জান্নাতি নারীর গুণাবলী

নারীর জান্নাত যে পথে
প্রেক্ষাপট
চারদিক থেকে ভেসে আসছে নির্দয় ও পাষণ্ড
স্বামী নামের হিংস্র পশুগুলোর আক্রমণের
শিকার অসহায় ও অবলা নারীর করুণ বিলাপ।
অহরহ ঘটছে দায়ের কোপ, লাথির আঘাত,
অ্যাসিডে ঝলসানো, আগুনে পুড়ানো, বিষ
প্রয়োগ এবং বালিশ চাপাসহ নানা দুঃসহ
কায়দায় নারী মৃত্যুর ঘটনা। কারণ তাদের
পাঠ্য সূচি থেকে ওঠে গেছে বিশ্ব নবির বাণী
“তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও।”
“তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর
নিকট উত্তম, আমি আমার স্ত্রীদের নিকট
উত্তম।”
অপর দিকে চারদিক বিষিয়ে তুলছে, তাগুতি
আইনের দোহাই পেড়ে পতিভক্তিশূন্য, মায়া-
ভালোবাসাহীন স্ত্রী নামের ডাইনীগুলোর
অবজ্ঞার পাত্র, অসহায় স্বামীর ক্ষোভ ও
ক্রোধে ভরা আর্তনাদ। কারণ, তারা রাসূলের
শিক্ষা থেকে বঞ্চিত “আল্লাহ ব্যতীত কাউকে
সেজদা করার অনুমতি থাকলে, আমি নারীদের
নির্দেশ দিতাম তোমরা স্বামীদের সেজদা
কর।” মান-অভিমানের ছলনা আর সামান্য
তুচ্ছ ঘটনার ফলে সাজানো-গোছানো, সুখের
সংসার, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও তছনছ হয়ে
যাচ্ছে মুহূর্তে। ক্ষণিকেই বিস্মৃতির
আস্তাকুরে পর্যবসিত হচ্ছে পূর্বের সব
মিষ্টি-মধুর স্মৃতি, আনন্দঘন-মুহূর্ত। দায়ী
কখনো স্বামী, কখনো স্ত্রী। আরো দায়ী
বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিদ্যমান
ধর্মহীন, পাশ্চাত্যপন্থী সিলেবাস। যা
তৈরি করেছে ইংরেজ ও এদেশের এমন
শিক্ষিত সমাজ, যারা রঙে বর্ণে বাঙালী
হলেও চিন্তা চেতনা ও মন-মানসিকতায়
ইংরেজ। মায়ের উদর থেকে অসহায় অবস্থায়
জন্ম গ্রহণকারী মানুষের তৈরি এ সিলেবাস
অসম্পূর্ণ, যা সর্বক্ষেত্রে সঠিক দিক
নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ। যে সিলেবাসে
শিক্ষিত হয়ে স্ত্রী স্বামীর অধিকার
সম্পর্কে জানে না, স্বামীও থাকে স্ত্রীর
প্রাপ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। একজন অপর
জনের প্রতি থাকে বীতশ্রদ্ধ। ফলে
পরস্পরের মাঝে বিরাজ করে সমঝোতা ও
সমন্বয়ের সংকট। সম্পূরকের পরিবর্তে
প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে একে
অপরকে। আস্থা রাখতে পারছে না কেউ কারো
ওপর। তাই স্বনির্ভরতার জন্য নারী-পুরুষ
সবাই অসম প্রতিযোগিতার ময়দানে ঝাঁপ
দিচ্ছে। মূলত হয়ে পড়ছে পরনির্ভর, খাবার-
দাবার, পরিচ্ছন্নতা-পবিত্রতা এবং সন্তান
লালন-পালনের ক্ষেত্রেও ঝি-চাকর কিংবা
শিশু আশ্রমের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। ফলে যা
হবার তাই হচ্ছে… পক্ষান্তরে আসল শিক্ষা
ও মানব জাতির সঠিক পাথেয় আল-কুরআনের
দিকনির্দেশনা পরিত্যক্ত ও সংকুচিত হয়ে
আশ্রয় নিয়েছে কুঁড়ে ঘরে, কর্তৃত্বশূন্য কিছু
মানবের হৃদয়ে। তাই, স্বভাবতই মানব জাতি
অন্ধকারাচ্ছন্ন, সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত,
কিংকর্তব্যবিমূঢ় নিজদের সমস্যা নিয়ে।
দোদুল্যমান স্বীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে।
আমাদের প্রয়াস এ ক্রান্তিকালে নারী-
পুরুষের বিশেষ অধ্যায়, তথা দাম্পত্য জীবনের
জন্য কুরআন-হাদিস সিঞ্চিত একটি
আলোকবর্তিকা পেশ করা, যা দাম্পত্য জীবনে
বিশ্বস্ততা ও সহনশীলতার আবহ সৃষ্টি
করবে। কলহ, অসহিষ্ণুতা ও অশান্তি বিদায়
দেবে চিরতরে। উপহার দেবে সুখ ও শান্তিময়
অভিভাবকপূর্ণ নিরাপদ পরিবার।
ভূমিকা
বইটি কুরআন, হাদিস, আদর্শ মনীষীগণের
উপদেশ এবং কতিপয় বিজ্ঞ আলেমের বাণী ও
অভিজ্ঞতার আলোকে সংকলন করা হয়েছে।
বইটিতে মূলত নারীদের বিষয়টি বেশি
গুরুত্ব পেয়েছে, অবশ্য পুরুষদের প্রসঙ্গও
আলোচিত হয়েছে, তবে তা প্রাসঙ্গিকভাবে।
যে নারী-পুরুষ আল্লাহকে পেতে চায়, আখেরাতে
সফলতা অর্জন করতে চায়, তাদের জন্য বইটি
পাথেয় হবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী। আল্লাহ
তা’আলা বলেন :
ﺎَﻣَﻭ ٍﻦِﻣْﺆُﻤِﻟ َﻥﺎَﻛ ﺎَﻟَﻭ ٍﺔَﻨِﻣْﺆُﻣ ﺍَﺫِﺇ ﻰَﻀَﻗ
ُﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪُﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ﺍًﺮْﻣَﺃ ْﻥَﺃ َﻥﻮُﻜَﻳ ُﻢُﻬَﻟ
ُﺓَﺮَﻴِﺨْﻟﺍ ْﻦِﻣ ْﻢِﻫِﺮْﻣَﺃ ْﻦَﻣَﻭ ِﺺْﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ
ُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ْﺪَﻘَﻓ َّﻞَﺿ ﺎًﻨﻴِﺒُﻣ ﺎًﻟﺎَﻠَﺿ ﴿
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ:৩৬﴾
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে
কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের
ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার
থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে
অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”[১]
রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻞﻛ ﻥﻮﻠﺧﺪﻳ ﻲﺘﻣﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻻﺇ ﻦﻣ ،ﻰﺑﺃ
ﺍﻮﻟﺎﻗ : ﺎﻳ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ؟ﻰﺑﺄﻳ ﻦﻣﻭ
: ﻝﺎﻗ ﻲﻨﻋﺎﻃﺃ ﻦﻣ ﻞﺧﺩ ،ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻣﻭ
ﻲﻧﺎﺼﻋ ﺪﻘﻓ .ﻰﺑﺃ ،ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﻩﺍﻭﺭ ﺢﺘﻓ
ﻱﺭﺎﺒﻟﺍ (১৩/২৪৯)
“আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ
করবে, তবে যে অস্বীকার করবে। সাহাবারা
প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করবে হে
আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, যে আমার
অনুসরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর
যে আমার অবাধ্য হল, সে অস্বীকার করল।”[২]
পরিশেষে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা এ বইটি
দ্বারা আমাকে এবং সকল মুসলমানকে উপকৃত
হওয়ার তাওফিক দান করুন। বইটি তার
সন্তুষ্টি অর্জনের অসিলা হিসেবে কবুল
করুন। সে দিনের সঞ্চয় হিসেবে রক্ষিত
রাখুন, যে দিন কোন সন্তান, কোন সম্পদ
উপকারে আসবে না, শুধু সুস্থ অন্তকরণ ছাড়া।
আমাদের সর্বশেষ ঘোষণা সকল প্রশংসা
আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি জগতের
প্রতিপালক।
নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন :
َﻥﻮُﻣﺍَّﻮَﻗ ُﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ﺎَﻤِﺑ
ُﻪَّﻠﻟﺍ َﻞَّﻀَﻓ ْﻢُﻬَﻀْﻌَﺑ ﻰَﻠَﻋ ٍﺾْﻌَﺑ ﺎَﻤِﺑَﻭ
ﺍﻮُﻘَﻔْﻧَﺃ ْﻢِﻬِﻟﺍَﻮْﻣَﺃ ْﻦِﻣ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ﴿ :৩৪﴾
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে
আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব
দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ
থেকে ব্যয় করে।”[৩]
হাফেজ ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে
বলেন, “পুরুষ নারীর তত্ত্বাবধায়ক। অর্থাৎ
সে তার গার্জিয়ান, অভিভাবক, তার উপর
কর্তৃত্বকারী ও তাকে সংশোধনকারী, যদি সে
বিপদগামী বা লাইনচ্যুত হয়।”[৪]
এ ব্যাখ্যা রাসূলের হাদিস দ্বারাও সমর্থিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, আমি যদি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে
সেজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে নারীদের
আদেশ করতাম স্বামীদের সেজদার করার জন্য।
সে আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার
জীবন, নারী তার স্বামীর সব হক আদায় করা
ব্যতীত, আল্লাহর হক আদায়কারী হিসেবে
গণ্য হবে না। এমনকি স্বামী যদি তাকে
বাচ্চা প্রসবস্থান থেকে তলব করে, সে তাকে
নিষেধ করবে না।”[৫]
আল্লাহ তা’আলা বলেন :
ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺐﻴﻐﻠﻟ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
“সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা
লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারীনী ঐ
বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন।”[৬]
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এ আয়াতের তাফসিরে
বলেন, ‘সুতরাং নেককার নারী সে, যে
আনুগত্যশীল। অর্থাৎ যে নারী সর্বদা
স্বামীর আনুগত্য করে… নারীর জন্য আল্লাহ
এবং তার রাসূলের হকের পর স্বামীর হকের
মত অবশ্য কর্তব্য কোন হক নেই।'[৭]
হে নারীগণ, তোমরা এর প্রতি সজাগ দৃষ্টি
রাখ। বিশেষ করে সে সকল নারী, যারা
সীমালঙ্ঘনে অভ্যস্ত, স্বেচ্ছাচার প্রিয়,
স্বামীর অবাধ্য ও পুরুষের আকৃতি ধারণ করে।
স্বাধীনতা ও নারী অধিকারের নামে কোন
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, যখন ইচ্ছা
বাইরে যাচ্ছে আর ঘরে ফিরছে। যখন যা মন
চাচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। তারাই দুনিয়া এবং
দুনিয়ার চাকচিক্যের বিনিময়ে আখেরাত
বিক্রি করে দিয়েছে। হে বোন, সতর্ক হও,
চৈতন্যতায় ফিরে আস, তাদের পথ ও সঙ্গ
ত্যাগ করে। তোমার পশ্চাতে এমন দিন
ধাবমান যার বিভীষিকা বাচ্চাদের পৌঁছে
দিবে বার্ধক্যে।
নারীদের উপর পুরুষের কর্তৃত্বের কারণ :
পুরুষরা নারীদের অভিভাবক ও তাদের উপর
কর্তৃত্বশীল। যার মূল কারণ উভয়ের
শারীরিক গঠন, প্রাকৃতিক স্বভাব, যোগ্যতা
ও শক্তির পার্থক্য। আল্লাহ তা’আলা নারী-
পুরুষকে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য এবং ভিন্ন
ভিন্ন রূপ ও অবয়বে সৃষ্টি করেছেন।
দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ নেককার
স্ত্রী
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“পুরো দুনিয়া ভোগের সামগ্রী, আর সবচে’
উপভোগ্য সম্পদ হল নেককার নারী।”[৮]
বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“চারটি গুণ দেখে নারীদের বিবাহ করা হয়-
সম্পদ, বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য ও দীনদারি।
তবে ধার্মিকতার দিক প্রাধান্য দিয়েই তুমি
কামিয়াব হও নয়তো তোমার হাত ধুলি
ধুসরিত হবে।”[৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“চারটি বস্তু শুভ লক্ষণ। যথা :
১. নেককার নারী,
২. প্রশস্ত ঘর,
৩. সৎ প্রতিবেশী,
৪. সহজ প্রকৃতির আনুগত্যশীল-পোষ্য
বাহন।
পক্ষান্তরে অপর চারটি বস্তু কুলক্ষণা। তার
মধ্যে একজন বদকার নারী।”[১০]
এসব আয়াত ও হাদিস পুরুষদের যেমন নেককার
নারী গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে,
তেমনি উৎসাহ দেয় নারীদেরকে আদর্শ
নারীর সকল গুনাবলী অর্জনের প্রতি। যাতে
তারা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নেককার নারী
হিসেবে গণ্য হতে পারে।
প্রিয় মুসলিম বোন, তোমার সামনে সে
উদ্দেশেই নেককার নারীদের গুণাবলী পেশ করা
হচ্ছে। যা চয়ন করা হয়েছে কুরআন, হাদিস ও
পথিকৃৎ আদর্শবান নেককার আলেমদের বাণী ও
উপদেশ থেকে। তুমি এগুলো শিখার ব্রত
গ্রহণ কর। সঠিক রূপে এর অনুশীলন আরম্ভ
কর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “ইলম আসে শিক্ষার
মাধ্যমে। শিষ্টচার আসে সহনশীলতার
মাধ্যমে। যে কল্যাণ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ
তাকে সুপথ দেখান।”[১১]
নেককার নারীর গুণাবলি
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺐﻴﻐﻠﻟ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
ইবনে কাসির রহ. লিখেন,ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ
শব্দের অর্থ নেককার নারী, ইবনে আব্বাস ও
অন্যান্য মুফাসসিরের মতে ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ শব্দের
অর্থ স্বামীদের আনুগত্যশীল নারী, আল্লামা
সুদ্দি ও অন্যান্য মুফাসসির বলেন ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺐﻴﻐﻠﻟ শব্দের অর্থ স্বামীর অনুপস্থিতিতে
নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ রক্ষাকারী
নারী।”[১২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানের
রোজা রাখে, আপন লজ্জাস্থান হেফাজত করে
এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাকে বলা হবে, যে
দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।
“[১৩]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“তোমাদের সেসব স্ত্রী জান্নাতি, যারা
মমতাময়ী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, পতি-
সঙ্গ প্রিয়- যে স্বামী গোস্বা করলে সে তার
হাতে হাত রেখে বলে, আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া
পর্যন্ত, আমি দুনিয়ার কোন স্বাদ গ্রহণ
করব না।”[১৪]
সুনানে নাসায়িতে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে একদা জিজ্ঞাসা করা হল, হে
আল্লাহর রাসূল, কোন নারী সব চেয়ে ভাল?
তিনি বললেন, “যে নারী স্বামীকে আনন্দিত
করে, যখন স্বামী তার দিকে দৃষ্টি দেয়। যে
নারী স্বামীর আনুগত্য করে, যখন স্বামী
তাকে নির্দেশ দেয়, যে নারী স্বামীর সম্পদ
ও নিজ নফসের ব্যাপারে, এমন কোনো কর্মে
লিপ্ত হয় না, যা স্বামীর অপছন্দ।”[১৫]
হে মুসলিম নারী, নিজকে একবার পরখ কর,
ভেবে দেখ এর সাথে তোমার মিল আছে কতটুকু।
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার পথ অনুসরণ কর।
দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের শপথ
গ্রহণ কর। নিজ স্বামী ও সন্তানের
ব্যাপারে যত্নশীল হও।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জনৈক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার
কি স্বামী আছে? সে বলল হ্যাঁ, রাসূল বললেন,
তুমি তার কাছে কেমন? সে বলল, আমি তার
সন্তুষ্টি অর্জনে কোন ত্রুটি করি না, তবে
আমার সাধ্যের বাইরে হলে ভিন্ন কথা। রাসূল
বললেন, লক্ষ্য রেখ, সে-ই তোমার জান্নাত বা
জাহান্নাম।”[১৬]
উপরের আলোচনার আলোকে নেককার নারীর
গুণাবলি :
১. নেককার : ভাল কাজ সম্পাদনকারী ও নিজ
রবের হক আদায়কারী নারী।
২. আনুগত্যশীল : বৈধ কাজে স্বামীর
আনুগত্যশীল নারী।
৩. সতী : নিজ নফসের হেফাজতকারী নারী,
বিশেষ করে স্বামীর অবর্তমানে।
৪. হেফাজতকারী : স্বামীর সম্পদ ও নিজ
সন্তান হেফাজতকারী নারী।
৫. আগ্রহী : স্বামীর পছন্দের পোশাক ও সাজ
গ্রহণে আগ্রহী নারী।
৬. সচেষ্ট : স্বামীর গোস্বা নিবারণে
সচেষ্ট নারী। কারণ হাদিসে এসেছে, স্বামী
নারীর জান্নাত বা জাহান্নাম।
৭. সচেতন : স্বামীর চাহিদার প্রতি সচেতন
নারী। স্বামীর বাসনা পূর্ণকারী।
যে নারীর মধ্যে এসব গুণ বিদ্যমান, সে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ভাষ্য মতে জান্নাতী। তিনি
বলেছেন, “যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,
রমজানের রোজা রাখে, নিজ সতীত্ব হেফাজত
করে ও স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে,
যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।
“[১৭]
আনুগত্যপরায়ন নেককার নারীর উদাহরণ
শাবি বর্ণনা করেন, একদিন আমাকে শুরাই
বলেন, “শাবি, তুমি তামিম বংশের মেয়েদের
বিয়ে কর। তামিম বংশের মেয়েরা খুব
বুদ্ধিমতী। আমি বললাম, আপনি কীভাবে
জানেন তারা বুদ্ধিমতী? তিনি বললেন, আমি
কোনো জানাজা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম, পথের
পাশেই ছিল তাদের কারো বাড়ি। লক্ষ্য
করলাম, জনৈক বৃদ্ধ মহিলা একটি ঘরের
দরজায় বসে আছে, তার পাশেই রয়েছে সুন্দরী
এক যুবতী। মনে হল, এমন রূপসী মেয়ে আমি
আর কখনো দেখিনি। আমাকে দেখে মেয়েটি
কেটে পড়ল। আমি পানি চাইলাম, অথচ আমার
তৃষ্ণা ছিল না। সে বলল, তুমি কেমন পানি
পছন্দ কর, আমি বললাম যা উপস্থিত আছে।
মহিলা মেয়েকে ডেকে বলল, দুধ নিয়ে আস, মনে
হচ্ছে সে বহিরাগত। আমি বললাম, এ মেয়ে
কে? সে বলল, জারিরের মেয়ে জয়নব। হানজালা
বংশের ও। বললাম, বিবাহিতা না
অবিবাহিতা? সে বলল, না, অবিবাহিতা। আমি
বললাম, আমার কাছে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। সে
বলল, তুমি যদি তার কুফু হও, দিতে পারি।
আমি বাড়িতে পৌঁছে দুপুরে সামান্য বিশ্রাম
নিতে শোবার ঘরে গেলাম, কোনো মতে চোখে
ঘুম ধরল না। জোহর নামাজ পড়লাম। অতঃপর
আমার গণ্যমান্য কয়েকজন বন্ধু, যেমন-
আলকামা, আসওয়াদ, মুসাইয়্যেব এবং মুসা ইবনে
আরফাতাকে সাথে করে মেয়ের চাচার বাড়িতে
গেলাম। সে আমাদের সাদরে গ্রহণ করল।
অতঃপর বলল, আবু উমাইয়্যা, কি উদ্দেশ্যে
আসা? আমি বললাম, আপনার ভাতিজি জয়নবের
উদ্দেশ্যে। সে বলল, তোমার ব্যাপারে তার
কোন আগ্রহ নেই! অতঃপর সে আমার কাছে
তাকে বিয়ে দিল। মেয়েটি আমার জালে আবদ্ধ
হয়ে খুবই লজ্জা বোধ করল। আমি বললাম,
আমি তামিম বংশের নারীদের কী সর্বনাশ
করেছি? তারা কেন আমার উপর অসন্তুষ্ট?
পরক্ষণই তাদের কঠোর স্বভাবের কথা আমার
মনে পড়ল। ভাবলাম, তালাক দিয়ে দেব।
পুনরায় ভাবলাম, না, আমিই তাকে আপন করে
নিব। যদি আমার মনপুত হয়, ভাল, অন্যথায়
তালাকই দিয়ে দেব। শাবি, সে রাতের
মুহূর্তগুলো এতো আনন্দের ছিল, যা ভোগ না
করলে অনুধাবন করার জো নেই। খুবই চমৎকার
ছিল সে সময়টা, যখন তামিম বংশের মেয়েরা
তাকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমার মনে
পড়ল, রাসূলের সুন্নতের কথা। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“স্ত্রী প্রথম ঘরে প্রবেশ করলে স্বামীর
কর্তব্য, দু’রাকাত নামাজ পড়া, স্ত্রীর মধ্যে
সুপ্ত মঙ্গল কামনা করা এবং তার মধ্যে লুকিত
অমঙ্গল থেকে পানাহ চাওয়া।” আমি নামাজ
শেষে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমার সাথে
নামাজ পড়ছে। যখন নামাজ শেষ করলাম,
মেয়েরা আমার কাছে উপস্থিত হল। আমার
কাপড় পালটে সুগন্ধি মাখা কম্বল আমার উপর
টেনে দিল। যখন সবাই চলে গেল, আমি তার
নিকটবর্তী হলাম ও তার শরীরের এক পাশে
হাত বাড়ালাম। সে বলল, আবু উমাইয়্যা, রাখ।
অতঃপর বলল,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ﻭ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃ
ﻲﻠﺻﺃﻭ ﻰﻠﻋ ﺪﻤﺤﻣ ﻪﻟﺁﻭ …
“আমি একজন অভিজ্ঞতা শূন্য অপরিচিত
নারী। তোমার পছন্দ অপছন্দ আর স্বভাব
রীতির ব্যাপারে কিছুই জানি না আমি। আরো
বলল, তোমার বংশীয় একজন নারী তোমার
বিবাহে আবদ্ধ ছিল, আমার বংশেও সে রূপ
বিবাহিতা নারী বিদ্যমান আছে, কিন্তু
আল্লাহর সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত। তুমি আমার
মালিক হয়েছ, এখন আল্লাহর নির্দেশ
মোতাবেক আমার সাথে ব্যবহার কর। হয়তো
ভালভাবে রাখ, নায়তো সুন্দরভাবে আমাকে
বিদায় দাও। এটাই আমার কথা, আল্লাহর
নিকট তোমার ও আমার জন্য মাগফিরাত
কামনা করছি।”
শুরাই বলল, শাবি, সে মুহূর্তেও আমি মেয়েটির
কারণে খুতবা দিতে বাধ্য হয়েছি। অতঃপর
আমি বললাম,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃﻭ
ﻲﻠﺻﺃﻭ ﻰﻠﻋ ﻲﺒﻨﻟﺍ ،ﻢﻠﺳﺃﻭ ﻪﻟﺁﻭ
ﺪﻌﺑﻭ…
তুমি এমন কিছু কথা বলেছ, যদি তার উপর
প্রতিষ্ঠিত থাক, তোমার কপাল ভাল। আর
যদি পরিত্যাগ কর, তোমার কপাল মন্দ।
আমার পছন্দ… আমার অপছন্দ… আমরা দু’জনে
একজন। আমার মধ্যে ভাল দেখলে প্রচার
করবে, আর মন্দ কিছু দৃষ্টিগোচর হলে গোপন
রাখবে।
সে আরো কিছু কথা বলেছে, যা আমি ভুলে
গেছি। সে বলেছে, আমার আত্মীয় স্বজনের
আসা-যাওয়া তুমি কোন দৃষ্টিতে দেখ? আমি
বললাম, ঘনঘন আসা-যাওয়ার মাধ্যমে বিরক্ত
করা পছন্দ করি না। সে বলল, তুমি পাড়া-
প্রতিবেশীর মধ্যে যার ব্যাপারে অনুমতি
দেবে, তাকে আমি ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি
দেব। যার ব্যাপারে নিষেধ করবে, তাকে আমি
অনুমতি দেব না। আমি বললাম, এরা ভাল, ওরা
ভাল না।
শুরাই বলল, শাবি, আমার জীবনের সব চেয়ে
আনন্দদায়ক অধ্যায় হচ্ছে, সে রাতের
মুহূর্তগুলো। পূর্ণ একটি বছর গত হল, আমি
তার মধ্যে আপত্তিকর কিছু দেখিনি।
একদিনের ঘটনা, ‘দারুল কাজা’ থেকে বাড়ি
ফিরে দেখি, ঘরের ভেতর একজন মহিলা তাকে
উপদেশ দিচ্ছে; আদেশ দিচ্ছে আর নিষেধ
করছে। আমি বললাম সে কে? বলল, তোমার
শ্বশুর বাড়ির অমুক বৃদ্ধ। আমার অন্তরের
সন্দেহ দূর হল। আমি বসার পর, মহিলা আমার
সামনে এসে হাজির হল। বলল, আসসালামু
আলাইকুম, আবু উমাইয়্যা। আমি বললাম, ওয়া
লাইকুমুসসালাম, আপনি কে? বলল, আমি অমুক;
তোমার শ্বশুর বাড়ির লোক। বললাম, আল্লাহ
তোমাকে কবুল করুন। সে বলল, তোমার স্ত্রী
কেমন পেয়েছ? বললাম, খুব সুন্দর। বলল, আবু
উমাইয়্যা, নারীরা দু’সময় অহংকারের শিকার
হয়। পুত্র সন্তান প্রসব করলে আর স্বামীর
কাছে খুব প্রিয় হলে। কোন ব্যাপারে তোমার
সন্দেহ হলে লাঠি দিয়ে সোজা করে দেবে। মনে
রাখবে, পুরুষের ঘরে আহ্লাদি নারীর ন্যায়
খারাপ আর কোন বস্তু নেই। বললাম, তুমি
তাকে সুন্দর আদব শিক্ষা দিয়েছ, ভাল
জিনিসের অভ্যাস গড়ে দিয়েছ তার মধ্যে। সে
বলল, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আসা-যাওয়া
তোমার কেমন লাগে? বললাম, যখন ইচ্ছে তারা
আসতে পারে। শুরাই বলল, অতঃপর সে মহিলা
প্রতি বছর একবার করে আসত আর আমাকে
উপদেশ দিয়ে যেত। সে মেয়েটি বিশ বছর
আমার সংসার করেছে, একবার ব্যতীত কখনো
তিরস্কার করার প্রয়োজন হয়নি। তবে ভুল
সেবার আমারই ছিল।
ঘটনাটি এমন, ফজরের দু-রাকাত সুন্নত পড়ে
আমি ঘরে বসে আছি, মুয়াজ্জিন একামত দিতে
শুরু করল। আমি তখন গ্রামের মসজিদের
ইমাম। দেখলাম, একটা বিচ্ছু হাঁটাচলা করছে,
আমি একটা পাত্র উঠিয়ে তার উপর রেখে
দিলাম। বললাম, জয়নাব, আমার আসা পর্যন্ত
তুমি নড়াচড়া করবে না। শাবি, তুমি যদি সে
মুহূর্তটা দেখতে! নামাজ শেষে ঘরে ফিরে
দেখি, বিচ্ছু সেখান থেকে বের হয়ে তাকে দংশন
করেছে। আমি তৎক্ষণাৎ লবণ ও সাক্ত তলব
করে, তার আঙুলের উপর মালিশ করলাম।
সূরায়ে ফাতেহা, সূরায়ে নাস ও সূরায়ে ফালাক
পড়ে তার উপর দম করলাম।”[১৮]
দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য
১. স্বামীর অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“তিনজন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার উপরে
উঠে না।
(ক). পলাতক গোলামের নামাজ, যতক্ষণ না সে
মনিবের নিকট ফিরে আসে।
(খ). সে নারীর নামাজ, যে নিজ স্বামীকে
রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে।
(গ). সে আমিরের নামাজ, যার উপর তার
অধীনরা অসন্তুষ্ট।”[১৯]
২. স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
ইমাম আহমদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা
করেন,
“দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়,
জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে নারীকে
লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না, আল্লাহ
তোমার সর্বনাশ করুন। সে তো তোমার কাছে
ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই
তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”[২০]
৩. স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“আল্লাহ তা’আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি
দেবেন না, যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার
করে না, অথচ সে স্বামী ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ
নয়।”[২১]
ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আমি জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু
আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন
দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী
দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন?
তিনি বললেন, তাদের না শুকরির কারণে।
জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর না
শুকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর না
শুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।
তুমি যদি তাদের কারো উপর যুগ-যুগ ধরে
ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন তোমার কাছে
তার বাসনা পূণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত
তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলাম না।”[২২]
৪. কারণ ছাড়া তালাক তলব না করা।
ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ প্রমুখগণ সওবান
রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
“যে নারী কোন কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে
তালাক তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ
পর্যন্ত হারাম।”
৫. অবৈধ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য না করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য করা
যাবে না।”[২৩]
এখানে নারীদের শয়তানের একটি ধোঁকা থেকে
সতর্ক করছি, দোয়া করি আল্লাহ তাদের সুপথ
দান করুন। কারণ দেখা যায় স্বামী যখন তাকে
কোন জিনিসের হুকুম করে, সে এ হাদিসের
দোহাই দিয়ে বলে এটা হারাম, এটা নাজায়েজ,
এটা জরুরি নয়। উদ্দেশ্য স্বামীর নির্দেশ
উপেক্ষা করা। আমি তাদেরকে আল্লাহর
নিম্নোক্ত বাণীটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি,
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে,
কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো
দেখবেন।”[২৪]
হাসান বসরি রহ. বলেন, “হালাল ও হারামের
ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা
বলা নিরেট কুফরি।”
৬. স্বামীর বর্তমানে তার অনুমতি ব্যতীত
রোজা না রাখা।
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “কোন নারী স্বামীর উপস্থিতিতে
তার অনুমতি ব্যতীত রোজা রাখবে না।”[২৫]
যেহেতু স্ত্রীর রোজার কারণে স্বামী নিজ
