হাদিস/ সুন্নাহ অস্বীকারকারী কাফের হওয়া প্রসঙ্গে

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সুন্নাহর উপর আমলের আবশ্যকতা আর তার
অস্বীকারকারীর কাফের হওয়া
ﻢﺴﺑ ﻦﻤﺣﺮﻟﺍ ﻪﻠﻟﺍ ﻢﻴﺣﺮﻟﺍ
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা সৃষ্টিকুলের মহান রব আল্লাহর
জন্য। উত্তম পরিণতি কেবল মুত্তাকীদের
জন্য। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার বান্দা
ও রাসূল আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর; যাকে সকল
সৃষ্টির জন্য রহমত ও সমস্ত বান্দাদের জন্য
দলীল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। আরও
নাযিল হোক তার পরিবার-পরিজন ও সাথী-
সঙ্গীদের উপর; যারা অত্যন্ত আমানতদারিতা
ও দৃঢ়তার সাথে তাদের পবিত্র মহান প্রভুর
কিতাব ও তাদের নবীর সুন্নাহ্কে বহন করেছে
এবং শব্দ ও অর্থ পরিপূর্ণ সংরক্ষণ করে তাদের
পরবর্তীদের নিকট পৌঁছিয়েছে। আল্লাহ
তাদের প্রতি সন্তুষ্ট ও তাদের খুশি করুন এবং
আমাদেরকে তাদের সুন্দর অনুসারী হিসেবে কবুল
করুন।
পূর্বের ও পরবর্তী যুগের সমস্ত আলেম এ
বিষয়ে একমত যে, কোনো বিধান প্রমাণ করা ও
কোনো বস্তুকে হারাম ও হালাল সাব্যস্ত করার
ক্ষেত্রে প্রথম গ্রহণযোগ্য মূল উৎস হচ্ছে,
আল্লাহর কিতাব, যার সামনে বা পিছন
কোনোদিক থেকেই তাতে বাতিল অনুপ্রবেশ করতে
পারে না, তারপর আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ্,
যিনি ওহী ছাড়া নিজের থেকে কোনো কথা
বলেন না, এ দুটি হচ্ছে মূল উৎস। তারপর
গ্রহণযোগ্য মূল উৎস হচ্ছে, উম্মতের
‘আলেমদের ‘ইজমা‘। এ তিনটি ব্যতীত
অন্যান্য উৎসের বিষয়ে আলেমগণের মধ্যে
মতভেদ রয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে
কিয়াস; তবে অধিকাংশ আলেমের মতে এটিও
হুজ্জত বা দলীল হিসেবে গণ্য হবে; যদি তার
মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার শর্তগুলো পাওয়া যায়।
এ মূল উৎসগুলোর সাব্যস্ত করণে দলীল-
প্রমাণাদি অগণিত ও অসংখ্য; যা এত প্রসিদ্ধ
যে উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না।
[আহকাম তথা বিধি-বিধান সাব্যস্ত করার
গ্রহণযোগ্য মূল উৎসসমূহ]
প্রথম মূল উৎস: আল্লাহর কিতাব
প্রথম মূল উৎস হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব,
আল্লাহর কিতাবের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা
আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করা, আল্লাহর
কিতাবকে আঁকড়ে ধরা এবং আল্লাহ প্রদত্ত
সীমানার সামনে অবস্থান করা ফরয হওয়া
প্রমাণিত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ْﺍﻮُﻌِﺒَّﺗﭐ ﴿ ٓﺎَﻣ َﻝِﺰﻧُﺃ ﻢُﻜۡﻴَﻟِﺇ ﻦِّﻣ ۡﻢُﻜِّﺑَّﺭ
ﺎَﻟَﻭ ْﺍﻮُﻌِﺒَّﺘَﺗ ٓۦِﻪِﻧﻭُﺩ ﻦِﻣ ﺎٗﻠﻴِﻠَﻗ َۗﺀٓﺎَﻴِﻟۡﻭَﺃ
ﺎَّﻣ َﻥﻭُﺮَّﻛَﺬَﺗ ٣ ﴾ ‏[ :ﻑﺍﺮﻋﻻﺍ ٣‏]
“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা
নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে
ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না।
তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর”।[1]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
ﺍَﺬَٰﻫَﻭ﴿ ٌﺐَٰﺘِﻛ ُﻩﻮُﻌِﺒَّﺗﭑَﻓ ٞﻙَﺭﺎَﺒُﻣ ُﻪَٰﻨۡﻟَﺰﻧَﺃ
ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ْﺍﻮُﻘَّﺗﭐَﻭ َﻥﻮُﻤَﺣۡﺮُﺗ ١٥٥
﴾ ‏[ :ﻡﺎﻌﻧﻻﺍ ١٥٥ ‏]
“আর এটি কিতাব- যা আমি নাযিল করেছি-
বরকতময়। সুতরাং, তোমরা তার অনুসরণ কর
এবং তাকওয়া অবলম্বন কর; যাতে তোমরা
রহমতপ্রাপ্ত হও”।[2]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ ﻢُﻛَﺀٓﺎَﺟ ۡﺪَﻗ ِﻪَّﻠﻟﭐ َﻦِّﻣ ٞﺭﻮُﻧ ٞﺐَٰﺘِﻛَﻭ ٞﻦﻴِﺒُّﻣ
١٥ ﻱِﺪۡﻬَﻳ ِﻪِﺑ ُﻪَّﻠﻟﭐ ِﻦَﻣ َﻊَﺒَّﺗﭐ ۥُﻪَﻧَٰﻮۡﺿِﺭ
َﻞُﺒُﺳ ﻢُﻬُﺟِﺮۡﺨُﻳَﻭ ِﻢَٰﻠَّﺴﻟﭐ َﻦِّﻣ ِﺖَٰﻤُﻠُّﻈﻟﭐ ﻰَﻟِﺇ
ۡﻢِﻬﻳِﺪۡﻬَﻳَﻭ ۦِﻪِﻧۡﺫِﺈِﺑ ِﺭﻮُّﻨﻟﭐ ٰﻰَﻟِﺇ ٖﻁَٰﺮِﺻ
ٖﻢﻴِﻘَﺘۡﺴُّﻣ ١٦ ﴾ ‏[ :ﺓﺪﺋﺎﻤﻟﺍ ،١٥ ١٦ ‏]
“অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে
আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। এর মাধ্যমে
আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তার
সন্তুষ্টি অনুসরণ করে এবং তার অনুমতিতে
তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের
করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হিদায়াত
দেন”।[3]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ َّﻥِﺇ﴿ ِﺮۡﻛِّﺬﻟﭑِﺑ ْﺍﻭُﺮَﻔَﻛ ﺎَّﻤَﻟ ۖۡﻢُﻫَﺀٓﺎَﺟ
ۥُﻪَّﻧِﺇَﻭ ٞﺰﻳِﺰَﻋ ٌﺐَٰﺘِﻜَﻟ ٤١ ِﻪﻴِﺗۡﺄَﻳ ﺎَّﻟ ُﻞِﻄَٰﺒۡﻟﭐ
ۢﻦِﻣ ِﻦۡﻴَﺑ ِﻪۡﻳَﺪَﻳ ﺎَﻟَﻭ ۡﻦِﻣ ۖۦِﻪِﻔۡﻠَﺧ ٞﻞﻳِﺰﻨَﺗ ۡﻦِّﻣ
ٍﻢﻴِﻜَﺣ ٖﺪﻴِﻤَﺣ ﴾٤٢ ‏[ :ﺖﻠﺼﻓ ،٤١ ٤٢ ‏]
“নিশ্চয় যারা উপদেশ [কুরআন] আসার পরও তা
অস্বীকার করে, [তাদেরকে অবশ্যই এর পরিণাম
ভোগ করতে হবে] আর নিশ্চয় এক সম্মানিত
গ্রন্থ। বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না,
না সামনে থেকে না পিছন থেকে। এটি
প্রজ্ঞাময়, স-প্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিল
কৃত”।[4]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
َﻲِﺣﻭُﺃَﻭ﴿ َّﻲَﻟِﺇ ﻢُﻛَﺭِﺬﻧُﺄِﻟ ُﻥﺍَﺀۡﺮُﻘۡﻟﭐ ﺍَﺬَٰﻫ
ۦِﻪِﺑ ۢﻦَﻣَﻭ ﴾١٩َۚﻎَﻠَﺑ ‏[ :ﻡﺎﻌﻧﻻﺍ ١٩ ‏]
“আর এ কুরআন আমার কাছে ওহী করে পাঠানো
হয়েছে যেন তোমাদেরকে ও যার কাছে এটা
পৌছবে তাদেরকে এর মাধ্যমে আমি সতর্ক
করি”।[5]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ ﺍَﺬَٰﻫ ِﺱﺎَّﻨﻠِّﻟ ٞﻎَٰﻠَﺑ ْﺍﻭُﺭَﺬﻨُﻴِﻟَﻭ ٥٢ۦِﻪِﺑ
﴾ ‏[ :ﻢﻴﻫﺍﺮﺑﺍ ٥٢ ‏]
“এটা মানুষের জন্য পয়গাম। আর যা দ্বারা
তাদেরকে সতর্ক করা হয়”।[6]
উল্লেখিত আয়াত ছাড়াও এ বিষয়ে আরও অনেক
আয়াতই বিদ্যমান আছে।
আর এ বিষয়ে বহু বিশুদ্ধ হাদিসও অনেক রয়েছে,
যাতে আল্লাহর কিতাবকে মজবুত করে ধরার এবং
অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে; যাতে
প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবকে
মজবুত করে আঁকড়ে ধরবে, সে হিদায়াতের উপর
থাকবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবকে
বর্জন করবে, সে গোমরাহ হবে।
তন্মধ্য থেকে কিছু হাদিস:
·      রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিদায় হজের ভাষণে সমবেত সাহাবীদের
সম্বোধন করে বলেন,
‏« ﻲِّﻧِﺇ ْﻢُﻜﻴﻓ ٌﻙﺭﺎﺗ ﺎَﻣ ﺍﻮﻠﻀﺗ ْﻦَﻟ ﻥِﺇ
ْﻢُﺘْﻤَﺼَﺘْﻋﺍ َﺏﺎَﺘِﻛ ِﻪِﺑ ِﻪﻠﻟﺍ ‏» ، ﻩﺍﻭﺭ ﻢﻠﺴﻣ
ﻲﻓ ﻪﺤﻴﺤﺻ
“আমি তোমাদের নিকট এমন একটি বস্তু রেখে
যাচ্ছি, যদি তোমরা তাকে মজবুত করে পাকড়াও
কর, তবে তোমরা কখনোই গোমরাহ হবে না। তা
হল আল্লাহর কিতাব”।[7]
·      সহীহ মুসলিমে যায়েদ ইবন আরকাম
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে আরও বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻙﺭﺎﺗ ﻲِّﻧِﺇ ْﻢُﻜﻴِﻓ ﺎﻤُﻬﻟَّﻭَﺃ ﻦﻴَﻠْﻘِﺛ ُﺏﺎﺘِﻛ
ﻪﻠﻟﺍ ِﻪﻴﻓ ﺭﻮُّﻨﻟﺍﻭ ﻯَﺪُﻬﻟﺍ ِﺏﺎَﺘﻜِﺑ ﺍﻭﺬُﺨَﻓ
ﺍﻮُﻜّﺴَﻤَﺗَﻭ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻪِﺑ ‏»
“আমি তোমাদের মধ্যে দুটি বিষয় রেখে যাব,
তার একটি হল, আল্লাহর কিতাব, তাতে রয়েছে
হিদায়াত ও নূর। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে
আঁকড়ে ধর এবং তার প্রতি অবিচল থাক”।[8]
হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের প্রতি উৎসাহ
প্রদান করেন এবং আকৃষ্ট করেন। তারপর তিনি
বলেন,
‏«ُﻞْﻫَﺃَﻭ ﻲﺘْﻴَﺑ ﻪﻠﻟﺍ ُﻢُﻛﺮِّﻛَﺫﺃ ﻲﻓ ﻞﻫﺃ
ﻢﻛﺮﻛﺫﺃ ﻲﺘﻴﺑ ﻪﻠﻟﺍ ﻲﻓ ﻞﻫﺃ ﻲﺘﻴﺑ ‏»
“এবং আমার আহলে বাইত। আমার পরিবার
পরিজন সম্পর্কে আমি তোমাদের আল্লাহকে
স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমার পরিবার
পরিজন সম্পর্কে আমি তোমাদের আল্লাহকে
স্মরণ করিয়ে দিতে চাই”।[9]
·      অপর শব্দে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন সম্পর্কে বলেন,
‏« ﻮﻫ ﻞﺒﺣ ﻪﻠﻟﺍ ﻦﻣ ﻚﺴﻤﺗ ﻪﺑ ﻥﺎﻛ ﻰﻠﻋ
ﻯﺪﻬﻟﺍ ﻦﻣﻭ ﻪﻛﺮﺗ ﻥﺎﻛ ﻝﻼﻀﻟﺍ ﻰﻠﻋ ‏».
