কুরআন ও সহীহ্ হাদিসের আলোকে তওবার বিবরণ

তাওবা হলো অতীতের গুনাহের
অনুশোচনা, দুনিয়ার কোন
উপকারিতা অর্জন
অথবা ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য নয়
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই
সার্বক্ষণিকভাবে সে গুনাহ
ছেড়ে দেওয়ার উপর দৃঢ়
প্রতিজ্ঞা করা। জবরদস্তির
মাধ্যমে নয় বরং শরী‘আতের বিধি-
নিষেধ তার উপর বহাল
থাকবে ততক্ষণ স্বেচ্ছায় এ
প্রতিজ্ঞা করবে। ইবাদতসমূহের
মধ্যে তাওবা অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
তাওবার আবশ্যকীয়তা, ব্যাপকতা ও
তাতে নিয়মানুবর্তিতার পরিমণ্ডল
থেকে পাপী-তাপী যেমন বহির্ভূত
নয়, তেমনি আল্লাহর ওলীগণ ও
নবীগণও তার
পরিসীমা থেকে বাইরে নন।
এটি সর্বাবস্থায় সর্বত্র সকলের জন্য
প্রযোজ্য। তাওবা মানুষের জীবনের
একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তাওবার পরিচয়
তাওবা (ﺔﺑﻮﺗ) শব্দের তা (ﺎﺗ)
বর্ণে যবর ওয়া (ﻭﺍﻭ) বর্ণে সুকুন
যোগে গঠিত হয়। আভিধানিক অর্থ
পাপ থেকে ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন
করা, প্রত্যাগমন করা ইত্যাদি।
বিশেষ পদে অর্থ অনুতাপ, অনুশোচনা।
ড. মুহাম্মদ ড. হামিদ সাদিক বলেন:
ﺭﺪﺼﻣ :ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ﺏﺎﺗ ﻉﻮﺟﺮﻟﺍ ، ﻦﻋ
ﺐﻧﺬﻟﺍ ﻡﺪﻨﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﺐﻧﺬﻟﺍ ﻞﻌﻓ ، ﺪﻘﻋﻭ
ﻡﺰﻌﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﻡﺪﻋ ﻪﻴﻟﺇ ﺓﺩﻮﻌﻟﺍ ﻪﺟﻮﺘﻟﺍﻭ
ﻰﻟﺇ ﻪﻠﻟﺍ ﺓﺮﻔﻐﻤﻠﻟ ﺎﺒﻠﻃ .
(‘তাবা (ﺏﺎﺗ) ক্রিয়া হতে তাওবা
(ﺔﺑﻮﺗ) হলো মাসদার। অর্থ পাপ
থেকে ফিরে আসা। কৃতপাপের
অনুশোচনা করা। পুনরায় না করার
দৃঢ়সংকল্প করা।’ শব্দটি মহান
সৃষ্টিকর্তার সত্তা ও তাঁর সৃষ্টিকুল
বান্দাগণ উভয়ের সম্পর্কে ব্যবহৃত
হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার জন্য এ
মর্মে যে, তিনি স্বীয় মাগফিরাত
(মার্জনা) ও রাহমাত (করুণা)
সহকারে বান্দাহদের
প্রতি করুণা দৃষ্টি প্রদান করেন
অর্থাৎ তিনি বান্দাদের
তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻱِﺬَّﻟﭐ َﻮُﻫَﻭ ُﻞَﺒۡﻘَﻳ َﺔَﺑۡﻮَّﺘﻟﭐ ۦِﻩِﺩﺎَﺒِﻋ ۡﻦَﻋ
١٠٤ ﴾ ‏[ :ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ١٠٤ ]
‘তিনি স্বীয় বান্দাদের
তাওবা কবুল করেন।’[1]
এতে এ অর্থের প্রকাশ ঘটায় মূলত
আল্লাহ তা‘আলার সাথে এই
ক্রিয়াটির সম্বন্ধ স্থাপন তাঁর
ক্ষমা-মাগফিরাত ও দয়া-
রাহমাতের বহিঃপ্রকাশ।
তবে উভয়টির মধ্যে পার্থক্য
নির্ণয়ের জন্য শব্দটি আল্লাহর
সাথে সম্বন্ধিত হলে আল-কুরআনে তা
ﻰﻠﻋ সংযোজক ﺔﻠﺻ সহকারে ব্যবহৃত
হয়। যাতে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও সমুন্নত
অবস্থান প্রকাশ পায়। যেমন, আল্লাহ
তা‘আলা বলেন:
﴿ َّﻢُﺛ َﺏﺎَﺗ ُﻪَّﻠﻟﭐ ﴾ۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ ‏[:ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ٧١ ]
‘অতঃপর আল্লাহ তাদের
প্রতি ক্ষমাশীল হলে তাদের
তাওবা কবুল করলেন।’[2]
কারও কারও মতে তাওবা অর্থ
অনুতাপের সাথে পাপ পরিহার
করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ْﺍٓﻮُﺑﻮُﺗَﻭ ﻰَﻟِﺇ ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﻪُّﻳَﺃ
َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐ ﴾َﻥﻮُﺤِﻠۡﻔُﺗ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ‏[ :ﺭﻮﻨﻟﺍ
٣١]
‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলেই
আল্লাহর কাছে তাওবা কর,
যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
’[3]
মুফতী মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান
বলেন:
:ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ﻉﻮﺟﺮﻟﺍ ﻮﻫ ﻰﻟﺇ ﻪﻠﻟﺍ ﻞﺤﺑ
ﺭﺍﺮﺻﻹﺍ ﺪﻘﻋ ﻦﻋ ﺐﻠﻘﻟﺍ ﻡﺎﻴﻘﻟﺍ ﻢﺛ ﻞﻜﺑ
ﻕﻮﻘﺣ ﺏﺮﻟﺍ .
‘অন্তর হতে গোনাহ না করার
সংকল্পের মাধ্যমে আল্লাহর
দিকে প্রত্যাবর্তন করা। অতঃপর
প্রতিপালকের যাবতীয়
বিধানকে পালন করা।’[4]
‘আইনুল ইলম’ গ্রন্থে বলা হয়েছে:
ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ﺐﻠﻘﻟﺍ ﻪﻳﺰﻨﺗ ﻦﻋ ﺐﻧﺬﻟﺍ ﻞﻴﻗﻭ
ﻉﻮﺟﺮﻟﺍ ﻦﻣ ﺪﻌﺒﻟﺍ ﺏﺮﻘﻟﺍ ﻰﻟﺇ ﻰﻓﻭ
:ﺚﻳﺪﺤﻟﺍ ﻡﺪﻨﻟﺍ ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ﻰﻫ .
‘তাওবার
সংজ্ঞা হলো অন্তরালে পাপ মুক্ত
করা। কারও কারও মতে দূরত্ব
হতে নিকটে প্রত্যাবর্তন করা।
কারণ, ‘অনুশোচনাই’ তাওবা।[5]
মুহাম্মাদ আলী আত-থানভী (রহ.)
বলেন:
ﻡﺪﻨﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﺔﻴﺼﻌﻣ ﻦﻣ ﺚﻴﺣ ﻰﻫ ،ﺔﻴﺼﻌﻣ
ﻊﻣ ﻡﺰﻋ ﻥﺃ ﻻﺃ ﺩﻮﻌﻳ ﺎﻬﻴﻟﺇ ﺍﺫﺇ ﺭﺪﻗ
ﺎﻬﻴﻠﻋ
কোনো পাপকাজে সেটি যে পাপ এ
অনুভূতিতে অনুশোচনা করার
সাথে সাথে সুযোগ পেলেও আর
কখনোও না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
[6]
মাজমা‘উস সুলুক গ্রন্থে বর্ণিত আছে,
ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ﺎﻋﺮﺷ ﻉﻮﺟﺮﻟﺍ ﻰﻫ ﻰﻟﺇ ﻪﻠﻟﺍ
ﻰﻟﺎﻌﺗ ﻊﻣ ﻡﺍﻭﺩ ﺓﺮﺜﻛﻭ ﻡﺪﻨﻟﺍ
ﺭﺎﻔﻌﺘﺳﻻﺍ
শরী‘আতের পরিভাষায়
তাওবা হলো স্থায়ী অনুশোচনা ও
অধিক ক্ষমা প্রার্থনার
সাথে আল্লাহ তা‘আলার
প্রতি প্রত্যাবর্তন করা। কারও কারও
মতে তাওবা মূলত অনুশোচনা অর্থাৎ
তাওবার বৃহৎ স্তম্ভই
হলো অনুশোচনা।[7]
তাওবা সম্পর্কে কুরআনের
বর্ণনা
1. আল্লাহ
তা‘আলা মু’মিনগণকে তাওবা করার
নির্দেশ দিয়ে বলেন:
﴿ ْﺍٓﻮُﺑﻮُﺗَﻭ ﻰَﻟِﺇ ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﻪُّﻳَﺃ
َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐ َﻥﻮُﺤِﻠۡﻔُﺗ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ﴾ ‏[ :ﺭﻮﻨﻟﺍ
٣١]
“হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলেই
আল্লাহর নিকট তাওবা কর,
যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারে।
”[8]
2. আল্লাহ তা‘আলা অপর
আয়াতে বলেন:
﴿ ﺎَﻤَّﻧِﺇ ُﺔَﺑۡﻮَّﺘﻟﭐ ﻰَﻠَﻋ َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ ِﻪَّﻠﻟﭐ
َﻥﻮُﻠَﻤۡﻌَﻳ ٖﺔَﻠَٰﻬَﺠِﺑ َﺀٓﻮُّﺴﻟﭐ َّﻢُﺛ َﻥﻮُﺑﻮُﺘَﻳ ﻦِﻣ
ٖﺐﻳِﺮَﻗ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺄَﻓ ُﻪَّﻠﻟﭐ ُﺏﻮُﺘَﻳ ۗۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ َﻥﺎَﻛَﻭ
ُﻪَّﻠﻟﭐ ﺎٗﻤﻴِﻜَﺣ ﺎًﻤﻴِﻠَﻋ ١٧ ﴾ ‏[:ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١٧ ]
“আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের
তাওবা কবুল করবেন যারা ভুলবশত
মন্দ কাজ করে এবং সত্বর
তাওবা করে, ওরাই তারা, যাদের
তাওবা আল্লাহ কবূল করেন। আল্লাহ
সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”[9]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম মুহাম্মদ
ইবন জারীর আত-তাবারী (রহ.)
বলেন: অত্র আয়াতাংশ: ﴿ ﺎَﻤَّﻧِﺇ
ُﺔَﺑۡﻮَّﺘﻟﭐ ﻰَﻠَﻋ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ َﻥﻮُﻠَﻤۡﻌَﻳ
َﺀٓﻮُّﺴﻟﭐ ٖﺔَﻠَٰﻬَﺠِﺑ ﴾ এর মাধ্যমে আল্লাহ
তা‘আলা ঘোষণা করেছেন যে,
মু’মিনগণের
মধ্যে যারা অসতর্কতাবশত গুণাহর
কাজ করে অবিলম্বে যথা সময়
যদি তারা আল্লাহর
দরবারে তাওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করে,
আল্লাহ তাদের ছাড়া অন্য কারও
তাওবা কবুল করেন না। অর্থাৎ
যে সকল লোক তাদের মহান
প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার
প্রতি ঈমান
রাখে তারা ভুলবশতঃ গুনাহর কাজ
করার পর যদি যথাসময়ে সে গুনাহ
মাফের জন্য আল্লাহর
দরবারে লজ্জিত
হয়ে তাওবা করে এবং আল্লাহর
আদেশ নিষেধ অনুযায়ী চলার দৃঢ়
সংকল্প নিয়ে এমনিভাবে আল্লাহর
নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে যে,
সে মৃত্যু পর্যন্ত কৃত পাপ কার্য
দ্বিতীয়বার করবে না, আল্লাহ
তা‘আলা তাদের গুণাহসমূহ
ক্ষমা করেন, এদের ব্যতীত অন্য
কারও গুনাহ ক্ষমা করেন না। অত্র
আয়াতে ﻦﻣ ﺐﻳﺮﻗ দ্বারা এ কথাই
বুঝায়।[10]
3. আল্লাহ তা‘আলা বলেন: .
ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ﴿ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍٓﻮُﺑﻮُﺗ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ ﻰَﻟِﺇ
ِﻪَّﻠﻟﭐ ﺔَﺑﻮَﺗۡٗ ﺎًﺣﻮُﺼَّﻧ ﻢُﻜُّﺑَﺭ ٰﻰَﺴَﻋۡ َﺮِّﻔَﻜُﻳ ﻥَﺃ
ﻢُﻜِﺗﺎَِّٔﻴَﺳ ﻢُﻜﻨَﻋۡۡ ﻢُﻜَﻠِﺧﺪُﻳَﻭۡۡ ﺖَّٰﻨَﺟٖ ﻱِﺭﺞَﺗۡ ﻦِﻣ
ﺎَﻬِﺗﺢَﺗۡ ُﺮَٰﻫﻥَﺃﻝﭐۡۡ ٨ ﴾ ‏[:ﻢﻳﺮﺤﺘﻟﺍ ٨‏]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর
নিকট তাওবা কর বিশুদ্ধ তাওবা;
তাহলে তোমাদের প্রতিপালক
তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মোচন
করে দিবেন
এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন
জান্নাতে,
যারা পাদদেশে নদী প্রবাহিত।
”[11]
4. আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺎَﻠَﻓَﺃ َﻥﻮُﺑﻮُﺘَﻳ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﭐ
ۚۥُﻪَﻧﻭُﺮِﻔۡﻐَﺘۡﺴَﻳَﻭ ُﻪَّﻠﻟﭐَﻭ ٞﺭﻮُﻔَﻏ ٞﻢﻴِﺣَّﺭ ٧٤
﴾ ‏[ :ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ٧٤ ]
“তবে কি তারা আল্লাহর
দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না ও তাঁর
নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আর
আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
”[12]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুহাম্মদ ইবন
জারীর আত-তাবারী (রহ.) বলেন: “এই
দুই কাফির দল, যাদের একদল বলে,
মরিয়ম-তনয় মাসীহ-ই আল্লাহ; আরেক
দল বলে, আল্লাহ তিনজনের
মধ্যে একজন। তারা কি তাদের এ
উক্তি থেকে ফিরে আসবে না?
করবে না তাওবা এরূপ
কুফরী কথাবার্তা থেকে?
প্রার্থনা করবে না এজন্য আল্লাহর
ক্ষমা? যে সকল
বান্দা তাওবা করে এবং অবাধ্যতা পরিহার
করে আল্লাহ তা‘আলার
আনুগত্যে ফিরে আসে, তিনি তাদের
অপরাধ ক্ষমা করেন। সেই
সাথে আল্লাহ তা‘আলার অপছন্দ কাজ
পরিহার করে পছন্দজনক কাজের
দিকে ফিরে আসে, তাদের তাওবা ও
প্রত্যাবর্তনকে তিনি কবুল
করে নেন। ফলে নিজ কৃপায় তাদের
পাপরাশি ক্ষমা করে দেন।
5. আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ْﺍٓﻮُﻤَﻠۡﻌَﻳ ۡﻢَﻟَﺃ َّﻥَﺃ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻮُﻫ ُﻞَﺒۡﻘَﻳ
َﺔَﺑۡﻮَّﺘﻟﭐ ۡﻦَﻋ ُﺬُﺧۡﺄَﻳَﻭ ۦِﻩِﺩﺎَﺒِﻋ ِﺖَٰﻗَﺪَّﺼﻟﭐ َّﻥَﺃَﻭ
َﻪَّﻠﻟﭐ ُﻢﻴِﺣَّﺮﻟﭐ ُﺏﺍَّﻮَّﺘﻟﭐ َﻮُﻫ ١٠٤
﴾ ‏[:ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ١٠٤ ]
“তারা কি জানে না যে, আল্লাহ
তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন
এবং সাদাকা গ্রহণ করেন
এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[13]
মুহাম্মদ ইবন জারীর আত-
তাবারী (রহ.) বলেন: এটা আল্লাহ
তা‘আলার পক্ষ হতে একটা ঘোষণা।
মুনাফিকদের মধ্য হতে কেউ
তাওবা করলে তার সে তাওবা কবুল
করা হয় তাদের সাদাকা গ্রহণ
করা নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
ইখতিয়ারাধীন নয়।
যারা মু’মিনগণের
সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে যোগদান
হতে পিছিয়ে থাকার পর
নিজেদেরকে খুঁটির
সাথে বেঁধে রাখে এবং বলে,
যে পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নিজে আমাদেরকে মুক্ত করেন,
আমরা নিজেরা নিজেদেরকে মুক্ত
করব না, তারপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
কে নিজেদের পেশকৃত সাদাকাহ
গ্রহণের অুনরোধ জানায়,
তারা কি জানে না যে, তা করবার
ইখতিয়ার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নেই।
জানে না তারা যে, সেটা কেবল
আল্লাহ তা‘আলার ইখতিয়ারাধীন?
আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তার
বান্দার তাওবা কবুল করেন
কিংবা প্রত্যাখ্যান করেন। কোন
বান্দা সাদাকা পেশ করলে আল্লাহ
তা‘আলাই ইচ্ছা হলে তা গ্রহণ করেন
অথবা রদ করেন। এ বিষয়ে মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন
ইখতিয়ার নেই। কাজেই,
তারা আল্লাহ তা‘আলার
অভিমুখী হয়ে তাওবা করতে হবে এবং তাঁর
সমীপেই সাদাকা নিবেদন
করতে হবে। আর এর দ্বারা যেন
আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিই তাদের
লক্ষ্য হয়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য
কারও সন্তুষ্টি নয়। তাদের উচিত
একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার
কাছে তাওবা করা এবং নিজেদের
সাদাকা দ্বারা তাঁকেই খুশি করার
চেষ্টা করা।
তারা কি জানে না যে, ﴿ َّﻥَﺃَﻭ َﻪَّﻠﻟﭐ
َﻮُﻫ ُﺏﺍَّﻮَّﺘﻟﭐ ُﻢﻴِﺣَّﺮﻟﭐ ﴾ আল্লাহ
তা‘আলাই তাওবা কবুলকারী ও পরম
দয়ালু? অর্থাৎ বান্দাগণ যখন
তাওবা করে ও তাঁর অভিমুখী হয়
তখন তিনি তাতে সাড়া দেন
এবং তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন।
তারা যখন তাঁর অভিমুখী হয় ও তাঁর
সন্তুষ্টি কামনা করে, তখন
তিনি তাদের প্রতি দয়া করেন
এবং তাদেরকে শাস্তি হতে অব্যাহতি দান
করেন।
6. আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻱِﺬَّﻟﭐ َﻮُﻫَﻭ ُﻞَﺒۡﻘَﻳ َﺔَﺑۡﻮَّﺘﻟﭐ ۦِﻩِﺩﺎَﺒِﻋ ۡﻦَﻋ
ْﺍﻮُﻔۡﻌَﻳَﻭ ِﻦَﻋ ُﻢَﻠۡﻌَﻳَﻭ ِﺕﺎَِّٔﻴَّﺴﻟﭐ ﺎَﻣ َﻥﻮُﻠَﻌۡﻔَﺗ
٢٥ ﴾ ‏[ :ﻯﺭﻮﺸﻟﺍ ٢٥ ]
তিনিই তার বান্দাদের তাওবা কবুল
করেন ও পাপ মোচন করেন
এবং তোমরা যা কর
তিনি তা জানেন।”[14]
7. আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿ ۡﻞَﻤۡﻌَﻳ ﻦَﻣَﻭ ﺍًﺀٓﻮُﺳ ۡﻭَﺃ ۡﻢِﻠۡﻈَﻳ ۥُﻪَﺴۡﻔَﻧ َّﻢُﺛ
ِﺮِﻔۡﻐَﺘۡﺴَﻳ َﻪَّﻠﻟﭐ ِﺪِﺠَﻳ ﺍٗﺭﻮُﻔَﻏ َﻪَّﻠﻟﭐ ﺎٗﻤﻴِﺣَّﺭ
١١٠ ﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١١٠ ]
‘যে গোনাহ করে কিংবা নিজের
উপর যুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে,
সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময়
পায়।’[15]
আল্লাহর রহমত অবারিত
বহু মানুষ নানা ধরনের
গোনাহে লিপ্ত। এদেরকে যখন
বলা হয়, তোমরা তওবা করে তখন
এরা বলে, আমি এ থেকে কেন
তওবা করব?
তওবা করে করবটা কি (শুনি)! আমার
গোনাহ অনেক ও বিশাল। এদের
উদ্দেশ্যে বলব: মহান আল্লাহ বলেন:
“আত্মার প্রতি যুলুমকারী আমার
বান্দারা। তোমরা আল্লাহর রহমত
থেকে নিরাশ হয়ো না। তিনি সকল
গোনাহ মাফ করে দেবেন।
কেননা তিনি ক্ষমাশীল ও
দয়ালু।” (সূরা যুমার:৫৩)
• সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
উপরোক্ত: আয়াতে কারীমাই আমার
কাছে দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু
তার চেয়ে সেরা।
• ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেন: ﺔﻳﺍﺮﺜﻛﺃ ﻥﺍﺮﻘﻟﺍ ﻰﻓ ﻩﺬﻬﺑﺎﺣﺮﻓ
ﺔﻳﻻﺍ ﺎﺒﻤﻟﺍ ﺔﻛﺭ কুরআনে বর্ণিত
সর্বাধিক খুশীর আয়াত এটি।
• মহান আল্লাহ বলেন:
﴿ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻦﻴِﺑَّٰﻮَّﺘﻟﭐ ُّﺐِﺤُﻳ ُّﺐِﺤُﻳَﻭ
َﻦﻳِﺮِّﻬَﻄَﺘُﻤۡﻟﭐ ٢٢٢ ﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ٢٢٢ ]
“মহান আল্লাহ তওবাকারী ও
পবিত্রতা অর্জনকারীদের
ভালবাসেন।” (সূরা আল বাকারা:
২২২)
• আরও আল্লাহ বলেন:
﴿ ۡﻞَﻤۡﻌَﻳ ﻦَﻣَﻭ ﺍًﺀٓﻮُﺳ ۡﻭَﺃ ۡﻢِﻠۡﻈَﻳ ۥُﻪَﺴۡﻔَﻧ َّﻢُﺛ
ِﺮِﻔۡﻐَﺘۡﺴَﻳ َﻪَّﻠﻟﭐ ِﺪِﺠَﻳ ﺍٗﺭﻮُﻔَﻏ َﻪَّﻠﻟﭐ ﺎٗﻤﻴِﺣَّﺭ
١١٠ ﴾ ‏[:ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١١٠ ]
“যে গোনাহ করে কিংবা নিজের
অনিষ্ঠ করে, অতঃপর আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে,
সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময়
পায়।” (সূরা আন নিসা: ১১০)
• আল্লাহ আরও বলেন:
﴿ ۞ ٓﻱِﺩﺎَﺒِﻋ ۡﺊِّﺒَﻧ ٓﻲِّﻧَﺃ ﺎَﻧَﺃ ُﺭﻮُﻔَﻐۡﻟﭐ
ُﻢﻴِﺣَّﺮﻟﭐ ٤٩ َّﻥَﺃَﻭ ﻲِﺑﺍَﺬَﻋ ُﺏﺍَﺬَﻌۡﻟﭐ َﻮُﻫ
ُﻢﻴِﻟَﺄۡﻟﭐ ٥٠ ﴾ ‏[ :ﺮﺠﺤﻟﺍ ٥٠  ،٤٩ ]
“আমার বান্দাদের জানিয়ে দিন,
আমি অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু, আর
আমার আযাব হচ্ছে পীড়াদায়ক
আযাব।” (সুরা হিজর: ৪৯-৫০)
তাওবা সম্পর্কে হাদীসের
বর্ণনা
· আনাস ইবন মালেক
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
« ُﻪَّﻠﻟﺍ َﻝﺎَﻗ :ﻰَﻟﺎَﻌَﺗَﻭ َﻙَﺭﺎَﺒَﺗ ﺎَﻳ َﻦْﺑﺍ َﻡَﺩﺁ
َﻚَّﻧِﺇ ﻲِﻨَﺗْﻮَﺟَﺭَﻭ ﻲِﻨَﺗْﻮَﻋَﺩ ﺎَﻣ ُﺕْﺮَﻔَﻏ َﻚَﻟ ﻰَﻠَﻋ
ﺎَﻣ َﻥﺎَﻛ َﻚﻴِﻓ ،ﻲِﻟﺎَﺑُﺃ ﺎَﻟَﻭ ﺎَﻳ َﻦْﺑﺍ َﻡَﺩﺁ
ْﻮَﻟ َﻚُﺑﻮُﻧُﺫ ْﺖَﻐَﻠَﺑ ِﺀﺎَﻤَّﺴﻟﺍ َﻥﺎَﻨَﻋ َّﻢُﺛ
ﻲِﻨَﺗْﺮَﻔْﻐَﺘْﺳﺍ ُﺕْﺮَﻔَﻏ ،َﻚَﻟ ﺎَﻟَﻭ ،ﻲِﻟﺎَﺑُﺃ ﺎَﻳ
َﻦْﺑﺍ َﻡَﺩﺁ َﻚَّﻧِﺇ ﻲِﻨَﺘْﻴَﺗَﺃ ْﻮَﻟ ِﺏﺍَﺮُﻘِﺑ ِﺽْﺭَﻷﺍ
ﺎَﻳﺎَﻄَﺧ َّﻢُﺛ ﻲِﻨَﺘﻴِﻘَﻟ ﺎَﻟ ُﻙِﺮْﺸُﺗ ﻲِﺑ ﺎًﺌْﻴَﺷ
ﺎَﻬِﺑﺍَﺮُﻘِﺑ َﻚُﺘْﻴَﺗَﺄَﻟ ًﺓَﺮِﻔْﻐَﻣ ».
“বরকতম আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
হে আদম সন্তান! যতক্ষণ
তুমি আমাকে ডাকতে থাকবে এবং আমার
থেকে (ক্ষমা লাভের) আশায়
থাকবে, তোমার গুনাহ যত বেশিই
হোক, আমি তোমাকে ক্ষমা করব,
এতে কোন পরওয়া করব না। হে আদম
সন্তান! যদি তোমার গুনাহর স্তুপ
আকাশের
কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও
পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর,
আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব,
এতে আমি ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম
সন্তান!
যদি তুমি গোটা পৃথিবী ভর্তি গুনাহ্
নিয়েও আমার কাছে আস এবং আমার
সাথে কাউকে শরীক না করে থাক,
তাহলে আমিও তোমার নিকট
পৃথিবী ভর্তি ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত
হব।[16]
এ হাদীসে ক্ষমা প্রার্থনার
দ্বারা তাওবার
সাথে ক্ষমা বুঝানো হয়েছে নচেৎ
তাওবা বিহীন
ক্ষমা প্রার্থনা করা দ্বারা গুনাহ
মাফ হওয়াকে আবশ্যক করে না। জুন্নুন
মিসরীর মতে এটা মিথ্যা তাওবা।
· আগার আল-মুযানী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﺎﻳ ﺱﺎﻨﻟﺍ ﺎﻬﻳﺃ ﺍﻮﺑﻮﺗ ﻰﻟﺇ ﻪﻠﻟﺍ ،
ﻲﻧﺈﻓ ﺏﻮﺗﺃ ﻡﻮﻴﻟﺍ ﻲﻓ ﻪﻴﻟﺇ ﺔﺋﺎﻣ ﺓﺮﻣ »
“হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহর নিকট
তাওবা কর, আর আমিও দৈনিক একশত
বার তাঁর নিকট তাওবা করি।”[17]
· আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺐﺋﺎﺘﻟﺍ ﻦﻣ ﺐﻧﺬﻟﺍ ﻦﻤﻛ ﻻ ﺐﻧﺫ ﻪﻟ ».
“যে ব্যক্তি পাপ
থেকে তাওবা করে সে এমন
হয়ে যায়, যেন তার কোন পাপই নেই।
”[18]
· আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻞﻛ ﻦﺑﺍ ﻡﺩﺁ ﺮﻴﺧﻭ ﺀﺎﻄﺧ ﻦﻴﺋﺎﻄﺨﻟﺍ
ﻥﻮﺑﺍﻮﺘﻟﺍ»
“মানুষ মাত্রই পাপী, আর পাপীদের
মধ্যে তাওবাকারীরাই উত্তম।[19]”
· রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« ﻪﻠﻟ ﺎﺣﺮﻓ ﺪﺷﺃ ﺔﺑﻮﺘﺑ ﻦﻣﺆﻤﻟﺍ ﻩﺪﺒﻋ ».
“আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার
তাওবার কারণে অধিকতর আনন্দিত
হন[20]।”
· আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলু­
ল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺡﺮﻓﺃ ﻪﻠﻟ ﺔﺑﻮﺘﺑ ﻢﻛﺪﺣﺃ ﻢﻛﺪﺣﺃ ﻦﻣ
ﻪﺘﻟﺎﻀﺑ ﺍﺫﺇ ﺎﻫﺪﺟﻭ ».
“তোমাদের কেউ তার
হারানো মাল
পুনঃপ্রাপ্তিতে যতটা আনন্দিত হয়,
তোমাদের কারো তাওবায়
(ক্ষমা প্রার্থনায়) আল্লাহ তার
চেয়ে অধিক আনন্দিত হয়।”[21]
· আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:[22]
« ﻯﺬﻟﺍﻭ ﻰﺴﻔﻧ ﻩﺪﻴﺑ ﻮﻟ ﻢﻟ ﺍﻮﺒﻧﺬﺗ
ﺐﻫﺬﻟ ﻪﻠﻟﺍ ،ﻢﻜﺑ ﺀﺎﺠﻟﻭ ﻡﻮﻘﺑ
ﻥﻮﺒﻧﺬﻳ ، ﻪﻠﻟﺍ ﻥﻭﺮﻔﻐﺘﺴﻴﻓ ،
ﻢﻬﻟﺮﻔﻐﻴﻓ».
“সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার
প্রাণ। তোমরা যদি গোনাহ
না করতে তবে আল্লাহ
তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিতেন।
অতঃপর এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন
যারা গোনাহ করতো অতঃপর
তারা আল্লাহর নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং আল্লাহ
তা‘আলা তাদের ক্ষমা করতেন।”
তাওবা-এর প্রকার
তাওবা দু’প্রকার।
এক. তাওবাতুল ইনাবাহ্: এ প্রকার
তাওবা হলো তোমার উপর আল্লাহর
ক্ষমতার কারণে তাকে ভয় করে তার
কাছে ফিরে আসা।
দুই: তাওবাতুল ইস্তিজাবা: এ প্রকার
তাওবা হলো আল্লাহ তোমার
নিকটে আছে এ কারণেই আল্লাহর
নিকট হতে লজ্জিত হয়ে ফিরে আসা।
[23]
ইমাম গাযালী (রহ.) তাওবাকে চার
প্রকারে বিভক্ত করেন:
এক. বান্দাহ
তাওবা করবে এবং স্বীয় তাওবার
উপরে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত
অবিচল থাকবে। অন্যায়, ত্রুটি-
বিচ্যুতি যা হয়ে গেছে তার
সাধ্যমত ক্ষতিপূরণ
করবে এবং পরবর্তী সময় তার
মনে মানুষের স্বভাবজাত
চাহিদাগত সাধারণ ছোটখাট
বিচ্যুতি ব্যতিরেকে কোনো গুনাহ
সংঘটনের কল্পনাও উদিত হয় না। এ
শ্রেণীর বান্দাহকে সাবিকুম বিল
খায়রাতে নামে অভিহিত করা হয়।
এ প্রকারের তাওবাকে বলা হয় আত-
তাওবাতুন-নাসূহ “নির্ভেজাল-
পরিচ্ছন্ন তাওবা” এবং মন ও
প্রবৃত্তির এই অবস্থার মান হলো আন
নাফসুল মুতমাইন্না( ﺲﻔﻨﻟﺍ
ﺔﻨﺌﻤﻄﻤﻟﺍ )
দুই. তাওবাকারী প্রধান ও মৌলিক
ইবাদতসমূহ যথাযথ আদায়
করতে থাকে এবং বড় ধরনের
অশ্লীলতা হতে আত্মরক্ষা করে থাকে।
কিন্তু তার অবস্থা এই যে, সে সকল
গুনাহ
থেকে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না যা তার
পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থানের
কারণে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়
তাকে পেয়ে বসে। সে নিজের
প্রবৃত্তিকে তিরস্কার ও
ভৎর্সনা করতে থাকে এবং অনুতপ্ত
হয়। গুনাহর কার্য সম্পাদনের পর পর
পুনঃ এ সংকল্প করে যে, সামাজিক ও
পরিবেশগত যেই পরিস্থিতির
কারণে তার দ্বারা এ গুনাহ
সংঘটিত
হলো তা হতে সে দূরে অবস্থান
করবে এবং নিজেকে রক্ষা করে চলবে।
এই প্রকৃতির প্রবৃত্তিকে আন-নাফসুল
লাওয়ামা ( ﺲﻔﻨﻟﺍ ﺔﻣﺍﻮﻠﻟﺍ ) বলা হয়।
তাওবাকারীগণ এই দলভুক্ত সাব্যস্ত
হয়ে থাকেন।
তিন. তাওবাকারী তাওবার
পরে বেশ দীর্ঘদিন তার
উপরে অবিচল থাকে। পরে কোনও
পাপ তাকে বশীভুত
করে ফেলে এবং সে তাতে লিপ্ত
হয়।
চার. পাপ
সংঘটনকারী ব্যক্তি তাওবা করার
পর পুনরায় বিভিন্ন পাপ
কার্যে নিমগ্ন হয়ে পড়ে।
এমনকি তার মনে তার তাওবার
চিন্তা উদিত হয় না এবং তার
মনে কোনো প্রকার আক্ষেপ, অনুতাপও
জাগ্রত হয় না, বরং সে প্রবৃত্তির কু-
চাহিদার গোলামে পরিণত হয়। এ
ধরনের প্রবৃত্তিকে আন ‘আন-নাফসুল
আম্মারা বিস সূ’ বলা হয়।[24]
ইমাম গাযালী (র)-এর মতে প্রত্যেক
মু‘মিনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে (ﻰﻠﻋ
ﺭﻮﻔﻟﺍ) ও অবিলম্বে এবং জীবনের
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাওবায় অভ্যস্ত
থাকা ওয়াজিব। কেননা কোনও আদম
সন্তানই পাপমুক্ত নয়। তার
পাপগুলো ঈমানের জন্য
বিধ্বংসী উপকরণরূপে সাব্যস্ত।
মানুষ হয়ত তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
দ্বারা পাপ সংঘটিত
করে কিংবা তার
মনঃজগতে পাপের ইচ্ছা জন্ম নেয়
কিংবা শয়তানী কুমন্ত্রণা তাকে কখনও
না কখনও আল্লাহ তা‘আলার যিকর
হতে অমনোযোগী করে ফেলে। এসব
হলো নেতিবাচক উৎসের পাপ।
এগুলো হতে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ
হলেও আল্লাহর আহকাম পালন
এবং আল্লাহ তা‘আলার সত্ত্বা ও
তাঁর গুণাবলী ও ক্রিয়াকর্মের
পরিচিতি লাভে অভাব
থেকে যেতে পারে। কেননা, কোন
মানুষ এ সকল দুর্বলতা ও
ত্রুটি হতে মুক্ত ও পবিত্র
হওয়া এবং এর কোন একটিও তার
মধ্যে না থাকা অকল্পনীয় ও প্রায়
অসম্ভব ব্যাপার।
যে কোনো তাওবা যথার্থ
হলে আল্লাহ তা‘আলা তা গ্রহণ
করেন। এখানে প্রসঙ্গত এ
আলোচনা এসে পড়ে যে, তাওবা কবুল
করা আল্লাহর জন্য অপরিহার্য ও
আবশ্যকীয় হবে কী?
মু‘তাযিলা সম্প্রদায়ের
দাবীমতে তাওবা কবুল
করা আল্লাহর জন্য অবশ্যই কর্তব্য
ওয়াজিব। আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল
জামা‘আতের মতে আল্লাহর জন্য
কোন বিধান অপরিহার্য নয়। ইমাম
গাযালী (রহ.) মু‘তাযিলাদের ঐ
বাতিল মতবাদ এভাবে খণ্ডন
করেছেন যে, আল্লাহ
তা‘আলা নিজেই
তাওবা করাকে পাপ মার্জনার
মাধ্যম সাব্যস্ত করেছেন।
সুতরাং সেই ব্যক্তি তাওবার
শর্তাবলী পূরণ করবে তার জন্য
তাওবা কবুল করার ব্যাপারে আল্লাহ
তা‘আলার অঙ্গীকার রয়েছে।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻲِّﻧِﺇَﻭ ٞﺭﺎَّﻔَﻐَﻟ ﻦَﻤِّﻟ َﺏﺎَﺗ َﻞِﻤَﻋَﻭ َﻦَﻣﺍَﺀَﻭ
ﺎٗﺤِﻠَٰﺻ َّﻢُﺛ ٰﻯَﺪَﺘۡﻫﭐ ٨٢ ﴾ ‏[ :ﻪﻃ ٨٢ ]
‘এবং যেই ব্যক্তি তাওবা করে ও
ঈমান এনে পুণ্য কার্য করে আমি তার
পাপের জন্য বড়ই ক্ষমাশীল।’ [25]
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা স্বঘোষিত
বিষয় ও তাঁর স্বেচ্ছাপ্রদত্ত ক্ষমার
সুযোগ প্রদানকে তাঁরই জন্য
অপরিহার্য সাব্যস্ত
করা তথা বাহির হতে তাঁর উপর চাপ
সৃষ্টি করার মতবাদ নিতান্ত
হাস্যকর। এটি স্বতন্ত্র ব্যাপার যে,
আল্লাহ নিজেকেই তাওবাকারীদের
ক্ষমা করবার ওয়াদা করেছেন
এবং আল্লাহ তা‘আলা স্বীয়
ওয়াদা পূর্ণ করে থাকেন।
তিনি বলেন:
﴿ ﺂَﻟَﺃ َّﻥِﺇ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﺪۡﻋَﻭ ّٞﻖَﺣ ﴾ ‏[ :ﺲﻧﻮﻳ ٥٥ ]
“জেনে রাখ, আল্লাহর ওয়াদা সত্য
”[26]
এবং তিনি কখনও ওয়াদা ভঙ্গ করেন
না। তিনি বলেন:
﴿ ﻦَﻟَﻭ َﻒِﻠۡﺨُﻳ ُﻪَّﻠﻟﭐ ۚۥُﻩَﺪۡﻋَﻭ ﴾ ‏[ :ﺞﺤﻟﺍ ٤٧ ]
‘এবং আল্লাহ কখনও তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ
করেন না।’[27]
সুতরাং তাওবা কবুল করা শুধু তাঁর
মেহেরবানী সূচিত ওয়াদা পূর্ণ
করার ব্যাপার।
কোন তাওবাহ
কাজে লাগে আর
কোনটি কাজে লাগে না?
আহলুস-সুন্নাহর আলেমগণ বলেন:
তাওবার শর্ত তিনটি।
তাৎক্ষণিকভাবে গোনাহ
ছেড়ে দেওয়া, ভবিষ্যতে না করার
সংকল্প করা, অতীত
কর্মে অনুশোচনা করা। এ জাতীয়
তাওবাই মূলত ‘তাওবাতুন নাসূহ’।
হাসান আল-বাসরী (রহ.) বলেন:
ﺐﻠﻘﻟﺎﺑ ﻡﺪﻧ ، ﻥﺎﺴﻠﻟﺎﺑ ﺭﺎﻔﻐﺘﺳﺍﻭ ،
ﻙﺮﺗﻭ ﺡﺭﺍﻮﺠﻟﺎﺑ ﺭﺎﻤﺿﺇﻭ ، ﻥﺃ ﻻ ﺩﻮﻌﻳ .
‘তাওবায়ে নাসূহ হলো,
হৃদয়ে অনুশোচনার
জবাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা,
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে গোনাহ
পরিত্যাগ করা। ভবিষ্যতে না করার
দৃঢ় প্রতিক্ষা করা।’[28]
ইমাম বাগভী (র) বলেন: উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, উবাই
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও মু‘আয
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:[29]
ﺡﻮﺼﻨﻟﺍ ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ،ﺏﻮﺘﻳ ﻥﺃ ﻢﺛ ﻻ ﺩﻮﻌﻳ
ﺐﻧﺬﻟﺍ ﻰﻟﺇ ﺎﻤﻛ ﺩﻮﻌﻳ ﻻ ﻦﺒﻠﻟﺍ ﻰﻟﺇ
ﻉﺮﻀﻟﺍ.
‘তাওবায়ে নাসূহ হলো তাওবা করার
পর গোনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন
না করা। যেমন দুধ স্তনের
দিকে ফিরে আসে না’
যথাসময়ে তাওবা না করে মুমূর্ষু
অবস্থায়
তাওবা করলে তা কোনো কাজে আসবে না।
আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন:
ِﺖَﺳﻲَﻟَﻭ﴿ۡ ُﺔَﺑﻮَّﺘﻟﭐۡ َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ َﻥﻮُﻠَﻣﻊَﻳۡ
ِﺕﺎَِّٔﻴَّﺴﻟﭐ ٰٓﻰَّﺘَﺣ ﺍَﺫِﺇ َﺮَﻀَﺣ ُﻢُﻫَﺪَﺣَﺃ ُﺕﻮَﻣﻝﭐۡۡ
َﻝﺎَﻗ ﻲِّﻧِﺇ ُﺕﺐُﺗۡ َﻦَٰٔـﻝﭐۡ ﺎَﻟَﻭ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ
َﻥﻮُﺗﻮُﻤَﻳ ﻢُﻫَﻭۡ ٌﺭﺎَّﻔُﻛۚ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺃ ﺎَﻧﺪَﺗﻉَﺃۡۡ ﻢُﻬَﻟۡ
ﺍﻢﻴِﻟَﺃ ﺎًﺑﺍَﺬَﻋٗ ١٨ ﴾ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١٨ ‏]
‘তাওবা তাদের জন্য নয়,
যারা আজীবন মন্দকাজ
করে এবং তাদের কারো মৃত্যু
উপস্থিত হলে সে বলে, আমি এখন
তাওবা করছি এবং তাওবা তাদের
জন্যও নয়, যারা মারা যায় কাফির
অবস্থায়। এরাই তারা, যাদের জন্য
আমি মর্মন্তদ শাস্তির
ব্যবস্থা করেছি।’[30]
খালিস
অন্তঃকরণে তাওবা করলে আল্লাহ
তা‘আলা তাওবা কবুল করেন
এবং জীবনের সব গোনাহ
ক্ষমা করে দেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘তুমি যদি এত অধিক পরিমাণ পাপ
কাজ করে থাক যে, তা আকাশ সমান
উঁচু হয়, এরপর অনুতাপের
সাথে ‘তাওবা’ কর, তবুও তোমার
তাওবা কবুল হবে, প্রত্যাখ্যাত
হবে না।[31]
এই উম্মতের প্রতি আল্লাহর অসংখ্য
নেয়ামতসমূহের মধ্য
থেকে একটি নেয়ামত এই যে,
তিনি তওবার দরজা বন্ধ করেন নি।
বরং জীবনের প্রতি মুহূর্তেই তওবার
প্রতি মানুষকে উৎসাহ দিয়েছেন।
আল্লাহ্
তা‘আলা যাকে অন্তর্দৃষ্টি দান
করেছেন
তাকে সর্বদা সন্দেহাতীতভাবে তাওবার
প্রতি গুরুত্ববহ থাকতে আদেশ
করেছেন।
তওবার প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলার
উৎসাহ প্রদানের জন্য এতটুকু যথেষ্ট
যে, তিনি তওবাকারীর
গোনাহগুলোকে নেকী দ্বারা রূপান্তর
করে দেবেন। আল্লাহ বলেন:
﴿ ﺎَّﻟِﺇ ﻦَﻣ َﺏﺎَﺗ َﻦَﻣﺍَﺀَﻭ َﻞِﻤَﻋَﻭ ﺍﻞَﻤَﻋٗ ﺍﺢِﻠَٰﺻٗ
َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺄَﻓ ُﻝِّﺪَﺒُﻳ ﻢِﻬِﺗﺎَِّٔﻴَﺳ ُﻪَّﻠﻟﭐۡ ﺖَٰﻨَﺴَﺣٖۗ
َﻥﺎَﻛَﻭ ﴾ﺍﻢﻴِﺣَّﺭ ﺍﺭﻮُﻔَﻏ ُﻪَّﻠﻟﭐٗٗ ‏[:ﻥﺎﻗﺮﻔﻟﺍ
٦٩‏]
“কিন্তু
যারা তওবা করেছে এবং ঈমান
এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, এদের
গোনাহগুলোকে আল্লাহ
তা‘আলা নেকী দ্বারা পরিপূর্ণ
করে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্
ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”[32]
অপর এক আয়াতে আল্লাহ্
তা‘আলা বলেন:
﴿۞ َﻱِﺩﺎَﺒِﻌَٰﻳ ۡﻞُﻗ ْﺍﻮُﻓَﺮۡﺳَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ٰٓﻰَﻠَﻋ
ۡﻢِﻬِﺴُﻔﻧَﺃ ﺎَﻟ ْﺍﻮُﻄَﻨۡﻘَﺗ ﻦِﻣ ِۚﻪَّﻠﻟﭐ ِﺔَﻤۡﺣَّﺭ َّﻥِﺇ
َﻪَّﻠﻟﭐ ُﺮِﻔۡﻐَﻳ ۚﺎًﻌﻴِﻤَﺟ َﺏﻮُﻧُّﺬﻟﭐ ۥُﻪَّﻧِﺇ َﻮُﻫ
ُﻢﻴِﺣَّﺮﻟﭐ ُﺭﻮُﻔَﻐۡﻟﭐ ٥٣ ﴾ ‏[ :ﺮﻣﺰﻟﺍ ٥٣ ]
“আপনি বলে দিন! আত্মার
প্রতি যুলুমকারী আল্লাহর বান্দাগণ!
তোমরা আল্লাহর নেয়ামত
হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়
আল্লাহ তা‘আলা সকল গোনাহ
মোচনকারী। নিশ্চয়
তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”[33]
এদিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর
বান্দার তওবা দ্বারা যারপরনাই
আনন্দিত হন।
যেমনটি হাদীসে এসেছে:
‘খাদেমুন্নবী’ আবু হামযা আনাস
ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺡﺮﻓﺃ ﻪﻠﻟ ﺔﺑﻮﺘﺑ ﻩﺪﺒﻋ ﻦﻣ ﻢﻛﺪﺣﺃ ﻂﻘﺳ
ﻩﺮﻴﻌﺑ ﻰﻠﻋ ، ﻪﻠﺿﺃ ﺪﻗﻭ ﻲﻓ ﺽﺭﺃ ﺓﻼﻓ ».
“আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার
তওবা দ্বারা অতখানি খুশী হন
যতখানি খুশী হয় বিজন
মরুতে হারিয়ে ফেলা উটের মালিক
তার উট প্রাপ্তিতে।”[34]
কাজেই কোনও মুসলিম যখন
গোনাহে লিপ্ত হয় তখন তার
মাটিতে উট পাখির মত কপাল
না ঠুকে আল্লাহর কাছে নিজের কৃত
গোনাহর স্বীকৃতি দেয়া দরকার।
অনুতপ্ত হওয়া দরকার। এর এ কথাটিও
মনে রাখা দরকার যে,
গোনাহকে তুচ্ছ করার
দ্বারা গোনাহকারীর কোনও
উপকার হয় না এবং তার গোনাহ
সামান্য হালকাও হয়
না বরং তা আরো বাড়তে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পবিত্র
নামসমূহের অন্তত দু‘টি গুণবাচক নাম
বান্দাহর গোনাহ মাফ করার
বৈশিষ্ট্য হিসাবে বরাদ্দ
রেখেছেন। তিনি বলেন,
﴿ ْﺍٓﻮُﻤَﻠۡﻌَﻳ ۡﻢَﻟَﺃ َّﻥَﺃ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻮُﻫ ُﻞَﺒۡﻘَﻳ
َﺔَﺑۡﻮَّﺘﻟﭐ ۦِﻩِﺩﺎَﺒِﻋ ۡﻦَﻋ ﴾ ‏[ :ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ١٠٤ ] .
“তারা কী জানে না, আল্লাহ
তা‘আলা তার বান্দাদের তওবা গ্রহণ
করে থাকেন।”[35]
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ ْﺍٓﻮُﺒﻴِﻧَﺃَﻭ ٰﻰَﻟِﺇ ْﺍﻮُﻤِﻠۡﺳَﺃَﻭ ۡﻢُﻜِّﺑَﺭ ۥُﻪَﻟ ﻦِﻣ
ِﻞۡﺒَﻗ ُﻢُﻜَﻴِﺗۡﺄَﻳ ﻥَﺃ ُﺏﺍَﺬَﻌۡﻟﭐ َّﻢُﺛ َﻥﻭُﺮَﺼﻨُﺗ ﺎَﻟ
٥٤ ﴾ ‏[ :ﺮﻣﺰﻟﺍ ٥٤ ]
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার
অভিমুখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও
তোমাদের কাছে আযাব আসার
পূর্বে। এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত
হবে না”[36]
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই তাঁর
উচ্চ মহান নামাবলি ও সুস্থ-সুমহান
গুণাবলীর বদৌলতে যে, তিনি যেন
আমাদের তওবা কবুল করেন, আমৃত্যু এর
উপর দৃঢ়পদ রাখেন। নিশ্চয়
তিনি সর্বশ্রোতা ও উত্তরদাতা।
ইমাম আহমদ প্রখ্যাত সাহাবী আবু
সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-
থেকে বর্ণনা করেন:
« ْﻢُﻜَّﻧِﺇ ﺎًﻟﺎَﻤْﻋَﺃ َﻥﻮُﻠَﻤْﻌَﺘَﻟ َﻲِﻬَﻟ ُّﻕَﺩَﺃ ﻲِﻓ
ْﻢُﻜِﻨُﻴْﻋَﺃ َﻦِﻣ ِﺮْﻌَّﺸﻟﺍ ﺎَﻫُّﺪُﻌَﻧ ﺎَّﻨُﻛ ﻰَﻠَﻋ ِﺪْﻬَﻋ
ِﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ َﻦِﻣ
ِﺕﺎَﻘِﺑﻮُﻤْﻟﺍ».
“নিশ্চয় তোমরা অচিরেই এমন আমল
করবে যা তোমাদের চোখে চুলের
চেয়েও সূক্ষ্ম ও
হালকা মনে হবে অথচ রাসূলের
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যুগে আমরা একে ধ্বংসাত্মক
মনে করতাম।”[37]
উপরোক্ত হাদীস
দ্বারা আমরা আজকালকার দিনের
গোনাহকে হালকা অনুভব ও এর
প্রতি বেপরোয়া মনোভাবের
কথা অবগত হতে পারলাম। মানুষ
গোনাহকে হালকা মনে করতে করতে এক
সময় কবিরা গোনাহে লিপ্ত
হয়ে যায়। এমনকি কেউ কেউ
গোনাহের অনুভূতি পর্যন্ত
হারিয়ে ফেলে। একথা স্মরণযোগ্য
যে, অনুতাপ হচ্ছে তওবার প্রধান অঙ্গ
ও শর্ত। অনেক তওবাকারীর
জীবনে এ দিকটির
অনুপস্থিতি দেখা যায়।
এমনিভাবে গোনাহের প্রতি এ
ধরনের
উদাসীনতা মানুষকে গোনাহের
প্রতি আকর্ষিত ও অভ্যস্ত
করে তোলে। এর থেকে তার
পরিত্রাণের কোনও সুযোগ
থাকে না; যদিও আল্লাহ তা‘আলা এর
থেকে পরিত্রাণের
ব্যবস্থা রেখেছিলেন তওবা ও
ইস্তেগফারের মাধ্যমে। সহীহ
হাদীসে উল্লেখ আছে, গোনাহ
লেখক বাম কাঁধের ফেরেশতা।
বান্দার গোনাহ অন্তত গোনাহ করার
পর থেকে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত
লেখা থেকে বিরত থাকে। এই ৬
ঘন্টার মধ্যে বান্দা যদি অনুতপ্ত হয়
ও ইস্তেগফার করে তাহলে ওই
গোনাহ মুছে দেন
অন্যথা আমলনামায় গোনাহ
লেখা হতে থাকে।[38]
মুসলিম উম্মাহর আলেমগণ তওবা ও
ইস্তেগফারের আবশ্যকতার উপর
ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
ইমাম কুরতুবী (রহ) বলেন, মুসলিম
উম্মাহ এ বিষয়ে একমত যে, মুমিন
বান্দার উপর তওবা করা ফরয।
কাজেই সকলের উপর এ ফরয বর্তাবে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺎَﻣ ْﻦِﻣ ٍﺪْﺒَﻋ ٍﻦِﻣْﺆُﻣ ﺎًﺒْﻧَﺫ ُﺐِﻧْﺬُﻳ ُﺄَّﺿَﻮَﺘَﻴَﻓ
ُﻦِﺴْﺤُﻴَﻓ ،َﺭﻮُﻬُّﻄﻟﺍ َّﻢُﺛ ِﻦْﻴَﺘَﻌْﻛَﺭ ﻲِّﻠَﺼُﻳ
ُﺮِﻔْﻐَﺘْﺴَﻴَﻓ َﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَّﻟِﺇ َﺮَﻔَﻏ ُﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪَﻟ »
“কোনো বান্দা যখন গোনাহ করে,
তারপর সুন্দররূপে উযু করে দু‘রাকাত
সালাত পড়ে আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ
তার গোনাহ মাফ করে দেন।”[39]
তওবাতুন নাসূহ-এর আবশ্যকতা
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে,
তওবাতুন নাসূহ বা পরিশুদ্ধ
তওবা প্রতিটি গোনাহগারের উপর
ফরয। এটি আল্লাহর হক
আদায়ে উদাসীনতার দরুনই তিনি এই
নির্দেশ করেন।
পাপরাশিকে নেকীতে রূপান্তরিত
হবার ওয়াদা এবং কল্যাণ ও
বিজয়স্বরূপ জান্নাতে প্রবেশ
করানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
উক্ত কথার উদ্দেশ্য এই যে, ব্যাপক
তওবা সকল মুসলিমের জন্যই সাব্যস্ত।
সকল গোনাহের জন্যও তওবা জরুরী –
যেগুলো করতে আল্লাহ নিষেধ করেন,
যেগুলো পরিহার ছাড়া আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে না।
আল্লাহ বলেন,
﴿ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍٓﻮُﺑﻮُﺗ ﻰَﻟِﺇ
ِﻪَّﻠﻟﭐ ﺔَﺑﻮَﺗۡٗ ﺎًﺣﻮُﺼَّﻧ ﻢُﻜُّﺑَﺭ ٰﻰَﺴَﻋۡ َﺮِّﻔَﻜُﻳ ﻥَﺃ
ﻢُﻜِﺗﺎَِّٔﻴَﺳ ﻢُﻜﻨَﻋۡۡ ﻢُﻜَﻠِﺧﺪُﻳَﻭۡۡ ﺖَّٰﻨَﺟٖ ﻱِﺭﺞَﺗۡ ﻦِﻣ
ﺎَﻬِﺗﺢَﺗۡ ُﺮَٰﻫﻥَﺃﻝﭐۡۡ ﴾ ‏[ :ﻢﻳﺮﺤﺘﻟﺍ ٨ ‏]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর
কাছে তওবা কর- আন্তরিক তওবা।
আশা করা যায়, তোমাদের
পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ
মোচন করে দেবেন
এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন
জান্নাতে, যার
তলদেশে নদী প্রবাহিত।”[40]
আয়াতের মর্ম হলো,
তোমরা তওবা করো,
কেননা তোমরা ভুল-ত্রুটির
উর্ধ্বে নও। আল্লাহ প্রদত্ত ফরয-
ওয়াজিব আদায়ে তোমাদের
থেকে গাফিলতি হতেই পারে।
সুতরাং কোনও অবস্থায়ই
তওবা ছেড়ো না। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ‘যারা তওবা করেনা,
তারা যালেম।’ এসব আয়াতই
বলে দেয় যে, বান্দার
তওবা করা ওয়াজিব।
তাওবার অন্যতম শর্ত
হলো যদি মানুষের অধিকার লঙ্ঘন
হয়, তবে মানুষের অধিকারগুলো ঠিক
ঠিক দিয়ে দেওয়া। যার অধিকার
নষ্ট করেছেন আপনার সে ভাইয়ের
জন্য ইস্তেগফার করা, তার কেউ
নিন্দা করলে তার গুণ গাওয়া।
সুতরাং মানুষ দু’প্রকার; আত্মার
প্রতি যুলুমকারী, তওবাকারী।
যে তাওবা করে সে সফলকামী, আর
যে গোনাহকরে সে ক্ষতিগ্রস্ত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﻥﺍﻭ
ﺍﻭﺮﻔﻐﺘﺳﺍ ﻢﻜﺑﺭ “তোমাদের কৃত
গোনাহ থেকে প্রভুর
কাছে ক্ষমা চাও।” ﻢﺛ ﺍﻮﺑﻮﺗ ﻪﻴﻟﺍ
“এরপর তার
কাছে তওবা করো তোমাদের
ভবিষ্যত কর্মসমূহের ব্যাপারে।
যাতে ভবিষ্যতে তোমরা তার
কাছে প্রত্যাবর্তিত হতে পারো।”
অনুরূপভাবে আবূ
মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«« َّﻥِﺇ َﻪﻠﻟﺍ َّﺰَﻋ َّﻞَﺟَﻭ ُﻂُﺴْﺒَﻳ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺎِﺑ ُﻩَﺪَﻳ
َﺏﻮُﺘَﻴِﻟ ُﻂُﺴْﺒَﻳَﻭ ،ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ُﺀﻲِﺴُﻣ ُﻩَﺪَﻳ
َﺏﻮُﺘَﻴِﻟ ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺎِﺑ ُﺀﻲِﺴُﻣ ،ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ﻰَّﺘَﺣ
ُﺲْﻤَّﺸﻟﺍ َﻊُﻠْﻄَﺗ ﺎَﻬِﺑِﺮْﻐَﻣ ْﻦِﻣ »
“নিশ্চয় আল্লাহ
তা‘আলা রাত্রিবেলা তাঁর হস্ত
প্রসারিত করেন যাতে দিবাভাগের
গোনাহগুলোর তওবা কবুল
করতে পারেন। ওদিকে দিনের
বেলায় হস্ত প্রসারিত করেন
যাতে রাতের গোনাহ তওবা গ্রহণ
করতে পারেন।[41]
ওলামায়ে উম্মাহ তওবা ওয়াজিব
হবার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ
করেন। ইমাম কুরতবী (রহ.) বলেন,
সমগ্র মুমিনের জন্য তওবা করা ফরয।
[42]
ইবনে কুদামা আল-মাকদিসী(রহ)
বলেন, তওবা ফরয হওয়ার
ব্যাপারে ইজমা রয়েছে।
কেননা পাপরাশি ধ্বংসাত্মক
হয়ে থাকে এবং আল্লাহর রহমত
থেকে দূরে রাখে। সুতরাং এ
থেকে দ্রুত পলায়ন করা দরকার।
তাছাড়া মানুষ মাত্রই
গোনাহে লিপ্ত হবার
সম্ভাবনা আছে। তাই মুসলিম ভাইগণ!
গোনাহ-গোনাহই। একে ছোট, তুচ্ছ ও
হেয় মনে করতে নেই।
গোনাহ সংক্রান্ত কিছু
সতর্কবাণী
১. কোনো গোনাহকে তুচ্ছ ও হেয়
করা থেকে সাবধান থাকুন।
কেননা গোনাহে ছগীরা যখন
তওবা বিনে অনেকগুলো জমে যায়
তখন তা ধ্বংস করে দেয়।
হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ِﺕﺍَﺮَّﻘَﺤُﻣَﻭ ْﻢُﻛﺎَّﻳِﺇ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ ِﺏﻮُﻧُّﺬﻟﺍ ُﻞَﺜَﻣ
ِﺏﻮُﻧُّﺬﻟﺍ ِﺕﺍَﺮَّﻘَﺤُﻣ ٍﻡْﻮَﻘَﻛ ﺍﻮُﻟَﺰَﻧ ﻲِﻓ ِﻦْﻄَﺑ
،ٍﺩﺍَﻭ َﺀﺎَﺠَﻓ ﺍَﺫ ،ٍﺩﻮُﻌِﺑ َﺀﺎَﺟَﻭ ﺍَﺫ ٍﺩﻮُﻌِﺑ
،ْﻢُﻬَﺗَﺰْﺒُﺧ ﺍﻮُﺠَﻀْﻧَﺃ ﻰَّﺘَﺣ ِﺕﺍَﺮَّﻘَﺤُﻣ َّﻥِﺇَﻭ
ِﺏﻮُﻧُّﺬﻟﺍ ﻰَﺘَﻣ ْﺬَﺧْﺆُﻳ ﺎَﻬُﺒِﺣﺎَﺻ ﺎَﻬِﺑ
ُﻪْﻜِﻠْﻬُﺗ».
‘সাবধান! গোনাহকে তুচ্ছজ্ঞান
করা থেকে বেঁচে থাকো।
কেননা গোনাহকে তুচ্ছজ্ঞান
করা ঠিক তেমন, যেমন কোনো কওম
কোনো উপত্যকায়
যাত্রাবিরতি করলো। এ সময় ছোট
ছোট ভাগ
হয়ে লোকেরা কাঠি নিয়ে আসল,
ফলে তারা তাদের
রুটি পাকাতে পারল।
এমনিভাবে গোনাহকে যে তুচ্ছজ্ঞান
করে এই গোনাহই এক সময়
তাকে ধ্বংস করে ফেলবে।’[43]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺕﺍﺮﻘﺤﻣﻭ ﻢﻛﺎﻳﺇ ﻦﻬﻧﺈﻓ ﺏﻮﻧﺬﻟﺍ
ﻦﻌﻤﺘﺠﻳ ﻰﻠﻋ ﻞﺟﺮﻟﺍ ﻪﻨﻜﻠﻬﻳ ﻰﺘﺣ ».
‘তোমরা গোনাহকে তুচ্ছ
মনে করো না।
কেননা এগুলো একত্রিত
হয়ে মানবকে ধ্বংস করে দেয়।’
এ প্রসঙ্গে তিনি একটি সুন্দর
উপমা টেনে বলেন:
« ﻞﺟﺮﻛ ﻥﺎﻛ ﺽﺭﺄﺑ ﺓﻼﻓ ﺮﻀﺤﻓ ﻊﻴﻨﺻ
ﻡﻮﻘﻟﺍ ﻞﻌﺠﻓ ﺀﻰﺠﻳ ﻞﺟﺮﻟﺍ ﺩﻮﻌﻟﺎﺑ
ﻞﺟﺮﻟﺍﻭ ﺩﻮﻌﻟﺎﺑ ﺀﻰﺠﻳ ﻰﺘﺣ ﺍﻮﻌﻤﺟ ﻦﻣ
ﺍًﺩﺍﻮﺳ ﻚﻟﺫ ﺍًﺭﺎﻧ ﺍﻮﺠﺟﺃﻭ ﺍﻮﺠﻀﻧﺄﻓ ﺎﻣ
ﺎﻬﻴﻓ ﺍﻮﻓﺬﻗ »
‘যেমন এক
ব্যক্তি কোনো খোলা প্রান্তরে রয়েছে।
এ সময় দলের খাবার
তৈরীকারী হাযির হলেন। তখন ওই
লোক কিছু কাঠ নিয়ে এলো, আরেক
লোক নিয়ে এলো আরও কিছু কাঠ।
একসময় বিশাল কাঠের স্তুপ
জমা হলো। লোকেরা আগুন ধরাল।
অতঃপর সে আগুনে তারা তাদের
খাবার নিক্ষেপ করল
এবং সেটা দ্বারা খাবার
পাকিয়ে নিল।[44]
অতএব, তোমরা গোনাহর অপেক্ষায়
থেকো না বরং গোনাহর
প্রায়শ্চিত্ত নিয়ে ভাবো।
২. কোনো কোনো গোনাহকে মানুষ
ছোট মনে করে অথচ আল্লাহর
কাছে তা বড় হিসেবেই গণ্য।
কারণ; ছোট মনে করার দ্বারা মানুষ
এতে খুব সহজেই লিপ্ত হয়ে পড়ে।
কেননা তারা এমন
গোনাহে অনেককেই লিপ্ত
হতে দেখেছে, প্রকাশ্যে ওই গোনাহ
করতে দেখেছে। নাউযুবিল্লাহ
এগুলো সবই হয়েছে গোনাহকে ছোট
মনে করার দরুন। ইমাম আহমদ
প্রখ্যাত সাহাবী আবু সা‘ঈদ
খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-
থেকে বর্ণনা করেন:
« ْﻢُﻜَّﻧِﺇ ﺎًﻟﺎَﻤْﻋَﺃ َﻥﻮُﻠَﻤْﻌَﺘَﻟ َﻲِﻬَﻟ ُّﻕَﺩَﺃ ﻲِﻓ
ْﻢُﻜِﻨُﻴْﻋَﺃ َﻦِﻣ ِﺮْﻌَّﺸﻟﺍ ﺎَﻫُّﺪُﻌَﻧ ﺎَّﻨُﻛ ﻰَﻠَﻋ ِﺪْﻬَﻋ
ِﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ َﻦِﻣ
ِﺕﺎَﻘِﺑﻮُﻤْﻟﺍ».
“নিশ্চয় তোমরা অচিরেই এমন আমল
করবে যা তোমাদের চোখে চুলের
চেয়েও সূক্ষ্ম ও
হালকা মনে হবে অথচ রাসূলের
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যুগে আমরা একে ধ্বংসাত্মক
মনে করতাম।”[45]
কাজেই গোনাহকে তুচ্ছ
মনে করা থেকে সতর্ক থাকুন। যদিও
মানুষ একে ছোট/তুচ্ছ
মনে করে তথাপিও
আপনি এমনটা করা থেকে বিরত
থাকুন।
আর এতে কোন সন্দেহ নাই যে,
নানা কারণে ছোট গোনাহ বড়
গোনাহে রূপ নেয়।
তন্মধ্যে একটি হলো, গোনাহটি বার
বার করা ও সর্বদা করতে থাকা।
এজন্যই বলা হয়, ‘বারবার
করলে সে গোনাহটি আর
সগিরা থাকে না। এ
থেকে ইস্তিগফার
