এক রাকাত বেতর না পড়া

(১) এক রাক‘আত বিতর না
পড়া
(১) এক রাক‘আত বিতর না পড়া :
বিতর মূলতঃ এক রাক‘আত। কারণ যত
ছালাতই আদায় করা হোক এক রাক‘আত
আদায় না করলে বিতর হবে না। এ মর্মে
অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু
এক রাক‘আত বলে কোন ছালাতই নেই, এই
কথাই সমাজে বেশী প্রচলিত। উক্ত মর্মে
কিছু উদ্ভট বর্ণনাও উল্লেখ করা হয়।
‏( ﺃ ‏) ْﻦَﻋ ٍﺪْﻴِﻌَﺳ ْﻰِﺑَﺃ َّﻥَﺃ َّﻰِﺒَّﻨﻟﺍ  ﻰَﻬَﻧ ِﻦَﻋ
ِﺀﺍَﺮْﻴَﺘُﺒْﻟﺍ ْﻥَﺃ َﻰِّﻠَﺼُّﻳ ُﻞُﺟَّﺮﻟﺍ ًﺓَﺪِﺣﺍَﻭ
ُﺮِﺗْﻮُﻳ .ﺎَﻬِﺑ
(ক) আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) এক রাক‘আত বিতর পড়তে নিষেধ
করেছেন। তাই কোন ব্যক্তি যেন এক
রাক‘আত ছালাত আদায় করে বিজোড় না
করে।[1]
তাহক্বীক্ব : আব্দুল হক্ব বলেন, উক্ত
বর্ণনার সনদে ওছমান বিন মুহাম্মাদ বিন
রবী‘আহ রয়েছে। [2] ইমাম নববী বলেন,
এক রাক‘আত বিতর নিষেধ মর্মে
মুহাম্মাদ বিন কা‘ব-এর হাদীছ মুরসাল ও
যঈফ।[3] উক্ত বর্ণনা গ্রহণযোগ্য না হলেও
‘হেদায়ার’ ভাষ্য গ্রন্থ ‘আল-ইনাইয়াহ’
কিতাবে তাকে খুব প্রসিদ্ধ বলে দাবী
করা হয়েছে। অর্থাৎ এক রাক‘আত বিতর
পড়ার বিরোধিতা করা হয়েছে।[4]
‏( ﺏ ‏) ْﻦَﻋ ٍﻦْﻴَﺼُﺣ َﻝﺎَﻗ َﻎَﻠَﺑ َﻦْﺑﺍ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ َّﻥَﺃ
ﺍًﺪْﻌَﺳ ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺔَﻌْﻛَﺮِﺑ َﻝﺎَﻗ ﺎَﻣ ُﺕْﺃَﺰْﺟَﺃ
ًﺔَﻌْﻛَﺭ ُّﻂَﻗ
(খ) হুছাইন (রাঃ) বলেন, ইবনু মাসঊদ
(রাঃ)-এর কাছে যখন এই কথা পৌঁছল যে,
সা‘দ (রাঃ) এক রাক‘আত বিতর পড়েন।
তখন তিনি বললেন, আমি এক রাক‘আত
ছালাতকে কখনো যথেষ্ট মনে করিনি’।
[5] অন্যত্র সরাসরি তাঁর পক্ষ থেকে
বর্ণনা এসেছে, ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ ﺎَﻣ
ُﺕْﺃَﺰْﺟَﺃ ًﺔَﻌْﻛَﺭ ُّﻂَﻗ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)
বলেন, আমি কখনো এক রাক‘আত ছালাত
যথেষ্ট মনে করি না’। [6]
তাহক্বীক্ব : ইমাম নববী (রাঃ) উক্ত
আছার উল্লেখ করার পর বলেন, এটি যঈফ
ও মাওকূফ। ইবনু মাসঊদের সাথে
হুছাইনের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। ইবনু
হাজার আসক্বালানীও তাই বলেছেন। [7]
‏( ﺝ ‏) َﻝﺎَﻗ ْﻮُﺑَﺃ َﺔَﻔْﻴِﻨَﺣ َﻻ ُّﺢِﺼَﻳ ُﺭﺎَﺘْﻳِﺈْﻟﺍ
ٍﺓَﺪِﺣﺍَﻮِﺑ َﻻَﻭ ُﻥْﻮُﻜَﺗ ُﺔَﻌْﻛَّﺮﻟﺍ ُﺓَﺪِﺣﺍَﻮْﻟﺍ
ًﺓَﻼَﺻ .ُّﻂَﻗ
(গ) আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, ‘এক
রাক‘আত বিতর পড়া ঠিক নয়। তাছাড়া
ছালাত কখনো এক রাক‘আত হয় না’। [8]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বক্তব্যের কোন সত্যতা
নেই। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) যেহেতু এক
রাক‘আত বিতর পড়েছেন এবং পড়তে
বলেছেন, সেহেতু অন্য কারো ব্যক্তিগত
কথার কোন মূল্য নেই।
জ্ঞাতব্য : ইমাম ত্বাহাবী বলেন, ‘বিতর
ছালাত এক রাক‘আতের অধিক। এক
রাক‘আত বিতর সম্পর্কে কোন হাদীছ
বর্ণিত হয়নি।[9] হেদায়া কিতাবে বিতর
সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, কিন্তু
এক রাক‘আত বিতর সম্পর্কে কোন কথা
উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তিন রাক‘আতের
কথা বলা হয়েছে।[10] মাওলানা
মুহিউদ্দ্বীন খান তার ‘তালীমুস্-সালাত’
বইয়ে বিতর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন
প্রায় ছয় পৃষ্ঠা। কিন্তু কোথাও এক
রাক‘আত বিতর-এর কথা উল্লেখ করেননি।
[11] ড. ইলিয়াস ফায়সাল ‘নবীজীর
নামায’ বইয়ে লিখেছেন, ‘বিতর সর্বনিম্ন
তিন রাকাআত। আমরা জানি যে, দু’
রাকাআতের নিচে কোনো নামায
নেই। .. হাদীস শরীফ থেকে বোঝা যায়
যে, বিতর হল সর্বনিম্ন তিন রাকাআত’।
[12] ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ
সন্ধানে’ বইয়ে ৩২০ থেকে ৩৩২ পৃষ্ঠা
পর্যন্ত বিতর সম্পর্কে আলোচনা করা
হয়েছে। কিন্তু কোথাও এক রাক‘আত
বিতরের কথা বলা হয়নি। বরং
বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয়েছে যে,
তিন রাক‘আতের কম বিতর পড়া যায় না।
ভাবখানা এমন যে, তারা জানেন না বা
হাদীছে কোন দিন দেখেননি যে বিতর
ছালাত এক রাক‘আতও আছে।
আমরা শুধু এতটুকু বলব যে, সাধারণ
মুছল্লীদেরকে যে কৌশলেই ধোঁকা
দেয়া হোক, আল্লাহ সে বিষয়ে
সর্বাধিক অবগত। কেউই তাঁর আয়ত্বের
বাইরে নয়। অতএব সাবধান!
