইমাম বাইহাকী রহ. আওযায়ী রহ. থেকে
আরও বর্ণনা করেন, তিনি তার কতক সাথীকে
বলেন, যখন তোমাদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো হাদিস পৌঁছে,
তখন এর বিপরীত অন্য কোনো কথা বলা থেকে
তুমি সম্পূর্ণ বিরত থাক। কারণ, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর
পক্ষ থেকে মুবাল্লিগ বা প্রচারকারী ছিলেন।
[তার কথাই আল্লাহর কথা]
·      ইমাম বাইহাকী রহ. বিশিষ্ট ইমাম
সূফিয়ান ইবন সা‘ঈদ আস-সাওরী রহ. থেকে
বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, প্রকৃত ইলম হচ্ছে,
হাদিসের ইলম।
·      ইমাম মালেক রহ. রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দিক ইশারা
করে বলেন, একমাত্র এ কবরওয়ালা ছাড়া আমরা
সবাই বিতর্কিত। আমরা প্রত্যাখ্যানকারী ও
প্রত্যাখ্যাত। (অর্থাৎ এ কবরবাসী মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম নয়,
তার কোনো কথা বাদ দেওয়া যাবে না)
·      ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, যখন রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত
কোনো হাদিস সামনে আসে তখন তা মাথা ও
চোখের উপর।
·      ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেন, যখন আমি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ
হাদিস বর্ণনা করা সত্ত্বেও যদি সেটা গ্রহণ
না করি, তবে মনে রাখবে, আমি তোমাদের
সাক্ষ্য করে বলছি, আমার বিবেক নষ্ট হয়ে
গেছে।
·      তিনি আরও বলেন, আমি যখন কোনো কথা
বলি, আর হাদিস আমার কথার বিপক্ষে হয়,
তাহলে আমার কথাকে তোমরা দেয়ালের ওপর
নিক্ষেপ কর।
·      ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. তার কোনো
কোনো সাথীকে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমার
তাকলীদ করো না, মালেক রহ. ও শাফেয়ী রহ.
এরও তাকলীদ করো না, তোমরা আমরা যেখান
থেকে গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে গ্রহণ কর।
·      তিনি আরও বলেন, আমি সে সব লোকদের
বিষয়ে আশ্চর্য বোধ করি, যারা হাদিসের সনদ
সম্পর্কে জানে, হাদিসটি সহীহ কিনা তাও
জানে, তারপরও সুফিয়ানের নিকট যায় তার
মতামতের জন্য। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ِﺭَﺬۡﺤَﻴۡﻠَﻓ﴿ َﻥﻮُﻔِﻟﺎَﺨُﻳ ٓۦِﻩِﺮۡﻣَﺃ ۡﻦَﻋ
ﻥَﺃ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﺗ ٌﺔَﻨۡﺘِﻓ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﻳ ۡﻭَﺃ ٌﺏﺍَﺬَﻋ
ٌﻢﻴِﻟَﺃ ﴾٦٣ ‏[ : ﺭﻮﻨﻟﺍ ٦٣‏]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে,
তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা
যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে।”[31]
তিনি বলেন, তোমরা কি জান ফিতনা তথা
বিপর্যয় কি? ফিতনা হল, আল্লাহর সাথে
শির্ক করা, হতে পারে যখন কোনো ব্যক্তি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কোনো কথাকে প্রত্যাখ্যান করবে, তখন তার
অন্তরে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি বক্রতা ঢেলে
দেয়া হবে, তখন সে ধ্বংস হবে।
·      ইমাম বাইহাকী রহ. বিশিষ্ট তাবে‘ঈ
মুজাহিদ ইবন জাবার রহ. হতে বর্ণনা করেন,
আল্লাহ তা‘আলার বাণী-
ﻥِﺈَﻓ﴿ ۡﻢُﺘۡﻋَﺰَٰﻨَﺗ ﻲِﻓ ٖﺀۡﻲَﺷ ُﻩﻭُّﺩُﺮَﻓ ِﻪَّﻠﻟﭐ ﻰَﻟِﺇ
﴾ِﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐَﻭ ‏[ : ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ٥٩‏]
“অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ
ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও রাসূলের
নিকট[32]” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,
আল্লাহর দিকে প্রত্যার্পণ করার অর্থ,
আল্লাহর কিতাবের দিক প্রত্যর্পণ করা আর
আল্লাহর রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করার
অর্থ, রাসূলের সুন্নতের দিক প্রত্যার্পণ করা।
·      ইমাম বাইহাকী রহ. যুহরী রহ. থেকে
বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের পূর্বের
আলেমগণ বলতেন, সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে
মুক্তি পাওয়া।
·      আল্লামা ইবনে কুদামাহ রহ. স্বীয়
‘রাওদাতুন নাযের’ গ্রন্থে উসুলুল আহকাম তথা
‘শরীয়তের বিধি-বিধানের মূল উৎস’ বর্ণনায়
যা লিখেছেন তার সরাসরি ভাষ্য হচ্ছে,
“দলীল-প্রমাণাদি গ্রহণের দ্বিতীয় মূল উৎস
হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা প্রামাণ্য হওয়ার
দলীল হচ্ছে, তার মু‘জিযাসমূহ; সেগুলোর তার
সত্যবাদিতার উপর প্রমাণ বহন করছে। আর
আল্লাহ তা‘আলা তার অনুসরণ-অনুকরণ করার
নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার আদেশের
বিরোধিতা করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক
করেছেন।’
·      হাফেয ইবনে কাসীর রহ. আল্লাহ তা‘আলার
বাণী-
َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ِﺭَﺬۡﺤَﻴۡﻠَﻓ﴿ َﻥﻮُﻔِﻟﺎَﺨُﻳ ٓۦِﻩِﺮۡﻣَﺃ ۡﻦَﻋ
ﻥَﺃ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﺗ ٌﺔَﻨۡﺘِﻓ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﻳ ۡﻭَﺃ ٌﺏﺍَﺬَﻋ
ٌﻢﻴِﻟَﺃ ٦٣ ﴾ ‏[ ﺭﻮﻨﻟﺍ : ٦٣‏]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে,
তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা
যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে”[33]-এর
তাফসীরে বলেন, এখানে ‘তার নির্দেশের’ বলে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
প্রদর্শিত পথ, তার অনুসৃত পদ্ধতি, তার
দেখানো নিয়ম, তার সুন্নাহ্ ও তার শরীয়ত
বুঝানো হয়েছে। সুতরাং সকল কথা ও কর্ম তার
কথা ও কর্মের সাথে পরিমাপ করা হবে, অতঃপর
যে কথা ও কর্ম তার কথার সাথে মিলবে তা
গ্রহণ করা হবে আর যে কথা ও কর্ম তার সাথে
মিলবে না তা যে বলেছে বা করেছে তার উপর
প্রত্যাখ্যান করা হবে, সে যেই হোক না কেন।
যেমন, বুখারি মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদিসের
কিতাবসমূহে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ْﻦَﻣ َﻞِﻤَﻋ ﺎًﻠَﻤَﻋ ِﻪﻴﻠَﻋ َﺲﻴﻟ ﺎﻧُﺮْﻣَﺃ َﻮُﻬَﻓ ّﺩَﺭ
‏»
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করে, যার উপর
আমার নির্দেশনা নাই তা প্রত্যাখ্যাত”।[34]
তাহলে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি
প্রকাশ্যে বা গোপনে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত দ্বীনের
বিরোধিতা করে, সে যেন ভয় করে এবং সতর্ক
হয় যে ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﺗ ﻥَﺃ ٌﺔَﻨۡﺘِﻓ তাকে ফিতনা পেয়ে
বসবে অর্থাৎ কুফর, নেফাক বা বিদআত তার
অন্তরে ঢেলে দেয়া হবে অথবা ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﻳ ۡﻭَﺃ
ٌﺏﺍَﺬَﻋ ٌﻢﻴِﻟَﺃ কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে;
সেটা হতে পারে দুনিয়াতেই যেমন, হত্যা অথবা
শাস্তি প্রয়োগ অথবা বন্দীত্ব ইত্যাদি
অবমাননাকর জীবন, যেমনটি ইমাম আহমদ রহ.
বর্ণিত হাদীসে এসেছে, যা মুহাদ্দিস আবদুর
রাযযাক বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তাকে
মা‘মার হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি হামাম
ইবন মুনাব্বিহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন, এ হাদিসটি আমাদেরকে আবু হুরাইরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি
বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
‏«ﻲﻠَﺜﻣ ْﻢﻜُﻠَﺜﻣَﻭ ِﻞَﺜَﻤﻛ َﺪَﻗْﻮَﺘْﺳﺍ ٍﻞﺟﺭ ﺍًﺭﺎﻧ
ﺎّﻤﻠَﻓ ْﺕَﺀﺎَﺿَﺃ ﺎَﻬَﻟْﻮَﺣ ﺎَﻣ َﻞَﻌَﺟ ُﺵﺍﺮﻔﻟﺍ
ُّﺏﺍﻭّﺪﻟﺍ ِﻩِﺬَﻫﻭ ﻲِﺋﻼﻟﺍ َﻦْﻌَﻘَﻳ ﻲﻓ ﺭﺎَّﻨﻟﺍ
َﻦْﻌَﻘَﻳ ﺎّﻬﻴِﻓ ُﻪَﻨْﺒِﻠْﻐَﻳَﻭ ّﻦُﻫُﺰُﺠْﺤَﻳ َﻞَﻌَﺟَﻭ
َﻦْﻤِﺤﺘْﻘَﻴَﻓ ﺎﻬَﻴِﻓ َﻝﺎَﻗ ﻚِﻟَﺬَﻓ ْﻢﻜَﻠَﺜَﻣَﻭ ﻲﻠَﺜَﻣ
ﺎﻧَﺃ ُﺬُﺧﺁ ﻢُﻛِﺰْﺠَﺤﺑ ﺭﺎَّﻨﻟﺍ ﻦَﻋ ّﻢُﻠَﻫ ﻦَﻋ
ِﺭﺎﻨﻟﺍ ﻲﻧﻮُﺒِﻠْﻐَﺘَﻓ ﺎَﻬﻴِﻓ َﻥﻮُﻤِﺤَﺘْﻘﺗَﻭ ‏»
“আমার দৃষ্টান্ত ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক
ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালালো, তারপর যখন
আগুনের আশ-পাশ আলোকিত হল, তখন কীট-
পতঙ্গ, পোকা-মাকড় যেগুলো আগুনের মধ্যে ঝাপ
দেয়, তাতে তারা পড়তে আরম্ভ করল। আর
লোকটি তাদের বাধা দিল, কিন্তু তারা তাকে
পরাভূত করে তাতেই ঝাঁপ দিচ্ছিল। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
আমার দৃষ্টান্ত এ লোকটির মতই; আমি
তোমাদের কোমর ধরে তোমাদের আগুন থেকে দূরে
সরাচ্ছি, বলতে থাকছি, আগুন! আগুন! তা থেকে
দূরে থাক, কিন্তু তোমরা আমাকে পরাভূত করে
তাতেই ঝাঁপ দিচ্ছ।[35] বুখারি ও মুসলিম
হাদিসটিকে মুহাদ্দিস আব্দুর রাযযাক কর্তৃক
বর্ণিত হাদিস হিসেবে সংকলন করেন।’
·      আল্লামা সুয়ুতী রহ. তার ‘মিফতাহুল
জান্নাহ ফিল ইহতিজাজ বিস্সূন্নাহ’ কিতাবে
লেখেন-
তোমরা জেনে রাখ! -আল্লাহ তোমাদের প্রতি
দয়া করুন- যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস -চাই তা তার
কথা হোক বা কর্ম হোক- দলীল হওয়াকে
অস্বীকার করল, সে কুফরি করল, সে ইসলামের
গণ্ডি থেকে বের হয়ে গেল। তার হাশর ইয়াহূদী
ও নাসারাদের সাথে হবে অথবা আল্লাহর
ইচ্ছানুযায়ী কোনো কাফের দলের সাথে হবে।’
সুন্নতের গুরুত্ব, সুন্নতের উপর আমল করা
বাধ্যতামূলক হওয়া এবং সুন্নতের বিরোধিতা
করা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার বিষয়ে
সাহাবী, তাবে‘ঈ ও তাদের পরবর্তী আহলে ইলম
থেকে অসংখ্য বাণী বর্ণিত রয়েছে। আশা করি,
আমরা এখানে যে সব আয়াত, হাদিস ও বাণী
উল্লেখ করেছি, তা হকের অনুসন্ধানকারীর
জন্য যথেষ্ট। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের
জন্য এবং সমস্ত মুসলিমদের জন্য কামনা করি
এমন সব আমলের তাওফীক যা তাঁকে খুশি করে
আর নিরাপত্তা কামনা করি তার বিক্ষুব্ধ হওয়া
কারণসমূহ হতে। আর আল্লাহ কাছে আমাদের
কামনা তিনি যেন আমাদের সবাইকে সঠিক
পথের হিদায়াত দেন। নিশ্চয় তিনি
শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।
ﻰﻠﺻﻭ ﻪﻠﻟﺍ ﻢﻠﺳﻭ ﻩﺪﺒﻋ ﻰﻠﻋ ﻪﻟﻮﺳﺭﻭ
ﺎﻨﻴﺒﻧ ﻰﻠﻋﻭ ﺪﻤﺤﻣ ﻪﻟﺁ ﻪﺑﺎﺤﺻﺃﻭ
ﻪﻋﺎﺒﺗﺃﻭ .ﻥﺎﺴﺣﺈﺑ
আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ .
সূচীপত্র
ভূমিকা
আহকাম সাব্যস্ত হওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য মূল
উৎসগুলোর আলোচনা
প্রথম মূল উৎস: আল্লাহর কিতাব
দ্বিতীয় মূল উৎস: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।
এ বিষয়ে রাসূল, সাহাবী ও তাবে‘ঈদের থেকে
বর্ণিত ভাষ্যসমূহ:
এ বিষয়টির উপর কুরআন থেকে প্রমাণ
এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে প্রমাণ
সুন্নতের যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা
ফরয হওয়ার ব্যাপারে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম,
তাবে‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের বর্ণনা
[1] সূরা আ‘রাফ, আয়াত: ৩
[2] সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৫৫
[3] সূরা মায়েদা, আয়াত: ১৫, ১৬
[4] সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪১, ৪২
[5] সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৯
[6] সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৫২
[7] মুসলিম, হজ অধ্যায়; হাদিস: ১২১৮,
আবুদাউদ, মানাসেক অধ্যায়, হাদিস: ১৯০৫, ইবন
মাজাহ, মানাসেক অধ্যায়, হাদিস: ৩০৭৪
[8] মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, হাদিস:
২৪০৮, আহমদ, হাদিস: ৩৬৭/৪, দারেমী,
ফাযায়েলে কুরআন অধ্যায়, ৩৩১৬
[9] মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, হাদিস:
২৪০৮, আহমদ, হাদিস: ৩৬৭/৪, দারেমী
ফাযায়েলে কুরআন অধ্যায়, হাদিস: ৩৩১৬
[10]মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, হাদিস:
২৪০৮, আহমদ, হাদিস: ৩৬৭/৪, দারেমী
ফাযায়েলে কুরআন অধ্যায়, হাদিস: ৩৩১৬
[11] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২
[12] সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯
[13] সূরা নিসা, আয়াত: ৮০
[14] সূরা নাহল আয়াত: ৪৪
[15] সূরা নাহল, আয়াত: ৬৪
[16] সূরা নূর, আয়াত: ৫৪
[17] সূরা নূর আয়াত: ৫৪
[18] সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৭
[19] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩
[20] সূরা হাশর, আয়াত: ৭
[21] বুখারি, জিহাদ অধ্যায়, হাদিস: ২৭৯৭,
মুসলিম, ইমারাহ অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩৫, আন-
নাসায়ী, ৫৫১০, ইবন মাজাহ্, জিহাদ অধ্যায়,
হাদিস: ২৮৫৯, আহমদ, ৩৮৭/২
[22] বুখারী, আস-সহীহ: হাদিস নং- ৬/২৬৫৫/
৬৮৫১, মুসলিম, হাদিস: ১৮৩৫, নাসায়ী,
৫৫১০, ইবন মাজাহ্, মুকাদ্দিমা, ৩, আহমাদ,
৩৬১/২
[23] মুসনাদ আহমাদ ৪/১৩০, তিরমিযী, ইলম
অধ্যায়; হাদিস: ২৬৬৪, আবু দাউদ, সূন্নাহ
অধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৬, ইবন মাজাহ, ১২।
[24] এ জাতীয় বসার মধ্যে না মানার অহঙ্কার
ফুটে উঠবে। সে অহঙ্কারী হওয়ার কারণে
রাসূলের হাদীসকে মানতে চাইবে না। [সম্পাদক]
[25] তিরমিযী, ইলম অধ্যায়; হাদিস: ২৬৬৩,
আবু দাউদ সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৫, ইবন
মাজাহ, ১৩, আহমদ: ৮/৬
[26] তিরমিযী, ইলম অধ্যায়; হাদিস: ২৬৬৪,
আবু দাউদ, সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৪, ইবন
মাজাহ, ১২, আহমদ: ১৩২/৪, দারেমী ৫৮৬
[27] বুখারি, হজ অধ্যায়, হাদিস: ১৬৫৪,
মুসলিম, ১৯৭৯, ইবন মাজাহ, হাদিস: ২৩৩,
আহমদ, হাদিস: ৩৭/৫, দারেমী, হাদিস: ১৯১৬
[28] বুখারি, জুম‘আ অধ্যায়, হাদিস: ৮৫৮,
মুসলিম, সালাত অধ্যায়, হাদিস: ৪৪২,
তিরমিযী, জুম‘আ অধ্যায়, হাদিস: ৫৭০,
নাসায়ী, মাসাজেদ অধ্যায়, ৭০৬, আবু দাউদ,
সালাত অধ্যায়, হাদিস: ৫৬৮, ইবনে মাজাহ,
হাদিস: ১৬, আহমদ: ১৬/২, দারেমী, ৪৪২।
[29] বুখারি, আদব অধ্যায় হাদিস: ৫৮৬৬,
মুসলিম, শিকার ও জবেহ অধ্যায় হাদিস:
১৯৫৪, নাসায়ী কাসামাহ অধ্যায়, হাদিস:
৪৮১৫, ইবনে মাজাহ, শিকার অধ্যায়, ৩২২৭,
আহমদ, হাদিস ৫৬/৫, দারেমী, মুকাদ্দিমা,
হাদিস: ৪৪০
[30] তিরমিযী, ইলম অধ্যায়, হাদিস ২৬৬৪,
আবুদ দাউদ, সূন্নাহ আধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৪,
ইবন মাজাহ, মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১২।
[31] সূরা নূর, আয়াত: ৬৩
[32] সূরা আন-নিসা: ৫৯
[33] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩।
[34] বুখারি সুলাহ অধ্যায়, হাদিস: ২৫৫০,
মুসলিম বিচার ফায়সালাহ অধ্যায়, হাদিস:
১৭১৮, আবু দাউদ সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস,
৪৬০৬, ইবন মাজাহ; মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১৪,
আহমদ, হাদিস: ২৫৬/৬
[35] বুখারি, রিকাক অধ্যায়, হাদিস: ৬১১৮,
মুসলিম, ফাযায়েল অধ্যায়, হাদিস: ২২৪৪,
তিরমিযী, আমসাল অধ্যায়, হাদিস: ২৮৭৪,
আহমদ, হাদিস: ৩১২/২
_____________________________________________
____________________________________
লেখক: আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায
রহ.
অনুবাদক: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলামহাউজ

মহিলা ও পুরুষের নামাযের পার্থক্য আছে কি?

মুসলিম জাতীর জন্য একটি ফরয ইবাদত হচ্ছে
সালাত বা নামায। যা কোন অজুহাতেই পরিত্যাগ
করা সম্ভব নয়। আর পরকালে সর্বপ্রথম এই
সালাতের হিসাব নেয়া হবে। তবে আমাদের সমাজে
পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সালাত আদায়ে
পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু মহানবী (সঃ)
কখনও বলে যাননি যে, পুরুষ ও মহিলাদের
মধ্যে সালাত আদায়ে পার্থক্য আছে। তাঁর সময়
নারী-পুরুষ একসাথে জামায়াতে নামায আদায়ের
বহু হাদিস রয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ছল্লু কামা রআইতুমুনি
উছল্লি” – “তোমরা সেই ভাবে সালাত আদায় কর
, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে
দেখ” (মেশকাত, ২য় খন্ড, হাদীস ৬৩২)
এবং
রাসূলের আনুগত্য না করে অন্য কারো আনুগত্য
করলে তাকে নিজের ‘রব’ বানানো হবে, যেহেতু
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “তারা আল্লাহকে
বাদ দিয়ে তাদের আলেম ও পীর/দরবেশদেরকে
নিজের ‘রব’ বানিয়ে নিয়েছে।” (সূরা তওবা:
আয়াত ৩১)
সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর
জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি। জিবরাঈল
(আঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ক্রমে দুই
দফায় রাসূল (সাঃ)-কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের
নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে বাস্তবভাবে
শিখিয়ে গেছেন। এ সময় জিবরাঈল (আঃ)
নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম
পদ্ধতির বর্ণনা দেন নাই। নারী-পুরুষ
নির্বিশেষের জন্য এ নমুনা শিখানো হয়েছে।
আল্লাহর নিয়ম পদ্ধতিতে কখনও কোন
পার্থক্য দেখা যাবে না। এ মর্মে মহান আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
“আর আপনি আল্লাহর নিয়ম-রীতিতে কখনও
কোন পরিবর্তন পাবেন না।” [সূরা-আহযাব :
আয়াত-৬২]
রাসূল (সাঃ) নিজেও বহু সাহাবীদের
উপস্থিতিতে সালাত কেমন করে আদায় করতে হয়
বাস্তবভাবে রুকু, সিজদাহ ইত্যাদি করে
দেখিয়েছেন। তারপর রাসূল (সাঃ) দৃঢ়তার সাথে
জোড়ালো ভাষায় বললেন,
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ,
ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় কর।” [মেশকাত, ২য়
খন্ড, হাদীস ৬৩২]
এ কথা প্রণিধানযোগ্য যে, আল্লাহ তায়ালা ও
রাসূল (সাঃ) যে কাজকে নারী পুরুষদের জন্য
নির্দিষ্ট করে পার্থক্য করার বর্ণনা বা
নির্দেশ দেন নাই তা পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে
পার্থক্য না করেই পালন করতে হবে। যেহেতু
রাসূল (সাঃ) সকল নারী পুরুষের জন্যই
সমানভাবে অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য, এ
ব্যাপারে কোন মতভেদ নাই নিশ্চয়ই। সালাতের
ব্যপারেও এ সত্য যথার্থই কার্যকর বলে গ্রহণ
করতে হবে। তবে মহিলাদের সালাত আদায়ে যে
পার্থক্যগুলো দেখা যায় সেগুলো বাহ্যিক এবং
সালাতের বাইরে বিবেচিত। এগুলো নিম্নরূপঃ
১) সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু
মহিলা আযান দেবে না।
২) সালাতে মহিলা মাথা ঢেকে রাখবে, কিন্তু
পুরুষের মাথা না ঢাকলেও সালাত হয়ে যাবে।
৩) মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে হবে
তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে না। অপরদিকে
পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা রাখতে হবে।
৪) কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে
না, কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই
ইমামতি করতে পারবে। মহিলা অবশ্য শুধু
মহিলাদের জামায়াতে ইমামতি করতে পারবে।
৫) জামায়াতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার
পুরুষদের কাতারের পিছনে থাকবে।
৬) পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী
দাড়াঁতে হবে, যদি ওজর না থাকে। কিন্তু মহিলা
ইমাম হলে তাকে মহিলাদের কাতারের মাঝখানে
দাঁড়াতে হবে। [বর্ণিত আছে যে, আয়েশা (রাঃ)
এবং উম্মে সালমা (রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয
সালাত অথবা তারাবীহ এর সালাতে জামায়াতে
ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝখানে
দাঁড়াতেন।
৭) যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে
হাত তালি দিয়ে বা উরুর উপর হাত মেরে সংকেত
দিতে হবে। আর পুরুষদেরকে উচ্চঃস্বরে
তাকবীর বলতে হবে।
৮) তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষদের চাদর বা
কম্বল ইত্যাদি হতে হাত বের করে কাঁধ বা কান
পর্যন্ত উঠাতে হবে, অবশ্য ওজর না থাকলে।
কিন্তু মহিলাদের চাদরের বা ওড়নার ভিতরে
হাত রেখেই কাঁধ বা কান পর্যন্ত হাত উঠাতে
হেব; তাকবীরের সময়ও এভাবে করতে হবে।
৯) মসজিদ হতে মহিলারা সালাত শেষ হলেই
বের হয়ে যাবে, আর পুরুষরা পরে বের হবে।
উপরোক্ত বাহ্যিক করণীয় বিষয়গুলো ব্যতীত
অন্য কোন পার্থক্য পুরুষ ও মহিলাদের সালাতে
নেই। পুরুষ-মহিলাদের সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে
অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা, হাত বাঁধা, রুকু,
সিজদাহ, উঠা-বসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন
পার্থক্য নেই। মহিলাদের সালাত আদায়ে
আমাদের দেশে যে পার্থক্য প্রচলিত আছে তা
সহীহ হাদীস ভিত্তিক তো নয়ই, দলীল
ভিত্তিকও নয়, বরং কতকগুলো যঈফ ও নিতান্ত
দুর্বল হাদীস এবং অসমর্থিত ও মনগড়া লেখা
বই হতে প্রচলিত হয়েছে।

আক্বীদার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

লেখকঃ মুযাফফর বিন মুহসিন
বিশ্বাস বা দর্শন মানবজীবনের এমন একটি
বিষয় যা তার জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে
দেয়। এটা এমন এক ভিত্তি যাকে অবলম্বন
করেই মানুষ তার সমগ্র জীবনধারা পরিচালনা
করে। এই যে মৌলিক জীবনদর্শনকে কেন্দ্র
করে দুনিয়ার বুকে মানুষ আবর্তিত হচ্ছে, যে
আদর্শ ও বিশ্বাসকে লালন করে তার সমগ্র
জীবন পরিচালিত হচ্ছে তাকে ইসলামী
পরিভাষায় ‘আক্বীদা’ শব্দ দ্বারা সংজ্ঞায়িত
করা হয়। কোন অবকাঠামো যেমন ভিত্তি ছাড়া
অকল্পনীয়, তেমনভাবে একজন মুসলিমের জীবনে
আক্বীদা ও বিশ্বাসের দর্শন এমনই একটি
অপরিহার্য বিষয় যা ব্যতীত সে নিজেকে
মুসলিম হিসাবে সম্বোধিত হওয়ার অধিকার ও
দাবী হারিয়ে ফেলে। এটা এমন এক অতুলনীয়
শক্তির আঁধার যা একজন মুসলমানকে তার
আদর্শের প্রতি শতভাগ আস্থাবান করে তুলে এবং
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সেই বিশ্বাসের
প্রতিফলন ঘটাতে বিরামহীনভাবে সচেষ্ট
রাখে। অপরপক্ষে মানবজগতের যাবতীয়
পথভ্রষ্টতার মূলে রয়েছে এই মৌলিক আক্বীদা
থেকে বিচ্যুত হওয়া। এজন্য একজন মুসলমানের
জন্য আক্বীদা-বিশ্বাসের ব্যাপারে সুস্পষ্ট
জ্ঞান রাখা এবং সে বিশ্বাসের যথার্থতা
নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা
বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা ব্যতীত কোন ব্যক্তি
প্রকৃত অর্থে মুসলিম হতে পারে না। প্রতিটি
কথা ও কর্ম যদি বিশুদ্ধ আক্বীদা ও বিশ্বাস
থেকে নির্গত না হয় তবে তা আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন,
“যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয়ে অবিশ্বাস
রাখে তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে
সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে” [ সূরা মায়েদা – ৫]
তিনি আরো বলেন,
“(হে নবী!) তোমাকে এবং এবং তোমার
পূর্বসূরিদের আমি প্রত্যাদেশ করেছি যে, যদি
তুমি আমার শরীক স্থাপন কর তবে তোমার
যাবতীয় শ্রম বিফলে যাবে এবং তুমি
ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে” [ সূরা যুমার
৬৫]
মানুষ যুগে যুগে পথভ্রষ্ট হয়েছে মূলতঃ
আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ঘটার কারণে।
এজন্য বিষয়টি সূক্ষ্মতা ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব
সহকারে জানা অপরিহার্য। নিম্নে ইসলামী
আক্বীদার পরিচিতি ও মানব জীবনে বিশুদ্ধ
আক্বীদা পোষণের গুরুত্ব আলোচনা করা হল।
আক্বীদার সংজ্ঞা :
শাব্দিক অর্থ : আক্বীদা শব্দটির আভিধানিক
অর্থ হল সম্পর্ক স্থাপন করা বা শক্তভাবে
আকড়ে ধরা, অথবা কোন কিছুকে সাব্যস্ত করা বা
শক্তিশালী হওয়া। অতএব মানুষ যার সাথে
নিজের অন্তরের সুদৃঢ় যোগাযোগ স্থাপন করে
তাকেই আক্বীদা বলা যায়।
পারিভাষিক অর্থ : সাধারণভাবে সেই সুদৃঢ়
বিশ্বাস ও অকাট্য কর্মধারাকে আক্বীদা বলা
হয় যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তির
মনে সামান্যতম সন্দেহের অবকাশ থাকে না। আর
ইসলামী আক্বীদা বলতে বুঝায়- আসমান-যমীন
ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর যিনি
সৃষ্টিকর্তা সেই মহান প্রভুর প্রতি
সুনিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করা, তাঁর
উলূহিয়্যাত , রুবূবিয়্যাত ও গুণবাচক নামসমূহকে
দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। তাঁর ফেরেশতামন্ডলী,
নবী-রাসূলগণ, তাঁদের উপর নাযিলকৃত
কিতাবসমূহ, তাক্বদীরের ভাল-মন্দ এবং বিশুদ্ধ
দলীল দ্বারা প্রমাণিত দ্বীনের মৌলিক
বিষয়সমূহ ও অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কিত
সংবাদসমূহ ইত্যাদি যে সব বিষয়াদির উপর
সালাফে ছালেহীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন তার
প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখা। আল্লাহর
নাযিলকৃত যাবতীয় আহকাম-নির্দেশনার প্রতি
নিঃশর্ত আনুগত্য প্রদর্শন এবং রাসূল (ছা:)-
এর প্রচারিত শরী‘আতের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য
ও অনুসরণ নিশ্চিত করা ইসলামী আক্বীদার
অন্তর্ভুক্ত (ড. নাছের বিন আব্দুল করীম আল-
আক্বল, মাবাহিসুন ফি আক্বীদায়ে আহলিস
সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, পৃঃ ৩)
আক্বীদা এবং শরী‘আত দু’টি পৃথক বিষয়।
কেননা শরী‘আত হল দ্বীনের কর্মগত রূপ এবং
আক্বীদা হলো দ্বীনের জ্ঞানগত রূপ যার প্রতি
একজন মুসলমানের আন্তরিক বিশ্বাস রাখা
অপরিহার্য।
আক্বীদা শব্দটির বিভিন্ন ব্যবহার :
আক্বীদা শব্দটি ইসলামী পরিভাষায় আরো
কয়েকটি শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। যেমন-
তাওহীদ, সুন্নাত, উছূলুদ্দীন, ফিকহুল আকবার,
শরী‘আত, ঈমান ইত্যাদি। যদিও আক্বীদা
শব্দটি এগুলোর তুলনায় সামগ্রিক একটি
শব্দ। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ব্যতীত
অন্যান্য ফেরকা এক্ষেত্রে আরো কয়েকটি
পরিভাষা ব্যবহার করে। যেমন-
যুক্তিবিদ্যা (ইলমুল কালাম) :
মু‘তাযিলা, আশ‘আরিয়া এবং তাদের অনুসারীগণ
এই পরিভাষাটি ব্যবহার করে। এটা সালাফে
ছালেহীনের নীতি বিরোধী অনর্থক কর্ম,
যার সাথে শরী‘আতের সম্পর্ক নেই।
দর্শন :
দার্শনিকগণ এই পরিভাষা ব্যবহার করে। তবে
আক্বীদাকে দর্শন শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা চলে
না। কেননা দর্শনের ভিত্তি হল অনুমান,
বুদ্ধিবৃত্তিক কল্পনা ও অজ্ঞাত বিষয়াদি
সম্পর্কে কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির
সমষ্টি, যার সাথে ইসলামী আক্বীদার সম্পর্ক
নেই।
তাসাওউফ :
কোন কোন দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ ও
ছূফীবাদীরা আক্বীদাকে ছুফিতত্ত্ব হিসাবে
ব্যাখ্যা দেয়। এটাও অগ্রহণযোগ্য। কেননা
সুফিতত্ত্বও নিরর্থক কল্পনা ও কুসংস্কারের
উপর নির্ভরশীল। এর অতীন্দ্রিয় ও
কাল্পনিক ভাবমালার সাথে শরী‘আতের কোন
সম্পর্ক নেই।
ধর্মতত্ত্ব (Theology):
এটাও দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ, যুক্তিবাদীদের
আবিস্কৃত শব্দ। এর দ্বারাও ইসলামী আক্বীদার
ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কেননা এর উদ্দেশ্য
কেবল স্রষ্টা সম্পর্কে দার্শনিক, যুক্তিবাদী
এবং নাস্তিকদের ধারণাসমূহ ব্যাখ্যা করা।
অধিবিদ্যা :
দার্শনিক ও পশ্চিমা লেখকরা একে
Metaphisycs নামে অভিহিত করে। এটি
অনেকটা ধর্মতত্ত্বের কাছাকাছি পরিভাষা।
সাধারণভাবে ধর্ম সম্পর্কিত বা ধর্মহীন
বিভিন্ন বাতিল চিন্তাধারাকেও আক্বীদা বলা
যায়। যেমন – ইহুদীবাদ, বৌদ্ধবাদ, হিন্দুবাদ,
খৃষ্টবাদ, নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদি।
বিশুদ্ধ আক্বীদা বনাম ভ্রষ্ট আক্বীদা :
বিশুদ্ধ আক্বীদা বলতে বুঝান হয় ইসলামী
আক্বীদা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের
আক্বীদাকে যা আল্লাহ রাববুল আলামীন
নির্দেশিত ও রাসূল (ছা:) কর্তৃক প্রচারিত
অর্থাৎ যা পূর্ণাঙ্গভাবে কুরআন ও ছহীহ
হাদীছ দ্বারা সমর্থিত এবং সালাফে
ছালেহীনের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত। এতদ্ভিন্ন
পৃথিবীর যাবতীয় আক্বীদা ও বিশ্বাস
মিশ্রিত, কাল্পনিক, কুসংস্কারযুক্ত এবং
মিথ্যার উপর ভিত্তিশীল। যা নিশ্চিতভাবে
মানবজাতির গন্তব্যপথকে ভ্রষ্টতার দিকে
নিয়ে যায়।
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত :
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত ছয়টি। যথা:-
একঃ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস : আল্লাহ রাববুল
আলামীন নিজেকে যেভাবে মানবজগতের কাছে
উপস্থাপন করেছেন ঠিক সেভাবে তা
সত্তাগতভাবে, গুণগতভাবে এবং কর্মগতভাবে
সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করা।
দুইঃ ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস : তাদের
প্রত্যেকের ব্যাপারে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে
যেরূপ বর্ণনা এসেছে ঠিক সেভাবে বিশ্বাস
করা।
তিনঃ রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস : তাঁদের
নবুওয়াত ও তাদের চারিত্রিক পবিত্রতার
উপর নির্দ্বিধায় বিশ্বাস স্থাপন করা।
চারঃ আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস :
মূল চারটি কিতাব তথা যাবুর, ইঞ্জীল, তাওরাত
ও কুরআনসহ নাযিলকৃত অন্যান্য ছোট ছোট
কিতাব ও ছহীফাসমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা।
পাঁচঃ শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস : অর্থাৎ
মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে যাবতীয়
সংবাদসমূহ যা আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর
রাসূলের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে
দিয়েছেন, তার প্রতি বিশ্বাস রাখা।
ছয়ঃ তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস : অর্থাৎ যা
কিছু দুনিয়ার বুকে ঘটছে তা আল্লাহ রাববুল
আলামীনের জ্ঞাতসারেই ঘটছে এবং তিনি
সৃষ্টিজগত তৈরীর বহু পূর্বেই ভবিষ্যৎ
ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন- এই
বিশ্বাস জাগ্রত জ্ঞান সহকারে পোষণ করা।
আলোচিত ছয়টি বিষয়ের প্রতি পূর্ণাঙ্গভাবে
বিশ্বাস স্থাপন করা একজন মুসলমানের জন্য
অপরিহার্য। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ
হাদীছের বহু দলীল দ্বারা এগুলো প্রমাণিত
[বাকারা ১৭৭, ২৮৫; নিসা ১৩৬; ক্বামার ৪৯;
ফুরকান ২; মিশকাত হা/২ ‘ঈমান অধ্যায়’]
আক্বীদা ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য :
“আক্বীদা ” শব্দটি প্রায়ই ঈমান ও তাওহীদের
সাথে গুলিয়ে যায়। অস্বচ্ছ ধারণার
ফলশ্রুতিতে অনেকেই বলে ফেলেন, আক্বীদা আবার
কি? আক্বীদা বিশুদ্ধ করারই বা প্রয়োজন কেন?