করলে কবিরা গোনাহ থাকে না।’
কাজেই একটি কবিরা গোনাহ
যেভাবে অস্তিত্বে আসতে পারে সেভাবে অস্তিত্ব
থেকে মুছেও যেতে পারে। তবে শর্ত
হলো, ওই গোনাহ অনুরূপ অন্য গোনাহ
যেন না করা হয়। হ্যাঁ যদি গোনাহ
করার ইচ্ছা জাগে (বাস্তবায়ন
না করলে) তাহলে তা ক্ষমার্হ।
লাগাতর সগিরা গোনাহ
বান্দাকে ক্ষতি করে যেমন,
ফোঁটা ফোঁটা পানি যদি পাথরের
উপর
পড়ে তাহলে তাতে প্রতিক্রিয়া হবে।
পক্ষান্তরে যদি অনেক পানি এক
সাথে পাথরে পড়ে তাহলেও
তাতে ওই প্রতিক্রিয়া হবে না,
যা হয় ফোঁটা ফোঁটা পানির
বেলায়।
আর এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, বস্তুর
পরিচিতি লাভ হয়
বিপরীতমুখী বস্তু দ্বারা। কাজেই
কবিরা গোনাহ আর এর
তওবা দ্বারা অন্তর্লোক আলোকিত
হওয়া খুবই ফলপ্রদ। কিন্তু
সগিরা গোনাহ অন্তর্লোককে খুব
তাড়াতাড়িই অধিক
হারে ক্ষতিসাধন করতে পারে।
৩. প্রকাশে গোনাহ
করা থেকে সতর্ক থাকা এবং বিগত
দিনের কৃত গোনাহ মানুষের
কাছে প্রকাশ না করা।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষ্য:
« ُّﻞُﻛ ﻰًﻓﺎَﻌُﻣ ﻲِﺘَّﻣُﺃ ﺎَّﻟِﺇ ،َﻦﻳِﺮِﻫﺎَﺠُﻤﻟﺍ
َّﻥِﺇَﻭ َﻦِﻣ ِﺓَﺮَﻫﺎَﺠُﻤﻟﺍ ْﻥَﺃ َﻞَﻤْﻌَﻳ ُﻞُﺟَّﺮﻟﺍ
ِﻞْﻴَّﻠﻟﺎِﺑ ،ﺎًﻠَﻤَﻋ َّﻢُﺛ َﺢِﺒْﺼُﻳ ْﺪَﻗَﻭ ُﻩَﺮَﺘَﺳ
ُﻪَّﻠﻟﺍ ،ِﻪْﻴَﻠَﻋ :َﻝﻮُﻘَﻴَﻓ ﺎَﻳ ،ُﻥَﻼُﻓ ُﺖْﻠِﻤَﻋ
َﺔَﺣِﺭﺎَﺒﻟﺍ ﺍَﺬَﻛ ،ﺍَﺬَﻛَﻭ ْﺪَﻗَﻭ ُﻩُﺮُﺘْﺴَﻳ َﺕﺎَﺑ
ُﺢِﺒْﺼُﻳَﻭ ،ُﻪُّﺑَﺭ ُﻒِﺸْﻜَﻳ َﺮْﺘِﺳ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻪْﻨَﻋ ».
‘প্রকাশকারীর গোনাহ
ছাড়া আল্লাহ তা‘আলা আমার
উম্মতের সবাইকে মাফ করবেন।
প্রকাশ করার এক ধরণ হচ্ছে, মানুষ
রাতের বেলা কোনো গোনাহ
করে বসল, আল্লাহ সেটাকে গোপন
করেছে; কিন্তু
সে নিজে সেটাকে প্রকাশ করার
জন্য বলল, ‘হে অমুক! আমি রাতের
বেলা এই এই গোনাহ করেছিলাম।’
অথচ এর মাধ্যমে আল্লাহ
সেটা রাতে গোপন করেছে আর
সে আল্লাহর গোপন
করা বস্তুকে প্রকাশ করে দিয়েছে।
’[46]
গোনাহ প্রকাশ করার
কাজটি খারাপ হবার একটি কারণ
এই যে, এর দ্বারা মানুষের
সামনে গোনাহকে হালকা বানানো হয়
এবং এতে সে নিজেও
গোনাহকে হালকা জ্ঞান করে। এর
দ্বারা গোনাহর বিকাশ ঘটে,
অশ্লীলতার প্রসার পায়। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন:
﴿ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ َّﻥِﺇ َﻥﻮُّﺒِﺤُﻳ ﻥَﺃ ُﺔَﺸِﺤَٰﻔۡﻟﭐ َﻊﻴِﺸَﺗ
َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ﻲِﻓ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ ۡﻢُﻬَﻟ ٞﻢﻴِﻟَﺃ ٌﺏﺍَﺬَﻋ ﻲِﻓ
ِۚﺓَﺮِﺧٓﺄۡﻟﭐَﻭ ﺎَﻴۡﻧُّﺪﻟﭐ ُﻪَّﻠﻟﭐَﻭ ۡﻢُﺘﻧَﺃَﻭ ُﻢَﻠۡﻌَﻳ
ﺎَﻟ َﻥﻮُﻤَﻠۡﻌَﺗ ١٩ ﴾
[ :ﺭﻮﻨﻟﺍ ١٩ ]
‘যারা ঈমানদারদের
মাঝে ব্যভিচার প্রসার লাভ
করা পছন্দ করে; তাদের জন্য ইহকাল
ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন
তোমরা জানো না।’[47]
অনেকে মনে করে নিজ অপরিচিত
মহল বা দূর
দরাজে কিংবা নিরিবিলি থাকলে গোনাহ
করা যায়-এ ধারণাটি ঠিক নয়।
যদি এমনটি হয়েও যায়
তথাপি তা মানুষের কাছে প্রকাশ
করা জায়েয নেই। নিজের গোনাহ
নিজের মনেই লুকিয়ে রেখে সেটার
জন্য তাওবাহ করাই হচ্ছে সঠিক
কাজ। মানুষের
সামনে সেটা কোনোভাবেই
ঘোষণা করতে নেই।
অতএব গোনাহ প্রকাশ
করা থেকে সাবধান হোন। মানুষের
সামনে গোনাহ প্রকাশ
করা থেকে দূরে থাকুন।
তবে আমরা প্রকাশ করি আর
না করি আল্লাহ তা‘আলা সবই
ভালো করে জানেন। তাই
গোপনে তার
কাছে তাওবা করা উচিত।
৪. তওবা করতে বিলম্ব প্রসঙ্গে সতর্ক
থাকা
কেননা আপনি জানেন না কবে মৃত্যুর
ডাক এসে পড়বে। মৃত্যু খুবই নিকটতম
একটি বিষয়। আচমকাই
বিনা নোটিশে এসে পড়বে।
মুখে মরণ গোঙানী শুরু
হলে তওবা করে কোনও লাভ নেই। রূহ
কণ্ঠনালীতে এসে পড়লে তওবা কিসের?
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« َّﻥِﺇ ُﻞَﺒْﻘَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ َﺔَﺑْﻮَﺗ ِﺪْﺒَﻌﻟﺍ ﺎَﻣ ْﻢَﻟ
ْﺮِﻏْﺮَﻐُﻳ».
‘আল্লাহ তা‘আলা মরণগোঙানী শুরু
হওয়ার আগ পর্যন্ত তওবা কবুল করবেন।
’[48]
অতএব আপনাকে দ্রুতই তওবার
দিকে এগুতে হবে।
এক্ষেত্রে কিছুতেই কাল বিলম্ব
করা চলবে না। আল্লাহ
তা‘আলা নিজেও বান্দাদেরকে দ্রুত
তওবার প্রতি আহবান জানান।
আল্লাহ বলেন:
﴿ ْﺍٓﻮُﺒﻴِﻧَﺃَﻭ ٰﻰَﻟِﺇ ْﺍﻮُﻤِﻠۡﺳَﺃَﻭ ۡﻢُﻜِّﺑَﺭ ۥُﻪَﻟ ﻦِﻣ
ِﻞۡﺒَﻗ ُﻢُﻜَﻴِﺗۡﺄَﻳ ﻥَﺃ ُﺏﺍَﺬَﻌۡﻟﭐ َّﻢُﺛ َﻥﻭُﺮَﺼﻨُﺗ ﺎَﻟ
٥٤ ﴾ ‏[ :ﺮﻣﺰﻟﺍ ٥٤ ]
‘আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত হও
এবং তার কাছে নত হও, তাঁর আযাব
আসার পূর্বেই যা এলে তোমাদের
কোনও সাহায্য করা হবে না।’[49]
অর্থাৎ তওবাটি খুব তাড়াতাড়িই
সেরে ফেল, নতুবা আযাব এল বলে।
৫. বারবার গোনাহ
করা থেকে হুঁশিয়ারী
আল্লাহ বলেন:
﴿ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐَﻭ ﺍَﺫِﺇ ًﺔَﺸِﺤَٰﻓ ْﺍﻮُﻠَﻌَﻓ ْﺍٓﻮُﻤَﻠَﻇ ۡﻭَﺃ
ۡﻢُﻬَﺴُﻔﻧَﺃ َﻪَّﻠﻟﭐ ْﺍﻭُﺮَﻛَﺫ ْﺍﻭُﺮَﻔۡﻐَﺘۡﺳﭑَﻓ
ۡﻢِﻬِﺑﻮُﻧُﺬِﻟ ﻦَﻣَﻭ َﺏﻮُﻧُّﺬﻟﭐ ُﺮِﻔۡﻐَﻳ ﺎَّﻟِﺇ ُﻪَّﻠﻟﭐ
﴾ ‏[ ﻝﺍ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ١٣٥ ]
‘তারা যখন কোনো অনৈতিক কাজ
করে কিংবা তাদের আত্মার
প্রতি যুলুম করে’
অর্থাৎ তারা ইস্তেগফারের
উদ্দেশ্য প্রতিযোগিতা করে।
গোনাহর জন্য মাগফেরাত
কামনা করে। গোনাহ
মাটিচাপা দেওয়ার
উদ্দেশ্যে গোনাহ গোপন
রাখে এবং অনুতপ্ত হয়। এর
পরবর্তী আয়াতে বলা হচ্ছে:
﴿ ْﺍﻭُّﺮِﺼُﻳ ۡﻢَﻟَﻭ ٰﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ ْﺍﻮُﻠَﻌَﻓ ۡﻢُﻫَﻭ
﴾ﻥﻮُﻤَﻠۡﻌَﻳ ‏[ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ﻝﺍ ١٣٥ ]
“জেনে বুঝে তারা কৃতকর্মের
পুনরাবৃত্তি করে না।”[50]
৬. সবাই যা করে তা না করা
মানুষ যখন অনেক জরুরী কাজ
ছেড়ে দেয় এবং হারামে লিপ্ত হয়
তখন তার মাঝে শয়তান
বাসা বাঁধে। শয়তান
নানাভাবে তাকে বুঝাতে থাকে যে,
‘দেখো! এটি করা তোমার জন্য
ওয়াজিব নয়। ওটা হারাম নয়। কারণ
এটা তো সবাই করে। এভাবে শয়তান
ভেতরে ভেতরে রীতিমত যুদ্ধ করে।
অর্থাৎ তার
মনকে শরীয়াতবিরোধী কাজে উৎসাহ
ও প্রেরণা যোগায়। শাস্তির ভয়
থেকে উদাসীন করে তোলে। কিন্তু
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে,
অন্তরে কী আছে সে বিষয়ে আল্লাহই
সবজান্তা। অতএব আপনার
অন্তরকে শয়তানের অনুপ্রবেশ
থেকে মুক্ত রাখুন।
৭. আল্লাহ প্রদত্ত বৈধ নেয়ামতের
মোকাবেলায়
ক্ষণস্থায়ী বা সাময়িক অবৈধ
নেয়ামতের ধোঁকায় না পড়া
আপনার থেকে যদিও কখনো গোনাহ
হয়ে যায় তথাপিও এটা মনে করবেন
না যে, আপনি ভালো আছেন। এই
অবস্থায় আপনার থাকাটায়
আত্মতৃপ্তির কিছু নেই।
কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« َﺖْﻳَﺃَﺭ ﺍَﺫِﺇ َﻪﻠﻟﺍ ﻲِﻄْﻌُﻳ َﺪْﺒَﻌْﻟﺍ َﻦِﻣ
ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ ِﻪﻴِﺻﺎَﻌَﻣ ﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ ،ُّﺐِﺤُﻳ
ٌﺝﺍَﺭْﺪِﺘْﺳﺍ َﻮُﻫ ».
‘যখন দেখবে আল্লাহ তা‘আলা কোন
বান্দাকে দুনিয়া দান করেছেন তখন
মনে করতে হবে এটি আল্লাহর
ধারাবাহিকতার একটি পর্যায়ে।
’[51]
কেননা আল্লাহর চিরন্তন নিয়ম
যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
হাদীসে উঠে এসেছে। আব্দুল্লাহ
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবন
মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
« َّﻥِﺇ ﻲِﺗْﺆُﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ َﻝﺎَﻤْﻟﺍ ْﻦَﻣ ،ُّﺐِﺤُﻳ ْﻦَﻣَﻭ
ﺎَﻟ ،ُّﺐِﺤُﻳ ﺎَﻟَﻭ َﻥﺎَﻤﻳِﺈْﻟﺍ ﻲِﺗْﺆُﻳ ﺎَّﻟِﺇ ْﻦَﻣ
،َّﺐَﺣَﺃ ﺍَﺫِﺈَﻓ ُﻪَّﻠﻟﺍ َّﺐَﺣَﺃ ﺍًﺪْﺒَﻋ ُﻩﺎَﻄْﻋَﺃ
،َﻥﺎَﻤﻳِﺈْﻟﺍ ْﻦَﻤَﻓ َّﻦَﺿ ِﻝﺎَﻤْﻟﺎِﺑ ،ُﻪَﻘِﻔْﻨُﻳ ْﻥَﺃ
َﺏﺎَﻫَﻭ َّﻭُﺪَﻌْﻟﺍ ْﻥَﺃ َﻞْﻴَّﻠﻟﺍَﻭ ،ُﻩَﺪِﻫﺎَﺠُﻳ ْﻥَﺃ
ُﻩَﺪِﺑﺎَﻜُﻳ ْﺮِﺜْﻜُﻴْﻠَﻓ ; ْﻦِﻣ :ِﻝْﻮَﻗ ﺎَﻟ َﻪَﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ
ُﻪَّﻠﻟﺍَﻭ ،ُﻪَّﻠﻟﺍ ،ُﺮَﺒْﻛَﺃ ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍَﻭ ،ِﻪَّﻠِﻟ
َﻥﺎَﺤْﺒُﺳَﻭ َِﻪَّﻠﻟﺍ ».
‘আল্লাহ
তা‘আলা যাকে ভালোবাসেন
কিংবা নাই বাসেন; তাকে সম্পদ
প্রদান করেন। কিন্তু প্রিয়জন
ছাড়া কাউকে তিনি ঈমান প্রদান
করেন না। যখন
কোনো বান্দাকে আল্লাহ
ভালোবাসেন তখন
তাকে তিনি ঈমান প্রদান করেন।
সুতরাং যে কেউ সম্পদ ব্যয়
করতে কুণ্ঠাবোধ করে, শত্রুর
বিরুদ্ধে জিহাদ করতে ভয় পায়
এবং রাতে দাঁড়ানোতে কষ্ট বোধ
করে, সে যেন
বেশি বেশি করে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ ও
সুবহানাল্লাহ’ পড়ে।’[52]
৮. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ
না হওয়া
আল্লাহ বলেন:
﴿ َﻝﺎَﻗ ُﻂَﻨۡﻘَﻳ ﻦَﻣَﻭ ِﺔَﻤۡﺣَّﺭ ﻦِﻣ ٓۦِﻪِّﺑَﺭ ﺎَّﻟِﺇ
َﻥﻮُّﻟﺂَّﻀﻟﭐ ٥٦ ﴾ ‏[ :ﺮﺠﺤﻟﺍ ٥٦ ]
‘বিভ্রান্তরাই আল্লাহর রহমত
থেকে নিরাশ হয়।’[53]
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿ ۞ َﻱِﺩﺎَﺒِﻌَٰﻳ ۡﻞُﻗ ْﺍﻮُﻓَﺮۡﺳَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ٰٓﻰَﻠَﻋ
ۡﻢِﻬِﺴُﻔﻧَﺃ ﺎَﻟ ْﺍﻮُﻄَﻨۡﻘَﺗ ﻦِﻣ ِۚﻪَّﻠﻟﭐ ِﺔَﻤۡﺣَّﺭ َّﻥِﺇ
َﻪَّﻠﻟﭐ ُﺮِﻔۡﻐَﻳ ۚﺎًﻌﻴِﻤَﺟ َﺏﻮُﻧُّﺬﻟﭐ ۥُﻪَّﻧِﺇ َﻮُﻫ
ُﻢﻴِﺣَّﺮﻟﭐ ُﺭﻮُﻔَﻐۡﻟﭐ ٥٣ ﴾ ‏[ :ﺮﻣﺰﻟﺍ ٥٣ ]
‘বলে দিন! হে আল্লাহর বান্দারা,
যারা তোমাদের আত্মার উপর যুলুম
করেছ, তারা আল্লাহর রহমত
থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়
আল্লাহ সব গোনাহ মাফ
করে দেবেন। নিশ্চয়
তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’[54]
এরপরও আল্লাহ
তা‘আলা বান্দাকে দ্রুত তাঁর
দিকে ধাবিত
হতে হুঁশিয়ারী উচ্চারণপূর্বক বলেন:
﴿ ْﺍٓﻮُﺒﻴِﻧَﺃَﻭ ٰﻰَﻟِﺇ ْﺍﻮُﻤِﻠۡﺳَﺃَﻭ ۡﻢُﻜِّﺑَﺭ ۥُﻪَﻟ ﻦِﻣ
ِﻞۡﺒَﻗ ُﻢُﻜَﻴِﺗۡﺄَﻳ ﻥَﺃ ُﺏﺍَﺬَﻌۡﻟﭐ َّﻢُﺛ َﻥﻭُﺮَﺼﻨُﺗ ﺎَﻟ
٥٤ ﴾ ‏[ :ﺮﻣﺰﻟﺍ ٥٤ ]
‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার
অভিমুখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও,
তোমাদের কাছে আযাব আসার
পূর্বে। এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত
হবে না।’[55]
তওবার শর্তাবলী
ওলামায়ে কেরাম কুরআনের আয়াত ও
সহীহ হাদীসের আলোকে তওবার
শর্তাদি বর্ণনা করেন।
কেননা তওবা নিছক মুখে উচ্চারণের
মত বিষয় নয় বরং এর থেকে এমন আমল
বিকাশ হবার বিষয় যা তওবাকারীর
সত্যতার উপর ইঙ্গিতবহ।
গোনাহটি যদি আল্লাহ ও বান্দার
মাঝে হয় অর্থাৎ হাক্কুল্লাহ বিষয়ক
হয়; তাহলে এখানে তিনটি শর্ত
প্রণিধানযোগ্য:
ক. গোনাহটি মূলোৎপাটিত
করতে হবে।
খ. কৃত গোনাহটির প্রতি অবশ্যই
অনুতপ্ত হতে হবে।
গ. এই পরিপক্ক সংকল্প করা যে,
ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কাজ করব না।
উপরোক্ত তিনটি শর্তের যদি কোনও
একটি শর্ত ছুটে যায়
তাহলে তওবা শুদ্ধ
হয়নি বলে মনে করতে হবে।
ঘ.
পক্ষান্তরে যদি গোনাহটি হাক্কুল
ইবাদ সম্পর্কিত হয় তখন
এক্ষেত্রে ৪টি শর্ত লক্ষণীয়।
উপরিউক্ত তিনটি তো আছে।
অপরটি হল, কোনো ভাইয়ের মাল
হলে তা আদায় করে দিতে হবে।
যদি অপরকে অপবাদ দেয়া হয়, আর এ
জন্য দণ্ড আসে (হদ্দে কযফ)
তাহলে তার সেই অপবাদ দূর করার
উদ্যোগ নিতে হবে কিংবা তার
কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
পরচর্চাজনিত গোনাহ
হলে তাকে বলে মাফ চেয়ে নিবে।
আর এ সকল গোনাহ
থেকে তওবা করে নিবে।
ঙ. তওবা নিছক আল্লাহর উদ্দেশ্যেই
হতে হবে। এ কথা মনে রাখতে হবে,
‘তওবাটি হতে হবে নিছক
আল্লাহকে রাযী-খুশি করানোর
উদ্দেশ্যে- ভিন্ন কোনও
উদ্দেশ্যে নয় ।
যেমনটি হাদীসে এসেছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« « َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻟ ُﻞَﺒْﻘَﻳ ِﻞَﻤَﻌْﻟﺍ َﻦِﻣ ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻣ
َﻥﺎَﻛ َﻲِﻐُﺘْﺑﺍَﻭ ،ﺎًﺼِﻟﺎَﺧ ُﻪَﻟ ِﻪِﺑ ُﻪُﻬْﺟَﻭ ».
‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা খালিছ
আমল কিংবা তাকে উদ্দেশ্য
করা আমল ছাড়া কিছুই কবুল করেন
না।’[56]
তওবার নেপথ্যে কিছু
নির্ধারিত ও স্থিতিশীল
কাজ
১. তওবাসহ যাবতীয় কাজকর্মে নিয়ত
খালেস করা। কেননা আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘আল্লাহ তা‘আলা খালেস আমল
কিংবা তাকে উদ্দেশ্য করা আমল
ছাড়া কিছুই কবুল করেন না।’[57]
২. তওবাকারী তওবার পরও যথাসম্ভব
স্থিতিশীলভাবে আমালে সালিহা করে যাবে।
সর্বদা সৎকর্মের প্রাধান্য দেবে ও
অসৎকর্ম পরিহার করবে। আল্লাহ
বলেন:
﴿ ِﺖَٰﻨَﺴَﺤۡﻟﭐ َّﻥِﺇ ِۚﺕﺎَِّٔﻴَّﺴﻟﭐ َﻦۡﺒِﻫۡﺬُﻳ ﴾ ‏[ :ﺩﻮﻫ
١١٤]
‘নিশ্চয় সৎকর্ম অসৎকর্মকে বিদূরিত
করে।[58]
আল্লাহর নবী মু‘আয ইবনে জাবাল
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-
কে ইয়ামেনে প্রেরণকালে নসিহতস্বরূপ
বলেছিলেন:
« ﺎﻳ ﺫﺎﻌﻣ ﻪﻠﻟﺍ ﻖﺗﺍ ﺎﻤﺜﻴﺣ ﺖﻨﻛ ،
ﻊﺒﺗﺍﻭ ﺔﻨﺴﺤﻟﺍ ﺔﺌﻴﺴﻟﺍ ﺎﻬﺤﻤﺗ ، ﻖﻟﺎﺧﻭ
ﺱﺎﻨﻟﺍ ﻖﻠﺨﺑ ﻦﺴﺣ ».
‘হে মু‘আয! যেখানেই
থাকো আল্লাহকে ভয় করো,
একটা গোনাহর কাজ
করে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে একটা নেক
কাজ করে ফেলো। তাহলে তা ওই কৃত
গোনাহকে মোচন করে দেবে।
মানুষের স্রষ্টার সাথে সদাচার কর।’
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.)
বলেন: ﺲﻴﻜﻟﺎﻓ ﻮﻫ ﻯﺬﻟﺍ ﻻ ﻝﺍﺰﻳ ﻰﺗﺄﻳ
ﺕﺎﻨﺴﺤﻟﺍ ﻦﻣ ﺎﻤﺑ ﺕﺎﺌﻴﺴﻟﺍ ﻮﺤﻤﻳ ‘প্রকৃত
বুদ্ধিমান সেই লোক,
যে সর্বদা এমনসব সৎকাজ
করে যা তার মোচন করে ফেলে।’
৩. গোনাহর অনিষ্টতা উপলব্ধি, এর
দ্বারা দুনিয়া আখিরাতের
ক্ষতি অনুধাবন করা।
৪. যেখানে গোনাহ-চর্চা হয়,
সেখান থেকে দূরত্ব বজায়
রেখে চলা,
যাতে ওইস্থানে গোনাহে লিপ্ত
হবার সমূহ সম্ভাবনাটুকুও না থাকে।
৫. গোনাহর উপকরণটি তছনছ
করে ফেলা, যেমন: মাদক ও
খেলাধুলার
সরঞ্জামাদি ভেঙ্গে ফেলা।
৬. নিজের আত্মিক
উন্নতি সাধনকল্পে কোনও আলেমের
সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা।
কোনো দুষ্ট বন্ধুর
সংমিশ্রণে না যাওয়া।
৭. কুরআন-হাদীসে বর্ণিত পাপীদের
আযাব-গযবে ফেলা ভীতিকর
আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা।
৮. দ্রুত আগুয়ান শাস্তিসমূহ স্মরণ
করা। যেমন আল্লাহ বলেন:
“তোমরা প্রভুর দিকে ধাবিত হও
এবং আজ্ঞাবহ হও আযাব আসার
পূর্বেই, যখন তোমাদের কোনও
সাহায্য করা হবে না।”[59]
৯. সর্বদা আল্লাহর যিকর
করতে থাকা। শয়তানকে দমন করার
মহৌষধ হল যিকরুল্লাহ।
তওবার উপকারিতা
১. তওবা গুনাহ বিদূরক:
আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺐﺋﺎﺘﻟﺍ ﺐﻧﺬﻟﺍ ﻦﻣ ﻦﻤﻛ ﻻ ﺐﻧﺫ ﻪﻟ »
“গোনাহ থেকে তওবাকারীর কোন
গোনাহই থাকে না।”[60]
২.
গুনাহকে নেকীতে রূপান্তরকারী :
আল্লাহ বলেন,
﴿ ﺎَّﻟِﺇ ﻦَﻣ َﺏﺎَﺗ َﻦَﻣﺍَﺀَﻭ َﻞِﻤَﻋَﻭ ﺍﻞَﻤَﻋٗ ﺍﺢِﻠَٰﺻٗ
َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺄَﻓ ُﻝِّﺪَﺒُﻳ ﻢِﻬِﺗﺎَِّٔﻴَﺳ ُﻪَّﻠﻟﭐۡ ﺖَٰﻨَﺴَﺣٖۗ
َﻥﺎَﻛَﻭ ﺍﻢﻴِﺣَّﺭ ﺍﺭﻮُﻔَﻏ ُﻪَّﻠﻟﭐٗٗ ﴾ ‏[:ﻥﺎﻗﺮﻔﻟﺍ
٦٩‏]
“কিন্তু যারা তওবা করে, ঈমান
আনে ও আমলে সালিহা করে, এদের
সকল পাপরাশি নেকীতে রূপান্তর
করে দেন আল্লাহ তা‘আলা। আর
আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”[61]
৩. তওবাকারীর হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন
করে দেয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« َﺪْﺒَﻌﻟﺍ َّﻥِﺇ ﺍَﺫِﺇ َﺄَﻄْﺧَﺃ ًﺔَﺌﻴِﻄَﺧ ْﺖَﺘِﻜُﻧ ﻲِﻓ
ِﻪِﺒْﻠَﻗ ٌﺔَﺘْﻜُﻧ ،ُﺀﺍَﺩْﻮَﺳ ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻮُﻫ َﻉَﺰَﻧ
َﺮَﻔْﻐَﺘْﺳﺍَﻭ َﺏﺎَﺗَﻭ ،ُﻪُﺒْﻠَﻗ َﻞِﻘُﺳ ْﻥِﺇَﻭ َﺩﺎَﻋ
ﺎَﻬﻴِﻓ َﺪﻳِﺯ ﻰَّﺘَﺣ َﻮُﻠْﻌَﺗ ،ُﻪَﺒْﻠَﻗ َﻮُﻫَﻭ ُﻥﺍَّﺮﻟﺍ
ﻱِﺬَّﻟﺍ َﺮَﻛَﺫ ُﻪَّﻠﻟﺍ ‏» ﺎَّﻠَﻛ} ْﻞَﺑ َﻥﺍَﺭ ﻰَﻠَﻋ
ْﻢِﻬِﺑﻮُﻠُﻗ ﺎَﻣ {َﻥﻮُﺒِﺴْﻜَﻳ ﺍﻮُﻧﺎَﻛ
‏[ 14 :ﻦﻴﻔﻔﻄﻤﻟﺍ ]
“বান্দা যখন কোন গোনাহর কাজ
করে তখন তার অন্তরে এক ধরনের
কালো দাগ পড়ে যায়।
যদি ইস্তেগফার করে তাহলে এই
দাগ দূরীভূত করে তার অন্তর সূচালু,
ধারালো ও পরিশীলিত হবে। আর এই
দাগের কথা কুরআনেই আছে, খবরদার!
তাদের অন্তরে দাগ
রয়েছে যা তারা কামাই করেছে।
”[62]
৪. তওবা সুখী সুন্দর জীবনের
গ্যারান্টি
আল্লাহ বলেন:
﴿ ِﻥَﺃَﻭ ْﺍﻭُﺮِﻔۡﻐَﺘۡﺳﭐ ۡﻢُﻜَّﺑَﺭ َّﻢُﺛ ِﻪۡﻴَﻟِﺇ ْﺍٓﻮُﺑﻮُﺗ
ﻢُﻜۡﻌِّﺘَﻤُﻳ ﺎًﻌَٰﺘَّﻣ ﺎًﻨَﺴَﺣ ٰٓﻰَﻟِﺇ ﻰّٗﻤَﺴُّﻣ ٖﻞَﺟَﺃ
ِﺕۡﺆُﻳَﻭ َّﻞُﻛ ﻱِﺫ ۖۥُﻪَﻠۡﻀَﻓ ٖﻞۡﻀَﻓ ﻥِﺇَﻭ ْﺍۡﻮَّﻟَﻮَﺗ
ٓﻲِّﻧِﺈَﻓ ُﻑﺎَﺧَﺃ ۡﻢُﻜۡﻴَﻠَﻋ َﺏﺍَﺬَﻋ ٍﺮﻴِﺒَﻛ ٖﻡۡﻮَﻳ ٣
﴾ ‏[ :ﺩﻮﻫ ٣ ]
আর তোমরা নিজেদের
পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর,
অনন্তর তারই প্রতি মনোনিবেশ কর।
তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট
সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান
করবেন এবং তিনি অধিক
আমলকারীকে বেশি করে দেবেন।
[63]
৫. তওবা রিযিক ও শক্তি বৃদ্ধির
মাধ্যম:
আল্লাহ তা‘আলা নূহ আলাইহিস
সালামের ভাষায় বিধৃত করেন:
﴿ ْﺍﻭُﺮِﻔۡﻐَﺘۡﺳﭐ ۡﻢُﻜَّﺑَﺭ ۥُﻪَّﻧِﺇ ﺍٗﺭﺎَّﻔَﻏ َﻥﺎَﻛ ١٠
ِﻞِﺳۡﺮُﻳ ﻢُﻜۡﻴَﻠَﻋ َﺀﺂَﻤَّﺴﻟﭐ ﺍٗﺭﺍَﺭۡﺪِّﻣ ١١
ٖﻝَٰﻮۡﻣَﺄِﺑ ﻢُﻛۡﺩِﺪۡﻤُﻳَﻭ َﻦﻴِﻨَﺑَﻭ ﻞَﻌۡﺠَﻳَﻭ ۡﻢُﻜَّﻟ ٖﺖَّٰﻨَﺟ
ﻞَﻌۡﺠَﻳَﻭ ﺍٗﺮَٰﻬۡﻧَﺃ ۡﻢُﻜَّﻟ ١٢ ﴾ ‏[ :ﺡﻮﻧ ١٢  ،١٠ ]
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।
তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
তিনি তোমাদের উপর অজস্র ধারায়
বৃষ্টির নহর ছেড়ে দিবেন।
তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-
সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন তোমাদের
জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন
এবং তোমাদের জন্য
নদীনালা প্রবাহিত করবেন।”[64]
৬. তওবা দুনিয়া-আখিরাতের
কামিয়াবী অর্জনের মাধ্যম
অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন:
﴿ ﺎَّﻣَﺄَﻓ ﻦَﻣ َﻦَﻣﺍَﺀَﻭ َﺏﺎَﺗ َﻞِﻤَﻋَﻭ ﺎٗﺤِﻠَٰﺻ
ٰٓﻰَﺴَﻌَﻓ َﻥﻮُﻜَﻳ ﻥَﺃ َﻦِﻣ َﻦﻴِﺤِﻠۡﻔُﻤۡﻟﭐ ٦٧
﴾ ‏[ :ﺺﺼﻘﻟﺍ ٦٧ ]
“যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও
আমলে সালিহ করে, আশা করা যায়
তার সফলকাম তারা হবে।” [65]
অপর এক আয়াতে আছে:
﴿ ﺎَّﻟِﺇ ﻦَﻣ َﻦَﻣﺍَﺀَﻭ َﺏﺎَﺗ َﻞِﻤَﻋَﻭ ﺎٗﺤِﻠَٰﺻ
َﻥﻮُﻠُﺧۡﺪَﻳ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺄَﻓ َﺔَّﻨَﺠۡﻟﭐ َﻥﻮُﻤَﻠۡﻈُﻳ ﺎَﻟَﻭ
ﺎٗٔۡﻴَﺷ ٦٠ ﴾ ‏[ :ﻢﻳﺮﻣ ٦٠ ]
“পক্ষান্তরে যারা তওবা করবে,
ঈমান আনবে ও আমলে সালিহ
করবে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ
করানো হবে, কোন প্রকার যুলম
করা হবে না।” [66]
গোনাহ ও পাপের অপকারিতা
ইবনু কায়্যিম আল-জওযিয়্যাহ (রহ)
তার প্রণীত ‘আদ-দা ওয়াদ দাওয়া’
পুস্তকে বর্ণনা করেন, গুনাহর
ক্ষতি অনেক। নিম্নে এর
কয়েকটি বর্ণনা করা হলো।
জ্ঞান থেকে বঞ্চনা
ইবাদত/আনুগত্য থেকে বঞ্চনা
নেক কাজের কম সৌভাগ্য হওয়া
গোনাহকারীর মর্যাদা লোপ
পাওয়া
মন থেকে হায়া লজ্জা দূর হওয়া
বরকত চলে যাওয়া।
বক্ষ সংকুচিত হওয়া
অন্তরে মোহর পড়া
অপদস্ততা নেমে আসা
অশুভ পরিণতি হওয়া
আখেরাতে আযাবের সম্মুখীন হওয়া
কীভাবে তওবা করব
তওবার পরের প্রথম কাজ হল,
যে গোনাহটির জন্য তওবা করছি,
তা সবার আগে ছেড়ে দেওয়া। কেউ
যেন একথা মনে না করে যে,
সামান্য কিছু গোনাহই ছেড়ে দিই।
এক্ষেত্রে সকল গোনাহ পরিহার
করাই উত্তম। এরপর আপনি সংকল্প
করবেন যে, এই গোনাহ আর করবেন
না। কৃত গোনাহর প্রতি অনুতপ্ত
হবেন। ভবিষ্যতে এতে লিপ্ত হবার
কোন সুযোগ রাখবেন না। এরপর
পূর্ণক্রমে সৎকর্মে লেগে যাবেন।
উত্তম হয় যদি আরো একটি কাজ করেন
যে, পূর্ণ উযু করে দু‘রাকাত নামায
আদায় করেন। কেননা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻦﻣ  ﺎﻣ ﻞﺟﺭ ﺐﻧﺬﻳ ﺎﺒﻧﺫ ﻢﺛ ،ﻡﻮﻘﻳ
ﺮﻬﻄﺘﻴﻓ ﻢﺛ ﻦﻴﺘﻌﻛﺭ ﻰﻠﺼﻳ ﺮﻔﻐﺘﺴﻳ ﻢﺛ
.ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻠﻟﺍ ﺮﻔﻏﻻﺇ ﻪﻟ ».
কোনো লোক গোনাহ করে যদি ওযু
করে দু’রাকাত নামায
পড়ে ইস্তেগফার করে তাহলে তার
গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।[67]
পরে তিনি এই আয়াত তেলওয়াত
করেন:
﴿ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐَﻭ ﺍَﺫِﺇ ًﺔَﺸِﺤَٰﻓ ْﺍﻮُﻠَﻌَﻓ ْﺍٓﻮُﻤَﻠَﻇ ۡﻭَﺃ
ۡﻢُﻬَﺴُﻔﻧَﺃ َﻪَّﻠﻟﭐ ْﺍﻭُﺮَﻛَﺫ ْﺍﻭُﺮَﻔۡﻐَﺘۡﺳﭑَﻓ
ۡﻢِﻬِﺑﻮُﻧُﺬِﻟ ﻦَﻣَﻭ َﺏﻮُﻧُّﺬﻟﭐ ُﺮِﻔۡﻐَﻳ ﺎَّﻟِﺇ ُﻪَّﻠﻟﭐ
ْﺍﻭُّﺮِﺼُﻳ ۡﻢَﻟَﻭ ٰﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ
ْﺍﻮُﻠَﻌَﻓ ۡﻢُﻫَﻭ َﻥﻮُﻤَﻠۡﻌَﻳ ١٣٥ ﴾ ‏[ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ﻝﺍ
١٣٥]
তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ
করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ
কাজে জড়িত হয়ে নিজের ওপর যুলুম
করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ
করে এবং নিজের পাপের জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ্
ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করবেন না।
তারা নিজেদের কৃতর্কমের জন্য
হঠকারিতা প্রদর্শন
করে না এবং জেনে শুনে তাই
করতে থাকে না।[68]
অধিক যিকির আযকর ও ইস্তেগফার
এবং আমালে সালিহ করা উচিত।
কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
সৎকর্ম অসৎকর্মকে বিদুরিত করে। আর
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
একটি বদ কাজ
করলে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি নেক
কাজ করে ফেল। তাহলে কৃত
গোনাহটি বিদুরিত হবে।
কুরআনে বর্ণিত পাপী ও পাপ আযাব
গযবের
আয়াতগুলো ভেবে চিন্তে গভীর
মনোযোগের সাথে পড়তে হবে।
পাপ মোচনকারী কিছু আমল
আমরা এতক্ষণ তওবা বিষয়ে বিশদ
আলোচনা করেছি। এক্ষণে পাপ
মোচনকারী কিছু আমলের কথা বলব।
যা কুরআন ও সুন্নাহ নিঃসৃত। যেমন:
১. সুন্দর ও যথাযথভাবে ওযু করা ও
মসসিদে যাওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻢﻜﻟﺩﺃ ﻻﺃ ﻰﻠﻋ ﻮﺤﻤﻳ ﺎﻣ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﺑ
ﻊﻓﺮﻳﻭ ﺎﻳﺎﻄﺨﻟﺍ ﺍﻮﻟﺎﻗ ﺕﺎﺟﺭﺪﻟﺍ ﻪﺑ
ﻰﻠﺑ ﺎﻳ ﻪﻠﻟﺍ ﻝﻮﺳﺭ ﻝﺎﻗ ﺀﻮﺿﻮﻟﺍ ﻍﺎﺒﺳﺇ
ﺓﺮﺜﻛﻭ ﻩﺭﺎﻜﻤﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﺎﻄﺨﻟﺍ ﻰﻟﺇ
ﺭﺎﻈﺘﻧﺍﻭ ﺪﺟﺎﺴﻤﻟﺍ ﺓﻼﺼﻟﺍ ﺓﻼﺼﻟﺍ ﺪﻌﺑ
ﻢﻜﻟﺬﻓ ﻢﻜﻟﺬﻓ ﻁﺎﺑﺮﻟﺍ ﻢﻜﻟﺬﻓ ﻁﺎﺑﺮﻟﺍ
ﻁﺎﺑﺮﻟﺍ»
আমি তোমাদের কী এমন আমলের
কথা বলব না, যদ্দারা গোনাহ মাফ
হয়ে মর্যাদা বৃদ্ধি হবে?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, কেন নয়
বলুন হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
তিনি বললেন, কঠিন অবস্থায় সুন্দর
রূপে উযু করা, ঘন ঘন
মসজিদে যাওয়া, এক নামাযের পর
আরেক নামাযের অপেক্ষায় থাকা।
এটাই হচ্ছে সীমানাপ্রহরা, এটাই
সীমানাপ্রহরা, এই
হচ্ছে তোমাদের জন্য
সীমানাপ্রহরা।[69]
অপর এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
বলেন:
« ﻲﻧﺎﺗﺃ ﺔﻠﻴﻠﻟﺍ ﻲﺑﺭ ‏( ﻲﻓ ﻦﺴﺣﺃ ﺓﺭﻮﺻ
ـﻓ‏) ﻝﺎﻗ ﺪﻤﺤﻣ ﺎﻳ ﻱﺭﺪﺗﺃ ﻢﻴﻓ ﻢﺼﺘﺨﻳ
ﻸﻤﻟﺍ ﻰﻠﻋﻷﺍ ﺖﻠﻗ ﻢﻌﻧ ﻲﻓ ﺕﺍﺭﺎﻔﻜﻟﺍ
ﺕﺎﺟﺭﺪﻟﺍﻭ ﻡﺍﺪﻗﻷﺍ ﻞﻘﻧﻭ ﺕﺎﻋﺎﻤﺠﻠﻟ
ﺀﻮﺿﻮﻟﺍ ﻍﺎﺒﺳﺇﻭ ﺭﺎﻈﺘﻧﺍﻭ ﺕﺍﺮﺒﺴﻟﺍ ﻲﻓ
ﺓﻼﺼﻟﺍ ﺪﻌﺑ ﺓﻼﺼﻟﺍ ﻦﻣﻭ ﻦﻬﻴﻠﻋ ﻆﻓﺎﺣ
ﺮﻴﺨﺑ ﺵﺎﻋ ﺕﺎﻣﻭ ﺮﻴﺨﺑ ﻥﺎﻛﻭ ﻦﻣ ﻪﺑﻮﻧﺫ
ﻡﻮﻴﻛ ﻪﺗﺪﻟﻭ ﻪﻣﺃ »
“রাতে আমার প্রভু আমার
কাছে সবেচে সুন্দর
অবয়বে এসে বললেন, হে মুহাম্মদ!
জানেন,
উর্ধালোকে কী বিষয়ে বাদানুবাদ
চলছে? বললাম, হ্যাঁ, জানি।
কাফ্ফারা ও মর্যাদা বৃদ্ধি নিয়ে,
জামাতে নামায পড়ার পদক্ষেপ
নিয়ে, কঠিন সময়ে সুন্দররূপে উযু
করা নিয়ে এবং এক নামাযের পর
আরেক নামাযের জন্য
অপেক্ষা বিষয়ে। যে এগুলো সংরক্ষণ
করবে সে কল্যাণে থাকবে ও
কল্যাণের সাথে মারা যাবে । আর
তার গোনাহ মায়ের জন্ম
দেওয়া দিনের মত নিষ্পাপ হবে।
”[70]
২. আরাফা ও আশুরার দিন
রোযা রাখা
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« « ُﻡﺎَﻴِﺻ ِﻡْﻮَﻳ ،َﺔَﻓَﺮَﻋ ﻲِّﻧِﺇ ُﺐِﺴَﺘْﺣَﺃ ﻰَﻠَﻋ
ِﻪَّﻠﻟﺍ َﺮِّﻔَﻜُﻳ ْﻥَﺃ َﺔَﻨَّﺴﻟﺍ ﻲِﺘَّﻟﺍ ُﻪَﻠْﺒَﻗ
َﺔَﻨَّﺴﻟﺍَﻭ ﻲِﺘَّﻟﺍ ُﻩَﺪْﻌَﺑ ‏« ُﻡﺎَﻴِﺻ ِﻡْﻮَﻳ
،َﺀﺍَﺭﻮُﺷﺎَﻋ ﻲِّﻧِﺇ ُﺐِﺴَﺘْﺣَﺃ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ْﻥَﺃ
َﺔَﻨَّﺴﻟﺍ َﺮِّﻔَﻜُﻳ ﻲِﺘَّﻟﺍ ُﻪَﻠْﺒَﻗ »
“আরাফাহ দিনের রোযা,
আমি মনে করি আল্লাহ তা‘আলা এর
দ্বারা এক বছর আগের ও এক বছর
পেছনের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
আর আশুরার রোযা,
আমি মনে করি আল্লাহ তা‘আলা এক
বছর পেছনের গোনাহ মাফ
করে দেন।”[71]
৩. রমযানের কিয়ামুল লাইল
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« « ْﻦَﻣ َﻥﺎَﻀَﻣَﺭ َﻡﺎَﻗ ﺎًﻧﺎَﻤﻳِﺇ ،ﺎًﺑﺎَﺴِﺘْﺣﺍَﻭ
َﺮِﻔُﻏ ُﻪَﻟ ﺎَﻣ َﻡَّﺪَﻘَﺗ ْﻦِﻣ ِﻪِﺒْﻧَﺫ »
“যে লোক ঈমান ও ছাওয়াবের
নিয়তে রমজানে কিয়ামুল লাইল
করবে তার পেছনের সকল গোনাহ
মাফ করে দেওয়া হবে।”[72]
৪. কবুল হজ্জ
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ْﻦَﻣ َّﺞَﺣ ِﻪَّﻠِﻟ ْﻢَﻠَﻓ ،ْﺚُﻓْﺮَﻳ ْﻢَﻟَﻭ ،ْﻖُﺴْﻔَﻳ
َﻊَﺟَﺭ ُﻪْﺗَﺪَﻟَﻭ ِﻡْﻮَﻴَﻛ ُﻪُّﻣُﺃ »
“যে লোক হজ্জ করল কিন্তু অশ্লীল
বাক্যব্যয় ও নাফরমানি করল না।
মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট দিনের
ন্যায় সে নিষ্পাপ
হয়ে বাড়ি ফিরবে।”[73]
তিনি আরো বলেন:
« ﺞﺤﻟﺍ ﺭﻭﺮﺒﻤﻟﺍ ﺲﻴﻟ ﻪﻟ ﺀﺍﺰﺟ ﻻﺇ
ﺔﻨﺠﻟﺍ»
“কবুল হজ্জের বিনিময় জান্নাত
ছাড়া কিছু নয়।”[74]
৫. কৃত গোনাহর মোকাবেলায় নেক
কাজ করা
আল্লাহ বলেন-
﴿ َّﻥِﺇ ِﺖَٰﻨَﺴَﺣﻝﭐۡ َﻥﺐِﻫﺬُﻳۡۡ ِﺕﺎَِّٔﻴَّﺴﻟﭐۚ ﴾ ‏[ :ﺩﻮﻫ
١١٤‏]
নিশ্চয় নেক
কাজগুলো গোনাহকে বিদূরিত
করে দেয়।[75]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবন
জাবাল রাদিয়াল্লাহু
আনহুকে ইয়ামান প্রেরণ
কালে ওসিয়াত করে বললেন:
« ِﻪَّﻠﻟﺍ ِﻖَّﺗﺍ ﺎَﻤُﺜْﻴَﺣ ،َﺖْﻨُﻛ َﺔَﺌِّﻴَّﺴﻟﺍ ِﻊِﺒْﺗَﺃَﻭ
َﺔَﻨَﺴَﺤﻟﺍ ِﻖِﻟﺎَﺧَﻭ ،ﺎَﻬُﺤْﻤَﺗ َﺱﺎَّﻨﻟﺍ ٍﻖُﻠُﺨِﺑ
ٍﻦَﺴَﺣ»
“যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয়
করো, কখনো অসৎকাজ
করে ফেললে তৎক্ষণাৎ একটি নেক
করা করে ফেল, তাহলে ওই অসৎ
কাজটি আমলনামা থেকে মুছে যাবে।
মানুষের সাথে সদাচারের
সাথে মেলামেশা কর।”[76]
৬. সালাম ও সুন্দর কথা বিনিময়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻥﺇ ﺕﺎﺒﺟﻮﻣ ﻦﻣ ﺓﺮﻔﻐﻤﻟﺍ ﻡﻼﺴﻟﺍ ﻝﺬﺑ
ﻡﻼﻜﻟﺍ ﻦﺴﺣﻭ »
‘সালাম ও উত্তম বাক্য বিনিময়
হচ্ছে মাগফেরাত
বা ক্ষমা অবধারিত করার অন্যতম
মাধ্যম।’[77]
৭. ঋণগ্রস্তকে সময় দেওয়া
« ﻦﻋ ﺓﺮﻳﺮﻫ ﻰﺑﺍ ﻰﺒﻨﻟﺍ ﻦﻋ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ
ﻪﻴﻠﻋ ﻢﻠﺳﻭ ” :ﻝﺎﻗ َﻥﺎَﻛ ُﻦِﻳﺍَﺪُﻳ ٌﺮِﺟﺎَﺗ
،َﺱﺎَّﻨﻟﺍ ﺍَﺫِﺈَﻓ ﻯَﺃَﺭ ﺍًﺮِﺴْﻌُﻣ َﻝﺎَﻗ
:ِﻪِﻧﺎَﻴْﺘِﻔِﻟ ﺍﻭُﺯَﻭﺎَﺠَﺗ ،ُﻪْﻨَﻋ َّﻞَﻌَﻟ َﻪَّﻠﻟﺍ ْﻥَﺃ
َﺯَﻭﺎَﺠَﺘَﻳ ،ﺎَّﻨَﻋ َﺯَﻭﺎَﺠَﺘَﻓ ُﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪْﻨَﻋ ”
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: জনৈক
ব্যবসায়ী মানুষের কাছে ঋণ দিত,
যখনই
সে কোনো ঋণদাতাকে অভাবগ্রস্ত
দেখত তখনই তার লোকদের বলত,
তাকে একটু সুযোগ দাও। হয়ত আল্লাহ
আমাদের গোনাহ মাফ করবেন।
পরে আল্লাহ তা‘আলা তার গোনাহ
মাফ করেছিলেন।”[78]
৮. পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমআ ও
রমযানের
ধারাবাহিকতা রক্ষা করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺲﻤﺨﻟﺍ ﺕﺍﻮﻠﺼﻟﺍ ﺔﻌﻤﺠﻟﺍﻭ ﻰﻟﺇ
ﻥﺎﻀﻣﺭﻭ ﺔﻌﻤﺠﻟﺍ ﻰﻟﺇ ﺕﺍﺮﻔﻜﻣ ﻥﺎﻀﻣﺭ
ﻦﻬﻨﻴﺑ ﺎﻤﻟ ﺍﺫﺇ ﺮﺋﺎﺒﻜﻟﺍ ﺐﻴﻨﺘﺟﺍ ».
পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআ
থেকে আরেক জুমআ, এক রমজান
থেকে আরেক রমজানের
মাঝে কবিরা গোনাহ পরিহার
করলে এর মধ্যকার সকল গোনাহর
কাফ্ফারা হয়ে যায়।’[79]
৯. সালাতের ওজু করা।
হাদীসে এসেছে, ‘উসমান ইবন
আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত যে,
তিনি সকলকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযু
করে দেখাচ্ছিলেন। উযু
শেষে তিনি বললেন,
ﺖﻌﻤﺳ ﻰﺒﻨﻟﺍ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻢﻠﺳﻭ ﻪﻴﻠﻋ
:ﻝﻮﻘﻳ ‏« َﺄَّﺿَﻮَﺗ ْﻦَﻣ َﻮْﺤَﻧ ﻲِﺋﻮُﺿُﻭ ،ﺍَﺬَﻫ َّﻢُﺛ
ِﻦْﻴَﺘَﻌْﻛَﺭ ﻰَّﻠَﺻ َﻻ ُﺙِّﺪَﺤُﻳ ﺎَﻤِﻬﻴِﻓ ،ُﻪَﺴْﻔَﻧ َﺮِﻔُﻏ
ُﻪَﻟ ﺎَﻣ َﻡَّﺪَﻘَﺗ ْﻦِﻣ ِﻪِﺒْﻧَﺫ »
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এই
উযুর মত উযু করে দু‘রাকাত নামায
পড়বে যে সালাতের মাঝে নিজের
বিষয়ের কোনও কথা বলবে না; তার
পেছনের সব গোনাহ মাফ
করে দেয়া হবে।”[80]
১০. যিকর-আযকার গোনাহ বিদূরক
সা‘দ ইবন আবি ওয়াক্কাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻦﻣ ﻝﺎﻗ ﻦﻴﺣ :ﻥﺫﺆﻤﻟﺍ ﻊﻤﺴﻳ ﺪﻬﺷﺍ ﻥﺃﻭ
ﻥﺃ ﻻ ﻪﻟﺇ ﻻﺇ ﻪﻠﻟﺍ ﻩﺪﺣﻭ ﻻ ﻚﻳﺮﺷ ﻪﻟ
ﺍﺪﻤﺤﻣ ﻥﺃﻭ ﻪﻟﻮﺳﺭﻭ ﻩﺪﺒﻋ ، ﺖﻴﺿﺭ
ﻪﻠﻟﺎﺑ ﺎﺑﺭ ﺎﻴﺒﻧ ﺪﻤﺤﻤﺑﻭ ﻡﻼﺳﻹﺎﺑﻭ
ﺎﻨﻳﺩ ﻪﻟﺮﻔﻏ ﻪﺒﻧﺫ ».
“যে লোক মুয়াযযিনের আযান
শুনে বলে, আমিও সাক্ষ্য দিই এক
আল্লাহ ছাড়া কোনও ইলাহ নেই আর
মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর
বান্দা ও রাসূল। আমি রব
হিসেবে আল্লাহকে,
নবী হিসেবে মোহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
কে এবং দীন হিসেবে ইসলামের
উপর সন্তুষ্ট আছি; তাহলে তার সকল
গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”[81]
মু‘আয ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
যে লোক খাবার শেষে এই দোআ:
‘আলহামদুলিল্লাহি আত‘আমানী হাযাত
ত্বায়ামা। ওয়া রাযাকানিহি মিন
গায়রি হাওলিম
মিন্নি ওয়ালা কুওয়াতা”, পড়বে,
তার পেছনের সকল গোনাহ মাফ
করে দেওয়া হবে।[82]
১২. পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়
বুখারী ও মুসলিমে আছে,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আচ্ছা!
যদি তোমাদের কারো ঘরের
সামনে একটি নদী থাকে আর
তোমাদের কেউ
যদি সে নদীতে দৈনিক পাঁচবার
গোসল করে তাহলে তার
শরীরে কোনও
ময়লা থাকতে পারে কী?
তারা বললেন; না, কোনও
ময়লা থাকতে পারে না।
তিনি বলেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত
নামাযকে এর
সাথে তুলনা করে নাও। এর
দ্বারা আল্লাহ গোনাহ ধুয়ে দেন।
”[83]
১৩. নামাযে হেটে যাওয়া
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত:
« ﻚﻟﺫﻭ ﻪﻧﺃ ﺍﺫﺇ ﺄﺿﻮﺗ ﺀﻮﺿﻮﻟﺍ ﻦﺴﺣﺄﻓ ،
ﻢﺛ ﺝﺮﺧ ﺪﺠﺴﻤﻟﺍ ﻰﻟﺇ ﻪﺟﺮﺨﻳ ﻻ ﻻﺇ
ﺓﻼﺼﻟﺍ ، ﻢﻟ ﻂﺨﻳ ﺓﻮﻄﺧ ﻻﺇ ﻪﻌﻓﺭ ﻪﻟ
ﺔﺟﺭﺩ ﻂﺣ ﺎﻬﺑ ﺔﺌﻴﻄﺧ »
‘কারণ যে কেউ সুন্দররূপে ওযু
করে এরপর মসজিদের
উদ্দেশ্যে বেরোয়; উদ্দ্যেশ্য নামায
পড়া,
তাহলে তাকে কদমে কদমে নেকী দেওয়া হয়
এবং কদমে কদমে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।
’[84]
১৪. বেশী বেশী সিজদা দেওয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﻚﻴﻠﻋ ﺩﻮﺠﺴﻟﺍ ﺓﺮﺜﻜﺑ .ﻪﻠﻟ ﻚﻧﺈﻓ ﻻ
ﺪﺠﺴﺗ ﻪﻠﻟ ﺓﺪﺠﺳ ﻻﺇ ﻚﻌﻓﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﺎﻬﺑ
ﺔﺟﺭﺩ ﻂﺣﻭ ﻚﻨﻋ ﺎﻬﺑ ﺔﺌﻴﻄﺧ ».
‘তুমি বেশী বেশী সিজদা করবে,
কেননা তোমার প্রতিটি সিজদায়
আল্লাহ
তা‘আলা মর্যাদা বৃদ্ধি এবং গোনাহ
মাফ করবেন।’[85]
এটি মূলত আল্লাহর কালাম: ﺪﺠﺳﺍﻭ
ﺏﺮﺘﻗﺍﻭ ‘এবং সিজদা কর ও
নিকটবর্তী হও’ এর নেপথ্য নির্দেশ।
১৫. যার আমীন বলা ফেরেশতাদের
আমিনের সাথে মিলে যাবে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺍﺫﺇ ﻡﺎﻣﻹﺍ ﻝﺎﻗ ﺏﻮﻀﻐﻤﻟﺍ ﺮﻴﻏ ﻢﻬﻴﻠﻋ
ﺍﻮﻟﻮﻘﻓ  -ﻦﻴﻟﺎﻀﻟﺍ ﻻﻭ ﻦﻤﻓ  -ﻦﻴﻣﺃ ﻖﻓﺍﻭ
ﻪﻨﻴﻣﺄﺗ ﺔﻜﺋﻼﻤﻟﺍ ﻦﻴﻣﺄﺗ ﺮﻔﻏ ﻪﻟ ﺎﻣ
ﻡﺪﻘﺗ ﻦﻣ ﻪﺒﻧﺫ . »
‘ইমাম গাইরিল মাগদূবী আলাইহিম
ওয়ালাদ দ্বাল্লীন বললে,
তোমরা আমীন বল। যার আমীন
ফেরেশতাদের আমীনের
সাথে মিলে যাবে তার পেছনের
সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
’[86]
১৬. কিয়ামুল লাইল
আবু উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেন:
« ﻢﻜﻴﻠﻋ ﻞﻴﻠﻟﺍ ﻡﺎﻴﻘﺑ ، ﻪﻧﺈﻓ ﺏﺍﺩ
ﻦﻴﺤﻟﺎﺼﻟﺍ ﻢﻜﻠﺒﻗ ، ﻮﻫﻭ ﺔﺑﺮﻗ ﻢﻜﻟ ﻰﻟﺇ
ﻢﻜﺑﺭ ﺓﺎﻬﻨﻣﻭ ﺕﺎﺌﻴﺴﻠﻟ ﺓﺮﻔﻜﻣﻭ ﻦﻋ
ﻢﺛﻹﺍ».
‘তোমরা কিয়ামুল লাইল করবে,
কেননা এটি তোমাদের
পূর্ববর্তী সালেহীনের প্রতীক
এবং এটি তোমাদের প্রভুর নৈকট্য
অর্জনের মাধ্যম, গোনাহ বিদূরক ও
পাপ নিরোধক।’[87]
১৭. আল্লাহর রাহে সংগ্রাম
করে শহীদ হওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺪﻴﻬﺸﻠﻟﺮﻔﻐﻳ ﻞﻛ ﺐﻧﺫ ﻻﺇ ﻦﻳﺪﻟﺍ »
‘ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গোনাহ
মাফ করে দেওয়া হবে।’[88]
আল্লাহ বলেন:
﴿ ۞ َّﻥِﺇ ٰﻯَﺮَﺘۡﺷﭐ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻦِﻣ َﻦﻴِﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐ
ﻢُﻬَﻟَٰﻮۡﻣَﺃَﻭ ۡﻢُﻬَﺴُﻔﻧَﺃ َّﻥَﺄِﺑ ُﻢُﻬَﻟ ُ َۚﺔَّﻨَﺠۡﻟﭐ ١١١
﴾ ‏[ :ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ١١١ ]
‘আল্লাহ তা‘আলা মু‘মিনদের জান-
মাল ক্রয় করে নিয়েছেন
জান্নাতের বিনিময়ে।’[89]
১৮. লাগাতার হজ্জ ও
ওমরা করে যাওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺍﻮُﻌِﺑﺎَﺗ َﻦْﻴَﺑ ،ِﺓَﺮْﻤُﻌْﻟﺍَﻭ ِّﺞَﺤْﻟﺍ َّﻥِﺈَﻓ
ﻲِﻔْﻨَﺗ ،ﺎَﻤُﻬَﻨْﻴَﺑ َﺔَﻌَﺑﺎَﺘُﻤْﻟﺍ َﺮْﻘَﻔْﻟﺍ
،َﺏﻮُﻧُّﺬﻟﺍَﻭ ﺎَﻤَﻛ ،ُﺮﻴِﻜْﻟﺍ ﻲِﻔْﻨَﻳ َﺚَﺒَﺧ
ِﺪﻳِﺪَﺤْﻟﺍ»
‘তোমরা লাগাতার হজ্জ-
ওমরা করে যাও। কেননা এর অনুসরণ
দ্বারা দারিদ্র্য ও গোনাহ মাফ হয়।
যেভাবে কামারের হাঁপর লোহার
মরিচা দূর করে।’[90]
১৯. সাদাকাহ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﻥِﺇ ْﺍﻭُﺩﺐُﺗۡ ِﺖَٰﻗَﺪَّﺼﻟﭐ ﺎَّﻤِﻌِﻨَﻓ َﻲِﻫۖ ﻥِﺇَﻭ ﺎَﻫﻮُﻓﺦُﺗۡ ﺎَﻫﻮُﺗﺆُﺗَﻭۡ َﺀﺁَﺮَﻘُﻓﻝﭐۡ َﻮُﻬَﻓ ﺭﻲَﺧۡٞ ُﺮِّﻔَﻜُﻳَﻭ ﻢُﻜَّﻟۚۡ ﻢُﻜﻨَﻋ ﻦِّﻣ ﻢُﻜِﺗﺎَِّٔﻴَﺳۗۡ ُﻪَّﻠﻟﭐَﻭ ﺎَﻤِﺑ َﻥﻮُﻠَﻣﻊَﺗۡ ﺮﻴِﺒَﺧٞ ١٧٢ ﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ١٧٢‏]
ﺎَﻫﻮُﻓۡ ﺎَﻫﻮُﺗﺆُﺗَﻭۡ َﺀﺁَﺮَﻘُﻓﻝﭐۡ َﻮُﻬَﻓ ﺭﻲَﺧۡٞ ﻢُﻜَّﻟۚۡ
ُﺮِّﻔَﻜُﻳَﻭ ﻢُﻜﻨَﻋ ﻦِّﻣ ﻢُﻜِﺗﺎَِّٔﻴَﺳۗۡ ُﻪَّﻠﻟﭐَﻭ ﺎَﻤِﺑ َﻥﻮُﻠَﻣﻊَﺗۡ ﺮﻴِﺒَﺧٞ ١٧٢ ﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ١٧٢‏]
َﻥﻮُﻠَﻣۡ ﺮﻴِﺒَﺧٞ ٢٧١ ﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ٢٧١‏]
“যদি তোমরা প্রকাশে দান-খয়রাত
কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর
যদি খয়রাত গোপনে কর
এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও,
তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম।
আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কিছু
গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ
তা‘আলা তোমাদের কাজ-কর্মের খুব
খবর রাখেন।”[91]
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ُﺔَﻗَﺪَّﺼﻟﺍ َﺔَﺌﻴِﻄَﺨﻟﺍ ُﺊِﻔْﻄُﺗ ﺎَﻤَﻛ ُﺊِﻔْﻄُﻳ
ُﺀﺎَﻤﻟﺍ َﺭﺎَّﻨﻟﺍ ».
‘সাদাকাহ ঠিক
সেভাবে গোনাকে দূর
করে যেভাবে পানি আগুনকে নির্বাপিত
করে।’[92]
২০. দণ্ডবিধান বাস্তবায়ন
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺎﻤﻳﺃ ﺪﺒﻋ ﺏﺎﺻﺃ ﺎﺌﻴﺷ ﺎﻤﻣ ﻰﻬﻧ ﻪﻠﻟﺍ
ﻪﻨﻋ ﻢﺛ ﻪﻴﻠﻋ ﻢﻴﻗﺃ ﻩﺪﺣ ﺮﻔﻛ ﻪﻨﻋ ﻚﻟﺫ
ﺐﻧﺬﻟﺍ».
‘আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনও কাজ
বান্দা করে ফেরার পর যদি তার
উপর দণ্ড প্রয়োগ করা হয়
তাহলে তা তার গোনাহর
কাফ্ফারা হয়ে যায়।’[93]
২১. আল্লাহর নৈকট্যের আশায়
যিকরের মজলিসে গমন
রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺎﻣ ﻦﻣ ﺍﻮﻌﻤﺘﺟﺍ ﻡﻮﻗ ﻪﻠﻟﺍ ﻥﻭﺮﻛﺬﻳ ﻻ
ﻥﻭﺪﻳﺮﻳ ﻚﻟﺬﺑ ﻻﺇ ﻪﻬﺟﻭ ، ﻻﺇ ﻢﻫﺍﺩﺎﻧ
ﺩﺎﻨﻣ ﺀﺎﻤﺴﻟﺍ ﻦﻣ ﻥﺃ ﺭﻭﺮﻔﻐﻣ ﺍﻮﻟﻮﺗ
ﻢﻜﻟ ، ﺪﻗﻭ ﻢﻜﺗﺎﺌﻴﺳ ﺖﻟﺪﺑ ﺕﺎﻨﺴﺣ ».
‘কোন সম্প্রদায় যখন
আল্লাহকে রাজি-খুশী করার
উদ্দেশ্যে যিকরের জন্য জমায়েত হয়
তখন আকাশ থেকে জনৈক
ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন যে,
তোমরা সকলে (প্রভুর)
ক্ষমা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করো আর
তোমাদের সকল গোনাহ
নেকীতে পরিণত
করে দেওয়া হয়েছে।’[94]
উপসংহার
আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
বান্দার প্রতি রহমদিল।
সুতরাং তাঁর দরবারে আমাদের
বিনম্রচিত্তে ইস্তেগফারের
উদ্দেশ্যে নত হওয়া দরকার।
এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার,
গোনাহ যত দীর্ঘ হবে ততই শেকড়
মজবুত হবে। যেমন: কেউ একটি গাছ
উপড়াতে গিয়েও উপড়াল
না বরং ফেলে রাখল, ভাবল পরের
বছর উপড়ালেও চলবে কিন্তু পরের
বছর এর শেকড় আরো মজবুত হল আর
লোকটার শক্তিও কমে গেল,
সুতরাং সে কি করে গাছ উপড়াবে?
গোনাহকে ফেলে রাখলে পরিণতি এই-
ই হয়। তাই আমাদের আজই এবং এখনই
তওবা করা দরকার।
___________________________________________
___________________________________________
_
[1] সুরা আত তাওবা:১০৪।
[2] সূরা আল-মায়েদাহ:৭১।
[3] সূরা আন-নূর:৩১।
[4] কাওয়ায়িদুল ফিকহ,পৃ ২৩৯-২৪০।
[5] প্রাগুক্ত,পৃ ২৪০।
[6] কাশশাফু ইসতিলিহাতিল
ফুনুন,খ.১, পৃ. ২১৮।
[7] প্রাগুক্ত।
[8] সূরা আন-নূর : ৩১।
[9] সুরা আন-নিসা : ১৭।
[10] তাবারী, পৃ.১১২
[11] সূরা তাহরীম: ৭।
[12] সূরা আল-মায়েদাহ: ৭৪।
[13] সূরা আত-তাওবা: ১০৪।
[14] . সূরা শূরা, ৪২:২৫।
[15]. সূরা আন-নিসা, ৪:১১০।
[16]. মুহাম্মদ ইবন ‘ঈসা আত-
তিরমিযী, জামি‘উত-
তিরমিযী (দিমাশক: মাকতাবাতু
ইবন হাজর, ১ম সংস্করণ, ১৪২৪
হি./২০০৪ খ্রি.), কিতাবুদ-দাওয়াহ,
বাবু ফি ফাযাইলিত-তাওবাহ ওয়াল-
ইস্তিগফার, হাদীস নং ৩৫৪০, পৃ.
৯৯৩-৯৯৪।
[17] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ২৭০২।
[18] ইবন মাজাহ: ৪২৫০।
[19] জামে তিরমিযি, হাদীস
নং২৪৯৯।
[20] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং২৭৪৪।
[21] জামে তিরমিযি, হাদীস
নং২৪৯৯।
[22] সহীহ মুসলিম, কিতাবুত-তাওবাহ
বাবু সুকুতিয-যুনুবি বিল-
ইসতিগফারি ওয়াত-তাওবাহ,
হাদীস নং ২৭৪৯/১১, পৃ. ১১৮৩।
[23] কাশশাফু ইসতিলাহাতিল ফুনুন,
১ম খন্ড, পৃ. ২১৯-২২০।
[24] সম্পাদনা পরিষদ,
ইসলামী বিশ্বকোষ, ১২শ খন্ড
(ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বাংলাদেশ, ১৪১৩ হি./১৯৪২ খ্রি.),
পৃ. ৮২।
[25]. সূরা ত্বাহা: ৮২।
[26]. সূরা ইউনুস: ৫৫।
[27] সূরা আল-হাজ্জ, ২২: ৪৭।
[28] আল-আদাবুশ-শার‘ঈয়্যাহ, ১ম খন্ড,
পৃ. ১১৬।
[29] পূর্বোক্ত।
[30] সূরা আন-নিসা, ৪:১৮।
[31] তিরমিযী: ৩৫৪০।
[32] সূরা আল-ফুরকান: ৬৯।
[33] সূরা আয-যুমার: ৫৩।
[34] বুখারী: ৬৩০৯; মুসলিম: ২৭৪৭।
[35] সূরা আত-তাওবাহ: ১০৪।
[36] সূরা আয-যুমার: ৫৪।
[37] মুসনাদে আহমাদ ৩/৩।
[38] সুলায়মান ইবন আহমদ আত
তাবারানীর আল-মুজামুল কাবীর,
হাদীস নং: ২০৯৭। আর দেখুন,
সিলসিলা সহীহা: ১২০৯।
[39] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং:
৫৭৩৮।
[40] সূরা আত-তাহরীম: ৮।
[41] সহীহ মুসলিম: ২৭৪৭।
[42] আহকামুল কুরআন, দারুল কিতাবিল
আরাবী, খ.৫, পৃ.৯০।
[43] মুসনাদ আহমাদ ৫/৩৩১। সহীহুল
জামে‘, নাসিরুদ্দিন আলবানী, আল
মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় প্রকাশ,
হাদীস নং: ২৬৮৬।
[44] মুসনাদে আহমাদ ১/৪০২; ৩৮১৮।
সহীহুল জামে‘ হাদীস নং ২৬৬৭।
[45] মুসনাদে আহমাদ ৩/৩।
[46] বুখারী: ৬০৬৯; মুসলিম: ২৯৯০।
[47] সূরা আন-নূর: ১৯।
[48] তিরমিযী: ৩৫৩৭; ইবন মাজাহ:
৪২৫৩। নাসিরুদ্দিন আলবানী, সহীহুল
জামে‘, হাদীস নং ৩১৯।
[49] সূরা আয-যুমার: ৪৫
[50] আলে ইমরান: ১৩৫।
[51] মুসনাদে আহমাদ ৪/১৪৫। সহীহুল
জামে‘,নাসিরুদ্দিন আলবানী,আল
মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় প্রকাশ,
হাদীস নং: ৫৬১।
[52] মাজমা‘উদ যাওয়ায়েদ ১০/৯০।
[53] সূরা হিজর:৫৬।
[54] সূরা যুমার: ৫৩।
[55] সূরা যুমার: ৫৪।
[56] সুনানে নাসাঈ: ৩১৪০। সহীহুল
জামে‘,নাসিরুদ্দিন আলবানী, আল
মাকতাবুল ইসলামী, ৩য় প্রকাশ,
হাদীস নং: ৮৫৬।
[57] প্রাগুক্ত।
[58] সূরা হুদ: ১১৪।
[59] সূরা যুমার: ৫৪।
[60] ইবন মাজাহ: ৪২৫০।
[61] সূরা ফোরকান: ৬৯।
[62] জামে তিরমিযি ,খ ৫,পৃ ৪৩৪,
হাদীস নং ৩৩৩৪।
[63] সূরা হুদ:৩।
[64] সূরা নূহ: ১০-১২।
[65] সূরা কাসাস-৬৭।
[66] সূরা মারয়াম: ৬০।
[67] জামে‘ তিরমিযি,খ ,পৃ.৪০৬।
আলবানি এটিকে হাসান বলেছেন।
[68] সূরা আলে-ইমরান: ১৩৫।
[69] সহীহ তারগীব তারহীব,
নাসিরুদ্দিন আলবানী, মাকতাবাতুল
মা‘আরিফ (রিয়াদ-১৯৮৮) ৩য় মুদ্রণ,
হাদীস নং:১৮৫।
[70] প্রাগুক্ত: হাদীস নং ১৮৭।
[71] জামে তিরমিযি ,খ ৩,পৃ:১১৫ ও
১১৭।
[72] সহীহ বুখারী ,খ:১,পৃ ১৬,হাদীস
নং৩৭।
[73] সহীহ বুখারী ,খ:২,পৃ ১৩৩,
হাদীস নং১৫২১।
[74] সহীহ বুখারী, ফতহুল বারী,
৩/৩৮২।
[75] সূরা হুদ-১১৪।
[76] তিরমিযি,খ ৪,পৃ: ৩৫৫।
[77] আলবানী, সিলসিলাহ
(রিয়াদ:মাকতাবাতুল
মা‘আরিফ:১৯৯২) ১ম প্রকাশ,হাদীস
নং ১০৩৫।
[78] সহীহ বুখারী,খ ৩,পৃ:৫৮,হাদীস
নং: ২০৭৮।
[79] সহীহ মুসলিম,শরহে নববী, খ.৩,
পৃ.১২০।
[80] বুখারী: ১৫৯; মুসলিম: ২২৬।
[81] সহীহ মুসলিম,
শরহে নববী প্রাগুক্ত, খ.৪, পৃ.৩০৯।
[82] সহীহ মুসলিম, শরহে নববী,
প্রাগুক্ত।
[83] সহীহ বুখারী, ফতহুল বারী, খ.২,
পৃ.১১।
[84] সহীহ বুখারী,ফতহুল বারী,খ.২,
পৃ.৩১।
[85] শরহে মুসলিম,ইমাম নববী,
খ.৪,পৃ.৪৫১।
[86] সহীহ বুখারী,ফতহুল বারী, খ.২,
পৃ.২৬৬।
[87] এরওয়াউল গালীল,আলবানী, খ.২,
পৃ.৩৩।
[88] সহীহ মুসলিম, শরহে ইমাম
নববী, খ.১৩,পৃ.৩৩।
[89] সুরা তাওবাহ: ১১১।
[90] সুনানে ইবনে মাজাহ ,খ:২,
পৃ:৯৬৪, হাদীস নং: ২৮৮৭।
[91] সূরা আল বাকারা: ২৭১।
[92] জামে তিরমিযি খ-২,পৃ-৫১২,
হাদীস নং: ১৬৪।
[93] মুসতাদরাকে হাকেম, খ.৪,
পৃ.১৪২।
[94] মুসনাদে আহমাদ, খ-৩,পৃ. ১৪২।
___________________________________________
______________________________________
লেখক : মো. আব্দুল কাদের
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ
যাকারিয়া

