জাহান্নাম কি? জাহান্নামে কি হবে?-২

image

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :”কেয়ামতের দিন মৃতু্যকে কালো
মেষ আকৃতিতে জান্নাত-জাহান্নামের
মাঝখানে হাজির করা হবে। অতঃপর বলা
হবে, হে জান্নাতবাসী, তোমরা একে
চিন? তারা উঁকি দিয়ে তাকাবে এবং
বলবে, হঁ্যা, এ হলো মৃতু্য। এরপর তাকে
জবাই করার নির্দেশ দেওয়া হবে।
অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসীগন,
তোমরা চিরস্থায়ী, আর মুতু্য নেই। হে
জাহান্নাম বাসীগণ, তোমরা
চিরস্থায়ী, আর মৃতু্য নেই। অতঃপর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তেলাওয়াত করলেন : “তাদেরকে সতর্ক
করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে,
যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; তারা
অসাবধানতায় আছে, তারা ইমান আনছে
না।” এ হলো জাহান্নাম ও
জাহান্নামিদের অবস্থা।
আহ! সর্বনাশ সে ব্যক্তির, যে আল্লাহর সাথে
অন্য কাউকে শরীক করে : যাদুকরের নিকট যায়,
যাদু বিশ্বাস করে ও মৃত ব্যক্তির নিকট
পর্্রাথনা করে। এরশাদ হচ্ছে:
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে,
আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে
দিয়েছেন, তার ঠিকানা নরকাগি্ন।” অন্যত্র
এরশাদ হচ্ছে:
“আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর
না, তাহলে দোষী সাব্যস্ত ও বিতাড়িত হয়ে
জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।”
ধ্বংস সে ব্যক্তির জন্য, যে নামাজ পড়ে না।
তারা কি জান্নাতিদের প্রশ্ন শ্রবন করেনি?
যা জাহান্নামিদের লক্ষ্য করে করা হবে।
এরশাদ হচ্ছে :
“তোমাদেরকে জাহান্নামে কে হাজির করেছে?
তারা বলবে আমরা নামাজ পড়তাম না।” ফজরের
আজান হয়, মুসলমানগণ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে
শ্রবন করে, “এশো নামাজের দিকে, এসো
কল্যাণের দিকে” তার পরেও তারা ঘুম থেকে উঠে
না, জামাতে শরিক হয় না, নামাজও পড়ে না!
এভাবেই তারা আল্লাহ অবাধ্যতার মাধ্যমে
দিনের শুরুটা আরম্ভ করে।
ধ্বংস তাদের জন্য যারা যাকাত আদায় করে না।
এরশাদ হচ্ছে :
“আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে
এবং তা ব্যয় করে না, তাদের কঠোর
আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন
জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে
এবং তা দিয়ে তাদের ললাট-পাশর্্ব-পৃষ্ঠ
দগ্ধকরা হবে। (সে দিন বলা হবে) এটাই,
যা তোমরা জমা করে ছিলে নিজেদের
জন্য। সুতরাং যা তোমরা জমা করতে এখন
তা-ই আস্বাদান কর।” ধ্বংস তাদের জন্য,
যারা লোক দেখানোর নিয়তে জেহাদ করে,
ইলম শিক্ষা দেয়, দাওয়াত ও তাবলিগের
কাজ করে এবং সাদকার ন্যায় নেক
আমলসমূহ সম্পাদন করে। কিয়ামতের
দিন চুরান্ত ফয়সালা শেষে তাদেরকে উপুড়
করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অন্যায়ভাবে
কোন মুসলমান হত্যা করে। এরশাদ হচ্ছে
:
“যে ব্যক্তি সেচ্ছায় কোন মুসলমান হত্যা করে,
তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চির কাল
থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন,
তাকে অভিসম্পাদ করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ
শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।” ধ্বংস তাদের জন্য,
যারা সুদ খোর, ঘুষ খোর। কারণ, হারাম দ্বারা
তৈরি গোস্তের স্থান জাহান্নাম। এরশাদ
হচ্ছে :
“যারা সুদ খায়, তারা ঐ ব্যক্তির ন্যায় ব্যতীত
দাঁড়াতে পারবে না, যাকে শয়তান আসর করে
মোহাবিষ্ট করে দিয়েছে। এটা এ জন্য যে,
তারা বলেছে বিকিকিনি তো সুদের মতই। অথচ
আল্লাহ বিকিকিনি হালাল করেছেন আর সূদকে
হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার রবের
পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত
থেকেছে, তার বিষয়টি আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত।
আর যারা পুনরায় সূদের কারবার করবে, তারাই
দোযখবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
“ধ্বংস তার জন্য যে খেয়ানত করেছে এবং
জনসাধারনের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
“ধ্বংস তার জন্য, যে কোন মুসলামনের
হক মিথ্যা কসম দ্বারা নিয়ে নিল।
যদিও তা আরাক গাছের ছোট ডাল তুল্য
হয়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম
প্রজ্জলিত করে রেখেছেন। ধ্বংস তার
জন্য, যে ইয়াতিমের ওপর জুলুম করে,
তাকে সুষ্ঠু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে
এবং তার সম্পদ ভক্ষণ করে। এরশাদ
হচ্ছে :
“যারা ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ
করে, তারা নিজদের পেটে আগুন ভর্তি করে, এবং
তারা সত্তরই অগি্নতে প্রবেশ করবে।” ধ্বংস
তাদের জন্য, যারা দাম্ভিক, অহংকারী। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের ব্যাপারে
বলে দিব!? : প্রত্যেক বদমেজাজ, কৃপন,
অহংকারী।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“পরিধেয় কাপড় যতটুকু টাখনুর নিচে যাবে,
টাখনুর ততটুকু স্থান জাহান্নামে থাকবে।”
ধ্বংস তার জন্য, যে মাতা-পিতার অবাধ্য,
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে
যাবে না।” ধ্বংস তার জন্য, যে পরনিন্দা,
দোষ চচর্া, মিথ্যাচার ও মিথ্যা সাক্ষ্য
প্রদান করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“মুখের পদস্খলন আর বিচু্যতি-ই, মানুষকে
উপুর হয়ে জাহান্নামে যেতে বাধ্য করবে।”
ধ্বংস তার জন্য, যে মাদকদ্রব্য সেবন করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