ঈমান থাকলেই যথেষ্ট। ফলশ্রুতিতে দ্বীন
সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে এক বড় ধরনের
অপূর্ণতা সৃষ্টি হয়, যা প্রায়ই মানুষকে
পথভ্রষ্টতার দিকে ঠেলে দেয়। এজন্য ঈমান ও
আক্বীদার মধ্যকার সম্পর্ক ও পার্থক্য স্পষ্ট
হওয়া প্রয়োজন। নিম্নে বিষয়টি উপস্থাপন
করা হল:-
প্রথমত : ঈমান সমগ্র দ্বীনকেই অন্তর্ভুক্ত
করে। আর আক্বীদা দ্বীনের সর্বোচ্চ
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে।
দ্বিতীয়ত : আক্বীদার তুলনায় ঈমান আরো
ব্যাপক পরিভাষা। আক্বীদা হল কতিপয়
ভিত্তিমূলক বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের
নাম। অন্যদিকে ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয়;
বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের
মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য
করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দু’টি অংশ। একটি
হল অন্তরে স্বচ্ছ আক্বীদা পোষণ। আরেকটি
হল বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দু’টি
পরস্পরের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোন
একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে
দেয়।
তৃতীয়ত : আক্বীদা হল বিশ্বাসের মাথা এবং
ঈমান হল শরীর। অর্থাৎ আক্বীদা হল ঈমানের
মূলভিত্তি। আক্বীদা ব্যতীত ঈমানের
উপস্থিতি তেমনি অসম্ভব, যেমনভাবে ভিত্তি
ব্যতীত কাঠামো কল্পনা করা অসম্ভব। সুতরাং
ঈমান হল বাহ্যিক কাঠামো আর আক্বীদা হল
ঈমানের আভ্যন্তরীণ ভিত্তি।
চতুর্থত : আক্বীদার দৃঢ়তা যত বৃদ্ধি পায়
ঈমানও তত বৃদ্ধি পায় ও মজবুত হয়। আক্বীদায়
দুর্বলতা সৃষ্টি হলে ঈমানেরও দুর্বলতা সৃষ্টি
হয়, আমলের ক্ষেত্রেও সে দুর্বলতার প্রকাশ
পায়। যেমনভাবে রাসূল (ছা:) বলেন,
“মানুষের হৃদয়ের মধ্যে একটি গোশতপিন্ড
রয়েছে, যদি তা পরিশুদ্ধ হয় তবে সমস্ত শরীর
পরিশুদ্ধ থাকে, যদি তা কদর্যপূর্ণ হয় তবে
সমস্ত শরীরই কদর্যপূর্ণ হয়ে যায়”।
[মুত্তাফাক আলাইহে, মিশকাত ‘ক্রয়-বিক্রয়
অধ্যায়’ হা/২৭৬০]
পঞ্চমত : বিশুদ্ধ আক্বীদা বিশুদ্ধ ঈমানের
মাপকাঠি, যা বাহ্যিক আমলকেও বিশুদ্ধ করে
দেয়। যখন আক্বীদায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়
তখন ঈমানও বিভ্রান্তিপূর্ণ হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে
ছালেহীনের অনুসরণ করা হয় এজন্য যে, তারা
যে আক্বীদার অনুসারী ছিলেন তা ছিল বিশুদ্ধ
এবং কুরআন ও সুন্নাহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আর এজন্যই তারা ছিলেন খালিছ ঈমানের
অধিকারী এবং পৃথিবীর বুকে উত্থিত
সর্বোত্তম জাতি। অন্যদিকে মুরজিয়া,
খারেজী, কাদরিয়াসহ বিভিন্ন উপদলসমূহ
আক্বীদার বিভ্রান্তির কারণে তাদের ঈমান
যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তেমনি তাদের
কর্মকান্ড নীতিবিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এভাবেই
আক্বীদার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে
ঈমানের অবস্থানও পরিবর্তন হয়ে যায়।
ষষ্ঠত : সকল রাসূলের মূল দা‘ওয়াত ছিল
বিশুদ্ধ আক্বীদা তথা তাওহীদের প্রতি আহবান
জানানো। এক্ষেত্রে কারো অবস্থান ভিন্ন ছিল
না। কিন্তু আমল-আহকাম সমূহ যুগে যুগে
পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন ছালাত, ছিয়াম,
যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি আমলসমূহ পূর্ববর্তী
নবীদের যুগে ছিল না অথবা থাকলেও তার
বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্নরূপ। সুতরাং ঈমানের
দাবীসূচক আমলসমূহ কালের বিবর্তনে
পরিবর্তিত হলেও আক্বীদার বিষয়টি সৃষ্টির
অনাদিকাল থেকে অভিন্ন ও অপরিবর্তনীয়।
সঠিক আক্বীদা পোষণের অপরিহার্যতা :
একঃ সঠিক আক্বীদা পোষণ করা ইসলামের
যাবতীয় কর্তব্যসমূহের মাঝে সবচেয়ে বড়
কর্তব্য। রাসূল (ছা:) বলেন,
“আমি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য
আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা আল্লাহর উপর
ঈমান আনে এবং মুহাম্মাদকে রাসূল হিসাবে
স্বীকৃতি দেয়”। [ মুত্তাফাক আলাইহে, ‘ঈমান’
অধ্যায়, হা/১২]
দুইঃ ঈমান সাধারণভাবে সমস্ত দ্বীনে
ইসলামকেই অন্তর্ভূক্ত করে। আর আক্বীদা
দ্বীনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয় তথা
অন্তরের অবিমিশ্র স্বীকৃতি ও আমলে তা
যথার্থ বাস্তবায়নকে নিশ্চিত করে।
তিনঃ আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ তথা
শিরক এমন ধ্বংসাত্মক যে পাপী তওবা না করে
মারা গেলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরককারীকে
ক্ষমা করবেন না। এ ব্যতীত যে কোন পাপ
তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিতে
পারেন” [ সূরা নিসা ১১৬ ]
চারঃ আক্বীদা সঠিক থাকলে কোন পাপী
ব্যক্তি জাহান্নামে গেলেও চিরস্থায়ীভাবে
সেখানে থাকবে না। ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত
হয়েছে যে,
“কোন এক ব্যক্তি জীবনে কোনদিন সৎ আমল
না করায় তার পুত্রদের নির্দেশ দেয় তাকে
পুড়িয়ে দিয়ে ছাইভস্ম যমীনে ও পানিতে
ছড়িয়ে দিতে এই ভয়ে যে, আল্লাহ তাকে শাস্তি
দান করবেন। তার ধারণা ছিল এর মাধ্যমে সে
আল্লাহর কাছ থেকে পালিয়ে জাহান্নামের আগুন
খেকে পরিত্রাণ লাভ করবে। অতঃপর আল্লাহ
ছাইভস্মগুলো একত্রিত করে তাতে রূহ প্রদান
করলেন এবং তাকে তার এই কাজের হেতু জানতে
চাইলেন। অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের
অনুমতি দিলেন, যেহেতু সে আল্লাহকে ভয় করে
এবং আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে সুনিশ্চিত
বিশ্বাস রাখে” [বুখারী, হা/৩২৯৪ ‘কিতাবুল
আম্বিয়া’, বাব ন. ৫২]
অন্য হাদীছে এসেছে,
“যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণ ঈমান
অবশিষ্ট থাকবে তাকেও শেষ পর্যায়ে জান্নাতে
প্রবেশ করানো হবে [মুত্তাফাক আলাইহে,
মিশকাত হা/৫৫৭৯,‘কিয়ামতের অবস্থাসমূহ ও
সৃষ্টির পুনরুত্থান’ অধ্যায়, ‘হাউযে কাওছার ও
শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ]
অর্থাৎ সঠিক আক্বীদার কারণে একজন
সর্বোচ্চ পাপী ব্যক্তিও নির্দিষ্ট সময়
পর্যন্ত জাহান্নামে অবস্থানের পর জান্নাতে
প্রবেশ করতে সমর্থ হবে।
পাঁচঃ আক্বীদা সঠিক না থাকলে সৎ
আমলকারীকেও জাহান্নামে যেতে হবে। যেমন
একজন মুনাফিক বাহ্যিকভাবে ঈমান ও সৎ আমল
করার পরও অন্তরে কুফরী পোষণের কারণে সে
জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে
(নিসা ১৪৫) । একই কারণে একজন কাফির সারা
জীবন ভাল আমল করা সত্ত্বেও কিয়ামতের দিন
সে তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে না। কেননা
তার বিশ্বাস ছিল ভ্রান্তিপূর্ণ। আল্লাহ
বলেন,
‘সেদিন আমি তাদের কৃতকর্মের দিকে
মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলো বিক্ষিপ্ত
ধূলিকণায় রুপান্তরিত করব’ (ফুরকান ২৩)
ছয়ঃ কবরের জীবনে আক্বীদা সম্পর্কেই প্রশ্ন
করা হবে। অর্থাৎ তোমার রব কে? তোমার নবী
কে? তোমার দ্বীন কি? সেদিন আমল সংক্রান্ত
প্রশ্ন করা হবে না। এখান থেকেই দুনিয়া ও
আখিরাতে আক্বীদার গুরুত্ব অনুভব করা যায়।
সাতঃ ইসলামের কালেমা অর্থাৎ ‘কালেমা
তাওহীদ’ উচ্চারণ করা আল্লাহর নিকট
গ্রহণযোগ্য হতে পারে তখনই যখন তা সঠিক
বিশ্বাস প্রসূত হয়। নতুবা তা আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য হবে না। গ্রহণযোগ্য হওয়ার
শর্তসমূহ হল-
ক. কালেমা তাওহীদের অর্থ জানা।
খ. খুলূছিয়াতের সাথে উচ্চারণ করা।
গ. সত্যায়ন করা।
ঘ. অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা।
ঙ. কালেমা ও কালেমার অনুসারীদের প্রতি
মুহাববত পোষণ করা।
চ. আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপনের দাবীসমূহ পরিপূর্ণ আনুগত্য ও
নিষ্ঠার সাথে পালন করা।
ছ. কালেমার বিপরীত বিষয়কে প্রত্যাখ্যান
করা।
এ বিষয়গুলো প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরের
বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। যা স্পষ্টতঃই
নির্দেশ করে যে, বিশ্বাসের সঠিকতা ইসলামে
প্রবেশের মূল শর্ত। অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহীদ
যদি সঠিক বিশ্বাসের সাথে উচ্চারিত না হয়
তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ
বিষয়ে সকল আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
আটঃ ইসলামের একটি মৌলিক নীতি হল
‘ওয়ালা’ ও ‘বারা’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর জন্য
সম্পর্ক স্থাপন এবং আল্লাহর জন্যই
সম্পর্কচ্ছেদ’ যা আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট।
একজন কাফির, মুনাফিক, মুশরিকের প্রতি
আমরা যে বিমুখতা দেখাই তার কারণ হল তার
কুফরী এবং বিভ্রান্ত আক্বীদা। ঠিক
যেমনভাবে একজন মুমিনকে আমরা শর্তহীনভাবে
ভালবাসি তার ঈমান ও বিশুদ্ধ আক্বীদার
কারণে। এ কারণে একজন মুসলমান পাপাচারী
হলেও তার আক্বীদার কারণে তার সাথে সম্পর্ক
ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন এক
ব্যক্তিকে মদ্যপানের জন্য রাসূল (ছা:)-এর
সামনে বেত্রাঘাত করা হচ্ছিল। তখন একজন
ব্যক্তি বলল, আল্লাহ তোমার উপর লা‘নত
করুন। রাসূল (ছা:) তাকে বললেন, ‘এই
মদ্যপায়ীকে লা‘নত কর না, কেননা সে আল্লাহ ও
তার রাসূলকে ভালবাসে’ (মুসনাদে বায্যার
হা/২৬৯, ছনদ ছহীহ, দ্রঃ বুখারী হা/৬৭৮০)

নয়ঃ সমকালীন মুসলিম সমাজের দিকে তাকালে
আক্বীদার গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুভব করা যায়।
তাদের মাঝে যেমন বহু লোক কবর পূজায় ব্যস্ত,
তেমনি লিপ্ত হরহামেশা তাওহীদ বিরোধী ও
শিরকী কার্যকলাপে। কেউবা ব্যস্ত নিত্য-
নতুন ‘মাহদী’, ‘মাসীহ’ আবিষ্কারের
প্রচেষ্টায়। মূর্তিপূজার স্থলে এখন আবির্ভাব
হয়েছে শহীদ মিনার, স্তম্ভ, ভাষ্কর্য,
অগ্নিশিখা, প্রতিকৃতি ইত্যাদি শিরকী
প্রতিমূর্তি। এগুলো সবই সঠিক আক্বীদা
সম্পর্কে অজ্ঞতার দুর্ভাগ্যজনক ফলশ্রুতি।
অন্যদিকে আক্বীদায় দুর্বলতা থাকার কারণে
মুসলিম পন্ডিতদের চিন্তাধারা ও লেখনীর
মাঝে শারঈ‘ সূত্রগুলোর উপর নিজেদের জ্ঞানকে
অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রবণতা এবং বুদ্ধির
মুক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতার নামে কুফরী
বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গি
ইত্যাদি যুক্তিবাদী ও শৈথিল্যবাদী ধ্যান-
ধারণার জন্মও নিচ্ছে যার স্থায়ী প্রভাব
পড়ছে পাঠকদের উপর। এভাবেই আক্বীদা
সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব আমাদের
পথভ্রষ্ট করে ফেলছে প্রতিনিয়ত।
দশঃ বিভ্রান্ত মতাদর্শের অনুসারী মুনাফিক,
বিদ‘আতী এবং ভিন্ন ধর্মানুসারী ইহুদী,
খৃষ্টান, পৌত্তলিক ও নাস্তিক্যবাদীরা তাদের
আক্বীদা প্রচার ও প্রসারে বিভিন্নমুখী যে
তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তা প্রতিরোধ করা ও
তা থেকে আত্মরক্ষা করা প্রতিটি মুসলিমের
জন্য আবশ্যক কর্তব্য। এজন্য সঠিক আক্বীদা
সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতেই হবে। অন্যথায়
আপাতঃ দর্শনীয় পশ্চিমা বস্ত্তবাদী
চিন্তাধারার জোয়ার আমাদেরকে পথভ্রষ্ট
করতে মোটেও সময় নিবে না।
আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির ভয়াবহ ফলাফল
:
আলেম-ওলামাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল
মৌলিক আক্বীদাসমূহের বিষয়ে সাধারণ
মুসলমানদের সঠিক জ্ঞান দান করা এবং
সাধ্যমত সর্বত্র তার প্রসার ঘটান। কেননা যে
ব্যক্তি তার জীবনের ব্যষ্টিক, সামাজিক,
বুদ্ধিবৃত্তিক সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদার
প্রতিফলন ঘটাতে পারে, সে দুনিয়া ও আখিরাত
সর্বক্ষেত্রে সফল। অথচ দুঃখজনক হল,
আধুনিক যুগে বহু আলেমই আক্বীদাকে খুব
সংকীর্ণ অর্থে ধরে নিয়েছেন, যার প্রভাব
অবধারিতভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে পড়ছে।
ফলে আমলগত ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদার
উপস্থিতিকে নিশ্চিত না করে অনেকে কেবল
আক্বীদা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা রাখাই
যথেষ্ট মনে করেছে যেমনটি করেছিল
মু‘তাযিলাসহ আরো কিছু উপদল। অনেকে আবার
কেবল অন্যদের সাথে নিজেদের পার্থক্য
নিরূপণের ক্ষেত্রে, কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতা
লাভের মত উপলক্ষের সাথে আক্বীদাকে
সীমাবদ্ধ রেখেছে যেমন-খারেজীরা।
ফলশ্রুতিতে বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রে
বিধর্মীগোষ্ঠীর বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের
পথ ধরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ,
গণতন্ত্র ইত্যাদি নিত্য-নতুন শিরকী মতবাদ
সহজেই মুসলমানদের মাঝে গেড়ে বসতে সক্ষম
হয়েছে। সচেতনতার দাবীদার বহু মুসলমান এ
ধারণা রাখে যে, ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্মের
লোকেরাও জান্নাতে যাবে যদি তারা সৎ হয়।
‘আক্বীদা ও শরী‘আত ভিন্ন জিনিস, আক্বীদা
কেবলমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক
চিন্তাধারা; ব্যবহারিক জীবনে যার বিশেষ
কোন গুরুত্ব নেই, ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়;
রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষা ইত্যাদি সার্বজনীন
ক্ষেত্রে তার কোন ভূমিকা থাকা উচিৎ নয়’
ইত্যাদি কুফরী চিন্তাধারা লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে
অধিকাংশ মুসলমানের মানসজগতকে আচ্ছন্ন
করে ফেলেছে। বলা বাহুল্য, এ সমস্ত ধোঁয়াশার
প্রভাব এতই ক্ষতিকারক যে মানুষের
সত্যানুসন্ধিৎসু মনকে একেবারেই পঙ্গু করে
রাখে এবং মিথ্যার আধিপত্যকে মেনে নেওয়ার
শৈথিল্যবাদী মানসিকতা প্রস্ত্তত করে দেয়।
আর এসবই সঠিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুতির
অবধারিত ফলশ্রুতি। সংক্ষিপ্ত আলোচনার
শেষ প্রান্তে বলা যায় যে, আক্বীদা দ্বীনের
প্রাথমিক ও মৌলিক বিষয়। আক্বীদা সঠিক
হওয়ার উপরই ঈমান ও আমলের যথার্থতা
নির্ভরশীল। তাই সবকিছুর পূর্বে আক্বীদার
বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করাই একজন মুসলিমের
প্রথম ও অপরিহার্য দায়িত্ব। আজকের
পৃথিবীতে যখন সংঘাত হয়ে উঠেছে
বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক তখন একজন
মুসলমানের জন্য স্বীয় আক্বীদা সংরক্ষণের
প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক বেড়েছে। কেননা
হাযারো মাযহাব-মতাদর্শের দ্বিধা-সংকটের
ধ্বংসাত্মক, দুর্বিষহ জঞ্জালকে সযত্নে পাশ
কাটিয়ে সত্যের দিশা পাওয়া এবং সত্য ও
স্বচ্ছ দ্বীনের দিকে ফিরে আসা বিশুদ্ধ
আক্বীদা অবলম্বন ব্যতীত অসম্ভব। আল্লাহ
রাববুল আলামীন সকল মুসলিম ভাই-বোনকে
সঠিক আক্বীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত
স্বচ্ছ ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফীক দান
করুন ও যাবতীয় শিরকী ও জাহেলী
চিন্তাধারা থেকে আমাদেরকে হেফাযত করুন।
আমীন!!

