আক্বীদার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

লেখকঃ মুযাফফর বিন মুহসিন
বিশ্বাস বা দর্শন মানবজীবনের এমন একটি
বিষয় যা তার জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে
দেয়। এটা এমন এক ভিত্তি যাকে অবলম্বন
করেই মানুষ তার সমগ্র জীবনধারা পরিচালনা
করে। এই যে মৌলিক জীবনদর্শনকে কেন্দ্র
করে দুনিয়ার বুকে মানুষ আবর্তিত হচ্ছে, যে
আদর্শ ও বিশ্বাসকে লালন করে তার সমগ্র
জীবন পরিচালিত হচ্ছে তাকে ইসলামী
পরিভাষায় ‘আক্বীদা’ শব্দ দ্বারা সংজ্ঞায়িত
করা হয়। কোন অবকাঠামো যেমন ভিত্তি ছাড়া
অকল্পনীয়, তেমনভাবে একজন মুসলিমের জীবনে
আক্বীদা ও বিশ্বাসের দর্শন এমনই একটি
অপরিহার্য বিষয় যা ব্যতীত সে নিজেকে
মুসলিম হিসাবে সম্বোধিত হওয়ার অধিকার ও
দাবী হারিয়ে ফেলে। এটা এমন এক অতুলনীয়
শক্তির আঁধার যা একজন মুসলমানকে তার
আদর্শের প্রতি শতভাগ আস্থাবান করে তুলে এবং
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সেই বিশ্বাসের
প্রতিফলন ঘটাতে বিরামহীনভাবে সচেষ্ট
রাখে। অপরপক্ষে মানবজগতের যাবতীয়
পথভ্রষ্টতার মূলে রয়েছে এই মৌলিক আক্বীদা
থেকে বিচ্যুত হওয়া। এজন্য একজন মুসলমানের
জন্য আক্বীদা-বিশ্বাসের ব্যাপারে সুস্পষ্ট
জ্ঞান রাখা এবং সে বিশ্বাসের যথার্থতা
নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা
বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা ব্যতীত কোন ব্যক্তি
প্রকৃত অর্থে মুসলিম হতে পারে না। প্রতিটি
কথা ও কর্ম যদি বিশুদ্ধ আক্বীদা ও বিশ্বাস
থেকে নির্গত না হয় তবে তা আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন,
“যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয়ে অবিশ্বাস
রাখে তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে
সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে” [ সূরা মায়েদা – ৫]
তিনি আরো বলেন,
“(হে নবী!) তোমাকে এবং এবং তোমার
পূর্বসূরিদের আমি প্রত্যাদেশ করেছি যে, যদি
তুমি আমার শরীক স্থাপন কর তবে তোমার
যাবতীয় শ্রম বিফলে যাবে এবং তুমি
ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে” [ সূরা যুমার
৬৫]
মানুষ যুগে যুগে পথভ্রষ্ট হয়েছে মূলতঃ
আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ঘটার কারণে।
এজন্য বিষয়টি সূক্ষ্মতা ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব
সহকারে জানা অপরিহার্য। নিম্নে ইসলামী
আক্বীদার পরিচিতি ও মানব জীবনে বিশুদ্ধ
আক্বীদা পোষণের গুরুত্ব আলোচনা করা হল।
আক্বীদার সংজ্ঞা :
শাব্দিক অর্থ : আক্বীদা শব্দটির আভিধানিক
অর্থ হল সম্পর্ক স্থাপন করা বা শক্তভাবে
আকড়ে ধরা, অথবা কোন কিছুকে সাব্যস্ত করা বা
শক্তিশালী হওয়া। অতএব মানুষ যার সাথে
নিজের অন্তরের সুদৃঢ় যোগাযোগ স্থাপন করে
তাকেই আক্বীদা বলা যায়।
পারিভাষিক অর্থ : সাধারণভাবে সেই সুদৃঢ়
বিশ্বাস ও অকাট্য কর্মধারাকে আক্বীদা বলা
হয় যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তির
মনে সামান্যতম সন্দেহের অবকাশ থাকে না। আর
ইসলামী আক্বীদা বলতে বুঝায়- আসমান-যমীন
ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর যিনি
সৃষ্টিকর্তা সেই মহান প্রভুর প্রতি
সুনিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করা, তাঁর
উলূহিয়্যাত , রুবূবিয়্যাত ও গুণবাচক নামসমূহকে
দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। তাঁর ফেরেশতামন্ডলী,
নবী-রাসূলগণ, তাঁদের উপর নাযিলকৃত
কিতাবসমূহ, তাক্বদীরের ভাল-মন্দ এবং বিশুদ্ধ
দলীল দ্বারা প্রমাণিত দ্বীনের মৌলিক
বিষয়সমূহ ও অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কিত
সংবাদসমূহ ইত্যাদি যে সব বিষয়াদির উপর
সালাফে ছালেহীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন তার
প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখা। আল্লাহর
নাযিলকৃত যাবতীয় আহকাম-নির্দেশনার প্রতি
নিঃশর্ত আনুগত্য প্রদর্শন এবং রাসূল (ছা:)-
এর প্রচারিত শরী‘আতের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য
ও অনুসরণ নিশ্চিত করা ইসলামী আক্বীদার
অন্তর্ভুক্ত (ড. নাছের বিন আব্দুল করীম আল-
আক্বল, মাবাহিসুন ফি আক্বীদায়ে আহলিস
সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, পৃঃ ৩)
আক্বীদা এবং শরী‘আত দু’টি পৃথক বিষয়।
কেননা শরী‘আত হল দ্বীনের কর্মগত রূপ এবং
আক্বীদা হলো দ্বীনের জ্ঞানগত রূপ যার প্রতি
একজন মুসলমানের আন্তরিক বিশ্বাস রাখা
অপরিহার্য।
আক্বীদা শব্দটির বিভিন্ন ব্যবহার :
আক্বীদা শব্দটি ইসলামী পরিভাষায় আরো
কয়েকটি শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। যেমন-
তাওহীদ, সুন্নাত, উছূলুদ্দীন, ফিকহুল আকবার,
শরী‘আত, ঈমান ইত্যাদি। যদিও আক্বীদা
শব্দটি এগুলোর তুলনায় সামগ্রিক একটি
শব্দ। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ব্যতীত
অন্যান্য ফেরকা এক্ষেত্রে আরো কয়েকটি
পরিভাষা ব্যবহার করে। যেমন-
যুক্তিবিদ্যা (ইলমুল কালাম) :
মু‘তাযিলা, আশ‘আরিয়া এবং তাদের অনুসারীগণ
এই পরিভাষাটি ব্যবহার করে। এটা সালাফে
ছালেহীনের নীতি বিরোধী অনর্থক কর্ম,
যার সাথে শরী‘আতের সম্পর্ক নেই।
দর্শন :
দার্শনিকগণ এই পরিভাষা ব্যবহার করে। তবে
আক্বীদাকে দর্শন শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা চলে
না। কেননা দর্শনের ভিত্তি হল অনুমান,
বুদ্ধিবৃত্তিক কল্পনা ও অজ্ঞাত বিষয়াদি
সম্পর্কে কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির
সমষ্টি, যার সাথে ইসলামী আক্বীদার সম্পর্ক
নেই।
তাসাওউফ :
কোন কোন দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ ও
ছূফীবাদীরা আক্বীদাকে ছুফিতত্ত্ব হিসাবে
ব্যাখ্যা দেয়। এটাও অগ্রহণযোগ্য। কেননা
সুফিতত্ত্বও নিরর্থক কল্পনা ও কুসংস্কারের
উপর নির্ভরশীল। এর অতীন্দ্রিয় ও
কাল্পনিক ভাবমালার সাথে শরী‘আতের কোন
সম্পর্ক নেই।
ধর্মতত্ত্ব (Theology):
এটাও দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ, যুক্তিবাদীদের
আবিস্কৃত শব্দ। এর দ্বারাও ইসলামী আক্বীদার
ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কেননা এর উদ্দেশ্য
কেবল স্রষ্টা সম্পর্কে দার্শনিক, যুক্তিবাদী
এবং নাস্তিকদের ধারণাসমূহ ব্যাখ্যা করা।
অধিবিদ্যা :
দার্শনিক ও পশ্চিমা লেখকরা একে
Metaphisycs নামে অভিহিত করে। এটি
অনেকটা ধর্মতত্ত্বের কাছাকাছি পরিভাষা।
সাধারণভাবে ধর্ম সম্পর্কিত বা ধর্মহীন
বিভিন্ন বাতিল চিন্তাধারাকেও আক্বীদা বলা
যায়। যেমন – ইহুদীবাদ, বৌদ্ধবাদ, হিন্দুবাদ,
খৃষ্টবাদ, নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদি।
বিশুদ্ধ আক্বীদা বনাম ভ্রষ্ট আক্বীদা :
বিশুদ্ধ আক্বীদা বলতে বুঝান হয় ইসলামী
আক্বীদা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের
আক্বীদাকে যা আল্লাহ রাববুল আলামীন
নির্দেশিত ও রাসূল (ছা:) কর্তৃক প্রচারিত
অর্থাৎ যা পূর্ণাঙ্গভাবে কুরআন ও ছহীহ
হাদীছ দ্বারা সমর্থিত এবং সালাফে
ছালেহীনের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত। এতদ্ভিন্ন
পৃথিবীর যাবতীয় আক্বীদা ও বিশ্বাস
মিশ্রিত, কাল্পনিক, কুসংস্কারযুক্ত এবং
মিথ্যার উপর ভিত্তিশীল। যা নিশ্চিতভাবে
মানবজাতির গন্তব্যপথকে ভ্রষ্টতার দিকে
নিয়ে যায়।
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত :
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত ছয়টি। যথা:-
একঃ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস : আল্লাহ রাববুল
আলামীন নিজেকে যেভাবে মানবজগতের কাছে
উপস্থাপন করেছেন ঠিক সেভাবে তা
সত্তাগতভাবে, গুণগতভাবে এবং কর্মগতভাবে
সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করা।
দুইঃ ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস : তাদের
প্রত্যেকের ব্যাপারে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে
যেরূপ বর্ণনা এসেছে ঠিক সেভাবে বিশ্বাস
করা।
তিনঃ রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস : তাঁদের
নবুওয়াত ও তাদের চারিত্রিক পবিত্রতার
উপর নির্দ্বিধায় বিশ্বাস স্থাপন করা।
চারঃ আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস :
মূল চারটি কিতাব তথা যাবুর, ইঞ্জীল, তাওরাত
ও কুরআনসহ নাযিলকৃত অন্যান্য ছোট ছোট
কিতাব ও ছহীফাসমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা।
পাঁচঃ শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস : অর্থাৎ
মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে যাবতীয়
সংবাদসমূহ যা আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর
রাসূলের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে
দিয়েছেন, তার প্রতি বিশ্বাস রাখা।
ছয়ঃ তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস : অর্থাৎ যা
কিছু দুনিয়ার বুকে ঘটছে তা আল্লাহ রাববুল
আলামীনের জ্ঞাতসারেই ঘটছে এবং তিনি
সৃষ্টিজগত তৈরীর বহু পূর্বেই ভবিষ্যৎ
ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন- এই
বিশ্বাস জাগ্রত জ্ঞান সহকারে পোষণ করা।
আলোচিত ছয়টি বিষয়ের প্রতি পূর্ণাঙ্গভাবে
বিশ্বাস স্থাপন করা একজন মুসলমানের জন্য
অপরিহার্য। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ
হাদীছের বহু দলীল দ্বারা এগুলো প্রমাণিত
[বাকারা ১৭৭, ২৮৫; নিসা ১৩৬; ক্বামার ৪৯;
ফুরকান ২; মিশকাত হা/২ ‘ঈমান অধ্যায়’]
আক্বীদা ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য :
“আক্বীদা ” শব্দটি প্রায়ই ঈমান ও তাওহীদের
সাথে গুলিয়ে যায়। অস্বচ্ছ ধারণার
ফলশ্রুতিতে অনেকেই বলে ফেলেন, আক্বীদা আবার
কি? আক্বীদা বিশুদ্ধ করারই বা প্রয়োজন কেন?
ঈমান থাকলেই যথেষ্ট। ফলশ্রুতিতে দ্বীন
সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে এক বড় ধরনের
অপূর্ণতা সৃষ্টি হয়, যা প্রায়ই মানুষকে
পথভ্রষ্টতার দিকে ঠেলে দেয়। এজন্য ঈমান ও
আক্বীদার মধ্যকার সম্পর্ক ও পার্থক্য স্পষ্ট
হওয়া প্রয়োজন। নিম্নে বিষয়টি উপস্থাপন
করা হল:-
প্রথমত : ঈমান সমগ্র দ্বীনকেই অন্তর্ভুক্ত
করে। আর আক্বীদা দ্বীনের সর্বোচ্চ
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে।
দ্বিতীয়ত : আক্বীদার তুলনায় ঈমান আরো
ব্যাপক পরিভাষা। আক্বীদা হল কতিপয়
ভিত্তিমূলক বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের
নাম। অন্যদিকে ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয়;
বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের
মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য
করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দু’টি অংশ। একটি
হল অন্তরে স্বচ্ছ আক্বীদা পোষণ। আরেকটি
হল বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দু’টি
পরস্পরের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোন
একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে
দেয়।
তৃতীয়ত : আক্বীদা হল বিশ্বাসের মাথা এবং
ঈমান হল শরীর। অর্থাৎ আক্বীদা হল ঈমানের
মূলভিত্তি। আক্বীদা ব্যতীত ঈমানের
উপস্থিতি তেমনি অসম্ভব, যেমনভাবে ভিত্তি
ব্যতীত কাঠামো কল্পনা করা অসম্ভব। সুতরাং
ঈমান হল বাহ্যিক কাঠামো আর আক্বীদা হল
ঈমানের আভ্যন্তরীণ ভিত্তি।
চতুর্থত : আক্বীদার দৃঢ়তা যত বৃদ্ধি পায়
ঈমানও তত বৃদ্ধি পায় ও মজবুত হয়। আক্বীদায়
দুর্বলতা সৃষ্টি হলে ঈমানেরও দুর্বলতা সৃষ্টি
হয়, আমলের ক্ষেত্রেও সে দুর্বলতার প্রকাশ
পায়। যেমনভাবে রাসূল (ছা:) বলেন,
“মানুষের হৃদয়ের মধ্যে একটি গোশতপিন্ড
রয়েছে, যদি তা পরিশুদ্ধ হয় তবে সমস্ত শরীর
পরিশুদ্ধ থাকে, যদি তা কদর্যপূর্ণ হয় তবে
সমস্ত শরীরই কদর্যপূর্ণ হয়ে যায়”।
[মুত্তাফাক আলাইহে, মিশকাত ‘ক্রয়-বিক্রয়
অধ্যায়’ হা/২৭৬০]
পঞ্চমত : বিশুদ্ধ আক্বীদা বিশুদ্ধ ঈমানের
মাপকাঠি, যা বাহ্যিক আমলকেও বিশুদ্ধ করে
দেয়। যখন আক্বীদায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়
তখন ঈমানও বিভ্রান্তিপূর্ণ হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে
ছালেহীনের অনুসরণ করা হয় এজন্য যে, তারা
যে আক্বীদার অনুসারী ছিলেন তা ছিল বিশুদ্ধ
এবং কুরআন ও সুন্নাহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আর এজন্যই তারা ছিলেন খালিছ ঈমানের
অধিকারী এবং পৃথিবীর বুকে উত্থিত
সর্বোত্তম জাতি। অন্যদিকে মুরজিয়া,
খারেজী, কাদরিয়াসহ বিভিন্ন উপদলসমূহ
আক্বীদার বিভ্রান্তির কারণে তাদের ঈমান
যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তেমনি তাদের
কর্মকান্ড নীতিবিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এভাবেই
আক্বীদার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে
ঈমানের অবস্থানও পরিবর্তন হয়ে যায়।
ষষ্ঠত : সকল রাসূলের মূল দা‘ওয়াত ছিল
বিশুদ্ধ আক্বীদা তথা তাওহীদের প্রতি আহবান
জানানো। এক্ষেত্রে কারো অবস্থান ভিন্ন ছিল
না। কিন্তু আমল-আহকাম সমূহ যুগে যুগে
পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন ছালাত, ছিয়াম,
যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি আমলসমূহ পূর্ববর্তী
নবীদের যুগে ছিল না অথবা থাকলেও তার
বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্নরূপ। সুতরাং ঈমানের
দাবীসূচক আমলসমূহ কালের বিবর্তনে
পরিবর্তিত হলেও আক্বীদার বিষয়টি সৃষ্টির
অনাদিকাল থেকে অভিন্ন ও অপরিবর্তনীয়।
সঠিক আক্বীদা পোষণের অপরিহার্যতা :
একঃ সঠিক আক্বীদা পোষণ করা ইসলামের
যাবতীয় কর্তব্যসমূহের মাঝে সবচেয়ে বড়
কর্তব্য। রাসূল (ছা:) বলেন,
“আমি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য
আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা আল্লাহর উপর
ঈমান আনে এবং মুহাম্মাদকে রাসূল হিসাবে
স্বীকৃতি দেয়”। [ মুত্তাফাক আলাইহে, ‘ঈমান’
অধ্যায়, হা/১২]
দুইঃ ঈমান সাধারণভাবে সমস্ত দ্বীনে
ইসলামকেই অন্তর্ভূক্ত করে। আর আক্বীদা
দ্বীনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয় তথা
অন্তরের অবিমিশ্র স্বীকৃতি ও আমলে তা
যথার্থ বাস্তবায়নকে নিশ্চিত করে।
তিনঃ আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ তথা
শিরক এমন ধ্বংসাত্মক যে পাপী তওবা না করে
মারা গেলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরককারীকে
ক্ষমা করবেন না। এ ব্যতীত যে কোন পাপ
তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিতে
পারেন” [ সূরা নিসা ১১৬ ]
চারঃ আক্বীদা সঠিক থাকলে কোন পাপী
ব্যক্তি জাহান্নামে গেলেও চিরস্থায়ীভাবে
সেখানে থাকবে না। ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত
হয়েছে যে,
“কোন এক ব্যক্তি জীবনে কোনদিন সৎ আমল
না করায় তার পুত্রদের নির্দেশ দেয় তাকে
পুড়িয়ে দিয়ে ছাইভস্ম যমীনে ও পানিতে
ছড়িয়ে দিতে এই ভয়ে যে, আল্লাহ তাকে শাস্তি
দান করবেন। তার ধারণা ছিল এর মাধ্যমে সে
আল্লাহর কাছ থেকে পালিয়ে জাহান্নামের আগুন
খেকে পরিত্রাণ লাভ করবে। অতঃপর আল্লাহ
ছাইভস্মগুলো একত্রিত করে তাতে রূহ প্রদান
করলেন এবং তাকে তার এই কাজের হেতু জানতে
চাইলেন। অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের
অনুমতি দিলেন, যেহেতু সে আল্লাহকে ভয় করে
এবং আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে সুনিশ্চিত
বিশ্বাস রাখে” [বুখারী, হা/৩২৯৪ ‘কিতাবুল
আম্বিয়া’, বাব ন. ৫২]
অন্য হাদীছে এসেছে,
“যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণ ঈমান
অবশিষ্ট থাকবে তাকেও শেষ পর্যায়ে জান্নাতে
প্রবেশ করানো হবে [মুত্তাফাক আলাইহে,
মিশকাত হা/৫৫৭৯,‘কিয়ামতের অবস্থাসমূহ ও
সৃষ্টির পুনরুত্থান’ অধ্যায়, ‘হাউযে কাওছার ও
শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ]
অর্থাৎ সঠিক আক্বীদার কারণে একজন
সর্বোচ্চ পাপী ব্যক্তিও নির্দিষ্ট সময়
পর্যন্ত জাহান্নামে অবস্থানের পর জান্নাতে
প্রবেশ করতে সমর্থ হবে।
পাঁচঃ আক্বীদা সঠিক না থাকলে সৎ
আমলকারীকেও জাহান্নামে যেতে হবে। যেমন
একজন মুনাফিক বাহ্যিকভাবে ঈমান ও সৎ আমল
করার পরও অন্তরে কুফরী পোষণের কারণে সে
জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে
(নিসা ১৪৫) । একই কারণে একজন কাফির সারা
জীবন ভাল আমল করা সত্ত্বেও কিয়ামতের দিন
সে তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে না। কেননা
তার বিশ্বাস ছিল ভ্রান্তিপূর্ণ। আল্লাহ
বলেন,
‘সেদিন আমি তাদের কৃতকর্মের দিকে
মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলো বিক্ষিপ্ত
ধূলিকণায় রুপান্তরিত করব’ (ফুরকান ২৩)
ছয়ঃ কবরের জীবনে আক্বীদা সম্পর্কেই প্রশ্ন
করা হবে। অর্থাৎ তোমার রব কে? তোমার নবী
কে? তোমার দ্বীন কি? সেদিন আমল সংক্রান্ত
প্রশ্ন করা হবে না। এখান থেকেই দুনিয়া ও
আখিরাতে আক্বীদার গুরুত্ব অনুভব করা যায়।
সাতঃ ইসলামের কালেমা অর্থাৎ ‘কালেমা
তাওহীদ’ উচ্চারণ করা আল্লাহর নিকট
গ্রহণযোগ্য হতে পারে তখনই যখন তা সঠিক
বিশ্বাস প্রসূত হয়। নতুবা তা আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য হবে না। গ্রহণযোগ্য হওয়ার
শর্তসমূহ হল-
ক. কালেমা তাওহীদের অর্থ জানা।
খ. খুলূছিয়াতের সাথে উচ্চারণ করা।
গ. সত্যায়ন করা।
ঘ. অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা।
ঙ. কালেমা ও কালেমার অনুসারীদের প্রতি
মুহাববত পোষণ করা।
চ. আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপনের দাবীসমূহ পরিপূর্ণ আনুগত্য ও
নিষ্ঠার সাথে পালন করা।
ছ. কালেমার বিপরীত বিষয়কে প্রত্যাখ্যান
করা।
এ বিষয়গুলো প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরের
বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। যা স্পষ্টতঃই
নির্দেশ করে যে, বিশ্বাসের সঠিকতা ইসলামে
প্রবেশের মূল শর্ত। অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহীদ
যদি সঠিক বিশ্বাসের সাথে উচ্চারিত না হয়
তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ
বিষয়ে সকল আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
আটঃ ইসলামের একটি মৌলিক নীতি হল
‘ওয়ালা’ ও ‘বারা’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর জন্য
সম্পর্ক স্থাপন এবং আল্লাহর জন্যই
সম্পর্কচ্ছেদ’ যা আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট।
একজন কাফির, মুনাফিক, মুশরিকের প্রতি
আমরা যে বিমুখতা দেখাই তার কারণ হল তার
কুফরী এবং বিভ্রান্ত আক্বীদা। ঠিক
যেমনভাবে একজন মুমিনকে আমরা শর্তহীনভাবে
ভালবাসি তার ঈমান ও বিশুদ্ধ আক্বীদার
কারণে। এ কারণে একজন মুসলমান পাপাচারী
হলেও তার আক্বীদার কারণে তার সাথে সম্পর্ক
ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন এক
ব্যক্তিকে মদ্যপানের জন্য রাসূল (ছা:)-এর
সামনে বেত্রাঘাত করা হচ্ছিল। তখন একজন
ব্যক্তি বলল, আল্লাহ তোমার উপর লা‘নত
করুন। রাসূল (ছা:) তাকে বললেন, ‘এই
মদ্যপায়ীকে লা‘নত কর না, কেননা সে আল্লাহ ও
তার রাসূলকে ভালবাসে’ (মুসনাদে বায্যার
হা/২৬৯, ছনদ ছহীহ, দ্রঃ বুখারী হা/৬৭৮০)

নয়ঃ সমকালীন মুসলিম সমাজের দিকে তাকালে
আক্বীদার গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুভব করা যায়।
তাদের মাঝে যেমন বহু লোক কবর পূজায় ব্যস্ত,
তেমনি লিপ্ত হরহামেশা তাওহীদ বিরোধী ও
শিরকী কার্যকলাপে। কেউবা ব্যস্ত নিত্য-
নতুন ‘মাহদী’, ‘মাসীহ’ আবিষ্কারের
প্রচেষ্টায়। মূর্তিপূজার স্থলে এখন আবির্ভাব
হয়েছে শহীদ মিনার, স্তম্ভ, ভাষ্কর্য,
অগ্নিশিখা, প্রতিকৃতি ইত্যাদি শিরকী
প্রতিমূর্তি। এগুলো সবই সঠিক আক্বীদা
সম্পর্কে অজ্ঞতার দুর্ভাগ্যজনক ফলশ্রুতি।
অন্যদিকে আক্বীদায় দুর্বলতা থাকার কারণে
