সালাতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অনত্র হাত উত্তোলন করা প্রসংগে একটি প্রশ্নের জবাব

প্রশ্ন (১৭/২৫৭) : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
(রাঃ) একদা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
যেভাবে ছালাত আদায় করতেন আমি কি
তোমাদের সেভাবে ছালাত আদায় করে
দেখাব না? অতঃপর তিনি ছালাত আদায়
করলেন। কিন্তু তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত
অন্য কোন সময় দু’হাত উত্তোলন করলেন
না’ (তিরমিযী ১/৩৫)। তিরমিযী
হাদীছটিকে হাসান বলেছেন। আবার বারা
ইবনে আযিব (রাঃ) বলেন, ‘নবী করীম
(ছাঃ) তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত আর
কখনো হাত উঠাতেন না’ (আবূদাঊদ ১/১০৯)।
এক্ষণে ছালাতে রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন করার
প্রমাণে হাদীছদ্বয়ের বিপক্ষে যুক্তি কি?
-ছিয়াম বিন সাইফুদ্দীন মধুপুর, টাংগাঈল।
উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ দু’টি সহ
‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’ না করার পক্ষে যে
সকল দলীল পেশ করা হয়, তার সবগুলিই যঈফ।
• প্রশ্নে বর্ণিত ১ম হাদীছটি ইমাম
আবুদাঊদ বর্ণনা করে বলেন,
ٌﺮَﺼَﺘْﺨُﻣ ﺍَﺬَﻫ ْﻦِﻣ ٍﺚﻳِﺪَﺣ ٍﻞﻳِﻮَﻃ َﺲْﻴَﻟَﻭ َﻮُﻫ
ٍﺢﻴِﺤَﺼِﺑ ﻰَﻠَﻋ ﺍَﺬَﻫ ِﻆْﻔَّﻠﻟﺍ
‘এটা লম্বা হাদীছের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর
এই শব্দে এটি ছহীহ নয়’ (আবুদাঊদ হা/৭৪৮)।
উল্লেখ্য যে, উপমহাদেশের ছাপা
আবুদাঊদে হাদীছের শেষে ইমাম
আবুদাঊদের উক্ত মন্তব্যটি নেই। কিন্তু
অন্যান্য ছাপা আবুদাঊদে তা রয়েছে।
এদেশে ছাপা আবুদাঊদ থেকে উক্ত মন্তব্য
তুলে দেওয়ার রহস্য অজ্ঞাত।
• দ্বিতীয় হাদীছটি সম্পর্কে তিনি বলেন,
ُﺚﻳِﺪَﺤْﻟﺍ ﺍَﺬَﻫ َﺲْﻴَﻟ ٍﺢﻴِﺤَﺼِﺑ
‘এই হাদীছ ছহীহ নয়’ (আবুদাঊদ হা/৭৫২)।
তাছাড়া বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হতে
বর্ণিত অন্য আরেকটি বর্ণনা সম্পর্কে
তিনি বলেন, ‘অতঃপর তিনি আর হাত
উঠাননি’ অংশটুকু অন্য সনদে তিনি
বলেননি।
• সুফিয়ান বলেন, আমাদেরকে অনেক পরে
কূফাতে ‘অতঃপর তিনি আর হাত উঠাননি’
অংশটুকু বলা হয়েছে।
• ইমাম আবুদাঊদ আরো বলেন, ইয়াযীদ
থেকে হাদীছটি হুশাইম, খালেদ, ইবনু
ইদরীসও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তারা
‘অতঃপর তিনি আর হাত উঠাননি’ অংশটুকু
বলেন নি’ (আবুদাঊদ হা/৭৫০)। এভাবে
ইমাম আবুদাঊদ (২০২-২৭৫) রাফ‘ঊল
ইয়াদায়েন না করার হাদীছ সমূহকে নাকচ
করে দিয়েছেন।
• ইবনু হিববান বলেন, ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’
না করার পক্ষে কুফাবাসীদের এটিই
সবচেয়ে বড় দলীল হ’লেও এটিই সবচেয়ে
দুর্বলতম দলীল, যার উপরে নির্ভর করা
হয়েছে। কেননা এর মধ্যে এমন সব বিষয়
রয়েছে যা একে বাতিল বলে গণ্য করে
(নায়লুল আওত্বার ৩/১৪ পৃঃ, ফিকহুস সুন্নাহ
১/১০৮)। ইমাম তিরমিযী (মৃঃ ২৭৯হিঃ) ১ম
হাদীছটিকে সনদের দিক থেকে ‘হাসান’
বললেও তার আগের হাদীছে আলোচনা
করতে গিয়ে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনুল
মুবারকের বক্তব্য তুলে ধরেছেন,
ﻢﻟ ﺖﺒﺜﻳ ﺚﻳﺪﺣ ﺩﻮﻌﺴﻣ ﻦﺑﺍ
‘ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর হাদীছ প্রমাণিত
হয়নি’ (তিরমিযী হা/২৫৫-এর আলোচনা)।
• আলবানী বলেন, হাদীছটিকে ছহীহ
মেনে নিলেও তা ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’-এর
পক্ষে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহের
বিপরীতে পেশ করা যাবে না। কেননা
এটি না বোধক এবং ঐগুলি হ্যাঁ বোধক।
ইলমে হাদীছের মূলনীতি অনুযায়ী হ্যাঁ-
বোধক হাদীছ না-বোধক হাদীছের উপর
অগ্রাধিকার পাবে। পক্ষান্তরে রাফ‘ঊল
ইয়াদায়নের পক্ষে বহু ছহীহ হাদীছ রয়েছে।
যেমন:
• ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের শুরুতে, রুকূতে
যাওয়াকালীন ও রুকূ হ’তে উঠাকালীন
সময়ে… এবং তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়ানোর
সময় রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন
করতেন’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী,
মিশকাত হা/৭৯৩-৯৪)।
• ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’ করা সম্পর্কে চার
খলীফা সহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী থেকে
বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহ রয়েছে।
একটি হিসাব মতে ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’-এর
হাদীছের রাবী সংখ্যা আশারায়ে
মুবাশশারাহ সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী
(ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৭ পৃঃ) এবং সর্বমোট
ছহীহ হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন
চারশত (মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী, সিফরুস
সা‘আদাত ১৫ পৃঃ; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর
রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ৯২-৯৬)। monthly at-
tahreek
নামাযে রউফুল ইয়াদাইন করার
মর্যাদা
এ বিষয়ে শেখ আসিম আল হাকিমের বক্তব্য
একটি চমৎকার উপস্থাপনা। তিনি এটিকে
গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ মর্মে অভিহিত করেছেন।
তবে এটি কেউ না করলেও তার নামায
হবে। যদিও এটির না করার কারণে তাঁর
সুন্নাহর অনুসরণ হলো না। ইবাদতের
প্রতিটি স্তর থেকে মহান আল্লাহ
আমাদের অধিকতর ছওয়াব হাসিলের
তওফিক দিন। আমীন।
তাঁর এ বক্ত্বব্যটি সৌদী আরবের হুদা
টেলিভিশন থেকে গৃহীত।