একজন নারীর জান্নাত যে পথে

image

লেখক : সানাউল্লাহ বিন নজির আহমদ
সম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়ব
প্রেক্ষাপট
চারদিক থেকে ভেসে আসছে নির্দয় ও পাষণ্ড
স্বামী নামের হিংস্র পশুগুলোর আক্রমণের
শিকার অসহায় ও অবলা নারীর করুণ বিলাপ।
অহরহ ঘটছে দায়ের কোপ, লাথির আঘাত,
অ্যাসিডে ঝলসানো, আগুনে পুড়ানো, বিষ
প্রয়োগ এবং বালিশ চাপাসহ নানা দুঃসহ
কায়দায় নারী মৃত্যুর ঘটনা। কারণ তাদের
পাঠ্য সূচি থেকে ওঠে গেছে বিশ্ব নবির বাণী
“তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও।”
“তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর
নিকট উত্তম, আমি আমার স্ত্রীদের নিকট
উত্তম।”
অপর দিকে চারদিক বিষিয়ে তুলছে, তাগুতি
আইনের দোহাই পেড়ে পতিভক্তিশূন্য, মায়া-
ভালোবাসাহীন স্ত্রী নামের ডাইনীগুলোর
অবজ্ঞার পাত্র, অসহায় স্বামীর ক্ষোভ ও
ক্রোধে ভরা আর্তনাদ। কারণ, তারা রাসূলের
শিক্ষা থেকে বঞ্চিত “আল্লাহ ব্যতীত কাউকে
সেজদা করার অনুমতি থাকলে, আমি নারীদের
নির্দেশ দিতাম তোমরা স্বামীদের সেজদা
কর।” মান-অভিমানের ছলনা আর সামান্য তুচ্ছ
ঘটনার ফলে সাজানো-গোছানো, সুখের সংসার,
ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও তছনছ হয়ে যাচ্ছে
মুহূর্তে। ক্ষণিকেই বিস্মৃতির আস্তাকুরে
পর্যবসিত হচ্ছে পূর্বের সব মিষ্টি-মধুর
স্মৃতি, আনন্দঘন-মুহূর্ত। দায়ী কখনো স্বামী,
কখনো স্ত্রী। আরো দায়ী বর্তমান শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানসমূহে বিদ্যমান ধর্মহীন,
পাশ্চাত্যপন্থী সিলেবাস। যা তৈরি করেছে
ইংরেজ ও এদেশের এমন শিক্ষিত সমাজ, যারা
রঙে বর্ণে বাঙালী হলেও চিন্তা চেতনা ও মন-
মানসিকতায় ইংরেজ। মায়ের উদর থেকে অসহায়
অবস্থায় জন্ম গ্রহণকারী মানুষের তৈরি এ
সিলেবাস অসম্পূর্ণ, যা সর্বক্ষেত্রে সঠিক
দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ। যে সিলেবাসে
শিক্ষিত হয়ে স্ত্রী স্বামীর অধিকার
সম্পর্কে জানে না, স্বামীও থাকে স্ত্রীর
প্রাপ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। একজন অপর
জনের প্রতি থাকে বীতশ্রদ্ধ। ফলে পরস্পরের
মাঝে বিরাজ করে সমঝোতা ও সমন্বয়ের সংকট।
সম্পূরকের পরিবর্তে প্রতিপক্ষ হিসেবে
বিবেচনা করে একে অপরকে। আস্থা রাখতে পারছে
না কেউ কারো ওপর। তাই স্বনির্ভরতার জন্য
নারী-পুরুষ সবাই অসম প্রতিযোগিতার
ময়দানে ঝাঁপ দিচ্ছে। মূলত হয়ে পড়ছে
পরনির্ভর, খাবার-দাবার, পরিচ্ছন্নতা-
পবিত্রতা এবং সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রেও
ঝি-চাকর কিংবা শিশু আশ্রমের দ্বারস্থ হতে
হচ্ছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে… পক্ষান্তরে
আসল শিক্ষা ও মানব জাতির সঠিক পাথেয়
আল-কুরআনের দিকনির্দেশনা পরিত্যক্ত ও
সংকুচিত হয়ে আশ্রয় নিয়েছে কুঁড়ে ঘরে,
কর্তৃত্বশূন্য কিছু মানবের হৃদয়ে। তাই,
স্বভাবতই মানব জাতি অন্ধকারাচ্ছন্ন, সঠিক
পথ থেকে বিচ্যুত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় নিজদের
সমস্যা নিয়ে। দোদুল্যমান স্বীয় সিদ্ধান্তের
ব্যাপারে। আমাদের প্রয়াস এ ক্রান্তিকালে
নারী-পুরুষের বিশেষ অধ্যায়, তথা দাম্পত্য
জীবনের জন্য কুরআন-হাদিস সিঞ্চিত একটি
আলোকবর্তিকা পেশ করা, যা দাম্পত্য জীবনে
বিশ্বস্ততা ও সহনশীলতার আবহ সৃষ্টি করবে।
কলহ, অসহিষ্ণুতা ও অশান্তি বিদায় দেবে
চিরতরে। উপহার দেবে সুখ ও শান্তিময়
অভিভাবকপূর্ণ নিরাপদ পরিবার।
ভূমিকা
বইটি কুরআন, হাদিস, আদর্শ মনীষীগণের
উপদেশ এবং কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের বাণী ও
অভিজ্ঞতার আলোকে সংকলন করা হয়েছে।
বইটিতে মূলত নারীদের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব
পেয়েছে, অবশ্য পুরুষদের প্রসঙ্গও আলোচিত
হয়েছে, তবে তা প্রাসঙ্গিকভাবে। যে নারী-
পুরুষ আল্লাহকে পেতে চায়, আখেরাতে সফলতা
অর্জন করতে চায়, তাদের জন্য বইটি পাথেয়
হবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী। আল্লাহ তা’আলা
বলেন :
ﺎَﻣَﻭ ٍﻦِﻣْﺆُﻤِﻟ َﻥﺎَﻛ ﺎَﻟَﻭ ٍﺔَﻨِﻣْﺆُﻣ ﺍَﺫِﺇ ﻰَﻀَﻗ
ُﻪُﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﺍًﺮْﻣَﺃ ْﻥَﺃ َﻥﻮُﻜَﻳ ُﻢُﻬَﻟ
ُﺓَﺮَﻴِﺨْﻟﺍ ْﻦِﻣ ْﻢِﻫِﺮْﻣَﺃ ْﻦَﻣَﻭ ِﺺْﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ
ُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ْﺪَﻘَﻓ َّﻞَﺿ ﺎًﻨﻴِﺒُﻣ ﺎًﻟﺎَﻠَﺿ ﴿
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ:৩৬﴾
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে
কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের
ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার
থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য
করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”
রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻞﻛ ﻲﺘﻣﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻥﻮﻠﺧﺪﻳ ﻻﺇ ﻦﻣ ،ﻰﺑﺃ
: ﺍﻮﻟﺎﻗ ﻝﻮﺳﺭ ﺎﻳ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﻣﻭ ؟ﻰﺑﺄﻳ ﻝﺎﻗ
: ﻲﻨﻋﺎﻃﺃ ﻦﻣ ﻞﺧﺩ ،ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻣﻭ ﻲﻧﺎﺼﻋ
ﺪﻘﻓ .ﻰﺑﺃ ،ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﻩﺍﻭﺭ ﺢﺘﻓ ﻱﺭﺎﺒﻟﺍ
(১৩/২৪৯)
“আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে,
তবে যে অস্বীকার করবে। সাহাবারা প্রশ্ন
করলেন, কে অস্বীকার করবে হে আল্লাহর রাসূল?
তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করল, সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য
হল, সে অস্বীকার করল।”
পরিশেষে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা এ বইটি
দ্বারা আমাকে এবং সকল মুসলমানকে উপকৃত
হওয়ার তাওফিক দান করুন। বইটি তার
সন্তুষ্টি অর্জনের অসিলা হিসেবে কবুল করুন।
সে দিনের সঞ্চয় হিসেবে রক্ষিত রাখুন, যে
দিন কোন সন্তান, কোন সম্পদ উপকারে আসবে
না, শুধু সুস্থ অন্তকরণ ছাড়া। আমাদের সর্বশেষ
ঘোষণা সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য,
যিনি জগতের প্রতিপালক।
নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব :
আল্লাহ তাআলা বলেন :
َﻥﻮُﻣﺍَّﻮَﻗ ُﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ﺎَﻤِﺑ َﻞَّﻀَﻓ
ْﻢُﻬَﻀْﻌَﺑ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ٍﺾْﻌَﺑ ﺎَﻤِﺑَﻭ ﺍﻮُﻘَﻔْﻧَﺃ ْﻦِﻣ
ْﻢِﻬِﻟﺍَﻮْﻣَﺃ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ﴿ :৩৪﴾
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে
আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব
দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে
ব্যয় করে।”
হাফেজ ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে
বলেন, “পুরুষ নারীর তত্ত্বাবধায়ক। অর্থাৎ সে
তার গার্জিয়ান, অভিভাবক, তার উপর
কর্তৃত্বকারী ও তাকে সংশোধনকারী, যদি সে
বিপদগামী বা লাইনচ্যুত হয়।”
এ ব্যাখ্যা রাসূলের হাদিস দ্বারাও সমর্থিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, আমি যদি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সেজদা
করার নির্দেশ দিতাম, তবে নারীদের আদেশ
করতাম স্বামীদের সেজদার করার জন্য। সে
আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার
জীবন, নারী তার স্বামীর সব হক আদায় করা
ব্যতীত, আল্লাহর হক আদায়কারী হিসেবে গণ্য
হবে না। এমনকি স্বামী যদি তাকে বাচ্চা
প্রসবস্থান থেকে তলব করে, সে তাকে নিষেধ
করবে না।”
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺐﻴﻐﻠﻟ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
“সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা
লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারীনী ঐ
বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন।”
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এ আয়াতের তাফসিরে
বলেন, ‘সুতরাং নেককার নারী সে, যে
আনুগত্যশীল। অর্থাৎ যে নারী সর্বদা স্বামীর
আনুগত্য করে… নারীর জন্য আল্লাহ এবং তার
রাসূলের হকের পর স্বামীর হকের মত অবশ্য
কর্তব্য কোন হক নেই।’
হে নারীগণ, তোমরা এর প্রতি সজাগ দৃষ্টি
রাখ। বিশেষ করে সে সকল নারী, যারা
সীমালঙ্ঘনে অভ্যস্ত, স্বেচ্ছাচার প্রিয়,
স্বামীর অবাধ্য ও পুরুষের আকৃতি ধারণ করে।
স্বাধীনতা ও নারী অধিকারের নামে কোন
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, যখন ইচ্ছা
বাইরে যাচ্ছে আর ঘরে ফিরছে। যখন যা মন
চাচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। তারাই দুনিয়া এবং
দুনিয়ার চাকচিক্যের বিনিময়ে আখেরাত
বিক্রি করে দিয়েছে। হে বোন, সতর্ক হও,
চৈতন্যতায় ফিরে আস, তাদের পথ ও সঙ্গ ত্যাগ
করে। তোমার পশ্চাতে এমন দিন ধাবমান যার
বিভীষিকা বাচ্চাদের পৌঁছে দিবে বার্ধক্যে।
নারীদের উপর পুরুষের কর্তৃত্বের কারণ :
পুরুষরা নারীদের অভিভাবক ও তাদের উপর
কর্তৃত্বশীল। যার মূল কারণ উভয়ের শারীরিক
গঠন, প্রাকৃতিক স্বভাব, যোগ্যতা ও শক্তির
পার্থক্য। আল্লাহ তা’আলা নারী-পুরুষকে ভিন্ন
ভিন্ন উদ্দেশ্য এবং ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও অবয়বে
সৃষ্টি করেছেন।
দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ নেককার স্ত্রী :
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“পুরো দুনিয়া ভোগের সামগ্রী, আর সবচে’
উপভোগ্য সম্পদ হল নেককার নারী।”
বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চারটি গুণ
দেখে নারীদের বিবাহ করা হয়Ñ সম্পদ, বংশ
মর্যাদা, সৌন্দর্য ও দীনদারি। তবে
ধার্মিকতার দিক প্রাধান্য দিয়েই তুমি
কামিয়াব হও নয়তো তোমার হাত ধুলি ধুসরিত
হবে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চারটি বস্তু শুভ লক্ষণ।
যথা : ১. নেককার নারী, ২. প্রশস্ত ঘর, ৩.