মুসলিম পন্ডিতদের চিন্তাধারা ও লেখনীর
মাঝে শারঈ‘ সূত্রগুলোর উপর নিজেদের জ্ঞানকে
অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রবণতা এবং বুদ্ধির
মুক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতার নামে কুফরী
বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গি
ইত্যাদি যুক্তিবাদী ও শৈথিল্যবাদী ধ্যান-
ধারণার জন্মও নিচ্ছে যার স্থায়ী প্রভাব
পড়ছে পাঠকদের উপর। এভাবেই আক্বীদা
সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব আমাদের
পথভ্রষ্ট করে ফেলছে প্রতিনিয়ত।
দশঃ বিভ্রান্ত মতাদর্শের অনুসারী মুনাফিক,
বিদ‘আতী এবং ভিন্ন ধর্মানুসারী ইহুদী,
খৃষ্টান, পৌত্তলিক ও নাস্তিক্যবাদীরা তাদের
আক্বীদা প্রচার ও প্রসারে বিভিন্নমুখী যে
তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তা প্রতিরোধ করা ও
তা থেকে আত্মরক্ষা করা প্রতিটি মুসলিমের
জন্য আবশ্যক কর্তব্য। এজন্য সঠিক আক্বীদা
সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতেই হবে। অন্যথায়
আপাতঃ দর্শনীয় পশ্চিমা বস্ত্তবাদী
চিন্তাধারার জোয়ার আমাদেরকে পথভ্রষ্ট
করতে মোটেও সময় নিবে না।
আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির ভয়াবহ ফলাফল
:
আলেম-ওলামাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল
মৌলিক আক্বীদাসমূহের বিষয়ে সাধারণ
মুসলমানদের সঠিক জ্ঞান দান করা এবং
সাধ্যমত সর্বত্র তার প্রসার ঘটান। কেননা যে
ব্যক্তি তার জীবনের ব্যষ্টিক, সামাজিক,
বুদ্ধিবৃত্তিক সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদার
প্রতিফলন ঘটাতে পারে, সে দুনিয়া ও আখিরাত
সর্বক্ষেত্রে সফল। অথচ দুঃখজনক হল,
আধুনিক যুগে বহু আলেমই আক্বীদাকে খুব
সংকীর্ণ অর্থে ধরে নিয়েছেন, যার প্রভাব
অবধারিতভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে পড়ছে।
ফলে আমলগত ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদার
উপস্থিতিকে নিশ্চিত না করে অনেকে কেবল
আক্বীদা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা রাখাই
যথেষ্ট মনে করেছে যেমনটি করেছিল
মু‘তাযিলাসহ আরো কিছু উপদল। অনেকে আবার
কেবল অন্যদের সাথে নিজেদের পার্থক্য
নিরূপণের ক্ষেত্রে, কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতা
লাভের মত উপলক্ষের সাথে আক্বীদাকে
সীমাবদ্ধ রেখেছে যেমন-খারেজীরা।
ফলশ্রুতিতে বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রে
বিধর্মীগোষ্ঠীর বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের
পথ ধরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ,
গণতন্ত্র ইত্যাদি নিত্য-নতুন শিরকী মতবাদ
সহজেই মুসলমানদের মাঝে গেড়ে বসতে সক্ষম
হয়েছে। সচেতনতার দাবীদার বহু মুসলমান এ
ধারণা রাখে যে, ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্মের
লোকেরাও জান্নাতে যাবে যদি তারা সৎ হয়।
‘আক্বীদা ও শরী‘আত ভিন্ন জিনিস, আক্বীদা
কেবলমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক
চিন্তাধারা; ব্যবহারিক জীবনে যার বিশেষ
কোন গুরুত্ব নেই, ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়;
রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষা ইত্যাদি সার্বজনীন
ক্ষেত্রে তার কোন ভূমিকা থাকা উচিৎ নয়’
ইত্যাদি কুফরী চিন্তাধারা লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে
অধিকাংশ মুসলমানের মানসজগতকে আচ্ছন্ন
করে ফেলেছে। বলা বাহুল্য, এ সমস্ত ধোঁয়াশার
প্রভাব এতই ক্ষতিকারক যে মানুষের
সত্যানুসন্ধিৎসু মনকে একেবারেই পঙ্গু করে
রাখে এবং মিথ্যার আধিপত্যকে মেনে নেওয়ার
শৈথিল্যবাদী মানসিকতা প্রস্ত্তত করে দেয়।
আর এসবই সঠিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুতির
অবধারিত ফলশ্রুতি। সংক্ষিপ্ত আলোচনার
শেষ প্রান্তে বলা যায় যে, আক্বীদা দ্বীনের
প্রাথমিক ও মৌলিক বিষয়। আক্বীদা সঠিক
হওয়ার উপরই ঈমান ও আমলের যথার্থতা
নির্ভরশীল। তাই সবকিছুর পূর্বে আক্বীদার
বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করাই একজন মুসলিমের
প্রথম ও অপরিহার্য দায়িত্ব। আজকের
পৃথিবীতে যখন সংঘাত হয়ে উঠেছে
বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক তখন একজন
মুসলমানের জন্য স্বীয় আক্বীদা সংরক্ষণের
প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক বেড়েছে। কেননা
হাযারো মাযহাব-মতাদর্শের দ্বিধা-সংকটের
ধ্বংসাত্মক, দুর্বিষহ জঞ্জালকে সযত্নে পাশ
কাটিয়ে সত্যের দিশা পাওয়া এবং সত্য ও
স্বচ্ছ দ্বীনের দিকে ফিরে আসা বিশুদ্ধ
আক্বীদা অবলম্বন ব্যতীত অসম্ভব। আল্লাহ
রাববুল আলামীন সকল মুসলিম ভাই-বোনকে
সঠিক আক্বীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত
স্বচ্ছ ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফীক দান
করুন ও যাবতীয় শিরকী ও জাহেলী
চিন্তাধারা থেকে আমাদেরকে হেফাযত করুন।
আমীন!!

একজন নারীর জান্নাত যে পথে

image

লেখক : সানাউল্লাহ বিন নজির আহমদ
সম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়ব
প্রেক্ষাপট
চারদিক থেকে ভেসে আসছে নির্দয় ও পাষণ্ড
স্বামী নামের হিংস্র পশুগুলোর আক্রমণের
শিকার অসহায় ও অবলা নারীর করুণ বিলাপ।
অহরহ ঘটছে দায়ের কোপ, লাথির আঘাত,
অ্যাসিডে ঝলসানো, আগুনে পুড়ানো, বিষ
প্রয়োগ এবং বালিশ চাপাসহ নানা দুঃসহ
কায়দায় নারী মৃত্যুর ঘটনা। কারণ তাদের
পাঠ্য সূচি থেকে ওঠে গেছে বিশ্ব নবির বাণী
“তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও।”
“তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর
নিকট উত্তম, আমি আমার স্ত্রীদের নিকট
উত্তম।”
অপর দিকে চারদিক বিষিয়ে তুলছে, তাগুতি
আইনের দোহাই পেড়ে পতিভক্তিশূন্য, মায়া-
ভালোবাসাহীন স্ত্রী নামের ডাইনীগুলোর
অবজ্ঞার পাত্র, অসহায় স্বামীর ক্ষোভ ও
ক্রোধে ভরা আর্তনাদ। কারণ, তারা রাসূলের
শিক্ষা থেকে বঞ্চিত “আল্লাহ ব্যতীত কাউকে
সেজদা করার অনুমতি থাকলে, আমি নারীদের
নির্দেশ দিতাম তোমরা স্বামীদের সেজদা
কর।” মান-অভিমানের ছলনা আর সামান্য তুচ্ছ
ঘটনার ফলে সাজানো-গোছানো, সুখের সংসার,
ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও তছনছ হয়ে যাচ্ছে
মুহূর্তে। ক্ষণিকেই বিস্মৃতির আস্তাকুরে
পর্যবসিত হচ্ছে পূর্বের সব মিষ্টি-মধুর
স্মৃতি, আনন্দঘন-মুহূর্ত। দায়ী কখনো স্বামী,
কখনো স্ত্রী। আরো দায়ী বর্তমান শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানসমূহে বিদ্যমান ধর্মহীন,
পাশ্চাত্যপন্থী সিলেবাস। যা তৈরি করেছে
ইংরেজ ও এদেশের এমন শিক্ষিত সমাজ, যারা
রঙে বর্ণে বাঙালী হলেও চিন্তা চেতনা ও মন-
মানসিকতায় ইংরেজ। মায়ের উদর থেকে অসহায়
অবস্থায় জন্ম গ্রহণকারী মানুষের তৈরি এ
সিলেবাস অসম্পূর্ণ, যা সর্বক্ষেত্রে সঠিক
দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ। যে সিলেবাসে
শিক্ষিত হয়ে স্ত্রী স্বামীর অধিকার
সম্পর্কে জানে না, স্বামীও থাকে স্ত্রীর
প্রাপ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। একজন অপর
জনের প্রতি থাকে বীতশ্রদ্ধ। ফলে পরস্পরের
মাঝে বিরাজ করে সমঝোতা ও সমন্বয়ের সংকট।
সম্পূরকের পরিবর্তে প্রতিপক্ষ হিসেবে
বিবেচনা করে একে অপরকে। আস্থা রাখতে পারছে
না কেউ কারো ওপর। তাই স্বনির্ভরতার জন্য
নারী-পুরুষ সবাই অসম প্রতিযোগিতার
ময়দানে ঝাঁপ দিচ্ছে। মূলত হয়ে পড়ছে
পরনির্ভর, খাবার-দাবার, পরিচ্ছন্নতা-
পবিত্রতা এবং সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রেও
ঝি-চাকর কিংবা শিশু আশ্রমের দ্বারস্থ হতে
হচ্ছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে… পক্ষান্তরে
আসল শিক্ষা ও মানব জাতির সঠিক পাথেয়
আল-কুরআনের দিকনির্দেশনা পরিত্যক্ত ও
সংকুচিত হয়ে আশ্রয় নিয়েছে কুঁড়ে ঘরে,
কর্তৃত্বশূন্য কিছু মানবের হৃদয়ে। তাই,
স্বভাবতই মানব জাতি অন্ধকারাচ্ছন্ন, সঠিক
পথ থেকে বিচ্যুত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় নিজদের
সমস্যা নিয়ে। দোদুল্যমান স্বীয় সিদ্ধান্তের
ব্যাপারে। আমাদের প্রয়াস এ ক্রান্তিকালে
নারী-পুরুষের বিশেষ অধ্যায়, তথা দাম্পত্য
জীবনের জন্য কুরআন-হাদিস সিঞ্চিত একটি
আলোকবর্তিকা পেশ করা, যা দাম্পত্য জীবনে
বিশ্বস্ততা ও সহনশীলতার আবহ সৃষ্টি করবে।
কলহ, অসহিষ্ণুতা ও অশান্তি বিদায় দেবে
চিরতরে। উপহার দেবে সুখ ও শান্তিময়
অভিভাবকপূর্ণ নিরাপদ পরিবার।
ভূমিকা
বইটি কুরআন, হাদিস, আদর্শ মনীষীগণের
উপদেশ এবং কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের বাণী ও
অভিজ্ঞতার আলোকে সংকলন করা হয়েছে।
বইটিতে মূলত নারীদের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব
পেয়েছে, অবশ্য পুরুষদের প্রসঙ্গও আলোচিত
হয়েছে, তবে তা প্রাসঙ্গিকভাবে। যে নারী-
পুরুষ আল্লাহকে পেতে চায়, আখেরাতে সফলতা
অর্জন করতে চায়, তাদের জন্য বইটি পাথেয়
হবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী। আল্লাহ তা’আলা
বলেন :
ﺎَﻣَﻭ ٍﻦِﻣْﺆُﻤِﻟ َﻥﺎَﻛ ﺎَﻟَﻭ ٍﺔَﻨِﻣْﺆُﻣ ﺍَﺫِﺇ ﻰَﻀَﻗ
ُﻪُﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﺍًﺮْﻣَﺃ ْﻥَﺃ َﻥﻮُﻜَﻳ ُﻢُﻬَﻟ
ُﺓَﺮَﻴِﺨْﻟﺍ ْﻦِﻣ ْﻢِﻫِﺮْﻣَﺃ ْﻦَﻣَﻭ ِﺺْﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ
ُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ْﺪَﻘَﻓ َّﻞَﺿ ﺎًﻨﻴِﺒُﻣ ﺎًﻟﺎَﻠَﺿ ﴿
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ:৩৬﴾
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে
কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের
ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার
থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য
করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”
রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻞﻛ ﻲﺘﻣﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻥﻮﻠﺧﺪﻳ ﻻﺇ ﻦﻣ ،ﻰﺑﺃ
: ﺍﻮﻟﺎﻗ ﻝﻮﺳﺭ ﺎﻳ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﻣﻭ ؟ﻰﺑﺄﻳ ﻝﺎﻗ
: ﻲﻨﻋﺎﻃﺃ ﻦﻣ ﻞﺧﺩ ،ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻣﻭ ﻲﻧﺎﺼﻋ
ﺪﻘﻓ .ﻰﺑﺃ ،ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﻩﺍﻭﺭ ﺢﺘﻓ ﻱﺭﺎﺒﻟﺍ
(১৩/২৪৯)
“আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে,
তবে যে অস্বীকার করবে। সাহাবারা প্রশ্ন
করলেন, কে অস্বীকার করবে হে আল্লাহর রাসূল?
তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করল, সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য
হল, সে অস্বীকার করল।”
পরিশেষে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা এ বইটি
দ্বারা আমাকে এবং সকল মুসলমানকে উপকৃত
হওয়ার তাওফিক দান করুন। বইটি তার
সন্তুষ্টি অর্জনের অসিলা হিসেবে কবুল করুন।
সে দিনের সঞ্চয় হিসেবে রক্ষিত রাখুন, যে
দিন কোন সন্তান, কোন সম্পদ উপকারে আসবে
না, শুধু সুস্থ অন্তকরণ ছাড়া। আমাদের সর্বশেষ
ঘোষণা সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য,
যিনি জগতের প্রতিপালক।
নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব :
আল্লাহ তাআলা বলেন :
َﻥﻮُﻣﺍَّﻮَﻗ ُﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ﺎَﻤِﺑ َﻞَّﻀَﻓ
ْﻢُﻬَﻀْﻌَﺑ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ٍﺾْﻌَﺑ ﺎَﻤِﺑَﻭ ﺍﻮُﻘَﻔْﻧَﺃ ْﻦِﻣ
ْﻢِﻬِﻟﺍَﻮْﻣَﺃ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ﴿ :৩৪﴾
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে
আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব
দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে
ব্যয় করে।”
হাফেজ ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে
বলেন, “পুরুষ নারীর তত্ত্বাবধায়ক। অর্থাৎ সে
তার গার্জিয়ান, অভিভাবক, তার উপর
কর্তৃত্বকারী ও তাকে সংশোধনকারী, যদি সে
বিপদগামী বা লাইনচ্যুত হয়।”
এ ব্যাখ্যা রাসূলের হাদিস দ্বারাও সমর্থিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, আমি যদি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সেজদা
করার নির্দেশ দিতাম, তবে নারীদের আদেশ
করতাম স্বামীদের সেজদার করার জন্য। সে
আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার
জীবন, নারী তার স্বামীর সব হক আদায় করা
ব্যতীত, আল্লাহর হক আদায়কারী হিসেবে গণ্য
হবে না। এমনকি স্বামী যদি তাকে বাচ্চা
প্রসবস্থান থেকে তলব করে, সে তাকে নিষেধ
করবে না।”
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺐﻴﻐﻠﻟ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
“সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা
লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারীনী ঐ
বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন।”
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এ আয়াতের তাফসিরে
বলেন, ‘সুতরাং নেককার নারী সে, যে
আনুগত্যশীল। অর্থাৎ যে নারী সর্বদা স্বামীর
আনুগত্য করে… নারীর জন্য আল্লাহ এবং তার
রাসূলের হকের পর স্বামীর হকের মত অবশ্য
কর্তব্য কোন হক নেই।’
হে নারীগণ, তোমরা এর প্রতি সজাগ দৃষ্টি
রাখ। বিশেষ করে সে সকল নারী, যারা
সীমালঙ্ঘনে অভ্যস্ত, স্বেচ্ছাচার প্রিয়,
স্বামীর অবাধ্য ও পুরুষের আকৃতি ধারণ করে।
স্বাধীনতা ও নারী অধিকারের নামে কোন
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, যখন ইচ্ছা
বাইরে যাচ্ছে আর ঘরে ফিরছে। যখন যা মন
চাচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। তারাই দুনিয়া এবং
দুনিয়ার চাকচিক্যের বিনিময়ে আখেরাত
বিক্রি করে দিয়েছে। হে বোন, সতর্ক হও,
চৈতন্যতায় ফিরে আস, তাদের পথ ও সঙ্গ ত্যাগ
করে। তোমার পশ্চাতে এমন দিন ধাবমান যার
বিভীষিকা বাচ্চাদের পৌঁছে দিবে বার্ধক্যে।
নারীদের উপর পুরুষের কর্তৃত্বের কারণ :
পুরুষরা নারীদের অভিভাবক ও তাদের উপর
কর্তৃত্বশীল। যার মূল কারণ উভয়ের শারীরিক
গঠন, প্রাকৃতিক স্বভাব, যোগ্যতা ও শক্তির
পার্থক্য। আল্লাহ তা’আলা নারী-পুরুষকে ভিন্ন
ভিন্ন উদ্দেশ্য এবং ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও অবয়বে
সৃষ্টি করেছেন।
দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ নেককার স্ত্রী :
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“পুরো দুনিয়া ভোগের সামগ্রী, আর সবচে’
উপভোগ্য সম্পদ হল নেককার নারী।”
বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চারটি গুণ
দেখে নারীদের বিবাহ করা হয়Ñ সম্পদ, বংশ
মর্যাদা, সৌন্দর্য ও দীনদারি। তবে
ধার্মিকতার দিক প্রাধান্য দিয়েই তুমি
কামিয়াব হও নয়তো তোমার হাত ধুলি ধুসরিত
হবে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “চারটি বস্তু শুভ লক্ষণ।
যথা : ১. নেককার নারী, ২. প্রশস্ত ঘর, ৩.
সৎ প্রতিবেশী, ৪. সহজ প্রকৃতির
আনুগত্যশীল-পোষ্য বাহন। পক্ষান্তরে অপর
চারটি বস্তু কুলক্ষণা। তার মধ্যে একজন
বদকার নারী।”
এসব আয়াত ও হাদিস পুরুষদের যেমন নেককার
নারী গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি
উৎসাহ দেয় নারীদেরকে আদর্শ নারীর সকল
গুনাবলী অর্জনের প্রতি। যাতে তারা আল্লাহর
কাছে পছন্দনীয় নেককার নারী হিসেবে গণ্য
হতে পারে।
প্রিয় মুসলিম বোন, তোমার সামনে সে
উদ্দেশেই নেককার নারীদের গুণাবলী পেশ করা
হচ্ছে। যা চয়ন করা হয়েছে কুরআন, হাদিস ও
পথিকৃৎ আদর্শবান নেককার আলেমদের বাণী ও
উপদেশ থেকে। তুমি এগুলো শিখার ব্রত গ্রহণ
কর। সঠিক রূপে এর অনুশীলন আরম্ভ কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “ইলম আসে শিক্ষার মাধ্যমে। শিষ্টচার
আসে সহনশীলতার মাধ্যমে। যে কল্যাণ
অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তাকে সুপথ দেখান।”
নেককার নারীর গুণাবলি :
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺐﻴﻐﻠﻟ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
ইবনে কাসির রহ. লিখেন,ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ
শব্দের অর্থ নেককার নারী, ইবনে আব্বাস ও
অন্যান্য মুফাসসিরের মতে ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ শব্দের
অর্থ স্বামীদের আনুগত্যশীল নারী, আল্লামা
সুদ্দি ও অন্যান্য মুফাসসির বলেন ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺐﻴﻐﻠﻟ শব্দের অর্থ স্বামীর অনুপস্থিতিতে
নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ রক্ষাকারী
নারী।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,
রমজানের রোজা রাখে, আপন লজ্জাস্থান হেফাজত
করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাকে বলা হবে,
যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি জান্নাতে প্রবেশ
কর।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “তোমাদের সেসব স্ত্রী জান্নাতি, যারা
মমতাময়ী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, পতি-
সঙ্গ প্রিয়Ñ যে স্বামী গোস্বা করলে সে তার
হাতে হাত রেখে বলে, আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া
পর্যন্ত, আমি দুনিয়ার কোন স্বাদ গ্রহণ করব
না।”
সুনানে নাসায়িতে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একদা জিজ্ঞাসা করা
হল, হে আল্লাহর রাসূল, কোন নারী সব চেয়ে
ভাল? তিনি বললেন, “যে নারী স্বামীকে
আনন্দিত করে, যখন স্বামী তার দিকে দৃষ্টি
দেয়। যে নারী স্বামীর আনুগত্য করে, যখন
স্বামী তাকে নির্দেশ দেয়, যে নারী স্বামীর
সম্পদ ও নিজ নফসের ব্যাপারে, এমন কোনো
কর্মে লিপ্ত হয় না, যা স্বামীর অপছন্দ।”
হে মুসলিম নারী, নিজকে একবার পরখ কর,
ভেবে দেখ এর সাথে তোমার মিল আছে কতটুকু।
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার পথ অনুসরণ কর।
দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের শপথ
গ্রহণ কর। নিজ স্বামী ও সন্তানের ব্যাপারে
যতœশীল হও।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জনৈক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার কি
স্বামী আছে? সে বলল হ্যাঁ, রাসূল বললেন, তুমি
তার কাছে কেমন? সে বলল, আমি তার সন্তুষ্টি
অর্জনে কোন ত্র“টি করি না, তবে আমার
সাধ্যের বাইরে হলে ভিন্ন কথা। রাসূল বললেন,
লক্ষ্য রেখ, সে-ই তোমার জান্নাত বা
জাহান্নাম।”
উপরের আলোচনার আলোকে নেককার নারীর
গুণাবলি :
১. নেককার : ভাল কাজ সম্পাদনকারী ও নিজ
রবের হক আদায়কারী নারী।
২. আনুগত্যশীল : বৈধ কাজে স্বামীর
আনুগত্যশীল নারী।
৩. সতী : নিজ নফসের হেফাজতকারী নারী,
বিশেষ করে স্বামীর অবর্তমানে।
৪. হেফাজতকারী : স্বামীর সম্পদ ও নিজ
সন্তান হেফাজতকারী নারী।
৫. আগ্রহী : স্বামীর পছন্দের পোশাক ও সাজ
গ্রহণে আগ্রহী নারী।
৬. সচেষ্ট : স্বামীর গোস্বা নিবারণে সচেষ্ট
নারী। কারণ হাদিসে এসেছে, স্বামী নারীর
জান্নাত বা জাহান্নাম।
৭. সচেতন : স্বামীর চাহিদার প্রতি সচেতন
নারী। স্বামীর বাসনা পূর্ণকারী।
যে নারীর মধ্যে এসব গুণ বিদ্যমান, সে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ভাষ্য মতে জান্নাতী। তিনি
বলেছেন, “যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,
রমজানের রোজা রাখে, নিজ সতীত্ব হেফাজত
করে ও স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, যে
দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।”
আনুগত্যপরায়ন নেককার নারীর উদাহরণ :
শাবি বর্ণনা করেন, একদিন আমাকে শুরাই বলেন,
“শাবি, তুমি তামিম বংশের মেয়েদের বিয়ে কর।
তামিম বংশের মেয়েরা খুব বুদ্ধিমতী। আমি
বললাম, আপনি কীভাবে জানেন তারা বুদ্ধিমতী?
