সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ(২)

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ-১
____________________________________
মহান আল্লাহ মানুষকে এ
পৃথিবীতে খিলাফতের এক সুন্দর দায়িত্ব
দিয়ে পাঠিয়েছেন। আদম আলাইহিস
সালাম ও তার সন্তানাদিকে সর্বপ্রথম এ
দায়িত্ব দেয়া হয়। আদম আলাইহিস
সালামের সন্তান হাবিলের কুরবানী কবুল
হওয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ
ঘোষণা করেন:
﴿ ﺎَﻤَّﻧِﺇ ُﻞَّﺒَﻘَﺘَﻳ ُﻪَّﻠﻟﭐ َﻦﻴِﻘَّﺘُﻤۡﻟﭐ َﻦِﻣ
٢٧ ﴾ ‏[:ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ٢٧ ‏]
নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের নিকট
হতেই (সৎকর্ম) কেবল গ্রহণ করেন।[1]
মূলত: মানুষকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ
হতে বারণ করার এক মহান দায়িত্ব
দিয়ে সৃষ্টির শুরু হতে শুরু করে সর্বশেষ
নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতদেরও
প্রেরণ করা হয়েছে। তাই তো পবিত্র
কুরআন সাধারণভাবে সকল উম্মতের অন্যতম
দায়িত্ব ঘোষণা দিয়ে বলেছে:
ۡﻢُﺘﻨُﻛ﴿ َﺮۡﻴَﺧ ۡﺖَﺟِﺮۡﺧُﺃ ٍﺔَّﻣُﺃ ِﺱﺎَّﻨﻠِﻟ
َﻥﻭُﺮُﻣۡﺄَﺗ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ َﻥۡﻮَﻬۡﻨَﺗَﻭ ِﻦَﻋ
ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ ﴾ ‏[ ﻝﺍ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ١١٠ ‏]
‘‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমদের
সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের
জন্য। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের
আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ
হতে নিষেধ করবে। আর আল্লাহর উপর
ঈমান আনয়ন
করবে।” [সূরা আলে ইমরান: ১১০]
অতএব আলোচ্য আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়
যে, এ মহান দায়িত্বটি আঞ্জাম দেয়ার
মাঝে মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
যুগে যুগে এ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-
রাসূলের আগমন ঘটেছে। আল্লাহ
তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেই
ক্ষান্ত হন নি; বরং তাদের হেদায়াতের
জন্য প্রেরণ করেছেন কালের পরিক্রমায়
বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নবী ও রাসূলকে।
যাঁরা স্ব-স্ব জাতিকে সৎ ও কল্যাণকর
কাজের প্রতি উৎসাহ যুগিয়েছেন এবং অসৎ
ও অকল্যাণকর কাজ হতে নিষেধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
ۡﺪَﻘَﻟَﻭ﴿ ﺎَﻨۡﺜَﻌَﺑ ﻲِﻓ ِّﻞُﻛ ٖﺔَّﻣُﺃ ﺎًﻟﻮُﺳَّﺭ
ِﻥَﺃ ْﺍﻭُﺪُﺒۡﻋﭐ َﻪَّﻠﻟﭐ ْﺍﻮُﺒِﻨَﺘۡﺟﭐَﻭ
﴾َۖﺕﻮُﻐَّٰﻄﻟﭐ ‏[ ٣٦:ﻞﺤﻨﻟﺍ ‏]
‘‘নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট
রাসুল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে,
তারা আল্লাহর ইবাদত
করবে এবং তাগুতকে পরিত্যাগ
করবে” [2] ।
এখানে তাগুত
বলতে আল্লাহবিরোধী শক্তি, শয়তান,
কুপ্রবৃত্তি এক কথায় এমন সব
কার্যাবলীকে বুঝানো হয়েছে যা সুপ্রবৃত্তি
দ্বারা সম্পন্ন হয় না এবং আল্লাহর
আনুগত্যের পথে বাধা হয়।
আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও একই
উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছে।
তাঁকে হেদায়াতের মশাল
হিসেবে যে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন প্রদান
করা হয়েছে তার এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য
হলো, মানুষকে অন্ধকার থেকে আল্লাহর
দিকে আহ্বান করা,
গোমরাহী থেকে হেদায়াতের দিকে,
কুফরীর অন্ধকার হতে ঈমানের আলোর
দিকে আহ্বান জানানো। আল্লাহ
তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন,
﴿ ۚﺮٓﻟﺍ ٌﺐَٰﺘِﻛ َﻚۡﻴَﻟِﺇ ُﻪَٰﻨۡﻟَﺰﻧَﺃ َﺝِﺮۡﺨُﺘِﻟ
َﺱﺎَّﻨﻟﭐ ِﺖَٰﻤُﻠُّﻈﻟﭐ َﻦِﻣ ﻰَﻟِﺇ ِﺭﻮُّﻨﻟﭐ
ِﻥۡﺫِﺈِﺑ ۡﻢِﻬِّﺑَﺭ ٰﻰَﻟِﺇ ﺰﻳﺰﻌﻟﺍ ﻁﺍﺮﺻ
ﺪﻴِﻤَﺤﻟﺍ ١ ﴾ ‏[ :ﻢﻴﻫﺍﺮﺑﺍ ١ ‏]
‘‘আলিফ-লাম-রা, এ হচ্ছে কিতাব,
আমরা তোমার প্রতি তা নাযিল
করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের
রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার
থেকে বের করে আলোর
দিকে ধাবিত করতে পার, এমন
পথে যা প্রবলপরাক্রমশালী,
প্রশংসিতের।’’[3]
এ প্রথিবীতে মানুষের যাবতীয়
কর্মকে যদি শ্রেণীবিন্যাস করা হয়
তাহলে তা হবে ক) সৎকাজ (খ) অসৎকাজ।
আর আখেরাতে এ দু’শ্রেণীর কাজের
জবাবদিহি ও প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত ও
জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। মহান আল্লাহ
বলেন:
﴿ ﻦَﻤَﻓ َﻝﺎَﻘۡﺜِﻣ ۡﻞَﻤۡﻌَﻳ ٍﺓَّﺭَﺫ ﺍٗﺮۡﻴَﺧ
ۥُﻩَﺮَﻳ ٧ ۡﻞَﻤۡﻌَﻳ ﻦَﻣَﻭ َﻝﺎَﻘۡﺜِﻣ ٖﺓَّﺭَﺫ ﺍّٗﺮَﺷ
ۥُﻩَﺮَﻳ ﴾٨ ‏[:ﺔﻟﺰﻟﺰﻟﺍ ،٧ ٨ ‏]
‘‘যে অনু পরিমাণ ভাল করবে সে তার
প্রতিদান পাবে আর যে অনু পরিমাণ
খারাপ কাজ করবে সেও তার
প্রতিদান পাবে।’’[4]
অতএব প্রতিদান দিবসে সৎকাজের গুরুত্ব
অত্যাধিক। ফলে প্রত্যেকের উচিত সৎকাজ
বেশী বেশী করা এবং অসৎ কাজ
হতে বিরত থাকা।
কুরআনের অন্যত্র মহান আল্লাহ মানুষের এসব
কাজ সংরক্ষণ করা সম্পর্কে বলেছেন:
﴿ َﻦﻴِﺒِﺘَٰﻛ ﺎٗﻣﺍَﺮِﻛ ١١ َﻥﻮُﻤَﻠۡﻌَﻳ ﺎَﻣ
َﻥﻮُﻠَﻌۡﻔَﺗ ١٢ َﺭﺍَﺮۡﺑَﺄۡﻟﭐ َّﻥِﺇ ﻲِﻔَﻟ
ٖﻢﻴِﻌَﻧ ١٣ َﺭﺎَّﺠُﻔۡﻟﭐ َّﻥِﺇَﻭ ﻲِﻔَﻟ ٖﻢﻴِﺤَﺟ
ﺎَﻬَﻧۡﻮَﻠۡﺼَﻳ ١٤ َﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ١٥ ﺎَﻣَﻭ
ۡﻢُﻫ َﻦﻴِﺒِﺋٓﺎَﻐِﺑ ﺎَﻬۡﻨَﻋ ١٦ ٓﺎَﻣَﻭ َﻚٰﻯَﺭۡﺩَﺃ
ﺎَﻣ ُﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ١٧ َّﻢُﺛ ٓﺎَﻣ َﻚٰﻯَﺭۡﺩَﺃ
ﺎَﻣ ُﻡۡﻮَﻳ ِﻦﻳِّﺪﻟﭐ ١٨ َﻡۡﻮَﻳ ﺎَﻟ ُﻚِﻠۡﻤَﺗ
ٞﺲۡﻔَﻧ ٖﺲۡﻔَﻨِّﻟ ُﺮۡﻣَﺄۡﻟﭐَﻭ ۖﺎٗٔۡﻴَﺷ ٖﺬِﺌَﻣۡﻮَﻳ
ِﻪَّﻠِّﻟ ١٩ ﴾ ‏[:ﺭﺎﻄﻔﻧﻻﺍ -١١ ١٩ ‏]
‘‘সম্মানিত লেখকবৃন্দ,
তারা জানে তোমরা যা কর, নিশ্চয়
সৎকর্মপরায়ণরা থাকবে খুব
স্বাচ্ছন্দে, আর
অন্যায়কারীরা থাকবে প্রজ্বলিত
আগুনে, তারা সেখানে প্রবেশ
করবে প্রতিদান দিবসে, আর
তারা সেখান থেকে অনুপস্থিত
থাকতে পারবে না, আর
কিসে তোমাকে জানাবে প্রতিদান
দিবস কী? তারপর
বলছি কিসে তোমাকে জানাবে
প্রতিদান দিবস কী? সেদিন
কোনো মানুষ অন্য মানুষের জন্য
কোনো ক্ষমতা রাখবে না, আর
সেদিন সকল বিষয় হবে আল্লাহর
কর্তৃত্বে।’’[5]
পৃথিবীতে মানুষ ধোঁকা প্রবণ, দুনিয়ার
চাকচিক্য ও মোহে পড়ে অনন্ত অসীম দয়ালু
আল্লাহর কথা স্মরণ
থেকে ভুলে যেতে পারে।
সেজন্যে প্রত্যেক সৎ কর্মপরায়ণের উচিৎ
পরস্পর পরস্পরকে সদুপদেশ দেয়া,
সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং অসৎ
কাজে নিষেধ করা। মহান আল্লাহ ধমক
দিয়ে বলেন-
﴿ َٰٓﻱ ُﻦَٰﺴﻧِﺈۡﻟﭐ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺎَﻣ َﻚِّﺑَﺮِﺑ َﻙَّﺮَﻏ
ِﻢﻳِﺮَﻜۡﻟﭐ ٦ ﴾ ‏[:ﺭﺎﻄﻔﻧﻻﺍ ٦ ]
‘‘হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার
মহান রব
সম্পর্কে ধোঁকা দিয়েছে?”[6]
শুধু ধমক দিয়েই ক্ষ্যান্ত হন নি;
বরং পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের
ভয়াবহ শান্তি হতে বাঁচিয়ে রাখারও
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা আত-
তাহরীমে এসেছে-
﴿ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍٓﻮُﻗ
ۡﻢُﻜﻴِﻠۡﻫَﺃَﻭ ۡﻢُﻜَﺴُﻔﻧَﺃ ﺎَﻫُﺩﻮُﻗَﻭ ﺍٗﺭﺎَﻧ
ُﺱﺎَّﻨﻟﭐ ﺎَﻬۡﻴَﻠَﻋ ُﺓَﺭﺎَﺠِﺤۡﻟﭐَﻭ ٌﺔَﻜِﺌَٰٓﻠَﻣ
ٞﻅﺎَﻠِﻏ ٞﺩﺍَﺪِﺷ ﺎَّﻟ َﻥﻮُﺼۡﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﭐ ٓﺎَﻣ
َﻥﻮُﻠَﻌۡﻔَﻳَﻭ ۡﻢُﻫَﺮَﻣَﺃ ﺎَﻣ َﻥﻭُﺮَﻣۡﺆُﻳ ٦
﴾ ‏[ :ﻢﻳﺮﺤﺘﻟﺍ ٦ ‏]
‘‘হে ঈমানদারগণ!
তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের
পরিবার পরিজনকে আগুন
হতে বাঁচাও, যার
জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর;
যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর
ফেরেশ্তাকূল, যারা আল্লাহ
তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন
সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর
তারা তাই
করে যা তাদেরকে আদেশ
করা হয়।’’[7]
অতএব বলা যায় যে, বিভিন্নভাবে এ
পৃথিবীতে মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত।
আর তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়
হলো পারস্পারিক সৎ ও কল্যাণকর
কাজে সহযোগিতা ও অসৎ এবং গুনাহের
কাজ বর্জন করা। এ মর্মে মহান আল্লাহ
বলেন:
﴿ ْﺍﻮُﻧَﻭﺎَﻌَﺗَﻭ ﻰَﻠَﻋ ٰۖﻯَﻮۡﻘَّﺘﻟﭐَﻭ ِّﺮِﺒۡﻟﭐ
ْﺍﻮُﻧَﻭﺎَﻌَﺗ ﺎَﻟَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِﻢۡﺛِﺈۡﻟﭐ
ِۚﻥَٰﻭۡﺪُﻌۡﻟﭐَﻭ ﴾ ‏[ :ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ٢ ]
‘‘তোমরা পূণ্য ও তাকওয়ার
কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর
এবং গুনাহ ও সীমালঙ্ঘণের
কাজে একে অপরকে সহযোগিতা
করো না।”[8]
সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম
পরস্পরের সাথে সাক্ষাত হলে এ
মহতি কাজটির কথা স্মরণ করে দিতেন।
সেজন্য তাদের কেউ কেউ অধিকাংশ সময়
মজলিশ হতে বিদায় বেলায় ও প্রথম
সাক্ষাতে সূরা আছর তেলাওয়াত করতেন
বলে কোনো কোনে বর্ণনায় এসেছে [9] ।
আল্লাহ বলেন-
﴿ ِﺮۡﺼَﻌۡﻟﭐَﻭ ١ َﻦَٰﺴﻧِﺈۡﻟﭐ َّﻥِﺇ ﻲِﻔَﻟ ٍﺮۡﺴُﺧ
٢ ﺎَّﻟِﺇ ْﺍﻮُﻨَﻣﺍَﺀ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ْﺍﻮُﻠِﻤَﻋَﻭ
ِﺖَٰﺤِﻠَّٰﺼﻟﭐ ِّﻖَﺤۡﻟﭑِﺑ ْﺍۡﻮَﺻﺍَﻮَﺗَﻭ
ْﺍۡﻮَﺻﺍَﻮَﺗَﻭ ِﺮۡﺒَّﺼﻟﭑِﺑ ٣ ﴾ ‏[ :ﺮﺼﻌﻟﺍ ،١
٣]
‘‘সময়ের কসম, নিশ্চয় আজ মানুষ
ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত।
তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান
এনেছে, সৎকাজ করেছে,
পরস্পরকে সত্যের উপদেশ
দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের
উপদেশ দিয়েছে।”[10]
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ
হতে নিষেধ রাসূলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ গুণের
পথিকৃত ছিলেন। তিনি নবুওয়তের
পূর্বে অন্যায় অবিচার রুখতে হিলফুল
ফুযুলে অংশ নিয়েছেন। ছোট
বেলা থেকে মৌলিক মানবীয় সৎ
গুণাবলী তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠায় আল-
আমিন, আল সাদিক উপাধিতে তিনি ভুষিত
ছিলেন। তাঁর গুণাবলীর
বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
ﻢُﻫُﺮُﻣۡﺄَﻳ﴿ ۡﻢُﻬٰﻯَﻬۡﻨَﻳَﻭ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ ِﻦَﻋ
ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ ُّﻞِﺤُﻳَﻭ ِﺖَٰﺒِّﻴَّﻄﻟﭐ ُﻢُﻬَﻟ ُﻡِّﺮَﺤُﻳَﻭ
ُﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ َﺚِﺌَٰٓﺒَﺨۡﻟﭐ ۡﻢُﻬۡﻨَﻋ ُﻊَﻀَﻳَﻭ ۡﻢُﻫَﺮۡﺻِﺇ
َﻞَٰﻠۡﻏَﺄۡﻟﭐَﻭ ۡﺖَﻧﺎَﻛ ﻲِﺘَّﻟﭐ ۚۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ
﴾ ‏[:ﻑﺍﺮﻋﻻﺍ ١٥٧ ‏]
‘‘তিনি সৎকাজের আদেশ করেন
এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করেন।
মানবজাতির জন্য সকল উত্তম ও
পবিত্র জিনিসগুলো বৈধ করেন
এবং খারাপ বিষয়গুলো হারাম
করেন।’’[11]
আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে তাঁর
রিসালাতের পূর্ণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সে সত্ত্বা, যাঁর কর্মকাণ্ড
সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন,
তাকে পাঠানো হয়েছে যাতে তিনি
সৎকাজের আদেশ দেন, সকল অসৎ কর্ম
হতে বারণ করেন, সব উত্তম বিষয় হালাল
করেন এবং অপবিত্রগুলো হারাম করেন।
এজন্যে রাসূল নিজেও বলেছেন-
« ﺏ ﺖﺜﻋ ﻡﺭﺎﻜﻣ ﻢﻤﺗﻷ ﻕﻼﺧﻷﺍ »
‘‘আমি সকল পবিত্র
চরিত্রাবলী পরিপূর্ণতা সাধনের
জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’’[12]
শুধু তাই নয় মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করে তিনি ‘হিসবা’ নামক
একটি বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ
কাজটি আঞ্জাম দিতেন।
পরবর্তীতে খোলাফায়ে রাশেীনের যুগেও
এ বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত ছিল।
ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব
হলো সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ ও
অন্যায় কাজ হতে মানুষকে বারণ করা।
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ
করা মুমিনের গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত
সৎ কাজের আদেশ দান ও
অসৎকাজে বাধা দান মুমিনের অন্যতম
দায়িত্ব। মুমিন নিজে কেবল সৎকাজ
করবে না, বরং সকলকে সে কাজের
প্রতি উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালাতে হবে।
কেননা, তারা পরস্পরের বন্ধু। অতএব একবন্ধু
অপর বন্ধুর জন্য কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু
কামনা করতে পারে না। এদিকে ইঙ্গিত
করে মহান আল্লাহ বলেন-
َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐَﻭ﴿ ُﺖَٰﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐَﻭ ۡﻢُﻬُﻀۡﻌَﺑ
ُﺀٓﺎَﻴِﻟۡﻭَﺃ ٖۚﺾۡﻌَﺑ َﻥﻭُﺮُﻣۡﺄَﻳ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ
َﻥۡﻮَﻬۡﻨَﻳَﻭ ِﻦَﻋ َﻥﻮُﻤﻴِﻘُﻳَﻭ ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ
َﺓٰﻮَﻠَّﺼﻟﭐ َﺓٰﻮَﻛَّﺰﻟﭐ َﻥﻮُﺗۡﺆُﻳَﻭ
َﻥﻮُﻌﻴِﻄُﻳَﻭ ۚٓۥُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ َﻪَّﻠﻟﭐ َﻚِﺌَٰٓﻟْﻭُﺃ
ُﻢُﻬُﻤَﺣۡﺮَﻴَﺳ ُۗﻪَّﻠﻟﭐ ٧١ ﴾ ‏[ :ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ٧١ ‏]
‘‘মুমিন নারী ও পুরুষ তারা পরস্পরের
বন্ধু। তারা একে অপরকে যাবতীয়
ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও
পাপ কাজ হতে বিরত রাখে, সালাত
কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ
করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের
আনুগত্য করে। তারা এমন লোক
যাদের প্রতি অচিরেই আল্লাহর রহমত
বর্ষিত হবে।’’[13]
কুরআনের অসংখ্য আয়াতে মুমিনের অন্যতম
চরিত্র-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত
করা হয়েছে। সকল স্থানে অন্যান্য
গুণাবলীর পাশাপাশি অন্যতম গুণ
হিসেবে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের
নিষেধের অবতারণা করা হয়েছে।
কুরআনে এসেছে:
﴿ َﻥﻭُﺪِﻤَٰﺤۡﻟﭐ َﻥﻭُﺪِﺒَٰﻌۡﻟﭐ َﻥﻮُﺒِﺌَّٰٓﺘﻟﭐ
َﻥﻭُﺪِﺠَّٰﺴﻟﭐ َﻥﻮُﻌِﻛَّٰﺮﻟﭐ َﻥﻮُﺤِﺌَّٰٓﺴﻟﭐ
َﻥﻭُﺮِﻣٓﺄۡﻟﭐ ِﻑﻭُﺮۡﻌَﻤۡﻟﭑِﺑ َﻥﻮُﻫﺎَّﻨﻟﭐَﻭ
ِﺮَﻜﻨُﻤۡﻟﭐ ِﻦَﻋ َﻥﻮُﻈِﻔَٰﺤۡﻟﭐَﻭ ِﺩﻭُﺪُﺤِﻟ
ِۗﻪَّﻠﻟﭐ ِﺮِّﺸَﺑَﻭ َﻦﻴِﻨِﻣۡﺆُﻤۡﻟﭐ
﴾١١٢ ‏[:ﺔﺑﻮﺘﻟﺍ ١١٢ ‏]
‘‘তারা আল্লাহর
দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, আল্লাহর
গোলামীর জীবন-যাপনকারী। তাঁর
প্রশংসা উচ্চারণকারী, তাঁর জন্য
যমীনে পরিভ্রমণকারী, তাঁর
সম্মুখে রুকু ও সিজদায় অবনত। সৎ
কাজের আদেশ দানকারী, অন্যায়ের
বাধা দানকারী এবং আল্লাহর
নির্ধারিত সীমা রক্ষাকারী।
হে নবী, তুমি এসব মুমিনদের সুসংবাদ
দাও।”[14]

>[1] সূরা আল-মায়িদাহ:২৭।
[2] সূরা আন-নাহল:৩৬।
[3] সূরা ইবরাহীম:১।
[4] সূরা যিলযাল:৭-৮।
[5] সূরা ইনফিতার:১১-১৯।
[6] সূরা ইনফিতার:৬।
[7] সূরা আত তাহরীম:৬।
[8] সূরা আল মায়িদাহ:২।
[9] তবে বর্ণনাটি দুর্বল।
[10] সূরা আল আছর”১-৩।
[11] সূরা আল আরাফ: ১৫৭।
[12] ইমাম মালিক, মুয়াত্তা ৫/২৫১।
[13] সূরা আত তাওবা: ৭১।
[14] সূরা আত তাওবা:১১২।

বিপদে ধৈর্যধারণ

বিপদে ধৈর্যধারণ : দশটি উপদেশ
কে আছে এমন, যে পিতা-মাতা,
ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, বন্ধু-
বান্ধব, প্রিয়জন কিংবা কোন
নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে শোকাহত
হয়নি, চক্ষুদ্বয় অশ্রু বিসর্জন
করেনি; ভর দুপুরেও
গোটা পৃথিবী ঝাপসা হয়ে আসেনি
; সুদীর্ঘ, সুপ্রশস্ত পথ সরু ও সংকীর্ণ
হয়ে যায়নি; ভরা যৌবন সত্ত্বেও
সুস্থ দেহ নিশ্চল হয়ে পড়েনি;
অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপ্রতিরোধ্য
ক্রন্দন
ধ্বনি তুলতে তুলতে গলা শুকিয়ে
আসেনি; অবিশ্বাস সত্ত্বেও
মর্মন্তুদ কঠিন
বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য
হয়নি; এই বুঝি চলে গেল, চির
দিনের জন্য; আর কোন দিন
ফিরে আসবে না; কোন দিন তার
সাথে দেখা হবে না; শত আফসোস
ঠিকরে পড়ে, কেন তাকে কষ্ট
দিয়েছি; কেন তার বাসনা পূর্ণ
করিনি; কেন তার সাথে রাগ
করেছি; কেন তার
থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি।
আরো কত ভয়াবহ স্মৃতির
তাড়না তাড়িয়ে বেড়ায়,
শোকাতুর করে, কাঁদায়। কত
ভর্ৎসনা থেমে থেমে হৃদয়ে
অস্বস্তির জন্ম দেয়, কম্পনের
সূচনা করে অন্তরাত্মায়। পুনঃপুন
একই অভিব্যক্তি আন্দোলিত হয়-
মুখের ভাষা যা ব্যক্ত করতে অক্ষম।
হাতের কলম যা লিখতে অপারগ।
হ্যাঁ, এ কঠিনতম মুহূর্ত, হতাশাময়
পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে শক্তি,
সাহস ও সুদৃঢ় মনোবল উপহার দেয়ার
মানসে আমাদের এ প্রয়াস।
আমরা মুসলমান। আমাদের মনোনীত
রব আল্লাহ। আমাদের পছন্দনীয় ধর্ম
ইসলাম। আমাদের একমাত্র আদর্শ
মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারাই
আত্মতৃপ্তি লাভের যোগ্যপাত্র।
পক্ষান্তরে কাফেরদের জীবন
সংকীর্ণ, তারা হতাশাগ্রস্ত,
তারা এ তৃপ্তি লাভের অনুপোযুক্ত।
কারণ, আল্লাহ মোমিনদের
অভিভাবক, কাফেরদের
কোনো অভিভাবক নেই।
বিশ্ব নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব
জগতে মোমিনদের অবস্থার
একটি উদাহরণ পেশ করেছেন।
তিনি বলেন :
ﻦﻣﺆﻤﻟﺍ ﻞﺜﻣ ﻉﺭﺰﻟﺍ ﻞﺜﻤﻛ ﻻ ﻝﺍﺰﺗ
ﺢﻳﺮﻟﺍ ،ﻪﻠﻴﻤﺗ ﻻﻭ ﻦﻣﺆﻤﻟﺍ ﻝﺍﺰﻳ
ﻪﺒﻴﺼﻳ ،ﺀﻼﺒﻟﺍ ﻖﻓﺎﻨﻤﻟﺍ ﻞﺜﻣﻭ ﻞﺜﻤﻛ
ﺓﺮﺠﺷ ﺯﺭﻷﺍ ﺰﺘﻬﺗﻻ .ﺪﺼﺤﺘﺴﺗ ﻰﺘﺣ
‏( ﻢﻠﺴﻣ ﺢﻴﺤﺻ :৫০২৪)
“একজন মোমিনের উদাহরণ
একটি শস্যের মত,
থেকে থেকে বাতাস
তাকে দোলায়। তদ্রূপ একের পর এক
মুসিবত অবিরাম অস্থির
করে রাখে মোমিনকে।
পক্ষান্তরে একজন মুনাফেকের
উদাহরণ একটি দেবদারু বৃক্ষের
ন্যায়, দুলে না, কাত হয়েও পড়ে না,
যাবৎ-না শিকড়
থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয়
তাকে।”[১]
আবু হুরায়রা রা.-র সূত্রে বর্ণিত
আরেকটি উদাহরণে আছে, রসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻦﻣﺆﻤﻟﺍ ﻞﺜﻣ ﻞﺜﻤﻛ ﻉﺭﺰﻟﺍ ﺔﻣﺎﺧ ﺀﻲﻔﻳ
ﻪﻗﺭﻭ ﻦﻣ ﺎﻬﺘﺗﺃ ﺚﻴﺣ ،ﺎﻫﺆﻔﻜﺗ ﺢﻳﺮﻟﺍ
ﺍﺫﺈﻓ ﺖﻨﻜﺳ ﻚﻟﺬﻛﻭ ،ﺖﻟﺪﺘﻋﺍ ﻦﻣﺆﻤﻟﺍ
ﺂﻔﻜﻳ ،ﺀﻼﺒﻟﺎﺑ ﺮﻓﺎﻜﻟﺍ ﻞﺜﻣﻭ ﻞﺜﻤﻛ
ﺓﺯﺭﻷﺍ ﺔﻟﺪﺘﻌﻣ ﺀﺎﻌﻤﺻ ﻰﺘﺣ ﺎﻬﻤﺼﻘﻳ
ﻪﻠﻟﺍ ﺍﺫﺇ .ﺀﺎﺷ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﺢﻴﺤﺻ :
৬৯১২)
“ইমানদার ব্যক্তির উদাহরণ শস্যের
নরম ডগার ন্যায়, বাতাস
যে দিকেই বয়ে চলে, সেদিকেই
তার পত্র-পল্লব ঝুঁকে পড়ে। বাতাস
যখন থেমে যায়, সেও স্থির
হয়ে দাঁড়ায়। ইমানদারগণ বালা-
মুসিবত দ্বারা এভাবেই পরীক্ষিত
হন। কাফেরদের উদাহরণ দেবদারু
(শক্ত পাইন) বৃক্ষের ন্যায়,
যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয়।
আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তা মূলসহ
উপড়ে ফেলেন।”[২]
শস্যের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে।
তার সাথে একাকার হয়ে যায়।
যদিও বাতাস শস্যকে এদিক-সেদিক
দোলায়মান রাখে। কিন্তু
ছুঁড়ে মারতে,
টুকরা করতে বা নীচে ফেলে দিতে
পারে না। তদ্রুপ মুসিবত যদিও
মোমিনকে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত ও
চিন্তামগ্ন রাখে, কিন্তু
সে তাকে হতবিহ্বল, নিরাশ
কিংবা পরাস্ত করতে পারে না।
কারণ, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস
তাকে প্রেরণা দেয়, তার
মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে,
সর্বোপরি তাকে হেফাজত করে।
এ পার্থিব জগৎ দুঃখ-বেদনা,
দুর্যোগ-দুর্ঘটনা, সংহার ও জীবন
নাশকতায় পরিপূর্ণ। এক সময়
প্রিয়জনকে পাওয়ার আনন্দ হয়,
আরেক সময় তাকে হারানোর দুঃখ।
এক সময় সুস্থ, সচ্ছল, নিরাপদ জীবন,
আরেক সময় অসুস্থ, অভাবী ও
অনিরাপদ জীবন। মুহূর্তে জীবনের
পট পালটে যায়, ভবিষ্যৎ কল্পনার
প্রাসাদ দুমড়ে-
মুচড়ে মাটিতে মিশে যায়।
অথবা এমন সংকট ও
কর্মশূন্যতা দেখা দেয়, যার
সামনে সমস্ত বাসনা নিঃশেষ
হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় সব উৎসাহ-
উদ্দীপনা।
কারণ এ দুনিয়ায় নেয়ামত-মুসিবত,
হর্ষ-বিষাদ, হতাশা-প্রত্যাশা সব
কিছুর অবস্থান পাশাপাশি।
ফলে কোন এক অবস্থার
স্থিরতা অসম্ভব। পরিচ্ছন্নতার
অনুচর পঙ্কিলতা, সুখের
সঙ্গী দুঃখ। হর্ষ-উৎফুল্ল ব্যক্তির
ক্রন্দন করা, সচ্ছল ব্যক্তির
অভাবগ্রস্ত
হওয়া এবং সুখী ব্যক্তির দুঃখিত
হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
এ হলো দুনিয়া ও তার অবস্থা।
প্রকৃত মোমিনের এতে ধৈর্যধারণ
বৈ উপায় নেই। বরং এতেই
রয়েছে দুনিয়ার উত্থান-পতনের
নিরাময় তথা উত্তম প্রতিষেধক।
হাসান
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন :
ﺎﻨﺑﺮﺟ ﺏﺮﺟﻭ ﻥﻮﺑﺮﺠﻤﻟﺍ ﻢﻠﻓ ﺎﺌﻴﺷ ﺮﻧ
ﻊﻔﻧﺃ ،ﺮﺒﺼﻟﺍ ﻦﻣ ﻯﻭﺍﺪﺗ ﻪﺑ ،ﺭﻮﻣﻷﺍ
ﻮﻫﻭ ﻯﻭﺍﺪﻳ ﻻ ﻩﺮﻴﻐﺑ .