এক রাক‘আত বিতর পড়ার
ছহীহ হাদীছ সমূহ
এক রাক‘আত বিতর পড়ার ছহীহ হাদীছ
সমূহ :
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ َﺮَﻤُﻋ َﻝﺎَﻗ َﻥﺎَﻛ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ 
ﻰِّﻠَﺼُﻳ َﻦِﻣ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ﻰَﻨْﺜَﻣ ﻰَﻨْﺜَﻣ ُﺮِﺗْﻮُﻳَﻭ
.ٍﺔَﻌْﻛَﺮِﺑ
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
রাত্রে দুই দুই রাক‘আত করে ছালাত
আদায় করতেন এবং এক রাক‘আত বিতর
পড়তেন।[1] রাসূল (ছাঃ) এক রাক‘আত
বিতর পড়ার নির্দেশও দিয়েছেন। যেমন-
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ َﺮَﻤُﻋ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ 
ٌﺔَﻌْﻛَﺭ ُﺮْﺗِﻮْﻟﺍ ْﻦِﻣ .ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ِﺮِﺧﺁ
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘বিতর এক রাক‘আত শেষ
রাত্রে’। [2]
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ َﺮَﻤُﻋ َّﻥَﺃ ﺎًﻠُﺟَﺭ َﻝَﺄَﺳ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
 ْﻦَﻋ ِﺓﺎَﻠَﺻ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ َﻝﺎَﻘَﻓ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
ِﻪْﻴَﻠَﻋ ﻡﺎَﻠَّﺴﻟﺍ ُﺓﺎَﻠَﺻ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ﻰَﻨْﺜَﻣ
ﻰَﻨْﺜَﻣ ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻲِﺸَﺧ ْﻢُﻛُﺪَﺣَﺃ َﺢْﺒُّﺼﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ
ًﺓَﺪِﺣﺍَﻭ ًﺔَﻌْﻛَﺭ ُﺮِﺗْﻮُﺗ ُﻪَﻟ ﺎَﻣ ْﺪَﻗ .ﻰَّﻠَﺻ
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক
ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিতর
ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাত্রির ছালাত দুই
দুই রাক‘আত করে। সুতরাং তোমাদের
কেউ যখন সকাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
করবে, তখন সে যেন এক রাক‘আত পড়ে
নেয়। তাহলে সে এতক্ষণ যা পড়েছে তার
জন্য সেটা বিতর হয়ে যাবে’। [3]
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ َﺮَﻤُﻋ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ 
ُﺓﺎَﻠَﺻ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ﻰَﻨْﺜَﻣ ﻰَﻨْﺜَﻣ ُﺮْﺗِﻮْﻟﺍَﻭ
.ٌﺓَﺪِﺣﺍَﻭ ٌﺔَﻌْﻛَﺭ
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, ‘রাত্রির ছালাত দুই দুই রাক‘আত।
আর বিতর এক রাক‘আত’। [4]
ْﻦَﻋ ْﻰِﺑَﺃ ِّﻯِﺭﺎَﺼْﻧَﻷﺍ َﺏْﻮُّﻳَﺃ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ ُﻝْﻮُﺳَﺭ
ِﻪﻠﻟﺍ  ُﺮْﺗِﻮْﻟﺍ ٌّﻖَﺣ ﻰَﻠَﻋ ِّﻞُﻛ ٍﻢِﻠْﺴُﻣ ْﻦَﻤَﻓ
َّﺐَﺣَﺃ ْﻥَﺃ َﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺲْﻤَﺨِﺑ ْﻞَﻌْﻔَﻴْﻠَﻓ ْﻦَﻣَﻭ َّﺐَﺣَﺃ
ْﻥَﺃ َﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ ْﻞَﻌْﻔَﻴْﻠَﻓ ْﻦَﻣَﻭ َّﺐَﺣَﺃ ْﻥَﺃ
ٍﺓَﺪِﺣﺍَﻮِﺑ َﺮِﺗْﻮُﻳ .ْﻞَﻌْﻔَﻴْﻠَﻓ
আবু আইয়ুব আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, বিতর পড়া প্রত্যেক
মুসলিম ব্যক্তির উপর বিশেষ কর্তব্য।
সুতরাং যে পাঁচ রাক‘আত পড়তে চায়, সে
যেন তাই পড়ে। আর যে তিন রাক‘আত
পড়তে চায় সে যেন তা পড়ে এবং যে এক
রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে।
[5]
ْﻦَﻋ ِﺪْﺒَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻦْﺑ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ ِﻦَﻋ ِّﻰِﺒَّﻨﻟﺍ 
َﻝﺎَﻗ َّﻥِﺇ َﻪﻠﻟﺍ ٌﺮْﺗِﻭ ُّﺐِﺤُﻳ َﺮْﺗِﻮْﻟﺍ
ﺍْﻭُﺮِﺗْﻭَﺄَﻓ ﺎَﻳ َﻞْﻫَﺃ .ِﻥﺁْﺮُﻘْﻟﺍ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ
বিজোড়। তিনি বিজোড়কে পসন্দ করেন।
সুতরাং হে কুরআনের অনুসারীরা! তোমরা
বিতর পড়’। [6]
সুধী পাঠক! উপরিউক্ত হাদীছগুলো
থাকতে কেন বলা হয় যে, এক রাক‘আত
কোন ছালাত নেই? সর্বশেষ হাদীছটিতে
সরাসরি আল্লাহর সাথে তুলনা করা
হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ এক বিজোড়, না
তিন, না পাঁচ বিজোড় তা কি বলার
অপেক্ষা রাখে? হাদীছের গ্রন্থগুলো
বিভিন্ন মাদরাসায় পড়ানো হয়, বরকতের
জন্য ‘খতমে বুখারী’ নামে লোক
দেখানো অনুষ্ঠানও করা হয়। কিন্তু উক্ত
হাদীছগুলো কি তাদের চোখে পড়ে না?
এটা অবশ্যই মাযহাবী নীতিকে ঠিক
রাখার অপকৌশল মাত্র। রাসূল (ছাঃ)-এর
হাদীছকে যদি এভাবে অবজ্ঞা ও গোপন
করা হয়, তবে ক্বিয়ামতের মাঠে কে
উদ্ধার করবে? যে সমস্ত ব্যক্তি ও
মাযহাবের পক্ষে ওকালতি করা হচ্ছে
তারা কি বিচারের দিন কোন উপকারে
আসবে?
ঢাকার ‘জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া’-
এর শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মতিন
‘দলিলসহ নামাযের মাসায়েল’ বইয়ে
বিতর ছালাত সম্পর্কে ৯৮-১৩১ পৃষ্ঠা
পর্যন্ত অনেক আলোচনা করেছেন। ছলে
বলে কৌশলে মিথ্যা ও উদ্ভট তথ্য দিয়ে
প্রচলিত তিন রাক‘আত বিতরকে প্রমাণ
করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। আর এক
রাক‘আত বিতরের হাদীছগুলো সম্পূর্ণই
আড়াল করেছেন। একজন সচেতন পাঠক
পড়লেই বুঝতে পারবেন কিভাবে তিনি
প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন।
দুনিয়াতে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ গোপন
করলেও পরকালে তাঁর কথা ঠিকই মনে
পড়বে। কিন্তু কোন লাভ হবে কি? আল্লাহ
বলেন, ‘যালিম সেদিন তার হাত দুইটি
দংশন করবে আর বলবে, হায়! আমি যদি
রাসূলের পথে চলতাম। হায়! দুর্ভোগ
আমার, অমুককে যদি সাথী হিসাবে গ্রহণ
না করতাম। আমাকে তো সে বিভ্রান্ত
করেছিল- আমার নিকট বিধান আসার পর।
শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক’
(ফুরক্বান ২৭-২৯)। অতএব লেখকের চিন্তা
করা উচিৎ তিনি কাকে অনুসরণ করে পথ
চলছেন!
