কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের
আলোকে রাসুলুল্লাহ্(সাঃ) এর সালাত
আদায়ের পদ্ধতি
আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্,
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান ন আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন এর জন্যে, যিনি জগত
সমূহের একচ্ছত্র মালিক, সৃষ্টিকর্তা,
পালনকর্তা, রিজিক দাতা ও জ্ঞানদাতা।
অজস্র শান্তির ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল
শিরোমনী সর্ব শেষ রাসুল ও সর্ব শ্রেষ্ঠ
রাসুল, প্রিয় নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ও তাঁর
পরিবারবর্গ এবং তাঁর সহচরগণের উপর।
সহিহ হাদিস ভিত্তিক রাসুল (সাঃ) এর
সালাত আদায়ের
পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করার
চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ:
রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) এর
সাথে মসজিদে জামায়াতে মহিলারাও
সালাত আদায় করতেন(বুখারী); অতএব
উপরোক্ত কথাটি পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের
জন্যই প্রযোজ্য| রাসুল (সাঃ) পুরুষ ও
স্ত্রী লোকের জন্য
আলাদা কোনো সালাতের পদ্ধতি দেন নি|
নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই একই পদ্ধতি|
আমাদের সমাজে যে পার্থক্য
তৈরী করা আছে তা নিতান্তই কিছু জাল ও
বানোয়াট হাদিসের
প্রেক্ষিতে মনগড়া তৈরী|
আল্লাহ বলেন ”রসূল তোমাদেরকে যা দেন,
তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,
তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয়
কর।” সুরা হাশর ৭ | ”যে লোক রসূলের হুকুম
মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ |
অর্থাত পুরুষ ও মহিলার মধ্যে সালাতের
পদ্ধতিগত কোনো পার্থক্য নেই|
নিয়ত: নিয়ত করা ফরজ| বুখারী ১ম হাদিস|
নিয়ত অন্তরে করতে হয়| উচ্চারণ
করে ‘নাওয়াইতুআন….’ নিয়ত পড়ার
কোনো দলিল প্রমান নাই| উচ্চারণ
করে হোক আরবিতে বা বাংলায় নিয়ত পাঠ
করা বিদআত |
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব
এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর
সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব
উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক
বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল
ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম
জাহান্নাম।[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫
ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০,
হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে। আবু
দাউদ, তিরমিজি ]
অতএব প্রত্যেক বিদআত =
বিদাতে হাসানাহ+ বিদাতে সায়িয়াহ =
পথভ্রষ্টতা = পরিনাম জাহান্নাম|
সমাজে বিদাতে হাসানাহ নামে যা চালু
আছে মূলত তা হচ্ছে পথভ্রষ্টতা|
কেননা রাসুল (সাঃ) ‘প্রত্যেক বিদআত”
বলে উল্লেখ করেছেন|
কোনো বিদাতকে আলাদা করে ভালো বলেন
নি| সুতরাং আমাদের অবশ্যই সতর্ক
হতে হবে|
● সালাত:
——–
মহান আল্লাহ বলেন, এবং আমার
স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। [সূরা তা-
হা ১৪]
সালাতের জন্য দাড়াতে হবে,
দাড়াতে অক্ষম হলে বসে, বসতে অক্ষম
হলে শুয়ে ইশারায় সালাত আদায়
করতে হবে| আল্লাহ বলেন,
আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও
রাত্রির
পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন
লোকের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও
শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে … [সূরা আলে –
ইমরান ১৯০- ১৯১]
সালাত যেভাবে শুরু করতে হবে:
আমাদের সমাজে সালাত শুরুর
পূর্বে জায়নামাজের দুআ পড়া হয় যার কোনই
ভিত্তি নাই বরং হাদিসের বিপরীত
উল্টো কাজ এবং বিদআত| জায়নামাজের
দুআ বলে কোনো দুআ নেই|
পাঠক! আবার স্মরণ নিন, আল্লাহ বলেন ”রসূল
তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর
এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত
থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” সুরা হাশর ৭
| ”যে লোক রসূলের হুকুম মান্য
করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ |
রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
●১. দাড়ানো:-
—————
মহান আল্লাহ বলেন, সমস্ত নামাযের
প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ
করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর
আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের
সাথে দাঁড়াও। সুরা বাকারাহ ১৩৮|
সোজা হয়ে কেবলামুখী হয় দাড়াতে হবে|
আমাদের দেশে পশ্চিম দিক বলে অনেকে|
এটা ঠিক নয়| পশ্চিম থেকেও একটু ডান
দিকে হেলে কেবলার দিক|
রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, ‘তুমি যখন
সালাতের জন্য দাড়াবে তখন
কেবলামুখী হয়ে তাকবির বলবে|’ বুখারী ও
মুসলিম |
দুই পায়ের মাঝখানে কতটুকু
ফাকা রাখতে হবে তার নির্দিষ্ট
কোনো নিয়ম নেই| স্বাভাবিকভাবে একজন
মানুষ দাড়ালে দুই পায়ে যতটুকু
ফাকা থাকে ততটুকুই| কাতার
সোজা করতে গিয়ে প্রয়োজনের
নিরিখে যতটুকু ফাকা করতে হয়|
গুনে গুনে চার আঙ্গুল পরিমান ফাকা রাখার
কোনো ভিত্তি নেই| আবার
অনেকে বিশ্রীভাবে অনেকটা চেগিয়ে দারান
এরকম করাও ঠিক নয়| পুরুষ মহিলায় এ
ক্ষেত্রে কোনই পার্থক্য নাই |
কাতারে দাড়ানো: সালাত যখন
জামায়াতে আদায় করা হবে তখন কাতার
সোজা করতে হবে| কাতারে কাধে কাধ
এবং পায়ের গিতে গিত
লাগিয়ে দাড়াতে হবে, দুই ব্যক্তির
মাঝখানে ফাকা বন্ধ করতে হবে| রাসুল
(সাঃ) এরশাদ করেন,
তোমরা সালাতে কাতারকে খুব সোজা কর
এবং সকলের কাধ এক বরাবর করে মিলাও
এবং প্রতি দুইজনের মধ্যবর্তী ফাঁক বন্ধ কর
যাতে শয়তান ফাকা জায়গায়
দাড়িয়ে তোমাদের
সালাতে ওয়াসওয়াসা দিতে না পারে|
যে ব্যক্তি কাতারে পা মিলায় আল্লাহ
তাকে কাছে নেন আর যে পা মিলায়
না আল্লাহ তাকে দুরে রাখেন| আবু দাউদ
১ম খন্ড ৯৭ পৃষ্ঠা; হাকেম ১ম খন্ড ২১৩ পৃষ্ঠা|
সহিহ বুখারীর হাদিস
কাতারে পায়ে পা কাধে কাধ মেলানোর:
১ম হাদিস,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা সালাতের
ইকামত হয়ে গেলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
আমাদের দিকে তার পবিত্র মুখমন্ডল
ফিরিয়ে তাকালেন এবং বললেন,
তোমরা তোমাদের কাতার্গুলি পরিপূর্ণ কর
এবং সুদৃঢ় হও অর্থাত দালানের ইটের মত
একে অপরের সাথে মিলিত হও, আমি নিশ্চই
তোমাদেরকে তোমাদের পিছন থেকেও
দেখে থাকি|
২য় হাদিস,
নুমান ইবনু বাশির (রাঃ) বলেন, আমাদের
(সাহাবীদের) প্রত্যেককেই দেখেছি নিজ
সঙ্গীর কাধে কাধ মিলিয়ে এবং পেপর
পায়ের গিট মিলিয়ে দাড়াতেন|
সহিহ বুখারী ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ১০০ |