“এটি আল্লাহর রশি, যে তাকে মজবুত করে
ধরবে, সে হিদায়াতের উপর থাকবে আর যে
ব্যক্তি তাকে ছেড়ে দেবে-মজবুত করে ধরবে না-
সে অবশ্যই গোমরাহির উপর থাকবে”।[10] এ
বিষয়ে আরও অনেক হাদিস বিদ্যমান। আল্লাহর
কিতাবকে মজবুত করে ধরা, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্সহ আল্লাহর
কিতাব অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা ফরয
হওয়ার বিষয়ে সাহাবী ও তাদের পরবর্তী
জ্ঞানী ও ঈমানদারগণের ঐকমত্য দ্বারা
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা এর উপর দলীল-
প্রমাণাদি পেশ করে আলোচনার পরিমণ্ডল
দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজনীয়তা লোপ করে
দেয়।
দ্বিতীয় মূল উৎস: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।
[এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবী ও তাদের পরবর্তী
আলেম ও ঈমানদার থেকে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে আসা
বর্ণনাসমূহ]
শরী‘আতের যে তিনটি গ্রহণযোগ্য মূল
উৎসের ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কোনো
মতানৈক্য নেই তার দ্বিতীয়টি হচ্ছে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আসা
বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ। সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের
পরবর্তী জ্ঞানী ও ঈমানদারগণ এ মহান মূল
উৎসটিতে বিশ্বাসী ছিলেন; তাঁরা এর দ্বারা
ইসলামী বিধানের উপর দলীল পেশ করেছেন
এবং উম্মতদের তা শিখিয়েছেন। এ বিষয়ে
তারা অসংখ্য লেখনি লিখে গেছেন এবং উসূলে
ফিকহ (ফিকহের নীতি) ও উসূলে হাদীস
(হাদীসের নীতি) এর কিতাবসমূহে তারা
বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন। এটি (অর্থাৎ
রাসূলের হাদীস) বিধি-বিধানের জন্য মূল
উৎস হওয়ার বিষয়ে প্রমাণাদি অসংখ্য
অগণিত। যেমন,
· মহান আল্লাহর কিতাবে আল্লাহ তা‘আলা
কর্তৃক এ উম্মতকে রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ
করার বহু নির্দেশ প্রদান। কারণ,
–  এ নির্দেশগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের যুগ থেকে সর্বকালের সকল
দুনিয়াবাসীর উপর প্রযোজ্য। কেননা, তিনি
কোনো বিশেষ সময় বা বিশেষ গোষ্ঠীর নবী
নন, তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর প্রতি নবী-
কেয়ামত অবধি যত মানুষ দুনিয়াতে আগমন করবে
তাদের সবার নবী। এ কারণেই কিয়ামত
পর্যন্ত সকলকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ও আনুগত্য করার
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
–  তাছাড়া তিনিই আল্লাহর কিতাবের ব্যাখ্যা
দানকারী, আল্লাহর কিতাবের অস্পষ্ট
বিষয়গুলির বর্ণনাকারীও তিনি। তিনি তার
কথা, কর্ম ও স্বীকৃতি দ্বারা আল্লাহর কুরআনের
বিধানগুলোর বর্ণনা দেন। যেমন, যদি হাদিস
তথা -রাসূলের সুন্নাত- না থাকত তাহলে
সালাতের রাকাত, সালাত আদায়ের পদ্ধতি ও
সালাতের ওয়াজিবসহ বিভিন্ন বিধান জানার
কোনো উপায় থাকত না। অনুরূপভাবে রোজা, হজ
ও যাকাতের বিধানসমূহ বিস্তারিত জানার
কোনো উপায় থাকত না। ভালো কাজের আদেশ ও
অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার বিষয়টিও
মানুষের নিকট অজ্ঞাত থেকে যেত। মু‘আমালাত,
মু‘আশারাত, লেন-দেন, বেচা-কেনা, মানুষের সাথে
কথা-বার্তা বলা, চলা-ফেরা, উঠা-বসা করা,
হারাম হালাল সম্পর্কে জানা, ও শাস্তি ও হদ
কায়েম করা ইত্যাদির বিধান সম্পর্কে মানুষ
কখনোই জানতে পারত না।
এ বিষয়টির উপর কুরআন থেকে প্রমাণ:
·      এ বিষয়ে যে সব আয়াত এসেছে তন্মধ্যে
সূরা- আলে ইমরানের আয়াতটি অন্যতম, যাতে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
َﻪَّﻠﻟﭐ ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﻭ﴿ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐَﻭ
َﻥﻮُﻤَﺣۡﺮُﺗ ﴾١٣٢ ‏[ :ﻥﺍﺮﻤﻋ ﻝﺍ ١٣٢‏]
“আর তোমরা আনুগত্য কর, আল্লাহ ও রাসূলের,
যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়”।[11]
·      অনুরূপ সূরা আন-নিসাতে আল্লাহর বাণী,
ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ﴿ ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃ ْﺍٓﻮُﻨَﻣﺍَﺀ َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ َﻪَّﻠﻟﭐ
ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﻭ ﻲِﻟْﻭُﺃَﻭ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ِﺮۡﻣَﺄۡﻟﭐ ۖۡﻢُﻜﻨِﻣ
ﻥِﺈَﻓ ۡﻢُﺘۡﻋَﺰَٰﻨَﺗ ﻲِﻓ ُﻩﻭُّﺩُﺮَﻓ ٖﺀۡﻲَﺷ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﭐ
ِﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐَﻭ ۡﻢُﺘﻨُﻛ ﻥِﺇ ِﻪَّﻠﻟﭑِﺑ َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﺗ
ِۚﺮِﺧٓﺄۡﻟﭐ ِﻡۡﻮَﻴۡﻟﭐَﻭ َﻚِﻟَٰﺫ ٞﺮۡﻴَﺧ ﺎًﻠﻳِﻭۡﺄَﺗ ُﻦَﺴۡﺣَﺃَﻭ
٥٩ ﴾ ‏[ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ : ٥٩‏]
হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর
আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে
কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোনো
বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা
আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও –
যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি
ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে
উৎকৃষ্টতর।[12]
·      সূরা আন-নিসাতে আল্লাহ তা‘আলা আরও
বলেন,
ﻦَّﻣ﴿ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ِﻊِﻄُﻳ ۡﺪَﻘَﻓ َﻉﺎَﻃَﺃ َۖﻪَّﻠﻟﭐ ﻦَﻣَﻭ
ٰﻰَّﻟَﻮَﺗ َﻚَٰﻨۡﻠَﺳۡﺭَﺃ ٓﺎَﻤَﻓ ۡﻢِﻬۡﻴَﻠَﻋ ﺎٗﻈﻴِﻔَﺣ
﴾٨٠ ‏[ : ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ٨٠‏]
“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই
আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি
তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ
করিনি”।[13]
কিভাবে তার আনুগত্য করা ও বিবদমান বিষয়
আল্লাহ ও রাসূলের সুন্নতের দিকে প্রত্যাবর্তন
করা সম্ভব হবে যদি সুন্নাতকে প্রমাণ হিসেবে
স্বীকৃতি দেয়া না হয় অথবা দাবী করা হয় যে
সুন্নাহ্ সংরক্ষিত নয়? সুন্নাহ্ যদি সংরক্ষিত
না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহ তার বান্দাদের
এমন বস্তুর দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন যা কোনো
অস্তিত্ব নেই। যা সম্পূর্ণ বাতিল, আল্লাহর
প্রতি খারাপ ধারণা করা এবং আল্লাহর সাথে
কুফরি করার নামান্তর।
·      আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নাহলে বলেন,
َﻚۡﻴَﻟِﺇ ٓﺎَﻨۡﻟَﺰﻧَﺃَﻭ﴿ َﺮۡﻛِّﺬﻟﭐ ِﺱﺎَّﻨﻠِﻟ َﻦِّﻴَﺒُﺘِﻟ
ﺎَﻣ َﻝِّﺰُﻧ ۡﻢُﻬَّﻠَﻌَﻟَﻭ ۡﻢِﻬۡﻴَﻟِﺇ َﻥﻭُﺮَّﻜَﻔَﺘَﻳ ٤٤
﴾ ‏[ :ﻞﺤﻨﻟﺍ ٤٤‏]
“আর আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি
কুরআন; যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে
দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে।
আর যাতে তারা চিন্তা করে।”[14]
·      একই সূরাতে পরবর্তী অপর একটি আয়াতে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ٓﺎَﻣَﻭ﴿ ﺎَﻨۡﻟَﺰﻧَﺃ َﺐَٰﺘِﻜۡﻟﭐ َﻚۡﻴَﻠَﻋ ﺎَّﻟِﺇ َﻦِّﻴَﺒُﺘِﻟ
ُﻢُﻬَﻟ ْﺍﻮُﻔَﻠَﺘۡﺧﭐ ﻱِﺬَّﻟﭐ ِﻪﻴِﻓ ﻯٗﺪُﻫَﻭ ٗﺔَﻤۡﺣَﺭَﻭ
َﻥﻮُﻨِﻣۡﺆُﻳ ٖﻡۡﻮَﻘِّﻟ ٦٤ ﴾ ‏[ :ﻞﺤﻨﻟﺍ ٦٤ ‏]
“আর আমরা তোমার উপর কিতাব নাযিল
করেছি, শুধু এ জন্য যে, যে বিষয়ে তারা মতভেদ
করছে, তা তাদের জন্য তুমি স্পষ্ট করে দেবে
এবং এটি হিদায়াত ও রহমত সেই কওমের জন্য
যারা ঈমান আনে।”[15]
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর তাদের জন্য
নাযিলকৃত কুরআনের বর্ণনা করার দায়িত্ব
কীভাবে দেন যদি রাসূলের সুন্নার কোনো
অস্তিত্ব না থাকে? অথবা যদি রাসূলের
সুন্নাহকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা না হয়?
·      অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরে
বলেন,
ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃ ۡﻞُﻗ﴿ َۖﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﻭ َﻪَّﻠﻟﭐ
ﻥِﺈَﻓ ﺎَﻤَّﻧِﺈَﻓ ْﺍۡﻮَّﻟَﻮَﺗ ِﻪۡﻴَﻠَﻋ ﺎَﻣ َﻞِّﻤُﺣ
ﻢُﻜۡﻴَﻠَﻋَﻭ ۖۡﻢُﺘۡﻠِّﻤُﺣ ﺎَّﻣ ﻥِﺇَﻭ ْۚﺍﻭُﺪَﺘۡﻬَﺗ ُﻩﻮُﻌﻴِﻄُﺗ
ﺎَﻣَﻭ ﻰَﻠَﻋ ِﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ُﻎَٰﻠَﺒۡﻟﭐ ﺎَّﻟِﺇ ُﻦﻴِﺒُﻤۡﻟﭐ
﴾٥٤ ‏[ :ﺭﻮﻨﻟﺍ ٥٤‏]
বল, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের
আনুগত্য কর। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে
নাও, তবে সে শুধু তার উপর অর্পিত দায়িত্বের
জন্য দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত
দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী। আর যদি
তোমরা তার আনুগত্য কর, তবে তোমরা হিদায়াত
প্রাপ্ত হবে। আর রাসূলের দায়িত্ব শুধু
স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।[16]
·      আল্লাহ তা‘আলা সূরা নূরে আরও বলেন,
ْﺍﻮُﺗﺍَﺀَﻭ َﺓٰﻮَﻠَّﺼﻟﭐ ْﺍﻮُﻤﻴِﻗَﺃَﻭ﴿ َﺓٰﻮَﻛَّﺰﻟﭐ
ْﺍﻮُﻌﻴِﻃَﺃَﻭ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ َﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ
﴾٥٦َﻥﻮُﻤَﺣۡﺮُﺗ ‏[ :ﺭﻮﻨﻟﺍ ٥٦‏]
“আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং
রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা
রহমতপ্রাপ্ত হতে পার।”[17]
·      আল্লাহ সূরা আ‘রাফে বলেন,
﴿ ﺎَﻬُّﻳَﺄَٰٓﻳ ۡﻞُﻗ ُﺱﺎَّﻨﻟﭐ ﻲِّﻧِﺇ ُﻝﻮُﺳَﺭ ِﻪَّﻠﻟﭐ
ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ ۡﻢُﻜۡﻴَﻟِﺇ ﻱِﺬَّﻟﭐ ۥُﻪَﻟ ُﻚۡﻠُﻣ ِﺕَٰﻮَٰﻤَّﺴﻟﭐ
ِۖﺽۡﺭَﺄۡﻟﭐَﻭ ٓﺎَﻟ َﻪَٰﻟِﺇ ﺎَّﻟِﺇ َﻮُﻫ ُۖﺖﻴِﻤُﻳَﻭ ۦِﻲۡﺤُﻳ
ِﻪَّﻠﻟﭑِﺑ ْﺍﻮُﻨِﻣﺎََٔﻓ ِّﻲِﺒَّﻨﻟﭐ ِﻪِﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ِّﻲِّﻣُﺄۡﻟﭐ
ﻱِﺬَّﻟﭐ ِﻪَّﻠﻟﭑِﺑ ُﻦِﻣۡﺆُﻳ ُﻩﻮُﻌِﺒَّﺗﭐَﻭ ۦِﻪِﺘَٰﻤِﻠَﻛَﻭ
َﻥﻭُﺪَﺘۡﻬَﺗ ۡﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ١٥٨ ﴾ ‏[ :ﻑﺍﺮﻋﻻﺍ ١٥٧ ‏]
“বল, হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি
আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও
জমিনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোনো সত্য
ইলাহ নাই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু
দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন
ও তার প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে
আল্লাহ ও তার বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে।
আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়,
তোমরা হিদায়াত লাভ করবে।”[18]
উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে
প্রমাণিত হয় যে, হিদায়াত ও রহমত একমাত্র
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
আনুগত্য করার মধ্যেই নিহিত। সুতরাং, তার
সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ ও তদনুযায়ী আমল
করা ছাড়া হিদায়াত লাভ কিভাবে সম্ভব? অথবা
এ কথা বলা যে, তার সুন্নতের কোনো বিশুদ্ধতা
নাই অথবা তার সুন্নতের উপর ভরসা করা যাবে
না, তার হিদায়াত কিভাবে অর্জিত হবে?