“আল্লাহর প্রতিজ্ঞা, যে নেশাদ্রব্য সেবন
করবে, তাকে তিনি ‘তীনাতে খাবাল’ পান
করাবেন। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলো
‘তীনাতে খাবাল’ কি? তিনি বললেন :
জাহান্নামীদের নিযর্াস-ঘাম।” ধ্বংস তার
জন্য, যে নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টি সংযত
করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“চোখও যেনা করে, তার যেনা হল দৃষ্টি।”
ধ্বংস সে নারীদের জন্য, যারা বস্ত্র
পরিধান করেও বিবস্ত্র থাকে, অপরের
প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং অপরকে নিজের
প্রতি আকৃষ্ট করে।
“তারা জাহান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার
ঘ্রাণও পাবে না।” হে বনি আদম! তোমার
সামনে জাহান্নামের বর্ণনা তুলে ধরা হল,
যা তুমি প্রতি বৎসর গ্রীষ্ম-শীতের
নিঃশ্বাসের মাধ্যমে উপলব্দিও কর।
আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, আল্লাহর
দিকে প্রত্যাবর্তন কর। আল্লাহর শপথ! এ
দুনিয়ার পর জান্নাত-জাহান্নাম ভিন্ন
অন্য কোন স্থান নেই। এরশাদ হচ্ছে :
“অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে দেঁৗড়ে যাও।
আমি তার তরফ থেকে তোমাদের জন্য স্পষ্ট
সতর্ককারী।” অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :
“মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং
স্বীয় পরিবার-পরিজনকে সে অগি্ন
থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ
আর পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষান
হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, তারা
আল্লাহর নির্দেশের ব্যতিক্রম করে না,
এবং তা-ই সম্পাদন করে, যা তাদের আদেশ
করা হয়।”
হাসান বসরী রহ. বলেন : “যে ব্যক্তি
জান্নাতের আশা করে না, সে জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারবে না এবং যে ব্যক্তি জাহান্নাম ভয়
করে না, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না।”
অন্তরের ভেতর সত্যিকার ভয় থাকলে, অঙ্গ-
প্রতঙ্গ থেকে খালেস আমল বেড়িয়ে আসে।
যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন : “যার ভেতর ভয় ছিল সে প্রতু্যশে
রওনা করেছে। আর যে প্রতু্যশে রওনা করেছে, সে
অভিষ্ট লক্ষ্যেও পৌঁছেছে।” মুনাফিকদের
স্বভাব হচ্ছে জাহান্নাম পশ্চাতে থাকলেও
বিশ্বাস না করা, যতক্ষণ-না তার গহবরে তারা
পতিত হয়। মূলত জাহান্নামের বর্ণনা নেককার
লোকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। বিস্বাদ করে
দিয়েছে তাদের খাবার-দাবার।
রাসূল বলেছেন : “আল্লাহর শপথ! আমি যা
জানি যদি তোমরা তা জানতে, কম হাসতে
বেশী কদঁতে। বিছানায় স্ত্রীদের
সম্ভোগ করার বোধ হারিয়ে ফেলতে।
আল্লাহর সন্ধানে পাঁহাড়ে এবং
উঁচুস্থানসমূহে বের হয়ে যেতে।”
সুবহানাল্লাহ! আখেরাত বিষয়ে মানুষ কত
উদাসীন! তার আলোচনা থেকে মানুষ কত
গাফেল! এরশাদ হচ্ছে :“মানুষের হিসাব-
নিকাস অতি নিকটবতর্ী, অথচ তারা
বে-খবর, পশ্চাদমুখি। তাদের নিকট
রবের পক্ষ থেকে যখন কোন উপদেশ আসে,
তারা তা খেলার ছলে শ্রবন করে। তাদের
অন্তরসমূহ তামাশায় মত্ত।” হে বনি
আদম! হিসাব অতি নিকটে, তবে কেন এ
উদাসীনতা!? কেন হৃদয় কম্পিত হয় না!?
অন্তরের মরিচিকা সবচেয়ে বিপদজনক,
তার মহর মারাত্বক কঠিন। এখনো কি
কর্ণপাত করার সময় হয়নি!? চোখে
দেখার সময় হয়নি!? অন্তরসমূহের ভীত
হওয়ার সময় হয়নি? অঙ্গ-প্রতঙ্গের
সংযত হওয়ার সময় হয়নি!?
“যারা ইমান এনেছে, তাদের অন্তর আল্লাহর
স্মরণ এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার
কারণে বিগলিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি?
ভুলে গেলে বিপদ ঘটবে, আমাদের প্রত্যেককে
জাহান্নামের ওপর দিয়ে যেতে হবে। তবে সে-ই
ভাগ্যবান যে এর থেকে মুক্তি পাবে। এরশাদ
হচ্ছে :
“তেমাদের প্রত্যেকে-ই তথায় পৌছঁবে। এটা
তোমার রবের চুরান্তফয়সালা। অতঃপর আমি
মুত্তাকিদের নাজাত দেব এবং অত্যাচারীদের
নতজানু হালতে সেখানে ছেড়ে দিব।”
হে বনি আদম! আর কতকাল গাফেল থাকবে!? আর
কতদিন দুনিয়া সঞ্চয় করতে থাকবে!? আর
কতদিন তার জন্য গর্ব করবে!? আল্লাহ তাআলা
বলেন :
“পরস্পর ধন-সম্পদের অহংকার
তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে।
যতক্ষণ না তোমরা কবরসমূহে উপস্থিত
হচ্ছ। এটা কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই
তোমরা এটা জানতে পারবে। অতঃপর এটা
কখনো ঠিক নয়, শীঘ্রই তোমরা জানতে
পারবে। অতঃপর এটা কখনো ঠিন নয়,
শীঘ্রই তোমরা এটা জানতে পারবে।
সাবধান! যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান
দ্বারা অবহিত হতে (তবে এমন কাজ করতে
না)। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে।
অতঃপর তোমরা তা দিব্য-প্রতয়ে
দেখবে। এর পর অবশ্যই সে দিন তোমরা
নেয়ামত ম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”
সুভসংবাদ তাদের জন্য, যারা জাহান্নামকে
ভয় করে এবং যে কাজ করলে জাহান্নামে
যেতে হবে, তা থেকে বিরত থাকে। এরশাদ
হচ্ছে :
“যে ব্যক্তি তার রবের সামনে উপস্থিত
হওয়াকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুটি
জান্নাত।” আল্লাহ তাআলা বলেন :
“যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা
নিজেরাই তো তাদের রবের নৈকট্য
লাভের জন্য উপায় সন্ধান করে যে,
তাদের মধ্যে কে কত নিকট হতে পারে।
তারা তার রহমত আশা করে এবং তার
শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার
রবের শাস্তি ভয়াবহ।” হে আল্লাহ!