অথচ আমাদের সমাজে কাধে কাধ,
পায়ে পা লাগিয়ে কাতারে দাড়ানোকে ‘বেয়াদবি’
মনে করা হচ্ছে| সাহাবাগণ
যেখানে বেয়াদবি মনে করেন
নি সেখানে আমাদের হুজুররা কোন
ক্ষমতাশালীর
আশ্বাসে হাদিসকে অবজ্ঞা করে কাতারে ফাকা হয়ে দাড়াতে বলেন
তা আমাদের বোধগম্য নয়| এই
ফাকা হয়ে দাড়ানোর কারণেই আমাদের
মধ্যে এত এত বিভেধ আল্লাহ
সৃষ্টি করে দিয়েছেন|
● ২. তাকবীরে তাহরিমা :-
————————–
সালাত শুরু হয় তাকবীরে তাহরিমা তথা দুই
হাত কাধ বা কান পর্যন্ত
উঠানো সাথে আল্লাহু আকবার বলা দিয়ে|
সহিহ মুসলিম|
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাছুলুল্লাহ (সাঃ) যখন সালাত শুরু করতেন
তখন তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্লাহু
আকবার বলতেন । অতঃপর
“ইন্নী ওয়াজ্জাহতু” পড়তেন।
এটি একটি সানা যা রাছুলুল্লাহ (ছাঃ)
মাঝে মাঝে তাহাজ্জুত ছালাতে পড়তেন।
[সহিহ বুখারী ১/১০৩ পৃঃ; আবুদাউদ ১/৫১১
পৃঃ হা/৭৬০ তাওহীদ প্রকাশনী;
তিরমিযী ১/১৭৯-৮০ পৃঃ;নাসাঈ ১/১৪২ পৃঃ;
মিশকাত ১/৭৭ পৃঃ ] অর্থাত
ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু মূলত একটি ‘সানা’,
যা তাকবীরে তাহরীমার পরে পড়া হয়|
তাকবীরে তাহরিমা তথা আল্লাহু আকবার
বলার সময় দুই হাত তথা দুই হাতের আঙ্গুলের
মাথা কাধ বা কানের লতি পর্যন্ত
উঠাতে হয়| একে রফল ইয়াদায়ন বলা হয়|
আমাদের সমাজে কানের লতি স্পর্শ
করা বা কানের উপর পর্যন্ত হাত উঠানোর
কোনো প্রমান নেই| এগুলো ভ্রান্ত কাজ|
রাসুল (সাঃ) তাকবীরে তাহরীমার সময়
(বুখারী, নাসাই), কখনো তাকবিরের
পরে (বুখারী, নাসাই) আবার
কখনো তাকবিরের আগে দুই হাত তুলতেন
(বুখারী, আবু দাউদ)|
তিনি আঙ্গুল লম্বা করে তুলতেন,
তা বেশি ফাঁক করেও রাখতেন না আবার
মিলিয়েও রাখতেন না (আবু দাউদ,
ইবনে খুযায়মা, হাকেম)|
তিনি দুই হাত কাধ পর্যন্ত তুলতেন (বুখারী ,
আবু দাউদ )|
মাঝে মাঝে কানের লতি পর্যন্ত তুলতেন
(মুসলিম, আবু দাউদ) |
● ৩. হাত বাধা:-
—————-
বাম হাতের উপর ডান হাত বুকের উপর
বাধতে হবে| সহিহ মুসলিম এ স্পষ্টই বুকের
নিচে ও নাভির উপরে হাত বাধার সহিহ
হাদিস বিদ্যমান| নাভির নিচে হাত বাধার
হাদিস আবু দাউদ এ উল্লেখ রয়েছে এবং এই
আবু দাউদেই নাভির নিচে হাত বাধার
হাদিসকে জইফ বা দুর্বল বলা হয়েছে|
এবং এই আবু দাউদেই সুস্পষ্ট হাদিস
রয়েছে বুকের উপর হাত বাধার| সহিহ
হাদিস বাদ দিয়ে বা সহিহ হাদিস পাওয়ার
পরও দুর্বল হাদিস
নিয়ে মাতামাতি করা বা দুর্বল
হাদিসকে বিশুদ্ধ হাদিসের উপর প্রাধান্য
দেয়া নিতান্তই ভ্রষ্টতাপূর্ণ কাজ|
আল্লাহ বলেন ”রসূল তোমাদেরকে যা দেন,
তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,
তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয়
কর।” সুরা হাশর ৭ | ”যে লোক রসূলের হুকুম
মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ |
রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
বুকের উপর হাত বাধার সহিহ হাদিস সমূহ:
হাদিস ১ :
সহাল বিন সা’দ রাঃ থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, লোকদেরকে নির্দেশ
দেওয়া হ’ত যেন তারা সালাতের সময় ডান
হাত বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন
করে রাখে। আবু হাযেম বলেন যে,
ছাহাবী সাহল বিন সা’দ এই
আদেশটিকে রাসুল (সাঃ)-এর
দিকে সম্পর্কিত বলেই জানি।
বুখারী নং-৭০৪ ই.ফা. বুখারী(দিল্লী ছাপা)
১/১০২ পৃঃ, হা/৭৪০, ‘আযান’ অধ্যায়, ৮৭
অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৭৯৮, ‘সালাতের
বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০, আধুনিক প্রঃ নং-৬৯৬]
উল্লেখিত হাদীসে ব্যবহৃত ‘যেরা’ শব্দের
অর্থ-কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ
পর্যন্ত দীর্ঘ হাত। একথা স্পষ্ট যে, বাম
হাতের উপর ডান হাত রাখলে তা বুকের
উপরই চলে আসে। উল্লেখ্য যে, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন(১৯৯১), আধুনিক প্রকাশনী(১৯৮৮)
প্রভৃতি বাংলাদেশের একাধিক সরকারী ও
বেসরকারী প্রকাশনা সংস্থা কর্তৃক অনূদিত
ও প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ
বুখারী তে উপরোক্ত হাদীসটির
অনুবাদে ‘ডান হাত বাম হাতের কব্জির
উপরে’ –লেখা হয়েছে। এখানে অনুবাদের
মধ্যে ‘কব্জি’ লিখে নাভির নিচে হাত
নামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে|
অথচ বুকের উপর হাত বাধার আরো সহিহ
হাদিস রয়েছে|
হাদিস ২:
আবু তাওবা…তাউস (রহ) থেকে বণিত ।
তিনি বলেন, রাসুল (সঃ) নামাজরত অবস্থায়
ডান হাত বাম হাতের উপর
রেখে তা নিজের বুকের উপর
বেঁধে রাখতেন । হাদীছটি ছহীহ। আবু দাউদ
১ম খনড হা/৭৫৯ ই.ফা.বা.প্রকাশ|
হাদিস ৩:
সাহাবী হুলব আত-ত্বাঈ (রাঃ) বলেন,
আমি রাসুল (ছাঃ)-কে বাম হাতের জোড়ের
(কব্জির) উপরে ডান হাতের জোড় বুকের
উপরে রাখতে দেখেছি। আহমদ হা/২২৬১০,
সনদ হাসান,
তিরমিযী(তুহফা সহ,কায়রো-১৪০৭/১৯৮৭)
হা/২৫২, ‘ছালাত’ অধ্যায়, হাদিস ৪:
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) বলেন,
আমি রাসুল সঃ এর সাথে ছালাত আদায়
করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে,
তিনি বাম হাতের উপরে ডান হাত স্বীয়
বুকের উপর রাখলেন। ছহীহ
ইবনে খুজায়মা হা/৪৭৯,;আবু দাউদ হা/৭৫৫
উল্লেখ্য যে, বাম হাতের উপর ডান হাত
রাখা সম্পর্কে ১৮ জন ছাহাবী ও ২ জন
তাবেঈ থেকে মোট ২০টি হাদীছ বর্ণিত
হয়েছে।
চার ইমামের মধ্যে কেবল ইমাম
আবুহানিফা (রহ) ব্যতীত বাকি তিন ইমামই
বুকের উপর হাত বাধতেন | কিতাবুল উম
লিশশাফিই |
খুব সম্ভব ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর নিকট
হাত বাধার সহিহ হাদিস
পৌছেনি এবং নাভির নিচে বাধার
হাদিসটি তার কাছে তখন সঠিক প্রতিয়মান
হয়েছিল|
● ৪. চোখের দৃষ্টি:-
—————-
সালাতের মধ্যে চোখের দৃষ্টি সিজদার
স্থানের দিকে থাকতে হবে| বায়হাকী,
হাকেম, ফাতহুলবারী |
● ৫. সানা বা সালাত প্রারম্বের/ শুরুর দুআ:-
——————————————
নিম্নোক্ত যে কোনো একটি পড়া যায়:
সানার জন্য ১ম দুআ:
উচ্চারনঃ ”আল্লাহুম্মা বা-ঈদ
বাইনী ওয়া বাইনা খাতাইয়া ইয়া কামা বা আদ’তা বাইনাল
মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিব।
আল্লাহুম্মা নাক্কিনি মিনাল
খাতাইয়া কামা উনাক্কাস ছাওবুল আব্ইয়াদু
মিনাদ দানাস। আল্লাহুম্মাগসিল
খাতাইয়া ইয়া বিল মা-
য়ি ওয়াসছালজি ওয়াল বারাদ্।” বুখারী ও
মুসলিম|
অর্থঃ হে আল্লাহ্ ! আমার ও আমার গুনাহ্
গুলোর মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও
যেমন তুমি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব
সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ্ ! আমাকে পাপ ও
ভুলত্রুটি হতে এমন ভাবে পবিত্র
করো যেভাবে সাদা কাপড়
ময়লা হতে পরিস্কার করা হয়। হে আল্লাহ্ !