·      আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নূরে বলেন,
َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ِﺭَﺬۡﺤَﻴۡﻠَﻓ﴿ َﻥﻮُﻔِﻟﺎَﺨُﻳ ٓۦِﻩِﺮۡﻣَﺃ ۡﻦَﻋ
ﻥَﺃ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﺗ ٌﺔَﻨۡﺘِﻓ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﻳ ۡﻭَﺃ ٌﺏﺍَﺬَﻋ
ٌﻢﻴِﻟَﺃ ٦٣ ﴾ ‏[ ﺭﻮﻨﻟﺍ : ٦٣‏]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে,
তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা
যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে।”[19]
·      সূরা আল-হাশরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ٓﺎَﻣَﻭ﴿ ُﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐ ُﻢُﻜٰﻯَﺗﺍَﺀ ُﻩﻭُﺬُﺨَﻓ ﺎَﻣَﻭ
ۡﻢُﻜٰﻯَﻬَﻧ ْﺍﻮُﻘَّﺗﭐَﻭ ْۚﺍﻮُﻬَﺘﻧﭑَﻓ ُﻪۡﻨَﻋ َۖﻪَّﻠﻟﭐ َّﻥِﺇ
َﻪَّﻠﻟﭐ ِﺏﺎَﻘِﻌۡﻟﭐ ُﺪﻳِﺪَﺷ ٧ ﴾ ‏[ :ﺮﺸﺤﻟﺍ ٧ ‏]
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা
থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে, তা থেকে বিরত
হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ
শাস্তি প্রদানে কঠোর।[20]
এ বিষয়ে আরও অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলো
প্রমাণ করে যে আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা
ও তিনি যা নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেছেন
তার আনুগত্য করাও ফরয; যেমনটি এর পূর্বে
উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহর কিতাবের
অনুসরণ-অনুকরণ করা, আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে
ধরা, আল্লাহর কিতাবের আদেশ নিষেধ পালন
করা ফরয। এ দুটি-কুরআন ও সূন্নাহ-একটি
অপরটির সম্পূরক ও অবিচ্ছেদ্য মূল উৎস।
দুটির কোনোটিকেই অস্বীকার করা যাবে না।
যদি কোনো ব্যক্তি একটিকে অস্বীকার করে,
সে অপরটিকেও অস্বীকার করল এবং
মিথ্যারোপ করল। আর এ জাতীয় কাজ সকল
উম্মতে মুসলিমাহ্র ঈমানদার ও জ্ঞানীদের
ঐকমত্যে কুফরি, ভ্রষ্টতা ও ইসলামের গণ্ডি
থেকে বের হয়ে যাওয়া।
এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে প্রমাণ:
o     যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের যুগে ছিলেন এবং যারা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে
ছিলেন না কিয়ামত পূর্ব দুনিয়াতে আগমন করবে
এমন সবার জন্য আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা
ও তার আনিত দ্বীনের অনুসরণ করা ফরয হওয়া
এবং তার নাফরমানি করা নিষিদ্ধ হওয়া
বিষয়ে বর্ণিত হাদিসসমূহ মুতাওয়াতির – তথা
নিরবিচ্ছিন্নভাবে অগণিত অসংখ্য লোকের
বর্ণনার কারণে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হওয়ার
-পর্যায়ভুক্ত।
·      তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বুখারি ও
মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন-
‏« ﻲِﻨَﻋﺎَﻃَﺃ ْﻦَﻣ ﺪﻘَﻓ َﻉﺎَﻃَﺃ ﻪﻠﻟﺍ ﻦَﻣﻭ
ﻲِﻧﺎَﺼَﻋ ﺪﻘﻓ ﻰَﺼَﻋ ﻪﻠﻟﺍ‏»
“যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহর
আনুগত্য করল আর যে আমার বিরুদ্ধাচরণ করল,
সে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করল।”[21]
·      অনুরূপভাবে সহীহ বুখারীতে আবু হুরাইরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
‏« ّﻞﻛ َﻥﻮﻠُﺧﺪَﻳ ﻲﺘَّﻣﺃ َﺔﻨﺠﻟﺍ ﻻِﺇ ﻦَﻣ ﻰَﺑَﺃ
َﻞﻴِﻗ ﺎﻳ َﻝﻮﺳﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ﻦَﻣﻭ ﻰَﺑﺄَﻳ َﻝﺎَﻗ ﻦَﻣ
ﻲﻨَﻋﺎَﻃَﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ َﻞَﺧَﺩ ﻦَﻣﻭ ﻲﻧﺎَﺼَﻋ ﺪﻘَﻓ
ﻰَﺑَﺃ ‏»
“যে ব্যক্তি অস্বীকার করে, সে ব্যক্তি ব্যতীত
আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে;
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর
রাসূল! কোন ব্যক্তি অস্বীকার করে? তখন
তিনি বললেন: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে,
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে ব্যক্তি আমার
অবাধ্য, সে ব্যক্তিই অস্বীকার করে।”[22]
·      ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও হাকিম বিশুদ্ধ
সনদে মিকদাম ইবনে মা‘দি কারাব রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
‏« ﻻﺃ ُﺖﻴﺗﻭﺃ ﻲﻧﺇ ﺍﺬﻫ ،ﺏﺎﺘﻜﻟﺍ ُﻪَﻠﺜﻣﻭ
،ُﻪﻌﻣ ُﻚِﺷﻮُﻳ ﻻﺃ ٌﻞُﺟَﺭ ﻥﺎﻌْﺒَﺷ ﻰﻠﻋ
،ﻪﺘﻜﻳﺭﺃ :ُﻝﻮﻘﻳ ﻢﻜﻴﻠﻋ ،ﻥﺁﺮُﻘﻟﺍ ﺍَﺬﻬِﺑ
ﺎﻤﻴﻓ ﻢُﺗْﺪﺟَﻭ ﻪﻴﻓ ﻦﻣ ،ُﻩﻮُّﻠِﺣﺄﻓ ٍﻝﻼﺣ ﺎﻣﻭ
ﻢُﺗْﺪﺟﻭ ﻪﻴﻓ ﻦﻣ ُﻩﻮﻣِّﺮَﺤَﻓ ﻡﺍﺮﺣ ‏».
“জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আমাকে এই কিতাব দেয়া
হয়েছে এবং তার সাথে তার অনুরূপ বস্তুও
(সুন্নাহ) দেওয়া হয়েছে। সাবধান! অচিরেই
কোনো কোনো ব্যক্তি এমন পাওয়া যাবে যে তার
খাটের উপর বসে বসে বলবে: তোমাদের উপর
আবশ্যক হল এই কুরআনকে গ্রহণ করা; সুতরাং
তোমরা তাতে যা হালাল হিসেবে পাবে, তাকে
হালাল বলে মেনে নেবে, আর তাতে যা হারাম
হিসেবে পাবে, তাকে হারাম বলে ঘোষণা করবে
[23]।”
·      আবু দাউদ ও ইবন মাজাহ বিশুদ্ধ সনদে ইবনে
আবু রাফে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন-
‏« ﻻ ﻢُﻛَﺪَﺣَﺃ َّﻦﻴَﻔْﻟَﺃ ﺎًﺌِﻜّﺘُﻣ ِﻪِﺘﻜﻳﺭَﺃ ﻰﻠَﻋ
ِﻪﻴِﺗﺄَﻳ ُﺮْﻣﻷﺍ ﻦِﻣ ﻱﺮْﻣَﺃ ُﺕْﺮَﻣَﺃ ﺎّﻤَﻣ ِﻪِﺑ ﻭﺃ
ُﺖْﻴَﻬَﻧ ُﻪْﻨَﻋ ُﻝﻮﻘﻴَﻓ ﻻ ،ﻱﺭْﺪﻧ ﺎﻣ ﺎﻧْﺪَﺟَﻭ
ﻲﻓ ِﺏﺎﺘِﻛ ﻩﺎَﻨْﻌَﺒَّﺗﺍ ِﻪﻠﻟﺍ ‏».
“আমি যেন তোমাদের কাউকে এমন দেখতে না পাই
যে সে তার খাটের উপর হেলান দিয়ে বসে থাকবে
[24], তার নিকট আমার নির্দেশিত অথবা আমার
নিষেধকৃত কোনো বিষয় পৌঁছবে, তখন সে বলবে,
আমি জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পাব
তা-ই কেবল অনুসরণ করব।[25]
·      হাসান ইবনে জাবের হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি মিকদাম ইবন মা‘দি কারাব
রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি
বলেন,
‏« ُﻝﻮﺳَﺭ َﻡّﺮَﺣ ﻪﻠﻟﺍ r َﻡﻮﻳ ﺮَﺒْﻴَﺧ َﺀﺎﻴْﺷَﺃ ﻢﺛ
َﻝﺎَﻗ ُﻚِﺷﻮُﻳ ﻢُﻛُﺪَﺣَﺃ ﻲﻨَﺑِّﺬﻜُﻳ ﻥَﺃ ﻮﻫَﻭ ﺊِﻜّﺘُﻣ
ﻲﺜﻳِﺪﺤﺑ ﺙّﺪًﺤُﻳ ُﻝﻮﻘﻴَﻓ ﻢُﻜﻨْﻴَﺑَﻭ ﺎﻨَﻨْﻴَﺑ
ُﺏﺎﺘِﻛ ِﻪﻠﻟﺍ ﺎَﻧْﺪَﺟَﻭ ﺎﻤﻓ ِﻪﻴِﻓ ﻦﻣ ٍﻝﻼَﺣ
ُﻩﺎَﻨْﻠَﻠْﺤَﺘْﺳﺍ ﺎَﻣَﻭ ﺎﻧْﺪَﺟَﻭ ﻪﻴﻓ ﻦﻣ ﻡﺍﺮَﺣ
ُﻩﺎَﻨْﻣّﺮَﺣ ﻻَﺃ َّﻥِﺇ ﺎَﻣ َﻡّﺮَﺣ ُﻝﻮُﺳﺭ ِﻪﻠﻟﺍ ُﻞْﺜِﻣ
ﺎَﻣ َﻡّﺮَﺣ ﻪﻠﻟﺍ ‏» ﻪﺟﺮﺧﺃ ﻢﻛﺎﺤﻟﺍ
ﻦﺑﺍﻭ ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍﻭ ﻪﺟﺎﻣ .ﺢﻴﺤﺻ ﺩﺎﻨﺳِﺈﺑ
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
খাইবারের দিন কিছু জিনিসকে হারাম করেন।
তারপর তিনি বলেন, অচিরেই তোমাদের কেউ
কেউ আমাকে অমান্য করার মাধ্যমে মিথ্যারোপ
করবে, সে হেলান দেয়া অবস্থায় থাকবে, তার কাছে
আমার হাদিস বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে,
আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে ফায়সালা
কারী আল্লাহর কিতাব। তাতে যে সব জিনিস
হালাল পাব তাকে আমরা হালাল মনে করব, আর
তাতে যে সব জিনিস হারাম পাব, তাকে আমরা
হারাম মনে করব। সাবধান, মনে রাখবে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব
বস্তুকে হারাম বলবে, তা আল্লাহ যে সব বস্তুকে
হারাম বলবে তারই মত।[26]
o     তদ্রূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে অসংখ্য সনদে বর্ণিত যে,
তিনি তার সাহাবীদের থেকে যারা উপস্থিত
ছিল, তাদের ওসিয়ত করেন, তারা যেন
অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত
পৌছিয়ে দেন এবং তিনি তাদের বলতেন, হতে
পারে যার নিকট পৌঁছানো হল, সে শ্রোতার
চেয়ে অধিক সংরক্ষণকারী বা সমঝদার হবে।
যেমন,
·      বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, আরাফার দিন
বিদায় হজের ভাষণে ও কুরবানির দিনে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত
সাহাবীদের সম্বোধন করে বলেন,
‏«ﻎﻠﺒﻴﻠﻓ ﺐﺋﺎﻐﻟﺍ ﺪﻫﺎﺸﻟﺍ ﺏﺮﻓ ﻦﻣ
ﻪﻐﻠﺒﻳ ﻰﻋﻭﺃ ﻪﻟ ﻦﻤﻣ ﻪﻌﻤﺳ ‏»
“উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তিকে
পৌঁছিয়ে দেবে। হতে পারে যার কাছে পৌঁছানো
হল, সে যার থেকে শুনেছে তার থেকে অধিক
সংরক্ষণকারী হবে।”[27]
যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সুন্নাত যে শুনবে এবং যার কাছে তা পৌঁছবে তার
উপর প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হবে,
অনুরূপভাবে যদি রাসূলের সুন্নাত কিয়ামত
পর্যন্ত স্থায়ী না হবে, তাহলে তিনি
সুন্নাতকে মানুষের নিকট পৌঁছানোর জন্য
নির্দেশ দিতেন না। রাসূলের নির্দেশ দেওয়া
দ্বারা জানা গেল যে, সুন্নাহ্ দ্বারা প্রমাণ
গ্রহণ করা যারা রাসূলের মুখ থেকে সরাসরি
শোনে তাদের ক্ষেত্রে যেমন জরুরী অনুরূপভাবে
যাদের নিকট বিশুদ্ধ সনদে সুন্নতটি পৌঁছল
তাদের জন্যও জরুরী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
সাহাবীগণ রাসূলের মুখের থেকে উচ্চারিত কথা
ও কর্মগুলিকে যথাযথ সংরক্ষণ করেন এবং
তারা তাদের পরবর্তী লোক তাবে‘ঈগণের নিকট
তা পৌঁছান, তারপর তাবে‘ঈগণ তাদের পরবর্তী
লোকদের নিকট পৌঁছান। এভাবে নির্ভরযোগ্য
আলেমগণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এবং যুগের পর
যুগ রাসূলের সুন্নাহকে মানুষের নিকট
পৌঁছানোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। তারা
লেখনির মাধ্যমে তাদের কিতাবসমূহের মধ্যে
সূন্নাহকে সংরক্ষণ করেন। কোনোটি সহীহ বা
বিশুদ্ধ আর কোনোটি সহীহ নয় তাও তারা
স্পষ্ট করেন। বিশুদ্ধ হাদীস ও দুর্বল হাদীস
চেনার জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের কায়দা
কানুন তারা নির্ধারণ করেন, যাতে কোনোটি
সহীহ আর কোনোটি দুর্বল তা জানা যায়। আর
আহলে ইলম তথা জ্ঞানীগণ হাদিসের কিতাব
বুখারি মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবগুলোকে
গ্রহণ করেছেন এবং পরিপূর্ণভাবে হেফয ও
সংরক্ষণ করেছেন যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা
স্বীয় কিতাবকে বিকৃতকারী নাস্তিক ও
বাতিলপন্থীদের হাত থেকে পরিপূর্ণভাবে
সংরক্ষণ করেছেন, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ﺎَّﻧِﺇ﴿ ُﻦۡﺤَﻧ ﺎَﻨۡﻟَّﺰَﻧ ﺎَّﻧِﺇَﻭ َﺮۡﻛِّﺬﻟﭐ ۥُﻪَﻟ
َﻥﻮُﻈِﻔَٰﺤَﻟ ٩ ﴾ ‏[ :ﺮﺠﺤﻟﺍ ٩‏]
“নিশ্চয় আমরা কুরআন নাযিল করছি, আর
আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষণকারী”। [সূরা আল-
হিজর: ৯]
o     এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতও
অবতীর্ণ ওহী। আল্লাহ তা‘আলা যেমনিভাবে
স্বীয় কিতাব কুরআনকে হেফাজত ও সংরক্ষণ
করেছেন, অনুরূপভাবে সুন্নতকেও হেফাজত ও
সংরক্ষণ করেছেন। সুন্নতের হেফাজতের জন্য
যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা বিজ্ঞ আলেমগণের
সুব্যবস্থা করেছেন; এ সব আলেম বাতিলপন্থীরা
হাদিস ও সুন্নতের মধ্যে যে সব বিকৃতি ও
পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তা
প্রতিহত করেন, জাহেল অজ্ঞ লোকদের
