কিয়ামুল লাইলের সমপরিমাণ আমল

সকল প্রশংসা দু’জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ
তা’আলার জন্য এবং দরূদ ও সালাম নাযিল
হোক সর্বশেষ নবী ও রাসূল, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার
পরিবার ও সাথী এবং সকলের ওপর ।
অতঃপর,
কিয়ামুল লাইল বা রাতের সালাতের ফযিলত
আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ কোন
সন্দেহ নেই। ফরয সালাতের পর এ সালাতের
স্থান। এ সালাতের বৈশিষ্ট্য শুধু ব্যক্তির
পাপ মোচন করা নয়, বরং পাপে লিপ্ত হওয়া
থেকে হিফাযত করা। যেমন আবু উমামা বাহেলি
রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেছেন:
‏( ﻢﻜﻴﻠﻋ ﻡﺎﻴﻘﺑ ﻞﻴﻠﻟﺍ ، ﻪﻧﺈﻓ ﺏﺃﺩ
ﻦﻴﺤﻟﺎﺼﻟﺍ ﻢﻜﻠﺒﻗ ، ﺔﺑﺮﻗﻭ ﻰﻟﺇ ﻢﻜﺑﺭ
ﺓﺮﻔﻜﻣﻭ ، ﺕﺎﺌﻴﺴﻠﻟ ﺓﺎﻬﻨﻣﻭ ، ﻢﺛﻺﻟ ‏) .
“তোমরা রাতের সালাত জরুরী করে নাও, কারণ
তা নেককার লোকদের অভ্যাস, তোমাদের রবের
নৈকট্য, গুনাহের কাফফারা ও পাপ থেকে
সুরক্ষা”। [1]
পূর্বসূরিগণ বরং কয়েক বছর পূর্বে আমাদের
পূর্বপুরুষগণ কিয়ামুল লাইল বা রাতের
সালাতের ব্যাপারে শিথিলতা করতেন না,
কিন্তু বর্তমান যুগে অবস্থা পাল্টে অনেকের
রাত পরিণত হয়েছে দিনে। তাদের থেকে
বিদায় নিয়েছে রাতে আল্লাহর সাথে
মোনাজাতের স্বাদ। অনেকের শিথিলতা ফজর
সালাতের সীমা অতিক্রম করে গেছে।
তাউস ইব্ন কিসান রহ. সেহরির সময় জনৈক
ব্যক্তির সাক্ষাতে আসেন, তাকে বলা হল: সে
ঘুমে। তিনি বললেন: “আমি জানতাম না
সেহরির সময় কেউ ঘুমাতে পারে”। [2] তিনি
যদি আমাদের দেখেন, আপনার ধারণা আমাদের
সম্পর্কে তিনি কি বলবেন?
বান্দার ওপর আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে,
তিনি কতক সহজ আমল দান করেছেন, যার
সওয়াব কিয়ামুল লাইলের সমান। যার থেকে
কিয়ামুল লাইল ছুটে যায় অথবা কিয়ামুল লাইল
যার পক্ষে কষ্টকর, সে যেন কোন অবস্থায়
এসব আমল ত্যাগ না করে। এর অর্থ কিয়ামুল
লাইল ত্যাগ করা নয়, আমাদের পূর্বপুরুষগণ
এমন অর্থ বোঝেননি, বরং তারা কল্যাণের
প্রত্যেক ময়দানে অংশ গ্রহণ করতেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
কতক সাহাবিকে, যারা কিয়ামুল লাইলে অক্ষম
ছিল, কিছু সহজ আমল বাতলে দিয়েছেন যা
কিয়ামুল লাইলের সমান। এটা আমাদের
নেকির পাল্লা ভারী করার জন্য নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ
আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। আবু উমামা বাহেলি
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ﻦﻣ ﻪﻟﺎﻫ ﻞﻴﻠﻟﺍ ﻥﺃ ﻩﺪﺑﺎﻜﻳ ، ﻭﺃ ﻞﺨﺑ
ﻝﺎﻤﻟﺎﺑ ﻥﺃ ﻪﻘﻔﻨﻳ ، ﻭﺃ ﻦﺒﺟ ﻦﻋ
ﻭﺪﻌﻟﺍ ﻥﺃ ﻪﻠﺗﺎﻘﻳ ، ﺮﺜﻜﻴﻠﻓ ﻦﻣ
ﻥﺎﺤﺒﺳ ﻪﻠﻟﺍ ﻩﺪﻤﺤﺑﻭ ، ﺎﻬﻧﺈﻓ ﺐﺣﺃ
ﻰﻟﺇ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﻣ ﻞﺒﺟ ﺐﻫﺫ ﻪﻘﻔﻨﻳ ﻲﻓ
ﻞﻴﺒﺳ ﻪﻠﻟﺍ ﺰﻋ ﻞﺟﻭ ‏) .
“যে শঙ্কাবোধ করে রাত জাগতে পারবে না,
অথবা খরচ না করে সম্পদ জমা করে রাখে,
অথবা শত্রুর সাথে যুদ্ধ না করে ভীরুতা
প্রদর্শন করে, সে যেন ﻥﺎﺤﺒﺳ ﻪﻠﻟﺍ
ﻩﺪﻤﺤﺑﻭ অধিক পাঠ করে, কারণ তা আল্লাহর
রাস্তায় পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করার
চেয়ে অধিক প্রিয়”। [3]
আমি এখানে ফাযায়েলে আমল সম্পর্কে সেসব
হাদিস উল্লেখ করব, যার সওয়াব কিয়ামুল
লাইলের সমপরিমাণ। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তা
বাতলে দিয়েছেন, যেন আমরা আমাদের আমলনামা
ভারী ও সওয়াব বৃদ্ধির ব্রত গ্রহণ করি।
যেমন:
১. ফজর ও এশার সালাত জামাতের
সাথে আদায় করা।
উসমান ইব্ন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ ﻰَّﻠَﺻ َﺀﺎَﺸِﻌْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﺔَﻋﺎَﻤَﺟ َﻥﺎَﻛ
ِﻡﺎَﻴِﻘَﻛ ِﻒْﺼِﻧ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ، ْﻦَﻣَﻭ ﻰَّﻠَﺻ َﺀﺎَﺸِﻌْﻟﺍ
َﺮْﺠَﻔْﻟﺍَﻭ ﻲِﻓ ٍﺔَﻋﺎَﻤَﺟ ِﻡﺎَﻴِﻘَﻛ َﻥﺎَﻛ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ‏).
