মৃত ব্যক্তি কি কোন জীবিত ব্যক্তির উপকার করতে পারে?

মৃত ব্যক্তি কি কোন মানুষের উপকার করতে
পারে?
__________________________________
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন : মৃত ব্যক্তি
নিজের কোন উপকার করতে পারে না।
তিনি বলেছেন :মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে
তখন তার আমল বন্ধ
হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে
পেতে থাকে।
১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে
মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে)
২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম
(বিদ্যা)
৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে।
বর্ণনায়: মুসলিম
হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা গেল
মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ, ক্ষমা
প্রার্থনার ফলে উপকার পেতে পারে।
কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের থেকে
এরূপ কিছু আশা করতে পারেনা।
যখন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, কোন
আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল
আমল বন্ধ হয়ে যায়। তার আমল দিয়ে সে
কোন উপকার লাভ করতে পারে না, তখন
আমরা কিভাবে বিশ্বাস করি যে, অমুক
ব্যক্তি কবরে জীবিত আছেন? তার সাথে
আমাদের যোগাযোগ হয়? তিনি আমাদের
উপকার করতে পারেন? আমাদের প্রার্থনা
শুনেন ও আল্লাহর কাছে শুপারিশ করেন?
এগুলো সব অসার বিশ্বাস। এগুলো যে শিরক
তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মৃত ব্যক্তিরা যে কবরে শুনতে পায় না,
কেহ তাদেরকে কিছু শুনাতে পারে না
এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনে
ইরশাদ করেছেন। তিনি নবীকে সম্বোধন
করে বলেছেন:নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে
পারবে না,
আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে
না। (সূরা নামল, আয়াত ৮০)
যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোন মৃতকে কিছু শোনাতে
পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ কিভাবে এ
অসাধ্য সাধন করতে পারে? কাজেই আমরা
মৃতদের কবরে যেয়ে যা কিছু বলি, যা কিছু
প্রার্থনা করি তা তারা কিছুই শুনতে পায়
না। যখন তারা শুনতেই পায় না, তখন তারা
প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কিভাবে কবুল
করবে? কিভাবে তাদের হাজত-আকাংখা
পূরণ করবে?
আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা
করা হয়, তা সবই বাতিল।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না,
যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং
তোমার ক্ষতিও করতে পারে না। অতএব
তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি
যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ
যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে
তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর
তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর
অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই।
তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে
তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি
দয়ালু (সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭)
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ
ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে
দুআ-প্রার্থনা করা হয় তা সবই বাতিল।
আরো স্পষ্ট হল যে, এগুলো কাউকে উপকার
করতে পারে না বা ক্ষতি করতে পারে না।
যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-
প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না
তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন হবে? কেন
তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে? কেন
তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে?
অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়,
অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে
গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে এই দুআ
করেছিলাম। দুআ কবুল হয়েছে, যা
চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি। এ
ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি
মিথ্যারোপের শামিল।
হ্যা, হতে পারে অলী আওলিয়াদের
মাজারে গিয়ে কিছু চাইলে তা যেন অর্জন
হবে না এ কথা বলা যায় না। তবে অর্জন
হলে সেটা দু কারণে হতে পারে:
এক. অলীর মাজারে যেয়ে যা চাওয়া
হয়েছে তা পুরণ করা কোন সৃষ্টিজীবের
পক্ষে সম্ভব হবে অথবা হবে না। যদি সম্ভব
হয়, তাহলে হতে পারে শয়তান প্রার্থীত
বিষয়গুলোকে অর্জন করিয়ে দিয়েছে।
যাতে শিরকের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। যা
চেয়েছে শয়তান সেগুলো তাকে দিয়েছে।
কেননা যে সকল স্থানে আল্লাহ তাআলা
ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হয় সে সকল