স্ত্রী কে ভালোবাসুন

স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার
করার অসিয়ত
_________________________________
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,“তোমরা তাদের
সাথে সৎভাবে জীবন যাপন কর।”
(সূরা নিসা ১৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,অর্থাৎ “তোমরা যতই
সাগ্রহে চেষ্টা কর না কেন,
স্ত্রীদের প্রতি সমান
ভালোবাসা তোমরা কখনই
রাখতে পারবে না।
তবে তোমরা কোন এক জনের
দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না এবং অপরকে ঝুলন্ত
অবস্থায় ছেড়ে দিও না। আর
যদি তোমরা নিজেদের সংশোধন কর
ও সংযমী হও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ
চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা নিসা ১২৯ আয়াত)
♥আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য
মঙ্গলকামী হও। কারণ
নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড়
থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর
পাঁজরের হাড়ের
সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার
উপরের অংশ।
যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও,
তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর
যদি তাকে ছেড়ে দাও
তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই
তোমরা নারীদের জন্য
মঙ্গলকামী হও।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[1]
বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক
বর্ণনায় আছে, ‘‘মহিলা পাঁজরের
হাড়ের মত।
যদি তুমি তাকে সোজা করতে চাও,
তবে তুমি তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর
যদি তুমি তার দ্বারা উপকৃত
হতে চাও, তাহলে তার এ
বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে।’’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে,
‘‘মহিলাকে পাঁজরের বাঁকা হাড়
থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে কখনই
একভাবে তোমার জন্য
সোজা থাকবে না। এতএব
তুমি যদি তার থেকে উপকৃত
হতে চাও, তাহলে তার এ
বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে। আর
যদি তুমি তা সোজা করতে চাও,
তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর
তাকে ভেঙ্গে ফেলা হল তালাক
দেওয়া।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

♥আব্দুল্লাহ ইবনে যামআহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুৎবাহ
দিতে শুনলেন। তিনি (খুৎবার
মাধ্যমে) (সালেহ নবীর)
উটনী এবং ঐ ব্যক্তির
কথা আলোচনা করলেন, যে ঐ
উঁটনীটিকে কেটে ফেলেছিল।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন
তাদের মধ্যকার সর্বাধিক হতভাগ্য
ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠল। (সূরা শাম্স
১২ আয়াত) (অর্থাৎ)
উঁটনীটিকে মেরে ফেলার জন্য নিজ
বংশের মধ্যে এক দুরন্ত চরিত্রহীন
প্রভাবশালী ব্যক্তি তৎপর
হয়ে উঠেছিল।’’ অতঃপর
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের
কথা আলোচনা করলেন এবং তাদের
ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করলেন।
তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ
কেউ তার স্ত্রীকে দাসদের মত
প্রহার করে। অতঃপর সম্ভবত দিনের
শেষে তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়।
(এরূপ উচিত নয়।)’’ পুনরায়
তিনি তাদেরকে বাতকর্মের
ব্যাপারে হাসতে নিষেধ করলেন
এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ এমন
কাজে কেন হাসে, যে কাজ
সে নিজেও করে?’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[2]

♥আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন
ঈমানদার নারী (স্ত্রীকে)
ঘৃণা না করে। যদি সে তার
একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হয়, তবে অন্য
আচরণে সন্তুষ্ট হবে।’’ (মুসলিম) [3]

♥‘আমর ইবনে আহ্ওয়াস
জুশামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক
বর্ণিত, তিনি বিদায়
হজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
কে বলতে শুনেছেন,
তিনি সর্বপ্রথমে আল্লাহর
প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন
এবং উপদেশ দান ও নসীহত করলেন।
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘শোনো!
তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার
কর। কেননা, তারা তোমাদের নিকট
কয়েদী। তোমরা তাদের নিকটে এ
(শয্যা-সঙ্গিনী হওয়া, নিজের
পবিত্রতা রক্ষা করা এবং তোমাদের
মালের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি)
ছাড়া অন্য কোনও জিনিসের
অধিকার রাখ না। হ্যাঁ,
সে যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতার
কাজ
করে (তাহলে তোমরা তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার
অধিকার রাখ)।
সুতরাং তারা যদি এমন কাজ করে,
তবে তাদেরকে বিছানায়
আলাদা ছেড়ে দাও
এবং তাদেরকে মার। কিন্তু সে মার
যেন যন্ত্রণাদায়ক না হয়। অতঃপর
তারা যদি তোমাদের অনুগত
হয়ে যায়, তবে তাদের জন্য অন্য
কোনো পথ অনুসন্ধান করো না।
মনে রেখ, তোমাদের স্ত্রীদের উপর
তোমাদের অধিকার রয়েছে, অনুরূপ
তোমাদের উপর তোমাদের
স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে।
তোমাদের অধিকার হল, তারা যেন
তোমাদের বিছানায় ঐ সব
লোককে আসতে না দেয়,
যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর
এবং তারা যেন ঐ সব
লোককে তোমাদের
বাড়ীতে প্রবেশ করার
অনুমতি না দেয়,
যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। আর
শোনো! তোমাদের উপর তাদের
অধিকার এই যে,
তাদেরকে ভালোরূপে খেতে-
পরতে দেবে।’’ (তিরমিযী, হাসান
সূত্রে) [4]
* কয়েদী অর্থাৎ বন্দিনী।
স্বামীর হুকুম পালনের
ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্ত্রীকে বন্দিনীর
সাথে তুলনা করেছেন।
* যন্ত্রণাদায়ক না হয়ঃ অর্থাৎ
তাতে কেটে-ফুটে না যায়
এবং কঠিন ব্যথা না হয়।
* অন্য কোন পথ অনুসন্ধান
করো নাঃ অর্থাৎ এমন পথ অনুসন্ধান
করো না,
যাতে তাদেরকে নাজেহাল
করে কষ্ট দাও। (অথবা তালাক
ইত্যাদি দেওয়ার কথা ভেবো না।)

♥মুআবিয়াহ ইবনে হাইদাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম,
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের
কারো স্ত্রীর অধিকার স্বামীর
উপর কতটুকু?’ তিনি বললেন,
‘‘তুমি খেলে তাকে খাওয়াবে এবং তুমি পরলে তাকে পরাবে।
(তার) চেহারায় মারবে না, তাকে
‘কুৎসিত হ’ বলবে না এবং তার
থেকে পৃথক থাকলে বাড়ীর ভিতরেই
থাকবে।’’ (অর্থাৎ অবাধ্য
স্ত্রীকে বাধ্য করার জন্য
বিছানা পৃথক করতে পারা যাবে,
কিন্তু রুম পৃথক করা যাবে না।) (আবূ
দাউদ, হাসান সূত্রে) [5]
* ‘কুৎসিত হ’ বলবে নাঃ অর্থাৎ
‘আল্লাহ তোমাকে কুৎসিত করুক’
বলে অভিশাপ দেবে না।

♥আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘মু’মিনদের মধ্যে সবার চেয়ে পূর্ণ
মু’মিন ঐ ব্যক্তি যে চরিত্রে সবার
চেয়ে সুন্দর, আর তাদের
মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি,
যে নিজের স্ত্রীর জন্য সর্বোত্তম।’’
(তিরমিযী) [6]

♥ইয়াস ইবনে আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা আল্লাহর
বান্দীদেরকে প্রহার করবে না।’’
পরবর্তীতে উমার রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
এসে বললেন, ‘মহিলারা তাদের
স্বামীদের উপর বড়
দুঃসাহসিনী হয়ে গেছে।’
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রহার করার
অনুমতি দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পরিবারের নিকট বহু
মহিলা এসে নিজ নিজ স্বামীর
বিরুদ্ধে অভিযোগ আরম্ভ করল।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট
প্রচুর মহিলাদের সমাগম,
যারা তাদের স্বামীদের
বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।
(জেনে রাখ, মারকুটে) ঐ (স্বামী)
রা তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ
নয়।’’ (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে) [7]

!♥আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘পৃথিবী এক উপভোগ্য
সামগ্রী এবং তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ
সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী।’’
(মুসলিম) [8]
[1] সহীহুল বুখারী ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬,
৬০১৮, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭,
১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮
[2] সহীহুল বুখারী ৩৩৭৭, ৪৯৪২,৫২০৪,
৬০৪২, মুসলিম ২৮৫৫,
তিরমিযী ৩৩৪৩, ইবনু মাজাহ ১৯৮৩,
আহমাদ ১৫৭৮৮, দারেমী ২২২০
[3] মুসলিম ১৪৬৯, আহমাদ ৮১৬৩
[4] তিরমিযী ১১৬৩, ইবনু মাজাহ ১৮৫১
[5] আবূ দাউদ ২১৪২, ২১৪৩, ২১৪৪, ইবনু
মাজাহ ১৮৫০
[6] তিরমিযী ১১৬২, আহমাদ ৭৩৫৪, ৯৭৫৬,
১০৪৩৬, দারেমী ২৭৯২
[7] আবূ দাউদ ২১৪৬, ইবনু মাজাহ ১৯৮৫,
দারেমী ২২১৯
[8] মুসলিম ১৪৬৭, নাসায়ী ৩২৩২, ইবনু
মাজাহ ১৮৫৫, আহমাদ ৬৫৩১
______________________________________________
___________________________________________
___________________
সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু
যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-
নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ
মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন
আলবানী রহ.
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ
ফাইযী

ওহাবি অর্থ কি??