(২) তিন রাক‘আত বিতর
পড়ার সময় দুই রাক‘আতের
পর তাশাহ্হুদ পড়া
(২) তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সময় দুই
রাক‘আতের পর তাশাহ্হুদ পড়া :
তিন রাক‘আত বিতর একটানা পড়তে হবে।
মাঝখানে কোন বৈঠক করা যাবে না।
এটাই সুন্নাত। কিন্তু অধিকাংশ মুছল্লী
মাঝখানে বৈঠক করে ও তাশাহ্হুদ পড়ে।
মুহিউদ্দ্বীন খান লিখেছেন, ‘প্রথম
বৈঠকে কেবল আত্তাহিয়্যাতু পড়ে
দাঁড়িয়ে যাবে। দুরূদ পড়বে না এবং
সালাম ফিরাবে না। যেমন মাগরিবের
নামাযে করা হয়, তেমনি করবে’।[1] অথচ
উক্ত আমলের পক্ষে কোন ছহীহ দলীল
নেই।
‏( ﺃ ‏) ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ َﻝﺎَﻗ ُﺮْﺗِﻮْﻟﺍ ُﺙﻼَﺛ
ِﺓﻼَﺼَﻛ ٍﺕﺎَﻌَﻛَﺭ .ِﺏِﺮْﻐَﻤْﻟﺍ
(ক) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, মাগরিবের
ছালাতের ন্যায় বিতরের ছালাত তিন
রাক‘আত।[2]
তাহক্বীক্ব : ইবনুল জাওযী বলেন, এই
হাদীছ ছহীহ নয়।[3]
‏( ﺏ ‏) ْﻦَﻋ ِﺪْﺒَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻦْﺑ َﺮَﻤُﻋ َﻥﺎَﻛ ُﻝْﻮُﻘَﻳ
ِﺏِﺮْﻐَﻤْﻟﺍ ُﺓﺎَﻠَﺻ ُﺮْﺗِﻭ ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﺓﺎَﻠَﺻ
(খ) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা) বলেন,
মাগরিবের ছালাত দিনের বিতর ছালাত।
[4]
তাহক্বীক্ব : অনেকে উক্ত বর্ণনা উল্লেখ
করে বিতর ছালাত মাগরিব ছালাতের
ন্যায় প্রমাণ করতে চান। অথচ তা
ত্রুটিপূর্ণ। বর্ণনাটি কখনো মারফূ‘ সূত্রে
এসেছে, কখনো মাওকূফ সূত্রে এসেছে।
তবে এর সনদ যঈফ। মুহাদ্দিছ শু‘আইব
আরনাঊত বলেন, ঐ অংশটুকু ছহীহ নয়।[5]
‏( ﺝ ‏) ْﻦَﻋ ِﺪْﺒَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻦْﺑ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ
ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  ُﺮْﺗِﻭ ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ ٌﺙَﻼَﺛ ِﺮْﺗِﻮَﻛ
ِﺭﺎَﻬَّﻨﻟﺍ ِﺓَﻼَﺻ .ِﺏِﺮْﻐَﻤْﻟﺍ
(গ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, রাত্রির তিন রাক‘আত বিতর
দিনের বিতরের ন্যায়। যেমন মাগরিবের
ছালাত।[6]
তাহক্বীক্ব : ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি
বর্ণনা করে বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু
যাকারিয়া যাকে ইবনু আবীল হাওয়াজিব
বলে। সে যঈফ। সে আ‘মাশ ছাড়া আর
কারো নিকট থেকে মারফূ হাদীছ বর্ণনা
করেনি।[7] ইমাম বায়হাক্বী বলেন,
ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া ইবনু হাযিব
কূফী আ‘মাশ থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণনা
করেছে। কিন্তু সে যঈফ। তার বর্ণনা
আ‘মাশ থেকে বর্ণিত অন্যান্য বর্ণনার
বিরোধিতা করে।[8] এছাড়াও ইমাম
দারাকুৎনী উক্ত বর্ণনার পূর্বে তার
বিরোধী ছহীহ হাদীছ উল্লেখ করেছেন।
সেখানে মাগরিবের মত করে বিতর
পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন-
ْﻦَﻋ ْﻰِﺑَﺃ َﺓَﺮْﻳَﺮُﻫ ْﻦَﻋ ِﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  َﻝﺎَﻗ
َﻻ ﺍْﻭُﺮِﺗْﻮُﺗ ﺍْﻭُﺮِﺗْﻭَﺃ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ ٍﺲْﻤَﺨِﺑ ْﻭَﺃ ٍﻊْﺒَﺳ
َﻻَﻭ ِﺓَﻼَﺼِﺑ ﺍْﻮُﻬِّﺒَﺸُﺗ .ِﺏِﺮْﻐَﻤْﻟﺍ
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা
(মাগরিবের ছালাতের ন্যায়) তিন
রাক‘আত বিতর পড় না, পাঁচ, সাত
রাক‘আত পড়। আর মাগরিবের ছালাতের
ন্যায় আদায় কর না’। ইমাম দারাকুৎনী
উক্ত হাদীছকে ছহীহ বলেছেন।[9]
বিশেষ জ্ঞাতব্য : ‘মাযহাব বিরোধীদের
স্বরূপ সন্ধানে’ ও ‘নবীজীর নামায’
শীর্ষক বইয়ে যঈফ হাদীছটি দ্বারা দলীল
পেশ করা হয়েছে। কিন্তু ছহীহ হাদীছটি
সম্পর্কে কোন কিছু বলা হয়নি। এটা
দুঃখজনক।[10] ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী
(রহঃ) বলেন, ْﻢَﻟ ْﺪِﺟَﺃ ًﺎﺜْﻳِﺪَﺣ ًﺎﻋْﻮُﻓْﺮَﻣ
ًﺎﺤْﻴِﺤَﺻ ًﺎﺤْﻳِﺮَﺻ ْﻰِﻓ ِﺕﺎَﺒْﺛِﺇ ِﺱْﻮُﻠُﺠْﻟﺍ ﻰِﻓ
ِﺔَﻌْﻛَّﺮﻟﺍ ِﺔَﻴِﻧﺎَّﺜﻟﺍ ِﺭﺎَﺘْﻳِﺈْﻟﺍ َﺪْﻨِﻋ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ
‘তিন রাক‘আত বিতরে দ্বিতীয় রাক‘আতে
বৈঠক করার পক্ষে আমি কোন মারফূ ছহীহ
দলীল পাইনি’।[11]
এক সঙ্গে তিন রাক‘আত
বিতর পড়ার ছহীহ দলীল
এক সঙ্গে তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ছহীহ
দলীল :
‏( ﺃ ‏) ْﻦَﻋ َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ
ْﺖَﻟﺎَﻗ َﻥﺎَﻛ ُﻝْﻮُﺳَﺭ
ِﻪﻠﻟﺍ ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ
َﻻ ُﺪُﻌْﻘَﻳ َّﻻِﺇ ْﻰِﻓ
.َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ
(ক) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি
শেষের রাক‘আতে ব্যতীত বসতেন না।[1]
বিশেষ সতর্কতা : মুস্তাদরাকে হাকেমে
বর্ণিত َﻻ ُﺪُﻌْﻘَﻳ (বসতেন না) শব্দকে
পরিবর্তন করে পরবর্তী ছাপাতে ُﻢِّﻠَﺴُﻳَﻻ
(সালাম ফিরাতেন না) করা হয়েছে।
কারণ পূর্ববর্তী সকল মুহাদ্দিছ َﻻ ُﺪُﻌْﻘَﻳ
দ্বারাই উল্লেখ করেছেন।[2] আরো
দুঃখজনক হল- আল্লামা আনোয়ার শাহ
কাশ্মীরী (রহঃ) নিজে স্বীকার
করেছেন যে, আমি মুস্তাদরাক হাকেমের
তিনটি কপি দেখেছি কিন্তু কোথাও
ُﻢِّﻠَﺴُﻳَﻻ (সালাম ফিরাতেন না) শব্দটি
পাইনি। তবে হেদায়ার হাদীছের
বিশ্লেষক আল্লামা যায়লাঈ উক্ত শব্দ
উল্লেখ করেছেন। আর যায়লাঈর কথাই
সঠিক।[3]
সুধী পাঠক! ইমাম হাকেম (৩২১-৪০৫ হিঃ)
নিজে হাদীছটি সংকলন করেছেন আর
তিনিই সঠিকটা জানেন না!! বহুদিন পরে
এসে যায়লাঈ (মৃঃ ৭৬২ হিঃ) সঠিকটা
জানলেন? অথচ ইমাম বায়হাক্বী
(৩৮৪-৪৫৮ হিঃ)ও একই সনদে উক্ত হাদীছ
উল্লেখ করেছেন। সেখানে একই শব্দ
আছে। অর্থাৎ َﻻ ُﺪُﻌْﻘَﻳ (বসতেন না) আছে।
একেই বলে মাযহাবী গোঁড়ামী। অন্ধ
তাকলীদকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যই
হাদীছের শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে।
‏( ﺏ ‏) ِﻦَﻋ ِﻦْﺑ َﺱﻭُﻭﺎَﻃ
ْﻦَﻋ ِﻪْﻴِﺑَﺃ ُﻪَّﻧَﺃ َﻥَﺎﻛ
ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ َﻻ
ُﺪُﻌْﻘَﻳ .َّﻦُﻬَﻨْﻴَﺑ
(খ) ইবনু ত্বাঊস তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন যে, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত
বিতর পড়তেন। মাঝে বসতেন না।[4]
‏( ﺝ ‏) ْﻦَﻋ َﺓَﺩﺎَﺘَﻗ ﻝﺎﻗ
َﻥﺎَﻛ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ َﻻ
ُﺪُﻌْﻘَﻳ َّﻻِﺇ ْﻰِﻓ
.َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ
(গ) ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। শেষের
রাক‘আতে ছাড়া তিনি বসতেন না।[5]
‏( ﺩ ‏) ْﻦَﻋ ِّﻰَﺑُﺃ ِﻦْﺑ ٍﺐْﻌَﻛ َّﻥَﺃ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ 
َﻥﺎَﻛ ُﺮِﺗْﻮُﻳ ِﺙَﻼَﺜِﺑ ٍﺕﺎَﻌَﻛَﺭ َﻥﺎَﻛ ُﺃَﺮْﻘَﻳ ﻰِﻓ
ﻰَﻟﻭُﻷﺍ ِﺏ ‏( ِﺢِّﺒَﺳ َﻢْﺳﺍ َﻚِّﺑَﺭ ﻰَﻠْﻋَﻷﺍ‏) ﻰِﻓَﻭ
ِﺔَﻴِﻧﺎَّﺜﻟﺍ ِﺏ ‏( ْﻞُﻗ ﺎَﻳ ﺎَﻬُّﻳَﺃ َﻥْﻭُﺮِﻓﺎَﻜْﻟﺍ ‏)
ﻰِﻓَﻭ ِﺔَﺜِﻟﺎَّﺜﻟﺍ ِﺏ ‏( ْﻞُﻗ َﻮُﻫ ُﻪﻠﻟﺍ ٌﺪَﺣَﺃ ‏)
ُﺖُﻨْﻘَﻳَﻭ َﻞْﺒَﻗ ِﻉْﻮُﻛُّﺮﻟﺍ ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻍَﺮَﻓ َﻝﺎَﻗ
َﺪْﻨِﻋ ِﻪِﻏﺍَﺮَﻓ َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ ِﻚِﻠَﻤْﻟﺍ ِﺱْﻭُّﺪُﻘْﻟﺍ
َﺙَﻼَﺛ ٍﺕﺍَّﺮَﻣ ُﻞْﻴِﻄُﻳ .َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ ْﻰِﻓ
(ঘ) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন।
প্রথম রাক‘আতে ‘সাবিবহিসমা
রাবিবকাল আ‘লা’ দ্বিতীয় রাক‘আতে
‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফেরূন’ এবং তৃতীয়
রাক‘আতে ‘কুল হুওয়াল্লা-হুল আহাদ’
পড়তেন এবং তিনি রুকূর পূর্বে কুনূত
পড়তেন। অতঃপর যখন তিনি শেষ করতেন
তখন শেষে তিনবার বলতেন ‘সুবহা-নাল
মালিকিল কুদ্দূস’। শেষবার টেনে
বলতেন।[6] উক্ত হাদীছও প্রমাণ করে
রাসূল (ছাঃ) একটানা তিন রাক‘আত
পড়েছেন, মাঝে বৈঠক করেননি।
‏( ﻩ ‏) ْﻦَﻋ َﺀَﺎﻄَﻋ ُﻪَّﻧَﺃ
َﻥﺎَﻛ ُﺮِﺗْﻮُﻳ ٍﺙَﻼَﺜِﺑ َﻻ
ُﺲِﻠْﺠَﻳ َّﻦِﻬْﻴِﻓ َﻭ َﻻ
ُﺪَّﻬَﺸَﺘَﻳ َّﻻِﺇ ْﻰِﻓ
.َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ
(ঙ) আত্বা (রাঃ) তিন রাক‘আত বিতর
পড়তেন কিন্তু মাঝে বসতেন না এবং
শেষ রাক‘আত ব্যতীত তাশাহহুদ পড়তেন
না।[7] এমন কি পাঁচ রাক‘আত পড়লেও
রাসূল (ছাঃ) এক বৈঠকে পড়েছেন।
‏( ﻭ ‏) ْﻦَﻋ َﺔَﺸِﺋﺎَﻋ َّﻥَﺃ
َّﻰِﺒَّﻨﻟﺍ َﻥﺎَﻛ ُﺮِﺗْﻮُﻳ
ٍﺲْﻤَﺨِﺑ َﻻَﻭ ُﺲِﻠْﺠَﻳ َّﻻِﺇ
ْﻰِﻓ .َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ
(চ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) পাঁচ রাক‘আত বিতর পড়তেন।
কিন্তু তিনি শেষ রাক‘আতে ছাড়া
বসতেন না।[8]
সুধী পাঠক! যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন
তারাই সমাধান পেশ করেছেন। সুতরাং
তিন রাক‘আত বিতর পড়ার ক্ষেত্রে
মাঝে তাশাহ্হুদ পড়া যাবে না; বরং
একটানা তিন রাক‘আত পড়তে হবে।
তারপর তাশাহ্হুদ পড়ে সালাম ফিরাতে
হবে।
জ্ঞাতব্য : তিন রাক‘আত বিতর পড়ার
ক্ষেত্রে দুই রাক‘আত পড়ে সালাম
ফিরিয়ে পুনরায় এক রাক‘আত পড়া যায়।
তিন রাক‘আত বিতর পড়ার এটিও একটি
উত্তম পদ্ধতি।[9] উল্লেখ্য যে, তিন
রাক‘আত বিতরের মাঝে সালাম দ্বারা
পার্থক্য করা যাবে না মর্মে যে হাদীছ
বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।[10]
(৩) কুনূত পড়ার পূর্বে
তাকবীর দেওয়া ও হাত
উত্তোলন করে হাত বাঁধা
(৩) কুনূত পড়ার পূর্বে তাকবীর দেওয়া ও
হাত উত্তোলন করে হাত বাঁধা :
বিতর ছালাতে ক্বিরাআত শেষ করে
তাকবীর দিয়ে পুনরায় হাত বাঁধার যে
নিয়ম সমাজে চালু আছে তা ভিত্তিহীন।
অথচ মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান
লিখেছেন, ‘তৃতীয় রাকআতে কেরাআত
সমাপ্ত করে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে কান
পর্যন্ত হাত তুলে আল্লাহ আকবার বলবে।
এরপর হাত বেঁধে নিয়ে দোআ কুনূত পাঠ
করবে। এটা ওয়াজিব’। [1] অথচ উক্ত
দাবীর পক্ষে কোন ছহীহ দলীল নেই।
ِﻦَﻋ ِﻦْﺑﺍ ٍﺩْﻮُﻌْﺴَﻣ ُﻪَّﻧَﺃ َﻥﺎَﻛ ُﺖُﻨْﻘَﻳ ﻲِﻓ
ِﺮْﺗِﻮْﻟﺍ َﻥﺎَﻛَﻭ ﺍَﺫِﺇ َﻍَﺮَﻓ َﻦِﻣ ِﺓَﺀﺍَﺮِﻘْﻟﺍ
َﺮَّﺒَﻛ َﻊَﻓَﺭَﻭ ِﻪْﻳَﺪَﻳ َّﻢُﺛ .َﺖَﻨَﻗ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বিতর ছালাতে কুনূত
পড়তেন। আর তিনি যখন ক্বিরাআত শেষ
করতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং দুই
হাত তুলতেন। অতঃপর কুনূত পড়তেন। [2]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি ভিত্তিহীন।
আলবানী (রহঃ) বলেন, ْﻢَﻟ ْﻒِﻗَﺃ ﻰَﻠَﻋ ٍﺪَﻨَﺳ
َﺪْﻨِﻋ ِﻡَﺮْﺛَﺄْﻟﺍ ْﻰِّﻨَّﻧَﺄِﻟ ْﻢَﻟ ْﻒِﻗَﺃ ﻰَﻠَﻋ
ُﺐِﻟﺎَﻏَﻭ…ِﻪِﺑﺎَﺘِﻛ ِّﻦَّﻈﻟﺍ ُﻪَّﻧَﺃ َﻻ ُّﺢِﺼَﻳ
আছরামের সনদ সম্পর্কে আমি অবগত নই।
এমনকি তার কিতাব সম্পর্কেও অবগত
নই।… আমার একান্ত ধারণা, এই বর্ণনা
সঠিক নয়।[3] উল্লেখ্য যে, উক্ত
ভিত্তিহীন বর্ণনা দ্বারাই ড. ইলিয়াস
ফায়সাল দলীল পেশ করেছেন।[4] আরো
উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনার মধ্যে পুনরায়
হাত বেঁধে কুনূত পড়ার কথা নেই। এ মর্মে
কোন দলীলও নেই। অথচ এটাই সমাজে
চলছে। বরং এটাকে ওয়াজিব বলা
হয়েছে।
(৪) কুনূত পড়ার পর মুখে হাত
মাসাহ করা
(৪) কুনূত পড়ার পর মুখে হাত মাসাহ করা :
বিতর ছালাতে কুনূত পড়ার পর মুখে হাত
মাসাহ করার কোন ছহীহ হাদীছ নেই।
উক্ত মর্মে যে বর্ণনাগুলো এসেছে
সেগুলো সবই যঈফ।
ْﻦَﻋ ِﻪﻠﻟﺍ ِﺪْﺒَﻋ ِﻦْﺑ ٍﺱﺎَّﺒَﻋ َّﻥَﺃ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
 َﻝﺎَﻗ َﻻ ﺍﻭُﺮُﺘْﺴَﺗ َﺭُﺪُﺠْﻟﺍ ْﻦَﻣ َﺮَﻈَﻧ ْﻰِﻓ
ِﺏﺎَﺘِﻛ ِﻪْﻴِﺧَﺃ ِﺮْﻴَﻐِﺑ ِﻪِﻧْﺫِﺇ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ ُﺮُﻈْﻨَﻳ
ﻰِﻓ ِﺭﺎَّﻨﻟﺍ ﺍﻮُﻠَﺳ َﻪﻠﻟﺍ ِﻥْﻮُﻄُﺒِﺑ ْﻢُﻜِّﻔُﻛَﺃ
َﻻَﻭ ُﻩْﻮُﻟَﺄْﺴَﺗ ﺎَﻫِﺭْﻮُﻬُﻈِﺑ ﺍَﺫِﺈَﻓ ْﻢُﺘْﻏَﺮَﻓ
ﺍْﻮُﺤَﺴْﻣﺎَﻓ ﺎَﻬِﺑ .ْﻢُﻜَﻫْﻮُﺟُﻭ
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
তোমরা দেওয়ালকে পর্দা দ্বারা আবৃত
কর না। যে ব্যক্তি অনুমতি ব্যতীত তার
ভাইয়ের চিঠির প্রতি লক্ষ্য করবে সে
(জাহান্নামের) আগুনের দিকে লক্ষ্য
করবে। তোমরা তোমাদের হাতের পেট
দ্বারা আল্লাহর কাছে চাও, পিঠ দ্বারা
চেও না। আর যখন দু‘আ শেষ করবে তখন
তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল মাসাহ
করবে’। [1]
৬৮
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে
আব্দুল মালেক ও ইবনু হিসান নামে দুইজন
দুর্বল রাবী রয়েছে। [2]
স্বয়ং
ইমাম আবুদাঊদ উক্ত হাদীছ উল্লেখ করে
মন্তব্য করেন, ‘এই হাদীছ অন্য সূত্রেও
মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব থেকে বর্ণিত
হয়েছে। কিন্তু এর প্রত্যেক সূত্রই দুর্বল।
এটিও সেগুলোর মত। তাই এটাও যঈফ’। [3]
উল্লেখ্য
যে, উক্ত মর্মে আরো কয়েকটি বর্ণনা
আছে সবই যঈফ।[4]
ইমাম মালেক (রহঃ)-কে এ বিষয়ে
জিজ্ঞেস করা হলে তিনি একে
প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, আমি এ
সম্পর্কে কিছু জানি না। আব্দুল্লাহ বিন
মুবারক, সুফিয়ান (রহঃ) থেকেও অনুরূপ
বক্তব্য এসেছে।
ইমাম আবুদাঊদ (রহঃ) মুখে হাত মাসাহ
করা সংক্রান্ত হাদীছ উল্লেখ করে
বলেন, ‘এই হাদীছ অন্য সূত্রেও মুহাম্মাদ
ইবনু কা‘ব থেকে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু
প্রত্যেকটিই সীমাহীন দুর্বল। এই সূত্রও
সেগুলোর মত। তাই এটাও যঈফ’। [5] অন্যত্র
তিনি বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ)-কে
বিতরের দু‘আ শেষ করে মুখে দু’হাত
মাসাহ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা
হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু
শুনিনি। [6] ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)
বলেন, ‘এটা এমন একটি আমল যা ছহীহ
হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়; আছার
দ্বারাও সাব্যস্ত হয়নি এবং ক্বিয়াস