প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে, যা
কখনো গুনার কারণ হতে পারে। এখানে রোজা
দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই নফল রোজা উদ্দেশ্য।
কারণ ফরজ রোজা আল্লাহর অধিকার,
আল্লাহর অধিকার স্বামীর অধিকারের চেয়ে
বড়।
৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের
বিছানায় ডাকে, আর স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না
দেয়, এভাবেই স্বামী রাত যাপন করে, সে
স্ত্রীর উপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত
অভিসম্পাত করে।”[২৬]
৮. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা
প্রকাশ না করা :
আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“কিছু পুরুষ আছে যারা নিজ স্ত্রীর সাথে কৃত
আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কিছু নারীও
আছে যারা আপন স্বামীর গোপন ব্যাপারগুলো
প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে সবাই চুপ
হয়ে গেল, কেউ কোন শব্দ করল না। আমি
বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-
পুরুষেরা এমন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
এমন করো না। এটা তো শয়তানের মতো যে
রাস্তার মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল,
আর অমনি তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন
তাদের দিকে তাকিয়ে আছে!”[২৭]
৯. স্বামীর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও বিবস্ত্র
না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
যে নারী স্বামীর ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও
বিবস্ত্র হল, আল্লাহ তার গোপনীয়তা নষ্ট
করে দেবেন।”[২৮]
১০. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার
ঘরে ঢুকতে না দেয়া।
বুখারিতে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“নারী তার স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমিত
ছাড়া রোজা রাখবে না এবং তার অনুমতি ছাড়া
তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।”[২৯]
১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না
হওয়া।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা ঘরে অবস্থান
কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন,
“তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন প্রয়োজন
ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।”[৩০] নারীর
জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব, তেমন
ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি
ওয়াজিব। স্বামীর খেদমতের উদাহরণ:
মুসলিম বোন! স্বামীর খেদমতের ব্যাপারে
একজন সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার
উল্লেখ যথেষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। তারা
কীভাবে স্বামীর খেদমত করেছেন, স্বামীর
কাজে সহযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছেন-
ইত্যাদি বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ
উপস্থাপনার পরিবর্তে একটি উদাহরণই
যথেষ্ট হবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আসমা বিনতে আবু বকর থেকে সহিহ মুসলিমে
বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের আমাকে যখন
বিয়ে করে, দুনিয়াতে তখন তার ব্যবহারের
ঘোড়া ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর কিছু ছিল
না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার ঘাস
সংগ্রহ করতাম, ঘোড়া মাঠে চরাতাম, পানি
পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম,
পানি পান করাতাম, পানির বালতিতে দানা
ভিজাতাম। তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম
দিতাম। আমি ভাল করে রুটি বানাতে জানতাম
না, আনসারদের কিছু মেয়েরা আমাকে এ জন্য
সাহায্য করত। তারা আমার প্রকৃত বান্ধবী
ছিল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দান করা জুবায়েরের
জমি থেকে মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায়
এক মাইল দূরত্বে ছিল।” [৩১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
যদি নারীরা পুরুষের অধিকার সম্পর্কে
জানত, দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সময় হলে,
তাদের খানা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত
না।”[৩২]
বিয়ের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উম্মে
আকেলার উপদেশ: আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি
বড় হয়েছ, যারা তোমার আপন জন ছিল, তাদের
ছেড়ে একজন অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ,
যার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জান
না। তুমি যদি তার দাসী হতে পার, সে তোমার
দাস হবে। আর দশটি বিষয়ের প্রতি খুব নজর
রাখবে।
১-২. অল্পতে তুষ্টি থাকবে। তার তার
অনুসরণ করবে ও তার সাথে বিনয়ী থাকবে।
৩-৪. তার চোখ ও নাকের আবেদন পূর্ণ করবে।
তার অপছন্দ হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয়
গন্ধ শরীরে রাখবে না।
৫-৬. তার ঘুম ও খাবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি
রাখবে। মনে রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার
উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার কারণে
বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়।
৭-৮. তার সম্পদ হেফাজত করবে, তার সন্তান
ও বৃদ্ধ আত্মীয়দের সেবা করবে। মনে রাখবে,
সব কিছুর মূল হচ্ছে সম্পদের সঠিক ব্যবহার,
সন্তানদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।
পুরুষদের উদ্দেশে দুটি কথা
উপরের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ
তাআলার কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের আলোকে
মুসলমান বোনদের জন্য সঠিক দিক
নির্দেশনা প্রদান করার চেষ্টা করেছি
মাত্র। তবে এর অর্থ এ নয় যে, কোন স্ত্রী
এ সবগুণের বিপরীত করলে, তাকে শান্তি
দেওয়া স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“কোন মোমিন ব্যক্তি কোন মোমিন নারীকে
বিবাহ বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন করবে না, তার
একটি অভ্যাস মন্দ হলে, অপর আচরণে তার
উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।”[৩৩]
তুমি যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ অথবা তার
কোন মন্দ স্বভাব প্রত্যক্ষ কর, তবে তোমার
সর্বপ্রথম দায়িত্ব তাকে উপদেশ দেয়া,
নসিহত করা, আল্লাহ এবং তার শাস্তির কথা
স্মরণ করিয়ে দেয়া। তার পরেও যদি সে
অনুগত না হয়, বদ অভ্যাস ত্যাগ না করে, তবে
প্রাথমিক পর্যায়ে তার থেকে বিছানা আলাদা
করে নাও। খবরদার! ঘর থেকে বের করবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও স্ত্রীকে
পরিত্যাগ কর না।” এতে যদি সে শুধরে যায়,
ভাল। অন্যথায় তাকে আবার নসিহত কর, তার
থেকে বিছানা আলাদা কর।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“যে নারীদের নাফরমানির আশঙ্কা কর,
তাদের উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর,
প্রহার কর, যদি তোমাদের আনুগত্য করে, তবে
অন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না।”[৩৪]
“তাদের প্রহার কর” এর ব্যাখ্যায় ইবনে
কাসির রহ. বলেন, যদি তাদের উপদেশ দেওয়া
ও তাদের থেকে বিছানা আলাদা করার পরও
তারা নিজ অবস্থান থেকে সরে না আসে, তখন
তোমাদের অধিকার রয়েছে তাদের হালকা
প্রহার করা, যেন শরীরের কোন স্থানে দাগ
না পড়ে।
জাবের রাদিআল্লাহ আনহু থেকে সহিহ
মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে বলেছেন,
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর,
তারা তোমাদের কাছে মাঝামাঝি অবস্থানে
রয়েছে। তোমরা তাদের মালিক নও, আবার
তারা তোমাদের থেকে মুক্তও নয়। তাদের
কর্তব্য, তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে
জায়গা না দেয়া, যাদের তোমরা অপছন্দ কর।
যদি এর বিপরীত করে, এমনভাবে তাদের
প্রহার কর, যাতে শরীরের কোন স্থানে দাগ
না পড়ে। তোমাদের কর্তব্য সাধ্য মোতাবেক
তাদের ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করা।”
প্রহারের সংজ্ঞায় ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য
মুফাসসির দাগ বিহীন প্রহার বলেছেন।
হাসান বসরিও তাই বলেছেন। অর্থাৎ যে
প্রহারের কারণে শরীরে দাগ পড়ে না।”[৩৫]
চেহারাতে প্রহার করবে না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
চেহারায় আঘাত করবে না।
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার
স্বামী যেমন কামনা করে, স্ত্রী তার সব
দায়িত্ব পালন করবে, তার সব হক আদায় করবে,
তদ্রুপ স্ত্রীও কামনা করে। তাই স্বামীর
কর্তব্য স্ত্রীর সব হক আদায় করা, তাকে কষ্ট
না দেয়া, তার অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন
আচরণ থেকে বিরত থাকা।
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত,
হাকিম বিন মুয়াবিয়া তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন, আমি বললাম, “আল্লাহর রাসূল, আমাদের
উপর স্ত্রীদের কী কী অধিকার রয়েছে?
তিনি বললেন, তুমি যখন খাবে, তাকেও খেতে
দেবে। যখন তুমি পরিধান করবে, তাকেও
পরিধান করতে দেবে। চেহারায় প্রহার করবে
না। নিজ ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও তার
বিছানা আলাদা করে দেবে না।” অন্য বর্ণনায়
আছে, “তার শ্রী বিনষ্ট করিও না।”[৩৬]
বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসের
কিতাবে
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “হে আব্দুল্লাহ, আমি জানতে পারলাম,
তুমি দিনে রোজা রাখ, রাতে নামাজ পড়, এ
খবর কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর
রাসূল। তিনি বলেন, এমন কর না। রোজা
রাখ, রোজা ভাঙ্গো। নামাজ পড়, ঘুমাও। কারণ
তোমার উপর শরীরের হক রয়েছে, চোখের হক
রয়েছে, স্ত্রীরও হক রয়েছে।”[৩৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরো বলেছেন,
যার দু’জন স্ত্রী রয়েছে, আর সে একজনের
প্রতি বেশি ঝুঁকে গেল, কিয়ামতের দিন সে
একপাশে কাত অবস্থায় উপস্থিত হবে।”[৩৮]
সম্মানিত পাঠক! আমাদের আলোচনা সংক্ষেপ
হলেও তার আবেদন কিন্তু ব্যাপক। এখন আমরা
আল্লাহর দরবারে তার সুন্দর সুন্দর নাম,
মহিমান্বিত গুণসমূহের ওসিলা দিয়ে
প্রার্থনা করি, তিনি আমাকে এবং সমস্ত
মুসলমান ভাই-বোনকে এ কিতাব দ্বারা উপকৃত
হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমরা এমন না
হয়ে যাই, যারা নিজ দায়িত্ব আদায় না করে,
স্ত্রীর হক উশুল করতে চায়। আমাদের
উদ্দেশ্য কারো অনিয়মকে সমর্থন না করা
এবং এক পক্ষের অপরাধের ফলে অপর পক্ষের
অপরাধকে বৈধতা না দেয়া। বরং আমাদের
উদ্দেশ্য প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বের
ব্যাপারে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির জন্য
সচেতন করা।
পরিসমাপ্তি
পরিশেষে স্বামীদের উদ্দেশে বলি, আপনারা
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন, তাদের
কল্যাণকামী হোন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও। কারণ,
তাদের পাঁজরের হাড্ডি দ্বারা সৃষ্টি করা
হয়েছে, পাঁজরের হাড্ডির ভেতর উপরেরটি
সবচে’ বেশি বাঁকা। (যার মাধ্যমে তাদের
সৃষ্টি করা হয়েছে।) যদি সোজা করতে চাও,
ভেঙে ফেলবে। আর রেখে দিলেও তার বক্রতা দূর
হবে না, তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও।
“[৩৯]
নারীদের সাথে কল্যাণ কামনার অর্থ, তাদের
সাথে উত্তম ব্যবহার করা, ইসলাম শিক্ষা
দেয়া, এ জন্য ধৈর্য ধারণ করা; আল্লাহ এবং
তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া,
হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকার উপদেশ
দেয়া। আশা করি, এ পদ্ধতির ফলে তাদের
জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হবে। দরুদ ও
সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরের উপর। আমাদের
সর্বশেষ কথা, “আল্লাহর জন্য সমস্ত
প্রশংসা। তিনি দু-জাহানের পালনকর্তা।”
মুসলিম নারীর পর্দার জরুরি শর্তসমূহ
১. সমস্ত শরীর ঢাকা :
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ْﻞُﻗَﻭ ِﺕﺎَﻨِﻣْﺆُﻤْﻠِﻟ َﻦْﻀُﻀْﻐَﻳ َّﻦِﻫِﺭﺎَﺼْﺑَﺃ ْﻦِﻣ
َّﻦُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ َﻦْﻈَﻔْﺤَﻳَﻭ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ
ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻣ َﺮَﻬَﻇ َّﻦِﻫِﺮُﻤُﺨِﺑ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻴْﻟَﻭ ﺎَﻬْﻨِﻣ
َّﻦِﻬِﺑﻮُﻴُﺟ ﻰَﻠَﻋ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَّﻟِﺇ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺒِﻟ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺋﺎَﺑَﺁ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﺑَﺁ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﺋﺎَﻨْﺑَﺃ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﻨْﺑَﺃ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ﻲِﻨَﺑ
َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺗﺍَﻮَﺧَﺃ ﻲِﻨَﺑ ْﻭَﺃ
َّﻦِﻬِﺋﺎَﺴِﻧ ْﻭَﺃ ﺎَﻣ َّﻦُﻬُﻧﺎَﻤْﻳَﺃ ْﺖَﻜَﻠَﻣ ِﻭَﺃ
َﻦﻴِﻌِﺑﺎَّﺘﻟﺍ ِﺮْﻴَﻏ ِﺔَﺑْﺭِﺈْﻟﺍ ﻲِﻟﻭُﺃ َﻦِﻣ
ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ِﻭَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ِﻞْﻔِّﻄﻟﺍ ﺍﻭُﺮَﻬْﻈَﻳ ْﻢَﻟ
ِﺕﺍَﺭْﻮَﻋ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻳ ﺎَﻟَﻭ
َﻢَﻠْﻌُﻴِﻟ َّﻦِﻬِﻠُﺟْﺭَﺄِﺑ َﻦﻴِﻔْﺨُﻳ ﺎَﻣ ْﻦِﻣ
ﺍﻮُﺑﻮُﺗَﻭ َّﻦِﻬِﺘَﻨﻳِﺯ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ
ﺎَﻬُّﻳَﺃ َﻥﻮُﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َﻥﻮُﺤِﻠْﻔُﺗ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ﴿৩১
﴾( ﺭﻮﻨﻟﺍ-৩১)
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের
হেফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায়
তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে
না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে
ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী,
পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে,
ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন
নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে,
অধীন যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের
গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো
কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর
তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ
করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে
মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট
তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
“[৪০]
অন্যত্র বলেন,
ﺎَﻳ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ْﻞُﻗ َﻚِﺗﺎَﻨَﺑَﻭ َﻚِﺟﺍَﻭْﺯَﺄِﻟ
ِﺀﺎَﺴِﻧَﻭ َﻦﻴِﻧْﺪُﻳ َﻦﻴِﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َّﻦِﻬْﻴَﻠَﻋ ْﻦِﻣ
َّﻦِﻬِﺒﻴِﺑﺎَﻠَﺟ َﻚِﻟَﺫ ﻰَﻧْﺩَﺃ ْﻥَﺃ َﻦْﻓَﺮْﻌُﻳ ﺎَﻠَﻓ
َﻥﺎَﻛَﻭ َﻦْﻳَﺫْﺆُﻳ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻤﻴِﺣَﺭ ﺍًﺭﻮُﻔَﻏ ﴿
৫৯﴾
“হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে,
কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা
যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের
উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে
এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে
তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ
অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[৪১]
২. কারুকার্য ও নকশা বিহীন পর্দা ব্যবহার
করা :
তার প্রমাণ পূর্বে বর্ণিত সূরা নুরের আয়াত-
ﺎَﻟَﻭ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ “তারা স্বীয় রূপ-
লাবণ্য ও সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।” এ
আয়াতের ভেতর কারুকার্য খচিত পর্দাও
অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ তাআলা যে
সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বারণ করেছেন, সে
সৌন্দর্যকে আরেকটি সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত
করাও নিষেধের আওতায় আসে। তদ্রুপ সে সকল
নকশাও নিষিদ্ধ, যা পর্দার বিভিন্ন
জায়গায় অঙ্কিত থাকে বা নারীরা মাথার উপর
আলাদাভাবে বা শরীরের কোন জায়গায় যুক্ত
করে রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
َﻥْﺮَﻗَﻭ َّﻦُﻜِﺗﻮُﻴُﺑ ﻲِﻓ ﺎَﻟَﻭ َﺝُّﺮَﺒَﺗ َﻦْﺟَّﺮَﺒَﺗ
ِﺔَّﻴِﻠِﻫﺎَﺠْﻟﺍ ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ ﴿৩৩﴾ (
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ-৩৩)
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং
প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন
করো না।”[৪২]
ﺝﺮﺒﺘﻟﺍ অর্থ: নারীর এমন সৌন্দর্য ও
রূপ-লাবণ্য প্রকাশ করা, যা পুরুষের যৌন
উত্তেজনা ও সুড়সুড়ি সৃষ্টি করে। এ রূপ
অশ্লীলতা প্রদর্শন করা কবিরা গুনা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে
জিজ্ঞাসা কর না। (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস
হবে।) যথা :
ক. যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত থেকে বের
হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী দেশ
পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল,
আর সে এ অবস্থায় মারা গেল।
খ. যে গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে
পলায়ন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল।
গ. যে নারী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে
স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হল।”[৪৩]
৩. পর্দা সুগন্ধি বিহীন হওয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার
দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সুগন্ধি ব্যবহার
করে নারীদের বাইরে বের হওয়া হারাম।
সংক্ষিপ্ততার জন্য আমরা এখানে উদাহরণ
স্বরূপ, রাসূলের একটি হাদিস উল্লেখ করছি,
তিনি বলেন,
“যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের
হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম
করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার জন্য, সে
নারী ব্যভিচারিণী।”[৪৪]
৪. শীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেসে উঠে এমন
পাতলা ও সংকীর্ণ পর্দা না হওয়া।
ইমাম আহমদ রহ. উসামা বিন জায়েদের সূত্রে
বর্ণনা করেন,
“দিহইয়া কালবির উপহার দেয়া, ঘন বুননের
একটি কিবতি কাপড় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পরিধান করতে
দেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়ে দেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একদিন আমাকে বলেন, কি ব্যাপার, কাপড়
পরিধান কর না? আমি বললাম, আল্লাহর
রাসূল, আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি।
তিনি বললেন, তাকে বল, এর নীচে যেন সে
সেমিজ ব্যবহার করে। আমার মনে হয়, এ
কাপড় তার হাড়ের আকারও প্রকাশ করে দেবে।
“[৪৫]
৫. পর্দা শরীরের রং প্রকাশ করে দেয় এমন
পাতলা না হওয়া।
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
জাহান্নামের দু’ প্রকার লোক আমি এখনো
দেখিনি :
(ক). সে সব লোক যারা গরুর লেজের মত বেত
বহন করে চলবে, আর মানুষদের প্রহার করবে।
(খ). সে সব নারী, যারা কাপড় পরিধান করেও
বিবস্ত্র থাকবে, অন্যদের আকৃষ্ট করবে এবং
তারা নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে
ঘোড়ার ঝুলন্ত চুটির মত। তারা জান্নাতে
প্রবেশ করবে না, তার ঘ্রাণও পাবে না।
৬. নারীর পর্দা পুরুষের পোশাকের ন্যায় না
হওয়া।
ইমাম বুখারি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা
করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারী
এবং নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষের
উপর অভিসম্পাত করেছেন।”[৪৬]
৭. সুখ্যাতির জন্য পরিধান করা হয় বা
মানুষ যার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে, পর্দা
এমন কাপড়ের না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন
“যে ব্যক্তি সুনাম সুখ্যাতির পোশাক
পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন
অনুরূপ কাপড় পরিধান করাবেন, অতঃপর
জাহান্নামের লেলিহান আগুনে তাকে দগ্ধ
করবেন।”
সুনাম সুখ্যাতির কাপড়, অর্থাৎ যে কাপড়
পরিধান করার দ্বারা মানুষের মাঝে
প্রসিদ্ধি লাভ উদ্দেশ্য হয়। যেমন উৎকৃষ্ট
ও দামি কাপড়। যা সাধারণত দুনিয়ার সুখ-
ভোগ ও চাকচিক্যে গর্বিত-অহংকারী
ব্যক্তিরাই পরিধান করে। এ হুকুম নারী-
পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে কেউ এ
ধরনের কাপড় অসৎ উদ্দেশ্যে পরিধান করবে,
কঠোর হুমকির সম্মুখীন হবে, যদি তওবা না
করে মারা যায়।
৮. পর্দা বিজাতীয়দের পোশাক সাদৃশ্য না
হওয়া।
ইবনে ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আবু দাউদ
ও অন্যান্য মুহাদ্দিসিনগণ বর্ণনা করেন,
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল
রাখল, সে ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে
গণ্য।” এরশাদ হচ্ছে,
ْﻢَﻟَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ ِﻥْﺄَﻳ ﺍﻮُﻨَﻣَﺁ ْﻥَﺃ َﻊَﺸْﺨَﺗ
ْﻢُﻬُﺑﻮُﻠُﻗ ِﺮْﻛِﺬِﻟ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣَﻭ َﻝَﺰَﻧ َﻦِﻣ ِّﻖَﺤْﻟﺍ
َﻦﻳِﺬَّﻟﺎَﻛ ﺍﻮُﻧﻮُﻜَﻳ ﺎَﻟَﻭ َﺏﺎَﺘِﻜْﻟﺍ ﺍﻮُﺗﻭُﺃ
ْﻦِﻣ ُﻞْﺒَﻗ ﴿১৬﴾ ( ﺪﻳﺪﺤﻟﺍ:১৬)
“যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর
স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, তার
কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর
তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে
ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল।”[৪৭]
ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন,
“এ জন্য আল্লাহ তাআলা মোমিনদেরকে
মৌলিক কিংবা আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে
তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন।
ইবনে তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন। অর্থাৎ
অত্র আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও
সব ক্ষেত্রে সমান, কাফেরদের অনুসরণ করা
যাবে না।”[৪৮]
সমাপ্ত
_________________________________________
_________________________________________
_____
[১] আহযাব:৩৬
[২] বুখারী
[৩] নিসা : ৩৪
[৪] ইবনে কাসির : ১/৭২১
[৫] সহিহ আল-জামে আল-সাগির : ৫২৯৫
[৬] নিসা : ৩৪
[৭] ফতওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ : ৩২/২৭৫
[৮] মুসলিম
[৯] মুসলিম : ১০/৩০৫
[১০] হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৮৮৭
[১১] দারে কুতনি
[১২] ইবনে কাসির : ১ : ৭৪৩
[১৩] ইবনে হিব্বান, সহিহ আল-জামে : ৬৬০
[১৪] আলবানির সহিহ হাদীস সংকলন : ২৮৭
[১৫] সহিহ সুনানে নাসায়ী : ৩০৩০
[১৬] আহমাদ : ৪ : ৩৪১
[১৭] ইবনে হিব্বান, আল-জামে : ৬৬০
[১৮] ইবনে আবদে রব্বিহি আন্দালুসি রচিত :
তাবায়েউন্নিসা নামক গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
[১৯] তিরমিজি : ২৯৫
[২০] আহমদ, তিরমিজি, সহিহ আল-জামে :
৭১৯২
[২১] নাসায়ী
[২২] মুসলিম : ৬ : ৪৬৫
[২৩] আহমদ, হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৭৫২০
[২৪] জুমার : ৬০
[২৫] মুসলিম : ৭ : ১২০
[২৬] মুসলিম : ১০ : ২৫৯
[২৭] ইমাম আহমদ
[২৮] ইমাম আহমদ, সহিহ আল-জামে : ৭
[২৯] ফতাহুল বারি : ৯ : ২৯৫
[৩০] ইবনে কাসির : ৩ : ৭৬৮
[৩১] মুসলিম : ২১৮২
[৩২] তাবরানি, সহিহ আল-জামে : ৫২৫৯
[৩৩] মুসলিম : ১০:৩১২
[৩৪] নিসা : ৩৪
[৩৫] ইবনে কাসির : ১ : ৭৪৩
[৩৬] মুসনাদে আহমদ : ৫ : ৩
[৩৭] ফাতহুল বারি : ৯ : ২৯৯
[৩৮] আবু দাউদ, তিরমিজি
[৩৯] বর্ণনায় বুখারী, মুসলিম, বায়হাকি ও
আরো অনেকে
[৪০] নূর : ৩১
[৪১] আহজাব : ৫৯
[৪২] আহজাব : ৩৩
[৪৩] হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৩০৫৮
[৪৪] আহমদ, সহিহ আল-জামে : ২৭০১
[৪৫] আহমদ, বায়হাকি
[৪৬] বুখারী, ফাতহুল বারি : ১০ : ৩৩২
[৪৭] হাদিদ : ১৬
[৪৮] ইবনে কাসির : ৪ : ৪৮৪
_________________________________________
________________________________________
লেখক : সানাউল্লাহ বিন নজির আহমদ
ﻒﻴﻟﺄﺗ : ﺀﺎﻨﺛ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﺑ ﺪﻤﺣﺃ ﺮﻳﺬﻧ
সম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়ব
ﺔﻌﺟﺍﺮﻣ : ﻲﻠﻋ ﻦﺴﺣ ﺐﻴﻃ
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ,
রিয়াদ, সৌদিআরব