সৎ প্রতিবেশী, ৪. সহজ প্রকৃতির
আনুগত্যশীল-পোষ্য বাহন। পক্ষান্তরে অপর
চারটি বস্তু কুলক্ষণা। তার মধ্যে একজন
বদকার নারী।”
এসব আয়াত ও হাদিস পুরুষদের যেমন নেককার
নারী গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি
উৎসাহ দেয় নারীদেরকে আদর্শ নারীর সকল
গুনাবলী অর্জনের প্রতি। যাতে তারা আল্লাহর
কাছে পছন্দনীয় নেককার নারী হিসেবে গণ্য
হতে পারে।
প্রিয় মুসলিম বোন, তোমার সামনে সে
উদ্দেশেই নেককার নারীদের গুণাবলী পেশ করা
হচ্ছে। যা চয়ন করা হয়েছে কুরআন, হাদিস ও
পথিকৃৎ আদর্শবান নেককার আলেমদের বাণী ও
উপদেশ থেকে। তুমি এগুলো শিখার ব্রত গ্রহণ
কর। সঠিক রূপে এর অনুশীলন আরম্ভ কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “ইলম আসে শিক্ষার মাধ্যমে। শিষ্টচার
আসে সহনশীলতার মাধ্যমে। যে কল্যাণ
অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তাকে সুপথ দেখান।”
নেককার নারীর গুণাবলি :
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺐﻴﻐﻠﻟ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
ইবনে কাসির রহ. লিখেন,ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ
শব্দের অর্থ নেককার নারী, ইবনে আব্বাস ও
অন্যান্য মুফাসসিরের মতে ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ শব্দের
অর্থ স্বামীদের আনুগত্যশীল নারী, আল্লামা
সুদ্দি ও অন্যান্য মুফাসসির বলেন ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺐﻴﻐﻠﻟ শব্দের অর্থ স্বামীর অনুপস্থিতিতে
নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ রক্ষাকারী
নারী।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,
রমজানের রোজা রাখে, আপন লজ্জাস্থান হেফাজত
করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাকে বলা হবে,
যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি জান্নাতে প্রবেশ
কর।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “তোমাদের সেসব স্ত্রী জান্নাতি, যারা
মমতাময়ী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, পতি-
সঙ্গ প্রিয়Ñ যে স্বামী গোস্বা করলে সে তার
হাতে হাত রেখে বলে, আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া
পর্যন্ত, আমি দুনিয়ার কোন স্বাদ গ্রহণ করব
না।”
সুনানে নাসায়িতে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একদা জিজ্ঞাসা করা
হল, হে আল্লাহর রাসূল, কোন নারী সব চেয়ে
ভাল? তিনি বললেন, “যে নারী স্বামীকে
আনন্দিত করে, যখন স্বামী তার দিকে দৃষ্টি
দেয়। যে নারী স্বামীর আনুগত্য করে, যখন
স্বামী তাকে নির্দেশ দেয়, যে নারী স্বামীর
সম্পদ ও নিজ নফসের ব্যাপারে, এমন কোনো
কর্মে লিপ্ত হয় না, যা স্বামীর অপছন্দ।”
হে মুসলিম নারী, নিজকে একবার পরখ কর,
ভেবে দেখ এর সাথে তোমার মিল আছে কতটুকু।
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার পথ অনুসরণ কর।
দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের শপথ
গ্রহণ কর। নিজ স্বামী ও সন্তানের ব্যাপারে
যতœশীল হও।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জনৈক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার কি
স্বামী আছে? সে বলল হ্যাঁ, রাসূল বললেন, তুমি
তার কাছে কেমন? সে বলল, আমি তার সন্তুষ্টি
অর্জনে কোন ত্র“টি করি না, তবে আমার
সাধ্যের বাইরে হলে ভিন্ন কথা। রাসূল বললেন,
লক্ষ্য রেখ, সে-ই তোমার জান্নাত বা
জাহান্নাম।”
উপরের আলোচনার আলোকে নেককার নারীর
গুণাবলি :
১. নেককার : ভাল কাজ সম্পাদনকারী ও নিজ
রবের হক আদায়কারী নারী।
২. আনুগত্যশীল : বৈধ কাজে স্বামীর
আনুগত্যশীল নারী।
৩. সতী : নিজ নফসের হেফাজতকারী নারী,
বিশেষ করে স্বামীর অবর্তমানে।
৪. হেফাজতকারী : স্বামীর সম্পদ ও নিজ
সন্তান হেফাজতকারী নারী।
৫. আগ্রহী : স্বামীর পছন্দের পোশাক ও সাজ
গ্রহণে আগ্রহী নারী।
৬. সচেষ্ট : স্বামীর গোস্বা নিবারণে সচেষ্ট
নারী। কারণ হাদিসে এসেছে, স্বামী নারীর
জান্নাত বা জাহান্নাম।
৭. সচেতন : স্বামীর চাহিদার প্রতি সচেতন
নারী। স্বামীর বাসনা পূর্ণকারী।
যে নারীর মধ্যে এসব গুণ বিদ্যমান, সে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ভাষ্য মতে জান্নাতী। তিনি
বলেছেন, “যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,
রমজানের রোজা রাখে, নিজ সতীত্ব হেফাজত
করে ও স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, যে
দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।”
আনুগত্যপরায়ন নেককার নারীর উদাহরণ :
শাবি বর্ণনা করেন, একদিন আমাকে শুরাই বলেন,
“শাবি, তুমি তামিম বংশের মেয়েদের বিয়ে কর।
তামিম বংশের মেয়েরা খুব বুদ্ধিমতী। আমি
বললাম, আপনি কীভাবে জানেন তারা বুদ্ধিমতী?
তিনি বললেন, আমি কোনো জানাজা থেকে বাড়ি
ফিরছিলাম, পথের পাশেই ছিল তাদের কারো
বাড়ি। লক্ষ্য করলাম, জনৈক বৃদ্ধ মহিলা
একটি ঘরের দরজায় বসে আছে, তার পাশেই
রয়েছে সুন্দরী এক যুবতী। মনে হল, এমন
রূপসী মেয়ে আমি আর কখনো দেখিনি। আমাকে
দেখে মেয়েটি কেটে পড়ল। আমি পানি চাইলাম,
অথচ আমার তৃষ্ণা ছিল না। সে বলল, তুমি কেমন
পানি পছন্দ কর, আমি বললাম যা উপস্থিত
আছে। মহিলা মেয়েকে ডেকে বলল, দুধ নিয়ে আস,
মনে হচ্ছে সে বহিরাগত। আমি বললাম, এ মেয়ে
কে? সে বলল, জারিরের মেয়ে জয়নব। হানজালা
বংশের ও। বললাম, বিবাহিতা না অবিবাহিতা?
সে বলল, না, অবিবাহিতা। আমি বললাম, আমার
কাছে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। সে বলল, তুমি যদি
তার কুফু হও, দিতে পারি। আমি বাড়িতে পৌঁছে
দুপুরে সামান্য বিশ্রাম নিতে শোবার ঘরে
গেলাম, কোনো মতে চোখে ঘুম ধরল না। জোহর
নামাজ পড়লাম। অতঃপর আমার গণ্যমান্য
কয়েকজন বন্ধু, যেমনÑ আলকামা, আসওয়াদ,
মুসাইয়্যেব এবং মুসা ইবনে আরফাতাকে সাথে করে
মেয়ের চাচার বাড়িতে গেলাম। সে আমাদের
সাদরে গ্রহণ করল। অতঃপর বলল, আবু
উমাইয়্যা, কি উদ্দেশ্যে আসা? আমি বললাম,
আপনার ভাতিজি জয়নবের উদ্দেশ্যে। সে বলল,
তোমার ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ নেই! অতঃপর
সে আমার কাছে তাকে বিয়ে দিল। মেয়েটি আমার
জালে আবদ্ধ হয়ে খুবই লজ্জা বোধ করল। আমি
বললাম, আমি তামিম বংশের নারীদের কী
সর্বনাশ করেছি? তারা কেন আমার উপর
অসন্তুষ্ট? পরক্ষণই তাদের কঠোর স্বভাবের
কথা আমার মনে পড়ল। ভাবলাম, তালাক দিয়ে
দেব। পুনরায় ভাবলাম, না, আমিই তাকে আপন
করে নিব। যদি আমার মনপুত হয়, ভাল,
অন্যথায় তালাকই দিয়ে দেব। শাবি, সে রাতের
মুহূর্তগুলো এতো আনন্দের ছিল, যা ভোগ না
করলে অনুধাবন করার জো নেই। খুবই চমৎকার
ছিল সে সময়টা, যখন তামিম বংশের মেয়েরা
তাকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমার মনে
পড়ল, রাসূলের সুন্নতের কথা। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“স্ত্রী প্রথম ঘরে প্রবেশ করলে স্বামীর
কর্তব্য, দু’রাকাত নামাজ পড়া, স্ত্রীর মধ্যে
সুপ্ত মঙ্গল কামনা করা এবং তার মধ্যে লুকিত
অমঙ্গল থেকে পানাহ চাওয়া।” আমি নামাজ
শেষে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমার সাথে
নামাজ পড়ছে। যখন নামাজ শেষ করলাম,
মেয়েরা আমার কাছে উপস্থিত হল। আমার কাপড়
পালটে সুগন্ধি মাখা কম্বল আমার উপর টেনে
দিল। যখন সবাই চলে গেল, আমি তার
নিকটবর্তী হলাম ও তার শরীরের এক পাশে
হাত বাড়ালাম। সে বলল, আবু উমাইয়্যা, রাখ।
অতঃপর বলল,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ﻭ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃ
ﻲﻠﺻﺃﻭ ﻰﻠﻋ ﺪﻤﺤﻣ ﻪﻟﺁﻭ …
“আমি একজন অভিজ্ঞতা শূন্য অপরিচিত
নারী। তোমার পছন্দ অপছন্দ আর স্বভাব
রীতির ব্যাপারে কিছুই জানি না আমি। আরো
বলল, তোমার বংশীয় একজন নারী তোমার
বিবাহে আবদ্ধ ছিল, আমার বংশেও সে রূপ
বিবাহিতা নারী বিদ্যমান আছে, কিন্তু
আল্লাহর সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত। তুমি আমার
মালিক হয়েছ, এখন আল্লাহর নির্দেশ
মোতাবেক আমার সাথে ব্যবহার কর। হয়তো
ভালভাবে রাখ, নায়তো সুন্দরভাবে আমাকে বিদায়
দাও। এটাই আমার কথা, আল্লাহর নিকট তোমার
ও আমার জন্য মাগফিরাত কামনা করছি।”
শুরাই বলল, শাবি, সে মুহূর্তেও আমি মেয়েটির
কারণে খুতবা দিতে বাধ্য হয়েছি। অতঃপর আমি
বললাম,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃﻭ ﻲﻠﺻﺃﻭ
ﻲﺒﻨﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﻪﻟﺁﻭ ،ﻢﻠﺳﺃﻭ ﺪﻌﺑﻭ …
তুমি এমন কিছু কথা বলেছ, যদি তার উপর
প্রতিষ্ঠিত থাক, তোমার কপাল ভাল। আর যদি
পরিত্যাগ কর, তোমার কপাল মন্দ। আমার
পছন্দ… আমার অপছন্দ… আমরা দু’জনে একজন।
আমার মধ্যে ভাল দেখলে প্রচার করবে, আর মন্দ
কিছু দৃষ্টিগোচর হলে গোপন রাখবে।
সে আরো কিছু কথা বলেছে, যা আমি ভুলে গেছি।
সে বলেছে, আমার আত্মীয় স্বজনের আসা-যাওয়া
তুমি কোন দৃষ্টিতে দেখ? আমি বললাম, ঘনঘন
আসা-যাওয়ার মাধ্যমে বিরক্ত করা পছন্দ করি
না। সে বলল, তুমি পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে
যার ব্যাপারে অনুমতি দেবে, তাকে আমি ঘরে
প্রবেশ করার অনুমতি দেব। যার ব্যাপারে
নিষেধ করবে, তাকে আমি অনুমতি দেব না। আমি
বললাম, এরা ভাল, ওরা ভাল না।
শুরাই বলল, শাবি, আমার জীবনের সব চেয়ে
আনন্দদায়ক অধ্যায় হচ্ছে, সে রাতের
মুহূর্তগুলো। পূর্ণ একটি বছর গত হল, আমি
তার মধ্যে আপত্তিকর কিছু দেখিনি।
একদিনের ঘটনা, ‘দারুল কাজা’ থেকে বাড়ি ফিরে
দেখি, ঘরের ভেতর একজন মহিলা তাকে উপদেশ
দিচ্ছে; আদেশ দিচ্ছে আর নিষেধ করছে। আমি
বললাম সে কে? বলল, তোমার শ্বশুর বাড়ির অমুক
বৃদ্ধ। আমার অন্তরের সন্দেহ দূর হল। আমি
বসার পর, মহিলা আমার সামনে এসে হাজির
হল। বলল, আসসালামু আলাইকুম, আবু উমাইয়্যা।
আমি বললাম, ওয়া লাইকুমুসসালাম, আপনি কে?