অপব্যাখ্যাকে রোধ করেন।  মিথ্যুক, অজ্ঞ,
নাস্তিকরা হাদিস ও সুন্নাহ্ সম্পর্কে যে সব
অপবাদ দেন, তা দূর করেন। কারণ, আল্লাহ
তা‘আলা হাদিসকে কুরআনে করীমের ব্যাখ্যা
হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, কুরআনের যে সব
বিধান সংক্ষেপে বর্ণিত তার ব্যাখ্যা ও
বিস্তারিত আলোচনা হাদিসই তুলে ধরেছে এবং
কুরআনে যে সব আহকাম বর্ণিত হয় নি সেগুলো
হাদিসেই আলোচনা করা হয়। যেমন, কোনো
মহিলার দুধ পান সংক্রান্ত বিধি-বিধান,
মিরাসের অনেক বিধান, স্ত্রীর সাথে তার ফুফু
অথবা খালাকে একত্রে বিবাহ করা নিষিদ্ধ
হওয়া সহ বিভিন্ন বিধানগুলোর আলোচনা শুধু
হাদিসেই এসেছে। কুরআনে এ সব বিধান নিয়ে
কোনো আলোচনা করা হয়নি।
সুন্নতের যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা
ওয়াজিব হওয়া বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম,
তাবে‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের বর্ণনা:
o     রাসূলের সুন্নাত (তথা তাঁর কথা, কাজ,
অনুমোদন, শারীরিক ও গুণগত বৈশিষ্ট্য) এর
যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা ফরয
হওয়ার বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈন ও
তাদের পরবর্তীদের কিছু কথা এখানে তুলে ধরা
হচ্ছে।
·      যেমন, বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরাইরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
মৃত্যুর পর আরবের কিছু লোক মুরতাদ হল। আবু
বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহসিকতার
সাথে বললেন, আল্লাহর কসম যে ব্যক্তি সালাত
ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে, আমি তার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তার কথা শোনে ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনি তাদের
বিরুদ্ধে কীভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন, অথচ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏«ُﺕْﺮِﻣﺃ َﻞِﺗﺎَﻗﺃ ْﻥَﺃ َﺱﺎَّﻨﻟﺍ ﺍﻮُﻟﻮُﻘَﻳ ﻰﺘَﺣ ﻻ
َﻪﻟِﺇ ﻻِﺇ ﻪﻠﻟﺍ ﺎﻫﻮﻟﺎَﻗ ﺍﺫِﺈَﻓ ﺍﻮُﻤَﺼَﻋ ﻲﻨِﻣ
ﻢُﻫَﺀﺎَﻣِﺩ ﻢُﻬَﻟﺍَﻮﻣَﺃَﻭ ﻻِﺇ ﺎﻬَّﻘﺤﺑ ‏»
“আমাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহ
ব্যতীত কোনো হক ইলাহ নেই’ একথার ঘোষণা
না দেওয়া পর্যন্ত মানুষের সাথে যুদ্ধ করার
নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যখন সে তা বলবে, তখন
তার জান মাল নিরাপদ হয়ে যাবে, তবে এ
কালেমার হক বা দাবী অনুযায়ী হলে সেটা
ভিন্ন কথা”।
তার কথা শোনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু
বললেন, ‘যাকাত কি আল্লাহর হক নয়? আল্লাহর
কসম যদি একটি রশিও যা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যাকাত হিসেবে
তারা প্রদান করত তা দিতে যদি কেউ অস্বীকার
করে, আমি তা দিতে অস্বীকার করার কারণে তার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।’ তারপর ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি বুঝতে পারলাম,
আল্লাহ তা‘আলা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর
অন্তরকে যুদ্ধের জন্য খুলে দিয়েছেন এবং
এটিই হক। সাহাবীগণ তাঁর আহ্বানে সাড়া
দিলেন, তারা মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
করেন এবং তাদের পুনরায় ইসলামের দিকে
ফিরিয়ে আনেন। আর যারা মুরতাদ হওয়ার পর
সেটার উপর অবিচল থেকেছিল তাদের তারা
হত্যা করেছিলেন। এ ঘটনার মধ্যে সুন্নতের
যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা জরুরি
হওয়ার সু-স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
·      একজন দাদী আবু বকরের নিকট এসে সে তার
উত্তরাধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, আবু
বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,
তোমার জন্য আল্লাহর কিতাবে কোনো অংশ
বর্ণিত হয় নি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার জন্য কোনো অংশ
বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তবে আমি
মানুষকে জিজ্ঞাসা করব, তারপর তিনি
সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেন, তখন একজন
সাহাবী সাক্ষ্য দিলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাদিকে ‘সুদুস’ তথা ছয়
ভাগের একভাগ দিয়েছেন। তারপর তিনি
দাদির জন্য ‘সুদুস’ বা ছয় ভাগের একভাগের
ফায়সালা প্রদান করেন।
·      অনুরূপভাবে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার
আমেল তথা কর্মকর্তাদের মানুষের মাঝে বিচার
ফায়সালার ক্ষেত্রে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে
তারা যেন প্রথমে আল্লাহর কিতাব থেকে
ফয়সালা গ্রহণ করে, যদি আল্লাহর কিতাবে
ফায়সালা খুঁজে না পায়, তারা যেন আল্লাহর
রাসূলের সূন্নাহ্ দ্বারা ফায়সালা করে।
·      তদ্রূপ যখন গর্ভের সন্তানকে নষ্ট তথা
কারো আঘাতজনিত কারণে গর্ভপাত হয়ে মৃত
অবস্থায় প্রসব হয়ে গেলে সে সন্তানের
রক্তপণের বিধান সম্পর্কে ‘উমার
রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট কোনো সমাধান না
থাকাতে তিনি সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করেন।
তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু ও মুগীরা ইবনে শু‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু
দাড়িয়ে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে একটি দাস বা দাসী
স্বাধীন করে দেওয়ার ফায়সালা করেছিলেন।
এটা শোনার উপর ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু
সেটা অনুসারে ফয়সালা দিয়েছিলেন।
·      স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর ঘরে মহিলার
ইদ্দত পালন করার বিষয় ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু
আনহু এর অজানা থাকাতে ফায়সালা দেয়া তার
নিকট কঠিন মনে হল, তখন ফুরাই‘আহ্ বিনতে
মালেক ইবন সিনান রাদিয়াল্লাহু আনহা, যিনি
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বোন
ছিলেন, তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বামীর মৃত্যুর পর
তাকে স্বামীর ঘরে ইদ্দত পালন করার নির্দেশ
দেন। তারপর ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু
মহিলার কথা অনুযায়ী বিষয়টির ফায়সালা
করেন।
·      অনুরূপভাবে ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু
তার কর্মকর্তা ওলিদ ইবন ‘উকবার উপর মদ
পান করার অপরাধের হদ কায়েম করার ফায়সালা
সুন্নাহ্ দ্বারাই করেছিলেন।
·      আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাদিয়াল্লাহু
আনহু এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌঁছল যে,
‘উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হজ্জে তামাত্তু
করতে নিষেধ করেন তখন আলী রাদিয়াল্লাহু
আনহু হজ ও ওমরা উভয়েরই এহরাম বাঁধেন এবং
বলেন, ‘আল্লাহর রাসূলের সূন্নাহকে আমি কারো
কথায় ছাড়বো না।’
·      এক লোক আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু
আনহুর কথা দ্বারা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাসের
নিকট তামাত্তু হজের উপর ইফরাদ হজের
বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার দলীল পেশ করলে
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘আমি
আশংকা করছি তোমাদের উপর আসমান থেকে
পাথরের বৃষ্টির মত বিপর্যয় নেমে আসার।
আমি তোমাদেরকে বলি আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আর
তোমরা বল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন।’ যদি সুন্নতের
বিপরীতে আবু বকর ও ওমরের কথা দিয়ে দলীল
পেশ করলে, তার উপর শাস্তির আশংকা করা হয়,
তাহলে যারা আবু বকর ও ওমর থেকে নীচের লোক
তাদের কথায় অথবা নিজের মতামত ও
ইজতিহাদের ভিত্তিতে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সূন্নাহকে
যারা ছেড়ে দেন তাদের পরিণতি কি হতে পারে?!
·      যখন কিছু লোক আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের
নিকট সুন্নাহ্ বিষয়ে বিতর্ক করল, তখন
আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বললেন,
আমরা কী ওমরের আনুগত্য করার জন্য
নির্দেশিত নাকি রাসূলের সুন্নার আনুগত্য
করার প্রতি নির্দেশিত?
·      ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা
যখন হাদিস আলোচনা করছিলেন, তখন এক
ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি আমাদেরকে আল্লাহর
কিতাব থেকে বর্ণনা করুন। এ কথা শোনে তিনি
খুব ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বলেন, সুন্নাহ্ আল্লাহর
কিতাবেরই ব্যাখ্যা। যদি সুন্নাহ না হত,
তাহলে আমরা জোহরের সালাত চার রাকাত,
মাগরিবের সালাত তিন রাকাত, ফজরের সালাত
দুই রাকাত জানতে পারতাম না। যাকাতের বিধান
বিস্তারিত জানতে পারতাম না এবং শরিয়তের
অন্যান্য বিষয়গুলো জানার সুযোগ হত না।
বস্তুত রাসূলের সুন্নাহর যথাযথ সম্মান, তার
উপর আমল ফরয হওয়া ও তার বিরোধিতা করার
পরিণতি বিষয়ে সাহাবীগণ থেকে অনেক বর্ণনা
ও ভাষ্য এসেছে। যেমন,
·      আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু
যখন এ হাদিস বর্ণনা করেন,
‏« ﺍﻮُﻌَﻨْﻤَﺗ ﻻ َﺀﺎَﻣِﺇ ِﻪﻠﻟﺍ ِﻪﻠﻟﺍ َﺪِﺟﺎَﺴَﻣ ‏»
“তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে (মহিলাদেরকে)
মসজিদে গমনে বাধা দিও না”[28] তখন তার
কোনো এক ছেলে বলে বসল, ‘আল্লাহর কসম,
আমরা তাদের মসজিদে গমনে বাধা দিব।’ তার
কথা শোনে আব্দুল্লাহ খুব ক্ষুব্ধ হলেন এবং তাকে
কঠিন বকা দিলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে
বলছি আল্লাহর রাসূল বলেছেন আর তুমি বলছ,
‘আমরা অবশ্যই তাদের বাধা দেব।’ (তোমার এ
কথা বলা কখনই ঠিক হয়নি।)
·      রাসূলের সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফফাল
রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কোনো এক আত্মীয়কে
দেখলেন যে সে পাথরকুচি নিক্ষেপ করছে তিনি
তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, নিশ্চয়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
‏« ﻑﺬﺨﻟﺍ ﻰﻬﻧ ﻝﺎﻗﻭ ﻪﻧٍﺇ ﻻ ﺪﻴﺼﻳ ﺍًﺪﻴﺻ ﻻﻭ
ﺄﻜﻨﻳ ﻪﻨﻜﻟﻭ ﺍﻭﺪﻋ ﺮﺴﻜﻳ ﻦﺴﻟﺍ ﺄﻘﻔﻳﻭ
ﻦﻴﻌﻟﺍ ‏»
“পাথরকুচি নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন
এবং তিনি বলেছেন, ‘এর দ্বারা কোনো শিকারী
শিকার করা যায় না এবং কোনো দুশমনকে আঘাত
করা যায় না বরং এতে মানুষের দাত ভাঙ্গা হয়
এবং চোখ নষ্ট করা হয়”[29] তারপর তিনি
দেখতে পেলেন যে তার সে আত্মীয় আবারও
পাথরকুচি নিক্ষেপ করছে, তখন তিনি বললেন,
‘আমি তোমার সাথে কখনোই কথা বলব না। আমি
তোমাকে খবর দিলাম আল্লাহর রাসূল পাথর
নিক্ষেপ করেছেন তারপরও তুমি পাথর
নিক্ষেপ করলে?