“আমাদের
অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানীদেরও
অভিজ্ঞতা, ধৈর্যের
চেয়ে মূল্যবান বস্তু আর পায়নি।
ধৈর্যের মাধ্যমে সব সমস্যার
সমাধান করা যায়, তবে তার
সমাধান সে নিজেই।” অর্থাৎ
প্রত্যেক জিনিসের জন্য ধৈর্যের
প্রয়োজন, আবার ধৈর্যের জন্যও
ধৈর্য প্রয়োজন। হাদিসে এসেছে :
ﻲﻄﻋﺃ ﺎﻣﻭ ﺍﺪﺣﺃ ﺀﺎﻄﻋ ﻊﺳﻭﺃﻭ ﺍﺮﻴﺧ ﻦﻣ
.ﺮﺒﺼﻟﺍ ‏( ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ :১৩৭৬، ﻭ ﻢﻠﺴﻣ :
১৭৪৫)
“ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপকতর
কল্যাণ কাউকে প্রদান
করা হয়নি।”[৩]
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে :
ﻪﺘﺑﺎﺻﺃ ﻥﺇ ﺀﺍﺮﺳ ﺮﻜﺷ ،ﻪﻟﺍﺮﻴﺧ ﻥﺎﻜﻓ
ﻪﺘﺑﺎﺻﺃ ﻥﺇﻭ ﺀﺍﺮﺿ ﺮﺒﺻ ﺍﺮﻴﺧ ﻥﺎﻜﻓ
.ﻪﻟ ‏(ﻢﻠﺴﻣ : ৫৩১৮)
“মোমিনের ব্যাপারটি চমৎকার,
নেয়ামত অর্জিত
হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে,
যা তার জন্য মঙ্গলজনক
এতে কৃতজ্ঞতার সওয়াব অর্জিত হয়।
মুসিবতে পতিত হলে ধৈর্যধারণ
করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর
এতে ধৈর্যের সওয়াব লাভ হয়।”[৪]
আল্লাহ তাআলা আমাদের
ধৈর্য্যধারণের নির্দেশ দিয়েছেন
এবং একে তার সাহায্য ও সান্নিধ্য
লাভের উপায় ঘোষণা করেছেন।
এরশাদ হচ্ছে :
ﺎَﻳ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ﺍﻮُﻨَﻣَﺁ ﺍﻮُﻨﻴِﻌَﺘْﺳﺍ
ِﺓﺎَﻠَّﺼﻟﺍَﻭ ِﺮْﺒَّﺼﻟﺎِﺑ َّﻥِﺇ َﻪَّﻠﻟﺍ َﻊَﻣ
َﻦﻳِﺮِﺑﺎَّﺼﻟﺍ ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ﴿ :১৫৩﴾
“হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের
মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের
সাথে আছেন।”[৫]
আরো বিষেশভাবে জানিয়ে
দিয়েছেন পার্থিব জীবন
একটি পরীক্ষাগার,
আমি তোমাদেরকে ভয়-ভীতি,
ক্ষুধা-দারিদ্র, ধন-সম্পদ, জনবল ও
ফল-মূলের সল্পতার
মাধ্যমে পরীক্ষা করব। হে রাসূল!
আপনি ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ
দিন। এরশাদ হচ্ছে :
ْﻢُﻜَّﻧَﻮُﻠْﺒَﻨَﻟَﻭ ٍﺀْﻲَﺸِﺑ ِﻑْﻮَﺨْﻟﺍ َﻦِﻣ ِﻉﻮُﺠْﻟﺍَﻭ
ٍﺺْﻘَﻧَﻭ ِﺲُﻔْﻧَﺄْﻟﺍَﻭ ِﻝﺍَﻮْﻣَﺄْﻟﺍ َﻦِﻣ
ِﺕﺍَﺮَﻤَّﺜﻟﺍَﻭ ِﺮِّﺸَﺑَﻭ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ .َﻦﻳِﺮِﺑﺎَّﺼﻟﺍ
ٌﺔَﺒﻴِﺼُﻣ ْﻢُﻬْﺘَﺑﺎَﺻَﺃ ﺍَﺫِﺇ ﺍﻮُﻟﺎَﻗ ﺎَّﻧِﺇ ِﻪَّﻠِﻟ
ﺎَّﻧِﺇَﻭ ِﻪْﻴَﻟِﺇ .َﻥﻮُﻌِﺟﺍَﺭ ْﻢِﻬْﻴَﻠَﻋ َﻚِﺌَﻟﻭُﺃ
ٌﺕﺍَﻮَﻠَﺻ ْﻦِﻣ ْﻢِﻬِّﺑَﺭ َﻚِﺌَﻟﻭُﺃَﻭ ٌﺔَﻤْﺣَﺭَﻭ ُﻢُﻫ
َﻥﻭُﺪَﺘْﻬُﻤْﻟﺍ ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ﴿ :১৫৫-১৫৭﴾
“আর আমি অবশ্যই
তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু
ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-
ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর
তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।
যারা, তাদেরকে যখন বিপদ
আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয়
আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়
আমরা তাঁর
দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের
উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ
থেকে মাগফিরাত ও রহমত
এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।”[৬]
বস্তত নিজ
দায়িত্বে আত্মোনিয়োগ, মনোবল
অক্ষুণ্ন ও কর্ম চঞ্চলতার জন্য ধৈর্য
অপরিহার্য। কেউ সাফল্য বিচ্যুত
হলে, বুঝতে হবে ধৈর্য্য ও
সহিষ্ণুতার অভাব রয়েছে তার
মধ্যে। কারণ ধৈর্য্যের
মতো শক্তিশালী চাবির
মাধ্যমে সাফল্যের সমস্ত বদ্ধ
কপাট উম্মুক্ত হয়। পাহাড়সম
বাধার সম্মুখেও
কর্মমুখরতা চলমান থাকে।
মানব জাতির জীবন প্রবাহের
পদে পদে ধৈর্যের
অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য বিধায়
এ নিবন্ধের সূচনা। কেন ধৈর্যধারণ
করব? কী তার ফল?
কীভাবে ধৈর্যধারণ করব? কী তার
পদ্ধতি? ইত্যাদি বিষয়ের উপর
দশটি উপদেশ উল্লেখ করব।
যা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর
বিশেষ
উপকারে আসবে বলে আমাদের
বিশ্বাস। মুসিবত আর প্রতিকূলতায়
নিত্যদিনের মত স্বাভাবিক জীবন
উপহার দিবে।
শোককে শক্তিতে পরিণত
করে এগিয়ে যাবে সাফল্যমণ্ডিত
জীবন লাভে।
১. যে কোন
পরিস্থিতি মেনে নেয়ার
মানসিকতা লালন করা
প্রত্যেকের প্রয়োজন মুসিবত আসার
পূর্বেই নিজকে মুসিবত সহনীয়
করে তোলা, অনুশীলন করা ও
নিজেকে শোধরে নেয়া। কারণ
ধৈর্য কষ্টসাধ্য জিনিস, যার জন্য
পরিশ্রম অপরিহার্য।
স্মর্তব্য যে, দুনিয়া অনিত্য, ভঙ্গুর
ও ক্ষণস্থায়ী। এতে কোনো প্রাণীর
স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। আছে শুধু
ক্ষয়িষ্ণু এক মেয়াদ, সিমীত
সামর্থ। এ ছাড়া আর কিছুই নেই।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পার্থিব
জীবনের উদাহরণে বলেন :
ﺐﻛﺍﺮﻛ ﺭﺎﺳ ﻲﻓ ﻡﻮﻳ ،ﻒﺋﺎﺻ ﻞﻈﺘﺳﺎﻓ
ﺓﺮﺠﺷ ﺖﺤﺗ ﺔﻋﺎﺳ ﻦﻣ ،ﺭﺎﻬﻧ ﻢﺛ ﺡﺍﺭ
.ﺎﻬﻛﺮﺗﻭ ‏( ﺪﻨﺴﻣ ،ﺪﻤﺣﺃ ﻡﺎﻣﻹﺍ ﻦﻣ
ﺚﻳﺪﺣ ﺪﺒﻋ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﺑ ،ﺱﺎﺒﻋ ﻢﻗﺭ : ২৭৪৪)
“পার্থিব জীবন ঐ পথিকের ন্যায়,
যে গ্রীষ্মে রৌদ্রজ্জ্বল তাপদগ্ধ
দিনে যাত্রা আরম্ভ করল, অতঃপর
দিনের ক্লান্তময় কিছু সময়
একটি গাছের নীচে বিশ্রাম নিল,
ক্ষণিক পরেই তা ত্যাগ করে পুনরায়
যাত্রা আরম্ভ করল।”[৭]
হে মুসলিম! দুনিয়ার সচ্ছলতার
দ্বারা ধোঁকা খেওনা,
মনে করো না, দুনিয়া স্বীয়
অবস্থায় আবহমানকাল বিদ্যমান
থাকবে কিংবা পট পরিবর্তন
বা উত্থান-পতন থেকে নিরাপদ
রবে। অবশ্য যে দুনিয়াকে চিনেছে,
এর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে, তার
নিকট দুনিয়ার সচ্ছলতা মূল্যহীন।
জনৈক বিদ্বান ব্যক্তি বলেন,
“যে দুনিয়া থেকে সতর্ক
থেকেছে ভবিষ্যত
জীবনে সে অস্থির হয়নি।
যে অনুশীলন
করেছে পরবর্তীতে তার পদস্খলন
ঘটেনি।
যে অবর্তমানে অপেক্ষমাণ ছিল
বর্তমানে সে দুঃখিত হয়নি।”
মুদ্দা কথা, যে পার্থিব
জগতে দীর্ঘজীবি হতে চায়, তার
প্রয়োজন মুসিবতের জন্য ধৈর্য্যশীল
এক হৃদয়।
২. তাকদিরের উপর ঈমান
যে ব্যক্তি মনে করবে তাকদির
অপরিহার্য
বাস্তবতা এবং তা অপরিবর্তনীয়।
পক্ষান্তরে দুনিয়া সংকটময় ও
পরিবর্তনশীল, তার
আত্মা প্রশান্তি লাভ করবে।
দুনিয়ার উত্থান-পতন সুখ-দুঃখ
স্বাভাবিক ও নগন্য মনে হবে তার
কাছে। আমরা দেখতে পাই,
তাকদিরে বিশ্বাসী মুমিনগণ
পার্থিব মুসিবতে সবচে’ কম
প্রতিক্রিয়াশীল, কম অস্থির ও কম
হতাশাগ্রস্ত হন। বলা যায়
তাকদিরের প্রতি ঈমান শান্তি ও
নিরাপত্তার ঠিকানা। তাকদির-ই
আল্লাহর কুদরতে মোমিনদের হৃদয়-
আত্মা নৈরাশ্য ও হতাশা মুক্ত
রাখে।
তদুপরি চিরসত্যবাদী মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের
হাদিসে বিশ্বাস তো আছেই :
ﻢﻠﻋﺍﻭ ﻥﺃ ﺔﻣﻷﺍ ﺖﻌﻤﺘﺟﺍﻮﻟ ﻰﻠﻋ ﻥﺃ
ﻙﻮﻌﻔﻨﻳ ﺀﻲﺸﺑ ﻙﻮﻌﻔﻨﻳ ﻢﻟ ﺀﻲﺸﺑ ﻻﺇ ﺪﻗ
ﻪﺒﺘﻛ ﻪﻠﻟﺍ ،ﻚﻟ ﺖﻌﻤﺘﺟﺍ ﻮﻟﻭ ﻰﻠﻋ ﻥﺃ
ﻙﻭﺮﻀﻳ ﺀﻲﺸﺑ ﻢﻟ ﻙﻭﺮﻀﻳ ﺀﻲﺸﺑ ﻻﺇ ﺪﻗ
ﻪﺒﺘﻛ ﻪﻠﻟﺍ ،ﻚﻴﻠﻋ ﺖﻌﻓﺭ ،ﻡﻼﻗﻷﺍ
ﺖﻔﺟﻭ .ﻒﺤﺼﻟﺍ ‏( ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ ﻦﻨﺳ : ২৪৪০)
“জেনে রেখ, সমস্ত মানুষ
জড়ো হয়ে যদি তোমার উপকার
করতে চায়, কোনও উপকার
করতে পারবে না, তবে যতটুকু
আল্লাহ তোমার জন্য
লিখে রেখেছেন। আবার
তারা সকলে মিলে যদি তোমার
ক্ষতি করতে চায়, কোনও
ক্ষতি করতে পারবে না, তবে যততুটু
আল্লাহ তোমার
কপালে লিখে রেখেছেন। কলম
উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, কিতাব
শুকিয়ে গেছে।”[৮]
আমাদের আরো বিশ্বাস, মানুষের
হায়াত, রিযিক তার মায়ের উদর
থেকেই নির্দিষ্ট। আনাস
রাদিআল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻪﻠﻟﺍ ﻞﻛﻭ ﻢﺣﺮﻟﺎﺑ :ﻝﻮﻘﻴﻓ ،ﺎﻜﻠﻣ ﻱﺃ
؟ﺔﻔﻄﻧ ﺏﺭ ﻱﺃ ؟ﺔﻘﻠﻋ ﺏﺭ ﻱﺃ ؟ﺔﻐﻀﻣ ﺏﺭ
ﺍﺫﺈﻓ ﺩﺍﺭﺃ ﻪﻠﻟﺍ ﻥﺃ ﻲﻀﻘﻳ ،ﺎﻬﻘﻠﺧ
: ﻝﺎﻗ ﻱﺃ ﺏﺭ ﺮﻛﺫﺃ ؟ﻰﺜﻧﺃ ﻡﺃ ﻲﻘﺷﺃ ﻡﺃ
؟ﺪﻴﻌﺳ ﺎﻤﻓ ؟ﻕﺯﺮﻟﺍ ؟ﻞﺟﻷﺍ ﺎﻤﻓ
ﺐﺘﻜﻴﻓ ﻚﻟﺬﻛ ﻲﻓ ﻦﻄﺑ .ﻪﻣﺃ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ :
৬১০৬، ﻢﻠﺴﻣﻭ : ৪৭৮৫)
“আল্লাহ তাআলা গর্ভাশয়ে একজন
ফেরেস্তা নিযুক্ত করে রেখেছেন,
পর্যায়ক্রমে সে বলতে থাকে,
হে প্রভু জমাট রক্ত, হে প্রভু মাংস
পিণ্ড। যখন আল্লাহ
তাকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন,
ফেরেস্তা তখন বলে, হে প্রভু
পুঃলিঙ্গ না স্ত্রী লিঙ্গ?