কিয়ামুল লাইলের সমপরিমাণ আমল

সকল প্রশংসা দু’জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ
তা’আলার জন্য এবং দরূদ ও সালাম নাযিল
হোক সর্বশেষ নবী ও রাসূল, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার
পরিবার ও সাথী এবং সকলের ওপর ।
অতঃপর,
কিয়ামুল লাইল বা রাতের সালাতের ফযিলত
আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ কোন
সন্দেহ নেই। ফরয সালাতের পর এ সালাতের
স্থান। এ সালাতের বৈশিষ্ট্য শুধু ব্যক্তির
পাপ মোচন করা নয়, বরং পাপে লিপ্ত হওয়া
থেকে হিফাযত করা। যেমন আবু উমামা বাহেলি
রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেছেন:
‏( ﻢﻜﻴﻠﻋ ﻡﺎﻴﻘﺑ ﻞﻴﻠﻟﺍ ، ﻪﻧﺈﻓ ﺏﺃﺩ
ﻦﻴﺤﻟﺎﺼﻟﺍ ﻢﻜﻠﺒﻗ ، ﺔﺑﺮﻗﻭ ﻰﻟﺇ ﻢﻜﺑﺭ
ﺓﺮﻔﻜﻣﻭ ، ﺕﺎﺌﻴﺴﻠﻟ ﺓﺎﻬﻨﻣﻭ ، ﻢﺛﻺﻟ ‏) .
“তোমরা রাতের সালাত জরুরী করে নাও, কারণ
তা নেককার লোকদের অভ্যাস, তোমাদের রবের
নৈকট্য, গুনাহের কাফফারা ও পাপ থেকে
সুরক্ষা”। [1]
পূর্বসূরিগণ বরং কয়েক বছর পূর্বে আমাদের
পূর্বপুরুষগণ কিয়ামুল লাইল বা রাতের
সালাতের ব্যাপারে শিথিলতা করতেন না,
কিন্তু বর্তমান যুগে অবস্থা পাল্টে অনেকের
রাত পরিণত হয়েছে দিনে। তাদের থেকে
বিদায় নিয়েছে রাতে আল্লাহর সাথে
মোনাজাতের স্বাদ। অনেকের শিথিলতা ফজর
সালাতের সীমা অতিক্রম করে গেছে।
তাউস ইব্ন কিসান রহ. সেহরির সময় জনৈক
ব্যক্তির সাক্ষাতে আসেন, তাকে বলা হল: সে
ঘুমে। তিনি বললেন: “আমি জানতাম না
সেহরির সময় কেউ ঘুমাতে পারে”। [2] তিনি
যদি আমাদের দেখেন, আপনার ধারণা আমাদের
সম্পর্কে তিনি কি বলবেন?
বান্দার ওপর আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে,
তিনি কতক সহজ আমল দান করেছেন, যার
সওয়াব কিয়ামুল লাইলের সমান। যার থেকে
কিয়ামুল লাইল ছুটে যায় অথবা কিয়ামুল লাইল
যার পক্ষে কষ্টকর, সে যেন কোন অবস্থায়
এসব আমল ত্যাগ না করে। এর অর্থ কিয়ামুল
লাইল ত্যাগ করা নয়, আমাদের পূর্বপুরুষগণ
এমন অর্থ বোঝেননি, বরং তারা কল্যাণের
প্রত্যেক ময়দানে অংশ গ্রহণ করতেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
কতক সাহাবিকে, যারা কিয়ামুল লাইলে অক্ষম
ছিল, কিছু সহজ আমল বাতলে দিয়েছেন যা
কিয়ামুল লাইলের সমান। এটা আমাদের
নেকির পাল্লা ভারী করার জন্য নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ
আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। আবু উমামা বাহেলি
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ﻦﻣ ﻪﻟﺎﻫ ﻞﻴﻠﻟﺍ ﻥﺃ ﻩﺪﺑﺎﻜﻳ ، ﻭﺃ ﻞﺨﺑ
ﻝﺎﻤﻟﺎﺑ ﻥﺃ ﻪﻘﻔﻨﻳ ، ﻭﺃ ﻦﺒﺟ ﻦﻋ
ﻭﺪﻌﻟﺍ ﻥﺃ ﻪﻠﺗﺎﻘﻳ ، ﺮﺜﻜﻴﻠﻓ ﻦﻣ
ﻥﺎﺤﺒﺳ ﻪﻠﻟﺍ ﻩﺪﻤﺤﺑﻭ ، ﺎﻬﻧﺈﻓ ﺐﺣﺃ
ﻰﻟﺇ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﻣ ﻞﺒﺟ ﺐﻫﺫ ﻪﻘﻔﻨﻳ ﻲﻓ
ﻞﻴﺒﺳ ﻪﻠﻟﺍ ﺰﻋ ﻞﺟﻭ ‏) .
“যে শঙ্কাবোধ করে রাত জাগতে পারবে না,
অথবা খরচ না করে সম্পদ জমা করে রাখে,
অথবা শত্রুর সাথে যুদ্ধ না করে ভীরুতা
প্রদর্শন করে, সে যেন ﻥﺎﺤﺒﺳ ﻪﻠﻟﺍ
ﻩﺪﻤﺤﺑﻭ অধিক পাঠ করে, কারণ তা আল্লাহর
রাস্তায় পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করার
চেয়ে অধিক প্রিয়”। [3]
আমি এখানে ফাযায়েলে আমল সম্পর্কে সেসব
হাদিস উল্লেখ করব, যার সওয়াব কিয়ামুল
লাইলের সমপরিমাণ। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তা
বাতলে দিয়েছেন, যেন আমরা আমাদের আমলনামা
ভারী ও সওয়াব বৃদ্ধির ব্রত গ্রহণ করি।
যেমন:
১. ফজর ও এশার সালাত জামাতের
সাথে আদায় করা।
উসমান ইব্ন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ ﻰَّﻠَﺻ َﺀﺎَﺸِﻌْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﺔَﻋﺎَﻤَﺟ َﻥﺎَﻛ
ِﻡﺎَﻴِﻘَﻛ ِﻒْﺼِﻧ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ، ْﻦَﻣَﻭ ﻰَّﻠَﺻ َﺀﺎَﺸِﻌْﻟﺍ
َﺮْﺠَﻔْﻟﺍَﻭ ﻲِﻓ ٍﺔَﻋﺎَﻤَﺟ ِﻡﺎَﻴِﻘَﻛ َﻥﺎَﻛ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ‏).
“যে এশার সালাত জামাতের সাথে আদায় করল,
সে যেন অর্ধেক রাত কিয়াম করল, আর যে
ফজর ও এশা জামাতের সাথে আদায় করল, সে
যেন পূর্ণ রাত কিয়াম করল”। [4]
এ জন্য উচিত ফরয সালাতগুলো মসজিদে
জামাতের সাথে আদায় করা। কখনো জামাত
ত্যাগ না করা, বিশেষ করে ফজর ও এশার
সালাত। এ দু’ সালাত মুনাফিকদের জন্য খুব
কষ্টকর। যদি তারা এর সওয়াব জানত হাপুড়
পেরে হলেও উপস্থিত হত, যেমন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।
তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রত্যেক সালাত
অর্ধেক রাত কিয়াম করার সমপরিমাণ।
২. যোহর সালাতের পূর্বে চার রাকাত
আদায় করা।
আবু সালেহ রহ. থেকে মুরসাল সনদে একটি
‘মরফূ’ হাদিস বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ُﻊَﺑْﺭَﺃ ٍﺕﺎَﻌَﻛَﺭ َﻞْﺒَﻗ ِﺮْﻬُّﻈﻟﺍ ِﺓَﻼَﺼِﺑ َﻦْﻟِﺪْﻌَﻳ
ِﺮَﺤَّﺴﻟﺍ ‏).
“যোহরের পূর্বে চার রাকাত সেহরির
সালাতের সমপরিমাণ”। [5]
এ চার রাকাতের আরেক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে
আসমানের দ্বারসমূহ এ জন্য উন্মুক্ত হয়। আবু
আইয়ুব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ﻊﺑﺭﺃ ﻞﺒﻗ ﺮﻬﻈﻟﺍ ﺢﺘﻔﺗ ﻦﻬﻟ ﺏﺍﻮﺑﺃ
ﺀﺎﻤﺴﻟﺍ ‏) .
“যোহরের পূর্বে চার রাকাতের জন্য আসমানের
দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করা হয়”। [6]
এ জন্য আমরা দেখি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি খুব যত্নশীল
ছিলেন, কোন কারণে ছুটে গেলে ফরযের পর
কাযা করতেন, ত্যাগ করতেন না। যেমন আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন: “যদি
তিনি যোহরের পূর্বে চার রাকাত আদায় না
করে থাকতেন, তাহলে পরে তা আদায় করতেন”।
[7]
অপর বর্ণনায় তিনি বলেছেন: “যখন
যোহরের পূর্বে তার চার রাকাত ছুটে যেত,
যোহরের পরে তা আদায় করতেন”। [8]
তাই যার চার রাকাত ছুটে যায়, অথবা
কর্মস্থলের পরিবেশের কারণে তা আদায় করা
সম্ভব না হয়, কাজ শেষে বাড়ি ফিরে তা আদায়
করা দোষের নয়।
আবু ঈসা তিরমিযি রহ. বলেছেন: এ হাদিস
প্রমাণ করে ফরযের পূর্বের সুন্নতগুলো
নিয়মিত আদায় করা বিধি সম্মত। আর
ফরযের শেষ সময় পর্যন্ত এর সময় দীর্ঘ
হয়। যদি ফরয আদায়ের সাথে এর সময় শেষ
হয়ে যেত, তবে ফরযের পর আদায় করা কাযা
হিসেবে গণ্য হত। তখন ফরয পরবর্তী
দু’রাকাত সুন্নতের পূর্বে এ চার রাকাত আদায়
করার বিধান হত, অথচ এ অধ্যায়ের অপর
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যোহর পরবর্তী
দু’রাকাত আদায় শেষে এ চার রাকাত আদায় করা
হত। [অতএব যোহরের পূর্বের চার রাকাত পরে
আদায় করা কাযা নয় বরং আদায়, এ জন্য
দু’রাকাত সুন্নতের পর তা আদায় করা বৈধ।
কাযা হলে দু’রাকাত সুন্নতের পূর্বে তা কাযা
করার বিধান থাকত।] ইরাকি রহ. এ অর্থ
উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন: শাফেয়ি
মতাবলম্বীদের নিকট এ অর্থই সঠিক।[9]
৩. সম্পূর্ণ তারাবি ইমামের সাথে
আদায় করা।
আবু যর গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে
রমযানে সিয়াম রাখলাম, সাত দিন বাকি
থাকার আগে মাসের কোথাও তিনি আমাদের
নিয়ে কিয়াম করেননি। তিনি আমাদের নিয়ে
কিয়াম করলেন যে, রাতের এক তৃতীয়াংশ
সমাপ্ত হল। ষষ্ঠ রাতে আমাদের নিয়ে
কিয়াম করেননি, যখন পঞ্চম রাত বাকি
তিনি আমাদের নিয়ে কিয়াম করলেন যে,
রাতের অর্ধেক শেষ হল। আমি বললাম: হে
আল্লাহর রাসূল যদি অবশিষ্ট রাতও আমাদের
নিয়ে কিয়াম করতেন! আবু যর বলেন: অতঃপর
তিনি বললেন: “নিশ্চয় ব্যক্তি যখন
ইমামের সাথে সালাত আদায় করে তার চলে
যাওয়ার আগ পর্যন্ত, তার জন্য পূর্ণ রাত
কিয়াম করা গণ্য করা হয়”। [10]
এটা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার জন্য
অধিকাংশ মসজিদের ইমামগণ রমযানে
মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করেন। তবুও কতক লোক এ
ফযিলতের ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করে,
অথচ এসব ফযিলতের কারণেই রমযান
অন্যান্য মাস থেকে আলাদা মর্যাদার
অধিকারী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﻡﺎَﻗ َﻥﺎَﻀَﻣَﺭ ﺎًﻧﺎَﻤﻳِﺇ ﺎًﺑﺎَﺴِﺘْﺣﺍَﻭ
َﺮِﻔُﻏ ُﻪَﻟ ﺎَﻣ َﻡَّﺪَﻘَﺗ ْﻦِﻣ ِﻪِﺒْﻧَﺫ‏)
“রমযানে যে সওয়াবের দৃঢ় বিশ্বাস ও
আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা নিয়ে কিয়াম করল,
তার পূর্বের পাপ মোচন করে দেয়া হবে”।
অনুরূপ ফযিলত লাইলাতুল কদরের জন্যও
রয়েছে, তার কিয়াম এক হাজার মাস কিয়াম
করার চেয়ে অধিক ফযিলতপূর্ণ। আল্লাহ
তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ُﺔَﻠۡﻴَﻟ ِﺭۡﺪَﻘۡﻟﭐ ٞﺮۡﻴَﺧ ۡﻦِّﻣ ِﻒۡﻟَﺃ ٖﺮۡﻬَﺷ ٣
﴾ ‏[ :ﺭﺪﻘﻟﺍ 3‏]
“লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম”।
[সূরা কাদর: (৩)]
বিস্ময় লাগে তাদের প্রতি যারা এ রাতেও
শিথিলতা করে।
৪. রাতে এক শো আয়াত পাঠ করা।
তামিমে দারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﺃَﺮَﻗ ِﺔَﺌِﻤِﺑ ٍﺔَﻳﺁ ﻲِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ َﺐِﺘُﻛ ُﻪَﻟ
ُﺕﻮُﻨُﻗ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ‏) .
“যে ব্যক্তি রাতে এক শো আয়াত পাঠ করল,
তার জন্য পূর্ণ রাতের কিয়াম লিখা হবে”।
[11]
এক শো আয়াত পাঠ করা খুব সহজ, দশ
মিনিটের বেশী সময় লাগে না। আপনার হাতে
সময় কম থাকলে উদাহরণ স্বরূপ সূরা
সাফ্ফাতের প্রথম চার পৃষ্ঠা পড়ে এ সওয়াব
অর্জন করতে পারেন, অথবা সূরা কালাম ও আল-
হাক্কাহ পাঠ করুন।
কোন কারণে যখন পড়তে না পারেন, ফজর থেকে
যোহরের আগ পর্যন্ত সময়ে পড়ে নিন। এ
নিয়ে গাফিলতি করবেন না, ইনশাআল্লাহ
কিয়ামুল লাইলের সওয়াব অর্জন হবে। ওমর
ইব্ন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﻡﺎَﻧ ِﻪِﺑْﺰِﺣ ْﻦَﻋ ْﻭَﺃ ْﻦَﻋ ٍﺀْﻲَﺷ ُﻪْﻨِﻣ ،
ُﻩَﺃَﺮَﻘَﻓ ﺎَﻤﻴِﻓ َﻦْﻴَﺑ ِﺓﻼَﺻ ِﺓﻼَﺻَﻭ ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ
ِﺮْﻬُّﻈﻟﺍ ، َﺐِﺘُﻛ ﺎَﻤَّﻧَﺄَﻛ ُﻪَﻟ ُﻩَﺃَﺮَﻗ ْﻦِﻣ
ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ‏).
“যে তার পূর্ণ ‘হিযব’ ও অথবা আংশিক
‘হিযব’ না পড়ে ঘুমিয়ে গেল, অতঃপর সে যদি
তা ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে
নেয়, তার জন্য গণ্য করা হবে যেন সে তা
রাতেই পড়েছে”। [12]
মুবারক পুরী রহ. এ হাদিস প্রসঙ্গে বলেছেন:
“এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় রাতে কুরআন
থেকে কিছু নির্ধারণ করে নেয়া জায়েয, যদি
ঘুমের জন্য অথবা কোন কারণে তা ছুটে যায়,
তাহলে তার কাযা করাও জায়েয। যে তা ফজর ও
যোহর মধ্যবর্তী সময়ে কাযা করবে, সে রাতে
আদায়কারী গণ্য হবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা থেকে ইমাম মুসলিম ও তিরমিযি
প্রমুখগণ বর্ণনা করেছেন: ঘুম বা কোন ব্যথা
যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে কিয়ামুল লাইল থেকে বিরত
রাখত, তিনি দিনে তার পরিবর্তে বারো
রাকাত সালাত আদায় করতেন”। [13]
এ হাদিস আমাদের সংবাদ দিচ্ছে যে, দিন-
রাতে কুরআনের নির্দিষ্ট তিলাওয়াত থাকা
বাঞ্ছনীয়, বিশেষ করে রাতে।
ভুললে চলবে না, আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুমানোর পূর্বে
কমপক্ষে দশ আয়াত পাঠ করার জন্য উদ্বুদ্ধ
করেছেন, যেন আমরা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত না
হই?
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ﻦﻣ ﻡﺎﻗ ﺮﺸﻌﺑ ﺕﺎﻳﺁ ﻢﻟ ﺐﺘﻜُﻳ ﻦﻣ
ﻦﻴﻠﻓﺎﻐﻟﺍ ، ﻦﻣﻭ ﻡﺎﻗ ﺔﺌﻤﺑ ﺔﻳﺁ ﺐﺘُﻛ
ﻦﻣ ﻦﻴﺘﻧﺎﻘﻟﺍ ، ﻦﻣﻭ ﻡﺎﻗ ﻒﻟﺄﺑ ﺔﻳﺁ
ﺐﺘُﻛ ﻦﻣ ﻦﻳﺮﻄﻨﻘﻤﻟﺍ ‏).
“দশ আয়াত দ্বারা যে কিয়াম করবে, তাকে
গাফেলদের মধ্যে গণ্য করা হবে না, আর যে এক
শো আয়াত দ্বারা কিয়াম করবে তাকে অনুগতদের
মধ্যে গণ্য করা হবে, আর যে এক হাজার আয়াত
দ্বারা কিয়াম করবে তাকে প্রাচূর্যের
অধিকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে”। [14]
আমরা আল্লাহর কুরআন রীতিমত তিলাওয়াত
করি! আমাদের খতমে কুরআন শুধু রমযানে
সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং পূর্ণ বছর
ব্যাপী তা হওয়া জরুরী।
প্রতি রাতে কিয়ামুল লাইলের সওয়াব হাসিল
করার জন্য এক শো আয়াত পাঠ করা, আল্লাহর
কিতাবকে আঁকড়ে থাকার এক সুন্দর আমল।
৫. রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত
তিলাওয়াত করা।
আবু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﺃَﺮَﻗ ِﻦْﻴَﺘَﻳﻵﺎِﺑ ْﻦِﻣ ِﺮِﺧﺁ ِﺓَﺭﻮُﺳ
ِﺓَﺮَﻘَﺒْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ُﻩﺎَﺘَﻔَﻛ‏) .
“যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত
তিলাওয়াত করল, তার জন্য তা যথেষ্ট হবে”।
[15]
ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এর অর্থ কেউ
বলেছেন: কিয়ামুল লাইলের পরিবর্তে যথেষ্ট
হবে। কেউ বলেছেন: শয়তানের অনিষ্ট থেকে
যথেষ্ট হবে। কেউ বলেছেন: বিপদ-মুসিবত
থেকে নিরাপত্তা হাসিল হবে। তবে সব
অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে”। [16]
ইব্ন হাজার রহ. এ অভিমত সমর্থন করে
বলেছেন: এ হিসেবে আমার বক্তব্য হচ্ছে:
ওপরের সব অর্থ নেয়া সঠিক, আল্লাহ ভালো
জানেন। প্রথম অর্থটি ইব্ন মাসউদ থেকে
আলকামা, আলকামা থেকে আসেম সনদে একটি
‘মরফূ’ হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে:
ْﻦَﻣ” ﺔَﻤِﺗﺎَﺧ َﺃَﺮَﻗ ْﺕَﺃَﺰْﺟَﺃ ﺓَﺮَﻘَﺒْﻟﺍ ُﻪْﻨَﻋ
ﻡﺎَﻴِﻗ .”ﺔَﻠْﻴَﻟ
“যে ব্যক্তি বাকারার শেষ আয়াত পড়ল,
কিয়ামুল লাইলের আমল হিসেবে তার পক্ষ
থেকে তা যথেষ্ট হবে”। [17]
সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করা খুব
সহজ, অধিকাংশ মানুষের তা মুখস্থ রয়েছে।
আল-হামদুলিল্লাহ! মুসলিমের কর্তব্য প্রতি
রাতে তা পাঠ করা। সহজ তাই এতে যথেষ্ট করে
অন্যান্য আমল ত্যাগ করা ঠিক নয়, যার
সওয়াবও কিয়ামুল লাইলের সমপরিমাণ।
কারণ মুমিনের লক্ষ্য হচ্ছে যথাসম্ভব নেকি
হাসিল করা। অনুরূপেআমাদের জানা নেই যে,
কোন্ আমল আল্লাহর গ্রহণযোগ্যতা লাভে
ধন্য হয়।
আব্দুল্লাহ ইব্ন উমাইয়ের রহ. বলেছেন:
“নিকৃষ্ট পেশার ন্যায় আল্লাহর ইবাদাতেও
সামান্য আমল তোমার নিজের জন্য যথেষ্ট
মনে কর না, বরং তুমি মন-প্রাণ দিয়ে অধিক
অর্জনের চেষ্টা কর”। [18]
৬. সচ্চরিত্র।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
‏( َّﻥِﺇ َﻦِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ ُﻙِﺭْﺪُﻴَﻟ ِﻦْﺴُﺤِﺑ ِﺕﺎَﺟَﺭَﺩ ِﻪِﻘُﻠُﺧ
ِﻢِﺋﺎَﻗ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﻢِﺋﺎَﺻ ‏).
“নিশ্চয় মুমিন তার সচ্চরিত্রের দ্বারা
রাতে কিয়ামকারী দিনে সিয়াম পালনকারীর
মর্যাদা অর্জন করে”। [19]
আবু তাইয়্যেব শামসুদ্দিন রহ. বলেছেন:
“সচ্চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে এ সওয়াব
দানের কারণ হচ্ছে, সিয়াম পালনকারী ও
রাতে কিয়ামকারী উভয়ে নিজের নফসের সাথে