“যে এশার সালাত জামাতের সাথে আদায় করল,
সে যেন অর্ধেক রাত কিয়াম করল, আর যে
ফজর ও এশা জামাতের সাথে আদায় করল, সে
যেন পূর্ণ রাত কিয়াম করল”। [4]
এ জন্য উচিত ফরয সালাতগুলো মসজিদে
জামাতের সাথে আদায় করা। কখনো জামাত
ত্যাগ না করা, বিশেষ করে ফজর ও এশার
সালাত। এ দু’ সালাত মুনাফিকদের জন্য খুব
কষ্টকর। যদি তারা এর সওয়াব জানত হাপুড়
পেরে হলেও উপস্থিত হত, যেমন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।
তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রত্যেক সালাত
অর্ধেক রাত কিয়াম করার সমপরিমাণ।
২. যোহর সালাতের পূর্বে চার রাকাত
আদায় করা।
আবু সালেহ রহ. থেকে মুরসাল সনদে একটি
‘মরফূ’ হাদিস বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ُﻊَﺑْﺭَﺃ ٍﺕﺎَﻌَﻛَﺭ َﻞْﺒَﻗ ِﺮْﻬُّﻈﻟﺍ ِﺓَﻼَﺼِﺑ َﻦْﻟِﺪْﻌَﻳ
ِﺮَﺤَّﺴﻟﺍ ‏).
“যোহরের পূর্বে চার রাকাত সেহরির
সালাতের সমপরিমাণ”। [5]
এ চার রাকাতের আরেক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে
আসমানের দ্বারসমূহ এ জন্য উন্মুক্ত হয়। আবু
আইয়ুব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ﻊﺑﺭﺃ ﻞﺒﻗ ﺮﻬﻈﻟﺍ ﺢﺘﻔﺗ ﻦﻬﻟ ﺏﺍﻮﺑﺃ
ﺀﺎﻤﺴﻟﺍ ‏) .
“যোহরের পূর্বে চার রাকাতের জন্য আসমানের
দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করা হয়”। [6]
এ জন্য আমরা দেখি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি খুব যত্নশীল
ছিলেন, কোন কারণে ছুটে গেলে ফরযের পর
কাযা করতেন, ত্যাগ করতেন না। যেমন আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন: “যদি
তিনি যোহরের পূর্বে চার রাকাত আদায় না
করে থাকতেন, তাহলে পরে তা আদায় করতেন”।
[7]
অপর বর্ণনায় তিনি বলেছেন: “যখন
যোহরের পূর্বে তার চার রাকাত ছুটে যেত,
যোহরের পরে তা আদায় করতেন”। [8]
তাই যার চার রাকাত ছুটে যায়, অথবা
কর্মস্থলের পরিবেশের কারণে তা আদায় করা
সম্ভব না হয়, কাজ শেষে বাড়ি ফিরে তা আদায়
করা দোষের নয়।
আবু ঈসা তিরমিযি রহ. বলেছেন: এ হাদিস
প্রমাণ করে ফরযের পূর্বের সুন্নতগুলো
নিয়মিত আদায় করা বিধি সম্মত। আর
ফরযের শেষ সময় পর্যন্ত এর সময় দীর্ঘ
হয়। যদি ফরয আদায়ের সাথে এর সময় শেষ
হয়ে যেত, তবে ফরযের পর আদায় করা কাযা
হিসেবে গণ্য হত। তখন ফরয পরবর্তী
দু’রাকাত সুন্নতের পূর্বে এ চার রাকাত আদায়
করার বিধান হত, অথচ এ অধ্যায়ের অপর
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যোহর পরবর্তী
দু’রাকাত আদায় শেষে এ চার রাকাত আদায় করা
হত। [অতএব যোহরের পূর্বের চার রাকাত পরে
আদায় করা কাযা নয় বরং আদায়, এ জন্য
দু’রাকাত সুন্নতের পর তা আদায় করা বৈধ।
কাযা হলে দু’রাকাত সুন্নতের পূর্বে তা কাযা
করার বিধান থাকত।] ইরাকি রহ. এ অর্থ
উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন: শাফেয়ি
মতাবলম্বীদের নিকট এ অর্থই সঠিক।[9]
৩. সম্পূর্ণ তারাবি ইমামের সাথে
আদায় করা।
আবু যর গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে
রমযানে সিয়াম রাখলাম, সাত দিন বাকি
থাকার আগে মাসের কোথাও তিনি আমাদের
নিয়ে কিয়াম করেননি। তিনি আমাদের নিয়ে
কিয়াম করলেন যে, রাতের এক তৃতীয়াংশ
সমাপ্ত হল। ষষ্ঠ রাতে আমাদের নিয়ে
কিয়াম করেননি, যখন পঞ্চম রাত বাকি
তিনি আমাদের নিয়ে কিয়াম করলেন যে,
রাতের অর্ধেক শেষ হল। আমি বললাম: হে
আল্লাহর রাসূল যদি অবশিষ্ট রাতও আমাদের
নিয়ে কিয়াম করতেন! আবু যর বলেন: অতঃপর
তিনি বললেন: “নিশ্চয় ব্যক্তি যখন
ইমামের সাথে সালাত আদায় করে তার চলে
যাওয়ার আগ পর্যন্ত, তার জন্য পূর্ণ রাত
কিয়াম করা গণ্য করা হয়”। [10]
এটা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার জন্য