বলল, আমি অমুক; তোমার শ্বশুর বাড়ির লোক।
বললাম, আল্লাহ তোমাকে কবুল করুন। সে বলল,
তোমার স্ত্রী কেমন পেয়েছ? বললাম, খুব
সুন্দর। বলল, আবু উমাইয়্যা, নারীরা দু’সময়
অহংকারের শিকার হয়। পুত্র সন্তান প্রসব
করলে আর স্বামীর কাছে খুব প্রিয় হলে। কোন
ব্যাপারে তোমার সন্দেহ হলে লাঠি দিয়ে সোজা
করে দেবে। মনে রাখবে, পুরুষের ঘরে আহ্লাদি
নারীর ন্যায় খারাপ আর কোন বস্তু নেই।
বললাম, তুমি তাকে সুন্দর আদব শিক্ষা দিয়েছ,
ভাল জিনিসের অভ্যাস গড়ে দিয়েছ তার মধ্যে।
সে বলল, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আসা-যাওয়া
তোমার কেমন লাগে? বললাম, যখন ইচ্ছে তারা
আসতে পারে। শুরাই বলল, অতঃপর সে মহিলা
প্রতি বছর একবার করে আসত আর আমাকে উপদেশ
দিয়ে যেত। সে মেয়েটি বিশ বছর আমার সংসার
করেছে, একবার ব্যতীত কখনো তিরস্কার করার
প্রয়োজন হয়নি। তবে ভুল সেবার আমারই
ছিল।
ঘটনাটি এমন, ফজরের দু-রাকাত সুন্নত পড়ে
আমি ঘরে বসে আছি, মুয়াজ্জিন একামত দিতে
শুরু করল। আমি তখন গ্রামের মসজিদের
ইমাম। দেখলাম, একটা বিচ্ছু হাঁটাচলা করছে,
আমি একটা পাত্র উঠিয়ে তার উপর রেখে
দিলাম। বললাম, জয়নাব, আমার আসা পর্যন্ত
তুমি নড়াচড়া করবে না। শাবি, তুমি যদি সে
মুহূর্তটা দেখতে! নামাজ শেষে ঘরে ফিরে দেখি,
বিচ্ছু সেখান থেকে বের হয়ে তাকে দংশন
করেছে। আমি তৎক্ষণাৎ লবণ ও সাক্ত তলব
করে, তার আঙুলের উপর মালিশ করলাম। সূরায়ে
ফাতেহা, সূরায়ে নাস ও সূরায়ে ফালাক পড়ে তার
উপর দম করলাম।”
দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য :
১. স্বামীর অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “তিনজন ব্যক্তির নামাজ তাদের
মাথার উপরে উঠে না। (ক). পলাতক গোলামের
নামাজ, যতক্ষণ না সে মনিবের নিকট ফিরে
আসে। (খ). সে নারীর নামাজ, যে নিজ স্বামীকে
রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে। (গ). সে
আমিরের নামাজ, যার উপর তার অধীনরা
অসন্তুষ্ট।”
২. স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
ইমাম আহমদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা
করেন, “দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট
দেয়, জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে
নারীকে লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না,
আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন। সে তো তোমার
কাছে ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই
তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”
৩. স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “আল্লাহ তা’আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি
দেবেন না, যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার
করে না, অথচ সে স্বামী ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ
নয়।” ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি
জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু আজকের
ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন দেখিনি।
তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী দেখেছি।
তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন? তিনি বললেন,
তাদের না শুকরির কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল,
তারা কি আল্লাহর না শুকরি করে? বললেন, না,
তারা স্বামীর না শুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা
স্বীকার করে না। তুমি যদি তাদের কারো উপর
যুগ-যুগ ধরে ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন
তোমার কাছে তার বাসনা পূণ না হলে সে বলবে,
আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলাম
না।”
৪. কারণ ছাড়া তালাক তলব না করা।
ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ প্রমুখগণ সওবান
রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “যে
নারী কোন কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে তালাক
তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত
হারাম।”
৫. অবৈধ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য না করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য
করা যাবে না।” এখানে নারীদের শয়তানের
একটি ধোঁকা থেকে সতর্ক করছি, দোয়া করি
আল্লাহ তাদের সুপথ দান করুন। কারণ দেখা যায়
স্বামী যখন তাকে কোন জিনিসের হুকুম করে,
সে এ হাদিসের দোহাই দিয়ে বলে এটা হারাম,
এটা নাজায়েজ, এটা জরুরি নয়। উদ্দেশ্য
স্বামীর নির্দেশ উপেক্ষা করা। আমি তাদেরকে
আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীটি স্মরণ করিয়ে
দিচ্ছি, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যারা আল্লাহর
উপর মিথ্যা আরোপ করেছে, কিয়ামতের দিন
তাদের চেহারা কালো দেখবেন।” হাসান বসরি
রহ. বলেন, “হালাল ও হারামের ব্যাপারে আল্লাহ
ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা বলা নিরেট
কুফরি।”
৬. স্বামীর বর্তমানে তার অনুমতি ব্যতীত
রোজা না রাখা। সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন নারী স্বামীর
উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত রোজা
রাখবে না।” যেহেতু স্ত্রীর রোজার কারণে
স্বামী নিজ প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত
থাকে, যা কখনো গুনার কারণ হতে পারে। এখানে
রোজা দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই নফল রোজা
উদ্দেশ্য। কারণ ফরজ রোজা আল্লাহর অধিকার,
আল্লাহর অধিকার স্বামীর অধিকারের চেয়ে
বড়।
৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়া : রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন
পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের বিছানায়
ডাকে, আর স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না দেয়,
এভাবেই স্বামী রাত যাপন করে, সে স্ত্রীর
উপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অভিসম্পাত
করে।”
৮. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা প্রকাশ
না করা : আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “কিছু পুরুষ আছে যারা নিজ স্ত্রীর সাথে
কৃত আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কিছু
নারীও আছে যারা আপন স্বামীর গোপন
ব্যাপারগুলো প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে
সবাই চুপ হয়ে গেল, কেউ কোন শব্দ করল না।
আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-
পুরুষেরা এমন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন
করো না। এটা তো শয়তানের মতো যে রাস্তার
মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল, আর অমনি
তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন তাদের দিকে
তাকিয়ে আছে!”
৯. স্বামীর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও বিবস্ত্র না
হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, যে নারী স্বামীর ঘর
ব্যতীত অন্য কোথাও বিবস্ত্র হল, আল্লাহ তার
গোপনীয়তা নষ্ট করে দেবেন।”
১০. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে
ঢুকতে না দেয়া। বুখারিতে আবু হুরায়রা থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “নারী তার স্বামীর
উপস্থিতিতে অনুমিত ছাড়া রোজা রাখবে না
এবং তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে কাউকে প্রবেশ
করতে দেবে না।”
১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না
হওয়া। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা ঘরে
অবস্থান কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায়
বলেন, “তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন
প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।”
নারীর জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব,
তেমন ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি
ওয়াজিব। স্বামীর খেদমতের উদাহরণ: মুসলিম
বোন! স্বামীর খেদমতের ব্যাপারে একজন
সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার উল্লেখ
যথেষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। তারা কীভাবে
স্বামীর খেদমত করেছেন, স্বামীর কাজে
সহযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছেনÑ ইত্যাদি
বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ উপস্থাপনার
পরিবর্তে একটি উদাহরণই যথেষ্ট হবে, আমার
দৃঢ় বিশ্বাস। আসমা বিনতে আবু বকর থেকে
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের
আমাকে যখন বিয়ে করে, দুনিয়াতে তখন তার
ব্যবহারের ঘোড়া ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর
কিছু ছিল না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার
ঘাস সংগ্রহ করতাম, ঘোড়া মাঠে চরাতাম, পানি
পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম, পানি
পান করাতাম, পানির বালতিতে দানা ভিজাতাম।
তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম দিতাম।
আমি ভাল করে রুটি বানাতে জানতাম না,
আনসারদের কিছু মেয়েরা আমাকে এ জন্য সাহায্য
করত। তারা আমার প্রকৃত বান্ধবী ছিল। সে
বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর দান করা জুবায়েরের জমি থেকে
মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায় এক মাইল
দূরত্বে ছিল।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি নারীরা
পুরুষের অধিকার সম্পর্কে জানত, দুপুর কিংবা
রাতের খাবারের সময় হলে, তাদের খানা না
দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত না।”
বিয়ের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উম্মে আকেলার
উপদেশ: আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি বড় হয়েছ,
যারা তোমার আপন জন ছিল, তাদের ছেড়ে একজন
অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ, যার স্বভাব
চরিত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জান না। তুমি
যদি তার দাসী হতে পার, সে তোমার দাস হবে।
আর দশটি বিষয়ের প্রতি খুব নজর রাখবে।
১-২. অল্পতে তুষ্টি থাকবে। তার তার অনুসরণ
করবে ও তার সাথে বিনয়ী থাকবে।
৩-৪. তার চোখ ও নাকের আবেদন পূর্ণ করবে।
তার অপছন্দ হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয়
গন্ধ শরীরে রাখবে না।
৫-৬. তার ঘুম ও খাবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি
রাখবে। মনে রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার
উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার কারণে
বিষণœতার সৃষ্টি হয়।
৭-৮. তার সম্পদ হেফাজত করবে, তার সন্তান ও
বৃদ্ধ আত্মীয়দের সেবা করবে। মনে রাখবে, সব
কিছুর মূল হচ্ছে সম্পদের সঠিক ব্যবহার,
সন্তানদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।
পুরুষদের উদ্দেশে দুটি কথা :
উপরের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ
তাআলার কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের আলোকে
মুসলমান বোনদের জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা
প্রদান করার চেষ্টা করেছি মাত্র। তবে এর
অর্থ এ নয় যে, কোন স্ত্রী এ সবগুণের
বিপরীত করলে, তাকে শান্তি দেওয়া স্বামীর
জন্য হালাল হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন মোমিন
ব্যক্তি কোন মোমিন নারীকে বিবাহ বন্ধন
থেকে বিচ্ছিন্ন করবে না, তার একটি অভ্যাস
মন্দ হলে, অপর আচরণে তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে
যাবে।” তুমি যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ অথবা
তার কোন মন্দ স্বভাব প্রত্যক্ষ কর, তবে
তোমার সর্বপ্রথম দায়িত্ব তাকে উপদেশ দেয়া,
নসিহত করা, আল্লাহ এবং তার শাস্তির কথা
স্মরণ করিয়ে দেয়া। তার পরেও যদি সে অনুগত
না হয়, বদ অভ্যাস ত্যাগ না করে, তবে
প্রাথমিক পর্যায়ে তার থেকে বিছানা আলাদা
করে নাও। খবরদার! ঘর থেকে বের করবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও স্ত্রীকে
পরিত্যাগ কর না।” এতে যদি সে শুধরে যায়,
ভাল। অন্যথায় তাকে আবার নসিহত কর, তার
থেকে বিছানা আলাদা কর। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“যে নারীদের নাফরমানির আশঙ্কা কর, তাদের
উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর, প্রহার
কর, যদি তোমাদের আনুগত্য করে, তবে অন্য
কোন পথ অনুসন্ধান কর না।”
“তাদের প্রহার কর” এর ব্যাখ্যায় ইবনে
কাসির রহ. বলেন, যদি তাদের উপদেশ দেওয়া ও
তাদের থেকে বিছানা আলাদা করার পরও তারা
নিজ অবস্থান থেকে সরে না আসে, তখন তোমাদের
অধিকার রয়েছে তাদের হালকা প্রহার করা, যেন
শরীরের কোন স্থানে দাগ না পড়ে। জাবের
রাদিআল্লাহ আনহু থেকে সহিহ মুসলিমে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে বলেছেন, “তোমরা
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, তারা
তোমাদের কাছে মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।
তোমরা তাদের মালিক নও, আবার তারা
তোমাদের থেকে মুক্তও নয়। তাদের কর্তব্য,
তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে জায়গা না দেয়া,
যাদের তোমরা অপছন্দ কর। যদি এর বিপরীত
করে, এমনভাবে তাদের প্রহার কর, যাতে
শরীরের কোন স্থানে দাগ না পড়ে। তোমাদের
কর্তব্য সাধ্য মোতাবেক তাদের ভরন-পোষণের
ব্যবস্থা করা।” প্রহারের সংজ্ঞায় ইবনে আব্বাস
ও অন্যান্য মুফাসসির দাগ বিহীন প্রহার
বলেছেন। হাসান বসরিও তাই বলেছেন। অর্থাৎ
যে প্রহারের কারণে শরীরে দাগ পড়ে না।”
চেহারাতে প্রহার করবে না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
চেহারায় আঘাত করবে না।