·      ইমাম বাইহাকী রহ. আইয়ুব সাখতিয়ানি
রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন
তুমি কোনো ব্যক্তিকে সুন্নাহ্ থেকে কোনো
হাদীস শোনাও, তখন যদি সে বলে, তুমি এটা
রেখে আমাকে কুরআন থেকে শোনাও, তাহলে মনে
রাখবে যে নিঃসন্দেহ লোকটি গোমরাহ তথা
পথভ্রষ্ট।
·      ইমাম আওযা‘ঈ রহ. বলেন, সুন্নাহ্ হলো
আল্লাহর কিতাবের বিচারক অথবা সুন্নাহ্
আল্লাহর কিতাবের শর্তমুক্তভাবে বর্ণিত
বিধানসমূহের জন্য শর্ত আরোপকারী অথবা
সুন্নাহ এমন সব বিধান নিয়ে এসেছে যা
আল্লাহর কিতাবে নেই। যেমন, আল্লাহর বাণী-
َﻚۡﻴَﻟِﺇ ٓﺎَﻨۡﻟَﺰﻧَﺃَﻭ﴿ َﺮۡﻛِّﺬﻟﭐ ِﺱﺎَّﻨﻠِﻟ َﻦِّﻴَﺒُﺘِﻟ
ﺎَﻣ َﻝِّﺰُﻧ ۡﻢُﻬَّﻠَﻌَﻟَﻭ ۡﻢِﻬۡﻴَﻟِﺇ َﻥﻭُﺮَّﻜَﻔَﺘَﻳ
﴾٤٤ ‏[ :ﻞﺤﻨﻟﺍ ٤٤‏]
“আর আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি
কুরআন; যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে
দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে।
আর যাতে তারা চিন্তা করে।” [সূরা আন-নাহল:
৪৪]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
বাণী-
‏« ﻻَﺃ ُﺖﻴِﺗﻭﺃ ﻲﻧِﺇ ﻪَﻠﺜﻣﻭ َﺏﺎﺘِﻜﻟﺍ ُﻪَﻌَﻣ ‏»
মনে রাখবে, আমাকে কিতাব দেয়া হয়েছে, এবং
তার সাথে তার মত আরও দেয়া হয়েছে।[30] তা
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।
·      ইমাম বাইহাকী রহ. আমের আশ-শা‘বী থেকে
বর্ণনা করেন, তিনি কতক লোককে বলেন,ﺎﻤﻧِﺇ
ﻢﺘﻜﻠﻫ ﻲﻓ ﻦﻴﺣ ﻢﺘﻛﺮﺗ ﺭﺎﺛﻵﺍ ‘তোমরা
তো তখনই ধ্বংস হয়েছ যখন তোমরা ভাষ্য বা
নির্দেশনা ছেড়ে দিয়েছ’ এ কথা দ্বারা তাঁর
উদ্দেশ্য হচ্ছে যখন তোমরা সহীহ হাদিসসমূহ
ছেড়ে দিয়েছ তখনই তোমরা ধ্বংস হয়ে গেলে।
·      ইমাম বাইহাকী রহ. আওযায়ী রহ. থেকে
আরও বর্ণনা করেন, তিনি তার কতক সাথীকে
বলেন, যখন তোমাদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো হাদিস পৌঁছে,
তখন এর বিপরীত অন্য কোনো কথা বলা থেকে
তুমি সম্পূর্ণ বিরত থাক। কারণ, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর
পক্ষ থেকে মুবাল্লিগ বা প্রচারকারী ছিলেন।
[তার কথাই আল্লাহর কথা]
·      ইমাম বাইহাকী রহ. বিশিষ্ট ইমাম
সূফিয়ান ইবন সা‘ঈদ আস-সাওরী রহ. থেকে
বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, প্রকৃত ইলম হচ্ছে,
হাদিসের ইলম।
·      ইমাম মালেক রহ. রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দিক ইশারা
করে বলেন, একমাত্র এ কবরওয়ালা ছাড়া আমরা
সবাই বিতর্কিত। আমরা প্রত্যাখ্যানকারী ও
প্রত্যাখ্যাত। (অর্থাৎ এ কবরবাসী মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম নয়,
তার কোনো কথা বাদ দেওয়া যাবে না)
·      ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, যখন রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত
কোনো হাদিস সামনে আসে তখন তা মাথা ও
চোখের উপর।
·      ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেন, যখন আমি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ
হাদিস বর্ণনা করা সত্ত্বেও যদি সেটা গ্রহণ
না করি, তবে মনে রাখবে, আমি তোমাদের
সাক্ষ্য করে বলছি, আমার বিবেক নষ্ট হয়ে
গেছে।
·      তিনি আরও বলেন, আমি যখন কোনো কথা
বলি, আর হাদিস আমার কথার বিপক্ষে হয়,
তাহলে আমার কথাকে তোমরা দেয়ালের ওপর
নিক্ষেপ কর।
·      ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. তার কোনো
কোনো সাথীকে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমার
তাকলীদ করো না, মালেক রহ. ও শাফেয়ী রহ.
এরও তাকলীদ করো না, তোমরা আমরা যেখান
থেকে গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে গ্রহণ কর।
·      তিনি আরও বলেন, আমি সে সব লোকদের
বিষয়ে আশ্চর্য বোধ করি, যারা হাদিসের সনদ
সম্পর্কে জানে, হাদিসটি সহীহ কিনা তাও
জানে, তারপরও সুফিয়ানের নিকট যায় তার
মতামতের জন্য। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ِﺭَﺬۡﺤَﻴۡﻠَﻓ﴿ َﻥﻮُﻔِﻟﺎَﺨُﻳ ٓۦِﻩِﺮۡﻣَﺃ ۡﻦَﻋ
ﻥَﺃ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﺗ ٌﺔَﻨۡﺘِﻓ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﻳ ۡﻭَﺃ ٌﺏﺍَﺬَﻋ
ٌﻢﻴِﻟَﺃ ﴾٦٣ ‏[ : ﺭﻮﻨﻟﺍ ٦٣‏]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে,
তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা
যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে।”[31]
তিনি বলেন, তোমরা কি জান ফিতনা তথা
বিপর্যয় কি? ফিতনা হল, আল্লাহর সাথে
শির্ক করা, হতে পারে যখন কোনো ব্যক্তি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কোনো কথাকে প্রত্যাখ্যান করবে, তখন তার
অন্তরে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি বক্রতা ঢেলে
দেয়া হবে, তখন সে ধ্বংস হবে।
·      ইমাম বাইহাকী রহ. বিশিষ্ট তাবে‘ঈ
মুজাহিদ ইবন জাবার রহ. হতে বর্ণনা করেন,
আল্লাহ তা‘আলার বাণী-
ﻥِﺈَﻓ﴿ ۡﻢُﺘۡﻋَﺰَٰﻨَﺗ ﻲِﻓ ٖﺀۡﻲَﺷ ُﻩﻭُّﺩُﺮَﻓ ِﻪَّﻠﻟﭐ ﻰَﻟِﺇ
﴾ِﻝﻮُﺳَّﺮﻟﭐَﻭ ‏[ : ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ ٥٩‏]
“অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ
ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও রাসূলের
নিকট[32]” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,
আল্লাহর দিকে প্রত্যার্পণ করার অর্থ,
আল্লাহর কিতাবের দিক প্রত্যর্পণ করা আর
আল্লাহর রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করার
অর্থ, রাসূলের সুন্নতের দিক প্রত্যার্পণ করা।
·      ইমাম বাইহাকী রহ. যুহরী রহ. থেকে
বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের পূর্বের
আলেমগণ বলতেন, সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে
মুক্তি পাওয়া।
·      আল্লামা ইবনে কুদামাহ রহ. স্বীয়
‘রাওদাতুন নাযের’ গ্রন্থে উসুলুল আহকাম তথা
‘শরীয়তের বিধি-বিধানের মূল উৎস’ বর্ণনায়
যা লিখেছেন তার সরাসরি ভাষ্য হচ্ছে,
“দলীল-প্রমাণাদি গ্রহণের দ্বিতীয় মূল উৎস
হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা প্রামাণ্য হওয়ার
দলীল হচ্ছে, তার মু‘জিযাসমূহ; সেগুলোর তার
সত্যবাদিতার উপর প্রমাণ বহন করছে। আর
আল্লাহ তা‘আলা তার অনুসরণ-অনুকরণ করার
নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার আদেশের
বিরোধিতা করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক
করেছেন।’
·      হাফেয ইবনে কাসীর রহ. আল্লাহ তা‘আলার
বাণী-
َﻦﻳِﺬَّﻟﭐ ِﺭَﺬۡﺤَﻴۡﻠَﻓ﴿ َﻥﻮُﻔِﻟﺎَﺨُﻳ ٓۦِﻩِﺮۡﻣَﺃ ۡﻦَﻋ
ﻥَﺃ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﺗ ٌﺔَﻨۡﺘِﻓ ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﻳ ۡﻭَﺃ ٌﺏﺍَﺬَﻋ
ٌﻢﻴِﻟَﺃ ٦٣ ﴾ ‏[ ﺭﻮﻨﻟﺍ : ٦٣‏]
“অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে,
তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা
যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে”[33]-এর
তাফসীরে বলেন, এখানে ‘তার নির্দেশের’ বলে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
প্রদর্শিত পথ, তার অনুসৃত পদ্ধতি, তার
দেখানো নিয়ম, তার সুন্নাহ্ ও তার শরীয়ত
বুঝানো হয়েছে। সুতরাং সকল কথা ও কর্ম তার
কথা ও কর্মের সাথে পরিমাপ করা হবে, অতঃপর
যে কথা ও কর্ম তার কথার সাথে মিলবে তা
গ্রহণ করা হবে আর যে কথা ও কর্ম তার সাথে
মিলবে না তা যে বলেছে বা করেছে তার উপর
প্রত্যাখ্যান করা হবে, সে যেই হোক না কেন।
যেমন, বুখারি মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদিসের
কিতাবসমূহে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ْﻦَﻣ َﻞِﻤَﻋ ﺎًﻠَﻤَﻋ ِﻪﻴﻠَﻋ َﺲﻴﻟ ﺎﻧُﺮْﻣَﺃ َﻮُﻬَﻓ ّﺩَﺭ
‏»
“যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করে, যার উপর
আমার নির্দেশনা নাই তা প্রত্যাখ্যাত”।[34]
তাহলে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি
প্রকাশ্যে বা গোপনে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত দ্বীনের
বিরোধিতা করে, সে যেন ভয় করে এবং সতর্ক
হয় যে ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﺗ ﻥَﺃ ٌﺔَﻨۡﺘِﻓ তাকে ফিতনা পেয়ে
বসবে অর্থাৎ কুফর, নেফাক বা বিদআত তার
অন্তরে ঢেলে দেয়া হবে অথবা ۡﻢُﻬَﺒﻴِﺼُﻳ ۡﻭَﺃ
ٌﺏﺍَﺬَﻋ ٌﻢﻴِﻟَﺃ কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে;
সেটা হতে পারে দুনিয়াতেই যেমন, হত্যা অথবা
শাস্তি প্রয়োগ অথবা বন্দীত্ব ইত্যাদি
অবমাননাকর জীবন, যেমনটি ইমাম আহমদ রহ.
