স্ত্রী কে ভালোবাসুন

স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার
করার অসিয়ত
_________________________________
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,“তোমরা তাদের
সাথে সৎভাবে জীবন যাপন কর।”
(সূরা নিসা ১৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,অর্থাৎ “তোমরা যতই
সাগ্রহে চেষ্টা কর না কেন,
স্ত্রীদের প্রতি সমান
ভালোবাসা তোমরা কখনই
রাখতে পারবে না।
তবে তোমরা কোন এক জনের
দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না এবং অপরকে ঝুলন্ত
অবস্থায় ছেড়ে দিও না। আর
যদি তোমরা নিজেদের সংশোধন কর
ও সংযমী হও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ
চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা নিসা ১২৯ আয়াত)
♥আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য
মঙ্গলকামী হও। কারণ
নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড়
থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর
পাঁজরের হাড়ের
সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার
উপরের অংশ।
যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও,
তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর
যদি তাকে ছেড়ে দাও
তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই
তোমরা নারীদের জন্য
মঙ্গলকামী হও।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[1]
বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক
বর্ণনায় আছে, ‘‘মহিলা পাঁজরের
হাড়ের মত।
যদি তুমি তাকে সোজা করতে চাও,
তবে তুমি তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর
যদি তুমি তার দ্বারা উপকৃত
হতে চাও, তাহলে তার এ
বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে।’’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে,
‘‘মহিলাকে পাঁজরের বাঁকা হাড়
থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে কখনই
একভাবে তোমার জন্য
সোজা থাকবে না। এতএব
তুমি যদি তার থেকে উপকৃত
হতে চাও, তাহলে তার এ
বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে। আর
যদি তুমি তা সোজা করতে চাও,
তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর
তাকে ভেঙ্গে ফেলা হল তালাক
দেওয়া।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

♥আব্দুল্লাহ ইবনে যামআহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুৎবাহ
দিতে শুনলেন। তিনি (খুৎবার
মাধ্যমে) (সালেহ নবীর)
উটনী এবং ঐ ব্যক্তির
কথা আলোচনা করলেন, যে ঐ
উঁটনীটিকে কেটে ফেলেছিল।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন
তাদের মধ্যকার সর্বাধিক হতভাগ্য
ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠল। (সূরা শাম্স
১২ আয়াত) (অর্থাৎ)
উঁটনীটিকে মেরে ফেলার জন্য নিজ
বংশের মধ্যে এক দুরন্ত চরিত্রহীন
প্রভাবশালী ব্যক্তি তৎপর
হয়ে উঠেছিল।’’ অতঃপর
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের
কথা আলোচনা করলেন এবং তাদের
ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করলেন।
তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ
কেউ তার স্ত্রীকে দাসদের মত
প্রহার করে। অতঃপর সম্ভবত দিনের
শেষে তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়।
(এরূপ উচিত নয়।)’’ পুনরায়
তিনি তাদেরকে বাতকর্মের
ব্যাপারে হাসতে নিষেধ করলেন
এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ এমন
কাজে কেন হাসে, যে কাজ
সে নিজেও করে?’’ (বুখারী ও মুসলিম)
[2]

♥আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন
ঈমানদার নারী (স্ত্রীকে)
ঘৃণা না করে। যদি সে তার
একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হয়, তবে অন্য
আচরণে সন্তুষ্ট হবে।’’ (মুসলিম) [3]

♥‘আমর ইবনে আহ্ওয়াস
জুশামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক
বর্ণিত, তিনি বিদায়
হজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
কে বলতে শুনেছেন,
তিনি সর্বপ্রথমে আল্লাহর
প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন
এবং উপদেশ দান ও নসীহত করলেন।
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘শোনো!
তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার
কর। কেননা, তারা তোমাদের নিকট
কয়েদী। তোমরা তাদের নিকটে এ
(শয্যা-সঙ্গিনী হওয়া, নিজের
পবিত্রতা রক্ষা করা এবং তোমাদের
মালের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি)
ছাড়া অন্য কোনও জিনিসের
অধিকার রাখ না। হ্যাঁ,
সে যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতার
কাজ
করে (তাহলে তোমরা তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার
অধিকার রাখ)।
সুতরাং তারা যদি এমন কাজ করে,
তবে তাদেরকে বিছানায়
আলাদা ছেড়ে দাও
এবং তাদেরকে মার। কিন্তু সে মার
যেন যন্ত্রণাদায়ক না হয়। অতঃপর
তারা যদি তোমাদের অনুগত
হয়ে যায়, তবে তাদের জন্য অন্য
কোনো পথ অনুসন্ধান করো না।
মনে রেখ, তোমাদের স্ত্রীদের উপর
তোমাদের অধিকার রয়েছে, অনুরূপ
তোমাদের উপর তোমাদের
স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে।
তোমাদের অধিকার হল, তারা যেন
তোমাদের বিছানায় ঐ সব
লোককে আসতে না দেয়,
যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর
এবং তারা যেন ঐ সব
লোককে তোমাদের
বাড়ীতে প্রবেশ করার
অনুমতি না দেয়,
যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। আর
শোনো! তোমাদের উপর তাদের
অধিকার এই যে,
তাদেরকে ভালোরূপে খেতে-
পরতে দেবে।’’ (তিরমিযী, হাসান
সূত্রে) [4]
* কয়েদী অর্থাৎ বন্দিনী।
স্বামীর হুকুম পালনের
ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্ত্রীকে বন্দিনীর
সাথে তুলনা করেছেন।
* যন্ত্রণাদায়ক না হয়ঃ অর্থাৎ
তাতে কেটে-ফুটে না যায়
এবং কঠিন ব্যথা না হয়।
* অন্য কোন পথ অনুসন্ধান
করো নাঃ অর্থাৎ এমন পথ অনুসন্ধান
করো না,
যাতে তাদেরকে নাজেহাল
করে কষ্ট দাও। (অথবা তালাক
ইত্যাদি দেওয়ার কথা ভেবো না।)