ভাগ্যবান না হতভাগা? রিযিক
কতটুকু? হায়াত কতটুকু? উত্তর
অনুযায়ী পূর্ণ বিবরণ মায়ের পেটেই
লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়।”[৯]
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সহধর্মিনী উম্মে হাবিবা
রাদিআল্লাহু
আনহা মুনাজাতে বলেন,
“হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূল,
আমার পিতা আবু সুফিয়ান
এবং আমার ভাই মুয়াবিয়ার
দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﺪﻗ ﻪﻠﻟﺍ ﺖﻟﺄﺳ ﻝﺎﺟﻵ ﻡﺎﻳﺃﻭ ،ﺔﺑﻭﺮﻀﻣ
،ﺓﺩﻭﺪﻌﻣ ،ﺔﻣﻮﺴﻘﻣ ﻕﺍﺯﺭﺃﻭ ﻦﻟ ﻞﺠﻌﻳ
ﻪﻠﻟﺍ ﻞﺒﻗ ،ﻪﻠﺣ ﻭﺃ ﺎﺌﻴﺷ ﺮﺧﺆﻳ ﻦﻋ
،ﻪﻠﺣ ﻮﻟﻭ ﺖﻨﻛ ﻪﻠﻟﺍ ﺖﻟﺄﺳ ﻙﺬﻴﻌﻳ ﻥﺃ
ﻦﻣ ﺏﺍﺬﻋ ،ﺭﺎﻨﻟﺍ ﻲﻓ ﻭﺃ ﺏﺍﺬﻋ ﻲﻓ
،ﺮﺒﻘﻟﺍ ﻥﺎﻛ ﺍﺮﻴﺧ .ﻞﻀﻓﺃﻭ ‏( ﻢﻠﺴﻣ :
৪৮১৪)
“তুমি নির্ধারিত হায়াত,
নির্দিষ্ট কিছু দিন ও বণ্টনকৃত
রিযিকের প্রাথর্না করেছ।
যাতে আল্লাহ তাআলা আগ-পাছ
কিংবা কম-বেশী করবেন না।
এরচে’
বরং তুমি যদি জাহান্নামের আগুন
ও কবরের আযাব থেকে নাজাত
প্রার্থনা করতে, তাহলে তোমার
জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক হত।”[১০]
ইমাম
নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, “হাদীসের বক্তব্যে সুষ্পষ্ট,
মানুষের হায়াত, রিযিক আল্লাহ
কর্তৃক নির্ধারিত, তার অবিনশ্বর
জ্ঞান অনুযায়ী লিপিবদ্ধ
এবং হ্রাস-বৃদ্ধিহীন ও
অপরিবর্তনীয়।”[১১]
ইবনে দায়লামী রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি উবাই ইবনে কাব
রাদিআল্লাহু আনহুর নিকট আসেন
এবং বলেন, আমার অন্তরে তাকদির
সম্পর্কে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
আমাকে কিছু বর্ণনা করে শোনান।
হতে পারে আল্লাহ আমার অন্তর
থেকে তা দূর করে দিবেন।
তিনি বলেন, আল্লাহ আসমান
এবং জমিনবাসীদের
শাস্তি দিলে, জালেম
হিসেবে গণ্য হবেন না। আর
তিনি তাদের সকলের উপর রহম
করলে, তার রহম-ই তাদের আমলের
তুলনায় বেশী হবে। তাকদিরের
প্রতি ঈমান ব্যতীত ওহুদ পরিমান
স্বর্ণ দান করলেও কবুল হবে না।
স্মরণ রেখ, যা তোমার হস্তগত
হওয়ার তা কোনভাবেই হস্তচ্যুত
হওয়ার সাধ্য রাখে না। এতদ্ভিন্ন
অন্য আকিদা নিয়ে মৃত্যুবরণ
করলে জাহান্নাম অবধারিত।
তিনি বলেন, অতঃপর
আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর
কাছে আসি। তিনিও তদ্রূপ
শোনালেন। হুযাইফাতুল য়ামান এর
কাছে আসি, তিনিও তদ্রুপ বললেন।
যায়েদ বিন ছাবেত এর কাছে আসি,
তিনিও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ
বর্ণনা করে শোনালেন।”[১২]
৩. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এবং আদর্শ পূর্বসূরীদের জীবন
চরিত পর্যালোচনা
পরকালে বিশ্বাসী আল্লাহ ভীরু
গোটা মুসলিম জাতির আদর্শ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ
তাআলা বলেন :
ْﺪَﻘَﻟ َﻥﺎَﻛ ْﻢُﻜَﻟ ﻲِﻓ ِﻪَّﻠﻟﺍ ِﻝﻮُﺳَﺭ ٌﺓَﻮْﺳُﺃ
ٌﺔَﻨَﺴَﺣ ْﻦَﻤِﻟ َﻥﺎَﻛ ﻮُﺟْﺮَﻳ َﻡْﻮَﻴْﻟﺍَﻭ َﻪَّﻠﻟﺍ
َﺮِﺧَﺂْﻟﺍ َﺮَﻛَﺫَﻭ ﺍًﺮﻴِﺜَﻛ َﻪَّﻠﻟﺍ ﴿
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ:২১﴾
“অবশ্যই তোমাদের জন্য
রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম
আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও
পরকাল
প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে
অধিক স্মরণ করে।”[১৩]
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত
চিন্তাশীল, গবেষকদের উপজীব্য ও
শান্তনার বস্তু। তার পূর্ণ জীবনটাই
ধৈর্য ও ত্যাগের দীপ্ত উপমা।
লক্ষ্য করুন, সল্প
সময়ে মধ্যে চাচা আবু তালিব,
যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে কাফেরদের অত্যাচার
প্রতিহত করতেন; একমাত্র বিশ্বস্ত
সহধর্মিনী খাদিজা; কয়েকজন
ঔরসজাত
মেয়ে এবং ছেলে ইব্রাহিম
ইন্তেকাল করেন। চক্ষুযুগল
অশ্রসিক্ত, হৃদয় ভারাক্রান্ত,
স্মায়ুতন্ত্র ও অস্থিমজ্জা নিশ্চল
নির্বাক। এর পরেও প্রভুর
ভক্তিমাখা উক্তি :
ﻦﻴﻌﻟﺍ ﻥﺇ ،ﻊﻣﺪﺗ ﺐﻠﻘﻟﺍﻭ ،ﻥﺰﺤﻳ
ﻝﻮﻘﻧﻻﻭ ﻻﺇ ﺎﻣ ﻰﺿﺮﻳ ،ﺎﻨﺑﺭ ﺎﻧﺇﻭ
ﻚﻗﺍﺮﻔﺑ ﻢﻴﻫﺍﺮﺑﺇ ﺎﻳ .ﻥﻮﻧﻭﺰﺤﻤﻟ
‏( ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ : ১৩০৩)
“চোখ অশ্রুসিক্ত, অন্তর ব্যথিত, তবুও
তা-ই মুখে উচ্চারণ করব, যাতে প্রভু
সন্তুষ্ট, হে ইব্রাহিম! তোমার
বিরহে আমরা গভীর মর্মাহত।”[১৪]
আরো অনেক
আত্মোৎর্সগকারী সাহাবায়ে
কেরাম মারা যান, যাদের
তিনি ভালবাতেন, যারা তার জন্য
উৎসর্গ ছিলেন। এত সব দুঃখ-
বেদনা তার শক্তিতে প্রভাব
ফেলতে পারেনি। ধৈর্য-
অভিপ্রায়গুলো ম্লান
করতে পারেনি।
তদ্রুপ যে আদর্শবান পূর্বসুরীগণের
জীবন চরিত পর্যালোচনা করবে,
তাদের কর্মকুশলতায় অবগাহন
করবে, সে সহসাই অবলোকন করবে,
তারা বিবিধ কল্যাণ ও উচ্চ
মর্যাদার অধিকারী একমাত্র
ধৈর্য্যের সিঁড়ি বেয়েই হয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ْﺪَﻘَﻟ َﻥﺎَﻛ ْﻢِﻬﻴِﻓ ْﻢُﻜَﻟ ٌﺓَﻮْﺳُﺃ ٌﺔَﻨَﺴَﺣ ْﻦَﻤِﻟ
ﻮُﺟْﺮَﻳ َﻥﺎَﻛ َﻪَّﻠﻟﺍ .َﺮِﺧَﺂْﻟﺍ َﻡْﻮَﻴْﻟﺍَﻭ ﴿
ﺔﻨﺤﺘﻤﻤﻟﺍ:৬﴾
“নিশ্চয় তোমাদের জন্য তাদের
মধ্যে[১৫] উত্তম আদর্শ রয়েছে,
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের
প্রত্যাশা করে, আর যে মুখ
ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক)
নিশ্চয় আল্লাহ তো অভাবমুক্ত,
সপ্রশংসিত।”[১৬]
উরওয়া ইবনে জুবায়েরের ঘটনা,
আল্লাহ তাআলা তাকে এক
জায়গাতে, এক সাথে দুটি মুসিবত
দিয়েছেন।
পা কাটা এবং সন্তানের মৃত্যু।
তা সত্ত্বেও তিনি শুধু এতটুকু
বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমার
সাতটি ছেলে ছিল,
একটি নিয়েছেন, ছয়টি অবশিষ্ট
রেখেছেন। চারটি অঙ্গ ছিল
একটি নিয়েছেন, তিনটি নিরাপদ
রেখেছেন। মুসিবত দিয়েছেন,
নেয়ামতও প্রদান করেছেন।
দিয়েছেন আপনি, নিয়েছেনও
আপনি।”[১৭]
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ এর একজন
ছেলের ইন্তেকাল হয়। তিনি তার
দাফন সেরে কবরের
পাশে সোজা দাঁড়িয়ে, লোকজন
চারপাশ দিয়ে তাকে ঘিরে আছে,
তিনি বলেন, “হে বৎস! তোমার
প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন।
অবশ্যই তুমি তোমার পিতার অনুগত
ছিলে। আল্লাহর শপথ! যখন
থেকে আল্লাহ তোমাকে দান
করেছেন, আমি তোমার
প্রতি সন্তুষ্টই ছিলাম।
তবে আল্লাহর শপথ করে বলছি,
তোমাকে এখানে অর্থাৎ আল্লাহর
নির্ধারিত স্থান কবরে দাফন
করে আগেরচে’ বেশি আনন্দিত।
আল্লাহর কাছে তোমার
বিনিময়ে আমি অধিক প্রতিদানের
আশাবাদী।
৪. আল্লাহর রহমতের
প্রসস্ততা ও করুণার
ব্যাপকতার স্মরণ
সত্যিকার মুমিন আপন প্রভুর
প্রতি সুধারণা পোষণ করে।
হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ
তাআলা বলেন :
ﺄﻧﺃ ﺪﻨﻋ ﻱﺪﺒﻋ ﻦﻇ .ﻲﺑ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ :
৬৭৫৬، ﻢﻠﺴﻣﻭ : ৪৮২২)
“আমার ব্যাপারে আমার বান্দার
ধারণা অনুযায়ী, আমি ব্যবহার
করি।”[১৮]
মুসিবত দৃশ্যত অসহ্য-কষ্টদায়ক হলেও
পশ্চাতে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
তাই বান্দার কর্তব্য আল্লাহর
সুপ্রসস্ত রহমতের উপর আস্থাবান
থাকা।
এরশাদ হচ্ছে :
ﻰَﺴَﻋَﻭ ﺍﻮُﻫَﺮْﻜَﺗ ْﻥَﺃ ﺎًﺌْﻴَﺷ َﻮُﻫَﻭ ٌﺮْﻴَﺧ ْﻢُﻜَﻟ
ﻰَﺴَﻋَﻭ ﺍﻮُّﺒِﺤُﺗ ْﻥَﺃ ﺎًﺌْﻴَﺷ َﻮُﻫَﻭ ٌّﺮَﺷ ْﻢُﻜَﻟ
ُﻪَّﻠﻟﺍَﻭ ُﻢَﻠْﻌَﻳ ْﻢُﺘْﻧَﺃَﻭ َﻥﻮُﻤَﻠْﻌَﺗ ﺎَﻟ ﴿
ﺓﺮﻘﺒﻟﺍ:২১৬﴾
“এবং হতে পারে কোন বিষয়
তোমরা অপছন্দ করছ অথচ
তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর
হতে পারে কোন বিষয়
তোমরা পছন্দ করছ অথচ
তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর
আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান
না।”[১৯]
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ﺎﺒﺠﻋ ،ﻦﻣﺆﻤﻠﻟ ﻪﻠﻟﺍ ﻲﻀﻘﻳﻻ ﺎﺌﻴﺷ ﻪﻟ
ﻻﺇ ﻥﺎﻛ ﺍﺮﻴﺧ .ﻪﻟ ‏(ﺪﻨﺴﻤﻟﺍ ﺚﻳﺪﺣ ﻦﻣ
ﺲﻧﺃ ﻚﻟﺎﻣ ﻦﺑ : ২০২৮৩)
“মোমিনের বিষয়টি চমৎকার,
আল্লাহ তাআলা যা ফয়সালা করেন,
তা-ই তার জন্য কল্যাণকর।”[২০]
আল্লাহ তাআলা মানব
জাতিকে যে সমস্ত নেয়ামত ও
অনুদান দ্বারা আবৃত করেছেন,
তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা,
যাতে এ অনুভূতির উদয় হয় যে,