আমাদের সকলকে মুত্তাকি বানিয়ে দাও
এবং তোমার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয়
দান কর। হে আল্লাহ! আমাদের
জাহান্নামের অতল গহবরে ছেড়ে দিও না,
আমাদের ঘার ধরে পাঁকড়াও করো না। হে
আল্লাহ! আমাদের তওবা কবুল করুন এবং
আমাদের সুন্দর সমাপ্তি প্রদান করুন।
এরশাদ হচ্ছে :
“হে আমাদের রব! আমাদের থেকে জাহান্নামের
শাস্তি হটাও। নিশ্চয় এর শাস্তি তো অাঁকড়ে
থাকার জিনিস। এটা খুব খারাপ স্থান ও থাকার
জায়গা।”
“হে আমাদের রব! তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ
করবে, তার নিশ্চিত অপমান হবে। জালেমাদের
জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।”

জাহান্নাম কি?জাহান্নামে কি হবে?-১

image

লেখক : রাশেদ বিন আব্দুর রহমান আয-যাহরানী
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
ইসলাম প্রচার বু্যরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
জাহান্নাম ধ্বংসের ঘর
বান্দার ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা অর্জন
ও কৃতকার্য হওয়ার নিদর্শন হচ্ছে, তার
অন্তকরণ আখেরাতের স্মরন, পরকালের ভাবনায়
সঞ্জীবিত ও সিক্ত হয়ে যাওয়া। যেমন আল্লাহ
তাআলা তার নৈকট্য-প্রাপ্ত বান্দা তথা অলি-
আউলিয়াদের প্রশংসা করে বলেন : “আমি
তাদেরকে এক বিশেষগুন তথা পরকালের স্মরণ
দ্বারা স্বাতন্ত্র প্রদান করেছি।” অর্থাৎ
পরকালীন জীবনের সুখ-দুঃখের ভাবনা।
পক্ষান্তরে পরকাল বিস্মৃতি ও আখেরাত ভুলে
যাওয়া বান্দার ভাগ্যহীন হওয়ার আলামত।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
“তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে
নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায়
ফেলে রেখেছিল। অতএব আমি আজকে তাদের ভুলে
যাব, যেমন তারা এ দিনের সাক্ষ্যাৎ ভুলে
গিয়েছিল, (আরেকটি কারণ) যেহেতু তারা
আয়াতসমূহকে মিথ্যারোপ করত।”
আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, খাস রহমত; আমাদের
অন্তরে পরকালের ভাবনা, আখেরাতের ফিকির
উদয়-বৃদ্ধির জন্য হাজারো আলামত, প্রচুর
নিদর্শন বিদ্যামান রেখেছেন এ পার্থিব
জগতে। আল্লাহ তাআলা বলেন : “তোমারা যে
অগি্ন প্রজ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ
কি? তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না
আমি সৃষ্টি করেছি? আমিই সে বৃক্ষকে করেছি
স্মরনিকা এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী।”
যদিও এ বৃক্ষ গরমের উপকরণ, রান্নার ইন্ধন,
তথাপি আমাদেরকে আখেরাতের অগি্ন স্মরণ
করিয়ে দেওয়ারও স্মরনিকা। নিম্নোক্ত
আয়াতের দ্বারা তিনি গ্রীষ্মের প্রচন্ড
গরমকে জাহান্নমের অগি্নর সাথে তুলনা করে
বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এরশাদ
হচ্ছে : “তারা বলেছে এই গরমের মধ্যে
অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও উত্তাপে
জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তাদের
বিবেচনা শক্তি থাকত।” আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন :
“তোমরা জোহরকে থান্ডা করে পড়, যেহেতু
গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাস থেকে
উৎসারিত।”
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :
“জাহান্নাম তার প্রভুর কাছে অভিযোগ
করেছে, হে আমার রব! আমার এক অংশ
অপর অংশকে খেয়ে নিচ্ছে; অতঃপর
আল্লাহ তাকে দুটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করার
অনুমতি দেন। একটি গ্রীষ্মকালে
অপরটি শীতকালে। তোমরা যে প্রচন্ড
গরম ও কনকনে শীত অনুভব কর, তাই সে
নিঃশ্বাস।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিভিন্ন সময়ে সাহাবাদের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ
উপদেশ বাণী প্রদান করতেন, যার দ্বারা অন্তর
বিগলিত হত, অশ্রুতে সিক্ত হয়ে যেত
চক্ষুদ্বয়। এক বার তিনি নামাজ আদায় করে
বলেন :
“এ মাত্র যখন আমি তোমাদের নিয়ে
নামাজরত ছিলাম দেয়ালের পাশে
প্রতিবিম্বের আকৃতিতে আমাকে জান্নাত-
জাহান্নাম দর্শন করানো হয়েছে।
আজকের মত আর কোন দিন এতো মঙ্গল-
অমঙ্গল, নিষ্ট-অনিষ্ট চোখে
দেখিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কথা শুনে সাহাবাগণ
অবনত মস্তক হয়ে গেলেন, তাদের অন্তরে
কান্নার ডেকুর উঠল। তারা কাঁদতে
ছিলেন। অথচ তাকওয়া, ইমান, ইসলামের
দাওয়াত, জিহাদ ও রাসূলকে নিরাপত্তা
বিধানের ক্ষেত্রে তারা আমাদের চেয়ে
অধিক অগ্রগামী ছিলেন।
কারণ, এটা ভয়ংকর মাখলূখ (জাহান্নাম)
সম্পর্কে সতর্কবাণী ও সাবধানিকরণ
আগাম বার্তা। কেমন হবে সেদিন, যে দিন
সত্তুর হাজার লাগামসহ জামান্নাম
উপস্থিত করা হবে। প্রতিটি লাগামের
সাথে একজন করে ফেরেশতা থাকবে, তারা
এটাকে টেনে-হেছড়ে হাজির করবে। এতো
বেশী পরিমাণ শক্তিশালী ফেরেশতাদের
নিযুক্তি দ্বারাই জাহান্নামের বিশালত্ব
ও ভয়াবহতার ধারণা করা যায়।
এরশাদ হচ্ছে :
“যে দিন জাহান্নামকে আনা হবে, সে দিন মানুষ
স্মরণ করবে, কিন্তু এ স্মরণ তার কি কাজে
আসবে? আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী আমাদের কাছে
আরো গভীর চিন্তার আবেদন জানায় :
“এটা অট্রালিকা সাদৃশ বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ
করবে, যেন সে পীতবন্য উষ্ট্রশ্রেনী।”
জাহান্নাম নিজ ক্রোধের কারণে ভিষণ হয়ে
উঠবে, তার অংশগুলো খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাওয়ার
উপক্রম হবে। আরো ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে মহান
আল্লাহর গোস্বার ধরুন। এরশাদ হচ্ছে :
“অগি্ন যখন দূর থেকে তাদেরকে দেখবে, তখন
তারা শুনতে পাবে তার গর্জন ও গুঙ্কার।”
বর্তমান সমাজে জাহান্নামের আলোচনা
প্রাণহীন বে-রস বিষয় বস্তুর ন্যায়
পরিত্যক্ত হয়ে আছে। যে কারণে জাহান্নামের
নাম শুনে অন্তরসমূহে ভীতির সৃষ্টি হয় না,
চক্ষুসমূহ অশ্রু বিসর্জন করে না। যা
সর্বগ্রাসী আত্মীক অবক্ষয়ের করুন চিত্র।
যেন জাহান্নাম সম্পর্কে আল্লাহর কোন
সতর্কবাণী আমরা শোনিনি। অথবা আমাদের
অন্তরসমূহ শুষ্ক, উষর ও কঠিন হয়ে গেছে!