ওহাবি অর্থ কি
_____________________________
আজকাল
সাধারণে ওহাবি শব্দটি বেশ
পরিচিত হয়ে উঠেছে,
ওহাবি বলে সেসব  লোকদেরকে
বুঝানো হয়, যারা কুরআন ও সহিহ
হাদিসের পরিপন্থী
সমাজে প্রচলিত নানা কুপ্রথা ও
নিকৃষ্ট বিদআতের
বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং কোরআন
সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করেন।  প
্রচলিত ধ্যান-
ধারণা এড়িয়ে কোরআন-হাদিস
সমর্থিত আকীদা পোষণ করাই
তাদের অন্যায়। বিশেষ
করে তাওহীদের প্রতি দাওয়াত
এবং অন্যদের ছেড়ে একমাত্র
আল্লাহর
কাছে দোয়া করতে বলা হলেতো
কথাই নেই।
(লেখক বলছেন) আমি আমার
শায়খের কাছে ইবনে আব্বাসের
রা. বিখ্যাত সে হাদিসটি পাঠ
করেছিলাম: যাতে রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
যখন চাইবে আল্লাহর কাছেই
চাইবে আর যখন সাহায্য
প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই
প্রার্থনা করবে।(তিরমিযি
, হাসান সহিহ)
এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ.
বলেছেন: প্রার্থিত জিনিস
যদি এমন হয় যা মানুষের
হাতে নেই। যেমন, হিদায়াত,
ইলম, রোগমুক্তি ও সুস্থতা-
তাহলে যেন একমাত্র রবের কাছেই
চায়। তখন আমি আমার
উস্তাদকে বললাম: এ হাদিস ও তার
মর্ম আল্লাহ ছাড়া অন্যের
কাছে সাহায্য
চাওয়াকে নাজায়েয বলেছে।
তিনি বললেন : বরং জায়েয। তখন
বললাম : আপনার নিকট এর কি দলীল
আছে? এতে শায়খ খুব রেগে গেলেন
এবং চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন :
আমার চাচী এভাবে বলেন:
হে শায়খ সাদ! (ঐ মসজিদের
নীচে কবরে শায়িত ব্যক্তি, তার
নিকট সাহায্য চাইতে)। তখন
আমি বললামঃ হে চাচী!
তোমাকে কি শায়খ সাদ
কোনো উপকার করতে পারে
? উত্তরে বললেন : আমি তার
কাছে দোয়া করি এবং তখন
তিনি আল্লাহর কাছে গিয়ে আমার
জন্য শাফায়াত করেন।
আমি তখন শায়খকে বললাম :
আপনি জ্ঞানী মানুষ। সারা জীবন
কোরআন-কিতাব পাঠ
করে কাটালেন। এরপরও কি আপনার
আকিদাহ আপনার অজ্ঞ চাচীর কাছ
থেকে নিবেন? তিনি তখন
রেগে বললেন : তোমার
মধ্যে ওহাবিদের চিন্তা-
ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ওমরাহ
পালন করতে যাও আর তাদের
কিতাব নিয়ে ফেরত আস।
আসলে আমি ওহাবিদের
সম্বন্ধে বলতে গেলে কিছুই
জানতাম না, আমার উস্তাদের কাছ
থেকে শুধু এতটুকু শুনতাম যে
, ওহাবিরা সমস্ত মানুষদের
বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা ওলী-
আউলিয়া ও তাদের কারামত
বিশ্বাস করে না। তারা রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
ভালবাসে না। এবং এ জাতীয় আরও
বহু অপবাদ। তখন
আমি মনে মনে বললাম, যদি
ওহাবিরা বিশ্বাস করে শুধুমাত্র
আল্লাহর কাছে সাহায্য
চাইতে হবে এবং সুস্থতা দানের
মালিক শুধু তিনি। তাহলে অবশ্যই
আমাকে তাদের
সম্বন্ধে জানতে হবে। তারপর
তাদের
সম্পর্কে জানতে গিয়ে শুনলাম,
একটি নির্দিষ্ট জয়গায়
তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
একত্রিত হয়। তাফসির, হাদিস ও
ফিকাহ নিয়ে আলোচনা হয়।
সে মতে এক বৃহস্পতিবার
আমি আমার ছেলেদের সহ
আরো কিছু শিক্ষিত যুবকদের
নিয়ে সেখানে গেলাম।
একটা কক্ষে প্রবেশ করে দরসের
জন্য অপক্ষা করতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর আমাদের সামনে একজন
শায়খ আসলেন। সালাম
জানিয়ে ডান দিক হতে শুরু
করে সবার সাথে হাত মিলালেন।
এরপর নির্ধারিত চেয়ারে বসলেন।
আমি লক্ষ্য করলাম কেউ তাঁর
সম্মানে দাঁড়াল না।
আমি মনে মনে বললাম : এ শায়খ
খুবই নম্র ও বিনিত লোক। নিজ
সম্মানে অন্যদের
দাঁড়ানোকে পছন্দ করেন না।
কিছুক্ষণ পর
তিনি সে খুতবা পড়ে দরস শুরু
করলেন, যা নবী কারিম
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ
খুতবা ও দরস দেয়ার সময় বলতেন।
খুতবার পর অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও
বিশুদ্ধ আরবী ভাষায়
কথা বলতে লাগলেন এবং হাদিস
সম্বন্ধে আলোচনা শুরু করলেন-
হাদিসের সনদ সহিহ না দুর্বল তাও
বলে দিলেন। নবী করিম
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম
যতবার আসল ততবারই দরূদ পাঠ
করলেন। আলোচনার শেষ
ভাগে লিখিত প্রশ্নাবলী পেশ
করা হল। তিনি কোরআন ও
হাদিসের দলীলসহ
সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন।
উপস্থিত কতিপয় ব্যক্তিবর্গ তার
সাথে আলোচনা করতে চাইলে
কাউকে বিমুখ করলেন না। দরসের
শেষে বললেন : সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর
যিনি আমাকে মুসলিম
বানিয়েছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর
সাহাবাদের অনুসরণ করে চলার
তাওফীক দিয়েছেন। কিছু লোক
আমাদের সম্বন্ধে মন্তব্য
করে বলে তোমরা ওহাবি।
এটা হচ্ছে মানুষকে দেয়া নিকৃষ্ট
উপাধি। এরূপ করতে আল্লাহ   নিষেধ
করেছেন:
ﺎَﻟَﻭ ﺍﻭُﺰَﺑﺎَﻨَﺗ ِﺏﺎَﻘْﻟَﺄْﻟﺎِﺑ ‏(ﺕﺍﺮﺠﺤﻟﺍ
11 ‏)
অর্থাৎ, তোমরা একে অপরকে মন্দ
উপনামে ডেকো না।
(সূরা হুজুরাত, ৪৯: ১১ আয়াত)।
অতীতে ইমাম শাফেয়ী রহ.-
কে রাফেজি বলে আখ্যায়িত
করা হলে তিনি এক কবিতার
মাধ্যমে তার উত্তর দেন, যার
সারমর্ম হল:
যদি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর
বংশীয়দের ভালবাসার নাম
রাফেজি হয় তাহলে মানুষ ও জিন
সকলে সাক্ষী থেকো, আমিও
রাফেজি।
শায়খের দরস শেষ হলে কিছু
সংখ্যক যুবকের সাথে বের
হয়ে আসলাম তারা তাঁর ইলম ও
বিনম্র ব্যবহারে বিমুগ্ধ
হয়ে পড়েছিল। তাদের একজন বলেই
বসল, ইনি সত্যই শায়খ।
ওহাবি বলার ইতিহাস
তাওহিদের
শত্রুরা তাওহিদপন্থীদের
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের
প্রতি সম্বন্ধযুক্ত
করে ওহাবি নামে আখ্যায়িত করে।
যদি তারা সত্যবাদিই হত
তাহলে তাঁর মূল নাম মুহাম্মাদের
সাথে সম্পর্ক করে বলত মুহাম্মাদী
। কিন্তু আল্লাহ চাইলেন
তাওহিদপন্থীরা তাঁর নাম ওহাব
বা দাতা- এর সাথে সম্পর্কিত
হউক। তাই থেকে হয়ে গেল ওহাবি।
যদি সূফী বলতে সূফ
বা পশমী কাপড়
পরিধানকারী লোকদের
সাথে সম্পর্কিত মানুষদের
বুঝায়, তাহলে ওহাবি মানে
আল্লাহর নাম ওহাব –
যিনি মানুষকে একত্ববাদ দান
করেন- এর সাথে সম্পর্কিত
লোকদের বুঝাবে।
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহেবের
জীবনী
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব
সৌদি আরবের অন্তর্গত নজদ
এলাকায় ওয়াইনাহ নামক
স্থানে ১১১৫ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ
করেন। ১০ বছরে পদার্পণ করার
পূর্বেই পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন।
নিজ পিতার –
যিনি হাম্বলী মাযহাবের একজন
বিশেষ আলেম ছিলেন- নিকট
হতে ফিকাহ শিখেন। তারপর
বিভিন্ন ওস্তাদের নিকট হাদিস ও
তাফসীর শাস্ত্রে শিক্ষা লাভ
করেন। বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত:
মদিনা শরিফ গিয়ে কোরআন
হাদিসের উপর
বিশেষভাবে গবেষণার
মাধ্যমে তাওহিদের জ্ঞান লাভ
করেন। শৈশব থেকেই নিজ
এলাকাতে যে সব শিরক বিদআত ও
কুসংস্কার প্রচলিত ছিল
সেগুলো খুব খেয়াল রাখেন।
যেমন, কবরকে পবিত্র ও বরকতময়
জ্ঞান করে পূজা করা, যা ছিল
সত্যিকারের ইসলাম পরিপন্থী।
মাঝে মাঝে শুনতেন তার
এলাকার মেয়েরা পুরুষ খেজুর
গাছের কাছে ওছীলা চেয়ে বলত :
হে পালের গোদা, বছর পূর্ণ হবার
পূর্বে যেন স্বামী পাই। এ
ছাড়া হেজাজে দেখতে পান
বিভিন্ন সাহাবি ও রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
বংশধরদের কবর পূজা করা হচ্ছে।
মদিনা শরিফে শুনতেন,
লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কবরে গিয়ে আল্লাহকে ছেড়ে তাঁর
নিকট বিপদ মুক্তি চাচ্ছে।
আল্লাহকে ছেড়ে তাঁকে
ডাকাডাকি করছে। এ সবই ছিল
কোরআন ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার
বিপরীত। কারণ রাব্বুল আলামীন
বলেন :
ﺎَﻟَﻭ ُﻉْﺪَﺗ ْﻦِﻣ ِﻥﻭُﺩ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣ ﺎَﻟ َﻚُﻌَﻔْﻨَﻳ
ﺎَﻟَﻭ َﻙُّﺮُﻀَﻳ ْﻥِﺈَﻓ َﺖْﻠَﻌَﻓ َﻚَّﻧِﺈَﻓ ﺍًﺫِﺇ َﻦِﻣ
َﻦﻴِﻤِﻟﺎَّﻈﻟﺍ ﴾106ﺲﻧﻮﻳ﴿
‘অর্থাৎ, আর আল্লাহ ছাড়া এমন
কিছুকে ডেকো না, যা তোমার
উপকার
করতে পারে না এবং তোমার
ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব
তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয়
তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(সূরা ইউনুস: আয়াত ১০৬)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একদা ইবনে আব্বাসকে রা. বললেন :
َﺖْﻟَﺄَﺳ ﺍﺫﺇ ِﻝَﺄْﺳﺎَﻓ َﻪﻠﻟﺍ َﺖْﻨَﻌَﺘْﺳﺍ ﺍﺫﺍَﻭ
ْﻦِﻌَﺘْﺳﺎﻓ ِﻪﻠﻟﺎﺑ ‏( ﻯﺬﻣﺮﺘﻟﺍ ﻩﺍﻭﺭ ﻝﺎﻗﻭ
ﺢﻴﺤﺻ ﻦﺴﺣ ‏)
অর্থাৎ, যখন চাইবে কেবল আল্লাহর
কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য
প্রার্থনা করবে কেবল আল্লাহর
কাছেই প্রার্থনা করবে।
(তিরমিযি, হাসান সহিহ)।
এতসব দেখে তিনি তার
এলাকাবাসীদেরকে তাওহিদ ও
এক আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা করার
দিকে ডাকতে শুরু করলেন।
যুক্তি দিয়ে বললেন, তিনিই
শ্রষ্টা এবং এবং তিনিই দাতা।
অন্যরা কারও কোনো কষ্ট দুর
করতে সমর্থ
নয়, এমনকি নিজেদেরও না।
নেককারদের সাথে ভালবাসার
অর্থ হল তাদের অনুসরণ করা
, তাদেরকে আল্লাহ ও মানুষের
মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বানানো
নয়। আল্লাহকে ছেড়ে তাদের
কাছে কোনো জিনিস চাওয়া নয়।
১-তাঁর এ সব
তাওয়াতি কর্মসূচী দেখে
বাতিল পন্থীরা তাঁর
বিরুদ্ধে খাড়া হয়ে গেল।
তিনি তাওহিদের দাওয়াত
দিতে শুরু করলেন আর
বিদআতীরা তার
বিরুদ্ধে খাড়া হল। এটা খুবই
স্বাভাবিক। কারণ, নবী করিম
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
একত্ববাদের দাওয়াত
নিয়ে তৈরী হলেন তখন মক্কার
কাফেররা আবাক হয়ে বলেছিল:
َﻞَﻌَﺟَﺃ َﺔَﻬِﻟَﺂْﻟﺍ ﺎًﻬَﻟِﺇ ﺍًﺪِﺣﺍَﻭ َّﻥِﺇ ﺍَﺬَﻫ
ٌﺀْﻲَﺸَﻟ ٌﺏﺎَﺠُﻋ ﴾5ﺹ﴿
অর্থাৎ, সে কি সমস্ত মাবুদকে এক
মাবুদ বানাতে চায়, এটাত সত্যই
খুব অবাক হওয়ার কথা।
( সূরা সোয়াদ : আয়াত ৫)
তখন তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু
হয়ে গেল তুমুলভাবে। তাঁর
সম্বন্ধে নানা ধরণের
মিথ্যা কথার প্রচার শুরু হল-
যাতে তাঁর দাওয়াত কর্ম বন্ধ
হয়ে যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ
দাওয়াতের হিফাযত করলেন। এ
কাজের জন্য এমন এক দল লোক
তৈরী করে দিলেন,
যারা সে দাওয়াতের কাজ
নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল
সারা হেজাজসহ অন্যান্য
ইসলামি দেশগুলোয়। কিন্তু
তা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত অনেক
লোকই তাঁর সম্বন্ধে মিথ্যা প্রচার
চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য
হচ্ছে, তিনি পঞ্চম মাযহাবের
প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আসলে তিনি হাম্বলী মাযহাবের
অনুসারী ছিলেন। তারা বলে:
ওয়াহাবিরা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
কে ভালবাসে না। তাঁর উপর দরূদ
পাঠ করে না। অথচ
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
জীবনী গ্রন্থ জাদুল
মায়াদকে সংক্ষিপ্ত করেছেন। এ
ধরণের আরো বহু অপবাদ দেয়া হয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এসব
অপবাদের বিচার করবেন কিয়ামত
দিবসে। যদি তারা তার বইপত্র
পাঠ করত তাহলে দেখত-
সেগুলো কোরআন, হাদিস ও
সাহাবাদের কথায় পূর্ণ।
২-হাদীসে আছে :
َّﻢُﻬّﻠﻟﺍ ْﻙِﺭﺎَﺑ ﺎَﻨَﻟ ﻰِﻓ ﺎَﻨِﻣﺎَﺷ َﻭ ﻰِﻓ
ﺎَﻨِﻨَﻤَﻳ ﺍﻮُﻟﺎَﻗ ﻰِﻓَﻭ ﺎَﻧِﺪْﺠَﻧ َﻝﺎَﻗ َﻚِﻟﺎَﻨُﻫ
ُﻝِﺯﻻِّﺰﻟﺍ ُﻦَﺘِﻔْﻟﺍَﻭ َﻭ ﺎَﻬِﺑ ُﻊَﻠْﻄَﻳ ُﻥْﺮَﻗ
ِﻥﺎَﻄْﻴًّﺸﻟﺍ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﻩﺍﻭﺭ ﻭ ﻢﻠﺴﻣ‏)
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! বরকত দাও
আমাদের শামে এবং ইয়ামানে।
লোকেরা বলল : আমাদের নজদে।
তিনি বললেন : ওখান ভূমিকম্প ও
বিভিন্ন ফেতনা হবে।
সেখানে শয়তানের শিং উঠবে।
( বুখারি ও মুসলিম)।
এ হাদিসের
ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইবনে হাজার
আসকালানী ও অন্যান্য
আলেমরা বলেছেন :
হাদীসে যে নজদের
কথা বলা হয়েছে তার অবস্থান
ইরাকে। কারণ সেখান থেকেই
ফিতনা শুরু হয়েছে।
যেখানে হোসাইন রা. কে শহীদ
করা হয়। কিন্তু কিছু লোক
মনে করে বর্ণিত নজদ হল হেজাজের
নজদ। অথচ ইরাকে যে ধরণের
ফিতনা প্রকাশ পেয়েছে সে রকম
কোনো ফিতনা সৌদি আরবের নজদ
থেকে প্রকাশ পায় নি। হেজাজের
নজদ থেকে প্রকাশ
পেয়েছে সে তাওহিদ যার জন্য
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ব
জগতকে সৃষ্টি করেছেন, এবং সমস্ত
রাসূলদের প্রেরণ করেছেন।
৩- কিছু ন্যায় পরায়ণ আলেম
বলেছেন, তিনি হিজরী ১১
শতাব্দীর মোজাদ্দেদ। তারা তার
সম্বন্ধে গ্রন্থ লিখেছেন। যেমন
শায়খ আলী আল- তানতাভী রহ.
যিনি বড় বড় ব্যক্তিত্বদের
সম্বন্ধেও বহু বই লিখেছেন। শায়খ
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব রহ.
নামক বইতে তিনি লিখেছেন,
হিন্দুস্তান ও অন্যান্য প্রত্যন্ত
অঞ্চলে একত্ববাদের ধ্যান-
ধারণা পৌছেঁছে মুসলিম
হাজীদের দ্বারা,
যারা মক্কা থেকে এই
সম্বন্ধে ধারণা নিয়েছেন।
ফলে ইংরেজ ও ইসলামের অন্যান্য
শত্রুরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু
করল। কারণ, একমাত্র তাওহিদই
মুসলিমদেরকে নিজ শত্রুদের
বিরুদ্ধে একত্রিত করে । ফলে
, তারা এমন
অবস্থা সৃষ্টি করল, যে ব্যক্তিই
তাওহীদের
দিকে মানুষকে ডাকে তাকেই
তারা ওহাবি নামে আখ্যায়িত
করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল
মুসলিমরা যেন সে তাওহিদ
থেকে সরে যায় যে তাওহিদ এক
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার
শিক্ষা দেয়।

সংকলন : শাইখ মুহাম্মদ বিন
জামীল যাইনূ
অনুবাদক : ইকবাল হোছাইন মাছুম
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো,
রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

কুরআন ও সহীহ্ হাদিসের আলোকে ঝাড়ঁ-ফুক।

শরীয়ত সম্মত উপায়ে ঝাড়-ফুঁক করার
শর্তাবলী
১- ঝাড়-ফুঁক হতে হবে আল্লাহর কোরআন
অথবা, তাঁর নামসমূহ অথবা তাঁর
গুনাবলীসমূহ দ্বারা।
২- ঝাড়-ফুঁক হতে হবে আরবী বা অন্য
যে কোনো ভাষায়, যার অর্থ জানা যায়।
৩- এ কথায় দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে,
(রোগ চিকিৎসায়) ঝাড়-ফুঁকের কোনোই
ক্ষমতা নাই, বরং রোগ শিফা’র সকল
ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই।
৪- ঝাড়-ফুঁক যেন হারাম অবস্থায় না হয়
অর্থাৎ নাপাক অবস্থায় অথবা, কবর
বা পায়খানায় বসে ঝাড়-ফুঁক
করা যাবে না।
আল-কোরআনে বর্ণিত ঝাড়-ফুঁক
সংক্রান্ত আয়াতসমূহ
১- সূরা আল-ফাতিহা।
﴿ ِﻢۡﺴِﺑ ِﻪَّﻠﻟﭐ ِﻦَٰﻤۡﺣَّﺮﻟﭐ ِﻢﻴِﺣَّﺮﻟﭐ ُﺪۡﻤَﺤۡﻟﭐ ١
ِﻪَّﻠِﻟ َﻦﻴِﻤَﻠَٰﻌۡﻟﭐ ِّﺏَﺭ ٢ ِﻢﻴِﺣَّﺮﻟﭐ ِﻦَٰﻤۡﺣَّﺮﻟﭐ ٣
ِﻚِﻠَٰﻣ ِﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ٤ َﻙﺎَّﻳِﺇ ُﺪُﺒۡﻌَﻧ َﻙﺎَّﻳِﺇَﻭ
ُﻦﻴِﻌَﺘۡﺴَﻧ ٥ ﺎَﻧِﺪۡﻫﭐ َﻁَٰﺮِّﺼﻟﭐ َﻢﻴِﻘَﺘۡﺴُﻤۡﻟﭐ ٦
َﻁَٰﺮِﺻ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ َﺖۡﻤَﻌۡﻧَﺃ ۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ ِﺮۡﻴَﻏ
ِﺏﻮُﻀۡﻐَﻤۡﻟﭐ ۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ ﺎَﻟَﻭ َﻦﻴِّﻟٓﺎَّﻀﻟﭐ ٧
﴾ ‏[:ﺔﺤﺗﺎﻔﻟﺍ ،١ ٧‏]
(১) “আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম
করুণাময় ও অতি দয়ালু। (২) সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য,
যিনি সকল সৃষ্টিজগতের একাম্ত
পরিচালনাকারী ও মালিক (৩) যিনি পরম
দয়ালু, অতিশয় করুণাময়। (৪)
যিনি বিচারদিনের মালিক। (৫)
আমরা একমাত্র আপনারই ‘ইবাদত করি আর
আপনারই নিকট সাহায্য চাই। (৬)
আমাদেরকে সরলপথ প্রদান করুন। তাদের
পথে, যাদেরকে আপনি নে‘মত দান
করেছেন। (৭) তাদের পথে নয়,
যারা আপনার পক্ষ হতে গযবপ্রাপ্ত
(অর্থাৎ, ইহুদীগণ)। আর তাদের পথেও নয়,
যারা পথভ্রষ্ট (গোমরাহ)
হয়েছে” (অর্থাৎ, খৃষ্টানগণ)। আমীন।
২- সূরা আল-বাক্বারার ১, ২, ৩, ৪ ও ৫
আয়াত।
﴿ ٓﻢٓﻟﺍ ١ َﻚِﻟَٰﺫ ُﺐَٰﺘِﻜۡﻟﭐ ﺎَﻟ َۛﺐۡﻳَﺭ ِۛﻪﻴِﻓ ﻯٗﺪُﻫ
َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤۡﻠِّﻟ ٢ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻳ ِﺐۡﻴَﻐۡﻟﭑِﺑ
َﻥﻮُﻤﻴِﻘُﻳَﻭ َﺓٰﻮَﻠَّﺼﻟﭐ ﺎَّﻤِﻣَﻭ ۡﻢُﻬَٰﻨۡﻗَﺯَﺭ
َﻥﻮُﻘِﻔﻨُﻳ ٣ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐَﻭ َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻳ ٓﺎَﻤِﺑ َﻝِﺰﻧُﺃ
َﻚۡﻴَﻟِﺇ ٓﺎَﻣَﻭ َﻝِﺰﻧُﺃ ﻦِﻣ َﻚِﻠۡﺒَﻗ ِﺓَﺮِﺧٓﺄۡﻟﭑِﺑَﻭ
ۡﻢُﻫ َﻥﻮُﻨِﻗﻮُﻳ ٤ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺃ ٰﻰَﻠَﻋ ﻯٗﺪُﻫ ﻦِّﻣ
ۖۡﻢِﻬِّﺑَّﺭ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺃَﻭ ُﻢُﻫ َﻥﻮُﺤِﻠۡﻔُﻤۡﻟﭐ ٥
﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ،١ ٥‏]
অর্থাৎ, (১) “আলিফ লা-ম মী-ম (২)
এটা সেই কিতাব যার
মধ্যে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ
নেই, যারা আল্লাহভীরু তাদের জন্য
পথপ্রদর্শনকারী। (৩)
যারা অদেখা বিষয়ের উপর ঈমান
আনে এবং সালাত কায়েম করে আর
আমি তাদেরকে যে রুযী দান
করেছি তা থেকে খরচ করে। (৪) আর
তারা ঈমান এনেছে, যে সব কিছু আপনার
প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা আপনার
পূর্বে নাযিল হয়েছে, আর আখেরাতের
প্রতি তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে। (৫) তারাই
তাদের মালিক ও সার্বিক
তত্বাবধানকারী আল্লাহর পক্ষ
হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত
রয়েছে আর এরাই সফলকাম।” (সূরা আল-
বাক্বারার ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ আয়াত)।
৩- সূরা আল-বাক্বারার ১৬৪ নং আয়াত।
﴿ َّﻥِﺇ ﻲِﻓ ِﻖۡﻠَﺧ ِﻒَٰﻠِﺘۡﺧﭐَﻭ ِﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ ِﺕَٰﻮَٰﻤَّﺴﻟﭐ
ِﻞۡﻴَّﻟﭐ ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﭐَﻭ ِﻚۡﻠُﻔۡﻟﭐَﻭ ﻲِﺘَّﻟﭐ ﻱِﺮۡﺠَﺗ
ﻲِﻓ ِﺮۡﺤَﺒۡﻟﭐ ﺎَﻤِﺑ ُﻊَﻔﻨَﻳ َﺱﺎَّﻨﻟﭐ َﻝَﺰﻧَﺃ ٓﺎَﻣَﻭ
ُﻪَّﻠﻟﭐ َﻦِﻣ ِﺀٓﺎَﻤَّﺴﻟﭐ ﻦِﻣ ٖﺀٓﺎَّﻣ ﺎَﻴۡﺣَﺄَﻓ ِﻪِﺑ
َﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐ َﺪۡﻌَﺑ ﺎَﻬِﺗۡﻮَﻣ َّﺚَﺑَﻭ ﺎَﻬﻴِﻓ ﻦِﻣ ِّﻞُﻛ
ٖﺔَّﺑٓﺍَﺩ ِﻒﻳِﺮۡﺼَﺗَﻭ ِﺢَٰﻳِّﺮﻟﭐ ِﺏﺎَﺤَّﺴﻟﭐَﻭ
ِﺮَّﺨَﺴُﻤۡﻟﭐ َﻦۡﻴَﺑ ِﺀٓﺎَﻤَّﺴﻟﭐ ِﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ ٖﺖَٰﻳٓﺄَﻟ
ٖﻡۡﻮَﻘِّﻟ َﻥﻮُﻠِﻘۡﻌَﻳ ١٦٤ ﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ١٦٤‏]
“নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে,
রাত ও দিনের পরিবর্তনে,
সমুদ্রে জাহাজসমুহের চলাচলে মানুষের
জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ
তা‘আলা আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ
করেছেন, তা দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব
করে তুলেছেন
এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম
জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে ও
মেঘমালায় যা তাঁরই হুকুমের
অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ
করে – নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের
মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান
সম্প্রদায়ের জন্য।” (আল-বাকারা, আয়াত
নং-১৬৪)।
৪- আয়াতুল-কুরসী (সূরা আল-বাক্বারার
২৫৫ নং আয়াত)।
﴿ ُﻪَّﻠﻟﭐ ٓﺎَﻟ َﻪَٰﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ َﻮُﻫ ُۚﻡﻮُّﻴَﻘۡﻟﭐ ُّﻲَﺤۡﻟﭐ
ﺎَﻟ ۥُﻩُﺬُﺧۡﺄَﺗ ٞﺔَﻨِﺳ ﺎَﻟَﻭ ۚٞﻡۡﻮَﻧ ۥُﻪَّﻟ ﺎَﻣ ﻲِﻓ
ِﺕَٰﻮَٰﻤَّﺴﻟﭐ ﺎَﻣَﻭ ﻲِﻓ ِۗﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐ ﻦَﻣ ﺍَﺫ ﻱِﺬَّﻟﭐ
ُﻊَﻔۡﺸَﻳ ٓۥُﻩَﺪﻨِﻋ ﺎَّﻟِﺇ ۚۦِﻪِﻧۡﺫِﺈِﺑ ُﻢَﻠۡﻌَﻳ ﺎَﻣ
َﻦۡﻴَﺑ ۡﻢِﻬﻳِﺪۡﻳَﺃ ﺎَﻣَﻭ ۖۡﻢُﻬَﻔۡﻠَﺧ ﺎَﻟَﻭ َﻥﻮُﻄﻴِﺤُﻳ
ٖﺀۡﻲَﺸِﺑ ۡﻦِّﻣ ٓۦِﻪِﻤۡﻠِﻋ ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻤِﺑ َۚﺀٓﺎَﺷ َﻊِﺳَﻭ
ُﻪُّﻴِﺳۡﺮُﻛ ِﺕَٰﻮَٰﻤَّﺴﻟﭐ َۖﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ ﺎَﻟَﻭ ۥُﻩُﺩﻮَُٔﻳ
ۚﺎَﻤُﻬُﻈۡﻔِﺣ َﻮُﻫَﻭ ُّﻲِﻠَﻌۡﻟﭐ ُﻢﻴِﻈَﻌۡﻟﭐ ٢٥٥
﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ٢٥٥‏]
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য
মা‘বুদ নেই, তিনি চিরজীবিত
এবং চিরন্তন। তাকে তন্দ্রা (ঝিমানো)
ও ঘূম কখনো স্পর্শ করতে পারে না।
আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই
তারই, এমন কে আছে যে, তাঁর
অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সূপারিশ
করতে পারে? (মানুষের) চোখের
সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে,
সে সবই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু
ইচ্ছা করেন ততটুকু ব্যতীত তাঁর অনন্ত
জ্ঞানের কোনো কিছুকেই কেউ আয়ত্ব
করতে পারেনা। তার ‘কুরসী’ সমস্ত
আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত
করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ
করা তাঁর পক্ষে কঠিন কাজ নয়।
তিনি সমুন্নত ও মহিয়ান।” (সূরা আল-
বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত)।
৫- সূরা আল-বাক্বারার ২৮৫ ও ২৮৬
নং আয়াত।
﴿ َﻦَﻣﺍَﺀ ُﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ٓﺎَﻤِﺑ َﻝِﺰﻧُﺃ ِﻪۡﻴَﻟِﺇ ﻦِﻣ
ۦِﻪِّﺑَّﺭ َۚﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐَﻭ ٌّﻞُﻛ َﻦَﻣﺍَﺀ ِﻪَّﻠﻟﭑِﺑ
ۦِﻪِﺘَﻜِﺌَٰٓﻠَﻣَﻭ ۦِﻪِﺒُﺘُﻛَﻭ ۦِﻪِﻠُﺳُﺭَﻭ ﺎَﻟ ُﻕِّﺮَﻔُﻧ
َﻦۡﻴَﺑ ٖﺪَﺣَﺃ ﻦِّﻣ ۚۦِﻪِﻠُﺳُّﺭ ْﺍﻮُﻟﺎَﻗَﻭ ﺎَﻨۡﻌِﻤَﺳ
ۖﺎَﻨۡﻌَﻃَﺃَﻭ َﻚَﻧﺍَﺮۡﻔُﻏ ﺎَﻨَّﺑَﺭ ُﺮﻴِﺼَﻤۡﻟﭐ َﻚۡﻴَﻟِﺇَﻭ
٢٨٥ ﺎَﻟ ُﻒِّﻠَﻜُﻳ ُﻪَّﻠﻟﭐ ﺎًﺴۡﻔَﻧ ﺎَّﻟِﺇ ۚﺎَﻬَﻌۡﺳُﻭ
ﺎَﻬَﻟ ﺎَﻣ ۡﺖَﺒَﺴَﻛ ﺎَﻬۡﻴَﻠَﻋَﻭ ﺎَﻣ ۗۡﺖَﺒَﺴَﺘۡﻛﭐ
ﺎَﻨَّﺑَﺭ ﺎَﻟ ٓﺎَﻧۡﺬِﺧﺍَﺆُﺗ ﻥِﺇ ٓﺎَﻨﻴِﺴَّﻧ ۡﻭَﺃ
ۚﺎَﻧۡﺄَﻄۡﺧَﺃ ﺎَﻨَّﺑَﺭ ﺎَﻟَﻭ ۡﻞِﻤۡﺤَﺗ ٓﺎَﻨۡﻴَﻠَﻋ ﺍٗﺮۡﺻِﺇ
ﺎَﻤَﻛ ۥُﻪَﺘۡﻠَﻤَﺣ ﻰَﻠَﻋ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ﻦِﻣ ۚﺎَﻨِﻠۡﺒَﻗ
ﺎَﻨَّﺑَﺭ ﺎَﻟَﻭ ﺎَﻨۡﻠِّﻤَﺤُﺗ ﺎَﻣ ﺎَﻟ َﺔَﻗﺎَﻃ ﺎَﻨَﻟ
ۖۦِﻪِﺑ ُﻒۡﻋﭐَﻭ ﺎَّﻨَﻋ ۡﺮِﻔۡﻏﭐَﻭ ﺎَﻨَﻟ ۚٓﺎَﻨۡﻤَﺣۡﺭﭐَﻭ
َﺖﻧَﺃ ﺎَﻨٰﻯَﻟۡﻮَﻣ ﺎَﻧۡﺮُﺼﻧﭑَﻓ ﻰَﻠَﻋ ِﻡۡﻮَﻘۡﻟﭐ
َﻦﻳِﺮِﻔَٰﻜۡﻟﭐ ٢٨٦ ﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ،٢٨٥ ٢٨٦ ‏]
“রাসুল ঈমান রাখেন ঐ সমস্ত বিষয়ে,
যা তার মালিক ও নিয়ন্ত্রক (আল্লাহর)
পক্ষ হতে অবতীর্ণ
হয়েছে এবং মুমিনরাও। সবাই বিশ্বাস
রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর
ফেরেস্তাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের
প্রতি এবং তার নবীগণের প্রতি।
তারা বলে আমরা তাঁর নবীগণের মধ্যে
(ঈমানের ব্যাপারে) কোনো প্রকার
পার্থক্য করি না। তারা বলে:
আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য স্বীকার
করে নিলাম। হে আমাদের মালিক ও
নিয়ন্ত্রক, আমরা আপনারই নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আপনার দিকেই
আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।
কোনো ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার
সামর্থের বাইরে কোনো কাজের ভার
দেন না, সে তাই পাবে যা সে উপার্জন
করে, আর যা সে অর্জন করে তা তারই
উপর বর্তায়।
হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক!
যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি,
তাহলে এ জন্য আমাদেরকে ধর-পাকড়
করবেন না। হে আমাদের মালিক ও
নিয়ন্ত্রক! আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর
যেরূপ কঠিন বোঝা অর্পণ করেছেন,
আমাদের উপর তদ্রূপ কোনো বোঝা অর্পণ
করবেন না।
হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক!
আমাদের শক্তি-সামর্থের
বাইরে কোনো বোঝা বহনে আমাদেরকে
বাধ্য করবেন না।
আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের
প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের
অভিভাবক, অতএব কাফিরগোষ্ঠীর
বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য
করুন।” (সূরা আল-বাক্বারার ২৮৫ ও ২৮৬
নং আয়াত)।
৬- সূরা আল-‘ইমরানের ১৯০ ও ১৯১
নং আয়াত।
﴿ َّﻥِﺇ ﻲِﻓ ِﻖۡﻠَﺧ ِﻒَٰﻠِﺘۡﺧﭐَﻭ ِﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ ِﺕَٰﻮَٰﻤَّﺴﻟﭐ
ِﻞۡﻴَّﻟﭐ ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﭐَﻭ ٖﺖَٰﻳٓﺄَﻟ ﻲِﻟْﻭُﺄِّﻟ ِﺐَٰﺒۡﻟَﺄۡﻟﭐ
١٩٠ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ َﻥﻭُﺮُﻛۡﺬَﻳ َﻪَّﻠﻟﭐ ﺎٗﻤَٰﻴِﻗ
ﺍٗﺩﻮُﻌُﻗَﻭ ٰﻰَﻠَﻋَﻭ ۡﻢِﻬِﺑﻮُﻨُﺟ َﻥﻭُﺮَّﻜَﻔَﺘَﻳَﻭ ﻲِﻓ
ِﻖۡﻠَﺧ ِﺕَٰﻮَٰﻤَّﺴﻟﭐ ِﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ ﺎَﻨَّﺑَﺭ ﺎَﻣ َﺖۡﻘَﻠَﺧ
ﺍَﺬَٰﻫ ﺎٗﻠِﻄَٰﺑ َﻚَﻨَٰﺤۡﺒُﺳ ﺎَﻨِﻘَﻓ َﺏﺍَﺬَﻋ ِﺭﺎَّﻨﻟﭐ
١٩١ ﴾ ‏[ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ﻝﺍ ،١٩٠ ١٩١ ‏]
“নিশ্চয়ই আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে ও
দিবা-রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের
জন্য নিদর্শন রয়েছে।
যারা দাঁড়িয়ে বসে ও শায়িত অবস্থায়
আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও
জমিন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-
গবেষণা করে আর বলে, হে আমাদের
রাব্ব্! আপনি এসব বৃথা (অযথা)
সৃষ্টি করেননি। অতি পবিত্র আপনি, অতএব
আমাদেরকে জাহান্নামের
শাস্তি থেকে বাঁচান।” (আল-‘ইমরানের
১৯০ ও ১৯১ নং আয়াত)।
৭- সূরা আল-আ‘রাফের ৫৪ নং আয়াত।
﴿ َّﻥِﺇ ُﻢُﻜَّﺑَﺭ ُﻪَّﻠﻟﭐ ﻱِﺬَّﻟﭐ َﻖَﻠَﺧ ِﺕَٰﻮَٰﻤَّﺴﻟﭐ
َﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ ﻲِﻓ ِﺔَّﺘِﺳ ٖﻡﺎَّﻳَﺃ َّﻢُﺛ ٰﻯَﻮَﺘۡﺳﭐ ﻰَﻠَﻋ
ِۖﺵۡﺮَﻌۡﻟﭐ ﻲِﺸۡﻐُﻳ َﻞۡﻴَّﻟﭐ َﺭﺎَﻬَّﻨﻟﭐ ۥُﻪُﺒُﻠۡﻄَﻳ
ﺎٗﺜﻴِﺜَﺣ َﺲۡﻤَّﺸﻟﭐَﻭ َﺮَﻤَﻘۡﻟﭐَﻭ َﻡﻮُﺠُّﻨﻟﭐَﻭ
ِۢﺕَٰﺮَّﺨَﺴُﻣ ۗٓۦِﻩِﺮۡﻣَﺄِﺑ ﺎَﻟَﺃ ُﻪَﻟ ُﻖۡﻠَﺨۡﻟﭐ
ُۗﺮۡﻣَﺄۡﻟﭐَﻭ َﻙَﺭﺎَﺒَﺗ ُﻪَّﻠﻟﭐ ُّﺏَﺭ َﻦﻴِﻤَﻠَٰﻌۡﻟﭐ ٥٤
﴾ ‏[ :ﻑﺍﺮﻋﻻﺍ ٥٤‏]
“নিশ্চয়ই তোমাদের রব হচ্ছেন সেই
আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয়
দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর
তিনি আরশের উপর উঠলেন,
তিনি দিনকে রাত দ্বারা ঢেকে দেন
এমনভাবে যে, ওরা একে অন্যের
পিছে পিছে দ্রুতগতিতে খুজে বেড়ায়।
আর চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্ররাজিসহ সবই তার
হুকুমের অনুগত। জেনে রাখো,
সৃষ্টি করা ও আদেশ করা একমাত্র তাঁরই
কাজ। তিনিই বরকতময় আল্লাহ,
যিনি সারা জাহানের মালিক, নিয়ন্ত্রক
ও নির্বাহক।” (আল-আ‘রাফের ৫৪
নং আয়াত)
৮- সূরা আল-আ‘রাফের ১১৭, ১১৮, ১১৯
নং আয়াত।
﴿ ٓﺎَﻨۡﻴَﺣۡﻭَﺃَﻭ۞ ٰﻰَﻟِﺇ ٰٓﻰَﺳﻮُﻣ ۡﻥَﺃ ِﻖۡﻟَﺃ َۖﻙﺎَﺼَﻋ
ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻲِﻫ ُﻒَﻘۡﻠَﺗ ﺎَﻣ َﻥﻮُﻜِﻓۡﺄَﻳ ١١٧ َﻊَﻗَﻮَﻓ
ُّﻖَﺤۡﻟﭐ َﻞَﻄَﺑَﻭ ﺎَﻣ ْﺍﻮُﻧﺎَﻛ َﻥﻮُﻠَﻤۡﻌَﻳ ١١٨
ْﺍﻮُﺒِﻠُﻐَﻓ َﻚِﻟﺎَﻨُﻫ ْﺍﻮُﺒَﻠَﻘﻧﭐَﻭ َﻦﻳِﺮِﻐَٰﺻ ١١٩
﴾ ‏[ :ﻑﺍﺮﻋﻻﺍ ،١١٧ ١١٩ ‏]
“অতঃপর আমরা অহীযোগে বললাম, এবার
তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ করো,
এটা সঙ্গে সঙ্গে জাদুকররা জাদুবলে যা
বানিয়েছিল সেগুলোকে গিলতে লাগল।
সুতরাং এভাবে প্রকাশ হয়ে গেল সত্য
বিষয় আর তাদের বানোয়াট কর্ম মিথ্যায়
প্রতিপন্ন হলো। ফলে, তারা সেখানেই
পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব অপদস্থ
হল।” (সূরা আল-আ‘রাফের ১১৭, ১১৮, ১১৯
নং আয়াত)।
৯- সূরা ইউনুছের ৭৯, ৮০, ৮১ নং আয়াত।
﴿ َﻝﺎَﻗَﻭ ﻲِﻧﻮُﺘۡﺋﭐ ُﻥۡﻮَﻋۡﺮِﻓ ِّﻞُﻜِﺑ ٖﻢﻴِﻠَﻋ ٍﺮِﺤَٰﺳ
٧٩ ﺎَّﻤَﻠَﻓ َﺀٓﺎَﺟ ُﺓَﺮَﺤَّﺴﻟﭐ َﻝﺎَﻗ ﻢُﻬَﻟ ٰٓﻰَﺳﻮُّﻣ
ْﺍﻮُﻘۡﻟَﺃ ٓﺎَﻣ ﻢُﺘﻧَﺃ َﻥﻮُﻘۡﻠُّﻣ ٨٠ ٓﺎَّﻤَﻠَﻓ
ْﺍۡﻮَﻘۡﻟَﺃ َﻝﺎَﻗ ٰﻰَﺳﻮُﻣ ﺎَﻣ ﻢُﺘۡﺌِﺟ ِﻪِﺑ ُۖﺮۡﺤِّﺴﻟﭐ
َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﭐ ٓۥُﻪُﻠِﻄۡﺒُﻴَﺳ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﭐ ﺎَﻟ ُﺢِﻠۡﺼُﻳ
َﻞَﻤَﻋ َﻦﻳِﺪِﺴۡﻔُﻤۡﻟﭐ ٨١ ﴾ ‏[ :ﺲﻧﻮﻳ ،٧٩ ٨١ ‏]
“আর ফিরআউন বললো: আমার নিকট সমস্ত
সুদক্ষ জাদুকরদেরকে নিয়ে এসো। অতঃপর
যখন জাদুকররা এলো, তখন
মূসা তাদেরকে বললেন: নিক্ষেপ করো,
যা কিছু তোমরা নিক্ষেপ করতে চাও।
অতঃপর তারা যখন নিক্ষেপ করলো, তখন
মূসা বললো: যতো জাদুই তোমরা এনেছ,
আল্লাহ নিশ্চয়ই এসব এটাকে পন্ড (ভন্ডুল)
করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন
ফাসাদকারীদের ‌‘আমলকে সুষ্ঠুভাবে
সম্পন্ন হতে দেন না।” (সূরা ইউনুছের ৭৯,
৮০, ৮১ নং আয়াত)।
১০- সূরা আল-ইসরা (বনী-ইসরাইলের) ৮২
নং আয়াত।
﴿ ُﻝِّﺰَﻨُﻧَﻭ َﻦِﻣ ِﻥﺍَﺀۡﺮُﻘۡﻟﭐ ﺎَﻣ َﻮُﻫ ٞﺀٓﺎَﻔِﺷ
ٞﺔَﻤۡﺣَﺭَﻭ َﻦﻴِﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻠِّﻟ ﺎَﻟَﻭ َﻦﻴِﻤِﻠَّٰﻈﻟﭐ ُﺪﻳِﺰَﻳ
ﺍٗﺭﺎَﺴَﺧ ﺎَّﻟِﺇ ٨٢ ﴾ ‏[:ﺀﺍﺮﺳﻻﺍ ٨٢‏]
“আর আমরা অবতীর্ণ করি কুরআনে এমন সব
বিষয়, যা রোগের
শিফা বা সুচিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য
রহমত, আর তা জালিমদের ক্ষতিই
বৃদ্ধি করে।” (সূরা আল-ইসরা (বনী-
ইসরাইলের) ৮২ নং আয়াত)।
১১- সূরা ত্বাহা এর ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮ ও ৬৯
নং আয়াত।
﴿ ْﺍﻮُﻟﺎَﻗ ٰٓﻰَﺳﻮُﻤَٰﻳ ٓﺎَّﻣِﺇ ﻥَﺃ َﻲِﻘۡﻠُﺗ ٓﺎَّﻣِﺇَﻭ
ﻥَﺃ َﻥﻮُﻜَّﻧ َﻝَّﻭَﺃ ۡﻦَﻣ ٰﻰَﻘۡﻟَﺃ ٦٥ َﻝﺎَﻗ ۡﻞَﺑ
ْۖﺍﻮُﻘۡﻟَﺃ ﺍَﺫِﺈَﻓ ۡﻢُﻬُﻟﺎَﺒِﺣ ۡﻢُﻬُّﻴِﺼِﻋَﻭ ُﻞَّﻴَﺨُﻳ
ِﻪۡﻴَﻟِﺇ ﻦِﻣ ﺎَﻬَّﻧَﺃ ۡﻢِﻫِﺮۡﺤِﺳ ٰﻰَﻌۡﺴَﺗ َﺲَﺟۡﻭَﺄَﻓ ٦٦
ﻲِﻓ ۦِﻪِﺴۡﻔَﻧ ٗﺔَﻔﻴِﺧ ٰﻰَﺳﻮُّﻣ ٦٧ ﺎَﻨۡﻠُﻗ ﺎَﻟ
ۡﻒَﺨَﺗ َﻚَّﻧِﺇ َﺖﻧَﺃ ٰﻰَﻠۡﻋَﺄۡﻟﭐ ٦٨ ِﻖۡﻟَﺃَﻭ ﺎَﻣ ﻲِﻓ
َﻚِﻨﻴِﻤَﻳ ۡﻒَﻘۡﻠَﺗ ﺎَﻣ ْۖﺍٓﻮُﻌَﻨَﺻ ﺎَﻤَّﻧِﺇ ْﺍﻮُﻌَﻨَﺻ
ُﺪۡﻴَﻛ ٖۖﺮِﺤَٰﺳ ﺎَﻟَﻭ ُﺢِﻠۡﻔُﻳ ُﺮِﺣﺎَّﺴﻟﭐ ُﺚۡﻴَﺣ ٰﻰَﺗَﺃ
٦٩ ﴾ ‏[ :ﻪﻃ ،٦٥ ٦٩ ‏]
“তারা বললো: হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ
করো, অথবা আমরাই প্রথমে নিক্ষেপ করি
। মূসা বললো: বরং তোমরাই নিক্ষেপ
করো, তাদের জাদুর প্রভাবে হঠাৎ মূসার
মনে হলো যে, তাদের দড়ি ও
লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। অতঃপর
মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলো
। আমি বললাম: ভয় করো না, তুমিই প্রবল
(বিজয়ী হবে)। তোমার ডান
হাতে যা আছে, তা নিক্ষেপ করো,
এটা তারা যা বানিয়েছে,
তা গিলে ফেলবে,
তারা যা তৈরী করেছে তা তো শুধু
জাদুকরের কৌশল, জাদুকর যেখানেই
আসুক সফল হবে না।” (সূরা ত্বাহা এর ৬৫,
৬৬, ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নং আয়াত)।
১২- সূরা আল-মুমিনুনের ১১৫, ১১৬, ১১৭ ও
১১৮ নং আয়াত।
﴿ ۡﻢُﺘۡﺒِﺴَﺤَﻓَﺃ ﺎَﻤَّﻧَﺃ ۡﻢُﻜَٰﻨۡﻘَﻠَﺧ ﺎٗﺜَﺒَﻋ
ۡﻢُﻜَّﻧَﺃَﻭ ﺎَﻨۡﻴَﻟِﺇ ﺎَﻟ َﻥﻮُﻌَﺟۡﺮُﺗ ١١٥ ﻰَﻠَٰﻌَﺘَﻓ
ُﻪَّﻠﻟﭐ ُﻚِﻠَﻤۡﻟﭐ ُّۖﻖَﺤۡﻟﭐ ٓﺎَﻟ َﻪَٰﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ َﻮُﻫ ُّﺏَﺭ
ِﺵۡﺮَﻌۡﻟﭐ ِﻢﻳِﺮَﻜۡﻟﭐ ١١٦ ﻦَﻣَﻭ ُﻉۡﺪَﻳ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﻊَﻣ
ﺎًﻬَٰﻟِﺇ َﺮَﺧﺍَﺀ ﺎَﻟ َﻦَٰﻫۡﺮُﺑ ۥُﻪَﻟ ۦِﻪِﺑ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ
ۥُﻪُﺑﺎَﺴِﺣ َﺪﻨِﻋ ۚٓۦِﻪِّﺑَﺭ ۥُﻪَّﻧِﺇ ﺎَﻟ ُﺢِﻠۡﻔُﻳ
َﻥﻭُﺮِﻔَٰﻜۡﻟﭐ ١١٧ ﻞُﻗَﻭ ِّﺏَّﺭ ۡﺮِﻔۡﻏﭐ ۡﻢَﺣۡﺭﭐَﻭ
َﺖﻧَﺃَﻭ ُﺮۡﻴَﺧ َﻦﻴِﻤِﺣَّٰﺮﻟﭐ ١١٨
﴾ ‏[ :ﻥﻮﻨﻣﺆﻤﻟﺍ ،١١٥ ١١٨ ‏]
“তোমরা কি মনে করেছিলে যে,
আমরা তোমাদেরকে অনর্থক
সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট
ফিরে আসবে না? মহিমান্বিত আল্লাহ
যিনি সত্যিকারের বাদশাহ,
তিনি ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বুদ নেই,
সম্মানিত ‘আরশের তিনি রব্ব।
যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত অন্য
মা‘বুদকে ডাকে, ঐ বিষয়ে তার নিকট
কোনো প্রমাণ নেই, তার হিসাব তার
রাব্বের নিকট আছে, নিশ্চয়ই
কাফেররা সফলকাম হবে না। বলো,
হে আমার রব্ব, ক্ষমা করুন ও দয়া করুন,
দয়ালুদের মধ্যে আপনিই তো শ্রেষ্ঠ
দয়ালু।” (সূরা আল-মুমিনুনের ১১৫, ১১৬,
১১৭ ও ১১৮ নং আয়াত)।
১৩- সূরা আস-সাফ্ফাতের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬,
৭, ৮, ৯ ও ১০ নং আয়াত।
﴿ ِﺖَّٰﻔَّٰٓﺼﻟﭐَﻭ ﺎّٗﻔَﺻ ١ ِﺕَٰﺮِﺟَّٰﺰﻟﭑَﻓ ﺍٗﺮۡﺟَﺯ ٢
ِﺖَٰﻴِﻠَّٰﺘﻟﭑَﻓ ﺍًﺮۡﻛِﺫ ٣ َّﻥِﺇ ۡﻢُﻜَﻬَٰﻟِﺇ ٞﺪِﺣَٰﻮَﻟ ٤
ُّﺏَّﺭ ِﺕَٰﻮَٰﻤَّﺴﻟﭐ ِﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ ﺎَﻣَﻭ ﺎَﻤُﻬَﻨۡﻴَﺑ ُّﺏَﺭَﻭ
ِﻕِﺮَٰﺸَﻤۡﻟﭐ ٥ ﺎَّﻧِﺇ ﺎَّﻨَّﻳَﺯ َﺀٓﺎَﻤَّﺴﻟﭐ ﺎَﻴۡﻧُّﺪﻟﭐ
ٍﺔَﻨﻳِﺰِﺑ ِﺐِﻛﺍَﻮَﻜۡﻟﭐ ٦ ﺎٗﻈۡﻔِﺣَﻭ ﻦِّﻣ ٖﻦَٰﻄۡﻴَﺷ ِّﻞُﻛ
ٖﺩِﺭﺎَّﻣ ٧ ﺎَّﻟ َﻥﻮُﻌَّﻤَّﺴَﻳ ﻰَﻟِﺇ ِﺈَﻠَﻤۡﻟﭐ
ٰﻰَﻠۡﻋَﺄۡﻟﭐ َﻥﻮُﻓَﺬۡﻘُﻳَﻭ ﻦِﻣ ِّﻞُﻛ ٖﺐِﻧﺎَﺟ ٨
ۖﺍٗﺭﻮُﺣُﺩ ۡﻢُﻬَﻟَﻭ ٞﺏﺍَﺬَﻋ ٌﺐِﺻﺍَﻭ ٩ ﺎَّﻟِﺇ ۡﻦَﻣ
َﻒِﻄَﺧ َﺔَﻔۡﻄَﺨۡﻟﭐ ۥُﻪَﻌَﺒۡﺗَﺄَﻓ ٞﺏﺎَﻬِﺷ ٞﺐِﻗﺎَﺛ ١٠
﴾ ‏[:ﺕﺎﻓﺎﺼﻟﺍ ،١ ١٠ ‏]
“সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান
ফিরিশতাদের শপথ, এবং যারা কঠোর
পরিচালক, আর যারা যিক্র আবৃতিতে রত
(তাদের শপথ)। নিশ্চয়ই তোমাদের মা‘বুদ
এক, যিনি আসমান, যমীন এবং এদুয়ের
মধ্যবর্তী যা কিছু আছে, এসব কিছুর রব্ব। এ
ছাড়াও উদয়স্থানসমুহের ও রব্ব তিনি।
আমি নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্ররাজির
শোভা দ্বারা সূশোভিত করেছি, আর
সংরক্ষণ করেছি প্রত্যেক
বিদ্রোহী শয়তান হতে। ফলে, তারা উর্ধ্ব
জগতের কিছু শুনতে পায়না, এবং তাদের
প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সকল দিক
হতে বিতাড়নের জন্য এবং তাদের জন্য
রয়েছে অবিরাম শাস্তি। তবে কেউ হঠাৎ
(ছোঁ মেরে) কিছু শুনে ফেললে জলন্ত
উল্কাপিন্ড তাদের পিছন
দিকে হতে ধাওয়া করে।” (সূরা আস-
সাফ্ফাতের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০
নং আয়াত)।
১৪- সূরা আল- হাশরের ২২ ও ২৩ নং আয়াত।
﴿ َﻮُﻫ ُﻪَّﻠﻟﭐ ﻱِﺬَّﻟﭐ ٓﺎَﻟ َﻪَٰﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ َۖﻮُﻫ ُﻢِﻠَٰﻋ
ِﺐۡﻴَﻐۡﻟﭐ ِۖﺓَﺪَٰﻬَّﺸﻟﭐَﻭ َﻮُﻫ ُﻦَٰﻤۡﺣَّﺮﻟﭐ ُﻢﻴِﺣَّﺮﻟﭐ
٢٢ َﻮُﻫ ُﻪَّﻠﻟﭐ ﻱِﺬَّﻟﭐ ٓﺎَﻟ َﻪَٰﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ َﻮُﻫ
ُﻚِﻠَﻤۡﻟﭐ ُﺱﻭُّﺪُﻘۡﻟﭐ ُﻢَٰﻠَّﺴﻟﭐ ُﻦِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐ
ُﻦِﻤۡﻴَﻬُﻤۡﻟﭐ ُﺰﻳِﺰَﻌۡﻟﭐ ُﺭﺎَّﺒَﺠۡﻟﭐ ُۚﺮِّﺒَﻜَﺘُﻤۡﻟﭐ
َﻦَٰﺤۡﺒُﺳ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﻥﻮُﻛِﺮۡﺸُﻳ ﺎَّﻤَﻋ ٢٣ ﴾ ‏[ :ﺮﺸﺤﻟﺍ
،٢٢ ٢٣ ‏]
“তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত সত্য
কোনো মা‘বুদ নেই। গোপন ও প্রকাশ্য সব
কিছুই তিনি জানেন। তিনিই পরম দয়ালু ও
অতি দয়াময়। তিনিই আল্লাহ,
তিনি ব্যতিত সত্য কোনো মা‘বুদ নেই।
তিনি বাদশা, পবিত্র, শান্তি-
নিরাপত্তাদাতা, অভিভাবক,
পরাক্রমশালী, প্রবল, মহাশ্রেষ্ঠ। মানুষ
তাঁর সহিত যা কিছুর শির্ক করছে, সে সব
হতে তিনি অতি পবিত্র ও
মহান।” (সূরা আল- হাশরের ২২ ও ২৩
নং আয়াত)।
১৫- সূরা আল-ক্বালমের ৫১ নং আয়াত।
﴿ ﻥِﺇَﻭ ُﺩﺎَﻜَﻳ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍﻭُﺮَﻔَﻛ َﻚَﻧﻮُﻘِﻟۡﺰُﻴَﻟ
ۡﻢِﻫِﺮَٰﺼۡﺑَﺄِﺑ ﺎَّﻤَﻟ ْﺍﻮُﻌِﻤَﺳ َﻥﻮُﻟﻮُﻘَﻳَﻭ َﺮۡﻛِّﺬﻟﭐ
ۥُﻪَّﻧِﺇ ٞﻥﻮُﻨۡﺠَﻤَﻟ ٥١ ﺎَﻣَﻭ َﻮُﻫ ﺎَّﻟِﺇ ٞﺮۡﻛِﺫ
َﻦﻴِﻤَﻠَٰﻌۡﻠِّﻟ ٥٢ ﴾ ‏[ :ﻢﻠﻘﻟﺍ ،٥١ ٥٢ ‏]
“আর কাফেররা এমনভাবে আপনার
দিকে তাকায় যে, এক্ষুনি তাদের
দৃষ্টি দিয়ে আপনাকে ঘায়েল করে দিবে,
তারা একথাও বলে যে, নিশ্চয়ই
সে (রাসূল) একজন পাগল।” (সূরা আল-
ক্বালমের ৫১ নং আয়াত)।
১৬- সূরা জ্বীনের ৩ নং আয়াত।
﴿ ۥُﻪَّﻧَﺃَﻭ ٰﻰَﻠَٰﻌَﺗ ُّﺪَﺟ ﺎَﻨِّﺑَﺭ ﺎَﻣ َﺬَﺨَّﺗﭐ
ٗﺔَﺒِﺤَٰﺻ ﺎَﻟَﻭ ﺍٗﺪَﻟَﻭ ٣ ﴾ ‏[ :ﻦﺠﻟﺍ ٣ ‏]
“(আমার প্রতি) আরও অহি করা হয়েছে যে,
আমাদের মালিক ও পরিচালনাকারীর
(আল্লাহর) মান-মর্যাদা সম্ভ্রম
অতি উর্ধ্বে। তিনি কাহাকেও
স্ত্রী বা সন্তান হিসেবে গ্রহন করেননি
।”
১৭- সূরা আল-কাফেরুন।
﴿ ۡﻞُﻗ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ َﻥﻭُﺮِﻔَٰﻜۡﻟﭐ ١ ٓﺎَﻟ ُﺪُﺒۡﻋَﺃ ﺎَﻣ
َﻥﻭُﺪُﺒۡﻌَﺗ ٢ ٓﺎَﻟَﻭ ۡﻢُﺘﻧَﺃ َﻥﻭُﺪِﺒَٰﻋ ٓﺎَﻣ ُﺪُﺒۡﻋَﺃ
٣ ٓﺎَﻟَﻭ ۠ﺎَﻧَﺃ ٞﺪِﺑﺎَﻋ ﺎَّﻣ ۡﻢُّﺗﺪَﺒَﻋ ٤ ٓﺎَﻟَﻭ
ۡﻢُﺘﻧَﺃ َﻥﻭُﺪِﺒَٰﻋ ٓﺎَﻣ ُﺪُﺒۡﻋَﺃ ٥ ۡﻢُﻜَﻟ ۡﻢُﻜُﻨﻳِﺩ
َﻲِﻟَﻭ ِﻦﻳِﺩ ٦ ﴾ ‏[ :ﻥﻭﺮﻓﺎﻜﻟﺍ ،١ ٦ ‏]
“বলো, হে কাফিরগণ! আমি তার ইবাদত
করি না যার ইবাদত
তোমরা করো এবং তোমরাও তাঁর
ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি,
এবং আমি ইবাদতকারী নই তাঁর, যার
ইবাদত তোমরা করে আসছো, আর
তোমরা তাঁর এবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত
আমি করি। তোমাদের দ্বীন (কুফর)
তোমাদের জন্য আর আমার দ্বীন (ইসলাম)
আমার জন্য।”
১৮- সূরা আল-ইখলাছ।
﴿ ۡﻞُﻗ َﻮُﻫ ُﻪَّﻠﻟﭐ ٌﺪَﺣَﺃ ١ ُﻪَّﻠﻟﭐ ُﺪَﻤَّﺼﻟﭐ ٢
ۡﻢَﻟ ۡﺪِﻠَﻳ ۡﻢَﻟَﻭ ۡﺪَﻟﻮُﻳ ٣ ۡﻢَﻟَﻭ ﻦُﻜَﻳ ۥُﻪَّﻟ
ﺍًﻮُﻔُﻛ ُۢﺪَﺣَﺃ ٤ ﴾ ‏[ :ﺹﻼﺧﻻﺍ ،١ ٤ ‏]
“বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়,
আল্লাহ হলেন –
‘সামাদ’ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন,
সকলেই তার মুখাপেক্ষী),
তিনি কাউকেও জন্ম দেন
নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি, আর
তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।” (সূরা আল-
ইখলাছ)।
১৯- সূরা আল-ফালাক্ব।
﴿ ۡﻞُﻗ ُﺫﻮُﻋَﺃ ِّﺏَﺮِﺑ ِﻖَﻠَﻔۡﻟﭐ ١ ﻦِﻣ ِّﺮَﺷ ﺎَﻣ
َﻖَﻠَﺧ ٢ ﻦِﻣَﻭ ِّﺮَﺷ ٍﻖِﺳﺎَﻏ ﺍَﺫِﺇ َﺐَﻗَﻭ ٣ ﻦِﻣَﻭ
ِّﺮَﺷ ِﺖَٰﺜَّٰﻔَّﻨﻟﭐ ﻲِﻓ ِﺪَﻘُﻌۡﻟﭐ ٤ ﻦِﻣَﻭ ٍﺪِﺳﺎَﺣ ِّﺮَﺷ
ﺍَﺫِﺇ َﺪَﺴَﺣ ٥ ﴾ ‏[ :ﻖﻠﻔﻟﺍ ،١ ٥ ‏]
“বলুন, আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর ভোরের
রবের (মালিক ও অধিপতির),
তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট
হতে, আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের,
যখন তা গভীর হয়। আর অনিষ্ট হতে সে সব
নারীদের যারা গিরায় ফুঁক দেয়। আর
অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন
সে হিংসা করে।” (সূরা আল-ফালাক্ব)।
২০- সূরা আন-নাস।
﴿ ُﺫﻮُﻋَﺃ ۡﻞُﻗ ِّﺏَﺮِﺑ ِﺱﺎَّﻨﻟﭐ ١ ِﻚِﻠَﻣ ِﺱﺎَّﻨﻟﭐ ٢
ِﻪَٰﻟِﺇ ِﺱﺎَّﻨﻟﭐ ٣ ﻦِﻣ ِﺱﺎَّﻨَﺨۡﻟﭐ ِﺱﺍَﻮۡﺳَﻮۡﻟﭐ ِّﺮَﺷ
٤ ﻱِﺬَّﻟﭐ ُﺱِﻮۡﺳَﻮُﻳ ﻲِﻓ ِﺭﻭُﺪُﺻ ِﺱﺎَّﻨﻟ ٥ َﻦِﻣ
ِﺔَّﻨِﺠۡﻟﭐ ِﺱﺎَّﻨﻟﭐَﻭ 6 ﴾ ‏[ :ﺱﺎﻨﻟﺍ ،١ ٠ ‏]
“বলুন, আমি আশ্রয়
প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, মানুষের
অধিপতির, মানুষের মা‘বুদের কাছে,
আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার নিকট
অনিষ্ট হতে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের
অন্তরে, জিন ও মানুষের মধ্য থেকে।
(সূরা আন-নাস)।
সাহীহ হাদীসে বর্ণিত ঝাড়-ফুঁক
সংক্রান্ত দো‘আসমূহ
1- সাহীহ মুসলিমে রয়েছে:
ُﺫﻮُﻋَﺃ ِﺕﺎَﻤِﻠَﻜِﺑ ِﻪﻠﻟﺍ ِﺕﺎَّﻣﺎَّﺘﻟﺍ ْﻦِﻣ ِّﺮَﺷ
ﺎَﻣ َﻖَﻠَﺧ ‏(ﺢﻴﺤﺻ ﻢﻠﺴﻣ ‏( 4 2081 / ‏) .
‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের
ওসিলায় তাঁর নিকট
আমি তিনি যা সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর
অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ (বিকালে ৩
বার)। (সাহীহ মুসলিম: ৪/২০৮১)।
2-  সাহীহ আল-বুখারীতে রয়েছে:
ُﺫﻮُﻋَﺃ ِﺕﺎَﻤِﻠَﻜِﺑ ِﻪَّﻠﻟﺍ ،ِﺔَّﻣﺎَّﺘﻟﺍ ْﻦِﻣ ِّﻞُﻛ
ٍﻥﺎَﻄْﻴَﺷ ،ٍﺔَّﻣﺎَﻫَﻭ ْﻦِﻣَﻭ ِّﻞُﻛ ٍﻦْﻴَﻋ ٍﺔَّﻣَﻻ
” ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﺢﻴﺤﺻ ‏( 4 / 147 (
‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের
ওসিলায় সকল শয়তান ও বিষাক্ত জীব-
জন্তু থেকে ও যাবতীয় ক্ষতিকর চোখ (বদ
নযর) হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি
।’ (সাহীহ আল বুখারী ৪/১৪৭, নং ৩৩৭১)।
3- হিসনূল মুসলিমে রয়েছে:-
‏« ِﺕﺎَﻤِﻠَﻜِﺑ ُﺫﻮُﻋَﺃ ِﺔَّﻣﺎَّﺘﻟﺍ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻲِﺘَّﻟﺍ ﺎَﻟ
َّﻦُﻫُﺯِﻭﺎَﺠُﻳ ٌّﺮَﺑ ﺎَﻟَﻭ ،ٌﺮِﺟﺎَﻓ ْﻦِﻣ ِّﺮَﺷ ﺎَﻣ
ُﻝِﺰْﻨَﻳ َﻦِﻣ ،ِﺀﺎَﻤَّﺴﻟﺍ ْﻦِﻣَﻭ ِّﺮَﺷ ﺎَﻣ ُﺝُﺮْﻌَﻳ
،ﺎَﻬﻴِﻓ ْﻦِﻣَﻭ ِّﺮَﺷ ﺎَﻣ َﺃَﺭَﺫ ﻲِﻓ ،ِﺽْﺭَﺄْﻟﺍ
ْﻦِﻣَﻭ ِّﺮَﺷ ﺎَﻣ ُﺝُﺮْﺨَﻳ ،ﺎَﻬْﻨِﻣ ْﻦِﻣَﻭ ِّﺮَﺷ ِﻦَﺘِﻓ
ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ،ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍَﻭ ْﻦِﻣَﻭ ِّﺮَﺷ ِّﻞُﻛ ٍﻕِﺭﺎَﻃ
ﺎَّﻟِﺇ ﺎًﻗِﺭﺎَﻃ ُﻕُﺮْﻄَﻳ ٍﺮْﻴَﺨِﺑ ﺎَﻳ ُﻦَﻤْﺣَﺭ ‏».
‏( ﻦﺼﺣ ﻢﻠﺴﻤﻟﺍ ﻦﻣ ﺭﺎﻛﺫﺃ ﺏﺎﺘﻜﻟﺍ
ﺔﻨﺴﻟﺍﻭ ‏( 2 / 141 ‏).
“আমি আল্লাহর ঐ সকল পরিপূর্ণ
বাণীসমূহের সাহায্যে আশ্রয় চাই
যা কোনো সৎব্যক্তি বা অসৎ
ব্যক্তি অতিক্রম করতে পারে না, —
আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন,
অস্তিত্বে এনেছেন এবং তৈরী করেছেন
তার অনিষ্ট থেকে। আসমান
থেকে যা নেমে আসে তার অনিষ্ট
থেকে এবং যা আকাশে উঠে তার অনিষ্ট
থেকে, আর
যা পৃথিবীতে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার
অনিষ্ট থেকে, আর
যা পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসে, তার
অনিষ্ট থেকে, দিনে রাতে সংঘটিত
ফেতনার অনিষ্ট থেকে, আর রাতের
বেলায় হঠাৎ করে আগত অনিষ্ট থেকে।
তবে রাতে আগত কল্যাণকর
আগমনকারী ব্যতীত, হে দয়াময়।” (হিসনুল
মুসলিম : ২/১৪১)।
4- হিসনূল মুসলিমে রয়েছে:-
‏« ُﺫﻮُﻋَﺃ ِﺕﺎَﻤِﻠَﻜِﺑ ِﻪَّﻠﻟﺍ ِﺕﺎَّﻣﺎَّﺘﻟﺍ ْﻦِﻣ
ِﻪِﺒَﻀَﻏ ِﻪِﺑﺎَﻘِﻋَﻭ ِّﺮَﺷَﻭ ،ِﻩِﺩﺎَﺒِﻋ ْﻦِﻣَﻭ
ِﺕﺍَﺰَﻤَﻫ ِﻦﻴِﻃﺎَﻴَّﺸﻟﺍ ْﻥَﺃَﻭ ِﻥﻭُﺮُﻀْﺤَﻳ ‏».
‏( ﻦﺼﺣ ﻢﻠﺴﻤﻟﺍ ﻦﻣ ﺭﺎﻛﺫﺃ ﺏﺎﺘﻜﻟﺍ
ﺔﻨﺴﻟﺍﻭ ‏( 1 78 / ‏) .
“আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের
ওসিলায় আশ্রয় চাই তাঁর রাগ থেকে, তাঁর
শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট
থেকে, শয়তানদের
কুমন্ত্রণা থেকে এবং তাদের
উপস্হিতি থেকে।” (আবু দাউদ: ৪/১২, নং :
৩৮৯৩। সাহীহুত- তিরমিযী ৩/১৭১)।
5- সাহীহ হাদীসে রয়েছে:-
‏« َﻲِﺒْﺴَﺣ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻟ َﻪَﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ ،َﻮُﻫ ِﻪْﻴَﻠَﻋ
ُﺖْﻠَّﻛَﻮَﺗ َﻮُﻫَﻭ ُّﺏَﺭ ِﺵْﺮَﻌْﻟﺍ ِﻢﻴِﻈَﻌْﻟﺍ ‏». ‏(7
ﺕﺍﺮﻣ ‏) . ‏( ﻦﻨﺳ ﻲﺑﺃ ﺩﻭﺍﺩ ‏( 4 / 321‏) . ‏(ﻦﺼﺣ
ﻢﻠﺴﻤﻟﺍ ﻦﻣ ﺭﺎﻛﺫﺃ ﺏﺎﺘﻜﻟﺍ ﺔﻨﺴﻟﺍﻭ
‏( 1 / 61‏) .
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট,
তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য মা‘বুদ নেই,
আমি তাঁর উপরই ভরসা করি, আর
তিনি মহান আরশের রব্ব।” (৭ বার)।
(সূনানে আবু দাউদ ৪/৩২১) ও ( হিসনুল
মুসলিম ১/৬১)।
6- সাহীহ মুসলিমে রয়েছে:-
‏« ِﻢْﺳﺎِﺑ ِﻪﻠﻟﺍ ،َﻚﻴِﻗْﺭَﺃ ْﻦِﻣ ِّﻞُﻛ ٍﺀْﻲَﺷ
،َﻚﻳِﺫْﺆُﻳ ْﻦِﻣ ِّﺮَﺷ ِّﻞُﻛ ٍﺲْﻔَﻧ ْﻭَﺃ ِﻦْﻴَﻋ ،ٍﺪِﺳﺎَﺣ
ُﻪﻠﻟﺍ َﻚﻴِﻔْﺸَﻳ ِﻢْﺳﺎِﺑ ِﻪﻠﻟﺍ َﻚﻴِﻗْﺭَﺃ ‏».
‏( ﺢﻴﺤﺻ ﻢﻠﺴﻣ ‏(4 1718 / ‏).
“আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাঁড়ফুক করছি,
কষ্টদায়ক সকল কিছুর ক্ষতি হতে,
যে কোনো মানুষ বা বদনযর
অথবা হিংসুকের হিংসার নজর হতে।
আল্লাহ আপনাকে শিফা বা রোগমুক্ত
করুন, আমি আপনাকে আল্লাহর নামেই
ঝাঁড়ফুক করছি।” (সাহীহ মুসলিম: ৪/১৭১৮)।
7- সাহীহ হাদীসে রয়েছে:-
‏« ُﻝَﺄْﺳَﺃ َﻪَّﻠﻟﺍ َﻢﻴِﻈَﻌْﻟﺍ َّﺏَﺭ ِﺵْﺮَﻌْﻟﺍ
ِﻢﻴِﻈَﻌْﻟﺍ ْﻥَﺃ َﻚَﻴِﻔْﺸَﻳ ‏» . ‏(ﻦﻨﺳ ﻲﺑﺃ ﺩﻭﺍﺩ
‏( 3 / 187‏) .
“আমি মহান আল্লাহর কাছে চাই,
যিনি মহান আরশের রব্ব, তিনি যেন
আপনাকে রোগ হতে শিফা দান
করেন।” (৭ বার পড়বেন)। (আবু-দাউদ,
৩/১৮৭)।
8- সাহীহ মুসলিমে রয়েছে:-
তোমার শরীরের
যেখানে ব্যথা রয়েছে সেখানে হাত
রেখো এবং তিনবার বলো, বিসমিল্লাহ,
তারপর সাতবার বলো,
‏« ُﺫﻮُﻋَﺃ ِﻪﻠﻟﺎِﺑ ِﻪِﺗَﺭْﺪُﻗَﻭ ْﻦِﻣ ِّﺮَﺷ ﺎَﻣ ُﺪِﺟَﺃ
ُﺭِﺫﺎَﺣُﺃَﻭ‏» . ‏(ﺢﻴﺤﺻ ﻢﻠﺴﻣ ‏( 4 / 1728‏) .
“এই যে ব্যথা আমি অনূভব করছি এবং যার
আমি আশংকা করছি,
তা থেকে আমি আল্লাহ তা‘আলার
এবং তাঁর কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি
।” (সাহীহ মুসলিম: ৪/১৭২৮, নং ২২০২)।
9- সাহীহ আল-বুখারীতে রয়েছে:-
‏« َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ َّﺏَﺭ ،ِﺱﺎَّﻨﻟﺍ َﺐِﻫْﺬُﻣ ،ِﺱﺎَﺒﻟﺍ
ِﻒْﺷﺍ َﺖْﻧَﺃ ،ﻲِﻓﺎَّﺸﻟﺍ َﻻ َﻲِﻓﺎَﺷ ﺎَّﻟِﺇ ،َﺖْﻧَﺃ
ًﺀﺎَﻔِﺷ َﻻ ُﺭِﺩﺎَﻐُﻳ ﺎًﻤَﻘَﺳ‏» . ‏(ﺢﻴﺤﺻ
ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ‏(7 / 132‏) .
“হে আল্লাহ! হে মানুষের রব্ব,
আপনি তাদের কষ্ট, সমস্যা, বিপদদূরকারী
। আপনি তাদেরকে শিফা (রোগমুক্ত)
করে দিন, আপনিই তো শিফাদানকারী।
আপনি ব্যতীত রোগমুক্তকারী কেউই নেই,
রোগ হতে এমন শিফা দান করুন,
যাতে রোগের কিছুই শরীরে অবশিষ্ট
না থাকে।” (সাহীহ আল-বুখারী: ৭/১৩২)।
10- অনুরূপভাবে সাহীহ হাদীসে রয়েছে:
‏« ِﻢْﺴِﺑ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﻱِﺬَّﻟﺍ ﺎَﻟ ُّﺮُﻀَﻳ َﻊَﻣ ِﻪِﻤْﺳﺍ
،ٌﺀْﻲَﺷ ﻲِﻓ ،ِﺽْﺭَﺄْﻟﺍ ﺎَﻟَﻭ ﻲِﻓ ،ِﺀﺎَﻤَّﺴﻟﺍ
َﻮُﻫَﻭ ُﻊﻴِﻤَّﺴﻟﺍ ُﻢﻴِﻠَﻌْﻟﺍ‏» ، ‏( َﺙﺎَﻠَﺛ ٍﺕﺍَّﺮَﻣ ‏).
‏( ﻦﻨﺳ ﻲﺑﺃ ﺩﻭﺍﺩ ‏( 4 / 323 ‏).
“আল্লাহর নামে, যার নামের
সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই
কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর
তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” (৩
বার)।
আবদুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন
রহ.
অনুবাদ: আবুল কাসেম মুহাম্মাদ মাসুম
বিল্লাহ
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ
যাকারিয়া
সূত্র: ইসলামহাউজ