আমার যাবতীয় পাপসমূহ ও
ত্রুটি বিচ্যুতি গুলি পানি, বরফ ও শিশির
দ্বারা ধৌত করে দাও।
সানার জন্য ২য় দুআ:
উচ্চারণঃ ”সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাস্মুকা
ওয়া তা’আলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”
আবূ দাঊদ ৭৭৫, ৭৭৬ ইঃফাঃ
অর্থঃ হে আল্লাহ ! তুমি পাক-পবিত্র ,
তোমারই জন্য সমস্ত্ প্রশংসা, তোমার নাম
পবিত্র এবং বরকতময়, তোমার গৌরব
অতি উচ্চ , তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই
।
● ৬. সালাতে আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ
পাঠ:-
——————————————–
সানা পাঠের পর পড়তে হবে,
‘আউযুবিল্লাহীস সামিয়িল আলিমী মিনাশ
শায়তানির রাজিম, মিন
হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি|’
আবু দাউদ ১ম খন্ড ১১৩ পৃঃ, তিরমিজি ১ম খন্ড
৩৩ পৃঃ
অর্থঃ সর্বজ্ঞাতা সর্ব শ্রোতা আল্লাহ
তা’আলার নিকট বিতারিত শয়তানের কুহক,
কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা হতে আশ্রয় চাচ্ছি|
অথবা শুধু আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-
নির রজীম।
ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১১২ পৃঃ ; নায়ল ৩/৩৬-৩৯
পৃঃ।
অতঃপর পড়তে হবে,
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’
অর্থঃ পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর
নামে আরম্ভ করছি|
তাফসীরে ইবনে কাসীর ও দারাকুতনি |
● ৭. তারপর সুরা ফাতেহা পড়তে হবে :-
—————————————-
প্রত্যেক ব্যক্তিকেই প্রত্যেক
রাকাতে সুরা ফাতেহা পরতেই হবে| এমন
কি ইমামের পিছনেও সুরা ফাতেহা পরতেই
হবে| কারণ সুরা ফাতেহা ব্যতীত সালাত
হয় না|
১ম হাদিস
উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
রাসুল সঃ এরশাদ করেন- ‘ ঐ ব্যক্তির ছালাত
সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সুরায়ে ফাতিহা পাঠ
করে না’।
বুখারী ২য় খণ্ড হা/৭২০ ইঃফাঃপ্রঃ;
মুসলিম(২য়) হা/৭৭১-৭৩ বাঃ ইঃ সেন্টার
প্রঃ; মুত্তাফাক আলাইহ মিশকাথা/৮২২
‘ছলাতে কিরায়াত’ অনুচ্ছেদ; সিহা সিত্তাহ
সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে উক্ত
হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।
২য় হাদিস:
যে ব্যক্তি ইমামের
পিছনে সুরা ফাতেহা পড়বে না তার নামায
হবে না (কেতাবুল কেরাত বায়হাকী ৪৭
পৃঃ; আরবী বুখারী ১ম খন্ড ১০৪ পৃঃ; মুসলিম
১৬৯ পৃঃ; আবু দাউদ ১০১ পৃঃ; নাসাঈ ১৪৬ পৃঃ;
ইবনু মাযাহ ৬১ পৃঃ; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ৯৫
পৃঃ);
৩য় হাদিস :
আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘তোমরা কি ইমামের ক্বিরাআত অবস্থায়
পিছনে কিছু পাঠ করে থাক? এটা করবে না।
বরং কেবলমাত্র
সূরায়ে ফাতিহা চুপে চুপে পাঠ করবে’।
বুখারী, জুয্উল ক্বিরাআত;
ত্বাবারাণী আওসাত্ব, বায়হাক্বী, ছহীহ
ইবনু হিববান হা/১৮৪৪; হাদীছ ছহীহ-
আরনাঊত্ব; তুহফাতুল আহওয়াযী, ‘ইমামের
পিছনে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-২২৯, হা/৩১০-এর
ভাষ্য ( ﻥﺎﻇﻮﻔﺤﻣ ﻥﺎﻘﻳﺮﻄﻟﺎﻓ ) , ২/২২৮ পৃঃ;
নায়লুল আওত্বার ২/৬৭ পৃঃ, ‘মুক্তাদীর
ক্বিরাআত ও চুপ থাকা’ অনুচ্ছেদ।
৪র্থ হাদিস :
হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসুল
(সঃ) এরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি ছলাত
আদায় করল,যার মধ্যে সুরায়ে ফাতিহা পাঠ
করল না, তার ঐ ছলাত বিকলাঙ্গ বিকলাঙ্গ
বিকলাঙ্গ, অপূর্ণাঙ্গ। হযরত আবু
হুরায়রা(রাঃ)-কে বলা হ’ল, আমরা যখন
ইমামের পিছনে থাকি, তখন কিভাবে পড়ব ?
তিনি বললেন,
‘তুমি ওটা ছলাতে চুপে চুপে পড়’।
মুসলিম হা/৭৭৬, আবুদাউদ হা/৮২১, মিশকাত
হা/৮২৩ ‘সালাতে কিরায়াত’ অনুচ্ছেদ-১২|
হে পাঠক! সহিহ হাদিস উপস্থাপন
করা হলো| সহিহ হাদিসেই
রয়েছে যে প্রত্যেক
ব্যক্তিকে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে|
হাদিসেই রয়েছে ইমামের পিছনেও
চুপে চুপে মনে মনে সুরা ফাতেহা পড়তেই
হবে|
উল্লেখ্য যে ইমামের কেরাতই যথেষ্ট
বলতে সুরা ফাতেহার
পরে যে সুরা মেলানো হয়
তা বুখানো হয়েছে| কারণ সুরা ফাতেহার
ব্যাপারে আলাদাভাবে বলা হয়েছে যে সুরা ফাতেহা পড়তেই
হবে| এখানে কেরাত আর সুরা ফাতেহা এক
বিষয় নয়|
সম্মানিত পাঠক স্মরণ করুন,
আল্লাহ বলেন ”রসূল তোমাদেরকে যা দেন,
তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,
তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয়
কর।” সুরা হাশর ৭ | ”যে লোক রসূলের হুকুম
মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ |
রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
অতএব রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ
উপেক্ষা করে যারা কতিপয় হুজুরের
নির্দেশে সুরা ফাতেহা পাঠ থেকে বিরত
থাকছেন সহিহ হাদিস অনুসারে তাদের
সালাত অসম্পূর্ণ, অপুর্নাঙ্গ ও বিকলাঙ্গ|
● ৮. উচ্চস্বরে আমিন বলা:-
—————————
স্বশব্দের সালাতে আমিন
জোরে বলতে হবে এবং নিঃশব্দের
সালাতে আমিন নিঃ শব্দে বলতে হবে|
আতা (রঃ) বলেন, আমীন হল দু’আ।
তিনি আরো বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের
(রাঃ) ও তার পিছনের মুসল্লীগণ
এমনভাবে আমীন বলতেন যে মসজিদে গুমগুম
আওয়াজ হতো। আবু হুরায়রা (রাঃ)
ইমামকে ডেকে বলতেন, আমাকে আমীন
বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না।
নাফি(রঃ)বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) কখনই
আমীন বলা ছাড়তেন না এবং তিনি তাদের
(আমীন বলার জন্য)উৎসাহিত করতেন।
আমি তাঁর কাছ থেকে এ সম্পর্কে হাদিস
শ্তনেছি । ( সহীহ বুখারী,২য় খন্ড,
অনুচ্ছেদ-৫০২, পৃষ্ঠা নং ১২০ ও ১২১,
প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।)
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রঃ)—- আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইমাম যখন
আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বলো।
কেননা, যার আমীন (বলা) ফিরিশতাদের
আমীন (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ
মাফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ও আমীন বলতেন।( সহীহ
বুখারী,২য় খন্ড, হাদিছ নং ৭৪৪, পৃষ্ঠা নং ১২১
প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।)
পাঠক, ইমাম যখন আমিন বলেন তখন আমিন
বলতে হবে| ইমামের আমিন
যদি নিঃশব্দে হয়
তবে কিভাবে আমরা ইমামের সাথে আমিন
বলব? এই হাদিস অনুসারে তো ইমাম
কে জোরে আমিন
বলতে হবে যাতে করে মুক্তাদিগন ইমামের
সাথে আমিন বলতে পারেন| কতিপয় লোক
বলে থাকেন ফেরেস্তার আমিন
শুনতে আমরা পাই না তার
মানে মনে মনে আমিন বলতে হবে|
এটা স্রেফ বোকামি এবং অজ্ঞতা| কারণ
ফেরেস্তাদের শুধু আমিন বলা কেন
কোনো কথায় আমরা শুনতে পাই না|
● ৯. সালাতে কেরাত পাঠ:-
————————–
সুরা ফাতেহা পাঠ করার পর কুরআন মজিদ
থেকে কিছু পাঠ করতে হবে| রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) সুরা ফাতেহার পর অন্য
সুরা বা আয়াত পাঠ করতেন| ইমামের
পিছনে ইমামের কেরাত মুক্তাদির জন্য
যথেষ্ঠ হবে|
*আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন- ‘রাসুল
সঃ আমাকে নির্দেশ দেন যেন আমি এই
কথা ঘোষণা করে দেই যে, ছলাত সিদ্ধ নয়
সুরায়ে ফাতিহা ব্যতীত। অতঃপর অতিরিক্ত
কিছু’।
আবুদাউদ হা/৮১৮ ইঃফাঃপ্রঃ, অনুচ্ছেদ-১৪২]
*হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
রাসুল (সঃ) এরশাদ করেছেন- ‘ইমাম নিযুক্ত
হন তাকে অনুসরণ করার জন্য । তিনি যখন
