মৃত ব্যক্তি কি কোন জীবিত ব্যক্তির উপকার করতে পারে?

মৃত ব্যক্তি কি কোন মানুষের উপকার করতে
পারে?
__________________________________
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন : মৃত ব্যক্তি
নিজের কোন উপকার করতে পারে না।
তিনি বলেছেন :মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে
তখন তার আমল বন্ধ
হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে
পেতে থাকে।
১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে
মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে)
২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম
(বিদ্যা)
৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে।
বর্ণনায়: মুসলিম
হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা গেল
মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ, ক্ষমা
প্রার্থনার ফলে উপকার পেতে পারে।
কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের থেকে
এরূপ কিছু আশা করতে পারেনা।
যখন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, কোন
আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল
আমল বন্ধ হয়ে যায়। তার আমল দিয়ে সে
কোন উপকার লাভ করতে পারে না, তখন
আমরা কিভাবে বিশ্বাস করি যে, অমুক
ব্যক্তি কবরে জীবিত আছেন? তার সাথে
আমাদের যোগাযোগ হয়? তিনি আমাদের
উপকার করতে পারেন? আমাদের প্রার্থনা
শুনেন ও আল্লাহর কাছে শুপারিশ করেন?
এগুলো সব অসার বিশ্বাস। এগুলো যে শিরক
তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মৃত ব্যক্তিরা যে কবরে শুনতে পায় না,
কেহ তাদেরকে কিছু শুনাতে পারে না
এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনে
ইরশাদ করেছেন। তিনি নবীকে সম্বোধন
করে বলেছেন:নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে
পারবে না,
আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে
না। (সূরা নামল, আয়াত ৮০)
যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোন মৃতকে কিছু শোনাতে
পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ কিভাবে এ
অসাধ্য সাধন করতে পারে? কাজেই আমরা
মৃতদের কবরে যেয়ে যা কিছু বলি, যা কিছু
প্রার্থনা করি তা তারা কিছুই শুনতে পায়
না। যখন তারা শুনতেই পায় না, তখন তারা
প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কিভাবে কবুল
করবে? কিভাবে তাদের হাজত-আকাংখা
পূরণ করবে?
আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা
করা হয়, তা সবই বাতিল।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না,
যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং
তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব
তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি
যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ
যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে
তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর
তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর
অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই।
তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে
তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি
দয়ালু (সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭)
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ
ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে
দুআ-প্রার্থনা করা হয় তা সবই বাতিল।
আরো স্পষ্ট হল যে, এগুলো কাউকে উপকার
করতে পারে না বা ক্ষতি করতে পারে না।
যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-
প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না
তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন হবে? কেন
তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে? কেন
তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে?
অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়,
অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে
গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে এই দুআ
করেছিলাম। দুআ কবুল হয়েছে, যা
চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি। এ
ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি
মিথ্যারোপের শামিল।
হ্যা, হতে পারে অলী আওলিয়াদের
মাজারে গিয়ে কিছু চাইলে তা যেন অর্জন
হবে না এ কথা বলা যায় না। তবে অর্জন
হলে সেটা দু কারণে হতে পারে:
এক. অলীর মাজারে যেয়ে যা চাওয়া
হয়েছে তা পুরণ করা কোন সৃষ্টিজীবের
পক্ষে সম্ভব হবে অথবা হবে না। যদি সম্ভব
হয়, তাহলে হতে পারে শয়তান প্রার্থীত
বিষয়গুলোকে অর্জন করিয়ে দিয়েছে।
যাতে শিরকের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। যা
চেয়েছে শয়তান সেগুলো তাকে দিয়েছে।
কেননা যে সকল স্থানে আল্লাহ তাআলা
ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হয় সে সকল
স্থানে শয়তান বিচরণ করে। যখন শয়তান
দেখল কোন ব্যক্তি কবর পূজা করছে, তখন
সে তাকে সাহায্য করে থাকে। যেমন সে
সাহায্য করে মূর্তিপূজারীদের। সে তাদের
এ সকল শিরকি কাজগুলোকে তাদের কাছে
সুশোভিত করে উপস্থাপন করে থাকে বলে
আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বহু স্থানে
উল্লেখ করেছেন।
এমনিভাবে শয়তান গণক ও জোতিষিদের
সাহায্য করে থাকে তাদের কাজ-কর্মে।
তাই অনেক সময় এ সকল গণকদের কথা ও
ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হতে দেখা
যায়।
এমনিভাবে শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ
করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলে থাকে অমুক
মাজারে যাও, তাহলে কাজ হবে। পরে সে
যখন মাজারে যায় তখন শয়তান মানুষের রূপ
ধারণ করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে।
ফলে বিপদে পড়া মানুষটি মনে করে
মাজারে শায়িত অলী তাকে সাহায্য
করেছে। এমনিভাবে শয়তান মানব সমাজে
শিরকের প্রচলন ঘটিয়েছে ও শিরকের
প্রসার করে যাচ্ছে।
দুই. আর যদি প্রার্থীত বিষয়টি এমন হয় যা
পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই
সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ বিষয়টি
অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা
ছিল। কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির
অর্জন হয়নি।
তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে
হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয়
বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই
কুসংস্কার। কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ
প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ
থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও
বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে
শায়িত অলীর কারণে হয়েছে। এর নামই হল
ঈমান। এর নামই হল নির্ভেজাল তাওহীদ।
তাওহীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়,
কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে ব্যক্তির
মুক্তি নেই।
অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের
পার্থক্য জানে না। মুজিযা আর কারামত
কি তা বুঝে না। মুজিযা হল এমন অলৌকিক
বিষয় যা নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। আর
কারামত হল এমন অলৌকিক বিষয় যা
আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের থেকে
প্রকাশ পায়। মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল
নবী বা রাসূল হওয়া। আর কারামত
প্রকাশের শর্ত হল নেককার ও মুত্তাকী
হওয়া। অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-
ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে
অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও
নয়, কারামতও নয়। সেটা হল দাজ্জালী
ধোকা-বাজি বা প্রতারণা।
অনেক অজ্ঞ লোক ধারনা করে থাকে
মুজিযা বা কারামত, সাধনা বা চেষ্টা-
প্রচেষ্টা করে অর্জন করা যায়। বা মানুষ
ইচ্ছা করলেই তা করতে পারে। তাই এ সকল
অজ্ঞ লোকেরা ধারনা করে অলী
আউলিয়াগণ ইচ্ছা করলে কারামতের
মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটাতে পারেন, বিপদ
থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন।
কিন্তু আসল ব্যাপার হল, কারামত কোন
ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র
আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মানুষ ইচ্ছা করলে
কখনো কারামত সংঘটিত করতে পারে না,
সে যত বড় অলী বা পীর হোক না কেন।
কোন বিবেকমান মানুষ বিশ্বাস করে না
যে, একজন মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর
তার কিছু করার ক্ষমতা থাকে। আবার যদি
সে কবরে চলে যায় তাহলে কিভাবে সে
কিছু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে?
এ ধরনের কথা তারাই বিশ্বাস করতে
পারে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে যাদের কোন
নজীর নেই। অলী তো দূরের কথা কোন
নবীর কবরও পূজা করা জায়েয নেই। নবীর
কবরতো পরের কথা, জীবিত থাকা কালে
কোন নবীর ইবাদত করা, বা তাকে দেবতা
জ্ঞান করে পূজা করা যায় না। এটা
ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ
তাআলা বলেন :কোন মানুষের জন্য সংগত
নয় যে, আল্লাহ
তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান
করার পর সে মানুষকে বলবে, তোমরা
আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে
যাও। বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী
(আল্লাহ ভক্ত) হও। যেহেতু তোমরা কিতাব
শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। আর
তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না
যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ
রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর
তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ
দেবেন? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০

কুরবানীর বিধি বিধান

কুরবানী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ
থেকে এক  বিশেষ অনুগ্রহ। কেননা বান্দাহ
কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী
হতে পারে। কুরবান শব্দটি কুরবুন শব্দ
থেকে উৎকলিত। অর্থাৎ নিকটবর্তী হওয়া,
সান্নিধ্য লাভ করা। যেহেতু আল্লাহর
নৈকট্য লাভ করার মাধ্যম হল কুরবানী তাই
এর নাম কুরবানীর ঈদ। এই দিনে ঈদ পালন
করা হয়ে থাকে এজন্য একে কুরবানীর ঈদ
বলে। এ ঈদের অপর নাম ঈদুল আদ্বহা। আরবি
শব্দ আদ্বহা অর্থ কুরবানীর পশু, যেহেতু এই
দিনে কুরবানীর পশু যবেহ করা হয়, তাই
একে ঈদুল আদ্বহা বলা হয়।
কুরবানীর গুরুত্ব
কুরবানী হলো ইসলামের একটি শি’য়ার বা
মহান নিদর্শন। কুরআন মাজীদে আল্লাহ
তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন:
﴿ ِّﻞَﺼَﻓ ۡﺮَﺤۡﻧﭐَﻭ َﻚِّﺑَﺮِﻟ ٢ ﴾ ‏[ :ﺮﺛﻮﻜﻟﺍ ٢ ‏]
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত
আদায় কর ও পশু কুরবানী কর।’ [সূরা আল-
কাউসার : ২]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
‏« ْﻦَﻣ َﺪَﺟَﻭ ًﺔَﻌَﺳ ْﻢَﻠَﻓ ِّﺢَﻀُﻳ ﺎَﻠَﻓ َّﻦَﺑَﺮْﻘَﻳ
ﺎَﻧﺎَّﻠَﺼُﻣ ‏»
‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও
কুরবানি করে না সে যেন আমাদের
ঈদগাহের ধারে না আসে। [মুসনাদ আহমাদ,
ইবন মাজাহ- ৩১২৩ হাদীসটি হাসান]
যারা কুরবানী পরিত্যাগ করে তাদের
প্রতি এ হাদীস একটি সতর্কবাণী।
অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার নির্দেশ
দিয়ে বলেন,
‏« ﺎَﻳ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ُﺱﺎَّﻨﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِّﻞُﻛ ِﻞْﻫَﺃ ٍﺖْﻴَﺑ ﻲِﻓ
ِّﻞُﻛ ٍﻡﺎَﻋ ﺔَّﻴِﺤْﺿُﺃ‏»
“হে লোক সকল, প্রত্যেক পরিবারের উপর
কুরবানী দেয়া অপরিহার্য।” [সুনান ইবন
মাজাহ-৩১২৫, হাদীসটি হাসান]।
উল্লেখিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়
যে, কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে অনেক
ওলামায়ে কিরাম কুরবানী করা সুন্নাতে
মুয়াক্কাদাহ বলেছেন।
কুরবানীর ইতিহাস
কুরবানী আল্লাহ তা‘আলার একটি বিধান।
আদম আলাইহিস সালাম হতে প্রত্যেক নবীর
যুগে কুরবানী করার ব্যবস্থা ছিল। যেহেতু
প্রত্যেক নবীর যুগে এর বিধান ছিল সেহেতু
এর গুরুত্ব অত্যধিক। যেমন ইরশাদ হয়েছে :
﴿ ِّﻞُﻜِﻟَﻭ ٖﺔَّﻣُﺃ ﺎَﻨۡﻠَﻌَﺟ ﺎٗﻜَﺴﻨَﻣ ْﺍﻭُﺮُﻛۡﺬَﻴِّﻟ
َﻢۡﺳﭐ ِﻪَّﻠﻟﭐ ٰﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ ﻢُﻬَﻗَﺯَﺭ ۢﻦِّﻣ ِﺔَﻤﻴِﻬَﺑ
ِۗﻢَٰﻌۡﻧَﺄۡﻟﭐ ﴾ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٣٤ ‏]
‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর
নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে
জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু
দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা
আল্লাহর নাম স্মরণ করে। [সূরা আল-হাজ্জ:
৩৪]
﴿ ۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ ُﻞۡﺗﭐَﻭ۞ َﺄَﺒَﻧ َﻡَﺩﺍَﺀ ۡﻲَﻨۡﺑﭐ ِّﻖَﺤۡﻟﭑِﺑ
ۡﺫِﺇ ﺎَﺑَّﺮَﻗ ﺎٗﻧﺎَﺑۡﺮُﻗ َﻞِّﺒُﻘُﺘَﻓ ۡﻦِﻣ ﺎَﻤِﻫِﺪَﺣَﺃ
ۡﻢَﻟَﻭ ۡﻞَّﺒَﻘَﺘُﻳ ﴾ِﺮَﺧٓﺄۡﻟﭐ َﻦِﻣ ‏[ :ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ٢٧ ‏]
‘আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের
সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা
উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর একজন
থেকে গ্রহণ করা হলো আর অপরজনের
থেকে গ্রহণ করা হলো না। [সূরা আল-
মায়িদাহ:৩৪]
আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বন্ধু ইবরাহীম
আলাইহিস সালামকে বিভিন্ন পরীক্ষায়
অবতীর্ণ করেছেন এবং ইবরাহীম আলাইহিস
সালাম সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর স্মরণ কর, যখন
ইবরাহীমকে তার রবের কয়েকটি বাণী
দিয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর সে তা পূর্ণ
করল। তিনি বললেন, আমি তোমাকে নেতা
বানাবো’। [সূরা আল-বাকারাহ-১২৪] নিজ
পুত্র যবেহ করার মত কঠিন পরীক্ষার
সম্মুখিন হয়েছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস
সালাম। এ বিষয়ে সূরা আস-সাফ্ফাতের ১০০
থেকে ১০৯ আয়াতে বলা হয়েছে,
﴿ ِّﺏَﺭ ۡﺐَﻫ ﻲِﻟ َﻦِﻣ َﻦﻴِﺤِﻠَّٰﺼﻟﭐ ١٠٠ ُﻪَٰﻧۡﺮَّﺸَﺒَﻓ
ٍﻢَٰﻠُﻐِﺑ ٖﻢﻴِﻠَﺣ ١٠١ ﺎَّﻤَﻠَﻓ َﻎَﻠَﺑ ُﻪَﻌَﻣ َﻲۡﻌَّﺴﻟﭐ
َﻝﺎَﻗ َّﻲَﻨُﺒَٰﻳ ٓﻲِّﻧِﺇ ٰﻯَﺭَﺃ ﻲِﻓ ِﻡﺎَﻨَﻤۡﻟﭐ ٓﻲِّﻧَﺃ
َﻚُﺤَﺑۡﺫَﺃ ۡﺮُﻈﻧﭑَﻓ ﺍَﺫﺎَﻣ ٰۚﻯَﺮَﺗ َﻝﺎَﻗ ِﺖَﺑَﺄَٰٓﻳ
ۡﻞَﻌۡﻓﭐ ﺎَﻣ ُۖﺮَﻣۡﺆُﺗ ٓﻲِﻧُﺪِﺠَﺘَﺳ ﻥِﺇ َﺀٓﺎَﺷ ُﻪَّﻠﻟﭐ
َﻦِﻣ َﻦﻳِﺮِﺒَّٰﺼﻟﭐ ١٠٢ ٓﺎَّﻤَﻠَﻓ ﺎَﻤَﻠۡﺳَﺃ ۥُﻪَّﻠَﺗَﻭ
ِﻦﻴِﺒَﺠۡﻠِﻟ ١٠٣ ُﻪَٰﻨۡﻳَﺪَٰﻧَﻭ ﻥَﺃ ُﻢﻴِﻫَٰﺮۡﺑِﺈَٰٓﻳ ١٠٤
ۡﺪَﻗ َﺖۡﻗَّﺪَﺻ ۚٓﺎَﻳۡﺀُّﺮﻟﭐ ﺎَّﻧِﺇ َﻚِﻟَٰﺬَﻛ ﻱِﺰۡﺠَﻧ
َﻦﻴِﻨِﺴۡﺤُﻤۡﻟﭐ ١٠٥ َّﻥِﺇ ﺍَﺬَٰﻫ َﻮُﻬَﻟ ْﺍُﺆَٰٓﻠَﺒۡﻟﭐ
ُﻦﻴِﺒُﻤۡﻟﭐ ١٠٦ ُﻪَٰﻨۡﻳَﺪَﻓَﻭ ٍﺢۡﺑِﺬِﺑ ٖﻢﻴِﻈَﻋ ١٠٧
ﺎَﻨۡﻛَﺮَﺗَﻭ ِﻪۡﻴَﻠَﻋ ﻲِﻓ َﻦﻳِﺮِﺧٓﺄۡﻟﭐ ١٠٨ ٌﻢَٰﻠَﺳ
ٰٓﻰَﻠَﻋ َﻢﻴِﻫَٰﺮۡﺑِﺇ ١٠٩ ﴾ ‏[:ﺕﺎﻓﺎﺼﻟﺍ ،١٠٠
١٠٩ ‏]
অর্থ: তিনি বললেন, হে প্রভু! আমাকে নেক
সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাকে
সুসংবাদ দিলাম এক অতীব ধৈর্যশীল
সন্তানের। পরে যখন সে সন্তান তার সাথে
দৌড়াদৌড়ি করে বেড়ানোর বয়সে
পৌঁছলো তখন তিনি (ইবরাহীম আ:) একদিন
বললেন, হে বৎস ! আমি স্বপ্নে দেখেছি
যে, আমি আল্লাহর হুকুমে তোমাকে যবেহ
করছি এখন তুমি চিন্তা-ভাবনা করে দেখ
এবং তোমার অভিমত কী? তিনি (ইসমাঈল)
বললেন, হে পিতা আপনি তাই করুন যা
করতে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন ।
ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের
মধ্যে পাবেন। অতঃপর যখন দু’জনই আল্লাহর
আদেশ মানতে রাজি হলেন, তখন তিনি
(ইবরাহীম আ:) পুত্রকে যবেহ করার জন্য
শুইয়ে দিলেন। আমি তাকে ডেকে বললাম,
হে ইবরাহীম ! তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত
করেছ। আমি এভাবেই নেক বান্দাদেরকে
পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটি বড়
পরীক্ষা। আর আমি তাকে বিনিময় করে
দিলাম এক বড় কুরবানীর দ্বারা এবং তা
পরবর্তীর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম।
শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীম (আ:) এর
উপর।”
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের
প্রত্যাশায় এবং আল্লাহ প্রদত্ত কঠিনতম
পরীক্ষায় সাফল্যজনকভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার
উদ্দেশ্যে এক মহান পিতার প্রাণাধিক
পুত্রকে কুরবানী করার মধ্য দিয়ে
ধৈর্যশীলতার উত্তম নমুনা পেশ পৃথিবীর
ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। কুরআন মাজীদে
উল্লেখিত আয়াতসমূহে ইবরাহীম ও ইসমাঈল
আলাইহিমুস সালামের আত্মত্যাগ এবং
আল্লাহর প্রতি সীমাহীন আনুগত্যের
সাবলীল বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।
উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
স্বীয় পুত্র যবেহ না হয়ে দুম্বা যবেহ হওয়ার
মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুরবানী
ওয়াজিব হয়।
কুরবানীর উদ্দেশ্য
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি
করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য। তাই
আল্লাহ তা‘আলার বিধান তাঁর নির্দেশিত
পথে পালন করতে হবে। তিনি বলেন :
﴿ ﺎَﻣَﻭ ُﺖۡﻘَﻠَﺧ َّﻦِﺠۡﻟﭐ َﺲﻧِﺈۡﻟﭐَﻭ ﺎَّﻟِﺇ
ِﻥﻭُﺪُﺒۡﻌَﻴِﻟ ٥٦ ﴾ ‏[ :ﺕﺎﻳﺭﺍﺬﻟﺍ ٥٦‏]
‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি
যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।’ [সূরা
আয্যারিয়াত-৫৬]
• আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কুরবানীর
বিধান আমাদের উপর আসার বেশ কিছূ
উদ্দেশ্যও রয়েছে:
১. শর্তহীন আনুগত্য
আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাহকে যে কোন
ো আদেশ দেয়ার ইখতিয়ার রাখেন এবং
বান্দাহ তা পালন করতে বাধ্য। তাই তার
আনুগত্য হবে শর্তহীন। আল্লাহর আদেশ সহজ
হোক আর কঠিন হোক তা পালন করার
বিষয়ে একই মন-মানসিকতা থাকতে হবে
এবং আল্লাহর হুকুম মানার বিষয়ে মায়া-
মমতা প্রতিবন্ধক হতে পারে না। ইবরাহীম
আলাইহিস সালাম এর আনুগত্য ছিল শর্তহীন।
এ জন্য মহান আল্লাহ যেভাবে বিশ্ব
মানবমন্ডলীকে বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত
করেছেন ঠিক সেভাবে সর্বশেষ জাতি
হিসেবে মুসলিম জাতির পিতাও মনোনয়ন
দিয়েছেন । কুরআনে এসেছে :
َﺔَّﻠِّﻣ﴿ ۡﻢُﻜﻴِﺑَﺃ َۚﻢﻴِﻫَٰﺮۡﺑِﺇ َﻮُﻫ ُﻢُﻜٰﻯَّﻤَﺳ
﴾َﻦﻴِﻤِﻠۡﺴُﻤۡﻟﭐ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٧٨‏]
‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের
মিল্লাত; তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ
করেছেন মুসলিম।’ [সূরা আল–হাজ্জ : ৭৮]
২. তাকওয়া অর্জন
তাকওয়া অর্জন ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ
করা যায় না। একজন মুসলিমের অন্যতম
চাওয়া হলো আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য
অর্জন। পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে
কুরবানী দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের
নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ
তা‘আলা বলেন :
﴿ ﻦَﻟ َﻝﺎَﻨَﻳ َﻪَّﻠﻟﭐ ﺎَﻬُﻣﻮُﺤُﻟ ﺎَﻟَﻭ ﺎَﻫُﺅٓﺎَﻣِﺩ
ُﻪُﻟﺎَﻨَﻳ ﻦِﻜَٰﻟَﻭ ٰﻯَﻮۡﻘَّﺘﻟﭐ َﻚِﻟَٰﺬَﻛ ۚۡﻢُﻜﻨِﻣ ﺎَﻫَﺮَّﺨَﺳ
ۡﻢُﻜَﻟ ْﺍﻭُﺮِّﺒَﻜُﺘِﻟ َﻪَّﻠﻟﭐ ٰﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ ۗۡﻢُﻜٰﻯَﺪَﻫ
ِﺮِّﺸَﺑَﻭ َﻦﻴِﻨِﺴۡﺤُﻤۡﻟﭐ ٣٧ ﴾ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٣٧ ‏]
‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত
এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের
তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে
তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে
তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর
এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন
করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন
সৎকর্মপরায়ণদেরকে। [সূরা আল-হাজ্জ: ৩৭]
৩. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা
প্রত্যেক ইবাদাতই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের
প্রমাণ বহন করে। তাই কুরবানীর মাধ্যমে
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়। যেমন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
َﻚِﻟَٰﺬَﻛ﴿ ﺎَﻫَﺮَّﺨَﺳ ۡﻢُﻜَﻟ ْﺍﻭُﺮِّﺒَﻜُﺘِﻟ َﻪَّﻠﻟﭐ ٰﻰَﻠَﻋ
ﺎَﻣ ۗۡﻢُﻜٰﻯَﺪَﻫ ِﺮِّﺸَﺑَﻭ َﻦﻴِﻨِﺴۡﺤُﻤۡﻟﭐ ٣٧ ﴾ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ
٣٧ ‏]
‘এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন
করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর
শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি
তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং
আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে।
[সূরা আল-হাজ্জ: ৩৭]
৪. ত্যাগ করার মহান পরীক্ষা
কুরবানীর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ত্যাগ করার
মানসিকতা তৈরী করা। আল্লাহর বিধান
পালনে জান-মালের ত্যাগ স্বীকার করতে
হবে। কুরবানীর ঈদকে গোশত খাওয়ার
অনুষ্ঠানে পরিণত করা নয়, বরং নিজেদের
মধ্যকার পশুসুলভ আচরণ ত্যাগ করার জন্য
প্রস্তুত থাকতে হবে। নফসের আনুগত্য ত্যাগ
করে আল্লাহর একান্ত অনুগত হওয়াই
কুরবানীর উদ্দেশ্য।
﴿ ﻢُﻜَّﻧَﻮُﻠۡﺒَﻨَﻟَﻭ ٖﺀۡﻲَﺸِﺑ َﻦِّﻣ ِﻑۡﻮَﺨۡﻟﭐ ِﻉﻮُﺠۡﻟﭐَﻭ
ٖﺺۡﻘَﻧَﻭ َﻦِّﻣ ِﻝَٰﻮۡﻣَﺄۡﻟﭐ ِﺲُﻔﻧَﺄۡﻟﭐَﻭ ِۗﺕَٰﺮَﻤَّﺜﻟﭐَﻭ
َﻦﻳِﺮِﺒَّٰﺼﻟﭐ ِﺮِّﺸَﺑَﻭ ١٥٥ ﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ١٥٥ ‏]
‘আমি তোমাদেরকে অবশ্যই ভয়, দারিদ্র্য,
সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতি করার মাধ্যমে
পরীক্ষা করবো।’ [সূরা আল-বাকারাহ: ১৫৫]
কুরবানীর ফযিলাত
১. কুরবানীদাতা কুরবানীর পশুর জবাই
এর মাধ্যমে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও
শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের বাস্তবায়ন
করতে পারে। আল-কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা
বলেন :
﴿ ُﻪَٰﻨۡﻳَﺪَﻓَﻭ ٍﺢۡﺑِﺬِﺑ ٖﻢﻴِﻈَﻋ ١٠٧ ﴾ ‏[ :ﺕﺎﻓﺎﺼﻟﺍ
١٠٧ ‏]
‘আর আমরা মহা কুরবানীর বিনিময়ে তাকে
মুক্ত করেছি।” [সূরা আস-সাফফাত: ১০৭]
এ আয়াতের তাফসীরে তাফসীর বিশারদগণ
উল্লেখ করেছেন, সকল কুরবানী এ
মহাকুরবানীর অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদ
ইবনে আরকাম বর্ণিত হাদীসেও
কুরবানীকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর
সুন্নাত হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
২. কুরবানীর রক্ত প্রবাহিত করার
মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের
নৈকট্য অর্জিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿ ﻦَﻟ َﻝﺎَﻨَﻳ َﻪَّﻠﻟﭐ ﺎَﻬُﻣﻮُﺤُﻟ ﺎَﻟَﻭ ﺎَﻫُﺅٓﺎَﻣِﺩ
ُﻪُﻟﺎَﻨَﻳ ﻦِﻜَٰﻟَﻭ ٰﻯَﻮۡﻘَّﺘﻟﭐ َﻚِﻟَٰﺬَﻛ ۚۡﻢُﻜﻨِﻣ ﺎَﻫَﺮَّﺨَﺳ
ۡﻢُﻜَﻟ ْﺍﻭُﺮِّﺒَﻜُﺘِﻟ َﻪَّﻠﻟﭐ ٰﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ ۗۡﻢُﻜٰﻯَﺪَﻫ
ِﺮِّﺸَﺑَﻭ َﻦﻴِﻨِﺴۡﺤُﻤۡﻟﭐ ٣٧ ﴾ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٣٧ ‏]
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের
গোশত এবং রক্ত, পৌঁছায় তোমাদের
তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে
তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে
তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর
এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন
করেছেন। সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন
সৎকর্ম পরায়ণদেরকে।” [সূরা আল-হাজ্জ:
৩৭]
৩. কুরবানী আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম
নিদর্শন। সূরা হজ্জের ৩৬ নং আয়াতে
আল্লাহ বলেন-
﴿ َﻥۡﺪُﺒۡﻟﭐَﻭ ﺎَﻬَٰﻨۡﻠَﻌَﺟ ﻢُﻜَﻟ ﻦِّﻣ ِﺮِﺌَٰٓﻌَﺷ ِﻪَّﻠﻟﭐ
ۡﻢُﻜَﻟ ﺎَﻬﻴِﻓ ۖٞﺮۡﻴَﺧ ْﺍﻭُﺮُﻛۡﺫﭑَﻓ َﻢۡﺳﭐ ِﻪَّﻠﻟﭐ
َّۖﻑٓﺍَﻮَﺻ ﺎَﻬۡﻴَﻠَﻋ ﺍَﺫِﺈَﻓ ﺎَﻬُﺑﻮُﻨُﺟ ۡﺖَﺒَﺟَﻭ ْﺍﻮُﻠُﻜَﻓ
ﺎَﻬۡﻨِﻣ ْﺍﻮُﻤِﻌۡﻃَﺃَﻭ َﻊِﻧﺎَﻘۡﻟﭐ َّۚﺮَﺘۡﻌُﻤۡﻟﭐَﻭ َﻚِﻟَٰﺬَﻛ
ﺎَﻬَٰﻧۡﺮَّﺨَﺳ ۡﻢُﻜَﻟ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻥﻭُﺮُﻜۡﺸَﺗ ٣٦
﴾ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٣٦‏]
“কুরবানীর উটসমূহকে আমরা তোমাদের জন্য
আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম করেছি।
তোমাদের জন্য যাতে কল্যাণ রয়েছে।
সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থা
এগুলোর উপর তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ
করো আর যখন কাত হয়ে পড়ে যায় তখন
সেগুলো হতে খাও। আর আহার করাও
ধৈর্য্যশীল অভাবী ও ভিক্ষাকারী
অভাবগ্রস্তকে এভাবে আমি ওদেরকে
তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে
তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”
এ আয়াতে কুরবানীর ফযিলত সুস্পষ্টভাবে
তুলে ধরা হয়েছে এবং কুরবানীর পশুকে
আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা
হয়েছে।
৪. পশু দ্বারা কুরবানীর মাধ্যমে আল্ল
াহর যিকির বা স্মরণের বাস্তবায়ন করে
থাকেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ
হয়েছে :
﴿ ِّﻞُﻜِﻟَﻭ ٖﺔَّﻣُﺃ ﺎَﻨۡﻠَﻌَﺟ ﺎٗﻜَﺴﻨَﻣ ْﺍﻭُﺮُﻛۡﺬَﻴِّﻟ
َﻢۡﺳﭐ ِﻪَّﻠﻟﭐ ٰﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ ﻢُﻬَﻗَﺯَﺭ ۢﻦِّﻣ ِﺔَﻤﻴِﻬَﺑ
ِۗﻢَٰﻌۡﻧَﺄۡﻟﭐ ﴾ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٣٤ ‏]
‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর
নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে
জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু
দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা
আল্লাহর নাম স্মরণ করে। [সূরা আল-হাজ্জ:
৩৪]
৫. কুরবানীর প্রবাহিত রক্ত আল্লাহ
তা‘আলার কাছে দু’টি কুচকুচে কালো
ছাগলের চেয়ে প্রিয় ও পবিত্র। এ প্রসঙ্গে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ُﻡَﺩ َﺀﺍَﺮْﻔَﻋ ُّﺐَﺣَﺃ ﻰﻟﺇ ﻪﻠﻟﺍ ْﻦِﻣ ِﻡَﺩ
ِﻦْﻳَﻭﺍَﺩْﻮَﺳ‏» .
অর্থাৎ কুরবানীর প্রবাহিত রক্ত আল্লাহ
তা‘আলার কাছে দু’টি কুচকুঁচে কালো
ছাগলের চেয়ে অধিক প্রিয়। [সুনান
বায়হাকী ]
৬. ইসলামে হাজ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ
মৌলিক ইবাদত। হজ্জের সাথে কুরবানীর
অনেক বিষয় জড়িত। হাজীগণ এ দিনে
তাদের পশু যবেহ করে হজ্জকে পূর্ণ করেন।
এ জন্য এর নাম হল ( ُﻡْﻮَﻳ ِﺮَﺒْﻛَﺄْﻟﺍ ِّﺞَﺤْﻟﺍ ) বা
শ্রেষ্ঠ হজের দিন। হাদীসে এসেছে, ইবন
উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
‏« َّﻥَﺃ َﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪَّﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ
َﻒَﻗَﻭ َﻡْﻮَﻳ ِﺮْﺤَّﻨﻟﺍ َﻦْﻴَﺑ ِﺕﺍَﺮَﻤَﺠْﻟﺍ ﻲِﻓ
ِﺔَّﺠَﺤْﻟﺍ ﻲِﺘَّﻟﺍ َّﺞَﺣ َﻝﺎَﻘَﻓ ُّﻱَﺃ ٍﻡْﻮَﻳ ﺍَﺬَﻫ
ﺍﻮُﻟﺎَﻗ ُﻡْﻮَﻳ ِﺮْﺤَّﻨﻟﺍ َﻝﺎَﻗ ﺍَﺬَﻫ ُﻡْﻮَﻳ ِّﺞَﺤْﻟﺍ
ِﺮَﺒْﻛَﺄْﻟﺍ ‏»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন জিজ্ঞেস
করলেন এটা কোন দিন? সাহাবাগণ উত্তর
দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহর বা কুরবানির
দিন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা হলো ইয়াওমুল হ
াজ্জিল আকবার বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন।
[সুনান আবু দাউদ]
৭. কুরবানীর মাধ্যমে সামাজিক ও
পারিবারিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার বিশেষ
সুযোগ সৃষ্টি হয়। সমাজে আল্লাহর বিধান
প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার
প্রেরণা তৈরি হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
:
﴿ ْﺍﻮُﻤِﺼَﺘۡﻋﭐَﻭ ِﻞۡﺒَﺤِﺑ ِﻪَّﻠﻟﭐ ﺎٗﻌﻴِﻤَﺟ ﺎَﻟَﻭ
﴾ْۚﺍﻮُﻗَّﺮَﻔَﺗ ‏[ ﻝﺍ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ١٠٣‏]
তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে
আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।
[সূরা আলে ইমরান : ১০৩]
৮. কুরবানীতে গরীব মানুষের অনেক
উপকার হয়। যারা বছরে একবারও গোশত্
খেতে পারে না, তারাও গোশত্ খাবার
সুযোগ পায়। দারিদ্র বিমোচনেও এর গুরুত্ব
রয়েছে। কুরবানীর চামড়ার টাকা গরীবের
মাঝে বণ্টন করার মাধ্যমে গরীব-দুখী
মানুষের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব।
অপরদিকে কুরবানীর চামড়া অর্থনীতিতে
একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে।
কুরবানীর পশু
১. কুরবানীর পশু উৎসর্গ করা হবে কেবল
এক আল্লাহর উদ্দেশ্যে, অন্য করো জন্য নয়,
কেননা কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। তিনি বলেন
:
ۡﻞُﻗ﴿ َّﻥِﺇ ﻲِﺗﺎَﻠَﺻ ﻲِﻜُﺴُﻧَﻭ َﻱﺎَﻴۡﺤَﻣَﻭ ﻲِﺗﺎَﻤَﻣَﻭ
ِﻪَّﻠِﻟ ِّﺏَﺭ َﻦﻴِﻤَﻠَٰﻌۡﻟﭐ ١٦٢ ﺎَﻟ َﻚﻳِﺮَﺷ ۖۥُﻪَﻟ
َﻚِﻟَٰﺬِﺑَﻭ ُﺕۡﺮِﻣُﺃ ۠ﺎَﻧَﺃَﻭ ُﻝَّﻭَﺃ َﻦﻴِﻤِﻠۡﺴُﻤۡﻟﭐ ١٦٣
﴾ ‏[ :ﻡﺎﻌﻧﻻﺍ ،١٦٢ ١٦٣ ‏]
“বলুন! আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার
জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতি পালক
আল্লাহরই উদ্দেশ্যে, তাঁর কোন শরীক নেই,
আর আমি এর জন্যই আদিষ্ট হয়েছি এবং
আমিই প্রথম মুসলিম। [সূরা আল-আন‘আম :
১৬২-১৬৩]
২. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে
কুরবানীর পশু উৎসর্গ বা যবেহ করা যাবে
না, বরং এ প্রকার কাজ শির্ক। এ
ব্যাপারে কঠোর শাস্তির বিষয়ে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«َﻦَﻌَﻟ ُﻪَّﻠﻟﺍ ْﻦَﻣ َﺢَﺑَﺫ ِﺮْﻴَﻐِﻟ ِﻪَّﻠﻟﺍ‏»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো
নামে পশু যবেহ করে আল্লাহ তার উপর
লা‘নত করেন। [সহীহ মুসলিম]
৩. এমন পশু দ্বারা কুরবানী দিতে হবে
যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে।
সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া,
দুম্বা। এগুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয়
‘বাহীমাতুল আন‘আম’। যেমন ইরশাদ হয়েছে
:
﴿ ِّﻞُﻜِﻟَﻭ ٖﺔَّﻣُﺃ ﺎَﻨۡﻠَﻌَﺟ ﺎٗﻜَﺴﻨَﻣ ْﺍﻭُﺮُﻛۡﺬَﻴِّﻟ
َﻢۡﺳﭐ ِﻪَّﻠﻟﭐ ٰﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ ﻢُﻬَﻗَﺯَﺭ ۢﻦِّﻣ ِﺔَﻤﻴِﻬَﺑ
ِۗﻢَٰﻌۡﻧَﺄۡﻟﭐ ﴾ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٣٤ ‏]
‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর
নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে
জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু
দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা
আল্লাহর নাম স্মরণ করে। [সূরা আল-হাজ্জ:
৩৪]
৪. শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানীর পশুর
বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরী। উট পাঁচ
বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের
হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে
এক বছর বয়সের। হাদীসে এসেছে, জাবের
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺎَﻟ ﺍﻮُﺤَﺑْﺬَﺗ ًﺔَّﻨِﺴُﻣ ﺎَّﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ َﺮُﺴْﻌَﻳ ْﻥَﺃ
ﺍﻮُﺤَﺑْﺬَﺘَﻓ ْﻢُﻜْﻴَﻠَﻋ ًﺔَﻋَﺬَﺟ ْﻦِﻣ ِﻥْﺄَّﻀﻟﺍ‏»
‘তোমরা অবশ্যই মুসিন্না (নির্দিষ্ট বয়সের
পশু) কুরবানী করবে। তবে তা তোমাদের
জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক
কুরবানী করতে পার।’ [মুসলিম- ১৯৬৩]
৫. গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কুরবানীর
পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত,
দেখতে সুন্দর হওয়া। কুরবানীর পশু যাবতীয়
দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদীসে
এসেছে, বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত,
‏«َﻡﺎَﻗ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪَّﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ
ﻱِﺪَﻳَﻭ ُﺮَﺼْﻗَﺃ ْﻦِﻣ ِﻩِﺪَﻳ َﻝﺎَﻘَﻓ ٌﻊَﺑْﺭَﺃ ﺎَﻟ
َﻥْﺰُﺠَﻳ ُﺀﺍَﺭْﻮَﻌْﻟﺍ ُﻦِّﻴَﺒْﻟﺍ ﺎَﻫُﺭَﻮَﻋ
ُﺔَﻀﻳِﺮَﻤْﻟﺍَﻭ ُﻦِّﻴَﺒْﻟﺍ ﺎَﻬُﺿَﺮَﻣ ُﺀﺎَﺟْﺮَﻌْﻟﺍَﻭ
ُﻦِّﻴَﺒْﻟﺍ ﺎَﻬُﻌْﻠَﻇ ُﺓَﺮﻴِﺴَﻜْﻟﺍَﻭ ﻲِﺘَّﻟﺍ ﺎَﻟ
ﻲِﻘْﻨُﺗ‏»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন আর
আমার হাত তার হাতের চেয়েও ছোট;
তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে
কুরবানী জায়েয হবে না। (অন্য বর্ণনায় বলা
হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না) অন্ধ; যার অন্ধত্ব
স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু;
যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত; যার কোনো
অংগ ভেংগে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায়
‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে।
[তিরমিযি-১৫৪৬, নাসায়ি- ৪৩৭১, হাদীসটি
সহীহ ]
৬. উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কুরবানী
দেয়া যায়। যেমন হাদীসে এসেছে,
জাবের ইবন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ُﺓَﺮَﻘَﺒْﻟﺍ ٍﺔَﻌْﺒَﺳ ْﻦَﻋ ُﺔَﻧَﺪَﺒْﻟﺍَﻭ ْﻦَﻋ ٍﺔَﻌْﺒَﺳ‏» .
“‘উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে
কুরবানী করা বৈধ।” [ইব্ন মাজাহ- ৩১৩২]
৭. মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে কুরবানী করা
জায়েয : প্রকৃতপক্ষে কুরবানীর প্রচলন
জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। যেমন আমরা
দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ নিজেদের
পক্ষে কুরবানী করেছেন। অনেকের ধারণা
কুরবানী শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য করা হবে।
এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। তবে মৃত
ব্যক্তিদের পক্ষ হতে কুরবানী করা জায়েয
আছে। কুরবানী এক প্রকার সদকাহ। আর মৃত
ব্যক্তির নামে যেমন সাদাকাহ করা যায়
তেমনি তার পক্ষ হতে কুরবানীও দেয়া
যায়।
কুরবানীর পশু যবেহ
১. কুরবানীদাতা নিজের কুরবানীর পশু
নিজেই যবেহ করবেন, যদি তিনি ভাল
োভাবে যবেহ করতে পারেন। কেননা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিজে যবেহ করেছেন। আর
যবেহ করা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য
অর্জনের একটি মাধ্যম। তাই প্রত্যেকের
নিজের কুরবানী নিজে যবেহ করার চেষ্টা
করা উচিত। ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন :
‘আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু
নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন
তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কুরবানীর
পশু যবেহ করেন।’ [ফাতহুল বারী ১০/২১]
২. কুরবানীর পশু যবেহ করার দায়িত্ব
নিজে না পারলে অন্যকে অর্পণ করা
জায়েয আছে। কেননা সহীহ মুসলিমের
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেষট্টিটি
কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করে
বাকিগুলো যবেহ করার দায়িত্ব আলী
রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অর্পণ করেছেন।
[সহীহ মুসলিম- ১২১৮]
৩. কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় তার
সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তাকে আরাম
দিতে হবে। যাতে পশু কষ্ট না পায়
সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হাদীসে
এসেছে, শাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‏«ِﻥﺎَﺘْﻨِﺛ ﺎَﻤُﻬُﺘْﻈِﻔَﺣ ْﻦَﻋ ِﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ
ُﻪَّﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ َﻝﺎَﻗ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ َﺐَﺘَﻛ
َﻥﺎَﺴْﺣِﺈْﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِّﻞُﻛ ٍﺀْﻲَﺷ ﺍَﺫِﺈَﻓ ﻢُﺘْﻠَﺘَﻗ
ﺍﻮُﻨِﺴْﺣَﺄَﻓ َﺔَﻠْﺘِﻘْﻟﺍ ﺍَﺫِﺇَﻭ ْﻢُﺘْﺤَﺑَﺫ
ﺍﻮُﻨِﺴْﺣَﺄَﻓ َﺢْﺑَّﺬﻟﺍ َّﺪِﺤُﻴْﻟَﻭ ْﻢُﻛُﺪَﺣَﺃ ُﻪَﺗَﺮْﻔَﺷ
ُﻪَﺘَﺤﻴِﺑَﺫ ْﺡِﺮُﻴْﻠَﻓ‏»
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে দু’টি বিষয় আমি মুখস্থ করেছি,
তিনি বলেছেন : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন
সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও
কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে তখন
সুন্দরভাবে করবে আর যখন যবেহ করবে
তখনও তা সুন্দরভাবে করবে। তোমাদের
একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং
যা যবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি
দেয়। [সহীহ মুসলিম-১৯৫৫]
৪. যবেহ করার সময় তাকবীর ও
বিসমিল্লাহ বলা। যেমন হাদিসে এসেছে,
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত

َﻰِﺗُﺃَﻭ ٍﺶْﺒَﻜِﺑ ُﻪَﺤَﺑَﺬَﻓ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻ-
ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ -ﻢﻠﺳﻭ ِﻩِﺪَﻴِﺑ َﻝﺎَﻗَﻭ ‏« ِﻢْﺴِﺑ
ِﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪَّﻠﻟﺍَﻭ ُﺮَﺒْﻛَﺃ ﺍَﺬَﻫ ﻰِّﻨَﻋ ْﻦَّﻤَﻋَﻭ ْﻢَﻟ
ِّﺢَﻀُﻳ ْﻦِﻣ ﻰِﺘَّﻣُﺃ‏»
“আর তার কাছে একটি দুম্বা আনা হল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং
বললেন ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবার,
হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে এবং
আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করতে
পারেনি তাদের পক্ষ থেকে।” [আবু দাউদ:
২৮১০]
অন্য হাদীসে এসেছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‏«ﻰَّﺤَﺿ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪَّﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ
ِﻦْﻴَﺸْﺒَﻜِﺑ ِﻦْﻴَﺤَﻠْﻣَﺃ ِﻦْﻴَﻧَﺮْﻗَﺃ ﺎَﻤُﻬَﺤَﺑَﺫ ِﻩِﺪَﻴِﺑ
ﻰَّﻤَﺳَﻭ َﻊَﺿَﻭَﻭ َﺮَّﺒَﻛَﻭ ُﻪَﻠْﺟِﺭ ﺎَﻤِﻬِﺣﺎَﻔِﺻ ﻰَﻠَﻋ ‏»
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দুটি শিংওয়ালা ভেড়া যবেহ
করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার
বললেন।’ [সহীহ বুখারী]
৫. যবেহ করার সময় যার পক্ষ থেকে
কুরবানী করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে
দো‘আ করা জায়েয আছে। এভাবে বলা, ‘হে
আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবুল করে
নাও।’ যেমন হাদীসে এসেছে, আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দুম্বা যবেহ করার
সময় বললেন :
‏« ِﻢْﺴِﺑ ،ِﻪﻠﻟﺍ ْﻞَّﺒَﻘَﺗ َّﻢُﻬّﻠﻟَﺍ ،ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ ْﻦِﻣ
،ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ ِﻝﺁَﻭ ْﻦِﻣَﻭ ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ ِﺔَّﻣُﺃ ‏»
‘আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আপনি
মুহাম্মাদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার
উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে
নিন।’ [মুসলিম- ১৯৬৭]
৬. ঈদের সালাত আদায় ও খুতবা শেষ
হওয়ার পর পশু যবেহ করা। কেননা হাদীসে
এসেছে, জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
‏«ﻰَّﻠَﺻ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪَّﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ َﻡْﻮَﻳ
ِﺮْﺤَّﻨﻟﺍ َّﻢُﺛ َﺐَﻄَﺧ َّﻢُﺛ َﺢَﺑَﺫ‏»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কুরবানীর দিন সালাত আদায় করলেন
অতঃপর খুতবা দিলেন তারপর পশু যবেহ
করলেন।” [সহীহ আল-বুখারী: ৯৮৫]
কুরবানীর গোশত
১. কুরবানীর গোশত কুরবানীদাতা ও
তার পরিবারের সদস্যরা খেতে পারবে,
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
ْﺍﻮُﻠُﻜَﻓ﴿ ﺎَﻬۡﻨِﻣ ْﺍﻮُﻤِﻌۡﻃَﺃَﻭ َﺲِﺋٓﺎَﺒۡﻟﭐ
َﺮﻴِﻘَﻔۡﻟﭐ ٢٨ ﴾ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٢٨ ‏]
‘অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং
দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।’ [সূরা
আল-হজ্জ: ২৮]
২. উলামায়ে কিরাম বলেছেনঃ
কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ
নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান
করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-
স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান
করা মুস্তাহাব।
৩. কুরবানীর গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন
সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। কুরবানীর
গোশত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍﻮُﻤِﻌْﻃَﺃَﻭ ﺍﻮُﻠُﻛ ﺍﻭُﺮِﺧَّﺩﺍَﻭ‏»
“তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার
করাও এবং সংরক্ষণ কর।” [সহীহ আল-
বুখারী : ৫৫৬৯]
৪. কুরবানীর পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি
বা অন্য কোনো কিছু বিক্রি করা জায়েয
নেই। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক
হিসেবে কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয
নয়। হাদিসে এসেছে :
‏«ﺎَﻟَﻭ َﻲِﻄْﻌُﻳ ﻲِﻓ ﺎًﺌْﻴَﺷ ﺎَﻬِﺗَﺭﺍَﺰِﺟ ‏»
‘আর তা প্রস্তুতকরণে তা থেকে কিছু
দেওয়া হবে না।’ [বুখারী -১৭১৬]
তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে
কিছু দিলে তা না-জায়েয হবে না।
কুরবানীর সময়কাল
কুরবানীর শেষ সময় হচ্ছে যিলহজ মাসের
তের তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে।
অতএব কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় হলো
চার দিন। কুরবানী ঈদের দিন এবং ঈদের
পরবর্তী তিনদিন অর্থাৎ  যিলহজ মাসের দশ,
এগার, বার ও তের তারিখ। এটাই
উলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত
হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ,
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন
﴿ ْﺍﻭُﺪَﻬۡﺸَﻴِّﻟ َﻊِﻔَٰﻨَﻣ ۡﻢُﻬَﻟ ْﺍﻭُﺮُﻛۡﺬَﻳَﻭ َﻢۡﺳﭐ
ِﻪَّﻠﻟﭐ ٓﻲِﻓ ٖﻡﺎَّﻳَﺃ ٍﺖَٰﻣﻮُﻠۡﻌَّﻣ ٰﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ ﻢُﻬَﻗَﺯَﺭ
ۢﻦِّﻣ ﴾ِﻢَٰﻌۡﻧَﺄۡﻟﭐ ِﺔَﻤﻴِﻬَﺑ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٢٨‏]
‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময়
স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং
তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক
হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট
দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে
পারে। [সূরা আল-হাজ্ব : ২৮]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী
রাহিমাহুল্লাহ বলেন : ইবনে আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন: ‘এ আয়াতে
নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায়, কুরবানীর
দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।’ [ফাতহুল
বারী, ২য় খন্ড, পৃ-৫৬১] অতএব এ দিনগুলো
আল্লাহ তা‘আলা কুরবানীর পশু যবেহ করার
জন্য নির্ধারণ করেছেন। এ ব্যাপারে
জুবাইর ইবন মুত‘ইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
‏« ُّﻞُﻛ ِﻖﻳِﺮْﺸَّﺘﻟﺍ ِﻡﺎَّﻳَﺃ ٌﺢْﺑَﺫ ‏» .
‘আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন যবেহ করা
যায়।’ [মুসনাদ আহমদ- ৪/৮২, হাদীসটি সহীহ]
আর আইয়ামে তাশরীক সম্পর্কে বলা হয়,
ﻡﺎﻳﺃ ﻖﻳﺮﺸﺘﻟﺍ ﻡﻮﻴﻟﺍ ﻲﻫ ﻱﺩﺎﺤﻟﺍ ﺮﺸﻋ
ﻲﻧﺎﺜﻟﺍﻭ ﺚﻟﺎﺜﻟﺍﻭ ﺮﺸﻋ ﺮﺸﻋ ﻦﻣ ﺮﻬﺷ ﻱﺫ
ﺔﺠﺤﻟﺍ
আইয়ামে তাশরীক বলতে এগার, বার ও
তের যিলহাজ্জকে বুঝায়। [ ﻯﻭﺎﺘﻓ ﻡﻼﺳﻹﺍ
ﻝﺍﺆﺳ ﺏﺍﻮﺟﻭ ]
তবে কারো কারো মতে, কুরবানী ঈদের
দিন এবং ঈদের পরবর্তী দুই দিন করা যায়।
কার উপর কুরবানী আবশ্যক?
কুরবানীর পশু যবেহ করতে আর্থিকভাবে
সামর্থবান ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব।
সামর্থবান কাকে বলা হবে এ বিষয়ে
ওলামায়ে কিরামের মতপার্থক্য রয়েছে।
১. হানাফী মাযহাবের আলেমদের
মতে, ব্যক্তিগত আসবাব পত্র ও ঈদের
দিনগুলোর মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার
অতিরিক্ত যাকাতের নিসাব পরিমাণ
সম্পদের মালিকের উপর কুরবানী ওয়াজিব
হবে।
২. একদল আলেমের মতে, ঈদের
দিনগুলোতে কুরবানীর পশু খরিদ করার মত
অর্থ যার কাছে রয়েছে সে কুরবানী আদায়
করবে। (তাবয়ীনুল হাক্বাইক-৩/৬, শারহ
আর-রিসালাহ- পৃ: ৩৬৭, হাশিয়াতুল বাজুরী
২/৩০৪, কাশ্শাফুল কিনা’ ৩/১৮)।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস দ্বিতীয়
মতটিকে শক্তিশালী করে। হাদীসে
এসেছে :
‏« ْﻦَﻣ َﺪَﺟَﻭ ًﺔَﻌَﺳ ْﻢَﻠَﻓ ِّﺢَﻀُﻳ ﺎَﻠَﻓ َّﻦَﺑَﺮْﻘَﻳ
ﺎَﻧﺎَّﻠَﺼُﻣ ‏»
‘যে কুরবানী করার মত আর্থিক স্বচ্ছলতা
লাভ করে সে যদি কুরবানী না করে তবে
সে যেন আমাদের ইদগাহে না আসে।’
এতে প্রমাণিত হয়েছে কুরবানীর পশু যবেহ
করার স্বচ্ছলতাই এর জন্য অন্যতম শর্ত।
কুরবানীর জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের
মালিক হওয়া শর্ত নয়।
কুরবানী দাতার করণীয়
১. শুধু কুরবানীর গোশত খাওয়ার জন্য
কুরবানীর পশু যবেহ করা নয়, বরং আল্লাহর
নৈকট্য লাভ করার কুরবানী করবেন । এ
প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
‏«ْﻦَﻣَﻭ َﺮَﺤَﻧ َﻞْﺒَﻗ ِﺓَﻼَّﺼﻟﺍ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ َﻮُﻫ ٌﻢْﺤَﻟ
،ِﻪِﻠْﻫَﺄِﻟ ُﻪَﻣَّﺪَﻗ َﺲْﻴَﻟ ِﻚْﺴُّﻨﻟﺍ َﻦِﻣ ﻲِﻓ ٍﺀْﻲَﺷ‏»
“আর যে কেউ সালাতের পূর্বে নাহর করবে
বা যবেহ করবে, সে তো তার পরিবার
বর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল,
কুরবানীর কিছু আদায় হল না। [সহীহ বুখারী:
৯৬৫ ]
২. কুরবানীদাতা ঈদের চাঁদ দেখার পর
স্বীয় চুল ও নখ কাটা থেকে কুরবানী করা
পর্যন্ত বিরত থাকবেন। হাদীসে এসেছে,
উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা
থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏«ﺍَﺫِﺇ ْﻢُﺘْﻳَﺃَﺭ َﻝﺎَﻠِﻫ ﻱِﺫ ِﺔَّﺠِﺤْﻟﺍ َﺩﺍَﺭَﺃَﻭ
ْﻢُﻛُﺪَﺣَﺃ ْﻥَﺃ َﻲِّﺤَﻀُﻳ ْﻚِﺴْﻤُﻴْﻠَﻓ ْﻦَﻋ ِﻩِﺮْﻌَﺷ
ِﻩِﺭﺎَﻔْﻇَﺃَﻭ ‏»
“তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করার ইচ্ছে
করে সে যেন যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার
পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত
থাকে।” ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন।
৩. কুরবানীর দ্বারা পরিবেশ দূষিত হয়
এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত
থাকতে হবে। সুতরাং পশুর রক্ত মাটি
দ্বারা ঢেকে দেয়া, ময়লা, আবর্জনা
সরিয়ে ফেলা একান্ত প্রয়োজন ।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কুরাবানীর
মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার
তাওফীক দিন । আমীন
ﻪﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻﻭ ﻰﻠﻋ ﺎﻨﻴﺒﻧ ﺪﻤﺤﻣ ﻲﻠﻋﻭ ﻪﻟﺍ
ﻪﺑﺎﺤﺻﺃﻭ ﻢﻬﻌﺒﺗ ﻦﻣﻭ ﻥﺎﺴﺣﺈﺑ ﻰﻟﺇ ﻡﻮﻳ
ﻦﻳﺪﻟﺍ
ﺮﺧﺃﻭ ﺎﻧﺍﻮﻋﺩ ﺪﻤﺤﻟﺍ ﻥﺃ ﻪﻠﻟ ﺏﺭ
ﻦﻴﻤﻟﺎﻌﻟﺍ
লেখক: হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ
যাকারিয়া
সূত্র: ইসলামহাউজ

ডাঃ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অপবাদে জবাব

ডাঃ জাকির
নায়েকের
নামে তোলা প্রধান ২৪
টি অপবাদের জবাব
আল্লাহর নামে শুরু যিনি পরম
করুণাময় ও দয়ালু।
বর্তমানে কিছু মুসলিম ভাই-বোন
ডাঃ জাকির নায়েক এর
বিরদ্ধে এমন
ভাবে লেগে পরেছেন
যা কিনা কাফিরদের বিরদ্ধেও
তারা লাগেন না। আমাদের
সমাজে শিরক,কুফর,বিদ’আত এত
পরিমাণে বিদ্যমান যা বলার
অবকাশ রাখে না কিন্তু
আমরা তার
বিরোধিতা না করে বিরোধিতা করছি
তার,
যে দ্বীন(ইসলাম) এর একজন বড়
দায়ী। যিনি অমুসলিমদের
কাছে ইসলামকে সুন্দর
করে উপস্থাপন করছেন তার
পিছনে আমরা লেগে আমরা কিসের
পরিচয় দিচ্ছি?
ডাঃ জাকির নায়েক এর বই
‘রচনা সমগ্র’ অথবা ‘লেকচার সমগ্র’ বই
থেকে তারা বিভিন্ন
বিভ্রান্তমূলক কথা বলছে। তার ই
জবাব আজ এখানে আমি দেওয়ার
চেষ্টা করবো……।।(আল্লাহ
আমাদের হক কে বুঝার তৌফিক
দান করুন।-আমিন)
১. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক
বলেছেন আল্লাহকে আমরা ব্রাহ্ম
ও বিষ্ণু নামে ডাকতে পারবো।
উত্তরঃ ব্রাহ্ম ও বিষ্ণু এই নামগুল
সংস্কৃত নাম। এই ২টি নামই
আরবীতে নিলে আল্লাহর
৯৯টি নামের মধ্য হতে ২টি নামের
কাছে চলে যায়। যেমনঃ ব্রাহ্ম
নামটি আরবীতে নিলে তা অনেকটা
‘খালিক’
নামের মত অর্থ করে।
বাংলাতে অর্থ হয় ‘স্রষ্টা’ আর
যেহেতু
আমরা আল্লাহকে ‘খালিক’
অথবা ‘স্রষ্টা’
নামে ডাকতে পারবো তাই
ডাঃ যাকির নায়েক এই
কথা বলেছেন।
তাহলে যারা আল্লাহকে ‘ব্রাহ্ম’
নামে ডাকতে বলাতে নিন্দা করছেন
তারা ‘স্রষ্টা’ নামে ডাকতেও
বাধা দেওয়ার দরকার। কারণ
হিন্দুরাও তো তাদের দেবতাদের
‘স্রষ্টা’ বলে ডাকে। যেহেতু
‘ব্রাহ্ম’
বলে ডাকা যাবে না সেহেতু
‘স্রষ্টা’ বলেও
ডাকা যাবে না কারণ এই ২
টি অর্থ এক। কিন্তু ডাঃ জাকির
নায়েক এটিও বলেছেন যদি কেও
বলে ‘ব্রাহ্ম’ হল সে যার
কয়েকটা হাত আছে,এরকম
করে যদি আকার দেওয়া হয়
তাহলে আমরা মুসলিমরা আপত্তি জানাবো
(লেকচারঃ ইসলাম
ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য/প্রধান
ধর্ম গুলতে স্রষ্টার ধারনা) কিন্তু
একটি জিনিস আমাদের
বুঝতে হবে তা হল ডাঃ জাকির
নায়েক এসব কথাগুলো হিন্দুদের
বলেছেন। তিনি মুসলিমদের এই
কথা বলছেন
না যে আপনারা ‘খালিক’ নাম
বাদে ব্রাহ্ম
নামে আল্লাহকে ডাকুন।
তিনি শুধুমাত্র ইসলাম ও হিন্দু
ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য দেখিয়েছেন।
আমরা আল্লাহকে ‘খালিক’ নামেই
ডাকব ‘ব্রাহ্ম’ নামে ডাকব না।
২. অপবাদঃ ডাঃ যাকির নায়েক
বলেছেন রাম আর অর্জুন নবী।
উত্তরঃ ডাঃ যাকির নায়েক
কখনই এই কথা বলেন নাই যে রাম
আর অর্জুন নবী,
বরং তিনি বলেছেন
তারা নবী হতেও পারে আবার
নাও হতে পারে।কারণ
কোরানে শুধু মাত্র ২৫ জন নবীর
নাম বলা হয়েছে।
(লেকচারঃ ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের
মধ্যে সাদৃশ্য/প্রধান ধর্ম
গুলতে স্রষ্টার ধারনা) রাসুলুল্লাহ
(সা) এর হাদিস
অনুসারে পৃথিবীতে প্রায় ১
লক্ষেরও বেশী নবী এসেছেন। এর
মধ্যে কোরআনে ২৫ জন নবীর নাম
এসেছে। রাম আর অর্জুন এর কিছু
কাজ নবীদের কাজের
সাথে মিলে। তাই ডাঃ যাকির
নায়েক বলেছেন রাম আর অর্জুন
নবী হতে পারেন আবার নাও
হতে পারেন। কিন্তু
আমরা(মুসলিমরা) কখনই রাম আর
অর্জুন এর উপর নবী হিসাবে ঈমান
আনব না। কারন
তারা নবী বলে প্রমানিত নয়।
৩. অপবাদঃ ডাঃ জাঁকির নায়েক
নাকি বলেছেন
কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল আছে।
উত্তরঃ কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল
আছে এই কথা ডাঃ জাঁকির
নায়েক বলতেই পারেন না। বরং,
আমেরিকাতে ডাঃ উইলিয়াম
ক্যাম্পবেল এর সাথে বিতর্ক করার
সময়ে ডাঃ জাকির
নায়েককে এক অমুসলিম প্রশ্ন
করেছিলেন, তার প্রশ্ন ছিলঃ
“ডাঃ জাঁকির নায়েক
আপনি বলেছেন কোরআনে কোন
ভুল নেই কিন্তু
আমি দেখছি যে এতে ২০ টিরও
অধিক আরবি ব্যাকারনগত ভুল
রয়েছে। আমি এর মধ্য
থেকে কয়েকটি উল্লেখ্য
করতে চাই যেমন সুরা বাঁকারা ও
সুরা হাজ্জ এ বলা হয়েছে-
‘আসাবিউন’
কিংবা ‘আসাবিরীন’ এটা ১ নম্বর
ভুল। ২য় ভুল হচ্ছে, আপনি বলেছেন,
প্রায় একই বিষয় যা সুরা ত্ব-হা’র ৬৩
নং আয়াতে রয়েছে এটাও ভুল।
এটি কি আপনি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
আর সেখানে রয়েছে আর
মারাত্মক ভুল”
এর উত্তরে ডাঃ জাকির নায়েক
বললেনঃ “আমার ভাই একটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন।
আমাকে আর অধিক যথার্থ
হতে হবে।তিনি ২০টি ব্যাকারনগত
সমস্যার কথা বলেছেন।আর
তিনি সম্ভবত আব্দুল ফাঁদির রচিত বই
থেকে উল্লেখ
করেছেন,বইটা কি সঠিক? কোরআন
কি ভুল-ভ্রান্তির উর্ধে নয়? ”
এখানে আমি ২০ টি প্রশ্নেরই উত্তর
দিব কারণ আমি উল্লেখিত
বইটি পরেছি। প্রথম
বিষয়ে টি হচ্ছে সমস্ত
আরবি ব্যাকারনই কোরআন
কে সংকলিত। আর কোরআন
হচ্ছে উচ্চমানের আরবি বই। এটি এমন
একটি বই যেখানে সর্বচ্চমানের
সাহিত্য সন্নিবেশিত রয়েছে।
যেহেতু কোরআন
হচ্ছে আরবি ব্যাকারনের নিদর্শন
আর সকল আরবি ব্যাকারনই পবিত্র
কোরআন থেকে সংকলিত সেহেতু
এখানে(কোরআনে) কোন ভুলই
থাকতে পারে না। আরবের অঞ্চল
ভেদে শব্দের পরিবর্তন
রয়েছে যেমন কোন অঞ্চলে যেই
শব্দ পুরুষবাচক অন্য
অঞ্চলে তা স্ত্রীবাচক। আরবের
অঞ্চলভেদে ভাষার পরিবর্তন
বিদ্যমান। সুতরাং আপনি কি ভুলকৃত
ব্যাকারন দিয়ে কোরআন যাচাই
করবেন? কখনই না।
(রচনা সমগ্র;পৃ-৮৯,খণ্ড-১,অধ্যায়-২,কোরআন
ও বাইবেল। লেকচারঃ Quran &
Bible In The Light Of Mordern
Science,Questions & Answers Session)
ডাঃ জাকির নায়েকের এই কথার
মাধ্যমেই প্রমাণ হয়
তিনি কোরআনকে নির্ভুল মানেন।
আর কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল
আছে এই কথা ডাঃ জাকির
নায়েক বলেছেন বলে কথাও
আমি পাইনি এবং ইনশা আল্লাহ
পাবোও না।
৪. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
বলেছেন ‘বেদ’ আল্লাহর কিতাব।
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক এই
কথা বলেন
নি বরং তিনি বলেছেন ‘বেদ’
আল্লাহর কিতাব হতেও
পারে আবার নাও হতে পারে।
যদি হয়েও থাকে তার পরও এই
কিতাব এখন আল্লাহর কাছে গ্রহণ
যোগ্য নয়। কোরআনে আল্লাহ ৪
টি কিতাবের নাম বলেছেন।
যেহেতু, ‘বেদ’ বলছে এক
আল্লাহকে নিয়ে,
বলছে নাবী(সা) কে নিয়ে তাই
এই কিতাবকে ডাঃ জাকির
নায়েক আল্লাহর কিতাব হতেও
পারে আবার নাও
হতে পারে বলে দাবী করেছেন।
যদি এই কিতাব আল্লাহর পাঠান
না হয় তাহলে কিভাবে এই
কিতাবে এক আল্লাহ ও
নাবী মুহাম্মাদ(সা) এর
ব্যাপারে বলছে? তাই
ডাঃ জাকির নায়েক এই
কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা বেদ
কে আল্লাহর কিতাব বলে ইমান
আনব না।
৫. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
নাকি বলেছেন যে ৪ জন
মহিলা নবী এসেছেন আর
তারা হলেন-
বিবি মরিয়ম,বিবি আসিয়া,বিবি
ফাতিমা,বিবি খাদিজা
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক এর
লেকচার দেখলেই
আপনারা দেখবেন
তিনি বিবি ফাতিমা ও
মা খাদিযা(রা) এর পর
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বলেন,
তিনি যদি তাদের নবী মানতেন
তাহলে তিনি তাদের নামের পর
বলতেন (আঃ)।
এছাড়াও এই কথা ডাঃ জাকির
নায়েক কখনই বলেন নি, তার কোন
বইতেও এই লেখা নেই। বরং তার বই
রচনা সমগ্র এর খণ্ড-১ এর প্রশ্ন-উত্তর
পর্ব অধ্যায় এর ৬৭৭ পৃঃ বলেছেন-
‘যদি নবী বলতে আপনি বুঝেন এমন
এক ব্যক্তি যিনি আল্লাহর কাছ
থেকে বানী গ্রহণ করেন ও
যিনি মানব জাতির
নেতা হিসাবে কাজ করেন
তাহলে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি
ইসলামে আমরা কোন
নারী নাবী পাইনি’
এখানে তিনি নারী নবী হওয়ার
বিরদ্ধে আর
যুক্তি দিতে গিয়ে বলেনঃ “যদি মহিলা
নবী হত
আর স্বাভাবিক
ভাবে সে গর্ভবতী হত তবে তার
পক্ষে কয়েক মাস নবুয়াত এর
নির্ধারিত দায়িত্ব পালন
করা সম্ভব হত না। আর
যদি আপনি নবী বলতে বুঝান
আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি তাহলে কিছু
মহিলার উদাহরণ হল-
বিবি মরিয়াম,আসিয়া,খাদিজা,ফাতেমা
(রা)”
কিন্তু
তিনি এখানে তাদেরকে নবী বলেন
নি বরং আল্লাহর প্রিয়
ব্যক্তি বলেছেন।
৬. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
বলেছেন নবী মুহাম্মাদ(সা) তার
কবরে স-শরীরে মৃত।
উত্তরঃ আল্লাহ
কোরআনে বলেছেনঃ “বল
(হে নবী!) আমিও তমাদেরই মত
একজন মানুষ”(সুরা কাহাফ;১১০)
এছাড়াও আল্লাহ
কোরআনে নাবী(সা)কে লক্ষ্য
করে বলেছেনঃ “তোমাকেও
মরতে হবে তাদেরও
মরতে হবে”(সুরা জুমার;৩০)
এখানে আমরা দেখতে পারছি ডাঃ
জাকির
নায়েক ঠিক কথাই বলেছেন।
এছাড়াও আপনি তাফসীর
ইবনে কাসীর এ এই আয়াত
(সুরা জুমার;৩০) এর তাফসীর
দেখতে পারেন। সেখানেও ইমাম
ইবন কাসীর(রহ) সুরা জুমার ৩০
নং আয়াতের
তাফসীরে বলেছেন
যে “রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত”
৭. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
বলেছেন হায়েজ-নেফাস
কালে কোরআন তেলাওয়াত
করা যাবে
উত্তরঃ হায়েজ-নেফাস
কালে কোরআন তেলাওয়াত
করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এই
কথা ডাঃ জাকির নায়েক
বলেছেন বলে কোন
কিতাবে বা লেকচার এ
আমি পাইনি। আর আসলেই
তিনি এটি বলে থাকলে আমি মনে করি
তিনি ভুল
বলেছেন।
৮. অপবাদঃ ডাঃ জাকির নায়েক
বলেছেন ঈদের দিন জুমা নামাজ
পড়া লাগে না
উত্তরঃ এটি সঠিক কথা।
এর পক্ষে হাদীসঃ ১. হযরত আইয়াশ
ইবনে আবু রামলা আশ-
শামি(র)হতে বর্ণিত,তিনি বলেন-
একদা হযরত মুয়াবিয়া(রা) হযরত
জায়েদ ইবনে আরকাম(রা)কে কিছু
জিজ্ঞাসা করার সময় আমি তার
সামনে উপস্থিত ছিলাম।
তিনি বলেন- আপনি কি রাসুল(সা)
এর সময় একই দিনে ঈদ ও জুমা অনুষ্ঠিত
হতে দেখেছেন? তিনি বললেন-
হ্যা। তিনি পুনরায়
জিজ্ঞাসা করলেন,
তিনি কিরূপে তা আদায় করেন?
তিনি বলেন- নাবী(সা)
প্রথমে ঈদের নামায আদায় করেন
অতঃপর জুমা নামায আদায়ের
ব্যাপারে অবকাশ প্রদান
করে বলেনঃ যে ব্যক্তি তা আদায়
করতে চায়, সে তা আদায়
করতে পারে।(আবু
দাউদ,হাদীস-১০৭০;
নাসাই,ইবনে মাজাহ)
তাই ডাঃ জাকিরের কথা সঠিক।
এছাড়াও মুজতাহিদ(ইমাম আবু
হানিফা,মালিক,শাফিঈ,আহমাদ,ছাওরী,ইসহাক)
দের মধ্যে এ বিষয়ে ইত্তিলাফ
আছে। ইমাম আহমাদের মতে অর্থাৎ
হাম্বলী ফেকাহতে ঈদের দিন
জুমা নামাজ পড়া লাগে না।
৯. অপবাদঃ ঈদের নামায ১২
তাকবীর এ আদায় করা
উত্তরঃ আমার অবাক
লাগে তাদের দেখে,
তারা(ডাঃ জাকিরের
বিরদ্ধে যারা আছে)
নিজেরা মাজহাব মানা সত্ত্বেও
অন্য মাজহাবের
মাসআলা কে অপছন্দ করে।
রাসুলুল্লাহ(সা) ঈদের নামায ১২
তাকবীরে আদায় করেছেন।(আবু
দাউদ,হাদীস
নং-১১৪৯,১১৫০,১১৫১;মুসনাদে আহমাদ)।
ইমাম মালিক,শাফিঈ,আহমাদ
ইবনে হাম্মব(র) এর মত ঈদের নামায
১২ তাকবীর এ আদায় করতে হবে,
মাসজিদুল হারাম ও নববী সহ
সৌদি আরবেও ১২
তাকবীরে ঈদের সালাত আদায়
হয়ে থাকে।
১০. অপবাদঃ ডাঃ জাকির
নায়েক বলেছেন তারাবীহ
নামায ৮ রাকাত
উত্তরঃ ডাঃ জাকির নায়েক
বলেছেন তারাবীহ নামায ৮
রাকাত আদায় করা যাবে কিন্তু ২০
রাকাত ও আদায় করা যাবে। উমার
(রা) ৮ রাকাত তারাবীহ পরেছেন
(মুয়াত্তা ইমাম মালিক) এবং ২০
রাকাত তারাবীহ
পরবর্তীতে চালু করেছেন।(ইমাম
ইবনে তাইমিয়া ও ইমাম
ইবনে কাইয়ুম)।
রাসুলুল্লাহ(সা)
বলেছেনঃ রাতের নামায দু দু
রাকাত করে। এর উপর
ভিত্তি করে মালেকী মাযহাবের
ইমাম মালেক (রহঃ) বলেছেন, একশ
বছরেরও বেশী সময়
ধরে লোকেরা ৩৬ রাকআত
তারাবীহ পড়েছে।
হাম্বলী মাজহাবে তারাবীহ
নামায ৮ রাকাত। শ্রদ্ধেয়
আলেমে দ্বীন আল্লামা মুহাম্মাদ
বিন সালেহ আল উসাইমীন (রহ.) ৮
রাকআতের মাসআলাকে প্রাধান্য
দিয়েছেন। এজাতীয় মত
পার্থক্যের সমাধানকল্পে শাইখুল
ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহ.)
বলেছেন, অধিক সংখ্যক রাকআত
পড়াই উত্তম। আর যদি কেউ কম
সংখ্যক রাকআত পড়তে চায়
তাহলে তার উচিত
হবে তিলাওয়াত, কিয়াম, রুকু ও
সিজদা দীর্ঘ করা।
তিনি আরো বলেছেন যে,
তারাবীহকে রাকআত সংখ্যার
মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং সময়
ব্যয়ের পরিমাণ দিয়ে মূল্যায়ন
করা উচিত। কারণ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু ১১
রাকআতের মধ্যে ৫ ঘণ্টা সময়
অতিবাহিত করেছেন। ইমাম
আহমাদ ইবনে হাম্বল(রহঃ) এর
মতে অর্থাৎ
হাম্বলী ফেকাহতে তারাবীহ
নামাজ ৮ রাকাত। এছাড়াও
মুসনাদে আহমাদের সালাত
অধ্যায়ে রাসুলুল্লাহ(সা) ৮
রাকাত তারাবীহ সালাত আদায়
করেছেন বলে হাদীস রয়েছে।
১১. অপবাদঃ ডাঃ জাকির
নায়েক বলেছেন নারী ও পুরুষের
নামায একই রকম
উত্তরঃ তিনি সঠিক কথাই
বলেছেন।
নবী(সা) বলেন ‘তোমরা ঠিক
সেইভাবে নামায পড়
যেইভাবে আমাকে নামায
পড়তে দেখেছো’ (বোখারী) তাই
নারী পুরুষ সকলেরই রাসুল(সা) এর মত
করে নামায আদায় করতে হবে।
ইমাম ইমাম বুখারী (রহঃ) সহীহ
সনদের সঙ্গে উম্মে দারদা (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
তিনি নামাযে পুরুষদের মতই
বসতেন [আল তারিখ আল সাগীর
আল বুখারী ৯০]
ইব্রাহিম আল নাখাই বলেন
“নারীরা নামাযে পুরুষদের মতই
বসবে” [ইবনে আবি শায়বাহ ১/১৭০]
ইবনে হাজম বলেন ‘পুরুষ
এবং মহিলাদের নামাযের
মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই’ [আল
মাহাল্লা ৩/৩৭]
ইবনে হাজার বলেন ‘পুরুষ
এবং মহিলাদের জন্য তাকবীরের
সময় হাত তোলার
মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই’
[ফাতহুল বারী ২/২২২]
ইবনে কুদামাহ
(হাম্বলী ফেকাহবীদ) বলেন
‘প্রকৃতপক্ষে পুরুষ এবং মহিলাদের
জন্য নামাযের পদ্ধতি এক বলেই
প্রমাণিত হয়েছে শুধুমাত্র
এটা ছাড়া যে তারজন্য রুকু
এবং সিজদার সময় নিজেকে আবৃত
রাখা মুস্তাহাব’ [আল মুগনি ২/২৫৮]
ইমাম নববী বলেন ‘নারীদের
নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায়
পুরুষদের মতই বুকের উপর হাত
বাঁধা উচিত’ [শরাহ মুসলিম ১/১৯৫]
এ ব্যাপারে যারা পার্থক্য
করে থাকেন কিছু
হাদিসকে দলিল হিসাবে পেশ
করে তাদের হাদিস গুল দুর্বল,
তা জানতে এখানে ক্লিক করুন
১২. অপবাদঃ জুমা নামাযের
খুতবা মাতৃই ভাষায়ে দেওয়া।
উত্তরঃ জুমা নামাযের
খুতবা মাতৃই ভাষায়ে দেওয়ার মত
পোষণ করেছেন শ্রেষ্ঠও আলেমগণ,
সৌদি আরব এর শ্রেষ্ঠ আলেমগণ
এইমত পোষণ করেছেন ও প্রকাশ
করেছেন। নবী(সা) আরবী ভাষার
মানুষ ছিলেন তাই
তিনি আরবী তে বলতেন
এবং সাহাবীগণ তা বুঝতেন।
খুতবা হল ভাষণ এর মত। কেহ
যদি বাংলাদেশ এ এসে চাইনিস
ভাষায়ে মাহফিল
করে তাহলে সেইখানে কে যাবে?
আর গিয়েও লাভ কি? সে ত কিছুই
বুঝবে তাই, ঠিক তেমনি খুতবা হল
বুঝার জন্য তা না বুঝলে লাভ কি?
এমনকি ইমাম আবু হানিফা এর
মতেও জুম’আর খুতবা মাতৃভাষায়
দেওয়া যাবে। (রাদ আল-মুহতার,
১/৫৪৩)
১৩. অপবাদঃ ৩ তালাক কে ১
তালাক বলা।
উত্তরঃ এটি ফেকিহ ইত্তিলাফ।
অনেক মুঝতাহিদ ইমামের
মতে একসাথে ৩ তালাক
দিলে তা ১ তালাক বলে গণ্য
হবে। তবে হানাফি মাজহাবে ৩
তালাক বলেই গণ্য হবে। তথাকথিত
হানাফিরা অন্য মাজহাবকে কতটুকু
সম্মান করে তা এ থেকেই প্রকাশ
পায়ে। অন্য মাজহাবের
মতকে তারা ভ্রান্ত মত বলে। ইমাম
ইবনে তাইমিয়াহ(রহ) এর মতেও ৩
তালাক কে ১ তালাক
ধরা হবে যা ইমাম ইবন কাসীর(রহ)
সমর্থন করেছেন। তবে এর
পক্ষে সহীহ মুসলিমের তালাক
অধ্যায়ে কিছু হাদীস রয়েছে।
১৪. অপবাদঃ মহিলাদের
চেহারা ঢাকতে হবে না।
উত্তরঃ এটিও
ইত্তিলাফি মাসলা।
শক্তিশালী মত হল মুখ ঢাকতে হবে।
তবে মুজতাহিদের কেহ কেহ মুখ
খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছেন।
যদিও এটি দুর্বল মত যে মুখ
খোলা রাখা যাবে।
১৫. অপবাদঃ শার্ট-প্যান্ট-টাই –
কোর্ট এই গুলো নামায আদায়ের
সবচাইতে উত্তম পোষাক।
উত্তরঃ এ কথা তিনি বলেননি।
তিনি বলেছেন শার্ট-প্যান্ট-টাই –
কোর্ট এই গুলো পরিধান
করে সালাত আদায়
করা যাবে তবে এগুলো উত্তম
পোশাক এ কথা তিনি বলেন নাই।
এবং কোন বড় আলেম একে নিষেধ
করেন নি।সৌদি আরব এর বড়
আলেমগণও একে জায়েজ বলেছেন।
শুধু মাত্র ভারত উপমহাদেশের কিছু
গরু খাওয়া আলেম এর
সমালোচনা করেছে। কোরআন
বা সহীহ হাদিস এর কথাও এরুপ
পোশাক পরিধান করাকে হারাম
বলা হয়ে নি। হিজাব এর নিয়মেও
এরুপ পোশাক পরিধান
করাকে নিষেধ করা হয়ে নি।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ(সা) কামিস
পরিধান করেছেন বলে প্রমান
পাওয়া যায়ে। কিন্তু এই
কারনে সার্ট ও প্যান্ট পরিধান
করাকে হারাম বলা যাবে না।
কেননা আজ আমরা মোবাইল
ব্যবহার করছি কিন্তু রাসুলুল্লাহ
(সা) তো তা করেন নি, তাই
বলে কি মোবাইল ব্যবহার
করা হারাম হচ্ছে? না, ঠিক
তেমনি সার্ট ও প্যান্ট পরিধান
করাও হারাম হচ্ছে না। মজার
বিষয় হচ্ছে- যারা পোশাক
পরিধানে রাসুলুল্লাহ(সা)
কে অনুসরণকে বাধ্যতামুলক
বলছে তারাই
ইবাদাতে রাসুলুল্লাহ(সা)
কে বাদ দিয়ে বিভিন্ন মানুষের
অনুসরণ করছে। কোরআন বা সহীহ
হাদিস এর কোথাও এবং বাইবেল
এর কোথাও এরুপ কোন কথা নেই
যে ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক।
এমনকি খ্রিস্টানদের পাদ্রীরাও
(ফাদার) ‘টাই’ পরিধান করে না।
এতেই স্পষ্ট যে, ‘টাই’ খ্রিস্টানদের
প্রতীক না। এছাড়াও
ডাঃ যাকির নায়েক নিজেই
বলেছেনঃ “কেও যদি প্রমান
করতে পারেন যে ‘টাই’
খ্রিস্টানদের প্রতীক
তাহলে আজকেই আমি ‘টাই’
পরা বন্ধ করে দিব” আর ‘টাই’
কে সোজা করে ধরে দেখুন ‘টাই’
ক্রুস এর মত নয়ে বরং সোজা লাঠির
মত। কিন্তু
একটি পাঞ্জাবী বা জুব্বা সোজা করে
ধরে দেখুন
এটি ক্রুস এর মত। তাই
বলে কি পাঞ্জাবী বা জুব্বা পরা হারাম?
না, কখনোই না।
১৬. অপবাদঃ কাকড়া ও কচ্ছপ
খাওয়া হালাল।
উত্তরঃ হাদিসের কোথাও
কাকড়া ও কচ্ছপ খাওয়া হারাম
বলা হয় নি। কচ্ছপ
কে ডাঃ জাঁকির হালাল
বলেছেন হলে আমার জানা নেই,
আর কচ্ছপ হালাল না হারাম তাও
আমার জানা নেই।
কাকড়া খাওয়া ইমাম আহমাদ এর
নিকট হালাল।
১৭. অপবাদঃ ডাঃ জাকির
নায়েক বলেন- মহিলাদের
মসজিদে গিয়ে নামায
পড়তে কোন অসুবিধা নাই।
উত্তরঃ আসলেই অসুবিধা নেই।
হাম্বলি,শাফেয়ী ও
মালেকী মাজহাবে মহিলাদের
মসজিদে গিয়ে নামায
পড়া জায়েজ।
এমনকি হানাফি অনেক আলেমের
নিকটও জায়েজ। সৌদি আরবেও
তা হয়। এর পক্ষে হাদীস
যা আছে(আমার জানা) তার
রেফারেন্স হল-
মুসনাদে
আহমাদ;হাদীস-১৩২৭,১৩২৮,১৩২৯,১৩৩০,১৩৩১,১৩৩২,১৩৩৩,১৩৩৪,১৩৩৫,১৩৩৬।
এমনকি উমার ইবনে খাত্তাব(রা)
কে যখন আঘাত(শহীদ) করা হয় তখন
তার স্ত্রী মসজিদে।
(বোখারী,মুসলিম,মুসনাদে
আহমাদ;হাদীস-১৩৩৬)
আব্দুল্লাহ ইবন উমার(রাদিয়াল্লাহু
আনহু) হতে বর্ণীত রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
তোমরা আল্লাহর
বান্দীদেরকে(নারীদের)
মাসজিদে যেতে নিষেধ
করো না। আব্দুল্লাহ ইবন উমার
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) অন্য
সনদে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
তোমরা আল্লাহর
বান্দীদেরকে মাসজিদে গিয়ে সালাত
আদায় করতে নিষেধ করো না।
[সহীহ মুসলিম, মুয়াত্তা ইমাম
মালিক,আবু দাউদ, মুসনাদ ইমাম
আহমাদ;হাদীস-১৩২৭,খণ্ড-২]
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে
এখানে ক্লিক করুন
১৮. অপবাদঃ ডাঃ জাকির
নায়েক বলেনঃ ক্বাযা নামায
পড়া লাগে না।
উত্তরঃ বে-নামাযী কাফের।
বুরায়দা বিন হুছাইব(রা)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি শুনেছি নাবী(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“তাদের মাঝে এবং আমাদের
মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের,
যে ব্যাক্তি সালাত পরিত্যাগ
করবে সে কাফের
হয়ে যাবে”[মুসনাদ ইমাম আহমাদ,
নাসাঈ, ইবনু মাজাহ,তিরমিযী-
কিতাবুল ইমান,হাদীস-২৫৪৫]
উমার ইবন খাত্তাব(রা) বলেন,
“যে ব্যাক্তি সালাত পরিত্যাগ
করে, ইসলামে তার কোন অংশ
নেই”[মুসান্নাফে ইবন
আবী শায়বা-কিতাবুল ইমান, ৩৪]
আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক(রা)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“নাবী(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
সাহাবীগন নামায ব্যতীত কোন
আমল পরিত্যাগ করার
কারনে কাউকে কাফের
মনে করতেন না” [তিরমিযী-
কিতাবুল ইমান; হাকেম]
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল র. বলেন:
“সালাত বর্জনকারী মুসলিম
মিল্লাত থেকে বহিষ্কার
হয়ে যাওয়ার মত কাফির;
সে তাওবা করে সালাত আদায়
করা শুরু
না করলে তাকে হত্যা করা হবে।”
অতঃপর যখন উপরোক্ত দলীলসমূহের
দাবি অনুযায়ী একথা পরিষ্কার
হয়ে গেল যে, শরীয়তসম্মত কোন ওযর
ব্যতীত, সালাত
বর্জনকারী ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত
থেকে খারিজ করে দেওয়ার মত
কাফির হিসেবে গণ্য হবে, তখন
সে মতটিই সঠিক, যা ইমাম আহমদ ইবন
হাম্বল র. অবলম্বন করেছেন; আর
এটা ইমাম শাফেয়ী র. এর
দু’টি মতের অন্যতম একটি মত,
যেমনটি ইবনু কাছীর র. এই
আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ
করেছেন, যেখানে আল্লাহ
তা‘আলা বলেছেন:
“তাদের পরে আসল অযোগ্য
উত্তরসূরীরা, তারা সালাত নষ্ট
করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল।” –
(সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯)।
আর ইবনুল কাইয়্যেম র. ‘কিতাবুস
সালাত’ এর মধ্যে উল্লেখ
করেছেন যে, এটা হচ্ছে ইমাম
শাফেয়ী র. এর দু’টি মতের অন্যতম;
আর ইমাম ত্বাহাভী র.
তা স্বয়ং ইমাম শাফেয়ী থেকেই
বর্ণনা করেছেন।
যেহেতু নামায ইচ্ছাকৃত
ভাবে পরিত্যাগ করা কালীন
সে ব্যক্তি কাফের ছিল তাই
তাকে সালাত
কাজা করতে হবে না। যেমনটা নও
মুসলিমদের করতে হয় না।
এটি হাম্বলী ফিকাহ এর মতামত।
১৯. অপবাদঃ ডাঃ জাকির
নায়েক বলেন- ইমাম আবু
হানীফা (রাহঃ) ভুল করেছেন,
ইমাম শাফেয়ী (রহ) ভুল করেছেন,
ইমাম মালেক (রহ) ভুল করেছেন,
ইমাম আহমাদ(রহ) সবাই ভুল করেছেন।
উত্তরঃ ইমাম মালিক(রহ)
বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ(সা)
ব্যাতিত কোন মানুষ ভুলের
উরধে নয়। এখানে ইমাম মালিকও
বলেছেন যে তারা ভুলের
উরধে নয় তাহলে ডাঃ জাঁকির ত
ঠিক ই বলেছেন। এছাড়াও
ইমামগণের ভুল
হয়েছে এমনটা তাদের
পূর্ববর্তী অনুসারীদের
কাছে থেকে প্রকাশ পায়।
বিস্তারিত জানতে
এখানে ক্লিক করুন
২০. অপবাদঃ ২ ওয়াক্ত নামায
কে একত্রিত করণ সম্পর্কে ভ্রান্ত
মতবাদ।
উত্তরঃ এটি ভ্রান্ত নয়
বরং যারা একে ভ্রান্ত
বলছে তারাই ভ্রান্ত হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস(রা)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায়
অবস্থান কালে যুহরের ৪ রাকাত ও
আসরের ৪ রাকাত মোট ৮ রাকাত
এবং মাগরিবের ৩ রাকাত ও ইশার
৪ রাকাত মোট ৭ রাকাত সালাত
একত্রে আদায় করেন[সহীহ
বুখারী,মুসলিম,নাসাই,আবু দাউদ-
খণ্ড ২,অনুচ্ছেদ- দুই ওয়াক্তের
নামায একত্রে করা,হাদীস-১২১৪]
২ ওয়াক্ত নামায কে একত্রিত করণ
সম্পর্কের প্রায় সকল হাদীসের
কিতাবেই হাদীস বিদ্যমান
রয়েছে। হাদিসের রেফারেনস-
সহীহ বুখারি, মুসনাদ ইমাম আহমাদ;
হাদীস- ১২৩১,১২৩২,১২৩৩,১২৩৪; আবু
দাউদ,
হাদীস-১২০৬,১২০৭,১২০৮,১২০৯,১২১০,১২১১,১২১২,১২১৩,১২১৪,১২১৫,১২১৬,১২১৭,১২১৮,১২১৯
১২২০।
হাম্বলী মাযহাব মতেও ২
ওয়াক্তের সালাত একত্রে আদায়
করা বৈধ।
২১. অপবাদঃ ডাঃ জাকির
নায়েক কোন
মাদ্রাসা থেকে লেখা পরা করেন
নি,তার কোন ইসলামিক
ডিগ্রী নেই। তাই তার ইসলাম
সম্পর্কে বলাল কোন অধিকার নেই।
উত্তরঃ কোরআন বা সহীহ হাদিস
এর কোথাও এমন কথা লেখা নেই
যে, মাদ্রাসা বা ইসলামিক
ডিগ্রী না থাকলে ইসলাম
সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। ইমাম
আবু হানিফা(র) কোন
মাদ্রাসা থেকে লেখা পড়া করেছেন?
কোন ডিগ্রী অর্জন করেছেন?
না তিনি কোন মাদ্রাসা এ
পড়েছেন না তিনি কোন
দিগ্রী অর্জন করেছেন। তার পরও
ইমাম আবু হানিফা(র) এর তাকলীদ
করছে একদল মানুষ। যদি মাদ্রাসা ও
ডিগ্রী না থাকার পরও ইমাম আবু
হানিফার(র) তাকলীদ
করা যায়ে সেখানে কি ডাঃ যাকির
নায়েক ইসলাম সম্পর্কে কিছু
বলতে পারেন না? এই ২
মুখি নিতি কেন? ডাঃ যাকির
নায়েক মদিনা ইসলামিক
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহন
করে থাকেন যখনই
সেখানে তিনি যান।
২২. অপবাদঃ ডাঃ যাকির
নায়েক সার্ট ও প্যান্ট পরিধান
করেন। এটি জায়েজ নয়ে।
উত্তরঃ কোরআন বা সহীহ হাদিস
এর কথাও এরুপ পোশাক পরিধান
করাকে হারাম বলা হয়ে নি।
হিজাব এর নিয়মেও এরুপ পোশাক
পরিধান করাকে নিষেধ
করা হয়ে নি।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ(সা) কামিস
পরিধান করেছেন বলে প্রমান
পাওয়া যায়ে। কিন্তু এই
কারনে সার্ট ও প্যান্ট পরিধান
করাকে হারাম বলা যাবে না।
কেননা আজ আমরা মোবাইল
ব্যবহার করছি কিন্তু রাসুলুল্লাহ
(সা) তো তা করেন নি, তাই
বলে কি মোবাইল ব্যবহার
করা হারাম হচ্ছে? না, ঠিক
তেমনি সার্ট ও প্যান্ট পরিধান
করাও হারাম হচ্ছে না। মজার
বিষয় হচ্ছে- যারা পোশাক
পরিধানে রাসুলুল্লাহ(সা)
কে অনুসরণকে বাধ্যতামুলক
বলছে তারাই
ইবাদাতে রাসুলুল্লাহ(সা)
কে বাদ দিয়ে বিভিন্ন মানুষের
অনুসরণ করছে।
২৩. অপবাদঃ ডাঃ যাকির
নায়েক ‘টাই’ পরিধান করেন,
এটি খ্রিস্টানদের প্রতীক।
উত্তরঃ কোরআন বা সহীহ হাদিস
এর কোথাও এবং বাইবেল এর
কোথাও এরুপ কোন কথা নেই
যে ‘টাই’ খ্রিস্টানদের প্রতীক।
এমনকি খ্রিস্টানদের পাদ্রীরাও
(ফাদার) ‘টাই’ পরিধান করে না।
এতেই স্পষ্ট যে, ‘টাই’ খ্রিস্টানদের
প্রতীক না। এছাড়াও
ডাঃ যাকির নায়েক নিজেই
বলেছেনঃ “কেও যদি প্রমান
করতে পারেন যে ‘টাই’
খ্রিস্টানদের প্রতীক
তাহলে আজকেই আমি ‘টাই’
পরা বন্ধ করে দিব” আর ‘টাই’
কে সোজা করে ধরে দেখুন ‘টাই’
ক্রুস এর মত নয়ে বরং সোজা লাঠির
মত। কিন্তু
একটি পাঞ্জাবী বা জুব্বা সোজা করে
ধরে দেখুন
এটি ক্রুস এর মত। তাই
বলে কি পাঞ্জাবী বা জুব্বা পরা হারাম?
না, কখনোই না।
২৪. অপবাদঃ ডাঃ জাকির
নায়েক বলেছেন, দাড়ি রাখা ও
টুপি পরার কথা কোরান ও
হাদিসে নেই।
উত্তরঃ ডাঃ জাকিরের
নামে তোলা অভিযোগ গুলর
মধ্যে এটি হাস্যকর। যাই হোক,
ডাঃ জাকির নায়েক
বলেছেনঃ “দাড়ি রাখার
ব্যাপারে হুকুম এসেছে সহীহ
হাদীসে” ও টুপি পড়ার
ব্যাপারে বলেছেনঃ “টুপি পড়া ফরয
নয় তবে এটি রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
সুন্নাহ” [ডাঃ জাকির নায়েক-
লেকচার সমগ্র,অধ্যায়-পোশাকের
নিয়মাবলী, পৃঃ ৪৯৩ ও
৪৯৪;সত্যকথা প্রকাশনী]
উপরে আমার মত(মাইনুদ্দিন আহমেদ
শুভ) একজন সাধারণ মানুষ ২৪
টি অপবাদের উত্তর দিয়েছি।
তাহলে চিন্তা করুন একজন সত্য
আলেম কতই না সুন্দর
ভাবে ডাঃ জাঁকির নায়েক এর
উপর তোলা অপবাদের উত্তর
দিতে পারবে। এসব তথাকথিত
হানাফীরা হয় অন্য
মাজহাবকে সহ্য
করতে পারছে না অথবা ইসলাম
প্রচার করাকে সহ্য
করতে পারছে না যার
কারণে ডাঃ জাঁকির নায়েক এর
পিছনে লেগে আছে।
ডাঃ জাঁকির নায়েক এর ৯৯%
কথাই কোরআন ও সহীহ হাদীস
এবং কোন না কোন মাজহাব
দ্বারা সমর্থিত।
তবে আমরা মনে রাখব
যে ডাঃ জাকির নায়েক নবীও
না ফেরেশতাও না আবার
শয়তানও না। মানুষ হিসাবে তার
কিছু ভুল হতে পারে,
এটি স্বাভাবিক তবে এসব ভুলের
উর্ধে হল তার খেদমত। এবং তার
৯৯% মতামত
কোনো না কোনো মাযহাব
অথবা মুজতাহিদ দের
মাধ্যমে স্বীকৃত।
মুলঃ Mainuddin Ahmed Shuvo