এরূপ কঠিন অন্তর-ই যে কোন ব্যক্তির
হতভাগ্য হওয়ার বড় আলামত। এ ধরণের বধির,
কল্যাণশুন্য অন্তরসমূহ বিগলিত করার জন্যই
জাহান্নামের অগি্ন প্রস্তুত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তাআলা ধ্বংস-অপমানের স্থান
জাহান্নাম সম্পর্কে কঠিনভাবে সতর্ক করে
বলেছেন :
“অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্বলিত অগি্ন
সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি।”
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :
“নিশ্চয় জাহান্নাম গুরুতর বিপদ
সমুহের অন্যতম। মানুষের জন্য
সতর্ককারী।”
আল্লাহর শপথ! জাহান্নাম থেকে ভয়ংকর
কোন বস্তু নেই। খোদ আল্লাহ তাআলা এর
প্রজ্বলন-দাহন, খাদ্য-পানীয়, বেড়ি,
ফুটন্তপানি, পুজ এবং তাতে শৃঙ্খলাবদ্ধ
করা ও সেখানকার পোশাকের ভয়াবহতার
বর্ণনা দিয়েছেন। যাতে মানবজাতি এ
নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার সুযোগ পায়
এই তো জাহান্নাম! এর অভ্যন্তরে
জাহান্নামিরা কাত-চিত হয়ে পল্টি
খাচ্ছে, এর ময়দানে তাদেরকে টানা-
হেচড়া করা হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এর ভয়াবহতার
বিষদ বর্ণনা দিয়েছেন। একদিন
মেম্বারে দাঁড়িয়ে বার বার উচ্চারণ করেন
:
“আমি তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে
সতর্ক করছি। আমি তোমাদেরকে
জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি। আমি
তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক
করছি।” সে দিন রাসূলের আওয়াজ পাশে
অবস্থিত বাজারের লোকজনও শুনতে
পেয়েছিল। অস্থিরতার ধরুন কাধের
চাদর পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল।
তিনি আরো বলতে ছিলেন :
“আমি জাহান্নামের মত ভয়ংকর কোন জিনিস
দেখিনি, যার পলায়নকারীরা ঘুমন্ত।
জান্নাতের মত লোভনীয় কোন জিনিস
দেখিনি, যার সন্ধানকারীরা ঘুমন্ত।”
হে মানবজাতি! মনে রেখ, জাহান্নাম সম্পর্কে
তোমার অনুসন্ধিৎসা, মূলত একটি ভীতিকর
বস্তু সম্পর্কে-ই অনুসন্ধিৎসা। লক্ষ্য কর,
যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“যা দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে সে
লাল হয়ে গেছে; পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে
হাজার বৎসর, যার ফলে সে সাদা হয়ে গেছে;
পুনঃরায় দগ্ধ করা হয়েছে হাজার বছর, যার ফলে
সে কালো হয়ে গেছে। সে বিদঘুটে কালো;
অন্ধকার; তার এক অংশ অপর অংশকে ভস্ব করে
দিচ্ছে।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
“আমাদের এ আগুন, জাহান্নামের সত্তর ভাগের
এক ভাগ।”
“জাহান্নামের ভেতর সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে
সে ব্য্যক্তির, যার দুটি আগুনের জুতো থাকবে,
যার কারণে তার মস্তক টকবগ করবে, সে অন্য
কাউকে তার চেয়ে বেশী শাস্তিভোগকারী মনে
করবে না। অথচ সে-ই সবচেয়ে কম
শাস্তিভোগকারী। জাহান্নমের সাতটি দরজা
রয়েছে। সব কটি দরজা লোহার খুটি দ্বারা
আটঁকে দিয়ে জাহান্নামিদের বন্ধি করে রাখা
হবে। এরশাদ হচেছ :
“নিশ্চয় তা’ (জাহান্নাম) তাদের ওপর বন্ধ
করে দেয়া হবে। লম্বা লম্বা খুঁটিসমূহে ।”
জাহান্নামের অনেক স্তর রয়েছে। ওপরের স্তর
থেকে নিচের স্তরগুলো তুলনামূলক কঠিন ও
ভয়াবহ।
এরশাদ হচ্ছে: “নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা
রয়েছে দোযখের সর্বনিন্ম স্তরে।”
জাহান্নামের গভীরতার পরিমাণ সম্পর্কে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :”তার মুখ থেকে একটি বিরাট
পাথর নিক্ষেপ করা হবে, সত্তর বৎসর
পর্যন্ত গভীরে যেতে থাকবে, তবুও তার
গভীরতার নাগাল পাবে না।” যখন-ই কোন
ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, সে
বলবে, আরো আছে কি? তবে নিশ্চিত আল্লাহ
তাআলা নিজ ঘোষণা অনুযায়ী জাহান্নাম
পূর্ণ করে দিবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :”আর তোমার রবের
কথাই পূর্ণ হল : অবশ্যই আমি জাহান্নামকে
পূর্ণ করব, জিন ও মাবনজাতি দ্বারা।”
চরম শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে জাহান্নামিদের
ভয়ংকর ও বিশাল আকৃতিতে জাহান্নামে
প্রবেশ করানো হবে।
এরশাদ হচ্ছে :“একজন কাফেরের দুকাঁধের
মাঝখানের ব্যবধান হবে দ্রুতগামী
অশ্বারোহী ব্যক্তির তিন দিন ভ্রমন
পথের সমান।”
“তার মাঢ়ির দাত হবে উহুদ পাহাড়ের
সমান। তার চামড়ার ঘনত্বের প্রস্থ হবে
তিন রাত ভ্রমন করার পথের সমান।”
“তার পাঁছা হবে মক্কা-মদিনার দূরত্বের
সমান।” জাহান্নাম খুবই খারাপ গন্তব্য,
ঘৃণীত বাসস্থান। এতে খাদ্য হিসেবে থাকবে
বিষাক্ত কন্টক আর যাক্কুম। যা মারাত্বক
কদর্য ও যন্ত্রনাদায়ক। এর সৃষ্টিকর্তা,
যিনি এর দ্বারা শাস্তি দেয়ার অঙ্গিকার
করেছেন, তিনি নিজেই বলেছেন :”নিশ্চয
যাক্কুম বৃক্ষ, পাপীদের খাদ্য। গলিত
তন্ত্রের মত পেটে ফুটতে থাকবে, যেমন ফুটে
গরম পানি।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “যদি যাক্কুমের এক ফোটা দুনিয়ায়
টপকে পড়ত, তবে এতে বসবাসকারীদের জীবন-
উপকরণ ধ্বংস হয়ে যেত। সে ব্যক্তির অবস্থা
কেমন হবে, যার খাদ্য-ই হবে যাক্কুম”?