আল্লাহ কি নিরাকার

“যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে,
অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে।
তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন
এবং তারাই বুদ্ধিমান”। (জুমার ১৮)
“আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত
করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার
পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত আলোর
মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ
নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের
ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্যে দূর্ভোগ।
তারা সুস্পষ্ঠ গোমরাহীতে রয়েছে।
আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল
করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ,
পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম
কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর,
যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে,
এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর
স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ
নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ
যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন
পথপ্রদর্শক নেই”। (জুমার ২২-২৩)
• “যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার
আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়,
অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়,
তার চেয়ে যালেম আর কে?
আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব”।
(সাজদা ৩২)
সৃষ্টির সেরা মানবজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত
হওয়ার শর্ত হল ঈমান গ্রহন করা । আর ঈমান
গ্রহনের পূর্বশর্ত হল আল্লাহ্ রব্বুল
আলামীনের সঠিক পরিচয় জানা । তাই
সৃষ্টির সেরা হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম
স্রষ্টা সম্পর্কে জানতে হবে । এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন পবিত্র
কোরআনে বলছেনঃ
“সুতরাং জান সেই
আল্লাহ্কে যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই
।” [সূরা-মুহাম্মদ,আয়াত-১৯]
অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে অধিকাংশ
মানুষ আল্লাহ্ সম্পর্কে সঠিক
ধারণা রাখে না।
আল্লাহ্র সঠিক পরিচয় জানবেন কেন?
• (ক) আল্লাহ্ সম্পর্কে ভ্রান্ত
আক্বীদা বর্জনের জন্যে
• (খ) আল্লাহর প্রতি সঠিক
আক্বীদা রাখার জন্যে।
• (গ) আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক
না করার জন্য।
• (ঘ) ভয়াবহ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য।
আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের প্রতি ভ্রান্ত
আক্বীদাহ বাদ না দিলে কঠিন
শাস্তি পেতে হবে । আল্লাহ্ বলেনঃ
“এবং মুনাফিক পুরুষ মুনাফিক নারী ও
মুশরিক পুরুষ মুশরিক নারী যারা আল্লাহ্
সম্বধে মন্দ
ধারণা রাখে তাদেরকে আল্লাহ্
শাস্তি দিবেন।” [সুরা-ফাতহ, আয়াত-৬]
খুবই আশ্চর্য বিষয় অধিকাংশ মুসলিম এর
আক্বীদাহ সঠিক না ।
তারা সঠিকভাবে আল্লাহ্কে চেনেন না ।
আল্লাহ
সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে তাঁর
সিফাতে যাত
এবং গুনাবলী বর্ণনা করেছেন তাঁর নিজস্ব
সত্তার বর্ণনায় হাত,পা, মুখ, দৃষ্টিশক্তি ,
শ্রবণ শক্তি, তাঁর সন্তুষ্টি ও ক্রোধ-
ইত্যাদি উল্লেখ করছেন । রসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আল্লাহ্র স্বত্তা গুনাবলীর বর্ণনা করেছেন
। মুসলিমগণ যে আল্লাহ্র ইবাদত করে তাঁর
কোন মূর্তি নেই । তাই যেসব মুসলিম সঠিক
আক্বীদার খবর রাখে না তারা হিন্দুদের
সাকার বা মূর্তিমান দেবতার বিপরীতে
নিরাকার আল্লাহ্র ধারনা গ্রহন করেছে।
এজন্যই পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায়ই
শুনা যায়,
আল্লাহ্ নিরাকার এবং সর্বত্র বিরাজমান-
এ বিশ্বাস হিন্দু ধর্মের মূল বিশ্বাসঃ ব্রহ্ম
একক, অদ্বিতীয় , নির্গুণ ।
তিনি নিরাকার ও সর্বত্র
বা সর্বভূতে বিরাজমান ! [স্রীমদ্ভগবত
গীতা যথাযথ; কৃষ্ণ কৃপাশ্রীমূর্তি শীল
অভয়চরনাবিন্দু ভক্তি বেদান্ত
স্বামী প্রভুপাদ কতৃক
সম্পাদিত,অনুবাদঃ শ্রীমদ ভক্তিচারু ।
ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট , মায়াপুর ।]
• অথচ কোরআন ও সহীহ হাদীস
থেকে আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার আকার
রয়েছে তা প্রমানিত।
কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত ও রাসুল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর
হাদিসে আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালার
চেহারা,হাত,পা,চক্ষু,যাত বা সত্তা, সুরাত
বা আকারের উল্লেখ হয়েছে যার অর্থ স্পষ্ট
। এর মাধ্যমে আল্লাহ্র নির্দিষ্ট আকার
আকৃতি আছে বলে পাওয়া যায়।
যারা বলে আল্লাহ্ নিরাকার তারা মূলত
কোরআনের এসব আয়াতকে অস্বীকার করার
মত স্পর্ধা প্রদর্শন করে থাকে। কারন
যিনি নিরাকার তাঁর এসব কিছু থাকার
কথা নয়। আল্লাহতাআলা বলেনঃ
“তারা আল্লাহ্র যথার্থ মর্যাদা নিরুপন
করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন সমগ্র
পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে থাকবে।
“[সূরা-যুমার,আয়াত-৬৭]
আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন বলেনঃ
(কিয়ামতের দিন) ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস
হয়ে যাবে । (হে রাসুল) আপনার মহিমাময়
ও মহানুভব রবের চেহারা অর্থাৎ সত্ত্বাই
একমাত্র বাকি থাকবে। [আর-
রাহমান-২৬-২৭]
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“হে ইবলিস , তোমাকে কোন
জিনিসটি তাকে সেজদা করা থেকে বিরত
রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত
দিয়ে বানিয়েছি,তুমি কি এমনি ওদ্ধত্ত
প্রকাশ করলে,না তুমি উচ্চমর্যাদা সম্পূর্ণ
কেউ” [সূরা-সদ,আয়াত-৭৫]
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ
“বরং তাঁর দু হাতই
প্রসারিত,যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান
করেন।” [সূরা-সদ-৬৪]
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা আরও বলেনঃ
“বল -অনুগ্রহ আল্লাহ্রই হাতে” [সূরা-
আলে ইমরান-৭৩]
অথচ আল্লাহ্
সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে
“সেদিন কোন কোন মুখ খুব উজ্জল হবে ।
তারাই হবে তাদের প্রতিপালকের
দর্শনকারী” [সুরা-আল-কিয়ামাহ,
আয়াত-২৩]
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ
“দৃষ্টি শক্তি তাকে প্রত্যক্ষ
করতে পারে না বরং তিনিই
দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনিই
দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন
এবং তিনি সুক্ষদরশি,সম্যকপরিজ্ঞাত
।” [সূরা-আনআম,আয়াত-১০৩]
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ
“আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তাঁর
মুখমণ্ডল ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল
।” [সূরা-আল কাসাস, আয়াত-৮৮]
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতাআলা নবী
মূসা(আঃ)কে লক্ষ্য করে বলছেনঃ
“আমি আমার নিকট থেকে তোমার উপর
ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম
যাতে তুমি আমার চোখের
সামনে প্রতিপালিত হও।” [সূরা-ত্বহা,
আয়াত-৩৯]
এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কে স্বান্তনা দিতে গিয়ে বলেনঃ
“আপনি আপনার রবের নির্দেশের
অপেক্ষায় ধৈর্যধারন করুন আপনি আমার
চোখের সামনেই রয়েছেন।” [সূরা-আত-তূর,
আয়াত-৪৮]
আল্লাহ্ বলেনঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শ্রবণ করেন ও দেখেন
।” [সূরা-মুজাদালাহ, আয়াত-১]
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ
আল্লাহ্র সাদৃশ্য কোন বস্তুই নেই
এবং তিনি শুনেন ও দেখেন ।” [সূরা-আশ-
শুরা, আয়াত-১১]
“কিয়ামতের দিনে আল্লাহর হাঁটুর
নিম্নাংশ উন্মোচিত
করা হবে এবং সাজদা করার জন্য
সকলকে আহবান করা হবে, কিন্তু
তারা তা করতে সমর্থ হবে না ।” [সুরা-
কালাম,আয়াত-৪২]
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্র রসুল(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাদীসে বর্ণিত
হয়েছেঃ
উমর(রাঃ)হতে বর্ণিত, রসুল(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ
“কিয়ামতের দিন আল্লাহপাক সমস্ত
আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন অতঃপর
সেগুলোকে ডান
হাতে নিয়ে বলবেন,আমি হচ্ছি শাহানশাহ
(মহারাজা)অত্যাচারী আর
যালিমরা কোথায় ?
অহংকারীরা কোথায় ? [মুসলিম]
রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন,
“পাহাড়-পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে
থাকবে,তারপর
এগুলোকে ঝাঁকুনি দিয়ে তিনি বললেন,আমিই
রাজাধিরাজ আমিই আল্লাহ্।” [মুসলিম]
অপর এক বর্ণনায় রসুল(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন-
“আল্লাহ্ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এক
আঙ্গুলে রাখবেন,পানি এবং ভু-
তলে যা কিছু তা এক আঙ্গুলে রাখবেন।
“[বুখারী ও মুসলিম]
আবু সাইয়ীদ আল-খুদরী(রাঃ)
বলেন,যে আমি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ
আমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ্) কিয়ামতের
দিনে তাঁর হাঁটুর নিম্নাংশ প্রকাশ
করে দেবেন, প্রত্যেক মুমিন,
মুমিনা তাতে সাজদা করবেন
এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে লোক-দেখান ও
সম্মানের জন্য তা করত
সে সাজদা করতে গেলে তাঁর পিঠ সমান
হয়ে ফিরে আসবে(বা সিজদা করতে সমর্থ
হবেনা)। [বুখারী,মুসলিম,তিরমিযী,আহমদ]
এ সকল কোরআনের আয়াত ও হাদীস আল্লাহ্
রব্বুল আলামীন যে নিরাকার নন
তার অকাট্য প্রমান করে বর্ণনা করে ।
আল্লাহর সিফাতকে তাঁর কোন মাখলুকের
সাথে সাদৃশ্য না করে তাঁর উপর বিশ্বাস
স্থাপন করতে হবে । সর্বপরি নিরাকার
কথাটি কোরআন ও সহীহ হাদীস
দ্বারা প্রমানিত নয় । বরং হিন্দু
সংস্কৃতি থেকে আমদানীকৃত বটে । কোন
কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে কিংবা প্রকৃত
স্বরূপ জানতে না চেয়ে এর উপর বিশ্বাস
স্থাপন করতে হবে ।
• এ প্রসঙ্গে ইবনে কাসীর(রহঃ) বলেছেনঃ
“আল্লাহ্ তা’আলা আরশের উপর সমাসীন,
কোন অবস্থা ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই তার
উপর বিশ্বাস রাখতে হবে । কোন
জল্পনা কল্পনা করা চলবে না,
যার দ্বারা সাদৃশ্যের
চিন্তা মস্তিস্কে এসে যায় ; কারন
এটা আল্লাহ্র গুনাবলী হতে বহুদুরে।
মোটকথা, যা কিছু আল্লাহতাআলা বলেছেন
ওটাকে কোন খেয়াল ও সন্দেহ ছাড়াই
মেনে নিতে হবে কোন চুল
চেরা করা চলবে না । কেননা মহান
আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন কোন কিছুর
সাথে সাদৃশ্য যুক্ত নন । [তাফসীর
ইবনে কাসীর]
এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু
হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
“ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্র যে সমস্ত
সিফাত (গুন)বর্ণিত হয়েছে যেমন-আল্লাহ্র
হাত,পা,চেহারা,নফস
ইত্যাদি আমরা তা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি।
স্বীকার করি এগুলো হচ্ছে তাঁর সিফাত
বা গুণাবলী।
আমরা যেমন কখনও আল্লাহ্র সিফাত
সম্পর্কে এ প্রশ্ন করিনা বা করবোনা যে,এ
সিফাতগুলো (হাত,পা,চেহারা,চোখ
ইত্যাদি) কেমন,কিরুপ বা কিভাবে,কেমন
অবস্থায় আছে,তেমনি আল্লাহ্র সিফাতের
কোন নিজস্ব
ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দিতে যাইনা।
কেননা তিনি তা বর্ণনা করেন নাই।
যেমন- আমরা একথা কখনো বলিনা যে,
আল্লাহ্র হাত হচ্ছে তাঁর
কুদরতি হাত,শক্তিপ্রদ পা বা তাঁর
নিয়ামত।
এ ধরনের কোন ব্যাখ্যা দেয়ার অর্থ হল
আল্লাহ্র প্রকৃত সিফাতকে অকার্যকর
করা বা বাতিল করে দেয়া বা অর্থহীন
করা । আল্লাহ্র হাতকে আমরা হাতই
জানবো এর কোন বিশেষণ ব্যবহার
করবো না। কুদরতি হাত
রূপে বর্ণনা করবোনা । কোন রকম প্রশ্ন
করা ছাড়াই যেরূপ কোরআনে বর্ণিত
হয়েছে হুবুহু সে রকমই দ্বিধাহীনে বিশ্বাস
করি”। [আল ফিকহুল আকবার]
• আবু মুতি আল হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ আল
বালাখি বলেনঃ
আমি ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ)
কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ
যদি বলে যে, আমি জানিনা আল্লাহ্
কোথায় -আসমানে না পৃথিবীতে,
তাহলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন-
সে কাফের,কেননা আল্লাহ্ বলেছেন,
“পরম করুণাময় (রাহমান)আরশের উপর
সমাসীন। (সুরা-ত্ব হা-৫)
• আবু মুতি বলেছেন, অতঃপর আমি তাঁকে
(ইমাম আবু হানিফাকে)জিজ্ঞেস
করেছিলাম যে কেউ যদি বলে যে,আল্লাহ্
উপরে অধিষ্ঠিত,কিন্তু আমি জানিনা আরশ
কোথায় অবস্থিত
আকাশে না পৃথিবীতে তাহলে তার
সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?
প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন-
যদি সে ব্যক্তি “আল্লাহ্ আকাশের
উপরে “এ কথা অস্বীকার
করে তা হলে সে কাফের। (শারহুল
আকিদাহ আত তাহাওইয়াহ লি ইবনে আবিল
ইজ আল হানাফি পৃষ্ঠা নং-২২৮)
• ইমাম মালিক(রাহিমাহুল্লাহ)বলেনঃ
“ “আল্লাহ্র হাত”বলতে আল্লাহ্র হাতই
বুঝতে হবে,এর কোন রুপক(মাজাযী)অর্থ
করা যাবেনা,মাজাযী(রুপক)
বর্ণনা দেয়া যাবে না। আল্লাহ
কেমন,কিসের মত এরকম প্রশ্ন করা বিদআত
এমনকি তাঁর হাত বিশেষণে ভূষিত
করে,কুদরতি হাত বলাও
যাবেনা কেননা কোরআনে ও সহীহ
হাদীসে এভাবে বর্ণনা নাই ”। (আল
আসমা ওয়াস সিফাত পৃষ্ঠা নং-৫২৬)
আল্লাহ্র আরশে অধিষ্ঠিত
হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ
“আল্লাহ্ আরশে অধিষ্ঠিত একথা জানি,
কিভাবে অধিষ্ঠিত তা জানিনা।
এর উপর দৃঢ় ঈমান পোষণ করা ওয়াজিব
এবং এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদআত।”
ইমাম মালিক(রাহিমাহুল্লাহ)আরও বলেনঃ
“আল্লাহ্ তাঁর আরশে অধিষ্ঠিত হওয়ার
ক্ষেত্রে যতটুকু বর্ণনা দিয়েছেন তার
বাইরে কোন প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ ।আল্লাহ্
আরশে কিভাবে,কেমন করে সমাসীন
বা উপবিষ্ট আছেন। এ
সম্পর্কে আল্লাহ্তাআলা আমাদেরকে অবহিত
করেননি। তাই এ বিষয়টির কাইফিয়াত
আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।”
-আল্লামা ইবনে হাজর(রাহিমাহুল্লাহ)
ফাতহ গ্রন্থে(১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং ৪০৬)
বলেছেন,উপরক্ত বর্ণনার সনদ বিশুদ্ধ-
ইমাম শাফীঈ(রাহিমাহুল্লাহ)
জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন এ
প্রসঙ্গেঃ
“আল্লাহ্তালার আরশে অধিষ্ঠিত
হওয়া এবং আল্লাহ্র
হাত,পা ইত্যাদি যা তাঁর সিফাত
বলে বিবেচ্য আর তা কোরআন ও সহীহ
সূত্রে সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত হওয়ার পরও
যদি কোন
ব্যক্তি বিরোধিতা করে,অস্বীকার
করে ,নিষ্ক্রিয় করে তবে সে অবশ্যই
কাফের বলে গন্য হবে।
তিনি আরও বলেনঃ
“আমরা আল্লাহ্র গুণাবলী স্বীকার করি ও
বিশ্বাস করি তবে সৃষ্টির কোন কিছুর
সাথে আল্লাহ্র গুনাবলীর কোন আকার
সাব্যস্ত করিনা,সাদৃশ্য(তুলনা)করিনা।
কেননা আল্লাহ্ নিজেই তাঁর সাদৃশ্যের
বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন এ বলে-
“(সৃষ্টি জগতের) কোন কিছুই তাঁর সদৃশ
নয়।” (সূরা-শুরা,আয়াত-১১)
-সিয়ারে আলামিন নুবালা-১০ম
খণ্ড,পৃষ্ঠা নং,-৮০;আর দেখুন আইনুল
মাবুদ-১৩তম খণ্ড
পৃষ্ঠা নং-৪১;তাবাকতে হানাবিল ১ম খণ্ড
পৃষ্ঠা নং-২৮৩-
• ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(রহঃ)বলেছেনঃ
“আল্লাহ্র আসমা ও
সিফাতগুলো সম্পর্কে কোরআন ও সহীহ
হাদীসগুলোতে যেভাবে বর্ণিত
হয়েছে এগুলোকে ঠিক
সেভাবে সে পর্যায়েই রাখা উচিৎ ।
আমরা এগুলো স্বীকার করি ও বিশ্বাস
করি এবং আল্লাহ্র সিফাতের কোন সাদৃশ্য
করি না । আর এটাই হচ্ছে বিচক্ষন ও বিজ্ঞ
ওলামায়ে কেরামের অনুসৃত নীতি ”। [-
ইবনুল জাওযী প্রনীত মুনাক্বীবে ইমাম
আহমদ , পৃষ্ঠা নং-১৫৫-১৫৬]
ইমাম আহমদ (রহঃ)আরও বলেনঃ
“কোরআন ও হাদীসে আল্লাহ্র
সিফাতগুলোর
বর্ণনা যেমনভাবে এসেছে তার বাহ্যিক ও
আসল অর্থ স্বীকার
করতে হবে,মেনে নিতে হবে, এর প্রকৃত
তথা আসল অর্থকে বাদ দেয়া যাবে না।
নিস্ক্রিয় করা যাবে না, খারিজ
করা যাবে না ।
আল্লাহ্র সিফাতগুলো যথা আল্লাহ্র
আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়া আল্লাহ্র হাত,
পা দেখা শোনা ইত্যাদি সম্পর্কে যেরুপ
বর্ণিত আছে তার বাহ্যিক ও আসল অর্থ
ছাড়া রূপক , অতিরঞ্জিত
অথবা অন্তর্নিহিত কোন পৃথক অর্থ
বা ব্যাখ্যা বা বর্ণনা রসুল(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক
দেওয়া হয়েছে এমন প্রমান নেই।
আমরা যদি এ সত্য উপলব্ধি করি যে,
সালফে সালেহীন আল্লাহ্র গুনাবলী সঠিক
অর্থ বুঝেছেন । তাহলে আমাদের জন্য
অত্যাবশ্যকীয় হলো তারা এগুলোর যে অর্থ
বুঝেছেন,আমাদেরকে ঠিক সেই অর্থই
বুঝতে হবে । [-মাজমুআতুররাসায়িলিল
মুনীরিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং(১৭৬-১৮৩]
অতএব, সার কথা হল,
আল্লাহ্র অবয়ব বিশিষ্ট অস্তিত্বকে,
সত্ত্বাকে গুনাবলীকে অস্বীকার
করে (অর্থাৎ নিরাকার করে) সন্যাসী,সুফী,
পীর সাহেবেরা অলীক সাধনা বলে তাদের
ক্বলবে বসিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান
করার জন্যই আল্লাহ্কে নিরাকার
বানিয়ে ধর্মীয় সমাজে প্রচার করেছেন।
এটি ‘তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর
সুস্পষ্ট খেলাফ।
অবয়ব বিশিষ্ট তথা অস্তিত্বময়
আল্লাহ্কে নিরাকার
না করলে তো তাঁকে (আল্লাহ্কে) তাদের
ক্বলবে বসানো যাবে না । নিরাকার
আল্লাহ্কে অলীক সাধনায়,কল্পনায়
ক্বলবে বসিয়ে এই মুসলিম
রূপধারী পুরোহিতরা নিজেদেরকে দেবতার
মর্যাদায় ভূষিত হয়ে সমাজে শ্রেষ্ঠত্ব
অর্জন করে চলেছেন । আসলে এ সবই
ভণ্ডামির বেসাতি, স্বার্থোদ্ধারের
ধান্দা ।
আল্লাহ আমাদের তাওহীদ বুঝার ও মানার
তাওফিক দান করুন, সকল প্রকার শিরক
থেকে রক্ষা করুন, আমিন।
সৌজন্যেঃ জুমার খুতবা

সালাতে দুই সেজদাহর মাঝে রাসূল(ছাঃ) যে দোয়া পড়তেন

রাসুল (সাঃ) দুই সিজদার মাঝখানে বলতেন,
”আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনী,
ওয়াহদীনি, ওয়া আফিনী, ওয়ার-ঝুকনী”
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমায় মাফ কর,
আমাকে রহম কর, আমাকে হেদায়েত দান
কর, আমাকে শান্তি দান কর
এবং আমাকে রিজিক দাও| (মুসলিম,
মিশকাত পৃঃ ৭৭ হা/ ৮৯৩)
হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) দুই
সিজদার মাঝে বলতেন, ‘রাব্বিগ ফিরলি”
অর্থ: হে প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন|
(নাসাই, মিশকাত পৃঃ ৮৪); ইবনু
মাজাতে ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ দুইবার
পড়ার কথা বলা আছে|

সহীহ্ হাদিসের আলোকে রাসূল(ছাঃ)এর আদায়কৃত সালাতের সম্পূর্ণ পদ্ধতি।

কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের
আলোকে রাসুলুল্লাহ্(সাঃ) এর সালাত
আদায়ের পদ্ধতি
আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্,
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান ন আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন এর জন্যে, যিনি জগত
সমূহের একচ্ছত্র মালিক, সৃষ্টিকর্তা,
পালনকর্তা, রিজিক দাতা ও জ্ঞানদাতা।
অজস্র শান্তির ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল
শিরোমনী সর্ব শেষ রাসুল ও সর্ব শ্রেষ্ঠ
রাসুল, প্রিয় নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ও তাঁর
পরিবারবর্গ এবং তাঁর সহচরগণের উপর।
সহিহ হাদিস ভিত্তিক রাসুল (সাঃ) এর
সালাত আদায়ের
পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করার
চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ:
রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) এর
সাথে মসজিদে জামায়াতে মহিলারাও
সালাত আদায় করতেন(বুখারী); অতএব
উপরোক্ত কথাটি পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের
জন্যই প্রযোজ্য| রাসুল (সাঃ) পুরুষ ও
স্ত্রী লোকের জন্য
আলাদা কোনো সালাতের পদ্ধতি দেন নি|
নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই একই পদ্ধতি|
আমাদের সমাজে যে পার্থক্য
তৈরী করা আছে তা নিতান্তই কিছু জাল ও
বানোয়াট হাদিসের
প্রেক্ষিতে মনগড়া তৈরী|
আল্লাহ বলেন ”রসূল তোমাদেরকে যা দেন,
তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,
তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয়
কর।” সুরা হাশর ৭ | ”যে লোক রসূলের হুকুম
মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ |
অর্থাত পুরুষ ও মহিলার মধ্যে সালাতের
পদ্ধতিগত কোনো পার্থক্য নেই|
নিয়ত: নিয়ত করা ফরজ| বুখারী ১ম হাদিস|
নিয়ত অন্তরে করতে হয়| উচ্চারণ
করে ‘নাওয়াইতুআন….’ নিয়ত পড়ার
কোনো দলিল প্রমান নাই| উচ্চারণ
করে হোক আরবিতে বা বাংলায় নিয়ত পাঠ
করা বিদআত |
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব
এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর
সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব
উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক
বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল
ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম
জাহান্নাম।[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫
ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০,
হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে। আবু
দাউদ, তিরমিজি ]
অতএব প্রত্যেক বিদআত =
বিদাতে হাসানাহ+ বিদাতে সায়িয়াহ =
পথভ্রষ্টতা = পরিনাম জাহান্নাম|
সমাজে বিদাতে হাসানাহ নামে যা চালু
আছে মূলত তা হচ্ছে পথভ্রষ্টতা|
কেননা রাসুল (সাঃ) ‘প্রত্যেক বিদআত”
বলে উল্লেখ করেছেন|
কোনো বিদাতকে আলাদা করে ভালো বলেন
নি| সুতরাং আমাদের অবশ্যই সতর্ক
হতে হবে|
● সালাত:
——–
মহান আল্লাহ বলেন, এবং আমার
স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর। [সূরা তা-
হা ১৪]
সালাতের জন্য দাড়াতে হবে,
দাড়াতে অক্ষম হলে বসে, বসতে অক্ষম
হলে শুয়ে ইশারায় সালাত আদায়
করতে হবে| আল্লাহ বলেন,
আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও
রাত্রির
পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন
লোকের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও
শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে … [সূরা আলে –
ইমরান ১৯০- ১৯১]
সালাত যেভাবে শুরু করতে হবে:
আমাদের সমাজে সালাত শুরুর
পূর্বে জায়নামাজের দুআ পড়া হয় যার কোনই
ভিত্তি নাই বরং হাদিসের বিপরীত
উল্টো কাজ এবং বিদআত| জায়নামাজের
দুআ বলে কোনো দুআ নেই|
পাঠক! আবার স্মরণ নিন, আল্লাহ বলেন ”রসূল
তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর
এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত
থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” সুরা হাশর ৭
| ”যে লোক রসূলের হুকুম মান্য
করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ |
রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
●১. দাড়ানো:-
—————
মহান আল্লাহ বলেন, সমস্ত নামাযের
প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ
করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর
আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের
সাথে দাঁড়াও। সুরা বাকারাহ ১৩৮|
সোজা হয়ে কেবলামুখী হয় দাড়াতে হবে|
আমাদের দেশে পশ্চিম দিক বলে অনেকে|
এটা ঠিক নয়| পশ্চিম থেকেও একটু ডান
দিকে হেলে কেবলার দিক|
রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, ‘তুমি যখন
সালাতের জন্য দাড়াবে তখন
কেবলামুখী হয়ে তাকবির বলবে|’ বুখারী ও
মুসলিম |
দুই পায়ের মাঝখানে কতটুকু
ফাকা রাখতে হবে তার নির্দিষ্ট
কোনো নিয়ম নেই| স্বাভাবিকভাবে একজন
মানুষ দাড়ালে দুই পায়ে যতটুকু
ফাকা থাকে ততটুকুই| কাতার
সোজা করতে গিয়ে প্রয়োজনের
নিরিখে যতটুকু ফাকা করতে হয়|
গুনে গুনে চার আঙ্গুল পরিমান ফাকা রাখার
কোনো ভিত্তি নেই| আবার
অনেকে বিশ্রীভাবে অনেকটা চেগিয়ে দারান
এরকম করাও ঠিক নয়| পুরুষ মহিলায় এ
ক্ষেত্রে কোনই পার্থক্য নাই |
কাতারে দাড়ানো: সালাত যখন
জামায়াতে আদায় করা হবে তখন কাতার
সোজা করতে হবে| কাতারে কাধে কাধ
এবং পায়ের গিতে গিত
লাগিয়ে দাড়াতে হবে, দুই ব্যক্তির
মাঝখানে ফাকা বন্ধ করতে হবে| রাসুল
(সাঃ) এরশাদ করেন,
তোমরা সালাতে কাতারকে খুব সোজা কর
এবং সকলের কাধ এক বরাবর করে মিলাও
এবং প্রতি দুইজনের মধ্যবর্তী ফাঁক বন্ধ কর
যাতে শয়তান ফাকা জায়গায়
দাড়িয়ে তোমাদের
সালাতে ওয়াসওয়াসা দিতে না পারে|
যে ব্যক্তি কাতারে পা মিলায় আল্লাহ
তাকে কাছে নেন আর যে পা মিলায়
না আল্লাহ তাকে দুরে রাখেন| আবু দাউদ
১ম খন্ড ৯৭ পৃষ্ঠা; হাকেম ১ম খন্ড ২১৩ পৃষ্ঠা|
সহিহ বুখারীর হাদিস
কাতারে পায়ে পা কাধে কাধ মেলানোর:
১ম হাদিস,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা সালাতের
ইকামত হয়ে গেলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
আমাদের দিকে তার পবিত্র মুখমন্ডল
ফিরিয়ে তাকালেন এবং বললেন,
তোমরা তোমাদের কাতার্গুলি পরিপূর্ণ কর
এবং সুদৃঢ় হও অর্থাত দালানের ইটের মত
একে অপরের সাথে মিলিত হও, আমি নিশ্চই
তোমাদেরকে তোমাদের পিছন থেকেও
দেখে থাকি|
২য় হাদিস,
নুমান ইবনু বাশির (রাঃ) বলেন, আমাদের
(সাহাবীদের) প্রত্যেককেই দেখেছি নিজ
সঙ্গীর কাধে কাধ মিলিয়ে এবং পেপর
পায়ের গিট মিলিয়ে দাড়াতেন|
সহিহ বুখারী ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ১০০ |
অথচ আমাদের সমাজে কাধে কাধ,
পায়ে পা লাগিয়ে কাতারে দাড়ানোকে ‘বেয়াদবি’
মনে করা হচ্ছে| সাহাবাগণ
যেখানে বেয়াদবি মনে করেন
নি সেখানে আমাদের হুজুররা কোন
ক্ষমতাশালীর
আশ্বাসে হাদিসকে অবজ্ঞা করে কাতারে ফাকা হয়ে দাড়াতে বলেন
তা আমাদের বোধগম্য নয়| এই
ফাকা হয়ে দাড়ানোর কারণেই আমাদের
মধ্যে এত এত বিভেধ আল্লাহ
সৃষ্টি করে দিয়েছেন|
● ২. তাকবীরে তাহরিমা :-
————————–
সালাত শুরু হয় তাকবীরে তাহরিমা তথা দুই
হাত কাধ বা কান পর্যন্ত
উঠানো সাথে আল্লাহু আকবার বলা দিয়ে|
সহিহ মুসলিম|
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাছুলুল্লাহ (সাঃ) যখন সালাত শুরু করতেন
তখন তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্লাহু
আকবার বলতেন । অতঃপর
“ইন্নী ওয়াজ্জাহতু” পড়তেন।
এটি একটি সানা যা রাছুলুল্লাহ (ছাঃ)
মাঝে মাঝে তাহাজ্জুত ছালাতে পড়তেন।
[সহিহ বুখারী ১/১০৩ পৃঃ; আবুদাউদ ১/৫১১
পৃঃ হা/৭৬০ তাওহীদ প্রকাশনী;
তিরমিযী ১/১৭৯-৮০ পৃঃ;নাসাঈ ১/১৪২ পৃঃ;
মিশকাত ১/৭৭ পৃঃ ] অর্থাত
ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু মূলত একটি ‘সানা’,
যা তাকবীরে তাহরীমার পরে পড়া হয়|
তাকবীরে তাহরিমা তথা আল্লাহু আকবার
বলার সময় দুই হাত তথা দুই হাতের আঙ্গুলের
মাথা কাধ বা কানের লতি পর্যন্ত
উঠাতে হয়| একে রফল ইয়াদায়ন বলা হয়|
আমাদের সমাজে কানের লতি স্পর্শ
করা বা কানের উপর পর্যন্ত হাত উঠানোর
কোনো প্রমান নেই| এগুলো ভ্রান্ত কাজ|
রাসুল (সাঃ) তাকবীরে তাহরীমার সময়
(বুখারী, নাসাই), কখনো তাকবিরের
পরে (বুখারী, নাসাই) আবার
কখনো তাকবিরের আগে দুই হাত তুলতেন
(বুখারী, আবু দাউদ)|
তিনি আঙ্গুল লম্বা করে তুলতেন,
তা বেশি ফাঁক করেও রাখতেন না আবার
মিলিয়েও রাখতেন না (আবু দাউদ,
ইবনে খুযায়মা, হাকেম)|
তিনি দুই হাত কাধ পর্যন্ত তুলতেন (বুখারী ,
আবু দাউদ )|
মাঝে মাঝে কানের লতি পর্যন্ত তুলতেন
(মুসলিম, আবু দাউদ) |
● ৩. হাত বাধা:-
—————-
বাম হাতের উপর ডান হাত বুকের উপর
বাধতে হবে| সহিহ মুসলিম এ স্পষ্টই বুকের
নিচে ও নাভির উপরে হাত বাধার সহিহ
হাদিস বিদ্যমান| নাভির নিচে হাত বাধার
হাদিস আবু দাউদ এ উল্লেখ রয়েছে এবং এই
আবু দাউদেই নাভির নিচে হাত বাধার
হাদিসকে জইফ বা দুর্বল বলা হয়েছে|
এবং এই আবু দাউদেই সুস্পষ্ট হাদিস
রয়েছে বুকের উপর হাত বাধার| সহিহ
হাদিস বাদ দিয়ে বা সহিহ হাদিস পাওয়ার
পরও দুর্বল হাদিস
নিয়ে মাতামাতি করা বা দুর্বল
হাদিসকে বিশুদ্ধ হাদিসের উপর প্রাধান্য
দেয়া নিতান্তই ভ্রষ্টতাপূর্ণ কাজ|
আল্লাহ বলেন ”রসূল তোমাদেরকে যা দেন,
তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,
তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয়
কর।” সুরা হাশর ৭ | ”যে লোক রসূলের হুকুম
মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ |
রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
বুকের উপর হাত বাধার সহিহ হাদিস সমূহ:
হাদিস ১ :
সহাল বিন সা’দ রাঃ থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, লোকদেরকে নির্দেশ
দেওয়া হ’ত যেন তারা সালাতের সময় ডান
হাত বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন
করে রাখে। আবু হাযেম বলেন যে,
ছাহাবী সাহল বিন সা’দ এই
আদেশটিকে রাসুল (সাঃ)-এর
দিকে সম্পর্কিত বলেই জানি।
বুখারী নং-৭০৪ ই.ফা. বুখারী(দিল্লী ছাপা)
১/১০২ পৃঃ, হা/৭৪০, ‘আযান’ অধ্যায়, ৮৭
অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৭৯৮, ‘সালাতের
বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০, আধুনিক প্রঃ নং-৬৯৬]
উল্লেখিত হাদীসে ব্যবহৃত ‘যেরা’ শব্দের
অর্থ-কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ
পর্যন্ত দীর্ঘ হাত। একথা স্পষ্ট যে, বাম
হাতের উপর ডান হাত রাখলে তা বুকের
উপরই চলে আসে। উল্লেখ্য যে, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন(১৯৯১), আধুনিক প্রকাশনী(১৯৮৮)
প্রভৃতি বাংলাদেশের একাধিক সরকারী ও
বেসরকারী প্রকাশনা সংস্থা কর্তৃক অনূদিত
ও প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ
বুখারী তে উপরোক্ত হাদীসটির
অনুবাদে ‘ডান হাত বাম হাতের কব্জির
উপরে’ –লেখা হয়েছে। এখানে অনুবাদের
মধ্যে ‘কব্জি’ লিখে নাভির নিচে হাত
নামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে|
অথচ বুকের উপর হাত বাধার আরো সহিহ
হাদিস রয়েছে|
হাদিস ২:
আবু তাওবা…তাউস (রহ) থেকে বণিত ।
তিনি বলেন, রাসুল (সঃ) নামাজরত অবস্থায়
ডান হাত বাম হাতের উপর
রেখে তা নিজের বুকের উপর
বেঁধে রাখতেন । হাদীছটি ছহীহ। আবু দাউদ
১ম খনড হা/৭৫৯ ই.ফা.বা.প্রকাশ|
হাদিস ৩:
সাহাবী হুলব আত-ত্বাঈ (রাঃ) বলেন,
আমি রাসুল (ছাঃ)-কে বাম হাতের জোড়ের
(কব্জির) উপরে ডান হাতের জোড় বুকের
উপরে রাখতে দেখেছি। আহমদ হা/২২৬১০,
সনদ হাসান,
তিরমিযী(তুহফা সহ,কায়রো-১৪০৭/১৯৮৭)
হা/২৫২, ‘ছালাত’ অধ্যায়, হাদিস ৪:
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) বলেন,
আমি রাসুল সঃ এর সাথে ছালাত আদায়
করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে,
তিনি বাম হাতের উপরে ডান হাত স্বীয়
বুকের উপর রাখলেন। ছহীহ
ইবনে খুজায়মা হা/৪৭৯,;আবু দাউদ হা/৭৫৫
উল্লেখ্য যে, বাম হাতের উপর ডান হাত
রাখা সম্পর্কে ১৮ জন ছাহাবী ও ২ জন
তাবেঈ থেকে মোট ২০টি হাদীছ বর্ণিত
হয়েছে।
চার ইমামের মধ্যে কেবল ইমাম
আবুহানিফা (রহ) ব্যতীত বাকি তিন ইমামই
বুকের উপর হাত বাধতেন | কিতাবুল উম
লিশশাফিই |
খুব সম্ভব ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর নিকট
হাত বাধার সহিহ হাদিস
পৌছেনি এবং নাভির নিচে বাধার
হাদিসটি তার কাছে তখন সঠিক প্রতিয়মান
হয়েছিল|
● ৪. চোখের দৃষ্টি:-
—————-
সালাতের মধ্যে চোখের দৃষ্টি সিজদার
স্থানের দিকে থাকতে হবে| বায়হাকী,
হাকেম, ফাতহুলবারী |
● ৫. সানা বা সালাত প্রারম্বের/ শুরুর দুআ:-
——————————————
নিম্নোক্ত যে কোনো একটি পড়া যায়:
সানার জন্য ১ম দুআ:
উচ্চারনঃ ”আল্লাহুম্মা বা-ঈদ
বাইনী ওয়া বাইনা খাতাইয়া ইয়া কামা বা আদ’তা বাইনাল
মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিব।
আল্লাহুম্মা নাক্কিনি মিনাল
খাতাইয়া কামা উনাক্কাস ছাওবুল আব্ইয়াদু
মিনাদ দানাস। আল্লাহুম্মাগসিল
খাতাইয়া ইয়া বিল মা-
য়ি ওয়াসছালজি ওয়াল বারাদ্।” বুখারী ও
মুসলিম|
অর্থঃ হে আল্লাহ্ ! আমার ও আমার গুনাহ্
গুলোর মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও
যেমন তুমি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব
সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ্ ! আমাকে পাপ ও
ভুলত্রুটি হতে এমন ভাবে পবিত্র
করো যেভাবে সাদা কাপড়
ময়লা হতে পরিস্কার করা হয়। হে আল্লাহ্ !
আমার যাবতীয় পাপসমূহ ও
ত্রুটি বিচ্যুতি গুলি পানি, বরফ ও শিশির
দ্বারা ধৌত করে দাও।
সানার জন্য ২য় দুআ:
উচ্চারণঃ ”সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাস্মুকা
ওয়া তা’আলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”
আবূ দাঊদ ৭৭৫, ৭৭৬ ইঃফাঃ
অর্থঃ হে আল্লাহ ! তুমি পাক-পবিত্র ,
তোমারই জন্য সমস্ত্ প্রশংসা, তোমার নাম
পবিত্র এবং বরকতময়, তোমার গৌরব
অতি উচ্চ , তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই

● ৬. সালাতে আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ
পাঠ:-
——————————————–
সানা পাঠের পর পড়তে হবে,
‘আউযুবিল্লাহীস সামিয়িল আলিমী মিনাশ
শায়তানির রাজিম, মিন
হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি|’
আবু দাউদ ১ম খন্ড ১১৩ পৃঃ, তিরমিজি ১ম খন্ড
৩৩ পৃঃ
অর্থঃ সর্বজ্ঞাতা সর্ব শ্রোতা আল্লাহ
তা’আলার নিকট বিতারিত শয়তানের কুহক,
কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা হতে আশ্রয় চাচ্ছি|
অথবা শুধু আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-
নির রজীম।
ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১১২ পৃঃ ; নায়ল ৩/৩৬-৩৯
পৃঃ।
অতঃপর পড়তে হবে,
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’
অর্থঃ পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর
নামে আরম্ভ করছি|
তাফসীরে ইবনে কাসীর ও দারাকুতনি |
● ৭. তারপর সুরা ফাতেহা পড়তে হবে :-
—————————————-
প্রত্যেক ব্যক্তিকেই প্রত্যেক
রাকাতে সুরা ফাতেহা পরতেই হবে| এমন
কি ইমামের পিছনেও সুরা ফাতেহা পরতেই
হবে| কারণ সুরা ফাতেহা ব্যতীত সালাত
হয় না|
১ম হাদিস
উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
রাসুল সঃ এরশাদ করেন- ‘ ঐ ব্যক্তির ছালাত
সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সুরায়ে ফাতিহা পাঠ
করে না’।
বুখারী ২য় খণ্ড হা/৭২০ ইঃফাঃপ্রঃ;
মুসলিম(২য়) হা/৭৭১-৭৩ বাঃ ইঃ সেন্টার
প্রঃ; মুত্তাফাক আলাইহ মিশকাথা/৮২২
‘ছলাতে কিরায়াত’ অনুচ্ছেদ; সিহা সিত্তাহ
সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে উক্ত
হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।
২য় হাদিস:
যে ব্যক্তি ইমামের
পিছনে সুরা ফাতেহা পড়বে না তার নামায
হবে না (কেতাবুল কেরাত বায়হাকী ৪৭
পৃঃ; আরবী বুখারী ১ম খন্ড ১০৪ পৃঃ; মুসলিম
১৬৯ পৃঃ; আবু দাউদ ১০১ পৃঃ; নাসাঈ ১৪৬ পৃঃ;
ইবনু মাযাহ ৬১ পৃঃ; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ৯৫
পৃঃ);
৩য় হাদিস :
আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘তোমরা কি ইমামের ক্বিরাআত অবস্থায়
পিছনে কিছু পাঠ করে থাক? এটা করবে না।
বরং কেবলমাত্র
সূরায়ে ফাতিহা চুপে চুপে পাঠ করবে’।
বুখারী, জুয্উল ক্বিরাআত;
ত্বাবারাণী আওসাত্ব, বায়হাক্বী, ছহীহ
ইবনু হিববান হা/১৮৪৪; হাদীছ ছহীহ-
আরনাঊত্ব; তুহফাতুল আহওয়াযী, ‘ইমামের
পিছনে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-২২৯, হা/৩১০-এর
ভাষ্য ( ﻥﺎﻇﻮﻔﺤﻣ ﻥﺎﻘﻳﺮﻄﻟﺎﻓ ) , ২/২২৮ পৃঃ;
নায়লুল আওত্বার ২/৬৭ পৃঃ, ‘মুক্তাদীর
ক্বিরাআত ও চুপ থাকা’ অনুচ্ছেদ।
৪র্থ হাদিস :
হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসুল
(সঃ) এরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি ছলাত
আদায় করল,যার মধ্যে সুরায়ে ফাতিহা পাঠ
করল না, তার ঐ ছলাত বিকলাঙ্গ বিকলাঙ্গ
বিকলাঙ্গ, অপূর্ণাঙ্গ। হযরত আবু
হুরায়রা(রাঃ)-কে বলা হ’ল, আমরা যখন
ইমামের পিছনে থাকি, তখন কিভাবে পড়ব ?
তিনি বললেন,
‘তুমি ওটা ছলাতে চুপে চুপে পড়’।
মুসলিম হা/৭৭৬, আবুদাউদ হা/৮২১, মিশকাত
হা/৮২৩ ‘সালাতে কিরায়াত’ অনুচ্ছেদ-১২|
হে পাঠক! সহিহ হাদিস উপস্থাপন
করা হলো| সহিহ হাদিসেই
রয়েছে যে প্রত্যেক
ব্যক্তিকে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে|
হাদিসেই রয়েছে ইমামের পিছনেও
চুপে চুপে মনে মনে সুরা ফাতেহা পড়তেই
হবে|
উল্লেখ্য যে ইমামের কেরাতই যথেষ্ট
বলতে সুরা ফাতেহার
পরে যে সুরা মেলানো হয়
তা বুখানো হয়েছে| কারণ সুরা ফাতেহার
ব্যাপারে আলাদাভাবে বলা হয়েছে যে সুরা ফাতেহা পড়তেই
হবে| এখানে কেরাত আর সুরা ফাতেহা এক
বিষয় নয়|
সম্মানিত পাঠক স্মরণ করুন,
আল্লাহ বলেন ”রসূল তোমাদেরকে যা দেন,
তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন,
তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয়
কর।” সুরা হাশর ৭ | ”যে লোক রসূলের হুকুম
মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ |
রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
অতএব রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ
উপেক্ষা করে যারা কতিপয় হুজুরের
নির্দেশে সুরা ফাতেহা পাঠ থেকে বিরত
থাকছেন সহিহ হাদিস অনুসারে তাদের
সালাত অসম্পূর্ণ, অপুর্নাঙ্গ ও বিকলাঙ্গ|
● ৮. উচ্চস্বরে আমিন বলা:-
—————————
স্বশব্দের সালাতে আমিন
জোরে বলতে হবে এবং নিঃশব্দের
সালাতে আমিন নিঃ শব্দে বলতে হবে|
আতা (রঃ) বলেন, আমীন হল দু’আ।
তিনি আরো বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের
(রাঃ) ও তার পিছনের মুসল্লীগণ
এমনভাবে আমীন বলতেন যে মসজিদে গুমগুম
আওয়াজ হতো। আবু হুরায়রা (রাঃ)
ইমামকে ডেকে বলতেন, আমাকে আমীন
বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না।
নাফি(রঃ)বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) কখনই
আমীন বলা ছাড়তেন না এবং তিনি তাদের
(আমীন বলার জন্য)উৎসাহিত করতেন।
আমি তাঁর কাছ থেকে এ সম্পর্কে হাদিস
শ্তনেছি । ( সহীহ বুখারী,২য় খন্ড,
অনুচ্ছেদ-৫০২, পৃষ্ঠা নং ১২০ ও ১২১,
প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।)
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রঃ)—- আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইমাম যখন
আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বলো।
কেননা, যার আমীন (বলা) ফিরিশতাদের
আমীন (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ
মাফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ও আমীন বলতেন।( সহীহ
বুখারী,২য় খন্ড, হাদিছ নং ৭৪৪, পৃষ্ঠা নং ১২১
প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ।)
পাঠক, ইমাম যখন আমিন বলেন তখন আমিন
বলতে হবে| ইমামের আমিন
যদি নিঃশব্দে হয়
তবে কিভাবে আমরা ইমামের সাথে আমিন
বলব? এই হাদিস অনুসারে তো ইমাম
কে জোরে আমিন
বলতে হবে যাতে করে মুক্তাদিগন ইমামের
সাথে আমিন বলতে পারেন| কতিপয় লোক
বলে থাকেন ফেরেস্তার আমিন
শুনতে আমরা পাই না তার
মানে মনে মনে আমিন বলতে হবে|
এটা স্রেফ বোকামি এবং অজ্ঞতা| কারণ
ফেরেস্তাদের শুধু আমিন বলা কেন
কোনো কথায় আমরা শুনতে পাই না|
● ৯. সালাতে কেরাত পাঠ:-
————————–
সুরা ফাতেহা পাঠ করার পর কুরআন মজিদ
থেকে কিছু পাঠ করতে হবে| রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) সুরা ফাতেহার পর অন্য
সুরা বা আয়াত পাঠ করতেন| ইমামের
পিছনে ইমামের কেরাত মুক্তাদির জন্য
যথেষ্ঠ হবে|
*আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন- ‘রাসুল
সঃ আমাকে নির্দেশ দেন যেন আমি এই
কথা ঘোষণা করে দেই যে, ছলাত সিদ্ধ নয়
সুরায়ে ফাতিহা ব্যতীত। অতঃপর অতিরিক্ত
কিছু’।
আবুদাউদ হা/৮১৮ ইঃফাঃপ্রঃ, অনুচ্ছেদ-১৪২]
*হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
রাসুল (সঃ) এরশাদ করেছেন- ‘ইমাম নিযুক্ত
হন তাকে অনুসরণ করার জন্য । তিনি যখন
তাকবীর বলেন, তখন তোমরা তাকবীর বল।
তিনি যখন কিরায়াত করেন, তখন তোমরা চুপ
থাক’।
আবুদাউদ হা/৮২৭; আওনুল মা’বুদ হা/৮১১-১২,
অনুচ্ছেদ-১৩৫; লায়লুল আওত্বার ৩/৬৫|
*আব্দুল্লাহ ইবনু আবু কাতাদাহ তার
পিতা থেকে থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল
(সাঃ) জোহরের প্রথম দুই
রাকাতে সুরা ফাতেহা এবং (প্রত্যেক
রাকাতে একটি করে)
আরো দুটি সুরা পড়তেন, এবং শেষের দু
রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়তেন|
বুখারী ১ম খন্ড|
*কোনো সময় রাসুল (সাঃ) এক সুরাকে দুই
রাকাতে ভাগ করে পড়তেন| আহমদ|
* সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সাঃ) এর
দাড়ি নড়া চড়া দেখে বুঝতে পারতেন রাসুল
(সাঃ) অপ্রকাশ্য সালাতে কেরাত পাঠ
করছেন| বুখারী আবু দাউদ|
*কখনো রাসুল (সাঃ) সাহাবীদের কেরাত
পাঠ শুনাতেন| তিনি এতটুকু অপ্রকাশ্য
আওয়াজে পড়তেন
যে নিকটবর্তী লোকেরা শুধু শুনতে পেত|
বুখারী ও মুসলিম |
● ১০. দুই হাত উত্তোলন রফল ইয়াদাইন ও
রুকুতে যাওয়ার প্রস্তুতি ও :-
———————————————
————————-
রুকুতে যাওয়ার সময় দুই হাত কাধ বা কান
পর্যন্ত তুলে ‘রফল ইয়াদাইন’ করে ‘আল্লাহু
আকবার’ বলে রুকুতে যেতে হবে| বুখারী ও
মুসলিম|
রাসুল (সাঃ) রফল ইয়াদাইন অর্থাত
তাকবীরে তাহরীমার সময় যেভাবে হাত
উঠানো হয় কাধ বা কান পর্যন্ত
যেভাবে করতেন|
রফল ইয়াদাইন এর পক্ষে বুখারিতে ৫ টি,
মুসলিমে ৬ টি, নাসাইতে ৫ টি,
তিরর্মিজিতে ২ টি, আবু দাউদে ৪ টি, ইবনু
খুজায়্মাতে ৯ টি হাদিস বিদ্যমান| ইমাম
বুখারী (রহঃ) শুধু রফল ইয়াদাইন এর গুরুত্ত্ব
অনুধাবনে সতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন|
তারপরও মানুষ এটাকে পরিহার
করে কিভাবে? এটা অনেক বড়
একটি সুন্নাত|
ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যখন সালাত
আরম্ভ করতেন তখন দুই হাত কাধ পর্যন্ত
উঠাতেন এবং যখন রুকুর জন্য তাকবির দিতেন
এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও
ঐরূপ দুই হাত কাধ পর্যন্ত উঠাতেন| এরকম
সালাত রাসুল (সাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত
পড়ে গিয়েছেন| বায়হাকী ২য় খন্ড|
রফল ইয়াদায়ন এর দলিল . বুখারী, মুসলিম,
তিরমিজি, আবু দাউদ, মুয়াত্তা ইমাম
মালেক, ইবনু মাজাহ, ইবনু খুযায়মা,
বায়হাকী, মুসনাদে আহমদ সহ সকল হাদিস
গ্রন্থেই বিদ্যমান রয়েছে|
যারা ইচ্ছে করে গুয়ার্তুমি করে রফল
ইয়াদায়ন ছেড়ে দেয় তারা মূলত রাসুল
(সাঃ) কে অবজ্ঞা করে অন্যের
মতামতকে প্রাধান্য দেয়!
পাঠক! আবার স্মরণ নিন, আল্লাহ বলেন ”রসূল
তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর
এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত
থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” সুরা হাশর ৭
| ”যে লোক রসূলের হুকুম মান্য
করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ | রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
● ১১. রুকু :-
———–
দুই হাত দিয়ে হাটু
আকড়ে ধরে সামনে ঝুকে পিঠ সমান্তরাল
রেখে বকাতে হবে|
সালাতে সর্বদা সিজদার
দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে (তাশাহুদ ব্যতীত)
| বুখারী |
রাসুল (সাঃ) রুকুর সময় দুই হাতের তালু হাটুর
উপর রাখতেন এবং লোকজনদেরকে এরূপ
করার নির্দেশ দিতেন| বুখারী ও আবু
দাউদ|
রাসুল (সাঃ) দুই হাটু আকড়ে ধরতেন (বুখারী,
মুসলিম) এবং হাতের
আঙ্গুলগুলো ফাকা করে রাখতেন
(ইবনে খুযায়মা)|
রুকুতে পিঠ ও মাথা সমান্তরাল
রাখতে হবে | রাসুল (সাঃ) পিঠ
থেকে মাথা উচু নিচু করতেন না| (বুখারী,
মুসলিম, আবু দাউদ )
সে ব্যক্তির সালাত হয় না রুকু ও সিজদায়
যার পিঠ সোজা করে না| (ইবনু মাজাহ, আবু
দাউদ)
● ১২. রুকুর জিকির বা দুআ:-
—————————-
রাসুল (সাঃ) রুকুতে বিভিন্ন রকম জিকির ও
দুআ পাঠ করতেন| কোনো সময়
একটা কোনো সময় অন্যটা|
১ম দুআ : তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল
আজিম’; অর্থ: আমার মহান রবের
পবিত্রতা বর্ণনা করছি| অথবা তিনবার
‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম
ওয়া বিহামদিহি ‘; অর্থ: আমার মহান রবের
পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি| আহমদ,
আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, দারু
কুতনি , তাবরানী|
২য় দুআ:
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম
মাগফিরলি| অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র
তোমার প্রশংসায় আমি রত, আমায়
ক্ষমা কর| রাসুল (সাঃ) এই দুআ রুকু সিজদায়
বার বার বেশি বেশি করে পাঠ করতেন
(বুখারী, মুসলিম, নাসাই, আবু দাউদ,
ইবনে মাজাহ)
৩য় দুআ: তিনবার ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল
মালাইকাতিহ ওয়ার- রূহ’ অর্থ আল্লাহ
সত্তায় পবিত্র ও গুনাবলীতেও পবিত্র,
যিনি ফেরেস্তাকুল ও জিব্রাইলের
প্রতিপালক| ( মুসলিম, মিশকাত হাদিস ৮৭২
পৃঃ ৮২)
রুকুতে কুরআন পড়া নিষেধ | (মুসলিম)
● ১৩. রুকুতে উঠা ও সোজা হয়ে দাড়ান
এবং রফল ইয়াদায়ন করা:-
———————————————
———————–
রুকু থেকে উঠে রফল ইয়াদায়ন
করতে হবে এবং একই
সাথে বলতে হবে ”সামি আল্লাহু লিমান
হামিদা” অর্থ আল্লাহ সেই ব্যক্তির
কথা কবুল করেন, যে তার প্রশংসা করে|
(বুখারী ও মুসলিম);
কোনো ব্যক্তির সালাত সে পর্যন্ত শুদ্ধ হয়
না যে পর্যন্তনা সে রুকু
থেকে সোজা হয়ে ‘সামি আল্লাহু লিমান
হামিদা’ না বলে| (আবু দাউদ)
এর পর সোজা দাড়িয়ে থাকা অবস্থায়
মনে মনে পড়তে হবে, ‘
আল্লাহুম্মা ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’
অর্থ হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা কেবল
তোমারই| রাসুল (সাঃ) কখনো ‘আল্লাহুম্মা’
শব্দটি যোগ করতেন, কখনো করতেন না|
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
ইমামের পিছনে সালাত আদায়ের সময়,
ইমাম যখন ”সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা”
বলবে তখন মুক্তাদিরা বলবে ‘
আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল
হামদ|’ ( বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি)
● ১৪. সিজদায় যাওয়া:-
———————–
রাসুল (সাঃ) তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে সিজদায় যেতেন| (বুখারী ও মুসলিম);
সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে দুই
হাত রাখতে হবে তারপর দুই হাটু
রাখতে হবে| এটাই বেশি সহিহ ও মজবুত
দলিল ভিত্তিক |
রাসুল (সাঃ) মাটিতে দুই হাটু রাখার
আগে দুই হাত রাখতেন| (ইবনু খুযায়মা,
দারা কুতনি, হাকেম একে সহিহ বলেছেন;
ইমাম মালেক, আহমদ এর মতও এটিই; আবু
দাউদ )
আবার,
সিজদায় যাওয়ার সময় আগে মাটিতে হাটু
রাখা ও পরে হাত রাখা যায়| এটার
পক্ষেও দলিল রয়েছে| (আবু দাউদ,
তিরমিজি, নাসাই, ইবনু মাজাহ)
প্রথমটি একটি বেশি শক্তিশালী এই জন্য
যে, রাসুল (সাঃ) আদেশ করেছেন যে,
”তোমাদের কেউ সিজদাহ করলে দুই
পায়ে সে উটের মত না বসে বরং হাটু
রাখার আগে যেন দুই হাত মাটিতে রাখে”|
(আবু দাউদ)
● ১৫. সিজদাহ:-
—————
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য
একটি সিজদা করে, আল্লাহ তার জন্য
একটি নেকী লেখেন ও তার একটি পাপ দূর
করে দেন এবং তার মর্যাদার স্তর
একটি বৃদ্ধি করে দেন। অতএব
তোমরা বেশী বেশী সিজদা কর’ (ইবনু
মাজাহ হা/১৪২৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২,
অনুচ্ছেদ-২০১।)
বেশি বেশি সিজদাহ কর
মানে বেশি বেশি সালাত পড়|
প্রতি সালাতে প্রতি রাকাতে ২
টি করে মোট চারটি সিজদাহ!
মাটিতে হাত, হাটু, পায়ের আঙ্গুল, কপাল ও
নাক ঠেকিয়ে সিজদাহ করতে হয়| রাসুল
(সাঃ) সাত অঙ্গের দ্বরা সিজদাহ করতেন|
দুই হাতের তালু, দুই হাটু, দুই পায়ের
পাতা (আঙ্গুল), কপাল ও নাক | সিজদাহ
দুটি করতে হয় |
সিজদায় অবশ্যই কপাল ও নাক দুটোই
মাটিতে স্পর্শ করতেই হবে| সেই ব্যক্তির
সালাত হয় না যার নাক ও কপাল মাটি স্পর্শ
করে না| (দারু কুতনি, তাবরানী)
সিজদায় পায়ের
গোড়ালি উর্ধ্বমুখী থাকবে, পায়ের আঙ্গুল
মাটিতে লাগানো থাকবে, উরু থেকে পেট
আলাদা থাকবে | (বুখারী, মুসলিম, আবু
দাউদ, তিরমিজি, নাসাই)
রাসুল (সাঃ) সিজদার সময় দুই হাতের তালু
কখনো কাধ বরাবর রাখতেন আবার
কখনো কান বরাবর রাখতেন| (আবু দাউদ,
তিরমিজি)
আমাদের সমাজে প্রচলিত
পদ্ধতিতে মহিলারা শরীর
লেপ্টিয়ে বিছিয়ে দেন জমিনে, দুই হাত
মিলিয়ে দেন জমিনে যা স্পষ্ট হাদিস
বিরোধী এবং তা পরিতাজ্য|
রাসুল (সাঃ) দুই হাত
মাটিতে বিছিয়ে দিতেন না|
বরং তা জমিন থেকে উপরে (বুখারী, আবু
দাউদ) এবং পেটের দুই পাশ
থেকে দুরে রাখতেন| (বুখারী, মুসলিম)
হাটু, পেট, হাত, মাথা এই অঙ্গগুলোর
মাঝখানে এমন ফাকা থাকতে হয় যেন এই
ফাকা দিয়ে একটি বকরীর
বাচ্চা চলে যেতে পারে| (সহিহ মুসলিম)
হে পাঠক! লক্ষ্য করুন, ‘তোমরা সিজদায়
সোজা থাকো, তোমরা কুকুরের মত দুই হাত
বিছিয়ে দিও না’ (বুখারী, মুসলিম, আবু
দাউদ, আহমদ)
‘তোমরা হিংস্র প্রাণীর মত হাত
বিছিয়ে দিও না, দুই হাতের তালুর উপর ভর
রাখো এবং দুই বাহুকে আলাদা রাখো|
এভাবে করলে তোমার সকল অঙ্গ সিজদাহ
করবে”| (ইবনে খুযায়মা)
অতএব, আমাদের
সমাজে মহিলারা যে পদ্ধতি অবলম্বন
করে থাকেন সিজদায় তা স্পষ্ট হাদিস
বিরোধী|
পাঠক! আবার স্মরণ নিন, আল্লাহ বলেন ”রসূল
তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর
এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত
থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” সুরা হাশর ৭
| ”যে লোক রসূলের হুকুম মান্য
করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল।
সুরা নিসা ৮০ | রাসুল (সাঃ) বলেন,
“তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর,
যে ভাবে আমাকে সালাত আদায়
করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত
হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|
● ১৬. সিজদার জিকির বা দুআ:-
——————————–
১ম দুআ : তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’;
অর্থ: আমার মহান রবের
পবিত্রতা বর্ণনা করছি| (নাসাই,
তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, দারু
কুতনি)
২য় দুআ:
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম
মাগফিরলি| অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র
তোমার প্রশংসায় আমি রত, আমায়
ক্ষমা কর| রাসুল (সাঃ) এই দুআ রুকু সিজদায়
বার বার বেশি বেশি করে পাঠ করতেন
(বুখারী, মুসলিম, নাসাই, আবু দাউদ,
ইবনে মাজাহ)
৩য় দুআ: তিনবার ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল
মালাইকাতিহ ওয়ার- রূহ’ অর্থ আল্লাহ
সত্তায় পবিত্র ও গুনাবলীতেও পবিত্র,
যিনি ফেরেস্তাকুল ও জিব্রাইলের
প্রতিপালক| ( মুসলিম, মিশকাত হাদিস ৮৭২
পৃঃ ৮২)
সে ব্যক্তির সালাত হয় না রুকু ও সিজদায়
যার পিঠ সোজা করে না| (ইবনু মাজাহ, আবু
দাউদ)
সিজদায় কুরআন পড়া নিষেধ | (মুসলিম)
সিজদায় বেশি বেশি দুআ করা |
‘বান্দা সিজদাহ অবস্থায় আল্লাহর
বেশি নিকটবর্তী হয়; তোমরা সিজদায়
বেশি বেশি করে দুআ কর’ (মুসলিম)
এখানে একটু লক্ষনীয় যে সিজদায় নিজের
ভাষায় বেশি বেশি দুআ করা যাবে কিনা?
এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে| কেউ বলছেন
যেকোনো ভাষায় দুআ করা যাবে আবার
কেউ বলছেন করা যাবে না, এমন
কি আরবিতেও নিজের ভাষায় দুআ
করা যাবে না| কারণ সালাতে নিজের
ভাষা/ কথা চলেনা | আমরা মনে করি,
সালাতে রাসুল (সাঃ)
যে দুআগুলো শিখিয়েছেন
সে গুলি বেশি বেশি পড়া ভালো!
● ১৭. সিজদাহ থেকে উঠে বসা বা দুই
সিজদার মাঝে বসা ও দুআ করা:-
———————————————
————————-
রাসুল (সাঃ) তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে সিজদা থেকে মাথা তুলতেন|
(বুখারী , মুসলিম)
রাসুল (সাঃ) দুই সিজদার
মধ্যবর্তী সময়ে এমন সোজা হয়ে প্রসান্ত
ভাবে বসতেন যে সকল হাড় নিজ নিজ
স্থানে বহাল হত| (আবু দাউদ)
দুই সিজদার মাঝে ধীর স্থির হয়ে বসতে হয়
অর্থাত একটু থামতে হয়| অনেকে ঠিক মত
না সোজা হয়ে বসেই পরবর্তী সিজদা দেন
যা মারাত্মক ভুল|
রাসুল (সাঃ) দুই সিজদার মাঝখানে বলতেন,
”আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনী,
ওয়াহদীনি, ওয়া আফিনী, ওয়ার-ঝুকনী”
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমায় মাফ কর,
আমাকে রহম কর, আমাকে হেদায়েত দান
কর, আমাকে শান্তি দান কর
এবং আমাকে রিজিক দাও| (মুসলিম,
মিশকাত পৃঃ ৭৭ হা/ ৮৯৩)
হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) দুই
সিজদার মাঝে বলতেন, ‘রাব্বিগ ফিরলি”
অর্থ: হে প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন|
(নাসাই, মিশকাত পৃঃ ৮৪); ইবনু
মাজাতে ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ দুইবার
পড়ার কথা বলা আছে|
● ১৮. দ্বিতীয় সিজদাহ দেওয়া:-
—————————–
রাসুল (সাঃ) তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে দ্বিতীয় সিজদায় যেতেন |
তিনি প্রথম সিজদায় যা করতেন দ্বিতীয়
সিজদায়ও অনুরূপ করতেন| (বুখারী, মুসলিম)
২৩. দ্বিতীয় রাকাতের জন্য
উঠা বা দাড়ানো: দুটি সিজদাহ
দেওয়া হলে তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য সিজদাহ
থেকে মাথা উঠাতে হবে|
রাসুল (সাঃ) দ্বিতীয় রাকাতে উঠার সময়
মাটিতে দুই হাতের উপর ভর দিয়ে উঠতেন|
(বুখারী)
দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠার সময়
প্রথমে কপাল ও নাক উঠবে, তারপর হাটু
এবং সর্ব শেষে হাত | এটাই বেশি সহিহ |
যদিও কেউ কেউ সর্ব শেষে হাত নয় হাটু
উঠবে বলে থাকেন|
● ১৯. দ্বিতীয় রাকাত:-
———————-
রাসুল (সাঃ) দ্বিতীয় রাকাতের জন্য
উঠে প্রথমে সুরা ফাতেহা পড়তেন এবং চুপ
থাকতেন না| (মুসলিম); অর্থাত দ্বিতীয়
রাকাতে সানা পড়তে হয় না,
সুরা ফাতেহা দিয়েই দ্বিতীয় রাকাত শুরু
হয়|
দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাতের অনুরূপ
অর্থাত সুরা ফাতেহা পাঠ করে সাথে অন্য
যেকোনো একটি সুরা বা আয়াত পাঠ করা|
তবে দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাত
থেকে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত হয়| প্রথম
রাকাতের অনুরূপ দ্বিতীয় রাকাতেও রুকু
সিজদাহ করতে হবে|
● ২০. শেষ বৈঠক (২ রাকাত সালাতের জন্য)
:
——————————————–
২ রাকাত বিশিষ্ট সালাতের জন্য দ্বিতীয়
রাকাত শেষ করে বসে থাকতে হয়| শেষ
বৈঠকে বসা ফরজ| না বসলে সালাত
বাতিল| শেষ বৈঠকে বাম পায়ের
পাতা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতে হয়
এবং ডান পায়ের
পাতা গোড়ালি উর্ধ্বমুখী রেখে আঙ্গুলের
উপর ভর দিয়ে রাখতে হয়| (বুখারী,
আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৯২,৮০১; নায়ল
৩/১৪৩-৪৫ ‘তাশাহহুদে বসার নিয়ম’ অনুচ্ছেদ)
বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম
হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও
স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে| মুসলিম,
মিশকাত হা/৯০৭ ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।
শেষ বৈঠক তাশাহুদ তথা ‘অত্তাহিয়াতু, দুরুদ
এবং দুআ মাসুরা’র সমন্বয়ে হয় |
ডান হাত আরবি ৫৩ -এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ
থাকবে ও শাহাদাত
অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করবে অর্থাত
নাড়তে থাকতে হবে ধীরে ধীরে । মুসলিম,
আবু দাউদ, নাসাই, ইবনে খুযায়মা, মিশকাত
হা/৯০৬, ৯০৮। ৫৩ -এর ন্যায় অর্থ কনিষ্ঠা,
অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করা ও
বৃদ্ধাঙ্গুলীকে তাদের
সাথে মিলানো এবং শাহাদাত
অঙ্গুলীকে স্বাভাবিক অবস্থায়
ছেড়ে দেওয়া।
বৈঠকের শুরু থেকে সালাম ফিরানোর আগ
পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবে।মিশকাত
হা/৯০৬ -এর টীকা।
দো‘আ পাঠের সময় আকাশের
দিকে তাকানো নিষেধ। নাসাঈ হা/১২৭৬;
মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮৩, ‘ছালাত’
অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৯।
ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো যাবে না,
যা পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়’।
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৭
‘সতর’ অনুচ্ছেদ-৮ ; মির‘আত হা/৭৬৩, ১/৬৬৯
পৃঃ, ঐ, ২/৪৭৩ পৃঃ।
আমাদের সমাজে প্রচলিত ‘আশহাদু’ বলার
সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর
আঙ্গুল নামাবে’ বলে যে কথা চালু
আছে তার কোন ভিত্তি নেই। মিশকাত
হা/৯০৬-এর টীকা-২ দ্রষ্টব্য;
মুসল্লির দৃষ্টি আঙ্গুলের ইশারার
বাইরে যাবে না। আহমাদ, আবুদাঊদ,
মিশকাত হা/৯১৭, ৯১১; আবুদাঊদ হা/৯৯০;
নাসাঈ হা/১২৭৫; মিশকাত হা/৯১২।
● তাশাহুদ :-
———–
শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ পাঠ করতে হয়|
প্রত্যেক বৈঠকে তাশাহুদ
তথা ‘অত্তাহিয়াতু’ পাঠ করা ওয়াজিব|
এটি পড়তে ভুলে গেলে সহু
সিজদা দিতে হয়| (বুখারী, মুসলিম,
নাসাই,আহমদ)
তাশাহুদ চুপে চুপে পড়া সুন্নত| (আবু দাউদ)
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু,
ওয়াত্ তাইয়িবাতু। আস্সালামু
‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আস্সালামু
আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্
সালিহীন। আশহাদু আল-লা-
ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু
আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু।
(বুখারী, মিশকাত পৃঃ ৮৫)
অর্থঃ “সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য,
সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল
কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী!
আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও
তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের
উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের
উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য
নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ
আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
● দুরুদ:-
——-
দুই, তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতের
একদম শেষের বৈঠকে তাশাহুদের পর কিন্তু
সালাম ফেরানোর আগে দুরুদ পাঠ করতে হয়|
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা বারাক্তা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ”। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত পৃঃ ৮৬,
হা/৯১৯)
অর্থ: “ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার
বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন,
যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস
সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ
করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত
সম্মানিত।”
‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ
করে, আল্লাহ তার উপরে দশটি রহমত নাযিল
করেন। তার আমলনামা হ’তে দশটি গুনাহ
ঝরে পড়ে ও তার সম্মানের স্তর আল্লাহর
নিকটে দশগুণ বৃদ্ধি পায়’। নাসাঈ, মিশকাত
হা/৯২২, ‘নবীর উপরে দরূদ ও তার ফযীলত’
অনুচ্ছেদ-১৬।
● ২১. বৈঠক :-
————-
দুইরাকাত বিশিষ্ট সালাতে দ্বিতীয়
রাকাত শেষে, তিন রাকাত এবং চার
রাকাত বিশিষ্ট সালাতে দ্বিতীয় রাকাত
শেষে কিছুক্ষণ বসতে হয় এবং দুআ পাঠ
করতে হয় যাকে ‘বৈঠক’ বলা হয়|
২২. দুই রাকাত শেষে মধ্য বৈঠক যা শুধুমাত্র
৩ রাকাত ও চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতের
জন্য প্রযোজ্য :
তিন রাকাত এবং চার রাকাত বিশিষ্ট
সালাতের দ্বিতীয়
রাকাতে বৈঠকে বসতে হয়| এটাকে বলা হয়
মধ্য বৈঠক | তিন ও চার রাকাত বিশিষ্ট
সালাতের ২য় রাকাত শেষে এই
বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ ওয়াজিব|
এ বৈঠকে অত্তাহিয়াতু পাঠ করতে হয়| এর
সাথে দুরুদও পাঠ করা যায়|
রাসুল (সাঃ) প্রথম দুই রাকাতের পর
তাশাহুদ পড়তে ভুলে গেলে ভুলের জন্য সহু
সিজদাহ করতেন| (বুখারী মুসলিম); সহু
সিজদাহ কেবল সালাতে কোনো ওয়াজিব
ছুটে গেলে করতে হয়|
রাসুল (সাঃ) প্রত্যেক বৈঠকে অত্তাহিয়াতু
পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন| (নাসাই)
● ২৩. তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠা:-
———————————-
তিন ও চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতের জন্য
দ্বিতীয় রাকাতের পর মধ্য বৈঠক
শেষে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়াতে হয়|
রাসুল (সাঃ) তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’
বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়াতেন|
(বুখারী, মুসলিম)
রাসুল (সাঃ) বসা থেকে দাড়ানোর সময়
তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন
এবং দাড়াতেন| দাড়ানোর সময় দুই হাত
উত্তোলন তথা রফল ইয়াদায়ন করতেন|
(বুখারী, আবু দাউদ)
● ২৪. তৃতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাত:-
————————————-
তিন রাকাত বিশিষ্ট সালাত অর্থাত
মাগরিবের সালাত এবং চার রাকাত
বিশিষ্ট সালাত যেমন জোহর, আছর ও এশার
সালাত |
রাসুল (সাঃ) তৃতীয় ও চতুর্থ
রাকাতে সুরা ফাতেহা পাঠ করতেন| রাসুল
(সাঃ) ৩য় ও ৪র্থ রাকাতে সংক্ষিপ্ত
কেরাত পাঠ করতেন| (মুসলিম, আহমদ)
অর্থাত ৩য় ও ৪র্থ
রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ার পর সাথে অন্য
সুরা বা আয়াত পড়া সুন্নত|
রাসুল (সাঃ) ৩য় ও ৪র্থ
রাকাতে কখনো কখনো শুধু
সুরা ফাতেহা পাঠ করতেন| (বুখারী,
মুসলিম)
৩য় ও ৪র্থ রাকাতের রুকু সিজদাহ প্রথম দুই
রাকাতের অনুরূপ|
● ২৫. শেষ বৈঠক :-
——————-
দুইরাকাত বিশিষ্ট সালাতে দ্বিতীয়
রাকাত শেষে, তিন রাকাত বিশিষ্ট
সালাতে তৃতীয় রাকাত শেষে এবং চার
রাকাত বিশিষ্ট সালাতে চতুর্থ রাকাত
শেষে বৈঠকে বসতে হয় যাকে শেষ বৈঠক
বলা হয়|
২ রাকাত বিশিষ্ট সালাতের জন্য দ্বিতীয়
রাকাত শেষ করে বসে থাকতে হয়| শেষ
বৈঠকে বসা ফরজ| না বসলে সালাত
বাতিল| শেষ বৈঠকে বাম পায়ের
পাতা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতে হয়
এবং ডান পায়ের
পাতা গোড়ালি উর্ধ্বমুখী রেখে আঙ্গুলের
উপর ভর দিয়ে রাখতে হয়| (বুখারী,
আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৯২,৮০১; নায়ল
৩/১৪৩-৪৫ ‘তাশাহহুদে বসার নিয়ম’ অনুচ্ছেদ)
বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম
হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও
স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে| মুসলিম,
মিশকাত হা/৯০৭ ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।
ডান হাত আরবি ৫৩ -এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ
থাকবে ও শাহাদাত
অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করবে অর্থাত
নাড়তে থাকতে হবে ধীরে ধীরে । মুসলিম,
আবু দাউদ, নাসাই, ইবনে খুযায়মা, মিশকাত
হা/৯০৬, ৯০৮। ৫৩ -এর ন্যায় অর্থ কনিষ্ঠা,
অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করা ও
বৃদ্ধাঙ্গুলীকে তাদের
সাথে মিলানো এবং শাহাদাত
অঙ্গুলীকে স্বাভাবিক অবস্থায়
ছেড়ে দেওয়া।
দো‘আ পাঠের সময় আকাশের
দিকে তাকানো নিষেধ। নাসাঈ হা/১২৭৬;
মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮৩, ‘ছালাত’
অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৯।
ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো যাবে না,
যা পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়’।
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৭
‘সতর’ অনুচ্ছেদ-৮ ; মির‘আত হা/৭৬৩, ১/৬৬৯
পৃঃ, ঐ, ২/৪৭৩ পৃঃ।
আমাদের সমাজে প্রচলিত ‘আশহাদু’ বলার
সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর
আঙ্গুল নামাবে’ বলে যে কথা চালু
আছে তার কোন ভিত্তি নেই। মিশকাত
হা/৯০৬-এর টীকা-২ দ্রষ্টব্য;
মুসল্লির দৃষ্টি আঙ্গুলের ইশারার
বাইরে যাবে না। আহমাদ, আবুদাঊদ,
মিশকাত হা/৯১৭, ৯১১; আবুদাঊদ হা/৯৯০;
নাসাঈ হা/১২৭৫; মিশকাত হা/৯১২।
● ২৬. শেষ বৈঠকের দুআ সমূহ:-
——————————-
১ম অংশ তাশাহুদ :-
শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ পাঠ করতে হয়|
প্রত্যেক বৈঠকে তাশাহুদ
তথা ‘অত্তাহিয়াতু’ পাঠ করা ওয়াজিব|
এটি পড়তে ভুলে গেলে সহু
সিজদা দিতে হয়| (বুখারী, মুসলিম,
নাসাই,আহমদ)
তাশাহুদ চুপে চুপে পড়া সুন্নত| (আবু দাউদ)
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু,
ওয়াত্ তাইয়িবাতু। আস্সালামু
‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আস্সালামু
আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্
সালিহীন। আশহাদু আল-লা-
ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু
আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু।
(বুখারী, মিশকাত পৃঃ ৮৫)
অর্থঃ “সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য,
সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল
কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী!
আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও
তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের
উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের
উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য
নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ
আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
২য় অংশ দুরুদ:-
দুই রাকাত বিশিষ্ট সালাতে, তিন রাকাত
বিশিষ্ট সালাতের তৃতীয়
রাকাতে এবং চার রাকাত বিশিষ্ট
সালাতের চতুর্থ রাকাতে শেষ
বৈঠকে তাশাহুদের পর কিন্তু সালাম
ফেরানোর আগে দুরুদ পাঠ করতে হয়|
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন
কামা বারাক্তা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ”। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত পৃঃ ৮৬,
হা/৯১৯)
অর্থ: “ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার
বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন,
যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস
সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ
করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত
সম্মানিত।”
‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ
করে, আল্লাহ তার উপরে দশটি রহমত নাযিল
করেন। তার আমলনামা হ’তে দশটি গুনাহ
ঝরে পড়ে ও তার সম্মানের স্তর আল্লাহর
নিকটে দশগুণ বৃদ্ধি পায়’।
নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২২, ‘নবীর উপরে দরূদ
ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৬।
৩য় অংশ দুআ মাসুরা:-
দুআ মাসুরা মানে হচ্ছে ‘হাদিস বর্ণিত
দুআ|’ দুরুদ এর পর দুআ মাসুরা পড়তে হয়|
রাসুল (সাঃ) এই দুআটি প্রত্যেক
সালাতে পড়ার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ
দিয়েছেন,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-
বি জাহান্নামা ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-
বিল কাবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্
ফিৎনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল,
ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিৎনাতিল
মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-ত,
আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উজুবিকা মিনাল
মা’ছামী ওয়াল মাগরাম |” (বুখারী, মুসলিম,
মিশকাত)
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয়
ভিক্ষা করছি জাহান্নামের আযাব হ’তে,
কবরের আযাব হ’তে, জীবন ও মৃত্যুকালীন
ফিৎনা হ’তে, এবং দাজ্জালের
ফিৎনা হ’তে| আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণের
বোঝা হতে|
আরেকটি দুআ মাসুরা,
আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি যুলমান
কাছিরা, ওয়ালা ইয়াগ ফিরূজ
যুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম
মিন ইনদিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আনতাল
গাফুরুর রাহিম | (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত
পৃঃ ৮৭ হা/৯৩৯)
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমার উপর
অত্যাধিক অন্যায় করেছি এবং তুমি ব্যতীত
পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই|
সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও|
ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ
থেকে হয়ে থাকে | আমার প্রতি রহম কর|
নিশ্চই তুমি ক্ষমাশীল দয়ালু|
তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যেকার দো‘আ
সমূহের শেষে রাসূল (সাঃ) নিম্নের দো‘আ
পড়তেন,
আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু
অমা আখখারতু, অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু,
অমা আসরাফতু, অমা আনতা আ‘লামু
বিহী মিন্নী; আনতাল মুক্বাদ্দিমু
ওয়া আনতাল মুআখখিরু, লা ইলা-
হা ইল্লা আনতা’ ।
মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪,
‘তাকবীরের পরে কি পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বাপর
গোপন ও প্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ কর
(এবং মাফ কর ঐসব গোনাহ)
যাতে আমি বাড়াবাড়ি করেছি এবং ঐসব
গোনাহ যে বিষয়ে তুমি আমার
চাইতে বেশী জানো। তুমি অগ্র-পশ্চাতের
মালিক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’।
৪র্থ অংশ অন্যান্য দুআ :-
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল
জান্নাতা ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনান্না-
র’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার
নিকটে জান্নাত
প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম
থেকে পানাহ চাচ্ছি)। (আবুদাঊদ হা/৭৯৩,
‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১২৮; ছহীহ ইবনু
হিববান হা/৮৬৫।)
আল্লা-হুম্মা রববানা আ-
তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-
খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-
বান্না-র’ অথবা আল্লা-হুম্মা আ-
তিনা ফিদ্দুনিয়া ..।
বুখারী হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; বাক্বারাহ ২/২০১;
মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৮৭
‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সারগর্ভ দো‘আ’
অনুচ্ছেদ-৯।
‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা!
তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দাও ও
আখেরাতে মঙ্গল দাও
এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব
থেকে বাঁচাও’।
● ২৭. সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করা:-
—————————————
প্রথমে ডানে ও পরে বামে সালাম
তথা ‘আস্সালামি আলাইকুম
ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাত শেষ
করতে হয়| আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত
হা/৯৫০, ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭।
সালাম ফেরানো ওয়াজিব| রাসুল (সাঃ)
বলেছেন, পবিত্রতা হচ্ছে সালাতের চাবি,
তাকবিরের (আল্লাহু আকবার)
মাধ্যমে সালাতে অন্যান্য কাজ হারাম
হয়ে যায় এবং সালামের মাধ্যমে সালাত
থেকে হালাল হয়ে বের হতে হয়| (আবু
দাউদ, তিরমিজি, হাকেম)
সালাম ফেরানোর পর করনীয়: সালাম
ফেরানোর মধ্য দিয়ে সালাত শেষ হয়|
তবে সালাম ফেরানোর পর পর কিছু
গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত কাজ রয়েছে| এ সকল সুন্নত
পরিত্যাগ করা ভালো নয়| সালাম
ফেরানোর পর পর মুনাজাত করা সুন্নতের
পরিপন্থী| ফরজ সালাত শেষ হতেই
সকলে এক সাথে দুই হাত তুলে মুনাজাত
ধরা বিদআত| সালাম ফিরিয়ে ফরজ সালাত
শেষ হতেই সুন্নত/নফল সালাতের জন্য
দাড়িয়ে যাওয়া সুন্নতের খেলাফ|
“যে ব্যক্তি শরীয়তে নতুন কিছু আবিষ্কার
করল যা, শরীয়তের অংশ নয় তা বর্জনীয়’’।
(মুসলিম)
সাওবান (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) সালাত
শেষে তিনবার ক্ষমা চাইতেন, ‘আস্তাগ
ফিরুল্লাহ, আস্তাগ ফিরুল্লাহ, আস্তাগ
ফিরুল্লাহ’ অর্থঃ আমি তোমার নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা করছি| অতঃপর বলতেন,
‘আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম, ওয়া মিনকাস
সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল জালা-
লী ওয়াল ইকরাম’ অর্থঃ হে আল্লাহ!
তুমি শান্তিময়, তোমার নিকট থেকেই
শান্তির আগমন, তুমি বরকতময় হে পরতাম ও
সম্মানের অধিকারী| (মুসলিম, মিশকাত);
সালাম ফেরানোর পর কমপক্ষে এতটুকু
করা হচ্ছে সুন্নত| কমপক্ষে এই সুন্নত
করে তারপর সালাতের স্থান
থেকে প্রয়োজনে নড়া উচিত|
প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে আয়াতুল
কুরসী পাঠকারীর জন্য জান্নাতে যেতে আর
কোনো বাধা থাকেনা মৃত্যু ব্যতীত|
(নাসাই)
আল্লাহু লা– ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল
কাইয়্যুম লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাওম।
লাহু মা ফিছ ছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল
আরদ্।মান জাল্লাজী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু–
ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু
মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খাল ফাহুম
ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল্ মিহি–
ইল্লা বিমা সা–আ-‘ ওয়াসিয়া কুরসি ইউ হুস
ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু
হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিউল আজীম। (–
মানে আওয়াজ টান দেওয়া)
অর্থ- আল্লাহ, তিনি ব্যতিত কোন মাবুদ নাই।
তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী,
তাঁহাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ
করিতে পারে না। আসমান ও
জমীনে যাহা কিছু আছে সব তাঁহারই। এমন
কে আছে, যে নাকি তাঁহার অনুমতি ব্যতিত
তাঁহার নিকট সুপারিশ করিবে? তাহাদের
(লোকদের) সম্মুখে যাহা কিছু
আছে এবং তাহাদের পশ্চাতে যাহা কিছু
আছে, সবই তিনি জানেন,
এবং তাহারা তাঁহার(আল্লাহ তায়ালার)
জ্ঞ্যানের কিছুই
আয়ত্তে আনিতে পারে না,
তবে তিনি যাহা ইচ্ছা করেন। তাঁহার
কুরছী আসমানসমুহ ও জমীনের সর্বত্রই
ঘিরিয়া রহিয়াছে। আর এই দুইটির
রক্ষনাবেক্ষন করা তাঁহার পক্ষে মোটেই
কঠিন নয়, এবং তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান।
রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক
সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার
আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার
এবং শতক পূরণ করতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মূলক
ওয়া লাহুল হামদু
ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়িইন কাদীর’ পাঠ
করবে তার সমস্ত পাপ
ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের
ফেনা সমতুল্য হয়| অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত
ইবাদতের যোগ্য কোনো মা’বুদ নাই,
তিনি এক তার কোনো শরিক নাই, রাজত্ব
তার এবং প্রশংসা তারই| তিনি সকল কিছুর
উপর ক্ষমতাবান|
রাসুল (সাঃ) প্রত্যেক সালাত শেষে একবার
করে সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পাঠ করতেন|
আর মাগরিব ও ফজরের সালাতের পর
সুরা ইখলাস সহ তিনবার করে পড়তেন| ( আবু
দাউদ নাসাই, তিরমিজি, মিশকাত)
উপরোক্ত কাজ গুলো করা সুন্নত |
আমরা সুন্নত বাদ
দিয়ে নিজেরা মনগড়া সম্মিলিত
মুনাজাতের প্রচলন করেছি| সালাত
শেষে উপরোক্ত সুন্নতের কাজ না করে অন্য
কিছু করা হচ্ছে সুন্নতের বরখেলাফ| এই
সকল সুন্নতের অনেক অনেক
নেকী রয়েছে পক্ষান্তরে নিজেদের
মনগড়া কিছু করা হচ্ছে বিদআত | আর
বিদাতের পরিনাম ভ্রষ্টতা যার পরিনাম
জাহান্নাম|
সালাত শেষে এই দুআ
গুলো করে ব্যক্তিগতভাবে হাত
তুলে মুনাজাত করা যায় | তবে সম্মিলিত
মুনাজাত করা বিদআত কারণ রাসুল (সাঃ)
এর দীর্ঘ ২৩ বছরের সালাতে এভাবে কখনই
ফরজ সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত
করেছেন এমন কোনো প্রমান পাওয়া যায়
না|
মহান আল্লাহ আমাদের বুঝার তৌফিক দিন|
হে আল্লাহ! তোমার নিকট উপকারী বিদ্যা,
গ্রহণযোগ্য আমল এবং পবিত্র
জীবিকা প্রার্থনা করি| হে আল্লাহ!
আমি তোমার আশ্রয় কামনা করছি অসার
জ্ঞান হতে, অশ্রুত দো’আ হতে, এবং এমন
প্রবৃত্তি হতে যা পরিতৃপ্ত হয় না, এমন অন্তর
হতে যা বিগলিত হয় না।
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলাইহি,
আল্লাহুম্মা বারিক আলাইহি |
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন, একমাত্র
তিনিই মহা জ্ঞানী ও হেদায়েতের
মালিক!
“হে আমাদের পালনকর্তা,
যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি,
তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।
হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের পাপ
মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর
এবং আমাদের প্রতি দয়া কর।তুমিই
আমাদের প্রভু।”
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের
সবাইকে সঠিক জ্ঞান ও সঠিক বুঝ দান করুন,
উম্মতকে ঐক্যবদ্ধ রাখুন এবং আমাদের
প্রচেষ্টাকে কবুল করুন! …আমীন!
courtesy: allpraisebelongstoallah
দলিল প্রমান ভিত্তিক সালাতের
পদ্ধতি লিখতে গিয়ে যে সকল বইয়ের
সরাসরি সহযোগিতা নিয়েছি,
১. বুখারী , মুসলিম, আবু দাউদ এর
বাংলা অনুবাদ
২. ইমাম বুখারী রচিত যুজউল কিরাত
এবং যুজউ রফল ইয়াদাইন কিতাবের
বাংলা অনুবাদ
৩. সহিহ নামাজ ও দুআ শিক্ষা –
আল্লামা মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে ফজল
৪ . রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামাজ –
নাসিরুদ্দিন আলবানী
৫ . রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সালাত আদায়
পদ্ধতি- শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ
৬ . ছালাতুর রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) – ড.
আসাদুল্লাহ আল গালিব
৭ . আইনে রাসুল (সাঃ) দোআ অধ্যায়- আব্দুর
রাজ্জাক বিন ইউসুফ।
৮. প্রচলিত ভুল বলাম রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
সালাত আদায়ের পদ্ধতি – মুরাদ বিন আমজাদ

প্রশ্নোত্তর

>প্রশ্ন : জানাযার ছালাতের বিধান
কত হিজরীতে জারি হয়? খাদীজা (রাঃ)-
এর জানাযা না হওয়ার কারণ কি?
উত্তর : জানাযার বিধান কত
হিজরীতে জারি হয়েছে তার স্পষ্ট কোন
দলীল পাওয়া যায় না। তবে তা মদীনায়
ছালাতের বিধান জারি হওয়ার পর চালু হয়।
ইবনু হাজার হাইতামী বলেন,
খাদীজা (রাঃ)-এর মৃত্যুর সময় জানাযার
ছালাতের বিধান জারি ছিল না।
কেননা এর বিধান মদীনায় হিজরতের পর
নাযিল হয় (তুহফাতুল মুহতাজ
ফী শরহে মিনহাজ ৩/১৩১) । আর হিজরতের
পূর্বেই খাদীজা (রাঃ)-এর মৃত্যু হওয়ায়
তার জানাযা করা হয়নি। আয়েশা (রাঃ)
বলেন, ছালাত ফরয হওয়ার পূর্বেই
খাদীজা (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন
(ত্বাবারাণী কাবীর হা/১০৯৯) ।

>প্রশ্ন : স্যালুট প্রদান পদ্ধতির
ক্ষেত্রে শরী‘আতের বিধান কি?