তাকবীর বলেন, তখন তোমরা তাকবীর বল।
তিনি যখন কিরায়াত করেন, তখন তোমরা চুপ
থাক’।
আবুদাউদ হা/৮২৭; আওনুল মা’বুদ হা/৮১১-১২,
অনুচ্ছেদ-১৩৫; লায়লুল আওত্বার ৩/৬৫|
*আব্দুল্লাহ ইবনু আবু কাতাদাহ তার
পিতা থেকে থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল
(সাঃ) জোহরের প্রথম দুই
রাকাতে সুরা ফাতেহা এবং (প্রত্যেক
রাকাতে একটি করে)
আরো দুটি সুরা পড়তেন, এবং শেষের দু
রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তেন|
বুখারী ১ম খন্ড|
*কোনো সময় রাসুল (সাঃ) এক সুরাকে দুই
রাকাতে ভাগ করে পড়তেন| আহমদ|
* সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সাঃ) এর
দাড়ি নড়া চড়া দেখে বুঝতে পারতেন রাসুল
(সাঃ) অপ্রকাশ্য সালাতে কেরাত পাঠ
করছেন| বুখারী আবু দাউদ|
*কখনো রাসুল (সাঃ) সাহাবীদের কেরাত
পাঠ শুনাতেন| তিনি এতটুকু অপ্রকাশ্য
আওয়াজে পড়তেন
যে নিকটবর্তী লোকেরা শুধু শুনতে পেত|
বুখারী ও মুসলিম |
● ১০. দুই হাত উত্তোলন রফল ইয়াদাইন ও
রুকুতে যাওয়ার প্রস্তুতি ও :-
———————————————
————————-
রুকুতে যাওয়ার সময় দুই হাত কাধ বা কান
পর্যন্ত তুলে ‘রফল ইয়াদাইন’ করে ‘আল্লাহু
আকবার’ বলে রুকুতে যেতে হবে| বুখারী ও
মুসলিম|
রাসুল (সাঃ) রফল ইয়াদাইন অর্থাত
তাকবীরে তাহরীমার সময় যেভাবে হাত
উঠানো হয় কাধ বা কান পর্যন্ত
যেভাবে করতেন|
রফল ইয়াদাইন এর পক্ষে বুখারিতে ৫ টি,
মুসলিমে ৬ টি, নাসাইতে ৫ টি,
তিরর্মিজিতে ২ টি, আবু দাউদে ৪ টি, ইবনু
খুজায়্মাতে ৯ টি হাদিস বিদ্যমান| ইমাম
বুখারী (রহঃ) শুধু রফল ইয়াদাইন এর গুরুত্ত্ব
অনুধাবনে সতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন|
তারপরও মানুষ এটাকে পরিহার
করে কিভাবে? এটা অনেক বড়
একটি সুন্নাত|
ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যখন সালাত
আরম্ভ করতেন তখন দুই হাত কাধ পর্যন্ত
উঠাতেন এবং যখন রুকুর জন্য তাকবির দিতেন
এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও
ঐরূপ দুই হাত কাধ পর্যন্ত উঠাতেন| এরকম
সালাত রাসুল (সাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত
পড়ে গিয়েছেন| বায়হাকী ২য় খন্ড|
রফল ইয়াদায়ন এর দলিল . বুখারী, মুসলিম,
তিরমিজি, আবু দাউদ, মুয়াত্তা ইমাম
মালেক, ইবনু মাজাহ, ইবনু খুযায়মা,
বায়হাকী, মুসনাদে আহমদ সহ সকল হাদিস
গ্রন্থেই বিদ্যমান রয়েছে|
যারা ইচ্ছে করে গুয়ার্তুমি করে রফল
ইয়াদায়ন ছেড়ে দেয় তারা মূলত রাসুল
(সাঃ) কে অবজ্ঞা করে অন্যের
মতামতকে প্রাধান্য দেয়!
পাঠক! আবার স্মরণ নিন, আল্লাহ বলেন ”রসূল
তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর
এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত
থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” সুরা হাশর ৭
| ”যে লোক রসূলের হুকুম মান্য
করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ | রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
● ১১. রুকু :-
———–
দুই হাত দিয়ে হাটু
আকড়ে ধরে সামনে ঝুকে পিঠ সমান্তরাল
রেখে বকাতে হবে|
সালাতে সর্বদা সিজদার
দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে (তাশাহুদ ব্যতীত)
| বুখারী |
রাসুল (সাঃ) রুকুর সময় দুই হাতের তালু হাটুর
উপর রাখতেন এবং লোকজনদেরকে এরূপ
করার নির্দেশ দিতেন| বুখারী ও আবু
দাউদ|
রাসুল (সাঃ) দুই হাটু আকড়ে ধরতেন (বুখারী,
মুসলিম) এবং হাতের
আঙ্গুলগুলো ফাকা করে রাখতেন
(ইবনে খুযায়মা)|
রুকুতে পিঠ ও মাথা সমান্তরাল
রাখতে হবে | রাসুল (সাঃ) পিঠ
থেকে মাথা উচু নিচু করতেন না| (বুখারী,
মুসলিম, আবু দাউদ )
সে ব্যক্তির সালাত হয় না রুকু ও সিজদায়
যার পিঠ সোজা করে না| (ইবনু মাজাহ, আবু
দাউদ)
● ১২. রুকুর জিকির বা দুআ:-
—————————-
রাসুল (সাঃ) রুকুতে বিভিন্ন রকম জিকির ও
দুআ পাঠ করতেন| কোনো সময়
একটা কোনো সময় অন্যটা|
১ম দুআ : তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল
আজিম’; অর্থ: আমার মহান রবের
পবিত্রতা বর্ণনা করছি| অথবা তিনবার
‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম
ওয়া বিহামদিহি ‘; অর্থ: আমার মহান রবের
পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি| আহমদ,
আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, দারু
কুতনি , তাবরানী|
২য় দুআ:
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম
মাগফিরলি| অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র
তোমার প্রশংসায় আমি রত, আমায়
ক্ষমা কর| রাসুল (সাঃ) এই দুআ রুকু সিজদায়
বার বার বেশি বেশি করে পাঠ করতেন
(বুখারী, মুসলিম, নাসাই, আবু দাউদ,
ইবনে মাজাহ)
৩য় দুআ: তিনবার ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল
মালাইকাতিহ ওয়ার- রূহ’ অর্থ আল্লাহ
সত্তায় পবিত্র ও গুনাবলীতেও পবিত্র,
যিনি ফেরেস্তাকুল ও জিব্রাইলের
প্রতিপালক| ( মুসলিম, মিশকাত হাদিস ৮৭২
পৃঃ ৮২)
রুকুতে কুরআন পড়া নিষেধ | (মুসলিম)
● ১৩. রুকুতে উঠা ও সোজা হয়ে দাড়ান
এবং রফল ইয়াদায়ন করা:-
———————————————
———————–
রুকু থেকে উঠে রফল ইয়াদায়ন
করতে হবে এবং একই
সাথে বলতে হবে ”সামি আল্লাহু লিমান
হামিদা” অর্থ আল্লাহ সেই ব্যক্তির
কথা কবুল করেন, যে তার প্রশংসা করে|
(বুখারী ও মুসলিম);
কোনো ব্যক্তির সালাত সে পর্যন্ত শুদ্ধ হয়
না যে পর্যন্তনা সে রুকু
থেকে সোজা হয়ে ‘সামি আল্লাহু লিমান
হামিদা’ না বলে| (আবু দাউদ)
এর পর সোজা দাড়িয়ে থাকা অবস্থায়
মনে মনে পড়তে হবে, ‘
আল্লাহুম্মা ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’
অর্থ হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা কেবল
তোমারই| রাসুল (সাঃ) কখনো ‘আল্লাহুম্মা’
শব্দটি যোগ করতেন, কখনো করতেন না|
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের সময়,
ইমাম যখন ”সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা”
বলবে তখন মুক্তাদিরা বলবে ‘
আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল
হামদ|’ ( বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি)
● ১৪. সিজদায় যাওয়া:-
———————–
রাসুল (সাঃ) তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে সিজদায় যেতেন| (বুখারী ও মুসলিম);
সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে দুই
হাত রাখতে হবে তারপর দুই হাটু
রাখতে হবে| এটাই বেশি সহিহ ও মজবুত
দলিল ভিত্তিক |
রাসুল (সাঃ) মাটিতে দুই হাটু রাখার
আগে দুই হাত রাখতেন| (ইবনু খুযায়মা,
দারা কুতনি, হাকেম একে সহিহ বলেছেন;
ইমাম মালেক, আহমদ এর মতও এটিই; আবু
দাউদ )
আবার,
সিজদায় যাওয়ার সময় আগে মাটিতে হাটু
রাখা ও পরে হাত রাখা যায়| এটার
পক্ষেও দলিল রয়েছে| (আবু দাউদ,
তিরমিজি, নাসাই, ইবনু মাজাহ)
প্রথমটি একটি বেশি শক্তিশালী এই জন্য
যে, রাসুল (সাঃ) আদেশ করেছেন যে,
”তোমাদের কেউ সিজদাহ করলে দুই
পায়ে সে উটের মত না বসে বরং হাটু
রাখার আগে যেন দুই হাত মাটিতে রাখে”|
(আবু দাউদ)
● ১৫. সিজদাহ:-
—————
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য
একটি সিজদা করে, আল্লাহ তার জন্য
একটি নেকী লেখেন ও তার একটি পাপ দূর
করে দেন এবং তার মর্যাদার স্তর
একটি বৃদ্ধি করে দেন। অতএব
তোমরা বেশী বেশী সিজদা কর’ (ইবনু
মাজাহ হা/১৪২৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২,
অনুচ্ছেদ-২০১।)
বেশি বেশি সিজদাহ কর
মানে বেশি বেশি সালাত পড়|
প্রতি সালাতে প্রতি রাকাতে ২
টি করে মোট চারটি সিজদাহ!