অধিকাংশ মসজিদের ইমামগণ রমযানে
মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করেন। তবুও কতক লোক এ
ফযিলতের ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করে,
অথচ এসব ফযিলতের কারণেই রমযান
অন্যান্য মাস থেকে আলাদা মর্যাদার
অধিকারী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﻡﺎَﻗ َﻥﺎَﻀَﻣَﺭ ﺎًﻧﺎَﻤﻳِﺇ ﺎًﺑﺎَﺴِﺘْﺣﺍَﻭ
َﺮِﻔُﻏ ُﻪَﻟ ﺎَﻣ َﻡَّﺪَﻘَﺗ ْﻦِﻣ ِﻪِﺒْﻧَﺫ‏)
“রমযানে যে সওয়াবের দৃঢ় বিশ্বাস ও
আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা নিয়ে কিয়াম করল,
তার পূর্বের পাপ মোচন করে দেয়া হবে”।
অনুরূপ ফযিলত লাইলাতুল কদরের জন্যও
রয়েছে, তার কিয়াম এক হাজার মাস কিয়াম
করার চেয়ে অধিক ফযিলতপূর্ণ। আল্লাহ
তা‘আলা বলেছেন:
﴿ ُﺔَﻠۡﻴَﻟ ِﺭۡﺪَﻘۡﻟﭐ ٞﺮۡﻴَﺧ ۡﻦِّﻣ ِﻒۡﻟَﺃ ٖﺮۡﻬَﺷ ٣
﴾ ‏[ :ﺭﺪﻘﻟﺍ 3‏]
“লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম”।
[সূরা কাদর: (৩)]
বিস্ময় লাগে তাদের প্রতি যারা এ রাতেও
শিথিলতা করে।
৪. রাতে এক শো আয়াত পাঠ করা।
তামিমে দারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﺃَﺮَﻗ ِﺔَﺌِﻤِﺑ ٍﺔَﻳﺁ ﻲِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ َﺐِﺘُﻛ ُﻪَﻟ
ُﺕﻮُﻨُﻗ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ‏) .
“যে ব্যক্তি রাতে এক শো আয়াত পাঠ করল,
তার জন্য পূর্ণ রাতের কিয়াম লিখা হবে”।
[11]
এক শো আয়াত পাঠ করা খুব সহজ, দশ
মিনিটের বেশী সময় লাগে না। আপনার হাতে
সময় কম থাকলে উদাহরণ স্বরূপ সূরা
সাফ্ফাতের প্রথম চার পৃষ্ঠা পড়ে এ সওয়াব
অর্জন করতে পারেন, অথবা সূরা কালাম ও আল-
হাক্কাহ পাঠ করুন।
কোন কারণে যখন পড়তে না পারেন, ফজর থেকে
যোহরের আগ পর্যন্ত সময়ে পড়ে নিন। এ
নিয়ে গাফিলতি করবেন না, ইনশাআল্লাহ
কিয়ামুল লাইলের সওয়াব অর্জন হবে। ওমর
ইব্ন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﻡﺎَﻧ ِﻪِﺑْﺰِﺣ ْﻦَﻋ ْﻭَﺃ ْﻦَﻋ ٍﺀْﻲَﺷ ُﻪْﻨِﻣ ،
ُﻩَﺃَﺮَﻘَﻓ ﺎَﻤﻴِﻓ َﻦْﻴَﺑ ِﺓﻼَﺻ ِﺓﻼَﺻَﻭ ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ
ِﺮْﻬُّﻈﻟﺍ ، َﺐِﺘُﻛ ﺎَﻤَّﻧَﺄَﻛ ُﻪَﻟ ُﻩَﺃَﺮَﻗ ْﻦِﻣ
ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ‏).
“যে তার পূর্ণ ‘হিযব’ ও অথবা আংশিক
‘হিযব’ না পড়ে ঘুমিয়ে গেল, অতঃপর সে যদি
তা ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে
নেয়, তার জন্য গণ্য করা হবে যেন সে তা
রাতেই পড়েছে”। [12]
মুবারক পুরী রহ. এ হাদিস প্রসঙ্গে বলেছেন:
“এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় রাতে কুরআন
থেকে কিছু নির্ধারণ করে নেয়া জায়েয, যদি
ঘুমের জন্য অথবা কোন কারণে তা ছুটে যায়,
তাহলে তার কাযা করাও জায়েয। যে তা ফজর ও
যোহর মধ্যবর্তী সময়ে কাযা করবে, সে রাতে
আদায়কারী গণ্য হবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
আনহা থেকে ইমাম মুসলিম ও তিরমিযি
প্রমুখগণ বর্ণনা করেছেন: ঘুম বা কোন ব্যথা
যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে কিয়ামুল লাইল থেকে বিরত
রাখত, তিনি দিনে তার পরিবর্তে বারো
রাকাত সালাত আদায় করতেন”। [13]
এ হাদিস আমাদের সংবাদ দিচ্ছে যে, দিন-
রাতে কুরআনের নির্দিষ্ট তিলাওয়াত থাকা
বাঞ্ছনীয়, বিশেষ করে রাতে।
ভুললে চলবে না, আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুমানোর পূর্বে
কমপক্ষে দশ আয়াত পাঠ করার জন্য উদ্বুদ্ধ
করেছেন, যেন আমরা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত না
হই?
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ﻦﻣ ﻡﺎﻗ ﺮﺸﻌﺑ ﺕﺎﻳﺁ ﻢﻟ ﺐﺘﻜُﻳ ﻦﻣ
ﻦﻴﻠﻓﺎﻐﻟﺍ ، ﻦﻣﻭ ﻡﺎﻗ ﺔﺌﻤﺑ ﺔﻳﺁ ﺐﺘُﻛ
ﻦﻣ ﻦﻴﺘﻧﺎﻘﻟﺍ ، ﻦﻣﻭ ﻡﺎﻗ ﻒﻟﺄﺑ ﺔﻳﺁ
ﺐﺘُﻛ ﻦﻣ ﻦﻳﺮﻄﻨﻘﻤﻟﺍ ‏).