বর্ণিত হাদীসে এসেছে, যা মুহাদ্দিস আবদুর
রাযযাক বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তাকে
মা‘মার হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি হামাম
ইবন মুনাব্বিহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন, এ হাদিসটি আমাদেরকে আবু হুরাইরা
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি
বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
‏«ﻲﻠَﺜﻣ ْﻢﻜُﻠَﺜﻣَﻭ ِﻞَﺜَﻤﻛ َﺪَﻗْﻮَﺘْﺳﺍ ٍﻞﺟﺭ ﺍًﺭﺎﻧ
ﺎّﻤﻠَﻓ ْﺕَﺀﺎَﺿَﺃ ﺎَﻬَﻟْﻮَﺣ ﺎَﻣ َﻞَﻌَﺟ ُﺵﺍﺮﻔﻟﺍ
ُّﺏﺍﻭّﺪﻟﺍ ِﻩِﺬَﻫﻭ ﻲِﺋﻼﻟﺍ َﻦْﻌَﻘَﻳ ﻲﻓ ﺭﺎَّﻨﻟﺍ
َﻦْﻌَﻘَﻳ ﺎّﻬﻴِﻓ ُﻪَﻨْﺒِﻠْﻐَﻳَﻭ ّﻦُﻫُﺰُﺠْﺤَﻳ َﻞَﻌَﺟَﻭ
َﻦْﻤِﺤﺘْﻘَﻴَﻓ ﺎﻬَﻴِﻓ َﻝﺎَﻗ ﻚِﻟَﺬَﻓ ْﻢﻜَﻠَﺜَﻣَﻭ ﻲﻠَﺜَﻣ
ﺎﻧَﺃ ُﺬُﺧﺁ ﻢُﻛِﺰْﺠَﺤﺑ ﺭﺎَّﻨﻟﺍ ﻦَﻋ ّﻢُﻠَﻫ ﻦَﻋ
ِﺭﺎﻨﻟﺍ ﻲﻧﻮُﺒِﻠْﻐَﺘَﻓ ﺎَﻬﻴِﻓ َﻥﻮُﻤِﺤَﺘْﻘﺗَﻭ ‏»
“আমার দৃষ্টান্ত ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক
ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বালালো, তারপর যখন
আগুনের আশ-পাশ আলোকিত হল, তখন কীট-
পতঙ্গ, পোকা-মাকড় যেগুলো আগুনের মধ্যে ঝাপ
দেয়, তাতে তারা পড়তে আরম্ভ করল। আর
লোকটি তাদের বাধা দিল, কিন্তু তারা তাকে
পরাভূত করে তাতেই ঝাঁপ দিচ্ছিল। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
আমার দৃষ্টান্ত এ লোকটির মতই; আমি
তোমাদের কোমর ধরে তোমাদের আগুন থেকে দূরে
সরাচ্ছি, বলতে থাকছি, আগুন! আগুন! তা থেকে
দূরে থাক, কিন্তু তোমরা আমাকে পরাভূত করে
তাতেই ঝাঁপ দিচ্ছ।[35] বুখারি ও মুসলিম
হাদিসটিকে মুহাদ্দিস আব্দুর রাযযাক কর্তৃক
বর্ণিত হাদিস হিসেবে সংকলন করেন।’
·      আল্লামা সুয়ুতী রহ. তার ‘মিফতাহুল
জান্নাহ ফিল ইহতিজাজ বিস্সূন্নাহ’ কিতাবে
লেখেন-
তোমরা জেনে রাখ! -আল্লাহ তোমাদের প্রতি
দয়া করুন- যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস -চাই তা তার
কথা হোক বা কর্ম হোক- দলীল হওয়াকে
অস্বীকার করল, সে কুফরি করল, সে ইসলামের
গণ্ডি থেকে বের হয়ে গেল। তার হাশর ইয়াহূদী
ও নাসারাদের সাথে হবে অথবা আল্লাহর
ইচ্ছানুযায়ী কোনো কাফের দলের সাথে হবে।’
সুন্নতের গুরুত্ব, সুন্নতের উপর আমল করা
বাধ্যতামূলক হওয়া এবং সুন্নতের বিরোধিতা
করা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করার বিষয়ে
সাহাবী, তাবে‘ঈ ও তাদের পরবর্তী আহলে ইলম
থেকে অসংখ্য বাণী বর্ণিত রয়েছে। আশা করি,
আমরা এখানে যে সব আয়াত, হাদিস ও বাণী
উল্লেখ করেছি, তা হকের অনুসন্ধানকারীর
জন্য যথেষ্ট। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের
জন্য এবং সমস্ত মুসলিমদের জন্য কামনা করি
এমন সব আমলের তাওফীক যা তাঁকে খুশি করে
আর নিরাপত্তা কামনা করি তার বিক্ষুব্ধ হওয়া
কারণসমূহ হতে। আর আল্লাহ কাছে আমাদের
কামনা তিনি যেন আমাদের সবাইকে সঠিক
পথের হিদায়াত দেন। নিশ্চয় তিনি
শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।
ﻰﻠﺻﻭ ﻪﻠﻟﺍ ﻢﻠﺳﻭ ﻩﺪﺒﻋ ﻰﻠﻋ ﻪﻟﻮﺳﺭﻭ
ﺎﻨﻴﺒﻧ ﻰﻠﻋﻭ ﺪﻤﺤﻣ ﻪﻟﺁ ﻪﺑﺎﺤﺻﺃﻭ
ﻪﻋﺎﺒﺗﺃﻭ .ﻥﺎﺴﺣﺈﺑ
আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ .
সূচীপত্র
ভূমিকা
আহকাম সাব্যস্ত হওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য মূল
উৎসগুলোর আলোচনা
প্রথম মূল উৎস: আল্লাহর কিতাব
দ্বিতীয় মূল উৎস: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।
এ বিষয়ে রাসূল, সাহাবী ও তাবে‘ঈদের থেকে
বর্ণিত ভাষ্যসমূহ:
এ বিষয়টির উপর কুরআন থেকে প্রমাণ
এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে প্রমাণ
সুন্নতের যথাযথ সম্মান ও তার উপর আমল করা
ফরয হওয়ার ব্যাপারে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম,
তাবে‘ঈন ও তাদের পরবর্তীদের বর্ণনা
[1] সূরা আ‘রাফ, আয়াত: ৩
[2] সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৫৫
[3] সূরা মায়েদা, আয়াত: ১৫, ১৬
[4] সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪১, ৪২
[5] সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৯
[6] সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৫২
[7] মুসলিম, হজ অধ্যায়; হাদিস: ১২১৮,
আবুদাউদ, মানাসেক অধ্যায়, হাদিস: ১৯০৫, ইবন
মাজাহ, মানাসেক অধ্যায়, হাদিস: ৩০৭৪
[8] মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, হাদিস:
২৪০৮, আহমদ, হাদিস: ৩৬৭/৪, দারেমী,
ফাযায়েলে কুরআন অধ্যায়, ৩৩১৬
[9] মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, হাদিস:
২৪০৮, আহমদ, হাদিস: ৩৬৭/৪, দারেমী
ফাযায়েলে কুরআন অধ্যায়, হাদিস: ৩৩১৬
[10]মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা অধ্যায়, হাদিস:
২৪০৮, আহমদ, হাদিস: ৩৬৭/৪, দারেমী
ফাযায়েলে কুরআন অধ্যায়, হাদিস: ৩৩১৬
[11] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২
[12] সূরা নিসা, আয়াত: ৫৯
[13] সূরা নিসা, আয়াত: ৮০
[14] সূরা নাহল আয়াত: ৪৪
[15] সূরা নাহল, আয়াত: ৬৪
[16] সূরা নূর, আয়াত: ৫৪
[17] সূরা নূর আয়াত: ৫৪
[18] সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৭
[19] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩
[20] সূরা হাশর, আয়াত: ৭
[21] বুখারি, জিহাদ অধ্যায়, হাদিস: ২৭৯৭,
মুসলিম, ইমারাহ অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩৫, আন-
নাসায়ী, ৫৫১০, ইবন মাজাহ্, জিহাদ অধ্যায়,
হাদিস: ২৮৫৯, আহমদ, ৩৮৭/২
[22] বুখারী, আস-সহীহ: হাদিস নং- ৬/২৬৫৫/
৬৮৫১, মুসলিম, হাদিস: ১৮৩৫, নাসায়ী,
৫৫১০, ইবন মাজাহ্, মুকাদ্দিমা, ৩, আহমাদ,
৩৬১/২
[23] মুসনাদ আহমাদ ৪/১৩০, তিরমিযী, ইলম
অধ্যায়; হাদিস: ২৬৬৪, আবু দাউদ, সূন্নাহ
অধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৬, ইবন মাজাহ, ১২।
[24] এ জাতীয় বসার মধ্যে না মানার অহঙ্কার
ফুটে উঠবে। সে অহঙ্কারী হওয়ার কারণে
রাসূলের হাদীসকে মানতে চাইবে না। [সম্পাদক]
[25] তিরমিযী, ইলম অধ্যায়; হাদিস: ২৬৬৩,
আবু দাউদ সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৫, ইবন
মাজাহ, ১৩, আহমদ: ৮/৬
[26] তিরমিযী, ইলম অধ্যায়; হাদিস: ২৬৬৪,
আবু দাউদ, সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৪, ইবন
মাজাহ, ১২, আহমদ: ১৩২/৪, দারেমী ৫৮৬
[27] বুখারি, হজ অধ্যায়, হাদিস: ১৬৫৪,
মুসলিম, ১৯৭৯, ইবন মাজাহ, হাদিস: ২৩৩,
আহমদ, হাদিস: ৩৭/৫, দারেমী, হাদিস: ১৯১৬
[28] বুখারি, জুম‘আ অধ্যায়, হাদিস: ৮৫৮,
মুসলিম, সালাত অধ্যায়, হাদিস: ৪৪২,
তিরমিযী, জুম‘আ অধ্যায়, হাদিস: ৫৭০,
নাসায়ী, মাসাজেদ অধ্যায়, ৭০৬, আবু দাউদ,
সালাত অধ্যায়, হাদিস: ৫৬৮, ইবনে মাজাহ,
হাদিস: ১৬, আহমদ: ১৬/২, দারেমী, ৪৪২।
[29] বুখারি, আদব অধ্যায় হাদিস: ৫৮৬৬,
মুসলিম, শিকার ও জবেহ অধ্যায় হাদিস:
১৯৫৪, নাসায়ী কাসামাহ অধ্যায়, হাদিস:
৪৮১৫, ইবনে মাজাহ, শিকার অধ্যায়, ৩২২৭,
আহমদ, হাদিস ৫৬/৫, দারেমী, মুকাদ্দিমা,
হাদিস: ৪৪০
[30] তিরমিযী, ইলম অধ্যায়, হাদিস ২৬৬৪,
আবুদ দাউদ, সূন্নাহ আধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৪,
ইবন মাজাহ, মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১২।
[31] সূরা নূর, আয়াত: ৬৩
[32] সূরা আন-নিসা: ৫৯
[33] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩।
[34] বুখারি সুলাহ অধ্যায়, হাদিস: ২৫৫০,
মুসলিম বিচার ফায়সালাহ অধ্যায়, হাদিস:
১৭১৮, আবু দাউদ সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস,
৪৬০৬, ইবন মাজাহ; মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১৪,
আহমদ, হাদিস: ২৫৬/৬
[35] বুখারি, রিকাক অধ্যায়, হাদিস: ৬১১৮,
মুসলিম, ফাযায়েল অধ্যায়, হাদিস: ২২৪৪,
তিরমিযী, আমসাল অধ্যায়, হাদিস: ২৮৭৪,
আহমদ, হাদিস: ৩১২/২
_____________________________________________
____________________________________
লেখক: আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায
রহ.