মাটিতে হাত, হাটু, পায়ের আঙ্গুল, কপাল ও
নাক ঠেকিয়ে সিজদাহ করতে হয়| রাসুল
(সাঃ) সাত অঙ্গের দ্বরা সিজদাহ করতেন|
দুই হাতের তালু, দুই হাটু, দুই পায়ের
পাতা (আঙ্গুল), কপাল ও নাক | সিজদাহ
দুটি করতে হয় |
সিজদায় অবশ্যই কপাল ও নাক দুটোই
মাটিতে স্পর্শ করতেই হবে| সেই ব্যক্তির
সালাত হয় না যার নাক ও কপাল মাটি স্পর্শ
করে না| (দারু কুতনি, তাবরানী)
সিজদায় পায়ের
গোড়ালি উর্ধ্বমুখী থাকবে, পায়ের আঙ্গুল
মাটিতে লাগানো থাকবে, উরু থেকে পেট
আলাদা থাকবে | (বুখারী, মুসলিম, আবু
দাউদ, তিরমিজি, নাসাই)
রাসুল (সাঃ) সিজদার সময় দুই হাতের তালু
কখনো কাধ বরাবর রাখতেন আবার
কখনো কান বরাবর রাখতেন| (আবু দাউদ,
তিরমিজি)
আমাদের সমাজে প্রচলিত
পদ্ধতিতে মহিলারা শরীর
লেপ্টিয়ে বিছিয়ে দেন জমিনে, দুই হাত
মিলিয়ে দেন জমিনে যা স্পষ্ট হাদিস
বিরোধী এবং তা পরিতাজ্য|
রাসুল (সাঃ) দুই হাত
মাটিতে বিছিয়ে দিতেন না|
বরং তা জমিন থেকে উপরে (বুখারী, আবু
দাউদ) এবং পেটের দুই পাশ
থেকে দুরে রাখতেন| (বুখারী, মুসলিম)
হাটু, পেট, হাত, মাথা এই অঙ্গগুলোর
মাঝখানে এমন ফাকা থাকতে হয় যেন এই
ফাকা দিয়ে একটি বকরীর
বাচ্চা চলে যেতে পারে| (সহিহ মুসলিম)
হে পাঠক! লক্ষ্য করুন, ‘তোমরা সিজদায়
সোজা থাকো, তোমরা কুকুরের মত দুই হাত
বিছিয়ে দিও না’ (বুখারী, মুসলিম, আবু
দাউদ, আহমদ)
‘তোমরা হিংস্র প্রাণীর মত হাত
বিছিয়ে দিও না, দুই হাতের তালুর উপর ভর
রাখো এবং দুই বাহুকে আলাদা রাখো|
এভাবে করলে তোমার সকল অঙ্গ সিজদাহ
করবে”| (ইবনে খুযায়মা)
অতএব, আমাদের
সমাজে মহিলারা যে পদ্ধতি অবলম্বন
করে থাকেন সিজদায় তা স্পষ্ট হাদিস
বিরোধী|
পাঠক! আবার স্মরণ নিন, আল্লাহ বলেন ”রসূল
তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর
এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত
থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” সুরা হাশর ৭
| ”যে লোক রসূলের হুকুম মান্য
করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ | রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
● ১৬. সিজদার জিকির বা দুআ:-
——————————–
১ম দুআ : তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’;
অর্থ: আমার মহান রবের
পবিত্রতা বর্ণনা করছি| (নাসাই,
তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, দারু
কুতনি)
২য় দুআ:
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম
মাগফিরলি| অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র
তোমার প্রশংসায় আমি রত, আমায়
ক্ষমা কর| রাসুল (সাঃ) এই দুআ রুকু সিজদায়
বার বার বেশি বেশি করে পাঠ করতেন
(বুখারী, মুসলিম, নাসাই, আবু দাউদ,
ইবনে মাজাহ)
৩য় দুআ: তিনবার ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল
মালাইকাতিহ ওয়ার- রূহ’ অর্থ আল্লাহ
সত্তায় পবিত্র ও গুনাবলীতেও পবিত্র,
যিনি ফেরেস্তাকুল ও জিব্রাইলের
প্রতিপালক| ( মুসলিম, মিশকাত হাদিস ৮৭২
পৃঃ ৮২)
সে ব্যক্তির সালাত হয় না রুকু ও সিজদায়
যার পিঠ সোজা করে না| (ইবনু মাজাহ, আবু
দাউদ)
সিজদায় কুরআন পড়া নিষেধ | (মুসলিম)
সিজদায় বেশি বেশি দুআ করা |
‘বান্দা সিজদাহ অবস্থায় আল্লাহর
বেশি নিকটবর্তী হয়; তোমরা সিজদায়
বেশি বেশি করে দুআ কর’ (মুসলিম)
এখানে একটু লক্ষনীয় যে সিজদায় নিজের
ভাষায় বেশি বেশি দুআ করা যাবে কিনা?
এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে| কেউ বলছেন
যেকোনো ভাষায় দুআ করা যাবে আবার
কেউ বলছেন করা যাবে না, এমন
কি আরবিতেও নিজের ভাষায় দুআ
করা যাবে না| কারণ সালাতে নিজের
ভাষা/ কথা চলেনা | আমরা মনে করি,
সালাতে রাসুল (সাঃ)
যে দুআগুলো শিখিয়েছেন
সে গুলি বেশি বেশি পড়া ভালো!