তিনি বললেন, আমি কোনো জানাজা থেকে বাড়ি
ফিরছিলাম, পথের পাশেই ছিল তাদের কারো
বাড়ি। লক্ষ্য করলাম, জনৈক বৃদ্ধ মহিলা
একটি ঘরের দরজায় বসে আছে, তার পাশেই
রয়েছে সুন্দরী এক যুবতী। মনে হল, এমন
রূপসী মেয়ে আমি আর কখনো দেখিনি। আমাকে
দেখে মেয়েটি কেটে পড়ল। আমি পানি চাইলাম,
অথচ আমার তৃষ্ণা ছিল না। সে বলল, তুমি কেমন
পানি পছন্দ কর, আমি বললাম যা উপস্থিত
আছে। মহিলা মেয়েকে ডেকে বলল, দুধ নিয়ে আস,
মনে হচ্ছে সে বহিরাগত। আমি বললাম, এ মেয়ে
কে? সে বলল, জারিরের মেয়ে জয়নব। হানজালা
বংশের ও। বললাম, বিবাহিতা না অবিবাহিতা?
সে বলল, না, অবিবাহিতা। আমি বললাম, আমার
কাছে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। সে বলল, তুমি যদি
তার কুফু হও, দিতে পারি। আমি বাড়িতে পৌঁছে
দুপুরে সামান্য বিশ্রাম নিতে শোবার ঘরে
গেলাম, কোনো মতে চোখে ঘুম ধরল না। জোহর
নামাজ পড়লাম। অতঃপর আমার গণ্যমান্য
কয়েকজন বন্ধু, যেমনÑ আলকামা, আসওয়াদ,
মুসাইয়্যেব এবং মুসা ইবনে আরফাতাকে সাথে করে
মেয়ের চাচার বাড়িতে গেলাম। সে আমাদের
সাদরে গ্রহণ করল। অতঃপর বলল, আবু
উমাইয়্যা, কি উদ্দেশ্যে আসা? আমি বললাম,
আপনার ভাতিজি জয়নবের উদ্দেশ্যে। সে বলল,
তোমার ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ নেই! অতঃপর
সে আমার কাছে তাকে বিয়ে দিল। মেয়েটি আমার
জালে আবদ্ধ হয়ে খুবই লজ্জা বোধ করল। আমি
বললাম, আমি তামিম বংশের নারীদের কী
সর্বনাশ করেছি? তারা কেন আমার উপর
অসন্তুষ্ট? পরক্ষণই তাদের কঠোর স্বভাবের
কথা আমার মনে পড়ল। ভাবলাম, তালাক দিয়ে
দেব। পুনরায় ভাবলাম, না, আমিই তাকে আপন
করে নিব। যদি আমার মনপুত হয়, ভাল,
অন্যথায় তালাকই দিয়ে দেব। শাবি, সে রাতের
মুহূর্তগুলো এতো আনন্দের ছিল, যা ভোগ না
করলে অনুধাবন করার জো নেই। খুবই চমৎকার
ছিল সে সময়টা, যখন তামিম বংশের মেয়েরা
তাকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমার মনে
পড়ল, রাসূলের সুন্নতের কথা। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“স্ত্রী প্রথম ঘরে প্রবেশ করলে স্বামীর
কর্তব্য, দু’রাকাত নামাজ পড়া, স্ত্রীর মধ্যে
সুপ্ত মঙ্গল কামনা করা এবং তার মধ্যে লুকিত
অমঙ্গল থেকে পানাহ চাওয়া।” আমি নামাজ
শেষে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমার সাথে
নামাজ পড়ছে। যখন নামাজ শেষ করলাম,
মেয়েরা আমার কাছে উপস্থিত হল। আমার কাপড়
পালটে সুগন্ধি মাখা কম্বল আমার উপর টেনে
দিল। যখন সবাই চলে গেল, আমি তার
নিকটবর্তী হলাম ও তার শরীরের এক পাশে
হাত বাড়ালাম। সে বলল, আবু উমাইয়্যা, রাখ।
অতঃপর বলল,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ﻭ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃ
ﻲﻠﺻﺃﻭ ﻰﻠﻋ ﺪﻤﺤﻣ ﻪﻟﺁﻭ …
“আমি একজন অভিজ্ঞতা শূন্য অপরিচিত
নারী। তোমার পছন্দ অপছন্দ আর স্বভাব
রীতির ব্যাপারে কিছুই জানি না আমি। আরো
বলল, তোমার বংশীয় একজন নারী তোমার
বিবাহে আবদ্ধ ছিল, আমার বংশেও সে রূপ
বিবাহিতা নারী বিদ্যমান আছে, কিন্তু
আল্লাহর সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত। তুমি আমার
মালিক হয়েছ, এখন আল্লাহর নির্দেশ
মোতাবেক আমার সাথে ব্যবহার কর। হয়তো
ভালভাবে রাখ, নায়তো সুন্দরভাবে আমাকে বিদায়
দাও। এটাই আমার কথা, আল্লাহর নিকট তোমার
ও আমার জন্য মাগফিরাত কামনা করছি।”
শুরাই বলল, শাবি, সে মুহূর্তেও আমি মেয়েটির
কারণে খুতবা দিতে বাধ্য হয়েছি। অতঃপর আমি
বললাম,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃﻭ ﻲﻠﺻﺃﻭ
ﻲﺒﻨﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﻪﻟﺁﻭ ،ﻢﻠﺳﺃﻭ ﺪﻌﺑﻭ …
তুমি এমন কিছু কথা বলেছ, যদি তার উপর
প্রতিষ্ঠিত থাক, তোমার কপাল ভাল। আর যদি
পরিত্যাগ কর, তোমার কপাল মন্দ। আমার
পছন্দ… আমার অপছন্দ… আমরা দু’জনে একজন।
আমার মধ্যে ভাল দেখলে প্রচার করবে, আর মন্দ
কিছু দৃষ্টিগোচর হলে গোপন রাখবে।
সে আরো কিছু কথা বলেছে, যা আমি ভুলে গেছি।
সে বলেছে, আমার আত্মীয় স্বজনের আসা-যাওয়া
তুমি কোন দৃষ্টিতে দেখ? আমি বললাম, ঘনঘন
আসা-যাওয়ার মাধ্যমে বিরক্ত করা পছন্দ করি
না। সে বলল, তুমি পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে
যার ব্যাপারে অনুমতি দেবে, তাকে আমি ঘরে
প্রবেশ করার অনুমতি দেব। যার ব্যাপারে
নিষেধ করবে, তাকে আমি অনুমতি দেব না। আমি
বললাম, এরা ভাল, ওরা ভাল না।
শুরাই বলল, শাবি, আমার জীবনের সব চেয়ে
আনন্দদায়ক অধ্যায় হচ্ছে, সে রাতের
মুহূর্তগুলো। পূর্ণ একটি বছর গত হল, আমি
তার মধ্যে আপত্তিকর কিছু দেখিনি।
একদিনের ঘটনা, ‘দারুল কাজা’ থেকে বাড়ি ফিরে
দেখি, ঘরের ভেতর একজন মহিলা তাকে উপদেশ
দিচ্ছে; আদেশ দিচ্ছে আর নিষেধ করছে। আমি
বললাম সে কে? বলল, তোমার শ্বশুর বাড়ির অমুক
বৃদ্ধ। আমার অন্তরের সন্দেহ দূর হল। আমি
বসার পর, মহিলা আমার সামনে এসে হাজির
হল। বলল, আসসালামু আলাইকুম, আবু উমাইয়্যা।
আমি বললাম, ওয়া লাইকুমুসসালাম, আপনি কে?
বলল, আমি অমুক; তোমার শ্বশুর বাড়ির লোক।
বললাম, আল্লাহ তোমাকে কবুল করুন। সে বলল,
তোমার স্ত্রী কেমন পেয়েছ? বললাম, খুব
সুন্দর। বলল, আবু উমাইয়্যা, নারীরা দু’সময়
অহংকারের শিকার হয়। পুত্র সন্তান প্রসব
করলে আর স্বামীর কাছে খুব প্রিয় হলে। কোন
ব্যাপারে তোমার সন্দেহ হলে লাঠি দিয়ে সোজা
করে দেবে। মনে রাখবে, পুরুষের ঘরে আহ্লাদি
নারীর ন্যায় খারাপ আর কোন বস্তু নেই।
বললাম, তুমি তাকে সুন্দর আদব শিক্ষা দিয়েছ,
ভাল জিনিসের অভ্যাস গড়ে দিয়েছ তার মধ্যে।
সে বলল, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আসা-যাওয়া
তোমার কেমন লাগে? বললাম, যখন ইচ্ছে তারা
আসতে পারে। শুরাই বলল, অতঃপর সে মহিলা
প্রতি বছর একবার করে আসত আর আমাকে উপদেশ
দিয়ে যেত। সে মেয়েটি বিশ বছর আমার সংসার
করেছে, একবার ব্যতীত কখনো তিরস্কার করার
প্রয়োজন হয়নি। তবে ভুল সেবার আমারই
ছিল।
ঘটনাটি এমন, ফজরের দু-রাকাত সুন্নত পড়ে
আমি ঘরে বসে আছি, মুয়াজ্জিন একামত দিতে
শুরু করল। আমি তখন গ্রামের মসজিদের
ইমাম। দেখলাম, একটা বিচ্ছু হাঁটাচলা করছে,
আমি একটা পাত্র উঠিয়ে তার উপর রেখে
দিলাম। বললাম, জয়নাব, আমার আসা পর্যন্ত
তুমি নড়াচড়া করবে না। শাবি, তুমি যদি সে
মুহূর্তটা দেখতে! নামাজ শেষে ঘরে ফিরে দেখি,
বিচ্ছু সেখান থেকে বের হয়ে তাকে দংশন
করেছে। আমি তৎক্ষণাৎ লবণ ও সাক্ত তলব
করে, তার আঙুলের উপর মালিশ করলাম। সূরায়ে
ফাতেহা, সূরায়ে নাস ও সূরায়ে ফালাক পড়ে তার
উপর দম করলাম।”
দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য :
১. স্বামীর অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “তিনজন ব্যক্তির নামাজ তাদের
মাথার উপরে উঠে না। (ক). পলাতক গোলামের
নামাজ, যতক্ষণ না সে মনিবের নিকট ফিরে
আসে। (খ). সে নারীর নামাজ, যে নিজ স্বামীকে
রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে। (গ). সে
আমিরের নামাজ, যার উপর তার অধীনরা
অসন্তুষ্ট।”
২. স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
ইমাম আহমদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা
করেন, “দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট
দেয়, জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে
নারীকে লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না,
আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন। সে তো তোমার
কাছে ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই
তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”
৩. স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “আল্লাহ তা’আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি
দেবেন না, যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার
করে না, অথচ সে স্বামী ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ
নয়।” ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি
জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু আজকের
ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন দেখিনি।
তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী দেখেছি।
তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন? তিনি বললেন,
তাদের না শুকরির কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল,
তারা কি আল্লাহর না শুকরি করে? বললেন, না,
তারা স্বামীর না শুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা
স্বীকার করে না। তুমি যদি তাদের কারো উপর
যুগ-যুগ ধরে ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন
তোমার কাছে তার বাসনা পূণ না হলে সে বলবে,
আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলাম
না।”
৪. কারণ ছাড়া তালাক তলব না করা।
ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ প্রমুখগণ সওবান
রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন, “যে
নারী কোন কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে তালাক
তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত
হারাম।”
৫. অবৈধ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য না করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য
করা যাবে না।” এখানে নারীদের শয়তানের
একটি ধোঁকা থেকে সতর্ক করছি, দোয়া করি
আল্লাহ তাদের সুপথ দান করুন। কারণ দেখা যায়
স্বামী যখন তাকে কোন জিনিসের হুকুম করে,
সে এ হাদিসের দোহাই দিয়ে বলে এটা হারাম,
এটা নাজায়েজ, এটা জরুরি নয়। উদ্দেশ্য
স্বামীর নির্দেশ উপেক্ষা করা। আমি তাদেরকে
আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীটি স্মরণ করিয়ে
দিচ্ছি, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যারা আল্লাহর
উপর মিথ্যা আরোপ করেছে, কিয়ামতের দিন
তাদের চেহারা কালো দেখবেন।” হাসান বসরি
রহ. বলেন, “হালাল ও হারামের ব্যাপারে আল্লাহ
ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা বলা নিরেট
কুফরি।”
৬. স্বামীর বর্তমানে তার অনুমতি ব্যতীত
রোজা না রাখা। সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন নারী স্বামীর
উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত রোজা
রাখবে না।” যেহেতু স্ত্রীর রোজার কারণে
স্বামী নিজ প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত
থাকে, যা কখনো গুনার কারণ হতে পারে। এখানে
রোজা দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই নফল রোজা
উদ্দেশ্য। কারণ ফরজ রোজা আল্লাহর অধিকার,
আল্লাহর অধিকার স্বামীর অধিকারের চেয়ে
বড়।
৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়া : রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন
পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের বিছানায়
ডাকে, আর স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না দেয়,
এভাবেই স্বামী রাত যাপন করে, সে স্ত্রীর
উপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত অভিসম্পাত
করে।”
৮. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা প্রকাশ
না করা : আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “কিছু পুরুষ আছে যারা নিজ স্ত্রীর সাথে
কৃত আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কিছু
নারীও আছে যারা আপন স্বামীর গোপন
ব্যাপারগুলো প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে
সবাই চুপ হয়ে গেল, কেউ কোন শব্দ করল না।
আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-
পুরুষেরা এমন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন
করো না। এটা তো শয়তানের মতো যে রাস্তার
মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল, আর অমনি
তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন তাদের দিকে
তাকিয়ে আছে!”