মুজাহাদা করে। মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি
ভিন্ন হওয়া সত্বেও যে সবার সাথে
সচ্চরিত্র প্রদর্শন করে, সে যেন অনেক
নফসের সাথে মুজাহাদা করে, ফলে সে সিয়াম ও
কিয়ামকারীর মর্তবা লাভ করে, বরং অনেক
সময় তাদেরও ছাড়িয়ে যায়”। [20]
একটি সচ্চরিত্র হচ্ছে মানুষের সাথে
সুসম্পর্ক কায়েম রাখা ও তাদের থেকে কষ্ট দূর
করা।
মুমিনকে ইমানের পর সচ্চরিত্রের চেয়ে
উত্তম কোন জিনিস প্রদান করা হয়নি, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের
নিকট ‘হুসনে খুলুক’ বা সচ্চরিত্র প্রার্থনা
করতেন। যেমন জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
সালাত শুরু করতেন তখন তাকবির বলে বলতেন:
‏( ﻥﺇ ﻲﻜﺴﻧﻭ ﻲﺗﻼﺻ ﻲﺗﺎﻤﻣﻭ ﻱﺎﻴﺤﻣﻭ ﻪﻠﻟ
ﺏﺭ ﻦﻴﻤﻟﺎﻌﻟﺍ ، ﻻ ﻚﻳﺮﺷ ﻪﻟ ، ﻚﻟﺬﺑﻭ
ﺕﺮﻣﺃ ﺎﻧﺃﻭ ﻦﻣ ﻦﻴﻤﻠﺴﻤﻟﺍ ، ﻢﻬﻠﻟﺍ
ﻲﻧﺪﻫﺍ ﻦﺴﺣﻷ ﻝﺎﻤﻋﻷﺍ ﻦﺴﺣﺃﻭ ﻕﻼﺧﻷﺍ ،
ﻻ ﻱﺪﻬﻳ ﺎﻬﻨﺴﺣﻷ ﻻﺇ ﺖﻧﺃ ، ﻲﻨﻗﻭ ﺊﻴﺳ
ﻝﺎﻤﻋﻷﺍ ﺊﻴﺳﻭ ﻕﻼﺧﻷﺍ ، ﻻ ﻲﻘﻳ ﺎﻬﺌﻴﺳ
ﻻﺇ ﺖﻧﺃ‏) .
“নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার
জীবন ও আমার মৃত্যু দু’জাহানের রব আল্লাহর
জন্য, তার কোন শরীক নেই, আমাকে তারই
নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি মুসলিমদের
অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ আমাকে সুন্দর আমল ও
সুন্দর আখলাকের পথ দেখান, আপনি ব্যতীত
কেউ সুন্দর আখলাকের পথ দেখাতে পারে না।
আপনি আমাকে খারাপ আমল ও খারাপ আখলাক-
চরিত্র থেকে রক্ষা করুন, আপনি ব্যতীত কেউ
তা থেকে রক্ষা করতে পারে না”। [21]
অনুরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যতবার আয়নায় চেহারা দেখতেন সচ্চরিত্রের
জন্য দোয়া করতেন। ইব্ন মাসউদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
আয়নায় চেহারা দেখতেন বলতেন:
‏( ﻢﻬﻠﻟﺍ ﺎﻤﻛ ﻲِﻘْﻠَﺧ ﺖﻨﺴﺣ ﻦﺴﺤﻓ ﻲِﻘُﻠُﺧ ‏). ‌
“হে আল্লাহ তুমি আমার সৃষ্টি সুন্দর করেছ,
অতএব আমার চরিত্রও সুন্দর কর”। [22]
সচ্চরিত্রশীল লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিক প্রিয় এবং
কিয়ামতের দিন তার অতি নিকটে বসবে।
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ﻥﺇ ﻦﻣ ﻢﻜﺒﺣﺃ ﻲﻟﺇ ، ﻢﻜﺑﺮﻗﺃﻭ ﻲﻨﻣ
ﺎﺴﻠﺠﻣ ﻡﻮﻳ ﺔﻣﺎﻴﻘﻟﺍ ؛ ﻢﻜﻨﺳﺎﺣﺃ
ﺎﻗﻼﺧﺃ ‏).
“তোমাদের মধ্যে আমার অতি প্রিয় ও
কিয়ামতের দিন আমার অতি নিকটে আসন
গ্রহণকারী সে, যে তোমাদের মধ্যে অধিক
সুন্দর চরিত্রের অধিকারী”। [23]
উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির জন্য
আল্লাহ জান্নাতের উঁচু স্থানে প্রাসাদ
নির্মাণ করবেন, যা তার সওয়াব ও সম্মানের
বিনিময়। আবু বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ﺎﻧﺃ ٌﻢﻴِﻋَﺯ ﺖﻴﺒﺑ ﻲﻓ ِﺾَﺑَﺭ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻤﻟ
ﻙﺮﺗ َﺀﺍَﺮِﻤْﻟﺍ ﻥﺇﻭ ﻥﺎﻛ ،ﺎﻘﺤﻣ ﺖﻴﺒﺑﻭ
ﻲﻓ ﻂﺳﻭ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻤﻟ ﻙﺮﺗ ﺏﺬﻜﻟﺍ ﻥﺇﻭ
ﻥﺎﻛ ،ﺎﺣﺯﺎﻣ ﺖﻴﺒﺑﻭ ﻲﻓ ﻰﻠﻋﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ
ﻦﻤﻟ ُﻪَﻘُﻠُﺧ َﻦَّﺴَﺣ ‏) .
“সত্য পথে থেকেও যে ঝগড়া ত্যাগ করল, আমি
তার জন্য জান্নাতের উত্তম স্থানে ঘরের
জিম্মাদার। হাসি-ঠাট্টায় যে মিথ্যা ত্যাগ
করল আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে
ঘরের জিম্মাদার। আর যে তার চরিত্র উত্তম
করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের উঁচু স্থানে
ঘরের জিম্মাদার”। [24]
সচ্চরিত্র শুধু দূরের লোক বা অপরদের মধ্যে
সীমাবদ্ধ করে নিকট আত্মীয় বা আপনাদের
ভুলা ঠিক নয়, বরং সচ্চরিত্রের হাত পিতা-
মাতা ও পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের জন্য
প্রসারিত করা উচিত। কতক ব্যক্তিকে দেখা
যায় বাইরের লোকদের সাথে প্রশস্ত বক্ষ,
হাসি-খুশি ও সচ্চরিত্রশীল, কিন্তু নিজ
পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের সাথে তার
উল্টো, যা একেবারে পরিত্যাজ্য।
৭. বিধবা ও মিসকিনদের সেবা করার
চেষ্টা করা।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ﻲِﻋﺎَّﺴﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِﺔَﻠَﻣْﺭَﻷﺍ ِﻦﻴِﻜْﺴِﻤْﻟﺍَﻭ ؛
ِﺪِﻫﺎَﺠُﻤْﻟﺎَﻛ ﻲِﻓ ِﻞﻴِﺒَﺳ ِﻪَّﻠﻟﺍ ْﻭَﺃ ِﻢِﺋﺎَﻘْﻟﺍ
َﻞْﻴَّﻠﻟﺍ َﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﻢِﺋﺎَّﺼﻟﺍ ‏).
“বিধবা ও মিসকিনদের সেবায়
আত্মনিয়োগকারী আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ
অথবা রাতে কিয়ামকারী ও দিনে সালাত
আদায়কারী ব্যক্তির সমান”। [25]
এ সওয়াব খুব সহজে অর্জন করা সম্ভব, যেমন
কোন নিঃস্ব বা গরিব ব্যক্তির দরখাস্ত
কোন এনজিও বা সেবা সংস্থায় পেশ করা, যেন
তারা তার অবস্থা জানে ও তাকে প্রয়োজনীয়
সাহায্য করে। অনুরূপ বিধবা-যার স্বামী নেই
তার সেবা করেও এ সওয়াব অর্জন করা সম্ভব,
যেমন তার প্রয়োজন পূর্ণ করা। এটা কঠিন
কোন কর্ম নয়, আপনি আপনার নিকট
আত্মীয়দের মধ্যে খোঁজ নিয়ে দেখতে পাবেন
কোন ফুফু অথবা কোন খালা অথবা কোন দাদীর
স্বামী নেই, তাদের খিদমত করে জিহাদ ও
কিয়ামুল লাইলের সওয়াব অর্জন করতে
পারেন।
৮. জুমার কতিপয় আদাব গুরুত্বসহ
আদায় করা।
আউস ইব্ন আউস সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি:
‏( ْﻦَﻣ َﻞَّﺴَﻏ َﻡْﻮَﻳ ِﺔَﻌُﻤُﺠْﻟﺍ َﻞَﺴَﺘْﻏﺍَﻭ ، َّﻢُﺛ
َﺮَّﻜَﺑ َﺮَﻜَﺘْﺑﺍَﻭ ، ﻰَﺸَﻣَﻭ ْﻢَﻟَﻭ ْﺐَﻛْﺮَﻳ ،
ﺎَﻧَﺩَﻭ ْﻦِﻣ ِﻡﺎَﻣِﻹﺍ َﻊَﻤَﺘْﺳﺎَﻓ ، ْﻢَﻟَﻭ ُﻎْﻠَﻳ ،
َﻥﺎَﻛ ُﻪَﻟ ِّﻞُﻜِﺑ ٍﺓَﻮْﻄُﺧ ُﻞَﻤَﻋ ٍﺔَﻨَﺳ ؛ ُﺮْﺟَﺃ
ﺎَﻬِﻣﺎَﻴِﻗَﻭ ﺎَﻬِﻣﺎَﻴِﺻ ‏).
“জুমার দিন যে গোসল করল, ভালো করে;
অতঃপর আগেভাগে মসজিদে গেল; হেঁটে চলল,
বাহনে চড়ল না; ইমামের নিকটবর্তী হল;
অনর্থক কর্মে লিপ্ত না হয়ে মনোযোগসহ
শ্রবণ করল; তার প্রতি কদমে লেখা হবেএক
বছরের আমল তথা এক বছরের সিয়াম ও
কিয়ামের সওয়াব”। [26]
অতএব যে ব্যক্তি এসব আদব রক্ষা করবে তার
প্রতি কদম এক রাত অথবা এক সপ্তাহ অথবা
এক মাস কিয়ামের সমান নয়, বরং পূর্ণ এক
বছর কিয়াম করার সমান।
জুমার দিন গোসল করা, আগে আগে ও পায়ে হেঁটে
মসজিদে যাওয়া, ইমামের নিকটবর্তী বসা,
শেষের কাতারে পিছিয়ে না পড়া, মনোযোগসহ
খুতবা শ্রবণ করা এবং বেহুদা ও অনর্থক
কর্মকাণ্ড ত্যাগ করার মধ্যে এসব আদব
সীমাবদ্ধ, যা খুব সহজ ও খুব সামান্য।
জ্ঞাতব্য যে, খুতবার সময় অহেতুক নড়াচড়া
করা অনর্থক কর্মের অন্তর্ভুক্ত। যে অনর্থক
কর্ম করল তার জুমা নেই। যে পাথর স্পর্শ
করল সে অনর্থক কর্ম করল। যে বলল, ‘চুপ
থাক’, সে অনর্থক কর্ম করল: অর্থাৎ যে তার
পাশের সাথী অথবা নিজের সন্তানকে বলল
‘চুপ থাক’ সে বেহুদা কর্ম করল। খুতবার সময়
যে তসবিহ অথবা মোবাইল অথবা কোন জিনিস
দ্বারা খেলল, সেও অনর্থক কর্ম করল।
সুতরাং জুমার আদবসমূহে শিথিলতা করা ঠিক
নয়, অন্যথায় আমরা এমন সব বিরাট সওয়াব
থেকে বঞ্চিত হব, পরকালে যা আমাদের নেকির
পাল্লা ভারী করবে ও অনেক বছরের সওয়াব
প্রদান করবে।
৯. আল্লাহর রাস্তায় একদিন ও
একরাত জাগ্রত থাকা।
সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি:
‏( ﻁﺎﺑﺭ ﻡﻮﻳ ﺔﻠﻴﻟﻭ ﺮﻴﺧ ﻦﻣ ﻡﺎﻴﺻ ﺮﻬﺷ
ﻪﻣﺎﻴﻗﻭ ، ﻥﺇﻭ ﺕﺎﻣ ﻯﺮﺟ ﻪﻴﻠﻋ ﻪﻠﻤﻋ
ﻱﺬﻟﺍ ﻪﻠﻤﻌﻳ ﻥﺎﻛ ، ﻱﺮﺟُﺃﻭ ﻪﻗﺯﺭ ﻪﻴﻠﻋ
، َﻦِﻣﺃﻭ ﻥﺎَّﺘﻔﻟﺍ ‏) ، ﻥﺎَّﺘﻔﻟﺍﻭ ﺔﻨﺘﻓ ﻮﻫ
.ﺮﺒﻘﻟﺍ
“একদিন ও একরাত আল্লাহর রাস্তায় শত্রুর
মোকাবেলায় যুদ্ধের প্রস্তুতিসহ দাঁড়িয়ে
থাকা একমাস সিয়াম ও একমাস কিয়াম
অপেক্ষা উত্তম। যদি সে মারা যায় তাহলে
তার আমল চলমান থাকবে যা সে আঞ্জাম দিত,
তার রিযিক তার জন্য অব্যাহত থাকবে এবং
ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে”। [27]
ফিতনা অর্থ কবরের আযাব।
১০. ঘুমের পূর্বে কিয়ামুল লাইলের
নিয়ত করা।
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি ‘মরফূ’
হাদিস বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ ﻰَﺗَﺃ ُﻪَﺷﺍَﺮِﻓ َﻮُﻫَﻭ ﻱِﻮْﻨَﻳ ْﻥَﺃ َﻡﻮُﻘَﻳ
ﻲِّﻠَﺼُﻳ ْﻦِﻣ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ، ُﻩﺎَﻨْﻴَﻋ ُﻪْﺘَﺒَﻠَﻐَﻓ ﻰَّﺘَﺣ
َﺢَﺒْﺻَﺃ ، َﺐِﺘُﻛ ُﻪَﻟ ﺎَﻣ ﻯَﻮَﻧ ، َﻥﺎَﻛَﻭ ُﻪُﻣْﻮَﻧ
ًﺔَﻗَﺪَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ْﻦِﻣ ِﻪِّﺑَﺭ َّﺰَﻋ َّﻞَﺟَﻭ‏) .
“যে ব্যক্তি তার বিছানায় আগমন করল এ
নিয়তে যে রাতে উঠে সালাত আদায় করবে,
কিন্তু তার চোখে ঘুম চেপে থাকল ভোর
পর্যন্ত, তার নিয়ত অনুসারে তার জন্য লিখা
হবে, আর তার ঘুম হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে
তার জন্য সদকা”। [28]
লক্ষ্য করুন নিয়তের গুরুত্ব। নিয়ত আমলের
জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয়! এ থেকে আমরা ঐ
ব্যক্তির বদ নসিব জানতে পারি, যে ঘুমানোর
সময় ফজর সালাত আদায়ের পর্যন্ত নিয়ত করে
না। এ হতভাগা শুধু কর্মস্থল অথবা
বিদ্যালয়ের জন্য জাগ্রত হয়। সে কবিরা
গুনায় অনবরত লিপ্ত, এ অবস্থায় তার মৃত্যু
হলে পরিমাণ শুভ হনে না, আল্লাহর নিকট
পানাহ চাই।
আর যে ফজরের সময় উঠার নিয়ত করে তার
জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিল, কিন্তু তবুও
উঠতে পারল না, তার ওপর কোন তিরস্কার
নেই। কারণ ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহর
বিধানের সীমালঙ্ঘন নেই, সীমালঙ্ঘন হচ্ছে
জাগ্রত অবস্থায়।
১১. কিয়ামুল লাইলের সমান
আমলগুলো প্রচার করা।
আপনার থেকে জেনে কেউ যদি এর ওপর আমল
করে, তাহলে তাদের সমপরিমাণ আপনার
সওয়াব হবে। কারণ কাউকে ভাল কাজের কথা
বলা তা বাস্তবায়ন করার মত সওয়াব। অতএব
আপনি কল্যাণের আহ্বানকারী হোন, ইলম
প্রচার করুন, তাহলে যারা আপনার কারণে
আমল করবে, তাদের ন্যায় আপনিও সওয়াবের
অধিকারী হবেন। সকল প্রশংসার মালিক
আল্লাহ তা‘আলা।
সমাপ্ত
[1] তিরমিযি : (৩৫৪৯), ইব্ন খুযাইমাহ:
(১১৩৫), হাকেম: (১১৫৬), আলবানী সহিহ
‘তারগিব ও তারহিব’: (৬২৪) গ্রন্থে
হাদিসটি হাসান বলেছেন।
[2] ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবকাতুল
আসফিয়া’ লি আবু নুআইম: (৪/৬)
[3] তাবরানি ফিল কাবির: (৭৭৯৫), আল-
বানি ‘সহিহ তারগিব ওয়া তারহিব’:
(১৫৪১) গ্রন্থে বলেছেন: হাদিসটি হাসান
লি গায়রিহি।
[4] মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (৩৭১), আহমদ ফি
‘ফাতহুর রাব্বানি’: (৫/১৬৮), মুসলিম:
(৬৫৬), তিরমিযি: (২২১), আবু দাউদ:
(৫৫৫), দারামি: (১২২৪)
[5] মুসান্নাফ ইব্ন আবি শায়বাহ: (৫৯৪০),
আল-বানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।
দেখুন: সিলসিলাতুস সাহিহাহ: (১৪৩১)
[6] আবু দাউদ: (৩১২৮), আল-বানি ‘সহিহ
তারগিব ওয়া তারহিব’: (৫৮৫) গ্রন্থে
হাদিসটি হাসান লি গায়রিহি বলেছেন।
আরো দেখুন: শামায়েলে তিরমিযি।
[7] তিরমিযি: (৪২৬), আল-বানি সহিহ
তিরমিযিতে: (৩৫০) হাদিসটি হাসান
বলেছেন।
[8] বায়হাকি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আল-
বানি সহিহ আল-জামে: (৪৭৫৯) গ্রন্থে
হাসান বলেছেন।
[9] জামে তিরমিযি: (৯৪২৬)
[10] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (৫/১১),
আবু দাউদ: (১৩৭৫), তিরমিযি: (৮০৬),
নাসায়ি: (১৩৬৪), ইব্ন মাজাহ: (১৩২৭),
আল-বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
দেখুন: সহিহ আল-জামে: (১৬১৫)
[11] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/১১),
দারামি: (৩৪৫০), আল-বানি হাদিসটি
সহিহ বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে:
(৬৪৬৮)
[12] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/২৯),
মুসলিম: (৭৪৭), তিরমিযি: (৫৮১),
নাসায়ি: (১৭৯০), আবু দাউদ: (১৩১৩), ইব্ন
মাজাহ: (১৩৪৩), দারামি: (১৪৭৭)
[13] জামে তিরমিযি ব্যাখ্যা গ্রন্থ:
‘তুহফাতুল আহওয়াযি’: (৩/১৮৫), হাদিস
নং: (৫৮১)
[14] আবু দাউদ: (১৩৯৮), ইব্ন মাজাহ: (২৫৭২)
, ইব্ন খুজাইমাহ: (১১৪৪), দারামি:
(৩৪৪৪), হাকেম: (২০৪১), আল-বানি
‘সহিহ তারগিব ওয়া তারহিব’: (৬৩৯)
গ্রন্থে বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও
সহিহ।
[15] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/৯৯),
বুখারি: (৫০১০), মুসলিম: (৮০৭),
তিরমিযি: (২৮৮১), আবু দাউদ: (১৩৯৭),
ইব্ন মাজাহ: (১৩৬৯), দারামি: (১৪৮৭)
[16] শারহুন নববী আলা সহিহ মুসলিম:
(৬/৩৪০), হাদিস নং: (৮০৭)
[17] ফাতহুল বারি, লি ইব্ন হাজার
আসকালানি: (৮/৬৭৩), হাদিস নং: (৫০১০)
[18] ‘হুলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবকাতুল
আসফিয়া’ লি আবু নুআইম: (৩/৩৫৪)
[19] ইমাম মালেক: (১৬৭৫), আহমদ ফি
‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/৭৬), আবু দাউদ:
(৪৭৯৮), ইব্ন হিব্বান: (৪৮০), হাকেম:
(১৯৯), আল-বানি হাদিসটি সহিহ
বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে: (১৬২০)
[20] আউনুল মাবুদ শারহু আবু দাউদ: (১৩/১৫৪),
হাদিস নং: (৪৭৯৮)
[21] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (৩/১৮১),
মুসলিম: (৭৭১), তিরমিযি: (৩৪২১),
নাসায়ি: (৮৯৭), আবু দাউদ: (৭৬০),
দারামি: (১২৩৮), ইব্ন খুজাইমাহ: (৪৬২),
বায়হাকি: (২১৭২), আবু ইয়ালা: (২৮৫)
[22] ইমাম আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’:
(১৪/২৮১), ইব্ন হিব্বান: (৯৫৯), আবু
ইয়ালা: (৫০৭৫), তায়ালিসি: (৩৭৪), আল-
বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, দেখুন:
সহিহ আল-জামে: (১৩০৭)
[23] আহমদ ফি ফাতহুর রাব্বানি: (২৩/১৩),
তিরমিযি: (২০১৮), তাবরানি ফিল
কাবির: (১০৪২৪), বুখারি ফিল আদাবিল
মুফরাদ: (২৭২), আল-বানি সহিহ ‘তারগিব
ওয়া তারহিব’: (২৬৪৯) গ্রন্থে হাদিসটি
সহিহ বলেছেন।
[24] আবু দাউদ: (৪৮০০), বায়হাকি: (২০৯৬৫),
তাবরানি ফিল কাবির: (৭৪৮৮), আল-বানি
হাদিসটি হাসান বলেছেন, দেখুন: সহিহ
আল-জামে: (১৪৬৪)
[25] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৯/৫৫),
বুখারি: (৫৩৫৩), মুসলিম: (২৯৮২),
তিরমিযি: (১৯৬৯), নাসায়ি: (২৫৭৭),
ইব্ন মাজাহ: (২১৪০), ইব্ন হিব্বান:
(৪২৪৫), বায়হাকি: (১২৪৪৪)
[26] আহমদ ফি ‘ফাতহুল রাব্বানি’: (৬/৫১),
তিরমিযি: (৪৯৬), আবু দাউদ: (৩৪৫),
নাসায়ি: (১৩৮১), ইব্ন মাজাহ: (১০৮৭),
দারামি: (১৫৪৭), হাকেম: (১০৪১), ইব্ন
খুজাইমাহ: (১৭৫৮), আল-বানি হাদিসটি
সহিহ বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে:
(৬৪০৫)
[27] বুখারি: (২৮৯২), মুসলিম: (১৯১৩),
নাসায়ি: (৩১২৮)
[28] নাসায়ি: (১৭৮৭), ইব্ন মাজাহ: (১৩৪৪),
আল-বানি হাদিসটি হাসান বলেছেন, দেখুন:
সহিহ আল-জামে: (৫৮৪১)
_________________________________________
_______________________________________
____________________________
লেখক : ড. মুহাম্মাদ ইব্ন ইবরাহিম আন-
নাইম
অনুবাদক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ,
রিয়াদ, সৌদিআরব