দ্বারাও প্রমাণিত হয়নি। সুতরাং উত্তম
হল, এটা না করা’। [7] ইমাম ইবনু
তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
ﺎَّﻣَﺃَﻭ َﻊَﻓَﺭ ُّﻰِﺒَّﻨﻟﺍ  ِﻪْﻳَﺪَﻳ ﻰِﻓ ِﺀﺎَﻋُّﺪﻟﺍ
ْﺪَﻘَﻓ َﺀﺎَﺟ ِﻪْﻴِﻓ ٌﺚْﻳِﺩﺎَﺣَﺃ ٌﺓَﺮْﻴِﺜَﻛ ٌﺔَﺤْﻴِﺤَﺻ
ﺎَّﻣَﺃَﻭ ُﻪَﺤَﺴَﻣ ُﻪَﻬْﺟَﻭ ِﻪْﻳَﺪَﻴِﺑ َﺲْﻴَﻠَﻓ ُﻪْﻨَﻋ
ِﻪْﻴِﻓ ﺎَّﻟِﺇ ٌﺚْﻳِﺪَﺣ ْﻭَﺃ ِﻥﺎَﺜْﻳِﺪَﺣ ُﻡْﻮُﻘَﻳﺎَﻟ
ﺎَﻬِﺑ .ٌﺔُّﺠُﺣ
‘দু‘আয় রাসূল (ছাঃ) দুই হাত তুলেছেন
মর্মে অনেক ছহীহ হাদীছ এসেছে। কিন্তু
তিনি দুই হাত দ্বারা তার মুখ মাসাহ
করেছেন মর্মে একটি বা দু’টি হাদীছ
ছাড়া কোন বর্ণনা নেই। যার দ্বারা
দলীল সাব্যস্ত করা যায় না’। [8] শায়খ
আলবানী (রহঃ) এ সংক্রান্ত হাদীছগুলো
পর্যালোচনা শেষে বলেন, ‘দু‘আর পর মুখে
দু’হাত মাসাহ করা সম্পর্কে কোন ছহীহ
হাদীছ নেই’। [9]
কুনূত পড়ার ছহীহ নিয়ম
কুনূত পড়ার ছহীহ নিয়ম :
বিতরের কুনূত দুই নিয়মে পড়া যায়। শেষ
রাক‘আতে ক্বিরাআত শেষ করে হাত
বাঁধা অবস্থায় দু‘আয়ে কুনূত পড়া। [1]
অথবা ক্বিরাআত শেষে হাত তুলে দু‘আয়ে
কুনূত পড়া। রুকূর আগে বিতরের কুনূত পড়া
সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রুকূর আগে
বিতরের কুনূত পড়তেন।
ْﻦَﻋ ِّﻲَﺑُﺃ ِﻦْﺑ ٍﺐْﻌَﻛ َّﻥَﺃ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  َﻥﺎَﻛ
ُﺮِﺗْﻮُﻳ ِﺙﺎَﻠَﺜِﺑ ٍﺕﺎَﻌَﻛَﺭ َﻥﺎَﻛ ُﺃَﺮْﻘَﻳ ﻲِﻓ
ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ ْﺢِّﺒَﺴِﺑ َﻢْﺳﺍ َﻚِّﺑَﺭ ﻰَﻠْﻋَﺄْﻟﺍ ﻲِﻓَﻭ
ِﺔَﻴِﻧﺎَّﺜﻟﺍ ْﻞُﻘِﺑ ﺎَﻳ ﺎَﻬُّﻳَﺃ َﻥْﻭُﺮِﻓﺎَﻜْﻟﺍ
ﻲِﻓَﻭ ِﺔَﺜِﻟﺎَّﺜﻟﺍ ْﻞُﻘِﺑ َﻮُﻫ ُﻪﻠﻟﺍ ٌﺪَﺣَﺃ
ُﺖُﻨْﻘَﻳَﻭ َﻞْﺒَﻗ ِﻉْﻮُﻛُّﺮﻟﺍ ﺍَﺫِﺈَﻓ َﻍَﺮَﻓ َﻝﺎَﻗ
َﺪْﻨِﻋ ِﻪِﻏﺍَﺮَﻓ َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ ِﻚِﻠَﻤْﻟﺍ ِﺱْﻭُّﺪُﻘْﻟﺍ
َﺙﺎَﻠَﺛ ُﻞْﻴِﻄُﻳ ٍﺕﺍَّﺮَﻣ .َّﻦِﻫِﺮِﺧﺁ ْﻲِﻓ
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর ছালাত আদায়
করতেন। প্রথম রাক‘আতে সূরা আ‘লা,
দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা কাফেরূন এবং
তৃতীয় রাক‘আতে সূরা ইখলাছ পাঠ
করতেন। আর তিনি রুকূর পূর্বে কুনূত
পড়তেন। যখন তিনি ছালাত থেকে অবসর
হতেন তখন বলতেন, ‘সুবহা-নাল মালিকিল
কুদ্দূস’। শেষের বারে টেনে বলতেন। [2]
ْﻦَﻋ ِّﻲَﺑُﺃ ِﻦْﺑ ٍﺐْﻌَﻛ َّﻥَﺃ َﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  َﻥﺎَﻛ
ُﺖُﻨْﻘَﻴَﻓ ُﺮِﺗْﻮُﻳ َﻞْﺒَﻗ .ِﻉْﻮُﻛُّﺮﻟﺍ
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূল (ছাঃ) যখন বিতর পড়তেন তখন রুকূর
পূর্বে কুনূত পড়তেন।[3]
আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী আগে
কুনূত পড়াকেই উত্তম বলেছেন। [4] তবে
অনেক বিদ্বান রুকূর পরে পড়ার কথাও
বলেছেন। [5]
(৫) বিতরের কুনূতে
‘আল্লাহুম্মা ইন্না
নাস্তাঈনুকা ও
নাস্তাগফিরুকা…. মর্মে
‘কুনূতে নাযেলার’ দু‘আ পাঠ
করা
(৫) বিতরের কুনূতে ‘আল্লাহুম্মা ইন্না
নাস্তাঈনুকা ও নাস্তাগফিরুকা…. মর্মে
‘কুনূতে নাযেলার’ দু‘আ পাঠ করা :
অধিকাংশ মুছল্লী বিতরের কুনূতে যে
দু‘আ পাঠ করে থাকে, সেটা মূলতঃ কুনূতে
নাযেলা।[1] রাসূল (ছাঃ) বিতর ছালাতে
পড়ার জন্য হাসান (রাঃ)-কে যে দু‘আ
শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা মুছল্লীরা
প্রত্যাখ্যান করেছে। অতএব বিতরের কুনূত
হিসাবে রাসূল (ছাঃ)-এর শিক্ষা দেওয়া
দু‘আ পাঠ করতে হবে।
ْﻦَﻋ ﻰِﺑَﺃ ِﺀﺍَﺭْﻮَﺤْﻟﺍ ِّﻯِﺪْﻌَّﺴﻟﺍ َﻝﺎَﻗ َﻝﺎَﻗ
ُﻦَﺴَﺤْﻟﺍ ُﻦْﺑ ٍّﻰِﻠَﻋ ﻰﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﺎَﻤُﻬْﻨَﻋ
ْﻰِﻨَﻤَّﻠَﻋ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  ٍﺕﺎَﻤِﻠَﻛ َّﻦُﻬُﻟْﻮُﻗَﺃ
ﻰِﻓ ِﺮْﺗِﻮْﻟﺍ َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ ْﻰِﻧِﺪْﻫﺍ ْﻦَﻤْﻴِﻓ َﺖْﻳَﺪَﻫ
ْﻰِﻨِﻓﺎَﻋَﻭ ْﻦَﻤْﻴِﻓ َﺖْﻴَﻓﺎَﻋ ْﻰِﻨَّﻟَﻮَﺗَﻭ ْﻦَﻤْﻴِﻓ
َﺖْﻴَّﻟَﻮَﺗ ْﻙِﺭﺎَﺑَﻭ ْﻰِﻟ ﺎَﻤْﻴِﻓ َﺖْﻴَﻄْﻋَﺃ ْﻰِﻨِﻗَﻭ
َّﺮَﺷ ﺎَﻣ َﺖْﻴَﻀَﻗ َﻚَّﻧِﺈَﻓ ْﻰِﻀْﻘَﺗ َﻻَﻭ ﻰَﻀْﻘُﻳ
َﻚْﻴَﻠَﻋ ُﻪَّﻧِﺇَﻭ َﻻ ُّﻝِﺬَﻳ ْﻦَﻣ َﺖْﻴَﻟﺍَﻭ َﺖْﻛَﺭﺎَﺒَﺗ
.َﺖْﻴَﻟﺎَﻌَﺗَﻭ ﺎَﻨَّﺑَﺭ
আবুল হাওরা সা‘দী (রাঃ) বলেন, হাসান
ইবনু আলী (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (ছাঃ)
আমাকে কতিপয় বাক্য শিক্ষা
দিয়েছেন। সেগুলো আমি বিতর ছালাতে
বলি। সেগুলো হল- ‘হে আল্লাহ! আপনি
আমাকে হেদায়াত দান করুন, যাদের
আপনি হেদায়াত করেছেন তাদের
সাথে। আমাকে মাফ করে দিন, যাদের
মাফ করেছেন তাদের সাথে। আমার
অভিভাবক হন, যাদের অভিভাবক
হয়েছেন তাদের সাথে। আপনি যা