● ১৭. সিজদাহ থেকে উঠে বসা বা দুই
সিজদার মাঝে বসা ও দুআ করা:-
———————————————
————————-
রাসুল (সাঃ) তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে সিজদা থেকে মাথা তুলতেন|
(বুখারী , মুসলিম)
রাসুল (সাঃ) দুই সিজদার
মধ্যবর্তী সময়ে এমন সোজা হয়ে প্রসান্ত
ভাবে বসতেন যে সকল হাড় নিজ নিজ
স্থানে বহাল হত| (আবু দাউদ)
দুই সিজদার মাঝে ধীর স্থির হয়ে বসতে হয়
অর্থাত একটু থামতে হয়| অনেকে ঠিক মত
না সোজা হয়ে বসেই পরবর্তী সিজদা দেন
যা মারাত্মক ভুল|
রাসুল (সাঃ) দুই সিজদার মাঝখানে বলতেন,
”আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনী,
ওয়াহদীনি, ওয়া আফিনী, ওয়ার-ঝুকনী”
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমায় মাফ কর,
আমাকে রহম কর, আমাকে হেদায়েত দান
কর, আমাকে শান্তি দান কর
এবং আমাকে রিজিক দাও| (মুসলিম,
মিশকাত পৃঃ ৭৭ হা/ ৮৯৩)
হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) দুই
সিজদার মাঝে বলতেন, ‘রাব্বিগ ফিরলি”
অর্থ: হে প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন|
(নাসাই, মিশকাত পৃঃ ৮৪); ইবনু
মাজাতে ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ দুইবার
পড়ার কথা বলা আছে|
● ১৮. দ্বিতীয় সিজদাহ দেওয়া:-
—————————–
রাসুল (সাঃ) তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে দ্বিতীয় সিজদায় যেতেন |
তিনি প্রথম সিজদায় যা করতেন দ্বিতীয়
সিজদায়ও অনুরূপ করতেন| (বুখারী, মুসলিম)
২৩. দ্বিতীয় রাকাতের জন্য
উঠা বা দাড়ানো: দুটি সিজদাহ
দেওয়া হলে তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য সিজদাহ
থেকে মাথা উঠাতে হবে|
রাসুল (সাঃ) দ্বিতীয় রাকাতে উঠার সময়
মাটিতে দুই হাতের উপর ভর দিয়ে উঠতেন|
(বুখারী)
দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠার সময়
প্রথমে কপাল ও নাক উঠবে, তারপর হাটু
এবং সর্ব শেষে হাত | এটাই বেশি সহিহ |
যদিও কেউ কেউ সর্ব শেষে হাত নয় হাটু
উঠবে বলে থাকেন|
● ১৯. দ্বিতীয় রাকাত:-
———————-
রাসুল (সাঃ) দ্বিতীয় রাকাতের জন্য
উঠে প্রথমে সুরা ফাতেহা পড়তেন এবং চুপ
থাকতেন না| (মুসলিম); অর্থাত দ্বিতীয়
রাকাতে সানা পড়তে হয় না,
সুরা ফাতেহা দিয়েই দ্বিতীয় রাকাত শুরু
হয়|
দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাতের অনুরূপ
অর্থাত সুরা ফাতেহা পাঠ করে সাথে অন্য
যেকোনো একটি সুরা বা আয়াত পাঠ করা|
তবে দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাত
থেকে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত হয়| প্রথম
রাকাতের অনুরূপ দ্বিতীয় রাকাতেও রুকু
সিজদাহ করতে হবে|
● ২০. শেষ বৈঠক (২ রাকাত সালাতের জন্য)
:
——————————————–
২ রাকাত বিশিষ্ট সালাতের জন্য দ্বিতীয়
রাকাত শেষ করে বসে থাকতে হয়| শেষ
বৈঠকে বসা ফরজ| না বসলে সালাত
বাতিল| শেষ বৈঠকে বাম পায়ের
পাতা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতে হয়
এবং ডান পায়ের
পাতা গোড়ালি উর্ধ্বমুখী রেখে আঙ্গুলের
উপর ভর দিয়ে রাখতে হয়| (বুখারী,
আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৯২,৮০১; নায়ল
৩/১৪৩-৪৫ ‘তাশাহহুদে বসার নিয়ম’ অনুচ্ছেদ)
বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম
হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও
স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে| মুসলিম,
মিশকাত হা/৯০৭ ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।
শেষ বৈঠক তাশাহুদ তথা ‘অত্তাহিয়াতু, দুরুদ
এবং দুআ মাসুরা’র সমন্বয়ে হয় |
ডান হাত আরবি ৫৩ -এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ
থাকবে ও শাহাদাত
অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করবে অর্থাত
নাড়তে থাকতে হবে ধীরে ধীরে । মুসলিম,
আবু দাউদ, নাসাই, ইবনে খুযায়মা, মিশকাত
হা/৯০৬, ৯০৮। ৫৩ -এর ন্যায় অর্থ কনিষ্ঠা,
অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করা ও
বৃদ্ধাঙ্গুলীকে তাদের
সাথে মিলানো এবং শাহাদাত
অঙ্গুলীকে স্বাভাবিক অবস্থায়
ছেড়ে দেওয়া।
বৈঠকের শুরু থেকে সালাম ফিরানোর আগ
পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবে।মিশকাত
হা/৯০৬ -এর টীকা।
দো‘আ পাঠের সময় আকাশের
দিকে তাকানো নিষেধ। নাসাঈ হা/১২৭৬;
মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮৩, ‘ছালাত’
অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৯।
ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো যাবে না,
যা পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়’।
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৭
‘সতর’ অনুচ্ছেদ-৮ ; মির‘আত হা/৭৬৩, ১/৬৬৯
পৃঃ, ঐ, ২/৪৭৩ পৃঃ।
আমাদের সমাজে প্রচলিত ‘আশহাদু’ বলার
সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর
আঙ্গুল নামাবে’ বলে যে কথা চালু
আছে তার কোন ভিত্তি নেই। মিশকাত
হা/৯০৬-এর টীকা-২ দ্রষ্টব্য;
মুসল্লির দৃষ্টি আঙ্গুলের ইশারার
বাইরে যাবে না। আহমাদ, আবুদাঊদ,
মিশকাত হা/৯১৭, ৯১১; আবুদাঊদ হা/৯৯০;
নাসাঈ হা/১২৭৫; মিশকাত হা/৯১২।
● তাশাহুদ :-
———–
শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ পাঠ করতে হয়|
প্রত্যেক বৈঠকে তাশাহুদ
তথা ‘অত্তাহিয়াতু’ পাঠ করা ওয়াজিব|
এটি পড়তে ভুলে গেলে সহু
সিজদা দিতে হয়| (বুখারী, মুসলিম,
নাসাই,আহমদ)
তাশাহুদ চুপে চুপে পড়া সুন্নত| (আবু দাউদ)
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু,
ওয়াত্ তাইয়িবাতু। আস্সালামু
‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আস্সালামু
আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্
সালিহীন। আশহাদু আল-লা-
ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু
আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু।
(বুখারী, মিশকাত পৃঃ ৮৫)
অর্থঃ “সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য,
সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল
কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী!
আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও
তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের
উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের
উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য
নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ
আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
● দুরুদ:-
——-
দুই, তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতের
একদম শেষের বৈঠকে তাশাহুদের পর কিন্তু
সালাম ফেরানোর আগে দুরুদ পাঠ করতে হয়|
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা বারাক্তা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ”। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত পৃঃ ৮৬,
হা/৯১৯)
অর্থ: “ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার
বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন,
যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস
সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ
করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত
সম্মানিত।”
‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ
করে, আল্লাহ তার উপরে দশটি রহমত নাযিল
করেন। তার আমলনামা হ’তে দশটি গুনাহ
ঝরে পড়ে ও তার সম্মানের স্তর আল্লাহর
নিকটে দশগুণ বৃদ্ধি পায়’। নাসাঈ, মিশকাত
হা/৯২২, ‘নবীর উপরে দরূদ ও তার ফযীলত’
অনুচ্ছেদ-১৬।
● ২১. বৈঠক :-
————-
দুইরাকাত বিশিষ্ট সালাতে দ্বিতীয়
রাকাত শেষে, তিন রাকাত এবং চার
রাকাত বিশিষ্ট সালাতে দ্বিতীয় রাকাত
শেষে কিছুক্ষণ বসতে হয় এবং দুআ পাঠ
করতে হয় যাকে ‘বৈঠক’ বলা হয়|
২২. দুই রাকাত শেষে মধ্য বৈঠক যা শুধুমাত্র
৩ রাকাত ও চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতের
জন্য প্রযোজ্য :
তিন রাকাত এবং চার রাকাত বিশিষ্ট
সালাতের দ্বিতীয়
রাকাতে বৈঠকে বসতে হয়| এটাকে বলা হয়
মধ্য বৈঠক | তিন ও চার রাকাত বিশিষ্ট
সালাতের ২য় রাকাত শেষে এই
বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ ওয়াজিব|
এ বৈঠকে অত্তাহিয়াতু পাঠ করতে হয়| এর
সাথে দুরুদও পাঠ করা যায়|
রাসুল (সাঃ) প্রথম দুই রাকাতের পর
তাশাহুদ পড়তে ভুলে গেলে ভুলের জন্য সহু
সিজদাহ করতেন| (বুখারী মুসলিম); সহু
সিজদাহ কেবল সালাতে কোনো ওয়াজিব
ছুটে গেলে করতে হয়|
রাসুল (সাঃ) প্রত্যেক বৈঠকে অত্তাহিয়াতু
পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন| (নাসাই)
● ২৩. তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠা:-
———————————-
তিন ও চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতের জন্য
দ্বিতীয় রাকাতের পর মধ্য বৈঠক
শেষে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়াতে হয়|
রাসুল (সাঃ) তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়াতেন|
(বুখারী, মুসলিম)
রাসুল (সাঃ) বসা থেকে দাড়ানোর সময়
তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন
এবং দাড়াতেন| দাড়ানোর সময় দুই হাত
উত্তোলন তথা রফল ইয়াদায়ন করতেন|
(বুখারী, আবু দাউদ)
● ২৪. তৃতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাত:-
————————————-
তিন রাকাত বিশিষ্ট সালাত অর্থাত