“দশ আয়াত দ্বারা যে কিয়াম করবে, তাকে
গাফেলদের মধ্যে গণ্য করা হবে না, আর যে এক
শো আয়াত দ্বারা কিয়াম করবে তাকে অনুগতদের
মধ্যে গণ্য করা হবে, আর যে এক হাজার আয়াত
দ্বারা কিয়াম করবে তাকে প্রাচূর্যের
অধিকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে”। [14]
আমরা আল্লাহর কুরআন রীতিমত তিলাওয়াত
করি! আমাদের খতমে কুরআন শুধু রমযানে
সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং পূর্ণ বছর
ব্যাপী তা হওয়া জরুরী।
প্রতি রাতে কিয়ামুল লাইলের সওয়াব হাসিল
করার জন্য এক শো আয়াত পাঠ করা, আল্লাহর
কিতাবকে আঁকড়ে থাকার এক সুন্দর আমল।
৫. রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত
তিলাওয়াত করা।
আবু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ َﺃَﺮَﻗ ِﻦْﻴَﺘَﻳﻵﺎِﺑ ْﻦِﻣ ِﺮِﺧﺁ ِﺓَﺭﻮُﺳ
ِﺓَﺮَﻘَﺒْﻟﺍ ﻲِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ُﻩﺎَﺘَﻔَﻛ‏) .
“যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত
তিলাওয়াত করল, তার জন্য তা যথেষ্ট হবে”।
[15]
ইমাম নববী রহ. বলেছেন: “এর অর্থ কেউ
বলেছেন: কিয়ামুল লাইলের পরিবর্তে যথেষ্ট
হবে। কেউ বলেছেন: শয়তানের অনিষ্ট থেকে
যথেষ্ট হবে। কেউ বলেছেন: বিপদ-মুসিবত
থেকে নিরাপত্তা হাসিল হবে। তবে সব
অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে”। [16]
ইব্ন হাজার রহ. এ অভিমত সমর্থন করে
বলেছেন: এ হিসেবে আমার বক্তব্য হচ্ছে:
ওপরের সব অর্থ নেয়া সঠিক, আল্লাহ ভালো
জানেন। প্রথম অর্থটি ইব্ন মাসউদ থেকে
আলকামা, আলকামা থেকে আসেম সনদে একটি
‘মরফূ’ হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে:
ْﻦَﻣ” ﺔَﻤِﺗﺎَﺧ َﺃَﺮَﻗ ْﺕَﺃَﺰْﺟَﺃ ﺓَﺮَﻘَﺒْﻟﺍ ُﻪْﻨَﻋ
ﻡﺎَﻴِﻗ .”ﺔَﻠْﻴَﻟ
“যে ব্যক্তি বাকারার শেষ আয়াত পড়ল,
কিয়ামুল লাইলের আমল হিসেবে তার পক্ষ
থেকে তা যথেষ্ট হবে”। [17]
সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করা খুব
সহজ, অধিকাংশ মানুষের তা মুখস্থ রয়েছে।
আল-হামদুলিল্লাহ! মুসলিমের কর্তব্য প্রতি
রাতে তা পাঠ করা। সহজ তাই এতে যথেষ্ট করে
অন্যান্য আমল ত্যাগ করা ঠিক নয়, যার
সওয়াবও কিয়ামুল লাইলের সমপরিমাণ।
কারণ মুমিনের লক্ষ্য হচ্ছে যথাসম্ভব নেকি
হাসিল করা। অনুরূপেআমাদের জানা নেই যে,
কোন্ আমল আল্লাহর গ্রহণযোগ্যতা লাভে
ধন্য হয়।
আব্দুল্লাহ ইব্ন উমাইয়ের রহ. বলেছেন:
“নিকৃষ্ট পেশার ন্যায় আল্লাহর ইবাদাতেও
সামান্য আমল তোমার নিজের জন্য যথেষ্ট
মনে কর না, বরং তুমি মন-প্রাণ দিয়ে অধিক
অর্জনের চেষ্টা কর”। [18]
৬. সচ্চরিত্র।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
‏( َّﻥِﺇ َﻦِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ ُﻙِﺭْﺪُﻴَﻟ ِﻦْﺴُﺤِﺑ ِﺕﺎَﺟَﺭَﺩ ِﻪِﻘُﻠُﺧ
ِﻢِﺋﺎَﻗ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﻢِﺋﺎَﺻ ‏).
“নিশ্চয় মুমিন তার সচ্চরিত্রের দ্বারা
রাতে কিয়ামকারী দিনে সিয়াম পালনকারীর
মর্যাদা অর্জন করে”। [19]
আবু তাইয়্যেব শামসুদ্দিন রহ. বলেছেন:
“সচ্চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে এ সওয়াব
দানের কারণ হচ্ছে, সিয়াম পালনকারী ও
রাতে কিয়ামকারী উভয়ে নিজের নফসের সাথে
মুজাহাদা করে। মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি
ভিন্ন হওয়া সত্বেও যে সবার সাথে
সচ্চরিত্র প্রদর্শন করে, সে যেন অনেক
নফসের সাথে মুজাহাদা করে, ফলে সে সিয়াম ও
কিয়ামকারীর মর্তবা লাভ করে, বরং অনেক
সময় তাদেরও ছাড়িয়ে যায়”। [20]
একটি সচ্চরিত্র হচ্ছে মানুষের সাথে
সুসম্পর্ক কায়েম রাখা ও তাদের থেকে কষ্ট দূর
করা।
মুমিনকে ইমানের পর সচ্চরিত্রের চেয়ে
উত্তম কোন জিনিস প্রদান করা হয়নি, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের
নিকট ‘হুসনে খুলুক’ বা সচ্চরিত্র প্রার্থনা
করতেন। যেমন জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
সালাত শুরু করতেন তখন তাকবির বলে বলতেন:
‏( ﻥﺇ ﻲﻜﺴﻧﻭ ﻲﺗﻼﺻ ﻲﺗﺎﻤﻣﻭ ﻱﺎﻴﺤﻣﻭ ﻪﻠﻟ
ﺏﺭ ﻦﻴﻤﻟﺎﻌﻟﺍ ، ﻻ ﻚﻳﺮﺷ ﻪﻟ ، ﻚﻟﺬﺑﻭ
ﺕﺮﻣﺃ ﺎﻧﺃﻭ ﻦﻣ ﻦﻴﻤﻠﺴﻤﻟﺍ ، ﻢﻬﻠﻟﺍ
ﻲﻧﺪﻫﺍ ﻦﺴﺣﻷ ﻝﺎﻤﻋﻷﺍ ﻦﺴﺣﺃﻭ ﻕﻼﺧﻷﺍ ،
ﻻ ﻱﺪﻬﻳ ﺎﻬﻨﺴﺣﻷ ﻻﺇ ﺖﻧﺃ ، ﻲﻨﻗﻭ ﺊﻴﺳ
ﻝﺎﻤﻋﻷﺍ ﺊﻴﺳﻭ ﻕﻼﺧﻷﺍ ، ﻻ ﻲﻘﻳ ﺎﻬﺌﻴﺳ
ﻻﺇ ﺖﻧﺃ‏) .
“নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার
জীবন ও আমার মৃত্যু দু’জাহানের রব আল্লাহর
জন্য, তার কোন শরীক নেই, আমাকে তারই
নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি মুসলিমদের
অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ আমাকে সুন্দর আমল ও
সুন্দর আখলাকের পথ দেখান, আপনি ব্যতীত
কেউ সুন্দর আখলাকের পথ দেখাতে পারে না।
আপনি আমাকে খারাপ আমল ও খারাপ আখলাক-
চরিত্র থেকে রক্ষা করুন, আপনি ব্যতীত কেউ
তা থেকে রক্ষা করতে পারে না”। [21]
অনুরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যতবার আয়নায় চেহারা দেখতেন সচ্চরিত্রের
জন্য দোয়া করতেন। ইব্ন মাসউদ
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
আয়নায় চেহারা দেখতেন বলতেন:
‏( ﻢﻬﻠﻟﺍ ﺎﻤﻛ ﻲِﻘْﻠَﺧ ﺖﻨﺴﺣ ﻦﺴﺤﻓ ﻲِﻘُﻠُﺧ ‏). ‌
“হে আল্লাহ তুমি আমার সৃষ্টি সুন্দর করেছ,
অতএব আমার চরিত্রও সুন্দর কর”। [22]
সচ্চরিত্রশীল লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিক প্রিয় এবং
কিয়ামতের দিন তার অতি নিকটে বসবে।
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ﻥﺇ ﻦﻣ ﻢﻜﺒﺣﺃ ﻲﻟﺇ ، ﻢﻜﺑﺮﻗﺃﻭ ﻲﻨﻣ
ﺎﺴﻠﺠﻣ ﻡﻮﻳ ﺔﻣﺎﻴﻘﻟﺍ ؛ ﻢﻜﻨﺳﺎﺣﺃ
ﺎﻗﻼﺧﺃ ‏).
“তোমাদের মধ্যে আমার অতি প্রিয় ও
কিয়ামতের দিন আমার অতি নিকটে আসন
গ্রহণকারী সে, যে তোমাদের মধ্যে অধিক
সুন্দর চরিত্রের অধিকারী”। [23]
উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির জন্য
আল্লাহ জান্নাতের উঁচু স্থানে প্রাসাদ
নির্মাণ করবেন, যা তার সওয়াব ও সম্মানের
বিনিময়। আবু বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ﺎﻧﺃ ٌﻢﻴِﻋَﺯ ﺖﻴﺒﺑ ﻲﻓ ِﺾَﺑَﺭ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻤﻟ
ﻙﺮﺗ َﺀﺍَﺮِﻤْﻟﺍ ﻥﺇﻭ ﻥﺎﻛ ،ﺎﻘﺤﻣ ﺖﻴﺒﺑﻭ
ﻲﻓ ﻂﺳﻭ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻤﻟ ﻙﺮﺗ ﺏﺬﻜﻟﺍ ﻥﺇﻭ
ﻥﺎﻛ ،ﺎﺣﺯﺎﻣ ﺖﻴﺒﺑﻭ ﻲﻓ ﻰﻠﻋﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ
ﻦﻤﻟ ُﻪَﻘُﻠُﺧ َﻦَّﺴَﺣ ‏) .
“সত্য পথে থেকেও যে ঝগড়া ত্যাগ করল, আমি
তার জন্য জান্নাতের উত্তম স্থানে ঘরের
জিম্মাদার। হাসি-ঠাট্টায় যে মিথ্যা ত্যাগ
করল আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে
ঘরের জিম্মাদার। আর যে তার চরিত্র উত্তম
করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের উঁচু স্থানে
ঘরের জিম্মাদার”। [24]
সচ্চরিত্র শুধু দূরের লোক বা অপরদের মধ্যে
সীমাবদ্ধ করে নিকট আত্মীয় বা আপনাদের
ভুলা ঠিক নয়, বরং সচ্চরিত্রের হাত পিতা-
মাতা ও পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের জন্য
প্রসারিত করা উচিত। কতক ব্যক্তিকে দেখা
যায় বাইরের লোকদের সাথে প্রশস্ত বক্ষ,
হাসি-খুশি ও সচ্চরিত্রশীল, কিন্তু নিজ
পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের সাথে তার
উল্টো, যা একেবারে পরিত্যাজ্য।
৭. বিধবা ও মিসকিনদের সেবা করার
চেষ্টা করা।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন:
‏( ﻲِﻋﺎَّﺴﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِﺔَﻠَﻣْﺭَﻷﺍ ِﻦﻴِﻜْﺴِﻤْﻟﺍَﻭ ؛
ِﺪِﻫﺎَﺠُﻤْﻟﺎَﻛ ﻲِﻓ ِﻞﻴِﺒَﺳ ِﻪَّﻠﻟﺍ ْﻭَﺃ ِﻢِﺋﺎَﻘْﻟﺍ
َﻞْﻴَّﻠﻟﺍ َﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﻢِﺋﺎَّﺼﻟﺍ ‏).