ব্যাভিচার হতে ফিরে আসা

প্রশ্ন: আমি জানি না আমার ঠিক কি করা
উচিত? আমি বড় একটা গুনাহ করে
ফেলেছি। আমি জানি, আমাদের সুন্দর
ধর্মে “ধর্মগুরুর কাছে স্বীকারোক্তি” এ
রকম কিছু নেই। কিন্তু আমি যেনা করে
ফেলেছি। আমি আল্লাহর কাছে তওবা
করতে চাই এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে
চাই। আমি সূরা নূরের মধ্যে পেয়েছি যে,
আমার মত ব্যক্তি কোন পুতপবিত্রা
নারীকে বিয়ে করতে পারবে না। এখন
আমার কী করা উচিত? আমি আশা করব
আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যেন
আল্লাহ তাআলা আমার জন্য জাহান্নামের
শাস্তি লাঘব করেন।
উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক:
আপনি আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হবেন
না। আল্লাহ তাআলার এই বাণীটি অধ্যয়ন
করুন:
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের
উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত
থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ
সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”।[সূরা যুমার, আয়াত:
৫৩]
দুই:
আপনি নিষ্কলুষভাবে আল্লাহর কাছে তওবা
করুন। হারামের সকল পথ বন্ধ করে দিন। এই
পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল উপায়
উপকরণ কর্তন করুন। এছাড়া বেশি বেশি
নেক কাজ করুন। কারণ নেককাজ বদকাজকে
দূরীভূত করে দেয়।
তিন:
আপনি যদি আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ তওবা
করে নেন তখন “ব্যভিচারী” বিশেষণ হতে
আপনি রেহাই পাবেন। সেক্ষেত্রে
পুতপবিত্র নারীকে বিয়ে করা আপনার জন্য
জায়েয হবে।
চার:
আল্লাহর কাছে দোয়া করার ক্ষেত্রে
মুমিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিত। ‘আমার
জন্য জাহান্নামের শাস্তি লাঘব করুন’
মুমিন এই দোয়া না করে বরং দোয়া করবে
‘হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নামের
শাস্তি হতে নাজাত দিন। হে আল্লাহ,
আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং
জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন’। সাথে
সাথে মুমিন নেক আমল করে যাবে এবং বদ
আমল হতে তওবা করে নিবে।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