বর্তমান মুসিবত বিদ্যমান
নেয়ামতের তুলনায় বিন্দুমাত্র।
আল্লাহ তাআলা চাইলে মুসিবত
আরো বীভৎস-কঠোর হতে পারত।
তদুপরি আল্লাহ
তাআলা আরো যে সমস্ত
বালা মুসিবত থেকে নিরাপদ
রেখেছেন, যে সকল
দুর্ঘটনা থেকে নাজাত দিয়েছেন,
তা অনেক বড়, অনেক বেশী।
খিজির ও মুসা আলাইহিস
সালামের ঘটনায় উল্লেখিত
বালকটিকে, খিজির হত্যা করেন,
প্রথমে মূসা আলাইহিস সালাম
আপত্তি জানান, খিজিরের অবহিত
করণের দ্বারা জানতে পারেন,
তার হত্যায় কল্যাণ নিহিত
রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে :
ﺎَّﻣَﺃَﻭ ُﻡﺎَﻠُﻐْﻟﺍ ُﻩﺍَﻮَﺑَﺃ َﻥﺎَﻜَﻓ ِﻦْﻴَﻨِﻣْﺆُﻣ
ﺎَﻨﻴِﺸَﺨَﻓ ﺎَﻤُﻬَﻘِﻫْﺮُﻳ ْﻥَﺃ .ﺍًﺮْﻔُﻛَﻭ ﺎًﻧﺎَﻴْﻐُﻃ
ﺎَﻧْﺩَﺭَﺄَﻓ ﺎَﻤُﻬَﻟِﺪْﺒُﻳ ْﻥَﺃ ﺎَﻤُﻬُّﺑَﺭ ﺍًﺮْﻴَﺧ
ًﺓﺎَﻛَﺯ ُﻪْﻨِﻣ َﺏَﺮْﻗَﺃَﻭ ﺎًﻤْﺣُﺭ ﴿
ﻒﻬﻜﻟﺍ:৮০-৮১﴾
“আর বালকটির বিষয় হল, তার
পিতা-মাতা ছিল মুমিন। অতঃপর
আমি আশংকা[২১] করলাম যে,
সে সীমালংঘন ও
কুফরী দ্বারা তাদেরকে অতিষ্ঠ
করে তুলবে। তাই আমি চাইলাম,
তাদের রব তাদেরকে তার
পরিবর্তে এমন সন্তান দান করবেন,
যে হবে তার চেয়ে পবিত্রতায়
উত্তম এবং দয়ামায়ায় অধিক
ঘনিষ্ঠ।”[২২] এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻡﻼﻐﻟﺍ ﻥﺇ ﻱﺬﻟﺍ ﻪﻠﺘﻗ ﺮﻀﺨﻟﺍ ﻊﺒﻃ
،ﺍﺮﻓﺎﻛ ﻮﻟﻭ ﺵﺎﻋ ﻖﻫﺭﻷ ﻪﻳﻮﺑﺃ
.ﺍﺮﻔﻛﻭ ﺎﻧﺎﻴﻐﻃ ‏(ﻢﻠﺴﻣ : ৪৮১১)
“খিজির আলাইহিস সালাম
যে ছেলেটিকে হত্যা করেছেন,
তার জন্মই ছিল কাফের অবস্থায়,
যদি সে বেঁচে থাকত সীমালঙ্ঘন ও
অকৃতজ্ঞতা দ্বারা নিজ পিতা-
মাতাকে হত্যা করত।”[২৩]
কাতাদাহ
রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন :
তার জন্ম লাভে পিতা-
মাতা উভয়ে যেমন আনন্দিত
হয়েছে, তার মৃত্যুতে উভয়ে তেমন
ব্যথিত হয়েছে। অথচ
সে বেঁচে থাকলে, উভয়ের ধ্বংসের
কারণ হত। সুতরাং প্রত্যেক
ব্যক্তির উচিত আল্লাহ তাআলার
সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত
থাকা।
৫. অধিকতর বিপদগ্রস্ত
ব্যক্তিদের দেখা
অন্যান্য বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের
দেখা, তাদের মুসিবতে স্মরণ করা।
বরং অধিকতর বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির
দিকে নজর দেয়া।
এতে সান্ত্বনা লাভ হয়, দুঃখ দূর হয়,
মুসিবত হয় সহনীয়। হ্রাস পায়
অস্থিরতা ও নৈরাশ্যতা।
জেনে রাখা ভাল, রসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ﺮﺒﺼﺘﻳ ﻦﻣ ﻩﺮﺒﺼﻳ .ﻪﻠﻟﺍ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ :
১৩৭৬)
“ধৈর্য অসম্ভব বা অসাধ্য কিছু নয়,
যে র্ধৈয্যধারণ করে আল্লাহ
তাকে ধৈর্য্যধারণের ক্ষমতা দান
করেন।”[২৪]
বিকলাঙ্গ বা দুরারোগ্য
ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি, তার
চেয়ে কঠিন বিপদগ্রস্তকে দেখবে।
একজনের বিরহ বেদানায় ব্যথিত
ব্যক্তি, দুই বা ততোধিক
বিরহে ব্যথিত ব্যক্তিকে দেখবে।
এক সস্তানহারা ব্যক্তি, অধিক
সন্তানহারা ব্যক্তিকে দেখবে। সব
সন্তানহারা ব্যক্তি,
পরিবারহারা ব্যক্তিকে দেখবে।
এক ছেলের মৃত্যু শোকে শোকাহত
দম্পত্তি স্মরণ করবে নিরুদ্দেশ
সন্তান শোকে কাতর দম্পত্তিকে-
যারা স্বীয় সন্তান সর্ম্পকে কিছুই
জানে না যে, জীবিত না মৃত।
ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ইউসুফ আ.-
কে হারিয়ে অনেক বছর যাবৎ
পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে রাখেন।
বৃদ্ধ ও দুর্বল হওয়ার পর আবার
দ্বিতীয় সন্তান হারান। প্রথম
সন্তান হারিয়ে বলেছিলেন :
ٌﺮْﺒَﺼَﻓ ٌﻞﻴِﻤَﺟ ُﻪَّﻠﻟﺍَﻭ ُﻥﺎَﻌَﺘْﺴُﻤْﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ﺎَﻣ
َﻥﻮُﻔِﺼَﺗ ﻒﺳﻮﻳ﴿ :১৮﴾
“সুতরাং (আমার করণীয় হচ্ছে) সুন্দর
ধৈর্য। আর তোমরা যা বর্ণনা করছ
সে বিষয়ে আল্লাহই
সাহায্যস্থল।”[২৫]
দ্বিতীয় সন্তান হারিয়ে বলেন :
ٌﺮْﺒَﺼَﻓ ٌﻞﻴِﻤَﺟ ﻰَﺴَﻋ ُﻪَّﻠﻟﺍ ْﻥَﺃ ﻲِﻨَﻴِﺗْﺄَﻳ ْﻢِﻬِﺑ
ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ ُﻪَّﻧِﺇ َﻮُﻫ ُﻢﻴِﻜَﺤْﻟﺍ ُﻢﻴِﻠَﻌْﻟﺍ ﴿
ﻒﺳﻮﻳ:৮৩﴾
“সে বলল, ‘বরং তোমাদের নাফ্স
তোমাদের জন্য একটি গল্প
সাজিয়েছে, সুতরাং (আমার করণীয়
হচ্ছে) সুন্দর ধৈর্য। আশা করি,
আল্লাহ তাদের সকলকে আমার
কাছে ফিরিয়ে আনবেন, নিশ্চয়
তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”[২৬]
ওলিদ ইবনে আব্দুল মালেক এর নিকট
চোখ ঝলসানো, বিকৃত চেহারার
একজন লোক এসে উপস্থিত হয়।
তিনি তার অবস্থা আপাদ-মস্তক
পর্যবেক্ষণ করলেন। কিন্তু তার
ভেতর অস্থিরতার কোনও আলামত
পেলেন না। অতঃপর তার
ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন।
সে বলল : “আমি অনেক সম্পদ,
সন্তানের মালিক ছিলাম,
একদা আমরা একটি ময়দানে রাত
যাপন করি। অকস্মাৎ বিশাল এক
মরুঝড় আমাদের আক্রমণ করে বসে।
একটা উট, একজন সন্তান ছাড়া সব
নিয়ে যায় সে। অবশেষে উটটিও
পালিয়ে যেতে লাগল।
সন্তানটি আমার কাছে,
আমি সন্তান রেখে উট
ধরতে গেলাম। সন্তানের
কাছে ফিরে এসে দেখি,
নেকড়ে বাঘ তার
পেটে মাথা ঠুকে আছে,
বাকি অংশ সাবাড়।
তাকে রেখে উটের পিছু নেই,
সে প্রচন্ড এক লাথি মারে, যদ্দরুণ
আমার চেহারা বিকৃত হয়ে যায়,
সাথে সাথে দৃষ্টিও চলে যায়
চোখের। অবশেষে আমি সম্পদ,
সন্তান এবং দৃষ্টি শক্তিহীন এ
দুনিয়াতে নিঃসঙ্গ বেঁচে রইলাম।
ওলিদ বললেন, তাকে উরওয়ার
কাছে নিয়ে যাও; সে যাতে বুঝে,
তার চে’ অধিক বিপদগ্রস্ত লোকও এ
পৃথিবীতে বিদ্যমান আছে।
৬. মুসিবত পুণ্যবাণ হওয়ার
আলামত
মুসিবত পুণ্যবাণ হওয়ার আলামত,
মহত্বের প্রমাণ। এটাই বাস্তবতা।
একদা সাহাবী সাদ বিন ওয়াক্কাস
রা. রসূল সা.কে জিজ্ঞাসা করেন,
হে আল্লাহর রসূল,
দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি
বিপদগ্রস্ত কে?
উত্তরে তিনি বলেন :
ﺀﺎﻴﺒﻧﻷﺍ ﻢﺛ ،ﻞﺜﻣﻷﺎﻓ ،ﻞﺜﻣﻷﺍ
ﻰﻠﺘﺒﻴﻓ ﻞﺟﺮﻟﺍ ﻰﻠﻋ ،ﻪﻨﻳﺩ ﺐﺴﺣ ﻥﺈﻓ
ﻪﻨﻳﺩ ﻥﺎﻛ ﺎﺒﻠﺻ ﺪﺘﺷﺍ ،ﻩﺅﻼﺑ ﻥﺇﻭ ﻥﺎﻛ
ﻲﻓ ﻪﻨﻳﺩ ﻲﻠﺘﺑﺍ ﺔﻗﺭ ﻰﻠﻋ ﺐﺴﺣ ،ﻪﻨﻳﺩ
ﺡﺮﺒﻳ ﺎﻤﻓ ﺪﺒﻌﻟﺎﺑ ﺀﻼﺒﻟﺍ ﻰﺘﺣ ﻪﻛﺮﺘﻳ
ﻲﺸﻤﻳ ﻰﻠﻋ ﺽﺭﻷﺍ ﺎﻣ ﻪﻴﻠﻋ .ﺔﺌﻴﻄﺧ
‏(ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ : ২৩২২)
“নবীগণ, অতঃপর যারা তাদের
সাথে কাজ-কর্ম-
বিশ্বাসে সামঞ্জস্যতা রাখে,
অতঃপর যারা তাদের অনুসারীদের
সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে।
মানুষকে তার দ্বীন
অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়।
দ্বীনি অবস্থান পাকাপোক্ত
হলে পরীক্ষা কঠিন হয়।
দ্বীনি অবস্থান দুর্বল
হলে পরীক্ষাও শিথিল হয়। মুসিবত
মুমিন ব্যক্তিকে পাপশূন্য
করে দেয়, এক
সময়ে দুনিয়াতে সে নিষ্পাপ
বিচরণ করতে থাকে।”[২৭] রসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ﻦﻣ ﺩﺮﻳ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﺑ ﺍﺮﻴﺧ ﺐﺼﻳ .ﻪﻨﻣ
‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ : ৫২১৩، ﻢﻠﺴﻣﻭ : ৭৭৮)
“আল্লাহ যার সাথে কল্যাণের
ইচ্ছা করেন, তার থেকে বাহ্যিক
সুখ ছিনিয়ে নেন।”[২৮]
তিনি আরো বলেন :
ﻪﻠﻟﺍ ﻥﺇﻭ ﺍﺫﺇ ﺐﺣﺃ ﺎﻣﻮﻗ .ﻢﻫﻼﺘﺑﺍ
‏( ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ : ২৩২০، ﻦﺑﺍ ﻪﺟﺎﻣ : ৪০২১)
“আল্লাহ তাআলা যখন কোন
সম্প্রদায়কে পছন্দ করেন, তখন
তাদেরকে বিপদ দেন ও
পরীক্ষা করেন।”[২৯]
৭. মুসিবতের বিনিময়ে উত্তম
প্রতিদানের কথা স্মরণ
মোমিনের কর্তব্য বিপদের
মুহূর্তে প্রতিদানের কথা স্মরণ
করা। এতে মুসিবত সহনীয় হয়। কারণ
কষ্টের পরিমাণ অনুযায়ী সওয়াব
অর্জিত হয়। সুখের বিনিময়ে সুখ
অর্জন করা যায় না- সাধনার ব্রিজ
পার হতে হয়। প্রত্যেককেই
পরবর্তী ফলের জন্য নগদ শ্রম
দিতে হয়। ইহকালের কষ্টের
সিঁড়ি পার হয়ে পরকালের স্বাদ
আস্বাদান করতে হয়। এরশাদ হচ্ছে :
ﻥﺇ ﺀﺍﺰﺠﻟﺍ ﻢﻈﻋ ﻊﻣ ﻢﻈﻋ .ﺀﻼﺒﻟﺍ
‏(ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ : ২৩২০)
“কষ্টের পরিমাণ
অনুযায়ী প্রতিদান প্রদান
করা হয়।”[৩০]
একদা হজরত আবু বকর রা. ভীত-ত্রস্ত
হালতে রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এ
আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর
কীভাবে অন্তরে স্বস্তি আসে?