“বিধবা ও মিসকিনদের সেবায়
আত্মনিয়োগকারী আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ
অথবা রাতে কিয়ামকারী ও দিনে সালাত
আদায়কারী ব্যক্তির সমান”। [25]
এ সওয়াব খুব সহজে অর্জন করা সম্ভব, যেমন
কোন নিঃস্ব বা গরিব ব্যক্তির দরখাস্ত
কোন এনজিও বা সেবা সংস্থায় পেশ করা, যেন
তারা তার অবস্থা জানে ও তাকে প্রয়োজনীয়
সাহায্য করে। অনুরূপ বিধবা-যার স্বামী নেই
তার সেবা করেও এ সওয়াব অর্জন করা সম্ভব,
যেমন তার প্রয়োজন পূর্ণ করা। এটা কঠিন
কোন কর্ম নয়, আপনি আপনার নিকট
আত্মীয়দের মধ্যে খোঁজ নিয়ে দেখতে পাবেন
কোন ফুফু অথবা কোন খালা অথবা কোন দাদীর
স্বামী নেই, তাদের খিদমত করে জিহাদ ও
কিয়ামুল লাইলের সওয়াব অর্জন করতে
পারেন।
৮. জুমার কতিপয় আদাব গুরুত্বসহ
আদায় করা।
আউস ইব্ন আউস সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি:
‏( ْﻦَﻣ َﻞَّﺴَﻏ َﻡْﻮَﻳ ِﺔَﻌُﻤُﺠْﻟﺍ َﻞَﺴَﺘْﻏﺍَﻭ ، َّﻢُﺛ
َﺮَّﻜَﺑ َﺮَﻜَﺘْﺑﺍَﻭ ، ﻰَﺸَﻣَﻭ ْﻢَﻟَﻭ ْﺐَﻛْﺮَﻳ ،
ﺎَﻧَﺩَﻭ ْﻦِﻣ ِﻡﺎَﻣِﻹﺍ َﻊَﻤَﺘْﺳﺎَﻓ ، ْﻢَﻟَﻭ ُﻎْﻠَﻳ ،
َﻥﺎَﻛ ُﻪَﻟ ِّﻞُﻜِﺑ ٍﺓَﻮْﻄُﺧ ُﻞَﻤَﻋ ٍﺔَﻨَﺳ ؛ ُﺮْﺟَﺃ
ﺎَﻬِﻣﺎَﻴِﻗَﻭ ﺎَﻬِﻣﺎَﻴِﺻ ‏).
“জুমার দিন যে গোসল করল, ভালো করে;
অতঃপর আগেভাগে মসজিদে গেল; হেঁটে চলল,
বাহনে চড়ল না; ইমামের নিকটবর্তী হল;
অনর্থক কর্মে লিপ্ত না হয়ে মনোযোগসহ
শ্রবণ করল; তার প্রতি কদমে লেখা হবেএক
বছরের আমল তথা এক বছরের সিয়াম ও
কিয়ামের সওয়াব”। [26]
অতএব যে ব্যক্তি এসব আদব রক্ষা করবে তার
প্রতি কদম এক রাত অথবা এক সপ্তাহ অথবা
এক মাস কিয়ামের সমান নয়, বরং পূর্ণ এক
বছর কিয়াম করার সমান।
জুমার দিন গোসল করা, আগে আগে ও পায়ে হেঁটে
মসজিদে যাওয়া, ইমামের নিকটবর্তী বসা,
শেষের কাতারে পিছিয়ে না পড়া, মনোযোগসহ
খুতবা শ্রবণ করা এবং বেহুদা ও অনর্থক
কর্মকাণ্ড ত্যাগ করার মধ্যে এসব আদব
সীমাবদ্ধ, যা খুব সহজ ও খুব সামান্য।
জ্ঞাতব্য যে, খুতবার সময় অহেতুক নড়াচড়া
করা অনর্থক কর্মের অন্তর্ভুক্ত। যে অনর্থক
কর্ম করল তার জুমা নেই। যে পাথর স্পর্শ
করল সে অনর্থক কর্ম করল। যে বলল, ‘চুপ
থাক’, সে অনর্থক কর্ম করল: অর্থাৎ যে তার
পাশের সাথী অথবা নিজের সন্তানকে বলল
‘চুপ থাক’ সে বেহুদা কর্ম করল। খুতবার সময়
যে তসবিহ অথবা মোবাইল অথবা কোন জিনিস
দ্বারা খেলল, সেও অনর্থক কর্ম করল।
সুতরাং জুমার আদবসমূহে শিথিলতা করা ঠিক
নয়, অন্যথায় আমরা এমন সব বিরাট সওয়াব
থেকে বঞ্চিত হব, পরকালে যা আমাদের নেকির
পাল্লা ভারী করবে ও অনেক বছরের সওয়াব
প্রদান করবে।
৯. আল্লাহর রাস্তায় একদিন ও
একরাত জাগ্রত থাকা।
সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে
শুনেছি:
‏( ﻁﺎﺑﺭ ﻡﻮﻳ ﺔﻠﻴﻟﻭ ﺮﻴﺧ ﻦﻣ ﻡﺎﻴﺻ ﺮﻬﺷ
ﻪﻣﺎﻴﻗﻭ ، ﻥﺇﻭ ﺕﺎﻣ ﻯﺮﺟ ﻪﻴﻠﻋ ﻪﻠﻤﻋ
ﻱﺬﻟﺍ ﻪﻠﻤﻌﻳ ﻥﺎﻛ ، ﻱﺮﺟُﺃﻭ ﻪﻗﺯﺭ ﻪﻴﻠﻋ
، َﻦِﻣﺃﻭ ﻥﺎَّﺘﻔﻟﺍ ‏) ، ﻥﺎَّﺘﻔﻟﺍﻭ ﺔﻨﺘﻓ ﻮﻫ
.ﺮﺒﻘﻟﺍ
“একদিন ও একরাত আল্লাহর রাস্তায় শত্রুর
মোকাবেলায় যুদ্ধের প্রস্তুতিসহ দাঁড়িয়ে
থাকা একমাস সিয়াম ও একমাস কিয়াম
অপেক্ষা উত্তম। যদি সে মারা যায় তাহলে
তার আমল চলমান থাকবে যা সে আঞ্জাম দিত,
তার রিযিক তার জন্য অব্যাহত থাকবে এবং
ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে”। [27]
ফিতনা অর্থ কবরের আযাব।
১০. ঘুমের পূর্বে কিয়ামুল লাইলের
নিয়ত করা।
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি ‘মরফূ’