৯. স্বামীর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও বিবস্ত্র না
হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, যে নারী স্বামীর ঘর
ব্যতীত অন্য কোথাও বিবস্ত্র হল, আল্লাহ তার
গোপনীয়তা নষ্ট করে দেবেন।”
১০. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে
ঢুকতে না দেয়া। বুখারিতে আবু হুরায়রা থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “নারী তার স্বামীর
উপস্থিতিতে অনুমিত ছাড়া রোজা রাখবে না
এবং তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে কাউকে প্রবেশ
করতে দেবে না।”
১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না
হওয়া। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা ঘরে
অবস্থান কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায়
বলেন, “তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন
প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।”
নারীর জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব,
তেমন ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি
ওয়াজিব। স্বামীর খেদমতের উদাহরণ: মুসলিম
বোন! স্বামীর খেদমতের ব্যাপারে একজন
সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার উল্লেখ
যথেষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। তারা কীভাবে
স্বামীর খেদমত করেছেন, স্বামীর কাজে
সহযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছেনÑ ইত্যাদি
বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ উপস্থাপনার
পরিবর্তে একটি উদাহরণই যথেষ্ট হবে, আমার
দৃঢ় বিশ্বাস। আসমা বিনতে আবু বকর থেকে
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের
আমাকে যখন বিয়ে করে, দুনিয়াতে তখন তার
ব্যবহারের ঘোড়া ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর
কিছু ছিল না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার
ঘাস সংগ্রহ করতাম, ঘোড়া মাঠে চরাতাম, পানি
পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম, পানি
পান করাতাম, পানির বালতিতে দানা ভিজাতাম।
তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম দিতাম।
আমি ভাল করে রুটি বানাতে জানতাম না,
আনসারদের কিছু মেয়েরা আমাকে এ জন্য সাহায্য
করত। তারা আমার প্রকৃত বান্ধবী ছিল। সে
বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর দান করা জুবায়েরের জমি থেকে
মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায় এক মাইল
দূরত্বে ছিল।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি নারীরা
পুরুষের অধিকার সম্পর্কে জানত, দুপুর কিংবা
রাতের খাবারের সময় হলে, তাদের খানা না
দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত না।”
বিয়ের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উম্মে আকেলার
উপদেশ: আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি বড় হয়েছ,
যারা তোমার আপন জন ছিল, তাদের ছেড়ে একজন
অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ, যার স্বভাব
চরিত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জান না। তুমি
যদি তার দাসী হতে পার, সে তোমার দাস হবে।
আর দশটি বিষয়ের প্রতি খুব নজর রাখবে।
১-২. অল্পতে তুষ্টি থাকবে। তার তার অনুসরণ
করবে ও তার সাথে বিনয়ী থাকবে।
৩-৪. তার চোখ ও নাকের আবেদন পূর্ণ করবে।
তার অপছন্দ হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয়
গন্ধ শরীরে রাখবে না।
৫-৬. তার ঘুম ও খাবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি
রাখবে। মনে রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার
উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার কারণে
বিষণœতার সৃষ্টি হয়।
৭-৮. তার সম্পদ হেফাজত করবে, তার সন্তান ও
বৃদ্ধ আত্মীয়দের সেবা করবে। মনে রাখবে, সব
কিছুর মূল হচ্ছে সম্পদের সঠিক ব্যবহার,
সন্তানদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।
পুরুষদের উদ্দেশে দুটি কথা :
উপরের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ
তাআলার কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের আলোকে
মুসলমান বোনদের জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা
প্রদান করার চেষ্টা করেছি মাত্র। তবে এর
অর্থ এ নয় যে, কোন স্ত্রী এ সবগুণের
বিপরীত করলে, তাকে শান্তি দেওয়া স্বামীর
জন্য হালাল হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন মোমিন
ব্যক্তি কোন মোমিন নারীকে বিবাহ বন্ধন
থেকে বিচ্ছিন্ন করবে না, তার একটি অভ্যাস
মন্দ হলে, অপর আচরণে তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে
যাবে।” তুমি যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ অথবা
তার কোন মন্দ স্বভাব প্রত্যক্ষ কর, তবে
তোমার সর্বপ্রথম দায়িত্ব তাকে উপদেশ দেয়া,
নসিহত করা, আল্লাহ এবং তার শাস্তির কথা
স্মরণ করিয়ে দেয়া। তার পরেও যদি সে অনুগত
না হয়, বদ অভ্যাস ত্যাগ না করে, তবে
প্রাথমিক পর্যায়ে তার থেকে বিছানা আলাদা
করে নাও। খবরদার! ঘর থেকে বের করবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও স্ত্রীকে
পরিত্যাগ কর না।” এতে যদি সে শুধরে যায়,
ভাল। অন্যথায় তাকে আবার নসিহত কর, তার
থেকে বিছানা আলাদা কর। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“যে নারীদের নাফরমানির আশঙ্কা কর, তাদের
উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর, প্রহার
কর, যদি তোমাদের আনুগত্য করে, তবে অন্য
কোন পথ অনুসন্ধান কর না।”
“তাদের প্রহার কর” এর ব্যাখ্যায় ইবনে
কাসির রহ. বলেন, যদি তাদের উপদেশ দেওয়া ও
তাদের থেকে বিছানা আলাদা করার পরও তারা
নিজ অবস্থান থেকে সরে না আসে, তখন তোমাদের
অধিকার রয়েছে তাদের হালকা প্রহার করা, যেন
শরীরের কোন স্থানে দাগ না পড়ে। জাবের
রাদিআল্লাহ আনহু থেকে সহিহ মুসলিমে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে বলেছেন, “তোমরা
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, তারা
তোমাদের কাছে মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।
তোমরা তাদের মালিক নও, আবার তারা
তোমাদের থেকে মুক্তও নয়। তাদের কর্তব্য,
তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে জায়গা না দেয়া,
যাদের তোমরা অপছন্দ কর। যদি এর বিপরীত
করে, এমনভাবে তাদের প্রহার কর, যাতে
শরীরের কোন স্থানে দাগ না পড়ে। তোমাদের
কর্তব্য সাধ্য মোতাবেক তাদের ভরন-পোষণের
ব্যবস্থা করা।” প্রহারের সংজ্ঞায় ইবনে আব্বাস
ও অন্যান্য মুফাসসির দাগ বিহীন প্রহার
বলেছেন। হাসান বসরিও তাই বলেছেন। অর্থাৎ
যে প্রহারের কারণে শরীরে দাগ পড়ে না।”
চেহারাতে প্রহার করবে না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
চেহারায় আঘাত করবে না।
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার :
স্বামী যেমন কামনা করে, স্ত্রী তার সব
দায়িত্ব পালন করবে, তার সব হক আদায় করবে,
তদ্রুপ স্ত্রীও কামনা করে। তাই স্বামীর
কর্তব্য স্ত্রীর সব হক আদায় করা, তাকে কষ্ট
না দেয়া, তার অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন
আচরণ থেকে বিরত থাকা। মুসনাদে আহমদে
বর্ণিত, হাকিম বিন মুয়াবিয়া তার পিতা থেকে
বর্ণনা করেন, আমি বললাম, “আল্লাহর রাসূল,
আমাদের উপর স্ত্রীদের কী কী অধিকার
রয়েছে? তিনি বললেন, তুমি যখন খাবে, তাকেও
খেতে দেবে। যখন তুমি পরিধান করবে, তাকেও
পরিধান করতে দেবে। চেহারায় প্রহার করবে
না। নিজ ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও তার
বিছানা আলাদা করে দেবে না।” অন্য বর্ণনায়
আছে, “তার শ্রী বিনষ্ট করিও না।”
বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসের কিতাবে
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “হে আব্দুল্লাহ, আমি জানতে পারলাম,
তুমি দিনে রোজা রাখ, রাতে নামাজ পড়, এ খবর
কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল।
তিনি বলেন, এমন কর না। রোজা রাখ, রোজা
ভাঙ্গো। নামাজ পড়, ঘুমাও। কারণ তোমার
উপর শরীরের হক রয়েছে, চোখের হক রয়েছে,
স্ত্রীরও হক রয়েছে।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরো বলেছেন, যার দু’জন স্ত্রী রয়েছে, আর সে
একজনের প্রতি বেশি ঝুঁকে গেল, কিয়ামতের
দিন সে একপাশে কাত অবস্থায় উপস্থিত হবে।”
সম্মানিত পাঠক! আমাদের আলোচনা সংক্ষেপ
হলেও তার আবেদন কিন্তু ব্যাপক। এখন আমরা
আল্লাহর দরবারে তার সুন্দর সুন্দর নাম,
মহিমান্বিত গুণসমূহের ওসিলা দিয়ে
প্রার্থনা করি, তিনি আমাকে এবং সমস্ত
মুসলমান ভাই-বোনকে এ কিতাব দ্বারা উপকৃত
হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমরা এমন না হয়ে
যাই, যারা নিজ দায়িত্ব আদায় না করে, স্ত্রীর
হক উশুল করতে চায়। আমাদের উদ্দেশ্য কারো
অনিয়মকে সমর্থন না করা এবং এক পক্ষের
অপরাধের ফলে অপর পক্ষের অপরাধকে বৈধতা
না দেয়া। বরং আমাদের উদ্দেশ্য প্রত্যেককে
নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহর সামনে
জবাবদিহির জন্য সচেতন করা।
পরিসমাপ্তি
পরিশেষে স্বামীদের উদ্দেশে বলি, আপনারা
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন, তাদের
কল্যাণকামী হোন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা
নারীদের কল্যাণকামী হও। কারণ, তাদের
পাঁজরের হাড্ডি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে,
পাঁজরের হাড্ডির ভেতর উপরেরটি সবচে’ বেশি
বাঁকা। (যার মাধ্যমে তাদের সৃষ্টি করা
হয়েছে।) যদি সোজা করতে চাও, ভেঙে ফেলবে।
আর রেখে দিলেও তার বক্রতা দূর হবে না,
তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও।”
নারীদের সাথে কল্যাণ কামনার অর্থ, তাদের
সাথে উত্তম ব্যবহার করা, ইসলাম শিক্ষা দেয়া,
এ জন্য ধৈর্য ধারণ করা; আল্লাহ এবং তাঁর
রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া, হারাম
জিনিস থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেয়া। আশা
করি, এ পদ্ধতির ফলে তাদের জান্নাতে যাওয়ার
পথ সুগম হবে। দরুদ ও সালাম রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার
বংশধরের উপর। আমাদের সর্বশেষ কথা,
“আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা। তিনি দু-
জাহানের পালনকর্তা।”
মুসলিম নারীর পর্দার জরুরি শর্তসমূহ
১. সমস্ত শরীর ঢাকা :
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ْﻞُﻗَﻭ َﻦْﻀُﻀْﻐَﻳ ِﺕﺎَﻨِﻣْﺆُﻤْﻠِﻟ َّﻦِﻫِﺭﺎَﺼْﺑَﺃ ْﻦِﻣ
َﻦْﻈَﻔْﺤَﻳَﻭ َّﻦُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ
ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻣ َﺮَﻬَﻇ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻴْﻟَﻭ ﺎَﻬْﻨِﻣ َّﻦِﻫِﺮُﻤُﺨِﺑ
ﻰَﻠَﻋ َّﻦِﻬِﺑﻮُﻴُﺟ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ ﺎَّﻟِﺇ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺒِﻟ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺋﺎَﺑَﺁ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﺑَﺁ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﺋﺎَﻨْﺑَﺃ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﻨْﺑَﺃ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ﻲِﻨَﺑ
ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺗﺍَﻮَﺧَﺃ ﻲِﻨَﺑ َّﻦِﻬِﺋﺎَﺴِﻧ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ﺎَﻣ
َّﻦُﻬُﻧﺎَﻤْﻳَﺃ ْﺖَﻜَﻠَﻣ ِﻭَﺃ َﻦﻴِﻌِﺑﺎَّﺘﻟﺍ ِﺮْﻴَﻏ
ِﺔَﺑْﺭِﺈْﻟﺍ ﻲِﻟﻭُﺃ ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ َﻦِﻣ ِﻭَﺃ ِﻞْﻔِّﻄﻟﺍ
َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ْﻢَﻟ ﺍﻭُﺮَﻬْﻈَﻳ ِﺕﺍَﺭْﻮَﻋ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ
َّﻦِﻬِﻠُﺟْﺭَﺄِﺑ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻳ ﺎَﻟَﻭ َﻢَﻠْﻌُﻴِﻟ ﺎَﻣ َﻦﻴِﻔْﺨُﻳ
ﺍﻮُﺑﻮُﺗَﻭ َّﻦِﻬِﺘَﻨﻳِﺯ ْﻦِﻣ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ
ﺎَﻬُّﻳَﺃ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻥﻮُﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َﻥﻮُﺤِﻠْﻔُﺗ ﴿৩১
﴾(ﺭﻮﻨﻟﺍ-৩১)
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের
হেফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা
ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না।
তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে ঢেকে
রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা,
শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই,
ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ,
তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীন
যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন
অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে
নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা
যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার
জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ,
তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর,
যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”
অন্যত্র বলেন,
ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺎَﻳ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ َﻚِﺟﺍَﻭْﺯَﺄِﻟ ْﻞُﻗ َﻚِﺗﺎَﻨَﺑَﻭ
ِﺀﺎَﺴِﻧَﻭ َﻦﻴِﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َﻦﻴِﻧْﺪُﻳ َّﻦِﻬْﻴَﻠَﻋ ْﻦِﻣ
َّﻦِﻬِﺒﻴِﺑﺎَﻠَﺟ َﻚِﻟَﺫ ﻰَﻧْﺩَﺃ ْﻥَﺃ َﻦْﻓَﺮْﻌُﻳ ﺎَﻠَﻓ
َﻦْﻳَﺫْﺆُﻳ َﻥﺎَﻛَﻭ ﺍًﺭﻮُﻔَﻏ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻤﻴِﺣَﺭ ﴿৫৯﴾
“হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে ,
কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা
যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের উপর
ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই
সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে
কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
২. কারুকার্য ও নকশা বিহীন পর্দা ব্যবহার
করা :
তার প্রমাণ পূর্বে বর্ণিত সূরা নুরের আয়াত-
َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ “তারা স্বীয় রূপ-
লাবণ্য ও সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।” এ
আয়াতের ভেতর কারুকার্য খচিত পর্দাও
অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ তাআলা যে সৌন্দর্য
প্রকাশ করতে বারণ করেছেন, সে সৌন্দর্যকে
আরেকটি সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত করাও নিষেধের
আওতায় আসে। তদ্রুপ সে সকল নকশাও নিষিদ্ধ,
যা পর্দার বিভিন্ন জায়গায় অঙ্কিত থাকে বা
নারীরা মাথার উপর আলাদাভাবে বা শরীরের
কোন জায়গায় যুক্ত করে রাখে। আল্লাহ তাআলা
বলেন,
َﻥْﺮَﻗَﻭ َّﻦُﻜِﺗﻮُﻴُﺑ ﻲِﻓ ﺎَﻟَﻭ َﻦْﺟَّﺮَﺒَﺗ َﺝُّﺮَﺒَﺗ
ِﺔَّﻴِﻠِﻫﺎَﺠْﻟﺍ ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ ﴿৩৩﴾ (ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ-৩৩)
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং
প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন
করো না।”
ﺝﺮﺒﺘﻟﺍ অর্থ: নারীর এমন সৌন্দর্য ও রূপ-
লাবণ্য প্রকাশ করা, যা পুরুষের যৌন উত্তেজনা
ও সুড়সুড়ি সৃষ্টি করে। এ রূপ অশ্লীলতা
প্রদর্শন করা কবিরা গুনা। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে
জিজ্ঞাসা কর না। (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস
হবে।) যথা : ক. যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত
থেকে বের হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী
দেশ পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ
করল, আর সে এ অবস্থায় মারা গেল। খ. যে
গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে পলায়ন করল
এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল। গ. যে নারী
প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে স্বামীর
অবর্তমানে বাইরে বের হল।”
৩. পর্দা সুগন্ধি বিহীন হওয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার দ্বারা
প্রমাণিত হয় যে, সুগন্ধি ব্যবহার করে
নারীদের বাইরে বের হওয়া হারাম।
সংক্ষিপ্ততার জন্য আমরা এখানে উদাহরণ
স্বরূপ, রাসূলের একটি হাদিস উল্লেখ করছি,
তিনি বলেন, “যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে
বাইরে বের হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে
অতিক্রম করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার
জন্য, সে নারী ব্যভিচারিণী।”
৪. শীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেসে উঠে এমন
পাতলা ও সংকীর্ণ পর্দা না হওয়া।
ইমাম আহমদ রহ. উসামা বিন জায়েদের সূত্রে
বর্ণনা করেন, “দিহইয়া কালবির উপহার দেয়া,
ঘন বুননের একটি কিবতি কাপড় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
পরিধান করতে দেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে
দিয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে বলেন, কি ব্যাপার,
কাপড় পরিধান কর না? আমি বললাম, আল্লাহর
রাসূল, আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি।
তিনি বললেন, তাকে বল, এর নীচে যেন সে
সেমিজ ব্যবহার করে। আমার মনে হয়, এ কাপড়
তার হাড়ের আকারও প্রকাশ করে দেবে।”
৫. পর্দা শরীরের রং প্রকাশ করে দেয় এমন
পাতলা না হওয়া।
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, জাহান্নামের দু’ প্রকার লোক আমি
এখনো দেখিনি :
(ক). সে সব লোক যারা গরুর লেজের মত বেত
বহন করে চলবে, আর মানুষদের প্রহার করবে।
(খ). সে সব নারী, যারা কাপড় পরিধান করেও
বিবস্ত্র থাকবে, অন্যদের আকৃষ্ট করবে এবং
তারা নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে
ঘোড়ার ঝুলন্ত চুটির মত। তারা জান্নাতে
প্রবেশ করবে না, তার ঘ্রাণও পাবে না।
৬. নারীর পর্দা পুরুষের পোশাকের ন্যায় না
হওয়া।
ইমাম বুখারি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারী এবং
নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষের উপর
অভিসম্পাত করেছেন।”
৭. সুখ্যাতির জন্য পরিধান করা হয় বা মানুষ
যার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে, পর্দা এমন
কাপড়ের না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন “যে ব্যক্তি সুনাম সুখ্যাতির পোশাক
পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন
অনুরূপ কাপড় পরিধান করাবেন, অতঃপর
জাহান্নামের লেলিহান আগুনে তাকে দগ্ধ
করবেন।” সুনাম সুখ্যাতির কাপড়, অর্থাৎ যে
কাপড় পরিধান করার দ্বারা মানুষের মাঝে
প্রসিদ্ধি লাভ উদ্দেশ্য হয়। যেমন উৎকৃষ্ট ও
দামি কাপড়। যা সাধারণত দুনিয়ার সুখ-ভোগ ও
চাকচিক্যে গর্বিত-অহংকারী ব্যক্তিরাই
পরিধান করে। এ হুকুম নারী-পুরুষ সকলের
ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে কেউ এ ধরনের কাপড়
অসৎ উদ্দেশ্যে পরিধান করবে, কঠোর হুমকির
সম্মুখীন হবে, যদি তওবা না করে মারা যায়।
৮. পর্দা বিজাতীয়দের পোশাক সাদৃশ্য না
হওয়া।
ইবনে ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আবু দাউদ ও
অন্যান্য মুহাদ্দিসিনগণ বর্ণনা করেন, “যে
ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখল, সে
ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে গণ্য।” এরশাদ
হচ্ছে,
ْﻢَﻟَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ ِﻥْﺄَﻳ ﺍﻮُﻨَﻣَﺁ ْﻥَﺃ َﻊَﺸْﺨَﺗ
ْﻢُﻬُﺑﻮُﻠُﻗ ِﺮْﻛِﺬِﻟ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣَﻭ َﻝَﺰَﻧ َﻦِﻣ ِّﻖَﺤْﻟﺍ
ﺍﻮُﻧﻮُﻜَﻳ ﺎَﻟَﻭ ﺍﻮُﺗﻭُﺃ َﻦﻳِﺬَّﻟﺎَﻛ َﺏﺎَﺘِﻜْﻟﺍ ْﻦِﻣ
ُﻞْﺒَﻗ ﴿১৬﴾ (ﺪﻳﺪﺤﻟﺍ:১৬)
“যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর
স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, তার কারণে
বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর তারা যেন
তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব
দেয়া হয়েছিল।”
ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন, “এ
জন্য আল্লাহ তাআলা মোমিনদেরকে মৌলিক
কিংবা আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে তাদের
সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন। ইবনে
তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন। অর্থাৎ অত্র
আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও সব
ক্ষেত্রে সমান, কাফেরদের অনুসরণ করা যাবে
না।”
সমাপ্ত

জান্নাতি নারীর গুণাবলী

নারীর জান্নাত যে পথে
প্রেক্ষাপট
চারদিক থেকে ভেসে আসছে নির্দয় ও পাষণ্ড
স্বামী নামের হিংস্র পশুগুলোর আক্রমণের
শিকার অসহায় ও অবলা নারীর করুণ বিলাপ।
অহরহ ঘটছে দায়ের কোপ, লাথির আঘাত,
অ্যাসিডে ঝলসানো, আগুনে পুড়ানো, বিষ
প্রয়োগ এবং বালিশ চাপাসহ নানা দুঃসহ
কায়দায় নারী মৃত্যুর ঘটনা। কারণ তাদের
পাঠ্য সূচি থেকে ওঠে গেছে বিশ্ব নবির বাণী
“তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও।”
“তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর
নিকট উত্তম, আমি আমার স্ত্রীদের নিকট
উত্তম।”
অপর দিকে চারদিক বিষিয়ে তুলছে, তাগুতি
আইনের দোহাই পেড়ে পতিভক্তিশূন্য, মায়া-
ভালোবাসাহীন স্ত্রী নামের ডাইনীগুলোর
অবজ্ঞার পাত্র, অসহায় স্বামীর ক্ষোভ ও
ক্রোধে ভরা আর্তনাদ। কারণ, তারা রাসূলের
শিক্ষা থেকে বঞ্চিত “আল্লাহ ব্যতীত কাউকে
সেজদা করার অনুমতি থাকলে, আমি নারীদের
নির্দেশ দিতাম তোমরা স্বামীদের সেজদা
কর।” মান-অভিমানের ছলনা আর সামান্য
তুচ্ছ ঘটনার ফলে সাজানো-গোছানো, সুখের
সংসার, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও তছনছ হয়ে
যাচ্ছে মুহূর্তে। ক্ষণিকেই বিস্মৃতির
আস্তাকুরে পর্যবসিত হচ্ছে পূর্বের সব
মিষ্টি-মধুর স্মৃতি, আনন্দঘন-মুহূর্ত। দায়ী
কখনো স্বামী, কখনো স্ত্রী। আরো দায়ী
বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিদ্যমান
ধর্মহীন, পাশ্চাত্যপন্থী সিলেবাস। যা
তৈরি করেছে ইংরেজ ও এদেশের এমন
শিক্ষিত সমাজ, যারা রঙে বর্ণে বাঙালী
হলেও চিন্তা চেতনা ও মন-মানসিকতায়
ইংরেজ। মায়ের উদর থেকে অসহায় অবস্থায়
জন্ম গ্রহণকারী মানুষের তৈরি এ সিলেবাস
অসম্পূর্ণ, যা সর্বক্ষেত্রে সঠিক দিক
নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ। যে সিলেবাসে
শিক্ষিত হয়ে স্ত্রী স্বামীর অধিকার
সম্পর্কে জানে না, স্বামীও থাকে স্ত্রীর
প্রাপ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। একজন অপর
জনের প্রতি থাকে বীতশ্রদ্ধ। ফলে
পরস্পরের মাঝে বিরাজ করে সমঝোতা ও
সমন্বয়ের সংকট। সম্পূরকের পরিবর্তে
প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে একে
অপরকে। আস্থা রাখতে পারছে না কেউ কারো
ওপর। তাই স্বনির্ভরতার জন্য নারী-পুরুষ
সবাই অসম প্রতিযোগিতার ময়দানে ঝাঁপ
দিচ্ছে। মূলত হয়ে পড়ছে পরনির্ভর, খাবার-
দাবার, পরিচ্ছন্নতা-পবিত্রতা এবং সন্তান
লালন-পালনের ক্ষেত্রেও ঝি-চাকর কিংবা
শিশু আশ্রমের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। ফলে যা
হবার তাই হচ্ছে… পক্ষান্তরে আসল শিক্ষা
ও মানব জাতির সঠিক পাথেয় আল-কুরআনের
দিকনির্দেশনা পরিত্যক্ত ও সংকুচিত হয়ে
আশ্রয় নিয়েছে কুঁড়ে ঘরে, কর্তৃত্বশূন্য কিছু
মানবের হৃদয়ে। তাই, স্বভাবতই মানব জাতি
অন্ধকারাচ্ছন্ন, সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত,
কিংকর্তব্যবিমূঢ় নিজদের সমস্যা নিয়ে।
দোদুল্যমান স্বীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে।
আমাদের প্রয়াস এ ক্রান্তিকালে নারী-
পুরুষের বিশেষ অধ্যায়, তথা দাম্পত্য জীবনের
জন্য কুরআন-হাদিস সিঞ্চিত একটি
আলোকবর্তিকা পেশ করা, যা দাম্পত্য জীবনে
বিশ্বস্ততা ও সহনশীলতার আবহ সৃষ্টি
করবে। কলহ, অসহিষ্ণুতা ও অশান্তি বিদায়
দেবে চিরতরে। উপহার দেবে সুখ ও শান্তিময়
অভিভাবকপূর্ণ নিরাপদ পরিবার।
ভূমিকা
বইটি কুরআন, হাদিস, আদর্শ মনীষীগণের
উপদেশ এবং কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের বাণী ও
অভিজ্ঞতার আলোকে সংকলন করা হয়েছে।
বইটিতে মূলত নারীদের বিষয়টি বেশি
গুরুত্ব পেয়েছে, অবশ্য পুরুষদের প্রসঙ্গও
আলোচিত হয়েছে, তবে তা প্রাসঙ্গিকভাবে।
যে নারী-পুরুষ আল্লাহকে পেতে চায়, আখেরাতে
সফলতা অর্জন করতে চায়, তাদের জন্য বইটি
পাথেয় হবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী। আল্লাহ
তা’আলা বলেন :
ﺎَﻣَﻭ ٍﻦِﻣْﺆُﻤِﻟ َﻥﺎَﻛ ﺎَﻟَﻭ ٍﺔَﻨِﻣْﺆُﻣ ﺍَﺫِﺇ ﻰَﻀَﻗ
ُﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪُﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ﺍًﺮْﻣَﺃ ْﻥَﺃ َﻥﻮُﻜَﻳ ُﻢُﻬَﻟ
ُﺓَﺮَﻴِﺨْﻟﺍ ْﻦِﻣ ْﻢِﻫِﺮْﻣَﺃ ْﻦَﻣَﻭ ِﺺْﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ
ُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ْﺪَﻘَﻓ َّﻞَﺿ ﺎًﻨﻴِﺒُﻣ ﺎًﻟﺎَﻠَﺿ ﴿
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ:৩৬﴾
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে
কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের
ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার
থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে
অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”[১]
রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻞﻛ ﻥﻮﻠﺧﺪﻳ ﻲﺘﻣﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻻﺇ ﻦﻣ ،ﻰﺑﺃ
ﺍﻮﻟﺎﻗ : ﺎﻳ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ؟ﻰﺑﺄﻳ ﻦﻣﻭ
: ﻝﺎﻗ ﻲﻨﻋﺎﻃﺃ ﻦﻣ ﻞﺧﺩ ،ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻣﻭ
ﻲﻧﺎﺼﻋ ﺪﻘﻓ .ﻰﺑﺃ ،ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﻩﺍﻭﺭ ﺢﺘﻓ
ﻱﺭﺎﺒﻟﺍ (১৩/২৪৯)
“আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ
করবে, তবে যে অস্বীকার করবে। সাহাবারা
প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করবে হে
আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, যে আমার
অনুসরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর
যে আমার অবাধ্য হল, সে অস্বীকার করল।”[২]
পরিশেষে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা এ বইটি
দ্বারা আমাকে এবং সকল মুসলমানকে উপকৃত
হওয়ার তাওফিক দান করুন। বইটি তার
সন্তুষ্টি অর্জনের অসিলা হিসেবে কবুল
করুন। সে দিনের সঞ্চয় হিসেবে রক্ষিত
রাখুন, যে দিন কোন সন্তান, কোন সম্পদ
উপকারে আসবে না, শুধু সুস্থ অন্তকরণ ছাড়া।
আমাদের সর্বশেষ ঘোষণা সকল প্রশংসা
আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি জগতের
প্রতিপালক।
নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন :
َﻥﻮُﻣﺍَّﻮَﻗ ُﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ﺎَﻤِﺑ
ُﻪَّﻠﻟﺍ َﻞَّﻀَﻓ ْﻢُﻬَﻀْﻌَﺑ ﻰَﻠَﻋ ٍﺾْﻌَﺑ ﺎَﻤِﺑَﻭ
ﺍﻮُﻘَﻔْﻧَﺃ ْﻢِﻬِﻟﺍَﻮْﻣَﺃ ْﻦِﻣ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ﴿ :৩৪﴾
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে
আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব
দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ
থেকে ব্যয় করে।”[৩]
হাফেজ ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে
বলেন, “পুরুষ নারীর তত্ত্বাবধায়ক। অর্থাৎ
সে তার গার্জিয়ান, অভিভাবক, তার উপর
কর্তৃত্বকারী ও তাকে সংশোধনকারী, যদি সে
বিপদগামী বা লাইনচ্যুত হয়।”[৪]
এ ব্যাখ্যা রাসূলের হাদিস দ্বারাও সমর্থিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, আমি যদি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে
সেজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে নারীদের
আদেশ করতাম স্বামীদের সেজদার করার জন্য।
সে আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার
জীবন, নারী তার স্বামীর সব হক আদায় করা
ব্যতীত, আল্লাহর হক আদায়কারী হিসেবে
গণ্য হবে না। এমনকি স্বামী যদি তাকে
বাচ্চা প্রসবস্থান থেকে তলব করে, সে তাকে
নিষেধ করবে না।”[৫]
আল্লাহ তা’আলা বলেন :
ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺐﻴﻐﻠﻟ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
“সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা
লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারীনী ঐ
বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন।”[৬]
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এ আয়াতের তাফসিরে
বলেন, ‘সুতরাং নেককার নারী সে, যে
আনুগত্যশীল। অর্থাৎ যে নারী সর্বদা
স্বামীর আনুগত্য করে… নারীর জন্য আল্লাহ
এবং তার রাসূলের হকের পর স্বামীর হকের
মত অবশ্য কর্তব্য কোন হক নেই।'[৭]
হে নারীগণ, তোমরা এর প্রতি সজাগ দৃষ্টি
রাখ। বিশেষ করে সে সকল নারী, যারা
সীমালঙ্ঘনে অভ্যস্ত, স্বেচ্ছাচার প্রিয়,
স্বামীর অবাধ্য ও পুরুষের আকৃতি ধারণ করে।
স্বাধীনতা ও নারী অধিকারের নামে কোন
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, যখন ইচ্ছা
বাইরে যাচ্ছে আর ঘরে ফিরছে। যখন যা মন
চাচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। তারাই দুনিয়া এবং
দুনিয়ার চাকচিক্যের বিনিময়ে আখেরাত
বিক্রি করে দিয়েছে। হে বোন, সতর্ক হও,
চৈতন্যতায় ফিরে আস, তাদের পথ ও সঙ্গ
ত্যাগ করে। তোমার পশ্চাতে এমন দিন
ধাবমান যার বিভীষিকা বাচ্চাদের পৌঁছে
দিবে বার্ধক্যে।
নারীদের উপর পুরুষের কর্তৃত্বের কারণ :
পুরুষরা নারীদের অভিভাবক ও তাদের উপর
কর্তৃত্বশীল। যার মূল কারণ উভয়ের
শারীরিক গঠন, প্রাকৃতিক স্বভাব, যোগ্যতা
ও শক্তির পার্থক্য। আল্লাহ তা’আলা নারী-
পুরুষকে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য এবং ভিন্ন
ভিন্ন রূপ ও অবয়বে সৃষ্টি করেছেন।
দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ নেককার
স্ত্রী
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“পুরো দুনিয়া ভোগের সামগ্রী, আর সবচে’
উপভোগ্য সম্পদ হল নেককার নারী।”[৮]
বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“চারটি গুণ দেখে নারীদের বিবাহ করা হয়-
সম্পদ, বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য ও দীনদারি।
তবে ধার্মিকতার দিক প্রাধান্য দিয়েই তুমি
কামিয়াব হও নয়তো তোমার হাত ধুলি
ধুসরিত হবে।”[৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“চারটি বস্তু শুভ লক্ষণ। যথা :
১. নেককার নারী,
২. প্রশস্ত ঘর,
৩. সৎ প্রতিবেশী,
৪. সহজ প্রকৃতির আনুগত্যশীল-পোষ্য
বাহন।
পক্ষান্তরে অপর চারটি বস্তু কুলক্ষণা। তার
মধ্যে একজন বদকার নারী।”[১০]
এসব আয়াত ও হাদিস পুরুষদের যেমন নেককার
নারী গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে,
তেমনি উৎসাহ দেয় নারীদেরকে আদর্শ
নারীর সকল গুনাবলী অর্জনের প্রতি। যাতে
তারা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নেককার নারী
হিসেবে গণ্য হতে পারে।
প্রিয় মুসলিম বোন, তোমার সামনে সে
উদ্দেশেই নেককার নারীদের গুণাবলী পেশ করা
হচ্ছে। যা চয়ন করা হয়েছে কুরআন, হাদিস ও
পথিকৃৎ আদর্শবান নেককার আলেমদের বাণী ও
উপদেশ থেকে। তুমি এগুলো শিখার ব্রত
গ্রহণ কর। সঠিক রূপে এর অনুশীলন আরম্ভ
কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “ইলম আসে শিক্ষার
মাধ্যমে। শিষ্টচার আসে সহনশীলতার
মাধ্যমে। যে কল্যাণ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ
তাকে সুপথ দেখান।”[১১]
নেককার নারীর গুণাবলি
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺐﻴﻐﻠﻟ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
ইবনে কাসির রহ. লিখেন,ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ
শব্দের অর্থ নেককার নারী, ইবনে আব্বাস ও
অন্যান্য মুফাসসিরের মতে ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ শব্দের
অর্থ স্বামীদের আনুগত্যশীল নারী, আল্লামা
সুদ্দি ও অন্যান্য মুফাসসির বলেন ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺐﻴﻐﻠﻟ শব্দের অর্থ স্বামীর অনুপস্থিতিতে
নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ রক্ষাকারী
নারী।”[১২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানের
রোজা রাখে, আপন লজ্জাস্থান হেফাজত করে
এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাকে বলা হবে, যে
দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।
“[১৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“তোমাদের সেসব স্ত্রী জান্নাতি, যারা
মমতাময়ী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, পতি-
সঙ্গ প্রিয়- যে স্বামী গোস্বা করলে সে তার
হাতে হাত রেখে বলে, আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া
পর্যন্ত, আমি দুনিয়ার কোন স্বাদ গ্রহণ
করব না।”[১৪]
সুনানে নাসায়িতে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে একদা জিজ্ঞাসা করা হল, হে
আল্লাহর রাসূল, কোন নারী সব চেয়ে ভাল?