َﺲْﻴَﻟ ْﻢُﻜِّﻴِﻧﺎَﻣَﺄِﺑ ﺎَﻟَﻭ ِّﻲِﻧﺎَﻣَﺃ ِﻞْﻫَﺃ
ِﺏﺎَﺘِﻜْﻟﺍ ْﻦَﻣ ْﻞَﻤْﻌَﻳ ﺍًﺀﻮُﺳ َﺰْﺠُﻳ ِﻪِﺑ ﺎَﻟَﻭ
ْﺪِﺠَﻳ ُﻪَﻟ ْﻦِﻣ ِﻥﻭُﺩ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًّﻴِﻟَﻭ ﺎَﻟَﻭ
ﺍًﺮﻴِﺼَﻧ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ﴿ :১২৩﴾
“না তোমাদের আশায়
এবং না কিতাবীদের আশায় (কাজ
হবে)। যে মন্দকাজ
করবে তাকে তার প্রতিফল
দেয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ
ছাড়া কোন অভিভাবক ও
সাহায্যকারী পাবে না।”[৩১]
রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻪﻠﻟﺍﺮﻔﻏ ﻚﻟ ﺎﻳ ﺎﺑﺃ !ﺮﻜﺑ ﺖﺴﻟﺃ
؟ﺽﺮﻤﺗ ﺖﺴﻟﺃ ﺖﺴﻟﺃ ؟ﺐﺼﻨﺗ ؟ﻥﺰﺤﺗ
ﺖﺴﻟﺃ ؟ﺀﺍﻭﻸﻟﺍ ﻚﺒﻴﺼﺗ
“হে আবু বকর, আল্লাহ
তোমাকে ক্ষমা করুন,
তুমি কি অসুস্থ হও না?
তুমি কি বিষণ্ন্ন হও না? মুসিবত
তোমাকে কি পিষ্ট করে না? উত্তর
দিলেন, অবশ্যই। বললেন :
ﻮﻬﻓ ﻥﻭﺰﺠﺗ ﺎﻣ .ﻪﺑ ‏(ﺪﻨﺴﻤﻟﺍ : ﻦﻣ ﺚﻳﺪﺣ
ﻲﺑﺃ ﺮﻜﺑ : ৬৮)
“এগুলোই তোমাদের অপরাধের
কাফফারা-প্রায়শ্চিত্ত।”[৩২]
আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীল
বিপদগ্রস্তদের জন্য উত্তম
প্রতিদান তৈরী করেছেন, বালা-
মুসিবতগুলো গুনাহের কাফফারা ও
উচ্চ মর্যাদার সোপান
বানিয়েছেন। আরো রেখেছেন
যথার্থ বিনিময় ও সন্তোষজনক
ক্ষতিপূরণ।
জান্নাতের চেয়ে বড় প্রতিদান আর
কি হতে পারে! এ জান্নাতেরই
ওয়াদা করা হয়েছে ধৈর্য্যশীলদের
জন্য। যেমন মৃগী রোগী মহিলার
জন্য জান্নাতের
ওয়াদা করা হয়েছে-
ধৈর্য্যধারণের শর্তে। আতা বিন
আবি রাবাহ বর্ণনা করেন,
একদা ইবনে আব্বাস রা.
আমাকে বলেন,
আমি কি তোমাকে জান্নাতি
মহিলা দেখাবো? আমি বললাম
অবশ্যই। তিনি বললেন, এই
কালো মহিলাটি জান্নাতি।
ঘটনাটি এরূপ- একবার সে রসূল সা.-
এর নিকট এসে বলে, হে আল্লাহর
রসূল আমি মৃগী রোগী, রোগের দরুন
ভূপাতিত হয়ে যাই, বিবস্ত্র
হয়ে পরি। আমার জন্য দোয়া করুন।
রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻥﺇ ﺖﺌﺷ ﺕﺮﺒﺻ ،ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻚﻟﻭ ﻥﺇﻭ ﺖﺌﺷ
ﺕﻮﻋﺩ ﻪﻠﻟﺍ ﻥﺃ .ﻚﻴﻓﺎﻌﻳ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ :
৫২২০، ﻢﻠﺴﻣﻭ : ৪৬৭৩)
“ইচ্ছে করলে ধৈর্যধারণ
করতে পার, বিনিময়ে জান্নাত
পাবে, আর বললে সুস্থ্যতার জন্য
দোয়া করে দেই।” সে বলল,
আমি ধৈর্যধারণ করব।
তবে আমি বিবস্ত্র হয়ে যাই, আমার
জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন,
যাতে বিবস্ত্র না হই। অতঃপর
তিনি তার জন্য
দোয়া করে দেন।”[৩৩]
অনুরূপ জান্নাতের
নিশ্চয়তা আছে দৃষ্টিহীন ব্যক্তির
জন্য। রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻥﺇ ﻪﻠﻟﺍ : ﻝﺎﻗ ﺍﺫﺇ ﺖﻴﻠﺘﺑﺍ ﻱﺪﺒﻋ
ﻪﻴﺘﺒﻴﺒﺤﺑ ﻪﺘﺿﻮﻋ ﺮﺒﺼﻓ ﺎﻤﻬﻨﻣ
.ﺔﻨﺠﻟﺍ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ : ৫২২১)
“আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
আমি যখন আমার
বান্দাকে দুটি প্রিয় বস্তু
দ্বারা পরীক্ষা করি, আর
সে ধৈর্যধারণ করে,
বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত
দান করি।”[৩৪]
আরো জান্নাতের ওয়াদা আছে,
প্রিয় ব্যক্তির
মৃত্যুতে ধৈর্য্যধারণকারীর জন্য।
রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ
করেন :
ﻱﺪﺒﻌﻟ ﺎﻣ ﻦﻣﺆﻤﻟﺍ ﺀﺍﺰﺟ ﻱﺪﻨﻋ ﺍﺫﺇ
ﺖﻀﺒﻗ ﻪﻴﻔﺻ ﻦﻣ ﻞﻫﺃ ﺎﻴﻧﺪﻟﺍ ﻢﺛ
ﻪﺒﺴﺘﺣﺍ .ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻻﺇ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ : ৫৯৪৪)
“আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
আমি যখন আমার মুমিন বান্দার
অকৃত্রিম ভালোবাসার
পাত্রকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে
নেই। এবং তাতে সে ধৈর্য্যধারণ
করে, ছওয়াবের আশা রাখে, আমার
কাছে তার বিনিময় জান্নাত
বৈ কি হতে পারে?”[৩৫] অর্থাৎ
নিশ্চিত জান্নাত।
সন্তান হারাদেরও আল্লাহ
তা’আলা জান্নাতের সুসংবাদ
প্রদান করেছেন। কারণ
তিনি বান্দার প্রতি দয়ালু, তার
শোক-দুঃখ জানেন। যেমন: রসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের
সুসংবাদ দিয়েছেন তিন সন্তান
দাফনকারী মহিলাকে।
তিনি তাকে বলেন-
“তুমি জাহান্নামের আগুন
প্রতিরোধকারী মজবুত ঢাল
বেষ্টিত হয়ে গেছ।”
ঘটনাটি নিম্নরূপ : সে একটি অসুস্থ
বাচ্চা সাথে করে রসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
আসে, এবং বলে হে আল্লাহর
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য
আল্লাহর নিকট দোয়া করুন।
ইতিপূর্বে আমি তিন জন সন্তান
দাফন করেছি। রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
শুনে নির্বাক : ﺖﻨﻓﺩ ؟ﺔﺛﻼﺛ ! “তিন
জন দাফন করেছ!” সে বলল- হ্যাঁ।
রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :
ﺕﺮﻈﺘﺣﺍ ﺪﻘﻟ ﺪﻳﺪﺷ ﺭﺎﻈﺤﺑ .ﺭﺎﻨﻟﺍ ﻦﻣ
‏( ﻢﻠﺴﻣ : ৪৭৭০)
“তুমি জাহান্নামের আগুন
প্রতিরোধকারী মজবুত প্রাচীর
ঘেরা সংরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ
করেছ।”[৩৬]
অন্য হাদীসে আছে :
ﺎﻤﻳﺃ ﻦﻴﻤﻠﺴﻣ ﻰﻀﻣ ﺔﺛﻼﺛ ﺎﻤﻬﻟ ﻦﻣ
،ﺎﻤﻫﺩﻻﻭﺃ ﻢﻟ ﺎﺜﻨﺣ ﺍﻮﻐﻠﺒﻳ ﺍﻮﻧﺎﻛ
ﺎﻤﻬﻟ ﺎﻨﻴﺼﺣ ﺎﻨﺼﺣ ﺭﺎﻨﻟﺍ ﻦﻣ .
“সাবালকত্ব পাওয়ার আগে মৃত তিন
সন্তান- তাদের মুসলিম পিতা-
মাতার জন্য জাহান্নামের আগুন
প্রতিরোধকারী মজবুত
ঢালে পরিনত হবে।”
আবুযর রা. বলেন, হে আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দু’জন
মারা গেছে। রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন :ﻥﺎﻨﺛﺍﻭ، “দুজন
মারা গেলেও।” উস্তাদুল
কুররা আবুল মুনজির উবাই রা.
বলেন : হে আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার একজন
মারা গেছে, তিনি বললেন :
،ﺪﺣﺍﻭﻭ ﻚﻟﺫﻭ ﻲﻓ .ﻰﻟﻭﻷﺍ ﺔﻣﺪﺼﻟﺍ
‏(ﺪﻨﺴﻤﻟﺍ ﺚﻳﺪﺣ ﻦﻣ ﺪﺒﻋ ﻪﻠﻟﺍ ﺩﻮﻌﺴﻣ :
৪৩১৪)
“একজন মারা গেলেও।
তবে মুসিবতের শুরুতেই ধৈর্য্যধারণ
করতে হবে।”[৩৭] মাহমুদ বিন
লাবিদ জাবির রা.
থেকে বর্ণনা করেন : আমি রসূল সা.-
কে বলতে শুনেছি :
ﻦﻣ ﺕﺎﻣ ﻪﻟ ﺔﺛﻼﺛ ﻦﻣ ﺪﻟﻮﻟﺍ ﻢﻬﺒﺴﺘﺣﺎﻓ
ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻞﺧﺩ ،
“সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ
করবে, যার তিনজন সন্তান
মারা যায় এবং সে তাদের পূণ্য
জ্ঞান করে।”
তিনি বলেন :
আমরা জিজ্ঞাসা করলাম
হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার দু’জন
মারা যায়? বললেন :
.ﻥﺎﻨﺛﺍﻭ ‏( ﺪﻨﺴﻤﻟﺍ ﻦﻣ ﺮﺑﺎﺟ ﺚﻳﺪﺣ ﻦﺑ
ﺪﺒﻋ ﻪﻠﻟﺍ : ১৪২৮৫)
“দু’জন মারা গেলেও।” মাহমুদ
বলেন : আমি জাবের রা.-
কে বললাম, আমার মনে হয়
আপনারা যদি একজনের কথা বলতেন,
তাহলে তিনি একজনের ব্যাপারেও
হাঁ বলতেন। তিনি সায়
দিয়ে বলেন : আমিও তাই
মনে করি।”[৩৮]
শোক সন্তপ্ত পিতা-মাতার জন্য
আরেকটি হাদিস। আশা করি এর
দ্বারা সান্ত্বনা লাভ হবে, দুঃখ
ঘুচে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :
ﺍﺫﺇ ﺕﺎﻣ ﺪﺒﻌﻟﺍ ﺪﻟﻭ ﻝﺎﻗ ﻪﻠﻟﺍ
:ﻪﺘﻜﺋﻼﻤﻟ ﻢﺘﻀﺒﻗ ﺪﻟﻭ ؟ﻱﺪﺒﻋ
:ﻥﻮﻟﻮﻘﻴﻓ ﻢﺘﻀﺒﻗ :ﻝﻮﻘﻴﻓ ،ﻢﻌﻧ ﺓﺮﻤﺛ
ﻥﻮﻟﻮﻘﻴﻓ ؟ﻩﺩﺍﺆﻓ : ،ﻢﻌﻧ ﻝﻮﻘﻴﻓ :
ﺍﺫﺎﻣ ﻝﺎﻗ ﻥﻮﻟﻮﻘﻴﻓ ؟ﻱﺪﺒﻋ : ﻙﺪﻤﺣ
،ﻊﺟﺮﺘﺳﺍﻭ ﻪﻠﻟﺍ ﻝﻮﻘﻴﻓ : ﺍﻮﻨﺑﺍ
ﻱﺪﺒﻌﻟ ﺎﺘﻴﺑ ﻲﻓ ،ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻩﻮﻤﺳﻭ ﺖﻴﺑ
.ﺪﻤﺤﻟﺍ ‏(ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ : ৯৪২)
“যখন বান্দার কোন সন্তান
মারা যায়, আল্লাহ
তাআলা ফেরেস্তাদের বলেন :
তোমরা আমার বান্দার সন্তান
কেড়ে নিয়ে এসেছো?
তারা বলে হ্যাঁ। তোমরা আমার
বান্দার কলিজার
টুকরো ছিনিয়ে এনেছো?