সহিহ্ পদ্ধতিতে নামায শিক্ষা

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি
আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। দরুদ ও সালাম
তাঁর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি, যিনি
সমগ্র বিশ্বমানবতার নবী, নবীকূলের
শিরোমনি সৃষ্টিকুলের রহমত ও কল্যাণের
প্রতীক। আমি শায়খ ডঃ আব্দুল্লাহ বিন
আহমাদ আলী আযযাইদের সালাত বিষয়ক
গ্রন্থ “তালীমুস সালাহ ” পাঠান্তে উপলব্ধি
করি যে, এটির বঙ্গানুবাদ সর্বসাধারণের
জন্য খুবই উপকারী হবে। কেননা বইটিতে
নামায বিষয়ক বিধি-বিধান সহজ ও সাবলীল
ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। আমার সুহৃদ
সাথি সাঈদুর রহমান মোল্লার সৎ
পরামর্শে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও
সমাজের উপকারের আশায় অনুবাদের কাজ
আরম্ভ করি। বইটিকে পরিমার্জি করতে
সাইফুল্লাহ ভাই, শফীউল আলম ভাই,
মৌলানা আব্দুর রাউফ শামীম ও মৌলানা
আমীর আলী প্রমুখ সম্পাদনার কাজে
সহযোগিতা করেছেন। যাঁরা আমাকে এ
কাজে উৎসাহ দিয়েছেন, সহযোগিতা
করেছেন, আল্লাহর কাছে তাদের মঙ্গল
কামনা করছি। অনুবাদে লেখকের মূল
বক্তব্য যথার্থভাবে প্রকাশের চেষ্টা
করেছি। আমি আশা করি এই অনুবাদ
বাংলা ভাষা-ভাষীদের নিকট সমাদৃত হবে
ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে
এই পুস্তক থেকে উপকৃত হবার তাওফীক
দিন। আমীন!
অনুবাদক
মুখবন্ধ
ﺪﻤﺤﻟﺍ ﻪﻠﻟ ﻡﻼﺴﻟﺍﻭ ﺓﻼﺼﻟﺍﻭ ﻰﻠﻋ ﺪﻤﺤﻣ
ﻦﺑ ﺪﺒﻋ ﻪﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ ،ﻢﻠﺳﻭ
ﻰﻠﻋﻭ ﻪﺒﺤﺻﻭ ﻪﻟﺁ ،ﻦﻴﻌﻤﺟﺃ ﺎﻣﺃ ﺪﻌﺑ :
নামায সম্পর্কে যে সকল বইপুস্তক লেখা
হয়েছে, আমি তা একত্রিত করার প্রয়াস
পাই। অতঃপর আমি যে বিষয়টি উপলব্ধি
করি তা হল, যেসব কিতাব নামায সম্পর্কে
লিখিত হয়েছে তার মধ্যে প্রায় সবগুলোই
বিশেষ বিশেষ দিকের উপর গুরুত্বারোপ
করে লিখিত হয়েছে। উদাহরণত এ বইগুলোর
কোনটি নামাযের বিবরণ লিখিত হয়েছে,
যার মধ্যে নামাযের ফযিলত ও গুরুত্বের
বর্ণনা স্থান পায়নি। আবার কোনটি
দ্বান্দিক মাসায়েলের আলোচনায় ভরে
দেয়া হয়েছে, যা প্রাথমিক
শিক্ষার্থীদের জন্য আদৌ প্রযোজ্য নয়;
তাই আমি এমনসব মাসআলা সংকলন করতে
মনস্থ করলাম যেগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করা
মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। কুরান-সুন্নাহর
দলীলসমৃদ্ধ করে, দ্বান্দিক মাসায়েলগুলো
অনুল্লেখ রেখে এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা
বিশ্লেণের আশ্রয়ে না গিয়ে সহজ-
সরলভাবে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি,
যাতে সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্যসমৃদ্ধ এ বইটি
সর্বজন সমাদৃত হয় এবং বিদেশী ভাষায়
অনুবাদের উপযোগী হয়। আল্লাহর নিকট
প্রার্থনা তিনি যেন আমার এই শ্রমকে
ফলপ্রসু করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা,
কবুলকারী। আর তিনিই একমাত্র
তাওফীকদাতা।
ডঃ আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আলী আযযাইদ
রিয়াদ
তারিখ ১/১/১৪১৪ হিজরী
কিছু কথা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হতে বর্ণিত সহীহ হাদীসে এসেছে, তিনি
বলেন:
” ﻡﻼﺳﻹﺍ ﻲﻨﺑ ﻰﻠﻋ ٍﺲﻤﺧ ﺓﺩﺎﻬﺷ ﻥﺃ ﻻ ﻪﻟﺇ
ﻻﺇ ﻪﻠﻟﺍ ًﺍﺪﻤﺤﻣ ّﻥﺃﻭ ﻝﻮﺳﺭ ِﻡﺎﻗﺇﻭ ﻪﻠﻟﺍ
ﺓﻼﺼﻟﺍ ِﺓﺎﻛّﺰﻟﺍ ِﺀﺎﺘﻳﺇﻭ َﻥﺎﻀﻣﺭ ِﻡﻮﺻﻭ
ﺖﻴﺒﻟﺍ ِّﺞﺣﻭ ﻦﻤﻟ ﻉﺎﻄﺘﺳﺍ ًﻼﻴﺒﺳ ﻪﻴﻟﺇ ..”
অর্থ: “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের
উপর স্থাপিত, সাক্ষ্য প্রদান করা যে,
আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই
এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। নামায প্রতিষ্ঠা
করা, যাকাত প্রদান করা, রমাযান মাসে
রোযা পালন করা। সক্ষম ব্যক্তির জন্য
আল্লাহর ঘরে (কাবা শরীফে) হজ্জ পালন
করা”। (বুখারী, মুসলিম)
উক্ত হাদীসটি ইসলামের পাঁচটি রুকন বা
স্তম্ভকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
প্রথম স্তম্ভ:
” ﺓﺩﺎﻬﺷ ﻥﺃ ﻻ ﻪﻟﺇ ﻻﺇ ﻪﻠﻟﺍ ًﺍﺪﻤﺤﻣ ﻥﺃﻭ
ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ”
অর্থ, “আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা’বুদ নেই
এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাঁর রাসূল, এ কথার সাক্ষ্য প্রদান
করা।” আর এখানে ﻻ ﻪﻟﺇ শব্দটি প্রমাণ
করছে যে, আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর ইবাদত
করা হয় তা সবই বাতিল এবং ﻻﺇ ﻪﻠﻟﺍ
শব্দটি প্রমাণ করছে ইবাদত কেবল এক
আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হতে হবে, যার
কোন অংশীদার নেই। আল্লাহ তাআলা
বলেন,
) ُﻪّﻠﻟﺍ َﺪِﻬَﺷ ُﻪَّﻧَﺃ َﻻ َﻪَﻟِﺇ َّﻻِﺇ َﻮُﻫ ُﺔَﻜِﺋَﻼَﻤْﻟﺍَﻭ
ْﺍﻮُﻟْﻭُﺃَﻭ ًﺎَﻤِﺋﺂَﻗ ِﻢْﻠِﻌْﻟﺍ ِﻂْﺴِﻘْﻟﺎِﺑ َﻻ َﻪَﻟِﺇ
َّﻻِﺇ ُﺰﻳِﺰَﻌْﻟﺍ َﻮُﻫ ُﻢﻴِﻜَﺤْﻟﺍ‏( ‏( ﺓﺭﻮﺳ ﻝﺁ
ﻥﺍﺮﻤﻋ:১৮)
অথর্: “আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে তিনি ছাড়া
কোন সত্য ইলাহ নেই, আর ফেরেশতা ও
জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায় দ্বারা
প্রতিষ্টিত। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।
তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আল
ইমরান-১৮)
আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, এ
কথার সাক্ষ্য দানের মাধ্যমে তিনটি
জিনিসের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
প্রথমত: তওহীদুল উলুহিয়্যাহ
অর্থাৎ সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র
আল্লাহর নিমিত্তে, এ কথার
স্বীকারোক্তি দেয়া এবং ইবাদতের
কোনো অংশই আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্যে
নিবেদন না করার অঙ্গিকার করা। আর এ
উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতকে
অস্তিত্বে এনেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ
তাআলা বলেন:
) ﺎَﻣَﻭ ُﺖْﻘَﻠَﺧ َﺲﻧِﺈْﻟﺍَﻭ َّﻦِﺠْﻟﺍ َّﻻِﺇ ِﻥﻭُﺪُﺒْﻌَﻴِﻟ (
অর্থ: “আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে কেবল
এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা একমাত্র
আমারই ইবাদত করবে”। (সূরা আযযারিয়াত-
৫৬)
আর এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই আল্লাহ
তাআলা যুগে যুগে রাসূলগণকে কিতাবসহ
পাঠিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা
বলেন,
) ْﺪَﻘَﻟَﻭ ﺎَﻨْﺜَﻌَﺑ ﻲِﻓ ِّﻞُﻛ ٍﺔَّﻣُﺃ ًﻻﻮُﺳَّﺭ ِﻥَﺃ
َﻪّﻠﻟﺍ ْﺍﻭُﺪُﺒْﻋﺍ َﺕﻮُﻏﺎَّﻄﻟﺍ ْﺍﻮُﺒِﻨَﺘْﺟﺍَﻭ (
অর্থ: “প্রত্যেক উম্মাতের নিকট আমি
একজন রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে,
তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত
(আল্লাহ ব্যতীত যে জিনিস বা বস্তুকে
উপাস্যরূপে গ্রহণ করা হয়) থেকে দূরে
অবস্থান কর”। (সূরা আন নাহল- ৩৬)
আর তাওহীদের সম্পূর্ণ বিপরীত হলো
শিরক। অতএব তাওহীদের অর্থ যেহেতু সকল
প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহ জন্য
নির্দিষ্ট করা; তাই শিরক হলো ইবাদতের
কোন অংশ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য
নির্দিষ্ট করা। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজ
খেয়াল-খুশি মতো আল্লাহ ব্যতীত অন্য
কারো উদ্দেশ্যে নামাজ, রোযা, দু’আ
(প্রার্থনা) নযর-মানত, জীবজন্তু উৎসর্গ
ইত্যাদি করবে, অথবা মৃতব্যক্তির কাছে
সাহায্য প্রার্থনা করবে, সে ইবাদতের
ক্ষেত্রে শিরকের আশ্রয় নিল, আল্লাহর
সাথে অন্য কাউকে অংশীদার হিসেবে
সাব্যস্ত করে নিল। শিরক হলো সবচেয়ে বড়
গুনাহ। এটি সমস্ত আমলকে বিনষ্ট করে
দেয়। এমনকি শিরকে নিপতিত ব্যক্তির
জান-মালের হুরমত পর্যন্ত রহিত হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত: তাওহীদুল রুবুবিয়্যাহ
অর্থাৎ এ কথা স্বীকার করা যে, একমাত্র
আল্লাহই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবন
দানকারী, মৃত্যু প্রদানকারী, মুদাব্বির
(ব্যবস্থাপক) এবং আসমান ও যমীনে
একমাত্র তাঁরই বাদশাহী। এ প্রকার
তাওহীদকে স্বীকৃতি দেয়া সৃষ্টিজগতের
একটি স্বভাবজাত ফিতরত-প্রকৃতি, এমন কি
যেসব মুশরিকের মাঝে আমাদের নবী
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম প্রেরিত হয়েছিলেন তারাও
তাওহীদে রুবুবীয়্যাহকে স্বীকার করত এবং
তা অস্বীকার করত না।
আল্লাহ বলেন:
) ْﻞُﻗ ﻢُﻜُﻗُﺯْﺮَﻳ ﻦَﻣ ﺀﺎَﻤَّﺴﻟﺍ َﻦِّﻣ ِﺽْﺭَﻷﺍَﻭ ﻦَّﻣَﺃ
ُﻚِﻠْﻤَﻳ َﺭﺎَﺼْﺑَﻷﺍﻭ َﻊْﻤَّﺴﻟﺍ ﻦَﻣَﻭ ُﺝِﺮْﺨُﻳ َّﻲَﺤْﻟﺍ
ِﺖِّﻴَﻤْﻟﺍ َﻦِﻣ ُﺝِﺮْﺨُﻳَﻭ َﺖَّﻴَﻤْﻟﺍ َﻦِﻣ ِّﻲَﺤْﻟﺍ ﻦَﻣَﻭ
ُﺮِّﺑَﺪُﻳ َﺮْﻣَﻷﺍ ُﻪّﻠﻟﺍ َﻥﻮُﻟﻮُﻘَﻴَﺴَﻓ ْﻞُﻘَﻓ َﻼَﻓَﺃ
َﻥﻮُﻘَّﺘَﺗ(
অর্থ: “বল, আসমান ও যমীন থেকে কে
তোমাদের রিযিক দেন? অথবা কে
(তোমাদের) শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের মালিক?
আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন
আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে
সব বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা
অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। সুতরাং তুমি বল,
‘তার পরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন
করবে না?” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩১]
এ প্রকার তাওহীকে খুব কম সংখ্যক মানুষই
অস্বীকার করে, যারা অস্বীকার করে
তারাও আবার বাহ্যিক অস্বীকার সত্ত্বেও
হৃদয়ের মনিকোঠায়, নিভৃতে, স্বীকৃতি
জ্ঞাপন করে থাকে। তাদের বাহ্যিক
অস্বীকৃতিটা হয় কেবলই জেদ ও
অহংকারের বশবর্তী হয়ে। এ বিষয়টির
প্রতিই আল্লাহ তাআলা ইঙ্গিত করে বলেন,
) ﺍﻭُﺪَﺤَﺟَﻭ ﺎَﻬِﺑ ْﻢُﻬُﺴُﻔﻧَﺃ ﺎَﻬْﺘَﻨَﻘْﻴَﺘْﺳﺍَﻭ
ﺎًﻤْﻠُﻇ ﺍًّﻮُﻠُﻋَﻭ (
অর্থ: “তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে অহংকার
করে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল,
যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে
বিশ্বাস করেছিল”। (সূরা আন্ নামল, আয়াত:
১৪)
তৃতীয়ত: তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত
অর্থাৎ আল্লাহ যেসব গুণে নিজকে
গুণান্বিত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব
গুণে তাঁকে গুণান্বিত করেছেন, তার প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন করা এবং কোনরূপ আকার,
সাদৃশ্য, বিকৃতি ও বিলুপ্তি ইত্যাদির
আশ্রয়ে না গিয়ে, তাঁর মহত্বের সাথে
সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, এমনভাবে সে গুণরাজির
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। ইরশাদ
হয়েছে:
) ِﻪّﻠِﻟَﻭ ُﻩﻮُﻋْﺩﺎَﻓ ﻰَﻨْﺴُﺤْﻟﺍ ﺀﺎَﻤْﺳَﻷﺍ ﺎَﻬِﺑ (
অর্থ: “আর আল্লাহর রয়েছে সুন্দরতম
নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব
নামেই ডাক।” [সূরা আল আরাফ, আয়াত:
১৮০]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
) َﺲْﻴَﻟ ِﻪِﻠْﺜِﻤَﻛ ٌﺀْﻲَﺷ ُﻊﻴِﻤَّﺴﻟﺍ َﻮُﻫَﻭ ُﺮﻴِﺼَﺒﻟﺍ (
অর্থ: “তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি
সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা আশ শুরা,
আয়াত:১১)
সুতরাং কালেমায়ে “লা- ইলাহা
ইল্লাল্লাহু” উক্ত তিন প্রকার তাওহীদের
স্বীকারোক্তিকে শামিল করে।
অতএব যে ব্যক্তি এই কালেমা সম্যকরূপে
অনুধাবন করে তার দাবি মুতাবিক আমল
করল, অর্থাৎ শিরক বর্জন এবং একত্ববাদে
বিশ্বাস করে লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর
রাসূলুল্লাহ উচ্চারণ করল এবং সে অনুযায়ী
আমল করল সেই প্রকৃত মুসলমান বলে
পরিগণিত হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরে
বিশ্বাস না রেখে কেবল বাহ্যিকভাবে
মুখে উচ্চারণ করল, সাথে বাহ্যিক
আমলগুলোও করে গেল, সে প্রকৃত মুসলমান
নয়, সে বরং মুনাফিক। আর যে ব্যক্তি এই
কালেমা মুখে উচ্চারণ করে তার দাবির
বিপরীত আমল করল, সে কাফির, যদিও সে
মৌখিকভাবে এই কালেমা বার বার
উচ্চারণ করে চলে, তবুও।
“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আল্লাহ প্রেরিত রাসূল”- এ কথার
সাক্ষ্য প্রদানের তাৎপর্য হল, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আল্লাহর নিকট হতে যে রিসালাত (বার্তা)
নিয়ে এসেছেন তার উপর ঈমান ও বিশ্বাস
স্থাপন করা। অর্থাৎ তাঁর আনীত বিধি-
বিধানের আনুগত্য করা ও নিষেধাবলি
থেকে বিরত থাকা এবং সকল কাজ তাঁর
প্রদর্শিত পদ্ধতি মোতাবেক করা।
ইরশাদ হয়েছে:
) ْﻢُﻛﺀﺎَﺟ ْﺪَﻘَﻟ ٌﻝﻮُﺳَﺭ ْﻦِّﻣ ٌﺰﻳِﺰَﻋ ْﻢُﻜِﺴُﻔﻧَﺃ
ِﻪْﻴَﻠَﻋ ْﻢُّﺘِﻨَﻋ ﺎَﻣ ٌﺺﻳِﺮَﺣ ﻢُﻜْﻴَﻠَﻋ
َﻦﻴِﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺎِﺑ ٌﻑﻭُﺅَﺭ ٌﻢﻴِﺣَّﺭ (
অর্থ: “নিশ্চয় তোমাদের নিজদের মধ্য
থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল
এসেছেন, তা তার জন্য কষ্টদায়ক যা
তোমাদেরকে পীড়া দেয়। তিনি
তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি
স্নেহশীল, পরম দয়ালু।(সূরা আত তাওবা,
আয়াত: ১২৮)
এ বিষয়ে আল কুরআনের আরো অনেক বাণী
প্রনিধানযোগ্য, যেমন আল্লাহ তাআলা
বলেন:
) ْﻦَّﻣ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﺍ ِﻊِﻄُﻳ ْﺪَﻘَﻓ َﻉﺎَﻃَﺃ َﻪّﻠﻟﺍ (
অথর্: “যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল সে
আল্লাহর আনুগত্য করল”। (সূরা আন নিসা,
আয়াত: ৮০)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন:
) ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﻭ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﺍَﻭ َﻪّﻠﻟﺍ
َﻥﻮُﻤَﺣْﺮُﺗ(
অর্থ: “আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও
তার রাসূলের যাতে তোমাদেরকে দয়া
করা হয়।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত:১৩২)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
) ٌﺪَّﻤَﺤُّﻣ ُﻝﻮُﺳَّﺭ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍَﻭ ِﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪَﻌَﻣ ﺀﺍَّﺪِﺷَﺃ
ﻰَﻠَﻋ ﺀﺎَﻤَﺣُﺭ ِﺭﺎَّﻔُﻜْﻟﺍ ْﻢُﻬَﻨْﻴَﺑ (
অর্থ: “মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার
সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি
অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়”। (সূরা
আল ফাতহ, আয়াত: ২৯)
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তম্ভ: নামায
প্রতিষ্ঠিত করা ও যাকাত প্রদান করা।
এ সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা:
) ﺍﻭُﺮِﻣُﺃ ﺎَﻣَﻭ َّﻻِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ ﺍﻭُﺪُﺒْﻌَﻴِﻟ َﻦﻴِﺼِﻠْﺨُﻣ
َﻦﻳِّﺪﻟﺍ ُﻪَﻟ ﺍﻮُﻤﻴِﻘُﻳَﻭ ﺀﺎَﻔَﻨُﺣ َﺓﺎَﻠَّﺼﻟﺍ
َﺓﺎَﻛَّﺰﻟﺍ ﺍﻮُﺗْﺆُﻳَﻭ َﻚِﻟَﺫَﻭ ِﺔَﻤِّﻴَﻘْﻟﺍ ُﻦﻳِﺩ (
অর্থ: ‘আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ
দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর,
ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ
করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত
দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।’ (সূরা আল
বাইয়িনাহ, আয়াত: ৫)
আল্লাহ আরো বলেন:
) َﺓَﻼَّﺼﻟﺍ ْﺍﻮُﻤﻴِﻗَﺃَﻭ َﺓﺎَﻛَّﺰﻟﺍ ْﺍﻮُﺗﺁَﻭ
ْﺍﻮُﻌَﻛْﺭﺍَﻭ َﻊَﻣ َﻦﻴِﻌِﻛﺍَّﺮﻟﺍ (
অর্থ “আর তোমরা নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর,
যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে
রুকু কর।” (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ৪৩)
নামায: এটা হলো আমাদের মূল আলোচ্য
বিষয়।
যাকাত: হচ্ছে ঐ সম্পদ যা ধনবানের নিকট
থেকে সংগৃহীত এবং ধনহীন ও যাকাতের
অন্যান্য হকদারদেরকে দেওয়া হয়। যাকাত
ইসলামের একটি মহান বিধান, যা দ্বারা
সমাজের সদস্যদের মাঝে সংহতি,
সৌহার্দ, সহযোগিতা সুনিশ্চিত হয়।
যাকাতের বিধানের মাধ্যমে দরিদ্র,
অসহায় ও যাকাতের হকদারের প্রতি
কোনরূপ দয়া প্রদর্শন নয় বরং ধনীদের
সম্পদে বিত্তহীনদের এটি একটি নির্দিষ্ট
অধিকার।
চতুর্থ স্তম্ভ: রমজান মাসে রোযা পালন
করা।
এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
) ﺎَﻳ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ْﺍﻮُﻨَﻣﺁ ُﻢُﻜْﻴَﻠَﻋ َﺐِﺘُﻛ
ُﻡﺎَﻴِّﺼﻟﺍ ﺎَﻤَﻛ َﺐِﺘُﻛ ﻰَﻠَﻋ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ْﻢُﻜِﻠْﺒَﻗ ﻦِﻣ
َﻥﻮُﻘَّﺘَﺗ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ (
অর্থ: “হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম
ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা
হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর।
যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” (সূরা
আল বাকারা, আয়াত: ১৮৩)
পঞ্চম স্তম্ভ: সক্ষম ব্যক্তির জন্য হজ পালন
করা।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর ঘোষণাঃ
) ِﻪّﻠِﻟَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِﺱﺎَّﻨﻟﺍ ُّﺞِﺣ ِﺖْﻴَﺒْﻟﺍ ِﻦَﻣ
َﻉﺎَﻄَﺘْﺳﺍ ِﻪْﻴَﻟِﺇ ًﻼﻴِﺒَﺳ ﻦَﻣَﻭ َﺮَﻔَﻛ ﻪﻠﻟﺍ َّﻥِﺈَﻓ
ٌّﻲِﻨَﻏ ِﻦَﻋ َﻦْﻴِﻤَﻟﺎَﻌْﻟﺍ (
অর্থ: “সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর
জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরয। আর যে
কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয়
সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।” (সূরা আলে
ইমরান, আয়াত: ৯৭)
নামাযের ফযীলত
উপরে উল্লিখিত নাতিদীর্ঘ আলোচনায়
উঠে এসেছে যে ইসলামে নামাযের গুরুত্ব
অপরিসীম। নামায ইসলামের দ্বিতীয় রুকন,
যা সুপ্রতিষ্ঠিত করা ব্যতীত মুসলমান হওয়া
যায় না। নামাযে অবহেলা, অলসতা
মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা মুতাবিক
নামায পরিত্যাগ করা কুফরি, ভ্রষ্টতা এবং
ইসলামের গণ্ডীবহির্ভূত হয়ে যাওয়া। সহীহ
হাদীসে এসেছে,
ﻞﺟﺮﻟﺍ ﻦﻴﺑ ﻦﻴﺑﻭ ﻙﺮﺸﻟﺍﻭ ﺮﻔﻜﻟﺍ ﻙﺮﺗ
ﺓﻼﺼﻟﺍ
অর্থ: “মুমিন ও কুফর-শিরকের মধ্যে ব্যবধান
হল নামায পরিত্যাগ করা”। (মুসলিম)
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন:
ﺪﻬﻌﻟﺍ ﻱﺬﻟﺍ ﻢﻬﻨﻴﺑﻭ ﺎﻨﻨﻴﺑ ﺓﻼﺼﻟﺍ ﻦﻤﻓ
ﺎﻬﻛﺮﺗ ﺪﻘﻓ ﺮﻔﻛ
অর্থ: “আমাদের ও তাদের মধ্যকার
অঙ্গীকার হল নামায। অত:পর যে ব্যক্তি তা
পরিত্যাগ করবে সে কাফির হয়ে যাবে।
হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন
এবং বর্ণনাসূত্রের নিরিখে হাদীসটিকে
হাসান (সুন্দর) বলেছেন।
নামায ইসলামের স্তম্ভ ও বড় নিদর্শন এবং
বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ক
স্থাপনকারী। সহীহ হাদীসে এর প্রমাণ।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
ﻢُﻛﺪﺣﺃ ﻥﺇ ﺍﺫﺇ ﻰَّﻠَﺻ ﻲﺟﺎﻨُﻳ ﻪَّﺑﺭ
অর্থ: “নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন নামায
আদায় করে তখন সে তার প্রতিপালকের
সাথে (মুনাজাত করে) নির্জনে কথা বলে।
নামায বান্দা ও তার প্রতিপালকের মহব্বত
এবং তাঁর দেওয়া অনুকম্পার কৃতজ্ঞতা
প্রকাশের প্রতীক। নামায আল্লাহর নিকট
অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার প্রমাণসমূহের একটি
এই যে, নামায হল প্রথম ইবাদত যা ফরয
হিসেবে পালনের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে এবং মেরাজের রাতে, আকাশে,
মুসলিম জাতির উপর তা ফরয করা হয়েছে।
তা ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে, ‘কোন আমল উত্তম’ জিজ্ঞাসা
করা হলে তার প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন:
” ﺓﻼﺼﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﺎﻬﺘﻗﻭ ”
অর্থ: “সময় মত নামায আদায় করা”। (বুখারী
ও মুসলিম)।
নামাযকে আল্লাহ পাপ ও গুনাহ থেকে
পবিত্রতা অর্জনের অসিলা বানিয়েছেন।
হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
ﻢُﺘﻳﺃﺭﺃ ﻮﻟ ﻥﺃ ًﺍﺮﻬﻧ ﺏﺎﺒﺑ ﻢﻛﺪﺣﺃ
ﻞﺴﺘﻐﻳ ﻪﻴﻓ ﻞﻛ ﻡﻮﻳ ﺲﻤﺧ ،ﺕﺍﺮﻣ ﻞﻫ
ﻰﻘﺒﻳ ﻪﻧﺭﺩ ﻦﻣ ؟ﺀﻲﺷ :ﺍﻮﻟﺎﻗ ،ﻻ :ﻝﺎﻗ
ﻚﻟﺬﻛ ﻞﺜﻣ ﺲﻤﺨﻟﺍ ﺕﺍﻮﻠﺼﻟﺍ ﺍﻮُﺤْﻤَﻳ ُﻪﻠﻟﺍ
ﺎﻳﺎﻄﺨﻟﺍ ّﻦﻬﺑ
অর্থ: “যদি তোমাদের কারো (বাড়ীর)
দরজার সামনে প্রবাহমান নদী থাকে এবং
তাতে প্রত্যেক দিন পাঁচ বার গোসল করে,
তাহলে কি তার (শরীরে) ময়লা বাকী
থাকবে? (সাহাবীগণ) বললেন, ‘না’। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, ‘অনুরূপভাবে আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত
নামাযের দ্বারা (বান্দার) গুনাহকে
মিটিয়ে দেন’। (বুখারী ও মুসলিম)
এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম হতে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
ﻪﻧﺃ ﻥﺎﻛ ﻪﺘﻴﺻﻭ ﺮﺧﺁ ،ﻪﺘﻣﻷ ﺮﺧﺁﻭ ﻩﺪﻬﻋ
ﻢﻬﻴﻟﺇ ﺪﻨﻋ ﻪﺟﻭﺮﺧ ﺎﻴﻧﺪﻟﺍ ﻦﻣ ﻥﺃ
ﺍﻮﻘّﺗﺍ ﻪﻠﻟﺍ ﻲﻓ ﺎﻤﻴﻓﻭ ﺓﻼﺼﻟﺍ ﺖﻜﻠﻣ
.ﻢﻜُﻧﺎﻤﻳﺃ ‏( ﺪﻤﺣﺃ ﻪﺟﺮﺧﺃ ﻲﺋﺎﺴﻨﻟﺍﻭ
ﻦﺑﺍﻭ ﻪﺟﺎﻣ )
অর্থ: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের মৃত্যুকালে তাঁর উম্মাতের জন্য
সর্বশেষ অসিয়ত (উপদেশ) এবং অঙ্গীকার
গ্রহণ ছিল, ারা যেন নামায ও তাদের দাস-
দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয়
করে।” (হাদীসটি ইমাম আহমাদ, নাসায়ী ও
ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে নামাযের
ব্যাপারে খুবই গুরুত্বারোপ করেছেন এবং
নামায ও নামাযীকে সম্মানিত করেছেন।
কুরআনের অনেক জায়গায় বিভিন্ন
ইবাদতের সাথে বিশেষভাবে নামাযের
কথা উল্লেখ করেছেন। নামাযকে তিনি
বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে কয়েকটি আয়াত নিম্নরূপ:
) ْﺍﻮُﻈِﻓﺎَﺣ ِﺕﺍَﻮَﻠَّﺼﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ﻰَﻄْﺳُﻮْﻟﺍ ِﺓَﻼَّﺼﻟﺍﻭ
ْﺍﻮُﻣﻮُﻗَﻭ َﻦﻴِﺘِﻧﺎَﻗ ِﻪّﻠِﻟ (
অর্থ “তোমরা সমস্ত নামাযের প্রতি
যত্নবান হও, বিশেষ করে (মাধ্যম) আসরের
নামায। আর আল্লাহর সমীপে কাকুতি-
মিনতির সাথে দাঁড়াও”। (সূরা আল
বাকারাহ, আয়াত: ২৩৮)
) ِﻢِﻗَﺃَﻭ َﺓﺎَﻠَّﺼﻟﺍ َﺓﺎَﻠَّﺼﻟﺍ َّﻥِﺇ ﻰَﻬْﻨَﺗ ِﻦَﻋ
ِﺮَﻜﻨُﻤْﻟﺍَﻭ ﺀﺎَﺸْﺤَﻔْﻟﺍ (
অর্থ: “আর তুমি নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর।
নিশ্চয় নামায অশালীন এবং অন্যায় কাজ
থেকে বারণ করে”। (সূরা আল-আনকাবুত,
আয়াত: ৪৫)
) ﺎَﻳ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ْﺍﻮُﻨَﻣﺁ ْﺍﻮُﻨﻴِﻌَﺘْﺳﺍ
ِﺓَﻼَّﺼﻟﺍَﻭ ِﺮْﺒَّﺼﻟﺎِﺑ َﻪّﻠﻟﺍ َّﻥِﺇ َﻊَﻣ
َﻦﻳِﺮِﺑﺎَّﺼﻟﺍ(
অর্থ: “হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও
নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।
নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে
আছেন।” (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
) َﺓَﻼَّﺼﻟﺍ َّﻥِﺇ ْﺖَﻧﺎَﻛ ﻰَﻠَﻋ َﻦﻴِﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ
ﺎًﺗﻮُﻗْﻮَّﻣ ﺎًﺑﺎَﺘِﻛ (
অর্থ: “নিশ্চয় নামায মুমিনদের উপর
নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।” (সূরা আন নিসা,
আয়াত: ১০৩)
নামায পরিত্যাগকারীর জন্য আল্লাহর
আযাব অপরিহার্য।
ইরশাদ হয়েছে:
) َﻒَﻠَﺨَﻓ ْﻢِﻫِﺪْﻌَﺑ ﻦِﻣ ٌﻒْﻠَﺧ َﺓﺎَﻠَّﺼﻟﺍ ﺍﻮُﻋﺎَﺿَﺃ
ﺍﻮُﻌَﺒَّﺗﺍَﻭ َﻑْﻮَﺴَﻓ ِﺕﺍَﻮَﻬَّﺸﻟﺍ َﻥْﻮَﻘْﻠَﻳ ﺎًّﻴَﻏ (
অর্থ: “অতঃপর তাদের পরে আসল এমন এক
অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং
কুপ্রত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা
শীগ্রই জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ
করবে”। (সূরা মারয়াম, আয়াত: ৫৯)
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী, আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে, তাঁর ক্রোধ ও
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে বাঁচার
উদ্দেশ্যে নামায সুপ্রতিষ্ঠিত করা ও
সময়মত তা আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের
অবশ্য কর্তব্য।
তাহারাত (পবিত্রতা)
তাহারাত বলতে শরীর, কাপড় এবং
নামাযের স্থান সবগুলোর পবিত্রতাকেই
বুঝায়। শরীরের পবিত্রতা দুইভাবে হয়:
প্রথমত: হাদসে আকবর বা বড় নাপাকী
থেকে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন,
বড় নাপাকী স্বামী-স্ত্রীর মিলন অথাব
অন্য কোন কারণে বীর্যস্খলন কিংবা
হায়েয-নেফাসের কারণে হয়ে থাকে, তা
থেকে পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে চুলসহ
শরীরের সর্বাঙ্গে পানি বয়ে দেয়ার
মাধ্যমে এ গোসল সম্পন্ন হয়।
দ্বিতীয়তঃ ওযুঃ এ বিষয়ে আল্লাহ বলেনঃ
) ﺎَﻳ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ْﺍﻮُﻨَﻣﺁ ﺍَﺫِﺇ ْﻢُﺘْﻤُﻗ ﻰَﻟِﺇ
ْﺍﻮُﻠِﺴْﻏﺎﻓ ِﺓﻼَّﺼﻟﺍ ْﻢُﻜَﻳِﺪْﻳَﺃَﻭ ْﻢُﻜَﻫﻮُﺟُﻭ ﻰَﻟِﺇ
ْﻢُﻜَﻠُﺟْﺭَﺃَﻭ ْﻢُﻜِﺳﻭُﺅُﺮِﺑ ْﺍﻮُﺤَﺴْﻣﺍَﻭ ِﻖِﻓﺍَﺮَﻤْﻟﺍ
ﻰَﻟِﺇ ِﻦﻴَﺒْﻌَﻜْﻟﺍ (
অর্থ: “হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নামাযে
দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও
কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর
এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)”। (সূরা আল
মায়েদা, আয়াত: ৬)
উক্ত আয়াতে এমন কয়েকটি কার্য
অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলো ওযু করাকালীন
সম্পাদন করা অত্যাবশ্যক। আর তা হল:
১। মুখমণ্ডল ধৌত করা। এর মধ্যে কুলি করা
এবং নাকে পানি দিয়ে নাক পরিস্কার
করাও অন্তর্ভুক্ত।
২। কনুইসহ দুই হাত ধৌত করা।
৩। সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। আর সম্পূর্ণ
মাথা বলতে দুই কানও অন্তর্ভুক্ত।
৪। দুই পায়ের গিরাসহ ধৌত করা।
কাপড় ও নামাযের স্থানের তাহারাতের
অর্থ হলো পেশাব, পায়খানা এবং এ
জাতীয় অন্যান্য অপবিত্র বস্তু থেকে
পবিত্র হওয়া।
ফরয নামায
ইসলাম মুসলমানদের উপর দিন ও রাতে পাঁচ
ওয়াক্ত নামায ফরয করেছে। আর এগুলো হল,
ফজরের নামায, যোহরের নামায, আসরের
নামায, মাগরিবের নামায এবং এশার
নামায।
১। ফজরের নামায: ফজরের নামায দুই
রাকাত। এর সময় ফজরেসানী অর্থাৎ
রাতের শেষাংশে, পূর্বাকাশে, শ্বেত
আভা প্রসারিত হওয়া থেকে নিয়ে
সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।
২। যোহরের নামায: যোহরের নামায চার
রাকাত। এর সময় মধ্যকাশ থেকে সূর্য ঢলে
যাওয়ার পর মূল ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক
জিনিসের ছায়া তার সমান হওয়া পর্যন্ত।
৩। আসরের নামায: আসরের নামায চার
রাকাত। এর সময় যোহরের সময় শেষ হবার
পর আরম্ভ হয় যাওয়ালের ছায়া ছাড়া
প্রত্যেকটি জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়া
পর্যন্ত। (এটি সবচে উত্তম ওয়াক্ত) আর
জরুরী ওয়াক্ত সূর্য নিস্তেজ হয়ে রোদের
হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত।
৪। মাগরিবের নামায: মাগরিবের নামায
তিন রাকাত। এর সময় সূর্যাস্তের পর থেকে
শফক্বে আহমার অর্থাৎ পশ্চিম আকাশে
লোহিত রং অদৃশ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত।
৫। এশার নামায: এশার নামায চার
রাকাত। এর সময় মাগরিবের সময় শেষ
হওয়ার পর থেকে রাতের এক তৃতীয়াংশ
পর্যন্ত। অথবা রাতের প্রথম অর্ধাংশ
পর্যন্ত।
নামায যেভাবে আদায় করবেন
উল্লিখিত বিবরণ অনুযায়ী নামাযের স্থান
ও শরীরের পবিত্রতা অর্জনের পর
নামাযের সময় হলে নফল অথবা ফরয, যে
কোন নামায পড়ার ইচ্ছা করুন না কেন,
অন্তরে দৃঢ়সংকল্প নিয়ে কিব্লা অর্থাৎ
পবিত্র মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফের
দিকে মুখ করে একাগ্রতার সাথে দাঁড়িয়ে
যাবেন এবং নিম্নবর্ণিত কর্মগুলো করবেন:
১। সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রেখে
তাক্বীরে তাহ্রীমা (আল্লাহু আকবার)
বলবেন।
২। তাকবীরের সময় কান বরাবর অথবা কাঁধ
বরাবর উভয় হাত উঠাবেন।
৩। তাকবীরের পর নামায শুরুর একটি দু’আ
পড়বেন, পড়া সুন্নাত। দু’আটি নিম্নরূপ:
َﻚَﻧﺎَﺤْﺒُﺳ َﻙَﺭﺎَﺒَﺗَﻭ َﻙِﺪْﻤَﺤِﺑَﻭ َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ َﻚُﻤْﺳﺍ
ﻰَﻟﺎَﻌَﺗَﻭ َﻙُّﺪَﺟ ﻻَﻭ َﻪَﻟﺇ َﻙُﺮْﻴَﻏ
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া
বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া
তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা
গাইরুকা।
অর্থ: “প্রশংসা এবং পবিত্রতা বর্ণনা
করছি আপনার হে আল্লাহ! বরকতময় আপনার
নাম। অসীম ক্ষমতাধর ও সুমহান আপনি।
আপনি ভিন্ন আর কোন উপাস্য নেই”।
ইচ্ছা করলে উক্ত দু’আর পরিবর্তে এই দোআ
পড়া যাবে:
” َّﻢُﻬَّﻠﻟَﺍ ْﺪِﻋﺎَﺑ ﻲِﻨْﻴَﺑ َﻱﺎَﻳﺎَﻄَﺧ َﻦْﻴَﺑَﻭ ﺎَﻤَﻛ
َﺕْﺪَﻋﺎَﺑ َﻦْﻴَﺑ ،ِﺏِﺮْﻐَﻤْﻟﺍَﻭ ِﻕِﺮْﺸَﻤْﻟﺍ َّﻢُﻬَّﻠﻟَﺍ
ﻲِﻨِّﻘَﻧ َﻱﺎَﻳﺎَﻄَﺧ ْﻦِﻣ ﺎَﻤَﻛ ُﺏْﻮَّﺜﻟﺍ ﻰَّﻘَﻨُﻳ
ُﺾَﻴْﺑَﻷﺍ َﻦِﻣ ،ِﺲَﻧَّﺪﻟﺍ ﻲِﻨْﻠِﺴْﻏﺍ َّﻢُﻬَّﻠﻟَﺍ ْﻦِﻣ
ِﺀْﺎَﻤْﻟﺎِﺑ َﻱﺎَﻳﺎَﻄَﺧ ِﺩَﺮَﺒْﻟﺍَﻭ ِﺞْﻠَّﺜﻟﺍَﻭ ”
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা বাইদ্ বাইনী ওয়া
বাইনা খাতাইয়াইয়া কামা বা’আত্তা
বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি,
আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতাইয়াইয়া
কামা য়ুনাক্কাছ ছাওবুল আবইয়াযু
মিনাদ্দানাসি, আল্লাহুম্মাগ্সিল্নী মিন্
খাতাইয়াইয়া বিল মায়ি ওয়াছ্ ছালজি
ওয়াল বারাদি”।
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাকে ও আমার
গুনাহের মাঝে এতটা দূরত্ব সৃষ্টি করুন যতটা
দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের
মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ঠিক
ঐভাবে পাপমুক্ত করুন যেভাবে সাদা
কাপড় ময়লামুক্ত হয়। হে আল্লাহ! আপনি
আমার গুনাহসমূহকে পানি দিয়ে ও বরফ
দিয়ে এবং শিশির দ্বারা ধুয়ে দিন”।
(বুখারী ও মুসলিম)
৪। তারপর বলবেন:
ُﺫْﻮُﻋَﺃ ِِﻪﻠﻟﺎﺑ ِﻥﺎَﻄْﻴَّﺸﻟﺍ َﻦِﻣ ِﻢْﻴِﺟَّﺮﻟﺍ
ِﻪّﻠﻟﺍ ِﻢْﺴِﺑ ِﻢﻴِﺣَّﺮﻟﺍ ِﻦَﻤْﺣَّﺮﻟﺍ
উচ্চারণ: “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির
রাজীম, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম”।
অর্থ: “আমি আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহর নিকট
অভিশপ্ত শয়তান থেকে। আরম্ভ করছি
দয়াবান কৃপাশীল আল্লাহর নামে।”
এর পর সূরা ফাতিহা পড়বেন:
) ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ ِﻪّﻠﻟ ِّﺏَﺭ َﻦﻴِﻤَﻟﺎَﻌْﻟﺍ ِﻦَﻤْﺣَّﺮﻟﺍ *
ِﻢﻴِﺣَّﺮﻟﺍ * ِﻚِﻠَﻣ ِﻡْﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﺍ َﻙﺎَّﻳِﺇ * ُﺪُﺒْﻌَﻧ
َﻙﺎَّﻳِﺇﻭ ُﻦﻴِﻌَﺘْﺴَﻧ ﺎَﻧِﺪﻫﺍ * َﻁﺍَﺮِّﺼﻟﺍ
َﻢﻴِﻘَﺘﺴُﻤﻟﺍ * َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ َﻁﺍَﺮِﺻ َﺖﻤَﻌﻧَﺃ ْﻢِﻬﻴَﻠَﻋ
ْﻢِﻬﻴَﻠَﻋ ِﺏﻮُﻀﻐَﻤﻟﺍ ِﺮﻴَﻏ َﻦﻴِّﻟﺎَّﻀﻟﺍ َﻻَﻭ
‏( ﻦﻴﻣﺁ
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি
সৃষ্টিকুলের রব। পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা
ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য
চাই। আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত
দিন। তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত
দিয়েছেন। যাদের উপর আপনার ক্রোধ
আপতিত হয় নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।”
৫। তারপর কুরআন হতে মুখস্থ যা সহজ তা
পড়বেন। যেমন:
) ﺍَﺫِﺇ ﺀﺎَﺟ ِﻪَّﻠﻟﺍ ُﺮْﺼَﻧ ُﺢْﺘَﻔْﻟﺍَﻭ َﺖْﻳَﺃَﺭَﻭ *
َﺱﺎَّﻨﻟﺍ َﻥﻮُﻠُﺧْﺪَﻳ ﻲِﻓ ِﻦﻳِﺩ ﺎًﺟﺍَﻮْﻓَﺃ ِﻪَّﻠﻟﺍ *
ْﺢِّﺒَﺴَﻓ ِﺪْﻤَﺤِﺑ َﻚِّﺑَﺭ ُﻩْﺮِﻔْﻐَﺘْﺳﺍَﻭ ُﻪَّﻧِﺇ َﻥﺎَﻛ
ﺎًﺑﺍَّﻮَﺗ(
অর্থ: “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়
এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর
দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি
আপনার পালককর্তার পবিত্রতা ঘোষণা
করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল।”
৬। তারপর আল্লাহু আকবার (আল্লাহ
সবচেয়ে বড়) বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা
কান বরাবর উত্তোলন করে দুই হাত হাঁটুর
উপর রেখে পিঠ সোজা ও সমান করে রুকু
করবেন এবং বলবেন
َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ ِﻲِّﺑَﺭ ِﻢﻴِﻈَﻌْﻟﺍ
উচ্চারণ: “সুবহানা রাব্বিয়্যাল আযীম
(পবিত্র মহান রবের পবিত্রতা ঘোষণা
করছি)
এটি তিনবার অথবা তিনের অধিকবার বলা
সুন্নত।
তারপর বলবেন:
” ُﻪﻠﻟﺍ َﻊِﻤَﺳ ْﻦَﻤِﻟ ﻩَﺪِﻤَﺣ ”
“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” (আল্লাহ
ঐ ব্যক্তিকে শুনলেন যে তাঁর প্রশংসা
করল)
বলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে, ইমাম হোক
অথবা একাকী হোক, সোজা দাঁড়িয়ে
গিয়ে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর
উত্তোলন করে বলতে হবে:
” ﺎَﻨَّﺑَﺭ َﻚَﻟَﻭ ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ ًﺍﺮﻴِﺜَﻛ ًﺍﺪْﻤَﺣ ًﺎﺒِّﻴَﻃ
ًﺎﻛَﺭﺎَﺒُﻣ ِﻪﻴِﻓ َﺀْﻞِﻣ ِﺕﺍَﻭَﺎﻤَّﺴﻟﺍ َﺀْﻞِﻣَﻭ
ِﺽْﺭَﻷﺍ َﺀْﻞِﻣَﻭ ﺎﻣ ﺎَﻤُﻬَﻨْﻴَﺑ َﺀْﻞِﻣَﻭ ﺎَﻣ َﺖْﺌِﺷ
ْﻦِﻣ ٍﺀْﻲَﺷ ُﺪْﻌَﺑ ”
উচ্চারণ: রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু
হামদান কাসীরান তাইয়্যেবান মুবারাকান
ফীহ, মিল্ আস্সামাওয়াতি ওয়া
মিলআলআরযি, ওয়ামিলআ মা বাইনাহুমা
ওয়া মিলআ মা শী’তা মিন শাইয়িন বা’দু”।
অর্থ: ” হে আমার প্রতিপালক! প্রশংসা
আপনারই জন্য, প্রচুর প্রশংসা, যে প্রশংসা
পবিত্র-বরকতময়, আকাশ ভরে, যমীন ভরে
এবং এ উভয়ের মধ্যস্থল ভরে, এমনকি আপনি
যা ইচ্ছে করেন তা ভরে পরিপূর্ণরূপে
আপনার প্রশংসা”।
আর যদি মুক্তাদী হয় তাহলে রুকু থেকে
মাথা উঠিয়ে উপরোল্লেখিত দু’আ ﺎَﻨَّﺑَﺭ
َﻚَﻟﻭ ﺪْﻤَﺤْﻟﺍ …. (রাব্বানা ওয়ালাকাল
হামদু…) শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
৮। তারপর ُﻪﻠﻟﺍ ُﺮَﺒْﻛَﺃ (আল্লাহু আকবর)
বলে বাহুকে তার পার্শ্বদেশ থেকে এবং
ঊরুকে উভয় পায়ের রান থেকে আলাদা
রেখে সেজদা করবেন। সেজদা পরিপূর্ণ হয়
সাতটি অঙ্গের উপর, কপাল-নাক, দুই হাতের
তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের অঙ্গুলির
তলদেশ। সেজদার অবস্থায় তিনবার অথবা
তিন বারেরও বেশি এই দুআ পড়বেন।
َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ َﻲِّﺑَﺭ ﻰَﻠْﻋَﻻﺍ
উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা
(পবিত্রতা ঘোষণা করছি আমার মহান
প্রতিপালকের)
বলবেন এবং ইচ্ছা মত বেশী করে দু’আ
করবেন।
৯। তারপর ُﻪﻠﻟﺍ ُﺮَﺒْﻛَﺃ (আল্লাহু আকবার)
বলে মাথা উঠিয়ে পা খাড়া রেখে বাম
পায়ের উপর বসে দুই হাত, রান ও হাঁটুর উপর
রেখে বলবেন,
َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ ْﺮِﻔْﻏﺍ ،ﻲِﻟ ﻲِﻨِﻓﺎَﻋَﻭ ،ﻲِﻨْﻤَﺣْﺭﺍَﻭ
،ﻲِﻧِﺪْﻫﺍَﻭ ﻲِﻨْﻗُﺯَﺭﺍَﻭ ْﻲِﻧْﺮُﺒْﺟﺍَﻭ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাগর্ফিলী ওর্য়াহামনী
ওয়া আফিনী ওয়ারজুকনী ওয়াহ্দিনী
ওয়াজবুরনী”।
অর্থ: ” হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা
করুন, দয়া করুন, নিরাপদে রাখুন, জীবিকা
দান করুন, সরল পথ দেখান, শুদ্ধ করুন”।
১০। তারপর ُﻪﻠﻟﺍ ﺮَﺒْﻛَﺃ (আল্লাহু আকবার)
বলে দ্বিতীয় সেজদা করবেন এবং প্রথম
সেজদায় যা করেছেন তাই করবেন।
১১। তারপর ُﻪﻠﻟﺍ ﺮَﺒْﻛَﺃ (আল্লাহু আকবার)
বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে
দাঁড়াবেন। (এই ভাবে প্রথম রাকাত পূর্ণ
হবে।)
১২। তারপর দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা
ফাতিহা ও কুরআনের কিছু অংশ পড়ে রুকু
করবেন এবং দুই সেজদা করবেন, অর্থাৎ
পুরোপুরিভাবে প্রথম রাকাতের মতোই
করবেন।
১৩। তারপর দ্বিতীয় রাকাতের দুই সেজ্দা
থেকে মাথা উঠানোর পর দুই সাজ্দার
মাঝের ন্যায় বসে তাশাহ্হুদের এই দু’আ
পড়বেন:
” ُﺕﺎَﻴِﺤَّﺘﻟَﺍ ِﻪَّﻠِﻟ ُﺕﺍَﻮَﻠَّﺼﻟﺍَﻭ ،ُﺕﺎَﺒِّﻴَّﻄﻟﺍَﻭ
ُﻡﻼَّﺴﻟَﺍ َﻚْﻴَﻠَﻋ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ُﺔَﻤْﺣَﺭَﻭ ِﻪَّﻠﻟﺍ
،ُﻪُﺗﺎَﻛَﺮَﺑَﻭ ﺎَﻨْﻴَﻠَﻋ ُﻡﻼَّﺴﻟَﺍ ﻰَﻠَﻋَﻭ
ِﻪﻠﻟﺍِﺩﺎَﺒِﻋ ُﺪَﻬْﺷَﺃ ،َﻦﻴِﺤِﻟﺎَﺼﻟﺍ ْﻥَﺃ َﻻ َﻪَﻟِﺇ
َّﻻِﺇ ُﺪﻬﺷَﺃﻭ ُﻪﻠﻟﺍ َّﻥَﺃ ًﺍﺪَّﻤَﺤُﻣ ُﻩُﺪْﺒﻋ
ُﻪُﻟﻮُﺳَﺭَﻭ”
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি
ওয়াস্সলাওয়াতু ওয়াত্তাইয়েবাতু,
আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু ওয়া
রহ্মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আস্সালামু
আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্
সলেহীন, আশ্হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া
রাসূলুহ”।
অর্থ : “সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য,
সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল
কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী!
আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও
তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপরে
এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে
শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই
এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ
আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
তবে নামায যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়।
যেমন: ফজর, জুমআ, ঈদ তাহলে
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ….. পড়ার পর
একই বৈঠকে এই দরূদ পড়বেন:
” َّﻢُﻬَّﻠﻟَﺍ ِّﻞَﺻ ﻰَﻠَﻋ ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ ﻰَﻠَﻋَﻭ ِﻝﺁ ،ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ
َﺖْﻴَﻠَﺻ ﺎَﻤَﻛ ﻰَﻠَﻋ ﻰَﻠَﻋَﻭ َﻢﻴِﻫﺍَﺮْﺑِﺇ ِﻝﺁ
،َﻢﻴِﻫﺍَﺮْﺑِﺇ َﻚَّﻧِﺇ ٌﺪﻴِﻤَﺣ ،ٌﺪﻴِﺠَﻣ َﻭ ْﻙِﺭﺎَﺑ
ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ ﻰَﻠَﻋ ﻰَﻠَﻋَﻭ ِﻝﺁ ٍﺪَّﻤَﺤُﻣ ﺎَﻤَﻛ َﺖْﻛَﺭﺎَﺑ
َﻢﻴِﻫﺍَﺮْﺑِﺇ ﻰَﻠَﻋ ﻰَﻠَﻋَﻭ َﻢﻴِﻫﺍَﺮْﺑِﺇ ِﻝﺁ َﻚَّﻧِﺇ
ٌﺪْﻴِﻤَﺣ ٌﺪْﻴِﺠَﻣ ”
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা
মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা
আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ,
ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়ালা
আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাক্তা আলা
ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা
ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
অর্থ: ” হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার
বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন,
যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস
সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ
করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত
সম্মানিত।”
আপনি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরদের উপর
বরকত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি
ইব্রাহীম ও তার বংশধরদের উপর বরকত
বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত,
সম্মানিত”।
তারপর চারটি জিনিস থেকে এই বলে
পানাহ চাইবেন:
” َّﻢُﻬَّﻠﻟَﺍ ﻲِّﻧِﺇ ُﺫْﻮُﻋَﺃ َﻚِﺑ ْﻦِﻣ ِﺏﺍَﺬَﻋ ،َﻢَّﻨَﻬَﺟ
ِﺏﺍَﺬَﻋ ْﻦِﻣَﻭ ،ِﺮْﺒَﻘْﻟﺍ ْﻦِﻣَﻭ ﺎَﻴْﺤَﻤْﻟﺍ ِﺔَﻨْﺘِﻓ
،ِﺕﺎَﻤَﻤْﻟﺍَﻭ ْﻦِﻣَﻭ ِﺢْﻴِﺴَﻤْﻟﺍ ِﺔَﻨْﺘِﻓ ِﻝﺎَّﺟَّﺪﻟﺍ ”
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন
আযাবি জাহান্নামা ওয়া মিন আযাবিল্
ক্বাবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া
ওয়াল্মামাতি ওয়া মিন ফিত্নাতিল
মাসীহিদ্দাজ্জাল”।
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি অবশ্যই আপনার
নিকট জাহান্নাম ও কবরের শাস্তি থেকে
আশ্রয় চাচ্ছি। দজ্জালের ফিত্না এবং
জীবন মৃত্যুর ফিত্না থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”
উক্ত দু’আর পর ইচ্ছেমত দুনিয়া ও আখিরতের
কল্যাণ কামনার্থে মাস্নুন দু’আ পড়বেন।
ফরয নামায হোক অথবা নফল সকল ক্ষেত্রে
একই পদ্ধতি প্রযোজ্য। তারপর ডান দিকে
ও বাম দিকে (গর্দান ঘুরিয়ে)
” ُﻡَﻼَّﺴﻟَﺍ ُﺔَﻤْﺣَﺭَﻭ ْﻢُﻜْﻴَﻠَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ”
উচ্চারণ: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া
রহমাতুল্লাহ” বলবেন।
আর নামায যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট হয়,
যেমন মাগরিব। অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট
হয়, যেমন যোহর, আসর ও এশা, তাহলে
দ্বিতীয় রাকাতের পর (সালাম না
ফিরিয়ে) “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি….
পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু হাত কাঁধ
বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে
সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে শুধু সূরা ফাতিহা
পড়ে প্রথম দু’ রাকাতের মত রুকু ও সাজদা
করতে হবে এবং চতুর্থ রাকাতেও একই
পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তবে (শেষ
তাশাহ্হুদে) বাম পা, ডান পায়ের নীচে
রেখে ডান পা খাড়া রেখে মাটিতে
নিতম্বের (পাছার) উপর বসে মাগরিবের
তৃতীয় রাকাতের শেষে এবং যোহর, আসর ও
এশার চতুর্থ রাকাতের শেষে, শেষ
তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ……, ও
দরূদ পড়বেন। ইচ্ছে হলে অন্য দু’আও পড়বেন।
এরপর ডান দিকে (গর্দান) ঘুরিয়ে
(আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ”
বলবেন। আর এভাবেই নামায সম্পন্ন হয়ে
যাবে।
জামাআতের সহিত নামায
আল্লাহ তাআলা বলেন:
) َﺓَﻼَّﺼﻟﺍ ْﺍﻮُﻤﻴِﻗَﺃَﻭ َﺓﺎَﻛَّﺰﻟﺍ ْﺍﻮُﺗﺁَﻭ
ْﺍﻮُﻌَﻛْﺭﺍَﻭ َﻊَﻣ َﻦﻴِﻌِﻛﺍَّﺮﻟﺍ ‏( ‏(ﺓﺭﻮﺳ
ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ: ৪৩)
অর্থ: “তোমরা নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর এবং
রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” সূরা আল
বাকারা, আয়াত: ৪৩
জামাআতের সাথে নামায পড়ার আগ্রহ ও
উৎসাহ প্রদানে এবং তার ফযীলত সম্পর্কে
অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, অপর দিকে
জামাআত বর্জন ও জামাতের সাথে নামায
আদায়ে অবহেলাকারীর বিরুদ্ধেও তার
অবহেলার ক্ষেত্রে সতর্কতকারী হাদীস
এসেছে।
ইসলামের কিছু ইবাদত একত্রিত ও
সম্মিলিতভাবে করার বিধান রয়েছে। এ
বিষয়টি ইসলামের উত্তম বৈশিষ্ট্যসমূহের
একটি বলা যায়। যেমন, হজপালনকারীরা
হজের সময় সম্মিলিতভাবে হজ পালন করেন,
বছরে দু’বার ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহায়
(কুরবানী ঈদে) মিলিত হন এবং প্রতিদিন
পাঁচবার জামাআতের সাথে নামায আদায়
করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হন।
নামাযের জন্য এই দৈনিক সম্মিলন
মুসলিমদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, সহযোগিতা
এবং সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের প্রশিক্ষণ
দেয়। এটি মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ,
সহযোগিতা, পরিচিতি, যোগাযোগ এবং
প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
জামাআতের সহিত নামায মুসলিমদের
মধ্যে সাম্য, আনুগত্য, সততা এবং প্রকৃত
ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। কেননা ধনী-
গরীব, রাজা-প্রজা, ছোট-বড় একই স্থানে ও
কাতারে দাঁড়ায়, যা দ্বারা আন্তরিকতা
সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ্ব, বিচ্ছিন্নতা, বর্ণ-জাতি,
স্থান ও ভাষাগত গোঁড়ামি বিলুপ্ত হয়।
জামাআতের সহিত নামায কায়েমের
মধ্যে রয়েছে মুসলিমদের সংস্কার,
ঈমানের পরিপক্কতা ও তাদের মধ্যে যারা
অলস তাদের জন্য উৎসাহ প্রদানের উপকরণ।
জামাতের সাথে নামায আদায়ের মাধ্যমে
আল্লাহর দ্বীন প্রকাশ পায় এবং কথায় ও
কর্মে মহান আল্লাহর প্রতি আহ্বান করা হয়,
জামাআতের সাথে নামায কায়েম ঐ সকল
বৃহৎ কর্মের ন্তর্ভুক্ত যা দ্বারা বান্দাগণ
আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং এটি
মর্যাদা ও নেকি বৃদ্ধির কারণ।
জুমআর নামায
দ্বীন ইসলাম একতাকে পছন্দ করে।
মানুষকে একতার প্রতি আহ্বান করে।
বিচ্ছিন্নতা ও ইখতেলাফকে ঘৃণা ও অপছন্দ
করে। তাই ইসলাম মুসলমানদের পারস্পরিক
পরিচিতি, প্রেমপ্রীতি ও একতার এমন
কোন ক্ষেত্র বাদ রাখেনি যার প্রতি
আহ্বান করেনি। জুমআর দিন মুসলমানদের
সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তারা সেদিন
আল্লাহর স্মরণ ও গুণকীর্তনে সচেষ্ট হয়
এবং দুনিয়াবী কাজ-কর্ম ও ব্যস্ততা
পরিত্যাগ করে আল্লাহ প্রদত্ত অপরিহার্য
বিধান ফরয নামায আদায় করার জন্য এবং
সাপ্তাহিক দারস তথা জুমআর খুতবা -যার
মাধ্যমে খতীব ও আলিমগণ কল্যাণমুখী
জীবনযাপনের পন্থা ও পদ্ধতি বয়ান করে
থাকেন, সমাজের নানা সমস্যা তুলে ধরে
ইসলামের দৃষ্টিতে তার সমাধান কী তা
উপস্থাপন করেন – শোনার জন্য আল্লাহর ঘর
মসজিদে জমায়েত হয়।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
) ﺎَﻳ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺍﻮُﻨَﻣﺁ ﺍَﺫِﺇ ﻱِﺩﻮُﻧ
ِﺓﺎَﻠَّﺼﻠِﻟ ﻦِﻣ ِﻡْﻮَﻳ ﺍْﻮَﻌْﺳﺎَﻓ ِﺔَﻌُﻤُﺠْﻟﺍ ﻰَﻟِﺇ
ِﻪَّﻠﻟﺍ ِﺮْﻛِﺫ ﺍﻭُﺭَﺫَﻭ ْﻢُﻜِﻟَﺫ َﻊْﻴَﺒْﻟﺍ ٌﺮْﻴَﺧ ْﻢُﻜَّﻟ
ﻥِﺇ َﻥﻮُﻤَﻠْﻌَﺗ ْﻢُﺘﻨُﻛ * ﺍَﺫِﺈَﻓ ُﺓﺎَﻠَّﺼﻟﺍ ِﺖَﻴِﻀُﻗ
ﺍﻭُﺮِﺸَﺘﻧﺎَﻓ ﻲِﻓ ﺍﻮُﻐَﺘْﺑﺍَﻭ ِﺽْﺭَﺄْﻟﺍ ﻦِﻣ ِﻞْﻀَﻓ
ِﻪَّﻠﻟﺍ َﻪَّﻠﻟﺍ ﺍﻭُﺮُﻛْﺫﺍَﻭ ﺍًﺮﻴِﺜَﻛ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَّﻟ
َﻥﻮُﺤِﻠْﻔُﺗ(
অর্থ: “হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন
নামাযের আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা
আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচা-
কেনা বন্ধ কর, এটা তোমাদের জন্য উত্তম,
যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত
হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর
অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর ও আল্লাহকে
অধিক স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম
হও”। (সূরা জুমআ, আয়াত: ৯-১০)
জুমআ প্রতিটি মুক্বীম (বাড়ীতে
অবস্থানকারী), আযাদ (স্বাধীন). বালিগ
(প্রাপ্ত বয়স্ক) মুসলমানের উপর ওয়াজিব।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
নিয়মিত জুমআর নামায আদায় করেছেন এবং
তিনি জুমআ পরিত্যাগকারী সম্পর্কে কঠোর
উক্তি পেশ করে বলেছেন:
ٌﻡﺍﻮْﻗَﺃ َّﻦَﻴِﻬَﺘﻨَﻴَﻟ ِﺕﺎﻌﻤﺠﻟﺍ ْﻢِﻬِﻋْﺩَﻭ ْﻦَﻋ ﻭﺃ
َّﻦَﻤُﺘﺨﻴَﻟ ﻪﻠﻟﺍ ْﻢِﻬِﺑﻮﻠُﻗ ﻰﻠﻋ َّﻢُﺛ َّﻦَﻧﻮُﻜَﻴَﻟ
ﻦﻣ َﻦﻴِﻠِﻓﺎﻐﻟﺍ ‏( ﻢﻠﺴﻣ ).
অর্থ: “যারা জুমআ পরিত্যাগ করে তাদের
অবশ্যই ক্ষান্ত হওয়া উচিত, অন্যথায়
আল্লাহ নিশ্চয় তাদের অন্তরে মোহর
মেরে দেবেন। ফলে তারা গাফেলদের
অন্তর্ভুক্ত হবে নিশ্চিতরূপেই”। (মুসলিম)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আরো বলেন:
” ْﻦَﻣ َﻙَﺮَﺗ َﺙﻼﺛ ًﺎﻧَﻭﺎَﻬَﺗ ٍﻊَﻤَﺟ َﻊَﺒَﻃ ﻪﻠﻟﺍ
ِﻪِﺒْﻠَﻗ ﻰﻠَﻋ ”
অর্থ: “যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুম্আ
পরিত্যাগ করবে আল্লাহ তার অন্তরে মোহর
মেরে দেবেন”।
জুমআর নামায দুই রাকাত। জুমআর ইমামের
পিছনে একতেদা করে জুমআর এ দু’রাকাত
নামায আদায় করতে হবে।
জুমআর নামাযের জন্য জামে মসজিদ হওয়া
শর্ত। অর্থাৎ যে মসজিদে জুমআর নামায
আদায় করা হয়, যেখানে মুসলমানরা
একত্রিত হয় এবং তাদের ইমাম তাদেরকে
সম্বোধন করে কথা বলেন, নসীহত-উপদেশ
দেন, সরল পথ দেখান।
জুম্আর খুতবা চলাকালীন কথা বলা হারাম।
এমনকি যদি কেউ তার পাশের ব্যক্তিকে
বলে, ‘চুপ থাক’ তাহলেও সে কথা না বলার
বিধান ভঙ্গ করল বলে পরিগণিত হবে।
মুসাফিরের নামায
আল্লাহ তাআলা বলেন:
) ُﺪﻳِﺮُﻳ ُﻪّﻠﻟﺍ ُﻢُﻜِﺑ َﺮْﺴُﻴْﻟﺍ َﻻَﻭ ُﺪﻳِﺮُﻳ ُﻢُﻜِﺑ
َﺮْﺴُﻌْﻟﺍ (
অর্থ: “আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন
চান না।” (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫)
ইসলাম একটি সহজ ধর্ম। আল্লাহ কাউকে
তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পন
করেন না এবং এমন কোন আদেশ তার উপর
চাপিয়ে দেন না, যা পালনে সে অক্ষম।
তাই সফরে কষ্টের আশংকা থাকায়
আল্লাহ সফর অবস্থায় দুটো কাজ সহজ করে
দিয়েছেন।
এক: নামায কসর করে পড়া। অর্থাৎ চার
রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামায দু’রাকাত করে
পড়া। অতএব, ( হে প্রিয় পাঠক পাঠিকা)
আপনি সফরকালে যোহর, আসর এবং এশার
নামায চার রাকাতের পরিবর্তে দু’রাকাত
পড়বেন। তবে মাগরিব ও ফজর আসল অবস্থায়
বাকি থাকবে। এ দুটো কসর করে পড়লে
চলবে না। নামাযে কসর আল্লাহর তরফ
থেকে রুখসত তথা সহজিকরণ। আর আল্লাহ
যা সহজ করে দেন তা মেনে নেয়া ও সে
অনুযায়ী আমল করা আল্লাহর কাছে পছন্দের
বিষয়। যেরূপভাবে তিনি পছন্দ করেন
আযীমত (আবশ্যিক বিধান) যথার্থরূপে
বাস্তবায়িত হওয়া।
পায়ে হেঁটে, জীব-জন্তুর পিঠে চড়ে,
ট্রেনে, নৌযানে, প্লেনে এবং মোটর
গাড়িতে সফর করার ক্ষেত্রে কোন
পার্থক্য নেই। সফরের মাধ্যম যাই হোক না-
কেন, নামায কসর করে পড়ার ক্ষেত্রে এর
কোন প্রভাব নেই। অর্থাৎ শরীয়তের
পরিভাষায় যাকে সফর বলা হয় এমন সকল
সফরেই চার রাকাতবিশিষ্ট নামায কসর
করে পড়ার বিধান রয়েছে।
দুই: দুই নামায একত্র করে আদায় করা।
মুসাফিরের জন্য দুই ওয়াক্তের নামায এক
ওয়াক্তে জমা করা বৈধ। অতএব, মুসাফির
যোহর ও আসর একত্র করে অনুরূপভাবে
মাগরিব ও এশা একত্র করে পড়তে পারবে।
অর্থাৎ দুই নামাযের সময় হবে এক এবং ঐ
একই সময়ে দুই ওয়াক্তের নামায আলাদা
আলাদাভাবে আদায় করার অবকাশ রয়েছে।
যোহরের নামায পড়ার পর বিলম্ব না করে
আসরের নামায পড়বে। অথবা মাগরিবের
নামায পড়ার পরেই সাথে সাথে এশার
নামায পড়বে। যোহর-আসর অথবা মাগরিব-
এশা ছাড়া অন্য নামায একত্রে আদায় করা
বৈধ নয়। যেমন ফজর, যোহর অথবা আসর
মাগরিবকে জমা করা বৈধ নয়।
মাসনূন যিকরসমূহ
নামাযের পর তিন বার
‘আসতাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাচ্ছি), পড়া সুন্নাত। তারপর এই
দোয়া পড়বে:
” َّﻢُﻬَّﻠﻟَﺍ َﺖْﻧَﺃ ُﻡﻼَّﺴﻟﺍ ُﻡﻼَّﺴﻟﺍ َﻚْﻨِﻣﻭ
َﺖْﻛَﺭﺎَﺒَﺗ ﺎَﻳ ﺍَﺫ ،ِﻡﺍَﺮْﻛِﻹﺍَﻭ ِﻝﻼِﺠﻟﺍ َﻻ َﻪَﻟِﺇ
َّﻻِﺇ ُﻩَﺪْﺣَﻭ ُﻪَّﻠﻟﺍ َﻻ َﻚﻳِﺮَﺷ ،ُﻪَﻟ ُﻪَﻟ ُﻚْﻠُﻤْﻟﺍ
ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ ُﻪَﻟَﻭ َﻮُﻫَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِّﻞُﻛ ٍﺀْﻲَﺷ ،ٌﺮﻳِﺪَﻗ
َّﻢُﻬَّﻠﻟَﺍ َﻊِﻧﺎَﻣ َﻻ ﺎَﻤِﻟ ،َﺖْﻴَﻄْﻋَﺃ َﻻَﻭ َﻲِﻄْﻌُﻣ
،َﺖْﻌَﻨَﻣ ﺎَﻤِﻟ َﻻَﻭ ُﻊَﻔْﻨَﻳ ﺍَﺫ ِّﺪَﺠْﻟﺍ َﻚْﻨِﻣ
ُّﺪَﺠﻟﺍ ”
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আনতাস্সালামু ওয়া
মিনকাস্ সালামু তাবারাকতা ইয়া
যাল্জালালি ওয়াল ইকরাম, লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু
লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা
কুল্লি শাইইন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা
মানিয়া’ লিমা আ’তাইতা, ওয়া লা মু’তিয়া
লিমা মানা’তা, লা ইয়ানফাউ যালজাদ্দি
মিনকালজাদ্দু”।
অর্থ, হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়, আপনার
কাছ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময়
হে প্রতাপশালী সম্মানের অধিকারী!
আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই।
তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই।
তাঁরই বিশাল রাজ্য এবং তাঁরই সমস্ত
প্রশংসা। আর তিনিই সমস্ত কিছুর উপর
ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা দান
করতে চান তা কেউ রোধ করতে পারে না।
আপনার শাস্তি হতে কোন ধনীকে তার ধন
রক্ষা করতে পারে না”।
তারপর ৩৩ বার করে আল্লাহর পবিত্রতা
বর্ণনা, প্রশংসা বর্ণনা এবং তাকবীর
পড়বে। অর্থাৎ ৩৩ বার َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ ِﻪﻠﻟﺍ
(সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার ُﺪْﻤَﺤﻟَﺍ ِﻪَّﻠِﻟ
(আলহামদুলিল্লাহ) এবং ৩৩ বার ُﻪﻠﻟَﺍ
ْﺮَﺒْﻛَﺃ (আল্লাহু আকবার) পড়বে। সবগুলো
মিলে ৯৯ বার হবে অতঃপর একশত পূর্ণ
করার জন্য বলবে,
” َﻻ َﻪَﻟِﺇ َّﻻِﺇ ُﻪَّﻠﻟﺍ ُﻩَﺪْﺣَﻭ َﻻ َﻚﻳِﺮَﺷ ،ُﻪَﻟ ُﻪَﻟ
ُﻚْﻠُﻤْﻟﺍ ُﻪَﻟَﻭ ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ َﻮُﻫَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِّﻞُﻛ ٍﺀْﻲَﺷ
ٌﺮﻳِﺪَﻗ”
উচ্চারণ: “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু
লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল
হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন
ক্বাদীর”।
অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য
নেই। তিনি একক তাঁর কোন অংশীদার
নেই। তাঁর বিশাল রাজ্য এবং সমস্ত
প্রশংসা। আর তিনিই যাবতীয় বস্তুর উপর
শক্তিমান”।
তারপর “আয়াতুল্ কুরসী”, ( ْﻞُﻗ َﻮُﻫ ُﻪﻠﻟﺍ
ٌﺪَﺣَﺃ) “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ”, ( ْﻞُﻗ ُﺫْﻮُﻋَﺃ
ِّﺏَﺮِﺑ ِﻖَﻠَﻔْﻟﺍ ) “কুল আউযুবি রব্বিল ফালাক”,
( ْﻞُﻗ ُﺫْﻮُﻋَﺃ ِﺱﺎَّﻨﻟﺍ ِّﺏَﺮِﺑ ) “কুল আউযুবি রব্বিন
নাস” পড়বে।
কুলহু আল্লাহু আহাদ, ফালাক, নাস এই
তিনটি সূরা ফজর ও মাগরিবের নামাযের
পর তিন বার করে পড়া মুস্তাহাব।
উপরে উল্লেখিত যিক্র ছাড়া ফজর ও
মাগরিবের পর এই দু’আ দশ বার পড়া
মুস্তাহাব।
َﻻ َﻪَﻟِﺇ َّﻻِﺇ ُﻪَّﻠﻟﺍ ُﻩَﺪْﺣَﻭ َﻻ َﻚﻳِﺮَﺷ ،ُﻪَﻟ ُﻪَﻟ
ُﻚْﻠُﻤْﻟﺍ ُﻪَﻟَﻭ ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ ِﻲْﺤُﻳ َﻭ ُﺖْﻴِﻤُﻳ َﻮُﻫَﻭ
ﻰَﻠَﻋ ِّﻞُﻛ ٍﺀْﻲَﺷ ٌﺮﻳِﺪَﻗ
উচ্চারণ: ” লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু
লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল
হামদু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা
কুল্লি শাইইন ক্বাদীর”।
অর্থাৎঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য
নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার
নেই। তাঁরই রাজত্ব এবং তাঁরই সমস্ত
প্রশংসা। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু
ঘটান। আর তিনিই সকল বস্তুর উপর
শক্তিমান”।
এ সমস্ত যিকর ফরয নয়, সুন্নাত।
সুন্নত নামায
সফর ছাড়া বাড়ীতে অবস্থান কালে বারো
রাকআত সুন্নাত নামায নিয়মিত আদায় করা
সকল মুসলিম নর নারীর জন্য মুস্তাহাব। আর
তা হল যোহরের পূর্বে চার রাকাত ও পরে
দু’রাকাত। মাগরিবের পরে দু’রাকাত।
এশার পর দু’ রাকাত ও ফজরের আগে
দু’রাকাত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সফর অবস্থায় যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নত
ছেড়ে দিতেন। তবে ফজরের সুন্নত ও
বিতরের নামায সফর অবস্থায়ও নিয়মিত
আদায় করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য উত্তম
আদর্শ। ইরশাদ হয়েছে:
) ْﺪَﻘَﻟ َﻥﺎَﻛ ْﻢُﻜَﻟ ﻲِﻓ ِﻪَّﻠﻟﺍ ِﻝﻮُﺳَﺭ ٌﺓَﻮْﺳُﺃ
ٌﺔَﻨَﺴَﺣ (
অর্থ: “নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের জীবনে
তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদশ।” (সূরা
আল আহযাব, আয়াত :২১)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন:
ﺍﻮُّﻠَﺻ ﺎﻤَﻛ ﻲﻧﻮُﻤُﺘْﻳَﺃَﺭ ﻲِّﻠَﺻُﺃ
অর্থ: “তোমরা আমাকে যেভাবে নামায
পড়তে দেখেছ ঠিক সেভাবে নামায পড়”।
(বুখারী)
আল্লাহই তাওফিক দাতা।
ﻪﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻﻭ ﻰﻠﻋ ﺎﻨﻴﺒﻧ ﺪﻤﺤﻣ ﻰﻠﻋﻭ ﻪﻟﺁ
ﻦﻴﻌﻤﺟﺃ ﻪﺒﺤﺻﻭ .
আমীন
সংকলন: ড. আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আলী
আযযাইদ
সম্পাদক: আবু শুআইব মুহাম্মাদ সিদ্দীক
সূত্র: ইসলাম, ওয়াকফ, দাওয়াহ ও ইরশাদ
বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সৌদী আরব

আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী এর জীবনী

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় বন্ধুগণ, আজ আপনাদের সাথে পরিচয়
করিয়ে দিব এমন একজন ব্যক্তিত্বের সাথে
যাকে বর্তমান শতকের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস
হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। হাদীস
গবেষণায় যিনি বর্তমান পৃথিবীতে একজন
আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহান ব্যক্তি। ইলম
চর্চায় তার জীবনীতে আমাদের প্রেরণার
যথেষ্ট খোরাক রয়েছে। প্রবল ইচ্ছা শক্তি,
অসীম সাহস, সুদৃঢ় মনোবল আর ইখলাস ভরা
প্রত্যয় থাকলে কিভাবে একজন মানুষকে
আল্লাহ তায়ালা সাধারণ ঘড়ির মেকার
থেকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদে
পরিণত করে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছেন
আল্লামা আলাবানী। অত:এব আর কাল
বিলম্ব না করে আসুন, আমরা হাদীসে
নববীর এই নিরলস খাদেম, সালফে
সালেহীনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি, মুহাদ্দিস,
ফকীহ, দাঈ, ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও
গবেষক আল্লামা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন
আলবানী (রহ:) এর সাথে পরিচিত হই।
প্রারম্ভিকা: আল্লামা মুহাম্মদ
নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ:) আধুনিক যুগে
মুসলিম জাহানের একজন স্বনামধন্য আলেম।
আধুনিক বিশ্বে শাইখ আলবানীকে ইলমে
হাদীসের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইলমুল
জারহে ওয়াত তাদীলের[1] ক্ষেত্রে
স্বতন্ত্র প্রতিভাধারী আলেম হিসেবে গণ্য
করা হয়। ইলমে মুস্তালাহুল হাদীসের[2]
ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য
বক্তিত্ব।
মুহাদ্দিসগণ বলেছেন: “তিনি যেন ইবনে
হাজার আসকালানী, হাফেয ইবনে কাসীর
প্রমুখ ইলমুল জারহে ওয়াত তাদীলের
আলেমদের যুগকে আবার ফিরিয়ে
এনেছিলেন।”
জন্ম ও পরিচয়:
নাম: মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন (১৯১৪-১৯৯৯
খৃষ্টাব্দ) পিতার নাম: আলহাজ্ব নূহ। দাদার
নাম: নাজাতী। ডাক নাম: আবু আব্দুর
রহমান। ইউরোপের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ
আলবেনিয়ায় তার জন্ম হওয়ায় তাকে
আলবানী বলা হয়। তিনি ১৩৩৩ হিজরী
মোতাবেক ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে আলবেনিয়ার
রাজধানী স্কোডার (Shkodër-বর্তমান নাম
তিরানা) এ জন্ম গ্রহণ করেন। তার পরিবার
ছিল দরিদ্র। কিন্তু দীনদারী ও জ্ঞানার্জন
তাদের দারিদ্রতার উপর ছিল বিজয়ী। তার
পিতা ছিলেন আলবেনিয়ার একজন বিজ্ঞ
আলেম। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের
জন্য মানুষ তার কাছে ছুটে যেত। তিনি
সাধ্যানুযায়ী মানুষকে দ্বীনের জ্ঞান
দিতেন এবং তাদেরকে দিক নির্দেশনা
প্রদান করতেন। তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে
শরীয়াহ বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।
আলবেনিয়ায় প্রেসিডেন্ট আহমদ জাগু
পশ্চাত্য সেকুলার সভ্যতার দিকে ধাবিত
হয়ে নারীদের পর্দা নিষিদ্ধ করলে তিনি
শিশু আলবানীকে নিয়ে সপরিবারে
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে হিজরত
করেন।
শিক্ষা জীবন:
দামেস্ক আসার পর আলবানীর বয়স নয়
বছরের কাছাকাছি হলে তার পিতা তাকে
সেখানকার ‘স্কুল অব এইড চ্যারিটি’ নামক
একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।
সেখানেই তিনি কৃতিত্বের সাথে
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
প্রচলিত একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দীন
সম্পর্কে ভাল জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা ছিল
না। বিধায় তার পিতা এসব শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে নিজ ছেলের পড়া-শোনার
ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টি পোষণ করতেন। এ
কারণে, তিনি নিজে সন্তানের জন্য
স্বতন্ত্র শিক্ষা সিলেবাস তৈরি করে তার
মাধ্যমে তাকে আল কুরআনুল কারীম,
তাজবীদ, নাহু, সরফ এবং হানাফী ফিকাহ
ইত্যাদি বিষয় শিক্ষা দিতে লাগলেন।
ফিকাহের মধ্যে হানাফী ফিকাহের
অন্যতম কিতাব মুখতাসরুল কুদুরী পড়ান।
তিনি তার পিতার কাছেই হাফস বিন
আসেম এর রেয়াওয়াত অনুযায়ী কুরআনের
হিফয সমাপ্ত করেন।
এরপর তার পিতার বন্ধু বিশিষ্ট আলেম
শাইখ সাঈদ আল বুরহানীর নিকট হানাফী
ফিকাহের কিতাব মুরাকিল ফালাহ, নাহুর
কিতাব শুযূরুয যাহাব এবং আধুনিক যুগের
লিখা আরবী সাহিত্য ও ইলমুল বালাগাহর
কিছু কিতাবাদি পড়েন। এর পাশাপাশি
তিনি তখনকার দামেস্কের প্রসিদ্ধ আলেম
আল্লামা মুহাম্মদ বাহজা আল বাইতারের
বিভিন্ন দারসে অংশ গ্রহণ করতেন।
তিনি তার পিতার কাছেই ঘড়ি
মেরামতের কাজ শিখেন এবং এ ক্ষেত্রে
সুখ্যাতি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঘড়ি
মেরামতকেই জীবীকার পেশা হিসেবে
বেছে নেন। এই পেশায় তিনি ব্যক্তিগত
পড়া-লেখা ও বিভিন্ন কিতাবাদী
অধ্যয়নের পর্যাপ্ত সময় পান। এভাবে
সিরিয়ায় হিজরতের মাধ্যমে তার জন্যে
আরবী ভাষা ও মূল উৎস থেকে শরীয়তের
জ্ঞানার্জনের পথ সুগম হয়।
হাদীস অধ্যয়ন:
হাদীস অধ্যয়নের প্রতি তার মনোনিবেশ:
যদিও তার পিতার ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল
তার ছেলে যেন হানাফী মাজহাবের
তাকলীদ করে। যার কারণে তিনি তাঁকে
ইলমে হাদীস চর্চায় মনোনিবেশ করতে
সতর্ক করতেন। তথাপি আলবানী ইলমুল
হাদীস ও হাদীস চর্চার দিকে ঝুঁকে পড়েন।
এ ক্ষেত্রে তাঁকে প্রেরণা যোগায় শাইখ
মুহাম্মদ রশীদ রেজা কর্তৃক প্রকাশিত আল
মানার নামক একটি মাসিক ম্যাগাজিন।
সেখানে হাদীস বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে
বিভিন্ন সন্দর্ভ প্রকাশিত হয় এবং তিনি
সেগুলো নিয়মিতভাবে অধ্যয়ন করতে
থাকেন। এভাবে ধীরে ধীরে হাদীস
চর্চায় মনোনিবেশ করার জন্য তার মন
ব্যাকুল হয়ে উঠে। তারপর ব্যাপক আগ্রহ
সহকারে হাদীস চর্চা শুরু করেন। ফলে
মাত্র বিশ বছর বয়সে তিনি হাদীসের
ক্ষেত্রে যথেষ্ট বুৎপত্তি অর্জন করেন।
এবার তিনি হাদীসের সেবায় কলম ধরলেন।
সর্ব প্রথম যে কাজটি করলেন তা হল, তিনি
হাফেজ ইরাকী (রহ:) এর লিখা “ﻲﻨﻐﻤﻟﺍ
ﻦﻋ ﻞﻤﺣ ﺭﺎﻔﺳﻷﺍ ﻲﻓ ﺞﻳﺮﺨﺗ ﺎﻣ ﻲﻓ
ﺀﺎﻴﺣﻹﺍ ﻦﻣ ﺭﺎﺒﺧﻷﺍ ” নামক কিতাবটি
কপি করে তাতে টিকা সংযোজন করলেন।
শাইখের এই কাজটি তার সামনে হাদীস
নিয়ে গবেষণার বিশাল দরজা খুলে দেয়।
এরপর ইলমে হাদীস নিয়ে গবেষণা করা
তার প্রধান কাজে পরিণত নয়। ক্রমেই
তিনি দামেস্কের ইলমী জগতে এ বিষয়ে
পরিচিতি লাভ করেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে দামেস্কের
জাহেরিয়া লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ তার জন্য
বিশেষ একটি কক্ষ নির্ধারণ করে দেয়,
যেন তিনি সেখানে অবস্থান করে গবেষণা
কর্ম চালাতে পারেন। সেই সাথে
লাইব্রেরীর একটি চাবিও তাকে দেয়া হয়
যেন তিনি যখন খুশি তাতে প্রবেশ করতে
পারেন।
তবে বই-পুস্তক লেখা শুরু করেন তার জীবনে
দ্বিতীয় স্তরে। এই পর্যায়ে এসে তিনি
সর্ব প্রথম যে গ্রন্থটি রচনা করে তা হল:
ﺮﻳﺬﺤﺗ ﺪﺟﺎﺴﻟﺍ ﻦﻣ ﺫﺎﺨﺗﺍ ﺭﻮﺒﻘﻟﺍ
ﺪﺟﺎﺴﻣ এটি একটি দলীল নির্ভর তুলনামূলক
আলোচনা ভিত্তিক ফিকাহের কিতাব।
এটি একাধিক বার মুদ্রিত হয়েছে।
ইলমে হাদীসের রীতি অনুসারে হাদীসের
তাখরীজ সংক্রান্ত প্রথম পর্যায়ের অন্যতম
একটি গ্রন্থ হল:
ﺽﻭﺮﻟﺍ ﺮﻴﻀﻨﻟﺍ ﺐﻴﺗﺮﺗ ﻲﻓ ﺞﻳﺮﺨﺗ ﻭ
ﻢﺠﻌﻣ ﺮﻴﻐﺼﻟﺍ ﻲﻧﺍﺮﺒﻄﻟﺍ ”
যা এখানো পাণ্ডুলিপি আকারেই রয়েছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের হাদীসের সাথে যুক্ত থাকার
কারণে শাইখ আলবানীর মধ্যে সালাফী
চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে। সেই সাথে
সালাফী ধারার বিশ্ব বরেণ্য আলেম
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এবং তার
ছাত্র ইবনুল কাইয়েম (রহ.) রচিত গ্রন্থাদী
অধ্যয়ন করার ফলে এই রীতির উপর তার
দৃঢ়তা আরও মজবুত হয়।
শাইখ আলবানী এবার সিরিয়ায় তাওহীদ ও
সুন্নাহর দিকে দাওয়াতের পতাকা তুলে
ধরলেন। ফলে সিরিয়ার অনেক আলেম
ওলামা তার সাক্ষাতে আসেন এবং শাইখ
ও ঐ সকল আলেমদের মাঝে তাওহীদের
বিভিন্ন মাসআলা, কুরআন-সন্নাহর অনুসরণ,
মাজহাবী গোঁড়ামি, বিদআত ইত্যাদি
অনেক বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা ও
তর্ক-বিতর্ক হয়।
ফলে মাজহাবের অন্ধভক্ত গোঁড়া আলেম-
ওলামা, সুফি, বিদআতী এবং
কুসংস্কারাচ্ছন্ন একশ্রেণীর নামধারী
আলেমদের পক্ষ থেকে তিনি প্রচণ্ড
বিরোধিতার সম্মুখীন হন। এ সকল ব্যক্তিরা
সাধারণ অজ্ঞ-মূর্খ লোকদেরকে তার
বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। তাকে
‘পথভ্রষ্ট ওহাবী’ বলে অপপ্রচার চালাতে
থাকে এবং জনসাধারণকে শাইখ থেকে
সর্তক করতে থাকে।
অপরপক্ষে তার দাওয়াতের সাথে ঐকমত্য
পোষণ করেন দামেস্কের ইলম ও
পরহেজগারীতায় প্রসিদ্ধ স্বনামধন্য
আলেম-ওলামাগণ। তারা শাইখকে তার
দাওয়াতের পথে দৃঢ় কদমে এগিয়ে যাওয়ার
প্রতি উৎসাহিত করেন। সে সকল
ওলামাগণের মধ্যে অন্যতম হলেন: বিশিষ্ট
আলেমে দ্বীন আল্লামা বাহজাত আল
বাইতার, সিরিয়া মুসলিম যুব সংঘের
প্রধান শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আল ইমাম,
শাইখ তাওফীক আল বাযারাহ প্রমুখ।
শাইখ আলবানীর দাওয়াহ কার্যক্রম:
নিয়মিত দারস:
তিনি প্রতি সপ্তাহে দুদিন আকীদাহ,
ফিকাহ, উসুল এবং ইলমুল হাদীস ইত্যাদি
বিষয়ে দারস প্রদান করতেন। এতে
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও উপস্থিত
হতেন। এতে তিনি যে সকল বইয়ের উপর
দারস প্রদান করতেন সেগুলো হল:
১) ফাতহুল মাজীদ, লেখক: আব্দুর রহমান
বিন হাসান বিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল
ওয়াহাব।
ﺪﻴﺠﻤﻟﺍ ﺢﺘﻓ ﻦﻤﺣﺮﻟﺍ ﺪﺒﻌﻟ ﻦﺑ ﻦﺴﺣ ﻦﺑ
ﺪﻤﺤﻣ ﻦﺑ ﺏﺎﻫﻮﻟﺍ ﺪﺒﻋ
২) আর রওজাতুন নাদিয়াহ শারহুদ দুরারুল
বাহিয়্যাহ লিশ শাওকানী শারহু সিদ্দীক
হাসান খাঁন।
ﺔﻳﺪﻨﻟﺍ ﺔﺿﻭﺮﻟﺍ ﺡﺮﺷ ﺔﻴﻬﺒﻟﺍ ﺭﺭﺪﻟﺍ
ﻲﻧﺎﻛﻮﺸﻠﻟ ﻖﻳﺪﺻ ﺡﺮﺷ ﻦﺴﺣ ﻥﺎﺧ .
৩) উসূলুল ফিকাহ, লেখক: আব্দুল ওয়াহাব
খাল্লাফ।
ﻝﻮﺻﺃ ﻪﻘﻔﻟﺍ ﺏﺎﻫﻮﻟﺍ ﺪﺒﻌﻟ ﻑﻼﺧ
৪) আল বায়িসুল হাসীস শারহু ইখতিসারি
উলূমিল হাদীস লি ইবনে কাসীর, লেখক:
আহমদ শাকের।
ﺚﻴﺜﺤﻟﺍ ﺚﻋﺎﺒﻟﺍ ﺡﺮﺷ ﺭﺎﺼﺘﺧﺍ ﻡﻮﻠﻋ
ﺚﻳﺪﺤﻟﺍ ﻦﺑﻻ ﺮﻴﺜﻛ ﺡﺮﺷ ﺮﻛﺎﺷ ﺪﻤﺣﺍ
৫) মিনহাজুল ইসলাম ফিল হুকম, লেখক:
মুহাম্মদ আসাদ।
ﺝﺎﻬﻨﻣ ﻡﻼﺳﻹﺍ ﻲﻓ ﺪﻤﺤﻤﻟ ﻢﻜﺤﻟﺍ ﺪﺳﺃ
৬) ফিকহুস সুন্নাহ, লেখক: সাইয়েদ সাবিক।
ﻪﻨﺴﻟﺍ ﻪﻘﻓ ﺪﻴﺴﻟ ﻖﺑﺎﺳ
খ) প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে তিনি
দাওয়াতী সফরে বের হতেন। প্রথম পর্যায়ে
তিনি মাসে এক সপ্তাহ দাওয়াতী কাজ
করতেন। পরবর্তীতে তা আরও বৃদ্ধি
পেয়েছিল। তিনি সিরিয়ার বিভিন্ন
জেলায় দাওয়াত নিয়ে যেতেন।
পাশাপাশি জর্ডানের বিভিন্ন এলাকায়ও
সফর করতেন এবং অবশেষে তিনি
জর্ডানের রাজধানী আম্মানে স্থায়ী
ভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন। এই কারণে
তার কিছু দুশমন সিরিয় সরকারের কাছে
তার ব্যাপারে চুগলখোরি করলে সরকার
তাকে জেলে পাঠায়।
কষ্টে ধৈর্য ধারণ ও হিজরত:
১৯৬০ সালের প্রথম দিকে শাইখ সিরিয়া
ক্ষমতাসীনদের নজরদারীতে পড়েন যদিও
তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। যা
তার সামনে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করেছিল। তিনি দুবার গ্রেফতার হয়েছেন।
প্রথমবার ৬৮ সালের আগে দামেস্কের
কেল্লা কারাগারে বন্দি ছিলেন
একমাসের জন্য। এটা সেই কারাগার
যেখানে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া
(রহ:)কে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ৬৮
সালের যুদ্ধের সময় সিরিয় সরকার সকল
রাজবন্দীকে মুক্ত করে দিলে তিনিও মুক্ত
হন।
কিন্তু যুদ্ধ আরও কঠিন রূপ ধারণ করলে
শাইখকে পুনরায় কারাবরণ করতে হয়। কিন্তু
এবার কেল্লা কারাগারে নয় বরং
দামেস্কের পূর্ব-উত্তরাঞ্চলের আল
হাসাকা কারাগারে। শাইখ এখানে আট
মাস অতিবাহিত করেন। কারাগারে
অবস্থানের এই আট মাস সময়ে তিনি
হাফেয মুনযেরীর লেখা মুখতাসার সহীহ
মুসলিম তাহকীক করেন এবং সেখানে
অন্যান্য বড় বড় রাজবন্দী ব্যক্তিত্বের
সাথে মিলিত হন।
পরবর্তীতে তিনি সিরিয়া ছেড়ে জর্ডানে
পাড়ি জমান এবং রাজধানী আম্মানে
স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। মৃত্যু পর্যন্ত
তিনি সেখানেই ছিলেন।
কার্যক্রম ও অবদান:
শাইখের অনেক ইলমী অবদান ও খেদমত
রয়েছে। তন্মধ্যে:
১) শাইখ দামেস্ক একাডেমীর কতিপয়
শিক্ষকদের সাথে আল্লামা বাহজাত আল
বাইতারের বিভিন্ন দারসে অংশ গ্রহণ
করতেন। সে সকল শিক্ষকদের একজন হলেন
ইযযুদ্দীন আত তানূহী (রহ:)।
২) দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়া
ফ্যাকাল্টির পক্ষ থেকে তাকে ইসলামী
ফিকাহ কোষ এর বুয়ূ বা ব্যবসা-বাণিজ্য
সংক্রান্ত হাদীসগুলো তাখরীজ করার জন্য
মনোনীত করা হয় যা ১৯৫৫ইং সালে
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশের
উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
৩) মিসর ও সিরিয়া একীভূত হওয়ার যুগে
হাদীসের কিতাব সমূহ তাহকীক ও প্রচার-
প্রসারের নিমিত্তে একটি প্রকল্প হাতে
নেয়া হয়। শাইখকে এই প্রকল্প তত্ত্বাবধান
কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়।
৪) ভারতের ঐতিহ্যবাহী দীনী শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান জামেয়া বেনারসে হাদীসের
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য তার
নিকট প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু
তৎকালীন সময় ভারত-পাকিস্তানের মাঝে
যুদ্ধ চলছিল। তাই স্ত্রী-পরিবার নিয়ে
যাওয়া কঠিন হওয়ায় তিনি সেখানে যেতে
অপারগতা পেশ করেন।
৫) সৌদি আরবের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী
শাইখ হাসান আলুশ শাইখ আব্দুল্লাহ ১৩৮৮
হিজরীতে মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের হায়ার
ডিপ্লোমা ইন ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের
ডিন হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার জন্য তাঁর
নিকট আবেদন করেন কিন্তু পরিস্থিতির
কারণে তা গ্রহণ করা সম্ভব হয় নি।
৬) ১৩৯৫ হিজরী থেকে ১৩৯৮ হিজরী পর্যন্ত
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট
সদস্য হিসেবে তাকে মনোনীত করা হয়।
৭) স্পেনের মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন
এর আহবানে তিনি সেখানে গিয়ে অত্যন্ত
সারগর্ভ বক্তব্য প্রদান করেন যা
পরবর্তীতে ‘আকীদা ও আহকাম উভয়
ক্ষেত্রেই হাদীস স্বয়ং সম্পন্ন প্রমাণ’ এই
শিরোনামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
৮) কাতার সফরে গিয়ে সেখানে বক্তব্য
প্রদান করেন। বক্তব্যের বিষয় ছিল:
“ইসলামে সন্নাহর মর্যাদা।”
৯) সৌদি আরবের মহামান্য গ্র্যান্ড মুফতী
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ.) এর পক্ষ
থেকে তিনি মিসর ও মরক্কো এর ফতোয়া
ও গবেষণা বোর্ডের প্রধান হিসেবে
দায়িত্বপালন করেন। অনুরূপভাবে
ব্রিটেনের তাওহীদ ও কুরআন-সন্নাহর
দিকে আহবানের জন্য গঠিত একটি ইসলামী
সংগঠনের প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব
পালন করেন।
১০) তাঁকে দেশে-বিদেশে অনেক
সম্মেলনে অতিথি হিসেবে আহবান করা
হয়। কিন্তু তিনি তার জ্ঞান-গবেষণার
কাজে ব্যস্ততার দরুন অনেক দাওয়াতে
সাড়া দিতে পারেন নি।
১১) তিনি কুয়েত ও আরব আমিরাতে সভা-
সেমিনারে অনেক বক্তব্য প্রদান করেন।
অনুরূপভাবে ইউরোপের কয়েকটি দেশে
গমন করে সেখানকার মুসলিম অভিবাসী ও
শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং
অনেক মূল্যবান দারস পেশ করেন। এছাড়াও
তিনি ব্রিটেন এবং জার্মানিতে
দাওয়াতী উদ্দেশ্যে সফর করেন।
১২) শাইখের নিকট থেকে শিক্ষা অর্জন
করে অগণিত ছাত্র বের হয়েছে যারা
পরবর্তীতে বড় বড় গবেষক হিসেবে
ইসলামে সেবায় আত্ম নিয়োগ করে
করেছেন।
তাঁর লিখিত কিতাবাদী ও গবেষণা:
শাইখের অনেক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বই-
পুস্তক ও গবেষণা কর্ম রয়েছে। সেগুলোর
সংখ্যা শতাধিক। তন্মধ্যে অনেকগুলোই
বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। কোন
কোনটি একাধিক বার মুদ্রিত হয়েছে।
সেগুলো থেকে নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু
বইয়ের তালিকা প্রদান করা হল:
১) ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজি
আহাদীসি মানারিস সাবীল। (নয় খণ্ডে
সমাপ্ত)
ﺀﺍﻭﺭﺇ ﻞﻴﻠﻐﻟﺍ ﺞﻳﺮﺨﺗ ﻲﻓ ﺚﻳﺩﺎﺣﺃ ﺭﺎﻨﻣ
ﻞﻴﺒﺴﻟﺍ
২) সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ।
(সহীহ হাদীস সিরিজ এবং সেগুলোর কিছু
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা।) (সাত খণ্ডে সমাপ্ত)
ﺔﺤﻴﺤﺼﻟﺍ ﺚﻳﺩﺎﺣﻷﺍ ﺔﻠﺴﻠﺳﻭ ﻭ ﺀﻲﺷ ﻦﻣ
ﺎﻬﻬﻘﻓ ﺎﻫﺪﺋﺍﻮﻓ ﻭ
৩) সিলসিলাতুল আহাদীসিয যাঈফাহ ওয়া
মাযূআহ (দূর্বল ও বানোয়াট হাদীস সিরিজ
এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে তার কুপ্রভাব)।
(চৌদ্দ খণ্ডে সমাপ্ত)
ﺚﻳﺩﺎﺣﻷﺍ ﺔﻠﺴﻠﺳ ﺔﻔﻴﻌﻀﻟﺍ ﻭ ﺔﻋﻮﺿﻮﻤﻟﺍ
ﻭ ﺊﻴﺴﻟﺍ ﺎﻫﺮﺛﺃ ﻲﻓ ﺔﻣﻷﺍ
৪) সাহীহ ওয়া যাঈফ সুনান আবূ দাউদ (সুনান
আবুদাউদের হাদীসগুলো তাখরীজ এবং
তাহকীক করে সহীহ ও যঈফ দুভাবে ভাগ
করা হয়েছে।) (দশ খণ্ডে সমাপ্ত)
ﺢﻴﺤﺻ ﻒﻴﻌﺿﻭ ﻦﻨﺳ ﻲﺑﺃ ﺩﻭﺍﺩ
৫) সাহীহ ও যাঈফ সুনান নাসাঈ (সুনান
নাসাঈর হাদীসগুলো তাহকীক করে সহীহ ও
যঈফ দুভাবে ভাগ করা হয়েছে।) (সাত
খণ্ডে সমাপ্ত)
ﺢﻴﺤﺻ ﻒﻴﻌﺿﻭ ﻲﺋﺎﺴﻨﻟﺍ ﻦﻨﺳ
৬) সাহীহ ওয়া যাঈফ সুনান তিরমিযী (সুনান
তিরমিযীর হাদীসগুলো তাহকীক করে
সহীহ ও যঈফ দুভাবে ভাগ করা হয়েছে।)
(সাত খণ্ডে সমাপ্ত)
ﺢﻴﺤﺻ ﻒﻴﻌﺿﻭ ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ  ﻦﻨﺳ
৭) সাহীহ ওয়া যাঈফ সুনান ইবনে মাজাহ
(সুনান ইবনে মাজার হাদীসগুলো তাহকীক
করে সহীহ ও যঈফ দুভাবে ভাগ করা
হয়েছে।) (ছয় খণ্ডে সমাপ্ত)
ﺢﻴﺤﺻ ﻒﻴﻌﺿﻭ ﻦﺑﺍ  ﻦﻨﺳ ﻪﺟﺎﻣ
৮) সহীহ ওয়া যঈফুত তারগীব ওয়াত
তারহীব। (তারগীব ওয়াত্ তারহীব
কিতাবের হাদীসগুলো তাহকীক করে সহীহ
ও যঈফ দুভাবে ভাগ করা হয়েছে।) (পাঁচ
খণ্ডে সমাপ্ত)
ﺢﻴﺤﺻ ﺐﻴﻏﺮﺘﻟﺍ ﻒﻴﻌﺿﻭ ﺐﻴﻫﺮﺘﻟﺍﻭ
৯) তাববীব ওয়া তারতীবু আহাদীসিল
জামে’ আসসাগীর।
ﺐﻳﻮﺒﺗ ﻊﻣﺎﺠﻟﺍ ﺚﻳﺩﺎﺣﺃ ﺐﻴﺗﺮﺗﻭ
ﺮﻴﻐﺼﻟﺍ ﻪﺗﺍﺩﺎﻳﺯﻭ ﻰﻠﻋ ﺏﺍﻮﺑﺃ ﻪﻘﻔﻟﺍ
১০) সহীহ ওয়া যাঈফুল জামে’ আস সাগীর
ওয়া যিয়াদাহিহী।
ﺢﻴﺤﺻ ﻊﻣﺎﺠﻟﺍ ﻒﻴﻌﺿﻭ ﺮﻴﻐﺼﻟﺍ
ﻪﺗﺍﺩﺎﻳﺯﻭ
১১) আত তা’লীকাতুল হিসান আলা সাহীহ
ইবনে হিব্বান।
ﻥﺎﺴﺤﻟﺍ ﺕﺎﻘﻴﻠﻌﺘﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﺢﻴﺤﺻ ﻦﺑﺍ
ﻥﺎﺒﺣ
১২) সহীহুল আদাবুল মুফরাদ। (এই গ্রন্থে
ইমাম বুখারী (রহ:) রচিত আল আদাবুল
মুফরাদ কিতাবের সহীহ হাদীসগুলো
তাহকীক করে পৃথক করা হয়েছে।(
ﺢﻴﺤﺻ ﺏﺩﻷﺍ ﺩﺮﻔﻤﻟﺍ
১৩) যঈফুল আদাবুল মুফরাদ। (এই গ্রন্থে ইমাম
বুখারী (রহ:) রচিত আল আদাবুল মুফরাদ
কিতাবের দূর্বল হাদীসগুলো তাহকীক করে
পৃথক করা হয়েছে।)
ﻒﻴﻌﺿ ﺏﺩﻷﺍ ﺩﺮﻔﻤﻟﺍ
১৪) তামামুল মিন্নাহ ফীত্ তা’লীক আলা
ফিকহিস সুন্নাহ। (আল্লামা সাইয়েদ
সাবিকের লেখা ফিকহুস সুন্নাহ গ্রন্থের
তাহকীক ও তাতে টিকা সংযোজন।(
ﻡﺎﻤﺗ ﺔﻨﻤﻟﺍ ﻖﻴﻠﻌﺘﻟﺍ ﻲﻓ ﻰﻠﻋ ﻪﻘﻓ
ﺔﻨﺴﻟﺍ
১৫) তাহকীক মিশকাতিল মাসাবীহ লিত
তিবরীযী। (মিশকাতুল মাসাবীহের
তাহকীক(
ﻖﻴﻘﺤﺗ ﺏﺎﺘﻛ ﺡﺎﺒﺼﻤﻟﺍ ﺓﺎﻜﺸﻣ
ﻱﺰﻳﺮﺒﺘﻠﻟ
১৬) আস সুমুরুল মুসতাত্বাব ফী ফিকহিস
সুন্নাহ ওয়া কিতাব।
ﺮﻤﺜﻟﺍ ﺏﺎﻄﺘﺴﻤﻟﺍ ﻲﻓ ﺔﻨﺴﻟﺍ ﻪﻘﻓ
ﺏﺎﺘﻜﻟﺍﻭ
১৭) আত তাওহীদ আওয়ালান ইয়া দুয়াতাল
ইসলাম। (হে ইসলাম প্রচারকগণ, সর্বপ্রথম
তাওহীদের দাওয়াত দিন)
ﺪﻴﺣﻮﺘﻟﺍ ًﻻﻭﺃ ﺎﻳ ﻡﻼﺳﻹﺍ ﺓﺎﻋﺩ
১৮) ফাযলুস সালাতি ‘আলান্নাবী। (নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর
দুরুদ পাঠের ফযীলত)
ﺓﻼﺼﻟﺍ ﻞﻀﻓ ﻰﻠﻋ ﻲﺒﻨﻟﺍ ﻰﻠﺻ ﻪﻴﻠﻋ ﻪﻠﻟﺍ
ﻢﻠﺳﻭ
১৯) ফিতনাতুত তাকফীর। (মুসলমানকে
কাফির বলার ফিতনা)
ﺔﻨﺘﻓ ﺮﻴﻔﻜﺘﻟﺍ
২০) তাহযীরুস সাজিদ মিন ইত্তিখাযিল
কুবূরি মাসাজিদ। (কবরকে মসজিদ
বানানোর ব্যাপারে সতর্কতা)
ﺮﻳﺬﺤﺗ ﺪﺟﺎﺴﻟﺍ ﺫﺎﺨﺗﺍ ﻦﻣ ﺭﻮﺒﻘﻟﺍ
ﺪﺟﺎﺴﻣ
২১) শারহুল আকীদাহ আত ত্বহাবীয়্যাহ।
(আকীদা ত্বহাবিয়ার ব্যাখ্যা(
ﺓﺪﻴﻘﻌﻟﺍ ﺡﺮﺷ ﺔﻳﻭﺎﺤﻄﻟﺍ
২২) তাহকীক মুখতাসারুর উলূ’ লিল আলিয়্যিল
গাফফার (ইমাম যাহাবীর লেখা মুখতাসার
আল ঊলূ কিতাবের তাহকীক(
ﻖﻴﻘﺤﺗ ﻮﻠﻌﻟﺍ ﺮﺼﺘﺨﻣ ﺭﺎﻔﻐﻟﺍ ﻲﻠﻌﻠﻟ
ﺪﻤﺤﻤﻟ ﻦﺑ ﺪﻤﺣﺃ ﻦﺑ ﻲﺒﻫﺬﻟﺍ ﻥﺎﻤﺜﻋ
২৩) কিতাবুল ঈমান (ইমাম ইবনে তাইমিয়া
রচিত কিতাবুল ঈমানের তাহকীক ও
তাখরীজ(
ﻥﺎﻤﻳﻹﺍ ﻦﺑﻻ ﺔﻴﻤﻴﺗ
২৪) জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমাহ (মুসলিম
নারীর পর্দা)
ﺏﺎﺒﻠﺟ ﺔﻤﻠﺴﻤﻟﺍ ﺓﺃﺮﻤﻟﺍ
২৫) হিজাবুল মারআহ ও লিবাসুহা ফিস
সালাহ (শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া
(রহ:) রচিত নামাযে নারীর পর্দা ও
পোষাক শীর্ষক কিতাবের তাহকীক ও
তাতে টিকা সংযোজন(
ﺏﺎﺠﺣ ﺎﻬﺳﺎﺒﻟﻭ  ﺓﺃﺮﻤﻟﺍ ﻲﻓ ﺓﻼﺼﻟﺍ
:ﻒﻴﻟﺄﺗ ﺦﻴﺷ ﻡﻼﺳﻹﺍ ﺔﻴﻤﻴﺗ ﻦﺑﺍ
২৬) আর রাদ্দুল মুফহিম (যারা নারীদের মুখ
ওহস্তদয়কে ঢাকাকে ওয়াজিব বলে তাদের
প্রতিবাদ)
ﺩﺮﻟﺍ ،ﻢﺤﻔﻤﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﻦﻣ ﺀﺎﻤﻠﻌﻟﺍ ﻒﻟﺎﺧ
ﺩﺪﺸﺗﻭ ،ﺐﺼﻌﺗﻭ ﺓﺃﺮﻤﻟﺍ ﻡﺰﻟﺃﻭ ﺮﺘﺴﺑ
ﺎﻬﻬﺟﻭ ،ﺐﺟﻭﺃﻭ ﺎﻬﻴﻔﻛﻭ ﻢﻟﻭ ﻊﻨﺘﻘﻳ
:ﻢﻬﻟﻮﻘﺑ ﻪﻧﺇ ﺐﺤﺘﺴﻣﻭ ﺔﻨﺳ
২৭) তাহরীমু আলাতিত ত্বরব। (বাদ্য যন্ত্র
হারাম)
ﻞﺳﻮﺘﻟﺍ
২৮) আত তওয়াসসুল (ওসীলার প্রকার ও
বিধিবিধান)
ﻢﻳﺮﺤﺗ ﺕﻻﺁ ﺏﺮﻄﻟﺍ
২৯) আহকামুল জানাইয (জানাযার বিধান)-
বাংলায় অনুদিত।
ﺰﺋﺎﻨﺠﻟﺍ ﻡﺎﻜﺣﺃ
৩০) যিলালুল জান্নাহ (জান্নাতের ছায়া)
ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻝﻼﻇ
৩১) আদাবুয যুফাফ (বাসর শয্যার আদব)
ﺏﺍﺩﺁ ﻑﺎﻓﺰﻟﺍ
৩২) মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল উমরাহ (হজ্জ ও
উমরার বিধিবিধান)
ﻚﺳﺎﻨﻣ ﺓﺮﻤﻌﻟﺍﻭ ﺞﺤﻟﺍ ﻲﻓ ﺏﺎﺘﻜﻟﺍ
ﺔﻨﺴﻟﺍﻭ ﻒﻠﺴﻟﺍ ﺭﺎﺛﺁﻭ ﺩﺮﺳﻭ ﺎﻣ ﻖﺤﻟﺃ
ﺱﺎﻨﻟﺍ ﺎﻬﺑ ﻦﻣ ﻉﺪﺒﻟﺍ
৩৩) কিয়ামু রামাযান (রামাযান মাসে
তারাবীহর নামাযের ফযীলত, নিয়ম-কানুন,
জামায়াতে আদায়ের বৈধতা এবং
ইতেকাফ সংক্রান্ত আলোচনা)
ﻡﺎﻴﻗ ﻥﺎﻀﻣﺭ
৩৪) সালাতুত তারাবীহ (তারাবীহর
সালাত)
ﺓﻼﺻ ﺢﻳﻭﺍﺮﺘﻟﺍ
৩৫) সহীহু সীরাতিন নববিয়্যাহ (বিশুদ্ধ
সূত্রে প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ
ওয়া সাল্লামের জীবনী(
ﺢﻴﺤﺻ ﺔﻳﻮﺒﻨﻟﺍ ﺓﺮﻴﺴﻟﺍ
৩৬) সালাতুল ঈদাইন ফিল মুসাল্লা
(ঈদগাহে ঈদের নামায পড়া সুন্নত(
ﻦﻳﺪﻴﻌﻟﺍ ﺓﻼﺻ ﻰﻠﺼﻤﻟﺍ ﻲﻓ ﺔﻨﺴﻟﺍ ﻲﻫ
৩৭) তাহকীক ফিকহিস সীরাহ (মুহাম্মদ
গাযালী রচিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর জীবনী বিষয়ক গ্রন্থের
তাহকীক(
ﻖﻴﻘﺤﺗ ﻪﻘﻓ ﻲﻟﺍﺰﻐﻟﺍ ﺪﻤﺤﻤﻟ ﺓﺮﻴﺴﻟﺍ
৩৮) কিতাবুল ইলম (ইমাম নাসাঈ রচিত
কিতাবুল ইলম গ্রন্থের তাহকীক, তাখরীজ ও
তাতে টিকা সংযোজন)
ﺏﺎﺘﻛ ﻢﻠﻌﻟﺍ ﻆﻓﺎﺤﻟﺍ ﻒﻴﻟﺄﺗ ﻲﺑﺃ ﺔﻤﺜﻴﺧ
ﺮﻴﻫﺯ ﻦﺑ ﻲﺋﺎﺴﻨﻟﺍ ﺏﺮﺣ
৩৯) কালিমাতুল ইখলাস (হাফেয ইবনে রজব
হাম্বলী (রহ:) রচিত কালিমাতুল ইখলাস
কিতাবের তাহকীক ও তাখরীজ)
ﺔﻤﻠﻛ ﺎﻫﺎﻨﻌﻣ ﻖﻴﻘﺤﺗﻭ  ﺹﻼﺧﻹﺍ ﻒﻴﻟﺄﺗ
ﻆﻓﺎﺤﻟﺍ ﻦﺑﺍ ﻲﻠﺒﻨﺤﻟﺍ ﺐﺟﺭ
৪০) মুখতাসারুশ শামাইলিল
মুহাম্মাদিয়্যাহ। (ইমাম তিরমিযী রচিত
শামাইলে মুহাম্মাদিয়া বা মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
স্বভাব-চরিত্র ও দেহাবয়ব গঠন বিষয়ক
কিতাবের তাহকীক ও সংক্ষিপ্ত করণ)
ﻞﺋﺎﻤﺸﻟﺍ ﺮﺼﺘﺨﻣ ﻡﺎﻣﻺﻟ  ﺔﻳﺪﻤﺤﻤﻟﺍ ﻲﺑﺃ
ﻰﺴﻴﻋ ﺪﻤﺤﻣ ﻦﺑ ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ ﺓﺭﻮﺳ ﺐﺣﺎﺻ
ﻦﻨﺴﻟﺍ
৪১) মুসাজালাহ ইলমিয়্যাহ (দুজন মহামান্য
ইমাম আল ইয ইবনু আব্দিস সালাম ও ইবনুস
সালাহ এর মাঝে সংঘটিত মুনাযারা(
ﺔﻠﺟﺎﺴﻣ ﺔﻴﻤﻠﻋ ﻦﻴﻣﺎﻣﻹﺍ ﻦﻴﺑ
ﻦﻴﻠﻴﻠﺠﻟﺍ ﺰﻌﻟﺍ ﻦﺑ ﺪﺒﻋ ﻡﻼﺴﻟﺍ ﻭ ﻦﺑﺍ
ﺡﻼﺼﻟﺍ
৪২) সালাতুর রাগাইব (রজব মাসের অন্যতম
বিদআত সালাতুর রাগাইব প্রসঙ্গ(
ﻖﻴﻘﺣ ﻝﻮﺣ ﺓﻼﺻ ﺐﺋﺎﻏﺮﻟﺍ ﺔﻋﺪﺘﺒﻤﻟﺍ
ﺮﺻﺎﻧ ﺪﻤﺤﻣ ﻲﻧﺎﺒﻟﻷﺍ ﻦﻳﺪﻟﺍ ﺪﻤﺤﻣﻭ
ﺮﻴﻫﺯ ﺶﻳﻭﺎﺸﻟﺍ
৪৩) নাসবুল মাজানীক (গারানিকের ঘটনা
প্রসঙ্গে বিভ্রান্তির জবাব)
ﺐﺼﻧ ﻖﻴﻧﺎﺠﻤﻟﺍ ﻒﺴﻨﻟ ﺔﺼﻗ ﻖﻴﻧﺍﺮﻐﻟﺍ
৪৪) কিসসাতুল মাসীহিদ দাজ্জাল ও নুযুলি
ঈসা আলাইহিস সালাম (দাজ্জাদ ও ঈসা
আলাইহিস সালাম এর অবতরণ প্রসঙ্গ(
ﻝﺎﺟﺪﻟﺍ ﺢﻴﺴﻤﻟﺍ ﺔﺼﻗ ﻝﻭﺰﻧﻭ ﻰﺴﻴﻋ ﻪﻴﻠﻋ
ﺓﻼﺼﻟﺍ ﻡﻼﺴﻟﺍ ﻭ ﻪﻠﺘﻗﻭ ﻩﺎﻳﺇ ﻕﺎﻴﺳ ﻰﻠﻋ
ﺔﻳﺍﻭﺭ ﻲﺑﺃ ﺔﻣﺎﻣﺃ ﻲﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻨﻋ
ﺎﻓﺎﻀﻣ ﻪﻴﻟﺇ ﺎﻣ ﺢﺻ ﻩﺮﻴﻏ ﻦﻋ ﻦﻣ
ﺔﺑﺎﺤﺼﻟﺍ ﻲﺿﺭ ﻢﻬﻨﻋ ﻪﻠﻟﺍ
৪৫) ফিকহুল ওয়াকি (দাওয়াহর ক্ষেত্রে
বাস্তব পরিস্থিতির জ্ঞান থাকা প্রসঙ্গে
একটি গবেষণা মূলক বই(
ﻝﻮﺣ ﻊﻗﺍﻮﻟﺍ ﻪﻘﻓ
৪৬) সিফাতুল ফাতওয়া (ইমাম আহমাদ বিন
হামদান রচিত ফতোয়া, মুফতী এবং
ফতোয়া প্রার্থীর বিবরণ শীর্ষক কিতাবের
তাহকীক)
ﻖﻴﻘﺤﺗ ﺔﻔﺻ ﻲﺘﻔﻤﻟﺍﻭ ﻯﻮﺘﻔﻟﺍ
ﺪﻤﺣﺃ ﻡﺎﻣﻺﻟ  ﻲﺘﻔﺘﺴﻤﻟﺍﻭ ﻥﺍﺪﻤﺣ ﻦﺑ
ﻲﻠﺒﻨﺤﻟﺍ ﻲﻧﺍﺮﺤﻟﺍ
৪৭) হুকুকুন নিসা (মুহাম্মদ রশীদ রেযা
কর্তৃক রচিত ইসলামে নারী অধিকার
শীর্ষক কিতাবের তাহকীক ও তাতে টিকা
সংযোজন)
ﻕﻮﻘﺣ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ﻲﻓ ﻦﻬﻈﺣﻭ ﻡﻼﺳﻹﺍ ﻦﻣ
ﻱﺪﻤﺤﻤﻟﺍ ﺡﻼﺻﻹﺍ ﻒﻴﻟﺄﺗ  ﻡﺎﻌﻟﺍ ﺪﻤﺤﻣ :
ﺪﻴﺷﺭ ﺎﺿﺭ
৪৮) হুকমু তারিকিস সালাহ (সালাত
পরিত্যাগ কারীর বিধান)।
ﻙﺭﺎﺗ ﻢﻜﺣ ﺓﻼﺼﻟﺍ
৪৯) সিফাতুস সালাহ (নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাত –
তাকবীর থেকে সালাম পর্যন্ত যেন আপনি
তাঁকে দেখছেন)।
ﺔﻔﺻ ﻲﺒﻨﻟﺍ ﺓﻼﺻ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ ﻢﻠﺳﻭ
৫০) তারাজুতুশ শাইখ আল আলবানী
(আল্লামা আলবানী (রহ:) যে সকল হাদীসের
উপর সহীহ কিংবা যঈফ হুকুম প্রদানের
ক্ষেত্রে মত পরিবর্তন করেছেন)
ﺦﻴﺸﻟﺍ ﺕﺎﻌﺟﺍﺮﺗ ﻲﻧﺎﺒﻟﻷﺍ ﻲﻓ ﺾﻌﺑ
ﻪﻣﺎﻜﺣﺃ ﺔﻴﺜﻳﺪﺤﻟﺍ
এছাড়াও আল্লামা আলবানী (রহ:) এর
লিখিত হাদীসের খেদমতে এবং ইসলামে
বিভিন্ন বিষয় প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত
অনেক গ্রন্থ রয়েছে। লেখার কলেবর বৃদ্ধির
আশংকায় সেগুলো এখানে উল্লেখ করা হল
না। এই লিংক থেকে শাইখের লিখিত
অনেকগুলো কিতাবাদী পাওয়া যাবে।
আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফায়সাল
পুরষ্কার:
ইসলামী জ্ঞান-গবেষণা ও ইসলামী
শিক্ষার প্রচারে অবদানের জন্য তাকে
১৪১৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৯৯ ইং সনে
আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফায়সাল পুরষ্কারে
ভূষিত করা হয়। তার পুরষ্কারের শিরোনাম
ছিল: “প্রায় একশ’র অধিক পুস্তক রচনার মধ্য
দিয়ে হাদীসের তাহকীক, তাখরীজ ও
গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে হাদীসের
সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সিরিয়
নাগরিক সম্মানিত শাইখ মুহাম্মদ
নাসিরুদ্দীন আলবানীকে এ পুরষ্কারের জন্য
মনোনীত করা হল।”
তাঁর ব্যাপারে আলেমগণের ভূয়সী
প্রশংসা:
১) শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ:) বলেন:
“বর্তমান বিশ্বে আসমানের নিচে
আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানীর
মত এত বড় হাদীসের আলেম আমি দেখি
নি।”
শাইখ বিন বায (রহ:) এর নিকট এই
হাদীসটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তায়ালা প্রতি
একশ বছরের মাথায় এই উম্মতের জন্য এমন
একজনকে পাঠাবেন যিনি দ্বীন-ইসলামকে
সংস্কার করবেন।” তিনি বলেন: আমার
ধারণা, শাইখ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন
আলবানী হলেন এ যুগের মুজাদ্দিদ বা
সংস্কারক। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন।
২) আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল
উসাইমীন (রহ.) বলেন:
“শাইখের সাথে বৈঠকাদীতে বসার পর
(যদিও তা কম) যা বুঝতে পেরেছি তা হল:
তিনি সন্নাহর প্রতি আমল এবং আমল-
আকীদা উভয় ক্ষেত্রেই বিদয়াত উৎখাতে
খুবই আগ্রহী। আর তার লিখিত বই-পুস্তক
পড়ে তার ব্যাপারে জানতে পারলাম যে,
তিনি হাদীসের সনদ ও মতন উভয় ক্ষেত্রে
পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী। এ সকল বই-
পুস্তক দ্বারা আল্লাহ তায়ালা অনেক
মানুষকে উপকৃত করেছেন-যেভাবে
জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে তারা লাভবান
হয়েছে তদ্রূপ নীতি নির্ধারণ এবং ইলমে
হাদীসের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও
তারা লাভবান হয়েছেন। এটি মুসলমানদের
জন্য বড় একটি বড় প্রাপ্তি। আল
হামদুলিল্লাহ। আর ইলমে হাদীসের
ক্ষেত্রে তার জ্ঞানগর্ভ গবেষণা সত্যি
চমৎকৃত হওয়ার মত।”
৩) খ্যাতনামা মুফাসসির আল্লামা শাইখ
মুহাম্মদ আল আমীন আশ শানকীতী:
শাইখ আব্দুল আজীজ আল হাদ্দাহ বলেন:
আল্লামা শানকীতী শাইখ আলবানীকে
বিষ্ময়করভাবে সম্মান করতেন। তিনি
মদীনার মসজিদে হারামে দারস প্রদান
করার সময় যদি শাইখ আলবানীকে হেঁটে
যেতে দেখতে তিনি তার সম্মানে
দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সালাম প্রদান
করতেন।
৪) শাইখ মুকবিল আল ওয়াদাঈ:
“আমি যে আকীদা পোষণ করি এবং
আল্লাহর উদ্দেশ্যে দ্বীন হিসেবে মনে
করি তা হল, শাইখ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন
আলবানী হলেন সে সকল মুজাদ্দিদগণের
অন্তর্ভুক্ত যাদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই
হাদীসটি প্রযোজ্য: “আল্লাহ তায়ালা
প্রতি একশ বছরের মাথায় এই উম্মতের জন্য
এমন একজনকে পাঠাবেন যিনি দ্বীন-
ইসলামকে সংস্কার করবেন।“
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
এর অন্তিম ওসিয়ত:
প্রথমত: আমি আমার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি,
বন্ধু-বান্ধব ও যারা আমাকে ভালবাসে
তাদের নিকট এই ওসিয়ত করছি, যখন তাদের
কাছে আমার মৃত্যু সংবাদ পৌছবে তারা
যেন আমার জন্য আল্লাহর নিকট রহমত ও
মাগফিরাত কামনা করে দুয়া করে এবং
আমার মৃত্যুতে কেউ যেন নিয়াহা বা উচ্চ
আওয়াজে ক্রন্দন না করে।
দ্বিতীয়ত: যেন অনতি বিলম্বে আমাকে
দাফন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় কাফন-
দাফনের প্রস্তুতির জন্য যাদেরকে না
হলেই নয় তাদেরকে ছাড়া নিকটাত্মীয় বা
বন্ধু-বান্ধবকে মৃত্যুর সংবাদ দিতে গিয়ে
যেন দাফন কর্ম বিলম্ব না করে। আমাকে
গোসল দেয়ার দায়িত্ব পালন করবে, ইজ্জত
খাযার আবু আব্দুল্লাহ এবং তিনি যাকে এ
কাজে সহযোগিতার জন্য পছন্দ করবেন।
তিনি আমার প্রতিবেশী এবং একান্ত
অন্তরঙ্গ বন্ধু।
তৃতীয়: তিনি মৃত্যুর আগেই তার বাড়ির
অদূরেই কবরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে
দেন। যেন গাড়িতে উঠিয়ে তার লাশ বহন
করে দূরে নিতে না হয় কিংবা কবর দিতে
আসা লোকজনকে গাড়িতে চড়ে লাশের
সাথে যেতে না হয়। সেই সাথে এমন পুরনো
গোরস্থানে যেন তাকে কবর দেয়া হয়
যেটার ব্যাপারে আশা করা যায় যে,
সেটা আর খুঁড়া-খুঁড়ি করা হবে না।
আমি যদি দেশের বাইরে মারা যাই তবে
আমার দাফন কর্ম সমাধান করার আগে যেন
দেশে আমার সন্তান সন্তান-সন্ততি বা অন্য
লোকজনকে খবর না দেয়া হয়। অন্যথায়
তারা আবেগের বশবর্তী হয়ে হয়ত এমন কিছু
করবে যার কারণে আমার দাফন কর্ম বিলম্ব
হয়ে যাবে।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, আমি যেন তার
সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করি যে,
তিনি মৃত্যুর আগেই আমার পূর্বাপর সকল
গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন।
আর আমার লাইব্রেরীর ব্যাপারে ওসিওয়ত
হল, লাইব্রেরীর প্রকাশিত, অপ্রকাশিত,
পাণ্ডুলিপি, আমার লেখা বা অন্যের লেখা
সকল বই-পুস্তক মদীনা ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াকফ করছি। যেন
কুরআন-সুন্নাহ ও সালফে-সালেহীনের
মানহাজের দিকে দাওয়াতের পথে এগুলো
স্মৃতি হিসেবে অবশিষ্ট থেকে যায়। কারণ,
আমি এক কালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক ছিলাম। আল্লাহর নিকট আশা করি,
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকা অবস্থায়
তিনি যেভাবে আমার মাধ্যমে ছাত্রদের
উপকার করেছেন ঠিক সেই ভাবে আমার
লাইব্রেরীতে যে সকল মানুষ
জ্ঞানার্জনের জন্য আসবে তারাও যেন
এগুলো থেকে উপকৃত হয়। আর আমি নিজেও
যেন তাদের দুয়ার মাধ্যমে লাভবান হই।
ﻲﻨﻋﺯﻭﺃ ﺏﺭ ﻥﺃ ﺮﻜﺷﺃ ﻚﺘﻤﻌﻧ ﻲﺘﻟﺍ
ﺖﻤﻌﻧﺃ ﻲﻠﻋ ﻭ ﻱﺪﻟﺍﻭ ﻰﻠﻋ ﻭ ﻥﺃ ﻞﻤﻋﺃ
ًﺎﺤﻟﺎﺻ ﻩﺎﺿﺮﺗ ﻭ ﺢﻠﺻﺃ ﻲﻟ ﻲﻓ ﻲﺘﻳﺭﺫ
ﻲﻧﺇ ﻚﻴﻟﺇ ﺖﺒﺗ ﻭ ﻲﻧﺇ ﻦﻣ ﻦﻴﻤﻠﺴﻤﻟﺍ
“হে প্রভু, তুমি আমাকে এবং আমার পিতা-
মাতাকে যে নেয়ামত দিয়েছ তার
শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক দান কর। আরও
তাওফীক দান কর এমন নেক আমল করার
যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও। আমার উপকারের
জন্যে আমার সন্তান-সন্ততিকে পরিশুদ্ধ
করে দাও। আমি তোমার নিকট তওবা
করলাম। নিশ্চয় আমি মুসলিমদের
অন্তর্ভুক্ত।”
২৭ জুমাদাল আওয়াল ১৪১০ হিজরী।
মৃত্যু:
আল্লামা আলবানী রহ. এর ওফাত হয়,
শনিবার, ২২ জুমাদাল আখেরা, ১৪২০ হিজরী,
মোতাবেক ২ অক্টোবর, ১৯৯৯ খৃষ্টাব্দ।
ইশার সালাতের পরে তাকে দাফন দেয়া
হয়। দুটি কারণে শাইখের দাফন
তাড়াতাড়ি দেয়া হয়:
প্রথমত: তার ওসীয়ত বাস্তবায়ন।
দ্বিতীয়ত: শাইখের মৃত্যুর সময়কালটা ছিল
খুব গরম। তাই যেন দাফন দিতে আসা
লোকজনের কষ্ট না হয়ে যায় ।
যদিও শাইখের মৃত্যুর সংবাদ নিকটাত্মীয় ও
কাফন-দাফনে সহযোগিতা করার জন্য
বিশেষ কিছু লোককে ছাড়া অন্য কাউকে
দেয়া হয় নি এবং মৃত্যু বরণের পর দাফন
করতে তেমন বিলম্বও করা হয় নি তথাপি
তারা জানাজায় হাজার হাজার মানুষের
সমাগম হয়। কারণ, যে ব্যক্তিই তার মৃত্যুর
খবর জানতে পেরেছে সেই অন্য ভাইকে
এই খবর পৌঁছিয়ে দিয়েছে।
আমরা দুয়া করি, ইলমে হাদীসের এই মহান
খাদেমকে আল্লাহ তায়ালা যেন মুসলিম
জাতির পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানে
ভূষিত করেন। আমীন।
_________________________________________________________________________________
১) হাদীস বর্ণনাকারীদের গ্রহণযোগ্যতা
সম্পর্কিত অবস্থা পর্যালোচনা মূলক
জ্ঞানকে ইলমুল জারহে ওয়াত তাদীল বলা
হয়।
২) যে ইলমের মাধ্যমে গ্রহণীয় বা
প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দিক দিয়ে বর্ণনাকারী
ও বর্ণিত হাদীস বিষয়ে পর্যালোচনা করা
হয় তাকে ইলমে মুস্তালাহুল হাদীস বলা
হয়।
_________________________________________________________________________________
উৎস: এই জীবনীর অধিকাংশ তথ্য সংগ্রহ
করা হয়েছে শাইখ আলবানী (রহ:) এর
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে। তার ওয়েব
সাইটের ঠিকানা হল: http://
http://www.alalbany.net
ইংরেজীভাষায় অনুবাদকৃত শাইখের
জীবনী এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই ও প্রবন্ধ
পাওয়া যাবে এখানে ।
অনুবাদ ও গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
সৌদী আরব,
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স
সেন্টার, সৌদী আরব।
২রা জুন, ২০১২ইং