তিনি বললেন, “যে নারী স্বামীকে আনন্দিত
করে, যখন স্বামী তার দিকে দৃষ্টি দেয়। যে
নারী স্বামীর আনুগত্য করে, যখন স্বামী
তাকে নির্দেশ দেয়, যে নারী স্বামীর সম্পদ
ও নিজ নফসের ব্যাপারে, এমন কোনো কর্মে
লিপ্ত হয় না, যা স্বামীর অপছন্দ।”[১৫]
হে মুসলিম নারী, নিজকে একবার পরখ কর,
ভেবে দেখ এর সাথে তোমার মিল আছে কতটুকু।
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার পথ অনুসরণ কর।
দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের শপথ
গ্রহণ কর। নিজ স্বামী ও সন্তানের
ব্যাপারে যত্নশীল হও।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জনৈক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার
কি স্বামী আছে? সে বলল হ্যাঁ, রাসূল বললেন,
তুমি তার কাছে কেমন? সে বলল, আমি তার
সন্তুষ্টি অর্জনে কোন ত্রুটি করি না, তবে
আমার সাধ্যের বাইরে হলে ভিন্ন কথা। রাসূল
বললেন, লক্ষ্য রেখ, সে-ই তোমার জান্নাত বা
জাহান্নাম।”[১৬]
উপরের আলোচনার আলোকে নেককার নারীর
গুণাবলি :
১. নেককার : ভাল কাজ সম্পাদনকারী ও নিজ
রবের হক আদায়কারী নারী।
২. আনুগত্যশীল : বৈধ কাজে স্বামীর
আনুগত্যশীল নারী।
৩. সতী : নিজ নফসের হেফাজতকারী নারী,
বিশেষ করে স্বামীর অবর্তমানে।
৪. হেফাজতকারী : স্বামীর সম্পদ ও নিজ
সন্তান হেফাজতকারী নারী।
৫. আগ্রহী : স্বামীর পছন্দের পোশাক ও সাজ
গ্রহণে আগ্রহী নারী।
৬. সচেষ্ট : স্বামীর গোস্বা নিবারণে
সচেষ্ট নারী। কারণ হাদিসে এসেছে, স্বামী
নারীর জান্নাত বা জাহান্নাম।
৭. সচেতন : স্বামীর চাহিদার প্রতি সচেতন
নারী। স্বামীর বাসনা পূর্ণকারী।
যে নারীর মধ্যে এসব গুণ বিদ্যমান, সে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ভাষ্য মতে জান্নাতী। তিনি
বলেছেন, “যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,
রমজানের রোজা রাখে, নিজ সতীত্ব হেফাজত
করে ও স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে,
যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।
“[১৭]
আনুগত্যপরায়ন নেককার নারীর উদাহরণ
শাবি বর্ণনা করেন, একদিন আমাকে শুরাই
বলেন, “শাবি, তুমি তামিম বংশের মেয়েদের
বিয়ে কর। তামিম বংশের মেয়েরা খুব
বুদ্ধিমতী। আমি বললাম, আপনি কীভাবে
জানেন তারা বুদ্ধিমতী? তিনি বললেন, আমি
কোনো জানাজা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম, পথের
পাশেই ছিল তাদের কারো বাড়ি। লক্ষ্য
করলাম, জনৈক বৃদ্ধ মহিলা একটি ঘরের
দরজায় বসে আছে, তার পাশেই রয়েছে সুন্দরী
এক যুবতী। মনে হল, এমন রূপসী মেয়ে আমি
আর কখনো দেখিনি। আমাকে দেখে মেয়েটি
কেটে পড়ল। আমি পানি চাইলাম, অথচ আমার
তৃষ্ণা ছিল না। সে বলল, তুমি কেমন পানি
পছন্দ কর, আমি বললাম যা উপস্থিত আছে।
মহিলা মেয়েকে ডেকে বলল, দুধ নিয়ে আস, মনে
হচ্ছে সে বহিরাগত। আমি বললাম, এ মেয়ে
কে? সে বলল, জারিরের মেয়ে জয়নব। হানজালা
বংশের ও। বললাম, বিবাহিতা না
অবিবাহিতা? সে বলল, না, অবিবাহিতা। আমি
বললাম, আমার কাছে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। সে
বলল, তুমি যদি তার কুফু হও, দিতে পারি।
আমি বাড়িতে পৌঁছে দুপুরে সামান্য বিশ্রাম
নিতে শোবার ঘরে গেলাম, কোনো মতে চোখে
ঘুম ধরল না। জোহর নামাজ পড়লাম। অতঃপর
আমার গণ্যমান্য কয়েকজন বন্ধু, যেমন-
আলকামা, আসওয়াদ, মুসাইয়্যেব এবং মুসা ইবনে
আরফাতাকে সাথে করে মেয়ের চাচার বাড়িতে
গেলাম। সে আমাদের সাদরে গ্রহণ করল।
অতঃপর বলল, আবু উমাইয়্যা, কি উদ্দেশ্যে
আসা? আমি বললাম, আপনার ভাতিজি জয়নবের
উদ্দেশ্যে। সে বলল, তোমার ব্যাপারে তার
কোন আগ্রহ নেই! অতঃপর সে আমার কাছে
তাকে বিয়ে দিল। মেয়েটি আমার জালে আবদ্ধ
হয়ে খুবই লজ্জা বোধ করল। আমি বললাম,
আমি তামিম বংশের নারীদের কী সর্বনাশ
করেছি? তারা কেন আমার উপর অসন্তুষ্ট?
পরক্ষণই তাদের কঠোর স্বভাবের কথা আমার
মনে পড়ল। ভাবলাম, তালাক দিয়ে দেব।
পুনরায় ভাবলাম, না, আমিই তাকে আপন করে
নিব। যদি আমার মনপুত হয়, ভাল, অন্যথায়
তালাকই দিয়ে দেব। শাবি, সে রাতের
মুহূর্তগুলো এতো আনন্দের ছিল, যা ভোগ না
করলে অনুধাবন করার জো নেই। খুবই চমৎকার
ছিল সে সময়টা, যখন তামিম বংশের মেয়েরা
তাকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমার মনে
পড়ল, রাসূলের সুন্নতের কথা। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“স্ত্রী প্রথম ঘরে প্রবেশ করলে স্বামীর
কর্তব্য, দু’রাকাত নামাজ পড়া, স্ত্রীর মধ্যে
সুপ্ত মঙ্গল কামনা করা এবং তার মধ্যে লুকিত
অমঙ্গল থেকে পানাহ চাওয়া।” আমি নামাজ
শেষে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমার সাথে
নামাজ পড়ছে। যখন নামাজ শেষ করলাম,
মেয়েরা আমার কাছে উপস্থিত হল। আমার
কাপড় পালটে সুগন্ধি মাখা কম্বল আমার উপর
টেনে দিল। যখন সবাই চলে গেল, আমি তার
নিকটবর্তী হলাম ও তার শরীরের এক পাশে
হাত বাড়ালাম। সে বলল, আবু উমাইয়্যা, রাখ।
অতঃপর বলল,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ﻭ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃ
ﻲﻠﺻﺃﻭ ﻰﻠﻋ ﺪﻤﺤﻣ ﻪﻟﺁﻭ …
“আমি একজন অভিজ্ঞতা শূন্য অপরিচিত
নারী। তোমার পছন্দ অপছন্দ আর স্বভাব
রীতির ব্যাপারে কিছুই জানি না আমি। আরো
বলল, তোমার বংশীয় একজন নারী তোমার
বিবাহে আবদ্ধ ছিল, আমার বংশেও সে রূপ
বিবাহিতা নারী বিদ্যমান আছে, কিন্তু
আল্লাহর সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত। তুমি আমার
মালিক হয়েছ, এখন আল্লাহর নির্দেশ
মোতাবেক আমার সাথে ব্যবহার কর। হয়তো
ভালভাবে রাখ, নায়তো সুন্দরভাবে আমাকে
বিদায় দাও। এটাই আমার কথা, আল্লাহর
নিকট তোমার ও আমার জন্য মাগফিরাত
কামনা করছি।”
শুরাই বলল, শাবি, সে মুহূর্তেও আমি মেয়েটির
কারণে খুতবা দিতে বাধ্য হয়েছি। অতঃপর
আমি বললাম,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃﻭ
ﻲﻠﺻﺃﻭ ﻰﻠﻋ ﻲﺒﻨﻟﺍ ،ﻢﻠﺳﺃﻭ ﻪﻟﺁﻭ
ﺪﻌﺑﻭ…
তুমি এমন কিছু কথা বলেছ, যদি তার উপর
প্রতিষ্ঠিত থাক, তোমার কপাল ভাল। আর
যদি পরিত্যাগ কর, তোমার কপাল মন্দ।
আমার পছন্দ… আমার অপছন্দ… আমরা দু’জনে
একজন। আমার মধ্যে ভাল দেখলে প্রচার
করবে, আর মন্দ কিছু দৃষ্টিগোচর হলে গোপন
রাখবে।
সে আরো কিছু কথা বলেছে, যা আমি ভুলে
গেছি। সে বলেছে, আমার আত্মীয় স্বজনের
আসা-যাওয়া তুমি কোন দৃষ্টিতে দেখ? আমি
বললাম, ঘনঘন আসা-যাওয়ার মাধ্যমে বিরক্ত
করা পছন্দ করি না। সে বলল, তুমি পাড়া-
প্রতিবেশীর মধ্যে যার ব্যাপারে অনুমতি
দেবে, তাকে আমি ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি
দেব। যার ব্যাপারে নিষেধ করবে, তাকে আমি
অনুমতি দেব না। আমি বললাম, এরা ভাল, ওরা
ভাল না।
শুরাই বলল, শাবি, আমার জীবনের সব চেয়ে
আনন্দদায়ক অধ্যায় হচ্ছে, সে রাতের
মুহূর্তগুলো। পূর্ণ একটি বছর গত হল, আমি
তার মধ্যে আপত্তিকর কিছু দেখিনি।
একদিনের ঘটনা, ‘দারুল কাজা’ থেকে বাড়ি
ফিরে দেখি, ঘরের ভেতর একজন মহিলা তাকে
উপদেশ দিচ্ছে; আদেশ দিচ্ছে আর নিষেধ
করছে। আমি বললাম সে কে? বলল, তোমার
শ্বশুর বাড়ির অমুক বৃদ্ধ। আমার অন্তরের
সন্দেহ দূর হল। আমি বসার পর, মহিলা আমার
সামনে এসে হাজির হল। বলল, আসসালামু
আলাইকুম, আবু উমাইয়্যা। আমি বললাম, ওয়া
লাইকুমুসসালাম, আপনি কে? বলল, আমি অমুক;
তোমার শ্বশুর বাড়ির লোক। বললাম, আল্লাহ
তোমাকে কবুল করুন। সে বলল, তোমার স্ত্রী
কেমন পেয়েছ? বললাম, খুব সুন্দর। বলল, আবু
উমাইয়্যা, নারীরা দু’সময় অহংকারের শিকার
হয়। পুত্র সন্তান প্রসব করলে আর স্বামীর
কাছে খুব প্রিয় হলে। কোন ব্যাপারে তোমার
সন্দেহ হলে লাঠি দিয়ে সোজা করে দেবে। মনে
রাখবে, পুরুষের ঘরে আহ্লাদি নারীর ন্যায়
খারাপ আর কোন বস্তু নেই। বললাম, তুমি
তাকে সুন্দর আদব শিক্ষা দিয়েছ, ভাল
জিনিসের অভ্যাস গড়ে দিয়েছ তার মধ্যে। সে
বলল, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আসা-যাওয়া
তোমার কেমন লাগে? বললাম, যখন ইচ্ছে তারা
আসতে পারে। শুরাই বলল, অতঃপর সে মহিলা
প্রতি বছর একবার করে আসত আর আমাকে
উপদেশ দিয়ে যেত। সে মেয়েটি বিশ বছর
আমার সংসার করেছে, একবার ব্যতীত কখনো
তিরস্কার করার প্রয়োজন হয়নি। তবে ভুল
সেবার আমারই ছিল।
ঘটনাটি এমন, ফজরের দু-রাকাত সুন্নত পড়ে
আমি ঘরে বসে আছি, মুয়াজ্জিন একামত দিতে
শুরু করল। আমি তখন গ্রামের মসজিদের
ইমাম। দেখলাম, একটা বিচ্ছু হাঁটাচলা করছে,
আমি একটা পাত্র উঠিয়ে তার উপর রেখে
দিলাম। বললাম, জয়নাব, আমার আসা পর্যন্ত
তুমি নড়াচড়া করবে না। শাবি, তুমি যদি সে
মুহূর্তটা দেখতে! নামাজ শেষে ঘরে ফিরে
দেখি, বিচ্ছু সেখান থেকে বের হয়ে তাকে দংশন
করেছে। আমি তৎক্ষণাৎ লবণ ও সাক্ত তলব
করে, তার আঙুলের উপর মালিশ করলাম।
সূরায়ে ফাতেহা, সূরায়ে নাস ও সূরায়ে ফালাক
পড়ে তার উপর দম করলাম।”[১৮]
দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য
১. স্বামীর অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“তিনজন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার উপরে
উঠে না।
(ক). পলাতক গোলামের নামাজ, যতক্ষণ না সে
মনিবের নিকট ফিরে আসে।
(খ). সে নারীর নামাজ, যে নিজ স্বামীকে
রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে।
(গ). সে আমিরের নামাজ, যার উপর তার
অধীনরা অসন্তুষ্ট।”[১৯]
২. স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
ইমাম আহমদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা
করেন,
“দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়,
জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে নারীকে
লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না, আল্লাহ
তোমার সর্বনাশ করুন। সে তো তোমার কাছে
ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই
তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”[২০]
৩. স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“আল্লাহ তা’আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি
দেবেন না, যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার
করে না, অথচ সে স্বামী ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ
নয়।”[২১]
ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আমি জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু
আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন
দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী
দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন?