♥মুআবিয়াহ ইবনে হাইদাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম,
‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের
কারো স্ত্রীর অধিকার স্বামীর
উপর কতটুকু?’ তিনি বললেন,
‘‘তুমি খেলে তাকে খাওয়াবে এবং তুমি পরলে তাকে পরাবে।
(তার) চেহারায় মারবে না, তাকে
‘কুৎসিত হ’ বলবে না এবং তার
থেকে পৃথক থাকলে বাড়ীর ভিতরেই
থাকবে।’’ (অর্থাৎ অবাধ্য
স্ত্রীকে বাধ্য করার জন্য
বিছানা পৃথক করতে পারা যাবে,
কিন্তু রুম পৃথক করা যাবে না।) (আবূ
দাউদ, হাসান সূত্রে) [5]
* ‘কুৎসিত হ’ বলবে নাঃ অর্থাৎ
‘আল্লাহ তোমাকে কুৎসিত করুক’
বলে অভিশাপ দেবে না।

♥আবূ হুরাইরাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘মু’মিনদের মধ্যে সবার চেয়ে পূর্ণ
মু’মিন ঐ ব্যক্তি যে চরিত্রে সবার
চেয়ে সুন্দর, আর তাদের
মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি,
যে নিজের স্ত্রীর জন্য সর্বোত্তম।’’
(তিরমিযী) [6]

♥ইয়াস ইবনে আব্দুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা আল্লাহর
বান্দীদেরকে প্রহার করবে না।’’
পরবর্তীতে উমার রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
এসে বললেন, ‘মহিলারা তাদের
স্বামীদের উপর বড়
দুঃসাহসিনী হয়ে গেছে।’
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রহার করার
অনুমতি দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পরিবারের নিকট বহু
মহিলা এসে নিজ নিজ স্বামীর
বিরুদ্ধে অভিযোগ আরম্ভ করল।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট
প্রচুর মহিলাদের সমাগম,
যারা তাদের স্বামীদের
বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।
(জেনে রাখ, মারকুটে) ঐ (স্বামী)
রা তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ
নয়।’’ (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে) [7]

!♥আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘পৃথিবী এক উপভোগ্য
সামগ্রী এবং তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ
সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী।’’
(মুসলিম) [8]
[1] সহীহুল বুখারী ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬,
৬০১৮, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭,
১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮
[2] সহীহুল বুখারী ৩৩৭৭, ৪৯৪২,৫২০৪,
৬০৪২, মুসলিম ২৮৫৫,
তিরমিযী ৩৩৪৩, ইবনু মাজাহ ১৯৮৩,
আহমাদ ১৫৭৮৮, দারেমী ২২২০
[3] মুসলিম ১৪৬৯, আহমাদ ৮১৬৩
[4] তিরমিযী ১১৬৩, ইবনু মাজাহ ১৮৫১
[5] আবূ দাউদ ২১৪২, ২১৪৩, ২১৪৪, ইবনু
মাজাহ ১৮৫০
[6] তিরমিযী ১১৬২, আহমাদ ৭৩৫৪, ৯৭৫৬,
১০৪৩৬, দারেমী ২৭৯২
[7] আবূ দাউদ ২১৪৬, ইবনু মাজাহ ১৯৮৫,
দারেমী ২২১৯
[8] মুসলিম ১৪৬৭, নাসায়ী ৩২৩২, ইবনু
মাজাহ ১৮৫৫, আহমাদ ৬৫৩১
______________________________________________
___________________________________________
___________________
সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু
যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-
নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ
মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন
আলবানী রহ.
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ
ফাইযী