এক রাকাত বেতর না পড়া

(১) এক রাক‘আত বিতর না
পড়া
(১) এক রাক‘আত বিতর না পড়া :
বিতর মূলতঃ এক রাক‘আত। কারণ যত
ছালাতই আদায় করা হোক এক রাক‘আত
আদায় না করলে বিতর হবে না। এ মর্মে
অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু
এক রাক‘আত বলে কোন ছালাতই নেই, এই
কথাই সমাজে বেশী প্রচলিত। উক্ত মর্মে
কিছু উদ্ভট বর্ণনাও উল্লেখ করা হয়।
‏( ﺃ ‏) ْﻦَﻋ ٍﺪْﻴِﻌَﺳ ْﻰِﺑَﺃ َّﻥَﺃ َّﻰِﺒَّﻨﻟﺍ  ﻰَﻬَﻧ ِﻦَﻋ
ِﺀﺍَﺮْﻴَﺘُﺒْﻟﺍ ْﻥَﺃ َﻰِّﻠَﺼُّﻳ ُﻞُﺟَّﺮﻟﺍ ًﺓَﺪِﺣﺍَﻭ
ُﺮِﺗْﻮُﻳ .ﺎَﻬِﺑ
(ক) আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) এক রাক‘আত বিতর পড়তে নিষেধ
করেছেন। তাই কোন ব্যক্তি যেন এক
রাক‘আত ছালাত আদায় করে বিজোড় না
করে।[1]
তাহক্বীক্ব : আব্দুল হক্ব বলেন, উক্ত
বর্ণনার সনদে ওছমান বিন মুহাম্মাদ বিন
রবী‘আহ রয়েছে। [2] ইমাম নববী বলেন,
এক রাক‘আত বিতর নিষেধ মর্মে
মুহাম্মাদ বিন কা‘ব-এর হাদীছ মুরসাল ও
যঈফ।[3] উক্ত বর্ণনা গ্রহণযোগ্য না হলেও
‘হেদায়ার’ ভাষ্য গ্রন্থ ‘আল-ইনাইয়াহ’
কিতাবে তাকে খুব প্রসিদ্ধ বলে দাবী
করা হয়েছে। অর্থাৎ এক রাক‘আত বিতর
পড়ার বিরোধিতা করা হয়েছে।[4]
‏( ﺏ ‏) ْﻦَﻋ ٍﻦْﻴَﺼُﺣ َﻝﺎَﻗ َﻎَﻠَﺑ َﻦْﺑﺍ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ َّﻥَﺃ
ﺍًﺪْﻌَﺳ ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺔَﻌْﻛَﺮِﺑ َﻝﺎَﻗ ﺎَﻣ ُﺕْﺃَﺰْﺟَﺃ
ًﺔَﻌْﻛَﺭ ُّﻂَﻗ
(খ) হুছাইন (রাঃ) বলেন, ইবনু মাসঊদ
(রাঃ)-এর কাছে যখন এই কথা পৌঁছল যে,
সা‘দ (রাঃ) এক রাক‘আত বিতর পড়েন।
তখন তিনি বললেন, আমি এক রাক‘আত
ছালাতকে কখনো যথেষ্ট মনে করিনি’।
[5] অন্যত্র সরাসরি তাঁর পক্ষ থেকে
বর্ণনা এসেছে, ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ ﺎَﻣ
ُﺕْﺃَﺰْﺟَﺃ ًﺔَﻌْﻛَﺭ ُّﻂَﻗ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)
বলেন, আমি কখনো এক রাক‘আত ছালাত
যথেষ্ট মনে করি না’। [6]
তাহক্বীক্ব : ইমাম নববী (রাঃ) উক্ত
আছার উল্লেখ করার পর বলেন, এটি যঈফ
ও মাওকূফ। ইবনু মাসঊদের সাথে
হুছাইনের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। ইবনু
হাজার আসক্বালানীও তাই বলেছেন। [7]
‏( ﺝ ‏) َﻝﺎَﻗ ْﻮُﺑَﺃ َﺔَﻔْﻴِﻨَﺣ َﻻ ُّﺢِﺼَﻳ ُﺭﺎَﺘْﻳِﺈْﻟﺍ
ٍﺓَﺪِﺣﺍَﻮِﺑ َﻻَﻭ ُﻥْﻮُﻜَﺗ ُﺔَﻌْﻛَّﺮﻟﺍ ُﺓَﺪِﺣﺍَﻮْﻟﺍ
ًﺓَﻼَﺻ .ُّﻂَﻗ
(গ) আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, ‘এক
রাক‘আত বিতর পড়া ঠিক নয়। তাছাড়া
ছালাত কখনো এক রাক‘আত হয় না’। [8]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বক্তব্যের কোন সত্যতা
নেই। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) যেহেতু এক
রাক‘আত বিতর পড়েছেন এবং পড়তে
বলেছেন, সেহেতু অন্য কারো ব্যক্তিগত
কথার কোন মূল্য নেই।
জ্ঞাতব্য : ইমাম ত্বাহাবী বলেন, ‘বিতর
ছালাত এক রাক‘আতের অধিক। এক
রাক‘আত বিতর সম্পর্কে কোন হাদীছ
বর্ণিত হয়নি।[9] হেদায়া কিতাবে বিতর
সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, কিন্তু
এক রাক‘আত বিতর সম্পর্কে কোন কথা
উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তিন রাক‘আতের
কথা বলা হয়েছে।[10] মাওলানা
মুহিউদ্দ্বীন খান তার ‘তালীমুস্-সালাত’
বইয়ে বিতর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন
প্রায় ছয় পৃষ্ঠা। কিন্তু কোথাও এক
রাক‘আত বিতর-এর কথা উল্লেখ করেননি।
[11] ড. ইলিয়াস ফায়সাল ‘নবীজীর
নামায’ বইয়ে লিখেছেন, ‘বিতর সর্বনিম্ন
তিন রাকাআত। আমরা জানি যে, দু’
রাকাআতের নিচে কোনো নামায
নেই। .. হাদীস শরীফ থেকে বোঝা যায়
যে, বিতর হল সর্বনিম্ন তিন রাকাআত’।
[12] ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ
সন্ধানে’ বইয়ে ৩২০ থেকে ৩৩২ পৃষ্ঠা
পর্যন্ত বিতর সম্পর্কে আলোচনা করা
হয়েছে। কিন্তু কোথাও এক রাক‘আত
বিতরের কথা বলা হয়নি। বরং
বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয়েছে যে,
তিন রাক‘আতের কম বিতর পড়া যায় না।
ভাবখানা এমন যে, তারা জানেন না বা
হাদীছে কোন দিন দেখেননি যে বিতর
ছালাত এক রাক‘আতও আছে।
আমরা শুধু এতটুকু বলব যে, সাধারণ
মুছল্লীদেরকে যে কৌশলেই ধোঁকা
দেয়া হোক, আল্লাহ সে বিষয়ে
সর্বাধিক অবগত। কেউই তাঁর আয়ত্বের
বাইরে নয়। অতএব সাবধান!
এক রাক‘আত বিতর পড়ার
ছহীহ হাদীছ সমূহ
এক রাক‘আত বিতর পড়ার ছহীহ হাদীছ
সমূহ :
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ َﺮَﻤُﻋ َﻝﺎَﻗ َﻥﺎَﻛ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ 
ﻰِّﻠَﺼُﻳ َﻦِﻣ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ﻰَﻨْﺜَﻣ ﻰَﻨْﺜَﻣ ُﺮِﺗْﻮُﻳَﻭ
.ٍﺔَﻌْﻛَﺮِﺑ
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
রাত্রে দুই দুই রাক‘আত করে ছালাত
আদায় করতেন এবং এক রাক‘আত বিতর
পড়তেন।[1] রাসূল (ছাঃ) এক রাক‘আত
বিতর পড়ার নির্দেশও দিয়েছেন। যেমন-
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ َﺮَﻤُﻋ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ 
ٌﺔَﻌْﻛَﺭ ُﺮْﺗِﻮْﻟﺍ ْﻦِﻣ .ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ِﺮِﺧﺁ
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘বিতর এক রাক‘আত শেষ
রাত্রে’। [2]
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ َﺮَﻤُﻋ َّﻥَﺃ ﺎًﻠُﺟَﺭ َﻝَﺄَﺳ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
 ْﻦَﻋ ِﺓﺎَﻠَﺻ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ َﻝﺎَﻘَﻓ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
ِﻪْﻴَﻠَﻋ ﻡﺎَﻠَّﺴﻟﺍ ُﺓﺎَﻠَﺻ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ﻰَﻨْﺜَﻣ
ﻰَﻨْﺜَﻣ ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻲِﺸَﺧ ْﻢُﻛُﺪَﺣَﺃ َﺢْﺒُّﺼﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ
ًﺓَﺪِﺣﺍَﻭ ًﺔَﻌْﻛَﺭ ُﺮِﺗْﻮُﺗ ُﻪَﻟ ﺎَﻣ ْﺪَﻗ .ﻰَّﻠَﺻ
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক
ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিতর
ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাত্রির ছালাত দুই
দুই রাক‘আত করে। সুতরাং তোমাদের
কেউ যখন সকাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
করবে, তখন সে যেন এক রাক‘আত পড়ে
নেয়। তাহলে সে এতক্ষণ যা পড়েছে তার
জন্য সেটা বিতর হয়ে যাবে’। [3]
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ َﺮَﻤُﻋ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ 
ُﺓﺎَﻠَﺻ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ﻰَﻨْﺜَﻣ ﻰَﻨْﺜَﻣ ُﺮْﺗِﻮْﻟﺍَﻭ
.ٌﺓَﺪِﺣﺍَﻭ ٌﺔَﻌْﻛَﺭ
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, ‘রাত্রির ছালাত দুই দুই রাক‘আত।
আর বিতর এক রাক‘আত’। [4]
ْﻦَﻋ ْﻰِﺑَﺃ ِّﻯِﺭﺎَﺼْﻧَﻷﺍ َﺏْﻮُّﻳَﺃ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ ُﻝْﻮُﺳَﺭ
ِﻪﻠﻟﺍ  ُﺮْﺗِﻮْﻟﺍ ٌّﻖَﺣ ﻰَﻠَﻋ ِّﻞُﻛ ٍﻢِﻠْﺴُﻣ ْﻦَﻤَﻓ
َّﺐَﺣَﺃ ْﻥَﺃ َﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺲْﻤَﺨِﺑ ْﻞَﻌْﻔَﻴْﻠَﻓ ْﻦَﻣَﻭ َّﺐَﺣَﺃ
ْﻥَﺃ َﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ ْﻞَﻌْﻔَﻴْﻠَﻓ ْﻦَﻣَﻭ َّﺐَﺣَﺃ ْﻥَﺃ
ٍﺓَﺪِﺣﺍَﻮِﺑ َﺮِﺗْﻮُﻳ .ْﻞَﻌْﻔَﻴْﻠَﻓ
আবু আইয়ুব আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, বিতর পড়া প্রত্যেক
মুসলিম ব্যক্তির উপর বিশেষ কর্তব্য।
সুতরাং যে পাঁচ রাক‘আত পড়তে চায়, সে
যেন তাই পড়ে। আর যে তিন রাক‘আত
পড়তে চায় সে যেন তা পড়ে এবং যে এক
রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে।
[5]
ْﻦَﻋ ِﺪْﺒَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻦْﺑ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ ِﻦَﻋ ِّﻰِﺒَّﻨﻟﺍ 
َﻝﺎَﻗ َّﻥِﺇ َﻪﻠﻟﺍ ٌﺮْﺗِﻭ ُّﺐِﺤُﻳ َﺮْﺗِﻮْﻟﺍ
ﺍْﻭُﺮِﺗْﻭَﺄَﻓ ﺎَﻳ َﻞْﻫَﺃ .ِﻥﺁْﺮُﻘْﻟﺍ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ
বিজোড়। তিনি বিজোড়কে পসন্দ করেন।
সুতরাং হে কুরআনের অনুসারীরা! তোমরা
বিতর পড়’। [6]
সুধী পাঠক! উপরিউক্ত হাদীছগুলো
থাকতে কেন বলা হয় যে, এক রাক‘আত
কোন ছালাত নেই? সর্বশেষ হাদীছটিতে
সরাসরি আল্লাহর সাথে তুলনা করা
হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ এক বিজোড়, না
তিন, না পাঁচ বিজোড় তা কি বলার
অপেক্ষা রাখে? হাদীছের গ্রন্থগুলো
বিভিন্ন মাদরাসায় পড়ানো হয়, বরকতের
জন্য ‘খতমে বুখারী’ নামে লোক
দেখানো অনুষ্ঠানও করা হয়। কিন্তু উক্ত
হাদীছগুলো কি তাদের চোখে পড়ে না?
এটা অবশ্যই মাযহাবী নীতিকে ঠিক
রাখার অপকৌশল মাত্র। রাসূল (ছাঃ)-এর
হাদীছকে যদি এভাবে অবজ্ঞা ও গোপন
করা হয়, তবে ক্বিয়ামতের মাঠে কে
উদ্ধার করবে? যে সমস্ত ব্যক্তি ও
মাযহাবের পক্ষে ওকালতি করা হচ্ছে
তারা কি বিচারের দিন কোন উপকারে
আসবে?
ঢাকার ‘জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া’-
এর শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মতিন
‘দলিলসহ নামাযের মাসায়েল’ বইয়ে
বিতর ছালাত সম্পর্কে ৯৮-১৩১ পৃষ্ঠা
পর্যন্ত অনেক আলোচনা করেছেন। ছলে
বলে কৌশলে মিথ্যা ও উদ্ভট তথ্য দিয়ে
প্রচলিত তিন রাক‘আত বিতরকে প্রমাণ
করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। আর এক
রাক‘আত বিতরের হাদীছগুলো সম্পূর্ণই
আড়াল করেছেন। একজন সচেতন পাঠক
পড়লেই বুঝতে পারবেন কিভাবে তিনি
প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন।
দুনিয়াতে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ গোপন
করলেও পরকালে তাঁর কথা ঠিকই মনে
পড়বে। কিন্তু কোন লাভ হবে কি? আল্লাহ
বলেন, ‘যালিম সেদিন তার হাত দুইটি
দংশন করবে আর বলবে, হায়! আমি যদি
রাসূলের পথে চলতাম। হায়! দুর্ভোগ
আমার, অমুককে যদি সাথী হিসাবে গ্রহণ
না করতাম। আমাকে তো সে বিভ্রান্ত
করেছিল- আমার নিকট বিধান আসার পর।
শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক’
(ফুরক্বান ২৭-২৯)। অতএব লেখকের চিন্তা
করা উচিৎ তিনি কাকে অনুসরণ করে পথ
চলছেন!
(২) তিন রাক‘আত বিতর
পড়ার সময় দুই রাক‘আতের
পর তাশাহ্হুদ পড়া
(২) তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সময় দুই
রাক‘আতের পর তাশাহ্হুদ পড়া :
তিন রাক‘আত বিতর একটানা পড়তে হবে।
মাঝখানে কোন বৈঠক করা যাবে না।
এটাই সুন্নাত। কিন্তু অধিকাংশ মুছল্লী
মাঝখানে বৈঠক করে ও তাশাহ্হুদ পড়ে।
মুহিউদ্দ্বীন খান লিখেছেন, ‘প্রথম
বৈঠকে কেবল আত্তাহিয়্যাতু পড়ে
দাঁড়িয়ে যাবে। দুরূদ পড়বে না এবং
সালাম ফিরাবে না। যেমন মাগরিবের
নামাযে করা হয়, তেমনি করবে’।[1] অথচ
উক্ত আমলের পক্ষে কোন ছহীহ দলীল
নেই।
‏( ﺃ ‏) ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ َﻝﺎَﻗ ُﺮْﺗِﻮْﻟﺍ ُﺙﻼَﺛ
ِﺓﻼَﺼَﻛ ٍﺕﺎَﻌَﻛَﺭ .ِﺏِﺮْﻐَﻤْﻟﺍ
(ক) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মাগরিবের
ছালাতের ন্যায় বিতরের ছালাত তিন
রাক‘আত।[2]
তাহক্বীক্ব : ইবনুল জাওযী বলেন, এই
হাদীছ ছহীহ নয়।[3]
‏( ﺏ ‏) ْﻦَﻋ ِﺪْﺒَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻦْﺑ َﺮَﻤُﻋ َﻥﺎَﻛ ُﻝْﻮُﻘَﻳ
ِﺏِﺮْﻐَﻤْﻟﺍ ُﺓﺎَﻠَﺻ ُﺮْﺗِﻭ ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﺓﺎَﻠَﺻ
(খ) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা) বলেন,
মাগরিবের ছালাত দিনের বিতর ছালাত।
[4]
তাহক্বীক্ব : অনেকে উক্ত বর্ণনা উল্লেখ
করে বিতর ছালাত মাগরিব ছালাতের
ন্যায় প্রমাণ করতে চান। অথচ তা
ত্রুটিপূর্ণ। বর্ণনাটি কখনো মারফূ‘ সূত্রে
এসেছে, কখনো মাওকূফ সূত্রে এসেছে।
তবে এর সনদ যঈফ। মুহাদ্দিছ শু‘আইব
আরনাঊত বলেন, ঐ অংশটুকু ছহীহ নয়।[5]
‏( ﺝ ‏) ْﻦَﻋ ِﺪْﺒَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻦْﺑ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ
ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  ُﺮْﺗِﻭ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ٌﺙَﻼَﺛ ِﺮْﺗِﻮَﻛ
ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﺓَﻼَﺻ .ِﺏِﺮْﻐَﻤْﻟﺍ
(গ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, রাত্রির তিন রাক‘আত বিতর
দিনের বিতরের ন্যায়। যেমন মাগরিবের
ছালাত।[6]
তাহক্বীক্ব : ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি
বর্ণনা করে বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু
যাকারিয়া যাকে ইবনু আবীল হাওয়াজিব
বলে। সে যঈফ। সে আ‘মাশ ছাড়া আর
কারো নিকট থেকে মারফূ হাদীছ বর্ণনা
করেনি।[7] ইমাম বায়হাক্বী বলেন,
ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া ইবনু হাযিব
কূফী আ‘মাশ থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণনা
করেছে। কিন্তু সে যঈফ। তার বর্ণনা
আ‘মাশ থেকে বর্ণিত অন্যান্য বর্ণনার
বিরোধিতা করে।[8] এছাড়াও ইমাম
দারাকুৎনী উক্ত বর্ণনার পূর্বে তার
বিরোধী ছহীহ হাদীছ উল্লেখ করেছেন।
সেখানে মাগরিবের মত করে বিতর
পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন-
ْﻦَﻋ ْﻰِﺑَﺃ َﺓَﺮْﻳَﺮُﻫ ْﻦَﻋ ِﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  َﻝﺎَﻗ
َﻻ ﺍْﻭُﺮِﺗْﻮُﺗ ﺍْﻭُﺮِﺗْﻭَﺃ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ ٍﺲْﻤَﺨِﺑ ْﻭَﺃ ٍﻊْﺒَﺳ
َﻻَﻭ ِﺓَﻼَﺼِﺑ ﺍْﻮُﻬِّﺒَﺸُﺗ .ِﺏِﺮْﻐَﻤْﻟﺍ
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা
(মাগরিবের ছালাতের ন্যায়) তিন
রাক‘আত বিতর পড় না, পাঁচ, সাত
রাক‘আত পড়। আর মাগরিবের ছালাতের
ন্যায় আদায় কর না’। ইমাম দারাকুৎনী
উক্ত হাদীছকে ছহীহ বলেছেন।[9]
বিশেষ জ্ঞাতব্য : ‘মাযহাব বিরোধীদের
স্বরূপ সন্ধানে’ ও ‘নবীজীর নামায’
শীর্ষক বইয়ে যঈফ হাদীছটি দ্বারা দলীল
পেশ করা হয়েছে। কিন্তু ছহীহ হাদীছটি
সম্পর্কে কোন কিছু বলা হয়নি। এটা
দুঃখজনক।[10] ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী
(রহঃ) বলেন, ْﻢَﻟ ْﺪِﺟَﺃ ًﺎﺜْﻳِﺪَﺣ ًﺎﻋْﻮُﻓْﺮَﻣ
ًﺎﺤْﻴِﺤَﺻ ًﺎﺤْﻳِﺮَﺻ ْﻰِﻓ ِﺕﺎَﺒْﺛِﺇ ِﺱْﻮُﻠُﺠْﻟﺍ ﻰِﻓ
ِﺔَﻌْﻛَّﺮﻟﺍ ِﺔَﻴِﻧﺎَّﺜﻟﺍ ِﺭﺎَﺘْﻳِﺈْﻟﺍ َﺪْﻨِﻋ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ
‘তিন রাক‘আত বিতরে দ্বিতীয় রাক‘আতে
বৈঠক করার পক্ষে আমি কোন মারফূ ছহীহ
দলীল পাইনি’।[11]
এক সঙ্গে তিন রাক‘আত
বিতর পড়ার ছহীহ দলীল
এক সঙ্গে তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ছহীহ
দলীল :
‏( ﺃ ‏) ْﻦَﻋ َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ
ْﺖَﻟﺎَﻗ َﻥﺎَﻛ ُﻝْﻮُﺳَﺭ
ِﻪﻠﻟﺍ ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ
َﻻ ُﺪُﻌْﻘَﻳ َّﻻِﺇ ْﻰِﻓ
.َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ
(ক) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি
শেষের রাক‘আতে ব্যতীত বসতেন না।[1]
বিশেষ সতর্কতা : মুস্তাদরাকে হাকেমে
বর্ণিত َﻻ ُﺪُﻌْﻘَﻳ (বসতেন না) শব্দকে
পরিবর্তন করে পরবর্তী ছাপাতে ُﻢِّﻠَﺴُﻳَﻻ
(সালাম ফিরাতেন না) করা হয়েছে।
কারণ পূর্ববর্তী সকল মুহাদ্দিছ َﻻ ُﺪُﻌْﻘَﻳ
দ্বারাই উল্লেখ করেছেন।[2] আরো
দুঃখজনক হল- আল্লামা আনোয়ার শাহ
কাশ্মীরী (রহঃ) নিজে স্বীকার
করেছেন যে, আমি মুস্তাদরাক হাকেমের
তিনটি কপি দেখেছি কিন্তু কোথাও
ُﻢِّﻠَﺴُﻳَﻻ (সালাম ফিরাতেন না) শব্দটি
পাইনি। তবে হেদায়ার হাদীছের
বিশ্লেষক আল্লামা যায়লাঈ উক্ত শব্দ
উল্লেখ করেছেন। আর যায়লাঈর কথাই
সঠিক।[3]
সুধী পাঠক! ইমাম হাকেম (৩২১-৪০৫ হিঃ)
নিজে হাদীছটি সংকলন করেছেন আর
তিনিই সঠিকটা জানেন না!! বহুদিন পরে
এসে যায়লাঈ (মৃঃ ৭৬২ হিঃ) সঠিকটা
জানলেন? অথচ ইমাম বায়হাক্বী
(৩৮৪-৪৫৮ হিঃ)ও একই সনদে উক্ত হাদীছ
উল্লেখ করেছেন। সেখানে একই শব্দ
আছে। অর্থাৎ َﻻ ُﺪُﻌْﻘَﻳ (বসতেন না) আছে।
একেই বলে মাযহাবী গোঁড়ামী। অন্ধ
তাকলীদকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যই
হাদীছের শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে।
‏( ﺏ ‏) ِﻦَﻋ ِﻦْﺑ َﺱﻭُﻭﺎَﻃ
ْﻦَﻋ ِﻪْﻴِﺑَﺃ ُﻪَّﻧَﺃ َﻥَﺎﻛ
ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ َﻻ
ُﺪُﻌْﻘَﻳ .َّﻦُﻬَﻨْﻴَﺑ
(খ) ইবনু ত্বাঊস তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন যে, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত
বিতর পড়তেন। মাঝে বসতেন না।[4]
‏( ﺝ ‏) ْﻦَﻋ َﺓَﺩﺎَﺘَﻗ ﻝﺎﻗ
َﻥﺎَﻛ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ َﻻ
ُﺪُﻌْﻘَﻳ َّﻻِﺇ ْﻰِﻓ
.َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ
(গ) ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। শেষের
রাক‘আতে ছাড়া তিনি বসতেন না।[5]
‏( ﺩ ‏) ْﻦَﻋ ِّﻰَﺑُﺃ ِﻦْﺑ ٍﺐْﻌَﻛ َّﻥَﺃ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ 
َﻥﺎَﻛ ُﺮِﺗْﻮُﻳ ِﺙَﻼَﺜِﺑ ٍﺕﺎَﻌَﻛَﺭ َﻥﺎَﻛ ُﺃَﺮْﻘَﻳ ﻰِﻓ
ﻰَﻟﻭُﻷﺍ ِﺏ ‏( ِﺢِّﺒَﺳ َﻢْﺳﺍ َﻚِّﺑَﺭ ﻰَﻠْﻋَﻷﺍ‏) ﻰِﻓَﻭ
ِﺔَﻴِﻧﺎَّﺜﻟﺍ ِﺏ ‏( ْﻞُﻗ ﺎَﻳ ﺎَﻬُّﻳَﺃ َﻥْﻭُﺮِﻓﺎَﻜْﻟﺍ ‏)
ﻰِﻓَﻭ ِﺔَﺜِﻟﺎَّﺜﻟﺍ ِﺏ ‏( ْﻞُﻗ َﻮُﻫ ُﻪﻠﻟﺍ ٌﺪَﺣَﺃ ‏)
ُﺖُﻨْﻘَﻳَﻭ َﻞْﺒَﻗ ِﻉْﻮُﻛُّﺮﻟﺍ ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻍَﺮَﻓ َﻝﺎَﻗ
َﺪْﻨِﻋ ِﻪِﻏﺍَﺮَﻓ َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ ِﻚِﻠَﻤْﻟﺍ ِﺱْﻭُّﺪُﻘْﻟﺍ
َﺙَﻼَﺛ ٍﺕﺍَّﺮَﻣ ُﻞْﻴِﻄُﻳ .َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ ْﻰِﻓ
(ঘ) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন।
প্রথম রাক‘আতে ‘সাবিবহিসমা
রাবিবকাল আ‘লা’ দ্বিতীয় রাক‘আতে
‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফেরূন’ এবং তৃতীয়
রাক‘আতে ‘কুল হুওয়াল্লা-হুল আহাদ’
পড়তেন এবং তিনি রুকূর পূর্বে কুনূত
পড়তেন। অতঃপর যখন তিনি শেষ করতেন
তখন শেষে তিনবার বলতেন ‘সুবহা-নাল
মালিকিল কুদ্দূস’। শেষবার টেনে
বলতেন।[6] উক্ত হাদীছও প্রমাণ করে
রাসূল (ছাঃ) একটানা তিন রাক‘আত
পড়েছেন, মাঝে বৈঠক করেননি।
‏( ﻩ ‏) ْﻦَﻋ َﺀَﺎﻄَﻋ ُﻪَّﻧَﺃ
َﻥﺎَﻛ ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ َﻻ
ُﺲِﻠْﺠَﻳ َّﻦِﻬْﻴِﻓ َﻭ َﻻ
ُﺪَّﻬَﺸَﺘَﻳ َّﻻِﺇ ْﻰِﻓ
.َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ
(ঙ) আত্বা (রাঃ) তিন রাক‘আত বিতর
পড়তেন কিন্তু মাঝে বসতেন না এবং
শেষ রাক‘আত ব্যতীত তাশাহহুদ পড়তেন
না।[7] এমন কি পাঁচ রাক‘আত পড়লেও
রাসূল (ছাঃ) এক বৈঠকে পড়েছেন।
‏( ﻭ ‏) ْﻦَﻋ َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ َّﻥَﺃ
َّﻰِﺒَّﻨﻟﺍ َﻥﺎَﻛ ُﺮِﺗْﻮُﻳ
ٍﺲْﻤَﺨِﺑ َﻻَﻭ ُﺲِﻠْﺠَﻳ َّﻻِﺇ
ْﻰِﻓ .َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ
(চ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) পাঁচ রাক‘আত বিতর পড়তেন।
কিন্তু তিনি শেষ রাক‘আতে ছাড়া
বসতেন না।[8]
সুধী পাঠক! যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন
তারাই সমাধান পেশ করেছেন। সুতরাং
তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে
মাঝে তাশাহ্হুদ পড়া যাবে না; বরং
একটানা তিন রাক‘আত পড়তে হবে।
তারপর তাশাহ্হুদ পড়ে সালাম ফিরাতে
হবে।
জ্ঞাতব্য : তিন রাক‘আত বিতর পড়ার
ক্ষেত্রে দুই রাক‘আত পড়ে সালাম
ফিরিয়ে পুনরায় এক রাক‘আত পড়া যায়।
তিন রাক‘আত বিতর পড়ার এটিও একটি
উত্তম পদ্ধতি।[9] উল্লেখ্য যে, তিন
রাক‘আত বিতরের মাঝে সালাম দ্বারা
পার্থক্য করা যাবে না মর্মে যে হাদীছ
বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।[10]
(৩) কুনূত পড়ার পূর্বে
তাকবীর দেওয়া ও হাত
উত্তোলন করে হাত বাঁধা
(৩) কুনূত পড়ার পূর্বে তাকবীর দেওয়া ও
হাত উত্তোলন করে হাত বাঁধা :
বিতর ছালাতে ক্বিরাআত শেষ করে
তাকবীর দিয়ে পুনরায় হাত বাঁধার যে
নিয়ম সমাজে চালু আছে তা ভিত্তিহীন।
অথচ মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান
লিখেছেন, ‘তৃতীয় রাকআতে কেরাআত
সমাপ্ত করে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে কান
পর্যন্ত হাত তুলে আল্লাহ আকবার বলবে।
এরপর হাত বেঁধে নিয়ে দোআ কুনূত পাঠ
করবে। এটা ওয়াজিব’। [1] অথচ উক্ত
দাবীর পক্ষে কোন ছহীহ দলীল নেই।
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ ُﻪَّﻧَﺃ َﻥﺎَﻛ ُﺖُﻨْﻘَﻳ ﻲِﻓ
ِﺮْﺗِﻮْﻟﺍ َﻥﺎَﻛَﻭ ﺍَﺫِﺇ َﻍَﺮَﻓ َﻦِﻣ ِﺓَﺀﺍَﺮِﻘْﻟﺍ
َﺮَّﺒَﻛ َﻊَﻓَﺭَﻭ ِﻪْﻳَﺪَﻳ َّﻢُﺛ .َﺖَﻨَﻗ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বিতর ছালাতে কুনূত
পড়তেন। আর তিনি যখন ক্বিরাআত শেষ
করতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং দুই
হাত তুলতেন। অতঃপর কুনূত পড়তেন। [2]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি ভিত্তিহীন।
আলবানী (রহঃ) বলেন, ْﻢَﻟ ْﻒِﻗَﺃ ﻰَﻠَﻋ ٍﺪَﻨَﺳ
َﺪْﻨِﻋ ِﻡَﺮْﺛَﺄْﻟﺍ ْﻰِّﻨَّﻧَﺄِﻟ ْﻢَﻟ ْﻒِﻗَﺃ ﻰَﻠَﻋ
ُﺐِﻟﺎَﻏَﻭ…ِﻪِﺑﺎَﺘِﻛ ِّﻦَّﻈﻟﺍ ُﻪَّﻧَﺃ َﻻ ُّﺢِﺼَﻳ
আছরামের সনদ সম্পর্কে আমি অবগত নই।
এমনকি তার কিতাব সম্পর্কেও অবগত
নই।… আমার একান্ত ধারণা, এই বর্ণনা
সঠিক নয়।[3] উল্লেখ্য যে, উক্ত
ভিত্তিহীন বর্ণনা দ্বারাই ড. ইলিয়াস
ফায়সাল দলীল পেশ করেছেন।[4] আরো
উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনার মধ্যে পুনরায়
হাত বেঁধে কুনূত পড়ার কথা নেই। এ মর্মে
কোন দলীলও নেই। অথচ এটাই সমাজে
চলছে। বরং এটাকে ওয়াজিব বলা
হয়েছে।
(৪) কুনূত পড়ার পর মুখে হাত
মাসাহ করা
(৪) কুনূত পড়ার পর মুখে হাত মাসাহ করা :
বিতর ছালাতে কুনূত পড়ার পর মুখে হাত
মাসাহ করার কোন ছহীহ হাদীছ নেই।
উক্ত মর্মে যে বর্ণনাগুলো এসেছে
সেগুলো সবই যঈফ।
ْﻦَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﺪْﺒَﻋ ِﻦْﺑ ٍﺱﺎَّﺒَﻋ َّﻥَﺃ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
 َﻝﺎَﻗ َﻻ ﺍﻭُﺮُﺘْﺴَﺗ َﺭُﺪُﺠْﻟﺍ ْﻦَﻣ َﺮَﻈَﻧ ْﻰِﻓ
ِﺏﺎَﺘِﻛ ِﻪْﻴِﺧَﺃ ِﺮْﻴَﻐِﺑ ِﻪِﻧْﺫِﺇ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ ُﺮُﻈْﻨَﻳ
ﻰِﻓ ِﺭﺎَّﻨﻟﺍ ﺍﻮُﻠَﺳ َﻪﻠﻟﺍ ِﻥْﻮُﻄُﺒِﺑ ْﻢُﻜِّﻔُﻛَﺃ
َﻻَﻭ ُﻩْﻮُﻟَﺄْﺴَﺗ ﺎَﻫِﺭْﻮُﻬُﻈِﺑ ﺍَﺫِﺈَﻓ ْﻢُﺘْﻏَﺮَﻓ
ﺍْﻮُﺤَﺴْﻣﺎَﻓ ﺎَﻬِﺑ .ْﻢُﻜَﻫْﻮُﺟُﻭ
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
তোমরা দেওয়ালকে পর্দা দ্বারা আবৃত
কর না। যে ব্যক্তি অনুমতি ব্যতীত তার
ভাইয়ের চিঠির প্রতি লক্ষ্য করবে সে
(জাহান্নামের) আগুনের দিকে লক্ষ্য
করবে। তোমরা তোমাদের হাতের পেট
দ্বারা আল্লাহর কাছে চাও, পিঠ দ্বারা
চেও না। আর যখন দু‘আ শেষ করবে তখন
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল মাসাহ
করবে’। [1]
৬৮
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে
আব্দুল মালেক ও ইবনু হিসান নামে দুইজন
দুর্বল রাবী রয়েছে। [2]
স্বয়ং
ইমাম আবুদাঊদ উক্ত হাদীছ উল্লেখ করে
মন্তব্য করেন, ‘এই হাদীছ অন্য সূত্রেও
মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব থেকে বর্ণিত
হয়েছে। কিন্তু এর প্রত্যেক সূত্রই দুর্বল।
এটিও সেগুলোর মত। তাই এটাও যঈফ’। [3]
উল্লেখ্য
যে, উক্ত মর্মে আরো কয়েকটি বর্ণনা
আছে সবই যঈফ।[4]
ইমাম মালেক (রহঃ)-কে এ বিষয়ে
জিজ্ঞেস করা হলে তিনি একে
প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, আমি এ
সম্পর্কে কিছু জানি না। আব্দুল্লাহ বিন
মুবারক, সুফিয়ান (রহঃ) থেকেও অনুরূপ
বক্তব্য এসেছে।
ইমাম আবুদাঊদ (রহঃ) মুখে হাত মাসাহ
করা সংক্রান্ত হাদীছ উল্লেখ করে
বলেন, ‘এই হাদীছ অন্য সূত্রেও মুহাম্মাদ
ইবনু কা‘ব থেকে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু
প্রত্যেকটিই সীমাহীন দুর্বল। এই সূত্রও
সেগুলোর মত। তাই এটাও যঈফ’। [5] অন্যত্র
তিনি বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ)-কে
বিতরের দু‘আ শেষ করে মুখে দু’হাত
মাসাহ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা
হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু
শুনিনি। [6] ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)
বলেন, ‘এটা এমন একটি আমল যা ছহীহ
হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়; আছার
দ্বারাও সাব্যস্ত হয়নি এবং ক্বিয়াস
দ্বারাও প্রমাণিত হয়নি। সুতরাং উত্তম
হল, এটা না করা’। [7] ইমাম ইবনু
তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
ﺎَّﻣَﺃَﻭ َﻊَﻓَﺭ ُّﻰِﺒَّﻨﻟﺍ  ِﻪْﻳَﺪَﻳ ﻰِﻓ ِﺀﺎَﻋُّﺪﻟﺍ
ْﺪَﻘَﻓ َﺀﺎَﺟ ِﻪْﻴِﻓ ٌﺚْﻳِﺩﺎَﺣَﺃ ٌﺓَﺮْﻴِﺜَﻛ ٌﺔَﺤْﻴِﺤَﺻ
ﺎَّﻣَﺃَﻭ ُﻪَﺤَﺴَﻣ ُﻪَﻬْﺟَﻭ ِﻪْﻳَﺪَﻴِﺑ َﺲْﻴَﻠَﻓ ُﻪْﻨَﻋ
ِﻪْﻴِﻓ ﺎَّﻟِﺇ ٌﺚْﻳِﺪَﺣ ْﻭَﺃ ِﻥﺎَﺜْﻳِﺪَﺣ ُﻡْﻮُﻘَﻳﺎَﻟ
ﺎَﻬِﺑ .ٌﺔُّﺠُﺣ
‘দু‘আয় রাসূল (ছাঃ) দুই হাত তুলেছেন
মর্মে অনেক ছহীহ হাদীছ এসেছে। কিন্তু
তিনি দুই হাত দ্বারা তার মুখ মাসাহ
করেছেন মর্মে একটি বা দু’টি হাদীছ
ছাড়া কোন বর্ণনা নেই। যার দ্বারা
দলীল সাব্যস্ত করা যায় না’। [8] শায়খ
আলবানী (রহঃ) এ সংক্রান্ত হাদীছগুলো
পর্যালোচনা শেষে বলেন, ‘দু‘আর পর মুখে
দু’হাত মাসাহ করা সম্পর্কে কোন ছহীহ
হাদীছ নেই’। [9]
কুনূত পড়ার ছহীহ নিয়ম
কুনূত পড়ার ছহীহ নিয়ম :
বিতরের কুনূত দুই নিয়মে পড়া যায়। শেষ
রাক‘আতে ক্বিরাআত শেষ করে হাত
বাঁধা অবস্থায় দু‘আয়ে কুনূত পড়া। [1]
অথবা ক্বিরাআত শেষে হাত তুলে দু‘আয়ে
কুনূত পড়া। রুকূর আগে বিতরের কুনূত পড়া
সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রুকূর আগে
বিতরের কুনূত পড়তেন।
ْﻦَﻋ ِّﻲَﺑُﺃ ِﻦْﺑ ٍﺐْﻌَﻛ َّﻥَﺃ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  َﻥﺎَﻛ
ُﺮِﺗْﻮُﻳ ِﺙﺎَﻠَﺜِﺑ ٍﺕﺎَﻌَﻛَﺭ َﻥﺎَﻛ ُﺃَﺮْﻘَﻳ ﻲِﻓ
ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ ْﺢِّﺒَﺴِﺑ َﻢْﺳﺍ َﻚِّﺑَﺭ ﻰَﻠْﻋَﺄْﻟﺍ ﻲِﻓَﻭ
ِﺔَﻴِﻧﺎَّﺜﻟﺍ ْﻞُﻘِﺑ ﺎَﻳ ﺎَﻬُّﻳَﺃ َﻥْﻭُﺮِﻓﺎَﻜْﻟﺍ
ﻲِﻓَﻭ ِﺔَﺜِﻟﺎَّﺜﻟﺍ ْﻞُﻘِﺑ َﻮُﻫ ُﻪﻠﻟﺍ ٌﺪَﺣَﺃ
ُﺖُﻨْﻘَﻳَﻭ َﻞْﺒَﻗ ِﻉْﻮُﻛُّﺮﻟﺍ ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻍَﺮَﻓ َﻝﺎَﻗ
َﺪْﻨِﻋ ِﻪِﻏﺍَﺮَﻓ َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ ِﻚِﻠَﻤْﻟﺍ ِﺱْﻭُّﺪُﻘْﻟﺍ
َﺙﺎَﻠَﺛ ُﻞْﻴِﻄُﻳ ٍﺕﺍَّﺮَﻣ .َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ ْﻲِﻓ
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর ছালাত আদায়
করতেন। প্রথম রাক‘আতে সূরা আ‘লা,
দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা কাফেরূন এবং
তৃতীয় রাক‘আতে সূরা ইখলাছ পাঠ
করতেন। আর তিনি রুকূর পূর্বে কুনূত
পড়তেন। যখন তিনি ছালাত থেকে অবসর
হতেন তখন বলতেন, ‘সুবহা-নাল মালিকিল
কুদ্দূস’। শেষের বারে টেনে বলতেন। [2]
ْﻦَﻋ ِّﻲَﺑُﺃ ِﻦْﺑ ٍﺐْﻌَﻛ َّﻥَﺃ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  َﻥﺎَﻛ
ُﺖُﻨْﻘَﻴَﻓ ُﺮِﺗْﻮُﻳ َﻞْﺒَﻗ .ِﻉْﻮُﻛُّﺮﻟﺍ
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূল (ছাঃ) যখন বিতর পড়তেন তখন রুকূর
পূর্বে কুনূত পড়তেন।[3]
আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী আগে
কুনূত পড়াকেই উত্তম বলেছেন। [4] তবে
অনেক বিদ্বান রুকূর পরে পড়ার কথাও
বলেছেন। [5]
(৫) বিতরের কুনূতে
‘আল্লাহুম্মা ইন্না
নাস্তাঈনুকা ও
নাস্তাগফিরুকা…. মর্মে
‘কুনূতে নাযেলার’ দু‘আ পাঠ
করা
(৫) বিতরের কুনূতে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না
নাস্তাঈনুকা ও নাস্তাগফিরুকা…. মর্মে
‘কুনূতে নাযেলার’ দু‘আ পাঠ করা :
অধিকাংশ মুছল্লী বিতরের কুনূতে যে
দু‘আ পাঠ করে থাকে, সেটা মূলতঃ কুনূতে
নাযেলা।[1] রাসূল (ছাঃ) বিতর ছালাতে
পড়ার জন্য হাসান (রাঃ)-কে যে দু‘আ
শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা মুছল্লীরা
প্রত্যাখ্যান করেছে। অতএব বিতরের কুনূত
হিসাবে রাসূল (ছাঃ)-এর শিক্ষা দেওয়া
দু‘আ পাঠ করতে হবে।
ْﻦَﻋ ﻰِﺑَﺃ ِﺀﺍَﺭْﻮَﺤْﻟﺍ ِّﻯِﺪْﻌَّﺴﻟﺍ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ
ُﻦَﺴَﺤْﻟﺍ ُﻦْﺑ ٍّﻰِﻠَﻋ ﻰﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﺎَﻤُﻬْﻨَﻋ
ْﻰِﻨَﻤَّﻠَﻋ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  ٍﺕﺎَﻤِﻠَﻛ َّﻦُﻬُﻟْﻮُﻗَﺃ
ﻰِﻓ ِﺮْﺗِﻮْﻟﺍ َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ ْﻰِﻧِﺪْﻫﺍ ْﻦَﻤْﻴِﻓ َﺖْﻳَﺪَﻫ
ْﻰِﻨِﻓﺎَﻋَﻭ ْﻦَﻤْﻴِﻓ َﺖْﻴَﻓﺎَﻋ ْﻰِﻨَّﻟَﻮَﺗَﻭ ْﻦَﻤْﻴِﻓ
َﺖْﻴَّﻟَﻮَﺗ ْﻙِﺭﺎَﺑَﻭ ْﻰِﻟ ﺎَﻤْﻴِﻓ َﺖْﻴَﻄْﻋَﺃ ْﻰِﻨِﻗَﻭ
َّﺮَﺷ ﺎَﻣ َﺖْﻴَﻀَﻗ َﻚَّﻧِﺈَﻓ ْﻰِﻀْﻘَﺗ َﻻَﻭ ﻰَﻀْﻘُﻳ
َﻚْﻴَﻠَﻋ ُﻪَّﻧِﺇَﻭ َﻻ ُّﻝِﺬَﻳ ْﻦَﻣ َﺖْﻴَﻟﺍَﻭ َﺖْﻛَﺭﺎَﺒَﺗ
.َﺖْﻴَﻟﺎَﻌَﺗَﻭ ﺎَﻨَّﺑَﺭ
আবুল হাওরা সা‘দী (রাঃ) বলেন, হাসান
ইবনু আলী (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (ছাঃ)
আমাকে কতিপয় বাক্য শিক্ষা
দিয়েছেন। সেগুলো আমি বিতর ছালাতে
বলি। সেগুলো হল- ‘হে আল্লাহ! আপনি
আমাকে হেদায়াত দান করুন, যাদের
আপনি হেদায়াত করেছেন তাদের
সাথে। আমাকে মাফ করে দিন, যাদের
মাফ করেছেন তাদের সাথে। আমার
অভিভাবক হন, যাদের অভিভাবক
হয়েছেন তাদের সাথে। আপনি যা
আমাকে দান করেছেন তাতে বরকত দান
করুন। আর আমাকে ঐ অনিষ্ট হতে বাঁচান,
যা আপনি নির্ধারণ করেছেন। আপনিই
ফায়ছালা করে থাকেন, আপনার উপরে
কেউ ফায়ছালা করতে পারে না। নিশ্চয়ই
ঐ ব্যক্তি লাঞ্ছিত হয় না, যাকে আপনি
বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন। হে
আমাদের প্রতিপালক! আপনি বরকতময়,
আপনি সুউচ্চ’। [2] উল্লেখ্য যে, বিতরের
কুনূত জামা‘আতের সাথে পড়লে শব্দগুলো
বহুবচন করে পড়া যাবে। [3]
জ্ঞাতব্য : অনেকে কুনূতে বিতর ও কুনূতে
নাযেলা একাকার করে ফেলেছেন। [4]
অথচ কুনূতে নাযেলা ফরয ছালাতের জন্য।
দুঃখজনক হল- মাযহাবী বিদ্বেষের
কারণে এর প্রচলন করা হয়েছে।
(৬) ফজর ছালাতে নিয়মিত
কুনূত পড়া
(৬) ফজর ছালাতে নিয়মিত কুনূত পড়া :
অনেক মসজিদে ফজর ছালাতে নিয়মিত
কুনূত পড়া হয়। দু‘আ হিসাবে ‘কুনূতে
নাযেলা’ না পড়ে বিতরের কুনূত পড়া হয়।
এটা আরো দুঃখজনক। কুনূতে নাযেলা
প্রত্যেক ফরয ছালাতে পড়া যায়। সে
অনুযায়ী ফজর ছালাতেও পড়বে। [1] কিন্তু
নির্দিষ্ট করে নিয়মিত শুধু ফজর ছালাতে
পড়া যাবে না। কারণ এর পক্ষে যতগুলো
হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সবই যঈফ। যেমন-
‏( ﺃ ‏) ْﻦَﻋ ِﺲَﻧَﺃ ِﻦْﺑ ٍﻚِﻟﺎَﻣ َﻝﺎَﻗ ﺎَﻣ َﻝﺍَﺯ
ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  ُﺖُﻨْﻘَﻳ ﻰِﻓ ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ ﻰَّﺘَﺣ
.ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ َﻕَﺭﺎَﻓ
(ক) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) মৃত্যু
পর্যন্ত ফজরের ছালাতে কুনূত পড়েছেন।
[2]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার
সনদে আবু জা‘ফর রাযী নামে একজন
মুযতারাব রাবী আছে। সে বিভিন্ন সময়ে
বিভিন্ন রকম বর্ণনা করেছে।[3]
‏( ﺏ ‏) ْﻦَﻋ ِّﻡُﺃ َﺔَﻤَﻠَﺳ ْﺖَﻟﺎَﻗ ﻰَﻬَﻧ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
 ِﺕْﻮُﻨُﻘْﻟﺍ ِﻦَﻋ ﻰِﻓ .ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ
(খ) উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফজরের ছালাতে কুনূত
পড়তে নিষেধ করেছেন। [4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম
দারাকুৎনী বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ইয়ালী,
আমবাসা ও আব্দুলাহ ইবনু নাফে সকলেই
যঈফ। উম্মে সালামা থেকে নাফের শ্রবণ
সঠিক নয়। [5] ইবনু মাঈন বলেন, সে হাদীছ
জাল করত। ইবনু হিববান বলেন, সে জাল
হাদীছ বর্ণনাকারী। যেগুলোর কোন
ভিত্তি নেই।[6] অতি বাড়াবাড়ি করে
উক্ত হাদীছ জাল করে নিষেধের দলীল
তৈরি করা হয়েছে।
অতএব ফজর ছালাতে নিয়মিত কুনূত পড়া
থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত
পড়াটা ছাহাবীদের চোখেই বিদ‘আত
বলে গণ্য হয়েছে। যেমন-
ْﻦَﻋ ْﻰِﺑَﺃ ٍﻚِﻟﺎَﻣ ِّﻰِﻌَﺠْﺷَﻷﺍ َﻝﺎَﻗ ُﺖْﻠُﻗ ْﻰِﺑَﻷ
ﺎَﻳ ِﺔَﺑَﺃ َﻚَّﻧِﺇ ْﺪَﻗ َﺖْﻴَّﻠَﺻ َﻒْﻠَﺧ ِﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
 ْﻰِﺑَﺃَﻭ ٍﺮْﻜَﺑ َﺮَﻤُﻋَﻭ َﻥﺎَﻤْﺜُﻋَﻭ ِّﻰِﻠَﻋَﻭ ِﻦْﺑ
ْﻰِﺑَﺃ ٍﺐِﻟﺎَﻃ ﺎَﻫ ﺎَﻨُﻫ ِﺔَﻓْﻮُﻜْﻟﺎِﺑ ﺍًﻮْﺤَﻧ ْﻦِﻣ
ِﺲْﻤَﺧ َﻦْﻴِﻨِﺳ ﺍْﻮُﻧﺎَﻛَﺃ َﻥْﻮُﺘُﻨْﻘَﻳ َﻝﺎَﻗ ْﻯَﺃ
َّﻰَﻨُﺑ .ٌﺙَﺪْﺤُﻣ
আবু মালেক আশজাঈ (রাঃ) বলেন, আমি
আব্বাকে বললাম, আপনি তো রাসূল
(ছাঃ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর
পিছনে ছালাত আদায় করেছেন। এমনকি
কূফাতে আলী (রাঃ)-এর পিছনে পাঁচ বছর
ছালাত আদায় করেছেন। তারা কি কুনূত
পড়তেন? তিনি বললেন, হে বৎস! এটা
বিদ‘আত। [7]
রাতের ছালাত
রাতের ছালাত :
রাতে ঘুম থেকে উঠে ছালাত আদায়কে
‘তাহাজ্জুদ’ বলে। মূলতঃ তাহাজ্জুদ,
ক্বিয়ামুল লায়েল, তারাবীহ, ক্বিয়ামে
রামাযান সবই ‘ছালাতুল লায়েল’ বা
রাতের ছালাত। রাতের শেষ অংশে
পড়লে তাকে ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয় এবং
প্রথম অংশে পড়লে ‘তারাবীহ’ বলা হয়।
প্রথম রাতে তারাবীহ পড়লে শেষ রাতে
তাহাজ্জুদ পড়তে হয় না। রাসূল (ছাঃ)
একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ
দু’টিই পড়েছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই।
[1]
রাসূল (ছাঃ) তাহাজ্জুদের ছালাতে উঠে
আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে
ইমরানের ১৯০ আয়াত থেকে সূরার শেষ
অর্থাৎ ২০০ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন।
অতঃপর মিসওয়াক করে ওযূ করতেন। [2]
ছালাত শুরু করার পূর্বে ‘আল্লাহু আকবার’,
‘আল-হামদুলিল্লাহ’, সুবহানাল্লা-হি ওয়া
বিহামদিহী, সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস,
আস্তাগফিরুল্লাহ, লা-ইলা-হা
ইল্লাল্লাহু, আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযূবিকা
মিন যীকিদ্দুনিয়া ওয়া মিন যীক্বি
ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ’ বলতেন। উক্ত
বাক্যগুলো প্রত্যেকটিই দশবার দশবার
করে বলতেন। [3] নিম্নের দু‘আটিও পড়া
যায়। তবে আরো দু‘আ আছে। [4]
ﻵ َﻪَﻟِﺇ َّﻻِﺇ ُﻪﻠﻟﺍ ُﻩَﺪْﺣَﻭ ﻵ َﻚْﻳِﺮَﺷ ،ُﻪَﻟ ُﻪَﻟ
ُﻚْﻠُﻤْﻟﺍ ُﻪَﻟَﻭ ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ َﻮُﻫَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِّﻞُﻛ ٍﺀْﻲَﺷ
،ٌﺮْﻳِﺪَﻗ َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ ِﻪﻠﻟﺍ ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍَﻭ ِﻪﻠﻟِ ﻵَﻭ
َﻪَﻟِﺇ ُﻪﻠﻟﺍ َّﻻِﺇ ُﻪﻠﻟﺍَﻭ ُﺮَﺒْﻛَﺃ ﻵَﻭ َﻝْﻮَﺣ ﻵَﻭ
َﺓَّﻮُﻗ َّﻻِﺇ .ِﻪﻠﻟﺎِﺑ
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু। লাহুল মুলকু
ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি
শাইয়িন ক্বাদীর। সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল
হামদু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা
ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার; ওয়ালা
হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-
হ। অতঃপর বলবে, ‘রবিবগফির্লী’। [5]
উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) তাহাজ্জুদের
ছালাতে বিভিন্ন ‘ছানা’ পড়েছেন। [6]
তাহাজ্জুদ ছালাতের নিয়ম :
(ক) তাহাজ্জুদ শুরু করার পূর্বে দু’রাক‘আত
সংক্ষিপ্তভাবে পড়ে নিবে। [7] (খ)
অতঃপর দুই দুই রাক‘আত করে ৮ রাক‘আত
পড়বে এবং শেষে একটানা তিন রাক‘আত
বিতর পড়বে, মাঝে বৈঠক করবে না। [8]
অথবা দুই দুই রাক‘আত করে দশ রাক‘আত
পড়বে। শেষে এক রাক‘আত বিতর পড়বে।
[9] রাসূল (ছাঃ) নিয়মিত উক্ত
পদ্ধতিতেই ছালাত আদায় করতেন। তবে
কখনো কখনো বিতর ছালাতের সংখ্যা কম
বেশী করে রাতের ছালাতের রাক‘আত
সংখ্যা কম বেশী করতেন। কারণ রাতের
পুরো ছালাতই বিতর। দুই রাক‘আত করে
পড়ে শেষে এক রাক‘আত পড়লেই সব
বিতর হয়ে যায়। [10] আর তিনি ১৩
রাক‘আতের বেশী পড়েছেন মর্মে কোন
ছহীহ দলীল পাওয়া যায় না।[11] (গ) যদি
কেউ প্রথম রাতে এশার পরে বিতর পড়ে
ঘুমিয়ে যায়, তবে শেষ রাতে শুধু
তাহাজ্জুদ পড়বে। তখন আর বিতর পড়তে
হবে না। কারণ এক রাতে দুইবার বিতর
পড়তে হয় না। [12] (ঘ) বিতর ক্বাযা হয়ে
গেলে সকালে অথবা যখন স্মরণ বা সুযোগ
হবে, তখন পড়ে নেয়া যাবে’। [13] (ঙ) যদি
কেউ আগ রাতে বিতরের পর দু’রাকআত
নফল ছালাত আদায় করে এবং শেষরাতে
তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে সক্ষম না হয়,
তাহলে উক্ত দু’রাক‘আত ছালাত তার জন্য
যথেষ্ট হবে’। [14] (চ) রাতের নফল ছালাত
নিয়মিত আদায় করা উচিৎ। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, ‘তুমি ঐ ব্যক্তির মত হয়ো
না, যে রাতের নফল ছালাতে অভ্যস্ত
ছিল। কিন্তু পরে ছেড়ে দিয়েছে’। [15]
নিয়মিত রাতের ছালাত আদায়কারী
ব্যক্তি বিতর পড়ে শুয়ে গেলে এবং ঘুম
বা অন্য কোন কারণে তাহাজ্জুদ পড়তে
না পারলে দিনের বেলায় দুপুরের আগে
তা পড়ে নিতে পারবে।[16] (ছ)
তাহাজ্জুদ ছালাতে ক্বিরাআত কখনো
সশব্দে কখনো নিঃশব্দে পড়া যায়। [17]
পেজ ন্যাভিগেশন
সর্বমোটঃ 11 টি বিষয় দেখান হচ্ছে।
1 2 পরের পাতা শেষের
পাতা
 জাল
হাদীছের কবলে
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর ছালাত
 বিতর
ছালাত
 মুযাফফর
বিন মুহসিন
  