আমাকে দান করেছেন তাতে বরকত দান
করুন। আর আমাকে ঐ অনিষ্ট হতে বাঁচান,
যা আপনি নির্ধারণ করেছেন। আপনিই
ফায়ছালা করে থাকেন, আপনার উপরে
কেউ ফায়ছালা করতে পারে না। নিশ্চয়ই
ঐ ব্যক্তি লাঞ্ছিত হয় না, যাকে আপনি
বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন। হে
আমাদের প্রতিপালক! আপনি বরকতময়,
আপনি সুউচ্চ’। [2] উল্লেখ্য যে, বিতরের
কুনূত জামা‘আতের সাথে পড়লে শব্দগুলো
বহুবচন করে পড়া যাবে। [3]
জ্ঞাতব্য : অনেকে কুনূতে বিতর ও কুনূতে
নাযেলা একাকার করে ফেলেছেন। [4]
অথচ কুনূতে নাযেলা ফরয ছালাতের জন্য।
দুঃখজনক হল- মাযহাবী বিদ্বেষের
কারণে এর প্রচলন করা হয়েছে।
(৬) ফজর ছালাতে নিয়মিত
কুনূত পড়া
(৬) ফজর ছালাতে নিয়মিত কুনূত পড়া :
অনেক মসজিদে ফজর ছালাতে নিয়মিত
কুনূত পড়া হয়। দু‘আ হিসাবে ‘কুনূতে
নাযেলা’ না পড়ে বিতরের কুনূত পড়া হয়।
এটা আরো দুঃখজনক। কুনূতে নাযেলা
প্রত্যেক ফরয ছালাতে পড়া যায়। সে
অনুযায়ী ফজর ছালাতেও পড়বে। [1] কিন্তু
নির্দিষ্ট করে নিয়মিত শুধু ফজর ছালাতে
পড়া যাবে না। কারণ এর পক্ষে যতগুলো
হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সবই যঈফ। যেমন-
‏( ﺃ ‏) ْﻦَﻋ ِﺲَﻧَﺃ ِﻦْﺑ ٍﻚِﻟﺎَﻣ َﻝﺎَﻗ ﺎَﻣ َﻝﺍَﺯ
ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ  ُﺖُﻨْﻘَﻳ ﻰِﻓ ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ ﻰَّﺘَﺣ
.ﺎَﻴْﻧُّﺪﻟﺍ َﻕَﺭﺎَﻓ
(ক) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) মৃত্যু
পর্যন্ত ফজরের ছালাতে কুনূত পড়েছেন।
[2]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার
সনদে আবু জা‘ফর রাযী নামে একজন
মুযতারাব রাবী আছে। সে বিভিন্ন সময়ে
বিভিন্ন রকম বর্ণনা করেছে।[3]
‏( ﺏ ‏) ْﻦَﻋ ِّﻡُﺃ َﺔَﻤَﻠَﺳ ْﺖَﻟﺎَﻗ ﻰَﻬَﻧ ُﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
 ِﺕْﻮُﻨُﻘْﻟﺍ ِﻦَﻋ ﻰِﻓ .ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ
(খ) উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফজরের ছালাতে কুনূত
পড়তে নিষেধ করেছেন। [4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম
দারাকুৎনী বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ইয়ালী,
আমবাসা ও আব্দুলাহ ইবনু নাফে সকলেই
যঈফ। উম্মে সালামা থেকে নাফের শ্রবণ
সঠিক নয়। [5] ইবনু মাঈন বলেন, সে হাদীছ
জাল করত। ইবনু হিববান বলেন, সে জাল
হাদীছ বর্ণনাকারী। যেগুলোর কোন
ভিত্তি নেই।[6] অতি বাড়াবাড়ি করে
উক্ত হাদীছ জাল করে নিষেধের দলীল
তৈরি করা হয়েছে।
অতএব ফজর ছালাতে নিয়মিত কুনূত পড়া
থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত
পড়াটা ছাহাবীদের চোখেই বিদ‘আত
বলে গণ্য হয়েছে। যেমন-
ْﻦَﻋ ْﻰِﺑَﺃ ٍﻚِﻟﺎَﻣ ِّﻰِﻌَﺠْﺷَﻷﺍ َﻝﺎَﻗ ُﺖْﻠُﻗ ْﻰِﺑَﻷ
ﺎَﻳ ِﺔَﺑَﺃ َﻚَّﻧِﺇ ْﺪَﻗ َﺖْﻴَّﻠَﺻ َﻒْﻠَﺧ ِﻝْﻮُﺳَﺭ ِﻪﻠﻟﺍ
 ْﻰِﺑَﺃَﻭ ٍﺮْﻜَﺑ َﺮَﻤُﻋَﻭ َﻥﺎَﻤْﺜُﻋَﻭ ِّﻰِﻠَﻋَﻭ ِﻦْﺑ
ْﻰِﺑَﺃ ٍﺐِﻟﺎَﻃ ﺎَﻫ ﺎَﻨُﻫ ِﺔَﻓْﻮُﻜْﻟﺎِﺑ ﺍًﻮْﺤَﻧ ْﻦِﻣ
ِﺲْﻤَﺧ َﻦْﻴِﻨِﺳ ﺍْﻮُﻧﺎَﻛَﺃ َﻥْﻮُﺘُﻨْﻘَﻳ َﻝﺎَﻗ ْﻯَﺃ
َّﻰَﻨُﺑ .ٌﺙَﺪْﺤُﻣ
আবু মালেক আশজাঈ (রাঃ) বলেন, আমি
আব্বাকে বললাম, আপনি তো রাসূল
(ছাঃ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর
পিছনে ছালাত আদায় করেছেন। এমনকি
কূফাতে আলী (রাঃ)-এর পিছনে পাঁচ বছর
ছালাত আদায় করেছেন। তারা কি কুনূত
পড়তেন? তিনি বললেন, হে বৎস! এটা
বিদ‘আত। [7]
রাতের ছালাত
রাতের ছালাত :
রাতে ঘুম থেকে উঠে ছালাত আদায়কে
‘তাহাজ্জুদ’ বলে। মূলতঃ তাহাজ্জুদ,
ক্বিয়ামুল লায়েল, তারাবীহ, ক্বিয়ামে
রামাযান সবই ‘ছালাতুল লায়েল’ বা
রাতের ছালাত। রাতের শেষ অংশে
পড়লে তাকে ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয় এবং
প্রথম অংশে পড়লে ‘তারাবীহ’ বলা হয়।
প্রথম রাতে তারাবীহ পড়লে শেষ রাতে
তাহাজ্জুদ পড়তে হয় না। রাসূল (ছাঃ)
একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ
দু’টিই পড়েছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই।
[1]
রাসূল (ছাঃ) তাহাজ্জুদের ছালাতে উঠে
আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে
ইমরানের ১৯০ আয়াত থেকে সূরার শেষ
অর্থাৎ ২০০ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন।
অতঃপর মিসওয়াক করে ওযূ করতেন। [2]
ছালাত শুরু করার পূর্বে ‘আল্লাহু আকবার’,
‘আল-হামদুলিল্লাহ’, সুবহানাল্লা-হি ওয়া
বিহামদিহী, সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস,
আস্তাগফিরুল্লাহ, লা-ইলা-হা