হাদিস বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏( ْﻦَﻣ ﻰَﺗَﺃ ُﻪَﺷﺍَﺮِﻓ َﻮُﻫَﻭ ﻱِﻮْﻨَﻳ ْﻥَﺃ َﻡﻮُﻘَﻳ
ﻲِّﻠَﺼُﻳ ْﻦِﻣ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ، ُﻩﺎَﻨْﻴَﻋ ُﻪْﺘَﺒَﻠَﻐَﻓ ﻰَّﺘَﺣ
َﺢَﺒْﺻَﺃ ، َﺐِﺘُﻛ ُﻪَﻟ ﺎَﻣ ﻯَﻮَﻧ ، َﻥﺎَﻛَﻭ ُﻪُﻣْﻮَﻧ
ًﺔَﻗَﺪَﺻ ِﻪْﻴَﻠَﻋ ْﻦِﻣ ِﻪِّﺑَﺭ َّﺰَﻋ َّﻞَﺟَﻭ‏) .
“যে ব্যক্তি তার বিছানায় আগমন করল এ
নিয়তে যে রাতে উঠে সালাত আদায় করবে,
কিন্তু তার চোখে ঘুম চেপে থাকল ভোর
পর্যন্ত, তার নিয়ত অনুসারে তার জন্য লিখা
হবে, আর তার ঘুম হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে
তার জন্য সদকা”। [28]
লক্ষ্য করুন নিয়তের গুরুত্ব। নিয়ত আমলের
জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয়! এ থেকে আমরা ঐ
ব্যক্তির বদ নসিব জানতে পারি, যে ঘুমানোর
সময় ফজর সালাত আদায়ের পর্যন্ত নিয়ত করে
না। এ হতভাগা শুধু কর্মস্থল অথবা
বিদ্যালয়ের জন্য জাগ্রত হয়। সে কবিরা
গুনায় অনবরত লিপ্ত, এ অবস্থায় তার মৃত্যু
হলে পরিমাণ শুভ হনে না, আল্লাহর নিকট
পানাহ চাই।
আর যে ফজরের সময় উঠার নিয়ত করে তার
জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিল, কিন্তু তবুও
উঠতে পারল না, তার ওপর কোন তিরস্কার
নেই। কারণ ঘুমন্ত অবস্থায় আল্লাহর
বিধানের সীমালঙ্ঘন নেই, সীমালঙ্ঘন হচ্ছে
জাগ্রত অবস্থায়।
১১. কিয়ামুল লাইলের সমান
আমলগুলো প্রচার করা।
আপনার থেকে জেনে কেউ যদি এর ওপর আমল
করে, তাহলে তাদের সমপরিমাণ আপনার
সওয়াব হবে। কারণ কাউকে ভাল কাজের কথা
বলা তা বাস্তবায়ন করার মত সওয়াব। অতএব
আপনি কল্যাণের আহ্বানকারী হোন, ইলম
প্রচার করুন, তাহলে যারা আপনার কারণে
আমল করবে, তাদের ন্যায় আপনিও সওয়াবের
অধিকারী হবেন। সকল প্রশংসার মালিক
আল্লাহ তা‘আলা।
সমাপ্ত
[1] তিরমিযি : (৩৫৪৯), ইব্ন খুযাইমাহ:
(১১৩৫), হাকেম: (১১৫৬), আলবানী সহিহ
‘তারগিব ও তারহিব’: (৬২৪) গ্রন্থে
হাদিসটি হাসান বলেছেন।
[2] ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবকাতুল
আসফিয়া’ লি আবু নুআইম: (৪/৬)
[3] তাবরানি ফিল কাবির: (৭৭৯৫), আল-
বানি ‘সহিহ তারগিব ওয়া তারহিব’:
(১৫৪১) গ্রন্থে বলেছেন: হাদিসটি হাসান
লি গায়রিহি।
[4] মুয়াত্তা ইমাম মালেক: (৩৭১), আহমদ ফি
‘ফাতহুর রাব্বানি’: (৫/১৬৮), মুসলিম:
(৬৫৬), তিরমিযি: (২২১), আবু দাউদ:
(৫৫৫), দারামি: (১২২৪)
[5] মুসান্নাফ ইব্ন আবি শায়বাহ: (৫৯৪০),
আল-বানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।
দেখুন: সিলসিলাতুস সাহিহাহ: (১৪৩১)
[6] আবু দাউদ: (৩১২৮), আল-বানি ‘সহিহ
তারগিব ওয়া তারহিব’: (৫৮৫) গ্রন্থে
হাদিসটি হাসান লি গায়রিহি বলেছেন।
আরো দেখুন: শামায়েলে তিরমিযি।
[7] তিরমিযি: (৪২৬), আল-বানি সহিহ
তিরমিযিতে: (৩৫০) হাদিসটি হাসান
বলেছেন।
[8] বায়হাকি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আল-
বানি সহিহ আল-জামে: (৪৭৫৯) গ্রন্থে
হাসান বলেছেন।
[9] জামে তিরমিযি: (৯৪২৬)
[10] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (৫/১১),
আবু দাউদ: (১৩৭৫), তিরমিযি: (৮০৬),
নাসায়ি: (১৩৬৪), ইব্ন মাজাহ: (১৩২৭),
আল-বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
দেখুন: সহিহ আল-জামে: (১৬১৫)
[11] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/১১),