জাহান্নাম কি? জাহান্নামে কি হবে?-২

image

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :”কেয়ামতের দিন মৃতু্যকে কালো
মেষ আকৃতিতে জান্নাত-জাহান্নামের
মাঝখানে হাজির করা হবে। অতঃপর বলা
হবে, হে জান্নাতবাসী, তোমরা একে
চিন? তারা উঁকি দিয়ে তাকাবে এবং
বলবে, হঁ্যা, এ হলো মৃতু্য। এরপর তাকে
জবাই করার নির্দেশ দেওয়া হবে।
অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসীগন,
তোমরা চিরস্থায়ী, আর মুতু্য নেই। হে
জাহান্নাম বাসীগণ, তোমরা
চিরস্থায়ী, আর মৃতু্য নেই। অতঃপর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তেলাওয়াত করলেন : “তাদেরকে সতর্ক
করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে,
যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; তারা
অসাবধানতায় আছে, তারা ইমান আনছে
না।” এ হলো জাহান্নাম ও
জাহান্নামিদের অবস্থা।
আহ! সর্বনাশ সে ব্যক্তির, যে আল্লাহর সাথে
অন্য কাউকে শরীক করে : যাদুকরের নিকট যায়,
যাদু বিশ্বাস করে ও মৃত ব্যক্তির নিকট
পর্্রাথনা করে। এরশাদ হচ্ছে:
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে,
আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে
দিয়েছেন, তার ঠিকানা নরকাগি্ন।” অন্যত্র
এরশাদ হচ্ছে:
“আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর
না, তাহলে দোষী সাব্যস্ত ও বিতাড়িত হয়ে
জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।”
ধ্বংস সে ব্যক্তির জন্য, যে নামাজ পড়ে না।
তারা কি জান্নাতিদের প্রশ্ন শ্রবন করেনি?
যা জাহান্নামিদের লক্ষ্য করে করা হবে।
এরশাদ হচ্ছে :
“তোমাদেরকে জাহান্নামে কে হাজির করেছে?
তারা বলবে আমরা নামাজ পড়তাম না।” ফজরের
আজান হয়, মুসলমানগণ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে
শ্রবন করে, “এশো নামাজের দিকে, এসো
কল্যাণের দিকে” তার পরেও তারা ঘুম থেকে উঠে
না, জামাতে শরিক হয় না, নামাজও পড়ে না!
এভাবেই তারা আল্লাহ অবাধ্যতার মাধ্যমে
দিনের শুরুটা আরম্ভ করে।
ধ্বংস তাদের জন্য যারা যাকাত আদায় করে না।
এরশাদ হচ্ছে :
“আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে
এবং তা ব্যয় করে না, তাদের কঠোর
আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন
জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে
এবং তা দিয়ে তাদের ললাট-পাশর্্ব-পৃষ্ঠ
দগ্ধকরা হবে। (সে দিন বলা হবে) এটাই,
যা তোমরা জমা করে ছিলে নিজেদের
জন্য। সুতরাং যা তোমরা জমা করতে এখন
তা-ই আস্বাদান কর।” ধ্বংস তাদের জন্য,
যারা লোক দেখানোর নিয়তে জেহাদ করে,
ইলম শিক্ষা দেয়, দাওয়াত ও তাবলিগের
কাজ করে এবং সাদকার ন্যায় নেক
আমলসমূহ সম্পাদন করে। কিয়ামতের
দিন চুরান্ত ফয়সালা শেষে তাদেরকে উপুড়
করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অন্যায়ভাবে
কোন মুসলমান হত্যা করে। এরশাদ হচ্ছে
:
“যে ব্যক্তি সেচ্ছায় কোন মুসলমান হত্যা করে,
তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চির কাল
থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন,
তাকে অভিসম্পাদ করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ
শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।” ধ্বংস তাদের জন্য,
যারা সুদ খোর, ঘুষ খোর। কারণ, হারাম দ্বারা
তৈরি গোস্তের স্থান জাহান্নাম। এরশাদ
হচ্ছে :
“যারা সুদ খায়, তারা ঐ ব্যক্তির ন্যায় ব্যতীত
দাঁড়াতে পারবে না, যাকে শয়তান আসর করে
মোহাবিষ্ট করে দিয়েছে। এটা এ জন্য যে,
তারা বলেছে বিকিকিনি তো সুদের মতই। অথচ
আল্লাহ বিকিকিনি হালাল করেছেন আর সূদকে
হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার রবের
পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত
থেকেছে, তার বিষয়টি আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত।
আর যারা পুনরায় সূদের কারবার করবে, তারাই
দোযখবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
“ধ্বংস তার জন্য যে খেয়ানত করেছে এবং
জনসাধারনের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
“ধ্বংস তার জন্য, যে কোন মুসলামনের
হক মিথ্যা কসম দ্বারা নিয়ে নিল।
যদিও তা আরাক গাছের ছোট ডাল তুল্য
হয়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম
প্রজ্জলিত করে রেখেছেন। ধ্বংস তার
জন্য, যে ইয়াতিমের ওপর জুলুম করে,
তাকে সুষ্ঠু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে
এবং তার সম্পদ ভক্ষণ করে। এরশাদ
হচ্ছে :
“যারা ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ
করে, তারা নিজদের পেটে আগুন ভর্তি করে, এবং
তারা সত্তরই অগি্নতে প্রবেশ করবে।” ধ্বংস
তাদের জন্য, যারা দাম্ভিক, অহংকারী। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের ব্যাপারে
বলে দিব!? : প্রত্যেক বদমেজাজ, কৃপন,
অহংকারী।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“পরিধেয় কাপড় যতটুকু টাখনুর নিচে যাবে,
টাখনুর ততটুকু স্থান জাহান্নামে থাকবে।”
ধ্বংস তার জন্য, যে মাতা-পিতার অবাধ্য,
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে
যাবে না।” ধ্বংস তার জন্য, যে পরনিন্দা,
দোষ চচর্া, মিথ্যাচার ও মিথ্যা সাক্ষ্য
প্রদান করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“মুখের পদস্খলন আর বিচু্যতি-ই, মানুষকে
উপুর হয়ে জাহান্নামে যেতে বাধ্য করবে।”
ধ্বংস তার জন্য, যে মাদকদ্রব্য সেবন করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
“আল্লাহর প্রতিজ্ঞা, যে নেশাদ্রব্য সেবন
করবে, তাকে তিনি ‘তীনাতে খাবাল’ পান
করাবেন। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলো
‘তীনাতে খাবাল’ কি? তিনি বললেন :
জাহান্নামীদের নিযর্াস-ঘাম।” ধ্বংস তার
জন্য, যে নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টি সংযত
করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“চোখও যেনা করে, তার যেনা হল দৃষ্টি।”
ধ্বংস সে নারীদের জন্য, যারা বস্ত্র
পরিধান করেও বিবস্ত্র থাকে, অপরের
প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং অপরকে নিজের
প্রতি আকৃষ্ট করে।
“তারা জাহান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার
ঘ্রাণও পাবে না।” হে বনি আদম! তোমার
সামনে জাহান্নামের বর্ণনা তুলে ধরা হল,
যা তুমি প্রতি বৎসর গ্রীষ্ম-শীতের
নিঃশ্বাসের মাধ্যমে উপলব্দিও কর।
আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, আল্লাহর
দিকে প্রত্যাবর্তন কর। আল্লাহর শপথ! এ
দুনিয়ার পর জান্নাত-জাহান্নাম ভিন্ন
অন্য কোন স্থান নেই। এরশাদ হচ্ছে :
“অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে দেঁৗড়ে যাও।
আমি তার তরফ থেকে তোমাদের জন্য স্পষ্ট
সতর্ককারী।” অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :
“মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং
স্বীয় পরিবার-পরিজনকে সে অগি্ন
থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ
আর পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষান
হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, তারা
আল্লাহর নির্দেশের ব্যতিক্রম করে না,
এবং তা-ই সম্পাদন করে, যা তাদের আদেশ
করা হয়।”
হাসান বসরী রহ. বলেন : “যে ব্যক্তি
জান্নাতের আশা করে না, সে জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারবে না এবং যে ব্যক্তি জাহান্নাম ভয়
করে না, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না।”
অন্তরের ভেতর সত্যিকার ভয় থাকলে, অঙ্গ-
প্রতঙ্গ থেকে খালেস আমল বেড়িয়ে আসে।
যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন : “যার ভেতর ভয় ছিল সে প্রতু্যশে
রওনা করেছে। আর যে প্রতু্যশে রওনা করেছে, সে
অভিষ্ট লক্ষ্যেও পৌঁছেছে।” মুনাফিকদের
স্বভাব হচ্ছে জাহান্নাম পশ্চাতে থাকলেও
বিশ্বাস না করা, যতক্ষণ-না তার গহবরে তারা
পতিত হয়। মূলত জাহান্নামের বর্ণনা নেককার
লোকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। বিস্বাদ করে
দিয়েছে তাদের খাবার-দাবার।
রাসূল বলেছেন : “আল্লাহর শপথ! আমি যা
জানি যদি তোমরা তা জানতে, কম হাসতে
বেশী কদঁতে। বিছানায় স্ত্রীদের
সম্ভোগ করার বোধ হারিয়ে ফেলতে।
আল্লাহর সন্ধানে পাঁহাড়ে এবং
উঁচুস্থানসমূহে বের হয়ে যেতে।”
সুবহানাল্লাহ! আখেরাত বিষয়ে মানুষ কত
উদাসীন! তার আলোচনা থেকে মানুষ কত
গাফেল! এরশাদ হচ্ছে :“মানুষের হিসাব-
নিকাস অতি নিকটবতর্ী, অথচ তারা
বে-খবর, পশ্চাদমুখি। তাদের নিকট
রবের পক্ষ থেকে যখন কোন উপদেশ আসে,
তারা তা খেলার ছলে শ্রবন করে। তাদের
অন্তরসমূহ তামাশায় মত্ত।” হে বনি
আদম! হিসাব অতি নিকটে, তবে কেন এ
উদাসীনতা!? কেন হৃদয় কম্পিত হয় না!?
অন্তরের মরিচিকা সবচেয়ে বিপদজনক,
তার মহর মারাত্বক কঠিন। এখনো কি
কর্ণপাত করার সময় হয়নি!? চোখে
দেখার সময় হয়নি!? অন্তরসমূহের ভীত
হওয়ার সময় হয়নি? অঙ্গ-প্রতঙ্গের
সংযত হওয়ার সময় হয়নি!?
“যারা ইমান এনেছে, তাদের অন্তর আল্লাহর
স্মরণ এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার
কারণে বিগলিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি?
ভুলে গেলে বিপদ ঘটবে, আমাদের প্রত্যেককে
জাহান্নামের ওপর দিয়ে যেতে হবে। তবে সে-ই
ভাগ্যবান যে এর থেকে মুক্তি পাবে। এরশাদ
হচ্ছে :
“তেমাদের প্রত্যেকে-ই তথায় পৌছঁবে। এটা
তোমার রবের চুরান্তফয়সালা। অতঃপর আমি
মুত্তাকিদের নাজাত দেব এবং অত্যাচারীদের
নতজানু হালতে সেখানে ছেড়ে দিব।”
হে বনি আদম! আর কতকাল গাফেল থাকবে!? আর
কতদিন দুনিয়া সঞ্চয় করতে থাকবে!? আর
কতদিন তার জন্য গর্ব করবে!? আল্লাহ তাআলা
বলেন :
“পরস্পর ধন-সম্পদের অহংকার
তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে।
যতক্ষণ না তোমরা কবরসমূহে উপস্থিত
হচ্ছ। এটা কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই
তোমরা এটা জানতে পারবে। অতঃপর এটা
কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা জানতে
পারবে। অতঃপর এটা কখনো ঠিন নয়,
শীঘ্রই তোমরা এটা জানতে পারবে।
সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান
দ্বারা অবহিত হতে (তবে এমন কাজ করতে
না)। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে।
অতঃপর তোমরা তা দিব্য-প্রতয়ে
দেখবে। এর পর অবশ্যই সে দিন তোমরা
নেয়ামত ম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”
সুভসংবাদ তাদের জন্য, যারা জাহান্নামকে
ভয় করে এবং যে কাজ করলে জাহান্নামে
যেতে হবে, তা থেকে বিরত থাকে। এরশাদ
হচ্ছে :
“যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত
হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুটি
জান্নাত।” আল্লাহ তাআলা বলেন :
“যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা
নিজেরাই তো তাদের রবের নৈকট্য
লাভের জন্য উপায় সন্ধান করে যে,
তাদের মধ্যে কে কত নিকট হতে পারে।
তারা তার রহমত আশা করে এবং তার
শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার
রবের শাস্তি ভয়াবহ।” হে আল্লাহ!
আমাদের সকলকে মুত্তাকি বানিয়ে দাও
এবং তোমার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয়
দান কর। হে আল্লাহ! আমাদের
জাহান্নামের অতল গহবরে ছেড়ে দিও না,
আমাদের ঘার ধরে পাঁকড়াও করো না। হে
আল্লাহ! আমাদের তওবা কবুল করুন এবং
আমাদের সুন্দর সমাপ্তি প্রদান করুন।
এরশাদ হচ্ছে :
“হে আমাদের রব! আমাদের থেকে জাহান্নামের
শাস্তি হটাও। নিশ্চয় এর শাস্তি তো অাঁকড়ে
থাকার জিনিস। এটা খুব খারাপ স্থান ও থাকার
জায়গা।”
“হে আমাদের রব! তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ
করবে, তার নিশ্চিত অপমান হবে। জালেমাদের
জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।”