তাতে পান করার জন্য আছে, গরম টগবগে পানি,
পুঁজ, গীসলীন অথর্াৎ জাহান্নামীদের গাঁ ধোয়া
পানি, পূঁজ ও বমি। এরশাদ হচ্ছে :
“এবং প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী
ব্যর্থ-কাম হল। তাদের প্রত্যেকের
পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদের
প্রত্যেককে পান করানো হবে গলিত পুঁজ।
যা সে অতিকষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং
তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে
পড়বে। সর্বদিক থেকে তার কাছে আসবে
মৃতু্য অথচ সে মরবে না। তার পশ্চাতেও
রয়েছে কঠোর আযাব।”
“যদি তারা ফরিয়াদ জানায়, তবে তাদেরকে এমন
পানি দ্বারা জবাব দেয়া হবে, যা পুঁজের ন্যায়, যা
তাদের মুখ-মন্ডল জ্বালিয়ে দিবে। ” তাদের
পেটে ক্ষুধার সৃষ্টি করা হবে, অতঃপর যখন
তারা খানার ফরিয়াদ করবে, যাক্কুম খেতে দেয়া
হবে, যা বক্ষণের ফলে পেটের ভেতর গরম পানির
ন্যায় উতলানো শুরু করবে। এরশাদ হচ্ছে :
“অতঃপর তারা পানি চেয়ে ফরিয়াদ করবে, ফলে
তাদেরকে এমন পানি দেয়া হবে, যা তাদের
নিকটবর্তী করা হলে তাদের চেহারা জ্বলে
যাবে।” আর যখন তা পান করবে, তখন তাদের
নাড়ি-ভূড়ি খন্ড-বিখণ্ড হয়ে মলদ্বার দিয়ে
বের হয়ে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :
“এবং তাদেরকে পান করানো হবে ফুটন্ত
পানি, যা তাদের নাড়ি-ভূঁিড় ছিন্ন-
বিচ্ছিন্ন করে দিবে।”
আল্লাহ তাআলা তাদের পোশাকের ব্যাপারে
বলেছেন, আলকাতরার এমন পোষাক পরিধান
করানো হবে, যা আগুনে টগবগ করতে থাকবে আর
দাহ্য হতে থাকবে। এরশাদ হচ্ছে :
“তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং তাদের
মুখ মন্ডল আগুন আচ্ছন্ন করে রাখবে।”
আরো এরশাদ হচ্ছে :
“যারা কুফরি করেছে, তাদের জন্য আগুনের
পোষাক তৈরী করা হবে।” ইবরাহিম তামিমি
রহ. এ আয়াত তেলাওয়াত করার সময় বলতেন :
“পবিত্র তিনি, যিনি আগুন দ্বারাও
পোষাক তৈরি করেছেন।” জাহান্নামের
শিকল ও বেড়ি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে
এরশাদ হচ্ছে :
“ধর তাকে; এবং বেড়ি পড়িয়ে দাও তার গলায়;
অতঃপর নিক্ষেপ কর তাকে জাহান্নামে; পুনরায়
তাকে বেঁধে ফেল এমন শৃঙ্খলে, যার দৈর্ঘ সত্তর
গজ লম্বা।” তাদের হাত গদর্ানের সাথে বেঁধে
দেয়া হবে এবং চেহারার ওপর দাঁড় করে টেনে-
হেচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ
হচ্ছে :
“যে দিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া
হবে জাহান্নামের দিকে, (বলা হবে) জাহান্নামের
যন্ত্রণা আস্বাদান কর।” কপাল-পা একসাথে
বেঁধে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ
হচ্ছে :
“অতঃপর তাদের পাকঁড়াও করা হবে কপাল (চুলের
ঝুঁটি) ও পা ধরে।” এ কপাল মিথু্যক, আল্লাহর
জন্য সেজদা করেনি, তার বড়ত্বের সামনে অবনত
হয়নি। এ পদযুগলও মিথু্যক, সবসময় আল্লাহর
অবাধ্যতায় চালিত হয়েছে।
জাহান্নামের আবহাওয়া বীষ; পানি টকবগে
গরম; ছায়া ধুম্র কুঞ্জ; জাহান্নামের ধোঁয়া না-
ঠান্ডা, না-সম্মানের। জাহান্নামিদের অবস্থা
শোচনীয় পরাজয়ের, চুরান্ত অপমান জনক।
তদুপরি তারা পাঁয়ে ভর করে পঞ্চাশ হাজার
বৎসর দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা ক্ষুধা-তৃষ্ণা
নিবারণের জন্য এক মুঠো খাদ্য, সামান্য
পানীয় পর্যন্ত পাবে না। তাদের গর্দান
পিপাসায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হবে, ক্ষুধার
তীব্রতায় কলিজায় দাহক্রিয়া আরাম্ভ হবে,
অতঃপর এ হালতেই তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ
করা হবে। এরশাদ হচ্ছে :
“আগুন তাদের মুখ মন্ডল দগ্ধ করবে এবং
তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়।”
জাহান্নাম খুব-ই সংকীর্ন, বিপদ সঙ্কুল,
ধ্বংসের স্থান, অন্ধকারে ভরপুর, সব
সময় এতে আগুন প্রজ্বলিত থাকবে,
জাহান্নামিরা সর্বদা এখানেই আবদ্ধ
থাকবে। পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব,
কালো ও অন্ধকারে ঢাকা চেহারা
বিশিষ্ট ফেরেশতাদের মাধ্যমে, ভয়ংকর
পদ্ধতিতে তাদেরকে জাহান্নামের প্রবেশ
দ্বারে অভ্যর্থনা দেয়া হবে। যাদের
চেহারা দর্শন শাস্তির ওপর অতিরিক্ত
শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে। তারা কঠোর,
করুণাহীন, আরো ব্যবহার করবে
লৌহদণ্ড। তারা পিছন থেকে হাঁকিয়ে,
ধমকিয়ে ধমকিয়ে জাহান্নামিদের নিয়ে
যাবে জাহান্নামের দিকে, অতঃপর তার
গভীর গর্তে নিক্ষেপ করবে। সেখানে
তাদের সাপে দংশন করবে, জলন্ত পোষাক
পরিধান করানো হবে, তাদের কোন
ইচ্ছা-ই পূর্ণ হবে না, তাদের কেউ
ত্রাণকর্তা থাকবে না। মাথা-পা একসাথে
বাধাঁ হবে, পাপের কারণে চেহারা কালো
হয়ে যাবে, তারা সর্বনাশ বলে চিৎকার
করবে আর মৃতু্যকে আহবান করতে থাকবে।
তাদের বলা হবে :“আজ তোমরা এক মৃতু্যকে
ডেক না, অনেক মৃতু্যকে ডাক।” তখন তারা
নিজ বিকৃত মস্তিস্কের কথা স্বীকার
করবে, যে কারণে তারা আজ এ
পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে।
এরশাদ হচ্ছে :”এবং তারা বলবে, যদি আমরা
কর্নপাত করতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তাহলে