তিনি বললেন, তাদের না শুকরির কারণে।
জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর না
শুকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর না
শুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।
তুমি যদি তাদের কারো উপর যুগ-যুগ ধরে
ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন তোমার কাছে
তার বাসনা পূণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত
তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলাম না।”[২২]
৪. কারণ ছাড়া তালাক তলব না করা।
ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ প্রমুখগণ সওবান
রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
“যে নারী কোন কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে
তালাক তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ
পর্যন্ত হারাম।”
৫. অবৈধ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য না করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য করা
যাবে না।”[২৩]
এখানে নারীদের শয়তানের একটি ধোঁকা থেকে
সতর্ক করছি, দোয়া করি আল্লাহ তাদের সুপথ
দান করুন। কারণ দেখা যায় স্বামী যখন তাকে
কোন জিনিসের হুকুম করে, সে এ হাদিসের
দোহাই দিয়ে বলে এটা হারাম, এটা নাজায়েজ,
এটা জরুরি নয়। উদ্দেশ্য স্বামীর নির্দেশ
উপেক্ষা করা। আমি তাদেরকে আল্লাহর
নিম্নোক্ত বাণীটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি,
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে,
কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো
দেখবেন।”[২৪]
হাসান বসরি রহ. বলেন, “হালাল ও হারামের
ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা
বলা নিরেট কুফরি।”
৬. স্বামীর বর্তমানে তার অনুমতি ব্যতীত
রোজা না রাখা।
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “কোন নারী স্বামীর উপস্থিতিতে
তার অনুমতি ব্যতীত রোজা রাখবে না।”[২৫]
যেহেতু স্ত্রীর রোজার কারণে স্বামী নিজ
প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে, যা
কখনো গুনার কারণ হতে পারে। এখানে রোজা
দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই নফল রোজা উদ্দেশ্য।
কারণ ফরজ রোজা আল্লাহর অধিকার,
আল্লাহর অধিকার স্বামীর অধিকারের চেয়ে
বড়।
৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের
বিছানায় ডাকে, আর স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না
দেয়, এভাবেই স্বামী রাত যাপন করে, সে
স্ত্রীর উপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত
অভিসম্পাত করে।”[২৬]
৮. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা
প্রকাশ না করা :
আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“কিছু পুরুষ আছে যারা নিজ স্ত্রীর সাথে কৃত
আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কিছু নারীও
আছে যারা আপন স্বামীর গোপন ব্যাপারগুলো
প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে সবাই চুপ
হয়ে গেল, কেউ কোন শব্দ করল না। আমি
বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-
পুরুষেরা এমন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
এমন করো না। এটা তো শয়তানের মতো যে
রাস্তার মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল,
আর অমনি তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন
তাদের দিকে তাকিয়ে আছে!”[২৭]
৯. স্বামীর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও বিবস্ত্র
না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
যে নারী স্বামীর ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও
বিবস্ত্র হল, আল্লাহ তার গোপনীয়তা নষ্ট
করে দেবেন।”[২৮]
১০. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার
ঘরে ঢুকতে না দেয়া।
বুখারিতে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“নারী তার স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমিত
ছাড়া রোজা রাখবে না এবং তার অনুমতি ছাড়া
তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।”[২৯]
১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না
হওয়া।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা ঘরে অবস্থান
কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন,
“তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন প্রয়োজন
ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।”[৩০] নারীর
জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব, তেমন
ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি
ওয়াজিব। স্বামীর খেদমতের উদাহরণ:
মুসলিম বোন! স্বামীর খেদমতের ব্যাপারে
একজন সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার
উল্লেখ যথেষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। তারা
কীভাবে স্বামীর খেদমত করেছেন, স্বামীর
কাজে সহযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছেন-
ইত্যাদি বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ
উপস্থাপনার পরিবর্তে একটি উদাহরণই
যথেষ্ট হবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আসমা বিনতে আবু বকর থেকে সহিহ মুসলিমে
বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের আমাকে যখন
বিয়ে করে, দুনিয়াতে তখন তার ব্যবহারের
ঘোড়া ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর কিছু ছিল
না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার ঘাস
সংগ্রহ করতাম, ঘোড়া মাঠে চরাতাম, পানি
পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম,
পানি পান করাতাম, পানির বালতিতে দানা
ভিজাতাম। তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম
দিতাম। আমি ভাল করে রুটি বানাতে জানতাম
না, আনসারদের কিছু মেয়েরা আমাকে এ জন্য
সাহায্য করত। তারা আমার প্রকৃত বান্ধবী
ছিল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দান করা জুবায়েরের
জমি থেকে মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায়
এক মাইল দূরত্বে ছিল।” [৩১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
যদি নারীরা পুরুষের অধিকার সম্পর্কে
জানত, দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সময় হলে,
তাদের খানা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত
না।”[৩২]
বিয়ের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উম্মে
আকেলার উপদেশ: আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি
বড় হয়েছ, যারা তোমার আপন জন ছিল, তাদের
ছেড়ে একজন অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ,
যার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জান
না। তুমি যদি তার দাসী হতে পার, সে তোমার
দাস হবে। আর দশটি বিষয়ের প্রতি খুব নজর
রাখবে।
১-২. অল্পতে তুষ্টি থাকবে। তার তার
অনুসরণ করবে ও তার সাথে বিনয়ী থাকবে।
৩-৪. তার চোখ ও নাকের আবেদন পূর্ণ করবে।
তার অপছন্দ হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয়
গন্ধ শরীরে রাখবে না।
৫-৬. তার ঘুম ও খাবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি
রাখবে। মনে রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার
উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার কারণে
বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়।
৭-৮. তার সম্পদ হেফাজত করবে, তার সন্তান
ও বৃদ্ধ আত্মীয়দের সেবা করবে। মনে রাখবে,
সব কিছুর মূল হচ্ছে সম্পদের সঠিক ব্যবহার,
সন্তানদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।
পুরুষদের উদ্দেশে দুটি কথা
উপরের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ
তাআলার কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের আলোকে
মুসলমান বোনদের জন্য সঠিক দিক
নির্দেশনা প্রদান করার চেষ্টা করেছি
মাত্র। তবে এর অর্থ এ নয় যে, কোন স্ত্রী
এ সবগুণের বিপরীত করলে, তাকে শান্তি
দেওয়া স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“কোন মোমিন ব্যক্তি কোন মোমিন নারীকে
বিবাহ বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন করবে না, তার
একটি অভ্যাস মন্দ হলে, অপর আচরণে তার
উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।”[৩৩]
তুমি যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ অথবা তার
কোন মন্দ স্বভাব প্রত্যক্ষ কর, তবে তোমার
সর্বপ্রথম দায়িত্ব তাকে উপদেশ দেয়া,
নসিহত করা, আল্লাহ এবং তার শাস্তির কথা
স্মরণ করিয়ে দেয়া। তার পরেও যদি সে
অনুগত না হয়, বদ অভ্যাস ত্যাগ না করে, তবে
প্রাথমিক পর্যায়ে তার থেকে বিছানা আলাদা
করে নাও। খবরদার! ঘর থেকে বের করবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও স্ত্রীকে
পরিত্যাগ কর না।” এতে যদি সে শুধরে যায়,
ভাল। অন্যথায় তাকে আবার নসিহত কর, তার
থেকে বিছানা আলাদা কর।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“যে নারীদের নাফরমানির আশঙ্কা কর,
তাদের উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর,
প্রহার কর, যদি তোমাদের আনুগত্য করে, তবে
অন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না।”[৩৪]
“তাদের প্রহার কর” এর ব্যাখ্যায় ইবনে
কাসির রহ. বলেন, যদি তাদের উপদেশ দেওয়া
ও তাদের থেকে বিছানা আলাদা করার পরও
তারা নিজ অবস্থান থেকে সরে না আসে, তখন
তোমাদের অধিকার রয়েছে তাদের হালকা
প্রহার করা, যেন শরীরের কোন স্থানে দাগ
না পড়ে।
জাবের রাদিআল্লাহ আনহু থেকে সহিহ
মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে বলেছেন,
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর,
তারা তোমাদের কাছে মাঝামাঝি অবস্থানে
রয়েছে। তোমরা তাদের মালিক নও, আবার
তারা তোমাদের থেকে মুক্তও নয়। তাদের
কর্তব্য, তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে
জায়গা না দেয়া, যাদের তোমরা অপছন্দ কর।
যদি এর বিপরীত করে, এমনভাবে তাদের
প্রহার কর, যাতে শরীরের কোন স্থানে দাগ
না পড়ে। তোমাদের কর্তব্য সাধ্য মোতাবেক
তাদের ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করা।”
প্রহারের সংজ্ঞায় ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য
মুফাসসির দাগ বিহীন প্রহার বলেছেন।
হাসান বসরিও তাই বলেছেন। অর্থাৎ যে
প্রহারের কারণে শরীরে দাগ পড়ে না।”[৩৫]
চেহারাতে প্রহার করবে না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
চেহারায় আঘাত করবে না।
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার
স্বামী যেমন কামনা করে, স্ত্রী তার সব
দায়িত্ব পালন করবে, তার সব হক আদায় করবে,
তদ্রুপ স্ত্রীও কামনা করে। তাই স্বামীর
কর্তব্য স্ত্রীর সব হক আদায় করা, তাকে কষ্ট
না দেয়া, তার অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন
আচরণ থেকে বিরত থাকা।
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত,
হাকিম বিন মুয়াবিয়া তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন, আমি বললাম, “আল্লাহর রাসূল, আমাদের
উপর স্ত্রীদের কী কী অধিকার রয়েছে?
তিনি বললেন, তুমি যখন খাবে, তাকেও খেতে
দেবে। যখন তুমি পরিধান করবে, তাকেও
পরিধান করতে দেবে। চেহারায় প্রহার করবে
না। নিজ ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও তার
বিছানা আলাদা করে দেবে না।” অন্য বর্ণনায়
আছে, “তার শ্রী বিনষ্ট করিও না।”[৩৬]
বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসের
কিতাবে
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “হে আব্দুল্লাহ, আমি জানতে পারলাম,
তুমি দিনে রোজা রাখ, রাতে নামাজ পড়, এ
খবর কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর
রাসূল। তিনি বলেন, এমন কর না। রোজা
রাখ, রোজা ভাঙ্গো। নামাজ পড়, ঘুমাও। কারণ
তোমার উপর শরীরের হক রয়েছে, চোখের হক
রয়েছে, স্ত্রীরও হক রয়েছে।”[৩৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরো বলেছেন,
যার দু’জন স্ত্রী রয়েছে, আর সে একজনের
প্রতি বেশি ঝুঁকে গেল, কিয়ামতের দিন সে
একপাশে কাত অবস্থায় উপস্থিত হবে।”[৩৮]
সম্মানিত পাঠক! আমাদের আলোচনা সংক্ষেপ
হলেও তার আবেদন কিন্তু ব্যাপক। এখন আমরা
আল্লাহর দরবারে তার সুন্দর সুন্দর নাম,
মহিমান্বিত গুণসমূহের ওসিলা দিয়ে
প্রার্থনা করি, তিনি আমাকে এবং সমস্ত
মুসলমান ভাই-বোনকে এ কিতাব দ্বারা উপকৃত
হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমরা এমন না
হয়ে যাই, যারা নিজ দায়িত্ব আদায় না করে,
স্ত্রীর হক উশুল করতে চায়। আমাদের
উদ্দেশ্য কারো অনিয়মকে সমর্থন না করা
এবং এক পক্ষের অপরাধের ফলে অপর পক্ষের
অপরাধকে বৈধতা না দেয়া। বরং আমাদের
উদ্দেশ্য প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বের
ব্যাপারে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির জন্য
সচেতন করা।
পরিসমাপ্তি
পরিশেষে স্বামীদের উদ্দেশে বলি, আপনারা
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন, তাদের
কল্যাণকামী হোন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও। কারণ,
তাদের পাঁজরের হাড্ডি দ্বারা সৃষ্টি করা
হয়েছে, পাঁজরের হাড্ডির ভেতর উপরেরটি
সবচে’ বেশি বাঁকা। (যার মাধ্যমে তাদের
সৃষ্টি করা হয়েছে।) যদি সোজা করতে চাও,
ভেঙে ফেলবে। আর রেখে দিলেও তার বক্রতা দূর
হবে না, তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও।
“[৩৯]
নারীদের সাথে কল্যাণ কামনার অর্থ, তাদের
সাথে উত্তম ব্যবহার করা, ইসলাম শিক্ষা
দেয়া, এ জন্য ধৈর্য ধারণ করা; আল্লাহ এবং
তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া,
হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকার উপদেশ
দেয়া। আশা করি, এ পদ্ধতির ফলে তাদের
জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হবে। দরুদ ও
সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরের উপর। আমাদের
সর্বশেষ কথা, “আল্লাহর জন্য সমস্ত
প্রশংসা। তিনি দু-জাহানের পালনকর্তা।”
মুসলিম নারীর পর্দার জরুরি শর্তসমূহ
১. সমস্ত শরীর ঢাকা :
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ْﻞُﻗَﻭ ِﺕﺎَﻨِﻣْﺆُﻤْﻠِﻟ َﻦْﻀُﻀْﻐَﻳ َّﻦِﻫِﺭﺎَﺼْﺑَﺃ ْﻦِﻣ
َّﻦُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ َﻦْﻈَﻔْﺤَﻳَﻭ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ
ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻣ َﺮَﻬَﻇ َّﻦِﻫِﺮُﻤُﺨِﺑ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻴْﻟَﻭ ﺎَﻬْﻨِﻣ
َّﻦِﻬِﺑﻮُﻴُﺟ ﻰَﻠَﻋ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَّﻟِﺇ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺒِﻟ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺋﺎَﺑَﺁ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﺑَﺁ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﺋﺎَﻨْﺑَﺃ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﻨْﺑَﺃ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ﻲِﻨَﺑ
َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺗﺍَﻮَﺧَﺃ ﻲِﻨَﺑ ْﻭَﺃ
َّﻦِﻬِﺋﺎَﺴِﻧ ْﻭَﺃ ﺎَﻣ َّﻦُﻬُﻧﺎَﻤْﻳَﺃ ْﺖَﻜَﻠَﻣ ِﻭَﺃ
َﻦﻴِﻌِﺑﺎَّﺘﻟﺍ ِﺮْﻴَﻏ ِﺔَﺑْﺭِﺈْﻟﺍ ﻲِﻟﻭُﺃ َﻦِﻣ
ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ِﻭَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ِﻞْﻔِّﻄﻟﺍ ﺍﻭُﺮَﻬْﻈَﻳ ْﻢَﻟ
ِﺕﺍَﺭْﻮَﻋ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻳ ﺎَﻟَﻭ
َﻢَﻠْﻌُﻴِﻟ َّﻦِﻬِﻠُﺟْﺭَﺄِﺑ َﻦﻴِﻔْﺨُﻳ ﺎَﻣ ْﻦِﻣ
ﺍﻮُﺑﻮُﺗَﻭ َّﻦِﻬِﺘَﻨﻳِﺯ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ
ﺎَﻬُّﻳَﺃ َﻥﻮُﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َﻥﻮُﺤِﻠْﻔُﺗ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ﴿৩১
﴾( ﺭﻮﻨﻟﺍ-৩১)
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের
হেফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায়
তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে
না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে
ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী,
পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে,
ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন
নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে,
অধীন যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের
গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো
কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর
তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ
করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে
মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট
তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
“[৪০]
অন্যত্র বলেন,
ﺎَﻳ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ْﻞُﻗ َﻚِﺗﺎَﻨَﺑَﻭ َﻚِﺟﺍَﻭْﺯَﺄِﻟ
ِﺀﺎَﺴِﻧَﻭ َﻦﻴِﻧْﺪُﻳ َﻦﻴِﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َّﻦِﻬْﻴَﻠَﻋ ْﻦِﻣ
َّﻦِﻬِﺒﻴِﺑﺎَﻠَﺟ َﻚِﻟَﺫ ﻰَﻧْﺩَﺃ ْﻥَﺃ َﻦْﻓَﺮْﻌُﻳ ﺎَﻠَﻓ
َﻥﺎَﻛَﻭ َﻦْﻳَﺫْﺆُﻳ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻤﻴِﺣَﺭ ﺍًﺭﻮُﻔَﻏ ﴿
৫৯﴾
“হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে,
কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা
যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের
উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে
এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে
তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ
অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[৪১]
২. কারুকার্য ও নকশা বিহীন পর্দা ব্যবহার
করা :
তার প্রমাণ পূর্বে বর্ণিত সূরা নুরের আয়াত-
ﺎَﻟَﻭ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ “তারা স্বীয় রূপ-
লাবণ্য ও সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।” এ
আয়াতের ভেতর কারুকার্য খচিত পর্দাও
অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ তাআলা যে
সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বারণ করেছেন, সে
সৌন্দর্যকে আরেকটি সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত
করাও নিষেধের আওতায় আসে। তদ্রুপ সে সকল
নকশাও নিষিদ্ধ, যা পর্দার বিভিন্ন
জায়গায় অঙ্কিত থাকে বা নারীরা মাথার উপর
আলাদাভাবে বা শরীরের কোন জায়গায় যুক্ত
করে রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
َﻥْﺮَﻗَﻭ َّﻦُﻜِﺗﻮُﻴُﺑ ﻲِﻓ ﺎَﻟَﻭ َﺝُّﺮَﺒَﺗ َﻦْﺟَّﺮَﺒَﺗ
ِﺔَّﻴِﻠِﻫﺎَﺠْﻟﺍ ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ ﴿৩৩﴾ (
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ-৩৩)
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং
প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন
করো না।”[৪২]
ﺝﺮﺒﺘﻟﺍ অর্থ: নারীর এমন সৌন্দর্য ও
রূপ-লাবণ্য প্রকাশ করা, যা পুরুষের যৌন
উত্তেজনা ও সুড়সুড়ি সৃষ্টি করে। এ রূপ
অশ্লীলতা প্রদর্শন করা কবিরা গুনা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে
জিজ্ঞাসা কর না। (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস
হবে।) যথা :
ক. যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত থেকে বের
হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী দেশ
পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল,
আর সে এ অবস্থায় মারা গেল।
খ. যে গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে
পলায়ন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল।
গ. যে নারী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে
স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হল।”[৪৩]
৩. পর্দা সুগন্ধি বিহীন হওয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার
দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সুগন্ধি ব্যবহার
করে নারীদের বাইরে বের হওয়া হারাম।
সংক্ষিপ্ততার জন্য আমরা এখানে উদাহরণ
স্বরূপ, রাসূলের একটি হাদিস উল্লেখ করছি,
তিনি বলেন,
“যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের
হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম
করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার জন্য, সে
নারী ব্যভিচারিণী।”[৪৪]
৪. শীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেসে উঠে এমন
পাতলা ও সংকীর্ণ পর্দা না হওয়া।
ইমাম আহমদ রহ. উসামা বিন জায়েদের সূত্রে
বর্ণনা করেন,
“দিহইয়া কালবির উপহার দেয়া, ঘন বুননের
একটি কিবতি কাপড় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পরিধান করতে
দেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়ে দেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একদিন আমাকে বলেন, কি ব্যাপার, কাপড়
পরিধান কর না? আমি বললাম, আল্লাহর
রাসূল, আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি।
তিনি বললেন, তাকে বল, এর নীচে যেন সে
সেমিজ ব্যবহার করে। আমার মনে হয়, এ
কাপড় তার হাড়ের আকারও প্রকাশ করে দেবে।
“[৪৫]
৫. পর্দা শরীরের রং প্রকাশ করে দেয় এমন
পাতলা না হওয়া।
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
জাহান্নামের দু’ প্রকার লোক আমি এখনো
দেখিনি :
(ক). সে সব লোক যারা গরুর লেজের মত বেত
বহন করে চলবে, আর মানুষদের প্রহার করবে।
(খ). সে সব নারী, যারা কাপড় পরিধান করেও
বিবস্ত্র থাকবে, অন্যদের আকৃষ্ট করবে এবং
তারা নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে
ঘোড়ার ঝুলন্ত চুটির মত। তারা জান্নাতে
প্রবেশ করবে না, তার ঘ্রাণও পাবে না।
৬. নারীর পর্দা পুরুষের পোশাকের ন্যায় না
হওয়া।
ইমাম বুখারি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা
করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারী
এবং নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষের
উপর অভিসম্পাত করেছেন।”[৪৬]
৭. সুখ্যাতির জন্য পরিধান করা হয় বা
মানুষ যার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে, পর্দা
এমন কাপড়ের না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন
“যে ব্যক্তি সুনাম সুখ্যাতির পোশাক
পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন
অনুরূপ কাপড় পরিধান করাবেন, অতঃপর
জাহান্নামের লেলিহান আগুনে তাকে দগ্ধ
করবেন।”
সুনাম সুখ্যাতির কাপড়, অর্থাৎ যে কাপড়
পরিধান করার দ্বারা মানুষের মাঝে
প্রসিদ্ধি লাভ উদ্দেশ্য হয়। যেমন উৎকৃষ্ট
ও দামি কাপড়। যা সাধারণত দুনিয়ার সুখ-
ভোগ ও চাকচিক্যে গর্বিত-অহংকারী
ব্যক্তিরাই পরিধান করে। এ হুকুম নারী-
পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে কেউ এ
ধরনের কাপড় অসৎ উদ্দেশ্যে পরিধান করবে,
কঠোর হুমকির সম্মুখীন হবে, যদি তওবা না
করে মারা যায়।
৮. পর্দা বিজাতীয়দের পোশাক সাদৃশ্য না
হওয়া।
ইবনে ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আবু দাউদ
ও অন্যান্য মুহাদ্দিসিনগণ বর্ণনা করেন,
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল
রাখল, সে ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে
গণ্য।” এরশাদ হচ্ছে,
ْﻢَﻟَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ ِﻥْﺄَﻳ ﺍﻮُﻨَﻣَﺁ ْﻥَﺃ َﻊَﺸْﺨَﺗ
ْﻢُﻬُﺑﻮُﻠُﻗ ِﺮْﻛِﺬِﻟ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣَﻭ َﻝَﺰَﻧ َﻦِﻣ ِّﻖَﺤْﻟﺍ
َﻦﻳِﺬَّﻟﺎَﻛ ﺍﻮُﻧﻮُﻜَﻳ ﺎَﻟَﻭ َﺏﺎَﺘِﻜْﻟﺍ ﺍﻮُﺗﻭُﺃ
ْﻦِﻣ ُﻞْﺒَﻗ ﴿১৬﴾ ( ﺪﻳﺪﺤﻟﺍ:১৬)
“যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর
স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, তার
কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর
তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে
ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল।”[৪৭]
ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন,
“এ জন্য আল্লাহ তাআলা মোমিনদেরকে
মৌলিক কিংবা আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে
তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন।
ইবনে তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন। অর্থাৎ
অত্র আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও
সব ক্ষেত্রে সমান, কাফেরদের অনুসরণ করা
যাবে না।”[৪৮]
সমাপ্ত
_________________________________________
_________________________________________
_____
[১] আহযাব:৩৬
[২] বুখারী
[৩] নিসা : ৩৪
[৪] ইবনে কাসির : ১/৭২১
[৫] সহিহ আল-জামে আল-সাগির : ৫২৯৫
[৬] নিসা : ৩৪
[৭] ফতওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ : ৩২/২৭৫
[৮] মুসলিম
[৯] মুসলিম : ১০/৩০৫
[১০] হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৮৮৭
[১১] দারে কুতনি
[১২] ইবনে কাসির : ১ : ৭৪৩
[১৩] ইবনে হিব্বান, সহিহ আল-জামে : ৬৬০
[১৪] আলবানির সহিহ হাদীস সংকলন : ২৮৭
[১৫] সহিহ সুনানে নাসায়ী : ৩০৩০
[১৬] আহমাদ : ৪ : ৩৪১
[১৭] ইবনে হিব্বান, আল-জামে : ৬৬০
[১৮] ইবনে আবদে রব্বিহি আন্দালুসি রচিত :
তাবায়েউন্নিসা নামক গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
[১৯] তিরমিজি : ২৯৫
[২০] আহমদ, তিরমিজি, সহিহ আল-জামে :
৭১৯২
[২১] নাসায়ী
[২২] মুসলিম : ৬ : ৪৬৫
[২৩] আহমদ, হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৭৫২০
[২৪] জুমার : ৬০
[২৫] মুসলিম : ৭ : ১২০
[২৬] মুসলিম : ১০ : ২৫৯
[২৭] ইমাম আহমদ
[২৮] ইমাম আহমদ, সহিহ আল-জামে : ৭
[২৯] ফতাহুল বারি : ৯ : ২৯৫
[৩০] ইবনে কাসির : ৩ : ৭৬৮
[৩১] মুসলিম : ২১৮২
[৩২] তাবরানি, সহিহ আল-জামে : ৫২৫৯
[৩৩] মুসলিম : ১০:৩১২
[৩৪] নিসা : ৩৪
[৩৫] ইবনে কাসির : ১ : ৭৪৩
[৩৬] মুসনাদে আহমদ : ৫ : ৩
[৩৭] ফাতহুল বারি : ৯ : ২৯৯
[৩৮] আবু দাউদ, তিরমিজি
[৩৯] বর্ণনায় বুখারী, মুসলিম, বায়হাকি ও
আরো অনেকে
[৪০] নূর : ৩১
[৪১] আহজাব : ৫৯
[৪২] আহজাব : ৩৩
[৪৩] হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৩০৫৮
[৪৪] আহমদ, সহিহ আল-জামে : ২৭০১
[৪৫] আহমদ, বায়হাকি
[৪৬] বুখারী, ফাতহুল বারি : ১০ : ৩৩২
[৪৭] হাদিদ : ১৬
[৪৮] ইবনে কাসির : ৪ : ৪৮৪
_________________________________________
________________________________________
লেখক : সানাউল্লাহ বিন নজির আহমদ
ﻒﻴﻟﺄﺗ : ﺀﺎﻨﺛ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﺑ ﺪﻤﺣﺃ ﺮﻳﺬﻧ
সম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়ব
ﺔﻌﺟﺍﺮﻣ : ﻲﻠﻋ ﻦﺴﺣ ﺐﻴﻃ
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ,
রিয়াদ, সৌদিআরব

কিয়ামুল লাইলের সমপরিমাণ আমল

সকল প্রশংসা দু’জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ
তা’আলার জন্য এবং দরূদ ও সালাম নাযিল
হোক সর্বশেষ নবী ও রাসূল, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার
পরিবার ও সাথী এবং সকলের ওপর ।
অতঃপর,
কিয়ামুল লাইল বা রাতের সালাতের ফযিলত
আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ কোন
সন্দেহ নেই। ফরয সালাতের পর এ সালাতের
স্থান। এ সালাতের বৈশিষ্ট্য শুধু ব্যক্তির
পাপ মোচন করা নয়, বরং পাপে লিপ্ত হওয়া
থেকে হিফাযত করা। যেমন আবু উমামা বাহেলি
রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেছেন:
‏( ﻢﻜﻴﻠﻋ ﻡﺎﻴﻘﺑ ﻞﻴﻠﻟﺍ ، ﻪﻧﺈﻓ ﺏﺃﺩ
ﻦﻴﺤﻟﺎﺼﻟﺍ ﻢﻜﻠﺒﻗ ، ﺔﺑﺮﻗﻭ ﻰﻟﺇ ﻢﻜﺑﺭ
ﺓﺮﻔﻜﻣﻭ ، ﺕﺎﺌﻴﺴﻠﻟ ﺓﺎﻬﻨﻣﻭ ، ﻢﺛﻺﻟ ‏) .