উত্তর : এটি একটি অনৈসলামিক কালচার।
যা পরিত্যাজ্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
তোমরা ইহূদী-নাছারাদের
অনুকরণে সালাম দিয়ো না।
কেননা তারা হস্ততালু, মাথা ও ইশারার
মাধ্যমে সালাম প্রদান করে থাকে
(দায়লামী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭৮৩) ।
তিনি আরো বলেন, তোমরা সালাম
প্রদানের ক্ষেত্রে ইহূদী-খৃষ্টানদের
অনুকরণ করো না। কেননা ইহূদীরা আঙ্গুল
দিয়ে ইশারার
মাধ্যমে এবং নাছারারা হস্ততালু
দিয়ে ইশারার মাধ্যমে সালাম প্রদান
করে (তিরমিযী হা/২৬৯৫, মিশকাত
হা/৪৬৪৯, সনদ হাসান) ।
পক্ষান্তরে অভিবাদনের
ইসলামী পদ্ধতি হ’ল
সাক্ষাতে পরস্পরকে সালাম করা। এর জন্য
কোনরূপ আনুষ্ঠানিকতা হ’লে সেটা বিদ‘আত
হবে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে সালাম
প্রদান ও সালাম গ্রহণের
যে আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে,
সেটা অমুসলিমদের থেকে আগত।
ইসলামে এর কোন অনুমোদন নেই।
বাধ্যবাধকতার ব্যাপারটি ব্যক্তির নিজস্ব
বিবেচ্য বিষয়। আল্লাহ বলেন,
তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর
(তাগাবুন ৬৪/১৬) ।

>প্রশ্ন : এক ওয়াক্ত ছালাত
ক্বাযা করলে ৮০
হুক্ববা জাহান্নামে জ্বলতে হবে- কথাটির
সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : বর্ণিত উক্তিটির প্রমাণে কোন
হাদীছ নেই। এটি প্রচলিত কথা মাত্র।
ٌﺐُﻘُﺣঅর্থ যুগ বা দীর্ঘ সময়কাল। আল্লা
বলেন,
‘অবিশ্বাসীরা জাহান্নামে থাকবে যুগ যুগ
ধরে’ (নাবা ৭৮/২৩) । অত্র আয়াতে বর্ণিত
ﺎًﺑﺍَﻖْﺣَﺃ অর্থ ٌﺭْﻮُﻫُﺩ ٌﺔَﻌَﺑﺎَﺘَﺘُﻣ ‘পরপর
যুগসমূহ’। হাসান বছরী বলেন, এর অর্থ ﺩﻮﻠﺧ
বা ‘চিরকাল’। ‘যার কোন সীমা নির্দিষ্ট
নেই’। এক হুক্ববার সময়কাল দুনিয়ার
হিসাবে ২ কোটি ৮৮ বছর বা তার কম ও
বেশী মর্মে যতগুলি বর্ণনা বিভিন্ন
তাফসীর গ্রন্থে দেখতে পাওয়া যায়,
সবগুলিই হয় ‘বানোয়াট’ অথবা ‘অত্যন্ত দুর্বল’
সূত্রে বর্ণিত (দ্রঃ তাফসীরুল কুরআন, ৩০
তম পারা ৫৭ পৃঃ) ।

জান্নাতের বর্ণনা

জান্নাত নেককারদের ঘর
এরশাদ হচ্ছে :
“কেউ জানে না তাদের জন্য কি কি
নয়নাভিরাম গোপন রাখা হয়েছে।
তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান
স্বরূপ।” [সূরা সাজদাহ ১৭]
হে মুসলমানগণ! এসো শান্তির
রাজ্য-জান্নাতের আলোচনার
মাধ্যমে আমাদের অন্তর উর্বর ও
আন্দোলিত করি। হতে পারে তার
আলোচনা ও স্মৃতিচারণ আমাদের
অন্তরে জান্নাতের আগ্রহ
সৃষ্টি করবে। যার
ফলে আমরা সে সকল ভাগ্যবানদের
অন্তর্ভুক্ত
হতে পারব, যারা আল্লাহর
দরবারে উপস্থিত
হলে ঘোষণা আসবে :
“এতে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে
প্রবেশ কর।” [সূরা হিজর ৪৬]
জান্নাত একমাত্র অভিষ্ঠ
লক্ষ্য,কাঙ্খিত বস্তু। এর জন্য-ই
আমাদের পূর্ব পুরুষগণ সব কিছু ত্যাগ
করতে প্রস্তুত ছিলেন। আল্লাহ ও
তার রাসূলের আনুগত্যের সর্বশেষ
নমুনা পেশ করতেন। তার দীনের
জন্য উৎসর্গ হতেন,তার সন্তুষ্টির
উদ্দেশ্যে শাহাদাত বরণ করতেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ
জান্নাতের মাধ্যমেই বদরের
ময়দানে মুসলিম সৈন্যদের ভেতর
প্রেরণার
সৃষ্টি করে ছিলেন,তিরস্কার
করে ছিলেন তাদের মন্থরতাকে।
লক্ষ্য করুন তার উদাত্ব আহ্বান :
“সে জান্নাতের জন্য প্রস্তুত
হও, যার ব্যপ্তি আসামান-জমীন
সমতুল্য।”[মুসলিম]
তিনি কোন
পদমর্যাদা কিংবা সম্পদের
ওয়াদা করেননি, শুধু জান্নাতের
ওয়াদা করেছেন। সে ওয়াদাই
তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। তাদের
বিশ্বাসের দৃঢ়তার ফলে জান্নাত
চাক্ষুষ দেখার ন্যায়
সামানে বিদ্যমান ছিল, তাদের
সামনে দুনিয়া বিদ্যমান
থাকা সত্বেও অর্থহীন ছিল। এমনও
হয়েছে, কেউ কেউ
হাতে রাখা খেজুর পর্যন্ত
ফেলে দিয়ে বলে ছিল, এ
গুলো খাওয়া পর্যন্ত
অপেক্ষা করাও অনাকাঙ্খিত
দীর্ঘ হায়াত
নিয়ে বেচে থাকা বৈ কি। আবার
কেউ কেউ বর্শা বিদ্ধ হয়েও
আনন্দের আতিশয্যে বলেছিল,
“কাবার রবের কসম, আমি সফল
হয়েছি।” আর জাফর
ইবনে আবিতালিবের
বিষয়টি আরো আশ্চর্য। জান্নাত
তার জীবন সঙ্গীর ন্যায় ছিল।
লক্ষ্য করুন তার কবিতা
, যা তিনি আবৃতি করেছিলেন
মুতার যুদ্ধে, জায়েদ বিন হারেছের
শাহাদাতের পর তিন হাজার
মুসলিম সৈন্যের নেতৃত্ব দানকালে
,যারা দুই লক্ষ খৃষ্টান সৈন্যের
মোকাবেলায় অবতীর্ন হয়েছিল।
স্বাগতম হে জান্নাত! যার আগমন-
সুভলক্ষণ, যার পানীয় শীতল।
রোম তো রোম-ই যার শস্তি
ঘনিয়েছে। কাফের, ছিন্ন-
বিচ্ছিন্ন তাদের বংশ।
যদি তাদের সাক্ষাত পাই।
এ কবিতা আবৃতি করেই তিনি শহিদ
হন। আর দু’ডানায় ভর
করে জান্নাতে উড়ে বেড়ান। তার
পর আব্দুল্লাহ
ইবনে রাওয়াহা ইসলামের
ঝান্ডা তুলে নেন। তিনিও কম
যাননি। মৃতু্য অবধারিত দেখেও
তিনি আবৃতি করেছিলেন।
শপথ হে নফস, অবশ্যই সেথায় অবতরণ
করবে-
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।
মানুষ জড়ো হয়েছে, ক্রন্দনের
প্রস্তুতি নিয়েছে,
আমি কেন লক্ষ্য করছি
, তুমি জান্নাত অপছন্দ করছ।
নিরাপদ কাটিয়েছ, তুমি দীর্ঘ
সময়,
অথচ তুমি সংকীর্ন জায়গার বীর্য
মাত্র।
এ কবিতা আবৃতি করে তিনিও
পূর্বের ন্যায়
পরপারে পারি চলে যান। আল্লাহ
তাদের সকলের উপর সস্তুষ্ট হোন।
জান্নাতুল ফেরদাউসের মর্যাদা :
ফেরদাউস সে জান্নাতের
নাম, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার
কাঙ্খিত বস্তু লাভ করে ধন্য হবে।
যার ভেতর প্রাসাদের উপর
প্রাসাদ নির্মিত। যার কক্ষসমূহ
নূরে শোভিত। তিনি পবিত্র যে এর
এর
পরিকল্পনা করেছেন, তিনি করুনাময়
যে তা স্বহস্তে তৈরি করেছে।
এটা রহমতের স্থান, সফলতার
স্থান, এর রাজত্ব মহান, এর
নেয়ামত স্থায়ী। এরশাদ হচ্ছে :
“যাকে দোযখ
থেকে দুরে রাখা হবে
এবং জান্নাতে প্রবেশ
করানো হবে, সে-ই সফল।”[সূরা
আলে ইমরান ১৮৫] রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
“তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ
জান্নাতের
জায়গা দুনিয়া এবং তার ভেতর
যা কিছু আছে তার
চেয়ে উত্তম।” [বুখারী]
জান্নাতের নেয়ামতের
মোকাবেলায় দুনিয়ার
নেয়ামাতের কোন তুলনা হয় না।
তবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যেভাবে তুলনা করেছেন, সেভাবে তুলনা করতে দোষ
নেই। এরশাদ হচ্ছে :
“যেমন, তোমাদের কারো আঙ্গুল
সমুদ্রে রাখার মতই, অতঃপর দেখ
কি পরিমাণ
পানি আঙ্গুলে উঠে এসেছে।”[মুসলিম]
এবার চিন্তা কারুন, যে পরিমাণ
পানি সমুদ্র থেকে আঙ্গুলের
সাথে ওপরে উঠে এসেছে
, সে পরিমাণ
হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার
নেয়ামত। আর যে পরিমাণ
পানি মহাসমুদ্রে অবশিষ্ট আছে
, তা হচ্ছে জান্নাতের নেয়ামত।
জান্নাতের আলোচনা প্রকৃত
পক্ষে আমাদের রেখে আসার
বাড়ীর আলোচনা। এখান থেকেই
ইবলিস আদম-হাওয়াকে বের
করে দিয়েছে। হয়তো তার
আলোচনা পুনারায়
জান্নাতে ফিরে যাওয়ার পথ সুগম
করবে।
অতএব, আসো তুমি জনবসতির
উদ্যানে, কারণ ইহা
তোমার প্রথম গৃহ, এবং এতেই
রয়েছে তাবু।
কিন্তু আমরা শত্রুর বন্ধী
, আছে কি কোন পথ?
আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব, আর
নিরাপদ হয়ে যাব।
জান্নাতের বর্ণনা ব্যাপক
ভাষাশৈলী ও ভাবগাম্ভির্যতাসহ
কুরআন-সুন্নায় বিধৃত হয়েছে। যার
রহস্য উদঘাটন করা, যার প্রকৃত
অবস্থা উপলব্দি করা প্রায় অসম্ভব।
হাদীসে কুদসীতে রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
“আমি আমার নেককার বান্দাদের
জন্য এমন জিনিস
তৈরী করে রেখেছি, যা কোন
চোখ দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবন
করেনি, এবং মানুষের অন্তরে যার
কল্পনা পর্যন্ত হয়নি। দলিল স্বরূপ
তোমরা তেলাওয়াত করতে পার।
“কেউ জানে না, তাদের জন্য
নয়নাভিরাম কি কি উহ্য
রাখা হয়েছে, তাদেরই কর্মের
প্রতিদান স্বরূপ।” [সাজদাহ ১৭]
জান্নাতের ময়দান খুব প্রসস্ত, তার
প্রাসাদ খুব বড় ও বহুতল বিশিষ্ট।
এর সৃষ্টিকারী স্বয়ং আল্লাহ
তাআলা বলছেন :
“তোমরা তোমাদের রবের
ক্ষমা এবং জান্নাতের
পানে ছুটে যাও, যার
সীমানা হচ্ছে আসমান-
যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে
পরহেযগারদের জন্য।”[আলে ইমরান
১৩৩]রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“জান্নাতে একটি গাছ আছে, এক জন
আশ্বারোহী সবল-
দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশত বৎসর
ভ্রমন করেও তা অতিক্রম
করতে পারবে না।”[বুখারী-
মুসলিম] জান্নাতের বড় বড়
আটটি দরজা রয়েছে, যার দুই খুঁটির
মাঝখানে দূরত্বের পরিমাণ
চলি্লশ বৎসর ভ্রমনের
পথ।” [আহমাদ]
জান্নাতের ভেতর প্রাসাদের উপর
প্রাসাদ নির্মিত। তার প্রসাদ সমূহ
বিভিন্ন ধরনের মানিক্য
খচিত, একসাথে ভেতর-বাহির
দৃশ্যমান।[সহীহ আল জামে] তার
দেয়াল স্বর্ণ ও রূপার
দ্বারা নির্মিত। তার প্লাষ্টার
উন্নত মৃগনাভী, তার পাথর-
কুচি প্রবাল ও মোতি এবং তার
মাটি জাফরান।
তাতে রয়েছে মোতির অনেক তাবু।
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“মোমেনের জন্য জান্নাতের ভেতর
পাথরের তৈরি বড় একটি তাবু
রয়েছে, যার দৈর্ঘ আসমানের
ভেতর ষাট মাইল। মোমেনের জন্য
সেখানে পরিবার পরিজন থাকবে।
মুমিন বান্দা তাদের চারপাশে
ঘোরাফেরা করবে, তবে কেউ
কাউকে দেখবে না।” [বুখারী-
মুসলিম]এরশাদ হচ্ছে :
“যখন তুমি তা দেখবে, আবার যখন
দেখবে, সেখানে নেয়ামতরাজী ও
বিশাল রাজ্য লক্ষ্য করবে।” এরশাদ
হচ্ছে :
“তাতে রয়েছে দুর্ঘন্ধহীন পানির
নহর; সুস্বাদু দুধের নহর; সুপেয়
শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর
নহর। সেখানে তাদের জন্য
আরো রয়েছে,রকমারী ফল-মূল এবং
তাদের রবের পক্ষ থেকে
ক্ষমা।”[মুহাম্মদ ১৫] তার কুটির
সমূহ বন্ধু-বান্ধবদের মিলন মেলা।
তার বাগান পর্যটকদের প্রমোদ
স্থান। তার ছাদ আল্লাহর আরশ।
তার প্রসাদসমূহ সুদৃঢ়, তার
প্রদীপসমূহ আলোকোজ্জল, তার
ভেতর রয়েছে চিকন-মোটা সব
ধরনের রেশন আর আছে প্রচুর ফল-
মূল, যা কোন দিন শেষ হবে না
, যা ক্ষেতে কোন দিন নিষেধও
করাও হবে না। এরশাদ হচ্ছে :
“সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ ও
মুতি দ্বারা তৈরি চুরি দিয়ে সজ্জিত
করা হবে এবং সেখানে তাদের
পোষাক হবে রেশমের।”[সূরা হাজ্জ
২৩]
সেখানে তারা নিজ নিজ
আসনে হেলান দিয়ে বসবে
, একে অপরের
পালং মুখোমুখি থাকবে। পরস্পর
আলাপ-আলোচনায় নিরত থাকবে।
এরশাদ হচেছ :
“তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ ও
খবরাখবর নেয়ার জন্য একে অপরের
মুখোমুখি হবে। তারা বলবে
, ইতোপূর্বে আমরা নিজ পরিবারের
মাঝে খুব শংকিত ছিলাম।
আল্লাহ আমাদের
দয়া করেছেন, তিনি আমাদেরকে বিষাক্ত
আযাব থেকে নাজাত প্রদান
করেছেন। এর আগেও
আমরা তাকে আহ্বান করতাম।
তিনি হিতাকাঙ্খি-
দয়ালু।” [সূরা তুর ২৫-২৮]
তার ভেতর আরো আছে সুদীর্ঘ
ছায়া, অনেক নেয়ামত, রুচিশীল
ফল-ফলাদি, সুস্বাদু পাখির
গোস্ত, তার পানাহার সব সময়ের
জন্য উম্মুক্ত, কখনো শেষ হবে না।
তার ছায়া কখনো নিঃশেষ
হবে না। দীর্ঘ সময় তাতে আমোদ-
প্রমোদ আয়োজন চলবে, তাতে ঘুম
আসবে না, ঘুমের প্রয়োজনও
হবে না। তার ফল মাখনের
চেয়ে নরম, মধুর চেয়ে
বেশী মিষ্টি। তার ফল হাতের
নাগালে থাকবে, তার পানীয়
সুস্বাদ্য, বৃক্ষরাজি
অবনত, আনুগত্যশীল।এরশাদ হচ্ছে :
“তার ফলসমূহ খুব নাগালের
করে দেয়া হয়েছে।”[দাহর
১৪] আশা করার সাথে সাথেই
ফলসমূহ সম্মুখে ঝুঁকে যাবে।
এরশাদ হচ্ছে :
“রেশমের আস্তর বিশিষ্ট
বিছানায় হেলান অবস্থায়
থাকবে। উভয় উদ্যানের ফল
অবনত থাকবে।” [রাহমান ৪৫]
“পানাহার ও সহবাসের
ক্ষেত্রে প্রত্যেককে একশত
ব্যক্তির শক্তি প্রদান
করা হবে।” [তিরমিযি]পানাহার
ক্ষুদা নিবারণ
কিংবা তৃষ্ণা মিটানোর
জন্য নয়, বরং স্বাদ আস্বাদন
আর মস্তি করার জন্য। এরশাদ
হচ্ছে :
“তোমার
জন্য; তুমি এতে ক্ষুদার্ধ
হবে না এবং বস্ত্রহীনও
হবে না।
এবং তুমি এতে পিপাসার্থ
হবে না, রৌদ্র কষ্টও
পাবে না।” [সূরা ত্বহা ১১৮-১১৯]
মুদ্দা কথা জান্নাতে কষ্টদায়ক
কোন বস্তু বিদ্যমান
থাকবে না।
“তারা থুতু ফালাবে না
, নাকের
শ্লেশা ফালাবে না এবং পায়খানাও
করবে না।”[বুখারী-মুসলিম]
“তাদের কারো প্রয়োজন
হবে শুধু ঢেকুর তোলার, মৃগ
নাভী ছিটানোর
ন্যায়।”[মুসলিম]
আল্লাহ মুত্তাকিদের আহ্বান
করবেন, সম্মানিত মেহমানদের
ন্যায় তারা সামনে অগ্রসর
হবে এবং আল্লাহর
দরবারে উপস্থিত হবে। এরশাদ
হচ্ছে :
“হে আমার বান্দাগণ, আজ
তোমাদের কোন ভয় নাই
এবং তোমরা চিন্তিতও
হবে না।” [যুখরুফ ৬৮]
তারা দুনিয়ার ন্যায় সেখানেও
তাদের নিজ নিজ বাড়ি-ঘর
চিনবে। এরশাদ হচ্ছে :
“অতঃপর
তিনি তাদেরকে জান্নাতে
প্রবেশ করাবেন, যার পরিচয়
তিনি তাদেরকে ইতোপূর্বে দিয়েছেন।” [মুহাম্মদ
৬] সম্মানিত ফেরেশতাগণ
তাদেরকে নিরাপদ আগমন ও উত্তম
গৃহের সুসংবাদ
দিয়ে অভর্্যথনা জানাবে। এরশাদ
হচ্ছে :
“যারা তাদের রবকে ভয় করেছে
, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে।
অতঃপর যখন তারা তাতে আগমন
করবে ও দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে
, তখন তাদেরকে জান্নাতের
রক্ষীরা বলবে : ‘তোমাদের
প্রতি সালাম, তোমরা সুখি, অতএব
তোমরা এতে স্থায়ীভাবে প্রবেশ
কর।” [জুমার ৭৩] আর
জান্নাতিরা বলবে :
;
“তারা বলবে : সমস্ত
প্রসংশা সে আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে এর
জন্য পথ দেখিয়েছেন। যদি আল্লাহ
আমাদের পথ
না দেখাতেন, তবে আমরা পথ
পেতাম না। আমাদের নিকট
আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য
নিয়ে এসেছেন। এরশাদ হচ্ছে :
“এবং ঘোষণা দেয়া হবে, এটাই
তোমাদের জান্নাত, তোমরা এর
মালিক হয়েছ, তোমরা যে আমল
করতে, তার বিনিময়ে।” [আরাফ ৪৩]
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
“জান্নাতে তাদের প্রথম দলটি
প্রবেশ করবে, পূণিমর্ার রাতের
চাদের ন্যায়। অতঃপর তাদের
দ্বিতীয় দলটি যাবে উজ্জল
নক্ষত্রের ন্যায়।”[বুখারী-মুসলিম]
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
“জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ
করবে তাদের পিতা আদম আলাইহিস
সালাম এর আকৃতিতে। তাদের
প্রত্যেকের উচ্চতা হবে ষাট
হাত।”[বুখারী-মুসলিম] রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
“তাদের মাঝে পরস্পর কোন
বিদ্বেষ থাকবে না,তাদের সবার
অন্তর একটি অন্তরের ন্যায়
থাকবে।” [বুখারী] এরশাদ হচ্ছে
:“তাদের অন্তরে যে ব্যধি রয়েছে
, আমি তা দূর
করে দিব, তারা মুখোমুখি চেয়ারে
উপবিষ্ট, সকলে ভাই-ভাই।”[হিজর
৪৭]
· এরশাদ
হচ্ছে :”সেখানে তাদের
প্রার্থনা হল
‘হে আল্লাহ!
তোমার
পবিত্রতা ঘোষণা করছি।’
আর তাদের
শুভেচ্ছা হচ্ছে
‘সালাম’।
[সূরা ইউনুস ১০]
একজন
ঘোষণাকারী তাদের
আহ্বান করে বলবে :
“তোমরা এখানে চিরঞ্জিব
কখনো মুতু্য বরণ
করবে না।
তোমরা এখানে চির
সুস্থ, কখনো অসুস্থ
হবে না।
তোমরা এখানে চির
যুবক, কখনো বৃদ্ধ
হবে না।
তোমরা এখানে আনন্দ-
ফূর্তি কর, কখনো দুঃখিত
হবে না।”[মুসলিম]
· এরশাদ
হচ্ছে :”স্বর্ণের
প্লেট ও গ্লাসসহ
তাদের
চতুর্পাশে চক্কর
দেয়া হবে।
এবং তাতে আরো রয়েছে
, যা মন চায় ও যার
দ্বারা চোখ
তৃপ্তি অনুভব করে
, এবং তোমরা সেখানে সর্বদা থাকবে।”[যুখরুফ
৭১]
· এরশাদ
হচ্ছে :”তুমি তাদের
চোখে নেয়ামতের
প্রতিক্রিয়া চিনতে পারবে।”[মুতাফফিফিন
২৪]
· এরশাদ
হচ্ছে :”কিশোররা তাদের
আশ-পাশে চক্কর
কাটবে।
তারা দেখতে সুরক্ষিত
মোতির
ন্যায়।”[সূরা তূর ২৪]
এ হলো সেবকদের
অবস্থা, আর যাদের
সেবা করা হবে
, তাদের
অবস্থা কেমন হবে
, বর্ণনার
অপেক্ষা রাখে না।
তারা জান্নাতের
দীর্ঘ ছায়ার
নিচে জমা হবে
, সিল করা পানির
বোতল পরস্পর
আদান-প্রাদান
করবে আর
জান্নাতের ভেতর
প্রবাহিত সুপেয়
মদির পান করবে।
তাদের উপর পরপর
দয়া-কল্যাণ ও
অনুগ্রহ বর্ষিত
হবে। তাদের
থেকে চিন্তা-
পেরেশানি ও কষ্ট
চিরতরে বিদায়
নিবে।
· এরশাদ হচ্ছে :”এবং
, তারা বলবে সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের
দুঃখ দূর করেছেন।
নিশ্চয় আমাদের রব
ক্ষমাশীল, উত্তম
বিনিময়
প্রদানকারী।
তিনি নিজ
অনুগ্রহে আমাদের
থাকার স্থান
দিয়েছেন।
যেখানে আমাদের
কষ্ট স্পর্শ
করবে না
, ক্লান্তিও
আমাদের
কাছে ঘেসবে না।”[ফাতের
৩৪-৩৫]
· এরশাদ
হচ্ছে :”তারা সেখানে বাহুল্য
ও খারাপ কিছু
শুনবে না, শুধু
শুনবে সালাম, সলাম
বাক্য।”[ওয়াকেয়া ২৫-২৬]
প্রশান্তি-স্বস্তি
,ভালবাসা ও
নিরাপত্তার
পরিবেশ তাদের
বেষ্টন
করে থাকবে।
সেখানে তাদের
নেককার পিতা-
মাতা, স্ত্রী-
সন্তান
সবাইকে জমায়েত
করা হবে।
· এরশাদ হচ্ছে :
“বসবাসের
জান্নাত, সেখানে তারা এবং তাদের
সৎকর্মশীল পিতা-
মাতা, স্বামী
, সন্তানগণ প্রবেশ
করবে।”
হে আল্লাহর
বান্দা! তুমি এর
চেয়ে উত্তম আর
কি চাও!? [রাদ
২৩]
হঁ্যা, এতো কিছুর
পরও
একটি নেয়ামত
অবশিষ্ট আছে
, যা মাজীদের
দিন প্রদান
করা হবে। যে দিন
ঘোষণা দেয়া হবে :
·
“হে জান্নাতবাসীগন!
তোমাদের রব
তোমাদের
সাক্ষাত দিবে
, তোমরা সাক্ষাতের
জন্য প্রস্তুত
হও, অতঃপর
তারা প্রতিযোগিতামূলক
সাক্ষাতের জন্য
প্রস্তুত হবে।
তারা দেখতে পাবে
, তাদের
নিয়ে যাওয়ার
জন্য
দ্রুতগামী ভাল
জাতের উট প্রস্তুত
রয়েছে।
তারা ময়দানে পেঁৗছলে নূর-
মুতি ও মনি-
মোক্তা দিয়ে নির্মিত
মিম্ভার ও
মৃগনাভির
তৈরী ফোম
প্রদান করা হবে।
তারা নিজ নিজ পদ
মোতাবেক
আল্লাহর নিকট
উপবিষ্ট হবে।
এরশাদ
হচ্ছে :”আল্লাহর
নিকট তারা পদ-
মর্যাদা অনুপাতে অবস্থান
করবে।” [আলে ইমরান
১৬৩]
কবি বলেন :
যারা নামাজে অগ্রগামী
, ইহসানের কারণে তারাই
সে প্রতিযোগিতায় ধন্য হয়েছে।
এমতাবস্থায় একটি নূর প্রজ্বলিত
হয়ে সমগ্র জান্নাত আলোকিত
করে দিবে। তখন তারা মাথা উঁচু
করে দেখতে পাবে, পবিত্র নামের
অধিকারী, মহান আল্লাহ
তাআলা ওপর থেকে আগমন করেছেন।
তিনি বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ!
“করুনাময় রবের পক্ষ
থেকে তোমাদের
প্রতি সালাম।”[ইয়াসিন৫৮]
তাদের পক্ষ থেকে এ সালামের
একমাত্র যথাযথ উত্তর হচ্ছে :“হে
আল্লাহ! তুমি-ই
সালাম, শান্তি তোমার পক্ষ
থেকে-ই, তুমি-ই মর্যাদার
অধিপতি, হে সম্মান ও ইজ্জতের
মালিক।”
অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের
জন্য বিকশিত হবেন ও তাদের
উদ্দেশ্যে হাসবেন
এবং বলবেন : হে জান্নাতীগণ, এর
পর তারা সর্বপ্রথম শ্রবন করবে :
আমার ঐ
বান্দারা কোথায়, যারা আমাকে না দেখে আমার
অনুকরণ করেছে? এটা হচ্ছে ইয়াওমুল
মাজীদ, তারা আমার
কাছে প্রার্থনা করুক। তখন
তারা একবাক্যে বলবে :
আমরা আপনার ওপর সন্তুষ্ট, আপনিও
আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।
তিনি বলবেন :
হে জান্নাতবাসীগণ, যদি আমি তোমাদের
উপর সন্তুষ্ট না হতাম, আমার
জান্নাতে তোমাদের স্থান
দিতাম না। তোমরা আমার
কাছে চাও। তখন
তারা একবাক্যে বলবে : আপনার
চেহারার দর্শন
দিন, আমরা তাতে দৃষ্টি দিব।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা পর্দাসমূহ
উত্তোলন করবেন এবং তাদের জন্য
বিকশিত হবেন। যার ফলে নূরের
ঝলকে সকলে বেহুশ হয়ে যাবে।
আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি এ
সিদ্ধান্ত না থাকত যে
, তারা জ্বলবে না, তবে অবশ্যই
তারা জ্বলে যেত। তাদের
মধ্যে এমন কেউ থাকবে না যার
মুখোমুখি আল্লাহ হবেন না।
এমনকি তাদের কাউকে লক্ষ্য
করে বলবেন : হে অমুক, তোমার কি
স্মরণে পরে অমুক, অমুক দিনের কথা
?এভাবে তার দুনিয়ার বিচু্যতি ও
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ সম্পর্কে অবহিত
করবেন। আর সে বলবে : হে আমার
রব, তুমি কি আমাকে মাফ করনি
? তিনি বলবেন : অবশ্যই। আমার
ক্ষমার কারণে-ই তুমি তোমার এ
মঞ্জিলে পেঁৗছতে সক্ষম হয়েছ।
আহ! কত মধুর হবে সে দিন
কর্ণসমূহের স্বাদ! কত চমৎকার
হবে সে দিন চক্ষু্যসমূহের শীতলতা!
এরশাদ হচ্ছে : “সে দিন
চেহারাসমূহ হবে উজ্জল। তার
রবের
দিকে চেয়ে থাকবে।” [ক্বিয়ামাহ
২২-২৩]
হে মুমিনগণ! “এমন সাফল্যের
জন্য-ই, আমালকারীদের আমল
করা উচিত।”[সাফফাত ৬১]
“এতেই প্রতিযোগিদের
প্রতিযোগিতা করা উচিত।” [মুতাফফিফিন
২৬]
“জেনে রেখ! আল্লাহর পণ্য খুব
দাবি। জেনে রেখ! আল্লাহর
পণ্য জান্নাত।” [তিরমিযি-
হাকেম]
হে রহমানের পণ্য তুমি সস্তা নও।
বরং, তুমি অলসদের জন্য অসাধ্য।
হে রহমানের পণ্য, তোমাকে পাবে
; হাজারে একজন, দুই জনও নয়।
হে রহমানের পণ্য, তোমার
বিনিময় কি? মৃতু্যর
আগে মুত্তাকী ব্যতীত।
তবে, তা আবৃত সবত্যাগ দিয়ে
, যাতে অলস-
অকর্মরা তা থেকে দূরে থাকে।
তার নাগাল পাবে অদম্য স্পৃহা
, যা মহান আল্লাহ মুখি, আল্লাহর
ইচ্ছায়।
জান্নাত ইমান ও
তাকওয়া হিসেবে বিভিন্ন
স্তরে বিভক্ত।
এরশাদ হচেছ: “দেখ
কিভাবে আমি তাদের
কতেককে কতেকের ওপর শ্রেষ্টত্ব
দিয়েছি। তবে মর্তবা ও ফযীলতের
দিক থেকে আখেরাত-ই
শ্রেষ্ট।”[ইসরা ২১]
সর্ব শেষ যে ব্যক্তি
জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার
ঘটনাটি নিম্নরূপ। রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
সর্ব শেষ
যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে
, সে একজন পুরুষ। কখনো সে হাটবে
, কখনো উপুড় হয়ে চলবে, কখনো আগুন
তাকে ঝলসে দিবে। যখন এ পথ
অতিক্রম করে সামনে চলে যাবে
, তখন সে তার দিকে ফিরে বলবে :
বরকতময়
সে আল্লাহ, যিনি আমাকে তোমার
থেকে মুক্তি দিয়েছে। আল্লাহ
আমাকে এমন জিনিস দান
করেছেন, যা আগে-পরের
কাউকে তিনি দান করেননি।
অতঃপর তার জন্য একটি বৃক্ষ উম্মুক্ত
করা হবে। সে বলবে, হে আল্লাহ! এ
বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাও, যাতে এর
ছায়াতলে আশ্রয় নিতে পারি, এর
পানি পান করতে পারি। আল্লাহ
বলবেন :
হে বনি আদম, আমি যদি তোমাকে এটা প্রদান
করি, তুমি নিশ্চয়
আরেকটি প্রার্থনা করবে।
সে বলবে : না, হে আমার রব। সে এর
জন্য ওয়াদাও করবে। আল্লাহ বার
বার তার অপরাগতা গ্রহণ করবেন।
কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে যার
উপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না।
অতঃপর আল্লাহ তার
কাছে নিয়ে যাবেন, সে তার
ছায়ায় আশ্রয় নিবে, তার
পানি পান করবে। অতঃপর আগের
চেয়ে উত্তম আরেকটি বৃক্ষ তার
জন্য উম্মুক্ত করা হবে। তখন
সে বলবে: হে আমার রব! এ বৃক্ষের
কাছে নিয়ে যাও, এর
ছায়াতলে আশ্রয় নিব, এর
পানি পান করব। এ ছাড়া আর কিছু
প্রার্থনা করব না। তখন আল্লাহ
তাকে মনে করিয়ে দিবেন :
হে বনি আদম, তুমি কি আমার
সাথে ওয়াদা করনি যে, আর কিছু
প্রার্থনা করবে না? এর
কাছে যেতে দিলে তুমি আরো অন্য
কিছু প্রার্থনা করবে। অতঃপর
সে প্রার্থনা না করার
ওয়াদা করবে। আল্লাহ তার
অপরাগতা কবুল করবেন, কারণ
সে এমন জিনিস দেখবে, যার ওপর
তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না।
অতঃপর তাকে সে গাছের
নিকটবর্তী করা হবে। সে তার
ছায়াতলে আশ্রয় নিবে, তার
পানি পান করবে। অতঃপর
জান্নাতের দরজার নিকট
আরেকটি বৃক্ষ উম্মুক্ত
করা করা হবে, যা আগের দু’বৃক্ষ
থেকেও উত্তম। সে বলবে :
হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের
নিকটবর্তী কর, আমি তার
ছায়াতলে আশ্রয় নিব, তার
পানি পান করব, আর কিছু
প্রার্থনা করব না। তিনি বলবেন :
হে বনি আদম, তুমি আর কিছু
প্রার্থনা না করার ওয়াদা করনি
? সে বলবে,হঁ্যা, তবে, এটাই
শেষ, আর কিছু চাইব না। আল্লাহ
তার অপরাগতা কবুল করবেন।
কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে, যার
ওপর ধৈর্যধারণ করা তার
পক্ষে সম্ভব হবে না। আল্লাহ তার
নিকটবর্তী করবেন। যখন তার
নিকটবর্তী হবে, তখন
সে জান্নাতবাসীদের আওয়াজ
শুনতে পাবে। সে বলবে : হে আমার
রব! আমাকে এতে প্রবেশ করাও।
আল্লাহ বলবেন :
হে বনি আদম, তোমার চাওয়া আর
শেষ হবে না।
তোমাকে দুনিয়া এবং এর
সাথে দুনিয়ার সমতুল্য আরো প্রদান
করব, এতে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে
? সে বলবে :
হে আল্লাহ, তুমি দুজাহানের
রব, তা সত্বেও তুমি আমার
সাথে উপহাস করছ!? রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ
গঠনা বলতে বলতে হেসে দিলেন।
সাহাবারা তাকে বলল :
হে আল্লাহর রাসূল! কেন
হাসছেন? তিনি বললেন : আল্লাহর
হাসি থেকে আমার
হাসি চলে এসেছে। যখন সে বলবে :
আপনি দু’জাহানের মালিক
হওয়া সত্বেও আমার সাথে উপহাস
করছেন? তখন আল্লাহ বলবেন :
আমি তোমার সাথে উপহাস
করছি না; তবে কি, আমি যা-চাই
তা-ই করতে পারি।
আরো প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ
তাকে বললেন :
এটা চাও, ওটা চাও। যখন তার সব
চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন
আল্লাহ বলবেন : এ সব
তোমাকে দেয়া হল এবং এর
সাথে আরো দশগুন। রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :
অতঃপর সে তার ঘরে প্রবেশ
করবে এবং সাথে সাথে তার
স্ত্রী হিসেবে দু’জন হুরও প্রবেশ
করবে। তারা তাকে বলবে : সমস্ত
প্রসংশা সে আল্লাহর, যিনি আপনাকে আমাদের
জন্য জিবীত করেছেন
এবং আমাদেরকে আপনার জন্য
জিবীত করেছেন। রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :
সে বলবে :
আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তার মত
কাউকে দেয়া হয়নি।”[মুসলিম]
হে মুসলিম ভাই! আল্লাহর
আনুগত্যের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ
বস্তু থেকে বিরত
থাক, হে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি!
আল্লাহর কালাম থেকে সুসংবাদ
নাও।
এরশাদ
হচ্ছে :“পক্ষান্তারে যে ব্যক্তি তার
রবের সামনে দণ্ডায়মান
হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল
খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত
রেখেছে, তার
ঠিকানা হবে জান্নাত।”[সূরা নাজিয়াত
৪০-৪১] নেশা ও মস্তিস্ক
বিকৃতকারী হারাম বস্তু
থেকে নিজকে হেফাজতকারী হে সৌভাগ্যবান
ব্যক্তি। তুমি আল্লাহর কালাম
থেকে সুসংবাদ নাও।এরশাদ হচ্ছে :
“সেখানে তারা গ্লাস
নিয়ে টানা-টানি করবে।
সেখানে কোন বাহুল্য এবং গোনাহ
নেই।” [সূরা তুর ২৩]
নিজ লজ্জাস্থান হেফাজতকারী
, বাজারের বিষিদ্ধ
বস্তু, টেলিভিশন ও কুরুচিপূর্ণ
ম্যাগাজিন
থেকে দৃষ্টি অবনতকারী
, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার জন্য
সুসংবাদ। সুভসংবাদ জান্নাতের :
সেখানে হুর তোমার জন্য
অপেক্ষা করছে। তারা সৎ
চরিত্রের অধিকারী, বাহ্যিক-
আভ্যন্তরিণ রূপে মণ্ডিত
সুন্দরী নারী
,তারা স্বামী ব্যতীত অন্য
কারো দিকে তাকায় না। তারা শুধু
স্বামীর অপেক্ষায়
তাবুতে অবস্থান করছে। আল্লাহ
তাআলা বিশেষভাবে তাদের
সৃষ্টি করেছেন। তারা সমবয়সী
, তাদের যৌবন নষ্ট হবে না
, তাদের
সৌন্দর্যে ভাটা পড়বে না।
তারা চিরকুমারী।
ইতোপূর্বে তাদের কেউ স্পর্শ
করেনি। তারা মাসিক ঋতু ও ঘৃণীত
বিষয় থেকে চির পবিত্র।
তারা প্রবাল ও পদ্মারাগ সাদৃশ্য
নারী, ঝিনুকের
অভ্যন্তরে বিদ্যমান মুক্তার মত
পরিস্কার। তারা আবৃত মুতির মত।
তাদের
মহব্বতে বাধা সৃষ্টিকারী নারীদের
সাথে বিদ্বেষ পোষণ কর;
তবে, তুমি অন্যদের
বিপরীতে তাদের নিয়ে ভাগ্যবান
ও নেয়ামত প্রাপ্ত হতে পারবে।
তাদের কেউ
যদি দুনিয়াতে উঁকি দিত, তবে মহাশুন্য
নূরে ভরে যেত, তাদের
ঘ্রাণে মৌ মৌ করত
সারা পৃথিবী।
“তাদের মাথার উড়না দুনিয়া ও
তার ভেতর বিদ্যমান সমস্ত জিনিস
থেকে উত্তম।” [বুখারী]
হে সুন্দরী নারীদের প্রত্যাশী
, যদি তোমার আগ্রহ থাকে
, তবে এটা হচ্ছে মহর আদায় করার
সময়, এবং এটা অগ্রিম প্রদান
করতে হয়।
গান বাদ্য থেকে বিরত
থাক, হে ভাগ্যবান! তোমার জন্য
সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন :জান্নাতবাসীদের স্ত্রীগণ
এত সুন্দর আওয়াজে গান পরিবেশন
করবে যা কেউ শুনেনি।
[তাবারানী] তাদের
গান :”আমরা সুন্দরী, কল্যাণ আর
কল্যাণ। সম্মানীত ব্যক্তিদের
স্ত্রী। তারা বড় বড় চোখ
দিয়ে আনন্দ ভরে তাকাবে।
আমরা চিরস্থায়ী, কখনো মৃতু্য বরণ
করব না।
আমরা নিরাপদ, কখনো ভীত হব না
, আমরা চিরস্থায়ী, ধ্বংস হব না।
আমরা কল্যাণ, আমরা সুন্দরী।” [জামে সাগির]
হে সুন্দরী হুরদের প্রস্তাবকারী ও
অন্বেষণকারী, তাদের মিলন
হবে স্থায়ী জান্নাতে।
যাদের প্রস্তাব করছ, যাদের
অন্বেষণ করছ, তাদের যদি জানতে
, তবে তোমার মালিকানাধীন সব
ব্যয় করে দেবে।
তুমি কি তাদের আওয়াজ শোননি
, তাতে রয়েছে হুরদের গান, আয়াজ
ও তরঙ্গ।
যদি তুমি তা শোনতে চাও, তবে এ
সমস্ত গান থেকে তোমার কান
পবিত্র কর।
উত্তমের ওপর অধমকে প্রাধান্য
দিও না, তবে এ-থেকে ও-
থেকে বঞ্চিত হবে। ছি! বঞ্চিত
হওয়ার অপমান।
কুরআনের মহব্বত আর এ দুনিয়ার
গানের মহব্বত এক
অন্তরে জমা হতে পারে না।
বাজারী নিষিদ্ধ পণ্য
থেকে নিজকে ও নিজ
পরিবারকে বিরত
রাখ, হে ভাগ্যবান ব্যক্তি
, তোমার জন্য সুসংবাদ। রাসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“জান্নাতের ভেতর একটি বাজার
আছে
, যেখানে জান্নাতিরা প্রতি জুমায়
উপস্থিত হয়। সেখানে
রয়েছে সুগন্ধির স্তুপ। উত্তরের
বাতাস তাদের কাপড় আর চেহারায়
পরশ দিয়ে বয়ে যাবে, যার
ফলে তাদের সৌন্দর্য ও শ্রীর
বৃদ্ধি ঘটবে। তাদের স্ত্রীগণ
বলবে : আল্লাহর শপথ! আমাদের
চোখের আড়ালে তোমাদের
সৌন্র্দয ও শ্রীর বৃদ্ধি
ঘটেছে।” [মুসলিম]
হে আল্লাহর বান্দাগণ!
জান্নাত অন্বেষণকারীগণ
অন্যদের থেকে আলাদা।
রাতে মানুষ যখন
ঘুমায়, তারা তখন নামাজ
পড়ে।
মানুষ যখন দিনে পানাহার
করে, তারা তখন
রোযা রাখে।
মানুষ যখন জমা করে
, তারা তখন সদকা করে।
মানুষ যখন ভীরুতা প্রদর্শন
করে, তারা আল্লাহর রাস্তায়
জেহাদ করে। তারা-ই
আল্লাহর প্রকৃত বান্দা!
তারা আল্লাহর হুকুম যথাযথ পালন
করছে, তার অঙ্গিকার
রক্ষা করছে। তারা আল্লাহর ওপর
ইমান রাখে, তার সাথে শিরক
করে না। তারা আল্লাহর ভয়ে ভীত।
আল্লাহর হুকুম মোতাবেক নামাজ
কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে
, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সদকা করে।
তারা সাধ্যমত এবাদত ও সৎ কর্ম
সম্পাদন করে।
তারা আল্লাহর ভয়ে কম্পিত
থাকে।
তারা কবীরা গুনাহ ও
অশ্লীলতা থেকে বিরত
থাকে।
আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর
কেঁপে উঠে।
কুরআনের তেলাওয়াত
শোনে তাদের ইমান বৃদ্ধি
পায়।
তারা নিজ রব, আল্লাহর ওপর
ভরসা করে, একান্তভাবে নামাজ
আদায় করে, বেহুদা
কথাবাতর্া থেকে বিরত থাকে
, যাকাত প্রদান করে।
তারা নিজদের লজ্জাস্থান
হেফাজত করে। তারা আমানত ও
ওয়াদা রক্ষা করে। আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ত্যাগ
করে ও জাগ্রত থাকে।
তারা আখেরাতের সফরের জন্য পণ্য
সংগ্রহ করে, আল্লাহর ভয়ে তাদের
অশ্রু ঝড়ে। তাদের
নির্জনতা উপদেশ স্বরূপ। অধিক
তাওবার ফলে, তাদের
গুনাহমিটে গেছে। পবিত্র
সে আল্লাহ যিনি তাদের মনোনিত
করেছেন। তারা-ই
সতি্বকারার্থে আল্লাহর বান্দা।
তাদের ভেতর রয়েছে ইনসাফ
প্রতিষ্ঠাকারী বাদশাহ, সংযমী যুবক, নিষ্ঠাবান
শহীদ, ধনাঢ্য দানবীর, ধৈর্যশীল
পরহেযগার, ছিন্নবস্ত্র পরিহিত
সাধক,যাদেরকে সাধারণ মানুষ
গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
তারা যা শপথ করে, আল্লাহ তা
পূরণ করেন। তাদের ভেতর
রয়েছে একমাত্র আল্লাহর জন্য
মহব্বতকারী, যে মহব্বত বংশগত
আত্মীয়তার জন্য নয়, পার্থিব কোন
স্বার্থের জন্যও নয়। তাদের ভেতর
আছে হাফেজে কুরআন। তারা সত্যের
পথে থেকেও ঝগড়া-বিবাদ
থেকে দূরে অবস্থান করে। তারা
হাসি-ঠাট্টার
ছলে মিথ্যা বলে না। তারা উত্তম
চরিত্রের অধিকারী, গোস্বা হজম
করে, মানুষদের ক্ষমা করে। এরশাদ
হচ্ছে :
“আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভাল
বাসেন।” [আলে ইমরান ১২৮]
তাদের ভেতর রয়েছে সে সব নারী
, যারা আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পন
করে, পরকালে বিশ্বাস রাখে
; নেক কাজ, আনুগত্য, তওবা ও এবাদত
করে;আল্লাহ যা হেফাজত
করতে বলেছেন, লোকচক্ষুর
অন্তরালেও তারা তা হেফাজত
করে; তাদের ভেতর
রয়েছে সে নারীও, যে অন্নহীনদের
অন্ন দেয়,সালামের প্রসার করে
, আত্মীযতার সম্পর্ক অটুট
রাখে এবং রাতে নামাজ পড়ে
, যখন মানুষ ঘুমায়; তাদের ভেতর
আরো আছে সে নারী, যে আল্লাহর
সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয়
করে, নিজকে কুপ্রবৃত্ত থেকে বিরত
রাখে। তারা সকলেই আল্লাহর
আনুগত্য ও তাকে অধিক
স্মরণকারী নারী। এরশাদ হচ্ছে :
“যে না দেখে দয়াময়
আল্লাহকে ভয় করেছে ও বিনীত
অন্তর নিয়ে উপস্থিত
হয়েছে।” [কাফ ৩৩] আরো
আছে সে চক্ষুধারী, যে আল্লাহর
ভয়ে ক্রন্দন করেছে, আল্লাহর
রাস্তায় পাহারারত নিন্দ্রহীন
রাত যাপন করেছে। তাদের ভেতর
আরো আছে যে, উত্তম
পদ্ধতিতে আল্লাহর দিকে আহবান
করেছে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ
কাজ থেকে নিষেধ করেছে, সব সময়
মানুষের জন্য কল্যাণ
কামনা করে এবং আল্লাহর জন্য
মানুষদের ভালোবাসে। তারাই
জান্নাতী
, ইমানদার, ধৈর্যশীল, সৎ কর্মশীল
ও সংযমী।
অতএব, যে ব্যক্তি এ বিশাল
জান্নাত কামনা করে, সে কি তার
বিনিময়ে জান, মাল, সহায়-
সম্পদ, কিংবা সামান্য
সময়কে বেশী মনে করতে পারে?
কখনও না। বরং কারো যদি হাজার
প্রাণ থাকে, আর সে হাজার যুগ
পায়, যার প্রতিটি যুগ দুনিয়ার
সমান, তা সব কিছু যদি সে এ
উদ্দেশ্যে ব্যয় করে দেয়, তাও কম
হবে। কম না হওয়ার কারণ কি
? যেখানে সমগ্র দুনিয়া-ই
সামান্য। আর আমরা এ সামান্য
থেকে সামান্যের মালিক।
আল্লাহর রাসূল বলেন:“যদি কোন
ব্যক্তি জন্ম থেকে বার্ধক্য
অবস্থায় মৃতু্য পর্যন্ত আল্লাহর
সেজদায় অতিবাহিত করে
, কিয়ামতের দিন তাও সে খুব
সামান্য জ্ঞান করবে।“[আহমাদ]
লক্ষ্য কর! কেউ প্রস্তুত আছ কি
? তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাহাবাদের ন্যায় সমস্বরে উত্তর
দাও : “ইনশা-আল্লাহ আমরা প্রস্তুত
আছি।” আল্লাহর সন্তুষ্টির
পথে আহ্বানকারী আমাদের
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“আমার প্রত্যেক উম্মত
জান্নাতে প্রবেশ করবে
, তবে যে অস্বীকার করেছে।
তারা বলল : কে অস্বীকার করবে
, হে আল্লাহর রাসূল? বললেন :
যে আমার অনুসরণ করবে
, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে
; যে আমার অবাধ্য হবে, সে-ই
অস্বীকার করল।”[বুখারী]
এ হলো জান্নাত। এ হলো তা অর্জন
করার পদ্ধতি। এ
জান্নাতকে যে স্বপ্নের মত
দুনিয়ার জীবনের
বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়, তার
ন্যায় ধোকায় পতিত আর কে
হতে পারে? আশ্চর্য! জান্নাতুল
ফেরদাউস বিক্রি করে, ঘৃনীত
দুনিয়ার বিনিময়ে!
যে দুনিয়া সামান্য হাসালে
, প্রচুর কাঁদায়। ক্ষণিকের
আনন্দের বিনিময়ে দীর্ঘকাল
দুঃখে ভোগায়। জান্নাতের
বাড়ি-ঘরের
বিনিময়ে সংকীর্ণ
ওক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ক্রয়
করার চেয়ে কঠিন
বোকামী আর কি হতে পারে?
শত আফসোস! যে দিন তুমি
আল্লাহর নেককার বান্দাদের
মর্যাদা প্রত্যক্ষ্য করবে
, চক্ষূশীতলকারী হাজার
হাজার নেয়ামত প্রত্যক্ষ
করবে, সে দিন তোমার
কি হবে? সে দিন তুমি বুঝতে
পারবে, কি হারিয়েছ, আর
কি কামিয়েছ।
তুমি সিরাতাল
মুস্তাকীমে বিচরণ কর, অর্থাৎ
সত্য, ইখলাস, কল্যাণ ও তাকওয়ার
পথে।
খবরদার! ধোকার বস্তু
দুনিয়া দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ো না
, এটা খুব সামান্য, যার নেই
স্থায়ীত্ব।
সে তোমাকে স্থায়ী জান্নাত
থেকে গাফেল করে দেবে, যার
নেয়ামত স্থায়ী
, পরিশুদ্ধ, কি চমৎকার! সে মিলন
স্থান।
সেখানে সর্বদা আল্লাহর
সন্তুষ্টি আর তার নৈকট্য বিদ্যমান
থাকবে, তবে তার দর্শন-ই সব
চেয়ে বেশী সম্মানের।
হায় আফসোস!
আমরা ক্ষণস্থায়ী জীবন
নিয়ে এতো ব্যস্ত, দুনিয়ার
প্রতি এতো ধাবিত, যা দৃষ্টে মনে হয়, আমরা এখানের-
ই স্থায়ী বাসিন্দা
, কখনো শোনেনি সে জান্নাতের
কথা, যা নেককার মুমিনদের জন্য
তৈরি করা হয়েছে।
কারণ, আমাদের আমল
সামান্য, চেষ্টায় ত্রুটি, দুনিয়ার
চাকচিক্য, প্রলাপ আর খেল
তামাশায় বিভোর হয়ে আছি।
ভুলে গেছি জান্নাত, হারিয়ে ফেলেছি তা অর্জনের
আগ্রহ।
হে জান্নাত বিক্রিকারী
, সামান্য বিনিময়ে
; তুমি হয়তো এখনো জান না
, তবে অচরইে জেনে যাবে।
যদি তুমি না জান তাও মুসিবত, আর
যদি জান, তবে তা বড় মুসিবত।
আল্লাহকে ভয় কর, সামনে অগ্রসর
হও, পরকালের প্রস্তুতি নাও, সৎ
কাজ কর, আশা রাখ জান্নাতের।
এরশাদ হচ্ছে :
“তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও
জান্নাতের দিকে ছুটে যাও। যার
সীমানা ও প্রসস্ততা আসমান-
জমিন। যা তৈরি করা
হয়েছে মুত্তাকিনদের জন্য।
যারা সুখে-দুঃখে সদকা করে
, এবং যারা গোস্বা হজম করে
, মানুষকে ক্ষমা করে; বস্তুত আল্লাহ
সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন।
তারা যখন মন্দ কাজ
করে অথবা নিজদের ওপর জুলুম করে
, তখন তারা আল্লাকে স্মরণ করে
, নিজ পাপের জন্য ক্ষমার
প্রার্থনা করে; আল্লাহ
ছাড়া কে তাদের পাপ ক্ষমা করবে
? তারা জেনে-শোনে নিজের কৃত
মন্দ কর্মে স্থীর থাকে না। তাদের
প্রতিদান, তাদের রবের পক্ষ
থেকে ক্ষমা ও জান্নাত; যার
তলদেশ দিয়েপ্রবাহিত হয়
নরহসমূহ, সেখানে তারা অনন্তকাল
থাকবে। কত চমৎকার! নেককার
লোকদের প্রতিদান।”
হে আল্লাহ! আমরা তোমার
সন্তুষ্টি আর জান্নাত চাই। তোমার
গোস্বা আর জাহান্নাম
থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ!
আমরা তোমার
কাছে জান্নাত, জান্নাতি আমল
এবং তার কথা ও কর্মের তওফিক
চাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমার
কাছে জাহান্নাম, জাহান্নামী আমল
এবং তার কথা ও
কর্মে থেকে পানাহ চাই।
হে আল্লাহ! চিরস্থায়ী ও
চক্ষুশীতলকারী নেয়ামত চাই।
হে আল্লাহ! তোমার চেহারায়
দৃষ্টি দেয়ার স্বাদ আস্বাদন
করতে চাই, তোমার সাক্ষাতের
প্রেরণা চাই। হে আল্লাহ!
তুমি কবুল কর। আমীন।
সমাপ্ত
লেখক : রাশেদ বিন আব্দুর রহমান
আয-যাহরানী
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