অনুবাদক: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলামহাউজ

আক্বীদার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

লেখকঃ মুযাফফর বিন মুহসিন
বিশ্বাস বা দর্শন মানবজীবনের এমন একটি
বিষয় যা তার জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে
দেয়। এটা এমন এক ভিত্তি যাকে অবলম্বন
করেই মানুষ তার সমগ্র জীবনধারা পরিচালনা
করে। এই যে মৌলিক জীবনদর্শনকে কেন্দ্র
করে দুনিয়ার বুকে মানুষ আবর্তিত হচ্ছে, যে
আদর্শ ও বিশ্বাসকে লালন করে তার সমগ্র
জীবন পরিচালিত হচ্ছে তাকে ইসলামী
পরিভাষায় ‘আক্বীদা’ শব্দ দ্বারা সংজ্ঞায়িত
করা হয়। কোন অবকাঠামো যেমন ভিত্তি ছাড়া
অকল্পনীয়, তেমনভাবে একজন মুসলিমের জীবনে
আক্বীদা ও বিশ্বাসের দর্শন এমনই একটি
অপরিহার্য বিষয় যা ব্যতীত সে নিজেকে
মুসলিম হিসাবে সম্বোধিত হওয়ার অধিকার ও
দাবী হারিয়ে ফেলে। এটা এমন এক অতুলনীয়
শক্তির আঁধার যা একজন মুসলমানকে তার
আদর্শের প্রতি শতভাগ আস্থাবান করে তুলে এবং
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সেই বিশ্বাসের
প্রতিফলন ঘটাতে বিরামহীনভাবে সচেষ্ট
রাখে। অপরপক্ষে মানবজগতের যাবতীয়
পথভ্রষ্টতার মূলে রয়েছে এই মৌলিক আক্বীদা
থেকে বিচ্যুত হওয়া। এজন্য একজন মুসলমানের
জন্য আক্বীদা-বিশ্বাসের ব্যাপারে সুস্পষ্ট
জ্ঞান রাখা এবং সে বিশ্বাসের যথার্থতা
নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা
বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা ব্যতীত কোন ব্যক্তি
প্রকৃত অর্থে মুসলিম হতে পারে না। প্রতিটি
কথা ও কর্ম যদি বিশুদ্ধ আক্বীদা ও বিশ্বাস
থেকে নির্গত না হয় তবে তা আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ বলেন,
“যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয়ে অবিশ্বাস
রাখে তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে
সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে” [ সূরা মায়েদা – ৫]
তিনি আরো বলেন,
“(হে নবী!) তোমাকে এবং এবং তোমার
পূর্বসূরিদের আমি প্রত্যাদেশ করেছি যে, যদি
তুমি আমার শরীক স্থাপন কর তবে তোমার
যাবতীয় শ্রম বিফলে যাবে এবং তুমি
ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে” [ সূরা যুমার
৬৫]
মানুষ যুগে যুগে পথভ্রষ্ট হয়েছে মূলতঃ
আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি ঘটার কারণে।
এজন্য বিষয়টি সূক্ষ্মতা ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব
সহকারে জানা অপরিহার্য। নিম্নে ইসলামী
আক্বীদার পরিচিতি ও মানব জীবনে বিশুদ্ধ
আক্বীদা পোষণের গুরুত্ব আলোচনা করা হল।
আক্বীদার সংজ্ঞা :
শাব্দিক অর্থ : আক্বীদা শব্দটির আভিধানিক
অর্থ হল সম্পর্ক স্থাপন করা বা শক্তভাবে
আকড়ে ধরা, অথবা কোন কিছুকে সাব্যস্ত করা বা
শক্তিশালী হওয়া। অতএব মানুষ যার সাথে
নিজের অন্তরের সুদৃঢ় যোগাযোগ স্থাপন করে
তাকেই আক্বীদা বলা যায়।
পারিভাষিক অর্থ : সাধারণভাবে সেই সুদৃঢ়
বিশ্বাস ও অকাট্য কর্মধারাকে আক্বীদা বলা
হয় যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী ব্যক্তির
মনে সামান্যতম সন্দেহের অবকাশ থাকে না। আর
ইসলামী আক্বীদা বলতে বুঝায়- আসমান-যমীন
ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর যিনি
সৃষ্টিকর্তা সেই মহান প্রভুর প্রতি
সুনিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করা, তাঁর
উলূহিয়্যাত , রুবূবিয়্যাত ও গুণবাচক নামসমূহকে
দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। তাঁর ফেরেশতামন্ডলী,
নবী-রাসূলগণ, তাঁদের উপর নাযিলকৃত
কিতাবসমূহ, তাক্বদীরের ভাল-মন্দ এবং বিশুদ্ধ
দলীল দ্বারা প্রমাণিত দ্বীনের মৌলিক
বিষয়সমূহ ও অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কিত
সংবাদসমূহ ইত্যাদি যে সব বিষয়াদির উপর
সালাফে ছালেহীন ঐক্যমত পোষণ করেছেন তার
প্রতি সুনিশ্চিত বিশ্বাস রাখা। আল্লাহর
নাযিলকৃত যাবতীয় আহকাম-নির্দেশনার প্রতি
নিঃশর্ত আনুগত্য প্রদর্শন এবং রাসূল (ছা:)-
এর প্রচারিত শরী‘আতের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য
ও অনুসরণ নিশ্চিত করা ইসলামী আক্বীদার
অন্তর্ভুক্ত (ড. নাছের বিন আব্দুল করীম আল-
আক্বল, মাবাহিসুন ফি আক্বীদায়ে আহলিস
সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, পৃঃ ৩)
আক্বীদা এবং শরী‘আত দু’টি পৃথক বিষয়।
কেননা শরী‘আত হল দ্বীনের কর্মগত রূপ এবং
আক্বীদা হলো দ্বীনের জ্ঞানগত রূপ যার প্রতি
একজন মুসলমানের আন্তরিক বিশ্বাস রাখা
অপরিহার্য।
আক্বীদা শব্দটির বিভিন্ন ব্যবহার :
আক্বীদা শব্দটি ইসলামী পরিভাষায় আরো
কয়েকটি শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। যেমন-
তাওহীদ, সুন্নাত, উছূলুদ্দীন, ফিকহুল আকবার,
শরী‘আত, ঈমান ইত্যাদি। যদিও আক্বীদা
শব্দটি এগুলোর তুলনায় সামগ্রিক একটি
শব্দ। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত ব্যতীত
অন্যান্য ফেরকা এক্ষেত্রে আরো কয়েকটি
পরিভাষা ব্যবহার করে। যেমন-
যুক্তিবিদ্যা (ইলমুল কালাম) :
মু‘তাযিলা, আশ‘আরিয়া এবং তাদের অনুসারীগণ
এই পরিভাষাটি ব্যবহার করে। এটা সালাফে
ছালেহীনের নীতি বিরোধী অনর্থক কর্ম,
যার সাথে শরী‘আতের সম্পর্ক নেই।
দর্শন :
দার্শনিকগণ এই পরিভাষা ব্যবহার করে। তবে
আক্বীদাকে দর্শন শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা চলে
না। কেননা দর্শনের ভিত্তি হল অনুমান,
বুদ্ধিবৃত্তিক কল্পনা ও অজ্ঞাত বিষয়াদি
সম্পর্কে কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গির
সমষ্টি, যার সাথে ইসলামী আক্বীদার সম্পর্ক
নেই।
তাসাওউফ :
কোন কোন দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ ও
ছূফীবাদীরা আক্বীদাকে ছুফিতত্ত্ব হিসাবে
ব্যাখ্যা দেয়। এটাও অগ্রহণযোগ্য। কেননা
সুফিতত্ত্বও নিরর্থক কল্পনা ও কুসংস্কারের
উপর নির্ভরশীল। এর অতীন্দ্রিয় ও
কাল্পনিক ভাবমালার সাথে শরী‘আতের কোন
সম্পর্ক নেই।
ধর্মতত্ত্ব (Theology):
এটাও দার্শনিক, প্রাচ্যবিদ, যুক্তিবাদীদের
আবিস্কৃত শব্দ। এর দ্বারাও ইসলামী আক্বীদার
ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কেননা এর উদ্দেশ্য
কেবল স্রষ্টা সম্পর্কে দার্শনিক, যুক্তিবাদী
এবং নাস্তিকদের ধারণাসমূহ ব্যাখ্যা করা।
অধিবিদ্যা :
দার্শনিক ও পশ্চিমা লেখকরা একে
Metaphisycs নামে অভিহিত করে। এটি
অনেকটা ধর্মতত্ত্বের কাছাকাছি পরিভাষা।
সাধারণভাবে ধর্ম সম্পর্কিত বা ধর্মহীন
বিভিন্ন বাতিল চিন্তাধারাকেও আক্বীদা বলা
যায়। যেমন – ইহুদীবাদ, বৌদ্ধবাদ, হিন্দুবাদ,
খৃষ্টবাদ, নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদি।
বিশুদ্ধ আক্বীদা বনাম ভ্রষ্ট আক্বীদা :
বিশুদ্ধ আক্বীদা বলতে বুঝান হয় ইসলামী
আক্বীদা তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের
আক্বীদাকে যা আল্লাহ রাববুল আলামীন
নির্দেশিত ও রাসূল (ছা:) কর্তৃক প্রচারিত
অর্থাৎ যা পূর্ণাঙ্গভাবে কুরআন ও ছহীহ
হাদীছ দ্বারা সমর্থিত এবং সালাফে
ছালেহীনের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত। এতদ্ভিন্ন
পৃথিবীর যাবতীয় আক্বীদা ও বিশ্বাস
মিশ্রিত, কাল্পনিক, কুসংস্কারযুক্ত এবং
মিথ্যার উপর ভিত্তিশীল। যা নিশ্চিতভাবে
মানবজাতির গন্তব্যপথকে ভ্রষ্টতার দিকে
নিয়ে যায়।
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত :
আক্বীদার মৌলিক বিষয়বস্ত্ত ছয়টি। যথা:-
একঃ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস : আল্লাহ রাববুল
আলামীন নিজেকে যেভাবে মানবজগতের কাছে
উপস্থাপন করেছেন ঠিক সেভাবে তা
সত্তাগতভাবে, গুণগতভাবে এবং কর্মগতভাবে
সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করা।
দুইঃ ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস : তাদের
প্রত্যেকের ব্যাপারে কুরআন ও ছহীহ হাদীছে
যেরূপ বর্ণনা এসেছে ঠিক সেভাবে বিশ্বাস
করা।
তিনঃ রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস : তাঁদের
নবুওয়াত ও তাদের চারিত্রিক পবিত্রতার
উপর নির্দ্বিধায় বিশ্বাস স্থাপন করা।
চারঃ আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস :
মূল চারটি কিতাব তথা যাবুর, ইঞ্জীল, তাওরাত
ও কুরআনসহ নাযিলকৃত অন্যান্য ছোট ছোট
কিতাব ও ছহীফাসমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা।
পাঁচঃ শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস : অর্থাৎ
মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে যাবতীয়
সংবাদসমূহ যা আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর
রাসূলের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে
দিয়েছেন, তার প্রতি বিশ্বাস রাখা।
ছয়ঃ তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস : অর্থাৎ যা
কিছু দুনিয়ার বুকে ঘটছে তা আল্লাহ রাববুল
আলামীনের জ্ঞাতসারেই ঘটছে এবং তিনি
সৃষ্টিজগত তৈরীর বহু পূর্বেই ভবিষ্যৎ
ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন- এই
বিশ্বাস জাগ্রত জ্ঞান সহকারে পোষণ করা।
আলোচিত ছয়টি বিষয়ের প্রতি পূর্ণাঙ্গভাবে
বিশ্বাস স্থাপন করা একজন মুসলমানের জন্য
অপরিহার্য। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ
হাদীছের বহু দলীল দ্বারা এগুলো প্রমাণিত
[বাকারা ১৭৭, ২৮৫; নিসা ১৩৬; ক্বামার ৪৯;
ফুরকান ২; মিশকাত হা/২ ‘ঈমান অধ্যায়’]
আক্বীদা ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য :
“আক্বীদা ” শব্দটি প্রায়ই ঈমান ও তাওহীদের
সাথে গুলিয়ে যায়। অস্বচ্ছ ধারণার
ফলশ্রুতিতে অনেকেই বলে ফেলেন, আক্বীদা আবার
কি? আক্বীদা বিশুদ্ধ করারই বা প্রয়োজন কেন?
ঈমান থাকলেই যথেষ্ট। ফলশ্রুতিতে দ্বীন
সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে এক বড় ধরনের
অপূর্ণতা সৃষ্টি হয়, যা প্রায়ই মানুষকে
পথভ্রষ্টতার দিকে ঠেলে দেয়। এজন্য ঈমান ও
আক্বীদার মধ্যকার সম্পর্ক ও পার্থক্য স্পষ্ট
হওয়া প্রয়োজন। নিম্নে বিষয়টি উপস্থাপন
করা হল:-
প্রথমত : ঈমান সমগ্র দ্বীনকেই অন্তর্ভুক্ত
করে। আর আক্বীদা দ্বীনের সর্বোচ্চ
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে।
দ্বিতীয়ত : আক্বীদার তুলনায় ঈমান আরো
ব্যাপক পরিভাষা। আক্বীদা হল কতিপয়
ভিত্তিমূলক বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের
নাম। অন্যদিকে ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয়;
বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের
মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে অপরিহার্য
করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দু’টি অংশ। একটি
হল অন্তরে স্বচ্ছ আক্বীদা পোষণ। আরেকটি
হল বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দু’টি
পরস্পরের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত যে কোন
একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে
দেয়।
তৃতীয়ত : আক্বীদা হল বিশ্বাসের মাথা এবং
ঈমান হল শরীর। অর্থাৎ আক্বীদা হল ঈমানের
মূলভিত্তি। আক্বীদা ব্যতীত ঈমানের
উপস্থিতি তেমনি অসম্ভব, যেমনভাবে ভিত্তি
ব্যতীত কাঠামো কল্পনা করা অসম্ভব। সুতরাং
ঈমান হল বাহ্যিক কাঠামো আর আক্বীদা হল
ঈমানের আভ্যন্তরীণ ভিত্তি।
চতুর্থত : আক্বীদার দৃঢ়তা যত বৃদ্ধি পায়
ঈমানও তত বৃদ্ধি পায় ও মজবুত হয়। আক্বীদায়
দুর্বলতা সৃষ্টি হলে ঈমানেরও দুর্বলতা সৃষ্টি
হয়, আমলের ক্ষেত্রেও সে দুর্বলতার প্রকাশ
পায়। যেমনভাবে রাসূল (ছা:) বলেন,
“মানুষের হৃদয়ের মধ্যে একটি গোশতপিন্ড
রয়েছে, যদি তা পরিশুদ্ধ হয় তবে সমস্ত শরীর
পরিশুদ্ধ থাকে, যদি তা কদর্যপূর্ণ হয় তবে
সমস্ত শরীরই কদর্যপূর্ণ হয়ে যায়”।
[মুত্তাফাক আলাইহে, মিশকাত ‘ক্রয়-বিক্রয়
অধ্যায়’ হা/২৭৬০]
পঞ্চমত : বিশুদ্ধ আক্বীদা বিশুদ্ধ ঈমানের
মাপকাঠি, যা বাহ্যিক আমলকেও বিশুদ্ধ করে
দেয়। যখন আক্বীদায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়
তখন ঈমানও বিভ্রান্তিপূর্ণ হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে
ছালেহীনের অনুসরণ করা হয় এজন্য যে, তারা
যে আক্বীদার অনুসারী ছিলেন তা ছিল বিশুদ্ধ
এবং কুরআন ও সুন্নাহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আর এজন্যই তারা ছিলেন খালিছ ঈমানের