জাহান্নাম কি?জাহান্নামে কি হবে?-১

image

লেখক : রাশেদ বিন আব্দুর রহমান আয-যাহরানী
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
ইসলাম প্রচার বু্যরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
জাহান্নাম ধ্বংসের ঘর
বান্দার ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা অর্জন
ও কৃতকার্য হওয়ার নিদর্শন হচ্ছে, তার
অন্তকরণ আখেরাতের স্মরন, পরকালের ভাবনায়
সঞ্জীবিত ও সিক্ত হয়ে যাওয়া। যেমন আল্লাহ
তাআলা তার নৈকট্য-প্রাপ্ত বান্দা তথা অলি-
আউলিয়াদের প্রশংসা করে বলেন : “আমি
তাদেরকে এক বিশেষগুন তথা পরকালের স্মরণ
দ্বারা স্বাতন্ত্র প্রদান করেছি।” অর্থাৎ
পরকালীন জীবনের সুখ-দুঃখের ভাবনা।
পক্ষান্তরে পরকাল বিস্মৃতি ও আখেরাত ভুলে
যাওয়া বান্দার ভাগ্যহীন হওয়ার আলামত।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
“তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে
নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায়
ফেলে রেখেছিল। অতএব আমি আজকে তাদের ভুলে
যাব, যেমন তারা এ দিনের সাক্ষ্যাৎ ভুলে
গিয়েছিল, (আরেকটি কারণ) যেহেতু তারা
আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করত।”
আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, খাস রহমত; আমাদের
অন্তরে পরকালের ভাবনা, আখেরাতের ফিকির
উদয়-বৃদ্ধির জন্য হাজারো আলামত, প্রচুর
নিদর্শন বিদ্যামান রেখেছেন এ পার্থিব
জগতে। আল্লাহ তাআলা বলেন : “তোমারা যে
অগি্ন প্রজ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ
কি? তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না
আমি সৃষ্টি করেছি? আমিই সে বৃক্ষকে করেছি
স্মরনিকা এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী।”
যদিও এ বৃক্ষ গরমের উপকরণ, রান্নার ইন্ধন,
তথাপি আমাদেরকে আখেরাতের অগি্ন স্মরণ
করিয়ে দেওয়ারও স্মরনিকা। নিম্নোক্ত
আয়াতের দ্বারা তিনি গ্রীষ্মের প্রচন্ড
গরমকে জাহান্নমের অগি্নর সাথে তুলনা করে
বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এরশাদ
হচ্ছে : “তারা বলেছে এই গরমের মধ্যে
অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও উত্তাপে
জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তাদের
বিবেচনা শক্তি থাকত।” আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন :
“তোমরা জোহরকে থান্ডা করে পড়, যেহেতু
গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে
উৎসারিত।”
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
“জাহান্নাম তার প্রভুর কাছে অভিযোগ
করেছে, হে আমার রব! আমার এক অংশ
অপর অংশকে খেয়ে নিচ্ছে; অতঃপর
আল্লাহ তাকে দুটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করার
অনুমতি দেন। একটি গ্রীষ্মকালে
অপরটি শীতকালে। তোমরা যে প্রচন্ড
গরম ও কনকনে শীত অনুভব কর, তাই সে
নিঃশ্বাস।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিভিন্ন সময়ে সাহাবাদের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ
উপদেশ বাণী প্রদান করতেন, যার দ্বারা অন্তর
বিগলিত হত, অশ্রুতে সিক্ত হয়ে যেত
চক্ষুদ্বয়। এক বার তিনি নামাজ আদায় করে
বলেন :
“এ মাত্র যখন আমি তোমাদের নিয়ে
নামাজরত ছিলাম দেয়ালের পাশে
প্রতিবিম্বের আকৃতিতে আমাকে জান্নাত-
জাহান্নাম দর্শন করানো হয়েছে।
আজকের মত আর কোন দিন এতো মঙ্গল-
অমঙ্গল, নিষ্ট-অনিষ্ট চোখে
দেখিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কথা শুনে সাহাবাগণ
অবনত মস্তক হয়ে গেলেন, তাদের অন্তরে
কান্নার ডেকুর উঠল। তারা কাঁদতে
ছিলেন। অথচ তাকওয়া, ইমান, ইসলামের
দাওয়াত, জিহাদ ও রাসূলকে নিরাপত্তা
বিধানের ক্ষেত্রে তারা আমাদের চেয়ে
অধিক অগ্রগামী ছিলেন।
কারণ, এটা ভয়ংকর মাখলূখ (জাহান্নাম)
সম্পর্কে সতর্কবাণী ও সাবধানিকরণ
আগাম বার্তা। কেমন হবে সেদিন, যে দিন
সত্তুর হাজার লাগামসহ জামান্নাম
উপস্থিত করা হবে। প্রতিটি লাগামের
সাথে একজন করে ফেরেশতা থাকবে, তারা
এটাকে টেনে-হেছড়ে হাজির করবে। এতো
বেশী পরিমাণ শক্তিশালী ফেরেশতাদের
নিযুক্তি দ্বারাই জাহান্নামের বিশালত্ব
ও ভয়াবহতার ধারণা করা যায়।
এরশাদ হচ্ছে :
“যে দিন জাহান্নামকে আনা হবে, সে দিন মানুষ
স্মরণ করবে, কিন্তু এ স্মরণ তার কি কাজে
আসবে? আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী আমাদের কাছে
আরো গভীর চিন্তার আবেদন জানায় :
“এটা অট্রালিকা সাদৃশ বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ
করবে, যেন সে পীতবন্য উষ্ট্রশ্রেনী।”
জাহান্নাম নিজ ক্রোধের কারণে ভিষণ হয়ে
উঠবে, তার অংশগুলো খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাওয়ার
উপক্রম হবে। আরো ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে মহান
আল্লাহর গোস্বার ধরুন। এরশাদ হচ্ছে :
“অগি্ন যখন দূর থেকে তাদেরকে দেখবে, তখন
তারা শুনতে পাবে তার গর্জন ও গুঙ্কার।”
বর্তমান সমাজে জাহান্নামের আলোচনা
প্রাণহীন বে-রস বিষয় বস্তুর ন্যায়
পরিত্যক্ত হয়ে আছে। যে কারণে জাহান্নামের
নাম শুনে অন্তরসমূহে ভীতির সৃষ্টি হয় না,
চক্ষুসমূহ অশ্রু বিসর্জন করে না। যা
সর্বগ্রাসী আত্মীক অবক্ষয়ের করুন চিত্র।
যেন জাহান্নাম সম্পর্কে আল্লাহর কোন
সতর্কবাণী আমরা শোনিনি। অথবা আমাদের
অন্তরসমূহ শুষ্ক, উষর ও কঠিন হয়ে গেছে!
এরূপ কঠিন অন্তর-ই যে কোন ব্যক্তির
হতভাগ্য হওয়ার বড় আলামত। এ ধরণের বধির,
কল্যাণশুন্য অন্তরসমূহ বিগলিত করার জন্যই
জাহান্নামের অগি্ন প্রস্তুত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তাআলা ধ্বংস-অপমানের স্থান
জাহান্নাম সম্পর্কে কঠিনভাবে সতর্ক করে
বলেছেন :
“অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগি্ন
সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।”
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :
“নিশ্চয় জাহান্নাম গুরুতর বিপদ
সমুহের অন্যতম। মানুষের জন্য
সতর্ককারী।”
আল্লাহর শপথ! জাহান্নাম থেকে ভয়ংকর
কোন বস্তু নেই। খোদ আল্লাহ তাআলা এর
প্রজ্বলন-দাহন, খাদ্য-পানীয়, বেড়ি,
ফুটন্তপানি, পুজ এবং তাতে শৃঙ্খলাবদ্ধ
করা ও সেখানকার পোশাকের ভয়াবহতার
বর্ণনা দিয়েছেন। যাতে মানবজাতি এ
নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার সুযোগ পায়
এই তো জাহান্নাম! এর অভ্যন্তরে
জাহান্নামিরা কাত-চিত হয়ে পল্টি
খাচ্ছে, এর ময়দানে তাদেরকে টানা-
হেচড়া করা হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এর ভয়াবহতার
বিষদ বর্ণনা দিয়েছেন। একদিন
মেম্বারে দাঁড়িয়ে বার বার উচ্চারণ করেন
:
“আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে
সতর্ক করছি। আমি তোমাদেরকে
জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি
তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক
করছি।” সে দিন রাসূলের আওয়াজ পাশে
অবস্থিত বাজারের লোকজনও শুনতে
পেয়েছিল। অস্থিরতার ধরুন কাধের
চাদর পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল।
তিনি আরো বলতে ছিলেন :
“আমি জাহান্নামের মত ভয়ংকর কোন জিনিস
দেখিনি, যার পলায়নকারীরা ঘুমন্ত।
জান্নাতের মত লোভনীয় কোন জিনিস
দেখিনি, যার সন্ধানকারীরা ঘুমন্ত।”
হে মানবজাতি! মনে রেখ, জাহান্নাম সম্পর্কে
তোমার অনুসন্ধিৎসা, মূলত একটি ভীতিকর
বস্তু সম্পর্কে-ই অনুসন্ধিৎসা। লক্ষ্য কর,
যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“যা দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে সে
লাল হয়ে গেছে; পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে
হাজার বৎসর, যার ফলে সে সাদা হয়ে গেছে;
পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে
সে কালো হয়ে গেছে। সে বিদঘুটে কালো;
অন্ধকার; তার এক অংশ অপর অংশকে ভস্ব করে
দিচ্ছে।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
“আমাদের এ আগুন, জাহান্নামের সত্তর ভাগের
এক ভাগ।”
“জাহান্নামের ভেতর সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে
সে ব্য্যক্তির, যার দুটি আগুনের জুতো থাকবে,
যার কারণে তার মস্তক টকবগ করবে, সে অন্য
কাউকে তার চেয়ে বেশী শাস্তিভোগকারী মনে
করবে না। অথচ সে-ই সবচেয়ে কম
শাস্তিভোগকারী। জাহান্নমের সাতটি দরজা
রয়েছে। সব কটি দরজা লোহার খুটি দ্বারা
আটঁকে দিয়ে জাহান্নামিদের বন্ধি করে রাখা
হবে। এরশাদ হচেছ :
“নিশ্চয় তা’ (জাহান্নাম) তাদের ওপর বন্ধ
করে দেয়া হবে। লম্বা লম্বা খুঁটিসমূহে ।”
জাহান্নামের অনেক স্তর রয়েছে। ওপরের স্তর
থেকে নিচের স্তরগুলো তুলনামূলক কঠিন ও
ভয়াবহ।
এরশাদ হচ্ছে: “নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা
রয়েছে দোযখের সর্বনিন্ম স্তরে।”
জাহান্নামের গভীরতার পরিমাণ সম্পর্কে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :”তার মুখ থেকে একটি বিরাট
পাথর নিক্ষেপ করা হবে, সত্তর বৎসর
পর্যন্ত গভীরে যেতে থাকবে, তবুও তার
গভীরতার নাগাল পাবে না।” যখন-ই কোন
ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, সে
বলবে, আরো আছে কি? তবে নিশ্চিত আল্লাহ
তাআলা নিজ ঘোষণা অনুযায়ী জাহান্নাম
পূর্ণ করে দিবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :”আর তোমার রবের
কথাই পূর্ণ হল : অবশ্যই আমি জাহান্নামকে
পূর্ণ করব, জিন ও মাবনজাতি দ্বারা।”
চরম শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে জাহান্নামিদের
ভয়ংকর ও বিশাল আকৃতিতে জাহান্নামে
প্রবেশ করানো হবে।
এরশাদ হচ্ছে :“একজন কাফেরের দুকাঁধের
মাঝখানের ব্যবধান হবে দ্রুতগামী
অশ্বারোহী ব্যক্তির তিন দিন ভ্রমন
পথের সমান।”
“তার মাঢ়ির দাত হবে উহুদ পাহাড়ের
সমান। তার চামড়ার ঘনত্বের প্রস্থ হবে
তিন রাত ভ্রমন করার পথের সমান।”
“তার পাঁছা হবে মক্কা-মদিনার দূরত্বের
সমান।” জাহান্নাম খুবই খারাপ গন্তব্য,
ঘৃণীত বাসস্থান। এতে খাদ্য হিসেবে থাকবে
বিষাক্ত কন্টক আর যাক্কুম। যা মারাত্বক
কদর্য ও যন্ত্রনাদায়ক। এর সৃষ্টিকর্তা,
যিনি এর দ্বারা শাস্তি দেয়ার অঙ্গিকার
করেছেন, তিনি নিজেই বলেছেন :”নিশ্চয
যাক্কুম বৃক্ষ, পাপীদের খাদ্য। গলিত
তন্ত্রের মত পেটে ফুটতে থাকবে, যেমন ফুটে
গরম পানি।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “যদি যাক্কুমের এক ফোটা দুনিয়ায়
টপকে পড়ত, তবে এতে বসবাসকারীদের জীবন-
উপকরণ ধ্বংস হয়ে যেত। সে ব্যক্তির অবস্থা
কেমন হবে, যার খাদ্য-ই হবে যাক্কুম”?
তাতে পান করার জন্য আছে, গরম টগবগে পানি,
পুঁজ, গীসলীন অথর্াৎ জাহান্নামীদের গাঁ ধোয়া
পানি, পূঁজ ও বমি। এরশাদ হচ্ছে :
“এবং প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী
ব্যর্থ-কাম হল। তাদের প্রত্যেকের
পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদের
প্রত্যেককে পান করানো হবে গলিত পুঁজ।
যা সে অতিকষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং
তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে
পড়বে। সর্বদিক থেকে তার কাছে আসবে
মৃতু্য অথচ সে মরবে না। তার পশ্চাতেও
রয়েছে কঠোর আযাব।”
“যদি তারা ফরিয়াদ জানায়, তবে তাদেরকে এমন
পানি দ্বারা জবাব দেয়া হবে, যা পুঁজের ন্যায়, যা
তাদের মুখ-মন্ডল জ্বালিয়ে দিবে। ” তাদের
পেটে ক্ষুধার সৃষ্টি করা হবে, অতঃপর যখন
তারা খানার ফরিয়াদ করবে, যাক্কুম খেতে দেয়া
হবে, যা বক্ষণের ফলে পেটের ভেতর গরম পানির
ন্যায় উতলানো শুরু করবে। এরশাদ হচ্ছে :
“অতঃপর তারা পানি চেয়ে ফরিয়াদ করবে, ফলে
তাদেরকে এমন পানি দেয়া হবে, যা তাদের
নিকটবর্তী করা হলে তাদের চেহারা জ্বলে
যাবে।” আর যখন তা পান করবে, তখন তাদের
নাড়ি-ভূড়ি খন্ড-বিখণ্ড হয়ে মলদ্বার দিয়ে
বের হয়ে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :
“এবং তাদেরকে পান করানো হবে ফুটন্ত
পানি, যা তাদের নাড়ি-ভূঁিড় ছিন্ন-
বিচ্ছিন্ন করে দিবে।”
আল্লাহ তাআলা তাদের পোশাকের ব্যাপারে
বলেছেন, আলকাতরার এমন পোষাক পরিধান
করানো হবে, যা আগুনে টগবগ করতে থাকবে আর
দাহ্য হতে থাকবে। এরশাদ হচ্ছে :
“তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং তাদের
মুখ মন্ডল আগুন আচ্ছন্ন করে রাখবে।”
আরো এরশাদ হচ্ছে :
“যারা কুফরি করেছে, তাদের জন্য আগুনের
পোষাক তৈরী করা হবে।” ইবরাহিম তামিমি
রহ. এ আয়াত তেলাওয়াত করার সময় বলতেন :
“পবিত্র তিনি, যিনি আগুন দ্বারাও
পোষাক তৈরি করেছেন।” জাহান্নামের
শিকল ও বেড়ি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে
এরশাদ হচ্ছে :
“ধর তাকে; এবং বেড়ি পড়িয়ে দাও তার গলায়;
অতঃপর নিক্ষেপ কর তাকে জাহান্নামে; পুনরায়
তাকে বেঁধে ফেল এমন শৃঙ্খলে, যার দৈর্ঘ সত্তর
গজ লম্বা।” তাদের হাত গদর্ানের সাথে বেঁধে
দেয়া হবে এবং চেহারার ওপর দাঁড় করে টেনে-
হেচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ
হচ্ছে :
“যে দিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া
হবে জাহান্নামের দিকে, (বলা হবে) জাহান্নামের
যন্ত্রণা আস্বাদান কর।” কপাল-পা একসাথে
বেঁধে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ
হচ্ছে :
“অতঃপর তাদের পাকঁড়াও করা হবে কপাল (চুলের
ঝুঁটি) ও পা ধরে।” এ কপাল মিথু্যক, আল্লাহর
জন্য সেজদা করেনি, তার বড়ত্বের সামনে অবনত
হয়নি। এ পদযুগলও মিথু্যক, সবসময় আল্লাহর
অবাধ্যতায় চালিত হয়েছে।
জাহান্নামের আবহাওয়া বীষ; পানি টকবগে
গরম; ছায়া ধুম্র কুঞ্জ; জাহান্নামের ধোঁয়া না-
ঠান্ডা, না-সম্মানের। জাহান্নামিদের অবস্থা
শোচনীয় পরাজয়ের, চুরান্ত অপমান জনক।
তদুপরি তারা পাঁয়ে ভর করে পঞ্চাশ হাজার
বৎসর দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা ক্ষুধা-তৃষ্ণা
নিবারণের জন্য এক মুঠো খাদ্য, সামান্য
পানীয় পর্যন্ত পাবে না। তাদের গর্দান
পিপাসায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হবে, ক্ষুধার
তীব্রতায় কলিজায় দাহক্রিয়া আরাম্ভ হবে,
অতঃপর এ হালতেই তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ
করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :
“আগুন তাদের মুখ মন্ডল দগ্ধ করবে এবং
তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়।”
জাহান্নাম খুব-ই সংকীর্ন, বিপদ সঙ্কুল,
ধ্বংসের স্থান, অন্ধকারে ভরপুর, সব
সময় এতে আগুন প্রজ্বলিত থাকবে,
জাহান্নামিরা সর্বদা এখানেই আবদ্ধ
থাকবে। পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব,
কালো ও অন্ধকারে ঢাকা চেহারা
বিশিষ্ট ফেরেশতাদের মাধ্যমে, ভয়ংকর
পদ্ধতিতে তাদেরকে জাহান্নামের প্রবেশ
দ্বারে অভ্যর্থনা দেয়া হবে। যাদের
চেহারা দর্শন শাস্তির ওপর অতিরিক্ত
শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে। তারা কঠোর,
করুণাহীন, আরো ব্যবহার করবে
লৌহদণ্ড। তারা পিছন থেকে হাঁকিয়ে,
ধমকিয়ে ধমকিয়ে জাহান্নামিদের নিয়ে
যাবে জাহান্নামের দিকে, অতঃপর তার
গভীর গর্তে নিক্ষেপ করবে। সেখানে
তাদের সাপে দংশন করবে, জলন্ত পোষাক
পরিধান করানো হবে, তাদের কোন
ইচ্ছা-ই পূর্ণ হবে না, তাদের কেউ
ত্রাণকর্তা থাকবে না। মাথা-পা একসাথে
বাধাঁ হবে, পাপের কারণে চেহারা কালো
হয়ে যাবে, তারা সর্বনাশ বলে চিৎকার
করবে আর মৃতু্যকে আহবান করতে থাকবে।
তাদের বলা হবে :“আজ তোমরা এক মৃতু্যকে
ডেক না, অনেক মৃতু্যকে ডাক।” তখন তারা
নিজ বিকৃত মস্তিস্কের কথা স্বীকার
করবে, যে কারণে তারা আজ এ
পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে।
এরশাদ হচ্ছে :”এবং তারা বলবে, যদি আমরা
কর্নপাত করতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তাহলে
আমরা জাহান্নামী হতাম না।” সব দিক থেকে
জাহান্নাম তাদের বেষ্টন করে রাখবে। এরশাদ
হচ্ছে : “তাদের নিচে থাকবে জাহান্নামের
আগুনের বিছানা এবং ওপরে থাকবে চাদর। আমি
এভাবেই অত্যাচারীদের প্রতিদান দেই।” তারা
যেখানে যাবে, তাদের সাথে বিছানা-চাদরও
সেখানে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :”নিশ্চয় ওর
শাস্তি তো আঁকড়ে থাকার জিনিস।”
আল্লাহ বলেন :“নিশ্চয় জাহান্নাম কাফেরদের
বেষ্টনকারী।” কোথাও পালাবার জায়গা নেই।
এরশাদ হচ্ছে :
“তাদের মাথার ওপর গরম পানি ঢালা হবে। যা
দ্বারা, তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম
বিগলিত করা হবে। আর তাদের থাকবে লোহার
হাতুড়িসমূহ। যখনই তারা যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ
হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই
তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। (বলা হবে)
দহনের শাস্তি আস্বাদন কর।”
আল্লাহ তাআলা বলেন : “যখন তাদের চামড়া জ্বলে
যাবে, আমি অন্য চামড়া দিয়ে তা পালটে দেব।
যেন তারা আযাব আস্বাদান করতে পারে।”
অতঃপর বলবেন:”তোমরা শাস্তি
আস্বাদান কর, আমি কেবল তোমাদের
শাস্তির বৃদ্ধি ঘটাব।” তারা
জাহান্নামের ফেরেশতাদের মাধ্যমে
সাহায্য চাইবে। এরশাদ হচ্ছে :
“আর যারা জাহান্নামে রয়েছে, তারা
জাহান্নামের রক্ষিদের বলবে, তোমরা
তোমাদের রবকে বল, তিনি যেন আমাদের
থেকে এক দিনের আযাব হালকা করে দেন।
রক্ষীরা বলবে : তোমাদের কাছে কি
সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে তোমাদের
রাসূলগণ আসেনি? তারা বলবে : অবশ্যই;
তারা বলবে : তবে তোমরা-ই আহবান কর।
বস্তুত কাফেরদের আহবান নিষ্ফল।” একটু
চিন্তা করুন, সে জগতের মানুষের অবস্থা
কেমন হতে পারে, যারা সর্বশেষ ও
চুরান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে মৃতু্য কামনা
করবে। এরশাদ হচ্ছে :”তারা
(জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত
ফেরেশতাকে) ডেকে বলবে, হে মালেক,
(বলুন) তোমার রব আমাদের কিস্সা খতম
করে দিন।”
ইবনে আব্বাস রা. বলেন : এক হাজার বৎসর পর
তাদের কথার উত্তর খুব কঠোর ও ঘৃণিত ভাষায়
দেয়া হবে। এরশাদ হচ্ছে :
“সে বলবে : নিশ্চয় তোমরা চিরকাল থাকবে।”
অতঃপর তারা আল্লাহর দরবারে স্বীয় আভিযোগ
উত্থাপন করবে এবং বলবে :
“হে আমাদের রব, আমাদের অনিষ্ট আমাদেরকে
পরাভূত করেছে। আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত
জাতি। হে আমাদের রব, এ থেকে আমাদেরকে
উদ্ধার কর, আমরা যদি পুনরায় তা করি,
তাবে আমরা নিশ্চিত অত্যাচারী।”
দুনিয়ার দ্বিগুন বয়স পরিমাণ চুপ থাকার
পর আল্লাহ তাআলা বললেন :
“আল্লাহ বলবেন, তোমরা ধিকৃত অবস্থায়
এখানেই পড়ে থাক, এবং আমার সাথে কোনো
কথা বল না” এ কথা শুনার পর নৈরাশ্য
তাদের আচ্ছন্ন করে নিবে, তাদের হতাশা
বেড়ে যাবে, রুদ্ধ হয়ে যাবে তাদের গলার
আওয়াজ। শুধু বুকের ঢেকুর, চিৎকার,
আর্তনাথ আর কান্নার শব্দ সর্বত্র ভেসে
বেড়াবে। তবে সব চেয়ে বেশী দুঃখিত হবে
জান্নাতের সবের্াচ্চ মর্যাদা আল্লাহর
দীদার থেকে বঞ্চিত হয়ে।
এরশাদ হচ্ছে :”কখনো না, তারা সে দিন
তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে।
অতঃপর তারা নিশ্চিত জাহান্নামে প্রবেশ
করবে।” যখন তারা চিন্তা করবে অল্প
দিনের ভোগ-বিলাস আর প্রবৃত্তের জন্য এ
দুঃখ-দুর্দশা, অপমান-গঞ্জনা; তখন তাদের
আফসোসের অন্ত থাকবে না, বরং শাস্তির
ওপর এটাও আরেকটি শাস্তি হিসেবে গণ্য
হবে যে, আসমান-জমীন সমতুল্য জান্নাতের
বিপরিতে সামান্য বিনিময়ে এ
পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছি। যে
সামান্য দুনিয়া নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে,
যেন কখনো তার অস্তিত্ব ছিল না।