তারা বলে হ্যাঁ। অতঃপর
জিজ্ঞাসা করেন, আমার
বান্দা কি বলেছে? তারা বলে,
আপনার
প্রসংশা করেছে এবং বলেছে
আমরা আল্লাহ তাআলার জন্য
এবং তার কাছেই প্রত্যাবর্তন
করব। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার
বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরী কর
এবং তার নাম দাও বায়তুল হামদ্
বা প্রশংসার ঘর বলে।”[৩৯]
উপরন্তু ওই অসম্পূর্ণ বাচ্চা,
যা সৃষ্টির পূর্ণতা পাওয়ার আগেই
মায়ের পেট থেকে ঝড়ে যায়, সেও
তার মায়ের জান্নাতে যাওয়ার
উসিলা হবে। রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻱﺬﻟﺍﻭ ﻲﺴﻔﻧ ﻩﺪﻴﺑ ﻥﺇ ﺮﺠﻴﻟ ﻂﻘﺴﻟﺍ
ﻩﺭﺮﺴﺑ ﻪﻣﺃ ﻰﻟﺇ ،ﺔﻨﺠﻟﺍ ﺍﺫﺇ
.ﻪﺘﺒﺴﺘﺣﺍ ‏( ﻦﺑﺍ ﻪﺟﺎﻣ :১৫৯৮)
“ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার
জীবন, অসম্পূর্ণ বাচ্চাও তার
মাকে আচঁল
ধরে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
যদি সে তাকে পূণ্য জ্ঞান
করে থাকে।”[৪০]
বিশুদ্ধ হাদীসে এ ধরনের
বিপদাপদকে গুনাহের কাফফার
বলা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে :
ﺎﻣ ﻦﻣ ﻪﺒﻴﺼﻳ ﻢﻠﺴﻣ ﺔﻛﻮﺷ ،ﻯﺫﺃ ﺎﻤﻓ
ﺎﻬﻗﻮﻓ ﻻﺇ ﺮﻔﻛ ﻪﻠﻟﺍ ﺎﻬﺑ ،ﻪﺗﺎﺌﻴﺳ
ﺎﻤﻛ ﻂﺤﺗ .ﺎﻬﻗﺭﻭ ﺓﺮﺠﺸﻟﺍ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ :
৫২১৫، ﻢﻠﺴﻣﻭ : ৪৬৬৩)
“যে কোন মুসলমান
কাঁটা বা তারচে’ সামান্য বস্তুর
দ্বারা কষ্ট পায়, আল্লাহ তার
বিনিময়ে প্রচুর গুনাহ ঝড়ান- যেমন
বৃক্ষ বিশেষ মৌসুমে স্বীয় পত্র-
পল্লব ঝড়িয়ে থাকে।”[৪১]
আরেকটি বিশুদ্ধ হাদিসে এসেছে :
ﺎﻣ ﻢﻠﺴﻤﻟﺍ ﺐﻴﺼﻳ ﻦﻣ ،ﺐﺼﻧ ﻻﻭ ،ﺐﺻﻭ
ﻻﻭ ،ﻢﻫ ،ﻥﺰﺣﻻﻭ ﻻﻭ ،ﻯﺫﺃ ,ﻢﻏﻻﻭ ﻰﺘﺣ
ﺎﻬﻛﺎﺸﻳ ﺔﻛﻮﺸﻟﺍ ﻻﺇ ﻪﻠﻟﺍ ﺮﻔﻛ ﺎﻬﺑ ﻦﻣ
.ﻩﺎﻳﺎﻄﺧ ‏(ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ : ৫২১০)
“মুসলমানদের কষ্ট-ক্লেশ, চিন্তা-
হতাশা আর দুঃখ-বিষাদ
দ্বারা আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন।
এমনকি শরীরে যে কাঁটা বিঁধে
তার বিনিময়েও আল্লাহ গুনাহ
মাফ করেন।”[৪২]
আরো এরশাদ হচ্ছে :
ﺎﻣ ﻦﻣﺆﻤﻟﺎﺑ ﺀﻼﺒﻟﺍ ﻝﺍﺰﻳ ﺔﻨﻣﺆﻤﻟﺍﻭ
ﻲﻓ ﻩﺪﻟﻭﻭ ﻪﺴﻔﻧ ،ﻪﻟﺎﻣﻭ ﻰﺘﺣ ﻰﻘﻠﻳ
ﻪﻠﻟﺍ ﺎﻣﻭ ﻪﻴﻠﻋ .ﺔﺌﻴﻄﺧ ‏(ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍ :
২৩২৩)
“মুমিন নর-নারীরা নিজের,
সন্তানের বা সম্পদের
মাধ্যমে সর্বদা বিপদগ্রস্ত থাকে।
যতক্ষণ না সে আল্লাহর
সাথে নিষ্পাপ সাক্ষাৎ করে।”[৪৩]
মুসিবত মর্যাদার সোপান। কারণ
ধৈর্য্যের মাধ্যমে অতটুকু
সফলতা অর্জন করা যায়। যা আমল
বা কাজের দ্বারা করা যায় না।
মুসনাদে ইমাম আমহদে বর্ণিত
আছে :
ﺖﻘﺒﺳ ﺍﺫﺇ ﺪﺒﻌﻠﻟ ﻦﻣ ﻪﻠﻟﺍ ﺔﻟﺰﻨﻣ ﻢﻟ
ﺎﻬﻐﻠﺒﻳ ﻩﻼﺘﺑﺍ ﻪﻠﻤﻌﺑ ﻪﻠﻟﺍ ﻲﻓ ﻩﺪﺴﺟ
ﻭﺃ ﻲﻓ ﻪﻟﺎﻣ ﻭﺃ ﻲﻓ ،ﻩﺪﻟﻭ ﻢﺛ ،ﻩﺮﺒﺻ
ﺔﻟﺰﻨﻤﻟﺍ ﻪﻐﻠﺒﻳ ﻰﺘﺣ ﻲﺘﻟﺍ ﺖﻘﺒﺳ ﻪﻟ
.ﻪﻨﻣ ‏( ﺪﻨﺴﻣ : ২২৩৩৮)
“আল্লাহ তাআলা যখন কোন বান্দার
মর্যাদার স্থান পূর্বে নির্ধারণ
করে দেন, আর সে আমল দ্বারা ওই
স্থান লাভে ব্যর্থ হয়, তখন আল্লাহ
তার শরীর, সম্পদ বা সন্তানের ওপর
মুসিবত দেন এবং ধৈর্যের তওফিক
দেন। এর দ্বারা সে নির্ধারিত
মর্যাদার উপযুক্ত হয়ে।”[৪৪]
একদা রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
সাহাবাদের জিজ্ঞাসা করেন :
ﻥﻭﺪﻌﺗ ﺎﻣ ؟ﻢﻜﻴﻓ ﺏﻮﻗﺮﻟﺍ
“তোমরা কাকে নিঃসন্তান
মনে কর? তারা বলল : যার কোন
সন্তান হয় না। তিনি বললেন :
ﺲﻴﻟ ،ﺏﻮﻗﺮﻟﺎﺑ ﻙﺍﺫ ﻞﺟﺮﻟﺍ ﻪﻨﻜﻟﻭ
ﻱﺬﻟﺍ ﻢﻟ ﻡﺪﻘﻳ ﻦﻣ ﻩﺪﻟﻭ .ﺎﺌﻴﺷ ‏( ﻢﻠﺴﻣ :
৪৭২২)
“সে নয়। বরং সে, যার মৃত্যুর
পূর্বে তার কোন সন্তানের মৃত্যু হল
না।”[৪৫]
অর্থাৎ পার্থিব
জগতে সন্তানাদি আমাদের
বার্ধক্যের সম্বল। যার সন্তান নেই
সে যেন নিঃসন্তান। তদ্রুপ পর
জগতের সম্বল মৃত সন্তান। যার
সন্তান মারা যায়নি সে প্রকৃত-
পরজগতের- নিঃসন্তান।
এতে আমরা সন্তানহারা পিতা-
মাতার প্রতিদান অনুমান
করতে পারি। সন্তান বিয়োগের
মুসিবত কল্যাণকর, এর
বিনিময়ে অর্জিত হয় জান্নাত।
মুসিবতের পশ্চাতে আছে কল্যাণ,
উত্তম বিনিময়। যার কোন প্রিয়
বস্তু হারায়, সে এর পরিবর্তে অধিক
প্রিয় বস্তু প্রাপ্ত হয়। অনেক সময়
এক সন্তান মারা গেলে, তারচে’
ভাল দ্বিতীয় সন্তান প্রদান
করা হয়। দুঃখের আড়ালে সুখ
বিদ্যমান।
উম্মে ছালামা বর্ণনা করেন,
আমি রসূল সা.কে বলতে শুনেছি :
ﺎﻣ ﻦﻣ ﻪﺒﻴﺼﺗ ﻢﻠﺴﻣ ﺔﺒﻴﺼﻣ ﻝﻮﻘﻴﻓ ﺎﻣ
ﻩﺮﻣﺃ ﻪﻠﻟﺍ : ﺎﻧﺇ ﻪﻠﻟ ﺎﻧﺇﻭ ﻪﻴﻟﺇ
،ﻥﻮﻌﺟﺍﺭ ﻲﻧﺮﺟﺃ ﻢﻬﻠﻟﺍ ،ﻲﺘﺒﻴﺼﻣ ﻲﻓ
ﻒﻠﺧﺃﻭ ﻲﻟ ﺍﺮﻴﺧ ،ﺎﻬﻨﻣ ﻻﺇ ﻒﻠﺧﺃ ﻪﻠﻟﺍ
ﺍﺮﻴﺧ ﻪﻟ .ﺎﻬﻨﻣ ‏(ﻢﻠﺴﻣ : ১৫২৫)
“যে কোন মুসলমান মুসিবত আক্রান্ত
হয় এবং বলে- আমরা আল্লাহর জন্য
এবং তার কাছেই ফিরে যাব।
হে আল্লাহ, তুমি আমার এ মুসিবতের
প্রতিদান দাও এবং এর চে’ উত্তম
জিনিস দান কর। আল্লাহ
তাকে উত্তম জিনিস দান করেন।”
তিনি বলেন : যখন আবু
ছালামা মারা যায়,
আমি ভাবলাম মুসলমানের ভেতর
কে আছে যে, আবু
ছালামা থেকে উত্তম? সর্বপ্রথম
তার পরিবার রসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
হিজরত করে আসে। তবুও বলার জন্য
বললাম, আল্লাহ তাআলা আমাকে আবু
সালামার পরিবর্তে রসূল সা.-
কে প্রদান করেন। যিনি আবু
সালামা থেকে উত্তম।[৪৬]
কতক সন্তানের মৃত্যুতে পিতা-
মাতার নানাবিধ কল্যাণ নিহিত
থাকে। হতে পারে তাকদির
অনুযায়ী এ
ছেলেটি বেঁচে থাকলে পিতা-
মাতার কষ্টের কারণ হত। যেমন
খিজির আলাইহিস সালাম এর
ঘটনায় বর্ণিত বাচ্চার অবস্থা।
অনেক সময় পিতা-মাতার
ধৈর্যধারণ, মৃত সন্তানকে পূণ্য
জ্ঞান করণ উত্তম প্রতিদানের
কারণ হয়। যেমন উম্মে ছালামার
ঘটনা। কখনো আগন্তুক
শুভানুধ্যায়ীদের দোয়া লাভ হয়।
যেমন তারা বলেন, “হে আল্লাহ!
তুমি তাদের উত্তম বিনিময় দান
কর। তাদের ক্ষতস্থান পূর্ণ কর। তার
পরিবর্তে উত্তম বস্তু দান কর।” যার
ফলে তার জীবিত অন্যান্য
ভাইরা সংশোধন ও অধিক তওফিক
প্রাপ্ত হয়। পিতা-মাতা অধিক
আনুগত্যশীল সুসন্তান প্রাপ্ত হয়।
৮. বালা-মুসিবতের
পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত
থাকা
যার ওপর দিয়ে কোন মুসিবত
বয়ে যায়, তার উচিত এর স্মৃতিচারণ
বা পুনরাবৃত্তি না করা। যখন
মনে বা স্মৃতি পটে চলে আসে,
সাধ্যমত এড়িয়ে যাওয়া। পুনঃপুন
বৃদ্ধি বা লালন না করা। কারণ এর
ভেতর বিন্দু পরিমাণ লাভ নেই।
উপরন্তু ধৈর্য্য ছাড়া কোন উপায়ও
নেই। বরং এ নিয়ে কল্পনা-
জল্পনা করা দৈন্যদের কাজ,
তাদের মূলপুঁজি। দ্বিতীয়ত
যে চলে গেছে,
সে কখনো ফিরে আসবে না।
যে সিদ্ধান্ত
হয়ে গেছে তা পাল্টাবে না।
হজরত উমর রা. এর একটি উপদেশ :
ﺮﻛﺬﺘﻟﺎﺑ ﻉﻮﻣﺪﻟﺍ ﺍﻭﺰﻔﺘﺴﺗ ﻻ .
“তোমরা স্মৃতিচারণ করে চোখের
পানি উছলে তুলো না।”
অধিকাংশ
প্রিয়জনহারা শোকাতুর লোক মৃত
ব্যক্তির স্মৃতি সংরক্ষণ
নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ফলে প্রতি মুহূর্ত মৃত ব্যক্তির
স্মরণে সে ব্যস্ত থাকে। শোক-দুঃখ
মোচনের পথে যা বিরাট অন্তরায়
হয়ে দাঁড়ায়।
৯. একাকীত্ব ও
নিঃসঙ্গতা বর্জন
শোকাতুর ব্যক্তির একাকীত্ব ও
নিঃসঙ্গতা পরিহার করা উচিত।
কেননা সংশয় প্রবঞ্চনা নিঃসঙ্গ-
অবসর ব্যক্তির পিছু নেয়।
নিঃসঙ্গদের ওপর শয়তান অধিক
কূটকৌশল ও প্রভাব বিস্তার
করতে সক্ষম হয়।
কল্যাণকর ও অর্থবহ
কাজে নিজেকে ব্যস্ত
রাখতে হবে। অটল থাকতে হবে পূর্ব
নির্ধারিত স্বীয় সিদ্ধান্তে।
নিয়মিত তেলাওয়াত, দু’আ-দরুদ,
নামায ইত্যাদিতে মশগুল
থাকতে হবে। এসবকেই অন্তরঙ্গ বন্ধু
ও নিত্যসঙ্গি বানিয়ে নিতে হবে।
কারণ আল্লাহর যিকিরের মালেঝই
নিহিত রয়েছে আত্মিক প্রশান্তি।
১০. আপত্তি অভিযোগ ও
অস্থিরতা ত্যাগ করা
যে কোন বিপদাপদের সময়
অসহিষ্ণুতা ও আপত্তি-অভিযোগ
পরিহার করা। এটাই সান্ত্বনার
শ্রেয়পথ। শান্তির উপায়-উপলক্ষ।
যে এর থেকে বিরত থাকবে না,
তার কষ্ট ও অশান্তি দ্বিগুন হবে।
বরং সে নিজেই স্বীয়
শান্তি বিনাশকারী-
নিঃশেষকারী। কোন অর্থেই তার
জন্য ধৈর্য্য প্রযোজ্য হবে না,
মুসিবত থেকে নাজাতও পাবে না।
কারণ ধৈর্য যদি হয় বিপদাপদ
মূলোৎপাটনকারী, অধৈর্য্যতা তার
পৃষ্ঠপোষকতা-দানকারী। যার
বিশ্বাস আছে, নির্ধারিত বস্তু
নিশ্চিত হস্তগত হবে, নির্দিষ্ট
বস্তু নিশ্চিত অর্জিত হবে, তার
ধৈর্য্য পরিহার করা নিরেট
বিড়ম্বনা- আরেকটি মুসিবত।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﺎَﻣ َﺏﺎَﺻَﺃ ٍﺔَﺒﻴِﺼُﻣ ْﻦِﻣ ِﺽْﺭَﺄْﻟﺍ ﻲِﻓ ﺎَﻟَﻭ ﻲِﻓ
ْﻢُﻜِﺴُﻔْﻧَﺃ ﺎَّﻟِﺇ ﻲِﻓ ٍﺏﺎَﺘِﻛ ْﻦِﻣ ِﻞْﺒَﻗ ْﻥَﺃ
ﺎَﻫَﺃَﺮْﺒَﻧ َّﻥِﺇ َﻚِﻟَﺫ ﻰَﻠَﻋ ِﻪَّﻠﻟﺍ .ٌﺮﻴِﺴَﻳ ْﻲَﻜِﻟ
ﺍْﻮَﺳْﺄَﺗ ﺎَﻟ ﻰَﻠَﻋ ْﻢُﻜَﺗﺎَﻓ ﺎَﻣ ﺎَﻟَﻭ ﺍﻮُﺣَﺮْﻔَﺗ
ْﻢُﻛﺎَﺗَﺁ ﺎَﻤِﺑ ُﻪَّﻠﻟﺍَﻭ ﺎَﻟ ُّﺐِﺤُﻳ َّﻞُﻛ ٍﻝﺎَﺘْﺨُﻣ
ٍﺭﻮُﺨَﻓ ﺪﻳﺪﺤﻟﺍ﴿ :২২-২৩﴾
“যমীনে এবং তোমাদের নিজদের
মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয়
না, যা আমি সংঘটিত করার
পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ
রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর
পক্ষে খুবই সহজ।
যাতে তোমরা আফসোস না কর তার
উপর যা তোমাদের
থেকে হারিয়ে গেছে এবং
তোমরা উৎফুল্ল না হও
তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন
তার কারণে। আর আল্লাহ কোন উদ্ধত
ও অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন
না।”[৪৭]
বর্ণিত আছে, জনৈক যাযাবর
শহরে প্রবেশ
করে একটি বাড়িতে চিৎকারের
আওয়াজ শোনে জিজ্ঞাসা করল,
এটা কিসে আওয়াজ? তাকে বলা হল,
তাদের একজন লোক মারা গেছে।
সে বলল, আমার মনে হচ্ছে :
তারা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ
করছে, তার
সিদ্ধান্তে বিরক্তি প্রকাশ
করছে এবং সওয়াব বিনষ্ট করছে।
মনে রাখা প্রয়োজন!