জান্নাতের পথে

লাভ-লোকসানের মাঝে একজন মুসলিমের একটি মূল্যবান দিন
প্রিয় ভাই!
• আল্লাহ্ তা‘আলার হক আদায়ে সচেষ্ট হোন। আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে হেফাযত করবেন।
আপনি কি ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করেছেন? ফজরের সালাতে আল্লাহ্ তা‘আলার যে সকল হক রয়েছে দিবসের
শুরুতে তা কি আপনি যথাযথ আদায় করেছেন?
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বলেছেন:
ْﻦَﻣ َﺮْﺠَﻔْﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ ٍﺔَﻋﺎَﻤَﺟ ْﻲِﻓ َﻮُﻬَﻓ ْﻲِﻓ ِﺔَّﻣِﺫ ِﻪﻠﻟﺍ
‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করল, আল্লাহ স্বয়ং ঐ ব্যক্তির হেফাযতকারী হয়ে যান।’’[1]
• আপনি কি পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আল্লাহর ধ্যানে ভয় ও বিনয় নম্রতা এবং একাগ্রচিত্তে (অর্থাৎ খুশু খুযুর সাথে) আদায় করেছেন?
মহান আল্লাহ্ বলেন:
﴿ ْﺍﻮُﻈِﻔَٰﺣ ِﺓٰﻮَﻠَّﺼﻟﭐَﻭ ِﺕَٰﻮَﻠَّﺼﻟﭐ ﻰَﻠَﻋ ْﺍﻮُﻣﻮُﻗَﻭ ٰﻰَﻄۡﺳُﻮۡﻟﭐ ِﻪَّﻠِﻟ َﻦﻴِﺘِﻨَٰﻗ ﴾٢٣٨ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ٢٣٨ ]
‘‘তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষকরে মধ্যবর্তী (‘আসরের) সালাতের এবং আল্লাহর সামনে (সালাতে)
তোমরা বিনম্রচিত্তে দাঁড়াও।’’[2]
• পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পূর্বে ও পরে যে সমস্ত সুন্নাত সালাত রয়েছে আপনি কি সেগুলো সঠিকভাবে আদায় করেন?
আপনি কি প্রতিদিন বার বার তাওবাহ্ করেন এবং বেশী বেশী ইসতেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন?
মহান আল্লাহ্ এ বিষয়ে বলেন:
﴿ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ ْﺍٓﻮُﺑﻮُﺗ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﭐ ٗﺔَﺑۡﻮَﺗ ﴾ﺎًﺣﻮُﺼَّﻧ ‏[:ﻢﻳﺮﺤﺘﻟﺍ ٨ ]
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্র কাছে তাওবাহ কর—খাঁটি ও বিশুদ্ধ (খালেস) তাওবাহ।’’[3]
• হে মুসলিম! আপনার শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গের প্রতিটি জোড়ার জন্য সাদকাহ দেয়া আবশ্যক। আর আপনার জন্য এটি খুব সহজেই সম্ভব। (কেননা)
চাশতের সময় দু’রাকাত সালাত আদায় করলে তা জোড়াগুলোর (সাদকাহ হিসেবে) গণ্য হয়ে যায়। যা মহান আল্লাহ্র
দিকে প্রত্যাবর্তনকারী সত্যবাদী লোকদের সালাত।
• যে দিনটিতে আপনি কুরআন থেকে কিছুই পাঠ করেন নি সে দিনটি আপনার জন্য একটি অন্ধকার দিন, যাতে কোন বরকত বা কল্যাণ নেই।
কারণ; সময়ের বরকত নেবেন তো কুরআন পড়েই নেবেন।
আল্লাহ্ বলেন:
﴿ ٌﺐَٰﺘِﻛ َﻚۡﻴَﻟِﺇ ُﻪَٰﻨۡﻟَﺰﻧَﺃ ْﺍٓﻭُﺮَّﺑَّﺪَﻴِّﻟ ٞﻙَﺮَٰﺒُﻣ َﺮَّﻛَﺬَﺘَﻴِﻟَﻭ ۦِﻪِﺘَٰﻳﺍَﺀ ِﺐَٰﺒۡﻟَﺄۡﻟﭐ ْﺍﻮُﻟْﻭُﺃ ٢٩ ﴾ ‏[ :ﺹ ٢٩ ]
‘‘এক কল্যাণময় কিতাব আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অধ্যয়ন ও অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন
ব্যক্তিরা এত্থেকে গ্রহণ করে উপদেশ।’’[4]
• কঠিন হৃদয় একটি মারাত্মক ও বিপদজনক বিষয়। আর এ কঠিন হৃদয়কে বিগলিত করার ঔষধ হলো: মহান আল্লাহ্র যিক্র ও তার স্মরণ।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﺎَﻟَﺃ ِﺮۡﻛِﺬِﺑ ِﻪَّﻠﻟﭐ ُﺏﻮُﻠُﻘۡﻟﭐ ُّﻦِﺌَﻤۡﻄَﺗ ٢٨ ﴾ ‏[ :ﺪﻋﺮﻟﺍ ٢٨ ]
‘‘জেনে রাখ, আল্লাহ্র স্মরণেই মনে প্রশান্তি আসে।’’[5]
অনুরূপভাবে কঠিন হৃদয় থেকে পরিত্রাণের আরও যে পথ আছে তা হলো, সালাতে পঠিত যিক্র আয্কার এবং সকাল-সন্ধায় আল্লাহর যিক্র
করা।
• হে মুসলিম! কী ভাবে আপনার ঈমানের নিরাপত্তা অর্জিত হতে পারে অথচ আপনি হারাম দৃশ্যের দিকে জেনেশুনেও তাকিয়ে থাকেন?
অথচ আল্লাহ্ বলেন:
﴿ ﻞُﻗ ْﺍﻮُّﻀُﻐَﻳ َﻦﻴِﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻠِّﻟ ْﺍﻮُﻈَﻔۡﺤَﻳَﻭ ۡﻢِﻫِﺮَٰﺼۡﺑَﺃ ۡﻦِﻣ ۚۡﻢُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ ﴾ ‏[ :ﺭﻮﻨﻟﺍ ٣٠ ]
‘‘মু’মিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।’’[6]
• সেটিই হবে আপনার জন্য বরকতময় দিন, যেদিন আপনি কোন অভাবীকে কিছু দান খয়রাত করতে পেরেছেন, অথবা সেবাদানের
মাধ্যমে কান মুসলিমের মন জয় করতে পেরেছেন কিংবা দু’জন বিবাদমান মানুষের মাঝে ঝগড়াঝাটি মীমাংসা করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আল্লাহ্ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿ ۞ ﺎَّﻟ َﺮۡﻴَﺧ ٖﺮﻴِﺜَﻛ ﻲِﻓ ۡﻢُﻬٰﻯَﻮۡﺠَّﻧ ﻦِّﻣ ﺎَّﻟِﺇ ۡﻦَﻣ َﺮَﻣَﺃ ٍﺔَﻗَﺪَﺼِﺑ ۡﻭَﺃ ٍﻑﻭُﺮۡﻌَﻣ ۡﻭَﺃ ِۢﺢَٰﻠۡﺻِﺇ ﴾ِﺱﺎَّﻨﻟﭐ َﻦۡﻴَﺑ ‏[ :ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ١١٤ ]
‘‘তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, তবে কল্যাণ আছে ঐ লোকের মধ্যে যে ব্যক্তি নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত,
সৎকাজের ও মানুষের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে দেয়ার কাজে।’’[7]
• আপনি কিন্তু আখিরাতের পথে পা বাড়িয়ে দিনে দিনে এগিয়ে চলছেন। সুতরাং সে পথের জন্য পাথেয় নিতে ভুলে যাবেন না।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
﴿ ْﺍﻭُﺩَّﻭَﺰَﺗَﻭ َّﻥِﺈَﻓ ِﺩﺍَّﺰﻟﭐ َﺮۡﻴَﺧ ٰۖﻯَﻮۡﻘَّﺘﻟﭐ ﴾ ‏[ :ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ ١٩٧ ]
‘‘এবং (পরকালের জন্য) তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর, আর তাক্ওয়া অর্জন করা হলো শ্রেষ্ঠ পাথেয়।’’[8]
• রাত জেগে সালাত আদায়, নফল সাওম পালন, রোগীদের সেবা-সুশ্রূষা, কবর যিয়ারত, জানাযার লাশের সাথে যাওয়া, যিক্র-আয্কারের
মজলিসে যাওয়া (অর্থাৎ কুরআন-হাদীস চর্চা ও আলোচনার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ), আল্লাহ্র ভয়ে কান্নাকাটি করা, মহান আল্লাহ্র
নিদর্শনসমূহে চিন্তা-গবেষণা করা, অন্তরে সহীহ আকীদা পোষণ করা, জিহবার হেফাযত করা এবং নেককার লোকদের
প্রতি ভালবাসা স্থাপন- এসবগুলোতে রয়েছে এমন নূর বা আলো যা আপনার ঈমানের নূরকে আরও বৃদ্ধি করে দেয়। আল্লাহ্ তাঁর নূরের
দিকে যাকে ইচ্ছা তাকে হেদায়েত করে থাকেন।
প্রশ্ন-১: আপনি কি আল্লাহ্র রহমত সম্পর্কে ধারণা রাখেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« َّﻥِﺇ ِﻪﻠﻟ ٍﺔَﻤْﺣَﺭ َﺔَﺋﺎِﻣ َﻝَﺰْﻧَﺃ ﺎَﻬْﻨِﻣ ًﺓَﺪِﺣﺍَﻭ ًﺔَﻤْﺣَﺭ َﻦْﻴَﺑ ِّﻦِﺠْﻟﺍ ِﺲْﻧِﻹﺍﺍَﻭ ِّﻡﺍَﻮَﻬْﻟﺍَﻭ ِﻢِﺋﺎَﻬَﺒْﻟﺍَﻭ ﺎَﻬِﺒَﻓ َﻥﻮُﻔَﻃﺎَﻌَﺘَﻳ ﺎَﻬِﺑَﻭ ﺎَﻬِﺑَﻭ َﻥﻮُﻤَﺣﺍَﺮَﺘَﻳ ُﻒِﻄْﻌَﺗ ُﺶْﺣَﻮْﻟﺍ ﻰٰﻠَﻋ
َﺮَّﺧَﺃَﻭ ﺎَﻫِﺪَﻟَﻭ ﻪﻠﻟﺍ ﺎًﻌْﺴِﺗ ًﺔَﻤْﺣَﺭ َﻦﻴِﻌْﺴِﺗَﻭ ُﻢَﺣْﺮَﻳ ﺎَﻬِﺑ ُﻩَﺩﺎَﺒِﻋ ِﺔَﻣﺎَﻴِﻘْﻟﺍ َﻡْﻮَﻳ »
‘আল্লাহ্ তা‘আলার একশ’টি রহমত রয়েছে যা থেকে একটি মাত্র রহমত তিনি জ্বিন, মানব, জন্তু-জানোয়ারদের উপর নাযিল করে (ভাগ
করে দিয়েছেন)। আর এর ফলেই তারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে, দয়াদ্র হয়। আর এর ফলে হিংস্র প্রাণীও তার সন্তান-
সন্তুতির প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে। অথচ বাকী নিরানববইটি রহমত আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিনের জন্য রেখে দিয়েছেন যার
দ্বারা তিনি তাঁর বান্দাদের উপর সেদিন দয়া করবেন।’[9]
প্রশ্ন-২: একজন মা কি তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে?
উত্তর: উমর ইবন্ খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কয়েকজন
বন্দী আসল। তাদের মধ্য থেকে এক মহিলা ব্যস্ত হয়ে কী যেন খুঁজছিল। অবশেষে সে একটি শিশু সন্তান পেয়ে তাকে নিজের
বুকে জড়িয়ে নিয়ে দুধ পান করাল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘তোমরা কি মনে কর যে, এ মহিলা তার
সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে?’ আমরা বললাম: ‘আল্লাহ্র শপথ! কক্ষনো নয়।’ তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন: ‘এ মহিলা তার সন্তানের উপর যেমন স্নেহময়ী, অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর এর চেয়েও অনেক অনেক
বেশী দয়ালু।’[10]
প্রশ্ন-৩: আপনি কি দান খয়রাত, সাদকাহ, ক্ষমা এবং বিনয়ী হওয়ার ফযীলত জানেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺎَﻣ ْﺖَﺼَﻘَﻧ ٌﺔَﻗَﺪَﺻ ْﻦِﻣ ٍﻝﺎَﻣ ﺎَﻣَﻭ َﺩﺍَﺯ ُﻪﻠﻟﺍ ٍﻮْﻔَﻌِﺑ ﺍًﺪْﺒَﻋ َّﻻِﺇ ﺍًّﺰِﻋ َﻊَﺿﺍَﻮَﺗ ﺎَﻣَﻭ ٌﺪَﺣَﺃ ِﻪﻠﻟ َّﻻِﺇ ُﻪَﻌَﻓَﺭ ُﻪﻠﻟﺍ »
দান খয়রাত কখনও সম্পদের কোন ঘাটতি করে না, আর ক্ষমার কারণে আল্লাহ্ কেবল সম্মান বৃদ্ধিই করেন এবং যে কেউ আল্লাহ্র জন্য
বিনয়ী হয় অবশ্যই আল্লাহ্ তাকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেন।’[11]
প্রশ্ন-৪: নিম্নোক্ত সূরাটির ফযীলত সম্পর্কে কী জানেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন: ‘তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক
তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে?’ তারা এটাকে কঠিন মনে করল এবং বলল: ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের মধ্যে কেইবা সেটা করতে সক্ষম হবে?’
তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :
﴿ ۡﻞُﻗ َﻮُﻫ ُﻪَّﻠﻟﭐ ٌﺪَﺣَﺃ ١ ُﺪَﻤَّﺼﻟﭐ ُﻪَّﻠﻟﭐ ٢ ۡﻢَﻟ ۡﺪِﻠَﻳ ۡﻢَﻟَﻭ ۡﺪَﻟﻮُﻳ ٣ ۡﻢَﻟَﻭ ﻦُﻜَﻳ ۥُﻪَّﻟ ﺍًﻮُﻔُﻛ ُۢﺪَﺣَﺃ ٤ ﴾ ‏[ :ﺹﻼﺧﻻﺍ ،١ ٤ ]
এ সূরাটি (একবার পড়লে) পুরা কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ (তিলাওয়াত করার সাওয়াব পাওয়া যায়)।’’[12]
প্রশ্ন-৫: আপনি কি সাওমপালনকারী, রাত জেগে দাঁড়িয়ে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায়কারী এবং আল্লাহ্র পথে জিহাদকারীর সওয়াব
পেতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ْﻲِﻋﺎَّﺴﻟَﺍ ِﺔَﻠَﻣْﺭَﻷﺍ ﻰَﻠَﻋ َﻦْﻴِﻜْﺴِﻤْﻟﺍَﻭ ِﺪِﻫﺎَﺠُﻤْﻟﺎَﻛ ْﻲِﻓ ِﻞْﻴِﺒَﺳ ِﻪﻠﻟﺍ ….»
যে ব্যক্তি কোনো বিধবা এবং মিসকীনের প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করে সে যেন আল্লাহ্র পথের মুজাহিদ।
বর্ণনাকারী বলেন: আমার মনে হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও বলেছেন যে, ‘(ঐ দরদী ব্যক্তির) উদাহরণ হলো তার
মত যে ব্যক্তি কোন ক্লান্তি অনুভব না করে রাত জেগে দাঁড়িয়ে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করে এবং কোন বিরতি না দিয়ে (দিনের
বেলায়) সাওম পালন করে।’’[13]
প্রশ্ন-৬: আপনি কি জানেন জান্নাতের সবচেয়ে ছোট্ট মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি কে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘জাহান্নাম থেকে যে লোকটি সবশেষে বের হবে এবং সবার
শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে সে লোকটি সম্পর্কে আমি জানি।’’ ঐ লোকটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বের
হয়ে আসবে। মহান আল্লাহ্ তখন তাকে বলবেন: (হে বান্দা) যাও, তুমি এখন জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ
করতে গিয়ে মনে করবে যে, লোকজন ঢুকার পর জান্নাতের সব জায়গা ভরে গেছে। আর বোধ হয়, কোন খালি যায়গা নেই।
সে ফিরে গিয়ে বলবে, হে (আমার) রব! আমি তো দেখছি জান্নাত ভরে গেছে। তখন মহান আল্লাহ্ পুনরায় তাকে বলবেন: (হে বান্দা) যাও,
জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করতে গিয়ে আবারো সে মনে করবে যে, (বেশেতী লোকদের দ্বারা) সেটা ভরে গেছে।
সে ফিরে গিয়ে বলবে, হে (আমার) রব! আমি তো দেখলাম জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তখন মহান আল্লাহ্ (তৃতীয়বার) আবারো বলবেন:
যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমার জন্য রয়েছে দুনিয়ার আয়তনের সমপরিমাণ জান্নাত এবং দশ দুনিয়ার সমান বিশালাকার জান্নাত।
লোকটি তখন বলবে: হে (আমার) রব! তুমি সবকিছুর মালিক হওয়া সত্বেও কি আমার সাথে ঠাট্টা করছো? (অর্থাৎ আমার মত সাধারণ
মানুষের জন্য কি এতবড় জান্নাত! এটা কি সম্ভব!?) বর্ণনাকারী বললেন: শপথ করে বলছি, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (এ বিবরণ দেয়ার সময়) এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তার মাড়ীর দাঁতগুলোও প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল।
তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ রকম জান্নাত হলো সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতীর মর্যাদা।’’[14]
প্রশ্ন-৭: আপনি কি জানেন যে, মুমিনের জন্য জান্নাতে একটি মুক্তার তাঁবু থাকবে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« َّﻥِﺇ ِﻦِﻣْﺆُﻤْﻠِﻟ ِﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﻲِﻓ ًﺔَﻤْﻴَﺨَﻟ ْﻦِﻣ ٍﺓَﺪِﺣﺍَﻭ ٍﺓَﺆُﻟْﺆُﻟ ٍﺔَﻓَّﻮَﺠُﻣ َﻥﻮُّﺘِﺳ ﺎَﻬُﻟﻮُﻃ ًﻼﻴِﻣ ِﻦِﻣْﺆُﻤْﻠِﻟ َﻥﻮُﻠْﻫَﺃ ﺎَﻬﻴِﻓ ُﻑﻮُﻄَﻳ ُﻦِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ ْﻢِﻬْﻴَﻠَﻋ َﻼَﻓ ﻯَﺮَﻳ ْﻢُﻬُﻀْﻌَﺑ ﺎًﻀْﻌَﺑ »
‘মুমিনের জন্য জান্নাতে এমন একটি মুক্তার তাঁবু রয়েছে যার ভিতরের ফাঁকা অংশটির উচ্চতা হবে আকাশ পর্যন্ত ষাট মাইল।
সেখানে প্রত্যেক মুমিনের জন্য এমন কয়েকজন স্ত্রী থাকবে যাদের মাঝে সে মেলামেশা করবে অথচ তাদের একজন
স্ত্রী অপরজনকে দেখতে পাবে না।’’[15]
প্রশ্ন-৮: আপনি কি জানেন যে, জান্নাতে বাজার রয়েছে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘জান্নাতে রয়েছে একটি বাজার যাতে প্রতি জুমার দিন মুমিনগণ
আসবেন। তাদের উপর সেদিন উত্তরা বায়ূ প্রবাহিত হতে থাকবে। আর এ মৃদুমন্দ বায়ূ তাদের চেহারা ও পোষাকের উপর দিয়ে বয়ে যাবে।
ফলে তাদের সৌন্দর্য ও লাবণ্যতা বেড়ে যাবে। তারপর তারা তাদের পরিবারের কাছে সৌন্দর্য এবং লাবণ্যতা নিয়ে ফিরে যাবে।
স্বামীদেরকে দেখে স্ত্রীরা বলতে থাকবে, আল্লাহ্র কসম! তোমাদের সৌন্দর্য ও লাবণ্যতা বহুগুণ বেড়ে গেছে। অতঃপর স্বামীরাও
বলবে যে, আল্লাহ্র শপথ! আমাদের যাওয়ার পরে তোমাদের সৌন্দর্য ও লাবণ্যতাও বহু বৃদ্ধি পেয়েছে।’[16]
প্রশ্ন-৯: আপনি কি জান্নাতের গাছগাছালি সম্পর্কে কিছু পড়েছেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« َّﻥِﺇ ﻲِﻓ ِﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ُﺮﻴِﺴَﻳ ًﺓَﺮَﺠَﺸَﻟ ُﺐِﻛﺍَّﺮﻟﺍ ﻲِﻓ ﺎَﻬِّﻠِﻇ َﺔَﺋﺎِﻣ ٍﻡﺎَﻋ ﺎَﻬُﻌَﻄْﻘَﻳ ﺎَﻟ »
জান্নাতে এমন গাছও রয়েছে যার নীচ দিয়ে অত্যন্ত পারদর্শী একজন ঘোড়সওয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দ্রুতগামী ঘোড়া নিয়ে একশত বছর
দৌড়েও সেটা অতিক্রম করতে পারবে না।’[17]
প্রশ্ন-১০: আপনি কি জানেন যে, জান্নাতে কেউ অবিবাহিত থাকবে না?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« َّﻥِﺇ َﻝَّﻭَﺃ ُﻞُﺧْﺪَﺗ ٍﺓَﺮْﻣُﺯ َﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِﺮَﻤَﻘْﻟﺍ ِﺓَﺭﻮُﺻ َﺔَﻠْﻴَﻟ ﻲِﺘَّﻟﺍَﻭ ِﺭْﺪَﺒْﻟﺍ ﺎَﻬﻴِﻠَﺗ ﻰَﻠَﻋ ِﺇَﻮْﺿَﺃ ٍﺐَﻛْﻮَﻛ ٍّﻱِّﺭُﺩ ِﺀﺎَﻤَّﺴﻟﺍ ﻲِﻓ ِّﻞُﻜِﻟ ٍﺉِﺮْﻣﺍ ِﻥﺎَﺘَﺟْﻭَﺯ ْﻢُﻬْﻨِﻣ ِﻥﺎَﺘَﻨْﺛﺍ ﻯَﺮُﻳ ُّﺦُﻣ
ﺎَﻤِﻬِﻗﻮُﺳ ِﺀﺍَﺭَﻭ ْﻦِﻣ ِﻢْﺤَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣَﻭ ﻲِﻓ ِﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ُﺏَﺰْﻋَﺃ »
‘প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট হবে। আর যারা তাদের
পরে জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা উর্ধাকাশের সমুজ্জ্বল নক্ষত্রের চেয়েও বেশী আলোকিত হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে এমন
দুজন স্ত্রী, যাদের শরীরের মাংস ভেদ করে তার অভ্যন্তরীণ অস্থি-মজ্জাও দেখা যাবে। আর জান্নাতে কেউই অবিবাহিত
থাকবে না।’[18]
প্রশ্ন-১১: আপনি কি জান্নাতের নারীদের সম্পর্কে কিছু জানেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ٌﺓَﻭْﺪَﻏ ِﻞﻴِﺒَﺳ ﻲِﻓ ِﻪﻠﻟﺍ ْﻭَﺃ ٌﺔَﺣْﻭَﺭ ٌﺮْﻴَﺧ ْﻦِﻣ ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ ….»
‘আল্লাহ্র পথে একটি সকাল বা একটি সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তার সবকিছু থেকেও উত্তম। যদি জান্নাতের কোন
নারী দুনিয়ার দিকে তাকাত তাহলে (তাদের সৌন্দর্যে) আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানগুলো আলোকিত হয়ে পড়ত
এবং সুগন্ধে ভরে যেত। আর তার মাথার ওড়নাটি দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম।’[19]
প্রশ্ন-১২: জান্নাতে কি মানুষের পেশাব পায়খানার প্রয়োজন হবে ?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘জান্নাতবাসীগণ সেখানে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করবেন। কিন্তু
তারা কোন পায়খানা করবে না, তাদের সর্দি কাশি হবে না অনুরূপভাবে পেশাবও করবে না। বরং তাদের খাবারের পরে ঢেকুর
আসবে যা থেকে মিশ্কের সুগন্ধ বের হবে। আল্লাহ তা‘আলার ইলহামে শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে তারা মা‘বূদের তাসবীহ
করবে এবং তাকবীর বলবে।’[20]
প্রশ্ন-১৩: আল্লাহ্ জান্নাতে তাঁর নেক বান্দাদের জন্য যা তৈরী করে রেখেছেন সে ব্যাপারে কি আপনি চিন্তা করেছেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘আল্লাহ্ বলেন,
« ﻱِﺩﺎَﺒِﻌِﻟ ُﺕْﺩَﺪْﻋَﺃ َﻦﻴِﺤِﻟﺎَّﺼﻟﺍ ﺎَﻣ َﻻ ٌﻦْﻴَﻋ ْﺕَﺃَﺭ َﻻَﻭ ْﺖَﻌِﻤَﺳ ٌﻥُﺫُﺃ َﻻَﻭ َﺮَﻄَﺧ ﻰَﻠَﻋ ِﺐْﻠَﻗ ٍﺮَﺸَﺑ …….»
‘‘আমি আমার সৎ বান্দাদের জন্য এমন কিছু তৈরী করে রেখেছি যা কোন চক্ষু কোন দিন দেখেনি, কোন কান কোন দিন শুনেনি,
এমনকি কোন মানুষের মনে তা কল্পনায়ও আসেনি। তোমরা এ আয়াতটি পড়ে দেখ যেখানে আল্লাহ বলেছেন :
﴿ ﺎَﻠَﻓ ُﻢَﻠۡﻌَﺗ ٞﺲۡﻔَﻧ ﺂَّﻣ َﻲِﻔۡﺧُﺃ ﻢُﻬَﻟ ﻦِّﻣ ِﺓَّﺮُﻗ ٖﻦُﻴۡﻋَﺃ َۢﺀﺁَﺰَﺟ ﺎَﻤِﺑ َﻥﻮُﻠَﻤۡﻌَﻳ ْﺍﻮُﻧﺎَﻛ ١٧ ﴾ ‏[ :ﺓﺪﺠﺴﻟﺍ ١٧ ]
‘‘কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী (নিয়ামত) লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!’’[21]
প্রশ্ন-১৪: আপনি কি এমন একটি পথ চান যা আপনাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﻱِﺬَّﻟﺍَﻭ ﻲِﺴْﻔَﻧ ِﻩِﺪَﻴِﺑ . َﻥﻮُﻠُﺧْﺪَﺗ ﺎَﻟ َﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﺍﻮُﻨِﻣْﺆُﺗ ﻰَّﺘَﺣ ﺎَﻟَﻭ ﺍﻮُﻨِﻣْﺆُﺗ ﺍﻮُّﺑﺎَﺤَﺗ ﻰَّﺘَﺣ ْﻢُﻜُّﻟُﺩَﺃ ﺎَﻟَﻭَﺃ ﻰَﻠَﻋ ٍﺀْﻲَﺷ ﺍَﺫِﺇ ﺍﻮُﺸْﻓَﺃ ْﻢُﺘْﺒَﺑﺎَﺤَﺗ ُﻩﻮُﻤُﺘْﻠَﻌَﻓ َﻡﺎَﻠَّﺴﻟﺍ
ْﻢُﻜَﻨْﻴَﺑ»
‘যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, তোমরা ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ ঈমানদার না হবে। আর যতক্ষণ
তোমরা পরস্পরকে ভাল না বাসবে ততক্ষণ তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি বিষয় বলে দেব
না যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে? তোমাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালবাসার সৃষ্টি হবে। আর সে কাজটি হল,
তোমরা পরস্পর একজন আরেকজনকে বেশী বেশী সালাম দাও।’[22]
প্রশ্ন-১৫ : আপনি কি জানেন আল্লাহ্ শহীদদের জন্য কি সম্মানী রেখেছেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাতে প্রবেশ করার পর দুনিয়ায় যা আছে সে সব সম্পদের মালিক
করে দিলেও কেউই দুনিয়াতে আর ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে না। তবে, একমাত্র আল্লাহ্র পথে যারা শহীদ হয়েছে তারা ব্যতীত।
তারা দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে এ আকাঙ্ক্ষায় যে, সেখানে ফিরে গিয়ে দশবার শহীদ হবে এবং ১০ বার ফিরে আসবে। শহীদ হওয়ার
কারণে তাদের যে সম্মানী দেয়া হবে সে মহা পুরস্কার দেখেই তারা এ আকাঙ্খা করতে থাকবে।’[23]
প্রশ্ন-১৬: আপনি কি ইয়াতিমের লালন-পালন করার ফযীলত সম্পর্কে জানেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺎَﻧَﺃ ِﻢﻴِﺘَﻴْﻟﺍ ُﻞِﻓﺎَﻛَﻭ ﻲِﻓ ِﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﺍَﺬَﻜَﻫ …..»
‘আমি এবং ইয়াতিমের লালন-পালনকারী জান্নাতে এত কাছাকাছি থাকব। এ বলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দু’টি দিয়ে ইঙ্গিত করে এবং এ দুয়ের মাঝে ফাঁক করে দেখালেন’[24]।
প্রশ্ন-১৭: আপনি কি চান যে, আল্লাহ্ আপনার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করুক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ْﻦَﻣ ﺍَﺪَﻏ ﻰَﻟِﺇ َﺡﺍَﺭَﻭ ِﺪِﺠْﺴَﻤْﻟﺍ َّﺪَﻋَﺃ ُﻪﻠﻟﺍ ُﻪَﻟ ُﻪَﻟُﺰُﻧ ْﻦِﻣ ِﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﺎَﻤَّﻠُﻛ ﺍَﺪَﻏ ْﻭَﺃ َﺡﺍَﺭ »
‘যে কেউ সকালে অথবা বিকালে মসজিদে গমন করে, এবং যতদিন যতবার সকাল বিকাল সে মসজিদে গমন করে ততবারই আল্লাহ্ তার জন্য
জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন।’[25]
প্রশ্ন-১৮: আপনি কি নিম্নোক্ত হাদীসের উপর আমল করেছেন?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ ﺎًﻘِﻔْﻨُﻣ ِﻂْﻋَﺃ ﺎًﻔَﻠَﺧ ُﺮَﺧﻵﺍ ُﻝﻮُﻘَﻳَﻭ َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ ِﻂْﻋَﺃ ﺎًﻔَﻠَﺗ ﺎًﻜِﺴْﻤُﻣ »
‘আল্লাহ্র বান্দারা প্রতিদিন প্রভাতে উপনীত হলেই দু’জন ফেরেশ্তা নাযিল হয়ে দো‘আ করতে থাকে। তাদের একজন বলতে থাকে:
হে আল্লাহ! দানকারীকে এর বিনিময় প্রদান কর। অপর জন বলতে থাকে: হে আল্লাহ্! কৃপণকে বিনষ্ট করে দাও।’[26]
প্রশ্ন-১৯: আপনি কি চান যে আল্লাহ্ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ْﻦَﻣ ﻰَّﻠَﺻ َّﻲَﻠَﻋ ًﺓَﻼَﺻ ﻰَّﻠَﺻ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ﺎَﻬِﺑ ﺍًﺮْﺸَﻋ »
‘যে কেউ আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে তার বিনিময়ে আল্লাহ্ তার উপর দশবার দুরূদ পাঠ করবেন।’[27]
প্রশ্ন-২০: আপনি কি আপনার প্রভুর নৈকট্য লাভ করতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺏﺮﻗﺃ ﺎﻣ ﺪﺒﻌﻟﺍ ﻥﻮﻜﻳ ﻦﻣ ﻪﺑﺭ ﺪﺟﺎﺳ ﻮﻫﻭ ﺀﺎﻋﺪﻟﺍ ﺍﻭﺮﺜﻛﺄﻓ »
‘বান্দা যখন আল্লাহকে সিজদা করে ঐ সময় সে তার রবের সবচেয়ে নিকটে পৌঁছে যায়। সুতরাং সে অবস্থায়
তোমরা বেশী বেশী করে দো‘আ কর। (কারণ এটি দু‘আ কবূলের উত্তম সময়)
প্রশ্ন-২১: আপনি কি নিম্নোক্ত অসীয়ত শুনেছেন?
উত্তর: আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« ﻲِﻧﺎَﺻْﻭَﺃ ﻲِﻠﻴِﻠَﺧ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻢﻠﺳﻭ ﻪﻴﻠﻋ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ ِﻡﺎَﻴِﺻ ِﺔَﺛَﻼَﺛ ٍﻡﺎَّﻳَﺃ ْﻦِﻣ ِّﻞُﻛ ْﻲَﺘَﻌْﻛَﺭَﻭ ٍﺮْﻬَﺷ ﻰَﺤُّﻀﻟﺍ ْﻥَﺃَﻭ َﺮِﺗﻭُﺃ َﻞْﺒَﻗ ْﻥَﺃ َﺪُﻗْﺭَﺃ »
আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অসীয়ত করেছেন, যেন আমি প্রতি মাসে তিনদিন সাওম পালন
করি, চাশতের সময়ে দু’ রাকাত সালাত আদায় করি এবং ঘুমানোর পূর্বেই বিতরের সালাত পড়ে নেই’।’[28]
প্রশ্ন-২২: আপনি কি এটা চান যে, মৃত্যুর পরও আপনার নেক আমলের ধারা জারী থাকুক?
উত্তর: মসজিদ নির্মাণ, পানির কূপ খনন, সন্তান-সন্তুতিদেরকে সৎ শিক্ষা প্রদান এবং দ্বীনি ইলমের প্রচার করা যেমন, দ্বীনি বই
ছাপা, প্রচার-প্রসার করা, ক্যাসেট কপি ও বিলি করা এবং এ সমস্ত কাজে আর্থিক সহায়তা প্রদান। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺍَﺫِﺇ ُﻥﺎَﺴْﻧِﺈْﻟﺍ َﺕﺎَﻣ َﻊَﻄَﻘْﻧﺍ ُﻪْﻨَﻋ ُﻪُﻠَﻤَﻋ ﺎَّﻟِﺇ ٍﺔَﺛﺎَﻠَﺛ ْﻦِﻣ ﺎَّﻟِﺇ ٍﺔَﻗَﺪَﺻ ْﻦِﻣ ٍﺔَﻳِﺭﺎَﺟ ْﻭَﺃ ٍﻢْﻠِﻋ ُﻊَﻔَﺘْﻨُﻳ ِﻪِﺑ ْﻭَﺃ ٍﺪَﻟَﻭ ٍﺢِﻟﺎَﺻ ﻮُﻋْﺪَﻳ ُﻪَﻟ »
‘মানুষ যখন মরে যায় তখন তার কাজের ধারাও বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি বিষয় ব্যতীত। (ক) সাদাকায়ে জারিয়াহ বা চলমান দান, (খ)
এমন জ্ঞান যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। (গ) আর এমন নেক সন্তান-সন্তুতি যারা তার জন্য দো‘আ করে।’[29]
প্রশ্ন-২৩: আপনি কি চান আপনার দো‘আ কবুল হোক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺎَﻣ ْﻦِﻣ ٍﺪْﺒَﻋ ٍﻢِﻠْﺴُﻣ ﻮُﻋْﺪَﻳ ِﺮْﻬَﻈِﺑ ِﻪﻴِﺧَﺄِﻟ ِﺐْﻴَﻐْﻟﺍ ﺎَّﻟِﺇ َﻝﺎَﻗ ُﻚَﻠَﻤْﻟﺍ ٍﻞْﺜِﻤِﺑ َﻚَﻟَﻭ »
‘যখন কোন মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দো‘আ করে তখনই ফেরেশতা বলে যে, ‘তোমার জন্যও অনুরূপ হউক’[30]।
(অর্থাৎ তুমি তোমার মুসলিম ভাই বন্ধুর জন্য যেসব ভাল জিনিষ পাওয়ার জন্য দো‘আ করছ সে সব নেয়ামত তুমিও পেয়ে যাবে।)
প্রশ্ন-২৪: আপনি কি চান যে, আপনার গোনাহ বেশী হলেও তা ক্ষমা হয়ে যাক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘যে ব্যক্তি একদিনে َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ ﻩِﺪْﻤَﺤِﺑَﻭ ِﻪﻠﻟﺍ ১০০ বার বলবে, তার গুনাহ্ সাগরের ফেনা পরিমাণ হলেও তা মাফ করে দেওয়া হবে[31]।
প্রশ্ন-২৫: আপনি কি জান্নাতে একটি ঘর চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺎَﻣ ْﻦِﻣ ٍﺪْﺒَﻋ ٍﻢِﻠْﺴُﻣ ﻲِّﻠَﺼُﻳ ِﻪَّﻠِﻟ َّﻞُﻛ ٍﻡْﻮَﻳ ْﻲَﺘْﻨِﺛ َﺓَﺮْﺸَﻋ ﺎًﻋُّﻮَﻄَﺗ ًﺔَﻌْﻛَﺭ َﺮْﻴَﻏ ٍﺔَﻀﻳِﺮَﻓ َّﻻِﺇ ﻰَﻨَﺑ ُﻪﻠﻟﺍ ُﻪَﻟ ﺎًﺘْﻴَﺑ ﻲِﻓ ِﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ْﻭَﺃ َّﻻِﺇ ﻲَﻨَﺑ ُﻪَﻟ ﺎًﺘْﻴَﺑ ﻲِﻓ ِﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ »
‘যে কোন মুসলিম বান্দাহ্ আল্লাহ্কে খুশী করার জন্য প্রতিদিন ফরয ব্যতীত আরো ১২ রাক‘আত (সুন্নাত ও নফল) সালাত আদায় করে, আল্লাহ্
তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দেন’।’[32]
প্রশ্ন-২৬: আপনি কি আপনার উপর প্রশান্তি আসুক ও আল্লাহর রহমত দ্বারা আবৃত হতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺎَﻟ ُﺪُﻌْﻘَﻳ َﻥﻭُﺮُﻛْﺬَﻳ ٌﻡْﻮَﻗ َﻪﻠﻟﺍ َّﺰَﻋ َّﻞَﺟَﻭ ﺎَّﻟِﺇ ُﻢُﻬْﺘَّﻔَﺣ ،ُﺔَﻤْﺣَّﺮﻟﺍ ُﻢُﻬْﺘَﻴِﺸَﻏَﻭ ،ُﺔَﻜِﺋﺎَﻠَﻤْﻟﺍ ْﺖَﻟَﺰَﻧَﻭ ُﻢُﻫَﺮَﻛَﺫَﻭ ،ُﺔَﻨﻴِﻜَّﺴﻟﺍ ِﻢِﻬْﻴَﻠَﻋ ُﻪﻠﻟﺍ ْﻦَﻤﻴِﻓ ُﻩَﺪْﻨِﻋ »
যারা আল্লাহ্র যিক্র করতে বসে (অর্থাৎ কুরআন হাদীসের আলোচনা করে, তা শিখে ও শিখায়। তাসবীহ-তাহলীল, দো‘আ দুরূদ ও ইসতেগফার
করে। আর এগুলো করে নবীজীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরীকায়) ফেরেশতারা তাদের চারপাশে এসে জড় হয়, আল্লাহর রহমত
দ্বারা তাদের ঢেকে রাখে, তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল হয় এবং আল্লাহ্ (এতে খুশী হয়ে) তাঁর নিকটস্থ (ফেরেশতাদের) কাছে ঐ সব
যিক্রকারী বান্দাদের সম্পর্কে (প্রশংসামূলক) আলোচনা করেন।’[33]
প্রশ্ন-২৭: এই হাদীসটি লক্ষ্য করেছেন কী?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺎَﻣ َﻢِﻠْﺴُﻤْﻟﺍ ُﺐﻴِﺼُﻳ ْﻦِﻣ ٍﺐَﺼَﻧ َﻻَﻭ ٍﺐَﺻَﻭ ﺎَﻟَﻭ ٍّﻢَﻫ َﻻَﻭ ٍﻥْﺰُﺣ َﻻَﻭ ﻯًﺫَﺃ َﻻَﻭ ٍّﻢَﻏ ِﺔَﻛْﻮَّﺸﻟﺍ ﻰّٰﺘَﺣ ﺎَﻬُﻛﺎَﺸُﻳ َّﻻِﺇ َﺮَّﻔَﻛ ُﻪﻠﻟﺍ ﺎَﻬِﺑ ُﻩﺎَﻳﺎَﻄَﺧ ْﻦِﻣ »
‘কোন মুসলিম ব্যক্তির দুঃখ, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, কষ্ট কিংবা পেরেশানী এমনকি একটি ছোট কাঁটা বিধলেও এ কষ্টের
বিনিময়ে আল্লাহ্ তার গোনাহ মাফ করে দেন (যদি সে ধৈর্য ধারণ করে)[34]।
প্রশ্ন-২৮: আপনি কি পূর্ণ এক রাত্রি সালাত আদায় করার সওয়াব পেতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ْﻦَﻣ ﻰَّﻠَﺻ َﺀﺎَﺸِﻌْﻟﺍ ٍﺔَﻋﺎَﻤَﺟ ﻲِﻓ ﺎَﻤَّﻧَﺄَﻜَﻓ َﻡﺎَﻗ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ َﻒْﺼِﻧ ْﻦَﻣَﻭ ﻰَّﻠَﺻ َﺢْﺒُّﺼﻟﺍ ﻲِﻓ ﺎَﻤَّﻧَﺄَﻜَﻓ ٍﺔَﻋﺎَﻤَﺟ ﻰَّﻠَﺻ َﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ُﻪَّﻠُﻛ »
‘যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামা‘আতে পড়ল, সে যেন অর্ধ-রাত্রি সালাত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায়
করল, সে যেন সমস্ত রাত্রি সালাত আদায় করল।’[35]
প্রশ্ন-২৯: আপনি কি পাহাড় পরিমাণ সওয়াব চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ْﻦَﻣ َﺓَﺯﺎَﻨَﺠْﻟﺍ َﺪِﻬَﺷ ﻰَّﺘَﺣ َﻲِّﻠَﺼُﻳ ُﻪَﻠَﻓ ٌﻁﺍَﺮﻴِﻗ ْﻦَﻣَﻭ َﺪِﻬَﺷ ﻰَّﺘَﺣ َﻦَﻓْﺪُﺗ َﻥﺎَﻛ ِﻥﺎَﻃﺍَﺮﻴِﻗ ُﻪَﻟ َﻞﻴِﻗ ﺎَﻣَﻭ ِﻥﺎَﻃﺍَﺮﻴِﻘْﻟﺍ َﻝﺎَﻗ ِﻦْﻴَﻠَﺒَﺠْﻟﺍ ُﻞْﺜِﻣ ِﻦْﻴَﻤﻴِﻈَﻌْﻟﺍ »
‘যে ব্যক্তি কোন জানাযায় সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত শরীক হয়, তার জন্য রয়েছে এক ক্বীরাত পরিমাণ সওয়াব; আর যে ব্যক্তি দাফন
সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত শরীক হয়, তার জন্য রয়েছে দু’ ক্বীরাত্’ পরিমাণ সওয়াব। একজন প্রশ্ন করল, ‘দু’ ক্বীরাত্ কী?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন: (২ কিরাত হলো) ‘দুইটি বড় পাহাড়ের সমান’।’[36]
প্রশ্ন-৩০: আপনি কি সারাক্ষণ আল্লাহ্র হেফাযতে থাকতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
ْﻦَﻣ َﺢْﺒُّﺼْﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ َﻮُﻬَﻓ ْﻲِﻓ ِﻪﻠﻟﺍ ِﺔَّﻣِﺫ
‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে পড়ে, সে ব্যক্তি আল্লাহ্র হেফাযতে থাকে।’[37]
প্রশ্ন-৩১: আপনি কি চান জাহান্নামকে আল্লাহ আপনার কাছ থেকে ৭০ বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে দিক?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺎَﻣ ْﻦِﻣ ٍﺪْﺒَﻋ ُﻡﻮُﺼَﻳ ﺎًﻣْﻮَﻳ ﻲِﻓ ِﻞﻴِﺒَﺳ ِﻪﻠﻟﺍ َّﻻِﺇ َﺪَﻋﺎَﺑ َﻚِﻟَﺬِﺑ ُﻪﻠﻟﺍ ِﻡْﻮَﻴْﻟﺍ ُﻪَﻬْﺟَﻭ ْﻦَﻋ َﻦﻴِﻌْﺒَﺳ ِﺭﺎَّﻨﻟﺍ ﺎًﻔﻳِﺮَﺧ »
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় (অর্থাৎ খালেস দিলে শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সাওম পালন করবে, আল্লাহ্ সেই দিনের
সাওমের বিনিময়ে তার কাছ থেকে জাহান্নামকে দূরে সরিয়ে দিয়ে তার ও জাহান্নামের মধ্যে ৭০ বছরের রাস্তার দূরত্ব
সৃষ্টি করে দেবেন।’[38]
প্রশ্ন-৩২: আপনি কি এমন কোন পথ চান যা আপনাকে সহজে জান্নাতে পৌঁছে দেবে?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ْﻦَﻣَﻭ َﻚَﻠَﺳ ُﺲِﻤَﺘْﻠَﻳ ﺎًﻘﻳِﺮَﻃ ِﻪﻴِﻓ ﺎًﻤْﻠِﻋ َﻞَّﻬَﺳ ُﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪَﻟ ِﻪِﺑ ﺎًﻘﻳِﺮَﻃ ِﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﻰَﻟِﺇ »
‘যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে, আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করে দিবেন।’[39]
প্রশ্ন-৩৩: আপনি কি প্রতিদিন সহজেই এক হাজার নেকী অর্জন করতে চান?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন
করতে চায়?’ তার সাথে বসা এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করল: ‘একদিনে এক হাজার নেকী- এটা কী ভাবে সম্ভব?’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
« ُﺢِّﺒَﺴُﻳ ٍﺔَﺤﻴِﺒْﺴَﺗ َﺔَﺋﺎِﻣ ُﺐَﺘْﻜُﻴَﻓ ُﻪَﻟ ُﻒْﻟَﺃ ٍﺔَﻨَﺴَﺣ ْﻭَﺃ ُّﻂَﺤُﻳ ُﻪْﻨَﻋ ٍﺔَﺌﻴِﻄَﺧ ُﻒْﻟَﺃ »
‘এক শ বার তাসবীহ পাঠ করলে (অর্থাৎ ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পড়লে) এতে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা এক হাজার গুনাহ্
তার আমলনামা থেকে মুছে যাবে।’[40]
[বি: দ্র:-অত্র পুস্তিকায় হাদীসের নম্বর হিসেবে বুখারীতে ফাতহুল বারী এবং মুসলিম ও ইবনু মাজায় মুহাম্মাদ ফুয়াদ আবদুল বাকীর
নম্বর অনুসরণ করা হয়েছে।]
_________________________________________________________________
[1] মুসলিম : ৬৫৭
[2] সূরা আল-বাকারাহ : ২৩৮
[3] সূরা আত-তাহরীম: ৮
[4] সূরা সাদ : ২৯
[5] সূরা আর-রা‘দ : ২৮
[6] সূরা আন-নূর : ৩০
[7] সূরা আন-নিসা : ১১৪
[8] সূরা আল-বাকারাহ : ১৯৭
[9] বুখারী : ৬৪৬৯, মুসলিম : ২৭৫২
[10] বুখারী, মুসলিম
[11] মুসলিম : ২৫৮৮
[12] বুখারী : ৫০১৫
[13] বুখারী ও মুসলিম।
[14] বুখারী, মুসলিম
[15] বুখারী : ৪৮৮০, মুসলিম : ২৮৩৮
[16] মুসলিম
[17] বুখারী : ৩০১২
[18] মুসলিম : ২৮৩৪, ইবনু মাজাহ : ৪৩৩৩
[19] বুখারী : ৬৫৬৮
[20] মুসলিম
[21] সূরা আস্-সাজদাহ : ১৭, বুখারী : ৪৭৭৯, মুসলিম : ২৮২৪
[22] মুসলিম, ইবনু মাজাহ
[23] বুখারী, মুসলিম
[24] বুখারী: ৫৩০৪।
[25] বুখারী : ৬৬২, মুসলিম : ৪৬৭
[26] বুখারী : ১৪৪২, মুসলিম : ১০১০
[27] মুসলিম
[28] বুখারী : ১৯৮১, মুসলিম : ৭২১
[29] মুসলিম : ১৬৩১।
[30] মুসলিম : ২৭৩২।
[31] বুখারী ও মুসলিম।
[32] মুসলিম : ৭২৮
[33] বুখারী : ৫৬৪২
[34] বুখারী ও মুসলিম।
[35] মুসলিম : ৬৫৬।
[36] বুখারী : ১৩২৫ ও মুসলিম : ৯৪৫
[37] মুসলিম : ৬৫৭
[38] বুখারী : ২৮৪০, মুসলিম : ১১৫৩
[39] মুসলিম : ২৬৯৯
[40] মুসলিম : ২৬৯৮