আমরা জাহান্নামী হতাম না।” সব দিক থেকে
জাহান্নাম তাদের বেষ্টন করে রাখবে। এরশাদ
হচ্ছে : “তাদের নিচে থাকবে জাহান্নামের
আগুনের বিছানা এবং ওপরে থাকবে চাদর। আমি
এভাবেই অত্যাচারীদের প্রতিদান দেই।” তারা
যেখানে যাবে, তাদের সাথে বিছানা-চাদরও
সেখানে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :”নিশ্চয় ওর
শাস্তি তো আঁকড়ে থাকার জিনিস।”
আল্লাহ বলেন :“নিশ্চয় জাহান্নাম কাফেরদের
বেষ্টনকারী।” কোথাও পালাবার জায়গা নেই।
এরশাদ হচ্ছে :
“তাদের মাথার ওপর গরম পানি ঢালা হবে। যা
দ্বারা, তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম
বিগলিত করা হবে। আর তাদের থাকবে লোহার
হাতুড়িসমূহ। যখনই তারা যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ
হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই
তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। (বলা হবে)
দহনের শাস্তি আস্বাদন কর।”
আল্লাহ তাআলা বলেন : “যখন তাদের চামড়া জ্বলে
যাবে, আমি অন্য চামড়া দিয়ে তা পালটে দেব।
যেন তারা আযাব আস্বাদান করতে পারে।”
অতঃপর বলবেন:”তোমরা শাস্তি
আস্বাদান কর, আমি কেবল তোমাদের
শাস্তির বৃদ্ধি ঘটাব।” তারা
জাহান্নামের ফেরেশতাদের মাধ্যমে
সাহায্য চাইবে। এরশাদ হচ্ছে :
“আর যারা জাহান্নামে রয়েছে, তারা
জাহান্নামের রক্ষিদের বলবে, তোমরা
তোমাদের রবকে বল, তিনি যেন আমাদের
থেকে এক দিনের আযাব হালকা করে দেন।
রক্ষীরা বলবে : তোমাদের কাছে কি
সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে তোমাদের
রাসূলগণ আসেনি? তারা বলবে : অবশ্যই;
তারা বলবে : তবে তোমরা-ই আহবান কর।
বস্তুত কাফেরদের আহবান নিষ্ফল।” একটু
চিন্তা করুন, সে জগতের মানুষের অবস্থা
কেমন হতে পারে, যারা সর্বশেষ ও
চুরান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে মৃতু্য কামনা
করবে। এরশাদ হচ্ছে :”তারা
(জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত
ফেরেশতাকে) ডেকে বলবে, হে মালেক,
(বলুন) তোমার রব আমাদের কিস্সা খতম
করে দিন।”
ইবনে আব্বাস রা. বলেন : এক হাজার বৎসর পর
তাদের কথার উত্তর খুব কঠোর ও ঘৃণিত ভাষায়
দেয়া হবে। এরশাদ হচ্ছে :
“সে বলবে : নিশ্চয় তোমরা চিরকাল থাকবে।”
অতঃপর তারা আল্লাহর দরবারে স্বীয় আভিযোগ
উত্থাপন করবে এবং বলবে :
“হে আমাদের রব, আমাদের অনিষ্ট আমাদেরকে
পরাভূত করেছে। আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত
জাতি। হে আমাদের রব, এ থেকে আমাদেরকে
উদ্ধার কর, আমরা যদি পুনরায় তা করি,
তাবে আমরা নিশ্চিত অত্যাচারী।”
দুনিয়ার দ্বিগুন বয়স পরিমাণ চুপ থাকার
পর আল্লাহ তাআলা বললেন :
“আল্লাহ বলবেন, তোমরা ধিকৃত অবস্থায়
এখানেই পড়ে থাক, এবং আমার সাথে কোনো
কথা বল না” এ কথা শুনার পর নৈরাশ্য
তাদের আচ্ছন্ন করে নিবে, তাদের হতাশা
বেড়ে যাবে, রুদ্ধ হয়ে যাবে তাদের গলার
আওয়াজ। শুধু বুকের ঢেকুর, চিৎকার,
আর্তনাথ আর কান্নার শব্দ সর্বত্র ভেসে
বেড়াবে। তবে সব চেয়ে বেশী দুঃখিত হবে
জান্নাতের সবের্াচ্চ মর্যাদা আল্লাহর
দীদার থেকে বঞ্চিত হয়ে।
এরশাদ হচ্ছে :”কখনো না, তারা সে দিন
তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে।
অতঃপর তারা নিশ্চিত জাহান্নামে প্রবেশ
করবে।” যখন তারা চিন্তা করবে অল্প
দিনের ভোগ-বিলাস আর প্রবৃত্তের জন্য এ
দুঃখ-দুর্দশা, অপমান-গঞ্জনা; তখন তাদের
আফসোসের অন্ত থাকবে না, বরং শাস্তির
ওপর এটাও আরেকটি শাস্তি হিসেবে গণ্য
হবে যে, আসমান-জমীন সমতুল্য জান্নাতের
বিপরিতে সামান্য বিনিময়ে এ
পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছি। যে
সামান্য দুনিয়া নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে,
যেন কখনো তার অস্তিত্ব ছিল না।

শবেবরাত বার্তা

image

শবেবরাত
আত-তাহরীক ডেস্ক
আরবী শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত
রাতকে উপমহাদেশে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। যা
‘সৌভাগ্য রজনী’ হিসাবে পালিত হয়।
ধর্মীয় ভিত্তি :
মোটামুটি ৩টি ধর্মীয় আক্বীদাই এর ভিত্তি
হিসাবে কাজ করে থাকে। (১) এ রাতে কুরআন
নাযিল হয় এবং এ রাতে আগামী এক বছরের
জন্য বান্দার ভালমন্দ তাক্বদীর নির্ধারিত
হয়। (২) এ রাতে বান্দার গোনাহ সমূহ মাফ করা
হয়। (৩) এ রাতে রূহগুলি সব ছাড়া পেয়ে
মর্ত্যে নেমে আসে। ফলে মোমবাতি, আগরবাতি,
পটকা ও আতশবাযী হয়তোবা রূহগুলিকে সাদর
অভ্যর্থনা জানাবার জন্য করা হয়।
শবেবরাতে হালুয়া-রুটি খাওয়া সম্পর্কে বলা
হয়ে থাকে যে, এ দিন আল্লাহর নবী (ছাঃ)-এর
দান্দান মুবারক ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল।
ব্যথার জন্য তিনি নরম খাদ্য হিসাবে হালুয়া-
রুটি খেয়েছিলেন বিধায় আমাদেরও সেই ব্যথায়
সমব্যথী হয়ে হালুয়া-রুটি খেতে হয়। অথচ
ওহোদের যুদ্ধ হয়েছিল ৩য় হিজরীর শাওয়াল
মাসের ৭ তারিখ শনিবার সকাল বেলা।[1] আর
আমরা ব্যথা অনুভব করছি তার প্রায় দু’মাস
পূর্বে শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত
রাত্রে…!