মাগরিবের সালাত এবং চার রাকাত
বিশিষ্ট সালাত যেমন জোহর, আছর ও এশার
সালাত |
রাসুল (সাঃ) তৃতীয় ও চতুর্থ
রাকাতে সুরা ফাতেহা পাঠ করতেন| রাসুল
(সাঃ) ৩য় ও ৪র্থ রাকাতে সংক্ষিপ্ত
কেরাত পাঠ করতেন| (মুসলিম, আহমদ)
অর্থাত ৩য় ও ৪র্থ
রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর সাথে অন্য
সুরা বা আয়াত পড়া সুন্নত|
রাসুল (সাঃ) ৩য় ও ৪র্থ
রাকাতে কখনো কখনো শুধু
সুরা ফাতেহা পাঠ করতেন| (বুখারী,
মুসলিম)
৩য় ও ৪র্থ রাকাতের রুকু সিজদাহ প্রথম দুই
রাকাতের অনুরূপ|
● ২৫. শেষ বৈঠক :-
——————-
দুইরাকাত বিশিষ্ট সালাতে দ্বিতীয়
রাকাত শেষে, তিন রাকাত বিশিষ্ট
সালাতে তৃতীয় রাকাত শেষে এবং চার
রাকাত বিশিষ্ট সালাতে চতুর্থ রাকাত
শেষে বৈঠকে বসতে হয় যাকে শেষ বৈঠক
বলা হয়|
২ রাকাত বিশিষ্ট সালাতের জন্য দ্বিতীয়
রাকাত শেষ করে বসে থাকতে হয়| শেষ
বৈঠকে বসা ফরজ| না বসলে সালাত
বাতিল| শেষ বৈঠকে বাম পায়ের
পাতা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতে হয়
এবং ডান পায়ের
পাতা গোড়ালি উর্ধ্বমুখী রেখে আঙ্গুলের
উপর ভর দিয়ে রাখতে হয়| (বুখারী,
আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৯২,৮০১; নায়ল
৩/১৪৩-৪৫ ‘তাশাহহুদে বসার নিয়ম’ অনুচ্ছেদ)
বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম
হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও
স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে| মুসলিম,
মিশকাত হা/৯০৭ ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।
ডান হাত আরবি ৫৩ -এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ
থাকবে ও শাহাদাত
অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করবে অর্থাত
নাড়তে থাকতে হবে ধীরে ধীরে । মুসলিম,
আবু দাউদ, নাসাই, ইবনে খুযায়মা, মিশকাত
হা/৯০৬, ৯০৮। ৫৩ -এর ন্যায় অর্থ কনিষ্ঠা,
অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করা ও
বৃদ্ধাঙ্গুলীকে তাদের
সাথে মিলানো এবং শাহাদাত
অঙ্গুলীকে স্বাভাবিক অবস্থায়
ছেড়ে দেওয়া।
দো‘আ পাঠের সময় আকাশের
দিকে তাকানো নিষেধ। নাসাঈ হা/১২৭৬;
মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮৩, ‘ছালাত’
অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৯।
ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো যাবে না,
যা পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়’।
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৭
‘সতর’ অনুচ্ছেদ-৮ ; মির‘আত হা/৭৬৩, ১/৬৬৯
পৃঃ, ঐ, ২/৪৭৩ পৃঃ।
আমাদের সমাজে প্রচলিত ‘আশহাদু’ বলার
সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর
আঙ্গুল নামাবে’ বলে যে কথা চালু
আছে তার কোন ভিত্তি নেই। মিশকাত
হা/৯০৬-এর টীকা-২ দ্রষ্টব্য;
মুসল্লির দৃষ্টি আঙ্গুলের ইশারার
বাইরে যাবে না। আহমাদ, আবুদাঊদ,
মিশকাত হা/৯১৭, ৯১১; আবুদাঊদ হা/৯৯০;
নাসাঈ হা/১২৭৫; মিশকাত হা/৯১২।
● ২৬. শেষ বৈঠকের দুআ সমূহ:-
——————————-
১ম অংশ তাশাহুদ :-
শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ পাঠ করতে হয়|
প্রত্যেক বৈঠকে তাশাহুদ
তথা ‘অত্তাহিয়াতু’ পাঠ করা ওয়াজিব|
এটি পড়তে ভুলে গেলে সহু
সিজদা দিতে হয়| (বুখারী, মুসলিম,
নাসাই,আহমদ)
তাশাহুদ চুপে চুপে পড়া সুন্নত| (আবু দাউদ)
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু,
ওয়াত্ তাইয়িবাতু। আস্সালামু
‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আস্সালামু
আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্
সালিহীন। আশহাদু আল-লা-
ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু
আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু।
(বুখারী, মিশকাত পৃঃ ৮৫)
অর্থঃ “সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য,
সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল
কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী!
আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও
তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের
উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের
উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য
নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ
আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
২য় অংশ দুরুদ:-
দুই রাকাত বিশিষ্ট সালাতে, তিন রাকাত
বিশিষ্ট সালাতের তৃতীয়
রাকাতে এবং চার রাকাত বিশিষ্ট
সালাতের চতুর্থ রাকাতে শেষ
বৈঠকে তাশাহুদের পর কিন্তু সালাম
ফেরানোর আগে দুরুদ পাঠ করতে হয়|
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা বারাক্তা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ”। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত পৃঃ ৮৬,
হা/৯১৯)
অর্থ: “ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার
বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন,
যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস
সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ
করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত
সম্মানিত।”
‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ
করে, আল্লাহ তার উপরে দশটি রহমত নাযিল
করেন। তার আমলনামা হ’তে দশটি গুনাহ
ঝরে পড়ে ও তার সম্মানের স্তর আল্লাহর
নিকটে দশগুণ বৃদ্ধি পায়’।
নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২২, ‘নবীর উপরে দরূদ
ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৬।
৩য় অংশ দুআ মাসুরা:-
দুআ মাসুরা মানে হচ্ছে ‘হাদিস বর্ণিত
দুআ|’ দুরুদ এর পর দুআ মাসুরা পড়তে হয়|
রাসুল (সাঃ) এই দুআটি প্রত্যেক
সালাতে পড়ার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ
দিয়েছেন,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-
বি জাহান্নামা ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-
বিল কাবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্
ফিৎনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল,
ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিৎনাতিল
মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-ত,
আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উজুবিকা মিনাল
মা’ছামী ওয়াল মাগরাম |” (বুখারী, মুসলিম,
মিশকাত)
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয়
ভিক্ষা করছি জাহান্নামের আযাব হ’তে,
কবরের আযাব হ’তে, জীবন ও মৃত্যুকালীন
ফিৎনা হ’তে, এবং দাজ্জালের
ফিৎনা হ’তে| আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণের
বোঝা হতে|
আরেকটি দুআ মাসুরা,
আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি যুলমান
কাছিরা, ওয়ালা ইয়াগ ফিরূজ
যুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম
মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল
গাফুরুর রাহিম | (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত
পৃঃ ৮৭ হা/৯৩৯)
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমার উপর
অত্যাধিক অন্যায় করেছি এবং তুমি ব্যতীত
পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই|
সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও|
ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ
থেকে হয়ে থাকে | আমার প্রতি রহম কর|
নিশ্চই তুমি ক্ষমাশীল দয়ালু|
তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যেকার দো‘আ
সমূহের শেষে রাসূল (সাঃ) নিম্নের দো‘আ
পড়তেন,
আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু
অমা আখখারতু, অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু,
অমা আসরাফতু, অমা আনতা আ‘লামু
বিহী মিন্নী; আনতাল মুক্বাদ্দিমু
ওয়া আনতাল মুআখখিরু, লা ইলা-
হা ইল্লা আনতা’ ।
মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪,
‘তাকবীরের পরে কি পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বাপর
গোপন ও প্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ কর
(এবং মাফ কর ঐসব গোনাহ)
যাতে আমি বাড়াবাড়ি করেছি এবং ঐসব
গোনাহ যে বিষয়ে তুমি আমার
চাইতে বেশী জানো। তুমি অগ্র-পশ্চাতের
মালিক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’।
৪র্থ অংশ অন্যান্য দুআ :-
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল
জান্নাতা ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনান্না-
র’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার
নিকটে জান্নাত
প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম
থেকে পানাহ চাচ্ছি)। (আবুদাঊদ হা/৭৯৩,
‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১২৮; ছহীহ ইবনু
হিববান হা/৮৬৫।)
আল্লা-হুম্মা রববানা আ-
তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-
খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-
বান্না-র’ অথবা আল্লা-হুম্মা আ-
তিনা ফিদ্দুনিয়া ..।
বুখারী হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; বাক্বারাহ ২/২০১;
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৮৭
‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সারগর্ভ দো‘আ’
অনুচ্ছেদ-৯।
‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা!
তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দাও ও
আখেরাতে মঙ্গল দাও
এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব
থেকে বাঁচাও’।
● ২৭. সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করা:-
—————————————
প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম
তথা ‘আস্সালামি আলাইকুম
ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাত শেষ
করতে হয়| আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত
হা/৯৫০, ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭।
সালাম ফেরানো ওয়াজিব| রাসুল (সাঃ)
বলেছেন, পবিত্রতা হচ্ছে সালাতের চাবি,
তাকবিরের (আল্লাহু আকবার)
মাধ্যমে সালাতে অন্যান্য কাজ হারাম
হয়ে যায় এবং সালামের মাধ্যমে সালাত
থেকে হালাল হয়ে বের হতে হয়| (আবু
দাউদ, তিরমিজি, হাকেম)
সালাম ফেরানোর পর করনীয়: সালাম
ফেরানোর মধ্য দিয়ে সালাত শেষ হয়|
তবে সালাম ফেরানোর পর পর কিছু
গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত কাজ রয়েছে| এ সকল সুন্নত
পরিত্যাগ করা ভালো নয়| সালাম
ফেরানোর পর পর মুনাজাত করা সুন্নতের
পরিপন্থী| ফরজ সালাত শেষ হতেই
সকলে এক সাথে দুই হাত তুলে মুনাজাত
ধরা বিদআত| সালাম ফিরিয়ে ফরজ সালাত
শেষ হতেই সুন্নত/নফল সালাতের জন্য
দাড়িয়ে যাওয়া সুন্নতের খেলাফ|
“যে ব্যক্তি শরীয়তে নতুন কিছু আবিষ্কার
করল যা, শরীয়তের অংশ নয় তা বর্জনীয়’’।
(মুসলিম)
সাওবান (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) সালাত
শেষে তিনবার ক্ষমা চাইতেন, ‘আস্তাগ
ফিরুল্লাহ, আস্তাগ ফিরুল্লাহ, আস্তাগ
ফিরুল্লাহ’ অর্থঃ আমি তোমার নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা করছি| অতঃপর বলতেন,
‘আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম, ওয়া মিনকাস
সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল জালা-
লী ওয়াল ইকরাম’ অর্থঃ হে আল্লাহ!
তুমি শান্তিময়, তোমার নিকট থেকেই
শান্তির আগমন, তুমি বরকতময় হে পরতাম ও
সম্মানের অধিকারী| (মুসলিম, মিশকাত);
সালাম ফেরানোর পর কমপক্ষে এতটুকু
করা হচ্ছে সুন্নত| কমপক্ষে এই সুন্নত
করে তারপর সালাতের স্থান
থেকে প্রয়োজনে নড়া উচিত|
প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে আয়াতুল
কুরসী পাঠকারীর জন্য জান্নাতে যেতে আর
কোনো বাধা থাকেনা মৃত্যু ব্যতীত|
(নাসাই)
আল্লাহু লা– ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল
কাইয়্যুম লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাওম।
লাহু মা ফিছ ছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল
আরদ্।মান জাল্লাজী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু–
ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু
মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খাল ফাহুম
ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল্ মিহি–
ইল্লা বিমা সা–আ-‘ ওয়াসিয়া কুরসি ইউ হুস
ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু
হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিউল আজীম। (–
মানে আওয়াজ টান দেওয়া)
অর্থ- আল্লাহ, তিনি ব্যতিত কোন মাবুদ নাই।
তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী,
তাঁহাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ
করিতে পারে না। আসমান ও
জমীনে যাহা কিছু আছে সব তাঁহারই। এমন
কে আছে, যে নাকি তাঁহার অনুমতি ব্যতিত
তাঁহার নিকট সুপারিশ করিবে? তাহাদের
(লোকদের) সম্মুখে যাহা কিছু
আছে এবং তাহাদের পশ্চাতে যাহা কিছু
আছে, সবই তিনি জানেন,
এবং তাহারা তাঁহার(আল্লাহ তায়ালার)
জ্ঞ্যানের কিছুই
আয়ত্তে আনিতে পারে না,
তবে তিনি যাহা ইচ্ছা করেন। তাঁহার
কুরছী আসমানসমুহ ও জমীনের সর্বত্রই
ঘিরিয়া রহিয়াছে। আর এই দুইটির
রক্ষনাবেক্ষন করা তাঁহার পক্ষে মোটেই
কঠিন নয়, এবং তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান।
রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক
সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার
আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার
এবং শতক পূরণ করতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মূলক
ওয়া লাহুল হামদু
ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়িইন কাদীর’ পাঠ
করবে তার সমস্ত পাপ
ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের
ফেনা সমতুল্য হয়| অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত
ইবাদতের যোগ্য কোনো মা’বুদ নাই,
তিনি এক তার কোনো শরিক নাই, রাজত্ব
তার এবং প্রশংসা তারই| তিনি সকল কিছুর
উপর ক্ষমতাবান|
রাসুল (সাঃ) প্রত্যেক সালাত শেষে একবার
করে সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পাঠ করতেন|
আর মাগরিব ও ফজরের সালাতের পর
সুরা ইখলাস সহ তিনবার করে পড়তেন| ( আবু
দাউদ নাসাই, তিরমিজি, মিশকাত)
উপরোক্ত কাজ গুলো করা সুন্নত |
আমরা সুন্নত বাদ
দিয়ে নিজেরা মনগড়া সম্মিলিত
মুনাজাতের প্রচলন করেছি| সালাত
শেষে উপরোক্ত সুন্নতের কাজ না করে অন্য
কিছু করা হচ্ছে সুন্নতের বরখেলাফ| এই
সকল সুন্নতের অনেক অনেক
নেকী রয়েছে পক্ষান্তরে নিজেদের
মনগড়া কিছু করা হচ্ছে বিদআত | আর
বিদাতের পরিনাম ভ্রষ্টতা যার পরিনাম
জাহান্নাম|
সালাত শেষে এই দুআ
গুলো করে ব্যক্তিগতভাবে হাত
তুলে মুনাজাত করা যায় | তবে সম্মিলিত
মুনাজাত করা বিদআত কারণ রাসুল (সাঃ)
এর দীর্ঘ ২৩ বছরের সালাতে এভাবে কখনই
ফরজ সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত
করেছেন এমন কোনো প্রমান পাওয়া যায়
না|
মহান আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দিন|
হে আল্লাহ! তোমার নিকট উপকারী বিদ্যা,
গ্রহণযোগ্য আমল এবং পবিত্র
জীবিকা প্রার্থনা করি| হে আল্লাহ!
আমি তোমার আশ্রয় কামনা করছি অসার
জ্ঞান হতে, অশ্রুত দো’আ হতে, এবং এমন
প্রবৃত্তি হতে যা পরিতৃপ্ত হয় না, এমন অন্তর
হতে যা বিগলিত হয় না।
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলাইহি,
আল্লাহুম্মা বারিক আলাইহি |
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন, একমাত্র
তিনিই মহা জ্ঞানী ও হেদায়েতের
মালিক!
“হে আমাদের পালনকর্তা,
যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি,
তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।
হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের পাপ
মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর
এবং আমাদের প্রতি দয়া কর।তুমিই
আমাদের প্রভু।”
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের
সবাইকে সঠিক জ্ঞান ও সঠিক বুঝ দান করুন,
উম্মতকে ঐক্যবদ্ধ রাখুন এবং আমাদের
প্রচেষ্টাকে কবুল করুন! …আমীন!
courtesy: allpraisebelongstoallah
দলিল প্রমান ভিত্তিক সালাতের
পদ্ধতি লিখতে গিয়ে যে সকল বইয়ের
সরাসরি সহযোগিতা নিয়েছি,
১. বুখারী , মুসলিম, আবু দাউদ এর
বাংলা অনুবাদ
২. ইমাম বুখারী রচিত যুজউল কিরাত
এবং যুজউ রফল ইয়াদাইন কিতাবের
বাংলা অনুবাদ
৩. সহিহ নামাজ ও দুআ শিক্ষা –
আল্লামা মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে ফজল
৪ . রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামাজ –
নাসিরুদ্দিন আলবানী
৫ . রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সালাত আদায়
পদ্ধতি- শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ
৬ . ছালাতুর রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) – ড.
আসাদুল্লাহ আল গালিব
৭ . আইনে রাসুল (সাঃ) দোআ অধ্যায়- আব্দুর
রাজ্জাক বিন ইউসুফ।
৮. প্রচলিত ভুল বলাম রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
সালাত আদায়ের পদ্ধতি – মুরাদ বিন আমজাদ