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার :
স্বামী যেমন কামনা করে, স্ত্রী তার সব
দায়িত্ব পালন করবে, তার সব হক আদায় করবে,
তদ্রুপ স্ত্রীও কামনা করে। তাই স্বামীর
কর্তব্য স্ত্রীর সব হক আদায় করা, তাকে কষ্ট
না দেয়া, তার অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন
আচরণ থেকে বিরত থাকা। মুসনাদে আহমদে
বর্ণিত, হাকিম বিন মুয়াবিয়া তার পিতা থেকে
বর্ণনা করেন, আমি বললাম, “আল্লাহর রাসূল,
আমাদের উপর স্ত্রীদের কী কী অধিকার
রয়েছে? তিনি বললেন, তুমি যখন খাবে, তাকেও
খেতে দেবে। যখন তুমি পরিধান করবে, তাকেও
পরিধান করতে দেবে। চেহারায় প্রহার করবে
না। নিজ ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও তার
বিছানা আলাদা করে দেবে না।” অন্য বর্ণনায়
আছে, “তার শ্রী বিনষ্ট করিও না।”
বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসের কিতাবে
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “হে আব্দুল্লাহ, আমি জানতে পারলাম,
তুমি দিনে রোজা রাখ, রাতে নামাজ পড়, এ খবর
কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল।
তিনি বলেন, এমন কর না। রোজা রাখ, রোজা
ভাঙ্গো। নামাজ পড়, ঘুমাও। কারণ তোমার
উপর শরীরের হক রয়েছে, চোখের হক রয়েছে,
স্ত্রীরও হক রয়েছে।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরো বলেছেন, যার দু’জন স্ত্রী রয়েছে, আর সে
একজনের প্রতি বেশি ঝুঁকে গেল, কিয়ামতের
দিন সে একপাশে কাত অবস্থায় উপস্থিত হবে।”
সম্মানিত পাঠক! আমাদের আলোচনা সংক্ষেপ
হলেও তার আবেদন কিন্তু ব্যাপক। এখন আমরা
আল্লাহর দরবারে তার সুন্দর সুন্দর নাম,
মহিমান্বিত গুণসমূহের ওসিলা দিয়ে
প্রার্থনা করি, তিনি আমাকে এবং সমস্ত
মুসলমান ভাই-বোনকে এ কিতাব দ্বারা উপকৃত
হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমরা এমন না হয়ে
যাই, যারা নিজ দায়িত্ব আদায় না করে, স্ত্রীর
হক উশুল করতে চায়। আমাদের উদ্দেশ্য কারো
অনিয়মকে সমর্থন না করা এবং এক পক্ষের
অপরাধের ফলে অপর পক্ষের অপরাধকে বৈধতা
না দেয়া। বরং আমাদের উদ্দেশ্য প্রত্যেককে
নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহর সামনে
জবাবদিহির জন্য সচেতন করা।
পরিসমাপ্তি
পরিশেষে স্বামীদের উদ্দেশে বলি, আপনারা
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন, তাদের
কল্যাণকামী হোন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা
নারীদের কল্যাণকামী হও। কারণ, তাদের
পাঁজরের হাড্ডি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে,
পাঁজরের হাড্ডির ভেতর উপরেরটি সবচে’ বেশি
বাঁকা। (যার মাধ্যমে তাদের সৃষ্টি করা
হয়েছে।) যদি সোজা করতে চাও, ভেঙে ফেলবে।
আর রেখে দিলেও তার বক্রতা দূর হবে না,
তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও।”
নারীদের সাথে কল্যাণ কামনার অর্থ, তাদের
সাথে উত্তম ব্যবহার করা, ইসলাম শিক্ষা দেয়া,
এ জন্য ধৈর্য ধারণ করা; আল্লাহ এবং তাঁর
রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া, হারাম
জিনিস থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেয়া। আশা
করি, এ পদ্ধতির ফলে তাদের জান্নাতে যাওয়ার
পথ সুগম হবে। দরুদ ও সালাম রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার
বংশধরের উপর। আমাদের সর্বশেষ কথা,
“আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা। তিনি দু-
জাহানের পালনকর্তা।”
মুসলিম নারীর পর্দার জরুরি শর্তসমূহ
১. সমস্ত শরীর ঢাকা :
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ْﻞُﻗَﻭ َﻦْﻀُﻀْﻐَﻳ ِﺕﺎَﻨِﻣْﺆُﻤْﻠِﻟ َّﻦِﻫِﺭﺎَﺼْﺑَﺃ ْﻦِﻣ
َﻦْﻈَﻔْﺤَﻳَﻭ َّﻦُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ
ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻣ َﺮَﻬَﻇ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻴْﻟَﻭ ﺎَﻬْﻨِﻣ َّﻦِﻫِﺮُﻤُﺨِﺑ
ﻰَﻠَﻋ َّﻦِﻬِﺑﻮُﻴُﺟ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ ﺎَّﻟِﺇ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺒِﻟ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺋﺎَﺑَﺁ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﺑَﺁ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﺋﺎَﻨْﺑَﺃ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﻨْﺑَﺃ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ﻲِﻨَﺑ
ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺗﺍَﻮَﺧَﺃ ﻲِﻨَﺑ َّﻦِﻬِﺋﺎَﺴِﻧ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ﺎَﻣ
َّﻦُﻬُﻧﺎَﻤْﻳَﺃ ْﺖَﻜَﻠَﻣ ِﻭَﺃ َﻦﻴِﻌِﺑﺎَّﺘﻟﺍ ِﺮْﻴَﻏ
ِﺔَﺑْﺭِﺈْﻟﺍ ﻲِﻟﻭُﺃ ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ َﻦِﻣ ِﻭَﺃ ِﻞْﻔِّﻄﻟﺍ
َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ْﻢَﻟ ﺍﻭُﺮَﻬْﻈَﻳ ِﺕﺍَﺭْﻮَﻋ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ
َّﻦِﻬِﻠُﺟْﺭَﺄِﺑ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻳ ﺎَﻟَﻭ َﻢَﻠْﻌُﻴِﻟ ﺎَﻣ َﻦﻴِﻔْﺨُﻳ
ﺍﻮُﺑﻮُﺗَﻭ َّﻦِﻬِﺘَﻨﻳِﺯ ْﻦِﻣ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ
ﺎَﻬُّﻳَﺃ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻥﻮُﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َﻥﻮُﺤِﻠْﻔُﺗ ﴿৩১
﴾(ﺭﻮﻨﻟﺍ-৩১)
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের
হেফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা
ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না।
তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে ঢেকে
রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা,
শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই,
ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ,
তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীন
যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন
অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে
নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা
যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার
জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ,
তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর,
যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”
অন্যত্র বলেন,
ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺎَﻳ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ َﻚِﺟﺍَﻭْﺯَﺄِﻟ ْﻞُﻗ َﻚِﺗﺎَﻨَﺑَﻭ
ِﺀﺎَﺴِﻧَﻭ َﻦﻴِﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َﻦﻴِﻧْﺪُﻳ َّﻦِﻬْﻴَﻠَﻋ ْﻦِﻣ
َّﻦِﻬِﺒﻴِﺑﺎَﻠَﺟ َﻚِﻟَﺫ ﻰَﻧْﺩَﺃ ْﻥَﺃ َﻦْﻓَﺮْﻌُﻳ ﺎَﻠَﻓ
َﻦْﻳَﺫْﺆُﻳ َﻥﺎَﻛَﻭ ﺍًﺭﻮُﻔَﻏ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻤﻴِﺣَﺭ ﴿৫৯﴾
“হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে ,
কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা
যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের উপর
ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই
সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে
কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
২. কারুকার্য ও নকশা বিহীন পর্দা ব্যবহার
করা :
তার প্রমাণ পূর্বে বর্ণিত সূরা নুরের আয়াত-
َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ “তারা স্বীয় রূপ-
লাবণ্য ও সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।” এ
আয়াতের ভেতর কারুকার্য খচিত পর্দাও
অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ তাআলা যে সৌন্দর্য
প্রকাশ করতে বারণ করেছেন, সে সৌন্দর্যকে
আরেকটি সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত করাও নিষেধের
আওতায় আসে। তদ্রুপ সে সকল নকশাও নিষিদ্ধ,
যা পর্দার বিভিন্ন জায়গায় অঙ্কিত থাকে বা
নারীরা মাথার উপর আলাদাভাবে বা শরীরের
কোন জায়গায় যুক্ত করে রাখে। আল্লাহ তাআলা
বলেন,
َﻥْﺮَﻗَﻭ َّﻦُﻜِﺗﻮُﻴُﺑ ﻲِﻓ ﺎَﻟَﻭ َﻦْﺟَّﺮَﺒَﺗ َﺝُّﺮَﺒَﺗ
ِﺔَّﻴِﻠِﻫﺎَﺠْﻟﺍ ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ ﴿৩৩﴾ (ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ-৩৩)
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং
প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন
করো না।”
ﺝﺮﺒﺘﻟﺍ অর্থ: নারীর এমন সৌন্দর্য ও রূপ-
লাবণ্য প্রকাশ করা, যা পুরুষের যৌন উত্তেজনা
ও সুড়সুড়ি সৃষ্টি করে। এ রূপ অশ্লীলতা
প্রদর্শন করা কবিরা গুনা। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে
জিজ্ঞাসা কর না। (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস
হবে।) যথা : ক. যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত
থেকে বের হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী
দেশ পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ
করল, আর সে এ অবস্থায় মারা গেল। খ. যে
গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে পলায়ন করল
এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল। গ. যে নারী
প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে স্বামীর
অবর্তমানে বাইরে বের হল।”
৩. পর্দা সুগন্ধি বিহীন হওয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার দ্বারা
প্রমাণিত হয় যে, সুগন্ধি ব্যবহার করে
নারীদের বাইরে বের হওয়া হারাম।
সংক্ষিপ্ততার জন্য আমরা এখানে উদাহরণ
স্বরূপ, রাসূলের একটি হাদিস উল্লেখ করছি,
তিনি বলেন, “যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে
বাইরে বের হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে
অতিক্রম করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার
জন্য, সে নারী ব্যভিচারিণী।”
৪. শীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেসে উঠে এমন
পাতলা ও সংকীর্ণ পর্দা না হওয়া।
ইমাম আহমদ রহ. উসামা বিন জায়েদের সূত্রে
বর্ণনা করেন, “দিহইয়া কালবির উপহার দেয়া,
ঘন বুননের একটি কিবতি কাপড় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
পরিধান করতে দেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে
দিয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে বলেন, কি ব্যাপার,
কাপড় পরিধান কর না? আমি বললাম, আল্লাহর
রাসূল, আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি।
তিনি বললেন, তাকে বল, এর নীচে যেন সে
সেমিজ ব্যবহার করে। আমার মনে হয়, এ কাপড়
তার হাড়ের আকারও প্রকাশ করে দেবে।”
৫. পর্দা শরীরের রং প্রকাশ করে দেয় এমন
পাতলা না হওয়া।
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, জাহান্নামের দু’ প্রকার লোক আমি
এখনো দেখিনি :
(ক). সে সব লোক যারা গরুর লেজের মত বেত
বহন করে চলবে, আর মানুষদের প্রহার করবে।
(খ). সে সব নারী, যারা কাপড় পরিধান করেও
বিবস্ত্র থাকবে, অন্যদের আকৃষ্ট করবে এবং
তারা নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে
ঘোড়ার ঝুলন্ত চুটির মত। তারা জান্নাতে
প্রবেশ করবে না, তার ঘ্রাণও পাবে না।
৬. নারীর পর্দা পুরুষের পোশাকের ন্যায় না
হওয়া।
ইমাম বুখারি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারী এবং
নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষের উপর
অভিসম্পাত করেছেন।”
৭. সুখ্যাতির জন্য পরিধান করা হয় বা মানুষ
যার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে, পর্দা এমন
কাপড়ের না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন “যে ব্যক্তি সুনাম সুখ্যাতির পোশাক
পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন
অনুরূপ কাপড় পরিধান করাবেন, অতঃপর
জাহান্নামের লেলিহান আগুনে তাকে দগ্ধ
করবেন।” সুনাম সুখ্যাতির কাপড়, অর্থাৎ যে
কাপড় পরিধান করার দ্বারা মানুষের মাঝে
প্রসিদ্ধি লাভ উদ্দেশ্য হয়। যেমন উৎকৃষ্ট ও
দামি কাপড়। যা সাধারণত দুনিয়ার সুখ-ভোগ ও
চাকচিক্যে গর্বিত-অহংকারী ব্যক্তিরাই
পরিধান করে। এ হুকুম নারী-পুরুষ সকলের
ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে কেউ এ ধরনের কাপড়
অসৎ উদ্দেশ্যে পরিধান করবে, কঠোর হুমকির
সম্মুখীন হবে, যদি তওবা না করে মারা যায়।
৮. পর্দা বিজাতীয়দের পোশাক সাদৃশ্য না
হওয়া।
ইবনে ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আবু দাউদ ও
অন্যান্য মুহাদ্দিসিনগণ বর্ণনা করেন, “যে
ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখল, সে
ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে গণ্য।” এরশাদ
হচ্ছে,
ْﻢَﻟَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ ِﻥْﺄَﻳ ﺍﻮُﻨَﻣَﺁ ْﻥَﺃ َﻊَﺸْﺨَﺗ
ْﻢُﻬُﺑﻮُﻠُﻗ ِﺮْﻛِﺬِﻟ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣَﻭ َﻝَﺰَﻧ َﻦِﻣ ِّﻖَﺤْﻟﺍ
ﺍﻮُﻧﻮُﻜَﻳ ﺎَﻟَﻭ ﺍﻮُﺗﻭُﺃ َﻦﻳِﺬَّﻟﺎَﻛ َﺏﺎَﺘِﻜْﻟﺍ ْﻦِﻣ
ُﻞْﺒَﻗ ﴿১৬﴾ (ﺪﻳﺪﺤﻟﺍ:১৬)
“যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর
স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, তার কারণে
বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর তারা যেন
তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব
দেয়া হয়েছিল।”
ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন, “এ
জন্য আল্লাহ তাআলা মোমিনদেরকে মৌলিক
কিংবা আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে তাদের
সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন। ইবনে
তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন। অর্থাৎ অত্র
আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও সব
ক্ষেত্রে সমান, কাফেরদের অনুসরণ করা যাবে
না।”
সমাপ্ত