 
ফুটনোটঃ[1]. ইবনু আব্দিল
বার্র, আত-তামহীদ, আল-
আহকামুল উস্তা ২/৫০ পৃঃ;
আলোচনা দ্রঃ টীকা,
মুওয়াত্ত্বা মালেক,
তাহক্বীক্ব : ড.
তাক্বিউদ্দীন আন-নাদভী
হা/২৫৮।
[2]. ﻰﻓ ﻩﺩﺎﻨﺳﺇ ﻥﺎﻤﺜﻋ ﻦﺑ
ﺪﻤﺤﻣ ﻦﺑ ﺔﻌﻴﺑﺭ ﺐﻟﺎﻐﻟﺍﻭ
ﻰﻠﻋ ﻪﺜﻳﺪﺣ ﻢﻫﻮﻟﺍ আল-
আহকামুল উস্তা ২/৫০ পৃঃ।
[3]. ﺚﻳﺪﺣ ﺪﻤﺤﻣ ﻦﺑ ﺐﻌﻛ ﻲﻓ
ﻲﻬﻨﻟﺍ ﻦﻋ ﺀﺍﺮﻴﺘﺒﻟﺍ ﻞﺳﺮﻣ
ﻒﻴﻌﺿ …নববী, খুলাছাতুল
আহকাম হা/১৮৮৮; কাশফুল
খাফা।
[4]. َﺮِﻬُﺘْﺷُﺍ َّﻥَﺃ َّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ
ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ﻰَﻬَﻧ ْﻦَﻋ
ِﺀﺍَﺮْﻴَﺘُﺒْﻟﺍ হেদায়াহ ২/১৮৪
পৃঃ।
[5]. ত্বাবারাণী, আল-
মু‘জামুল কাবীর হা/৯৪২২।
[6]. খুলাছাতুল আহকাম ফী
মুহিম্মাতিস সুনান ওয়া
ক্বাওয়াইদিল ইসলাম
হা/১৮৮৯।
[7]. তাহক্বীক্ব মুওয়াত্ত্ব
মুহাম্মাদ ২/২২ পৃঃ।
[8]. ছহীহ মুসলিম শরহে নববী
১/২৫৩ পৃঃ, হা/১৭৫১-এর
হাদীছের আলোচনা দ্রঃ।
[9]. ত্বাহাবী হা/১৭৩৯-এর
আলোচনা দেখুন َّﻥَﺃ َﺮْﺗِﻮْﻟﺍ
ُﺮَﺜْﻛَﺃ ْﻦِﻣ ٍﺔَﻌْﻛَﺭ ْﻢَﻟَﻭ َﻭْﺮُﻳ ﻰِﻓ
ِﺔَﻌْﻛَّﺮﻟﺍ ٌﺀْﻲَﺷ ।
[10]. হেদায়া ১/১৪৪-১৪৫
পৃঃ।
[11]. ঐ, পৃঃ ১৬৯-১৭৪।
[12]. ঐ, পৃঃ ২৪১।

সালাতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অনত্র হাত উত্তোলন করা প্রসংগে একটি প্রশ্নের জবাব

প্রশ্ন (১৭/২৫৭) : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
(রাঃ) একদা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
যেভাবে ছালাত আদায় করতেন আমি কি
তোমাদের সেভাবে ছালাত আদায় করে
দেখাব না? অতঃপর তিনি ছালাত আদায়
করলেন। কিন্তু তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত
অন্য কোন সময় দু’হাত উত্তোলন করলেন
না’ (তিরমিযী ১/৩৫)। তিরমিযী
হাদীছটিকে হাসান বলেছেন। আবার বারা
ইবনে আযিব (রাঃ) বলেন, ‘নবী করীম
(ছাঃ) তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত আর
কখনো হাত উঠাতেন না’ (আবূদাঊদ ১/১০৯)।
এক্ষণে ছালাতে রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন করার
প্রমাণে হাদীছদ্বয়ের বিপক্ষে যুক্তি কি?
-ছিয়াম বিন সাইফুদ্দীন মধুপুর, টাংগাঈল।
উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ দু’টি সহ
‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’ না করার পক্ষে যে
সকল দলীল পেশ করা হয়, তার সবগুলিই যঈফ।
• প্রশ্নে বর্ণিত ১ম হাদীছটি ইমাম
আবুদাঊদ বর্ণনা করে বলেন,
ٌﺮَﺼَﺘْﺨُﻣ ﺍَﺬَﻫ ْﻦِﻣ ٍﺚﻳِﺪَﺣ ٍﻞﻳِﻮَﻃ َﺲْﻴَﻟَﻭ َﻮُﻫ
ٍﺢﻴِﺤَﺼِﺑ ﻰَﻠَﻋ ﺍَﺬَﻫ ِﻆْﻔَّﻠﻟﺍ
‘এটা লম্বা হাদীছের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর
এই শব্দে এটি ছহীহ নয়’ (আবুদাঊদ হা/৭৪৮)।
উল্লেখ্য যে, উপমহাদেশের ছাপা
আবুদাঊদে হাদীছের শেষে ইমাম
আবুদাঊদের উক্ত মন্তব্যটি নেই। কিন্তু
অন্যান্য ছাপা আবুদাঊদে তা রয়েছে।
এদেশে ছাপা আবুদাঊদ থেকে উক্ত মন্তব্য
তুলে দেওয়ার রহস্য অজ্ঞাত।
• দ্বিতীয় হাদীছটি সম্পর্কে তিনি বলেন,
ُﺚﻳِﺪَﺤْﻟﺍ ﺍَﺬَﻫ َﺲْﻴَﻟ ٍﺢﻴِﺤَﺼِﺑ
‘এই হাদীছ ছহীহ নয়’ (আবুদাঊদ হা/৭৫২)।
তাছাড়া বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হতে
বর্ণিত অন্য আরেকটি বর্ণনা সম্পর্কে
তিনি বলেন, ‘অতঃপর তিনি আর হাত
উঠাননি’ অংশটুকু অন্য সনদে তিনি
বলেননি।
• সুফিয়ান বলেন, আমাদেরকে অনেক পরে
কূফাতে ‘অতঃপর তিনি আর হাত উঠাননি’
অংশটুকু বলা হয়েছে।
• ইমাম আবুদাঊদ আরো বলেন, ইয়াযীদ
থেকে হাদীছটি হুশাইম, খালেদ, ইবনু
ইদরীসও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তারা
‘অতঃপর তিনি আর হাত উঠাননি’ অংশটুকু
বলেন নি’ (আবুদাঊদ হা/৭৫০)। এভাবে
ইমাম আবুদাঊদ (২০২-২৭৫) রাফ‘ঊল
ইয়াদায়েন না করার হাদীছ সমূহকে নাকচ
করে দিয়েছেন।
• ইবনু হিববান বলেন, ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’
না করার পক্ষে কুফাবাসীদের এটিই
সবচেয়ে বড় দলীল হ’লেও এটিই সবচেয়ে
দুর্বলতম দলীল, যার উপরে নির্ভর করা
হয়েছে। কেননা এর মধ্যে এমন সব বিষয়
রয়েছে যা একে বাতিল বলে গণ্য করে
(নায়লুল আওত্বার ৩/১৪ পৃঃ, ফিকহুস সুন্নাহ
১/১০৮)। ইমাম তিরমিযী (মৃঃ ২৭৯হিঃ) ১ম
হাদীছটিকে সনদের দিক থেকে ‘হাসান’
বললেও তার আগের হাদীছে আলোচনা
করতে গিয়ে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনুল
মুবারকের বক্তব্য তুলে ধরেছেন,
ﻢﻟ ﺖﺒﺜﻳ ﺚﻳﺪﺣ ﺩﻮﻌﺴﻣ ﻦﺑﺍ
‘ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর হাদীছ প্রমাণিত
হয়নি’ (তিরমিযী হা/২৫৫-এর আলোচনা)।
• আলবানী বলেন, হাদীছটিকে ছহীহ
মেনে নিলেও তা ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’-এর
পক্ষে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহের
বিপরীতে পেশ করা যাবে না। কেননা
এটি না বোধক এবং ঐগুলি হ্যাঁ বোধক।
ইলমে হাদীছের মূলনীতি অনুযায়ী হ্যাঁ-
বোধক হাদীছ না-বোধক হাদীছের উপর
অগ্রাধিকার পাবে। পক্ষান্তরে রাফ‘ঊল
ইয়াদায়নের পক্ষে বহু ছহীহ হাদীছ রয়েছে।
যেমন:
• ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের শুরুতে, রুকূতে
যাওয়াকালীন ও রুকূ হ’তে উঠাকালীন
সময়ে… এবং তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়ানোর
সময় রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন
করতেন’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী,
মিশকাত হা/৭৯৩-৯৪)।
• ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’ করা সম্পর্কে চার
খলীফা সহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী থেকে
বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহ রয়েছে।
একটি হিসাব মতে ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’-এর
হাদীছের রাবী সংখ্যা আশারায়ে
মুবাশশারাহ সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী
(ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৭ পৃঃ) এবং সর্বমোট
ছহীহ হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন
চারশত (মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী, সিফরুস
সা‘আদাত ১৫ পৃঃ; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর
রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ৯২-৯৬)। monthly at-
tahreek
নামাযে রউফুল ইয়াদাইন করার
মর্যাদা
এ বিষয়ে শেখ আসিম আল হাকিমের বক্তব্য
একটি চমৎকার উপস্থাপনা। তিনি এটিকে
গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ মর্মে অভিহিত করেছেন।
তবে এটি কেউ না করলেও তার নামায
হবে। যদিও এটির না করার কারণে তাঁর
সুন্নাহর অনুসরণ হলো না। ইবাদতের
প্রতিটি স্তর থেকে মহান আল্লাহ
আমাদের অধিকতর ছওয়াব হাসিলের
তওফিক দিন। আমীন।
তাঁর এ বক্ত্বব্যটি সৌদী আরবের হুদা
টেলিভিশন থেকে গৃহীত।

ধৈর্যধারণ-৩

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এবং আদর্শ পূর্বসূরীদের জীবন
চরিত পর্যালোচনা
পরকালে বিশ্বাসী আল্লাহ ভীরু গোটা
মুসলিম জাতির আদর্শ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে
রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা
আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং
আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” [সূরা আহযাব
: ২১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সীরাত চিন্তাশীল,
গবেষকদের উপজীব্য ও শান্তনার বস্তু। তার
পূর্ণ জীবনটাই ধৈর্য ও ত্যাগের দীপ্ত
উপমা। লক্ষ্য করুন, স্বল্প সময়ে মধ্যে চাচা
আবু তালিব, যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কাফেরদের
অত্যাচার প্রতিহত করতেন; একমাত্র
বিশ্বস্ত সহধর্মিনী খাদিজা; কয়েকজন
ঔরসজাত মেয়ে এবং ছেলে ইব্রাহিম
ইন্তেকাল করেন। চক্ষুযুগল অশ্রসিক্ত, হৃদয়
ভারাক্রান্ত, স্মায়ুতন্ত্র ও অস্থিমজ্জা
নিশ্চল নির্বাক। এর পরেও প্রভুর
ভক্তিমাখা উক্তি
“চোখঅশ্রুসিক্ত, অন্তর ব্যথিত, তবুও তা-ই
মুখে উচ্চারণ করব, যাতে প্রভু সন্তুষ্ট, হে
ইব্রাহিম! তোমার বিরহে আমরা গভীর
মর্মাহত।” [বুখারী : ১৩০৩]
আরো অনেক আত্মোৎর্সগকারী সাহাবায়ে
কেরাম মারা যান, যাদের তিনি
ভালবাতেন, যারা তার জন্য উৎসর্গ ছিলেন।
এত সব দুঃখ-বেদনা তার শক্তিতে প্রভাব
ফেলতে পারেনি। ধৈর্য-অভিপ্রায়গুলো
ম্লান করতে পারেনি।
তদ্রুপ যে আদর্শবান পূর্বসুরীগণের জীবন
চরিত পর্যালোচনা করবে, তাদের
কর্মকুশলতায় অবগাহন করবে, সে সহসাই
অবলোকন করবে, তারা বিবিধ কল্যাণ ও উচ্চ
মর্যাদার অধিকারী একমাত্র ধৈর্যের
সিঁড়ি বেয়েই হয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
“নিশ্চয় তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে
(ইবরাহীম আ. ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে)
উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ
দিবসের প্রত্যাশা করে, আর যে মুখ
ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়
আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।” [সূরা
মুমতাহিনা : ৬]
উরওয়া ইবনে জুবায়েরের ঘটনা, আল্লাহ
তাআলা তাকে এক জায়গাতে, এক সাথে
দুটি মুসিবত দিয়েছেন। পা কাটা এবং
সন্তানের মৃত্যু। তা সত্ত্বেও তিনি শুধু
এতটুকু বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমার সাতটি
ছেলে ছিল, একটি নিয়েছেন, ছয়টি অবশিষ্ট
রেখেছেন। চারটি অঙ্গ ছিল একটি
নিয়েছেন, তিনটি নিরাপদ রেখেছেন।
মুসিবত দিয়েছেন, নেয়ামতও প্রদান
করেছেন। দিয়েছেন আপনি, নিয়েছেনও
আপনি।”
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ এর একজন ছেলের
ইন্তেকাল হয়। তিনি তার দাফন সেরে
কবরের পাশে সোজা দাঁড়িয়ে, লোকজন
চারপাশ দিয়ে তাকে ঘিরে আছে, তিনি
বলেন, “হে বৎস! তোমার প্রতি আল্লাহ
রহমত বর্ষণ করুন। অবশ্যই তুমি তোমার
পিতার অনুগত ছিলে। আল্লাহর শপথ! যখন
থেকে আল্লাহ তোমাকে দান করেছেন,
আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্টই ছিলাম। তবে
আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমাকে
এখানে অর্থাৎ আল্লাহর নির্ধারিত স্থান
কবরে দাফন করে আগেরচে’ বেশি
আনন্দিত। আল্লাহর কাছে তোমার
বিনিময়ে আমি অধিক প্রতিদানের
আশাবাদী।

ধৈর্য ধারণ-২

# যে কোন পরিস্থিতি মেনে নেয়ার
মানসিকতা লালন করা
প্রত্যেকের প্রয়োজন মুসিবত আসার পূর্বেই
নিজকে মুসিবত সহনীয় করে তোলা,অনুশীলন
করা ও নিজেকে শোধরে নেয়া। কারণ
ধৈর্য কষ্টসাধ্য জিনিস, যার জন্য পরিশ্রম
অপরিহার্য।
খেয়াল রাখতে হবে যে, দুনিয়া অনিত্য,
ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী। এতে কোনো প্রাণীর
স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। আছে শুধু ক্ষয়িষ্ণু
এক মেয়াদ, সীমিত সামর্থ্য। এ ছাড়া আর
কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব জীবনের
উদাহরণে বলেন :
“পার্থিব জীবন ঐ পথিকের ন্যায়, যে
গ্রীষ্মে রৌদ্রজ্জ্বল তাপদগ্ধ দিনে যাত্রা
আরম্ভ করল, অতঃপর দিনের ক্লান্তময় কিছু
সময় একটি গাছের নীচে বিশ্রাম নিল,
ক্ষণিক পরেই তা ত্যাগ করে পুনরায় যাত্রা
আরম্ভ করল।” [মুসনাদে ইমাম আহমাদ :
২৭৪৪]
হে মুসলিম! দুনিয়ার সচ্ছলতার দ্বারা
ধোঁকা খেওনা, মনে করো না, দুনিয়া
স্বীয় অবস্থায় আবহমানকাল বিদ্যমান
থাকবে কিংবা পট পরিবর্তন বা উত্থান-
পতন থেকে নিরাপদ রবে। অবশ্য যে
দুনিয়াকে চিনেছে, এর অবস্থা পর্যবেক্ষণ
করেছে, তার নিকট দুনিয়ার সচ্ছলতা
মূল্যহীন।
মোট কথা, যে পার্থিব জগতে দীর্ঘজীবি
হতে চায়, তার প্রয়োজন মুসিবতের জন্য
ধৈর্য্যশীল এক হৃদয়।
# তাকদিরের উপর ঈমান
যে ব্যক্তি মনে করবে তাকদির অপরিহার্য
বাস্তবতা এবং তা অপরিবর্তনীয়।
পক্ষান্তরে দুনিয়া সংকটময় ও
পরিবর্তনশীল, তার আত্মা প্রশান্তি লাভ
করবে। দুনিয়ার উত্থান-পতন সুখ-দুঃখ
স্বাভাবিক ও নগন্য মনে হবে তার কাছে।
আমরা দেখতে পাই, তাকদিরে বিশ্বাসী
মুমিনগণ পার্থিব মুসিবতে সবচে’কম
প্রতিক্রিয়াশীল,কম অস্থির ও কম
হতাশাগ্রস্ত হন। বলা যায় তাকদিরের
প্রতি ঈমান শান্তি ও নিরাপত্তার
ঠিকানা। তাকদির-ই আল্লাহর কুদরতে
মুমিনদের হৃদয়-আত্মা নৈরাশ্য ও হতাশা
মুক্ত রাখে। তদুপরি চিরসত্যবাদী মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
হাদিসে বিশ্বাস তো আছেই :
“জেনে রেখ, সমস্ত মানুষ জড়ো হয়ে যদি
তোমার উপকার করতে চায়, কোনও উপকার
করতে পারবে না, তবে যতটুকু আল্লাহ
তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আবার
তারা সকলে মিলে যদি তোমার ক্ষতি
করতে চায়, কোনও ক্ষতি করতে পারবে না,
তবে যততুটু আল্লাহ তোমার কপালে লিখে
রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে,
কিতাব শুকিয়ে গেছে।” [তিরমিযী :
২৪৪০]
আমাদের আরো বিশ্বাস, মানুষের হায়াত,
রিযিক তার মায়ের উদর থেকেই নির্দিষ্ট।
আনাস রাদিআল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন:
“আল্লাহ তাআলা গর্ভাশয়ে একজন
ফেরেস্তা নিযুক্ত করে রেখেছেন,
পর্যায়ক্রমে সে বলতে থাকে, হে প্রভু
জমাট রক্ত, হে প্রভু মাংস পিণ্ড। যখন
আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন,
ফেরেস্তা তখন বলে, হে প্রভু পুঃলিঙ্গ না
স্ত্রী লিঙ্গ? ভাগ্যবান না হতভাগা?
রিযিক কতটুকু? হায়াত কতটুকু? উত্তর
অনুযায়ী পূর্ণ বিবরণ মায়ের পেটেই
লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়।” [বুখারি : ৬১০৬
মুসলিম : ৪৭৮৫]
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী উম্মে হাবিবা
রাদিআল্লাহু আনহা মুনাজাতে বলেন,
“হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূল, আমার
পিতা আবু সুফিয়ান এবং আমার ভাই
মুয়াবিয়ার দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
“তুমি নির্ধারিত হায়াত, নির্দিষ্ট কিছু
দিন ও বণ্টনকৃত রিযিকের প্রাথর্না করেছ।
যাতে আল্লাহ তাআলা আগ-পাছ কিংবা
কম-বেশী করবেন না। এরচে’ বরং তুমি যদি
জাহান্নামের আগুন ও কবরের আযাব থেকে
নাজাত প্রার্থনা করতে, তাহলে তোমার
জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক হত।” [মুসলিম:
৪৮১৪]
ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
“হাদীসের বক্তব্যে সুষ্পষ্ট, মানুষের
হায়াত, রিযিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত,
তার অবিনশ্বর জ্ঞান অনুযায়ী লিপিবদ্ধ
এবং হ্রাস-বৃদ্ধিহীন ও
অপরিবর্তনীয়।” [মুসলিম : নববীর ব্যাখ্যা
সহ]
ইবনে দায়লামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
উবাই ইবনে কাব রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট
আসেন এবং বলেন,
আমার অন্তরে তাকদির সম্পর্কে সংশয়ের
সৃষ্টি হয়েছে। আমাকে কিছু বর্ণনা করে
শোনান। হতে পারে আল্লাহ আমার অন্তর
থেকে তা দূর করে দিবেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ আসমান এবং
জমিনবাসীদের শাস্তি দিলে, জালেম
হিসেবে গণ্য হবেন না। আর তিনি তাদের
সকলের উপর রহম করলে, তার রহম-ই তাদের
আমলের তুলনায় বেশী হবে। তাকদিরের
প্রতি ঈমান ব্যতীত ওহুদ পরিমান স্বর্ণ দান
করলেও কবুল হবে না। স্মরণ রেখ, যা
তোমার হস্তগত হওয়ার তা কোনভাবেই
হস্তচ্যুত হওয়ার সাধ্য রাখে না। এটা ছাড়া
অন্য আকিদা নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে
জাহান্নাম অবধারিত।
তিনি বলেন, অতঃপর আমি আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউদ এর কাছে আসি। তিনিও তদ্রুপ
শোনালেন। হুযাইফাতুল য়ামান এর কাছে
আসি, তিনিও তদ্রুপ বললেন। যায়েদ বিন
সাবিত এর কাছে আসি, তিনিও রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
অনুরূপ বর্ণনা করে শোনালেন।”
[আবু দাউদ : ৪০৭৭ আহমাদ : ২০৬০৭]