“তোমরা রাতের সালাত জরুরী করে নাও, কারণ
তা নেককার লোকদের অভ্যাস, তোমাদের রবের
নৈকট্য, গুনাহের কাফফারা ও পাপ থেকে
সুরক্ষা”। [1]
পূর্বসূরিগণ বরং কয়েক বছর পূর্বে আমাদের
পূর্বপুরুষগণ কিয়ামুল লাইল বা রাতের
সালাতের ব্যাপারে শিথিলতা করতেন না,
কিন্তু বর্তমান যুগে অবস্থা পাল্টে অনেকের
রাত পরিণত হয়েছে দিনে। তাদের থেকে
বিদায় নিয়েছে রাতে আল্লাহর সাথে
মোনাজাতের স্বাদ। অনেকের শিথিলতা ফজর
সালাতের সীমা অতিক্রম করে গেছে।
তাউস ইব্ন কিসান রহ. সেহরির সময় জনৈক
ব্যক্তির সাক্ষাতে আসেন, তাকে বলা হল: সে
ঘুমে। তিনি বললেন: “আমি জানতাম না
সেহরির সময় কেউ ঘুমাতে পারে”। [2] তিনি
যদি আমাদের দেখেন, আপনার ধারণা আমাদের
সম্পর্কে তিনি কি বলবেন?
বান্দার ওপর আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে,
তিনি কতক সহজ আমল দান করেছেন, যার
সওয়াব কিয়ামুল লাইলের সমান। যার থেকে
কিয়ামুল লাইল ছুটে যায় অথবা কিয়ামুল লাইল
যার পক্ষে কষ্টকর, সে যেন কোন অবস্থায়
এসব আমল ত্যাগ না করে। এর অর্থ কিয়ামুল
লাইল ত্যাগ করা নয়, আমাদের পূর্বপুরুষগণ
এমন অর্থ বোঝেননি, বরং তারা কল্যাণের
প্রত্যেক ময়দানে অংশ গ্রহণ করতেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
কতক সাহাবিকে, যারা কিয়ামুল লাইলে অক্ষম
ছিল, কিছু সহজ আমল বাতলে দিয়েছেন যা
কিয়ামুল লাইলের সমান। এটা আমাদের
নেকির পাল্লা ভারী করার জন্য নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ
আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। আবু উমামা বাহেলি
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ﻦﻣ ﻪﻟﺎﻫ ﻞﻴﻠﻟﺍ ﻥﺃ ﻩﺪﺑﺎﻜﻳ ، ﻭﺃ ﻞﺨﺑ
ﻝﺎﻤﻟﺎﺑ ﻥﺃ ﻪﻘﻔﻨﻳ ، ﻭﺃ ﻦﺒﺟ ﻦﻋ
ﻭﺪﻌﻟﺍ ﻥﺃ ﻪﻠﺗﺎﻘﻳ ، ﺮﺜﻜﻴﻠﻓ ﻦﻣ
ﻥﺎﺤﺒﺳ ﻪﻠﻟﺍ ﻩﺪﻤﺤﺑﻭ ، ﺎﻬﻧﺈﻓ ﺐﺣﺃ
ﻰﻟﺇ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﻣ ﻞﺒﺟ ﺐﻫﺫ ﻪﻘﻔﻨﻳ ﻲﻓ
ﻞﻴﺒﺳ ﻪﻠﻟﺍ ﺰﻋ ﻞﺟﻭ ‏) .
“যে শঙ্কাবোধ করে রাত জাগতে পারবে না,
অথবা খরচ না করে সম্পদ জমা করে রাখে,
অথবা শত্রুর সাথে যুদ্ধ না করে ভীরুতা
প্রদর্শন করে, সে যেন ﻥﺎﺤﺒﺳ ﻪﻠﻟﺍ
ﻩﺪﻤﺤﺑﻭ অধিক পাঠ করে, কারণ তা আল্লাহর
রাস্তায় পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করার
চেয়ে অধিক প্রিয়”। [3]
আমি এখানে ফাযায়েলে আমল সম্পর্কে সেসব
হাদিস উল্লেখ করব, যার সওয়াব কিয়ামুল
লাইলের সমপরিমাণ। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তা
বাতলে দিয়েছেন, যেন আমরা আমাদের আমলনামা
ভারী ও সওয়াব বৃদ্ধির ব্রত গ্রহণ করি।
যেমন:
১. ফজর ও এশার সালাত জামাতের
সাথে আদায় করা।
উসমান ইব্ন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ ﻰَّﻠَﺻ َﺀﺎَﺸِﻌْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﺔَﻋﺎَﻤَﺟ َﻥﺎَﻛ
ِﻡﺎَﻴِﻘَﻛ ِﻒْﺼِﻧ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ، ْﻦَﻣَﻭ ﻰَّﻠَﺻ َﺀﺎَﺸِﻌْﻟﺍ
َﺮْﺠَﻔْﻟﺍَﻭ ﻲِﻓ ٍﺔَﻋﺎَﻤَﺟ ِﻡﺎَﻴِﻘَﻛ َﻥﺎَﻛ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ‏).
“যে এশার সালাত জামাতের সাথে আদায় করল,
সে যেন অর্ধেক রাত কিয়াম করল, আর যে
ফজর ও এশা জামাতের সাথে আদায় করল, সে
যেন পূর্ণ রাত কিয়াম করল”। [4]
এ জন্য উচিত ফরয সালাতগুলো মসজিদে
জামাতের সাথে আদায় করা। কখনো জামাত
ত্যাগ না করা, বিশেষ করে ফজর ও এশার
সালাত। এ দু’ সালাত মুনাফিকদের জন্য খুব
কষ্টকর। যদি তারা এর সওয়াব জানত হাপুড়
পেরে হলেও উপস্থিত হত, যেমন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।
তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রত্যেক সালাত
অর্ধেক রাত কিয়াম করার সমপরিমাণ।
২. যোহর সালাতের পূর্বে চার রাকাত
আদায় করা।
আবু সালেহ রহ. থেকে মুরসাল সনদে একটি
‘মরফূ’ হাদিস বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ُﻊَﺑْﺭَﺃ ٍﺕﺎَﻌَﻛَﺭ َﻞْﺒَﻗ ِﺮْﻬُّﻈﻟﺍ ِﺓَﻼَﺼِﺑ َﻦْﻟِﺪْﻌَﻳ
ِﺮَﺤَّﺴﻟﺍ ‏).
“যোহরের পূর্বে চার রাকাত সেহরির
সালাতের সমপরিমাণ”। [5]
এ চার রাকাতের আরেক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে
আসমানের দ্বারসমূহ এ জন্য উন্মুক্ত হয়। আবু
আইয়ুব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ﻊﺑﺭﺃ ﻞﺒﻗ ﺮﻬﻈﻟﺍ ﺢﺘﻔﺗ ﻦﻬﻟ ﺏﺍﻮﺑﺃ
ﺀﺎﻤﺴﻟﺍ ‏) .
“যোহরের পূর্বে চার রাকাতের জন্য আসমানের
দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করা হয়”। [6]
এ জন্য আমরা দেখি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি খুব যত্নশীল
ছিলেন, কোন কারণে ছুটে গেলে ফরযের পর
কাযা করতেন, ত্যাগ করতেন না। যেমন আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন: “যদি
তিনি যোহরের পূর্বে চার রাকাত আদায় না
করে থাকতেন, তাহলে পরে তা আদায় করতেন”।
[7]
অপর বর্ণনায় তিনি বলেছেন: “যখন
যোহরের পূর্বে তার চার রাকাত ছুটে যেত,
যোহরের পরে তা আদায় করতেন”। [8]
তাই যার চার রাকাত ছুটে যায়, অথবা
কর্মস্থলের পরিবেশের কারণে তা আদায় করা
সম্ভব না হয়, কাজ শেষে বাড়ি ফিরে তা আদায়
করা দোষের নয়।
আবু ঈসা তিরমিযি রহ. বলেছেন: এ হাদিস
প্রমাণ করে ফরযের পূর্বের সুন্নতগুলো
নিয়মিত আদায় করা বিধি সম্মত। আর
ফরযের শেষ সময় পর্যন্ত এর সময় দীর্ঘ
হয়। যদি ফরয আদায়ের সাথে এর সময় শেষ
হয়ে যেত, তবে ফরযের পর আদায় করা কাযা
হিসেবে গণ্য হত। তখন ফরয পরবর্তী
দু’রাকাত সুন্নতের পূর্বে এ চার রাকাত আদায়
করার বিধান হত, অথচ এ অধ্যায়ের অপর
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যোহর পরবর্তী
দু’রাকাত আদায় শেষে এ চার রাকাত আদায় করা
হত। [অতএব যোহরের পূর্বের চার রাকাত পরে
আদায় করা কাযা নয় বরং আদায়, এ জন্য
দু’রাকাত সুন্নতের পর তা আদায় করা বৈধ।
কাযা হলে দু’রাকাত সুন্নতের পূর্বে তা কাযা
করার বিধান থাকত।] ইরাকি রহ. এ অর্থ
উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন: শাফেয়ি
মতাবলম্বীদের নিকট এ অর্থই সঠিক।[9]
৩. সম্পূর্ণ তারাবি ইমামের সাথে
আদায় করা।
আবু যর গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে
রমযানে সিয়াম রাখলাম, সাত দিন বাকি
থাকার আগে মাসের কোথাও তিনি আমাদের
নিয়ে কিয়াম করেননি। তিনি আমাদের নিয়ে
কিয়াম করলেন যে, রাতের এক তৃতীয়াংশ
সমাপ্ত হল। ষষ্ঠ রাতে আমাদের নিয়ে
কিয়াম করেননি, যখন পঞ্চম রাত বাকি
তিনি আমাদের নিয়ে কিয়াম করলেন যে,
রাতের অর্ধেক শেষ হল। আমি বললাম: হে
আল্লাহর রাসূল যদি অবশিষ্ট রাতও আমাদের
নিয়ে কিয়াম করতেন! আবু যর বলেন: অতঃপর
তিনি বললেন: “নিশ্চয় ব্যক্তি যখন
ইমামের সাথে সালাত আদায় করে তার চলে
যাওয়ার আগ পর্যন্ত, তার জন্য পূর্ণ রাত
কিয়াম করা গণ্য করা হয়”। [10]
এটা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার জন্য
অধিকাংশ মসজিদের ইমামগণ রমযানে
মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করেন। তবুও কতক লোক এ
ফযিলতের ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করে,
অথচ এসব ফযিলতের কারণেই রমযান
অন্যান্য মাস থেকে আলাদা মর্যাদার
অধিকারী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﻡﺎَﻗ َﻥﺎَﻀَﻣَﺭ ﺎًﻧﺎَﻤﻳِﺇ ﺎًﺑﺎَﺴِﺘْﺣﺍَﻭ
َﺮِﻔُﻏ ُﻪَﻟ ﺎَﻣ َﻡَّﺪَﻘَﺗ ْﻦِﻣ ِﻪِﺒْﻧَﺫ‏)
“রমযানে যে সওয়াবের দৃঢ় বিশ্বাস ও
আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা নিয়ে কিয়াম করল,
তার পূর্বের পাপ মোচন করে দেয়া হবে”।
অনুরূপ ফযিলত লাইলাতুল কদরের জন্যও
রয়েছে, তার কিয়াম এক হাজার মাস কিয়াম
করার চেয়ে অধিক ফযিলতপূর্ণ। আল্লাহ
তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ُﺔَﻠۡﻴَﻟ ِﺭۡﺪَﻘۡﻟﭐ ٞﺮۡﻴَﺧ ۡﻦِّﻣ ِﻒۡﻟَﺃ ٖﺮۡﻬَﺷ ٣
﴾ ‏[ :ﺭﺪﻘﻟﺍ 3‏]
“লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম”।
[সূরা কাদর: (৩)]
বিস্ময় লাগে তাদের প্রতি যারা এ রাতেও
শিথিলতা করে।
৪. রাতে এক শো আয়াত পাঠ করা।
তামিমে দারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﺃَﺮَﻗ ِﺔَﺌِﻤِﺑ ٍﺔَﻳﺁ ﻲِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ َﺐِﺘُﻛ ُﻪَﻟ
ُﺕﻮُﻨُﻗ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ‏) .
“যে ব্যক্তি রাতে এক শো আয়াত পাঠ করল,
তার জন্য পূর্ণ রাতের কিয়াম লিখা হবে”।
[11]
এক শো আয়াত পাঠ করা খুব সহজ, দশ
মিনিটের বেশী সময় লাগে না। আপনার হাতে
সময় কম থাকলে উদাহরণ স্বরূপ সূরা
সাফ্ফাতের প্রথম চার পৃষ্ঠা পড়ে এ সওয়াব
অর্জন করতে পারেন, অথবা সূরা কালাম ও আল-
হাক্কাহ পাঠ করুন।
কোন কারণে যখন পড়তে না পারেন, ফজর থেকে
যোহরের আগ পর্যন্ত সময়ে পড়ে নিন। এ
নিয়ে গাফিলতি করবেন না, ইনশাআল্লাহ
কিয়ামুল লাইলের সওয়াব অর্জন হবে। ওমর
ইব্ন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﻡﺎَﻧ ِﻪِﺑْﺰِﺣ ْﻦَﻋ ْﻭَﺃ ْﻦَﻋ ٍﺀْﻲَﺷ ُﻪْﻨِﻣ ،
ُﻩَﺃَﺮَﻘَﻓ ﺎَﻤﻴِﻓ َﻦْﻴَﺑ ِﺓﻼَﺻ ِﺓﻼَﺻَﻭ ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ
ِﺮْﻬُّﻈﻟﺍ ، َﺐِﺘُﻛ ﺎَﻤَّﻧَﺄَﻛ ُﻪَﻟ ُﻩَﺃَﺮَﻗ ْﻦِﻣ
ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ‏).
“যে তার পূর্ণ ‘হিযব’ ও অথবা আংশিক
‘হিযব’ না পড়ে ঘুমিয়ে গেল, অতঃপর সে যদি
তা ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে
নেয়, তার জন্য গণ্য করা হবে যেন সে তা
রাতেই পড়েছে”। [12]
মুবারক পুরী রহ. এ হাদিস প্রসঙ্গে বলেছেন:
“এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় রাতে কুরআন
থেকে কিছু নির্ধারণ করে নেয়া জায়েয, যদি
ঘুমের জন্য অথবা কোন কারণে তা ছুটে যায়,
তাহলে তার কাযা করাও জায়েয। যে তা ফজর ও
যোহর মধ্যবর্তী সময়ে কাযা করবে, সে রাতে
আদায়কারী গণ্য হবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা থেকে ইমাম মুসলিম ও তিরমিযি
প্রমুখগণ বর্ণনা করেছেন: ঘুম বা কোন ব্যথা
যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে কিয়ামুল লাইল থেকে বিরত
রাখত, তিনি দিনে তার পরিবর্তে বারো
রাকাত সালাত আদায় করতেন”। [13]
এ হাদিস আমাদের সংবাদ দিচ্ছে যে, দিন-
রাতে কুরআনের নির্দিষ্ট তিলাওয়াত থাকা
বাঞ্ছনীয়, বিশেষ করে রাতে।
ভুললে চলবে না, আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুমানোর পূর্বে
কমপক্ষে দশ আয়াত পাঠ করার জন্য উদ্বুদ্ধ
করেছেন, যেন আমরা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত না
হই?
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ﻦﻣ ﻡﺎﻗ ﺮﺸﻌﺑ ﺕﺎﻳﺁ ﻢﻟ ﺐﺘﻜُﻳ ﻦﻣ
ﻦﻴﻠﻓﺎﻐﻟﺍ ، ﻦﻣﻭ ﻡﺎﻗ ﺔﺌﻤﺑ ﺔﻳﺁ ﺐﺘُﻛ
ﻦﻣ ﻦﻴﺘﻧﺎﻘﻟﺍ ، ﻦﻣﻭ ﻡﺎﻗ ﻒﻟﺄﺑ ﺔﻳﺁ
ﺐﺘُﻛ ﻦﻣ ﻦﻳﺮﻄﻨﻘﻤﻟﺍ ‏).
“দশ আয়াত দ্বারা যে কিয়াম করবে, তাকে
গাফেলদের মধ্যে গণ্য করা হবে না, আর যে এক
শো আয়াত দ্বারা কিয়াম করবে তাকে অনুগতদের
মধ্যে গণ্য করা হবে, আর যে এক হাজার আয়াত
দ্বারা কিয়াম করবে তাকে প্রাচূর্যের
অধিকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে”। [14]
আমরা আল্লাহর কুরআন রীতিমত তিলাওয়াত
করি! আমাদের খতমে কুরআন শুধু রমযানে
সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং পূর্ণ বছর
ব্যাপী তা হওয়া জরুরী।
প্রতি রাতে কিয়ামুল লাইলের সওয়াব হাসিল
করার জন্য এক শো আয়াত পাঠ করা, আল্লাহর
কিতাবকে আঁকড়ে থাকার এক সুন্দর আমল।
৫. রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত
তিলাওয়াত করা।
আবু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﺃَﺮَﻗ ِﻦْﻴَﺘَﻳﻵﺎِﺑ ْﻦِﻣ ِﺮِﺧﺁ ِﺓَﺭﻮُﺳ
ِﺓَﺮَﻘَﺒْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ُﻩﺎَﺘَﻔَﻛ‏) .
“যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত
তিলাওয়াত করল, তার জন্য তা যথেষ্ট হবে”।
[15]
ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এর অর্থ কেউ
বলেছেন: কিয়ামুল লাইলের পরিবর্তে যথেষ্ট
হবে। কেউ বলেছেন: শয়তানের অনিষ্ট থেকে
যথেষ্ট হবে। কেউ বলেছেন: বিপদ-মুসিবত
থেকে নিরাপত্তা হাসিল হবে। তবে সব
অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে”। [16]
ইব্ন হাজার রহ. এ অভিমত সমর্থন করে
বলেছেন: এ হিসেবে আমার বক্তব্য হচ্ছে:
ওপরের সব অর্থ নেয়া সঠিক, আল্লাহ ভালো
জানেন। প্রথম অর্থটি ইব্ন মাসউদ থেকে
আলকামা, আলকামা থেকে আসেম সনদে একটি
‘মরফূ’ হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে:
ْﻦَﻣ” ﺔَﻤِﺗﺎَﺧ َﺃَﺮَﻗ ْﺕَﺃَﺰْﺟَﺃ ﺓَﺮَﻘَﺒْﻟﺍ ُﻪْﻨَﻋ
ﻡﺎَﻴِﻗ .”ﺔَﻠْﻴَﻟ
“যে ব্যক্তি বাকারার শেষ আয়াত পড়ল,
কিয়ামুল লাইলের আমল হিসেবে তার পক্ষ
থেকে তা যথেষ্ট হবে”। [17]
সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করা খুব
সহজ, অধিকাংশ মানুষের তা মুখস্থ রয়েছে।
আল-হামদুলিল্লাহ! মুসলিমের কর্তব্য প্রতি
রাতে তা পাঠ করা। সহজ তাই এতে যথেষ্ট করে
অন্যান্য আমল ত্যাগ করা ঠিক নয়, যার
সওয়াবও কিয়ামুল লাইলের সমপরিমাণ।
কারণ মুমিনের লক্ষ্য হচ্ছে যথাসম্ভব নেকি
হাসিল করা। অনুরূপেআমাদের জানা নেই যে,
কোন্ আমল আল্লাহর গ্রহণযোগ্যতা লাভে
ধন্য হয়।
আব্দুল্লাহ ইব্ন উমাইয়ের রহ. বলেছেন:
“নিকৃষ্ট পেশার ন্যায় আল্লাহর ইবাদাতেও
সামান্য আমল তোমার নিজের জন্য যথেষ্ট
মনে কর না, বরং তুমি মন-প্রাণ দিয়ে অধিক
অর্জনের চেষ্টা কর”। [18]
৬. সচ্চরিত্র।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
‏( َّﻥِﺇ َﻦِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ ُﻙِﺭْﺪُﻴَﻟ ِﻦْﺴُﺤِﺑ ِﺕﺎَﺟَﺭَﺩ ِﻪِﻘُﻠُﺧ
ِﻢِﺋﺎَﻗ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﻢِﺋﺎَﺻ ‏).
“নিশ্চয় মুমিন তার সচ্চরিত্রের দ্বারা
রাতে কিয়ামকারী দিনে সিয়াম পালনকারীর
মর্যাদা অর্জন করে”। [19]
আবু তাইয়্যেব শামসুদ্দিন রহ. বলেছেন:
“সচ্চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে এ সওয়াব
দানের কারণ হচ্ছে, সিয়াম পালনকারী ও
রাতে কিয়ামকারী উভয়ে নিজের নফসের সাথে
মুজাহাদা করে। মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি
ভিন্ন হওয়া সত্বেও যে সবার সাথে
সচ্চরিত্র প্রদর্শন করে, সে যেন অনেক
নফসের সাথে মুজাহাদা করে, ফলে সে সিয়াম ও
কিয়ামকারীর মর্তবা লাভ করে, বরং অনেক
সময় তাদেরও ছাড়িয়ে যায়”। [20]
একটি সচ্চরিত্র হচ্ছে মানুষের সাথে
সুসম্পর্ক কায়েম রাখা ও তাদের থেকে কষ্ট দূর
করা।
মুমিনকে ইমানের পর সচ্চরিত্রের চেয়ে
উত্তম কোন জিনিস প্রদান করা হয়নি, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের
নিকট ‘হুসনে খুলুক’ বা সচ্চরিত্র প্রার্থনা
করতেন। যেমন জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
সালাত শুরু করতেন তখন তাকবির বলে বলতেন:
‏( ﻥﺇ ﻲﻜﺴﻧﻭ ﻲﺗﻼﺻ ﻲﺗﺎﻤﻣﻭ ﻱﺎﻴﺤﻣﻭ ﻪﻠﻟ
ﺏﺭ ﻦﻴﻤﻟﺎﻌﻟﺍ ، ﻻ ﻚﻳﺮﺷ ﻪﻟ ، ﻚﻟﺬﺑﻭ
ﺕﺮﻣﺃ ﺎﻧﺃﻭ ﻦﻣ ﻦﻴﻤﻠﺴﻤﻟﺍ ، ﻢﻬﻠﻟﺍ
ﻲﻧﺪﻫﺍ ﻦﺴﺣﻷ ﻝﺎﻤﻋﻷﺍ ﻦﺴﺣﺃﻭ ﻕﻼﺧﻷﺍ ،
ﻻ ﻱﺪﻬﻳ ﺎﻬﻨﺴﺣﻷ ﻻﺇ ﺖﻧﺃ ، ﻲﻨﻗﻭ ﺊﻴﺳ
ﻝﺎﻤﻋﻷﺍ ﺊﻴﺳﻭ ﻕﻼﺧﻷﺍ ، ﻻ ﻲﻘﻳ ﺎﻬﺌﻴﺳ
ﻻﺇ ﺖﻧﺃ‏) .
“নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার
জীবন ও আমার মৃত্যু দু’জাহানের রব আল্লাহর
জন্য, তার কোন শরীক নেই, আমাকে তারই
নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি মুসলিমদের
অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ আমাকে সুন্দর আমল ও
সুন্দর আখলাকের পথ দেখান, আপনি ব্যতীত
কেউ সুন্দর আখলাকের পথ দেখাতে পারে না।
আপনি আমাকে খারাপ আমল ও খারাপ আখলাক-
চরিত্র থেকে রক্ষা করুন, আপনি ব্যতীত কেউ
তা থেকে রক্ষা করতে পারে না”। [21]
অনুরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যতবার আয়নায় চেহারা দেখতেন সচ্চরিত্রের
জন্য দোয়া করতেন। ইব্ন মাসউদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
আয়নায় চেহারা দেখতেন বলতেন:
‏( ﻢﻬﻠﻟﺍ ﺎﻤﻛ ﻲِﻘْﻠَﺧ ﺖﻨﺴﺣ ﻦﺴﺤﻓ ﻲِﻘُﻠُﺧ ‏). ‌
“হে আল্লাহ তুমি আমার সৃষ্টি সুন্দর করেছ,
অতএব আমার চরিত্রও সুন্দর কর”। [22]
সচ্চরিত্রশীল লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিক প্রিয় এবং
কিয়ামতের দিন তার অতি নিকটে বসবে।
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ﻥﺇ ﻦﻣ ﻢﻜﺒﺣﺃ ﻲﻟﺇ ، ﻢﻜﺑﺮﻗﺃﻭ ﻲﻨﻣ
ﺎﺴﻠﺠﻣ ﻡﻮﻳ ﺔﻣﺎﻴﻘﻟﺍ ؛ ﻢﻜﻨﺳﺎﺣﺃ
ﺎﻗﻼﺧﺃ ‏).
“তোমাদের মধ্যে আমার অতি প্রিয় ও
কিয়ামতের দিন আমার অতি নিকটে আসন
গ্রহণকারী সে, যে তোমাদের মধ্যে অধিক
সুন্দর চরিত্রের অধিকারী”। [23]
উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির জন্য
আল্লাহ জান্নাতের উঁচু স্থানে প্রাসাদ
নির্মাণ করবেন, যা তার সওয়াব ও সম্মানের
বিনিময়। আবু বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ﺎﻧﺃ ٌﻢﻴِﻋَﺯ ﺖﻴﺒﺑ ﻲﻓ ِﺾَﺑَﺭ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻤﻟ
ﻙﺮﺗ َﺀﺍَﺮِﻤْﻟﺍ ﻥﺇﻭ ﻥﺎﻛ ،ﺎﻘﺤﻣ ﺖﻴﺒﺑﻭ
ﻲﻓ ﻂﺳﻭ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻤﻟ ﻙﺮﺗ ﺏﺬﻜﻟﺍ ﻥﺇﻭ
ﻥﺎﻛ ،ﺎﺣﺯﺎﻣ ﺖﻴﺒﺑﻭ ﻲﻓ ﻰﻠﻋﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ
ﻦﻤﻟ ُﻪَﻘُﻠُﺧ َﻦَّﺴَﺣ ‏) .
“সত্য পথে থেকেও যে ঝগড়া ত্যাগ করল, আমি
তার জন্য জান্নাতের উত্তম স্থানে ঘরের
জিম্মাদার। হাসি-ঠাট্টায় যে মিথ্যা ত্যাগ
করল আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে
ঘরের জিম্মাদার। আর যে তার চরিত্র উত্তম
করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের উঁচু স্থানে
ঘরের জিম্মাদার”। [24]
সচ্চরিত্র শুধু দূরের লোক বা অপরদের মধ্যে
সীমাবদ্ধ করে নিকট আত্মীয় বা আপনাদের
ভুলা ঠিক নয়, বরং সচ্চরিত্রের হাত পিতা-
মাতা ও পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের জন্য
প্রসারিত করা উচিত। কতক ব্যক্তিকে দেখা
যায় বাইরের লোকদের সাথে প্রশস্ত বক্ষ,
হাসি-খুশি ও সচ্চরিত্রশীল, কিন্তু নিজ
পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের সাথে তার
উল্টো, যা একেবারে পরিত্যাজ্য।
৭. বিধবা ও মিসকিনদের সেবা করার
চেষ্টা করা।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ﻲِﻋﺎَّﺴﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِﺔَﻠَﻣْﺭَﻷﺍ ِﻦﻴِﻜْﺴِﻤْﻟﺍَﻭ ؛
ِﺪِﻫﺎَﺠُﻤْﻟﺎَﻛ ﻲِﻓ ِﻞﻴِﺒَﺳ ِﻪَّﻠﻟﺍ ْﻭَﺃ ِﻢِﺋﺎَﻘْﻟﺍ
َﻞْﻴَّﻠﻟﺍ َﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﻢِﺋﺎَّﺼﻟﺍ ‏).
“বিধবা ও মিসকিনদের সেবায়
আত্মনিয়োগকারী আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ
অথবা রাতে কিয়ামকারী ও দিনে সালাত
আদায়কারী ব্যক্তির সমান”। [25]
এ সওয়াব খুব সহজে অর্জন করা সম্ভব, যেমন
কোন নিঃস্ব বা গরিব ব্যক্তির দরখাস্ত
কোন এনজিও বা সেবা সংস্থায় পেশ করা, যেন
তারা তার অবস্থা জানে ও তাকে প্রয়োজনীয়
সাহায্য করে। অনুরূপ বিধবা-যার স্বামী নেই
তার সেবা করেও এ সওয়াব অর্জন করা সম্ভব,
যেমন তার প্রয়োজন পূর্ণ করা। এটা কঠিন
কোন কর্ম নয়, আপনি আপনার নিকট
আত্মীয়দের মধ্যে খোঁজ নিয়ে দেখতে পাবেন
কোন ফুফু অথবা কোন খালা অথবা কোন দাদীর
স্বামী নেই, তাদের খিদমত করে জিহাদ ও
কিয়ামুল লাইলের সওয়াব অর্জন করতে
পারেন।
৮. জুমার কতিপয় আদাব গুরুত্বসহ
আদায় করা।
আউস ইব্ন আউস সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি:
‏( ْﻦَﻣ َﻞَّﺴَﻏ َﻡْﻮَﻳ ِﺔَﻌُﻤُﺠْﻟﺍ َﻞَﺴَﺘْﻏﺍَﻭ ، َّﻢُﺛ
َﺮَّﻜَﺑ َﺮَﻜَﺘْﺑﺍَﻭ ، ﻰَﺸَﻣَﻭ ْﻢَﻟَﻭ ْﺐَﻛْﺮَﻳ ،
ﺎَﻧَﺩَﻭ ْﻦِﻣ ِﻡﺎَﻣِﻹﺍ َﻊَﻤَﺘْﺳﺎَﻓ ، ْﻢَﻟَﻭ ُﻎْﻠَﻳ ،
َﻥﺎَﻛ ُﻪَﻟ ِّﻞُﻜِﺑ ٍﺓَﻮْﻄُﺧ ُﻞَﻤَﻋ ٍﺔَﻨَﺳ ؛ ُﺮْﺟَﺃ
ﺎَﻬِﻣﺎَﻴِﻗَﻭ ﺎَﻬِﻣﺎَﻴِﺻ ‏).
“জুমার দিন যে গোসল করল, ভালো করে;
অতঃপর আগেভাগে মসজিদে গেল; হেঁটে চলল,
বাহনে চড়ল না; ইমামের নিকটবর্তী হল;
অনর্থক কর্মে লিপ্ত না হয়ে মনোযোগসহ
শ্রবণ করল; তার প্রতি কদমে লেখা হবেএক
বছরের আমল তথা এক বছরের সিয়াম ও
কিয়ামের সওয়াব”। [26]
অতএব যে ব্যক্তি এসব আদব রক্ষা করবে তার
প্রতি কদম এক রাত অথবা এক সপ্তাহ অথবা
এক মাস কিয়ামের সমান নয়, বরং পূর্ণ এক
বছর কিয়াম করার সমান।
জুমার দিন গোসল করা, আগে আগে ও পায়ে হেঁটে
মসজিদে যাওয়া, ইমামের নিকটবর্তী বসা,
শেষের কাতারে পিছিয়ে না পড়া, মনোযোগসহ
খুতবা শ্রবণ করা এবং বেহুদা ও অনর্থক
কর্মকাণ্ড ত্যাগ করার মধ্যে এসব আদব
সীমাবদ্ধ, যা খুব সহজ ও খুব সামান্য।
জ্ঞাতব্য যে, খুতবার সময় অহেতুক নড়াচড়া
করা অনর্থক কর্মের অন্তর্ভুক্ত। যে অনর্থক
কর্ম করল তার জুমা নেই। যে পাথর স্পর্শ
করল সে অনর্থক কর্ম করল। যে বলল, ‘চুপ
থাক’, সে অনর্থক কর্ম করল: অর্থাৎ যে তার
পাশের সাথী অথবা নিজের সন্তানকে বলল
‘চুপ থাক’ সে বেহুদা কর্ম করল। খুতবার সময়
যে তসবিহ অথবা মোবাইল অথবা কোন জিনিস
দ্বারা খেলল, সেও অনর্থক কর্ম করল।
সুতরাং জুমার আদবসমূহে শিথিলতা করা ঠিক
নয়, অন্যথায় আমরা এমন সব বিরাট সওয়াব
থেকে বঞ্চিত হব, পরকালে যা আমাদের নেকির
পাল্লা ভারী করবে ও অনেক বছরের সওয়াব
প্রদান করবে।
৯. আল্লাহর রাস্তায় একদিন ও
একরাত জাগ্রত থাকা।
সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি:
‏( ﻁﺎﺑﺭ ﻡﻮﻳ ﺔﻠﻴﻟﻭ ﺮﻴﺧ ﻦﻣ ﻡﺎﻴﺻ ﺮﻬﺷ
ﻪﻣﺎﻴﻗﻭ ، ﻥﺇﻭ ﺕﺎﻣ ﻯﺮﺟ ﻪﻴﻠﻋ ﻪﻠﻤﻋ
ﻱﺬﻟﺍ ﻪﻠﻤﻌﻳ ﻥﺎﻛ ، ﻱﺮﺟُﺃﻭ ﻪﻗﺯﺭ ﻪﻴﻠﻋ
، َﻦِﻣﺃﻭ ﻥﺎَّﺘﻔﻟﺍ ‏) ، ﻥﺎَّﺘﻔﻟﺍﻭ ﺔﻨﺘﻓ ﻮﻫ
.ﺮﺒﻘﻟﺍ
“একদিন ও একরাত আল্লাহর রাস্তায় শত্রুর
মোকাবেলায় যুদ্ধের প্রস্তুতিসহ দাঁড়িয়ে
থাকা একমাস সিয়াম ও একমাস কিয়াম
অপেক্ষা উত্তম। যদি সে মারা যায় তাহলে
তার আমল চলমান থাকবে যা সে আঞ্জাম দিত,
তার রিযিক তার জন্য অব্যাহত থাকবে এবং
ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে”। [27]
ফিতনা অর্থ কবরের আযাব।
১০. ঘুমের পূর্বে কিয়ামুল লাইলের
নিয়ত করা।
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি ‘মরফূ’
হাদিস বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ ﻰَﺗَﺃ ُﻪَﺷﺍَﺮِﻓ َﻮُﻫَﻭ ﻱِﻮْﻨَﻳ ْﻥَﺃ َﻡﻮُﻘَﻳ
ﻲِّﻠَﺼُﻳ ْﻦِﻣ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ، ُﻩﺎَﻨْﻴَﻋ ُﻪْﺘَﺒَﻠَﻐَﻓ ﻰَّﺘَﺣ
َﺢَﺒْﺻَﺃ ، َﺐِﺘُﻛ ُﻪَﻟ ﺎَﻣ ﻯَﻮَﻧ ، َﻥﺎَﻛَﻭ ُﻪُﻣْﻮَﻧ
ًﺔَﻗَﺪَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ْﻦِﻣ ِﻪِّﺑَﺭ َّﺰَﻋ َّﻞَﺟَﻭ‏) .
“যে ব্যক্তি তার বিছানায় আগমন করল এ
নিয়তে যে রাতে উঠে সালাত আদায় করবে,
কিন্তু তার চোখে ঘুম চেপে থাকল ভোর
পর্যন্ত, তার নিয়ত অনুসারে তার জন্য লিখা
হবে, আর তার ঘুম হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে
তার জন্য সদকা”। [28]
লক্ষ্য করুন নিয়তের গুরুত্ব। নিয়ত আমলের
জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয়! এ থেকে আমরা ঐ
ব্যক্তির বদ নসিব জানতে পারি, যে ঘুমানোর
সময় ফজর সালাত আদায়ের পর্যন্ত নিয়ত করে
না। এ হতভাগা শুধু কর্মস্থল অথবা
বিদ্যালয়ের জন্য জাগ্রত হয়। সে কবিরা
গুনায় অনবরত লিপ্ত, এ অবস্থায় তার মৃত্যু
হলে পরিমাণ শুভ হনে না, আল্লাহর নিকট
পানাহ চাই।
আর যে ফজরের সময় উঠার নিয়ত করে তার
জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিল, কিন্তু তবুও
উঠতে পারল না, তার ওপর কোন তিরস্কার
নেই। কারণ ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহর
বিধানের সীমালঙ্ঘন নেই, সীমালঙ্ঘন হচ্ছে
জাগ্রত অবস্থায়।
১১. কিয়ামুল লাইলের সমান
আমলগুলো প্রচার করা।
আপনার থেকে জেনে কেউ যদি এর ওপর আমল
করে, তাহলে তাদের সমপরিমাণ আপনার
সওয়াব হবে। কারণ কাউকে ভাল কাজের কথা
বলা তা বাস্তবায়ন করার মত সওয়াব। অতএব
আপনি কল্যাণের আহ্বানকারী হোন, ইলম
প্রচার করুন, তাহলে যারা আপনার কারণে
আমল করবে, তাদের ন্যায় আপনিও সওয়াবের
অধিকারী হবেন। সকল প্রশংসার মালিক
আল্লাহ তা‘আলা।
সমাপ্ত
[1] তিরমিযি : (৩৫৪৯), ইব্ন খুযাইমাহ:
(১১৩৫), হাকেম: (১১৫৬), আলবানী সহিহ
‘তারগিব ও তারহিব’: (৬২৪) গ্রন্থে
হাদিসটি হাসান বলেছেন।
[2] ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবকাতুল
আসফিয়া’ লি আবু নুআইম: (৪/৬)
[3] তাবরানি ফিল কাবির: (৭৭৯৫), আল-
বানি ‘সহিহ তারগিব ওয়া তারহিব’:
(১৫৪১) গ্রন্থে বলেছেন: হাদিসটি হাসান
লি গায়রিহি।
[4] মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (৩৭১), আহমদ ফি
‘ফাতহুর রাব্বানি’: (৫/১৬৮), মুসলিম:
(৬৫৬), তিরমিযি: (২২১), আবু দাউদ:
(৫৫৫), দারামি: (১২২৪)
[5] মুসান্নাফ ইব্ন আবি শায়বাহ: (৫৯৪০),
আল-বানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।
দেখুন: সিলসিলাতুস সাহিহাহ: (১৪৩১)
[6] আবু দাউদ: (৩১২৮), আল-বানি ‘সহিহ
তারগিব ওয়া তারহিব’: (৫৮৫) গ্রন্থে
হাদিসটি হাসান লি গায়রিহি বলেছেন।
আরো দেখুন: শামায়েলে তিরমিযি।
[7] তিরমিযি: (৪২৬), আল-বানি সহিহ
তিরমিযিতে: (৩৫০) হাদিসটি হাসান
বলেছেন।
[8] বায়হাকি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আল-
বানি সহিহ আল-জামে: (৪৭৫৯) গ্রন্থে
হাসান বলেছেন।
[9] জামে তিরমিযি: (৯৪২৬)
[10] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (৫/১১),
আবু দাউদ: (১৩৭৫), তিরমিযি: (৮০৬),
নাসায়ি: (১৩৬৪), ইব্ন মাজাহ: (১৩২৭),
আল-বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
দেখুন: সহিহ আল-জামে: (১৬১৫)
[11] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/১১),
দারামি: (৩৪৫০), আল-বানি হাদিসটি
সহিহ বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে:
(৬৪৬৮)
[12] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/২৯),
মুসলিম: (৭৪৭), তিরমিযি: (৫৮১),
নাসায়ি: (১৭৯০), আবু দাউদ: (১৩১৩), ইব্ন
মাজাহ: (১৩৪৩), দারামি: (১৪৭৭)
[13] জামে তিরমিযি ব্যাখ্যা গ্রন্থ:
‘তুহফাতুল আহওয়াযি’: (৩/১৮৫), হাদিস
নং: (৫৮১)
[14] আবু দাউদ: (১৩৯৮), ইব্ন মাজাহ: (২৫৭২)
, ইব্ন খুজাইমাহ: (১১৪৪), দারামি:
(৩৪৪৪), হাকেম: (২০৪১), আল-বানি
‘সহিহ তারগিব ওয়া তারহিব’: (৬৩৯)
গ্রন্থে বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও
সহিহ।
[15] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/৯৯),
বুখারি: (৫০১০), মুসলিম: (৮০৭),
তিরমিযি: (২৮৮১), আবু দাউদ: (১৩৯৭),
ইব্ন মাজাহ: (১৩৬৯), দারামি: (১৪৮৭)
[16] শারহুন নববী আলা সহিহ মুসলিম:
(৬/৩৪০), হাদিস নং: (৮০৭)
[17] ফাতহুল বারি, লি ইব্ন হাজার
আসকালানি: (৮/৬৭৩), হাদিস নং: (৫০১০)
[18] ‘হুলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবকাতুল
আসফিয়া’ লি আবু নুআইম: (৩/৩৫৪)
[19] ইমাম মালেক: (১৬৭৫), আহমদ ফি
‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/৭৬), আবু দাউদ:
(৪৭৯৮), ইব্ন হিব্বান: (৪৮০), হাকেম:
(১৯৯), আল-বানি হাদিসটি সহিহ
বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে: (১৬২০)
[20] আউনুল মাবুদ শারহু আবু দাউদ: (১৩/১৫৪),
হাদিস নং: (৪৭৯৮)
[21] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (৩/১৮১),
মুসলিম: (৭৭১), তিরমিযি: (৩৪২১),
নাসায়ি: (৮৯৭), আবু দাউদ: (৭৬০),
দারামি: (১২৩৮), ইব্ন খুজাইমাহ: (৪৬২),
বায়হাকি: (২১৭২), আবু ইয়ালা: (২৮৫)
[22] ইমাম আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’:
(১৪/২৮১), ইব্ন হিব্বান: (৯৫৯), আবু
ইয়ালা: (৫০৭৫), তায়ালিসি: (৩৭৪), আল-
বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, দেখুন:
সহিহ আল-জামে: (১৩০৭)
[23] আহমদ ফি ফাতহুর রাব্বানি: (২৩/১৩),
তিরমিযি: (২০১৮), তাবরানি ফিল
কাবির: (১০৪২৪), বুখারি ফিল আদাবিল
মুফরাদ: (২৭২), আল-বানি সহিহ ‘তারগিব
ওয়া তারহিব’: (২৬৪৯) গ্রন্থে হাদিসটি
সহিহ বলেছেন।
[24] আবু দাউদ: (৪৮০০), বায়হাকি: (২০৯৬৫),
তাবরানি ফিল কাবির: (৭৪৮৮), আল-বানি
হাদিসটি হাসান বলেছেন, দেখুন: সহিহ
আল-জামে: (১৪৬৪)
[25] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৯/৫৫),
বুখারি: (৫৩৫৩), মুসলিম: (২৯৮২),
তিরমিযি: (১৯৬৯), নাসায়ি: (২৫৭৭),
ইব্ন মাজাহ: (২১৪০), ইব্ন হিব্বান:
(৪২৪৫), বায়হাকি: (১২৪৪৪)
[26] আহমদ ফি ‘ফাতহুল রাব্বানি’: (৬/৫১),
তিরমিযি: (৪৯৬), আবু দাউদ: (৩৪৫),
নাসায়ি: (১৩৮১), ইব্ন মাজাহ: (১০৮৭),
দারামি: (১৫৪৭), হাকেম: (১০৪১), ইব্ন
খুজাইমাহ: (১৭৫৮), আল-বানি হাদিসটি
সহিহ বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে:
(৬৪০৫)
[27] বুখারি: (২৮৯২), মুসলিম: (১৯১৩),
নাসায়ি: (৩১২৮)
[28] নাসায়ি: (১৭৮৭), ইব্ন মাজাহ: (১৩৪৪),
আল-বানি হাদিসটি হাসান বলেছেন, দেখুন:
সহিহ আল-জামে: (৫৮৪১)
_________________________________________
_______________________________________
____________________________
লেখক : ড. মুহাম্মাদ ইব্ন ইবরাহিম আন-
নাইম
অনুবাদক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ,
রিয়াদ, সৌদিআরব