অধিকারী এবং পৃথিবীর বুকে উত্থিত
সর্বোত্তম জাতি। অন্যদিকে মুরজিয়া,
খারেজী, কাদরিয়াসহ বিভিন্ন উপদলসমূহ
আক্বীদার বিভ্রান্তির কারণে তাদের ঈমান
যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তেমনি তাদের
কর্মকান্ড নীতিবিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এভাবেই
আক্বীদার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে
ঈমানের অবস্থানও পরিবর্তন হয়ে যায়।
ষষ্ঠত : সকল রাসূলের মূল দা‘ওয়াত ছিল
বিশুদ্ধ আক্বীদা তথা তাওহীদের প্রতি আহবান
জানানো। এক্ষেত্রে কারো অবস্থান ভিন্ন ছিল
না। কিন্তু আমল-আহকাম সমূহ যুগে যুগে
পরিবর্তিত হয়েছে। যেমন ছালাত, ছিয়াম,
যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি আমলসমূহ পূর্ববর্তী
নবীদের যুগে ছিল না অথবা থাকলেও তার
বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্নরূপ। সুতরাং ঈমানের
দাবীসূচক আমলসমূহ কালের বিবর্তনে
পরিবর্তিত হলেও আক্বীদার বিষয়টি সৃষ্টির
অনাদিকাল থেকে অভিন্ন ও অপরিবর্তনীয়।
সঠিক আক্বীদা পোষণের অপরিহার্যতা :
একঃ সঠিক আক্বীদা পোষণ করা ইসলামের
যাবতীয় কর্তব্যসমূহের মাঝে সবচেয়ে বড়
কর্তব্য। রাসূল (ছা:) বলেন,
“আমি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য
আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা আল্লাহর উপর
ঈমান আনে এবং মুহাম্মাদকে রাসূল হিসাবে
স্বীকৃতি দেয়”। [ মুত্তাফাক আলাইহে, ‘ঈমান’
অধ্যায়, হা/১২]
দুইঃ ঈমান সাধারণভাবে সমস্ত দ্বীনে
ইসলামকেই অন্তর্ভূক্ত করে। আর আক্বীদা
দ্বীনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয় তথা
অন্তরের অবিমিশ্র স্বীকৃতি ও আমলে তা
যথার্থ বাস্তবায়নকে নিশ্চিত করে।
তিনঃ আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ তথা
শিরক এমন ধ্বংসাত্মক যে পাপী তওবা না করে
মারা গেলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।
আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরককারীকে
ক্ষমা করবেন না। এ ব্যতীত যে কোন পাপ
তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিতে
পারেন” [ সূরা নিসা ১১৬ ]
চারঃ আক্বীদা সঠিক থাকলে কোন পাপী
ব্যক্তি জাহান্নামে গেলেও চিরস্থায়ীভাবে
সেখানে থাকবে না। ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত
হয়েছে যে,
“কোন এক ব্যক্তি জীবনে কোনদিন সৎ আমল
না করায় তার পুত্রদের নির্দেশ দেয় তাকে
পুড়িয়ে দিয়ে ছাইভস্ম যমীনে ও পানিতে
ছড়িয়ে দিতে এই ভয়ে যে, আল্লাহ তাকে শাস্তি
দান করবেন। তার ধারণা ছিল এর মাধ্যমে সে
আল্লাহর কাছ থেকে পালিয়ে জাহান্নামের আগুন
খেকে পরিত্রাণ লাভ করবে। অতঃপর আল্লাহ
ছাইভস্মগুলো একত্রিত করে তাতে রূহ প্রদান
করলেন এবং তাকে তার এই কাজের হেতু জানতে
চাইলেন। অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের
অনুমতি দিলেন, যেহেতু সে আল্লাহকে ভয় করে
এবং আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে সুনিশ্চিত
বিশ্বাস রাখে” [বুখারী, হা/৩২৯৪ ‘কিতাবুল
আম্বিয়া’, বাব ন. ৫২]
অন্য হাদীছে এসেছে,
“যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণ ঈমান
অবশিষ্ট থাকবে তাকেও শেষ পর্যায়ে জান্নাতে
প্রবেশ করানো হবে [মুত্তাফাক আলাইহে,
মিশকাত হা/৫৫৭৯,‘কিয়ামতের অবস্থাসমূহ ও
সৃষ্টির পুনরুত্থান’ অধ্যায়, ‘হাউযে কাওছার ও
শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ]
অর্থাৎ সঠিক আক্বীদার কারণে একজন
সর্বোচ্চ পাপী ব্যক্তিও নির্দিষ্ট সময়
পর্যন্ত জাহান্নামে অবস্থানের পর জান্নাতে
প্রবেশ করতে সমর্থ হবে।
পাঁচঃ আক্বীদা সঠিক না থাকলে সৎ
আমলকারীকেও জাহান্নামে যেতে হবে। যেমন
একজন মুনাফিক বাহ্যিকভাবে ঈমান ও সৎ আমল
করার পরও অন্তরে কুফরী পোষণের কারণে সে
জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে
(নিসা ১৪৫) । একই কারণে একজন কাফির সারা
জীবন ভাল আমল করা সত্ত্বেও কিয়ামতের দিন
সে তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে না। কেননা
তার বিশ্বাস ছিল ভ্রান্তিপূর্ণ। আল্লাহ
বলেন,
‘সেদিন আমি তাদের কৃতকর্মের দিকে
মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলো বিক্ষিপ্ত
ধূলিকণায় রুপান্তরিত করব’ (ফুরকান ২৩)
ছয়ঃ কবরের জীবনে আক্বীদা সম্পর্কেই প্রশ্ন
করা হবে। অর্থাৎ তোমার রব কে? তোমার নবী
কে? তোমার দ্বীন কি? সেদিন আমল সংক্রান্ত
প্রশ্ন করা হবে না। এখান থেকেই দুনিয়া ও
আখিরাতে আক্বীদার গুরুত্ব অনুভব করা যায়।
সাতঃ ইসলামের কালেমা অর্থাৎ ‘কালেমা
তাওহীদ’ উচ্চারণ করা আল্লাহর নিকট
গ্রহণযোগ্য হতে পারে তখনই যখন তা সঠিক
বিশ্বাস প্রসূত হয়। নতুবা তা আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য হবে না। গ্রহণযোগ্য হওয়ার
শর্তসমূহ হল-
ক. কালেমা তাওহীদের অর্থ জানা।
খ. খুলূছিয়াতের সাথে উচ্চারণ করা।
গ. সত্যায়ন করা।
ঘ. অন্তরে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা।
ঙ. কালেমা ও কালেমার অনুসারীদের প্রতি
মুহাববত পোষণ করা।
চ. আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপনের দাবীসমূহ পরিপূর্ণ আনুগত্য ও
নিষ্ঠার সাথে পালন করা।
ছ. কালেমার বিপরীত বিষয়কে প্রত্যাখ্যান
করা।
এ বিষয়গুলো প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরের
বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। যা স্পষ্টতঃই
নির্দেশ করে যে, বিশ্বাসের সঠিকতা ইসলামে
প্রবেশের মূল শর্ত। অর্থাৎ কালেমায়ে তাওহীদ
যদি সঠিক বিশ্বাসের সাথে উচ্চারিত না হয়
তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ
বিষয়ে সকল আলেমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
আটঃ ইসলামের একটি মৌলিক নীতি হল
‘ওয়ালা’ ও ‘বারা’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর জন্য
সম্পর্ক স্থাপন এবং আল্লাহর জন্যই
সম্পর্কচ্ছেদ’ যা আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট।
একজন কাফির, মুনাফিক, মুশরিকের প্রতি
আমরা যে বিমুখতা দেখাই তার কারণ হল তার
কুফরী এবং বিভ্রান্ত আক্বীদা। ঠিক
যেমনভাবে একজন মুমিনকে আমরা শর্তহীনভাবে
ভালবাসি তার ঈমান ও বিশুদ্ধ আক্বীদার
কারণে। এ কারণে একজন মুসলমান পাপাচারী
হলেও তার আক্বীদার কারণে তার সাথে সম্পর্ক
ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন এক
ব্যক্তিকে মদ্যপানের জন্য রাসূল (ছা:)-এর
সামনে বেত্রাঘাত করা হচ্ছিল। তখন একজন
ব্যক্তি বলল, আল্লাহ তোমার উপর লা‘নত
করুন। রাসূল (ছা:) তাকে বললেন, ‘এই
মদ্যপায়ীকে লা‘নত কর না, কেননা সে আল্লাহ ও
তার রাসূলকে ভালবাসে’ (মুসনাদে বায্যার
হা/২৬৯, ছনদ ছহীহ, দ্রঃ বুখারী হা/৬৭৮০)

নয়ঃ সমকালীন মুসলিম সমাজের দিকে তাকালে
আক্বীদার গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুভব করা যায়।
তাদের মাঝে যেমন বহু লোক কবর পূজায় ব্যস্ত,
তেমনি লিপ্ত হরহামেশা তাওহীদ বিরোধী ও
শিরকী কার্যকলাপে। কেউবা ব্যস্ত নিত্য-
নতুন ‘মাহদী’, ‘মাসীহ’ আবিষ্কারের
প্রচেষ্টায়। মূর্তিপূজার স্থলে এখন আবির্ভাব
হয়েছে শহীদ মিনার, স্তম্ভ, ভাষ্কর্য,
অগ্নিশিখা, প্রতিকৃতি ইত্যাদি শিরকী
প্রতিমূর্তি। এগুলো সবই সঠিক আক্বীদা
সম্পর্কে অজ্ঞতার দুর্ভাগ্যজনক ফলশ্রুতি।
অন্যদিকে আক্বীদায় দুর্বলতা থাকার কারণে
মুসলিম পন্ডিতদের চিন্তাধারা ও লেখনীর
মাঝে শারঈ‘ সূত্রগুলোর উপর নিজেদের জ্ঞানকে
অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রবণতা এবং বুদ্ধির
মুক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতার নামে কুফরী
বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গি
ইত্যাদি যুক্তিবাদী ও শৈথিল্যবাদী ধ্যান-
ধারণার জন্মও নিচ্ছে যার স্থায়ী প্রভাব
পড়ছে পাঠকদের উপর। এভাবেই আক্বীদা
সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব আমাদের
পথভ্রষ্ট করে ফেলছে প্রতিনিয়ত।
দশঃ বিভ্রান্ত মতাদর্শের অনুসারী মুনাফিক,
বিদ‘আতী এবং ভিন্ন ধর্মানুসারী ইহুদী,
খৃষ্টান, পৌত্তলিক ও নাস্তিক্যবাদীরা তাদের
আক্বীদা প্রচার ও প্রসারে বিভিন্নমুখী যে
তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তা প্রতিরোধ করা ও
তা থেকে আত্মরক্ষা করা প্রতিটি মুসলিমের
জন্য আবশ্যক কর্তব্য। এজন্য সঠিক আক্বীদা
সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতেই হবে। অন্যথায়
আপাতঃ দর্শনীয় পশ্চিমা বস্ত্তবাদী
চিন্তাধারার জোয়ার আমাদেরকে পথভ্রষ্ট
করতে মোটেও সময় নিবে না।
আক্বীদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির ভয়াবহ ফলাফল
:
আলেম-ওলামাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল
মৌলিক আক্বীদাসমূহের বিষয়ে সাধারণ
মুসলমানদের সঠিক জ্ঞান দান করা এবং
সাধ্যমত সর্বত্র তার প্রসার ঘটান। কেননা যে
ব্যক্তি তার জীবনের ব্যষ্টিক, সামাজিক,
বুদ্ধিবৃত্তিক সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদার
প্রতিফলন ঘটাতে পারে, সে দুনিয়া ও আখিরাত
সর্বক্ষেত্রে সফল। অথচ দুঃখজনক হল,
আধুনিক যুগে বহু আলেমই আক্বীদাকে খুব
সংকীর্ণ অর্থে ধরে নিয়েছেন, যার প্রভাব
অবধারিতভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে পড়ছে।
ফলে আমলগত ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদার
উপস্থিতিকে নিশ্চিত না করে অনেকে কেবল
আক্বীদা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা রাখাই
যথেষ্ট মনে করেছে যেমনটি করেছিল
মু‘তাযিলাসহ আরো কিছু উপদল। অনেকে আবার
কেবল অন্যদের সাথে নিজেদের পার্থক্য
নিরূপণের ক্ষেত্রে, কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতা
লাভের মত উপলক্ষের সাথে আক্বীদাকে
সীমাবদ্ধ রেখেছে যেমন-খারেজীরা।
ফলশ্রুতিতে বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রে
বিধর্মীগোষ্ঠীর বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের
পথ ধরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ,
গণতন্ত্র ইত্যাদি নিত্য-নতুন শিরকী মতবাদ
সহজেই মুসলমানদের মাঝে গেড়ে বসতে সক্ষম
হয়েছে। সচেতনতার দাবীদার বহু মুসলমান এ
ধারণা রাখে যে, ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্মের
লোকেরাও জান্নাতে যাবে যদি তারা সৎ হয়।
‘আক্বীদা ও শরী‘আত ভিন্ন জিনিস, আক্বীদা
কেবলমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক
চিন্তাধারা; ব্যবহারিক জীবনে যার বিশেষ
কোন গুরুত্ব নেই, ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়;
রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষা ইত্যাদি সার্বজনীন
ক্ষেত্রে তার কোন ভূমিকা থাকা উচিৎ নয়’
ইত্যাদি কুফরী চিন্তাধারা লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে
অধিকাংশ মুসলমানের মানসজগতকে আচ্ছন্ন
করে ফেলেছে। বলা বাহুল্য, এ সমস্ত ধোঁয়াশার
প্রভাব এতই ক্ষতিকারক যে মানুষের
সত্যানুসন্ধিৎসু মনকে একেবারেই পঙ্গু করে
রাখে এবং মিথ্যার আধিপত্যকে মেনে নেওয়ার
শৈথিল্যবাদী মানসিকতা প্রস্ত্তত করে দেয়।
আর এসবই সঠিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুতির
অবধারিত ফলশ্রুতি। সংক্ষিপ্ত আলোচনার
শেষ প্রান্তে বলা যায় যে, আক্বীদা দ্বীনের
প্রাথমিক ও মৌলিক বিষয়। আক্বীদা সঠিক
হওয়ার উপরই ঈমান ও আমলের যথার্থতা
নির্ভরশীল। তাই সবকিছুর পূর্বে আক্বীদার
বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করাই একজন মুসলিমের
প্রথম ও অপরিহার্য দায়িত্ব। আজকের
পৃথিবীতে যখন সংঘাত হয়ে উঠেছে
বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক তখন একজন
মুসলমানের জন্য স্বীয় আক্বীদা সংরক্ষণের
প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক বেড়েছে। কেননা
হাযারো মাযহাব-মতাদর্শের দ্বিধা-সংকটের
ধ্বংসাত্মক, দুর্বিষহ জঞ্জালকে সযত্নে পাশ
কাটিয়ে সত্যের দিশা পাওয়া এবং সত্য ও
স্বচ্ছ দ্বীনের দিকে ফিরে আসা বিশুদ্ধ
আক্বীদা অবলম্বন ব্যতীত অসম্ভব। আল্লাহ
রাববুল আলামীন সকল মুসলিম ভাই-বোনকে
সঠিক আক্বীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত
স্বচ্ছ ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফীক দান
করুন ও যাবতীয় শিরকী ও জাহেলী
চিন্তাধারা থেকে আমাদেরকে হেফাযত করুন।
আমীন!!