এক্ষণে আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলির ধর্মীয়
ভিত্তি কতটুকু তা খুঁজে দেখব। প্রথমটির
সপক্ষে যে সব আয়াত ও হাদীছ পেশ করা হয় তা
নিম্নরূপ :
(১) এ রাতে কুরআন নাযিল হয় এবং এ রাতে
আগামী এক বছরের জন্য বান্দার ভালমন্দ
তাক্বদীর নির্ধারিত হয়।
(ক) প্রথমটির দলীল হিসাবে সূরা দুখান-এর ৩
ও ৪ আয়াত পেশ করা হয়ে থাকে। যেখানে আল্লাহ
বলেন, ﺎَّﻧِﺇ ُﻩﺎَﻨْﻟَﺰْﻧَﺍ ﻰِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ٍﺔَﻛَﺭﺎَﺒُﻣ
ﺎَّﻧِﺇ ﺎَّﻨُﻛ -َﻦْﻳِﺭِﺬْﻨُﻣ ﺎَﻬْﻴِﻓ ُﻕَﺮْﻔُﻳ ُّﻞُﻛ
ٍﻢْﻴِﻜَﺣٍﺮْﻣَﺃ- ‘আমরা এটি নাযিল করেছি এক
বরকতময় রাত্রিতে; আমরা তো সতর্ককারী’।
‘এ রাত্রিতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়
স্থিরীকৃত হয়’ (দুখান ৪৪/৩-৪) ।
হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে
বলেন, ‘এখানে ‘বরকতময় রাত্রি’ অর্থ ‘ক্বদরের
রাত্রি’। যেমন আল্লাহ বলেন, ﺎَّﻧِﺇ ُﻩﺎَﻨْﻟَﺰْﻧَﺃ
ْﻰِﻓ ٍﺔَﻠْﻴَﻟ ِﺭْﺪَﻘْﻟﺍ ‘নিশ্চয়ই আমরা এটি
নাযিল করেছি ক্বদরের রাত্রিতে’ (ক্বদর
৯৭/১) । আর সেটি হ’ল রামাযান মাসে। যেমন
আল্লাহ বলেন, ُﺮْﻬَﺷ َﻥﺎَﻀَﻣَﺭ َﻝِﺰْﻧُﺃ ْﻯِﺬَّﻟﺍ ِﻪْﻴِﻓ
ُﻥﺁْﺮُﻘْﻟﺍ، ‘এই সেই রামাযান মাস যার মধ্যে
কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫) ।
এক্ষণে ঐ রাত্রিকে মধ্য শা‘বান বা শবেবরাত
বলে ইকরিমা প্রমুখ হ’তে যে কথা বলা হয়েছে,
তা সঙ্গত কারণেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই রাতে
এক শা‘বান হ’তে আরেক শা‘বান পর্যন্ত বান্দার
ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়। এমনকি তার বিবাহ,
সন্তানাদী ও মৃত্যু নির্ধারিত হয়’ বলে যে
হাদীছ[2] প্রচারিত আছে, তা ‘মুরসাল’ ও যঈফ
এবং কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী
হওয়ার কারণে অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন,
ক্বদরের রাতেই লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত
ভাগ্যলিপি হ’তে পৃথক করে আগামী এক বছরের
নির্দেশাবলী তথা মৃত্যু, রিযিক ও অন্যান্য
ঘটনাবলী যা সংঘটিত হবে, সেগুলি লেখক
ফেরেশতাগণের নিকটে প্রদান করা হয়।
এভাবেই বর্ণিত হয়েছে হযরত আব্দুল্লাহ বিন
ওমর, মুজাহিদ, আবু মালিক, যাহ্হাক প্রমুখ
সালাফে ছালেহীনের নিকট হ’তে’ (ঐ, তাফসীর
সূরা দুখান ৩-৪ আয়াত) ।
(খ) অতঃপর ‘তাক্বদীর’ সম্পর্কে পবিত্র
কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য হ’ল- ُّﻞُﻛَﻭ ٍﺀْﻰَﺷ
ُﻩْﻮُﻠَﻌَﻓ ﻰِﻓ -ِﺮُﺑُّﺰﻟﺍ ُّﻞُﻛَﻭ ٍﺮْﻴِﻐَﺻ ٍﺮْﻴِﺒَﻛﻭ
ٌﺮَﻄَﺘْﺴُﻣ ‘তাদের সমস্ত কার্যকলাপ রক্ষিত আছে
আমলনামায়’। ‘আছে ছোট ও বড় সবকিছুই
লিপিবদ্ধ’ (ক্বামার ৫৪/৫২-৫৩) -এর ব্যাখ্যা
হাদীছে এসেছে যে, ‘আসমান সমূহ ও যমীন
সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বৎসর পূর্বেই আল্লাহ
স্বীয় মাখলূক্বাতের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ
করেছেন।[3] এক্ষণে ‘শবেবরাতে প্রতিবছর
ভাগ্য নির্ধারিত হয়’ বলে যে ধারণা প্রচলিত
আছে, তার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই।
(২) এ রাতে বান্দার গোনাহসমূহ মাফ করা হয়!
সেজন্য দিনে ছিয়াম পালন ও রাতে ইবাদত
করতে হয়। এ সম্পর্কে প্রধান যে তিনটি
দলীল দেওয়া হয়ে থাকে, তা নিম্নরূপ :
(ক) হযরত আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ﺍَﺫِﺇ ْﺖَﻧﺎَﻛ
ُﺔَﻠْﻴَﻟ ِﻒْﺼِّﻨﻟﺍ ْﻦِﻣ َﻥﺎَﺒْﻌَﺷ ﺍﻮُﻣﻮُﻘَﻓ ﺎَﻬَﻠْﻴَﻟ
ﺍﻮُﻣﻮُﺻَﻭ ﺎَﻫَﺭﺎَﻬَﻧ ‘মধ্য শা‘বান এলে তোমরা
রাত্রিতে ইবাদত কর ও দিবসে ছিয়াম পালন
কর’ (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৮) । হাদীছটি মওযূ‘
বা জাল (যঈফাহ হা/২১৩২) । এর সনদে ‘ইবনু
আবী সাব্রাহ’ নামে একজন রাবী আছেন, যিনি
হাদীছ জালকারী। দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি
ছহীহ হাদীছের বিরোধী হওয়ায়
অগ্রহণযোগ্য। কেননা একই মর্মে প্রসিদ্ধ
‘হাদীছে নুযূল’ যা ইবনু মাজাহর ৯৮ পৃষ্ঠায় মা
আয়েশা (রাঃ) হ’তে (হা/১৩৬৬) এবং বুখারী
শরীফের (মীরাট ছাপা ১৩২৮ হি.) ১৫৩, ৯৩৬
ও ১১১৬ পৃষ্ঠায় যথাক্রমে হাদীছ সংখ্যা
১১৪৫, ৬৩২১ ও ৭৪৯৪ এবং ‘কুতুবে সিত্তাহ’
সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সর্বমোট ৩০ জন
ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।[4] সেখানে
‘মধ্য শা‘বানের রাত্রি’ না বলে ‘প্রতি
রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ’ বলা হয়েছে। অতএব
ছহীহ হাদীছ সমূহের বর্ণনানুযায়ী
আল্লাহপাক প্রতি রাত্রির তৃতীয় প্রহরে
নিম্ন আকাশে অবতরণ করে বান্দাকে ফজরের
সময় পর্যন্ত উপরোক্ত আহবান সমূহ জানিয়ে
থাকেন- শুধুমাত্র নির্দিষ্টভাবে মধ্য
শা‘বানের একটি রাত্রিতে নয় বা ঐ দিন
সূর্যাস্তের পর থেকেও নয়।
উক্ত মর্মে প্রসিদ্ধ ছহীহ হাদীছটি হ’ল-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমাদের মহান
প্রতিপালক প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে
দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, আছ
কি কেউ প্রার্থনাকারী আমি তার প্রার্থনা
কবুল করব। আছ কি কেউ যাচ্ঞাকারী, আমি
তাকে তা প্রদান করব। আছ কি কেউ
ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?’