দারামি: (৩৪৫০), আল-বানি হাদিসটি
সহিহ বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে:
(৬৪৬৮)
[12] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/২৯),
মুসলিম: (৭৪৭), তিরমিযি: (৫৮১),
নাসায়ি: (১৭৯০), আবু দাউদ: (১৩১৩), ইব্ন
মাজাহ: (১৩৪৩), দারামি: (১৪৭৭)
[13] জামে তিরমিযি ব্যাখ্যা গ্রন্থ:
‘তুহফাতুল আহওয়াযি’: (৩/১৮৫), হাদিস
নং: (৫৮১)
[14] আবু দাউদ: (১৩৯৮), ইব্ন মাজাহ: (২৫৭২)
, ইব্ন খুজাইমাহ: (১১৪৪), দারামি:
(৩৪৪৪), হাকেম: (২০৪১), আল-বানি
‘সহিহ তারগিব ওয়া তারহিব’: (৬৩৯)
গ্রন্থে বলেছেন: হাদিসটি হাসান ও
সহিহ।
[15] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/৯৯),
বুখারি: (৫০১০), মুসলিম: (৮০৭),
তিরমিযি: (২৮৮১), আবু দাউদ: (১৩৯৭),
ইব্ন মাজাহ: (১৩৬৯), দারামি: (১৪৮৭)
[16] শারহুন নববী আলা সহিহ মুসলিম:
(৬/৩৪০), হাদিস নং: (৮০৭)
[17] ফাতহুল বারি, লি ইব্ন হাজার
আসকালানি: (৮/৬৭৩), হাদিস নং: (৫০১০)
[18] ‘হুলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া তাবকাতুল
আসফিয়া’ লি আবু নুআইম: (৩/৩৫৪)
[19] ইমাম মালেক: (১৬৭৫), আহমদ ফি
‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৮/৭৬), আবু দাউদ:
(৪৭৯৮), ইব্ন হিব্বান: (৪৮০), হাকেম:
(১৯৯), আল-বানি হাদিসটি সহিহ
বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে: (১৬২০)
[20] আউনুল মাবুদ শারহু আবু দাউদ: (১৩/১৫৪),
হাদিস নং: (৪৭৯৮)
[21] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (৩/১৮১),
মুসলিম: (৭৭১), তিরমিযি: (৩৪২১),
নাসায়ি: (৮৯৭), আবু দাউদ: (৭৬০),
দারামি: (১২৩৮), ইব্ন খুজাইমাহ: (৪৬২),
বায়হাকি: (২১৭২), আবু ইয়ালা: (২৮৫)
[22] ইমাম আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’:
(১৪/২৮১), ইব্ন হিব্বান: (৯৫৯), আবু
ইয়ালা: (৫০৭৫), তায়ালিসি: (৩৭৪), আল-
বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, দেখুন:
সহিহ আল-জামে: (১৩০৭)
[23] আহমদ ফি ফাতহুর রাব্বানি: (২৩/১৩),
তিরমিযি: (২০১৮), তাবরানি ফিল
কাবির: (১০৪২৪), বুখারি ফিল আদাবিল
মুফরাদ: (২৭২), আল-বানি সহিহ ‘তারগিব
ওয়া তারহিব’: (২৬৪৯) গ্রন্থে হাদিসটি
সহিহ বলেছেন।
[24] আবু দাউদ: (৪৮০০), বায়হাকি: (২০৯৬৫),
তাবরানি ফিল কাবির: (৭৪৮৮), আল-বানি
হাদিসটি হাসান বলেছেন, দেখুন: সহিহ
আল-জামে: (১৪৬৪)
[25] আহমদ ফি ‘ফাতহুর রাব্বানি’: (১৯/৫৫),
বুখারি: (৫৩৫৩), মুসলিম: (২৯৮২),
তিরমিযি: (১৯৬৯), নাসায়ি: (২৫৭৭),
ইব্ন মাজাহ: (২১৪০), ইব্ন হিব্বান:
(৪২৪৫), বায়হাকি: (১২৪৪৪)
[26] আহমদ ফি ‘ফাতহুল রাব্বানি’: (৬/৫১),
তিরমিযি: (৪৯৬), আবু দাউদ: (৩৪৫),
নাসায়ি: (১৩৮১), ইব্ন মাজাহ: (১০৮৭),
দারামি: (১৫৪৭), হাকেম: (১০৪১), ইব্ন
খুজাইমাহ: (১৭৫৮), আল-বানি হাদিসটি
সহিহ বলেছেন, দেখুন: সহিহ আল-জামে:
(৬৪০৫)
[27] বুখারি: (২৮৯২), মুসলিম: (১৯১৩),
নাসায়ি: (৩১২৮)
[28] নাসায়ি: (১৭৮৭), ইব্ন মাজাহ: (১৩৪৪),
আল-বানি হাদিসটি হাসান বলেছেন, দেখুন:
সহিহ আল-জামে: (৫৮৪১)
_________________________________________
_______________________________________
____________________________
লেখক : ড. মুহাম্মাদ ইব্ন ইবরাহিম আন-
নাইম
অনুবাদক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ,
রিয়াদ, সৌদিআরব