স্থানে শয়তান বিচরণ করে। যখন শয়তান
দেখল কোন ব্যক্তি কবর পূজা করছে, তখন
সে তাকে সাহায্য করে থাকে। যেমন সে
সাহায্য করে মূর্তিপূজারীদের। সে তাদের
এ সকল শিরকি কাজগুলোকে তাদের কাছে
সুশোভিত করে উপস্থাপন করে থাকে বলে
আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বহু স্থানে
উল্লেখ করেছেন।
এমনিভাবে শয়তান গণক ও জোতিষিদের
সাহায্য করে থাকে তাদের কাজ-কর্মে।
তাই অনেক সময় এ সকল গণকদের কথা ও
ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হতে দেখা
যায়।
এমনিভাবে শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ
করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলে থাকে অমুক
মাজারে যাও, তাহলে কাজ হবে। পরে সে
যখন মাজারে যায় তখন শয়তান মানুষের রূপ
ধারণ করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে।
ফলে বিপদে পড়া মানুষটি মনে করে
মাজারে শায়িত অলী তাকে সাহায্য
করেছে। এমনিভাবে শয়তান মানব সমাজে
শিরকের প্রচলন ঘটিয়েছে ও শিরকের
প্রসার করে যাচ্ছে।
দুই. আর যদি প্রার্থীত বিষয়টি এমন হয় যা
পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই
সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ বিষয়টি
অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা
ছিল। কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির
অর্জন হয়নি।
তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে
হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয়
বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই
কুসংস্কার। কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ
প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ
থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও
বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে
শায়িত অলীর কারণে হয়েছে। এর নামই হল
ঈমান। এর নামই হল নির্ভেজাল তাওহীদ।
তাওহীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়,
কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে ব্যক্তির
মুক্তি নেই।
অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের
পার্থক্য জানে না। মুজিযা আর কারামত
কি তা বুঝে না। মুজিযা হল এমন অলৌকিক
বিষয় যা নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। আর
কারামত হল এমন অলৌকিক বিষয় যা
আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের থেকে
প্রকাশ পায়। মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল
নবী বা রাসূল হওয়া। আর কারামত
প্রকাশের শর্ত হল নেককার ও মুত্তাকী
হওয়া। অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-
ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে
অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও
নয়, কারামতও নয়। সেটা হল দাজ্জালী
ধোকা-বাজি বা প্রতারণা।
অনেক অজ্ঞ লোক ধারনা করে থাকে
মুজিযা বা কারামত, সাধনা বা চেষ্টা-
প্রচেষ্টা করে অর্জন করা যায়। বা মানুষ
ইচ্ছা করলেই তা করতে পারে। তাই এ সকল
অজ্ঞ লোকেরা ধারনা করে অলী
আউলিয়াগণ ইচ্ছা করলে কারামতের
মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটাতে পারেন, বিপদ
থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন।
কিন্তু আসল ব্যাপার হল, কারামত কোন
ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র
আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মানুষ ইচ্ছা করলে
কখনো কারামত সংঘটিত করতে পারে না,
সে যত বড় অলী বা পীর হোক না কেন।
কোন বিবেকমান মানুষ বিশ্বাস করে না
যে, একজন মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর
তার কিছু করার ক্ষমতা থাকে। আবার যদি
সে কবরে চলে যায় তাহলে কিভাবে সে
কিছু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে?
এ ধরনের কথা তারাই বিশ্বাস করতে
পারে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে যাদের কোন
নজীর নেই। অলী তো দূরের কথা কোন
নবীর কবরও পূজা করা জায়েয নেই। নবীর
কবরতো পরের কথা, জীবিত থাকা কালে
কোন নবীর ইবাদত করা, বা তাকে দেবতা
জ্ঞান করে পূজা করা যায় না। এটা
ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ
তাআলা বলেন :কোন মানুষের জন্য সংগত
নয় যে, আল্লাহ
তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান
করার পর সে মানুষকে বলবে, তোমরা
আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে
যাও। বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী
(আল্লাহ ভক্ত) হও। যেহেতু তোমরা কিতাব
শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। আর
তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না
যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ
রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর
তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ
দেবেন? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০