(বুখারী হা/১১৪৫) । একই রাবী হ’তে ছহীহ
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, যতক্ষণ না ফজর
প্রকাশিত হয়’ (মুসলিম হা/৭৫৮) ।
শবেবরাতের পক্ষে আরও কিছু যঈফ ও মওযূ‘
হাদীছ পেশ করা হয়। যেমন আয়েশা (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত (ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৯; মিশকাত
হা/১২৯৯), আবু উমামা (রাঃ ) হ’তে বর্ণিত
(যঈফাহ হা/১৪৫২), আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত (ইবনু মাজাহ হা/১৩৯০; মিশকাত
হা/১৩০৬)। এতদ্ব্যতীত ইমরান বিন হুছাইন
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত ছহীহ মুসলিম হা/১১৬১-
এর ‘সিরারে শা‘বান’ সম্পর্কিত হাদীছটি বলা
হয়। যেটি ছিল মানতের ছিয়াম। তার সাথে
শবেবরাতের কোন সম্পর্ক নেই (মুসলিম, শরহ
নববী সহ) ।
(৩) এ রাতে রূহ সমূহের আগমন ঘটে
ধারণা প্রচলিত আছে যে, এ রাতে রূহগুলি সব
মর্ত্যে নেমে আসে। কিন্তু সত্যি সত্যিই কি
রূহগুলি ইল্লীন বা সিজ্জীন হ’তে
সাময়িকভাবে ছাড়া পেয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে?
তারা কি স্ব স্ব বাড়ীতে বা কবরে ফিরে আসে?
যাদের মাগফেরাত কামনার জন্য আমরা দলে দলে
কবরস্থানের দিকে ছুটে যাই। এমনকি মেয়েদের
জন্য কবর যেয়ারত অসিদ্ধ হ’লেও তাদেরকেও এ
রাতে কবরস্থানে ভিড় করতে দেখা যায়। এ
সম্পর্কে সাধারণতঃ সূরা ক্বদর-এর ৪ ও ৫
আয়াত দু’টিকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করা হয়ে
থাকে। যেখানে বলা হয়েছে, ُﻝَّﺰَﻨَﺗ ُﺔَﻜِﺋﻶﻤْﻟﺍ
ُﺡْﻭُّﺮﻟﺍَﻭ ﺎَﻬْﻴِﻓ ِﻥْﺫﺈِﺑ ْﻢِﻬِّﺑَﺭ ْﻦِﻣ ِّﻞُﻛ ،ٍﺮْﻣَﺍ
،ٌﻡﻼَﺳ َﻰِﻫ ﻰَّﺘَﺣ ِﻊَﻠْﻄَﻣ ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ – ‘সে রাত্রিতে
ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের
প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। সকল বিষয়ে
কেবল শান্তি; ফজরের উদয়কাল পর্যন্ত’।
এখানে ‘সে রাত্রি’ বলতে লায়লাতুল ক্বদর বা
শবেক্বদরকে বুঝানো হয়েছে- যা এই সূরার ১ম,
২য় ও ৩য় আয়াতে বলা হয়েছে এবং ‘রূহ’ বলতে
জিব্রীল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে।
অত্র সূরায় ‘রূহ’ অবতীর্ণ হয় কথাটি রয়েছে
বিধায় হয়তবা অনেকে ধারণা করে নিয়েছেন যে,
মৃত ব্যক্তিদের রূহগুলি সব দুনিয়ায় নেমে
আসে। অথচ এই অর্থ কোন বিদ্বান করেননি।
‘রূহ’ শব্দটি একবচন। এ সম্পর্কে হাফেয ইবনু
কাছীর (রহঃ) স্বীয় তাফসীরে বলেন, ‘এখানে
রূহ বলতে ফেরেশতাগণের সরদার জিবরাঈলকে
বুঝানো হয়েছে। কেউ বলেন, বিশেষ ধরনের এক
ফেরেশতা। তবে এর কোন ছহীহ ভিত্তি নেই’
(ঐ, তাফসীর সূরা ক্বদর) ।
শা‘বান মাসের করণীয় : রামাযানের আগের মাস
হিসাবে শা‘বান মাসের প্রধান করণীয় হ’ল
অধিকহারে ছিয়াম পালন করা। মা আয়েশা (রাঃ)
বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রামাযান
ব্যতীত অন্য কোন মাসে শা‘বানের ন্যায় এত
অধিক ছিয়াম পালন করতে দেখিনি। শেষের
দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ
করতেন’ (নাসাঈ হা/২১৭৯, সনদ ছহীহ) ।
যারা শা‘বানের প্রথম থেকে নিয়মিত ছিয়াম
পালন করেন, তাদের জন্য শেষের পনের দিন
ছিয়াম পালন করা উচিত নয়। অবশ্য যদি কেউ
অভ্যস্ত হন বা মানত করে থাকেন, তারা শেষের
দিকেও ছিয়াম পালন করবেন।
মোটকথা শা‘বান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম
পালন করা সুন্নাত। ছহীহ দলীল ব্যতীত কোন
দিন বা রাতকে ছিয়াম ও ইবাদতের জন্য
নির্দিষ্ট করা সুন্নাতের বরখেলাফ। অবশ্য
যারা ‘আইয়ামে বীয’-এর তিন দিন নফল
ছিয়ামে অভ্যস্ত, তারা ১৩, ১৪ ও ১৫ই শা‘বানে
উক্ত নিয়তেই ছিয়াম পালন করবেন,
শবেবরাতের নিয়তে নয়। নিয়তের গোলমাল
হ’লে কেবল কষ্ট করাই সার হবে। কেননা
বিদ‘আতী কোন আমল আল্লাহ পাক কবুল করেন না
এবং সকল প্রকার বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা ও
প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র
কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে নিজ নিজ
আমল সমূহ পরিশুদ্ধ করে নেওয়ার তাওফীক দান
করুন-আমীন!!
বিস্তারিত দ্র : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
প্রকাশিত ‘শবেবরাত’ বই।
[1]. লেখক প্রণীত সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩৩৯
পৃ.; অনেকে ১১ কিংবা ১৫ই শাওয়াল বলেছেন।
[2]. তাফসীর ইবনু জারীর (বৈরূত
১৪০৭/১৯৮৭ : মিসরী ছাপা ১৩২৮ হি. থেকে
মুদ্রিত) ২৪/৬৫ পৃ. সূরা দুখান।
[3]. মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯
‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।
[4]. হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম, মুখতাছার
ছাওয়াইকুল মুরসালাহ (রিয়ায : তাবি),
২/২৩০-৫০।