অস্থিরতা হারানো বস্তু
ফিরিয়ে আনতে পারে না,
বরং তা হিতকামনাকারীকে
দুঃখিত ও অশুভ
কামনাকারীকে আনন্দিত করে।
সাবধান! মুসিবতের দুঃখের
সাথে হতাশার নৈরাশ্য সংযোজন
করো না। কারণ উভয়ের
সঙ্গে ধৈর্যের সহাবস্থান হয় না।
এমন বিপরীতধর্মী জিনিস অন্তরও
গ্রহণ করে না। এ জন্য বলা হয়,
“ধৈর্য্যের মুসিবত, সবচে’ বড়
মুসিবত।” কথিত আছে, জনৈক
দম্পতির খুব আদরের এক সন্তান
মারা যায়,
স্বামী স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে
বলে, আল্লাহকে ভয় কর, ছওয়াবের
আশা রাখ, ধৈর্য্যধারণ কর।
সে উত্তরে বলে,
আমি যদি ধৈর্য্যকে হতাশার
মাধ্যমে নষ্ট করে দেই।
তাহলে এটাই হবে সবচে’ বড়
মুসিবত।
জনৈক বিদ্বান বলেছেন :
“জ্ঞানী ব্যক্তি মুসিবতের সময়
সে কাজ করে, যা আহমক একমাস
পরে করে। অবশেষে যখন ধৈর্য
ধরতেই হয় আর এতে মানুষ ভালও
জানে না। তাহলে শুরুতেই
তো ধৈর্য্যধারণ করা কত ভাল-
যা নির্বোধেরা একমাস পর
করে থাকে।”[৪৮]
সম্ভব ও সাধ্যের নাগালের জিনিস
গ্রহণ করেই ধৈর্য্যধারণকারীদের
মর্যাদা লাভ করা যায়। যেমন
হাতাশা না করা, কাপড়
না ছিড়া, গাল না চাপড়ানো,
অভিযোগ না করা, মুসিবত প্রকাশ
না করা, খাওয়া-দাওয়া ও
পরিধানের অভ্যাস স্বাভাবিক
রাখা, আল্লাহ তাআলার
ফায়সালাতে সন্তুষ্ট থাকা- এ
বিশ্বাস করে, যা ফেরত
নেয়া হয়েছে, তা আল্লাহর পক্ষ
থেকে আমাদের কাছে আমানত
ছিল। এবং সে পদ্ধতি গ্রহণ করা,
যা হজরত উম্মে সুলাইম রা. গ্রহণ
করেছিলেন।
বর্ণিত আছে : তাদের
একটি ছেলে মারা গেলে, আপন
স্বামী আবু তালহাকে তিনি এ
বলে সান্ত্ব্তনা দেন যে, কোন
সম্প্রদায় যদি কোন দম্পতির নিকট
একটি আমানত রাখে, অতঃপর
তারা তাদের আমানত ফেরৎ
নিয়ে নেয়,
তাহলে আপনি সেটা কোন
দৃষ্টিতে দেখবেন? তাদের নিষেধ
করার কোন অধিকার আছে কি?
উত্তর দিলেন, না। বললেন, আপনার
ছেলেকে সে আমানত গণ্য করুন।
তাকে হারানো পূণ্য জ্ঞান করুন।
এ ঘটনা অবহিত হয়ে রসূল
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻙﺭﺎﺑ ﻪﻠﻟﺍ ﺎﻤﻜﻟ ﻲﻓ .ﺎﻤﻜﺘﻠﻴﻟ ﺮﺑﺎﻏ
‏( ﻢﻠﺴﻣ : ৪৪৯৬)
“আল্লাহ তাআলা তোমাদের গত
রাতে বরকত দান করুন।”[৪৯]
সর্বশেষ বলি, ধৈর্য্য
ধৈর্য্যধারণকারীকে প্রশান্তি
এনে দেয়, মুসিবতের পরিবর্তে পূণ্য
এনে দেয়। অতএব স্বেচ্ছায়
ধৈর্যধারণ করাই ভাল। অন্যথায়
অযথা পেরেশান হয়ে, ধৈর্যধারণ
করতে বাধ্য হবে। তাই বলা হয়
“যে জ্ঞানীর মত ধৈর্যধারণ
না করে, সে চতুষ্পদ জন্তুর মত
যন্ত্রণা সহ্য করে।” হজরত আলী রা.
বলেন :
ﻚﻧﺇ ﻥﺇ ﺕﺮﺒﺻ ﻚﻴﻠﻋ ﻯﺮﺟ ﻢﻠﻘﻟﺍ ﺖﻧﺃﻭ
،ﺭﻮﺟﺄﻣ ﻥﺇﻭ ﺖﻋﺰﺟ ﻯﺮﺟ ﻚﻴﻠﻋ ﻢﻠﻘﻟﺍ
ﺖﻧﺃﻭ ﺭﻭﺯﺄﻣ .
“যদি তুমি ধৈর্যধারণ করো,
তাহলে তোমার ওপর তকদির
বর্তাবে, তবে তুমি নেকি লাভ
করবে।
পক্ষান্তরে যদি ধৈর্যহারা হও,
তাহলেও তোমার উপর তকদির
বর্তাবে, তবে তুমি গুনাহ্গার
হবে।”[৫০]
হজরত ওমর রা. বলেন :
ﺎﻧﺇ ﺎﻧﺪﺟﻭ ﺎﻨﺸﻴﻋ ﺮﻴﺧ ﺮﺒﺼﻟﺍ .
“আমরা উত্তম জীবনের বাহন
হিসেবে ধৈর্যকেই পেয়েছি।”
হজরত আলী রা. থেকে বর্ণিত:
ﺍﻮﻤﻠﻋﺍ ﻥﺃ ﺮﺒﺼﻟﺍ ﻥﺎﻤﻳﻹﺍ ﻦﻣ
ﺔﻟﺰﻨﻤﺑ ﺱﺃﺮﻟﺍ .ﺪﺴﺠﻟﺍ ﻦﻣ ﻻﺃ ﻪﻧﺇ ﻻ
ﻥﺎﻤﻳﺇ ﻦﻤﻟ ﻻ ﺮﺒﺻ ﻪﻟ .
“স্মরণ রেখ মাথা যেমন শরীরের
অংশ, তদ্রূপ ধৈর্যও ইমানের অংশ।
আরো স্মরণ রাখ, যার ধৈর্য নেই,
তার ইমানও নেই।”
হজরত হাসান
রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
ﺎﻣ ﻉﺮﺠﺗ ﺔﻋﺮﺟ ﺪﺒﻋ ﻢﻈﻋﺃ ﻦﻣ ﺔﻋﺮﺟ
ﻢﻠﺣ ،ﺐﻀﻐﻟﺍ ﺪﻨﻋ ﺔﻋﺮﺟﻭ ﺮﺒﺻ ﺪﻨﻋ
ﺔﺒﻴﺼﻤﻟﺍ.
“ক্রোধের সময় সহনশীলতার ঢোক
এবং মুসিবতের সময় ধৈর্যের
ঢোকের চেয়ে বড় ঢোক কেহ
গলধকরণ করেনি।”
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ
রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন :
ﺎﻣ ﻪﻠﻟﺍ ﻢﻌﻧﺃ ﻰﻠﻋ ﺪﺒﻋ ﺔﻤﻌﻧ
ﺎﻬﻋﺰﺘﻧﺎﻓ ،ﻪﻨﻣ ﺎﻬﻧﺎﻜﻣ ﻪﺿﺎﻌﻓ
ﺮﺒﺼﻟﺍ ﻻﺇ ﻥﺎﻛ ﻪﺿﻮﻋ ﺎﻣ ﺍﺮﻴﺧ ﺎﻤﻣ
ﻪﻋﺰﺘﻧﺍ.
“আল্লাহ
তাআলা যদি কাউকে নেয়ামত
দিয়ে পুনরায় নিয়ে নেন
এবং বিনিময়ে ধৈর্য দান করেন,
তাহলে বলতে হবে, দানকৃত বস্তুই
উত্তম, নিয়ে নেয়া বস্তু থেকে।”
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রকৃত
ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত
করুন। আমাদের জন্য তিনিই যথেষ্ট,
তিনিই আমাদের অভিভাবক।
সমাপ্ত
[১] মুসলিম : ৫০২৪
[২] বুখারী : ৬৯১২
[৩] বুখারী : ১৭৪৫
[৪] মুসলিম : ৫৩১৮
[৫] আল-বাকারা : ১৫৩। পবিত্র
কুরআনের অনেক স্থানে আল্লাহ
নেককারদের সাথে আছেন,
ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন
ইত্যাদি বলা হয়েছে।
তিনি আরশের উপর থেকেও
বান্দাকে সাহায্য
সহযোগিতা করার মাধ্যমে তার
সাথে রয়েছেন
বলে বুঝে নিতে হবে।
[৬] আল-বাকারা : ১৫৫-১৫৭
[৭] মুসনাদে ইমাম আহমাদ : ২৭৪৪
[৮] তিরমিযী : ২৪৪০
[৯] বোখারি : ৬১০৬ মুসলিম : ৪৭৮৫
[১০] মুসলিম শরীফ : ৪৮১৪
[১১] মুসলিম : নববীর ব্যাখ্যা সহ
[১২] আবু দাউদ : ৪০৭৭ আহমাদ : ২০৬০৭
[১৩] আহযাব : ২১
[১৪] বুখারী : ১৩০৩
[১৫] ইবরাহীম আ. ও তাঁর
অনুসারীদের মধ্যে
[১৬] মুমতাহানা : ৬
[১৭] সিয়ারু আলা মিনন নুবালা : ৪ /
৪৩০
[১৮] বুখারী : ৬৭৫৬ মুসলিম : ৪৮২২
[১৯] বাকারা : ২১৬
[২০] মুসনাদ : ২০২৮৩
[২১]. তাঁর আশংকা নিছক
ধারণা ভিত্তিক ছিল না,
বরং আল্লাহর পক্ষ
থেকে তিনি নিশ্চিত
জানতে পেরেছিলেন।
[২২] কাহাফ : ৮০-৮১
[২৩] মুসলিম : ৪৮১১
[২৪] বুখারী : ১৩৭৬
[২৫] ইউসুফ : ১৮
[২৬] ইউসুফ : ৮৩
[২৭] তিরমিজি : ২৩২২
[২৮] বোখারি : ৫২১৩ মুসলিম : ৭৭৮
[২৯] তিরমিযী : ২৩২০
ইবনে মাজাহ : ৪০২১
[৩০] তিরমিযী : ২৩২০
[৩১] নিসা : ১২৩
[৩২] আল মুসনাদ মিন
হাদীসে আবি বকর : ৬৮
[৩৩] বুখারী : ৫২২০ মুসলিম : ৪৬৭৩
[৩৪] বুখারী : ৫২২১
[৩৫] বুখারী : ৫৯৪৪
[৩৬] মুসলিম : ৪৭৭০
[৩৭] মুসনাদ : ৪৩১৪
[৩৮] মুসনাদে আহমদ : ১৪২৮৫
[৩৯] তিরমিযী : ৯৪২
[৪০] ইবনে মাজাহ : ১৫৯৮
[৪১] বুখারী : ৫২১৫ মুসলিম : ৪৬৬৩
[৪২] বুখারী : ৫২১০
[৪৩] তিরমিযী : ২৩২৩
[৪৪] মুসনাদ : ২২৩৩৮
[৪৫] মুসলিম : ৪৭২২
[৪৬] মুসলিম : ১৫২৫
[৪৭] হাদীদ : ২২-২৩
[৪৮] উত্তাতুচ্ছাবিরীন পৃ : ৭৪
[৪৯] মুসলিম : ৪৪৯৬
[৫০] আদাবুদ দুনিয়া ওদ্দিন পৃ : ৪০৭
_________________________________________
________________________________________
লেখক : সানাউল্লাহ বিন নজির
আহমদ
ﺀﺎﻨﺛ ﻪﻠﻟﺍ ﺮﻳﺬﻧ ﺪﻤﺣﺃ
সম্পাদনা : আলী হাসান তৈয়ব
ﺔﻌﺟﺍﺮﻣ : ﻲﻠﻋ ﻦﺴﺣ ﺐﻴﻃ
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো,
রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
ﺐﺘﻜﻤﻟﺍ ﻲﻧﻭﺎﻌﺘﻟﺍ ﺔﻴﻋﻮﺗﻭ ﺓﻮﻋﺪﻠﻟ
ﺓﻮﺑﺮﻟﺎﺑ ﺕﺎﻴﻟﺎﺠﻟﺍ ﺽﺎﻳﺮﻟﺍ ﺔﻨﻳﺪﻤﺑ