ইল্লাল্লাহু, আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযূবিকা
মিন যীকিদ্দুনিয়া ওয়া মিন যীক্বি
ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ’ বলতেন। উক্ত
বাক্যগুলো প্রত্যেকটিই দশবার দশবার
করে বলতেন। [3] নিম্নের দু‘আটিও পড়া
যায়। তবে আরো দু‘আ আছে। [4]
ﻵ َﻪَﻟِﺇ َّﻻِﺇ ُﻪﻠﻟﺍ ُﻩَﺪْﺣَﻭ ﻵ َﻚْﻳِﺮَﺷ ،ُﻪَﻟ ُﻪَﻟ
ُﻚْﻠُﻤْﻟﺍ ُﻪَﻟَﻭ ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍ َﻮُﻫَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِّﻞُﻛ ٍﺀْﻲَﺷ
،ٌﺮْﻳِﺪَﻗ َﻥﺎَﺤْﺒُﺳ ِﻪﻠﻟﺍ ُﺪْﻤَﺤْﻟﺍَﻭ ِﻪﻠﻟِ ﻵَﻭ
َﻪَﻟِﺇ ُﻪﻠﻟﺍ َّﻻِﺇ ُﻪﻠﻟﺍَﻭ ُﺮَﺒْﻛَﺃ ﻵَﻭ َﻝْﻮَﺣ ﻵَﻭ
َﺓَّﻮُﻗ َّﻻِﺇ .ِﻪﻠﻟﺎِﺑ
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু। লাহুল মুলকু
ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি
শাইয়িন ক্বাদীর। সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল
হামদু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা
ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার; ওয়ালা
হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-
হ। অতঃপর বলবে, ‘রবিবগফির্লী’। [5]
উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) তাহাজ্জুদের
ছালাতে বিভিন্ন ‘ছানা’ পড়েছেন। [6]
তাহাজ্জুদ ছালাতের নিয়ম :
(ক) তাহাজ্জুদ শুরু করার পূর্বে দু’রাক‘আত
সংক্ষিপ্তভাবে পড়ে নিবে। [7] (খ)
অতঃপর দুই দুই রাক‘আত করে ৮ রাক‘আত
পড়বে এবং শেষে একটানা তিন রাক‘আত
বিতর পড়বে, মাঝে বৈঠক করবে না। [8]
অথবা দুই দুই রাক‘আত করে দশ রাক‘আত
পড়বে। শেষে এক রাক‘আত বিতর পড়বে।
[9] রাসূল (ছাঃ) নিয়মিত উক্ত
পদ্ধতিতেই ছালাত আদায় করতেন। তবে
কখনো কখনো বিতর ছালাতের সংখ্যা কম
বেশী করে রাতের ছালাতের রাক‘আত
সংখ্যা কম বেশী করতেন। কারণ রাতের
পুরো ছালাতই বিতর। দুই রাক‘আত করে
পড়ে শেষে এক রাক‘আত পড়লেই সব
বিতর হয়ে যায়। [10] আর তিনি ১৩
রাক‘আতের বেশী পড়েছেন মর্মে কোন
ছহীহ দলীল পাওয়া যায় না।[11] (গ) যদি
কেউ প্রথম রাতে এশার পরে বিতর পড়ে
ঘুমিয়ে যায়, তবে শেষ রাতে শুধু
তাহাজ্জুদ পড়বে। তখন আর বিতর পড়তে
হবে না। কারণ এক রাতে দুইবার বিতর
পড়তে হয় না। [12] (ঘ) বিতর ক্বাযা হয়ে
গেলে সকালে অথবা যখন স্মরণ বা সুযোগ
হবে, তখন পড়ে নেয়া যাবে’। [13] (ঙ) যদি
কেউ আগ রাতে বিতরের পর দু’রাকআত
নফল ছালাত আদায় করে এবং শেষরাতে
তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে সক্ষম না হয়,
তাহলে উক্ত দু’রাক‘আত ছালাত তার জন্য
যথেষ্ট হবে’। [14] (চ) রাতের নফল ছালাত
নিয়মিত আদায় করা উচিৎ। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, ‘তুমি ঐ ব্যক্তির মত হয়ো
না, যে রাতের নফল ছালাতে অভ্যস্ত
ছিল। কিন্তু পরে ছেড়ে দিয়েছে’। [15]
নিয়মিত রাতের ছালাত আদায়কারী
ব্যক্তি বিতর পড়ে শুয়ে গেলে এবং ঘুম
বা অন্য কোন কারণে তাহাজ্জুদ পড়তে
না পারলে দিনের বেলায় দুপুরের আগে
তা পড়ে নিতে পারবে।[16] (ছ)
তাহাজ্জুদ ছালাতে ক্বিরাআত কখনো
সশব্দে কখনো নিঃশব্দে পড়া যায়। [17]
পেজ ন্যাভিগেশন
সর্বমোটঃ 11 টি বিষয় দেখান হচ্ছে।
1 2 পরের পাতা শেষের
পাতা
 জাল
হাদীছের কবলে
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর ছালাত
 বিতর
ছালাত
 মুযাফফর
বিন মুহসিন
  
 
ফুটনোটঃ[1]. ইবনু আব্দিল
বার্র, আত-তামহীদ, আল-
আহকামুল উস্তা ২/৫০ পৃঃ;
আলোচনা দ্রঃ টীকা,
মুওয়াত্ত্বা মালেক,
তাহক্বীক্ব : ড.
তাক্বিউদ্দীন আন-নাদভী
হা/২৫৮।
[2]. ﻰﻓ ﻩﺩﺎﻨﺳﺇ ﻥﺎﻤﺜﻋ ﻦﺑ
ﺪﻤﺤﻣ ﻦﺑ ﺔﻌﻴﺑﺭ ﺐﻟﺎﻐﻟﺍﻭ
ﻰﻠﻋ ﻪﺜﻳﺪﺣ ﻢﻫﻮﻟﺍ আল-
আহকামুল উস্তা ২/৫০ পৃঃ।
[3]. ﺚﻳﺪﺣ ﺪﻤﺤﻣ ﻦﺑ ﺐﻌﻛ ﻲﻓ
ﻲﻬﻨﻟﺍ ﻦﻋ ﺀﺍﺮﻴﺘﺒﻟﺍ ﻞﺳﺮﻣ
ﻒﻴﻌﺿ …নববী, খুলাছাতুল
আহকাম হা/১৮৮৮; কাশফুল
খাফা।
[4]. َﺮِﻬُﺘْﺷُﺍ َّﻥَﺃ َّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﻰَّﻠَﺻ
ُﻪﻠﻟﺍ ِﻪْﻴَﻠَﻋ َﻢَّﻠَﺳَﻭ ﻰَﻬَﻧ ْﻦَﻋ
ِﺀﺍَﺮْﻴَﺘُﺒْﻟﺍ হেদায়াহ ২/১৮৪
পৃঃ।
[5]. ত্বাবারাণী, আল-
মু‘জামুল কাবীর হা/৯৪২২।
[6]. খুলাছাতুল আহকাম ফী
মুহিম্মাতিস সুনান ওয়া
ক্বাওয়াইদিল ইসলাম
হা/১৮৮৯।
[7]. তাহক্বীক্ব মুওয়াত্ত্ব
মুহাম্মাদ ২/২২ পৃঃ।
[8]. ছহীহ মুসলিম শরহে নববী
১/২৫৩ পৃঃ, হা/১৭৫১-এর
হাদীছের আলোচনা দ্রঃ।
[9]. ত্বাহাবী হা/১৭৩৯-এর
আলোচনা দেখুন َّﻥَﺃ َﺮْﺗِﻮْﻟﺍ
ُﺮَﺜْﻛَﺃ ْﻦِﻣ ٍﺔَﻌْﻛَﺭ ْﻢَﻟَﻭ َﻭْﺮُﻳ ﻰِﻓ
ِﺔَﻌْﻛَّﺮﻟﺍ ٌﺀْﻲَﺷ ।
[10]. হেদায়া ১/১৪৪-১৪৫
পৃঃ।
[11]. ঐ, পৃঃ ১৬৯-১৭৪।
[12]. ঐ, পৃঃ ২৪১।