শবেবরাত বার্তা

image

শবেবরাত
আত-তাহরীক ডেস্ক
আরবী শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত
রাতকে উপমহাদেশে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। যা
‘সৌভাগ্য রজনী’ হিসাবে পালিত হয়।
ধর্মীয় ভিত্তি :
মোটামুটি ৩টি ধর্মীয় আক্বীদাই এর ভিত্তি
হিসাবে কাজ করে থাকে। (১) এ রাতে কুরআন
নাযিল হয় এবং এ রাতে আগামী এক বছরের
জন্য বান্দার ভালমন্দ তাক্বদীর নির্ধারিত
হয়। (২) এ রাতে বান্দার গোনাহ সমূহ মাফ করা
হয়। (৩) এ রাতে রূহগুলি সব ছাড়া পেয়ে
মর্ত্যে নেমে আসে। ফলে মোমবাতি, আগরবাতি,
পটকা ও আতশবাযী হয়তোবা রূহগুলিকে সাদর
অভ্যর্থনা জানাবার জন্য করা হয়।
শবেবরাতে হালুয়া-রুটি খাওয়া সম্পর্কে বলা
হয়ে থাকে যে, এ দিন আল্লাহর নবী (ছাঃ)-এর
দান্দান মুবারক ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল।
ব্যথার জন্য তিনি নরম খাদ্য হিসাবে হালুয়া-
রুটি খেয়েছিলেন বিধায় আমাদেরও সেই ব্যথায়
সমব্যথী হয়ে হালুয়া-রুটি খেতে হয়। অথচ
ওহোদের যুদ্ধ হয়েছিল ৩য় হিজরীর শাওয়াল
মাসের ৭ তারিখ শনিবার সকাল বেলা।[1] আর
আমরা ব্যথা অনুভব করছি তার প্রায় দু’মাস
পূর্বে শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত
রাত্রে…!
এক্ষণে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলির ধর্মীয়
ভিত্তি কতটুকু তা খুঁজে দেখব। প্রথমটির
সপক্ষে যে সব আয়াত ও হাদীছ পেশ করা হয় তা
নিম্নরূপ :
(১) এ রাতে কুরআন নাযিল হয় এবং এ রাতে
আগামী এক বছরের জন্য বান্দার ভালমন্দ
তাক্বদীর নির্ধারিত হয়।
(ক) প্রথমটির দলীল হিসাবে সূরা দুখান-এর ৩
ও ৪ আয়াত পেশ করা হয়ে থাকে। যেখানে আল্লাহ
বলেন, ﺎَّﻧِﺇ ُﻩﺎَﻨْﻟَﺰْﻧَﺍ ﻰِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ٍﺔَﻛَﺭﺎَﺒُﻣ
ﺎَّﻧِﺇ ﺎَّﻨُﻛ -َﻦْﻳِﺭِﺬْﻨُﻣ ﺎَﻬْﻴِﻓ ُﻕَﺮْﻔُﻳ ُّﻞُﻛ
ٍﻢْﻴِﻜَﺣٍﺮْﻣَﺃ- ‘আমরা এটি নাযিল করেছি এক
বরকতময় রাত্রিতে; আমরা তো সতর্ককারী’।
‘এ রাত্রিতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়
স্থিরীকৃত হয়’ (দুখান ৪৪/৩-৪) ।
হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে
বলেন, ‘এখানে ‘বরকতময় রাত্রি’ অর্থ ‘ক্বদরের
রাত্রি’। যেমন আল্লাহ বলেন, ﺎَّﻧِﺇ ُﻩﺎَﻨْﻟَﺰْﻧَﺃ
ْﻰِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ِﺭْﺪَﻘْﻟﺍ ‘নিশ্চয়ই আমরা এটি
নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে’ (ক্বদর
৯৭/১) । আর সেটি হ’ল রামাযান মাসে। যেমন
আল্লাহ বলেন, ُﺮْﻬَﺷ َﻥﺎَﻀَﻣَﺭ َﻝِﺰْﻧُﺃ ْﻯِﺬَّﻟﺍ ِﻪْﻴِﻓ
ُﻥﺁْﺮُﻘْﻟﺍ، ‘এই সেই রামাযান মাস যার মধ্যে
কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫) ।
এক্ষণে ঐ রাত্রিকে মধ্য শা‘বান বা শবেবরাত
বলে ইকরিমা প্রমুখ হ’তে যে কথা বলা হয়েছে,
তা সঙ্গত কারণেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই রাতে
এক শা‘বান হ’তে আরেক শা‘বান পর্যন্ত বান্দার
ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়। এমনকি তার বিবাহ,
সন্তানাদী ও মৃত্যু নির্ধারিত হয়’ বলে যে
হাদীছ[2] প্রচারিত আছে, তা ‘মুরসাল’ ও যঈফ
এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী
হওয়ার কারণে অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন,
ক্বদরের রাতেই লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত
ভাগ্যলিপি হ’তে পৃথক করে আগামী এক বছরের
নির্দেশাবলী তথা মৃত্যু, রিযিক ও অন্যান্য
ঘটনাবলী যা সংঘটিত হবে, সেগুলি লেখক
ফেরেশতাগণের নিকটে প্রদান করা হয়।
এভাবেই বর্ণিত হয়েছে হযরত আব্দুল্লাহ বিন
ওমর, মুজাহিদ, আবু মালিক, যাহ্হাক প্রমুখ
সালাফে ছালেহীনের নিকট হ’তে’ (ঐ, তাফসীর
সূরা দুখান ৩-৪ আয়াত) ।
(খ) অতঃপর ‘তাক্বদীর’ সম্পর্কে পবিত্র
কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য হ’ল- ُّﻞُﻛَﻭ ٍﺀْﻰَﺷ
ُﻩْﻮُﻠَﻌَﻓ ﻰِﻓ -ِﺮُﺑُّﺰﻟﺍ ُّﻞُﻛَﻭ ٍﺮْﻴِﻐَﺻ ٍﺮْﻴِﺒَﻛﻭ
ٌﺮَﻄَﺘْﺴُﻣ ‘তাদের সমস্ত কার্যকলাপ রক্ষিত আছে
আমলনামায়’। ‘আছে ছোট ও বড় সবকিছুই
লিপিবদ্ধ’ (ক্বামার ৫৪/৫২-৫৩) -এর ব্যাখ্যা
হাদীছে এসেছে যে, ‘আসমান সমূহ ও যমীন
সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বৎসর পূর্বেই আল্লাহ
স্বীয় মাখলূক্বাতের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ
করেছেন।[3] এক্ষণে ‘শবেবরাতে প্রতিবছর
ভাগ্য নির্ধারিত হয়’ বলে যে ধারণা প্রচলিত
আছে, তার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই।
(২) এ রাতে বান্দার গোনাহসমূহ মাফ করা হয়!
সেজন্য দিনে ছিয়াম পালন ও রাতে ইবাদত
করতে হয়। এ সম্পর্কে প্রধান যে তিনটি
দলীল দেওয়া হয়ে থাকে, তা নিম্নরূপ :
(ক) হযরত আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ﺍَﺫِﺇ ْﺖَﻧﺎَﻛ
ُﺔَﻠْﻴَﻟ ِﻒْﺼِّﻨﻟﺍ ْﻦِﻣ َﻥﺎَﺒْﻌَﺷ ﺍﻮُﻣﻮُﻘَﻓ ﺎَﻬَﻠْﻴَﻟ
ﺍﻮُﻣﻮُﺻَﻭ ﺎَﻫَﺭﺎَﻬَﻧ ‘মধ্য শা‘বান এলে তোমরা
রাত্রিতে ইবাদত কর ও দিবসে ছিয়াম পালন
কর’ (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৮) । হাদীছটি মওযূ‘
বা জাল (যঈফাহ হা/২১৩২) । এর সনদে ‘ইবনু
আবী সাব্রাহ’ নামে একজন রাবী আছেন, যিনি
হাদীছ জালকারী। দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি
ছহীহ হাদীছের বিরোধী হওয়ায়
অগ্রহণযোগ্য। কেননা একই মর্মে প্রসিদ্ধ
‘হাদীছে নুযূল’ যা ইবনু মাজাহর ৯৮ পৃষ্ঠায় মা
আয়েশা (রাঃ) হ’তে (হা/১৩৬৬) এবং বুখারী
শরীফের (মীরাট ছাপা ১৩২৮ হি.) ১৫৩, ৯৩৬
ও ১১১৬ পৃষ্ঠায় যথাক্রমে হাদীছ সংখ্যা
১১৪৫, ৬৩২১ ও ৭৪৯৪ এবং ‘কুতুবে সিত্তাহ’
সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সর্বমোট ৩০ জন
ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।[4] সেখানে
‘মধ্য শা‘বানের রাত্রি’ না বলে ‘প্রতি
রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ’ বলা হয়েছে। অতএব
ছহীহ হাদীছ সমূহের বর্ণনানুযায়ী
আল্লাহপাক প্রতি রাত্রির তৃতীয় প্রহরে
নিম্ন আকাশে অবতরণ করে বান্দাকে ফজরের
সময় পর্যন্ত উপরোক্ত আহবান সমূহ জানিয়ে
থাকেন- শুধুমাত্র নির্দিষ্টভাবে মধ্য
শা‘বানের একটি রাত্রিতে নয় বা ঐ দিন
সূর্যাস্তের পর থেকেও নয়।
উক্ত মর্মে প্রসিদ্ধ ছহীহ হাদীছটি হ’ল-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমাদের মহান
প্রতিপালক প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে
দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, আছ
কি কেউ প্রার্থনাকারী আমি তার প্রার্থনা
কবুল করব। আছ কি কেউ যাচ্ঞাকারী, আমি
তাকে তা প্রদান করব। আছ কি কেউ
ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?’
(বুখারী হা/১১৪৫) । একই রাবী হ’তে ছহীহ
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, যতক্ষণ না ফজর
প্রকাশিত হয়’ (মুসলিম হা/৭৫৮) ।
শবেবরাতের পক্ষে আরও কিছু যঈফ ও মওযূ‘
হাদীছ পেশ করা হয়। যেমন আয়েশা (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৯; মিশকাত
হা/১২৯৯), আবু উমামা (রাঃ ) হ’তে বর্ণিত
(যঈফাহ হা/১৪৫২), আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত (ইবনু মাজাহ হা/১৩৯০; মিশকাত
হা/১৩০৬)। এতদ্ব্যতীত ইমরান বিন হুছাইন
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত ছহীহ মুসলিম হা/১১৬১-
এর ‘সিরারে শা‘বান’ সম্পর্কিত হাদীছটি বলা
হয়। যেটি ছিল মানতের ছিয়াম। তার সাথে
শবেবরাতের কোন সম্পর্ক নেই (মুসলিম, শরহ
নববী সহ) ।
(৩) এ রাতে রূহ সমূহের আগমন ঘটে
ধারণা প্রচলিত আছে যে, এ রাতে রূহগুলি সব
মর্ত্যে নেমে আসে। কিন্তু সত্যি সত্যিই কি
রূহগুলি ইল্লীন বা সিজ্জীন হ’তে
সাময়িকভাবে ছাড়া পেয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে?
তারা কি স্ব স্ব বাড়ীতে বা কবরে ফিরে আসে?
যাদের মাগফেরাত কামনার জন্য আমরা দলে দলে
কবরস্থানের দিকে ছুটে যাই। এমনকি মেয়েদের
জন্য কবর যেয়ারত অসিদ্ধ হ’লেও তাদেরকেও এ
রাতে কবরস্থানে ভিড় করতে দেখা যায়। এ
সম্পর্কে সাধারণতঃ সূরা ক্বদর-এর ৪ ও ৫
আয়াত দু’টিকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করা হয়ে
থাকে। যেখানে বলা হয়েছে, ُﻝَّﺰَﻨَﺗ ُﺔَﻜِﺋﻶﻤْﻟﺍ
ُﺡْﻭُّﺮﻟﺍَﻭ ﺎَﻬْﻴِﻓ ِﻥْﺫﺈِﺑ ْﻢِﻬِّﺑَﺭ ْﻦِﻣ ِّﻞُﻛ ،ٍﺮْﻣَﺍ
،ٌﻡﻼَﺳ َﻰِﻫ ﻰَّﺘَﺣ ِﻊَﻠْﻄَﻣ ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ – ‘সে রাত্রিতে
ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের
প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। সকল বিষয়ে
কেবল শান্তি; ফজরের উদয়কাল পর্যন্ত’।
এখানে ‘সে রাত্রি’ বলতে লায়লাতুল ক্বদর বা
শবেক্বদরকে বুঝানো হয়েছে- যা এই সূরার ১ম,
২য় ও ৩য় আয়াতে বলা হয়েছে এবং ‘রূহ’ বলতে
জিব্রীল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে।
অত্র সূরায় ‘রূহ’ অবতীর্ণ হয় কথাটি রয়েছে
বিধায় হয়তবা অনেকে ধারণা করে নিয়েছেন যে,
মৃত ব্যক্তিদের রূহগুলি সব দুনিয়ায় নেমে
আসে। অথচ এই অর্থ কোন বিদ্বান করেননি।
‘রূহ’ শব্দটি একবচন। এ সম্পর্কে হাফেয ইবনু
কাছীর (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে
রূহ বলতে ফেরেশতাগণের সরদার জিবরাঈলকে
বুঝানো হয়েছে। কেউ বলেন, বিশেষ ধরনের এক
ফেরেশতা। তবে এর কোন ছহীহ ভিত্তি নেই’
(ঐ, তাফসীর সূরা ক্বদর) ।
শা‘বান মাসের করণীয় : রামাযানের আগের মাস
হিসাবে শা‘বান মাসের প্রধান করণীয় হ’ল
অধিকহারে ছিয়াম পালন করা। মা আয়েশা (রাঃ)
বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রামাযান
ব্যতীত অন্য কোন মাসে শা‘বানের ন্যায় এত
অধিক ছিয়াম পালন করতে দেখিনি। শেষের
দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ
করতেন’ (নাসাঈ হা/২১৭৯, সনদ ছহীহ) ।
যারা শা‘বানের প্রথম থেকে নিয়মিত ছিয়াম
পালন করেন, তাদের জন্য শেষের পনের দিন
ছিয়াম পালন করা উচিত নয়। অবশ্য যদি কেউ
অভ্যস্ত হন বা মানত করে থাকেন, তারা শেষের
দিকেও ছিয়াম পালন করবেন।
মোটকথা শা‘বান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম
পালন করা সুন্নাত। ছহীহ দলীল ব্যতীত কোন
দিন বা রাতকে ছিয়াম ও ইবাদতের জন্য
নির্দিষ্ট করা সুন্নাতের বরখেলাফ। অবশ্য
যারা ‘আইয়ামে বীয’-এর তিন দিন নফল
ছিয়ামে অভ্যস্ত, তারা ১৩, ১৪ ও ১৫ই শা‘বানে
উক্ত নিয়তেই ছিয়াম পালন করবেন,
শবেবরাতের নিয়তে নয়। নিয়তের গোলমাল
হ’লে কেবল কষ্ট করাই সার হবে। কেননা
বিদ‘আতী কোন আমল আল্লাহ পাক কবুল করেন না
এবং সকল প্রকার বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা ও
প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র
কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে নিজ নিজ
আমল সমূহ পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার তাওফীক দান
করুন-আমীন!!
বিস্তারিত দ্র : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
প্রকাশিত ‘শবেবরাত’ বই।
[1]. লেখক প্রণীত সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩৩৯
পৃ.; অনেকে ১১ কিংবা ১৫ই শাওয়াল বলেছেন।
[2]. তাফসীর ইবনু জারীর (বৈরূত
১৪০৭/১৯৮৭ : মিসরী ছাপা ১৩২৮ হি. থেকে
মুদ্রিত) ২৪/৬৫ পৃ. সূরা দুখান।
[3]. মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯
‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।
[4]. হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম, মুখতাছার
ছাওয়াইকুল মুরসালাহ (রিয়ায : তাবি),
২/২৩০-৫০।

ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ

ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রত্যাখ্যান
করে
ইসলাম যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে সমর্থন
করে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে ধর্মের
নামেই রয়েছে শান্তির সুবাস, যে ধর্মের
নবীকেই প্রেরণ করা হয়েছে জগতবাসীর জন্য
শান্তি ও রহমত স্বরূপ [1] , সে ধর্ম সম্পর্কে
এমন অপপ্রচার একান্তই বিদ্বেষপ্রসূত।
ইসলাম বিদ্বেষী ভাইদের অপপ্রচারে যাতে
সরলমনা মুসলিম ভাই-বোনেরা বিভ্রান্ত না
হন, তাই আজ পবিত্র কুরআনে এদু’টি শব্দ
কতভাবে এসেছে তা আলোচনা করে এ ব্যাপারে
ইসলামের অবস্থান তুলে ধরার প্রয়াস পাব এ
নিবন্ধে ইনশাআল্লাহ।
অনেক রাজনৈতিক নেতা ও চিন্তাবিদই
আরবী ‘উনুফ’ বা ‘সহিংসতা’ ( Violence )
শব্দ ও ‘ইর‘আব’ বা
‘আতঙ্কসৃষ্টি’ ( Terrorism) শব্দের মধ্যে,
তেমনি ‘উনুফ’ বা ‘সহিংসতা’ ও ‘আল-ইর‘আব
আল-উদওয়ানী’ বা ‘আগ্রাসন’ শব্দের মধ্যে
এবং ‘উনুফ’ বা ‘সহিংসতা’ ও ‘আল-ইর‘আব আয-
যরুরী’ বা ‘ত্রাস’ শব্দের মধ্যে পার্থক্য
করেন না।
বস্তুত বিদেশি শব্দ সন্ত্রাস বা
Terrorism-এর আরবী প্রতিশব্দ ‘ইরহাব’
নয়; ‘ইর‘আব’। কেননা (‘ইরহাব’ শব্দের
ধাতুমূল তথা) ‘রাহ্ব’ (ﺐﻫﺮﻟﺍ) শব্দ ও তা
থেকে নির্গত শব্দাবলি পবিত্র কুরআনে ত্রাস
নয় বরং সাধারণ ভীতি-সঞ্চার অর্থে ব্যবহৃত
হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাতে একটি
নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের
অর্থ মিশে থাকে। অন্যের বেলায় মানুষ
শব্দটি ব্যবহার তার অনিষ্ট থেকে রক্ষা
পাবার জন্য[2] । আর এ শব্দ কিন্তু
‘র‘ব’ (ﺐﻋﺮﻟﺍ) শব্দ থেকে ভিন্ন অর্থ বহন
করে। কেননা ‘র‘ব’ শব্দের অর্থ তীব্র ভীতি-
সঞ্চার অর্থাৎ ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা[3]
। মানুষ এ শব্দটিকে ব্যবহার করে অন্যকে
শায়েস্তা করা এবং তাদের ওপর জুলুম চালানোর
জন্য। আবার এর কতক সংঘটিত হয়
উদ্দেশ্যহীন, অনির্দিষ্ট ও সম্পূর্ণ অজ্ঞাত
কারণে[4] ।
তবে এতদসত্ত্বেও ‘ইরহাব’ ও ইর‘আব’ শব্দ
আরবী ভাষায় ধাতুগতভাবে শুধু মন্দ বা শুধু
ভালোর জন্য ব্যবহৃত হয় না। এদুটি এমন
মাধ্যম যা ভালো বা মন্দের পক্ষাবলম্বন করে
না। উভয় শব্দ সত্য প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়
প্রতিরোধ এবং নিপীড়িতের সাহায্যার্থে
ব্যবহৃত হয়। তেমনি শব্দদুটিকে নিরপরাধ
নিরস্ত্র মানুষের ওপর অত্যাচার,
অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ও অধিকার হরণ
এবং তাদের ভূমি দখলের জন্যও ব্যবহৃত হয়।
তবে ‘উনুফ’ ও ‘ইরহাব’ শব্দের মধ্যে সুস্পষ্ট
পার্থক্য বিদ্যমান। ‘উনুফ’ অর্থ চিন্তা,
মতবাদ, দর্শন কিংবা সাধারণ বা বিশেষ
উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে সহিংস মাধ্যম বা উপায়
অবলম্বন করা। যেমন : আঘাত, শারীরিক
নির্যাতন বা অস্ত্র ব্যবহার। পক্ষান্তরে
‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ শব্দদুটি এর চেয়ে ব্যাপক
অর্থ বহন করে। কারণ তা হতে পারে সহিংস
উপায়ে আবার হতে পারে অহিংস উপায়ে। যেমন
: আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভয় দেখানো।
(তাকে এভাবে ইঙ্গিতে জবাই করার ভয়
দেখানো।) অথবা কথার দ্বারা ভয় দেখানো।
যেমন : অর্থনৈতিকভাবে বয়কটের হুমকি,
কঠোরতা আরোপের হুমকি, না খেয়ে মারার
হুমকি কিংবা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের
হুমকি ইত্যাদি। ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’
শব্দদুটি ভেটোর ক্ষমতা প্রয়োগ অথবা
জালেমের নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেয়াকেও
অন্তর্ভুক্ত করে। অসত্য অভিযোগ প্রচারের
মাধ্যমেও ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ সংঘটিত হতে
পারে। যেমন : টার্গেট গোষ্ঠীর সুনাম ক্ষুণ্ন
করতে বা তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে
অপপ্রচার ও প্রচলিত মিডিয়া যুদ্ধের
কৌশল গ্রহণ করা।
এই ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ কখনো হামলার
শিকার ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক হত্যা করে না।
বরং তাকে দীর্ঘ শাস্তি ও ধারাবাহিক
নির্যাতন করে ধুঁকিয়ে ধুঁকিয়ে মারে। অর্থাৎ
এ দুটি কখনো তৎক্ষণাৎ না মেরে ধীরে ধীরে
মৃত্যু ডেকে আনে। এটি করা হয় তাকে গৃহহীন
অবস্থা ও ক্ষুধার মুখে ঠেলে দেয়ার মাধ্যমে।
আমাদের চারপাশে লক্ষ্য করলে দেখা যায়,
ব্যাপকার্থে যারা ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ করছে-
যার মধ্যে রয়েছে সত্য প্রতিষ্ঠা করা ও
নির্যাতন প্রতিরোধ করা অথবা অন্যায়কে
প্রশ্রয় দেয়া ও অত্যাচারীকে আশ্রয় দেয়া-
এরা প্রধানত তিন দলে বিভক্ত। যথা :
১. যারা নীতি-নৈতিকতার বাইরে গিয়ে
শব্দদুটিকে ব্যবহার করে তাদের নির্যাতন বা
অন্যায়কে বৈধতা দেবার জন্য। আখিরাতে
বিশ্বাসী হোক বা না হোক- এরা মানবস্বভাব
ও ঐশী শিক্ষার বিরোধী। যার মধ্যে
ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শও রয়েছে।
২. যারা যথাসাধ্য প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে
থেকে শব্দদুটি ব্যবহার করে আত্মরক্ষা কিংবা
অক্ষম ও নিরপরাধ লোকদের থেকে জুলুম
প্রতিরোধের উদ্দেশে। তারা আখিরাত বা
শাশ্বত জীবনে বিশ্বাস রাখে না। তারা এসব
করে আল্লাহ প্রদত্ত সুস্থ বিবেকের তাড়নায়।
৩. যারা শব্দদুটি ব্যবহার করে আত্মরক্ষা বা
অক্ষম ও নিরপরাধ লোকদের ওপর জুলুম
প্রতিরোধে যথাসম্ভব শরীয়ত ও প্রাকৃতিক
নিয়মের মধ্যে থেকে। তারা বিশ্বাস করে
এজন্য তারা আখিরাত বা শাশ্বত জীবনে
বিশাল প্রতিদান লাভ করবে। অতএব, তারা
এসব করে সুস্থ বিবেক ও অনন্ত জীবনের
বিশাল প্রতিদানের প্রত্যাশায়।
এ জন্যই দেখা যায় শেষোক্ত দলটি
আত্মোৎসর্গ ও আত্ম নিবেদনে সবচে বেশি
আগ্রহী ও সাহসী হয়। কেননা ,তার দৃষ্টিতে
পার্থিব জীবন কেবল উসিলা বা বিধেয়
মাত্র; মাকসাদ বা উদ্দেশ্য নয়। সম্ভবত
এটিই মানুষকে নিজেদের সম্মানিত স্থান,
নিজেদের মাতৃভূমি ও নিপীড়িত স্বজনদের
রক্ষায় প্রাণোৎসর্গমূলক জিহাদী
কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।
সাধারণভাবে আত্মঘাতমূলক তৎপরতার
ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের
আইন ব্যাখ্যাকারী তথা ফিকহবিদদের
মতভিন্নতা হেতু বিভিন্ন হয়। তাদের অনেকে
কাজটিকে বৈধ বলেন এবং এ কাজের প্রতি
উদ্বুদ্ধও করেন। যতক্ষণ তা হয়
আত্মরক্ষার্থে এবং অন্যায়ভাবে অন্যের ওপর
সীমালঙ্ঘনের ইচ্ছে ছাড়া। উপরন্তু তা
নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধেও পরিচালিত
না হয়, যাদের ওপর ইসলাম যুদ্ধক্ষেত্রে
পর্যন্ত হামলার অনুমতি দেয় না। যেমন :
নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও নিরস্ত্র ব্যক্তি।
অনুরূপভাবে সব রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই
মানবরচিত আইন সেনাদেরকে নিজের দৃষ্টিতে
বৈধ যুদ্ধক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিতে
এমনকি জীবন উৎসর্গ করতে পর্যন্ত
উৎসাহিত করে। পক্ষান্তরে অনেক
শরীয়তবিদ কাজটিকে আত্মহত্যার সঙ্গে
তুলনা করে হারাম বলে অভিহিত করেন।
তাদের মতে, জীবনের ঝুঁকি নেয়া ভিন্ন
জিনিস। কারণ সেখানে জীবন রক্ষার
সম্ভাবনাই প্রবল। তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে
ঝুঁকি গ্রহণকারীর মৃত্যুর কোনো অভিপ্রায়ই
থাকে না।
আসমানী রিসালত বা ঐশী বার্তাপ্রাপ্ত ধর্ম
পালনকারী ব্যক্তিমাত্রেই জানেন, দুনিয়ার
এ জীবন মূলত একটি পরীক্ষাতুল্য। এর
মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনে পুরস্কারযোগ্য
সৎকর্মশীল এবং অনন্ত জীবনে
তিরস্কারযোগ্য অসৎ ব্যক্তির মধ্যে
পার্থক্য রচনা করা হয়। আর সত্যপন্থী ও
মিথ্যাপন্থীর সংঘাত এবং নিপীড়ক ও
নিপীড়িতের দ্বন্দ্ব এ পরীক্ষার একটি অংশ
মাত্র। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে
ইরশাদ করেন,
ﺎَﻟْﻮَﻟَﻭ ُﻊْﻓَﺩ ِﻪَّﻠﻟﺍ ْﻢُﻬَﻀْﻌَﺑ َﺱﺎَّﻨﻟﺍ
ٍﺾْﻌَﺒِﺑ ْﺖَﻣِّﺪُﻬَﻟ ُﻊِﻣﺍَﻮَﺻ ٌﻊَﻴِﺑَﻭ
ٌﺕﺍَﻮَﻠَﺻَﻭ ُﺪِﺟﺎَﺴَﻣَﻭ ُﺮَﻛْﺬُﻳ ﺎَﻬﻴِﻓ
ُﻢْﺳﺍ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺍًﺮﻴِﺜَﻛ َّﻥَﺮُﺼْﻨَﻴَﻟَﻭ
ُﻪَّﻠﻟﺍ ْﻦَﻣ ُﻩُﺮُﺼْﻨَﻳ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ ٌّﻱِﻮَﻘَﻟ
ٌﺰﻳِﺰَﻋ ‏( 40 ‏)
‘আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর
দল দ্বারা দমন না করতেন, তবে বিধস্ত হয়ে
যেত খৃস্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম, গির্জা,
ইয়াহূদীদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ-
যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা
হয়।’[5]
‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ কখনো সংঘটনের ইচ্ছা
ছাড়া সংঘটিত হতে পারে। ভুলক্রমেও হতে
পারে কখনো। তবে এ ব্যাপারে তাকে সতর্ক
করার পরও যদি সে এমন কাজ থেকে নিবৃত না
হয়, যা ‘ইরহাব’ বা ‘ইর‘আব’-এর কারণ হয়,
তখন তা ইচ্ছাকৃত ‘ইরহাব’ বা ‘ইর‘আব’ বলেই
গণ্য হবে।
ইসলাম যেহেতু মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতের
ব্যাপক শান্তি কিংবা অন্তত নানা ধর্মের
মানুষের মধ্যে শুধু দুনিয়ার শান্তির প্রতি
আহ্বান জানায়। তাই এ ধর্ম অন্যের ওপর
অত্যাচার বা সীমালঙ্ঘনমূলক ‘ইরহাব’ ও
‘ইর‘আব’ সংঘটনকে কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা
করে। তীব্রভাবে একে প্রত্যাখান করে এবং
সীমালঙ্ঘন বা উৎপীড়নমূলক ‘ইরহাব’ ও
‘ইর‘আব’ এর জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
নিশ্চিত করে।
হ্যা, ইসলাম এতদুভয়ের অনুমতি দেয় ঠিক;
তবে তা শাস্তিকে অপরাধী পর্যন্ত সীমিত
রাখা এবং অনুমোদিত ক্ষেত্র অতিক্রম না
করার শর্তে। অনুমোদিত ক্ষেত্র হলো,
আত্মরক্ষা, শত্রু দমন ও নির্যাতিতের
সাহায্যের জন্য। বিশেষত জুলুম প্রতিরোধের
কোনো ক্ষমতাই সেসব দুর্বল ও অক্ষম
ব্যক্তির নেই। একেই ইসলামে ‘জিহাদ’ [6]
অথবা ‘কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ’ বলা হয়।
যার উদ্দেশ্য কেবল নিরস্ত্র, অক্ষম ও
দুর্বলদের থেকে জুলুম তুলে দেয়া। আল্লাহ
তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﺎَﻣَﻭ ْﻢُﻜَﻟ ﺎَﻟ َﻥﻮُﻠِﺗﺎَﻘُﺗ ﻲِﻓ ِﻞﻴِﺒَﺳ
ِﻪَّﻠﻟﺍ َﻦﻴِﻔَﻌْﻀَﺘْﺴُﻤْﻟﺍَﻭ َﻦِﻣ
ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍَﻭ ِﻥﺍَﺪْﻟِﻮْﻟﺍَﻭ
َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ َﻥﻮُﻟﻮُﻘَﻳ ﺎَﻨَّﺑَﺭ ﺎَﻨْﺟِﺮْﺧَﺃ
ْﻦِﻣ ِﻩِﺬَﻫ ِﺔَﻳْﺮَﻘْﻟﺍ ﺎَﻬُﻠْﻫَﺃ ِﻢِﻟﺎَّﻈﻟﺍ
ﻞَﻌْﺟﺍَﻭ ﺎَﻨَﻟ ْﻦِﻣ َﻚْﻧُﺪَﻟ ﺎًّﻴِﻟَﻭ
ﻞَﻌْﺟﺍَﻭ ﺎَﻨَﻟ ْﻦِﻣ َﻚْﻧُﺪَﻟ ﺍًﺮﻴِﺼَﻧ
‏(75 ‏)
‘আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর
রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ,
নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব,
আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে’ যার
অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য
আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক
নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার
পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’[7]
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ﻰِّﻧِﺇ ُﺖْﻣَّﺮَﺣ ﻰَﻠَﻋ ﻰِﺴْﻔَﻧ َﻢْﻠُّﻈﻟﺍ
ﻰَﻠَﻋَﻭ ﻯِﺩﺎَﺒِﻋ َﻼَﻓ .ﺍﻮُﻤَﻟﺎَﻈَﺗ
‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম
হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও একে
হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের
ওপর জুলুম করো না।’ [8]
এ কারণেই মুসলমানদের ক্ষেত্রে এমন
বিচিত্র নয় যে তারা তাদের প্রজা সাধারণ
(যিম্মী) বা সংখ্যালঘুদের বাঁচাতেও জিহাদ
করছে। [9] এককথায়, কারও ওপর জুলুম
চালানোর জন্য নয়; ইসলামে ‘জিহাদ’ নামক
বিধান রাখা হয়েছে বৈধ প্রতিরোধের জন্য।
আর নির্যাতন প্রতিরোধের পদক্ষেপকে
গণতান্ত্রিক ও অন্যান্য দেশের মানব রচিত
সকল ব্যবস্থাই সমর্থন করে। এ উদ্দেশ্যেই
তো সকল রাষ্ট্র শক্তিশালী সেনাবাহিনী
গঠন করে। নিজেকে সুসজ্জিত করে বিধ্বংসী
সব অস্ত্র দিয়ে।
আত্মরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক
ভীতিপ্রদর্শনের মধ্যে পার্থক্য করবো
কিভাবে
ইতোমধ্যে আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে,
ভীতিপ্রদর্শন ও ভয় দেখানো শব্দটিকে
সন্ত্রাসী (জালেম) ও সন্ত্রাসের শিকার
(মাজলুম) উভয়েই ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন
হলো, তাহলে আমরা এদুয়ের মধ্যে জালেম ও
মজলুমকে পার্থক্য করবো কিভাবে?
আত্মরক্ষার্থে ভীতিপ্রদর্শন আর
সন্ত্রাসমূলক ভীতিপ্রদর্শনের মধ্যে
মোটাদাগে পার্থক্য এই :
অন্যের বিরুদ্ধে কে প্রথমে ত্রাস বা
সন্ত্রাসের সূচনা করেছে? যে সূচনা করেছে সে
চর্চা করছে আক্রমণাত্মক ভীতিপ্রদর্শন আর
যিনি প্রতিরোধ করছেন তিনি হলেন
আত্মরক্ষাকারী। একইভাবে যিনি জালেমকে
বস্তুগত বা নৈতিকভাবে সমর্থন করবেন
তিনি আক্রমণাত্মক ভীতিপ্রদর্শনকারীর
মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন। পক্ষান্তরে যিনি
মজলুমকে সাহায্য করবেন তিনি
আত্মরক্ষাকারী বলে গণ্য হবেন।
এটা ঠিক সচরাচর সহজে সূচনাকারী শনাক্ত
করা যায় না। কারণ, জালেম পক্ষের গরিমা ও
অহঙ্কার বেশি হয়। নিপীড়কের শক্তি হয়
পর্বতপ্রমাণ। এমনকি মজলুমের চেয়ে
জালেমের প্রমাণও হয় দৃঢ়তর। তথাপি
বিষয়টি অন্যভাবে খোলাসা করা সম্ভব।
তবে সূচনাকারী শনাক্ত করা মুশকিল হলে
অন্যভাবে তা চিহ্নিত করা যায়। যেমন আমরা
উভয় পক্ষের মধ্যে মিমাংসার চেষ্টা করে
দেখবো। যে পক্ষ ইনসাফভিত্তিক সালিশের
সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে সে-
ই জালেম, হোক সে মুসলিম। কারণ আল্লাহ
তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ْﻥِﺇَﻭ ِﻥﺎَﺘَﻔِﺋﺎَﻃ َﻦِﻣ َﻦﻴِﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ
ﺍﻮُﻠَﺘَﺘْﻗﺍ ﺍﻮُﺤِﻠْﺻَﺄَﻓ ﺎَﻤُﻬَﻨْﻴَﺑ
ْﻥِﺈَﻓ ْﺖَﻐَﺑ ﺎَﻤُﻫﺍَﺪْﺣِﺇ ﻰَﻠَﻋ ﻯَﺮْﺧُﺄْﻟﺍ
ﺍﻮُﻠِﺗﺎَﻘَﻓ ﻲِﺘَّﻟﺍ ﻲِﻐْﺒَﺗ ﻰَّﺘَﺣ َﺀﻲِﻔَﺗ
ﻰَﻟِﺇ ِﺮْﻣَﺃ ِﻪَّﻠﻟﺍ ْﻥِﺈَﻓ ْﺕَﺀﺎَﻓ
ﺍﻮُﺤِﻠْﺻَﺄَﻓ ﺎَﻤُﻬَﻨْﻴَﺑ ِﻝْﺪَﻌْﻟﺎِﺑ
ﺍﻮُﻄِﺴْﻗَﺃَﻭ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ ُّﺐِﺤُﻳ
َﻦﻴِﻄِﺴْﻘُﻤْﻟﺍ ‏(9 ‏)
‘আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়,
তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে
দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের
ওপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি
বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ
কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর
নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি
দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে
ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার
কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের
ভালোবাসেন।’[10]
সন্ত্রাস ও আগ্রাসী হামলা কখনো ভিন্ন রূপ
ধারণ করে। তা হলো, অভিযোগ প্রমাণ না
করেই কোনো মানুষকে শাস্তি দেয়া। কিংবা
কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের
ওপর নির্ভর করে একটি জাতিকে বা পুরো
মানব সমাজকে শাস্তি দেয়া। এ কাজ ইসলাম
কিছুতেই সমর্থন করে না। শাস্তি দিলে তা
অবশ্যই অনুমোদিত সীমা অতিক্রম না করতে
হবে। অভিযোগ প্রমাণের পরও শাস্তি থাকতে
হবে যুক্তিগ্রাহ্য সীমারেখার ভেতর। পরন্তু
শাস্তির প্রকৃতিও হওয়া চাই অভিন্ন।
অত্যাচারী বা জালেমের ভিন্নতায় তা যেন
ভিন্ন ভিন্ন না হয়। অতএব যালেম দুর্বল
হলে বা মিত্র না হলে তার শাস্তি কঠোর হবে
না। তেমনি যালেম শক্তিধর, মিত্র বা তার
কাছে কোনো স্বার্থ থাকলে তার শাস্তি লঘু
করা হবে না। সর্বদা শাস্তি হবে ইনসাফের
আলোয় উদ্ভাসিত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা
আমাদেরকে সর্বাবস্থায় ইনসাফের নির্দেশ
দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
ﺎَﻳ ﺎَﻬُّﻳَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺍﻮُﻨَﻣَﺁ ﺍﻮُﻧﻮُﻛ
َﻦﻴِﻣﺍَّﻮَﻗ ِﻪَّﻠِﻟ َﺀﺍَﺪَﻬُﺷ ِﻂْﺴِﻘْﻟﺎِﺑ
ﺎَﻟَﻭ ْﻢُﻜَّﻨَﻣِﺮْﺠَﻳ ُﻥَﺂَﻨَﺷ ٍﻡْﻮَﻗ ﻰَﻠَﻋ
ﺎَّﻟَﺃ ﺍﻮُﻟِﺪْﻌَﺗ ﺍﻮُﻟِﺪْﻋﺍ َﻮُﻫ ُﺏَﺮْﻗَﺃ
ﻯَﻮْﻘَّﺘﻠِﻟ ﺍﻮُﻘَّﺗﺍَﻭ َﻪَّﻠﻟﺍ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ
ٌﺮﻴِﺒَﺧ ﺎَﻤِﺑ َﻥﻮُﻠَﻤْﻌَﺗ ‏(8 ‏)
‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের
সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান
হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন
তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে,
তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ
কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয়
কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে
বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’ [11]
তবে ইসলামের এসব সুস্পষ্ট নীতিমালা
থাকার পরও মুসলিম নামধারী অনেকে
ইসলামের মহান আদর্শকে উপেক্ষা করে।
আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অমান্য করে তারা
সন্ত্রাস ও আগ্রাসনের পথ বেছে নেয়। এটা
স্বাভাবিক যে প্রতিটি রাষ্ট্রই তার
নাগরিকদের সঠিক আচরণ শিক্ষা দেয়।
তারপরও তো প্রতিটি দেশেই অপরাধীতে
পূর্ণ অনেক কয়েদখানা থাকে। তাই বলে কি
আমরা বলবো যে অমুক জাতি পুরোটাই
অপরাধী? কিংবা অমুক জাতি তার সদস্যদের
অপরাধ শিক্ষা দেয়? আমেরিকার এক
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৮২-১৯৯৬ সাল
পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৫টি
অন্যায় হামলা বা সন্ত্রাস সংঘটিত হয়েছে।
এর অধিকাংশ সংঘটিত হয়েছে খ্রিস্টান
দ্বারা, তারপর ইহুদিদের দ্বারা। তাই বলে কি
আমরা বলবো সকল খ্রিস্টান বা সব ইহুদিই
সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী? অবশ্যই না।
অতএব আজ যারা ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাস বা
জঙ্গিবাদের সম্পর্ক আবিষ্কার করতে চান,
কুরআনের ভেতর অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে
মানবাধিকার পরিপন্থী কথা তালাশ করে
হয়রান হন, তারা হয়তো অমুসলিমদের
প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে কিংবা ইসলাম বিরুদ্ধ
শক্তির প্রভাবে এমনটি করে থাকেন।
ইদানীং মুসলিম নামধারী অনেককেও দেখা
যায় ইসলাম-আরাতীদের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাতে।
তাদের সুরে কথা বলতে। বরং ইসলামের
অনিষ্ট চিন্তায় অমুসলিমদের চেয়ে এসব
মুসলিম নামধারীরাই একধাপ এগিয়ে।
তাদের জন্য থাকছে আমাদের বুকভরা ভালোবাসা,
একরাশ করুণা আর অনন্ত শুভ কামনা। আল্লাহ
তা‘আলা তাদেরকে এবং সকল মুসলিমকে
হেদায়াত দিন। সবাইকে ইসলাম বিরোধী
শক্তির অপ্রচারের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার
তাওফীক দিন। আমীন।
কৃতজ্ঞতা-স্বীকার : ড. সাঈদ ইসমাঈল চীনী,
তাসাউলাত জাদালিয়্যাহ হাওলাল ইসলাম ও
তালীকাত।
[1] . পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আম্বিয়া,
আয়াত : ১০৭।
[2] . সূরা তাওবা : ৩৪; নাহল : ৫১; আম্বিয়া :
৯০; কাসাস : ৩২; হাদীদ : ২৭; হাশর : ১৩।
[3] . সূরা আলে-ইমরান : ১৫১; আনফাল : ১২;
আহযাব : ২৬; হাশর : ২।
[4] . ইবন মানযুর, আল-বুসতানী।
[5] . হজ : ৪০।
[6] . যিনিই আরবী ‘জিহাদ’ শব্দ ও এর
ধাতুমূল নিয়ে চিন্তা করবেন, দেখবেন তাতে
পূর্বে সংঘটিত কোনো কিছুর প্রতিরোধ অর্থ
লেপ্টে আছে। কোনো হামলার সূচনার অর্থ
নেই তাতে। যেমন দেখতে পারেন, ইবনুল
কায়্যিম : ৩/৫-৯।
[7] . নিসা : ৭৫।
[8] . মুসলিম : ৬৭৪০।
[9] . ইবন কুদামা মুকাদ্দেসী; ইবন তাইমিয়া
হাররানী, আশ-শিরাজী; আল-হানাফী।
[10] . সূরা আল-হুযরাত, আয়াত : ০৯।
[11] . সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৮।
_________________________________________
________________________________________
সংকলক: আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা: মো: আবদুল কাদের
সূত্র: ইসলামহাউজ

মৃত ব্যক্তি কি কোন জীবিত ব্যক্তির উপকার করতে পারে?

মৃত ব্যক্তি কি কোন মানুষের উপকার করতে
পারে?
__________________________________
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন : মৃত ব্যক্তি
নিজের কোন উপকার করতে পারে না।
তিনি বলেছেন :মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে
তখন তার আমল বন্ধ
হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে
পেতে থাকে।
১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে
মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে)
২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম
(বিদ্যা)
৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে।
বর্ণনায়: মুসলিম
হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা গেল
মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ, ক্ষমা
প্রার্থনার ফলে উপকার পেতে পারে।
কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের থেকে
এরূপ কিছু আশা করতে পারেনা।
যখন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, কোন
আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল
আমল বন্ধ হয়ে যায়। তার আমল দিয়ে সে
কোন উপকার লাভ করতে পারে না, তখন
আমরা কিভাবে বিশ্বাস করি যে, অমুক
ব্যক্তি কবরে জীবিত আছেন? তার সাথে
আমাদের যোগাযোগ হয়? তিনি আমাদের
উপকার করতে পারেন? আমাদের প্রার্থনা
শুনেন ও আল্লাহর কাছে শুপারিশ করেন?
এগুলো সব অসার বিশ্বাস। এগুলো যে শিরক
তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মৃত ব্যক্তিরা যে কবরে শুনতে পায় না,
কেহ তাদেরকে কিছু শুনাতে পারে না
এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনে
ইরশাদ করেছেন। তিনি নবীকে সম্বোধন
করে বলেছেন:নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে
পারবে না,
আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে
না। (সূরা নামল, আয়াত ৮০)
যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোন মৃতকে কিছু শোনাতে
পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ কিভাবে এ
অসাধ্য সাধন করতে পারে? কাজেই আমরা
মৃতদের কবরে যেয়ে যা কিছু বলি, যা কিছু
প্রার্থনা করি তা তারা কিছুই শুনতে পায়
না। যখন তারা শুনতেই পায় না, তখন তারা
প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কিভাবে কবুল
করবে? কিভাবে তাদের হাজত-আকাংখা
পূরণ করবে?
আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা
করা হয়, তা সবই বাতিল।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না,
যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং
তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব
তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি
যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ
যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে
তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর
তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর
অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই।
তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে
তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি
দয়ালু (সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭)
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ
ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে
দুআ-প্রার্থনা করা হয় তা সবই বাতিল।
আরো স্পষ্ট হল যে, এগুলো কাউকে উপকার
করতে পারে না বা ক্ষতি করতে পারে না।
যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-
প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না
তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন হবে? কেন
তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে? কেন
তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে?
অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়,
অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে
গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে এই দুআ
করেছিলাম। দুআ কবুল হয়েছে, যা
চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি। এ
ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি
মিথ্যারোপের শামিল।
হ্যা, হতে পারে অলী আওলিয়াদের
মাজারে গিয়ে কিছু চাইলে তা যেন অর্জন
হবে না এ কথা বলা যায় না। তবে অর্জন
হলে সেটা দু কারণে হতে পারে:
এক. অলীর মাজারে যেয়ে যা চাওয়া
হয়েছে তা পুরণ করা কোন সৃষ্টিজীবের
পক্ষে সম্ভব হবে অথবা হবে না। যদি সম্ভব
হয়, তাহলে হতে পারে শয়তান প্রার্থীত
বিষয়গুলোকে অর্জন করিয়ে দিয়েছে।
যাতে শিরকের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। যা
চেয়েছে শয়তান সেগুলো তাকে দিয়েছে।
কেননা যে সকল স্থানে আল্লাহ তাআলা
ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হয় সে সকল
স্থানে শয়তান বিচরণ করে। যখন শয়তান
দেখল কোন ব্যক্তি কবর পূজা করছে, তখন
সে তাকে সাহায্য করে থাকে। যেমন সে
সাহায্য করে মূর্তিপূজারীদের। সে তাদের
এ সকল শিরকি কাজগুলোকে তাদের কাছে
সুশোভিত করে উপস্থাপন করে থাকে বলে
আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বহু স্থানে
উল্লেখ করেছেন।
এমনিভাবে শয়তান গণক ও জোতিষিদের
সাহায্য করে থাকে তাদের কাজ-কর্মে।
তাই অনেক সময় এ সকল গণকদের কথা ও
ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হতে দেখা
যায়।
এমনিভাবে শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ
করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলে থাকে অমুক
মাজারে যাও, তাহলে কাজ হবে। পরে সে
যখন মাজারে যায় তখন শয়তান মানুষের রূপ
ধারণ করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে।
ফলে বিপদে পড়া মানুষটি মনে করে
মাজারে শায়িত অলী তাকে সাহায্য
করেছে। এমনিভাবে শয়তান মানব সমাজে
শিরকের প্রচলন ঘটিয়েছে ও শিরকের
প্রসার করে যাচ্ছে।
দুই. আর যদি প্রার্থীত বিষয়টি এমন হয় যা
পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই
সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ বিষয়টি
অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা
ছিল। কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির
অর্জন হয়নি।
তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে
হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয়
বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই
কুসংস্কার। কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ
প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ
থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও
বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে
শায়িত অলীর কারণে হয়েছে। এর নামই হল
ঈমান। এর নামই হল নির্ভেজাল তাওহীদ।
তাওহীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়,
কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে ব্যক্তির
মুক্তি নেই।
অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের
পার্থক্য জানে না। মুজিযা আর কারামত
কি তা বুঝে না। মুজিযা হল এমন অলৌকিক
বিষয় যা নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। আর
কারামত হল এমন অলৌকিক বিষয় যা
আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের থেকে
প্রকাশ পায়। মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল
নবী বা রাসূল হওয়া। আর কারামত
প্রকাশের শর্ত হল নেককার ও মুত্তাকী
হওয়া। অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-
ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে
অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও
নয়, কারামতও নয়। সেটা হল দাজ্জালী
ধোকা-বাজি বা প্রতারণা।
অনেক অজ্ঞ লোক ধারনা করে থাকে
মুজিযা বা কারামত, সাধনা বা চেষ্টা-
প্রচেষ্টা করে অর্জন করা যায়। বা মানুষ
ইচ্ছা করলেই তা করতে পারে। তাই এ সকল
অজ্ঞ লোকেরা ধারনা করে অলী
আউলিয়াগণ ইচ্ছা করলে কারামতের
মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটাতে পারেন, বিপদ
থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন।
কিন্তু আসল ব্যাপার হল, কারামত কোন
ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র
আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মানুষ ইচ্ছা করলে
কখনো কারামত সংঘটিত করতে পারে না,
সে যত বড় অলী বা পীর হোক না কেন।
কোন বিবেকমান মানুষ বিশ্বাস করে না
যে, একজন মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর
তার কিছু করার ক্ষমতা থাকে। আবার যদি
সে কবরে চলে যায় তাহলে কিভাবে সে
কিছু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে?
এ ধরনের কথা তারাই বিশ্বাস করতে
পারে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে যাদের কোন
নজীর নেই। অলী তো দূরের কথা কোন
নবীর কবরও পূজা করা জায়েয নেই। নবীর
কবরতো পরের কথা, জীবিত থাকা কালে
কোন নবীর ইবাদত করা, বা তাকে দেবতা
জ্ঞান করে পূজা করা যায় না। এটা
ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ
তাআলা বলেন :কোন মানুষের জন্য সংগত
নয় যে, আল্লাহ
তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান
করার পর সে মানুষকে বলবে, তোমরা
আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে
যাও। বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী
(আল্লাহ ভক্ত) হও। যেহেতু তোমরা কিতাব
শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। আর
তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না
যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ
রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর
তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ
দেবেন? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০